1 of 2

৪৫. কর ব্যবস্থা

অধ্যায় : ৪৫ কর ব্যবস্থা

বিভিন্ন ব্যক্তির উপর অর্পিতম সংজ্ঞা

ধারা-১০৮৩

কর-এর সংজ্ঞা (ক) সরকারের উপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা হইতে যে অর্থ আদায় করা হয় তাহাকে ‘কর’ বলে।

(খ) কর বলিতে এমন অর্থ বা মূল্যবান সম্পদকে বুঝায় যাহা সরকার বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা হইতে আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করে।

বিশ্লেষণ

ট্যাক্স একটি ইংরেজী শব্দ, ইহার অর্থ কর, খাজনা, বােঝা চাপানো, চাপ দেওয়া ইত্যাদি (ইংরেজী-বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী)। সরকার কর্তৃক যাকাত, উশর ইত্যাদি আদায় করিবার পরও দেশের সার্বিক প্রয়োজনে জনগণ হইতে অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয় উহাকে কর’ বলে। কর একটি আইনগত বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা। ইহা আদায় করা প্রত্যেক নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। কোন ব্যক্তি এই কথা বলিয়া কর প্রদান হইতে পরিত্রাণ পাইতে পারেন না যে, তিনি তো নিয়মিত যাকাত, উশর ইত্যাদি প্রদান করিতেছেন। কেননা যাকাত পরিশোধ করা যেমন ফরজ, তেমনিভাবে সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় জরুরী প্রয়োজন পূয়রণের জন্য আরোপিত কর প্রদান করাও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক।

যেহেতু যাকাত ও উশর আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত এক ফরজ ইবাদত এবং যেহেতু যাকাতের মাল খরচ করিবার খাত মাসারিফ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দিষ্ট, সেহেতু ইহার বাহিরে কোন কাজে যাকাতের মাল সরকার রচ করিতে পারে না। কিন্তু নির্ধারিত ঐ সকল ক্ষেত্র ছাড়াও সরকারের তাহার উপর অর্পিত

৫১২

দায়িত্ব পালনের জন্য অধিক অর্থের প্রয়োজন পড়ে। তাই দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্য সরকার যাকাত ও উশর ছাড়াও অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করিয়া থাকে উহাকে কর বলা হইয়া থাকে এবং ইহা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত।

দায়েরাতুল মায়ারিফ গ্রন্থে কর-এর সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে এইভাবে? সরকার সাধারণ দায়িত্ব পালনের জন্য জনগণের উপর অর্পিত এক প্রকারের আবশ্যকীয় চাঁদা, যেমন কাষ্টম, আবগারী শুল্ক ইত্যাদি।

ধারা-১০৮৪

কর-এর প্রকারভেদ কর প্রধানত তিন শ্রেণীভুক্ত –

(১) মুতাযায়েদ কর (ক্রমবর্ধমান কর), যে কর-এর আমদানী পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাইতে থাকে।

(২) মুতানাসেব কর (L), আমদানী বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি কর -এর পরিমাণ বৃদ্ধি না পায় তবে তাহাকে মুতানাসেব কর বলে।

(৩) রাজয়ী কর ( ১), আমদানী বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি করের পরিমাণ বৃদ্ধি না পাইয়া বরং কম হইতে থাকে তবে তাহাকে রাজী কর বলে।

বিশ্লেষণ

করের বর্ণিত তিন প্রকারের মধ্যে প্রথম প্রকার হইল মুতাযায়েদ কর অর্থাৎ করের আমদানী পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাইতে থাকে। যেমন প্রথম এক লাখের উপর পঞ্চাশ হাজার টাকা কর হইলে দ্বিতীয় লাখের উপর ষাট হাজার এবং তৃতীয় লাখের উপর সত্তর হাজার টাকা হইবে। এইভাবে পর্যায়ক্রমে কর বৃদ্ধি পাইতে থাকিলে তাহাকে মুতায়ায়েদ কর বলা হয়।

দ্বিতীয় প্রকারের কর হইল মুতানাসেব, যদি আমদানী বৃদ্ধির সাথে করের পরিমাণ বৃদ্ধি না পাইয়া একই পর্যায়ে থাকে, যেমন প্রথম এক লাখের উপর যে কর ধার্য ছিল, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ লাখের উপরও একই হার বহাল থাকে তবে তাহাকে মুতানাসেব কর বলে।

তৃতীয় প্রকারের কর হইল রাজয়ী কর। আমদানী বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি করের পরিমাণ বৃদ্ধি না পাইয়া বরং কমিতে থাকে তবে উহাকে রাজয়ী বলে।

৫১৩

যেমন প্রথম এক লাখের উপর পঞ্চাশ হাজার টাকা কর হইলে, দ্বিতীয় লাখের উপর পঁচিশ হাজার, তৃতীয় লাখের উপর বিশ হাজার এবং এইভাবে পর্যায়ক্রমে কমিতে থাকে।২

ধারা-১০৮৫

কর আরোপের উদ্দেশ্য কর আরোপের উদ্দেশ্য হইতেছে – কে জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানসহ তাহাদের মৌলিক চাহিদা মিটাইবার সাথে সাথে দেশের সার্বিক কল্যাণ সাধন নিশ্চিত করার জন্য অর্থ সংগ্রহ।

(খ) দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।

(গ) দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জান মাল আবরু হিফাজাতসহ আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।

(ঘ) সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।

(ঙ) সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিশ্চিত করার জন্য অর্থ সংগ্রহ। (চ) কৃষি ও শিল্প কারখানা গড়িয়া তোলার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।

বিশ্লেষণ

কর আরোপের অন্যতম লক্ষ্য হইল সরকার কর্তৃক দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। যেমন সরকার যদি দেশীয় শিল্পের উন্নতি ও দেশীয় পণ্যের স্বার্থ সংরক্ষণ করিতে চাহে তবে কোন দেশীয় ব্যক্তি বা সংস্থা যদি ঐ জাতীয় পণ্য সামগ্রী বিদেশ হইতে আমদানী করিতে চাহে, তবে সরকার বিদেশ হইতে আমদানীকৃত পণ্যের উপর কয়েক গুণ বেশি কর আরোপ করিতে পারে, যাহাতে দেশী পণ্যের মূল্য আমদানীকৃত পণ্যের মূল্য হইতে কম থাকে। অথবা সরকার যদি কোন জিনিসের ব্যবহার বা প্রচলন কম করিতে চাহে তবে ঐ সকল জিনিসের উপর অধিক হারে কর আরোপ করিতে পারে, যাহাতে মূল্য অধিক হওয়ার কারণে দেশে উহার ব্যবহার কম হয়। যেমন বিলাস জাতীয় পণ্যের উপর সরকার অধিক হারে কর আরোপের মাধ্যমে উহার প্রচলন বা ব্যবহার কম করিতে পারে।

৫১৪

কর আদায়ের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হইল দেশের প্রতিরক্ষা খাত মজবুত করা। আধুনিক বিশ্বের কোন জাতি সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রাখিতে চাহিলে তাহাকে সর্বপ্রথম নিজ দেশের প্রতিরক্ষা খাত মজবুত করিতে হয় এবং এই প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন পড়ে দেশের জন্য অতন্দ্রপ্রহরী আত্মনিবেদিত সুশৃংখল সুদক্ষ প্রতিরক্ষা বাহিনী। যে জনগণ হইতে সরকার কর আদায় করিবে সেই জনগণের জান, মাল, আবরুর হেফাজত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনভাবে ও নির্ভয়ে চলাফেরা করিবার পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করা

সরকারের কর্তব্য। এবং দেশের আভ্যন্তরীণ এই শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন হইল আধুনিক শক্তিশালী পর্যাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর।

ট্যাক্স আদায়ের তৃতীয় উদ্দেশ্য হইল দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃংখলা ও জ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ট্যাক্স আদায়ের চতুর্থ উদ্দেশ্য হইল দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করা। ইসলাম ধর্মে জ্ঞান অর্জন করাকে প্রত্যেকের জন্য ফরজ করা হইয়াছে। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হইবে এই ফরজ আদায়ে সম্ভাব্য সকল উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা।

ট্যাক্স আদায়ের পঞ্চম উদ্দেশ্য হইল প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

যাকাতের পাশাপাশি কর ধার্যকরণ বৈধ হওয়ার কতিপয় দলীল

প্রথম দলীল : রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের জন্য সরকার জনগণের উপর কর আরোপ করিতে পারিবে। মুসলমান জনগণের প্রয়োজন দেখা দিলে যাকাতের পরও তাহাদের উপর কর ধার্য করা বৈধ। এ বিষয়ে ফিকহবিদগণ একমত। কেননা সমষ্টিগত প্রয়োজন কখনও অপূর্ণ রাখা যাইবে না। তাহাতে যত ঋণ লাগুক না কেন এমন কি যাহারা বলেন, ধন মালে যাকাত ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্য নাই, তাহারাও একথা স্বীকার করিয়া লইয়াছেন যে, প্রয়োজন দেখা দিলে যাকাতের বাহিরেও অর্থ আদায় করা যাইবে। কেননা কর আরোপের মূল উদ্দেশ্য হইল “সামগ্রিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান ও জাতীয় উন্নয়ন সাধন”।

দ্বিতীয় দলীল : যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ শরীয়াত কর্তৃক নির্দিষ্ট। অথচ রাষ্ট্রের আর্থিক দায়িত্ব অনেক। এ কথা সত্য যে, যাকাত হইল একটি বিশেষ

৫১৫

ধরনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্ধারিত, তাহা অবশ্য সামষ্টিক নৈতিক দীনি ও রাজনৈতিক লক্ষ্যও বটে। যাকাতের লক্ষ্য নিছক অর্থনৈতিক নহে অর্থাৎ শুধু ধন মাল সংগ্রহ করা রাষ্ট্রের সুবিধামত ব্যয় করার উদ্দেশ্যে তাহাও নহে।

যেহেতু যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট, সেহেতু যাকাতের জন্য স্বতন্ত্র ও বিশেষ “বাইতুল মাল” গঠন করা হইয়াছিল। যাকাতের বাজেটও সম্পূর্ণ আলাদা। যাকাতের মাল রাষ্ট্রের অন্যান্য আয়ের ধনমালের সহিত মিশ্রিত করা ফিকহবিদদের মতে বৈধ নহে।

ইমাম আবু ইউসুফ বলেন, খারাজের মাল যাকাতের মালের সহিত মিশ্রিত করা বৈধ নহে। কেননা খারাজ হইল জনগণের সামষ্টিক সম্পদ, আর যাকাত হইল আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিগণের জন্য ব্যয় করার সম্পদ।

এ কারণে ফিকহবিদগণ আরও বলিয়াছেন যে, পুল বা রাস্তা নির্মাণে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা বৈধ নহে। খাল কাটা, মসজিদ, মুসাফিরখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পানি পানের জন্য ঝর্নাধারা প্রবাহিতকরণ প্রভৃতি কাজেও যাকাত ব্যয় করা বৈধ নহে।

অথচ এ কাজগুলি ইসলামী রাষ্ট্রই শুধু নহে, বরং সকল রাষ্ট্রের জন্যই

• একান্তভাবে জরুরী। তাহা হইলে এই সকল কাজে অর্থ ব্যয় করা হইবে কোথা হইতে, যখন এই জাতীয় কল্যাণমূলক কাজেও যাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ হইবে না?

এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হইয়া থাকে যে, ইসলামের প্রথম যুগে এসকল জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হইতে যুদ্ধমান শত্রুর নিকট হইতে মুসলমানদের অর্জিত গনীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ বাবদ প্রাপ্ত সম্পদ থেকে অথবা যুদ্ধ ও রক্তপাত ছাড়াই মুশরিকদের ধনমাল থেকে “ফাই” বাবদ যাহা কিছু আল্লাহ পাক দিয়াছিলেন তাহা থেকে। প্রথম যুগের ইসলামী বিজয়কালে এই দুইটি আয় উৎস জাতীয় ধন ভাণ্ডারকে (বাইতুল মালকে) সমৃদ্ধ করিয়া দিত। ফলে তখন যাকাত ছাড়া ভিন্নতর কোন প্রকারের “কর” আরোপের প্রয়োজন ছিল না। তাহা ছাড়া এ কথাও অনস্বীকার্য যে, তখনকার সময়ে রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল অনেক সীমিত। কিন্তু বর্তমান আধুনিক কালে উক্ত উৎসদ্বয় নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে, এক্ষণে জাতীয় কল্যাণমূলক কাজের জন্য অন্য কোন উৎস অবশিষ্ট নাই। তাই ধনীদের উপর কর ধার্যকরণ কিম্বা মাসিক দেয় নির্ধারণ ছাড়া বিকল্প কিছু নাই। তাই সার্বিক

৫১৬

জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পরিমাণ “কর” অবশ্যই ধার্য করিতে হইবে।

বিশিষ্ট শাফিঈ ফিকহবিদগণের মতে, নিয়মিত বেতন-ভাতাভুক্ত সেনাবাহিনীর জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ নহে। কিন্তু এই শাফিঈ ফিকহবিদরাই একথাও বলিয়াছেন যে, জাতীয় ধনভাণ্ডারে নিয়মিত ও বেতনভুক্ত সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয় করার যখন কিছুই থাকিবে না, অথচ কাফির শত্রুদের উসকানী প্রতিরোধের জন্য জনবল প্রস্তুত রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরী হইয়া পড়ে, এমতাবস্থায় মুসলমানদের এই প্রয়োজন পূরণার্থে প্রস্তুত যাওয়া লোকদের ভরণপোষণ ইত্যাদির ব্যয় কোথা হইতে চালানো হইবে?

ইমাম নববী প্রমুখ শাফিঈ ফিকহবিদগণ অগ্রাধিকার নীতির আলোকে বলিয়াছেন যে, এমতাবস্থায় মুসলমান ধনী ব্যক্তিদের কর্তব্য হইতেছে যাকাতের মালের বাহিরের সম্পদ দিয়া তাহাদের সাহায্য করা।

তৃতীয় দলীলঃ “যাহা ব্যতীত ওয়াজিব কাজ সম্পন্ন হয় না তাহা ওয়াজিব” এ মূলনীতির উপরই গোটা ব্যাপার একান্তভাবে নির্ভরশীল নহে। এ পর্যায়ে রহিয়াছে একটি সর্বাত্মক মৌলনীতি। শরীয়াতের সাধারণ নিয়ম শরীয়াতের অকাট্য স্পষ্ট দলীলসমূহের আলোকে ইসলামের বিশেষজ্ঞ মনীষিগণ তাহার ভিত্তি রচনা করিয়াছেন। সেজন্য খুঁটিনাটি হুকুম-আহকামও নিঙড়ানো হইয়াছে। তাহার ফলে আইন প্রণয়নের একটি মৌলনীতি গড়িয়া উঠিয়াছে, যাহার উপর ভিত্তি করা চলে। তাহার ভিত্তিতে কর্মনীতি নির্ধারণ সম্ভব, আইন প্রণয়ন কিংবা ফতোয়াদান অথবা বিচারকালে তাহা থেকে হিদায়াত পাওয়া যাইতে পারে। এ পর্যায়ে মৌলনীতি হইতেছে : “জনকল্যাণের দাবি পূরণ বিপর্যর রোধ ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার উপর অগ্রাধিকার পাইবে”। দুইটি কল্যাণের মধ্যে সাধারণ বা নিম্ন মানেরটি বিনষ্ট করা উচ্চ মানেরটি লাভের উদ্দেশ্য, সাধারণ ক্ষতি প্রতিরোধের জন্যে বিশেষ ক্ষতি গ্রাহ্য হইবে।৮

শরীয়াতের এই মৌলনীতি কার্যকর করা হইলে শুধু কর ধার্যকরণই বৈধ প্রমাণিত হইবে না, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কল্যাণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাহা ধার্যকরণ ও গ্রহণ অকাট্য ও অপরিহার্য প্রমাণিত হইবে। কেননা জাতীয় বিপর্যয়, ক্ষতি ও বিপদ প্রতিরোধ ইহা ছাড়া সম্ভব নহে। তবে অন্যান্য উৎসের আয়, যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ বা অন্য কিছুর আয়, যদি সেজন্য যথেষ্ট হয় তবে তাহা আলাদা কথা। কিন্তু তাও

৫১৭

যদি কিছু না থাকে এবং এরূপ অবস্থায় আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্রকে কর ধার্য করার অধিকার দেওয়া না হয় তবে সেক্ষেত্রে কিছু দিন চলিবার পর সে রাষ্ট্রটি মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হইবে তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। চতুর্দিক থেকে তাহার অক্ষমতা প্রকট হইয়া সম্পূর্ণ অচলাবস্থা দেখা দিবে এবং সর্বোপরি সামরিক অভ্যুত্থানের বিপদ ঘনিভূত হইবে। একারণে বিভিন্ন যুগের ফিকহবিদগণ অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন যে, বাইতুল মালকে শক্তিশালী করিবার উদ্দেশ্যে মুসলিম প্রশাসক যে করই ধার্য করিবে তাহা যথারীতি প্রদান করা সকল নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। অন্যথায় বিপদ প্রতিরোধ ও প্রয়োজন পূরণ অসম্ভব থাকিয়া যাইবে। ইমাম গাযালী (র)-এর অভিমত হইল, সাধারণ কল্যাণে অতিরিক্ত ধনমাল আদায় করা বৈধ নহে। কিন্তু তিনিও লিখিয়াছেন, হাত যখন ধনমালশূন্য হইয়া পড়িবে, সাধারণ কল্যাণের ধনমাল ততটা অবশিষ্ট থাকিবে না, যাহা দ্বারা সামরিক ব্যয়ভার বহন করা চলে এবং এ সময় ইসলামী রাজ্যে শত্রু ঢুকিয়া পড়িবার আশংকা দেখা দিলে কিংবা দুষ্কৃতকারীদের পক্ষ হইতে বিপর্যয়মূলক তৎপরতা মারাত্মক হইয়া উঠিলে সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ধনমাল ধনী লোকদের নিকট হইতে গ্রহণ করা রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য বৈধ হইবে। কেননা আমরা জানি দুই দুস্কৃতি বা ক্ষতি একসঙ্গে দেখা দিলে দুইটির মধ্যে প্রথমে কঠিনতর ও অধিক বড় দুষ্কৃতি দমন করাই শরীয়াতের লক্ষ্য।

কেননা এমতাবস্থায় প্রত্যেক ধনী ব্যক্তি যাহা কিছু দিবে তাহা জান-মালের উপর ঘনাইয়া আসা বিপদের তুলনায় খুবই সামান্য। ইসলামী দেশে যদি শক্তিশালী শাসক

থাকে যে সামষ্টিক প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত করিবে, দুস্কৃতির মূল উৎপাটিত করিবে, তাহা হইলে তো বিপদটি অত্যন্ত কঠিন হইয়া পড়িবে।১০।

ইমাম শাতিবী (র) লিখিয়াছেন যে, প্রতিরক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্রপ্রধান যে কোন ধনী ব্যক্তির নিকট হইতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য কর আরোপ করিতে পারিবেন এবং বাইতুল মাল সমৃদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে কর আদায় করিতে পারিবেন। উত্তরকালে তাহা ফসল ও ফলের উপরও ধার্য করা তাহার জন্য বৈধ হইবে।

প্রকৃতপক্ষে ইমাম গাযালী ও ইমাম শাতিবী (র)-এর বক্তব্য হইল, উপরিউক্ত অবস্থায় ধনী লোকদের উপর কর বা মসিক দেয় ধার্য করা সম্পূর্ণরূপে বৈধ। এ ঘোষণাটি একটি মৌলনীতির উপর নির্ভরশীল, আর তাহা হইল : “সাধারণ বা নগণ্য ক্ষতি সহ্য করিয়া কঠিন ও মারাত্মক ক্ষতি প্রতিরোধ করা”।১১

৫১৮

চতুর্থ দলীল : ইসলাম মুসলমানদের জন্য ধনমাল ও জানপ্রাণ দিয়া আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে ফরজ করিয়াছে। আল্লাহর নির্দেশ ও

وجاهدوا بأموالكم وانقسام في سبيل الله.

“এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়া আল্লাহর পথে জিহাদ কর (৯ঃ৪১)।

সন্দেহ নাই যে, মাল দ্বারা জিহাদ করিবার এ আদেশ পালন করা ফরজ এবং তাহা যাকাতের বাহিরের অন্য একটি কর্তব্য। মুসলিম সমাজের মধ্যে অর্থ দ্বারা জিহাদ করিবার ব্যয়ভার বহনের জন্য কত পরিমাণ কর ধার্য করিতে পারিবে তাহা নির্ধারণ করা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব এবং অধিকারের ব্যাপার।১২

আমাদের এই যুগে সশস্ত্র বাহিনী গঠন ও তাহাদের ব্যয়ভার বহনের জন্য ব্যাপক পরিমাণের অর্থ সম্পদের প্রয়োজন। তাহা সত্ত্বেও শক্তি সঞ্চয় শুধুমাত্র অস্ত্র ও সৈন্য সংগ্রহের উপর নির্ভরশীল নহে। উহার সহিত বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও অর্থনৈতিক প্রভৃতি জীবনের বহুবিধ দিকে ও বিভাগে শক্তি, প্রধান্য ও আধিপত্য লাভও একান্তই অপরিহার্য। আর এসবই ব্যাপক অর্থ সম্ভার ও সমৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল।

পঞ্চম দলীল ও কর প্রভৃতি বাবদ যে সম্পদ সংগৃহীত হইবে তাহা ব্যয় করা। হইবে সমষ্টিক কল্যাণকর কার্যাবলীতে, যাহার উপকার সমাজের সকল শ্রেণীর লোকের নিকট পৌছাইবে। এই পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হইল দেশরক্ষা, শান্তি শৃংখলা, বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যানবাহন ও যোগাযোগ, পানি সরবরাহ ও সেচ ব্যবস্থা ইত্যাদি। এ সবই এমন সামষ্টিক কল্যাণমূলক কাজ যাহা দ্বারা গোটা মুসলিম জনতাই ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়, নিকট হইতে অথবা দূর হইতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।

ধারা-১০৮৬ কর ধার্যকরণ বৈধ হওয়ার শর্তাবলী (ক) দেশের জনগণের সার্বিক প্রয়োজন মিটানোর স্বার্থে অর্থ সংগ্রহের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকিলে সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র জনগণের উপর কর আরোপ

করিতে পারিবে।

(খ) যাহার উপর কর আরোপ করা হইবে তাহা প্রদানের সামর্থ্য তাহার থাকিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

কর আরোপের প্রথম শর্ত হইল রাষ্ট্রের প্রকৃতপক্ষেই অর্থের প্রয়োজন হওয়া এবং তাহা পূরণের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকা। কেবলমাত্র তখনই রাষ্ট্রীয় চাহিদা পূরণার্থে অর্থ সংগ্রহের জন্য কর ধার্য করা ইসলাম সমর্থন করে। সুতরাং যদি সরকারী প্রয়োজন তীব্র না হয় কিংবা প্রয়োজন আছে বটে, কিন্তু তাহা পূরণের জন্য সরকারের হাতেই পর্যাপ্ত ফান্ড বা আয়ের পর্যাপ্ত খাত রহিয়াছে, তাহা হইলে কর ধার্য করা বৈধ হইবে না। কারণ শাসক-প্রশাসকগণ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অর্থ সংগ্রহে মত্ত হইয়া থাকে। জনগণকে এমন সব অর্থনৈতিক চাপে জর্জরিত করিয়া তোলে যাহা বহন করিবার মত সাধ্য-সামর্থ্য তাহাদের থাকে না। ইহা নিতান্ত নিন্দনীয় ও জুলুমমূলক আচরণ সন্দেহ নাই।

লোকদের উপর কর-এর বােঝা সুবিচার ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বন্টন করিতে হইবে, যেন এক শ্রেণীর লোক অপর শ্রেণীর কারণে নিপীড়িত না হয়, এক শ্রেণীর লোক যেন ক্ষমা পাইয়া গিয়া অপর শ্রেণীর লোকদের দ্বিগুণ তিন গুণ বেশী চাপের নীচে পড়িতে না হয়।

হযরত উমার (রা) যুদ্ধমান ব্যবসায়ীদের নিকট হইতে এক-দশমাংশ, আর যিম্মী ব্যবসায়ীদের নিকট হইতে “অর্ধ ওশর” এবং মুসলমান ব্যবসায়ীদের নিকট হইতে এক-দশমাংশের এক-চতুর্থাংশ কর গ্রহণ করিতেন।১৩

হযরত উমার (রা)-এর নীতি আমাদেরকে শুল্ক বা কর-এর হার বাড়াইবার বা কমাইবার একটি পথ প্রদর্শন করিয়াছে। রাষ্ট্র পরিচালকের বিবেচনা মত জাতীয় কল্যাণ চিন্তার ভিত্তিতেই তাহা করা যাইবে।১৪

একটি আলোচনা

কর ও যাকাতের মধ্যকার কতিপয় সাদৃশ্যতা

(ক) কর যেমন আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে জনগণ হইতে সরকার আদায় করিয়া লইতে পারেন, একইভাবে যাকাতের ক্ষেত্রেও এই সুযোগ রহিয়াছে।

(খ) কর-এর বিশেষত্ব হইল তাহা সাধারণ ধনভাণ্ডারে অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে অর্পণ করা হয়। যাকাতও এই রকমই। কেননা যাকাত মূলত সরকারের নিকটই দেয়। তাহা প্রদান করিতে হয় কুরআন ঘোষিত : ১LL যাকাত

কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের মাধ্যমে।

৫২০

(গ) আধুনিক প্রবণতার “কর”-এর একটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য রহিয়াছে। একইভাবে যাকাতেরও একটি সুদূর প্রসারী লক্ষ্য রহিয়াছে।

কর ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য অর্থের দিক দিয়া

(ক) কর ও যাকাতের মধ্যে প্রথম পার্থক্য উহাদের নামের অর্থের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। যাকাত শব্দটি আভিধানিক অর্থে পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি ও বাড়তি প্রবণতা বুঝায়। পক্ষান্তরে কর” বলিতেই সাধারণত জরিমানা, খারাজ (ভূমি কর) অথবা জিজিয়া (বাধ্যতামূলক চাঁদা) ইত্যাদি বুঝায়।

মৌলতত্ব ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্থক্য

(খ) যাকাত ও কর-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হইল, যাকাত একটি ইবাদত। ইহা শুধু মুসলিম ব্যক্তির উপর ফরজ করা হইয়াছে, আল্লাহর শোকর আদায় স্বরূপ ও তাহার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে। পক্ষান্তরে কর এইরূপ নহে। ইহা নিছক একটি সামাজিক বাধ্যতামূলক ইবাদত বা আল্লাহর নৈকট্য লাভের কোন ভাবধারা ইহাতে নাই। তবে জনগণের কল্যাণে ব্যয়িত হওয়ার কারণে কর প্রদানেও সওয়াব আছে।

পরিমাণ নির্ধারণের দিক দিয়া। (গ) যাকাত একটি পরিমিতি সম্পন্ন ও শরীয়াত নির্ধারিত বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা। শরীয়াত যে পরিমাণ নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে উহাতে কোন প্রকারের কম-বেশি করিবার অধিকার কাহারও নাই। পক্ষান্তরে কর” এইরূপ নহে। উহার ক্ষেত্র, নিসাব, পরিমাণ, উহার মূল্যায়ন ও নির্ধারণ প্রভৃতি সব কিছুই সরকার তাহার প্রয়োজন মোতাবেক স্থির করিয়া থাকেন।

(ঘ) স্থিতি ও স্থায়িত্বের দিক দিয়া যাকাত একটি এমন চিরস্থায়ী ব্যবস্থা যে, উহাতে কোন যুগ বা কালে কোন প্রকারের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হইতে পারে না। পক্ষান্তরে “কর ব্যবস্থায় এইরূপ স্থিতিশীলতা ও চিরন্তনতার কোন বৈশিষ্ট্য নাই। উহার প্রকার ও পরিমাণ নির্ধারণেও কোন স্থিতিশীলতা নাই। প্রত্যেক সরকারই উহাতে প্রয়োজন মোতাবেক হস্তক্ষেপ করিতে পারে।

৫২১

ব্যয়ের খাত

(ঙ) যাকাতের ব্যয় খাত বিশেষভাবে নির্দিষ্ট। আল্লাহ তায়ালা নিজেই তাঁহার কিতাবে উহা নির্দিষ্ট করিয়া দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা) হাদীসের মাধ্যমে উহার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

বর্ণনা করিয়াছেন। পক্ষান্তরে কর” রাষ্ট্রের সাধারণ প্রয়োজনসমূহ পূরণার্থে ব্যয় করা হইয়া থাকে এবং সেই খাতসূমহ সরকারই নির্ধারণ করিয়া থাকে।

রাষ্ট্রের সহিত সম্পর্কের দিক দিয়া

(চ) “কর” আদায়ের ব্যাপারটি শুধুমাত্র সম্পদের মালিক ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যকার ব্যাপার। প্রশাসন কর্তৃপক্ষ উহা আরোপ করেন। কম-বেশী করিবার অধিকার বা কাহাকেও উহা হইতে অব্যাহতি প্রদান করিবার ক্ষমতাও প্রশাসনের রহিয়াছে। পক্ষান্তরে যাকাত সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। যাকাত বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপার। ইহার মধ্যে প্রশাসনের কোন অধিকার নাই। কোন প্রকারের কম-বেশি করা বা অব্যাহতি প্রদান করিবার অধিকার কাহারও নাই।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়া

(ছ) যাকাতের অধ্যাত্মিক ও নৈতিক লক্ষ্য সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। কর ব্যবস্থা সে পর্যন্ত পৌঁছার কথা চিন্তাও করিতে পারে না। যাকাত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলিয়াছেন, তাহাদের ধনমাল হইতে যাকাত দাও। তাহাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ কর। কিন্তু “কর” ধার্যকারীগণ বা সাধারণ অর্থনীতিবিদগণ উহাকে বস্তুবাদী লক্ষ্যের বাহিরে লইয়া আসিতে সক্ষম হন নাই। অর্থাৎ যে আধ্যাত্যিক ও নৈতিক লক্ষ্যকে সামনে রাখিয়া যাকাত ফরজ করা হইয়াছে সেই লক্ষ্যে কর ব্যবস্থার পুনর্গঠন সুদূর পরাহত।

এই দুইটি ধার্যকরণের চিন্তাগত ভিত্তির দিক দিয়া

(জ) যাকাত ও কর-এর মধ্যে অধিক স্পষ্ট ও প্রকট পার্থক্যের দিক হইতেছে উহার ভিত্তির দিক, যাহার উপর নির্ভর করিয়া এ দুইটির প্রত্যেকটি ধার্য করা হয়। “কর” ধার্যকরণের আইনগত বা চিন্তাগত ভিত্তি নির্ধারণে যে মতভেদ সৃষ্টি হইয়াছে উহা কেবল চিন্তার ও মতবাদের পার্থক্যের কারণে। কিন্তু “যাকাত” নির্ধারণের ব্যাপারে কোন প্রকারের মতভেদ বা মতপার্থক্যের অবকাশ নাই। ইহা মানুষের চিন্তা বা গবেষণার ফসল নহে এবং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সরাসরি নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট।

ধারা-১০৮৭

যেসব ক্ষেত্রে কর ধার্য করা যায়। (ক) মূলধনের উপর কর ধার্য করা বৈধ। (খ) উৎপন্ন দ্রব্যের উপর কর ধার্য করা বৈধ। (গ) মাথাপিছু কর ধার্য করা বৈধ।

বিশ্লেষণ

যাকাতের পাশাপাশি মালের উপর কর ধার্য করা বৈধ। মূলধনের উপর কর ধার্য করা বৈধ। মূলধনের উপর কর ধার্য করার সপক্ষে যে সকল যুক্তি পেশ করা হইয়াছে তাহা নিম্নরূপঃ

১. মূলধনের মালিকানা উহার মালিককে বহু প্রকারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। উহার মাধ্যেমে উপার্জনের অবাধ সুযোগ-সুবিধা অন্যদের তুলনায় সে-ই বেশি পাইয়া থাকে। তাহা ছাড়া ধন-সম্পদের কারণে তাহাদের মনে এক প্রকারের নিশ্চিয়তা ও মানসিক স্বস্তি বিরাজ করে, যাহা মূলধনহীন লোকদের বেলায় সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। এই সুফল মূলধনের আবর্তনশীল আমদানীর একটি বড় অবদান।

২. মূলধনের উপর কর ধার্য করা হইলে সকল ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন ধন-সম্পদকেও পরিব্যাপ্ত করে, এমনকি যে মূলধন কোন “আয়” দেয় না এবং পরবর্তী পর্যায়ে আয়ের উপর কর ধার্যেরও সুযোগ করে দেয় না।

৩. এই করের আওতায় পড়ে ধন-সম্পদের সর্ব প্রকারের উপাদান। যে সকল ধন সম্পদ বেকার পড়িয়া রহিয়াছে তাহার উপরও ইহার আঘাত পড়ে এবং উহার মুনাফা আনয়নকে ত্বরান্বিত করে।

৪. মূলধনের উপর ধার্য এই প্রকারের “কর” মালের মালিকদের বেশি বেশি উৎপাদনে বিপুলভাবে উৎসাহিত করে। কেননা তাহাদেরকে কর প্রদান করিতে হইবে এই চেতনা তাহাদের উপর চাবুকের মত কাজ করে। তাহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাইল কিনা অথবা উৎপাদন কম হইল কিনা ইহাতে কিছুই আসে যায় না, কর তাহাদেরকে দিতেই হইবে এই চেতনাই বেশি কাজ করে।১৫

ধারা-১০৮৮ মূলধনের উপর কর ধার্য বৈধ হওয়ার শর্ত মূলধনের উপর কর ধার্য হওয়ার জন্য কতকগুলি শর্ত রহিয়াছে

(ক) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের কম সম্পদের মালিককে কর হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে হইবে অথবা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের কম আয়শীল ব্যক্তিকে কর হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে হইবে;

(খ) ঋণ বা বন্ধকী সম্পদের উপর কর ধার্যকরণ বৈধ হইবে না;

(গ) এমন মূলধনের উপর কর ধার্য করিতে হইবে যাহা “প্রবৃদ্ধিশীল” ও “মুনাফাদায়ক”।১৭

ব্যাখ্যা আয় বলিতে সেই সকল নূতন ধন-সম্পদকে বুঝাইবে যাহা কোন স্থিতিশীল পরিজ্ঞাত উৎস হইতে নিঃসৃত বা অর্জিত ও হস্তগত হয়।

বিশ্লেষণ

আধুনিক কালে “আয়” ও “উৎপন্ন”কে কর ধার্যকরণের অধিক গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলিয়া মনে করা হয়। প্রাচীন কালে আয়ের উৎস বলিতে শুধুমাত্র ভূমি মালিকানাকে বুঝাইত। আর আধুনিক কালে আয়ের বহু নূতন ও অভিনব দ্বার উন্মুক্ত হইয়াছে। এই দ্বারসমূহ হইতেছে কাজ বা শ্রম কিংবা মূলধন অথবা উভয়ের সমষ্টি।

আয়ের একটি উৎসের প্রয়োজন- তাহা জমি, অস্থাবর ও নগদ প্রভৃতি ধরনের বস্তুগত হউক কিংবা অবস্থাগত, যেমন শ্রম বা কর্মক্ষমতা অথবা এই দুইয়ের সমন্বয়ে গড়িয়া উঠা উৎস। সুতরাং আয়ের উৎস হইতেছে হয় মূলধন অথবা কাজ বা শ্রম কিংবা উভয়টির সমষ্টি। উল্লেখ্য যে, তৃতীয় উৎসটি যখন মূলধন ও শ্রম উভয়ে মিশ্রিত হইবে তখন উহার আয়টি সাধারণত মুনাফা বলিয়া পরিচিত হইবে।১৭

আর এই উৎসসমূহ ভিন্ন ভিন্ন হইলে অর্থনীতিবিদদের মতে আয়টি উৎপন্ন, সুবিধা (ঈণভণত), মজুরী ও মুনাফা এই চারটি ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত হইবে।১৮

ব্যক্তিগণের উপর আরোপিত কর অর্থাৎ মাথাপিছু কর’ সরাসরি মালদার ব্যক্তিগণের উপর বর্তে।

৫২৪

ধার-১০৮৯ কর আদায়কালে সুবিচার ও ন্যায়পরায়নতার প্রতিষ্ঠা করা

কর আদায়কালে প্রশাসনের সুবিচার, ন্যায়পরতা ও সততা বজায় রাখা একান্ত জরুরী।

বিশ্লেষণ

কর আদায়কালে সর্বপ্রথম যে মৌলনীতি অনুসরণ ও পূর্ণ মাত্রায় সংরক্ষণ একান্তই অপরিহার্য তাহা হইতেছে সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা। কেননা ইসলামের যাবতীয় ব্যাপারে সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা একান্তভাবে কাম্য। পবিত্র কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

لقد أرسلنا رسلنا بالبينات وانزلنا معهم الكتاب والميز آن

ليقوم الناس بالقسط.

“নিঃসন্দেহে আমরা আমাদের রাসূলগণকে পাঠাইয়াছি অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ সহকারে এবং তাহাদের সহিত নাযিল করিয়াছি কিতাব ও মানদণ্ড যেন লোকেরা সুবিচার সহকারে বসবাস করিতে পারে” (৫৭ঃ ২৫)।

এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম সুবিচার প্রতিষ্ঠায় কতখানি গুরুত্বারোপ করিয়াছে। সুবিচারের এই নীতি “কর” -এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।১৯

ধারা-১০৯০

কর ফাঁকি। সরকার কর্তৃক ধার্যকৃত কর ফাঁকি দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিশ্লেষণ

যেহেতু রাষ্ট্র তাহার সার্বিক প্রয়োজন মিটাইবার তথা অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করিবার জন্য কর আরোপ করিয়া থাকে, সেহেতু এই কর প্রদান হইতে বিরত থাকিবার কোন অবকাশ নাই।

(ক) কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাইতে থাকিলে “বাইতুল মাল” শূন্য হইয়া পড়িবে।

৫২৫

(খ) কিছু লোক “কর ফাঁকি দেওয়াতে, অন্য ধনী লোকদের প্রতি অতিরিক্ত কর প্রদানের বােঝা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশের সকলের উপর অর্থনৈতিক বােঝা বহনের দায়িত্ব বণ্টনে সুবিচার প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়।

(গ) কর ফাঁকির প্রবণতায় বর্তমান কর-এর মূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটায় অথবা নূতন করিয়া কর ধার্য করার প্রয়োজন সৃষ্টি করে।

(ঘ) কর ফাঁকির প্রবণতা একটি সুষ্ঠু সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। ইহার ফলে বাইতুল মাল শূন্য হইয়া পড়ে এবং অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বা জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বন্ধ করিতে সরকার বাধ্য হয়।

যে যেভাবে কর ফাঁকি প্রতিরোধ করা যায়

(ক) বাইতুল মালের কর্মচারীগণকে ধনী লোকদের গোপনকৃত সম্পদ এবং তাহাদের প্রাতিষ্ঠানিক দলীল-দস্তাবেজ সম্পর্কে পূর্ণ মাত্রায় অবহিত থাকিতে হইবে।

(খ) যে সকল ধনমালের উপর কর ধার্য হইতে পারে সেইগুলি সম্পর্কে আগেভাগেই সরকারকে অবহিত করিতে ধনী লোকদিগকে বাধ্য করিতে হইবে।

(গ) মিথ্যা স্বীকারোক্তিকারী সম্পর্কে নির্ভুল সংবাদদানকারীকে পুরস্কার প্রদান। (ঘ) কর’- কে তাহার উৎসে আটকাইয়া দেওয়া। (ঙ) কর ফাঁকিদাতাহাদের জরিমানা ও শাস্তি বিধান করা

ব্যাখ্যা মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকগণকে ‘যিম্মী’ বলে।

ধারা—১০৯১

জিয়ার সংজ্ঞা (ক) যিম্মীগণের জান-মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান এবং তাহাদেরকে যুদ্ধে যোগদানের বাধ্যবাধকতা হইতে অব্যাহতি প্রদানের বিনিময়ে প্রদত্ত করকে ‘জিয়া বলে।

বিশ্লেষণ

ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের উপর ধার্যকৃত এক প্রকারের কর বিশেষকে জিয়া বলে। “জিয়া” একটি আরবী শব্দ উহার আভিধানিক অর্থ

৫২৬

বিনিময় পুরস্কার। পরিভাষায় কাফেরদিগের প্রাণের বিনিময়ে গৃহীত অর্থকে জিয়া বলে।

জিয়া (=)একটি আরবী শব্দ ইসমে মুশতাক। উহার আভিধানিক অর্থ বিনিময়, পুরস্কার, জিয়া কর, যিশ্মীদের উপর ধার্যকৃত জমির খাজনা ইত্যাদি।২০

পরিভাষায় জিয়া বলিতে এমন এক প্রকারের বিশেষ চাঁদাকে বুঝায় যাহা ইসলামী হকুমাত তাহার দেশে বসবাসরত অমুসলিম ব্যক্তিবর্গের উপর বাধ্যতামূলকভাবে ধার্য করিয়া থাকে।

জিয়ার তাৎপর্য ও একদল ইসলামী চিন্তাবিদ মনে করেন যে, কুফর ও শিরক হইল আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (সা)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল। আর উহার একমাত্র সাজা হইল মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু আল্লাহ পাক তাঁহার বিশেষ রহমত ও মেহেরবানী করিয়া মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সামান্য মালের বিনিময়ে ঐ বিদ্রোহীদের জান ও মালের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করিয়াছেন।

(খ) মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদের উপর জিয়া ধার্য করা বৈধ।

মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত কাফিরদের জান-মাল আবরুর হেফাজত করা মুসলিম সরকারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রহিয়াছে। জিয়া সম্পর্কে সূরা তওবায় আল্লাহ পাক বলেনঃ

حتى يعطوا الجزية عن يد وهم صاغرون

“যতক্ষণ না তাহারা করজোড়ে জিয়া প্রদান করে” (৯ঃ৩০)। কাফিরদের হইতে “জিয়া আদায় করিবার সুস্পষ্ট নির্দেশ এই আয়াত হইতে পাওয়া যায়।২১।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) উল্লেখ করিয়াছেন, “আমি মানুষদের সহিত ঐ সময় পর্যন্ত যুদ্ধে লিপ্ত থাকিতে নির্দেশপ্রাপ্ত হইয়াছি অথবা যুদ্ধ চালাইয়া যাইতে নির্দেশপ্রাপ্ত হইয়াছি, যতক্ষণ না তাহারা সরকারের অধীনতা স্বীকার করিয়া জিয়া প্রদানে সম্মত হয়। তখন তাহারা আমার পক্ষ হইতে তাহাদের জান-মাল-আবরুর হেফাজতের নিশ্চয়তা লাভ করিবে”।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) উল্লেখ করেন যে, হযরত আবু বাকরের শাসন আমলে যাহারা মুরতাদ্দ হইয়া গিয়াছিল হযরত উমার (রা) তাহাদের বিরুদ্ধে বলিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছি? আমি কাফিরদের সহিত

৫২৭

যুদ্ধ করিতে থাকিব যতক্ষণ পর্যন্ত না তাহারা ইসলামী সরকারের অধীনতা স্বীকার করিয়া জিয়া প্রদানে সম্মত হয় এবং ইহার মাধ্যমে তাহাদের জান-মালের হেফাজতের পূর্ণ নিশ্চয়তা লাভ করে।

তথ্য নির্দেশিকা ১. ইসলামী রিয়াসাত কা মালী নিজাম, প্রফেসর রফিউল্লাহ শিহাব, পৃ. ২০। ২. ইসলামী রিয়াসাত কা মালী নিজাম, প্রফেসর রফিউল্লাহ শিহাব, পৃ. (২০-২১)। ৩. ইসলামী রিয়াসাত কা মালী নিজাম, প্রফেসর রফিউল্লাহ শিহাব পৃ. ২৩। ৪. ফিকহুয যাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, আল্লামা ইউসুফ আল-কারজাবী। ৫. কিতাবুল খারাজ, পৃ. ৯৫। ৬. আল-মুগনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৬৬৭। ৭. তোহফাতুল মুহতাজ (6, la), তৃতীয় খণ্ড পৃ-৯৬। ৮. আল-আশবাহ ওয়ান-নাজায়ের লি-ইবন নুজায়ম (Uk:09 • VI) wels all

; এবং

اصول الثشم يم للخضري

৯. ইসলামের যাকাতের বিধান, ইউসুফ আল-কারযাবী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৭৪১। ১০. আল-মুস্তাসফা (A ll), প্রথম খণ্ড, পৃ. ৩০৩। ১১. আল-এতেছাম (Li-I), দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১০৫। ১২. গিয়াছুল উমাম ( 1:), ইমাম ইবন তাইমিয়া। ১৩. কিতাবুল খিরাজ, ইয়াহিয়া ইবন আম্‌দম (rul t! -S), পৃ. ১৭২। ১৪. ইসলামের যাকাত বিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৭৫০। ১৫. ডঃ রশীদ দবর লিখিত ইলমুল মালিয়া, দ্বিতীয় মুদ্রণ, জামে সুরীয় প্রেস, পৃ. ৩৪৭ এবং ডঃ

সাযযাদ মাহের লিখিত গ্রন্থ মাওয়ারিদুদ দাওলা, পৃ. ১৬৬-১৬৭। ১৬. ফাতহুল বারী, ৩ খ, পৃ. ১৬৭। ১৭. null Lal sc• ডঃ মোহাম্মদ ফুয়াদ ইবরাহীমকৃত গ্রন্থের ১ম খণ্ড পৃঃ ৩২২ ১৮. ইসলামের যাকাতের বিধান (বাংলা), ইউসুফ আল-কারযাব, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৬৮৫-৬৮৬। ১৯. ফিকহুয-যাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাবী। ২০. আরবী-বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১০৯৩, আবদুল হাকিম রিফায়ী ও

ডঃ হুসাইন খাল্লাফ কর্তৃক লিখিত গ্রন্থ হইতে উদ্ধৃত। ২১. তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, বাংলা অনু., পৃ. ৫৬৬-৬৭।

৪৬

ব্যাংক ব্যবস্থা

.

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *