1 of 2

৫০. চুক্তিবিধি

অধ্যায় : ৫০ চুক্তিবিধি

ধারা-১১৬৭

চুক্তির সংজ্ঞা স্বেচ্ছাপ্রণােদিত ঈজাব ও কবুল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সমর্থনের মাধ্যমে পক্ষবৃন্দের মধ্যে মতৈক্যের ভিত্তিতে চুক্তিযোগ্য কোন কিছু সম্পাদনের জন্য পরস্পর ওয়াদাবদ্ধ হওয়াকে চুক্তি (আ) বলে।

বিশ্লেষণ

স্বেচ্ছাপ্রণােদিত ঈজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (সমর্থন)-এর মাধ্যমে চুক্তির বিষয়বস্তুতে পক্ষবৃন্দের একমত হওয়া এবং উক্ত চুক্তি বাস্তবায়নে তাহারা দৃঢ়ভাবে অঙ্গিকারাবদ্ধ হইলেই কেবল উহাকে চুক্তি বলা যাইবে (মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৩১৭)।

ধারা -১১৬৮

চুক্তির শর্তাবলী চুক্তি বৈধ হইবার জন্য নিম্নবর্ণিত শতাবলী বিদ্যমান থাকিতে হইবে –

(ক) চুক্তির বিষয়বস্ততে পক্ষবৃন্দের সন্তুষ্টি এবং উহা বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকিতে হইবে।

(খ) চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ থাকিতে হইবে; (গ) চুক্তির পক্ষবৃন্দের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যোগ্যতা থাকিতে হইবে; (ঘ) চুক্তির বিষয়বস্তু চুক্তিভুক্ত হওয়ার যোগ্য হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

পক্ষবৃন্দের সন্তুষ্টি অর্থাৎ তাহাদের স্বেচ্ছাসম্মতির ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদিত হইতে হইবে এবং চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষমতা তাহাদের থাকিতে হইবে। যাহা

৬৬২

বাস্তবায়নের ক্ষমতা পক্ষবৃন্দের নাই, সেই বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়া বৈধ নহে। চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কেও স্পষ্ট ও বিস্তারিত বিবরণ থাকিতে হইবে, কোন প্রকারের অস্পস্টতা থাকিতে পারিবে না (ফিকহুস সুন্নাহ, ৩ খণ্ড, পৃ. ১০১)।

যাহারা চুক্তিবদ্ধ হইবেন তাহাদের চুক্তি করিবার যোগ্য হইতে হইবে। যেমন বালেগ হওয়া, সুস্থ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া ইত্যাদি। যে বিষয় সম্পর্কে চুক্তি

অনুষ্ঠিত হইবে সেই বিষয়টি চুক্তিভুক্ত হওয়ার যোগ্য হইতে হইবে। যেমন বিবাহ চুক্তি, মালিকানাধীন সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি ইত্যাদি। যে বিষয় চুক্তিভুক্ত হওয়ার যোগ্য নহে সেই বিষয়ের চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে।যেমন আকাশে উড়ন্ত পাখী ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি, অপরের মালিকানাধীন সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি। মাহরাম নারী-পুরুষের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চুক্তি ইত্যাদি।

ধারা ১১৬৯ ঈজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (সম্মতি)-এর সংজ্ঞা চুক্তি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রথম পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনকে ‘ইজাব’ এবং সেই বক্তব্যে দ্বিতীয় পক্ষের সম্মতি জ্ঞাপনকে ‘কবুল’ বলে।

বিশ্লেষণ

পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোন চুক্তি সম্পাদনের জন্য যে পক্ষ প্রস্তাব উত্থাপন করে সেই প্রস্তাবকে আরবী ভাষায় ‘ঈজাব’ বলে এবং দ্বিতীয় পক্ষের সম্মতিজ্ঞাপন করাকে আরবী ভাষায় কবুল বলে। যেমন প্রথম পক্ষ বলিবে, আমি আমার মালিকানাধীন এই বাড়িটি আপনার নিকট পঁচিশ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করিলাম। ইহাকে ঈজাব বলে। দ্বিতীয় পক্ষ বলিবে, আমি উহা উক্ত মূল্যে ক্রয় করিতে রাযী হইলাম। ইহাকে বলে ‘কবুল’ (মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৯৮ ও ৩০৬)।

ধারা-১১৭০

ঈজাব-কবুলের শর্তাবলী ঈজাব – কবুলের শর্তাবলী নিম্নরূপ –

(ক) ঈজাব- কবুলে ব্যবহৃত শব্দাবলীর ক্রিয়াপদ অতীত কাল জ্ঞাপক হইতে হইবে;

(খ) ঈজাব-কবুল বাচনিক হইতে হইবে;

(গ) ঈজাব-কবুল একই মজলিসে হইতে হইবে;

(ঘ) ঈজাব-কবুলের মাধ্যমে সম্পদিত চুক্তির বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে;

(ঙ) পক্ষবৃন্দের স্বেচ্ছা সম্মতি থাকিতে হইবে;

(চ) ঈজাব-কবুলে ব্যবহৃত ভাষা পক্ষবৃন্দের বােধগম্য ও শ্রুত হইতে হইবে;

তবে শর্ত থাকে যে, কোন পক্ষ শ্রবণশক্তির অসুবিধার কারণে কোন কিছু স্পষ্ট শুনিতে না পাইলে লিখিতভাবে অথবা তাহার অন্য কোন বােধগম্য উপায়ে চুক্তি করা বৈধ হইবে।

বিশ্লেষণ

ঈজাব-কবুলের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তি বৈধ হওয়ার জন্য কিছু শর্তাদি রহিয়াছে। যেমনঃ ঈজাব-কবুলে ব্যবহৃত বাক্যের ক্রিয়াপদ অতীত কাল জ্ঞাপক হইবে অথবা একপক্ষ বর্তমান কাল এবং অপর পক্ষ অতীত কাল জ্ঞাপক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করিতে পারে যেমন একজন বলিল, আমি এই মালটি দশ টাকায় বিক্রয় করিতে চাই। অপরজন বলিল, আমি গ্রহণ করিলাম। ঈজাব-কবুল বাচনিক হইবে। ইশারা ইঙ্গিতের ইজাব-কবুল বৈধ হইবে না। ঈজাব-কবুল একই মজলিসে হইবে, মজলিস ভিন্ন হইলে ঈজাব-কবুল বৈধ হইবে না। যেমন একজন ঢাকাতে প্রস্তাব উপস্থাপন করিল এবং অপরজন রাজশাহী যাইয়া বলিল, আমি গ্রহণ করিলাম, তাহা হইলে ইহা বৈধ হইবে না। অনুরূপভাবে পথ চলিতে চলিতে ঈজাব-কবুল বৈধ হইবে না। নির্দিষ্ট বৈঠকের মাধ্যমে উহা সম্পাদন করিতে হইবে। ঈজাব-কবুল বৈধ হইতে হইলে তাহা কোন শর্ত বা স্থান বিশেষের উপর মওকুফ করা যাইবে না এবং চুক্তির বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে, কোন প্রকারের অস্পষ্টতা থাকিবে না। ঈজাব-কবুল হইবে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণােদিত, জোরপূর্বক কোন পক্ষকে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানে বাধ্য করা যাইবে না। ঈজাব-কবুলে ব্যবহৃত শব্দগুলি উভয় পক্ষের বােদগম্য ও শ্রুত হইবে। শব্দ না বুঝিলে বা শ্রবণ না করিলে সম্পাদিত ঈজাব-কবুল বৈধ হইবে না (ইলমুল ফিক্হ, ৬ খণ্ড, পৃ. ৩৯; ফিক্‌হুস সুন্নাহ,২খণ্ড, পৃ. ৩২)।

৬৬৪

ধারা-১১৭১

প্রস্তাব প্রত্যাহার প্রস্তাবকারী তাহার প্রস্তাবের উপর অনড় থাকিলে চুক্তি প্রতিষ্ঠিত হইবে। কিন্তু অপর পক্ষ তাহার প্রস্তাব গ্রহণ করিবার পূর্বে সে তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

অপর পক্ষ সম্মতি জ্ঞাপন করিবার পূর্বে প্রস্তাবকারী তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করিতে পারে কিনা এই বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। হানাফী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে অপর পক্ষ সম্মতি জ্ঞাপন করিবার পূর্ব পর্যন্ত প্রস্তাবকারী তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করিতে পারে। এই অবস্থায় তাহার প্রস্তাব বাতিল গণ্য হইবে। কেননা প্রস্তাবকারী তাহার মালের উপর সকল প্রকারের বৈধ্য ভোগ-ব্যবহারের অধিকারী। সুতরাং মালিক ইচ্ছা করিলে স্বীয় প্রস্তাব প্রত্যাহার করিতে পারে। ইহাতে কেহ বাধা প্রদান করিতে পারে না। যেহেতু চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার মূল ভিত্তি হইল উভয় পক্ষের সম্মতি। তাই এক পক্ষ সম্মতি প্রত্যাহার করিলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে না। মালিকী মাযহাবমতে প্রস্তাব প্রদানের পর অপর পক্ষ তাহা গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রস্তাবকারী তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করিতে পারে না। কেননা প্রস্তাবকারী তাহার প্রস্তাব প্রদানের মাধ্যমে অপর পক্ষকে তাহার মালিকানাধীন বস্তু গ্রহণ করার অথবা মালিকানা লাভের অনুমতি প্রদান করিয়াছে, তাই প্রস্তাবকারী ইচ্ছা করিলেই স্বীয় প্রস্তাব প্রত্যাহার করিতে পারে না। অপর পক্ষ তাহার প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করিলে উভয় পক্ষ চুক্তি করিতে বাধ্য হইবে এবং সম্মতি জ্ঞাপন না করিলে প্রস্তাব বাতিল গণ্য হইবে।

ধারা—১১৭২ সম্মতি জ্ঞাপনের সময়সীমা নির্ধারণ করিয়া দিলে প্রস্তাবকারী অপর পক্ষকে তাহার প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করিবার সময়সীমা নির্ধারণ করিয়া দিলে উক্ত সময়সীমার মধ্যে অপর পক্ষের সম্মতি জ্ঞাপনের অধিকার বহাল থাকিবে। মজলিস পরিবর্তন হইলেও এই অধিকার বাতিল হইবে না।

বিশ্লেষণ

প্রস্তাবক যদি অপর পক্ষকে প্রস্তাব দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়সীমা বাঁধিয়া দেয়। যে, উক্ত সময়সীমার মধ্যেই অপর পক্ষকে সম্মতি জ্ঞাপন করিতে হইবে, তাহা হইলে সেক্ষেত্রে অপর পক্ষের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্মতি জ্ঞাপন বা প্রস্তাব প্রত্যাখানের অধিকার বহাল থাকিবে। মজলিস পরিবর্তন হইলেও তাহার এই অধিকার বাতিল হইবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন,

المسلمون على شروطهم .

“মুসলমানগণ তাহাদের শর্ত পূরণে বাধ্য”।২

ধারা-১১৭৩

অভিভাবকের চুক্তি সম্পাদন কোন ব্যক্তি কোন কারণে চুক্তি সম্পাদনে অপারগ হইলে সেই ক্ষেত্রে তাহার পক্ষ হইতে তাহার ওলী বা অভিভাবক চুক্তি সম্পাদন করিতে পারিবেন।

বিশ্লেষণ

নাবালেগ-এর পক্ষ হইতে তাহার ওলী চুক্তি সম্পাদন করিতে পারেন। ওলী সাধারণত তিন শ্রেণীর : ১। নাবালেগের পিতা, ২। দাদা এবং ৩। সরকার। পিতাই সর্বাগ্রে ওলী হইবার যোগ্য। কেননা সন্তানের প্রতি পিতাই সর্বাধিক দয়ালু। অতঃপর দাদা ওলী নিযুক্ত হইবেন। দাদা না থাকিলে সরকার তাহার ওলী নিযুক্ত হইবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলিয়াছেন?

السلطان ولی من لا ولی له .

“যাহার কোন ওলী নাই সরকার তাহার ওলী”।৩

ধারা-১১৭৪ চুক্তিকারীর যোগ্যতার প্রতিবন্ধকতা (ক) চুক্তিকারীর যোগ্যতার প্রতিবন্ধকতাসমূহ নিম্নরূপঃ (১) মস্তিষ্ক বিকৃতি;

৬৬৬

(২) বুদ্ধি বৈকল্য; (৩) চেতনাশূন্যতা; (৪) নিদ্রা; (৫) মাতলামি এবং (৬) নির্বুদ্ধিতা।

(খ) কোন ব্যক্তির মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটিলে বা ইহার দরুন জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পাইলে সে চুক্তি করিবার যোগ্যতা হারাইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(গ) কোন ব্যক্তির বুদ্ধিবৈকল্য ঘটিলে সে ধারা (৭৫৫) (খ) মোতাবেক সগীর মুমায়্যিয় হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহার ক্ষেত্রে সগীর মুমায়্যিযের বিধান প্রযোজ্য হইবে।

ধারা-১১৭৫

চুক্তির পক্ষবৃন্দের যোগ্যতা

চুক্তি বৈধ হইবার জন্য চুক্তিবদ্ধ পক্ষবৃন্দকে বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

চুক্তি বৈধ হইলেই তাহা আইনত কার্যকর হইতে পারে। অতএব চুক্তি সম্পাদনকারী পক্ষবৃন্দ জ্ঞান-বুদ্ধির অধিকারী হইলে উক্ত চুক্তি বৈধ গণ্য হইবে। সকল চুক্তির ক্ষেত্রে পক্ষবৃন্দের বালেগ হওয়া শর্ত নহে। যেমন ক্ষেত্রবিশেষে সগীর মুমায়্যিযের চুক্তি বৈধ গণ্য হয়।

ধারা-১১৭৬ নাবালেগের চুক্তি ও উহার শ্রেণীবিভাগ (ক) নাবালেগ কর্তৃক চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে, যদি সে ধারা (৭৫৫) (খ) মোতাবেক সগীর মুমায়্যিয হয়।

(খ) নাবালেগের চুক্তি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত –

(১) লাভজনক চুক্তি ও যে চুক্তির দ্বারা কেবল লাভই হয়, লোকসানের আশংকা থাকে না এবং এই জাতীয় চুক্তির ক্ষেত্রে নাবালেগ কর্তৃক তাহার অভিভাবকের অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নাই।

৬৬৭

(২) অলাভজনক চুক্তি ও যে চুক্তিমূলে কেবল লোকসানই হয় এবং যে চুক্তির ফলে মালের মালিকানা হস্তান্তরিত হইয়া যায় সাগীর মুমায়্যিয কর্তৃক কৃত এই জাতীয় চুক্তি বৈধ নহে।

(৩) লাভ-লোকসানযুক্ত চুক্তি ও যে চুক্তির দ্বারা লাভ ও লোকসান উভয়ই উদ্ভূত হওয়ার আশংকা রহিয়াছে, সগীর মুমায়্যিয কর্তৃক কৃত সেই জাতীয় চুক্তি তাহার অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে বৈধ হইবে।৬

বিশ্লেষণ

এখানে নাবালেগ বলিতে সগীর মুমায়্যিযকে বুঝানো হইয়াছে। যে নাবালেগ ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় বােঝে অর্থাৎ বিক্রয়ের দ্বারা মালিকানা স্বত্ব অর্জিত হয় তাহা বুঝিতে সক্ষম এবং ধারা (২১২) মোতাবেক তাগরীর (১২) ও গিবন ফাসিদ ( ১) -এর মধ্যে পার্থক্য করিতে সক্ষম তাহাকে সগীর মুমায়্যিয (বুদ্ধিমান নাবালেগ) বলে। তাহার কৃত কোন কোন চুক্তি বৈধ, কোন কোন চুক্তি অবৈধ এবং কোন কোন চুক্তি তাহার অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে বৈধ গণ্য হয়। যে চুক্তির দ্বারা লাভ অর্জিত হয়, লোকসান উদ্ভূত হওয়ার আশংকা নাই, সগীর মুমায়্যিযের এইরূপ চুক্তি বৈধ গণ্য হইবে। যেমন দান-খয়রাত ও ওসিয়াতের বস্তু গ্রহণ করা ইত্যাদি। যে চুক্তির দ্বারা লোকসান উদ্ভূত হয় এবং মালিকানা স্বত্ব চলিয়া যায়, সগীর মুমায়্যিযের এইরূপ চুক্তি বৈধ হইবে না। যেমন দান-খয়রাত করা, তালাক প্রদান ইত্যাদি। এই ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি থাকিলেও চুক্তি বৈধ হইবে না। কারণ লোকসান উদ্ভূত হওয়ার মত চুক্তি অনুমোদন করার অধিকার অভিভাবকের নাই। যে চুক্তির দ্বারা লাভও অর্জিত হওয়ার এবং লোকসানও উদ্ভূত হওয়ার আশংকা আছে সেই ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে সগীর মুমায়্যিয কর্তৃক কৃত চুক্তি বৈধ গণ্য হইবে। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, ভাগচাষ ইত্যাদি। এইসব লেনদেনের দ্বারা যেমন লাভবান হওয়ার আশা করা যাইতে পারে, দ্রুপ লোকসান হওয়ার আশংকাও থাকে।

ধারা-১১৭৭

নির্দেশসূচক শব্দে অনুষ্ঠিত চুক্তি

নির্দেশসূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে কেবল বিবাহের চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে, অন্য চুক্তি নহে।

৬৮

বিশ্লেষণ

হানাফী মাযহাবমতে নির্দেশ সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে কেবল বিবাহের চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে, অন্য কোন চুক্তি নির্দেশ সূচক শব্দের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় না। যেমন একজন পুরুষ এক মহিলাকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, তুমি আমাকে বিবাহ কর। ইহার উত্তরে যদি মহিলা বলে, আমি তোমাকে বিবাহ করিলাম, তাহা হইলে বিবাহের চুক্তি অনুষ্ঠিত হইল। অনুরূপভাবে কোন পুরুষ কোন মহিলার অভিভাবককে অথবা মহিলার উকিলকে তাহার নামোল্লেখ করিয়া বলিল, আমার সহিত তাহাকে বিবাহ দাও। উত্তরে মহিলার অভিভাবক অথবা উকিল বলিল, তোমার সহিত তাহাকে বিবাহ দিলাম। উক্তরূপ বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইবে।

অন্য সকল ইমামের সম্মিলিত অভিমত এই যে, নির্দেশ সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে বিবাহের চুক্তিসহ অন্যান্য চুক্তিও অনুষ্ঠিত হইতে পারে। কেননা চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার মূল উপাদান হইল চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দের স্বেচ্ছাসম্মতি। সুতরাং যে সমাজে নির্দেশ সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য সকল চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার রীতি আছে সেখানে তাহা বৈধ বলিয়া গণ্য হইবে।

ধারা-১১৭৮ যে সকল শব্দের দ্বারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না (ক) যে সকল শব্দ দ্বারা নিকট ভবিষ্যতে বা অচিরেই কিছু করা হইবে বুঝায় তাহার দ্বারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না।

(খ) প্রশ্নবােধক বাক্যের দ্বারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না।

বিশ্লেষণ

যে সকল শব্দ বর্তমান কাল না বুঝাইয়া ভবিষ্যত কাল বুঝায় তাহার দ্বারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। যেমন প্রস্তাবকারী বলিল, আমি অচিরেই তোমার নিকট আমার এই মাল বিক্রয় করিব। এই জাতীয় শব্দের মাধ্যমে চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না। অনুরূপভাবে প্রশ্নবােধক বাক্য দ্বারাও চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না। যেমন বিক্রেতা বলিল, তুমি কি আমার নিকট হইতে এই জিনিসটি ক্রয় করিবে? উত্তরে যদি ক্রেতা বলে, হাঁ, ক্রয় করিলাম, তাহা হইলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ ইহার মধ্যে ইজাব-কবুল পাওয়া যায় না।

ধারা-১১৭৯

কর্মের মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদন কর্মের মাধ্যমেও চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে, তবে চুক্তির বিষয়বস্তু ও উহার পণ্য সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

বাচনিক অথবা লিখিতভাবে চুক্তি না করিয়া কাজের মাধ্যমেও চুক্তি অনুষ্ঠিত করা যাইতে পারে। যেমন ক্রেতা পণ্য হস্তগত করিয়া বিক্রেতাকে উহার মূল্য পরিশোধ করিয়া দিল। এভাবে লেন-দেনের মাধ্যমে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে। কেননা চুক্তি বৈধ হইবার মূল উপাদান হইল চুক্তিভুক্ত পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতি এবং এখানে প্রত্যক্ষভাবে পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতি বিদ্যমান না থাকিলেও তাহাদের মৌন সম্মতি পাওয়া গিয়াছে। তাই এই জাতীয় চুক্তি বৈধ।৮ হানাফী ও হাম্বলী মাযহাবমতে ঈজাব-কবুলের মৌখিক শব্দ উচ্চারণ ব্যতীত শুধু কাজের মাধ্যমে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে, তাহা মূল্যবান বস্তু হউক অথবা না হউক। কেননা সমাজের প্রচলিত প্রথানুযায়ী এভাবেই পারস্পরিক চুক্তি সম্পাদিত হইয়া থাকে। মালিকী ও হাম্বলী মতে ঈজাব-কবুল ছাড়া শুধু কাজের মাধ্যমে চুক্তি বৈধ হইবার জন্য শর্ত এই যে, এই জাতীয় লেন-দেন সুস্পষ্টভাবে সন্তুষ্টি বুঝাইবে, চাই সমাজে ইহার প্রচলন থাকুক বা না থাকুক।

শাফিঈ ও জাহিরী মতানুযায়ী ঈজাব-কবুলের শব্দ ব্যবহার ছাড়া শুধু কাজের মাধ্যমে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। কেননা এই জাতীয় দুর্বল লেনদেনের মাধ্যমে চুক্তি প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না, যেহেতু সন্তুষ্টি একটি গোপন ব্যাপার এবং শব্দের ব্যবহার ছাড়া ইহার প্রকাশ ঘটে না। তবে বিবাহ চুক্তির ব্যাপারে সকল ফকীহ একমত যে, ঈজাব-কবুলের শব্দ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়া বিবাহের চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ বিবাহ সমাজের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ধারা-১১৮০

ইশারা-ইংগিতে চুক্তি সম্পাদন কোন পক্ষ বা পক্ষবৃন্দ কোন কারণে কথা বলিতে অক্ষম হইলে সরাসরি ঈজাব-কবুল (প্রস্তাব ও সম্মতি) ছাড়াও শুধু ইশারা-ইংগিতেও চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে।১০

৬৭০

বিশ্লেষণ

পক্ষবৃন্দ বাকশক্তি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কথা না বলিয়া কেবল ইশারা-ইংগিতে চুক্তি করিলে তাহা বৈধ হইবে কিনা এই বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতবিরোধ রহিয়াছে। হানাফী মতে কথা বলিতে সক্ষম ব্যক্তির জন্য ইশারা-ইংগিতে চুক্তি করা বৈধ নহে। কেননা ইশারা-ইংগিত বাচনিক বা লেখনীর মাধ্যমে কৃত চুক্তির মত দৃঢ় ও শক্তিশালী হয় না। হানাফী মতে চুক্তি বৈধ হইবার জন্য শর্ত এই যে, চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দকে তাহাদের ইচ্ছা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করিতে হইবে। কোনরূপ দুর্বোধ্যতা, অস্পষ্টতা বা দুর্বলতা থাকিলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না।

চুক্তিকারী কথা বলিতে অপারগ হইলে, যেমন বােবা ইত্যাদি, সেই ক্ষেত্রে সে লিখিতে সক্ষম হইলে তাহাকে লিখিতভাবে মত প্রকাশ করিতে হইবে। লিখিতেও সক্ষম না হইলে সে ইশারার মাধ্যমে চুক্তি করিতে পারে।

ধারা-১১৮১

লিখিতভাবে চুক্তি সম্পাদন চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দ লিখিতভাবে তাহাদের চুক্তি সম্পাদন করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

ইশারা অথবা মৌখিকভাবে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার তুলনায় লিখিতভাবে চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়া অধিক উত্তম। এই অবস্থায় চুক্তিনামার কপি পক্ষবৃন্দের নিকট সংরক্ষিত থাকিতে হইবে এবং তাহা পক্ষবৃন্দের সাক্ষরযুক্ত হইতে হইবে। লিখিত এই চুক্তিনামা অস্পষ্ট অথবা অসংরক্ষিত হইলে চুক্তি বৈধ হইবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চিঠির মাধ্যমে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলিল, আমি তোমার নিকট আমার জন্তযানটি বিক্রয় করিলাম। চিঠি প্রাপ্তির মজলিসেই প্রাপক বলিল, আমি গ্রহণ করিলাম। তাহা হইলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে। আর চিঠি প্রাপ্তির মজলিসে সে কোন মন্তব্য না করিলে এবং অসম্মতি প্রকাশের ভাব দেখাইলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না।

উল্লেখ্য যে, এইভাবে পত্রের মাধ্যমে অন্যান্য চুক্তির মত বিবাহের চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না, যদিও চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দ উপস্থিত থাকে। কারণ বিবাহের চুক্তি বৈধ হইবার শর্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষীর উপস্থিতি এবং তকতৃক চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দের কথা শ্রবণ করা, যাহা চিঠির মাধ্যমে সম্ভব নহে।

৬৭১

শাফিঈ ও হাম্বলী মতে লিখিতভাবে অথবা চিঠির মাধ্যমে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার শর্ত এই যে, চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দকে অনুপস্থিত থাকিতে হইবে। পক্ষবৃন্দ উপস্থিত থাকিলে কথার মাধ্যমেই চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে হইবে, লেখার মাধ্যমে নহে।১১

ধারা-১১৮২

চুক্তি অনুষ্ঠানের শর্তাবলী চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করিতে হইবে –

(ক) ঈজাব ও কবুলের দ্বারা পক্ষবৃন্দকে তাহাদের অভিপ্রায় পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করিতে হইবে;

(খ) পক্ষবৃন্দের ঈজাব ও কবুলের ভাষা সংগতিপূর্ণ হইতে হইবে; এবং

(গ) পক্ষবৃন্দ মজলিসে উপস্থিত থাকিলে ঈজাব ও কবুল উক্ত মজলিসে অনুষ্ঠিত হইতে হইবে।১২

বিশ্লেষণ

ঈজাব অনুযায়ী কবুল হইতে হইবে। যেমন বিক্রেতা বলিল, আমি এই ঘোড়াটি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে তোমার নিকট বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলাম। ক্রেতা বলিল, আলি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘোড়াটি ক্রয় করিলাম, তাহা হইলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে। কিন্তু সে যদি বলে, আমি নয় হাজার টাকার বিনিময়ে ঘোড়াটি ক্রয় করিলাম, তাহা হইলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ ঈজাবের সাথে কবুলের সংগতি নাই।

ধারা-১১৮৩

প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক সম্মতি জ্ঞাপন করা জরুরী নহে, এক পক্ষের প্রস্তাব প্রদানের সাথে সাথেই অপর পক্ষ উহাতে সম্মতি প্রদান করিবে কি না তাহা প্রস্তাব প্রদানের মজলিসে ভাবিয়া দেখিবার অবকাশ তাহাদের থাকিবে; কিন্তু মজলিস শেষ হইবার পর এই অবকাশ বহাল থাকিবে না।

৬৭২

বিশ্লেষণ

এক পক্ষের প্রস্তাব প্রদানের সাথে সাথে অপর পক্ষের সম্মতি জ্ঞাপন জরুরী নহে। হানাফী মাযহাবমতে এক পক্ষ কর্তৃক প্রস্তাব প্রদানের পর তাহাতে অপর পক্ষ সম্মতি জ্ঞাপন না করিয়া চিন্তা-ভাবনা করার অবকাশ পাইবে যতক্ষণ প্রস্তাব প্রদানের মজলিস শেষ না হয়।

শাফিঈ মাযহাবমতে, প্রস্তাব প্রদানের সাথে সাথেই সম্মতি জ্ঞাপন করিতে হইবে। প্রস্তাবে সম্মতি প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত অন্য কোন কথা বা কাজ করা যাইবে

। প্রস্তাব প্রদানের সাথে সাথে সম্মতি জ্ঞাপন না করিলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। তবে উক্ত মাযহাবমতে প্রস্তাব প্রদানকারী তাহার প্রস্তাব প্রদানের পর অপর পক্ষ যদি “বিসমিল্লাহ”, “আলহামদু লিল্লাহ” ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করে তবে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে।১৩

ধারা-১১৮৪

চলমান অবস্থায় চুক্তি করা, যে কোন প্রকারের যানবাহনে যাতায়াত কালে পক্ষবৃন্দের মধ্যে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

প্লেনে, নৌকায়, লঞ্চে, রেল, ষ্টিমার, বাস ইত্যাদি যানবাহনে সফর করাকালে পক্ষবৃন্দ পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হইতে পারে। যান চলমান অবস্থায় থাকুক বা ষ্টেশনে বিরতিতেই থাকুক, উভয় অবস্থায় পক্ষবৃন্দ একই মজলিসে উপস্থিত আছে বলিয়া গণ্য হইবে। কারণ একই মজলিসের অর্থ হইল একই সময়ে পক্ষবৃন্দের একত্র অবস্থান, একই স্থানে নহে। তবে পক্ষবৃন্দ যদি একত্রে হাঁটিয়া পথ অতিক্রম করে অথবা একই ঘোড়াতে, একই বাসে বা ট্রেনের একই কামরায় বা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সওয়ার থাকে তবে প্রস্তাব প্রদানের সাথে সাথে অপর পক্ষকে সম্মতি জ্ঞাপন করিতে হইবে। সামান্য বিলম্বে সম্মতি জ্ঞাপন করিলেও হানাফী মতে চুক্তি বৈধ হইবে না। কারণ উভয়ে ইচ্ছা করিলে স্ব স্ব সওয়ারীকে দাঁড় করাইয়া চুক্তি সম্পাদন করিতে পারি, কিন্তু তাহারা তাহা করে নাই। একজনের প্রস্তাব প্রদানের পর অপরজন যদি পথ চলিতেই থাকে তাহা হইলে ইহা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।১৪

৬৭৩

ধারা-১১৮৫

মজলিস কখন পরিবর্তন হয় এক পক্ষ কর্তৃক প্রস্তাব প্রদানের পর তাহা লইয়া আলোচনা চলাকালে অপর পক্ষ সম্মতি জ্ঞাপনের পূর্বে নিজ স্থান হইতে দাঁড়াইয়া গেলে অথবা অন্য কোন কাজে লিপ্ত হইলে তাহা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

চুক্তির প্রস্তাব লইয়া আলোচনার সময় অপর পক্ষ প্রস্তাব গ্রহণ না করিয়া যদি নিজ স্থান হইতে দাঁড়াইয়া যায় অথবা প্রস্তাবে কোন প্রকারের সাড়া না দিয়া ভিন্ন কাজে লিপ্ত হয় তাহা হইলে ধরিয়া লইতে হইবে যে, বৈঠক পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে। অতঃপর অপর পক্ষ যদি প্রস্তাবে সাড়া দিয়া বলে, আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করিলাম, তাহা হইলে এই জাতীয় চুক্তি বৈধ বলিয়া গণ্য হইবে না।

ধারা-১১৮৬

প্রস্তাব বাতিল হওয়ার কারণসমূহ নিম্নবর্ণিত যে কোন কারণে প্রস্তাব বাতিল গণ্য হইবে –

(ক) মজলিসে অপর পক্ষের সম্মতি প্রদানের পূর্বেই প্রস্তাবক তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করিলে অথবা কোন কথা না বলিয়া মজলিস ত্যাগ করিলে অথবা অন্য কোন কাজে লিপ্ত হইলে।

(খ) অপর পক্ষ সরাসরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিলে। (গ) পক্ষবৃন্দ চুক্তি অনুষ্ঠানের মজলিস ত্যাগ করিলে।

(ঘ) অপর পক্ষ সম্মতি প্রদানের পূর্বেই প্রস্তাবক চুক্তি করিবার অযোগ্য হইয়া পড়িলে।

(ঙ) প্রস্তাব প্রদানের পর তাহাতে সম্মতি জ্ঞাপন করিবার পূর্বেই চুক্তির বিষয়বস্তু ক্ষতিগ্রস্ত বা পরিবর্তিত হইয়া গেলে।

বিশ্লেষণ

যেমন এক ব্যক্তি একটি পশু বিক্রয়ের প্রস্তাব করিল। অপর পক্ষের সম্মতি জ্ঞাপনের পর তাহা বুঝিয়া লইবার পূর্বেই উহার চোখ নষ্ট হইয়া গেল বা অন্য কোন

৬৭৪

অঙ্গহানি ঘটিল। এই অবস্থায় প্রস্তাব বাতিল গণ্য হইবে। অথবা এক ব্যক্তি তাহার আঙ্গুরের রস বিক্রয়ের প্রস্তাব করিল। রস বুঝিয়া লইবার পূর্বেই উহা মদ বা শরাবে পরিণত হইয়া গেলে সেই অবস্থায় প্রস্তাবটি বাতিল গণ্য হইবে।১৫

ধারা-১১৮৭

ওকালতের শর্তাবলী (ক) যে কাজের জন্য উকিল নিযুক্ত করা হইতেছে মক্কেলকে সেই সকল কাজের উপর সকল প্রকারের বৈধ ভোগ-ব্যবহারের অধিকারী হইতে হইবে।

(খ) মক্কেলকে সুষ্ঠ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন হইতে হইবে। (গ) উকিলকে সুষ্ঠ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন হইতে হইবে।

(ঘ) যাহার জন্য উকিল নিয়োগ করা হয় তাহার জন্য তিনটি শর্তের উল্লেখ থাকিতে হইবে।

(১) জ্ঞাত জিনিসের জন্য উকিল নিযুক্ত হইবে; (২) বৈধ জিনিসের লেন-দেনের জন্য উকিল নিযুক্ত হইবে;

(৩) এমন জিনিসের জন্য উকিল নিযুক্ত হইবে যে ক্ষেত্রে উকিল নিয়োগ বৈধ।

ধারা-১১৮৮ মামলা-মোকদ্দমায় উকিলের অধিকার সত্য প্রকাশ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যাহা কিছুর প্রয়োজন তাহার সব কিছুই করা উকিলের জন্য বৈধ।

বিশ্লেষণ

ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে মামলা-মোকদ্দমায় সত্য প্রকাশ তথা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য বৈধ পন্থায় যাহা কিছুর প্রয়োজন পড়ে, উকিল তাহার সব কিছুই করিতে পারেন। প্রয়োজন বােধে উকিল তাহার মোয়াক্কেলের পক্ষে মাল গ্রহণ করিবার এখতিয়ার লাভ করিবেন। ইমাম যুফার, শাফিঈ ও হাম্বলী মতে উকিল তাহার মক্কেলের পক্ষে মাল গ্রহণ করিবার অধিকারী হইবেন না। কারণ তাহাদের

৬৭৫

মতে অধিকাংশ উকিল মামলা পরিচালনায় সততার পরিচয় প্রদান করিলেও মাল গ্রহণে সততার পরিচয় প্রদানে ব্যর্থ হইতে পারেন।

ধারা-১১৮৯ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উকিল নিযুক্ত করা

মোয়াক্কেল কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে উকিল তাহার দায়িত্ব সম্পাদন করিতে পারেন।

বিশ্লেষণ

মোয়াক্কেল কর্তৃক নির্ধারিত শর্ত পালনের মাধ্যমেই উকিল তাহার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করিবেন। নির্ধারিত শর্ত পালনে ব্যর্থ হইলে ওকালত বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে অথবা বিষয়টি মোয়াক্কেলের অনুমতির উপর মওকুফ থাকিবে। উল্লেখ্য যে, মোয়াক্কেলের শর্তের পরিপন্থী কোন কাজ বা মোয়াক্কেল লাভবান হয়, যেমন মোয়াক্কেল কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা, তাহা হইলে এই বিক্রয় বৈধ গণ্য হইবে। পক্ষান্তরে যে লেনদেনে মোয়াক্কেলের কোন প্রকারের স্বার্থ সংরক্ষিত হয় না সেই জাতীয় সকল প্রকারের লেনদেন অবৈধ গণ্য হইবে।

ধারা-১১৯০ মোয়াক্কেলের মাল নিজের জন্য ক্রয়-বিক্রয় করা সঠিক ও ন্যায্য মূল্যে উকিল তাহার মক্কেলের মাল নিজের জন্য অথবা পিতা, পিতামহ, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ক্রয়-বিক্রয় করিতে পারেন।

বিশ্লেষণ

মোয়াক্কেলের মাল উকিল তাহার জন্য অথবা তাহার পিতা, পিতামহ, স্ত্রী সন্তানদের জন্য ক্রয়-বিক্রয় করিতে পারেন কিনা এ বিষয়ে ইমামদের মতভেদ রহিয়াছে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে উকিল তাহার নিজের অথবা তাহার পিতা, পিতামহ, স্ত্রী বা সন্তানদের জন্য মোয়াক্কেলের মাল ক্রয় করিতে পারেন না।

৬৭৬

কারণ এই জাতীয় লেনদেন উকিল তাহার আপনজনদের জন্য বিশেষ সুযোগ দানের দোষে দোষী হইতে পারেন।

ইমাম মুহাম্মাদ ও আবু ইউসুফ (র)-এর মতে উকিল ন্যায্য মূল্যে তাহার নিজের ও নিজের পিতা, পিতামহ, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য মোয়াক্কেলের মাল ক্রয় করিতে পারেন। মালিকী মাযহাব মতে উকিল তাহার মোয়াক্কেলের মাল তাহার নিজের জন্য ক্রয়-বিক্রয় করিতে পারিবেন না। তবে সঠিক ও ন্যায্য মূল্যে তিনি

তাহার স্ত্রী ও পিতার জন্য ক্রয় করিতে পারেন।

ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে সঠিক ও ন্যায্য মূল্যে উকিল তাহার পিতা, পিতামহ ও বালেগ সন্তানের জন্য তাহা ক্রয় করিতে পারেন। তবে উকিল তাহার নিজের জন্য অথবা তাহার নাবালেগ সন্তানদের জন্য অথবা পাগলের জন্য ক্রয়

করিতে পারিবেন না।

ধারা-১১৯১ যে সকল চুক্তিতে একই মজলিস জরুরী নহে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য সকল প্রকার চুক্তিতে একই মজলিস হওয়া শর্ত। কিন্তু নিম্নোক্ত তিন প্রকার চুক্তি উহার ব্যতিক্রম : (ক) ওসিয়াত; (খ) ওলী নিয়োগ; (গ) ওকালত।

বিশ্লেষণ

ওসিয়াতের ক্ষেত্রে একই মজলিস হইতে পারে না। কারণ ওসিয়াতের কার্যকারিতা ব্যক্তির মৃত্যুর পরে শুরু হয়। ওলী নিয়োগ অর্থাৎ কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাহার সন্তানদের দেখাশুনা করিবার জন্য অপর ব্যক্তিকে ওসিয়াত করিয়া যাওয়া। এই প্রকারের চুক্তির ক্ষেত্রেও ওসিয়াতকারীর জীবদ্দশায় অপর পক্ষ দায়িত্ব গ্রহণ করিতে পারে না। সুতরাং এই অবস্থায় উভয় পক্ষের একই মজলিসে থাকাও সম্ভব নহে। ওকালত বা প্রতিনিধিত্ব হইল, কোন ব্যক্তি কর্তৃক তাহার জীবদ্দশায় তাহার কাজের দায়িত্ব অপর ব্যক্তিকে সোপর্দ করা। কারণ প্রতিনিধিত্ব গ্রহণ কথার মাধ্যমেও হইতে পারে এবং কাজের মাধ্যমেও হইতে পারে। মজলিসে অনুপস্থিত কোন ব্যক্তিকেও প্রতিনিধি মনোনীত করা যায়। তাই এই জাতীয় চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার জন্যও একই মজলিসে পক্ষবৃন্দের উপস্থিতি জরুরী নহে।

৬৭৭

ধারা-১১৯২

চুক্তির বিষয়বস্তু চুক্তির বিষয়বস্তু সাধারণত মাল হইয়া থাকে, তবে ইহার ব্যতিক্রমও হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

চুক্তির বিষয়বস্তু কখনও মাল জাতীয় জিনিস হইতে পারে। যেমন বন্ধক দান অথবা বিক্রয়যোগ্য পণ্য ইত্যাদি। আবার কখনও চুক্তির বিষয়বস্তু মাল ছাড়া অন্য কিছুও হইতে পারে। যেমন : বিবাহের চুক্তিতে “পক্ষ”। আবার চুক্তির বিষয়বস্তু লভ্যাংশও হইতে পারে। যেমন : ঘর ভাড়ায় প্রদান করা, জমি বর্গা দেওয়া; শ্রমিকের পারিশ্রমিক প্রদান করা ইত্যাদি।

ধারা-১১৯৩

চুক্তির বিষয়বস্তুর শর্তাবলী (১) চুক্তির সময় বিষয়বস্তুটি মওজুদ থাকিতে হইবে। (২) চুক্তির বিষয়বস্তু হালাল জিনিস হইতে হইবে।

(৩) চুক্তি অনুষ্ঠানের সময় চুক্তির বিষয়বস্তু হস্তান্তরযোগ্য হইতে হইবে।

(৪) চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দের চুক্তি অনুষ্ঠিতব্য বস্তু সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা থাকিতে হইবে; এবং

(৫) চুক্তির বিষয়বস্তু পাক হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

প্রথম শর্ত, চুক্তির বিষয়বস্তু চুক্তি অনুষ্ঠানের সময় মওজুদ থাকিতে হইবে। সুতরাং অনুপস্থিত বা অদৃশ্য কোন বস্তুর উপর চুক্তি অনুষ্ঠান বৈধ হইবে না। যেমন ফসল উৎপন্ন হইবার পূর্বেই তাহা বিক্রয় করা। গবাদি পশুর গর্ভস্থ বাচ্চা (ভ্রুণ) বিক্রয় করা ইত্যাদি।

অনুরূপভাবে ভবিষ্যতে যে বস্তুর উপস্থিতি অসম্ভব তাহার চুক্তিও অবৈধ। রাসূলুল্লাহ (সা) এই জাতীয় চুক্তিকে অবৈধ বলিয়াছেন।

৬৭৮

نهى البي صلى الله عليه وسلم عن بيع ماليس عند الإنسان.

“যে বস্তু মানুষের কাছে বিদ্যমান নাই তাহার ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ”।১৬ ইহা ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শাফিঈ (র)-এর মাযহাব। তাহাদের মতে বাঈ ছালাম, (অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়) ইজারা ইত্যাদির ক্ষেত্রে চুক্তি অনুষ্ঠান বৈধ হইবে। যদিও এখানে চুক্তি অনুষ্ঠিতব্য বস্তু চুক্তি অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিত নাই।

ইমাম মালেক কেবল হেবা, ওয়াকফ ও বন্ধকের ক্ষেত্রে এই জাতীয় চুক্তি অনুষ্ঠান বৈধ মনে করেন। তাহাদের মতে ভবিষ্যতে উপস্থিতির সম্ভাবনা রহিয়াছে এইরূপ বিষয়ে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে, যদিও চুক্তি অনুষ্ঠানের সময় উক্ত বস্তু উপস্থিত না থাকে।

হাম্বলী মাযহাব মতে যে সকল বিষয়ে প্রতারণার আশংকা রহিয়াছে সেই সকল ক্ষেত্রে চুক্তি অবৈধ গণ্য হইবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) এই জাতীয় লেনদেন অবৈধ বলিয়াছেন?

نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن بيع الغرر .

“নবী (সা) প্রতারণাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করিয়াছেন।” সকল ফকীহ এ বিষয়ে একমত যে, উৎপন্ন হইবার পূর্বে ফসলাদি ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ।

نهى النبى صلى الله عليه وسلم عن بيع الثمار حتى يبدو صلاحها .

“নবী (সা) ফল পুষ্ট হওয়ার পূর্বে ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন”।১৭

যদি ফসলাদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তাহা ব্যবহার করা সম্ভব। তাহা হইলে উহার ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে। কারণ চুক্তির বিষয়বস্তু মওজুদ রহিয়াছে। এই অবস্থায় ফসলাদি জমিনে অথবা বৃক্ষের উপর ফল কাটা পর্যন্ত থাকিতে পারে। আর যদি ফল অথবা ফসল এমন পর্যায়ে থাকে যাহা কাজে লাগানো সম্ভব নহে, যেমন ফল এখনও পাকে নাই এবং ফসল এখনও কাটিবার উপযোগী হয় নাই, সেক্ষেত্রে ইমাম মালেক ও ইমাম মুহাম্মদের মতে উহা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি অনুষ্ঠান বৈধ। ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও শাফিঈ (র)-এর মতে এই জাতীয় চুক্তি অবৈধ। কারণ পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত মাঠে বা গাছে রেখে দেওয়ার মধ্যে ক্রেতার এবং বিক্রেতার লোকসান রহিয়াছে, তাই চুক্তির ক্ষেত্রে ইহা অবৈধ। আর যদি ক্ষেতের ফসলের কিছু অংশ পাকিয়া যায় এবং অবশিষ্ট কাঁচা থাকিয়া যায় সেক্ষেত্রে ইমাম মালেক, ইবন তাইমিয়া, ইবন

৬৭৯

কায়্যিম-এর মতে ঐ বিষয়ের চুক্তি বৈধ। তবে হানাফী, শাফিঈ, হাম্বলী ও জাহিরী মাযহাব মতে এই জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বৈধ নহে। কারণ ইহার মধ্যে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সব ধরনের বস্তুর চুক্তি সামিল আছে। যেহেতু অজ্ঞাত বস্তুর চুক্তি বৈধ নহে, তাই এই জাতীয় লেনদেন অবৈধ। যে সকল ইমামের মতে এই জাতীয় চুক্তি অবৈধ তাহাদের উদ্দেশ্য হইল সতর্কতা অবলম্বন, যাহাতে অপরের মাল গ্রহণ করা না হয়। আর যে সকল ইমামের মতে এই জাতীয় লেনদেন (চুক্তি) বৈধ তাহাদের উদ্দেশ্য হইল সর্বসাধারণের উপকারার্থে লেনদেন সহজসাধ্য করা।

দ্বিতীয় শর্ত ও চুক্তির বিষয়বস্তু হালাল হইতে হইবে। সুতরাং হারাম জাতীয় সকল মালের ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি অবৈধ। যেমন মৃত জন্তু, শূকর, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়। কারণ শরীআতে এইগুলি মাল হিসাবে স্বীকৃত নহে। অনুরূপভাবে মালিকানাবিহীন বস্তু, যেমন সমুদ্রের মাছ, আকাশে উড্ডয়নরত পাখি এবং সর্বসাধারণের ব্যবহৃত বস্তু, যেমন রাস্তা, পুল ইত্যাদি যেসকল বস্তু ব্যক্তি মালিকানা গ্রহণ করে না তাহার লেনদেন তথা চুক্তিও অবৈধ।

তৃতীয় শর্তঃ চুক্তি অনুষ্ঠানের সময় চুক্তির বিষয়বস্তু হস্তান্তরযোগ্য হইতে হইবে। এ বিষয়ে ফকীহগণ একমত যে, যে সকল বস্তু হস্তান্তরযোগ্য নহে এবং যাহা মানুষের করায়ত্ত নহে তাহা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বৈধ নহে। যেমন : আকাশে উড্ডয়নরত পাখি, সমুদ্রের মাছ ইত্যাদি।

চতুর্থ শর্ত ও চুক্তির বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে এবং পক্ষবৃন্দের বস্তুটি . সম্পর্কে ধারণা থাকিতে হইবে। ফকীহগণ একমত যে, চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পক্ষবৃন্দের সম্যক জ্ঞান বা প্রয়োজনীয় ধারণা থাকিতে হইবে, যাহাতে পরবর্তীতে বিবাদের সূত্রপাত হওয়ার আশংকা থাকে।১৮

পঞ্চম শর্ত ও চুক্তির বিষয়বস্তু পাক হইতে হইবে। হানাফী মাযহাব ব্যতীত অন্য সকল মাযহাবের ইমামগণ একমত যে, চুক্তিকৃত বস্তু পাক হইতে হইবে, নাপাক বস্তুর চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে। নাপাক বস্তু, যেমন কুকুর, যদিও উহা শিকারী হয়। কারণ শরীয়াতে ইহার ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হইয়াছে। অনুরূপভাবে মৃত বস্তু, যেমন বক, চিল, কাক ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নহে।

তবে হানাফী মাযহাব মতে নাপাক বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বৈধ। যেমন শূকরের লোম, মৃত পশুর চামড়া ইত্যাদি। কারণ ইহা হইতে মানুষ উপকার লাভ করিয়া থাকে। তবে শরীয়াত যে সকল বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করিয়াছে তাহার চুক্তি হানাফী মতেও বৈধ নহে। যেমন শরাব, শূকর, মৃত জীব, রক্ত

৬৮০

ইত্যাদি। হানাফী মাযহাব মতে হিংস্র জীবজন্তু ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। কারণ ইহার দ্বারাও মানুষ উপকার লাভ করিয়া থাকে। অর্থাৎ হানাফী মতে ঐ সকল বস্তুর চুক্তি বৈধ যাহার দ্বারা মানুষ উপকার লাভ করিতে পারে। কারণ আল্লাহ পাক বলেন :

خلق لكم ما في الأرض جميعا .

“তিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের উপকারের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন” (২৪ ২৯)।১৯

ধারা—১৯৯৪

চুক্তির অভিপ্রায় চুক্তি অনুষ্ঠানের জন্য চুক্তির অভিপ্রায় জরুরী এবং এই অভিপ্রায় প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যও হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার জন্য সুনির্দিষ্ট অভিপ্রায় থাকিতে হইবে। এই অভিপ্রায় দুইভাবে হইতে পারে : (ক) প্রকাশ্য অভিপ্রায় কথা অথবা কাজের মাধ্যমে এবং (খ) অপ্রকাশ্য অভিপ্রায় অর্থাৎ উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা প্রকাশ করা। প্রকাশ্য অভিপ্রায় বলিতে এমন কথা বা কাজকে বুঝায় যাহার দ্বারা চুক্তি অনুষ্ঠান বৈধ হয়। সুতরাং পক্ষবৃন্দের অভিপ্রায় যখন পরস্পরের ইচ্ছার সহিত সংগতিপূর্ণ হয় কেবল তখনই চুক্তি অনুষ্ঠান বৈধ হয়। অন্যথায় চুক্তি বাতিল গণ্য হয়, কখনও কখনও শুধুমাত্র প্রকাশ্য অভিপ্রায় পাওয়া যায় এবং অপ্রকাশ্য অভিপ্রায় সেখানে থাকে না। যেমন ঘুমন্ত অথবা পাগল ব্যক্তির পক্ষ হইতে প্রকাশ্য অভিপ্রায় প্রকাশ পায়, কিন্তু ইহার দ্বারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না। কারণ চুক্তির অভিপ্রায় তাহাদের নাই। অনুরূপভাবে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির অভিপ্রায় চুক্তি অনুষ্ঠানের জন্য বৈধ নহে। কারণ তাহারও চুক্তি করিবার অভিপ্রায় থাকে না। ইহা সত্ত্বেও ফকীহগণ নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির চুক্তির বৈধতা সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করিয়াছেন। ইমাম আহমাদ এবং কতক মালিকী ফকীহর মতে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কোন চুক্তি বৈধ নহে।

হানাফী ও শাফিঈ মাযহাব মতে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির নেশা বা বেহুশী যদি বৈধ অথবা জবরদস্তিমূলক পন্থায় হয় তবে তাহার কোন কথাই কার্যকরী হইবে না। আর যদি সে হারাম পন্থায় এবং স্ব-ইচ্ছায় নেশাগ্রস্ত হইয়া থাকে তাহা হইলে

শাস্তিমূলকভাবে তাহার কথা কার্যকরী হইবে। সুতরাং তাহার ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ-তালাক সব কিছুই বৈধ গণ্য হইবে।

যদি এক পক্ষ এমন ভাষায় কথা বলে যে ভাষা অপর পক্ষের বােধগম্য নহে, তাহা হইলে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ তাহার পক্ষ হইতে প্রকাশিত ভাষা বা কথার দ্বারা তাহার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য প্রকৃতপক্ষে প্রকাশ পাইতেছে না। অথচ চুক্তির ক্ষেত্রে এই ইচ্ছা বা অভিপ্রায় হইল আসল বিষয়। তবে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে যদি এমন সব ক্ষেত্রে অস্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করা হয় যাহার মধ্যে বাস্তব এবং ঠাট্টা সমান বলিয়া গণ্য হয়, যেমন বিবাহ, তালাক, দাসমুক্ত করা ইত্যাদি এবং সে ভাষার উদ্দেশ্য যদি পক্ষবৃন্দ বুঝিতে সক্ষম হয় সেক্ষেত্রে অস্পষ্ট ভাষার দ্বারাও চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে। কারণ হানাফী ও শাফিঈ মতে অভিপ্রায় প্রকাশ পাওয়ার জন্য ভাষার উদ্দেশ্য বুঝিতে পারাই যথেষ্ট।

যখন কোন শিক্ষক ছাত্রদের সম্মুখে কোন বিষয়ে উদাহরণ সহকারে বুঝাইবার জন্য বারবার কোন কথা উচ্চারণ করেন, কিন্তু শিক্ষকের উদ্দেশ্য কোন চুক্তি করা নহে, তবে সেক্ষেত্রে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ প্রকৃতপক্ষে চুক্তি অনুষ্ঠান শিক্ষকের উদ্দেশ্য নহে, বরং ছাত্রদের বুঝানই শিক্ষকের উদ্দেশ্য।

ঠাট্টা-মশকরার জন্য ব্যবহৃত কোন শব্দের দ্বারাও চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না। তবে ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইয়া যায় যদি তাহা ক্রয়-বিক্রয় অথবা বিবাহ-তালাকের ক্ষেত্রে হয়। হানাফী ও হাম্বলী মতে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তি

অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ এই চুক্তির মধ্যে তাহার ইচ্ছা তথা সন্তুষ্টি নাই। তবে যে পাঁচটি ক্ষেত্র শরীয়াত কর্তৃক নির্ধারিত রহিয়াছে সেসব ক্ষেত্রে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে। ক্ষেত্র পাঁচটি হইল : বিবাহ, তালাক, তালাক প্রত্যাহার করা, গোলাম মুক্ত করা এবং শপথ। এই পাঁচটি ক্ষেত্রে ঠাট্টা-মশকরার শব্দ ব্যবহার করিলেও চুক্তি অনুষ্ঠিত হইয়া যায়। কারণ হাদীসে উল্লেখ আছে?

ثلاثة جدهن جد وهزلهن جد.

“এমন তিনটি বিষয় আছে যাহার বাস্তবও বাস্তব এবং ঠাট্টাও বাস্তব”। কোন কোন রিওয়ায়াতে “তালাক হইতে প্রত্যাবর্তন” এবং কোন কোন রিওয়ায়াতে “শপথ” উল্লেখ রহিয়াছে। সর্বমোট পাঁচটি কারণ। এই সকল বিষয় শরীয়াতের খুবই স্পর্শকাতর বিষয় এবং ইহা “হক্কুল্লাহ” বা আল্লাহ অধিকার। সুতরাং এইগুলি ঠাট্টা মশকরার জন্য ব্যবহাৰ্য্য নহে।

৬৮২

ভুল শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় না। কারণ ভুল বলা হয় অনিচ্ছাকৃত কোন কাজ করাকে। যেমন তাহার ইচ্ছা ছিল এক ধরনের কথা বলিবার কিন্তু ভুলবশত মুখ দ্বারা অন্য কথা বাহির হইয়া গিয়াছে। যেমন উদ্দেশ্য ছিল ক্রয়-বিক্রয় করা, কিন্তু বলিয়া ফেলিল, তালাক দিলাম।

শাফিঈ মতে ভুলকারী ব্যক্তি পাগল ও ভুলে যাওয়া ব্যক্তির মত, তাহার কার্যের দ্বারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ হাদীসে উল্লেখ আছে?

قال النبي صلى ع ان الله تجاوز لي عن أمتي الخطا

والنسيان وما استكره عليه .

“রাসূলুল্লাহ (স) বলিয়াছেন, আল্লাহ পাক আমার উম্মতের জন্য ভুল এবং যে কাজে বান্দাকে জোরপূর্বক বাধ্য করা হইয়াছে এই জাতীয় সব কিছুকে ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন”।

হানাফী মতে ভুল চুক্তি করিলে তাহা বৈধ ও কার্যকরী হইবে। কারণ ইচ্ছা একটি গোপন বিষয়, যাহা আমরা জ্ঞাত নহি। সুতরাং আমরা যদি ভুলকারীর কথা গ্রহণ করি তাহা হইলে সমাজে প্রচুর বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে।

ধারা-১১৯৫

অবৈধ বল প্রয়োগে কৃত চুক্তি অবৈধ বল প্রয়োগে কৃত কোন চুক্তি বৈধ হইবে না।

বিশ্লেষণ

চুক্তি বৈধ হইবার শর্ত হইল পক্ষবৃন্দের “সন্তুষ্টি” এবং এইখানে জবরদস্তিমূলক ভাবে চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি পাওয়া যায় নাই বিধায় চুক্তিও বৈধ হইবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন : “আল্লাহ পাক আমার উম্মতের ভুল এবং যাহা করিতে তাহাকে বলপ্রয়োগে বাধ্য করা হইয়াছে তাহা ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন”।

শাফিঈ ও হাম্বলী মতে জবরদস্তিমূলকভাবে অনুষ্ঠিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে। ইমাম মালেক (র)-এর মতে জবরদস্তিমূলক চুক্তি পালন করা চুক্তিকারীর জন্য জরুরী নহে, বরং পরবর্তীতে উক্ত চুক্তি বহাল অথবা বাতিল করিবার অধিকার থাকিবে। ‘

৩৮৩

হানাফী মাযহাব মতে জবরদস্তিমূলকভাবে অনুষ্ঠিত সকল চুক্তি ঠাট্টা-মশকরার পর্যায় গণ্য হইবে। সুতরাং মাল জাতীয় চুক্তি, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, বন্ধক ইত্যাদি ক্ষেত্রে জবরদস্তির পর্যায় শেষ হইলে পর চুক্তি বহাল রাখিবার বা না রাখিবার ক্ষমতা বলপ্রয়োগে বাধ্যকৃত ব্যক্তির থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত এখতিয়ার তাহার জন্য তিন দিন পর্যন্ত থাকিবে এবং চুক্তির অপর পক্ষেরও রাজি থাকিতে হইবে। তিনদিন পর অথবা চুক্তির অপর পক্ষ রাজি না থাকিলে চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে।২০

উল্লেখ্য যে, হানাফী মতে হক্কুল্লাহ সংশ্লিষ্ট পাঁচটি বিষয়ে (বিবাহ, তালাক, তালাক প্রত্যাহার, শপথ, গোলাম মুক্তি) জবরদস্তিমূলকভাবে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইলেও তাহা বৈধ গণ্য হইবে। কারণ শরীয়াতে এই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হইয়াছে যে, ইহার মধ্যে বাস্তবও বাস্তব এবং ঠাট্টাও বাস্তব অর্থাৎ যে অবস্থাতেই চুক্তি অনুষ্ঠিত হউক তাহা বৈধ গণ্য হইবে।

ধারা-১১৯৬ চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পক্ষবৃন্দের স্বাধীনতা ব্যক্তিগত, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কৃত যে কোন ধরনের চুক্তি বৈধ, যতক্ষণ না উহা শরীআতের কোন বিধানের পরিপন্থী হয়।

বিশ্লেষণ

ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, চুক্তি অনুষ্ঠানের মূল ভিত্তি হইল পক্ষবৃন্দের স্বেচ্ছাসম্মতি। কারণ আল্লাহ পাক বলেন :

T

ايها الذين أموا لأتأكلوا أموالكم بينكم بالباطل الا أن تكون

تجارة عن تراض منكم.

“হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সম্মত হইয়া ব্যবসা করা বৈধ” (সূরা নিসা : ২৯)।

فإن طبن لكم عن شئ منه نفسا فكلوه هنيئا مريئا .

৬৮৪

“সন্তুষ্টচিত্তে তাহারা মোহরের কিয়দংশ ছাড়িয়া দিলে তোমরা তাহা স্বছন্দে ভোগ করিতে পার” (সূরা নিসা : ৪)।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ

اما البيع عن تراض

“ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠান পারস্পরিক সম্মতি নির্ভর”।২১

يحل مال امري مسلم الا عن طيب نفس منه .

“কোন মুসলমানের মাল তাহার সম্মতি ব্যতীত হস্তগত করা বৈধ নহে”।২২ সুতরাং পক্ষবৃন্দের সন্তুষ্টির মাধ্যমেই কেবল চুক্তি অনুষ্ঠান বৈধ হয়, একমাত্র বিবাহ ছাড়া। কারণ বিবাহের চুক্তি বৈধ হইবার জন্য শুধু পক্ষবৃন্দের সন্তুষ্টি যথেষ্ট নহে, বরং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষীর প্রয়োজন রহিয়াছে এবং বিবাহের ঘোষণা প্রকাশ্যে করিতে হইবে।

উল্লেখ্য যে, কোন কোন ক্ষেত্রে আবার কোন এক পক্ষের সম্মতি ছাড়াও চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে। যেমন সরকার ঋণ গ্রহীতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাহার ঋণ পরিশোধে বাধ্য করিয়া তাহার মাল বিক্রয় করিয়া দিতে পারে অথবা সর্বসাধারণের উপকারার্থে কোন মালের মালিকানাও সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে গ্রহণ করিতে পারে। চুক্তির স্বাধীনতা সম্পর্কে ফকীহগণের মধ্যে দুই ধরনের মত রহিয়াছে।

১। যাহিরী মাযহাব মতে সব ধরনের চুক্তি অবৈধ যতক্ষণ না তাহার পক্ষে বৈধতার কোন দলীল পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রত্যেক চুক্তি বা শর্ত, তাহার পক্ষে যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়াত কর্তৃক বৈধ হইবার প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহা অবৈধ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেনঃ

من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد .

“যদি কেহ এমন কোন কাজ করে যাহাতে আমার নির্দেশ নাই উহা প্রত্যাখ্যাত”।২২।

সুতরাং যে সকল চুক্তির অনুকূলে শরীআতের সমর্থন নাই সেই জাতীয় সকল চুক্তি অবৈধ গণ্য হইবে। কেননা মানুষ যদি এমন কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যাহার অনুমতি শরীয়াত তাহাকে প্রদান করে নাই। তবে এইরূপ চুক্তির দ্বারা হালালকে হারামে অথবা হারামকে হালালে পরিণত করার আশংকা আছে। অথচ শরীয়াত

৬৮৫

মানুষকে উক্ত ক্ষমতা প্রদান করে নাই। ইবন হাম (র) উপরে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেন যে, চুক্তি স্বাভাবিকভাবে বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে, যতক্ষণ না শরীয়াতে তাহা বৈধ হইবার সুস্পষ্ট কারণ বিদ্যমান থাকে। অপর এক হাদীসে উল্লেখ আছে, নবী করীম (সা) বলিয়াছেন?

ماكان من شرط ليس في كتاب الله فهو باطل وإن كان مائه

.. “যে শর্তের উল্লেখ আল্লাহর কিতাবে নাই তাহা বাতিল, উহার সংখ্যা এক শত হইলেও”।

(২) হাম্বলী ও অন্য সকল মাযহাব মতে যে কোন চুক্তি বৈধ যতক্ষণ না উহা অবৈধ হওয়ার পক্ষে কোন দলীল পাওয়া যায়। কারণ উপরে বর্ণিত আয়াতে বা হাদীসে চুক্তি বৈধ হওয়ার জন্য পক্ষবৃন্দের স্বেচ্ছা সম্মতিকে শর্ত হিসাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। কুরআন মজীদে আরও বলা হইয়াছে।

نائها الذين آمنوا أوفوا بالعقود .

“হে মুমিনগণ! তোমরা অংগীকার (চুক্তি) পূর্ণ করিবে” (সূরা মাইদা : ১)।

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা চুক্তি পূর্ণ করিতে নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন। অনুরূপভাবে যে সকল চুক্তি মানুষের উপকারার্থে করা হয় তাহাও বৈধ, যতক্ষণ না তাহা অবৈধ হওয়ার পক্ষে শরীয়াতের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়। মহানবী (সা) বলেনঃ

؟ أو أحل

الصنځ جائز بين المسلمين الأصلا م حراما والمسلمون على شروطهم الأشرطا محترم حلا؟ أو أحل

. L

“মুসলমানদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন বৈধ। কিন্তু যে সমঝোতা স্থাপনে হালাল হারামে অথবা হারাম হালালে পরিণত হয় তাহা বৈধ নহে। অনুরূপভাবে মুসলমানদের মধ্যে অনুষ্ঠিত যে কোন চুক্তি বৈধ। কিন্তু যে চুক্তি হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল করে তাহা বৈধ নহে”।

الناس على شروطهم وافقت الحق.

“মানুষ সত্যের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ এইরূপ সকল চুক্তি পালনে বাধ্য”। সাধারণত এই ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিমের কোন পার্থক্য নাই।২৩

৬৮৬

ধারা-১১৯৭

চুক্তিতে শর্ত আরোপ

শরীয়াতের পরিপন্থী নহে এইরূপ যে কোন শর্ত চুক্তিপত্রে সন্নিবিষ্ট করা

বৈধ।

বিশ্লেষণ

চুক্তিপত্রে শর্ত সংযোজনের ব্যাপারেও ফকীহগণের মধ্যে দুইটি মত বিদ্যমান। (১) যাহিরী মাযহাব মতে সকল প্রকারের শর্ত অবৈধ, যতক্ষণ না তাহার পক্ষে বৈধতার কোন দলীল পাওয়া যায়। (২) হাম্বলী ও অন্য সকল মাযহাব মতে যে কোন শর্ত বৈধ, যতক্ষণ না উহা কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী হয়। দ্বিতীয় মতটি আবার দুই ধারায় বিভক্ত।

(ক) শর্ত নিরপেক্ষ, বৈধও নহে এবং অবৈধও নহে, বরং যে সকল শর্ত শরীআতে হারাম ঘোষিত হয় নাই তাহা বৈধ গণ্য হইবে।

(খ) শর্ত নিরপেক্ষ নহে, বরং যে কোন এক অবস্থার সহিত উহা সম্পর্কিত। তাই যে সকল শর্ত শরীয়াত পরিপন্থী উহা অবৈধ, অন্য সব শর্ত বৈধ।

ধারা-১১৯৮ চুক্তির শর্তাবলীর শ্রেণীবিভাগ ও সংজ্ঞা (ক) কার্যকারিতার দিক হইতে চুক্তির শর্তাবলী তিন শ্রেণীতে বিভক্ত – (১) সহীহ শর্ত; (২) ফাসিদ শর্ত; (৩) বাতিল শর্ত। (খ) শর্তসমূহের সংজ্ঞা :

(১) যে শর্ত চুক্তির চাহিদা বা প্রয়োজন মোতাবেক চুক্তির সহিত সাম স্যপূর্ণ হয়, শরীআতের বিধান সম্মত হয় এবং সমাজের প্রচলিত প্রথা মোতাবেক হয়, তাহাকে সহীহ শর্ত বলে।

(২) যে শর্ত চুক্তি মোতাবেক বৈধ নহে, শরীআত পরিপন্থী এবং সমাজেও উহার প্রচলন অনুপস্থিত, তাহাকে ফাসিদ শর্ত বলে।

৬৮৭

(৩) যে শর্ত চুক্তির সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যাহা শরীআতের পরিপন্থী তাহাকে বাতিল শর্ত বলে।

বিশ্লেষণ

চুক্তির চাহিদা মোতাবেক উহার সহিত শর্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে। যেমন বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্যের মূল্য পরিশোধের শর্ত আরোপ করিল। অথবা বিক্রেতা বলিল, মূল্য পরিশোধের পূর্ব পর্যন্ত পণ্য তাহার নিকটই থাকিবে অথবা বিবাহের সময় স্ত্রী স্বামীর প্রতি শর্ত আরোপ করিয়া বলিল যে, বিবাহের পর তাহার ভরণ-পোষণের খরচাদি স্বামীকে বহন করিতে হইবে ইত্যাদি।

শরীআত সম্মত শর্ত আরোপের উদাহরণ : চুক্তির পক্ষবৃন্দ মাল ক্রয়-বিক্রয়ের সময় বাকীতে লেনদেন করার অথবা এখতিয়ারের শর্ত আরোপ করা অথবা বিবাহের সময় স্বামী এই শর্তে বিবাহ করিল যে, প্রয়োজন পড়িলে সে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারিবে। সমাজে প্রচলিত প্রথানুযায়ী শর্তারোপ করা, যেমন বিক্রেতার নিকট হইতে কোন ত্রুটিপূর্ণ বস্তু ক্রয় করিবার সময় ক্রেতা এই শর্ত আরোপ করিল যে, বিক্রেতা উহার ত্রুটি দূর করিয়া দিবে অথবা ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন মেরামত করিয়া দেওয়ার শর্তে উহার ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হওয়া অথবা এই শর্তে মাল বিক্রয় করা যে, বিক্রেতা উক্ত মাল ক্রেতার বাড়ি পর্যন্ত পৌছাইয়া দিবে ইত্যাদি।

এই জাতীয় শর্ত বৈধ। কারণ ইহার প্রচলন সমাজে রহিয়াছে, যদিও ইহার মধ্যে এক পক্ষের লাভ এবং অপর পক্ষের লোকসান থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা)-ও এই জাতীয় চুক্তি করিয়াছেন। হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে।

ان البى صلى الله عليه وسلم إشترى في السفر من جابر بن

عبد الله بعيرا وشرط لجابر روبه وملائه عليه الى المدينة .

“নবী (স) জাবের (রা)-এর একটি উট ক্রয় করিয়া তাহার জন্য এই শর্ত অনুমোদন করিলেন যে, তিনি উহাতে সওয়ার হইয়া মদীনায় পৌছিতে পারিবেন”।

সমাজে প্রচলিত যে কোন ধরনের শর্ত আরোপ বৈধ, যতক্ষণ না উহা শরীয়াতের পরিপন্থী হয়।

ফাসিদ শর্ত ও ক্রেতা এই শর্তে গম ক্রয় করিল যে, বিক্রেতা উহা ভাঙ্গাইয়া দিবে অথবা কাপড় এই শর্তে ক্রয় করিল যে, বিক্রেতা উহা সেলাই করিয়া পোশাক

Ubby

তৈরি করিয়া দিবে অথবা কোন মাল এই শর্তে ক্রয় করিল যে, উহা বিক্রেতার নিকট এক মাস সংরক্ষিত থাকিবে অথবা ঘর এই শর্তে বিক্রয় করিল যে, বিক্রেতা ঐ ঘরে এক বৎসর বসবাস করিবে অথবা জমি এই শর্তে বিক্রয় করিল যে, বিক্রেতা উক্ত জমি এক বৎসর চাষাবাদ করিবে। অথবা বিক্রেতা কোন মাল এই শর্তে বিক্রয় করিল যে, ক্রেতা তাহাকে পাঁচ হাজার টাকা ধার দিবে অথবা দান করিবে। অথবা বিবাহের সময় স্ত্রী যদি এইরূপ শর্ত আরোপ করে যে, স্বামী তাহাকে তাহার শহরের বাহিরে অন্য কোন শহরে লইয়া যাইতে পারিবে না। অথবা স্ত্রী স্বামীর প্রতি শর্ত আরোপ করিল যে, স্বামী তাহাকে কখনও তালাক প্রদান করিবে না। উল্লেখ্য যে, মাল জাতীয় লেনদেনে এই জাতীয় শর্ত আরোপ করিলে উহা বাতিল গণ্য হইবে।২৪ মাল জাতীয় লেনদেন না হইলে এই জাতীয় শর্ত আরোপ কোন প্রতিক্রিয়া ঘটাইবে না। সুতরাং ফাসিদ শর্তে যদি মাল জাতীয় লেনদেন হয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, বন্ধক ইত্যাদি, তাহা হইলে শর্ত বাতিল গণ্য হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :

أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن بيع وشرط

“নবী (সা) ক্রয়-বিক্রয় এবং উহার সহিত শর্ত আরোপ করা নিষেধ করিয়াছেন”।২৫

যে সকল শর্ত মাল জাতীয় লেনদেনে হয় না, যেমন বিবাহ, তালাক, ওকালত ইত্যাদি, ইহার মধ্যে ফাসিদ শর্তের কোন প্রকারের প্রতিক্রিয়া নাই। তাই এই অবস্থায় চুক্তি বহাল থাকে কিন্তু উহার শর্ত বাতিল গণ্য হয়।

বাতিল শর্তের বেলায় কোন এক পক্ষেরও কোন প্রকারের লাভ হয় না এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষবৃন্দ ছাড়াও অন্য কাহারও কোন প্রকারের লাভ বা উপকার হয় না, বরং ইহার মধ্যে কোন এক পক্ষের প্রচুর ক্ষতি হয় এবং অপর পক্ষ লাভবান হয়। যেমন বিক্রেতা তাহার মাল ক্রেতার নিকট এই শর্তে বিক্রয় করিল যে, সে উহা কখনও বিক্রয় অথবা হেবা করিতে পারিবে না। অথবা কোন ব্যক্তি এই শর্তে তাহার ঘর বিক্রয় করিল যে, ক্রেতা ঐ ঘর প্রতি বৎসর এক মাস খালি রাখিবে এবং ঐ ঘরে কেহ ঐ এক মাস বসবাস করিবে না। অথবা কেহ তাহার পরিবহন এই শর্তে বিক্রয় করিল যে, ক্রেতা অমুক ব্যক্তিকে কখনও এই পরিবহনে আরোহণ করাইতে পারিবে না।

৬৮৯

বৈধ শর্ত? উল্লেখ্য যে, হাম্বলী মাযহাব মতে চুক্তির মধ্যে যে সকল শর্ত আরোপে মানুষের উপকার হয় তাহা বৈধ যতক্ষণ না উহা শরীয়াতের বিধানের পরিপন্থী হয়। হাম্বলী মাযহাব এবং ইবন তাইমিয়্যা ও ইবনুল কায়্যিম (র)-এর মতে সকল প্রকারের শর্ত বৈধ, যতক্ষণ না উহা শরীয়াতের কোন বিধানের পরিপন্থী হয়। সুতরাং যে সকল শর্ত আরোপের মধ্যে মানুষের লাভ বা উপকার রহিয়াছে সেই জাতীয় সকল শর্তই বৈধ। যেমন কেহ ঘর এই শর্তে বিক্রয় করিল যে, বিক্রয়ের পরও বিক্রেতা ঐ ঘরে আর একমাস বসবাস করিবে অথবা বিক্রেতা মাল ক্রেতার বাড়ীতে পৌঁছাইয়া দিবে। কাপড় এই শর্ত ক্রয় করা যে, “বিক্রেতা উহা সেলাই করিয়া দিবে” অথবা স্ত্রী এই শর্ত আরোপ করিল যে, স্বামী আর কাহাকেও বিবাহ করিতে পারিবে না অথবা স্বামীর সহিত সে সফরে যাইবে না। হাম্বলী মাযহাব মতে এই জাতীয় সকল শর্ত পূর্ণ করা জরুরী, সে শর্ত মাল জাতীয় লেনদেনে হউক অথবা মাল ছাড়া ভিন্ন কোন বিষয়ে হউক। যদি কোন পক্ষ উক্ত শর্তাদি পূরণে ব্যর্থ হয় তাহা হইলে অপর পক্ষের উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করিবার এখতিয়ার থাকিবে। এই মাযহাবের সহিত যাহারা একমত পোষণ করিয়াছেন তাহাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হইলেন কাযী শুরায়হ, ইবন শুরুমা আল-কুফী, ইবন আবূ লাইলা ও কিছু সংখ্যক মালিকী ফকীহ।২৬

এই সকল ফকীহর দলীল হইল হযরত জাবির (রা)-এর হাদীস। উক্ত হাদীসে বলা হইয়াছে, রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত জাবির হইতে একটি উষ্ট্র ক্রয় করিয়াছিলেন এবং জাবির (রা) শর্ত আরোপ করিয়াছিলেন যে, তিনি উক্ত উটের পিঠে সওয়ার হইয়া ও মাল বহন করিয়া মদীনা পর্যন্ত যাইতে পারিবেন। জাবিরের উক্ত শর্ত নবী (সা) স্বীকার করিয়া লইলেন এবং তাহাকে উটের মূল্য পরিশোধ করিয়া দিলেন।২৭

উল্লেখ্য যে, হাম্বলী ফকীহগণ হানাফী ফকীহদের সহিত একমত যে, যে সকল শর্ত চুক্তির সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নহে অথবা শরীআত কর্তৃক নিষিদ্ধ তাহা অবৈধ বলিয়া বিবেচিত হইবে।

৬৯০

ধারা-১১৯৯ দলীস (ধোকা) এর সংজ্ঞা ও ইহার শ্রেণী (ক) ধোঁকার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে উৎসাহিত করিয়া চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়াকে দলীস বলে।

(খ) তাদীস তিন প্রকারের : (১) কাজের মাধ্যমে তাদীস (ধোকা); (২) কথার মাধ্যমে তাদীস এবং (৩) বাস্তব তথ্য গোপনের মাধ্যমে

দলীস।

বিশ্লেষণ

চুক্তিকৃত বস্তুর এমন সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা যাহা বাস্তবে তাহার মধ্যে অনুপস্থিত। যেমন কোন মাল বিক্রয়ের সময় বাছিয়া বাছিয়া ভালগুলি উপরে রাখা এবং খারাপগুলি নিচে আড়াল করিয়া রাখা। অথবা যানবাহন বিক্রয়ের সময় নূতনভাবে রং করিয়া এমনভাবে দেখান যে, মনে হয় যানটি খুবই কম ব্যবহৃত হইয়াছে বা প্রায় নূতন। অথবা গাভী বিক্রয়ের পূর্বে দুই-তিন দিন উহার দুধ দোহন

করিয়া স্তনে জমা রাখা, ক্রেতাকে বুঝানো যে, গাভীটি প্রচুর পরিমাণ দুধ দেয়।

হানাফী মাযহাব ব্যতীত অন্য সকল মাযহাবে এই জাতীয় ধোঁকার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চুক্তির দুই ধরনের হুকুম রহিয়াছে : (১) ক্রয়কৃত বস্তু ক্রেতা তাহার নিকট রাখিয়া দিবে এবং কোন প্রকারের ক্ষতিপূরণ চাহিবে না; অথবা (২) ক্রেতা উহাকে বিক্রেতাকে ফেরত দিবে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন :

لا تصروا الإبل والغنم فمن ابتاعها فهو بخير النظرين بعد أن حلبها ان شاء امسكها وان شاء ردها ورد معها صاعا من تمر .

“তোমরা উট ও বকরীদের স্তনে দুধ জমা করিও না। কেহ ইহা ক্রয় করিলে দুধ দোহন করিবার পর সে দুই বিষয়ের যে কোন একটি পাইবে। সে চাহিলে উহা রাখিতেও পারে অথবা বিক্রেতাকে ফেরতও দিতে পারে এবং ফেরতদানের ক্ষেত্রে উহার সহিত এক “ছা” খেজুর দিবে”।

হানাফী মতে সে চুক্তি ভঙ্গ করিতে পারিবে না, তবে তাহার লোকসানের সমপরিমাণ বিক্রেতা হইতে আদায় করিতে পারিবে।

ধারা-১২০০ চুক্তি অনুষ্ঠানে ভ্রান্তির শিকার হইলে পক্ষবৃন্দের মধ্যে চুক্তি অনুষ্ঠানের সময় কোন পক্ষ যদি চুক্তির মূল বিষয়ে অথবা মূল বিষয়ের প্রকৃতি সম্পর্কে ভ্রান্তির শিকার হয় তবে ইহার দ্বারা অনুষ্ঠিত চুক্তি অবৈধ গণ্য হয়।

বিশ্লেষণ

যেমন চুক্তিকারীর ধারণা হইল যে, সে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে চুক্তি অনুষ্ঠান করিতেছে। অতঃপর সে দেখিল যে, তাহার ধারণা ভুল। যেমন গহনা ক্রেতা উহাকে স্বর্ণ ভাবিয়া ক্রয় করিল, অতঃপর সে বুঝিতে পারিল যে, উহা স্বর্ণ নহে, বরং রূপা বা লোহা ইত্যাদি। অথবা কেহ আটা ক্রয় করিয়া বাড়িতে গিয়া দেখিল যে, উহা ময়দা, আটা নহে। অথবা রেশমী বস্ত্র ক্রয় করিবার পর দেখিল যে, উহা পশমী বস্ত্র ইত্যাদি।

এই জাতীয় লেনদেন যদি মূল বিষয়বস্তুতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তাহা হইলে চুক্তি বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে। কারণ এইখানে যে বিশেষ বস্তু সম্পর্কে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইয়াছে উহা অনুপস্থিত। সুতরাং উহা অনুপস্থিত বস্তুর চুক্তির অনুরূপ গণ্য হইবে এবং শরীয়াতে অনুপস্থিত বস্তুর চুক্তি যেহেতু অবৈধ, তাই ইহাও অবৈধ বলিয়া গণ্য হইবে।২৮

যদি একই বিষয় সংক্রান্ত চুক্তি হয় কিন্তু পরবর্তীতে উহার গুণাগুণের পার্থক্য ধরা পড়ে, যেমন ক্রেতা কালো রংঙের কাপড় ক্রয় করিবার চুক্তি করিল। অতঃপর দেখা গেল উক্ত কাপড় লাল রঙের অথবা সাদা রঙের। গাভী এই ভাবিয়া ক্রয় করিল যে, উহা দুধ দেয়। অতঃপর দেখা গেল যে, উক্ত গাভী দুধ দেয় না। অথবা একখানি পুস্তক এই ভাবিয়া ক্রয় করিল যে, উহা অমুক লেখকের রচিত, অতঃপর দেখা গেল যে, পুস্তকটি ভিন্ন লেখকের রচিত। অথবা জুতা ক্রয় করিল ছাগলের চামড়া ভাবিয়া, পরে দেখিল উহা গাভীর চামড়া দ্বারা তৈরী। এই জাতীয় লেনদেনের বিধান এই যে, ক্রেতার এখতিয়ার থাকিবে। ক্রটি প্রমাণিত হওয়ার পর সে চুক্তি ভঙ্গও করিতে পারে অথবা বহালও রাখিতে পারে।

উল্লেখ্য যে, গুণাগুণ সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি যদি চুক্তি প্রত্যাখ্যানযোগ্য বিষয়ে হয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, বন্ধক ইত্যাদি, তবেই কেবল ক্রেতার চুক্তি প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার থাকিবে। অন্যথায় চুক্তির বিষয় যদি অপ্রত্যাখ্যানযোগ্য হয়,

৬৯২

যেমন বিবাহ, তালাক ইত্যাদি, তাহা হইলে চুক্তি পালন জরুরী হইবে, চুক্তি প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার কাহারও থাকিবে না। উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমাদ (র)-এর মতে গুণাগুণ সংক্রান্ত চুক্তির বিষয় যদি বিবাহের ক্ষেত্রেও হয় তবুও এখতিয়ার বহাল থাকিবে। যেমন কেহ এই শর্তে বিবাহ করিল যে, বিবাহকৃত মহিলা সুন্দরী হইবে। অতঃপর সে দেখিল যে, মহিলা সুন্দরী নহে, বরং কালো অথবা এই ভাবিয়া বিবাহ করিল যে, মহিলা শিক্ষিতা, বিবাহের পরে সে দেখিল যে, মহিলা অশিক্ষিতা। এই জাতীয় ক্ষেত্রে স্বামীর এখতিয়ার থাকিবে, সে ইচ্ছা করিলে বিবাহ ভঙ্গ করিতে পারিবে।২৯

ধারা-১২০১ তাদীস (ধোঁকা) প্রসূত চুক্তির ফলাফল। এক পক্ষ অথবা তাহার প্রতিনিধি কর্তৃক মিথ্যা বা প্রতারণার মাধ্যমে অপর পক্ষ বা তাহার প্রতিনিধিকে প্ররোচিত করার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চুক্তি অবৈধ গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

প্রতারণা বলিতে এক পক্ষ অথবা তাহার প্রতিনিধি কর্তৃক অপর পক্ষ অথবা তাহার প্রতিনিধিকে প্ররোচনার মাধ্যমে প্রতারণা করার অভিপ্রায়ে নিম্নবর্ণিত যে কোন কাজ করাকে বুঝায়ঃ

(১) কোন বিষয় সম্পর্কে এইরূপ তথ্য প্রদান করা যাহা সত্য নহে এবং যিনি প্রস্তাব করেন তিনিও উহাকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করেন না।

(২) জ্ঞাত ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে গোপন করা। (৩) চুক্তি সম্পাদনের ইচ্ছা বর্জিত কোন কাজ বা অঙ্গীকার। (৪) প্রতারণামূলক অন্য যে কোন কাজ।

(৫) এমন কোন কর্ম বা কর্ম বিরতী যাহাকে আইনের ঘোষণা দ্বারা প্রতারণামূলক বলা হইয়াছে।

নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ কর্তৃক প্রতারণা সংঘটিত হইতে পারে?

(ক) চুক্তির পক্ষ, (খ) চুক্তির প্রতিনিধি, (গ) চুক্তির পক্ষ কর্তৃক ইঙ্গিতপ্রাপ্ত ব্যক্তি। প্রতিপক্ষ বা তাহার প্রতিনিধিকে প্রবঞ্চনা করার চুক্তিতে অংশগ্রহণে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে প্রতারণার আশ্রয় লওয়া হইয়া থাকে।

প্রতারণা বলিতে নিম্নের কারণসমূহকে বুঝায়? (ক) অসত্যকে না জানিয়া সত্য বলিয়া ঘোষণা করা। (খ) জ্ঞাত তথ্য গোপন করা। (গ) কার্যকর না করিবার ইচ্ছায় অঙ্গীকার করা। (ঘ) অন্যভাবে প্রবঞ্চনা করা। (ঙ) এমন কোন কাজ করা যাহা আইনত প্রতারণারূপে গণ্য।

ধারা-১২০২ বিক্রেতার উপর ক্রেতার আস্থা স্থাপন চুক্তিতে যে ক্ষেত্রে বিক্রেতার উপর আস্থা স্থাপন করিয়া ক্রেতা পণ্য ক্রয় করে সেক্ষেত্রে চুক্তি কার্যকর হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, চুক্তি নিষ্পন্ন হইবার পর ক্রেতা যদি জানিতে পারে যে, চুক্তির দ্বারা তাহার মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকি রহিয়াছে, সেক্ষেত্রে ক্রেতা চুক্তি রদ করিতে পারে।

ধারা-১২০৩

চুক্তির শ্রেণীবিভাগ (ক) চুক্তি সাধারণত দুই প্রকার ও সহীহ চুক্তি ও অ-সহীহ চুক্তি।

(খ) যে চুক্তির মধ্যে উহার মৌলিক উপাদানসমূহ ও প্রয়োজনীয় শর্তাবলী বিদ্যমান থাকে তাহাকে সহীহ চুক্তি বলে।

(গ) যে চুক্তির মধ্যে উহার কোন মৌলিক উপাদান বা আবশ্যকীয় শর্ত বিদ্যমান নাই তাহাকে অ-সহীহ চুক্তি বলে।

বিশ্লেষণ

পক্ষবৃন্দের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি যথার্থ হওয়ার জন্য শরীয়াত যেসব আবশ্যকীয় উপাদান ও শর্তাবলী নির্ধারণ করিয়াছে, চুক্তি সম্পাদনকালে তাহা যথার্থরূপে অনুসরণ করিতে হইবে। এই দৃষ্টিকোণ হইতে চুক্তি প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত ও (১) সহীহ (বিশুদ্ধ ) চুক্তি ও (২) অ-সহীহ (অশুদ্ধ) চুক্তি। যে চুক্তির মধ্যে উহার আবশ্যকীয় উপাদান ও শর্তাবলী বিদ্যমান পাওয়া যায় তাহা সহীহ চুক্তি হিসাবে গণ্য

৬৯৪

হইবে। অপরদিকে যে চুক্তির মধ্যে উহার আবশ্যকীয় উপাদান ও শর্তাবলী বিদ্যমান পাওয়া যাইবে না তাহা অ-সহীহ (অশুদ্ধ) চুক্তি হিসাবে গণ্য হইবে।

সহীহ চুক্তির ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে উহার পরিণতিও প্রকাশ পাইবে। যেমন দুই ব্যক্তি একটি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হইল। এই অবস্থায় ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতা তাহার নিকট পণ্য হস্তান্তর করিবে। মূল্য ও পণ্য হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা তাহার মূল্যের উপর হইতে এবং বিক্রেতা তাহার পণ্যের উপর হইতে নিজ নিজ মালিকানা হারাইবে। ক্রেতা পণ্যের মালিক হইবে এবং বিক্রেতা হইবে মূল্যের মালিক।

অশুদ্ধ চুক্তির ক্ষেত্রে কোন পরিণতি প্রকাশ পাইবে না অর্থাৎ ক্রেতা পণ্য ক্রয়ের ফলে উহার মালিকানা লাভ করিবে না এবং বিক্রেতার মালিকানাও রদ হইবে না।

ধারা-১২০৪

অ-সহীহ চুক্তির শ্রেণীবিভাগ (ক) অ-সহীহ চুক্তির দুইটি শ্রেণী রহিয়াছে : (১) বাতিল এবং (২) ফাসিদ।

(খ) যে চুক্তির মধ্যে শরীআত কর্তৃক নিদ্ধারিত শর্তাবলী ও মৌলিক উপাদান বিদ্যমান পাওয়া যায় না তাহাকে বাতিল চুক্তি বলে।

(গ) যে চুক্তির মধ্যে সহীহ চুক্তির শর্তাবলী বিদ্যমান আছে কিন্তু কোন বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তাহা বিধি সম্মত হয় নাই সেই চুক্তিকে ফাসিদ চুক্তি বলে।

বিশ্লেষণ

শরীআতে বর্ণিত কোন শর্ত অথবা মৌলিক কোন উপাদান চুক্তির মধ্যে অনুপস্থিত থাকিলে উহা বাতিল চুক্তি বলিয়া গণ্য হইবে। যেমন চুক্তির পক্ষবৃন্দ বা কোন এক পক্ষ যদি চুক্তি সম্পাদনের অযোগ্য হয় অর্থাৎ পাগল বা নাবালেগ হয় অথবা ঈজাব-কবুল পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় অথবা যে বস্তুকে কেন্দ্র করিয়া চুক্তি অনুষ্ঠিত হইয়াছে সেই বস্তু চুক্তির আওতাভুক্ত হওয়ার অযোগ্য হয়, যেমন মৃত বস্তু, শূকর, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি, অথবা চুক্তি অনুষ্ঠিত বস্তু যদি জনগণের যৌথভাবে ব্যবহৃত বিষয় হয়, যেমন রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, মসজিদ ইত্যাদি।

বাতিল চুক্তির ফলা এই যে, ধরিয়া লইতে হইবে যে, আদৌ কোন চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় নাই, যদিও ইহাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে চুক্তি অনুষ্ঠানের মতই মনে হয়। তাই এই জাতীয় চুক্তির কোন প্রকারের প্রতিক্রিয়ারও প্রকাশ ঘটিবে না এবং মালিকানাও পরিবর্তিত হইবে না।

হানাফী মাযহাব মতে বাতিল ও ফাসিদের মধ্যে পার্থক্য রহিয়াছে। তবে কোন চুক্তি মাল সম্পর্কীয় বিষয় হইলে কেবল তাহার মধ্যেই বাতিল ও ফাসিদের পার্থক্য গণ্য হইবে। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, বন্ধক ইত্যাদি। আর যদি চুক্তি মাল ছাড়া ভিন্ন কোন বিষয় হয়, যেমন বিবাহ, তালাক, ইবাদত ইত্যাদি, তাহা হইলে বাতিল ও ফাসিদের মধ্যে কোন পার্থক্য ধর্তব্য হইবে না।

ধারা-১২০৫

ফাসিদ চুক্তি ফাসিদ চুক্তি বলিতে বুঝায় যাহা শরীয়াতে প্রকৃতপক্ষে বৈধ কিন্তু ভিন্ন কোন কারণে অবৈধ হইয়াছে।

বিশ্লেষণ

যেমন চুক্তি এমন ব্যক্তি হইতে অনুষ্ঠিত হইয়াছে যিনি উক্ত চুক্তির যোগ্য পক্ষ এবং চুক্তিকৃত বস্তুত শরীয়াত কর্তৃক বৈধ এবং ঈজাব কবুলও পরস্পর সাম স্যপূর্ণ। তবে শরীআতে বিশেষ কারণে উহা অবৈধ ঘোষিত হইয়াছে। যেমন সম্পূর্ণ

অদৃশ্য পণ্য বিক্রয় করা যাহার পরিনতি নিশ্চিত করা ব্যতীত। ফাসিদ চুক্তির হুকুম এই যে, মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে বিক্রিত পণ্য অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রেতা মালিকানা লাভ করিবে।

ফাসিদ চুক্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সকল চুক্তি ভঙ্গ করা শরীআতে ওয়াজিব। চাই কোন এক পক্ষ উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করুক অথবা বিচারকের পক্ষ হইতে হউক। তবে শর্ত থাকে যে, চুক্তি ভঙ্গ করিতে হইলে নিম্নবর্ণিত দুইটি শর্ত পালন করা জরুরী।

(১) চুক্তিকৃত পণ্য অধিগ্রহণের আগে উহা পূর্বেকার অবস্থায় থাকিতে হইবে। যদি কোন প্রকারের পরিবর্তন, পরিবর্ধন সাধিত হয় তবে চুক্তি ভঙ্গ করা বৈধ হইবে

(২) চুক্তিকৃত বস্তুর সহিত অপরের কোন অধিকার সংশ্লিষ্ট থাকিবে না। সুতরাং চুক্তিকৃত পণ্যটি যদি ক্রেতা অপর কাহারও নিকট বিক্রয় করিয়া থাকে অথবা দান

৬৯৬

করিয়া থাকে এবং ক্রেতা অথবা দান গ্রহীতা কর্তৃক পণ্য অধিগ্রহণও সম্পন্ন হইয়া থাকে তবে চুক্তি ভঙ্গ অবৈধ বলিয়া গণ্য হইবে।

ধারা-১২০৬

মাকরূহ তাহরিমী চুক্তি (ক) চুক্তির বিষয়বস্তু বৈধ, কিন্তু উহার সহিত কোন নিষিদ্ধ বিষয় যুক্ত হইলে উক্ত চুক্তিকে মাকরূহ তাহরিমী চুক্তি বলে।

(খ) মাকরূহ তাহরিমী চুক্তি চার প্রকার? (১) দালালীর (নাজিশ) মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চুক্তি; (২) শহরে পণ্য সামগ্রী পৌছিবার পূর্বেই উহা ক্রয় করা; (৩) শহর ব্যতীত শুধু গ্রামে-গঞ্জে পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করা; (৪) জুমুআর আজানের সময় অনুষ্ঠিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি।

বিশ্লেষণ

মাকরূহ তাহরিমীর যে চারটি বিষয় বর্ণনা করা হইয়াছে উহার প্রথমটি হইল দালালীর মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠান করা। উহা এইজন্য মাকরূহ যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এই জাতীয় চুক্তিকে নিষিদ্ধ করিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন : “তোমরা দালালী করিও না”। হানাফী মতে দালালী মূলত অবৈধ নহে, তবে ইহার দ্বারা অন্য কাহাকেও প্রতারণার উদ্দেশ্য থাকিলে সেই দালালী অবৈধ। দালালীর মাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্য না থাকিলে উহা বৈধ। উল্লেখ্য যে, প্রকাশ্য নিলামে পণ্য সামগ্রী বিক্রয়ের সময় যে পদ্ধতিতে একজন অপরজন থেকে বেশি মূল্য বলে এবং পরিশেষে নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যে উক্ত পণ্য বিক্রয় করা হয়, ইহা শরীআতে বৈধ। অনুরূপভাবে পথিমধ্যে পণ্য সামগ্রী ক্রয়ের মধ্যে যদি সাধারণ মানুষের কোন প্রকারের ক্ষতি না হয় তবে উহাও বৈধ। অনুরূপভাবে জুমআর আযানের সময় অনুষ্ঠিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি হানাফী মাযহাবে শুদ্ধ, তবে মাকরূহ তাহরিমী। মাকরূহ তাহরিমী এইজন্য যে, আল্লাহ পাক কুরআন মজীদে বলেন :

يأيها الذين آمنوا إذا نودي للصلؤة من يوم الجمعة فاسعوا

إلى ذكر الله وذروا البيع

৬৯৭

“হে মুমিনগণ! জুমআর দিন যখন নামাযের দিকে আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের দিকে দৌড়াও এবং ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ কর” (৬২৪৯)।

হাম্বলী মাযহাব মতে ক্রয়-বিক্রয় ছাড়াও অন্য সকল প্রকারের চুক্তিও উক্ত সময়ে অবৈধ। কারণ যে কোন প্রকারের চুক্তি অনুষ্ঠানে জুমআর দিকে দৌড়ানোতে বাধার সৃষ্টি হয়।

ধারা-১২০৭ সহীহ (বিশুদ্ধ ) চুক্তির শ্রেণীবিভাগ (ক) সহীহ চুক্তি দুই প্রকার : (১) কার্যকর এবং (২) স্থগিত। (খ) বৈধ পন্থায় অনুষ্ঠিত চুক্তিকে কার্যকর (নাফিয) চুক্তি বলে।

(গ) যে ব্যক্তির চুক্তি করার যোগ্যতা আছে কিন্তু তাহা কার্যকর করার যোগ্যতা নাই সেই ব্যক্তির কৃত চুক্তিকে স্থগিত (মওকুফ) চুক্তি বলে।

বিশ্লেষণ

যে ব্যক্তির চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যোগ্যতা ও কর্তৃত্ব আছে এমন ব্যক্তির কৃত চুক্তিকে কার্যকর (নাফিজ) চুক্তি বলে। যেমন সুষ্ঠু জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির স্বীয় মাল হস্তান্তরের চুক্তি সম্পাদন করা অথবা কোন কারণে চুক্তি সম্পাদনের অক্ষম ব্যক্তির পক্ষে তাহার ওছী বা ওলী কর্তৃক চুক্তি সম্পাদন করা অথবা মক্কেলের পক্ষে তাহার উকিল কর্তৃক চুক্তি সম্পাদন করা। কার্যকর চুক্তি কাহারও অনুমতি ছাড়াই সরাসরি কার্যকরী হয়।

স্থগিত (মওকুফ) চুক্তি বলিতে এমন চুক্তিকে বুঝায় যাহা কোন সক্ষম ব্যক্তি কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয়, তবে চুক্তি সম্পাদনের কর্তৃত্ব তাহাকে কেহ প্রদান করে নাই। যেমন নাবালেগের পক্ষে চুক্তি অনুষ্ঠান করা। এই জাতীয় চুক্তির হুকুম হইল, ইহার কার্যকারিতা স্থগিত থাকিবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ইহা কার্যকর হইতে পারে। উল্লেখ্য, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবে স্থগিত (মওকুফ) চুক্তি বাতিল শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

৬৯৮

ধারা-১২০৮

কার্যকর চুক্তির শ্রেণীবিভাগ (ক) কার্যকর চুক্তি দুই প্রকার : (১) বাধ্যতামূলক (লাজিম) এবং (২) ঐচ্ছিক (গায়র লাজিম)।

(খ) চুক্তিবদ্ধ এক পক্ষ অপর পক্ষের সম্মতি ছাড়া যে চুক্তি রদ করিতে পারে না সেই চুক্তিকে বাধ্যতামূলক চুক্তি (আকদে লাজিম) বলে।

(গ) চুক্তিবদ্ধ এক পক্ষ অপর পক্ষের সম্মতি ব্যতীত যে চুক্তি রদ করিতে পারে সেই চুক্তিকে ঐচ্ছিক চুক্তি (গায়র লাজিম) বলে।

বিশ্লেষণ

কার্যকর চুক্তি আবার দুইভাবে বিভক্ত। বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক। চুক্তির দুই পক্ষের মধ্যে কোন এক পক্ষ অপর পক্ষের অনুমতি ছাড়া যে চুক্তি বাতিল করিতে পারে না তাহাকে লাজিম চুক্তি বলে। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, বন্ধক। চুক্তির উদ্দেশ্য হইল উহা পালন করা, কার্যকরী করা এবং শরীআতও চুক্তিকে কার্যকরী করিবার নির্দেশ প্রদান করিয়াছে। আল্লাহ পাক কুরআন মজীদে বলেন :

يأيها الذين آموا أوفوا بالعقود.

“হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকার (চুক্তিকে) পূর্ণ কর” (৫১)।

হানাফী ও মালিকী মতে চুক্তি কার্যকরী হইবার জন্য শুধুমাত্র পক্ষবৃন্দ কর্তৃক চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়াই যথেষ্ট। শাফিয়ী ও হাম্বলী মতে চুক্তি কার্যকরী হইবার জন্য শর্ত হইল, চুক্তির পক্ষবৃন্দের পরস্পর শারীরিকভাবে পৃথক হইয়া যাইতে হইবে অথবা উভয়ের চুক্তি গ্রহণ বা বর্জনের স্বাধীনতা থাকিলে সেই ক্ষেত্রে চুক্তিকে গ্রহণ করিলে তবেই চুক্তি কার্যকরী বলিয়া গণ্য হইবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ

البيعان بالخيار ما لم يتفرقا أو يقول أحدهما للآخر اختر .

.

“ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে পৃথক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাহাদের এখতিয়ার থাকিবে অথবা একজন অপরজনকে বলে, তুমি স্বাধীন”।

যে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ অথবা শুধুমাত্র এক পক্ষ অন্য পক্ষের সম্মতি ছাড়াই চুক্তি বাতিল করিতে পারে উহাকে ঐচ্ছিক (গায়র লাজিম) চুক্তি বলে। যেমন ওকালতের মধ্যে যে কোন পক্ষ অপর পক্ষের অনুমতি ছাড়াই চুক্তি বাতিল করিতে পারে।

৬৯৯

ধারা-১২০৯ বাধ্যতামূলক বা রদ হওয়ার ভিত্তিতে চুক্তির শ্রেণীবিভাগ চুক্তি বাধ্যতামূলক বা রদ হওয়া দিক হইতে চার ভাগে বিভক্তঃ (১) এমন বাধ্যতামূলক চুক্তি যাহা বাতিলযোগ্য নহে। (২) এমন বাধ্যতামূলক চুক্তি যাহা বাতিলযোগ্য। (৩) কোন এক পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক চুক্তি। (৪) উভয় পক্ষের জন্য যে চুক্তি বাধ্যতামূলক নহে।

বিশ্লেষণ

প্রথম প্রকার? এমন অবশ্য পালনীয় চুক্তি যাহা বাতিলযোগ্য নহে। যেমন বিবাহের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ অযথা দাবি করিলেই বিবাহের চুক্তি ভঙ্গ করিতে পারে

। তবে শরীআত সম্মত পন্থায় উভয় চুক্তিকারী চুক্তি ভঙ্গ করিতে পারে। উল্লেখ্য, যে সকল বিষয়ে চুক্তি ভঙ্গ করিবার অধিকার থাকে না সেসব বিষয়ে পক্ষবৃন্দের এখতিয়ারও থাকে না।

দ্বিতীয় প্রকার ও এমন অবশ্য পালনীয় চুক্তি যাহা বাতিলযোগ্য। যেমন ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে উহা বাতিল করা যায়। এই জাতীয় চুক্তি এখতিয়ার প্রদানের মাধ্যমেও বাতিল যোগ্য হইতে পারে।

তৃতীয় প্রকার ও যে চুক্তি কোন এক পক্ষের জন্য অবশ্য পালনীয়, যেমন “বন্ধক” এবং জামিনদাতা। ইহার মধ্যে এক পক্ষের জন্য চুক্তি পালন করা জরুরী, অপর পক্ষের জন্য নহে।

চতুর্থ প্রকার : যে চুক্তি পালন করা উভয় পক্ষের জন্য জরুরী নহে অর্থাৎ যে সকল চুক্তির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ চুক্তি ভঙ্গের অথবা প্রত্যাহারের অধিকার রাখে, যেমন ওকালত, ওসিয়াত, দান ইত্যাদির ক্ষেত্রে চুক্তিকারী যে কোন পক্ষ যে কোন সময় চুক্তি ভঙ্গ করিতে পারে এবং ওসিয়াত ও দানের ক্ষেত্রে উহা যে কোন সময় প্রত্যাহার করিতে পারে।

ধারা-১২১০ পক্ষবৃন্দের চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার (ক) পক্ষবৃন্দের মধ্যে অনুষ্ঠিত চুক্তি যে কোন পক্ষ কর্তৃক কথায়, কাজে বা আচরণের দ্বারা গ্রহণ বা বর্জনের অধিকারকে এখতিয়ার বলে।

৭০০

(খ) চুক্তি গ্রহণ বা বর্জনের উক্ত এখতিয়ার নিম্নবর্ণিত শ্রেণীতে বিভক্তঃ (১) খিয়ারে মজলিস (বৈঠক চলাকালে প্রযোজ্য এখতিয়ার); (২) খিয়ারে আয়্যিন (বাছাই করার এখতিয়ার); (৩) খিয়ারে শর্ত (প্রত্যাখ্যান করিবার এখতিয়ার); (৪) খিয়ারে আইব (ত্রুটিজনিত এখতিয়ার); (৫) খিয়ারে রুয়াত (পরিদর্শনের এখতিয়ার)

(৬) পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে প্রদত্ত তাহাদের স্বার্থ সংরক্ষণমূলক এখতিয়ার।

ধারা-১২১১

খিয়ারে মজলিস (ক) চুক্তি অনুষ্ঠানের বৈঠক হইতে পক্ষবৃন্দের শারীরিকভাবে পৃথক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উক্ত চুক্তি গ্রহণ বা বর্জনের অধিকারকে খিয়ারে মজলিস বলে।

(খ) মাল সংক্রান্ত যে চুক্তির দ্বারা মজলিসশেষে পক্ষবৃন্দের মধ্যে লেনদেন বাধ্যতামূলক হইয়া যায়, কেবল সেই ক্ষেত্রে খিয়ারে মজলিস প্রযোজ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

যে বৈঠকে চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় উক্ত বৈঠক হইতে পক্ষবৃন্দের শারীরিকভাবে পৃথক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন পক্ষ কর্তৃক উক্ত চুক্তি গ্রহণ বা বর্জনের অধিকার থাকিলে তাহাকে “খিয়ারে মজলিস” বলে। এই ক্ষেত্রে পক্ষবৃন্দের পরস্পর হইতে পৃথক হইয়া যাওয়ার পর চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং পৃথক না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা যায়। খিয়ারে মজলিস সেই চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে যাহার মধ্যে দুইটি বৈশিষ্ট্য রহিয়াছে?

(১) চুক্তিটি পক্ষবৃন্দের জন্য বাধ্যতামূলক হইতে হইবে এবং (২) চুক্তিটি মাল সংক্রান্ত হইতে হইবে। মাল বহির্ভূত চুক্তির ক্ষেত্রে খিয়ারে মজলিস প্রযোজ্য হইবে না।

৭০১

১ খিয়ারে মজলিস বৈধ কিনা এই বিষয়ে ফকীহগণের মতভেদ রহিয়াছে। শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাব মতে খিয়ারে মজলিস বৈধ। তাহারা তাহাদের মতের সমর্থনে নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করেনঃ

البيعان بالخيار ما لم يتفرقا.

“ক্রেতা ও বিক্রেতার পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার তাহাদের থাকিবে”।৩১

সুতরাং বর্ণিত হাদীসের আলোকে যখন ঈজাব-কবুলের মাধ্যমে চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় তখন উক্ত চুক্তি বৈধ, তবে বাধ্যতামূলক নহে। যতক্ষণ পর্যন্ত পক্ষবৃন্দ উক্ত মজলিস হইতে পরস্পরে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত পক্ষবৃন্দের মাঝে অনুষ্ঠিত চুক্তি গ্রহণ বা বর্জনের অধিকার থাকিবে।

হানাফী ও মালিকী মাযহাব মতে ঈজাব-কবুলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চুক্তি পালন করা পক্ষবৃন্দের জন্য বাধ্যতামূলক, কোন পক্ষের উক্ত চুক্তি গ্রহণ বা বর্জনের অধিকার থাকিবে না। কেননা পক্ষবৃন্দের মধ্যে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইলে উক্ত চুক্তি পালন করিবার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়াছেন?

أوفوا بالعقود.

“তোমরা চুক্তিকে পূর্ণ কর” (৫: ১)। সুতরাং অনুষ্ঠিত চুক্তি গ্রহণ বা বর্জনের এখতিয়ার কোন পক্ষের নাই। হাদীসটিতে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে চুক্তি অনুষ্ঠানের পূর্বে পক্ষবৃন্দের মাঝে আলোচনাকেই বুঝানো হইয়াছে। সুতরাং “আল-বায়্যিআনে” অর্থ হইল, ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পর চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করিতেছে, তাহারা চাহিলে চুক্তি অনুষ্ঠানও করিতে পারে, নাও করিতে পারে। আর পক্ষবৃন্দের পরস্পর পৃথক হওয়ার অর্থ হইল, পরস্পর কথার মাধ্যমে পৃথক হওয়া, শারীরিকভাবে পৃথক হওয়া নহে। যেমন এক পক্ষ তাহার প্রস্তাব অপর পক্ষ কর্তৃক সমর্থিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করিতে পারে।

ধারা-১২১২ খিয়ারে তাআয়্যিন (বাছাই করার এখতিয়ার) (ক) দুই বা ততোধিক জিনিসের মূল্য স্বতন্ত্রভাবে নির্ধারণ করিয়া বিক্রেতা উহার মধ্য হইতে ক্রেতাকে নিজ পছন্দমত এক বা একাধিক

৭০২

জিনিস বাছাই করিয়া নেওয়ার এখতিয়ার প্রদান করিতে পারে এবং ইহাকে ‘‘খিয়ারুত তাআয়্যিন ( jus) বলে। ‘

(খ) ‘খিয়ারুত তাআয়্যিন-এর মেয়াদ নির্ধারিত থাকিতে হইবে;

(গ) “খিয়ারুত তাআয়্যিন অর্থাৎ ক্রেতার বাছিয়া লওয়ার এখতিয়ার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঘ) “খিয়ারুত তাআয়্যিন” ক্রেতার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণের অনুকূলে বর্তাইবে।

বিশ্লেষণ

বিক্রেতা তিন রং-এর তিনটি শাড়ী কাপড় পৃথক পৃথকভাবে মূল্য নির্ধারণ করিয়া ক্রেতাকে বলিল, আপনার যে শাড়ীটি পছন্দ হয় এই সময়সীমার মধ্যে তাহা ক্রয় করিতে পারেন। এই অবস্থায় ক্রেতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে কোন একটি বা একাধিক শাড়ী ক্রয় করিতে বা নাও করিতে পারে। খেয়ারুত তাআয়্যিন -এর ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ প্রতিটি জিনিসের মূল্য পৃথক পৃথকভাবে নির্ধারণ করিতে হইবে এবং বাছাই করিয়া লওয়ার সময়সীমাও নির্ধারিত থাকিতে হইবে। সময়সীমার মধ্যে ক্রেতা মারা গেলে তাহার ওয়ারিসগণ অবশিষ্ট সময়সীমার জন্য বাছাই করিয়া লওয়ার এখতিয়ার লাভ করিবে। উল্লেখ্য যে, খিয়ারুত তাআয়্যিন বৈধ কিনা এই বিষয়ে ফকীহগণের মতভেদ রহিয়াছে। ইমাম শাফিঈ ও যুফার (র)-এর মতে খিয়ারুত তাআয়্যিন অবৈধ। কারণ ইহার মধ্যে অজ্ঞতা বিদ্যমান রহিয়াছে। যে বিষয়ে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে সেই বিষয় স্পষ্ট ও জ্ঞাত হওয়া জরুরী। ইমাম আবু হানীফা, মুহাম্মাদ ও আবু ইউসুফ (র)-এর মতে “খিয়ারুত তাআয়্যিন” বৈধ। কারণ মানুষ অহরহ এই জাতীয় লেনদেনের সম্মুখীন হয়। যদি ইহাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় তবে তাহারা লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হইবে।

ধারা-১২১৩ খিয়ারে শর্ত (চুক্তি প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার) (ক) চুক্তির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত চুক্তি বহাল রাখার অথবা বাতিল করার এখতিয়ার শর্ত হিসাবে রাখা বৈধ এবং এই এখতিয়ারকে খিয়ারুশ শর্ত (hall,L4) বলে।৩২

৭০৩

(খ) চুক্তির ক্ষেত্রে যেই পক্ষকে চুক্তি বাতিল করা বা বহাল রাখার এখতিয়ার দেওয়া হয় সেই পক্ষ চুক্তিপত্রে উল্লিখিত মেয়াদের মধ্যে স্বীয় এখতিয়ার প্রয়োগ করিতে পারিবে।

(গ) এখতিয়ার লাভকারী পক্ষ কথায় বা কাজের মাধ্যমে চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

(ঘ) উপধারা (ক) অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে, চুক্তি পূর্ণতা লাভ করিবে এবং তদনুযায়ী কাজ করা বাধ্যতামূলক হইবে।

(ঙ) বিক্রেতাকে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করার এখতিয়ার প্রদান করা হইলে এবং সে চুক্তিপত্রে উল্লেখিত মেয়াদের মধ্যে মারা গেলে ক্রেতা বিক্রীত মালের মালিক হইবে এবং উপরোক্ত এখতিয়ার বিক্রেতার

ওয়ারিসগণের অনুকূলে বর্তাইবে।

(চ) চুক্তিবদ্ধ সকল পক্ষকে এখতিয়ার প্রদান করা হইলে – (১) যে কোন পক্ষ চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে এবং

(২) এক পক্ষ চুক্তি বহালের কথা ব্যক্ত করিলে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে এবং অপর পক্ষের এখতিয়ার বহাল থাকিবে।

বিশ্লেষণ

মহানবী (সা) বলেন :

المتبعان كل واحد منهما بالخيار على صاحبه مالم

“ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত একের উপর অপরের ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি প্রত্যাখ্যানের অবকাশ রহিয়াছে”।৩৩

ক্রেতা বা বিক্রেতা তাহার প্রতিপক্ষকে মৌখিকভাবে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি প্রত্যাখানের এখতিয়ার প্রদান করিতে পারে।

ধারা-১২১৪

ক্রেতা ও বিক্রেতার মতবিরোধ

(ক) খিয়ারুশ শর্ত-এর অধীন- (ক) শুধু ক্রেতাকে “এখতিয়ার” প্রদান করা হইলে এবং ক্রেতা মাল হস্তগত করিয়া পুনরায় তাহা বিক্রেতাকে

৭০৪

ফেরত প্রদানের পর তাহাদের মধ্যে মতভেদ হইলে শপথ গ্রহণসহ ক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে;

(খ) শুধু বিক্রেতাকে “এখতিয়ার” প্রদান করা হইলে এবং মাল বিক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে শপথসহ ক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে।৩৪

বিশ্লেষণ

কেবলমাত্র ক্রেতার জন্য ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখার বা তাহা বাতিল করার এখতিয়ার রাখা হইলে এইরূপ অবস্থায় ক্রেতা বিক্রেতার নিকট হইতে মাল হস্তগত করার পর পুনরায় তাহা ফেরত দিল। বিক্রেতা বলিল, আমি তোমাকে যে মাল দিয়াছি ইহা সেই মাল নহে। এই ক্ষেত্রে ক্রেতাকে শপথ করিতে হইবে। সে যদি শপথ করিয়া বলে যে, ইহাই সেই মাল, তাহা হইলে ক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে। মাল বিক্রেতার দখলে আছে এবং ক্রেতা তাহা দখল করার সময় বলিল, ইহা সেই মাল নহে যাহা তুমি আমার নিকট বিক্রয় করিয়াছ। এই ক্ষেত্রে বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে। তবে ক্রেতা তাহাকে প্রদত্ত এখতিয়ারের সুযোগ গ্রহণ করিয়া ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে। কেবলমাত্র বিক্রেতার জন্য ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে এখতিয়ার রাখা হইলে এবং ক্রেতা কর্তৃক মাল হস্তগত করার পর তাহা পুনরায় ফেরত দিলে অথবা বিক্রেতার নিকট হইতে মাল গ্রহণের সময় তাহাদের মধ্যে মতভেদ হইলে উভয় অবস্থায় শপথসহ ক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে। অবশ্য বিক্রেতা তাহাকে প্রদত্ত এখতিয়ারের সুযোগ গ্রহণ করিয়া ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।৩৫

ধারা-১২১৫ খিয়ারুল আইব (মালের ক্রটি জনিত কারণে এখতিয়ার)

(ক) মালের মধ্যে ত্রুটি থাকিলে চুক্তি অনুষ্ঠানের পর ক্রেতা উক্ত চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে এবং ইহাকে ‘‘খিয়ারুল আইব” (কটি জনিত কারণে এখতিয়ার) বলে।

(খ) চুক্তিতে উল্লেখ না থাকিলেও মালের ত্রুটিমুক্ত হওয়া শর্ত হিসাবে গণ্য হইবে।

৭০৫

(গ) ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মাসের ত্রুটি সত্ত্বেও চুক্তি বহাল রাখিলে ক্রেতাকে মালের নির্ধারিত মূল্যই পরিশোধ করিতে হইবে এবং সে মূল্যহ্রাসের জন্য বিক্রেতাকে বাধ্য করিতে পারিবে না।

(ঘ) এমন কোন দোষ” যাহার ফলে মাল বিশেষজ্ঞের মতে মালের মূল্যহ্রাস পায় তাহা “টি” হিসাবে গণ্য হইবে।

(ঙ) মাল বিক্রয়ের পর এবং বিক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় উহাতে কোন দোষ সৃষ্টি হইলে বা দেখা দিলে তাহাও “ক্রটি” হিসাবে গণ্য হইবে এবং ক্রেতার এখতিয়ার বহাল থাকিবে।

(চ) বিক্রেতা ক্রেতাকে মালের ত্রুটি দেখাইয়া বিক্রয় করিলে এবং ক্রেতা তাহা গ্রহণ করিলে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(ছ) মালের যে কোন ত্রুটির জন্য বিক্রেতা দায়মুক্ত, চুক্তিপত্রে এইরূপ শর্ত থাকিলে ক্রেতার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(জ) পণ্য ক্রয়ের সময় যদি ক্রেতা বলে যে, “মালটি যে কোন ত্রুটিসহ গ্রহণ করা হইল” তবে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঝ) মালের মধ্যে ত্রুটি আছে” তাহা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ক্রেতার এমন আচরণ যাহা দ্বারা সে মালের মালিকানা পাইয়াছে এইরূপ বুঝায়, সেই ক্ষেত্রে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঞ) মাল হস্তগত হওয়ার পর তাহাতে ক্রেতার দ্বারা নূতন ত্রুটি সৃষ্টি হওয়ার ফলে উহার পুরাতন ক্রটি প্রকাশ পাওয়ায় ক্রেতা উক্ত মাল বিক্রেতাকে ফেরত দিলে বিক্রেতাও তাহাকে উহা (নৃতন ত্রুটির কারণে)

পুনঃ ফেরত দিতে পারিবে, তবে

(১) ক্রেতা বিক্রেতার নিকট মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে এবং

(২) একজন ন্যায়পরায়ণ বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূল্যহ্রাসের পরিমাণ নির্ণীত হইবে।

(ট) ক্রেতার সৃষ্ট ত্রুটি দূর করা সম্ভবপর হইলে তাহা দূর করার পর সে পুরাতন ত্রুটির কারণে উক্ত মাল বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে।

. (ঠ) বিক্রেতা নূতন ক্রটিসহ মাল ফেরত নিতে সম্মত হইলে ক্রেতা মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে না। হয় সে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করিবে অথবা বিক্রেতাকে মাল ফেরত দিবে, এমনকি সে ক্রটি সম্পর্কে জ্ঞাত

৭০৬

থাকিয়াও উক্ত মাল অন্যের নিকট বিক্রয় করিলে সে বিক্রেতার নিকট মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে না।

(ড) ক্রেতা মালের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করিলে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঢ) ক্রটি সত্ত্বেও মাল ফেরত দেওয়া অসম্ভব, এইরূপ অবস্থায় বিক্রেতা ইচ্ছা করিলেও মাল ফেরত নিতে পারিবে না এবং তাহাকে মূল্যহ্রাস করিতে হইবে, এমনকি ক্রেতা ত্রুটি সম্পর্কে জ্ঞাত হইয়া উক্ত মাল অনত্র বিক্রয় করিলেও।

(ণ) অনেক মাল একত্রে ক্রয় করার পর হস্তগত করার সময় কিছু মাল ত্রুটিপূর্ণ হইলে ক্রেতা

(১) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিলও করিতে পারে অথবা নির্ধারিত মূল্যে সমস্ত মাল গ্রহণও করিতে পারে, কিন্তু ত্রুটিপূর্ণগুলি বাদ দিয়া ভালগুলি গ্রহণ করিতে পারিবে না;

(২) মাল হস্তগত করার পর ত্রুটি ধরা পড়িলে ভালগুলি রাখিয়া ত্রুটিপূর্ণগুলি ফেরত দিতে পারিবে এবং বিক্রেতা সম্মত না হইলে সমস্ত মাল ফেরত দিতে পারিবে না;

(৩) মাল বিভাজনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইলে নির্ধারিত মূল্যে সমস্ত মাল রাখিয়া দিবে অথবা সমস্ত মাল ফেরত দিবে।

(ত) ওজন অথবা পরিমাপ করিয়া ক্রয়-বিক্রয় হয় এই জাতীয় একই শ্রেণীভুক্ত জিনিস ক্রয় ও হস্তগত করার পর তাহার কিছু ভাল এবং কিছু ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া গেলে, ক্রেতা হয় সবগুলি রাখিয়া দিবে অথবা সবগুলিই ফেরত দিবে।

(থ) শস্য ক্রয়ের পর তাহাতে মাটি মিশ্রিত থাকিলে এবং উহার পরিমাণ প্রথা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকিলে ক্রেতা উহা ফেরত দিতে পারিবে না; তবে গ্রহণযোগ্য পরিমানের অধিক হইলে ফেরত দিতে পারিবে।

(দ) ডিম, আখরোট ইত্যাদির ক্রটি প্রথা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল থাকিবে, অন্যথায় ক্রেতা মাল ফেরত দিয়া বিক্রেতার নিকট হইতে সম্পূর্ণ মূল্য ফেরত লইবে।

૧૦૧

(ধ) ক্রয়কৃত পরিধেয় বস্ত্র এমনভাবে সেলাই করা যে, তাহা ব্যবহার করা সম্ভব নহে, এই অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে এবং ক্রেতা সম্পূর্ণ মূল্যফেরত পাইবে।৩৫

বিশ্লেষণ

চুক্তির বিষয়বস্তু অর্থাৎ মালের ত্রুটিমুক্ত হওয়ার শর্ত। মাল ত্রুটিমুক্ত হওয়ার শর্ত যোগ না করা সত্ত্বেও মালে কোন প্রকারের দোষ থাকিতে পারিবে না। এই অবস্থায় মাল ত্রুটিমুক্ত হওয়া শর্ত হিসাবে গণ্য হইবে এবং ত্রুটিযুক্ত হইলে চুক্তি বহালও থাকিতে পারে অথবা বাতিলও হইতে পারে। “মাল যে কোন ক্রটিসহ গ্রহণ করা হইল” বলা হইলে উহার ত্রুটি কারণে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা যাইবে না। যেমন একটি ঘোড়া ক্রয়ের সময় ক্রেতা বলিল, ইহা অন্ধ বা খোঁড়া যাহাই হউক, ইহা গ্রহণ করা হইল, এই অবস্থায় ক্রেতা ঘোড়াটির বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে

ক্রেতার দ্বারা মালে নূতন ত্রুটি সৃষ্টি হওয়ার ফলে পুরাতন ক্রটি প্রকাশ পাইলেও চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা যাইবে না। যেমন ক্রেতা এক খণ্ড বস্ত্র ক্রয় করিয়া পোশাক তৈরীর উদ্দেশ্যে তাহা কর্তন করিল এবং উক্ত বস্ত্রের মধ্যে পুরাতন একটি কঠিন ক্রটিও দেখিতে পাইল। এই অবস্থায় সে বস্ত্রখণ্ড বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে

। কারণ সে তাহাতে নূতন ত্রুটি সৃষ্টি করিয়াছে। অবশ্য পুরাতন ত্রুটির কারণে সে বিক্রেতার নিকট মূল্যহ্রাসের দাবি করিতে পারিবে।

ক্রেতা কর্তৃক সৃষ্ট নূতন ত্রুটি দূর করা সম্ভবপর না হইলে মাল ফেরত প্রদান করা যাইবে না। যেমন একটি পশু ক্রয় করিয়া হস্তগত করার পর রোগাক্রান্ত হইয়া পড়ার ফলে তাহার একটি পুরাতন ত্রুটিও ধরা পড়িল। এই অবস্থায় ক্রেতা পশুটি বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে না। কিন্তু পুরাতন ত্রুটির কারণে বিক্রেতার নিকট মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে। নূতন ত্রুটি দূরীভূত হওয়ার পর সে তাহা পুরাতন ত্রুটির কারণে বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে।

নূতন ক্রটিসহ বিক্রেতা মাল ফেরত নিতে সম্মত হইলে এবং ক্রেতা তাহা ফেরত দিতে বাধ্য না থাকিলে সে বিক্রেতার নিকট পুরাতন ত্রুটির কারণে মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে না। ক্রেতা পুরাতন ক্রটি সম্পর্কে জ্ঞাত হইয়াও মাল অপরের নিকট বিক্রয় করিলে বিক্রেতার নিকট তাহার মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে না। যেমন সে এক খণ্ড বস্ত্র ক্রয় করিয়া তাহা দ্বারা পোশাক তৈরি করার পর জানিতে পারিল যে, উক্ত বস্ত্রখণ্ড ত্রুটিযুক্ত। এই অবস্থায় সে পোশাকটি অন্যের নিকট বিক্রয়

৭০৮

করিলে (পূর্বোক্ত) বিক্রেতার নিকট পুরাতন ক্রটির অজুহাতে মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে না। অবশ্য প্রথম ক্রেতা অপরের নিকট বিক্রয় না করিলে মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে।

“ক্রেতা মালের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করিলে ত্রুটির অজুহাতে তাহা বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে না। যেমন একটি দালান ক্রয়ের পর ক্রেতা তাহাতে নূতন করিয়া গ্রীল, রং, মোজাইক ইত্যাদি করাইল। এই অবস্থায় দালানে পুরাতন ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ক্রেতা তাহা বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে না। পুরাতন ক্রটি সত্ত্বেও ফেরত দেওয়া সম্ভব হইলে অর্থাৎ উক্ত কারণে বিক্রেতা মাল ফেরত নিতে সম্মত আছে কিন্তু ভিন্ন কোন কারণে তাহা ফেরত দেওয়া বা নেওয়া সম্ভব হইতেছে না, এই অবস্থায় ক্রেতা উক্ত ত্রুটির কারণে বিক্রেতার নিকট মূল্য ব্রাস দাবি করিতে পারিবে।

ধারা-১২১৬ খিয়ারে রুয়াত (পরিদর্শনের এখতিয়ার) (ক) চুক্তি সম্পাদনকালে ক্রেতা মাল দেখে নাই, এমতাবস্থায় মাল দেখার পর সে চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে এবং ইহাকে ‘খিয়ারে রুইয়াত” (পরিদর্শনের এখতিয়ার) বলে।

(খ) বিক্রেতা না দেখিয়া তাহার মাল বিক্রয় করিলে সে খিয়ারে রুইয়াতের অধিকারী হইবে না।

(গ) মাল স্থাবর প্রকৃতির হইলে তাহার সমগ্র অংশ দেখা প্রয়োজন, তবে সমগ্র অংশ একই রকম হইলে উহার একটি অংশ পরিদর্শনই যথেষ্ট।

(ঘ) কিয়দংশ নমুনা অনুযায়ী এবং কিয়দংশ নমুনা অনুযায়ী না হইলে ক্রেতা চুক্তি বহাল রাখিতে অথবা বাতিল করিতে পারিবে, কিন্তু কিছু মাল গ্রহণ করিতে এবং কিছু মাল প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে না এবং গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করিলে সমস্তটাই করিতে হইবে।

(ঙ) একই চুক্তির অধীনে বিভিন্ন ধরনের মাল ক্রয় করিলে স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যেক ধরনের মাল পরিদর্শন করা আবশ্যক।

(চ) মালের বৈশিষ্ট্য ও মাল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াই তাহা পরিদর্শনের উদ্দেশ্য এবং মালের নমুনা দেখিলেও এই উদ্দেশ্য পূর্ণ হইতে পারে?

৭০৯

তবে শর্ত থাকে যে, মাল নমুনা অনুযায়ী না হইলে ক্রেতা চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

(ছ) অন্ধ ব্যক্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে পারে তবে কোন সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে উহার মান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকিলে সে চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে।

(জ) ক্রেতার নিয়োগকৃত প্রতিনিধির পরিদর্শন ক্রেতার পরিদর্শন হিসাবে গণ্য হইবে।

(ঝ) ক্রেতার দূতের পরিদর্শন ক্রেতার পরিদর্শন হিসাবে গণ্য হইবে।

(ঞ) মাল পরিদর্শন করিয়া চুক্তি সম্পাদনের পর ক্রেতা কর্তৃক মাল হস্তগত করার পূর্বে বিক্রেতা কর্তৃক উহার পরিবর্তন করা হইলে, ক্রেতা চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে।

(ট) ক্রেতার এমন আচরণ যাহা দ্বারা সে মালের মালিকানা লাভ করিয়াছে এইরূপ বুঝায়, সেই ক্ষেত্রে তাহার খিয়ারে রুইয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঠ) “খিয়ারে রুইয়াত” ওয়ারিসগণের অনুকূলে বর্তায় না। (ড) খিয়ারে রুয়াত ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

(ঢ) ক্রেতা মাল ক্রয়ের পূর্বে খিয়ারে কুয়াতের অধিকারী হইবে না; বরং মাল ক্রয়ের সময়েই এই অধিকার অর্জিত হয়।

(ণ) খিয়ারে রুয়াত শুধুমাত্র এমন চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে যাহা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।

(ত) ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিকৃত মাল গণনাযোগ্য হইলে উহার প্রত্যেকটি পৃথক পৃথকভাবে দেখিয়া লইতে হইবে।

(থ) খিয়ারে কুয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চুক্তি প্রত্যাখ্যানের জন্য পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতি জরুরী নহে অথবা বিচারকের রায়েরও প্রয়োজন নাই, বরং কথা, কাজ আচরণের মাধ্যমে উক্ত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা যায়?

তবে শর্ত থাকে যে, খিয়ায়ে কুয়াত” বিদ্যমান থাকিতে হইবে এবং চুক্তি প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত বিষয়ে মালিককে জ্ঞাত থাকিতে হইবে।

৭১০

(দ) ক্রেতার এমন আচরণ যাহার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সে মালের মালিকানা লাভ করিয়াছে, তাহা হইলে ক্রেতার খিয়ারে রুয়াত বাতিল গণ্য হইবে।

(ধ) ক্রেতার হাতে মাল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে অথবা এমন ত্রুটিযুক্ত হইলে যাহার দ্বারা মালটি ফেরত দেওয়া সম্ভব নহে, সেক্ষেত্রেও ক্রেতার খিয়ারে রুয়াত বাতিল হইয়া যাইবে।

(ন) ক্রয়কৃত মাল ক্রেতার হস্তগত হওয়ার পর উহার মধ্যে এমন কোন প্রকারের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন সাধন করা হইল যাহার দ্বারা উক্ত মাল বিক্রেতার নিকট ফেরত দেওয়া সম্ভব নহে, সেই ক্ষেত্রে খিয়ারে রুয়াত বাতিল হইয়া যাইবে।

(প) ক্রেতার মৃত্যু ঘটিলে খিয়ারে রুয়াত বাতিল গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

খিয়ারে রুয়াত বৈধ কিনা এ বিষয়ে ফকীহগণের মতভেদ আছে। অধিকাংশ ফকীহ্ (হানাফী, মালিকী, হাম্বলী ও জাহিরী) মতে খিয়ারে রুয়াত বৈধ। ৩৬ মহানবী (সা) বলেনঃ

من اشترى شيئا لم يره فهو بالخيار اذا رأه .

“কোন ব্যক্তি মাল না দেখিয়া খরিদ করিলে উক্ত মাল দেখিবার পরে তাহার এখতিয়ার থাকিবে”।৩৭

বর্ণিত হাদীসের সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হযরত উসমান (রা) তালহা (রা)-এর নিকট একখণ্ড জমি না দেখিয়াই বিক্রয় করিয়াছিলেন। হযরত উসমানকে বলা হইল, আপনি জমি বিক্রয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন। হযরত উসমান (রা) বলিলেন, আমার এখতিয়ার বাকী রহিয়াছে। কেননা আমি না দেখিয়াই তাহা বিক্রয় করিয়াছি। অপরদিকে যখন হযরত তালহা (রা)-কে বলা হইল, আপনি জমি ক্রয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন, তখন তিনি বলিলেন, আমার এখতিয়ার বাকী রহিয়াছে। কারণ আমি এমন জমি ক্রয় করিয়াছি যাহা ক্রয়ের পূর্বে কখনো দেখি নাই। অতঃপর বিচারের জন্য উভয়ে হযরত জুবায়ের ইবনে মুতঈম (রা)-এর নিকট উপস্থিত হইলেন। তিনি তালহা (রা)-এর পক্ষে এখতিয়ারের রায় প্রদান করিলেন।

৭১১

শাফিঈ মাযহাব মতে খিয়ারে রুয়াত বৈধ নহে। কেননা অদৃশ্য বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নহে। পূর্বে দর্শন না করিয়া বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতারিত হইবার আশংকা রহিয়াছে। রাসূলুল্লাহ (সা) এই জাতীয় ক্রয়-বিক্রয়কে অবৈধ ঘোষণা করিয়াছেন।

نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن بيع الغرر

“রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতারণাযুক্ত ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করিয়াছেন”।৩৮ ধোকার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চুক্তির দ্বারা বিবাদের সূত্রপাত হওয়ার আশংকা আছে। তাই শরীআতে ঐ সকল প্রকারের ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন অবৈধ।

ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য খিয়ারে রুয়াত আছে কিনা এ বিষয়ে ফকীহগণের মতবিরোধ রহিয়াছে। হানাফী ও মালিকী মাযহাব মতে খিয়ারে রুয়াত শুধুমাত্র ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বিক্রেতার জন্য নহে। কেননা হযরত জুবায়ের ইবনে মুতঈম (রা) উসমান (রা) ও তালহা (রা)-র বিবাদে তালহা (রা)-কে এখতিয়ার প্রদান করিয়াছেন। বিক্রেতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাহার মাল না দেখিলেও মাল সম্পর্কে তাহার সম্যক ধারণা থাকে। কিন্তু ক্রেতার মাল না দেখা পর্যন্ত তৎ সম্পর্কে তাহার কোন ধারণা থাকে না। তাই খিয়ারে রুয়াত শুধু ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে।

হাম্বলী মাযহাব মতে খিয়ারে রুয়াত বিক্রেতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে। খিয়ারে রুয়াত কেবল সেই চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে, যে সকল চুক্তি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। যেমন ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি, ইজারা চুক্তি, বন্ধক, মালের পরিবর্তে সমঝোতা বা সুলাহ ইত্যাদি। এ সকল ক্ষেত্রে মাল ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব। সুতরাং এই ক্ষেত্রে খিয়ারে রুয়াত প্রযোজ্য। যে ক্ষেত্রে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা যায় না সেক্ষেত্রে খিয়ারে রুয়াতও প্রযোজ্য নহে। যেমন বিবাহ, তালাক, খােলা ইত্যাদি। কেননা এ সকল বিষয়ে মাল ফেরত দেয়া সম্ভব নহে। কারণ মোহরানা, তালাক বা বিবাহ কোন বাহ্যিক বস্তু নহে।

গণনাযোগ্য মাল হইলে পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেকটি পণ্য দেখিয়া লইতে হইবে। যেমন কাপড় ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উহার প্রতিটি খণ্ড দেখিয়া লওয়া জরুরী। আর যদি মাল একই জাতীয় হয় তবে কিছু অংশ দেখিলেই চলিবে। যেমন পিয়াজ, রসুন, আলু ইত্যাদি। খিয়ারে রুয়াতের অজুহাতে চুক্তি ভঙ্গ করিবার জন্য

৭১২ .

পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতি জরুরী নহে এবং তাহা বিচারকের রায়ের উপরও মওকুফ নহে, বরং কথা, কাজ আচরণের মাধ্যমে চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হইতে পারে। যেমন এক পক্ষ বলিল, আমি চুক্তি ভঙ্গ করিলাম অথবা প্রত্যাখ্যান করিলাম। অথবা চুক্তিকৃত মাল ক্রেতা অপর কাহারও নিকট বিক্রয় করিয়া দিল অথবা দান করিয়া দিল। হস্তগত করিবার পূর্বেই উহা নষ্ট বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইলেও খিয়ারে রুয়াত বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।৩৯।

খিয়ারে রুয়াতের মেয়াদ সম্পর্কেও ফকীহগণের মতভেদ রহিয়াছে। হানাফী ফকীহগণের মতে খিয়ারে রুয়াতের জন্য কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নাই। খিয়ারে রুয়াত রদ হওয়ার কোন কারণ পাওয়া না গেলে উহা সারা জীবন বাকী থাকিবে। কেননা খিয়ারে রুয়াত একটি অধিকার এবং অধিকার বর্জন বা প্রত্যাখ্যান না করা পর্যন্ত উহা ভোগযোগ্য থাকিবে।৪০

হাম্বলী মাযহাব মতে খিয়ারে রুয়াতের কার্যকারিতা কোন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রযোজ্য নহে। বরং খিয়ারে রুয়াত তাৎক্ষণিকভাবে প্রযোজ্য।৪১

ধারা-১২১৭ খিয়ারুন না মূল্যের সহিত সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার (ক) চুক্তিতে মালের মূল্য পরিশোধের মেয়াদ নির্ধারিত থাকা অবস্থায় সেই মেয়াদের মধ্যে ক্রেতা মূল্য পরিশোধ না করিলে বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখিতে অথবা বাতিল করিতে পারে এবং ইহাকে খিয়ারুন

বলেঃ তবে শর্ত থাকে যে, মাল ক্রেতার হস্তগত হইয়া থাকিলে উহা অবশ্যই ফেরতযোগ্য হইবে।

(খ) ক্রেতা মূল্য পরিশোধের মেয়াদের মধ্যে মারা গেলে চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে এবং বিক্রেতা মাল ফেরত পাইবে।

বিশ্লেষণ

খিয়ারুন নাকদ সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার মালের মূল্য নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পরিশোধ না করিলে উদ্ভূত হয়।

৭১৩

ধারা-১২১৮ খিয়ারুল ওয়াফ (মালের গুণাগুণ সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার) (ক) বিক্রয়ের সময় বিক্রেতা মালের যে গুণ ও মানের বর্ণনা দিয়াছে, হস্তান্তরের সময় তাহা সেই গুণ ও মান অনুযায়ী না হইলে, ক্রেতার উক্ত চুক্তি বহাল রাখিবার অথবা বাতিল করিবার এখতিয়ার রহিয়াছে এবং ইহাকে “খিয়ারুল ওয়াসফ” বলে।

(খ) খিয়ারুল ওয়াফ ওয়ারিসের অনুকূলে বর্তাইবে। * (গ) ক্রেতার এমন আচরণ যাহা দ্বারা সে মালের মালিকানা লাভ করিয়াছে এইরূপ বুঝায়, সেই ক্ষেত্রে তাহার খিয়ারুল ওয়াস বাতিল হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

গুণ ও মানের বর্ণনা, যেমন একটি গাভী বিক্রয়ের সময় বলা হইয়াছে যে, ইহা এখনও দুধ দেয় কিন্তু বাস্তবে উহার দুধ দান বন্ধ হইয়া গিয়াছে অথবা রাত্রি বেলা বিক্রেতা কাপড় লাল রং বলিয়া বিক্রয় করিয়াছে কিন্তু ক্রেতার বাড়িতে নিয়া সকালে দেখা গেল যে, কাপড়টি ভিন্ন রং-এর। উভয় ক্ষেত্রে ক্রেতা ইচ্ছা করিলে চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে। খিয়ারুল ওয়াসফ-এর আওতায় ক্রেতার এখতিয়ার তাহার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণের অনুকূলে বাতইিবে। অর্থাৎ তাহার ওয়ারিসগণ চাহিলে চুক্তি বহালও রাখিতে পারিবে অথবা বাতিলও করিতে পারিবে। ক্রেতার আচরণ অর্থাৎ খিয়ারুল ওয়াসফের অধিকারী ক্রেতা মাল হস্তগত করার পর তাহা বিক্রয়ের জন্য অন্য কোন ব্যক্তির সহিত চুক্তিবদ্ধ হইলে অথবা ঐ মাল হেবা বা ওয়াকফ করিলে তাহার এই ধরনের আচরণে তাহার খিয়ারুল ওয়াসফ বাতিল হইয়া যাইবে।৪২

ধারা-১২১৯ যে সকল কারণে চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটে চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিতে পারে – (ক) চুক্তি ফাসিদ হওয়ার কারণে উহা প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে; (খ) এখতিয়ার লাভের ক্ষেত্রে চুক্তি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে; (গ) ধারা (১৯০) মোতাবেক ইকালা অর্থাৎ চুক্তির দিকরণের মাধ্যমে;

৭১৪

(ঘ) চুক্তি বাস্তবায়ন করা কোন পক্ষের জন্য অসম্ভব হইলে উহা প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে;

(ঙ) চুক্তির নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে; (চ) কোন পক্ষের মৃত্যুর কারণে এবং (ছ) স্থগিতকৃত চুক্তি অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হইলে।

বিশ্লেষণ

চুক্তি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে অথবা কোন পক্ষের মৃত্যুর কারণে অথবা মওকুফ বা স্থগিতকৃত চুক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাভে ব্যর্থ হইলে চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটে। চুক্তি ফাসিদ বা অবৈধ হইলে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে উহার পরিসমাপ্তি ঘটিবে। যেমন বিক্রেতার দখলভুক্ত নহে এমন কোন মাল ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি অনুষ্ঠিত হইলে উহাকে ফাসিদ চুক্তি বলে এবং এ জাতীয় চুক্তি পক্ষবৃন্দের জন্য ভঙ্গ করা জরুরী। তবে চুক্তি ভঙ্গের পথে কোন বাধা পাওয়া গেলে উহা ভঙ্গ করা জরুরী নহে। যেমন ক্রেতা যদি তাহার ক্রয়কৃত মাল অপর ব্যক্তির নিকট বিক্রয় বা দান করিয়া থাকে সে ক্ষেত্রে উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করা জরুরী নহে। তবে ক্রেতা উক্ত মালের ন্যায্য মূল্য বিক্রেতাকে পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবে। চুক্তি বহাল বা বাতিল করিবার এখতিয়ার লাভকারী ব্যক্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে উহার পরিসমাপ্তি ঘটাইতে পারে। যেমন খিয়ারে শর্ত, খিয়ারে আইব বা খিয়ারে রুয়াত লাভকারী ব্যক্তি ইচ্ছা করিলেই চুক্তি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে উহার পরিসমাপ্তি ঘটাইতে পারে। তবে খিয়ারে আইবের ক্ষেত্রে ক্রেতা মাল হস্তগত করিয়া থাকিলে হানাফী মাযহাব মতে চুক্তি প্রত্যাখ্যান বৈধ হইবে না। অবশ্য বিক্রেতার সম্মতি থাকিলে অথবা বিচারকের রায়ের মাধ্যমে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা যাইতে পারে। ইকালার মাধ্যমে চুক্তি প্রত্যাখ্যানের ফলে উহার পরিসমাপ্তি ঘটিতে পারে। চুক্তি অনুষ্ঠানের কোন এক পক্ষ অনুতপ্ত হইয়া চুক্তি প্রত্যাখ্যানের আগ্রহ প্রকাশ করিলে তদনুযায়ী পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে চুক্তি বাতিল করাকে ইকালা বলে। যে চুক্তি বাস্তবায়ন করা কোন পক্ষের জন্য সম্ভব নহে উহা প্রত্যাখ্যান করিবার মাধ্যমে চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিতে পারে। যেমন ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে মাল হস্তান্তরের পূর্বেই বিক্রেতার নিকট উক্ত মাল নষ্ট বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইলে অথবা ইজারার ক্ষেত্রে ইজারা গ্রহীতা নিঃস্ব হইয়া গেলে অথবা ইজারা গ্রহীতা তাহার পেশা পরিবর্তন করিলে চুক্তি কার্যকরী করা অসম্ভব বিধায় উহার পরিসমাপ্তি ঘটিবে।

৭১৫

চুক্তির নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলেও উহার পরিসমাপ্তি ঘটিবে। যেমন নির্ধারিত সময়ের জন্য গৃহীত ইজারার মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য উকিল নির্ধারিত হইলে মেয়াদ সমাপ্তি কালে চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিবে। মৃত্যুর কারণেও চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিতে পারে। উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর কারণে সকল প্রকারের চুক্তির সমাপ্তি ঘটে না, বরং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণে চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিয়া থাকে। হানাফী মাযহাব মতে ইজারা চুক্তিকারী পক্ষবৃন্দের যে কোন এক পক্ষের মৃত্যু ঘটিলে উক্ত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিবে অর্থাৎ যে কোন এক পক্ষের মৃত্যুর কারণে ইজারা চুক্তি বাতিল হইয়া যায়।৪৩ হানাফী মাযহাব ব্যতীত অন্য সকল মাযহাব মতে ইজারার ক্ষেত্রে কোন এক পক্ষের মৃত্যুর কারণে ইজারা চুক্তি বাতিল হয় না।৪৪।

বন্ধক ও যামিনের ক্ষেত্রে সম্পাদিত চুক্তি এক পক্ষের মৃত্যুর কারণে পরিসমাপ্তি ঘটে। বন্ধকদাতা মৃত্যুবরণ করিলে যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ নাবালেগ থাকে, সেক্ষেত্রে বন্ধককৃত মাল যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিক্রয়ের দ্বারা তাহার ঋণ পরিশোধ করিতে হইবে এবং বন্ধকের উত্তরাধিকারীগণ বালেগ হইলে মালের উত্তরাধিকারী হইবে এবং উত্তরাধিকারীগণের কর্তব্য হইবে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে তাহাকে বন্ধক হইতে মুক্ত করা।৪৫

ঋণ সম্পর্কীয় জামিনের ক্ষেত্রে প্রকৃত ঋণ গ্রহীতার মৃত্যুর ফলে উক্ত চুক্তি বাতিল হইবে না ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত। যামিনদাতার মৃত্যু হইলে তাহার মাল হইতে ঋণ পরিশোধ করিতে হইবে।

শিরকা বা পারস্পরিক অংশীদারিত্ব এবং ওকালতের ক্ষেত্রে যে কোন এক পক্ষের মৃত্যুর সাথে সাথে তাহাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির সমাপ্তি ঘটিবে। অংশীদারগণের মধ্যে যে কোন এক পক্ষের মৃত্যুর সাথে সাথে তাহাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিবে। এক পক্ষের মৃত্যু সম্পর্কে অপর পক্ষ জ্ঞাত হউক বা না হউক।৪৬

অনুরূপভাবে প্রতিনিধিত্ব নিয়োগ চুক্তির ক্ষেত্রে উকিল বা মক্কেলের যে কোন একজনের মৃত্যুর ফলে তাহাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে, একজনের মৃত্যু সম্পর্কে অপরজন জ্ঞাত হউক বা না হউক।৪৭ অনুরূপভাবে মুযারাআ ও মুসাকাতের চুক্তির ক্ষেত্রে শ্রমিক অথবা মালিকের যে কোন একজনের মৃত্যুর ফলে তাহাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে।৪৮ স্থগিতকৃত (মওকুফ) চুক্তির ক্ষেত্রে অনুমতি না পাওয়া গেলে উক্ত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিবে ৪৯

৭১৬

ধারা-১২২০

বাতিল শ্রেণীভুক্ত চুক্তি (ক) যে কাজ সম্পাদন করা অসম্ভব সেই কাজ করিবার চুক্তি;

(খ) যে কাজ চুক্তির সময় করা সম্ভব ছিল কিন্তু চুক্তির পরে যাহা করা অসম্ভব হইয়া পড়ে;

(গ) বেআইনী কাজ করিবার চুক্তি;

(ঘ) চুক্তির সময় যে কাজ আইনানুগ ছিল কিন্তু পরে বেআইনী হইয়া গিয়াছে;

তাহার চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

যে কাজ আপনা হইতেই অসম্ভব এমন কাজ করিবার জন্য চুক্তিবদ্ধ হইলে তাহার কোন কার্যকারিতা নাই। যেমন যায়েদ বাকরের সহিত যাদু দ্বারা সঞ্চিত ধন আবিস্কারের চুক্তিতে আবদ্ধ হইল। আবার এমনও হইতে পারে যে, একটি কাজ। চুক্তি অনুষ্ঠানকালে করা সম্ভব ছিল, কিন্তু পরে অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছে। যেমন যায়েদ যুবায়দার সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবার চুক্তি করিল। কিন্তু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার নিদ্ধারিত তারিখের পূর্বে যায়েদ পাগল হইয়া গেল। এই অবস্থায় চুক্তিটি বাতিল হইয়া যাইবে। অনুরূপভাবে বেআইনী কাজ করিবার চুক্তি বাতিল। যেমন যায়েদ ও বাকর একত্রে ডাকাতি করার চুক্তিতে আবদ্ধ হইল। অনুরূপভাবে দুই ব্যক্তি একটি বৈধ কাজ করিবার চুক্তিতে আবদ্ধ হইল। কিন্তু চুক্তিটি কার্যকর হওয়াকালে কাজটি বেআইনী হইয়া গিয়াছে। এই অবস্থায়ও চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে। যেমন করিমের জন্য রহিম কোন বিদেশী বন্দরে জাহাজী মাল গ্রহণের চুক্তি করিল। পরে যে দেশে বন্দরটি অবস্থিত সেই দেশের বিরুদ্ধে করিমের দেশ যুদ্ধ ঘোষণা করে। যখন যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় তখন চুক্তিটি বাতিল হইয়া যায়।

ধারা-১২২১

অবশ্য পালনীয় চুক্তি

(ক) পক্ষবৃন্দ এমন চুক্তি করিতে পারেন যে, ভবিষ্যতে যে অবস্থাই ঘটুক

কেন, চুক্তি প্রতিপালন করিতে হইবে। এইরূপ অবস্থায় সাধ্যমত চুক্তিটি পালন করিতে হইবে।

৭১৭

(খ) যে ক্ষেত্রে অঙ্গীকারকারী জানিতেন যে, অঙ্গীকার প্রতিপালন অসম্ভব কিংবা বেআইনী কিন্তু অঙ্গীকার গ্রহীতা তাহা জানিতেন না, সেই ক্ষেত্রে অঙ্গীকার প্রতিপালনের ব্যর্থতায় অঙ্গীকার গ্রহীতার ক্ষতি হইলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাইতে পারেন।

বিশ্লেষণ

যাহা অসম্ভব তাহা করিবার চুক্তি ব্যর্থ হইতে বাধ্য। ইহাই আইনের ব্যর্থতার নীতির মূল কথা। যাহা বেআইনী তাহাও এই পর্যায়ে পড়ে। এই ধারায় উল্লেখ করা হইয়াছে যে, সেই কাজ করিবার চুক্তি বাতিল যাহা আপনা হইতেই অসম্ভব, আম্‌দতেই যাহা করা যায় না তাহা চুক্তি করিয়াও করা যায় না।

যে কাজ আম্‌দতে অসম্ভব তাহার চুক্তি যেমন বাতিল, যে কাজ পরবর্তী কালে অসম্ভব হইয়া পড়ে তাহার চুক্তিও তেমনি বাতিল। বিবাদী বাদীর নিকট কিছু জমি বিক্রয় করিলেন। এই বিক্রয় চুক্তিতে শর্ত থাকিল যে, যেহেতু এই জমি সেনানিবাস অঞ্চলে অবস্থিত, সেহেতু সেনানিবাস কর্তৃপক্ষের অনুমতি লইয়া বিবাদী দলীল সম্পাদন করিবেন। সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলেন, সেক্ষেত্রে চুক্তিটি বাতিল হইয়া যাইবে। অনুরূপভাবে জাহাজে মাল পরিবহনের চুক্তি হইল, কিন্তু মাল বােঝাই হইবার আগে জাহাজটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হইলেও চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে।

ধারা-১২২২

মৃত্যুশয্যায় মায়িত ব্যক্তির চুক্তি (ক) মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি এমন চুক্তি সম্পাদন করে যাহা প্রত্যাহারযোগ্য নহে, তাহা হইলে তাহা তাহার মৃত্যুর পর কার্যকরী হইবে।

(খ) মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি এমন চুক্তি করে যাহা প্রত্যাহার যোগ্য তবে তাহা বহাল রাখা বা না রাখার বিষয়টি তাহার ওয়ারিসগণের উচ্ছার উপর নির্ভরশীল হইবে।

বিশ্লেষণ

মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির প্রত্যাহারের অযোগ্য চুক্তি বহাল থাকিবে এবঙ প্রত্যাহারযোগ্য চুক্তি তাহার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণ ইচ্ছা করিলে বহালও রাখিতে পারে বা প্রত্যাখ্যানও করিতে পারে। প্রত্যাহার অযোগ্য চুক্তি, যেমন তালাক এবং প্রত্যাহারযোগ্য চুক্ত, যেমন হেবা, দান, অলাভজনক ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি ইত্যাদি।

৭১৮

ধারা-১২২৩

বাতিলযোগ্য চুক্তি বাতিল নহে বাতিলযোগ্য চুক্তি এমনিতেই বাতিল হয় না, উহা বাতিল করিতে হয়।

বিশ্লেষণ

চুক্তি সাধারণত বাতিল নয় তবে উহা বাতিল করা যায়। বাতিলযোগ্য চুক্তি একমাত্র তিনিই বাতিল করিতে পারেন যিনি উহার দ্বারা আহত, প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন বা হইবার আশংকায় থাকেন। অন্য কেহ বাতিলযোগ্য চুক্তি বাতিল করিতে পারেন না।

ধারা-১২২৪ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চুক্তি বাতিল করা

যিনি বাতিলযোগ্য চুক্তি বাতিল করিতে চাহেন তিনি তাহার বিপরীত পক্ষকে উহা জানাইবেন। বিপরীত পক্ষকে বিজ্ঞাপিত না করিয়া বাতিলযোগ্য চুক্তিকে ঘরে বসিয়া নিঃশব্দে বাতিল করা যায় না। যিনি চুক্তি বাতিল করিতে পারেন তিনি আবার উহার অপর পক্ষকে জ্ঞাপন করিলেই বাতিল হইয়া যায়। উল্লেখ্য যে, অপর পক্ষের গোচরে আসিলে জ্ঞাপন হইয়া যায়।

ধারা-১২২৫

চুক্তি ভঙ্গের ক্ষতিপূরণ (ক) যখন একটি চুক্তি ভঙ্গ করা হইল তখন যে পক্ষ চুক্তিটি ভঙ্গ করিলেন সেই পক্ষের নিকট হইতে যে পক্ষ তাহা দ্বারা তাহার যে ক্ষতি বা লোকসান হইল অথবা যখন তাহারা চুক্তি করিয়াছিলেন তখন জানিতেন যে, উহা ভঙ্গের ফলে এইরূপ হইতে পারে; তাহা হইলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ক্ষতিপূরণ দাবি করিতে পারিবেন।

ধারা-১২২৬

এজেন্টের কৃত চুক্তির ফলাফল এজেন্টের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তি এবং তাহার কাজের ফল প্রসূত কোন বাধ্যবাধকতা এমনভাবে বলবৎ হয় এবং এইরূপ আইনানুগ প্রতিক্রিয়া ঘটায় যেন তাহার মালিক স্বয়ং উক্ত চুক্তি ও কার্য সম্পাদন করিয়াছেন।

৭১৯

বিশ্লেষণ

তৃতীয় ব্যক্তির সহিত চুক্তিতে এজেন্সীর উপর যে প্রতিক্রিয়া হয় তাহাই এই ধারায় উল্লেখ করা হইয়াছে। এজেন্সির মাধ্যমে চুক্তির ফলে নিম্নবর্ণিত অবস্থার সৃষ্টি হইতে পারে।

(১) এজেন্সীর মাধ্যমে চুক্তির সময় যে তৃতীয় ব্যক্তির সহিত এজেন্ট মালিকের পক্ষে চুক্তি করেন সেই তৃতীয় ব্যক্তি স্পষ্টভাবে মালিকের কথা জানেন, এই অবস্থায় মালিক এবং তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে সরাসরি চুক্তির সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

(২) মালিকের পক্ষে এজেন্ট কাজ করিলেও যে ক্ষেত্রে মালিকের কোন অস্তিত্ব নাই, সেক্ষেত্রে মালিকের সহিত তৃতীয় ব্যক্তির সম্পর্ক স্থাপিত হওয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় এজেন্ট তৃতীয় ব্যক্তির নিকট সর্বতোভাবে দায়ী।

(৩) এজেন্ট তাহার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির সহিত চুক্তি করিলে তৃতীয় ব্যক্তি তাহার অধিকার আদায়ের জন্য মালিকের বিরুদ্ধে মোকাদ্দমা দায়ের করিতে পারেন, মালিকও তাহার বিরুদ্ধে মামলা করিতে পারেন।

(৪) এজেন্টের মাধ্যমে চুক্তি হইলেও চুক্তির মধ্যে মালিকের প্রয়োজনীয়তা বাদ দেওয়া যাইতে পারে এবং এমতাবস্থায় মালিকের সহিত তৃতীয় ব্যক্তির কোন প্রকারের সম্পর্ক স্থাপিত হয় না।

উল্লেখ্য যে, মালিক ব্যক্তিগতভাবে চুক্তি করিলে যেভাবে তাহা বলবৎযোগ্য হয় এবং যে সকল আইনানুগ প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হয়, এজেন্টের মাধ্যমে চুক্তি করিলেও তাহাই হইবে।

মালিক ব্যক্তিগতভাবে কাজ করিবার ফলে উদ্ভূত দায়িত্ব যেভাবে কার্যকর করা যাইত, এজেন্টের মাধ্যমে মালিক কাজ করিলেও একইভাবে তাহাও কার্যকর হইবে এবং উহার একই আইনানুগ প্রতিক্রিয়া হইবে। চুক্তির সম্পর্ক যেখানে আইনানুগ সেখানে এজেন্ট যে চুক্তি করেন বা যে কাজ করেন তাহা মালিকের পক্ষে হইলে এবং এজেন্টকে প্রদত্ত ক্ষমতা বহির্ভূত না হইলে সেজন্য মালিক সম্পূর্ণভাবে বাধ্য। এজেন্টের কাজের দ্বারা মালিকের ক্ষতি হইলে সেই কারণে মালিক তাহার দায়িত্ব এড়াইতে পারেন না।৫০

৭২০

ধারা-১২২৭ অধিকার বহির্ভূত কাজের জন্য এজেন্টের দায়দায়িত্ব যখন কোন এজেন্ট তাহার উপর অর্পিত ক্ষমতা বহির্ভূত কোন কাজ সম্পাদন করেন এবং তাহার ক্ষমতানুযায়ী সম্পাদিত কাজের অংশ ক্ষমতা বহির্ভূত কাজের অংশ হইতে পৃথক করা যায়, সেক্ষেত্রে তাহার ক্ষমতানুযায়ী কাজের অংশের জন্য তিনি তাহার মালিকের নিকট দায়ী হইবেন।

বিশ্লেষণ

উপরে বর্ণিত ধারায় উল্লেখ করা হইয়াছে যে, এজেন্টের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তি মালিকের ব্যক্তিগত চুক্তিরূপে গণ্য হয়। এজেন্টের কাজ মালিকের কাজ বলিয়া গণ্য হয়। মালিকের ব্যক্তিগত চুক্তি যেভাবে বলবৎ করা যায় এজেন্টের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত চুক্তিও একইভাবে বলবৎ করা যায়। মালিকের ব্যক্তিগত কাজের ফলে যে দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবে জন্মলাভ করে এজেন্টের কাজের ফলেও তাহাই হয়। বর্তমান ধারাতে আরও একটু ব্যাখ্যা করিয়া বলা হইয়াছে, ক্ষমতা বহির্ভূত যে কাজ এজেন্ট করেন তাহা পালনে মালিক বাধ্য নহেন।

এজেন্ট যদি এমন কাজ করেন যে, সম্পাদিত চুক্তির এক অংশ তাহার ক্ষমতাধীন এবং অপর অংশ ক্ষমতা বহির্ভূত এবং যদি এই দুই অংশকে পৃথক করা যায়, তখন এজেন্ট তাহার ক্ষমতাধীন কাজটুকুর জন্য মালিকের নিকট দায়ী অর্থাৎ কাজের ঐ অংশটুকু সম্পর্কে মালিক ও এজেন্ট একে অপরের সহিত সম্পর্কযুক্ত।

বর্ণিত ধারার মূল কথা হইল, ক্ষমতা বহির্ভূত এজেন্টের কাজের জন্য মালিকের দায়িত্বহীনতা। এজেন্সিভুক্ত বিষয়ে তিনি সেই পরিমাণ কাজ করিতে পারেন যে পরিমাণ কাজের ক্ষমতা এজেন্ট পাইয়াছেন। সেই এলাকার মধ্যে কাজ করিলে এজেন্টের কাজ মালিকের কাজ বলিয়াই গণ্য হয়, কিন্তু ঐ এলাকার বাহিরে কাজের জন্য মালিক কোন প্রকারের দায়ী থাকিবেন না। যেমন এজেন্ট এমন এক ব্যক্তির পক্ষে জামিন হইলেন যাহার পক্ষে জামিন হওয়া এজেন্টের ক্ষমতা বহির্ভূত, সেক্ষেত্রে এজেন্টের কাজের জন্য মালিক বাধ্য হইবেন না। অনুরূপভাবে এজেন্টের ধার করিবার অধিকার না থাকা সত্ত্বেও যদি তিনি টাকা ধার করিয়া তাহার এক অংশ মালিকের দেনা পরিশোধে ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে ধারকৃত টাকার এই অংশের জন্য মালিক, যিনি টাকা এজেন্টকে ধার দিয়াছিলেন তাহার নিকট দায়বদ্ধ।

৭২১

অনুরূপভাবে এক ব্যক্তি পণ্য ক্রয় করিয়া দালালকে তাহার মূল্য বুঝাইয়া দেন। ক্রেতা যদি প্রমাণ করিতে পারেন যে, দালালের মূল্য গ্রহণের অধিকার ছিল, তবেই তিনি দায়মুক্ত হইবেন। প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হইলে তিনি পণ্যের মালিককে মূল্য প্রদান করিবার দায়িত্ব হইতে মুক্ত হইবেন না।৫১

ধারা-১২২৮ এজেন্টের ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ পৃথকযোগ্য না

হইলে মালিকের অধিকার যখন এজেন্ট তাহাকে প্রদত্ত ক্ষমতা বহির্ভূত কোন কাজ করেন এবং উক্ত কাজ তাহাকে প্রদত্ত ক্ষমতা এবং ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ হইতে যদি পৃথক করা

যায়, সেক্ষেত্রে উক্ত কাজ মালিক প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন।

বিশ্লেষণ

পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, এজেন্ট প্রদত্ত ক্ষমতার মধ্যে যাহা কিছু করেন তাহা মান্য করিতে মালিক বাধ্য। ক্ষমতার বাহিরে এজেন্ট কিছু করিলে মালিক তাহা মানিতে বাধ্য নন। তবে শর্ত থাকে যে, ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ ক্ষমতাধীন কাজের সঙ্গে পৃথকযোগ্য হইতে হইবে। পৃথকযোগ্য না হইলে মালিক তাহা মানিয়া লইতে বাধ্য নন। যেমন করিম তাহার জন্য এক হাজার গরু খরিদ করিবার জন্য রহিমকে এজেন্ট নিয়োগ করিল। রহিম এক হাজার গরু ও সেই সঙ্গে আরও তিন শত গরুর বাচ্চা মোট দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে খরিদ করিল। এমতাবস্থায় করিম সম্পূর্ণ লেনদেনটি প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন।৫২

বর্ণিত ধারা হইতে নিম্নের কথাগুলি স্পষ্ট হয় যে, যখন কোন ব্যক্তি মালিক কর্তৃক এজেন্ট নিযুক্ত হন এবং যখন এজেন্টের ক্ষমতা এজেন্সির চুক্তির মধ্যে সুনির্দিষ্ট থাকে এবং এজেন্ট তাহার ক্ষমতার বাহিরে কিছু করেন এবং যখন তিনি উক্ত ক্ষমতার মধ্যেও কিছু করেন এবং এই দুই কাজকে পরস্পর পৃথক করা যায়

বিধবদ্ধ ইসলামttp://ilm.weebly.com/

৭২২

, তখন মালিক উক্ত সমগ্র লেনদেন বাতিল করিয়া দিতে পারেন। এজেন্ট যখন ক্ষমতা বহির্ভূত কোন কাজ করেন তখন সাধারণত দুইটি অবস্থার সৃষ্টি হয়?

(১) এজেন্টের ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ ক্ষমতাধীন কাজ হইতে পৃথকযোগ্য;

(২) এজেন্টের ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ ক্ষমতাধীন কাজ হইতে পৃথকযোগ্য নয়। প্রথম অবস্থায় মালিক ক্ষমতাধীন কাজের জন্য দায়ী এবং দ্বিতীয় অবস্থায় মালিক দায়ী নন।

ধারা-১২২৯ মালিকের পক্ষে চুক্তি করিয়া এজেন্ট তাহা ব্যক্তিগতভাবে

বলবৎ করিতে পারেন না। (ক) অনুকূল কোন চুক্তির অবর্তমানে কোন এজেন্ট তাহার মালিকের পক্ষে চুক্তি সম্পাদন করিয়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাহা বলবৎ করিতে পারেন না।

(খ) নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রসমূহে এই জাতীয় চুক্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায় –

(১) যখন বিদেশে বসবাসকারী কোন ব্যবসায়ীর পক্ষে মালপত্র ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এজেন্ট কর্তৃক কোন চুক্তি সম্পাদিত হয়;

(২) যখন কোন চুক্তির ক্ষেত্রে এজেন্ট তাহার মালিকের নাম গোপন রাখেন;

(৩) যে ক্ষেত্রে মালিকের নাম প্রকাশিত হওয়ার পরও তাহার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যায় না।

বিশ্লেষণ

এজেন্টের দায়িত্ব কখনও তাহার ব্যক্তিগত বলিয়া বিবেচিত হয় না, বরং এজেন্ট সর্বদা তাহার মালিকের জন্য কাজ করেন। তিনি মালিকের প্রতিনিধিত্ব করেন মাত্র। তাই এজেন্টের ব্যক্তিগত কোন দায়িত্ব বা অধিকার থাকিবার প্রশ্নই আসে না। তবে এজেন্সির পক্ষবৃন্দ তাহাদের ইচ্ছানুযায়ী ভিন্ন চুক্তি করিতে পারেন

৭২৩

। বিদেশী ব্যবসায়ীর মাল বিক্রয়ের এজেন্সিতে অথবা অপ্রকাশিত মালিকের কাজ করিবার ক্ষেত্রে কিংবা যে মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যায় না সেই সকল ক্ষেত্রে ধরিয়া লইতে হয় যে, এজেন্ট ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। উপরোল্লিখিত ধারাতে তাহারই বর্ণনা দেওয়া হইয়াছে।

ধারা-১২৩০

অপ্রকাশিত এজেন্ট কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তির ক্ষেত্রে

অপর পক্ষের অধিকার যখন কোন এজেন্ট এমন কোন ব্যক্তির সহিত চুক্তি সম্পাদন করেন যিনি তাহাকে এজেন্ট বলিয়া জ্ঞাত নহেন, সেক্ষেত্রে এজেন্টের মালিক চুক্তিটি কার্যে পরিণত করার দাবি করিতে পারেন।

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত এজেন্ট স্বয়ং মালিক হইলে চুক্তির অপর পক্ষের জন্য তাহার উপর যে অধিকার থাকিত উক্ত মালিকের উপরও অজ্রপ অধিকার থাকিবে। চুক্তি শেষ হওয়ার পূর্বে যদি মালিক নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন সেক্ষেত্রে চুক্তির অপর পক্ষ যদি ইহা প্রমাণ করিতে পারেন যে, চুক্তির মালিককে যদি তিনি পূর্বে জানিতেন তাহা হইলে তিনি চুক্তিটি সম্পাদন করিতেন না, সেই ক্ষেত্রে চুক্তির অপর পক্ষ চুক্তিটি সম্পাদন করিতে অস্বীকার করিতে পারেন।

বিশ্লেষণ

পূর্বের ধারায় উল্লেখ করা হইয়াছে যে, এজেন্ট যেখানে মালিকের নাম প্রকাশ করেন না সেখানে চুক্তি প্রতিপালনে এজেন্টের ব্যক্তিগত দায়িত্ব আসিয়া পড়ে। এই ধারায় উল্লেখ করা হইয়াছে যে, এজেন্ট যদি নিজের পরিচয় গোপন রাখেন তবে মালিক তাহাকে চুক্তি প্রতিপালনে বাধ্য করিতে পারেন এবং চুক্তির দ্বিতীয় পক্ষ মালিককে চুক্তি প্রতিপালন করিতে বাধ্য করিতে পারেন। তবে চুক্তি নিষ্পন্ন করিবার

৭২৪

পূর্বে মালিকের সহিত পরিচয় ঘটিলে তিনি চুক্তি বহাল রাখিতে বা প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন। বর্ণিত ধারা হইতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, যখন কোন এজেন্ট এমন কোন ব্যক্তির সহিত চুক্তি করেন তিনি জানেন না অথবা যাহার জানিবার কোন করেন নাই যে, যে ব্যক্তি চুক্তি করিয়াছেন তিনি একজন এজেন্ট, তখন ঐ এজেন্টের মালিক চুক্তি প্রতিপালন করিতে এজেন্টকে বাধ্য করিতে পারেন এবং সেই অবস্থায় উক্ত এজেন্ট স্বয়ং মালিক হইলে চুক্তির অপর পক্ষের জন্য তাহার উপর যে অধিকার থাকিত উক্ত মালিকের উপরও দ্রুপ অধিকার থাকিবে। কিন্তু যদি চুক্তি নিষ্পন্ন হইবার পূর্বে মালিক আত্মপ্রকাশ করেন তবে চুক্তির অপর পক্ষ সম্পাদিত চুক্তি প্রতিপালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে তাহাকে ইহা প্রমান করাইতে হইবে যে, তিনি ঐ ব্যক্তিকে মালিক জানিলে এবং এজেন্টকে মালিক না জানিলে চুক্তি স্বাক্ষর করিতেন না। আরও উল্লেখ্য যে, বর্তমান ধারায় মালিকের অধিকার এবং তৃতীয় পক্ষের অধিকার এই দুই অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হইয়াছে।৫৩।

প্রথমত মালিকের অধিকার ও চুক্তি সম্পাদন কালে মালিকের পরিচয় গোপন থাকিলেও চুক্তি প্রতিপালনের সময় তিনি চুক্তি প্রতিপালনের দাবি করিতে পারেন যে পক্ষ চুক্তি করিয়াছেন তাহাকে তিনি প্রতিপালনে বাধ্য করিতে পারেন। ইহা তাহার অধিকার, এই অধিকার সীমাহীন নহে। এজেন্টের বিরুদ্ধে চুক্তির অপর পক্ষের যে অধিকার আছে, মালিকের বিরুদ্ধেও সেই অধিকার আছে, সেই অধিকারকে তিনি নস্যাৎ করিতে পারেন না।

চুক্তির অপর পক্ষের অধিকার ও চুক্তির অপর পক্ষ শুধু এজেন্টকে দেখিয়াই চুক্তি সম্পাদন করিয়াছেন। তিনি মালিককে দেখেন নাই বা জানেনও না। সুতরাং মালিক আত্মপ্রকাশ করিবার পর অপর পক্ষ উক্ত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করিবার অধিকার রাখেন ৫৪

৭২৫

ধারা-১২৩১ মালিক বা এজেন্ট এককভাবে দায়ী হইবেন।

এই বিশ্বাসে সম্পাদিত চুক্তির ফলাফল। এজেন্ট অথবা মালিকের সহিত চুক্তি সম্পাদনকারী কোন ব্যক্তি যে ক্ষেত্রে এজেন্ট অথবা মালিককে প্রতারণামূলকভাবে এমন বিশ্বাসে চুক্তি সম্পাদনে প্ররোচিত করে যে, কেবল এজেন্ট বা মালিকই দায়ী হইবেন, সেই ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে এজেন্ট বা মালিককে এককভাবে দায়ী করিতে পারেন না।

বিশ্লেষণ

মালিক অথবা এজেন্ট এককভাবে দায়ী হইবেন এই বিশ্বাসে প্ররোচিত করিয়া চুক্তি সম্পাদন করিলে তাহার পরিণতি সম্পর্কে এই ধারায় আলোচনা করা হইয়াছে। বলা হইয়াছে, যদি কোন ব্যক্তি এজেন্টের সহিত চুক্তি সম্পাদন করে এবং ঐ ব্যক্তি এজেন্টকে এমন বিশ্বাসে চুক্তি সম্পাদনে প্ররোচিত করেন যে, উক্ত চুক্তির জন্য কেবল মালিকই দায়ী হইবেন, এজেন্টের কোন দায়-দায়িত্ব নাই অথবা যদি ঐ দ্বিতীয় ব্যক্তি মালিককে এমন বিশ্বাসে চুক্তি সম্পাদনে প্ররোচিত করেন যে, উক্ত চুক্তির জন্য শুধুমাত্র এজেন্টই দায়ী থাকিবেন, মালিকের কোন দায়-দায়িত্ব থাকিবে

, সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ঐ ব্যক্তি প্রথম অবস্থায় এজেন্টকে দায়ী করিতে পারিবেন না এবং দ্বিতীয় অবস্থায় ঐ ব্যক্তি মালিককে দায়ী করিতে পারিবেন না। সাধারণত চুক্তির ক্ষেত্রে মালিকই সর্বদা চুক্তি প্রতিপালনে বাধ্য থাকেন, এজেন্টের তেমন কোন দায়-দায়িত্ব থাকে না। তবে চুক্তির পক্ষ যদি এজেন্টকেই দায়ী করিয়া চুক্তি করেন, কেবল সেক্ষেত্রেই এজেন্ট দায়ী থাকেন এবং মালিককে দায়ী করিয়া চুক্তি সম্পাদন করিলে সেই ক্ষেত্রে মালিকই দায়ী থাকেন।

উল্লেখ্য যে, যে ক্ষেত্রে চুক্তির পক্ষ এজেন্ট অথবা মালিক এই দুইজনের মধ্যে যে কোন একজনকে নির্বাচন করিবার অধিকার পান, সেই ক্ষেত্রে একবার নির্বাচন চূড়ান্ত হইলে সেই অবস্থা হইতে আর প্রত্যাবর্তন করিতে পারেন না।

বাদী যদি প্রত্যক্ষভাবে মালিককে বলেন যে, লোকসানের জন্য মালিক দায়ী হইবেন, তাহা হইলে পরবর্তীতে বাদী আর এজেন্টকে দায়ী করিতে পারেন না।

৭২৬

ধারা-১২৩২ ভুয়া এজেন্ট কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তির পরিণাম কোন ব্যক্তি যখন নিজেকে অপর কোন ব্যক্তির অনুমতিপ্রাপ্ত এজেন্ট বলিয়া ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে তৃতীয় কোন ব্যক্তির সহিত চুক্তি সম্পাদনে প্ররোচিত করেন তখন তাহার দাবিকৃত মালিক যদি তাহার মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তি অনুমোদন না করেন, সেই ক্ষেত্রে সম্পাদিত চুক্তির ফলে অপর ব্যক্তি যে ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছেন, ভুয়া এজেন্ট তাহার ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে।

বিশ্লেষণ

ভুয়া এজেন্ট কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তির পরিণতি ও তাহার দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে এই ধারায় আলোচনা করা হইয়াছে। নিম্নবর্ণিত অবস্থাসমূহে ভুয়া এজেন্ট ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবে।

(১) যে ব্যক্তি বাস্তবিকপক্ষে কোন ব্যক্তির অনুমতিপ্রাপ্ত এজেন্ট নয় অথচ ঐ ব্যক্তির অনুমতিপ্রাপ্ত এজেন্ট বলিয়া নিজেকে পরিচয় দেয় এবং ঐ ভুয়া পরিচয়ে তৃতীয় ব্যক্তিকে চুক্তি সম্পাদনে প্ররোচিত করে এবং তাহার কথিত মালিক যদি তাহার সম্পাদিত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন।৫৪

(২) সম্পাদিত চুক্তির ফলে যদি অপর পক্ষ বা তৃতীয় ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হন তবেই ভুয়া এজেন্ট ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে।

এজেন্টের ভুয়া পরিচয় সাধারণত দুইভাবে হইতে পারে। প্রথমত ও কোন ব্যক্তি কাহারও এজেন্ট না হইয়াও নিজকে এজেন্ট বলিয়া পরিচয় দেন। দ্বিতীয়ত : বিশেষ কোন এক বিষয়ের জন্য এজেন্ট নির্বাচিত হইয়া অন্য বিষয়ে, যে ক্ষেত্রে সে এজেন্ট নয় সেই বিষয়েও নিজকে এজেন্ট বলিয়া পরিচয় পেশ করা। বর্ণিত দুই প্রকারের মধ্যে যে প্রকারের মিথ্যা পরিচয়ে তৃতীয় ব্যক্তিকে প্ররোচিত করিয়া কোন চুক্তি সম্পাদন করিলে, যদি উহার দ্বারা তৃতীয় ব্যক্তি কোন প্রকারের ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহা হইলে ভুয়া পরিচয় প্রদানকারী ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে। উল্লেখ্য যে, মালিক যদি ভুয়া এজেন্টের কাজ প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যভাবে স্বীকার করিয়া নেন, সেই ক্ষেত্রে উক্ত সম্পাদিত চুক্তির সকল দায়-দায়িত্ব মালিকের উপর বার্তাইবে।

৭২৭

ধারা-১২৩৩

ক্ষতিপূরণ চুক্তি যে চুক্তি দ্বারা এক পক্ষ অপর পক্ষকে, খােদ অঙ্গিকারকারীর আচরণে ‘ অথবা ভিন্ন কোন ব্যক্তির আচরণে উদ্ভূত ক্ষতি হইতে রক্ষা করিবার অঙ্গীকার

করেন, সেই প্রকারের অঙ্গীকারকে ক্ষতিপূরণ চুক্তি’ বলে।

বিশ্লেষণ

চুক্তির এক পক্ষের আচরণে অন্য পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে অথবা তৃতীয় কোন ব্যক্তির আচরণ দ্বারাও চুক্তির পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে। এমতাবস্থায় চুক্তির যে কোন পক্ষ অঙ্গীকার করিতে পারেন যে, এই জাতীয় কোন প্রকারের ক্ষতি হইলে তিনি উহার সকল দায়-দায়িত্ব বহন করিবেন। এইরূপ অঙ্গীকারকে “ক্ষতিপূরণ চুক্তি” বলে। ক্ষতিপূরণ চুক্তির মধ্যে সাধারণত নিম্নবর্ণিত উপাদানগুলি থাকিতে পারে : (১) অঙ্গীকারকারী যদি অঙ্গীকার গ্রহীতার কোন প্রকারের ক্ষতি করেন। (২) ভিন্ন কোন ব্যক্তি যদি অঙ্গীকার গ্রহীতার কোন ক্ষতি করেন। (৩) তবে অঙ্গীকারকারী তাহাকে হেফাজত করিবেন।

যখন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে উপকার পৌছাবার নিমিত্তে কাজ করেন অথবা যখন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সহিত মিলিয়া সম্মিলিত কোন কাজ করেন এবং সেই কাজ সম্পাদন করিতে গিয়া যদি কোন পক্ষ ক্ষতির আশংকা করেন, এমতাবস্থায় অপর ব্যক্তি অঙ্গীকারাবদ্ধ হইতে পারেন যে- আশংকাকৃত এবং সম্ভাব্য ক্ষতির অবস্থার উদ্ভব হইলে তিনি উহার যথার্থ ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবেন। অপর পক্ষের এই জাতীয় অঙ্গীকারকেই “ক্ষতিপূরণ চুক্তি” বলে। ক্ষতিপূরণ প্রদানের চুক্তিতে, ক্ষতিপূরণদাতা ক্ষতিপূরণ গ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের অঙ্গীকার করেন। ক্ষতিপূরণ গ্রহীতার যদি কোন প্রকারের ক্ষতি হয় তাহার জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। বর্ণিত এই ক্ষতি ক্ষতিপূরণদাতা নিজেও আদায় করিতে পারেন, অন্যেও করিতে পারেন। ক্ষতিপূরণযোগ্য চুক্তির কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ না থাকিলে যে কোন পক্ষ যে কোন সময় উহা বাতিল করিতে পারেন। নির্দিষ্ট কোন্ সময়ে ক্ষতিপূরণ চুক্তি প্রতিপালন করিতে হইবে তাহার কোন নির্দেশ না থাকিলে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে উহা করিতে হইবে। আর যদি চুক্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদানের কোন নির্দিষ্ট মেয়াদের উল্লেখ থাকে সেই ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মেয়াদ তত দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে।

৭২৮

ধারা-১২৩৪

ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ক্ষতিপূরণ কি পরিমাণ আদায়যোগ্য তাহার উল্লেখ চুক্তিপত্রে থাকিতে হইবে এবং বর্ণিত পরিমাণই কেবলমাত্র আদায়যোগ্য, উহাতে কম-বেশি। করিবার কাহারও অধিকার নাই।

বিশ্লেষণ

চুক্তির কোন পক্ষের দায়িত্বহীনতার জন্য যদি অপর পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হন, সেই ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের চুক্তি করা যায় এবং এই ক্ষতির দাবি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আদায় করিতে পারেন। তবে শর্ত থাকে যে, তাহাকে এই কথা প্রমাণ করিতে হইবে যে, ক্ষতিপূরণ প্রদানের অঙ্গীকারকারী ব্যক্তি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়াছেন।

ধারা-১২৩৫

স্বত্বের দুর্বলতা জনিত ক্ষতিপূরণ চুক্তি

যখন কোন এক পক্ষ অপর পক্ষের সহিত চুক্তিতে আবদ্ধ হন তখন তিনি ক্রেতার সহিত এই মর্মে চুক্তি করিতে পারেন যে, তাহার স্বত্বে কোন প্রকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাইলে তিনি ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবেন। এইরূপ অঙ্গীকারকে “স্বত্বের দুর্বলতা জনিত ক্ষতিপূরণ চুক্তি” বলে এবং ইহা বৈধ।

বিশ্লেষণ

জমি সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সম্পত্তি বিক্রয়ের পরেও উহার মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের ত্রুটি থাকিয়া যায়। এক্ষেত্রে বিক্রেতার পক্ষে কোন প্রকারের দায় দায়িত্ব চুক্তি না থাকিলে ক্রেতা সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ধারাতে ক্রেতাকে এই জাতীয় ক্ষতি হইতে রক্ষার কথা বলা হইয়াছে। অর্থাৎ সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের পর যদি এমন ক্রটি পরিলক্ষিত হয় যে, ক্রেতার পক্ষে উহার ফল ভোগ করা অসম্ভব, তবে সেই ক্ষেত্রে বিক্রেতা কর্তৃক ক্ষতিপূরণের চুক্তি থাকিলে ক্রেতাকে বিক্রেতা যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবেন।

৭২৯

ধারা-১২৩৬

নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বলিতে অনাদায়ের ক্ষেত্রে কোন তৃতীয় পক্ষের অঙ্গীকার সম্পাদন অথবা দায় পরিশোধের চুক্তিকে বুঝায়, নিশ্চয়তা প্রদানকারীকে ‘যামিনদার’ বলা হয় এবং যে ব্যক্তির অনাদায় সম্পর্কে যামিন দেওয়া হয় তাহাকে মূল খাতক’ বলে এবং যে ব্যক্তির নিকট যামিন দেওয়া হয় তাহাকে প্রাপক’ বলে।

বিশ্লেষণ

ইতিপূর্বে ক্ষতিপূরণের বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে এবং বর্তমান ধারায় নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি এবং যামিনদার, খাতক ও মহাজনের সংজ্ঞা দেওয়া হইয়াছে। যেমন করিম রহিমের নিকট হইতে এক শত টাকা ধার করিলেন। এই সময় যায়েদ রহিমের সাথে এই চুক্তি করিলেন যে, রহিম ধার পরিশোধ না করিলে তিনিই তাহার ধার পরিশোধ করিবেন এবং এই ক্ষেত্রে করিম মূল খাতক, রহিম মহাজন এবং যায়েদ যামিনদার এবং করিম ও যায়েদের মধ্যে অনুষ্ঠিত চুক্তিটিকে নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তিবলে। ক্ষতি প্রদানের চুক্তি ও নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির মধ্যে পার্থক্য আছে। নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বলিতে সেই প্রকারের চুক্তিকে বুঝায় যাহার মধ্যে, খাতকের দেনা পরিশোধের ব্যর্থতা ঘটিলে যামিনদার তাহা নিজে পরিশোধ করিবেন এই জাতীয় বিধান থাকে। তাই এই জাতীয় চুক্তিতে তিনটি পক্ষ থাকে। (১) যামিনদার, (২) মূল খাতক এবং (৩) মহাজন। অপরপক্ষে ক্ষতিপূরণ প্রদানের চুক্তিতে সাধারণত দুইটি পক্ষ থাকে। ক্ষতিপূরণ প্রদানের চুক্তির মধ্যে অনাদায়ের প্রসঙ্গ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নহে। নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তিতে দেনা বর্তমান থাকে এবং ঐ দেনা পরিশোধের নিশ্চয়তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকে, ক্ষতিপূরণের চুক্তিতে ক্ষতির আশংকা থাকে মাত্র এবং সে সম্পর্কে চুক্তি করা হয়।

ধারা-১২৩৭ নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির ক্ষেত্রে যামিনদারের দায়-দায়িত্ব মূল খাতক এবং যামিনদারের দায়িত্ব এক এবং অভিন্ন ও

তবে শর্ত থাকে যে, ভিন্ন কোন প্রকারের চুক্তি বিদ্যমান থাকিলে সেই ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করিতে হইবে।

৭৩০

বিশ্লেষণ

মূল খাতক চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হইলে যামিনদারের দায়-দায়িত্ব কি তাহা এই ধারাতে উল্লেখ করা হইয়াছে। বলা হইয়াছে, নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির ক্ষেত্রে মূল খাতক এবং যামিনদারের মধ্যে দায় পরিশোধের ব্যাপারে কোন পার্থক্য নাই অর্থাৎ মূল খাতক দায় পরিশোধে ব্যর্থ হইলে উহা পরিশোধের দায়িত্ব যামিনদারের উপর বর্তায়। সুতরাং দেখা যায় যে, মূল খাতকের দায়িত্ব এবং যামিনদারের দায়িত্বের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। তবে ভিন্ন কোন চুক্তির দ্বারা এই দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো বা কমানো যায়। সর্বদা খেয়াল রাখা উচিৎ যেন নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির ক্ষেত্রে যামিনদার কোন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন না হন।৫৫

এই জাতীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় যে, খাতক তাহার অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হইলে মহাজন সর্বপ্রথম মূল খাতকের উপরই চাপ সৃষ্টি করেন। মূল খাতক ব্যর্থ হইলে কেবল তখনই মহাজন যামিনদারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। তবে যেহেতু মূল খাতক এবং যামিনদারের দায়িত্ব একই, তাই মহাজন সর্বপ্রথম মূল খাতকের উপর অঙ্গীকার পালনের চাপ সৃষ্টি না করিয়া সরাসরি যামিনদারের উপরও চাপ সৃষ্টি করিতে পারেন, এই অধিকার মহাজনের রহিয়াছে।

উল্লেখ্য যে, মহাজন ইচ্ছা করিলে এককভাবে মূল খাতকের উপর দাবি আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করিতে পারেন অথবা এককভাবে যামিনদারের উপর চাপ সৃষ্টি করিতে পারেন অথবা মহাজন তাহার দাবি আদায়ের জন্য একই সাথে মূল খাতক এবং যামিনদার উভয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করিতে পারেন, মহাজনের এই

অধিকারও রহিয়াছে।৫৬

ধারা-১২৩৮ যখন হইতে যামিনদারের দায়িত্ব আরম্ভ হয়। (ক) যামিনদার এবং মহাজনের মধ্যে ভিন্ন কোন নূতন চুক্তি না থাকিলে যামিন হইবার সময়কাল হইতেই যামিনদারের দায়িত্ব আরম্ভ হয়।

(খ) যামিনদারের দায়িত্বকাল আরম্ভ হইবার জন্য যদি কোন ঘটনা ঘটিবার শর্ত চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে তবে ঐ ঘটনা ঘটিবার পর হইতেই যামিনদারের দায়িত্বকাল আরম্ভ হয়।

৭৩১

(গ) চুক্তিপত্রে যদি এই জাতীয় কোন শর্তের কথা উল্লেখ থাকে যে, মহাজন মূল খাতকের নিকট হইতে দাবি আদায়ে ব্যর্থ হইলেই কেবল যামিনদার দায়ী হইবেন। সেক্ষেত্রে মহাজন মূল খাতকের নিকট হইতে দাবি আদায়ের সময় চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইলে যামিনদারের দায়িত্বকাল আরম্ভ হয়।

(ঘ) চুক্তিপত্রে যদি দাবি আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে দাবি আদায়ের নির্দিষ্ট তারিখ অতিবাহিত হইবার পর হইতেই যামিনদারের দায়িত্বকাল আরম্ভ হয়।

(ঙ) যদি চুক্তিপত্রে এই কথা উল্লেখ থাকে যে, মহাজন দাবি আদায়ে ব্যর্থ হইলে মূল খাতকের সম্পদ আটক করিবেন এবং তাহাতে দাবি পরিশোধ না হইলে যামিনদার দায়ী থাকিবেন, সেই ক্ষেত্রে মূল খাতকের সম্পদ আটকের পরও যদি মহাজনের দাবি সংকুলান না হয় তখন যামিনদারের দায়িত্ব আরম্ভ হয়।

ধারা-১২৩৯ যে সকল ক্ষেত্রে যামিনদার দায়ী থাকেন না। (ক) শরীয়াত বহির্ভূত চুক্তি হইবার কারণে যেখানে মূল খাতক স্বয়ং মহাজনের নিকট দায়ী নন সেখানে যামিনদারও দায়ী নন।

(খ) যেই ক্ষেত্রে স্বয়ং মহাজন তাহার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা করেন, এবং সেই ক্ষেত্রে চুক্তি অকার্যকর হওয়ার শর্ত চুক্তিনামায় থাকে, সেই ক্ষেত্রে যামিনদারের কোন দায়িত্ব থাকে না।

(গ) যামিনদারের অগোচরেই যদি মূল খাতক এবং মহাজন তাহাদের চুক্তি পরিবর্তন করিয়া ফেলেন, সেই ক্ষেত্রে যামিনদারের আর কোন দায়িত্ব থাকে না।

(ঘ) যামিনদারের উপস্থিতিতে চুক্তি সম্পাদনের পরে মূল খাতক এবং মহাজন যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি করেন যামিনদার যে অবস্থায় যিম্মাদারি গ্রহণ করিয়াছিলেন, সেই অবস্থার পরিবর্তন সাধন করা হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে যামিনদারের আর কোন দায়িত্ব থাকে না।৫৭

৭৩২

ধারা-১২৪০

যামিনদার যখন দায়মুক্ত হন। যামিনদারের অনুমতি ছাড়া খাতক এবং মহাজন পরস্পর মিলিত হইয়া চুক্তির শর্তাবলীর কোন মৌলিক পরিবর্তন সাধন করিলে যামিনদার দায়মুক্ত হন।

বিশ্লেষণ

খাতক এবং মহাজন মিলিত হইয়া চুক্তির শর্তে পরিবর্তন সাধন করিলে যামিনদারের আর কোন দায়িত্ব থাকে না, বর্তমান ধারাতে এই কথারই উল্লেখ করা হইয়াছে। যে চুক্তিতে কোন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন নাই তিনি উক্ত চুক্তি দ্বারা বাধ্য হইতে পারেন না। খাতক এবং মহাজন মিলিয়া যখন মূল চুক্তির পরিবর্তন সাধন করেন তখন আদি চুক্তির আর অস্তিত্ব থাকে না। সুতরাং যামিনদার পরিবর্তিত এই চুক্তির সহিত কোনভাবে জড়িত নন। তাই তিনি পরিবর্তিত চুক্তির দায়-দায়িত্ব হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকিবেন, পরবর্তী চুক্তি যাহারা করেন শুধু তাহারাই উহার সহিত জড়িত এবং সম্পাদিত চুক্তি পালনে বাধ্য। পরিবর্তিত চুক্তিতে যিনি অংশগ্রহণ করেন নাই তিনি উক্ত চুক্তি পালনে বাধ্য নন।

উল্লেখ্য যে, নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির ক্ষেত্রে সকল পক্ষের সম্মতিক্রমে উহার মধ্যে পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু মূল খাতক যদি যামিনদারের অনুমতি না লইয়া মহাজনের সহিত তাহার চুক্তির কোন পরিবর্তন করেন সে ক্ষেত্রে যামিনদার আর বাধ্য থাকেন না। চুক্তিপত্রের নিশ্চয়তা প্রদানের মধ্যে কোন প্রকারের পরিবর্তন আনিতে হইলে যামিনদারের সম্মতি একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় যামিনদার তাহার দায়-দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি পান।

এখানে আরও উল্লেখ্য যে, খাতক এবং মহাজন মিলিয়া যামিনদারের অগোচরে চুক্তিপত্রে এমন কোন পরিবর্তন করেন যাহা অতি সামান্য এবং যাহার ফলে মূল চুক্তিপত্রের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়ে না, সেই ক্ষেত্রে যামিনদার তাহার দায় হইতে মুক্তি পাইবেন না। অথবা এমন পরিবর্তন যাহা ভুলকে সংশোধন করে, তাহার দ্বারা নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বাতিল হয় না এবং যামিনদারও অব্যাহতি পান না।

ধারা-১২৪১ নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বাতিল হওয়া। ভিন্নতর কোন চুক্তির অবর্তমানে যামিনদারের মৃত্যু হইলে নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বাতিল হইয়া যায়।

বিশ্লেষণ

যামিনদারের মৃত্যু হইলে নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বাতিল হইয়া যায়, কিন্তু ভিন্নতর কোন চুক্তি থাকিলে যামিনদারের মৃত্যুর পরও নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বলবৎ থাকে। যেমন- চুক্তিপত্রে যদি উল্লেখ থাকে যে, যামিনদার বা তাহার উত্তরাধিকারীগণ বা প্রতিনিধিবর্গ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বাতিল করিবেন সেই ক্ষেত্রে যামিনদারের মৃত্যুর ফলে নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বাতিল হয় না, বরং যামিনদারের উত্তরাধিকারীগণ উক্ত চুক্তি প্রতিপালনের দায়িত্ব পালন করিবেন।

উল্লেখ্য যে, মূল খাতকের মৃত্যু হইলে যামিনদারের দায়-দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় না। সুতরাং যামিনদার, মূল খাতকের মৃত্যু হইলে এই কথা বলিতে পারেন না যে, তাহার দায়িত্ব শেষ হইয়া গিয়াছে। আরও উল্লেখ্য যে, একাধিক যামিনদার থাকিলে যদি একজন যামিনদারের মৃত্যু হয়, সেই ক্ষেত্রে অন্য যামিনদার দায়ী থাকেন এবং চুক্তি বলবৎ থাকে।

ধারা-১২৪২ যে ক্ষেত্রে যামিনদার অব্যাহতি পান।

(ক) মহাজন ও মূল খাতকের মধ্যকার কোন চুক্তিতে মূল খাতক মুক্তি লাভ করিলে অথবা অন্য যে কোন উপায়ে মূল খাতকের দায়মুক্তি হইলে যামিনদার অব্যাহতি লাভ করিবেন।৫৮

(খ) যে ক্ষেত্রে মহাজন মূল খাতকের সহিত আপোষ করেন অথবা তাহাকে সময় দেন অথবা তাহার বিরুদ্ধে কোন প্রকারের চাপ প্রয়োগ না করিবার অঙ্গীকার করেন, সেই চুক্তিতে যামিনদার সম্মতি জ্ঞাপন না করিলে যামিনদার অব্যাহতি লাভ করেন।

৭৩৪

বিশ্লেষণ

বর্ণিত ধারাতে যামিনদার কখন অব্যাহতি লাভ করেন তাহার বর্ণনা করা হইয়াছে। নিম্নে বর্ণিত ক্ষেত্রে যামিনদার অব্যাহতি লাভ করেন। (১) যখন মহাজন এবং মূল খাতক এমন চুক্তি করেন যাহার ফলে মূল খাতকের দায়মুক্তি ঘটে, তখন যামিনদারও অব্যাহতি লাভ করেন। (২) মহাজন যখন এমন কোন কাজ করেন অথবা এমন কোন কাজ হইতে বিরত থাকেন যাহার পরিণামে মূল খাতকের দায়মুক্তি ঘটে, সেই ক্ষেত্রে যামিনদারও তাহার দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি পান। (৩) মহাজন যদি মূল খাতকের সহিত আপোষ-নিষ্পত্তি করিবার চুক্তি করেন, সেই ক্ষেত্রে যামিনদার অব্যাহতি লাভ করেন। (৪) মহাজন যদি মূল খাতককে তাহার দেনা পরিশোধ করিতে অতিরিক্ত সময় প্রদানের চুক্তি করেন, সেই ক্ষেত্রেও যামিনদার অব্যাহতি লাভ করিবেন। (৫) মহাজন যদি মূল খাতকের সহিত এই মর্মে চুক্তি সম্পাদন করেন যে, তিনি তাহার বিরুদ্ধে কোন মামলা-মোকদ্দমা করিবেন না, সেই ক্ষেত্রেও যামিনদার অব্যাহতি লাভ করিবেন। উল্লেখ্য যে, বর্ণিত ৪র্থ ও ৫ম ক্ষেত্রসমূহে যামিনদার যদি সম্পাদিত চুক্তিতে সম্মত থাকেন, তাহা হইলে তিনি তাহার দায়-দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি লাভ করিবেন।

ধারা-১২৪৩ যেই ক্ষেত্রে যামিনদার অব্যাহতি লাভ করেন না। যেই ক্ষেত্রে মূল খাতককে সময় প্রদানের জন্য কোন চুক্তি মহাজন মূল খাতকের সহিত না করিয়া কোন তৃতীয় ব্যক্তির সহিত করেন, সেই ক্ষেত্রে যামিনদার অব্যাহতি লাভ করেন না।

বিশ্লেষণ

বর্তমান ধারাতে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, যখন মহাজন তৃতীয় ব্যক্তির সহিত চুক্তিপত্রে মূল খাতককে সময় প্রদান করেন তখন যামিনদার তাহার দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি লাভ করেন না। তৃতীয় ব্যক্তির সহিত মহাজন যে চুক্তি করেন তাহার দ্বারা যামিনদারের দায়িত্ব শেষ হয় না।

মূল খাতক মহাজনকে তাহার প্রাপ্য দিতে বাধ্য। মূল খাতক যদি ইচ্ছা করিয়া মহাজনের প্রাপ্য পরিশোেধ না করেন, সেই ক্ষেত্রে মহাজন মূল খাতকের বিরুদ্ধে

৭৩৫

আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে তাহার প্রাপ্য আদায়ের অধিকার রাখেন। যে ক্ষেত্রে খাতক তাহার দায় মিটাইতে অসমর্থ হন সেই ক্ষেত্রে যামিনদার উক্ত দায় পরিশোধের জন্য মহাজনের নিকট দায়ী থাকেন। যামিনদারের চুক্তি তাই ত্রিপক্ষীয়। এমতাবস্থায় মূল খাতকের সহিত মহাজন যদি পুনরায় কোন প্রকারের নূতন চুক্তি করিতে চাহেন, তবে তাহা অবশ্যই যামিনদারের অনুমোদন সাপেক্ষে হইতে হইবে, অন্যথায় নূতনভাবে সম্পাদিত চুক্তির ক্ষেত্রে যামিনদারের কোন দায়-দায়িত্ব থাকিবে না। কিন্তু মূল খাতক যদি মহাজন কর্তৃক কৃপাপ্রাপ্ত হন, তবে তাহার দ্বারা যামিনদারের দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় না। প্রাপ্য পরিশোধযোগ্য হইলেই মহাজন মূল খাতকের নিকট হইতে তাহার দাবি আদায় করিতে পারেন অথবা তিনি ঐ দাবি পরিশোধের মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে পারেন। মহাজন মূল খাতকের সহিত কোন চুক্তি না করিয়া যদি তৃতীয় ব্যক্তির সহিত এমন চুক্তি করেন যাহার দ্বারা মূল খাতকের দায় পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি পায়, তবে তাহার দ্বারা যামিনদারের দায়-দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় না।৫৯

ধারা-১২৪৪ দয়া বা কৃপা প্রদর্শনের ফলে যামিনদার

অব্যাহতি লাভ করেন না। মহাজন কর্তৃক দয়া বা সহিষ্ণুতা প্রদর্শন পূর্বক যদি তিনি মূল খাতকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের না করেন অথবা মূল খাতকের বিরুদ্ধে অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণে আপাতত বিরত থাকেন, সেই ক্ষেত্রে যামিনদার তাহার দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি লাভ করেন না।

বিশ্লেষণ

বর্তমান ধারাতে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, মূল খাতকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা অন্য কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ না করিলেই যামিনদার অব্যাহতি লাভ করেন

। আরও বলা হইয়াছে যে, নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন বিধানের অবর্তমানে মহাজনের অধিকার প্রয়োগ স্থগিত দ্বারা যামিনদারের দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় না এবং মূল খাতক যেভাবে যাহা করিতে মহাজনের নিকট দায়ী তাহা মূল খাতক মহাজনের বরাবরে যথা সময়ে যথারীতি না করিলে, মহাজন মূল খাতকের বিরুদ্ধে মামলা করিতে পারেন অথবা অন্য যে কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে

৭৩৬

পারেন। মহাজন যদি তাহার প্রাপ্য এই অধিকার প্রয়োগে বিরত থাকেন তবে তাহার দ্বারা যামিনদার অব্যাহতি লাভ করেন না। শুধুমাত্র মহাজনের বিরত থাকা যামিনদারকে মুক্তি দেয় না। মূল খাতকের ঋণ পরিশোধযোগ্য হইলে যামিনদার মহাজনকে প্রাপ্য আদায়ের জন্য তাগিদ দিতে পারেন।৬০

ধারা-১২৪৫ একজন সহ-যামিনদারের মুক্তিতে সহ-যামিনদারগণের দায়িত্ব

একাধিক সহ-যামিনদারের ক্ষেত্রে মহাজন কর্তৃক একজন যামিনদারের মুক্তির ফলে অন্য যামিনদারগণ তাহাদের দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি লাভ করেন না?

তবে শর্ত থাকে যে, সহ-যামিনদারদের দায় অভিভাজ্য হইলে এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

সহ-যামিনদারের মধ্য হইতে যদি একজনকে মুক্তি প্রদান করা হয় সেই ক্ষেত্রে অবশিষ্ট যামিনদারদের দায়-দায়িত্ব কি তাহা এই ধারাতে বলা হইয়াছে। যে লেনদেনে একাধিক যামিনদার থাকে সেই ক্ষেত্রে প্রত্যেক যামিনদারকে বলা হয় সহ-যামিনদার। যেমন কর্জের ক্ষেত্রে রহিম করিমকে এক শত টাকা ধার দিলেন এবং এই লেনদেনের জন্য জাফর, কামাল ও হারূন যামিনদার হইলেন। এই ক্ষেত্রে রহিম হইতেছে মহাজন, করিম হইতেছে মূল খাতক, এবং জাফর, কামাল ও হারূন হইতেছে সহ-যামিনদার।

সাধারণত সহ-যামিনদার মহাজনের নিকট একক এবং যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকেন। সেই অনুযায়ী উপরের উদাহরণের ক্ষেত্রে রহিম করিমকে প্রদত্ত কর্জের টাকা আদায়ের জন্য জাফর, কামাল ও হারূন তিনজনকে দায়বদ্ধ করিতে পারেন অথবা পৃথক পৃথকভাবে জাফর, কামাল ও হারূনকে দেনা পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করিতে পারেন। মহাজন যদি একজন সহ-যামিনদারকে তাহার দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি দেন তবে তাহার দ্বারা অন্য যামিনদারগণ দায়মুক্ত হইয়া যান না। একজন যামিনদার বলিতে পারেন না যে, যেহেতু তিনি অন্য যামিনদারের সহিত মিলিয়া সম্মিলিতভাবে নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তিতে জড়িত হইয়াছিলেন, তাই তাহাদের মধ্য হইতে একজনকে মুক্তি দেওয়ার ফলে তাহারাও দায়মুক্ত হইয়া গিয়াছেন।

१७१

উল্লেখ্য যে, যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কোন যৌথ অঙ্গীকার করেন তখন অঙ্গীকার গ্রহীতা কর্তৃক উক্ত যৌথ অঙ্গীকারকারীদের কোন একজনকে অব্যাহতি প্রদানের ফলে অন্য যৌথ অঙ্গীকারকারী বা যৌথ অঙ্গীকারকারীগণ দায়মুক্ত হন না। এমন হইতে পারে যে, সহ-যামিনদারগণের দায় নিরঙ্কুশভাবে যৌথ এবং তাহা চুক্তি অনুযায়ী কোনভাবে বিভাজন করা যায় না, সেই ক্ষেত্রে একজনের মুক্তি সকলের মুক্তি আনিয়া দিবে।

ধারা-১২৪৬ যামিনদার মহাজনের সকল সুবিধা ভোগ করিবার অধিকারী যামিনদারি চুক্তির ক্ষেত্রে মূল খাতকের বিরুদ্ধে মহাজন যে সকল অধিকার লাভ করেন যামিনদারও তাহা লাভ করিবার অধিকারী হইবেন। যামিনদার যামানত সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞাত হউক বা না হউক এবং মহাজন যদি উক্ত যামানত নষ্ট করিয়া ফেলেন কিংবা ত্যাগ করেন, সেই ক্ষেত্রে ঐ নষ্ট বা পরিত্যক্ত যামানতের মূল্য পরিমাণ অব্যাহতি লাভ করেন।

বিশ্লেষণ

ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, মূল খাতক তাহার দায় পরিশোধে ব্যর্থ হইলে যামিনদার যদি তাহার দায় মহাজনকে পরিশোধ করিয়া দেন, সেই ক্ষেত্রে মহাজনের মূল খাতকের উপর যে সকল অধিকার ছিল, সে সকল অধিকার যামিনদার লাভ করিবে। অন্য কথায়, যে ক্ষেত্রে যামিনদার মূল খাতকের দায় পরিশোধ করিয়া দেন সেই ক্ষেত্রে মূল খাতকের সম্পর্কে মহাজনের অধিকারে যামিনদারের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে যত প্রকার যামানত ছিল তাহা যামিনদার লাভ করেন, বর্ণিত ধারাতে এই কথা আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হইয়াছে। বর্ণিত ধারাতে যে মৌলিক কথাগুলি বলা হইয়াছে তাহার সারসংক্ষেপ হইল :

(১) যে সকল যামানতের উপর মূল খাতকের বিরুদ্ধে মহাজনের অধিকার রহিয়াছে তাহার সব কয়টির ফায়দা যামিনদার ভোগ করিবেন। এই সকল যামানত সম্পর্কে যামিনদারের জ্ঞাত হওয়া জরুরী নহে। যামিনদার এই বিষয়ে জ্ঞাত হইতেও পারেন বা নাও হইতে পারেন।

(২) মহাজন তাহার নিকট সংরক্ষিত যামানত নষ্ট করিয়া ফেলিলে কিংবা ত্যাগ করিলে সেই ক্ষেত্রে ঐ নষ্ট বা পরিত্যক্ত যামানতের মূল্য পরিমাণ অংশ হইতে যামিনদার অব্যাহতি লাভ করিবেন।

৭৩৮

আরও উল্লেখ্য যে, স্বাভাবিকভাবে জামানতের মালগুলি মহাজনের অধিকারে অথবা দখলে থাকাই বাঞ্ছনীয় এবং তিনি যদি ঐ মালগুলি নষ্ট বা ধ্বংস করিয়া ফেলেন অথবা মূল খাতকের অধিকারে ফিরাইয়া দেন অথবা মহাজন যদি যামানতগুলি অকার্যকর বা স্বল্প কার্যকর করিয়া ফেলেন, সেই ক্ষেত্রে যামিনদার যে পরিমাণ তাহার অধিকার হইতে বঞ্চিত হইয়াছেন সেই পরিমাণ হইতে অব্যাহতি লাভ করিবেন।

এইখানে আরও উল্লেখ্য যে, যামানতের সকল মাল সংরক্ষণ করা মহাজনের একান্ত কর্তব্য। মহাজন যামানতগুলিকে অথবা তাহার অংশবিশেষকে প্রত্যাহার করিতে পারেন না অথবা নষ্ট বা ক্ষতিও করিতে পারেন না। অন্যথায় যামিনদার তাহার দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিবেন। যামিনদারের অব্যাহতি লাভের পরিমাণ অবশ্য নির্ভর করে মহাজনের কাজের উপর। যামানত নষ্ট বা হ্রাস করিয়া মহাজন যামিনদারের ঝুঁকি যত পরিমাণে বাড়াইয়া দেন, যামিনদার সেই পরিমাণ হইতে

অব্যাহতি লাভ করেন।

ধারা-১২৪৭ মিথ্যা বর্ণনার দ্বারা অর্জিত জামিনের পরিণাম। মহাজন যদি মিথ্যা বর্ণনার দ্বারা লেনদেনের কোন মৌলিক অংশ সম্পর্কে যামিনদারের সহিত কোন প্রকারের চুক্তি সম্পাদন করেন তবে উহা বাতিল গণ্য হইবে।৬১

বিশ্লেষণ

ইতিপূর্বে বর্ণিত ধারাগুলিতে যামিনদারের অধিকার সম্পর্কে বলা হইয়াছে এবং বর্তমান ধারাতে যামিনদারি চুক্তি যে কারণে বাতিল হইয়া যায় তাহার উল্লেখ করা হইতেছে। যেহেতু নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি এক প্রকার চুক্তি, তাই ভুল, জবরদস্তি, অন্যায় প্রভাব, প্রতারণা এবং মিথ্যা বর্ণনার দ্বারা অনুষ্ঠিত যে কোন প্রকারের নিশ্চয়তা অর্জিত হইয়া থাকিলে তাহা অবৈধ গণ্য হইবে। নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি

দ্বারা যামিনদার নিম্নে বর্ণিত দুইটি ক্ষেত্রে তাহার দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকেন না।

(১) যে তথ্য মহাজন জানিতেন এবং যে তথ্য এতই মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ যে, তাহা যামিনদারের গোচরে আনা অবশ্যই কর্তব্য ছিল, কিন্তু মহাজন যদি সেই মৌলিক তথ্য সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা দেন, তবে সেই ক্ষেত্রে সম্পাদিত নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি মানিয়া চলিতে যামিনদার বাধ্য নন।

৭৩৯

(২) মহাজনের স্বীকারোক্তি এবং যামানতে লেনদেনের কোন মৌলিক তথ্য সম্পর্কে মিথ্যা বা ভুয়া বর্ণনা দিয়া থাকিলে সম্পাদিত চুক্তি পালনে যামিনদার বাধ্য

নন।

ভুয়া বা মিথ্যা বর্ণনা বলিতে বুঝায় সত্য গোপন করিয়া অসত্যভাবে কিছু বর্ণনা করা। তবে শর্ত থাকে যে, এই মিথ্যা বর্ণনা মহাজনের নিকট হইতে উত্থাপিত হইতে হইবে, মূল খাতক হইতে নয়। চুক্তির মৌলিক অংশ বলিতে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ অংশকে বুঝায় যে অংশ নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির সময় গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে, যে তথ্য সম্পর্কে সত্য বর্ণনা দিলে বুদ্ধিমান যামিনদার নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি করিতে অগ্রসর হইতেন না, সেই তথ্যই মৌলিক তথ্য এবং এই মৌলিক অংশ সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা প্রদান করিলে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল গণ্য হয়।

ধারা-১২৪৮ নীরবতা পালনের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তির ফলাফল। মহাজন যদি যামিনদারি নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তির ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য প্রদান না করিয়া বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে নীরবতা অবলম্বনের মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদন করেন তবে সেই চুক্তি অবৈধ গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

মহাজন যদি চুক্তি সম্পাদনের সময় মৌলিক কোন বিষয়ে তথ্য প্রকাশ না করিয়া নীরবতা অবলম্বন করেন তবে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে। মহাজন তাহার নীরবতার দ্বারা লাভবান হইয়াছেন কিনা তাহা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয় নহে, বরং বিবেচ্য বিষয় হইতেছে যামিনদার অ-প্রকাশিত তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত হইলে নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তিতে সম্মত হইতেন কি না?

উল্লেখ্য যে, যামিনদারকে স্বীয় দায় হইতে মুক্ত ঘোষণা করিবার জন্য দুইটি বিষয়ে প্রমাণ পেশ করিতে হইবে : (১) যামিনদারকে এই কথা প্রমাণ করিতে হইরে যে, মহাজন লেনদেনের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করিয়াছেন; (২) যামিনদারকে প্রমাণ করিতে হইবে যে, প্রাপকের ঐ নীরবতার দ্বারা তিনি চুক্তি করিতে প্রলুব্ধ হইয়াছিলেন। বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে যদি তিনি ভালভাবে জ্ঞাত হইতেন তবে তিনি যামিনদার হইতেন না।

৭৪০

নীরবতা বলিতে কি বুঝায়? মহাজনের কর্তব্য হইল মৌলিক অবস্থা সম্পর্কে তাহার যানামতে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা। যে লেনদেন হইতেছে তাহার সহিত সম্পর্কযুক্ত নয় এমন তথ্য বা অবস্থা জানাইবার জন্য মহাজন দায়ী নন। মূলত নীরবতা বলিতে স্বেচ্ছাকৃত গোপনীয়তা অবলম্বন করাকে বুঝায়।

ধারা-১২৪৯ শর্ত সাপেক্ষে যামিনদার হওয়ার ফলাফল যদি কোন ব্যক্তি একই চুক্তিতে এই শর্তের উপর নিশ্চয়তা দেন যে, অপর কোন ব্যক্তি সহ-যামিনদার হিসাবে ইহাতে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত মহাজন ইহার উপর কাজ করিবেন না, সেই ক্ষেত্রে শর্ত মোতাবেক যদি সেই অপর ব্যক্তি যোগ না দেন তাহা হইলে যামিন অবৈধ গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

সাধারণভাবে নিশ্চয়তা যে তারিখে প্রদত্ত হয় এবং গৃহীত হয় সেই তারিখ হইতে বলবৎ হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কার্যকারিতার এই তারিখ স্থগিত হইতে পারে অথবা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হইতে পারে। কোন বিশেষ অবস্থা না ঘটিলে নিশ্চয়তা কার্যকর হইবে না, এই শর্তে যামিনদার যখন নিশ্চয়তা প্রদান করেন তখন বিশেষ অবস্থা না ঘটা পর্যন্ত যামিন কার্যকর হয় না। সুতরাং অপর এক ব্যক্তি সহ-যামিনদাররূপে নিশ্চয়তা প্রদানে যোগ না দিলে নিশ্চয়তার চুক্তি কার্যকর হইবে

। এই শর্তে যখন কোন ব্যক্তি নিশ্চয়তা প্রদান করেন তখন সেই অপর ব্যক্তি যদি সহ-যামিনদার হিসাবে যোগদান করিতে ব্যর্থ হন, তবে ঐ নিশ্চয়তা প্রদানের চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে।৬২

ধারা-১২৫০

মূল খাতকের দায়িত্ব মূল খাতকের দায় পরিশোধের ব্যর্থতার জন্য যামিনদার যে পরিমাণ দায় মহাজনকে পরিশোধ করিয়াছেন, মূল খাতক সেই পরিমাণ অর্থ যামিনদারকে পরিশোধ করিতে বাধ্য।

৭৪১

বিশ্লেষণ

যামিনদার মূল খাতকের ব্যর্থতার কারণে তাহার দেনা পরিশোধ করিলে সেই ক্ষেত্রে বর্তমান ধারা মূল খাতককে কিছু দায়িত্ব পালনে বাধ্য করে এবং মূল খাতকের দায়িত্ব হইল যাহা যামিনদার তাহার দায় পরিশোধের জন্য বৈধভাবে খরচ করিয়াছেন তাহা তিনি যামিনদারকে দিতে বাধ্য। মূল খাতক যামিনদারকে যে যে ক্ষেত্রে দায় পরিশোধে বাধ্য থাকেন তাহা নিম্নে প্রদত্ত হইল।

(১) মূল খাতকের ঋণ পরিশোধ করিতে যামিনদার যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করিয়াছেন সেই পরিমাণ অর্থ তিনি মূল খাতক হইতে দাবি করিতে পারিবেন।

(২) চুক্তি বহির্ভূতভাবে যামিনদার যে অর্থ ব্যয় করিয়াছেন মূল খাতক উহা পরিশোধে বাধ্য নন।

(৩) যামিনদার যদি নিজ দায়িত্বহীনতার জন্য অর্থ ব্যয় করিতে বাধ্য হইয়া থাকেন তবে তিনি তাহা মূল খাতক হইতে দাবি করিতে পারিবেন না। প্রত্যেক যামিনদারি চুক্তির ক্ষেত্রে মূল খাতক কর্তৃক যামিনদারের দায় পরিশোধের একটি পরোক্ষ অঙ্গীকার থাকে।

বর্তমান ধারাতে আইনের মাধ্যমে মূল খাতক এবং যামিনদারের মধ্যে সেই পরোক্ষ অঙ্গীকারের কথাই বলা হইয়াছে। অর্থাৎ মূল খাতক যামিনদারের ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে। যেহেতু যামিনদার মূল খাতকের উপকারের জন্য তাহার দায় পরিশোধ করেন, সেহেতু মূল খাতক যামিনদারের ব্যয়িত অর্থ তাহাকে পরিশোধ করিতে বাধ্য। যামিনদারের এই অধিকার পরোক্ষ অঙ্গিকারের পরিণতি। তাই চুক্তির মধ্যে যদি কোন প্রকাশ্য অঙ্গীকার থাকে তবে সেই প্রকাশ্য অঙ্গীকার অনুযায়ী অধিকার নিয়ন্ত্রিত হইবে।

ধারা-১২৫১

যামিনদারের অধিকার (ক) মূল খাতক তাহার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইলে যামিনদার যদি তাহার সকল দায় পরিশোধ করিয়া দেন তাহা হইলে যামিনদার মূল খাতকের বিরুদ্ধে মহাজনের সকল অধিকার লাভ করিবেন।

(খ) যামিনদার বৈধভাবে মহাজনকে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করিয়াছেন তিনি তাহা মূল খাতক হইতে উদ্ধার করিতে পারিবেন।

৭৪২

(গ) যামিনদার ভুল করিয়া মহাজনকে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করিয়াছেন তাহা যামিনদার ফেরত পাইবেন। তবে নিজ দায়িত্বহীনতার জন্য যামিনদার অর্থ ব্যয় করিয়া থাকিলে তাহা তিনি ফেরত পাইতে পারেন

(ঘ) যামিনদারি চুক্তির অধীনে এবং উহার সীমার মধ্যে যামিনদার মহাজনের স্থলাভিষিক্ত হইয়া মূল খাতকের উপর মহাজনের সকল অধিকার লাভ করেন।

(ঙ) মূল খাতক এবং মহাজনের কার্য বা আচরণ দ্বারা যামিনদার যামিনদারি চুক্তি হইতে অব্যাহতি লাভ করিতে পারেন।

ধারা-১২৫২

সহ-যামিনদারগণের দায়িত্ব। যে ক্ষেত্রে একই ঋণ বা কর্তব্য সম্পর্কে দুই বা দুইয়ের অধিক ব্যক্তি সহ-যামিনদার হন সেই ক্ষেত্রে তাহাদের মধ্যে ভিন্ন কোন চুক্তি না থাকিলে সহ-যামিনদারগণ নিজেদের মধ্যে অপরিশোধিত ঋণ সমানভাবে পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবেন।

বিশ্লেষণ

এই ধারায় বলা হইয়াছে যে, যখন কোন দেনা বা কর্তব্য সম্পর্কে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি সহ-যামিনদার থাকেন তখন তাহাদের মধ্যে ভিন্ন কোন চুক্তির অবর্তমানে সমস্ত দেনা সম্পর্কে অথবা অপরিশোধিত দেনা সম্পর্কে সহ-যামিনদারগণ নিজেদের মধ্যে সমানভাবে দায় পরিশোধ বা কর্তব্য পালনে বাধ্য থাকিবেন।৬৩

উল্লেখ্য যে, সহ-যামিনদারদের মধ্যে একজন যদি বেশী অর্থ দিয়া ফেলেন তবে তিনি যে পরিমাণ অর্থ বেশি দিয়াছেন তাহা অন্য সহ-যামিনদারদের নিকট হইতে আদায় করিয়া লইতে পারিবেন।

. একটি উদাহরণের মাধ্যমে বর্তমান ধারাকে আরও স্পষ্ট করা যায়। যেমন আঃ রহিমকে ১২ হাজার টাকা ঋণ দানের জন্য আঃ করিমের নিকট খালিদ, মজিদ ও যায়েদ যামিনদার হন। পরবর্তীতে রহিম তাহার ঋণ পরিশোধে অপরাগ হন। সেক্ষেত্রে যামিনদার খালিদ, মজিদ ও যায়েদ প্রত্যেকে চার হাজার করিয়া টাকা

१8७

করিমকে দিতে বাধ্য থাকিবেন। তবে ইতিমধ্যে তিনজনের মধ্য হইতে যদি খালিদ একাই ৫ হাজার টাকা মহাজন করিমকে প্রদান করিয়া থাকেন তাহা হইলে খালিদ অতিরিক্ত এক হাজার টাকা বাকী দুইজন সহ-যামিনদার মজিদ ও যায়েদ হইতে আদায় করিয়া লইতে পারেন।

ধারা-১২৫৩ যিম্মা, যিম্মাদাতা ও যিম্মাদারের সংজ্ঞা। চুক্তির ভিত্তিতে এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তিকে কোন উদ্দেশ্যে কোন মাল এইভাবে প্রদান করা যে, উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হইবার পর মাল প্রদানকারীর নির্দেশ অনুযায়ী উহা তাহাকে ফেরত দিবে “শরীয়াতের পরিভাষায় ইহাকে, যিম্মা চুক্তি”বলে, মাল প্রদানকারী ব্যক্তিকে “যিম্মাদাতা” এবং মাল গ্রহীতাকে “যিম্মাদার” বলা হয়।

বিশ্লেষণ

এই ধারা হইতে যিম্মা সম্পর্কিত বিধানাবলীর বর্ণনা আরম্ভ হইয়াছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যহ যিম্মার ব্যবহার হইয়া থাকে। যেমন আবদুল করিম যখন কোন মাল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রেলযোগে ঢাকা হইতে চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে পাঠায় তখন আবদুল করিম যিম্মাদাতা’ এবং রেল কর্তৃপক্ষ হয় “যিম্মাদার’, যিম্মাদারের পাওনা পরিশোধ করিয়া দিলে সে আবদুল করিমের নির্দেশমত মাল যথাযথ গন্তব্য স্থান পৌছাইয়া দিতে বাধ্য। যিম্মার মধ্যে সাধারণত যে উপাদানগুলি পাওয়া যায় তাহা হইল : মাল প্রদান, এই প্রদান একজন বা এক পক্ষ করেন এবং ইহা অন্য পক্ষের বরাবরে করা হয় এবং ইহার মধ্যে একটি চুক্তি থাকে যে, মাল প্রদানকারী ঐ মাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিবেন। নির্দেশ প্রদানকারীর কথা অনুযায়ী প্রদানের উদ্দেশ্য সম্পন্ন হওয়ার পর মাল গ্রহণকারী উহা ফেরত দিবেন।

যিম্মা ও অছি ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য

(১) অছি ব্যবস্থা মতে উপস্বত্বভোগী অছির সহিত সমান স্বার্থের দাবি করিতে পারেন। কিন্তু যিম্মাদারের তেমন কোন অধিকার থাকে না। তিনি অর্জিত মালের দখলদার মাত্র।

৭৪৪

(২) অছি মাল হস্তান্তরের ক্ষমতা রাখেন, তিনি ক্রেতাকে সঠিক মূল্যের * বিনিময়ে মালের স্বত্ব অপর্ণ করিতে পারেন। কিন্তু যিম্মাদার এই রকম করিতে

পারেন না, তিনি শুধু দখল বজায় রাখার অধিকারী।

যিম্মা ও বিক্রয়ের মধ্যে পার্থক্য

(১) যিম্মার ক্ষেত্রে মালিকানা হস্তান্তর করা হয় না, দখল হস্তান্তরিত হয় মাত্র এবং মাল ফেরতযোগ্য থাকে এবং যিম্মাদাব মাল ফেরত পাওয়ার অধিকারী থাকেন। কিন্তু বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল্যের বিনিময়ে মালিকানা হস্তান্তর করা হয় এবং বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া মাল ফেরত দেওয়ার কোন শর্ত থাকে না।

(২) যিম্মার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে অন্য পক্ষকে প্রদান করা হয় মাত্র। কিন্তু বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মালের স্বত্বাধিকার সম্পূর্ণভাবে ক্রেতাকে প্রদান করা হয়।

ধারা-১২৫৪

যিম্মাদার অধিকার ও কর্তব্য

(ক) যে উদ্দেশ্যে মাল অর্পণ করা হইয়াছে তাহা পূর্ণ হওয়ার পর যিম্মাদাতা মাল ফেরত পাইবার অধিকারী।

(খ) নির্ধারিত সময়ে যিম্মাদার মাল ফেরত দিতে ব্যর্থ হইলে যিম্মাদাতা ঐ সময় হইতে যিম্মাকৃত পণ্য বাবদ যে ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছেন, তিনি তাহার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী।

(গ) যিম্মাদার যদি তাহার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা করেন বা যিম্মার কোন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হন, সেই ক্ষেত্রে যিম্মাদাতা যিম্মার চুক্তি বাতিল করিতে পারেন।

(ঘ) যিম্মাকৃত মালের মধ্যে কোন প্রকারের ত্রুটি থাকিলে যিম্মাদাতা তাহা যিম্মাদারের নিকট প্রকাশ করিবেন। তিনি যদি এটি প্রকাশ করিতে ব্যর্থ হন তবে মাল ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার ফলে যিম্মাদারের যে ক্ষতি হয়, তিনি সেই ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবেন।

(ছ) যিম্মা চুক্তি যদি স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হয় সেই ক্ষেত্রে যিম্মার যিম্মাদারকে যে সকল ব্যয় বহন করিতে হয়, যিম্মাদাতা সেই সকল ব্যয় বহনে বাধ্য থাকিবেন।৬৫

৭৪৫

(চ) যিম্মাদার যিম্মা রাখার অধিকার না থাকা সত্বেও যদি যিম্মা রাখেন এবং ইহার ফলে যিম্মাদার যদি কোন প্রকারের ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে যিম্মাদাতা উহার ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবেন।

ধারা-১২৫৫

যিম্মাদারের অধিকার ও কর্তব্য (ক) যিম্মার মাল সংরক্ষণ করিবার জন্য যিম্মাদারকে যে সকল বৈধ ব্যয় বহন করিতে হয় তিনি তাহা যিম্মাদাতার নিকট হইতে পাইবার অধিকারী।

(খ) যিম্মাকৃত মালে যদি কোন প্রকারের ত্রুটি থাকে এবং তাহার জন্য যিম্মাদারের যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে তিনি ক্ষতিপূরণ পাইবার অধিকারী।

(গ) যিম্মাদার দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা জনিত কারণে মালের কোন প্রকারের ক্ষতি হইলে তিনি ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য।

(ঘ) যিম্মাদার যদি যিম্মাদার নির্দেশ মোতাবেক মাল যথাসময়েও যথাস্থানে ফেরত দিতে ব্যর্থ হন, সেই ক্ষেত্রে মালের কোন প্রকারের ক্ষতি হইলে তাহার জন্য যিম্মাদার দায়ী থাকিবেন।

(ঙ) যিম্মাদার যদি যিম্মাদাতার অনুমতি ছাড়া যিম্মাকৃত মালের সহিত নিজের মাল মিশ্রিত করেন এবং যদি উহা পৃথক করিবার অযোগ্য হয়, সেক্ষেত্রে তিনি যিম্মাদাতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবেন এবং মিশ্রিত মাল যদি বিভাজনযোগ্য হয় সেই ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ যিম্মাদার বহন করিবেন।

(চ) যিম্মাকৃত মাল সার্বিক দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণের যিম্মাদার সেই পরিমাণ যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করিতে বাধ্য, যেই পরিমাণ যত্ন ও সতর্কতা একই পরিস্থিতিতে একজন সাধারণ বিবেকবান ব্যক্তি উক্ত মালের জন্য গ্রহণ করিয়া থাকেন।

ব্যাখ্যা উল্লেখ্য যে, যিম্মা চুক্তির মধ্যে মাল প্রদান অবশ্যই থাকিতে হইবে, মাল প্রদান ছাড়া যিম্মা হয় না। মাল প্রদান বলিতে মালের দখলের স্থান পরিবর্তনের কথা বুঝানো হইয়াছে।

१8७

আরও উল্লেখ্য যে, যিম্মা চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবার জন্য ইচ্ছা বা অভিপ্রায় অবশ্যই থাকিতে হইবে। সুতরাং ভুল করিয়া কাহাকেও মাল প্রদান করিলে তাহাতে যিম্মার সৃষ্টি হয় না।

ধারা-১২৫৬

স্বেচ্ছায় যিম্মা গ্রহণের পরিণাম যখন কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন যিম্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে যদি কোন দুর্ঘটনার শিকার হইয়া যিম্মা প্রতিপালনে ব্যর্থ হন, সেই ক্ষেত্রে যিম্মাদার ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য নন।

বিশ্লেষণ

স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত যিম্মার পরিণাম সম্পর্কে বর্তমান ধারাতে আলোচনা করা হইয়াছে। বলা হইয়াছে, স্বেচ্ছায় বিনা প্রতিদানে কোন যিম্মা গ্রহণের ফলে পরবর্তীতে দুর্ঘটনার কারণে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইলে যিম্মাদার তাহার জন্য দায়ী হইবেন না।

যেমন যায়েদ ওমরকে খুলনা হইতে ঢাকা পৌছাইয়া দেওয়ার জন্য তাহার গাড়িতে উঠাইয়া নিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হইল এবং যায়েদ তাহার গাড়ি খারাপ থাকার ব্যাপারে আগেভাগে অবগতও ছিলেন না। এমতাবস্থায় দুর্ঘটনা হেতু ওমরের যে ক্ষতি হইয়াছে যায়েদ তাহা প্রদানে বাধ্য নন। কারণ ওমরকে গাড়িতে চড়াইয়া ঢাকা পর্যন্ত পৌছাইয়া দেওয়ার জন্য যায়েদ কোন চুক্তিতে আবদ্ধ নহেন এবং গাড়ির ত্রুটিও তাহার জানা ছিল না। অতএব যায়েদ স্বেচ্ছায় ওমরকে গাড়িতে করিয়া খুলনা হইতে ঢাকা পৌছাইয়া দেওয়ার যে দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহা পালনে তিনি আকস্মিক কারণে ব্যর্থ হইয়াছেন মাত্র, সেজন্য ওমরও কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করিতে পারেন না।

ধারা-১১৬

যিম্মা সৃষ্টির জন্য মাল অর্পণের পদ্ধতি। যিম্মা সৃষ্টির জন্য যিম্মাদাতা কর্তৃক যিম্মা গ্রহীতার নিকট এমনভাবে মাল অৰ্পণ করিতে হইবে যাহাতে উক্ত মালের উপর যিম্মা গ্রহীতার দখল ও পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭৪৭

বিশ্লেষণ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যিম্মা একটি বিশেষ প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র লেনদেন। যিম্মাদাতা ও যিম্মাদারকে বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত উদ্দেশ্যে ও যুক্তিসঙ্গত উপায়ে তাহাদের কাজ-কারবার সম্পন্ন করিতে হয়। এই লেনদেন শরীয়াত কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতিতে ও দায়িত্বপূর্ণ প্রণালীতে সম্পাদন করিতে হয়। এক পক্ষকে অন্য পক্ষের অন্যায় ক্ষতির কবল হইতে রক্ষা বা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের জন্য উপযুক্ত প্রতিকারের ব্যবস্থা করাই শরীয়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ যিম্মা লেনদেন সম্পর্কে প্রথম পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যিম্মার মালের দখল হস্তান্তর করার নীতি আলোচ্য ধারাতে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হইয়াছে। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, যিম্মার মধ্যে মাল প্রদান অবশ্যই থাকিতে হইবে। মাল প্রদান ছাড়া কোন যিম্মার সৃষ্টি হয় না এবং প্রদান বলিতে দখলের স্থান পরিবর্তন বুঝায়। প্রদানের মাধ্যমে দখল একজন হইতে অন্যের হাতে চলিয়া যায়। যিম্মাদাতা কর্তৃক যিম্মাদারের বরাবর যিম্মার মাল প্রদান বা উহার দখল হস্তান্তর করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের সম্পর্ক সূচিত হয়। এই সূচনা সমগ্র লেনদেনটির কার্যক্রম উহার বিভিন্ন পর্যায়ে ও সৃষ্ট ফলাফলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব প্রদানের পদ্ধতি শরীয়ত সম্মত ও যুক্তিযুক্ত হওয়া নিতান্ত বাঞ্ছনীয়। যিম্মা সৃষ্টির ক্ষেত্রে মালের প্রদান সাধারণত দুই ধরনের হইতে পারে।

প্রথমত, মাল ছােট বা হালকা জাতীয় হইলে হাতে হাতে প্রদানের মাধ্যমে দখল হস্তান্তর সম্ভব। দ্বিতীয়ত, মাল ভারী বা বৃহদায়তন বিশিষ্ট হইলে প্রতীক দখল প্রদানের মাধ্যমে মাল হস্তান্তর সম্ভব। যেমন, যে ঘরের মধ্যে মাল সংরক্ষিত রহিয়াছে সেই ঘরের চাবি হস্তান্তরের মাধ্যমে দখল প্রদান করা যাইতে পারে। বৃহদায়তন বিশিষ্ট মাল ঘরের চাবির দখল প্রদান করাকে মালের দখল প্রদান গণ্য করা যায়। কারণ অনুরূপভাবে মালের দখল লাভ হয় এবং উহা ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়া যায়। সুতরাং চাবি প্রদান করা মালের প্রতীক দখল হস্তান্তর বলিয়া স্বীকৃত।

আরও উল্লেখ্য যে, অর্পণ-গ্রহণ সম্পর্কে যিম্মাদারকে প্রকৃত তথ্য অবহিত করিতে হইবে। অর্পিত মাল সম্পর্কে তাহার বিবরণ ও গুণাগুণ বিষয়ে যিম্মাদারের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। মাল সম্পর্কে যে কোন ভুল-ত্রুটির জন্য যিম্মাদার দায়ী নহেন। মাল প্রদানকারীর “অবশ্য কর্তব্য পালন করিতে যদি তিনি ব্যর্থ হন, তবে সে অর্পণকে প্রকৃত অর্পণ বলা যায় না এবং তাহার দ্বারা কোন দায়দায়িত্বও সৃষ্টি হয়

।৬৬

৭৪৮

ধারা-১২৫৮

যিম্মায় প্রদত্ত মালের বিবরণ যিম্মায় প্রদত্ত মালের যে সকল ত্রুটি সম্পর্কে যিম্মাদাতা জ্ঞাত এবং যে ত্রুটিসমূহ উক্ত মালের ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, এই জাতীয় ক্রটি সম্পর্কে যিম্মাদারকে জ্ঞাত করাইতে যিম্মদাতা বাধ্য। অন্যথায় যে কোন প্রকারের ক্ষয়ক্ষতির জন্য তিনিই দায়ী থাকিবেন।

বিশ্লেষণ

ইতিপূর্বে আমরা বর্ণনা করিয়াছি যে, শরীয়ত সম্মত উদ্দেশ্যে ও যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে মালের দখল হস্তান্তর করিয়া যিম্মাদাতা যিম্মাদারের জন্য দায়িত্ব সৃষ্টি করিতে পারেন। কিন্তু যে মাল হস্তান্তর করা হয় বা যাহার ভিত্তিতে সমগ্র লেনদেনটি পরিচালিত হয়, তাহা যিম্মা রাখার উপযুক্ত কিনা অথবা তাহাতে কোন দোষত্রুটি আছে কিনা তাহার নিশ্চয়তা বিধান করা যিম্মাদাতার দায়িত্ব। মাল ত্রুটিমুক্ত ও ব্যবহারযোগ্য হওয়া জরুরী। যেমন যে গরুটি হালচাষ করিতে পারে না বলিয়া আঃ করিম জানে সেই গরুটি তিনি আঃ রহিমকে যিম্মা দেন। গরুটি যে হালচাষ করিতে পারে না তিনি উহা আঃ রহিমের নিকটে প্রকাশ করিলেন না। অথবা যে গাভীটি আদৌ দুধ দেয় না বলিয়া আঃ করিম জানেন সেই গাভীটি তিনি আঃ রহিমকে ধার দিলেন। গাভীটি যে মোটেও দুধ দেয় না তিনি তাহা প্রকাশ করিলেন না। বর্ণিত উভয় অবস্থায় আঃ রহিমের ক্ষতির জন্য আঃ করিম দায়ী থাকিবেন।৬৭

অতএব আলোচ্য ধারার বিধানমতে একথা অতি স্পষ্ট যে, যিম্মার মালের যে সকল ত্রুটি যিম্মাদাতার জানা আছে, যাহার ফলে উক্ত মালের ব্যবহার যিম্মাদার করিতে পারেন না, সেই সকল ত্রুটি যিম্মাদাতা যখন গোপন রাখেন তখন তিনি যিম্মাদারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।

ধারা-১২৫৯ প্রতিদানের বিনিময়ে যিম্মা চুক্তির পরিণাম প্রতিদান বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে যিম্মাদারির জন্য যিম্মাদার তাহার দায়িত্ব পালনে যতদূর সতর্কতা বা পরিশ্রম নিয়োগ করিতে বাধ্য, তাহাতে তিনি ব্যর্থ হইলে উদ্ভূত ক্ষতির জন্য তিনি দায়ী থাকিবেন।

৭৪৯

বিশ্লেষণ

স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত জিম্মা ও প্রতিদানের বিনিময়ে যিম্মার মধ্যে পার্থক্য রহিয়াছে। স্বেচ্ছা প্রবৃত্ত যিম্মার মধ্যে যিম্মাদার যিম্মাদাতার ক্ষতির জন্য দায়ী থাকেন না। কিন্তু প্রতিদান বা পারিশ্রমিকের মাধ্যমে যিম্মাদাতা কোন প্রকারের ক্ষতির সম্মুখীন হইলে তিনি তাহা পূরণ করিতে বাধ্য। যেমন- আবদুল করিম নামক জনৈক পরিবহন ঠিকাদারের নিকট হইতে আবদুল রহিম একখানি ভাড়াটিয়া গাড়ী পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজে নিযুক্ত করেন, কিন্তু উহা দোষমুক্ত ছিল না। ফলে আঃ রহিম ক্ষতিগ্রস্ত হন। এক্ষেত্রে আবদুল করিম আবদুর রহিমকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য। কারণ আবদুর রহিম যে কাজের জন্য গাড়ীখানা ভাড়া করিয়াছেন, পরিবহন ঠিকাদার আবদুল করিমের তাহা জানা ছিল এবং সেজন্য একখানা ব্যবহারযোগ্য কার্যোপযোগী গাড়ী কাজে লাগানো ছিল আবদুল করিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেহেতু তিনি রীতিমত প্রতিদানের বিনিময়ে আবদুর রহিমের কাছে গাড়ী ভাড়া দিতে সম্মত হইয়াছেন, আঃ করিম তাহার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হইয়াছেন। ফলে আঃ রহিম অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইলেন, এরূপ ক্ষেত্রে গাড়ীর গুণাগুণ সম্পর্কে আঃ করিমের কোন জ্ঞান থাকুক আর নাই থাকুক, আঃ রহিম ইহার জন্য যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন, আলোচ্য ধারার বিধানমতে আঃ করিম তাহাকে সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবেন।

সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, স্বেচ্ছা প্রদত্ত যিম্মার ক্ষেত্রে তাহার প্রতিপক্ষের ক্ষতির জন্য আইনত জবাবদিহি করিতে বাধ্য নহে। কিন্তু প্রতিদান বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে যিম্মাদারির জন্য যিম্মাদার তাহার দায়িত্ব পালনে যতদূর সতর্কতা অবলম্বন করিতে বাধ্য তাহাতে তিনি ব্যর্থ হইলেও ফলত প্রতিপক্ষের ক্ষতি হইলে সেই ক্ষতির জন্য যিম্মাদার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য।

ধারা-১২৬০ যিম্মাকৃত মালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। যিম্মার সকল ক্ষেত্রে যিম্মাদার যিম্মাকৃত মালের একজন সচেতন দায়িত্ববান মানুষের ন্যায় রক্ষণাবেক্ষণ করিতে বাধ্য।

বিশ্লেষণ

শরীয়ত সম্মত বৈধ পন্থায় যিম্মা রাখার যোগ্য মাল যখন যিম্মাদারের দখলে দেওয়া হয় তখন হইতে আরম্ভ হয় যিম্মাদারের দায়িত্ব। যিম্মার মূলনীতি অনুযায়ী

৭৫০

যিম্মাদার যিম্মার উদ্দেশ্য সাধিত হওয়ার পর তাহার মাল যেহেতু ফেরত পাইবেন। সুতরাং উহাকে যে কোন প্রকারের ক্ষতি হইতে রক্ষা না করিলে যিম্মাদাতা অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারেন। তিনি যাহাতে কোনরূপ ক্ষতির সম্মুখীন না হন সেজন্য যিম্মাদার সুষ্ঠভাবে তাহার দায়িত্ব পালন করিতে বাধ্য।

যেহেতু যিম্মাকৃত মাল হেফাজত করা যিম্মাদারের একান্ত কর্তব্য, সুতরাং মাল হেফাজতের উদ্দেশে তাহাকে কি পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে এবং প্রয়োজনবােধে উহাতে কম-বেশি করা যাইবে কিনা, বর্তমান ধারায় তাহারও উল্লেখ করা হইয়াছে। বর্তমান ধারাতে বলা হইয়াছে যে, একজন সচেতন মানুষ যে পরিমাণ মালের যত্ন স্বাভাবিকভাবে লইয়া থাকেন সেই পরিমাণ যত্ন লইতে হইবে, অন্যথায় ক্ষতিপূরণে বাধ্য থাকিবেন। সমাজের একজন সচেতন ব্যক্তি বা বিচক্ষণ ব্যক্তি তাহার নিজের মালের উপর যতখানি যত্ন ও সাবধানতা অবলম্বন করেন, যিম্মাদারও যিম্মার মালের উপর ততখানি যত্ন নিতে বাধ্য। যত্ন যিনি লইয়াছেন তিনিই বলিতে পারেন যে, পরিমাণমত যত্ন লইয়াছেন কিনা। সুতরাং যত্ন ও সাবধানতা প্রমাণ করিবার প্রাথমিক দায়িত্ব যিম্মাদারের। যিম্মাদারের দখল বা

অধিকার হইতে মাল খােয়া গেলে বা নষ্ট হইলে তাহাকেই প্রমাণ করিতে হয় যে, তিনি যথেষ্ট যত্ন সহকারে যিম্মার মালের হেফাজতের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।

যেমন- রেলপথে মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একজন সাধারণ, সচেতন মানুষের ন্যায় মালের যত্ন লইতে বাধ্য। রেল কর্মচারিগণ সদা সর্বদা মালের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখিবেন, যাহাতে উহা মালগাড়ী হইতে চুরি না যায়। কোন আবশ্যিক কারণ ব্যতীত যদি চালানী মাল খােয়া বা চুরি যায় তবে সেক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকিবেন।

ধারা-১২৬১ যিম্মার শর্ত বিরোধী কাজে অথবা অননুমোদিত

ব্যবহারে যিম্মাদারের দায়। (ক) যিম্মায় প্রদত্ত মাল সম্পর্কে যিম্মাদার যদি এমন কোন কাজ করেন যাহা যিম্মার শর্তাবলীর সহিত অসংগতিপূর্ণ, সেই ক্ষেত্রে যিম্মাদাতার ইচ্ছানুযায়ী উক্ত চুক্তি বাতিলযোগ্য।

(খ) যদি যিম্মাদার যিম্মার মাল এমনভাবে ব্যবহার করেন যাহা যিম্মার শর্ত বিরোধী, তাহা হইলে ইহার ফলে উদ্ভূত যে কোন প্রকারের ক্ষতির জন্য তিনি দায়ী থাকিবেন।

৭৫১

বিশ্লেষণ

যিম্মার চুক্তি লংঘন করিয়া যিম্মাদার যখন যিম্মাকৃত মালের অপব্যবহার করেন, যিম্মাদাতা তখন যিম্মাচুক্তি বাতিল করিতে পারেন এবং অনুরূপ কারণে মালের ক্ষতি সাধিত হইলে যিম্মাদার উহার ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবেন। যিম্মার শর্তানুযায়ী যিম্মার মাল ব্যবহার সম্পর্কে কোন বাধাধরা নিয়ম নির্ধারিত না থাকিলেও মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, মালের স্বাভাবিক ব্যবহার বা যে মাল যেভাবে ব্যবহার করিলে উহার কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয় না সেভাবেই যিম্মাদার সেই মাল ব্যবহার করার অধিকারী। মাল ব্যবহারের নির্দিষ্ট কোন তারিখ না থাকিলে সাধারণত কোন যুক্তিসঙ্গত সময়ের জন্য তাহার অধিকার কার্যকর থাকিবে। তবে সেই প্রসঙ্গে যিম্মার উদ্দেশ্য বিবেচনা করিতে হইবে। মালের সদ্ব্যবহার বা অপব্যবহার সম্পর্কে উদাহরণের মাধ্যমেই স্পষ্ট করা যাইতে পারে। যেমন, যে গাভীটিকে শুধু দুধ পানের অনুমতি প্রদান করিয়া যিম্মা রাখা হইয়াছে, যিম্মাদার যদি উক্ত গাভীর দ্বারা হালচাষ করার ফলে গাভীটি অচিরেই রোগাক্রান্ত হইয়া পড়ে, কারণ গাভীটি হালচাষে অভ্যস্ত নহে এরূপ ক্ষেত্রে বলা যায়, গাভীটিকে যেজন্য যিম্মা রাখা হইয়াছিল সে কাজে ব্যবহার না করিয়া তাহাকে অন্যভাবে ব্যবহার করা হইয়াছে। সুতরাং এক্ষেত্রে গাভীটির মালিক উক্ত যিম্মা চুক্তি বাতিল করিতে পারেন। কারণ যিম্মাদার যিম্মা চুক্তির শর্ত অমান্য করিয়া গাভীটির অপব্যবহার করিয়াছেন এবং যেহেতু যিম্মাদার উহাকে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়াছেন তাই যিম্মাদার যিম্মাদাতাকে উহার জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবেন।

অনুরূপভাবে যদি আঃ রহিম আঃ করিমকে একটি গাড়ী ঢাকা- যশোহর রোডে চালাইবার জন্য এক বৎসরের মেয়াদে যিম্মায় প্রদান করেন, কিন্তু আঃ করিম গাড়ীটিকে ঢাকা-যশোহর রোডে না চালাইয়া বরং ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে চালান এবং নির্দিষ্ট এক বছরের মধ্যেও ফেরত না দেন, তবে অনুরূপ শর্ত বহির্ভূত কাজে এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গাড়ীটি ব্যবহার করার জন্য আঃ করিম দায়ী থাকিবেন।

সুতরাং উপরে উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে বােঝা যায় যে, যিম্মাদার শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির অভিপ্রায়ে যিম্মার মাল যথেচ্ছ ব্যবহার করিতে পারেন

। যিম্মার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও মেয়াদ সাপেক্ষে এবং মালের বৈশিষ্ট্য ও কর্মদক্ষতা বিবেচনা করিয়া উহাকে তিনি সাধারণভাবে কাজে লাগাইতে পারেন মাত্র। যখন তিনি মালের অননুমোদিত ব্যবহার করেন বা অপব্যবহার করেন তখন উহার

৭৫২

ফলাফল ভোগ করিতে বাধ্য। ফলত তিনি চুক্তিমত সুবিধা ভোগের অধিকার হারাইবেন, যিম্মার নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হউক অথবা না হউক। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের কারণে যিম্মাদাতার যে ক্ষতি হয় তিনি তাহা প্রদানে বাধ্য থাকিবেন।

যিম্মাদার যখনই যিম্মার শর্তের খেলাপ আচরণ করিবেন যিম্মাদাতা তখনই যিম্মার চুক্তি বাতিল করিতে পারিবেন এবং মালেরও দখলস্বত্ব ফেরত পাইবেন। বিশ্বাসভঙ্গ বা মালের ক্ষতিপূরণের জন্য তিনি যিম্মাদারের বিরুদ্ধে আদালতের সাহায্য প্রার্থনা করিতে পারেন।

ধারা-১২৬২

যিম্মার মাল সংমিশ্রণের ফলাফল (ক) যে ক্ষেত্রে যিম্মাদার যিম্মাদাতার অনুমতিক্রমে তাহাদের উভয়ের মাল সংমিশ্রণ করেন সেই ক্ষেত্রে যিম্মাদার ও যিম্মাদাতা নিজ নিজ হিস্যানুপাতে উক্ত মিশ্রণের ফলাফল ভোগ করিবেন।

(খ) যে ক্ষেত্রে যিম্মাদার যিম্মাদাতার সম্মতি ব্যতীত উভয়ের মাল সংমিশ্রণ করেন এবং উক্ত মালসমূহ যদি পৃথকযোগ্য হয়, সেই ক্ষেত্রে উক্ত মিশ্রিত মালে উভয়ের স্বত্ব বজায় থাকিবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, এই জাতীয় মিশ্রণের ফলে যিম্মাদার মাল পৃথকীকরণের যাবতীয় খরচ বহন করিতে বাধ্য থাকিবেন এবং মিশ্রণের ফলে মালের যে গুণগত ক্ষতি হইয়াছে সেজন্য তিনি যিম্মাদাতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানেও বাধ্য থাকিবেন।৬৯

(গ) যে ক্ষেত্রে যিম্মাদার যিম্মাদার অনুমতি ব্যতীত তাহাদের উভয়ের মাল সংমিশ্রণ করেন এবং উক্ত মাল যদি পৃথকযোগ্য না হয়, সেই ক্ষেত্রে উক্ত মিশ্রণের ফলে উদ্ভূত ক্ষয়-ক্ষতির জন্য যিম্মাদার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবেন।

বিশ্লেষণ

যিম্মার মাল সম্পর্কে যিম্মাদারের দায়দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করিতে গিয়া আমরা উল্লেখ করিয়াছি যে, তিনি নিজের মালের যেভাবে হেফাজত করিয়া থাকেন, যিম্মার মালেরও সেইভাবে হেফাজত করিতে বাধ্য। তাই বলিয়া তিনি যিম্মার মালের সহিত নিজের মাল মিশ্রিত করিতে পারেন না। যিম্মার মালের

৭৫৩

স্বতন্ত্র হেফাজত করা তাহার অন্যতম কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হইলে তিনি আইনত দায়ী হইবেন। একইভাবে মিশ্রণের ফলে মালের গুণগত মান পরিবর্তিত হইলে মালের মূল্যের তারতম্যও ঘটিতে পারে এবং যিম্মাদাতা অযথা ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারেন। সুতরাং মালের মিশ্রণহেতু ক্ষয়ক্ষতির জন্য যিম্মাদার যিম্মাদাতাকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য, বর্ণিত ধারাতে ইহাই আলোচনা করা হইয়াছে।

আলোচ্য আইনের (ক) ধারাতে এবং (খ) ও (গ) ধারাতে যিম্মাদার কর্তৃক যিম্মার মালের সহিত তাহার নিজের মালের সংমিশ্রণের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা হইয়াছে। যিম্মাদার অনুমতিক্রমে মাল যদি মিশ্রিত করা হয় তবে (ক) ধারার বিধানমতে যিম্মাদাতা ও যিম্মাদার উভয়ে নিজ নিজ অংশমত উক্ত মিশ্রণের ফল ভোগ করিবেন। কিন্তু যে ক্ষেত্রে যিম্মাদাতার বিনা অনুমতিতে যিম্মাদার ইচ্ছাপূর্বক মাল মিশাইয়া ফেলেন, সেই ক্ষেত্রে যিম্মাদারের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে (খ) ও (গ) ধারাতে আলোচনা করা হইয়াছে। অনুরূপভাবে মিশ্রিত মাল যদি পুনরায় পৃথক করার মত হয় তবে (খ) ধারার বর্ণনা হইল যে, উক্ত মালে যিম্মাদাতা ও যিম্মাদার উভয়ের স্বত্ব বজায় থাকিবে। কিন্তু যিম্মাদার মাল পৃথকীকরণের খরচা বহন করিবেন এবং মিশ্রণের ফলে মালের যে গুণগত মান হ্রাস পায় তাহার ক্ষতিপূরণ প্রদানে যিম্মাদার দায়ী থাকিবেন এবং মাল যখন পৃথকযোগ্য না হয় সেই ক্ষেত্রে (গ) ধারামতে যিম্মাদার মালের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী।

৫৪

স্ত নির্দেশিকা চিত উঁচু। চ তত চড়াও ১১ ভাল ) ES ছা নাইলি আভরমে পণ্ঠ:২৪ * 2,; চ.ইঃ! তাঁত &ধুখারী, কিতাবুল ইজারাদাব আৰ্জিরিস সঁমাসিহাহুল বারী, ৪র্থণ্ড কৃতি; চানাক্সিমিকিয়া-আহকামছু চি;! >}? উঃ ক

চ অল্পদায়েউসক্ষম খ্রী. %)নি 1$ত তত!শব ৪. কাশফুল আসরার, পৃ. ১৪৭১। ৫, তালবীহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৫। উ আওতাল্পীর ভয়ার্ত তাহরীর ২য় ২৭৩ ) : 13;

fত বিকাশফুল আসরারাভPOী চিFEং চাচী চ9ত চাশ চাফিক ইসলামী১৯ণ্ডপূ৯ীট মিং £ তার চাণী; কার্ড! ৯ বিদায়া৫ম পৃ: ১৩৪ তম দ ত শী ৪ তামাক চী কেবিন্নায়, ১৩৫+চু•?? 5ানশী কুল ভুক। কিন্তু!S)

১৯) গায়াল, মুনতায়

১ ৯ শী ক. Fি AFন) Tাশ [E BAফস, মযও তৎচনা! কে কত?? 3:15]p

১৩. নিহায়াতুল মুহতাজ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮

. . . .? ১৪. ফাতহুল কাদীর, ৫ম খণ্ড, প, ৭৫। :. . .

= চাচ

১৫. ডঃ মুহাম্মাদ ইউসুফ মূসা, কিতাবুল আমওয়াল, নাজরিয়াতুল আকদ, পৃ. ২৫৯। ১৬. ইমাম আহমাদ এবং সুনানে আরবায়ার লেখকবৃন্দ যে যেভাবে বর্ণনা করিয়াছেন এবং ইমাম

তিরমিযী সেটিকে সমর্থন করিয়াছেন। ১৭. বুখারী, কিতাবুল বুয়ু, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৮০। ১৮. নাইলুল আওতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৪৭। ১৯. নাইলুল আওতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৪১-১৪২। ২০. রদুল মুহতার, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ২৫৫। ২১. ইবন মাজার বরাতে ফিহুল ইসলামী, হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা)। ২২. নাইলুল আওতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩১৬। এখানে ফিকহুল ইসলামীর বরাতে উদ্ধৃত। ২৩. ফিকহুল ইসলামীর বরাতে; আবু দাউদ ও ইবনি মাজা। ২৪. ফিকহুল ইসলামীর বরাতে (২০৫ পৃ.); তাবয়ীনুল হাকায়েক, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৩১। ২৫. ফিকহুল ইসলামী, বরাতে আবু জোহরার “নাজরিয়াতুল আকদ”, পৃ. ২৪৪। ২৬. ফাতাওয়া ইবন তায়মিয়্যা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৬; যাদুল মাআম্‌দ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪। ২৭. যাদুল মাআম্‌দ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪। ২৮. তাবঈনুল হাকাইক, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫২। ২৯. আল-মুগনী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৫২৬। ৩০. কাওয়ানীনুল ফিক্হ, পৃ. ২৬৪; নাইলুন আওতার, ৫ম খণ্ড; বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৪; গায়াতুল মুনতাহা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪; দুররুল মুখতার, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১০১।

ফিবন্ধু ইসমাজাইন

৩৫

৩১. বুখারী শরীফ, কিতাবুলসুষুণ .নিষ্ট্রে Foy F # Fচার-নিত ৩২. হিদায়া, ২য় খণ্ড, পৃ-৪৯৩১ ১19 25 কিঃ ডুকী ১লী চত্ব কিনী-চিত ৩৩ ৩৩. বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযীর তেঙ্কিাকাতুল- রকিবুক প্রথমধায়া,৪১, ৩৪. হিদায়া, ২য় খণ্ড, পৃ:৩৫(আশরাফুলদিয়াবয়াকে দিন!P-1}}z .১৩ ৫. লিসানুল আরাব, ৬ষ্ঠ খণ্ড, গৃ৪তময় দিনব কাকী ই কর নিচুতীয়া- F5g . ৩৫. ক). হিদায়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯-৪১ বের! Fলী ও মা ৩৬. ফাতহুল কাদীর, ৫wখণ্ড, পৃ১৭ -$s ভাল না; ক ০*টুমী -শাত .d, ৩৭. দারু কুতনীর বরাতে-নাকুর রায়ানুর

ঋ না নি কী= ৫ ৩৮. মুগনী আল-মুহতাজ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭; নাইনুল আওতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৪৭; আল-মুহাযযাব,

প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৩। ৩৯. বাদাইউস সানাই, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৯৭। ৪০. ফাতহুল কাদীর, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৪১; বাদাইউস সানাই, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৯৫। ৪১. বাদাই, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৯৫; ফাতহুল কাদীর, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৪১, ১৪৯। ৪২. হিদায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৫০, দেওবন্দ সংস্করণ। ৪৩. বাদাই, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২০১; ফাতহুল কাদীর, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২২০। ৪৪. বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২২৭; আল-মুহাযাব, প্রথম খণ্ড, পৃ.৪০৬। ৪৫. আম্‌দ-দুররুল মুখতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৯। ৪৬. বাদাই, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১১। ৪৭. বাদাই ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৭৬; আল-মাবসূত, ১১শ খণ্ড, পৃ. ২১২। ৪৮. ফাতহুল কাদীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.১২৬। ৪৯. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৫-৪৮। ৫০. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ. ৭৫। ৫১. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, তৃতীয় অধ্যায়, পৃ.৮৩। ৫২. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ.৮৫। ৫৩. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, তৃতীয় অধ্যায়, পৃ. ৮৫। ৫৪. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ৪৩। ৫৫. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ. ৪১। ৫৬, আল-মাছাবিদরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, চতুর্থ অধ্যায়, পৃ. ২৩। ৫৭. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, প্রথম অধ্যায়, পৃ. ৩৮। ৫৮. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, চতুর্থ অধ্যায়, পৃ. ৪৭। ৫৯. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, তৃতীয় অধ্যায়, পৃ. ৭১। ৬০. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ. ৩৮। ৬১. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, তৃতীয় অধ্যায়, পৃ. ৮৫।

৭৫৬

৬২. আল-মাছাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, পৃ. ৬৬।

৩. আল-মাহাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, প্রথম অধ্যায়, পৃ. ৩২। ৬৪. আল-মাহাদিরুল হক ফিল ফিকহি ইসলামী, দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ. ৩৫। ৬৫. আল-মাহাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, চতুর্থ অধ্যায়, পৃ. ৬০। ৬. আল-মাহাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ. ৩৬। ৬৭. আল-মাহাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ.৩৭। ৮. আল-মাছাদিকুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, তৃতীয় অধ্যায়, পৃ. ৫৩। ৬৯. আল-মাহাদিরুল হক ফিল ফিকহিল ইসলামী, তৃতীয় অধ্যায়, পৃ. ৩৭।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *