1 of 2

৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)

৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)

কোপারনিকাসের ভূ-ভ্ৰমণবাদে যে সমস্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আকৃষ্ট হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে জোহন কেপলার অন্যতম। শোনা যায়, কোপারনিকাসের লেখা পুস্তকখানি পাঠ করার পর পৃথিবী, গ্রহ ও নক্ষত্র প্রভৃতির সম্বন্ধে তাঁর অনুসন্ধিৎসা জাগরিত হয়। তারপরেই তিনি আরম্ভ করেন জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা। তাঁর প্রথম গবেষণামূলক প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে। সেই থেকেই কেপলার বিশ্বের বিদ্বৎসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন বিজ্ঞানী হিসাবে।

১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ওয়েল নামক একটি শহরে জোহন কেপলার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। তার উপর ছেলেবেলায় তিনি ছিলেন বড় রোগা। তাই পিতা সাহস করে ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি। নিজেই দান করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু বালকের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ ছিল ভয়ানক। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই আগ্রহ এবং অজানাকে জানার কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পায়। সে কৌতূহলকে চরিতার্থ করার ক্ষমতা পিতার ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই একটু বেশি বয়সে পুত্রকে প্রেরণ করলেন স্থানীয় এক অবৈতনিক বিদ্যালয়ে। কারও কারও মতে কেপলারের পিতার আর্থিক অবস্থা এত খারাপ ছিল যে, বাল্যকালে কেপলারকে একটি সরাইখানায় কাজ নিতে হয়েছিল।

অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী কেপলার অতি অল্পদিনেই স্কুলের পাঠ সমাপ্ত করে ভর্তি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এ. ডিগ্রি গ্রহণ করে যোগদান করলেন গণিতের অধ্যাপক হিসাবে। সেই সময় তিনি টাইকোব্রাহের সংস্পর্শে আসেন এবং টাইকোব্রাহের সহকারীরূপে কিছুদিন কাজ করেন।

কেপলারের প্রিয় বিষয়গুলো ছিল গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা। অধ্যাপনার অবসরে তিনি মেতে উঠলেন গবেষণায়। প্রথমত তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল গণিত। কিন্তু কোপারনিকাসের লেখা পুস্তকখানি হস্তগত হলে তাঁর মত পরিবর্তিত হয় এবং জ্যোতির্বিদ্যা সম্বন্ধেই গবেষণা আরম্ভ করেন।

কোপারনিকাসের নতুন চিন্তাধারার প্রতি দৃষ্টিপাত না করলেও কেপলারের মনে কেমন যেন একটা সন্দেহ ঘনীভূত হল। চিন্তান্বিত হয়ে উঠলেন তিনি। ভাবতে শুরু করলেন, সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্রাদির পৃথিবীকে পরিভ্রমণ করা সম্ভব অথবা পৃথিবীর পক্ষে নিজ মেরুদণ্ডের উপর আবর্তন করা সহজ।

অনেক চিন্তা করে শেষে কোপারনিকাসের মতকেই সমর্থন করলেন। এই উদ্দেশ্যে রচনা করলেন একখানি পুস্তক। পুস্তকটির নাম “ব্ৰহ্মান্ডের রহস্য। কথিত আছে পুস্তকখানি রচনার পর সমর্থনের জন্য কেপলার প্রেরণ করেছিলেন তারই সমসাময়িক বিজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ গ্যালিলিওর কাছে। গ্যালিলিও কী মতামত দিয়েছিলেন জানা যায় না। তবে পুস্তকটি পরবর্তীকালে গবেষকদের পথকে অনেকটা প্রশস্ত করে দিয়েছিল। আজও পুস্তকটির পাণ্ডুলিপি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে রক্ষা করছে জার্মানি।

কেপলারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুস্তকটির নাম “নিউ অ্যাসট্রোনমি প্রকাশের পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারলেন, সূর্যের চারদিকে গ্রহরা একটি উপবৃত্তাকার পথে পভ্রিমণ করছে। তাই ওরা ঘুরতে ঘুরতে কখনও সূর্যের সন্নিকটবর্তী হয় আবার কখনও দূরে সরে যায়। কেপলারই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি গ্রহদের পরিভ্রমণ পথের অনেকটা সঠিক তথ্য প্রদান করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেছিলেন, কোন গ্রহের কক্ষপথ ঠিক বৃত্তাকার নয়।

অনেকের মতে কেপলার একটি শক্তিশালী দূরবীনও তৈরি করেছিলেন এবং সেই দূরবীনের সাহায্যে তিনি গ্রহ, নক্ষত্র এবং চন্দ্রের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন। কিন্তু তার দূরবীনটি কেমন ছিল আজ আর জানার কোন উপায় নেই। বহু পূর্বেই যন্ত্রটি হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে।

কেপলার ছিলেন চিররুগ্ন। তার উপর রাতদিন এত কাজে ব্যস্ত থাকতেন যে শরীরের দিকে একটি বারও দৃষ্টি দিতে পারতেন না। তাই অল্প বয়সেই ভেঙ্গে পড়ল স্বাস্থ্য। মাত্র সাতান্ন কিংবা আটান্ন বছর বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পণ্ডিতেরা হিসেব করে দেখেছেন, তাঁর মৃত্যু হয়েছে ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি দীর্ঘজীবী হলে জ্যোতির্বিজ্ঞান হয়ত আরও মূল্যবান তথ্য লাভ করতে পারতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *