1 of 2

৪২. কর্মচারী আচরণবিধি

অধ্যায় : ৪২ কর্মচারী আচরণবিধি

ধারা-৯৯৫

কর্মচারীর সংজ্ঞা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ “কর্মচারী হিসাবে গণ্য হইবেন।

বিশ্লেষণ

এখানে কর্মচারী বলিতে রাষ্ট্র কর্তৃত্ব নিয়োজিত সরকারী কর্মচারীগণকে বুঝায়। আরবী ভাষায় কর্মচারীগণকে মুলাযিম বা মুওয়াজ্জিফ বলে। মহানবী (সা) রাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য কর্মচারী নিয়োগ করিয়াছেন। রাষ্ট্রের কার্যাবলী সফলভাবে সম্পাদনের জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগ অপরিহার্য।

ধারা-৯৯৬

কর্মচারীর আচরণ (ক) কর্মচারীগণ –

(১) কর্তৃপক্ষের প্রতিটি ন্যায়ানুগ নির্দেশ পালন করতে বাধ্য থাকিবেন, তাহা তাহাদের মনঃপূত হউক বা না হউক;

(২) কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করিতে পারিবেন না।

তবে শর্ত থাকে যে, সরকারী কর্মচারীর কর্মের সময়, বিষয়, স্থান ও পরিধি বিবেচনা করিয়া কর্তৃপক্ষ কর্মচারীকে ব্যবসায়ের অনুমতি দিতে পারেন;

৩৮০

(৩) স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করিতে পারিবেন, কিন্তু ভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াইতে পারিবেন না;

(৪) কোন সরকারী তথ্য ফাঁস করিতে পারিবেন না;

(৫) এমন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে উপহার বা দান সামগ্রি গ্রহণ করিতে পারিবেন না যাহা তাহাদিগকে অফিস সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে প্রভাবিত করিতে পারে;

(৬) কর্তৃপক্ষের পূর্ব-অনুমোদন ব্যতীত জনগণের নিকট হইতে কোনরূপ চাঁদা আদায় করিতে পরিবেন না;

(৭) কর্মচারী বলিতে সরকারী চাকুরিতে নিয়োজিত নারী, পুরুষ, মুসলিম, অমুসলিম সকলকে বুঝাইবে;

(৮) জন-গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য কর্মে নিয়োজিত বা অপরিহার্য কর্ম ঘোষণা করিয়া কর্মচারীগণের নিকট হইতে সরকার বাধ্যতামূলক সেবা গ্রহণ করিতে পারিবে;

(৯) সরকার তাহার কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

কর্মচারীগণের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হইল কর্তৃপক্ষের (উলিল আমর) নির্দেশ যথাযথভাবে মান্য করিয়া উহা কার্যে পরিণত করা। মহান আল্লাহ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানিয়া চলার জন্য আদেশ প্রদান করিয়াছেন (দ্র. সূরা নিসা, আয়াত নং ৫৯)। রাসূলুল্লাহ (সা)-ও এই বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন। মহানবী (সা) বলেন : “যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করিল, সে আমারই আনুগত্য করিল।”

لا طاعة في معصية اما الطاعة في المعروف.

“পাপকাজে কোন আনুগত্য নাই, আনুগত্য কেবল ন্যায়সংগত কাজে”।

নেতৃআদেশ ব্যক্তিগতভাবে অমনঃপূত হইলেও তাহা ধৈর্য সহকারে মান্য করিতে হইবে। মহানবী (সা) বলেন :

على المرء المسلم السع والطاعة فيما أحب و گره ما لم يؤمر

بمعصية فاذا أمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة .

৩৮১

“মুসলিম ব্যক্তির উপর নির্দেশ শ্রবণ ও আনুগত্য করা অপরিহার্য, তাহা তাহার মনঃপূত হউক বা না হউক, যতক্ষণ পর্যন্ত পাপ কাজের নির্দেশ প্রদান না করা হয়। পাপ কাজের নির্দেশ প্রদান করা হইলে এইরূপ অবস্থায় শ্রবণও নাই আনুগত্যও নাই”।

يكون عليگم أمراء تعرفون وتنكرون فمن أنكر فقد برى ومن کره فقد سلم أى من كره بقلبه وانگر بقلبه ولكن من رضى وتابع قالوا أقلاقاته قال ماصلوا ما صلوا .

“তোমাদের উপর এমন শাসকশ্রেণী ক্ষমতাসীন হইবে, তোমরা যাহাদের ভালো কাজও দেখিবে এবং খারাপ কাজও দেখিবে। যে ব্যক্তি তাহা প্রত্যাখ্যান করিবে সে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে। আর যে ব্যক্তি তাহা মনে মনে প্রত্যাখ্যান করিবে ও ঘৃণাবােধ করিবে সেও নিষ্কৃতি পাইবে, সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে তাহা পছন্দ করিবে ও উহার অনুসরণ করিবে। সাহাবীগণ বলিলেন, আমরা কি তাহাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিব না? রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন : না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা নামায পড়ে, না যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা নামায পড়ে”।

“রাসূলুল্লাহ (সা) একটি সামরিক অভিযানে এক আনসার সাহাবীকে অধিনায়ক নিয়োগ করিয়া সৈনিকদেরকে তাহার আনুগত্য করার নির্দেশ প্রদান করেন। কোন কারণে অধিনায়ক অসন্তুষ্ট হইয়া সৈনিকদেরকে বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কি আমার আনুগত্য করার জন্য তোমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন নাই? তাহারা বলিল, হাঁ। তিনি বলিলেন, তাহা হইলে তোমরা কাষ্ঠ সংগ্রহ করিয়া উহা দ্বারা আগুন জ্বালাও এবং তাহাতে ঝাপাইয়া পড়। তাহারা কাষ্ঠ সংগ্রহ করিয়া আগুন জ্বালাইল, কিন্তু উহাতে ঝাপাইয়া পড়িতে ইতস্তত করিতে লাগিল। একজন সৈনিক বলিলেন, আমরা আগুন হইতে বাঁচিবার জন্যই তো আপনার আনুগত্য করিয়াছি। অতঃপর উহাতে ঝাপ দিব কেন? বিতর্কের এক পর্যায়ে আগুন নিভিয়া গেল। তাহারা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করিয়া নবী (সা)-কে বিষয়টি অবহিত করিলে তিনি বলেনঃ তোমরা উহাতে ঝাপ দিলে আর কখনও বাহির হইতে পারিতে না। আনুগত্য কেবল ন্যায়সংগত বিষয়ে।”

আবু বকর সিদ্দীক (রা) খলীফা হওয়ার পর জনগণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তাঁহার প্রথম ভাষণে বলেন :

৩৮২

,

أطيعون ما أطع الله ورسوله فيكم فان عصيت فلا طاعة لى

• ২.l আমি যতক্ষণ তোমাদরেকে আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্যাধীনে তোমাদের নির্দেশ প্রদান করিব। ততক্ষণ তোমরা আমার আনুগত্য করিবে। আমি অবাধ্যচারী হইলে আমার আনুগত্য করা তোমাদের কর্তব্য নয়”।৬

ইমাম রাযী (র) “নেতৃআদেশ মান্য করা” সম্পর্কিত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে ইহাও বলিয়াছেন যে, আমীরের যথার্থ নির্দেশের আনুগত্য করা অপরিহার্য, কিন্তু তিনি অন্যায়-অবিচারের নির্দেশ দিলে সেই ক্ষেত্রে উক্ত নির্দেশের আনুগত্য করা

অপরিহার্য হওয়ার পরিবর্তে হারাম হইবে”।

উপরোক্ত হাদীসসমূহের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন অবস্থায়ই সরকারী কর্মচারীগণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করিবেন না। কোন নির্দেশ তাহাদের অপছন্দ হইলেও তাহা মান্য করিতে হইবে। তবে সুস্পষ্টভাবে শরীআ বিরোধী কোন আদেশের ক্ষেত্রে আনুগত্য করা নিষিদ্ধ। যেমন পূর্বোক্ত হাদীস হইতে জানিতে পারা যায় যে, সৈনিকদেরকে কাষ্ঠ সংগ্রহ করার ও আগুন জ্বালাইবার নির্দেশ প্রদান করা হইলে তাহা তাহারা মান্য করিয়াছিলেন। কারণ কাষ্ঠ সংগ্রহ ও আগুন জ্বালানো শরীআ বিরোধী কাজ নহে। কিন্তু তাহাদেরকে জ্বলন্ত আগুনে লাফাইয়া পড়ার নির্দেশ প্রদান করা হইলে তাহারা উক্ত আদেশ অমান্য করেন। কারণ আত্মহত্যা ও অনর্থক জীবননাশ করা সুস্পষ্টভাবে আইন বিরোধী কাজ ছিল। অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :

من رای من أميره شيئا يكره فليصبره فائه من فارق الجماعة

شبرا مات ميتة الجاهلية .

“কেহ তাহার আমীরের অমনোপুত আচরণ প্রত্যক্ষ করিলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কারণ যে ব্যক্তি ঐক্যে ফাটল ধরায় সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে”।

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার ফারূক (রা) তাহার এক ভাষণে বলেন, “লোকসকল! আল্লাহর অবাধ্যতায় কাহারও আনুগত্য করিতে হইবে- নিজের সম্পর্কে এইরূপ অধিকারের দাবি কেহ করিতে পারিবে না”।

সরকারী কর্মচারীগণ ব্যবসা-বাণিজ্য করিতে পারিবেন না। মহানবী (সা) বিশেষভাবে শাসকের ব্যবসায়ে নিয়োজিত হওয়াকে মারাত্মক প্রতারণা বলিয়াছেন।

৩৮৩

তাঁহার বাণী :

من أخون الخيانة تجارة الولى في رعيته .

“জনগণের মধ্যে শাসকের ব্যবসা সবচেয়ে মারাত্মক খেয়ানত”।১০ প্রথম খলীফা আবু বা সিদ্দীক (রা)-র পেশা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। এই পেশার দ্বারাই তিনি জীবিকা নির্বাহ করিতেন। খলীফা হওয়ার পর তিনি কাপড়ের থান নিয়া বাজারে গেলে উমার (রা) তাহাকে হাত ধরিয়া বাজার হইতে ফিরাইয়া আনেন এবং সরকারী তহবিল হইতে তাহার মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করিয়া দেন।

৩য় খলীফা উসমান ইবন আফফান (রা)-র তকালে বিরাট ব্যবসায়িক বহর ছিল। তিনিও খলীফা হওয়ার পর সরাসরি তাহার ব্যবসায়ে অংশগ্রহণ করেন নাই।

অবশ্য কর্মচারীগণ তাহাদের পুঁজি শিরকা, মুদারাবা, মুরাবাহা ইত্যাদি বিভিন্ন পন্থায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে খাটাইতে পারিবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) বিনিয়োগহীনভাবে পুঁজি ফেলিয়া রাখিতে নিষেধ করিয়াছেন। অনন্তর কর্মচারী ব্যবসায়ে জড়িত হইলে সরকারী কাজে বিঘ্ন ঘটিতে পারে এবং কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হইতে পারে।

সরকারী কর্মচারী যে ধর্মেরই অনুসারী হউক সে তাহার নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করিতে পারিবে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

لا اكره في الدين قد تبين الرشد من الفئ .

“দীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নাই, সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হইতে সুস্পষ্ট হইয়াছে” (সূরা বাকারা : ১৫৬)।

অমুসলিম নাগরিকগণ সর্ব বিষয়ে মুসলিম নাগরিকগণের সমান অধিকার লাভ করিয়া থাকে। ইহার মধ্যে নিজ ধর্ম পালনের অধিকার অন্যতম। দ্বিতীয় খলীফা উমার ফারূক (রা)-র আসবাক নামক এক খৃস্টান দাস ছিল। সেই দাসের নিজ বক্তব্য নিম্নরূপঃ

گنت مملوكا نصرنيا لعمر بن الخطاب فكان يعرض على

الاسلام قابي فيقول لا إكراه في الدين .

“আমি উমার (রা)-র খৃস্টান দাস ছিলাম। তিনি আমাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু আমি তাহা প্রত্যাখ্যান করিতাম। তিনি বলিতেন, ইসলামে বলপ্রয়োগের অবকাশ নাই”।১২

৩৮৪

ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়ানোও নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ মুসলমানদেরকে বলেন?

ولا تسبوا الذين يدعون من دون الله فيسبوا الله عدوا بغير

24 “তাহারা আল্লাহূকে ছাড়িয়া যাহাদেরকে ডাকে তাহাদেরকে তোমরা গালি দিও। কেননা তাহারা বিদ্বেষের বশবর্তী হইয়া অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে” (সূরা আনআমঃ ১০৮)।

ولولا دفع الله الناس بعضهم ببعض تهمت صوم وبيع

وصلوات ومساج يذكر فيها اسم الله كثيرا .

“আল্লাহ যদি মানুষের একদল দ্বারা অপর দলকে প্রতিহত না করিতেন তবে বিধ্বস্ত হইয়া যাইত খৃস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনাস্থান, গীর্জা, ইয়াহুদীদের উপাসনালায় এবং মসজিদসমূহ যাহাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম” (সূরা হজ্জ ও ৪০)।

উপরোক্ত আয়াতসমূহে যেমন ধর্ম অনুসরণের স্বাধীনতা প্রদান করা হইয়াছে, তেমন ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াইতেও নিষেধ করা হইয়াছে। এই প্রসঙ্গে মহানবী (সা) বলেনঃ

يتروا ولا تعسروا ولا تنقروا .

“নম্র ব্যবহার কর, কঠোরতা করিও না, লোকদেরকে খুশী কর। বিদ্বেষ ছড়াইও না।”১৩

সরকারী গোপনীয় তথ্য ফাঁস না করাও কর্মচারীর কর্তব্য। তথ্য ফাঁস করিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করা মারাত্মক অপরাধ। রাসূলুল্লাহ (সা) ব্যাপক রক্তপাত এড়াইবার জন্য মক্কা বিজয়ের জন্য গোপনে সামরিক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। হাতেব ইবন আবু বালতাআ নামক একজন সাহাবী তাহার মক্কায় অবস্থানরত নিজ পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করিয়া গোপন পত্র মারফত সামরিক প্রস্তুতির কথা কুরাইশদের জানাইয়া দেওয়ার উদ্যোগ নেন। তাহার এই তথ্য পাচার ধরা পড়িলে কোন কোন সাহাবী তাহার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) উক্ত সাহাবীর অতীতের অবদানের কথা বিবেচনা করিয়া তাহাকে ক্ষমা করিয়া দেন। বিষয়টি সূরা মুমতাহানার প্রাথমিক আয়াতগুলির ব্যাখ্যা প্রসংগে উল্লেখিত হইয়াছে। উক্ত সূরায় মুসলমানদেরকে এই ধরনের কাজ হইতে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে।

৩৮৫

عن ابن مسعود وابن عمر وأنس قالوا قال البى صلى الله

عليه وسلم لكل غادر لواء يوم القيامة يقال هذه غدرة فلان .

: “ইন মাসউদ, ইবন উমার ও আনাস (রা) বলেন, নবী (সা) বলিয়াছেন? কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি পতাকা থাকিবে এবং বলা হইবে—ইহা অমুক ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা”।১৪

عن أبي سعيد الخدري أن النبى صلى الله عليه وسلم قال الكل غادر لواء عند استه يوم القيامة يرفع له بقدر غدره الا ولا غادر أعظم غدرا من أمير عامة.

“আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) হইতে বর্ণিত। নবী (সা) বলেন : প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য কিয়ামতের দিন তাহার দুই নিতম্ব বরাবর একটি পতাকা উত্তোলিত থাকিবে। তাহার বিশ্বাসঘাতকতার মাত্রা অনুযায়ী তাহা উপরে তুলিয়া ধরা হইবে। সাবধান! জনগণের আমীরের (রাষ্ট্রপ্রধানের) বিশ্বাসঘাতকতার তুলনায় সাংঘাতিক বিশ্বাসঘাতকতা আর নাই”।১৫

কর্মচারীর জন্য উপহার, দানসামগ্রি ইত্যাদি জনগণের নিকট হইতে গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সা) কর্মচারীকে প্রদত্ত উপহারকে ঘুষ হিসাবে আখ্যায়িত করিয়াছেন।

هيا العمال سحت .

“সরকারী কর্মচারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকন ঘুষ হিসাবে গণ্য”।

هدايا العمال غلول .

“সরকারী কর্মচারীকে প্রদত্ত উপঢৌকন আত্মসাৎকৃত মাল হিসাবে গণ্য” (মুসনাদে আহমাদ, ৫খ, পৃ. ৪২৫, হাদীস ২৩৯৯৯)।

من استعملناه على عمل فرزقناه رزقا فما أخذه بعد ذالك

ول .

فهو

“আমরা কোন ব্যক্তিকে সরকারী কার্যে নিয়োগ করিয়া তাহার জন্য বেতন নির্ধারণ করিয়া দেওয়ার পর সে উহার অতিরিক্ত যাহা গ্রহণ করে তাহাই আত্মসাৎকৃত মাল”।১৬  

২৫

৩৮৬

রাসূলুল্লাহ (সা) ইবনুল লুতবিয়্যাকে কর্মচারী নিয়োগ করিয়া যাকাত আদায় করার জন্য পাঠাইলেন। সে ফিরিয়া আসিয়া তাহাকে বলিল, ইহা যাকাতস্বরূপ প্রদান করা হইয়াছে এবং ইহা আমাকে উপঢৌকন দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চেহারা বিবর্ণ হইয়া গেল এবং তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়াইয়া বলেন :

ما بال المال نبعثه فيجي فيقول هذا لكم وهذا أهدى الى

.

الأجلس في بيت أمه فينظر اليهدى اليه أم لا .

“সরকারী কর্মচারীর কি হইল! আমরা তাহাকে (কোন দায়িত্বে নিয়োগ করিয়া) প্রেরণ করি, অতঃপর সে ফিরিয়া আসিয়া বলে, এই মাল আপনাদের (সরকারের) এবং ইহা আমাকে উপহার দেওয়া হইয়াছে। সে তাহার মায়ের বাড়িতে বসিয়া থাকে না কেন, অতঃপর দেখুক তাহাকে উপহার দেওয়া হয় কিনা”।১৭।

কর্মচারীর পরিবার বলিতে শুধু তাহার স্ত্রী ও সন্তানগণকেই বুঝায় না, বরং পিতা-মাতাও তাহার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, যদি স্বচ্ছল না হন এবং বার্ধক্য, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি কারণে সেবা ও সাহায্যের মুখাপেক্ষী হন। কুরআন মজীদে পিতা-মাতার প্রতি দয়া ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে।

وقضى ربك ألا تعبدوا الا اياه وبالوالدين احسا اما يبلغن عندك الكبر أحدهما أو كلاهما فلا تقل لهما أف ولا تنهرهما وقل لهما قولا كريما واخفض لهما جناح الث من الرحمة .

“তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কাহারও ইবাদত না করিতে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিতে। তাহাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হইলে তাহাদেরকে উফ (বিরক্তিকর বা ঘৃণাসূচক কোন কথা) বলিও না এবং তাহাদেরকে ধমক দিও না, তাহাদের সহিত মর্যাদাপূর্ণ নম্র কথা বলিও। মমতাবশে তাহাদের প্রতি তার পক্ষপুট অবনমিত করিও” (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩, ২৪)।

ووصينا الانسان بوالديه احسانا .

“আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়াছি তাহার পিতার-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিতে” (সূরা আনকাবূত ও ৮; আরও দ্র. সূরা আহকাফ : ১৫; সূরা লোকমান : ১৪-১৫)।

৩৮৭

রাসূলুল্লাহ্ (সা) -এর বাণী :

ان رجلا اتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال ان لى مالا وان والدي يحتاج الى مالي قال أنت ومالك بوالدك إن أولادكم من أطيب

২.y – lik,২.২ “এক ব্যক্তি নবী (সা)-এর নিকট আসিয়া বলিল, আমার সম্পদ আছে এবং আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বলেন : তুমি ও তোমার সম্পদ তোমার পিতার জন্য। তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের উত্তম উপার্জন। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন ভোগ করিতে পার”।১৮

মুসলিম কর্মচারীর পিতা-মাতা অমুসলিম হইলেও তাহারা তাহার পরিবারভুক্ত, হইবে, যদি তাহারা স্বচ্ছল না হয় এবং বার্ধক্য, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি কারণে সেবা ও সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়। মহান আল্লাহ বলেন :

وإن جاهدين على أن تشرك بي ما ليس لك به علم فلا تطعهما

وصاحبهما في الدنيا معروفا

“তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সমকক্ষ দাঁড় করাইতে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নাই, তবে তুমি তাহাদের কথা মানিও না, কিন্তু পৃথিবীতে তাহাদের সহিত সদ্ভাবে বসবাস কর” (সূরা লোকমান : ১৫)।

হযরত আসমা (রা)-র পৌত্তলিক মাতা তাহার নিকট আসিলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে তাঁহার মায়ের সহিত উত্তম আচরণের নির্দেশ প্রদান করেন।১৯

অনন্তর ভরণপোষণ (নাফাকা) বিধি অনুযায়ী অন্য যাহাদের ব্যয়ভার বহন যত দিন কর্মচারীর জন্য বাধ্যকর হইবে তত দিন তাহারাও তাহার পরিবারের সদস্য গণ্য হইবে। এই ক্ষেত্রে কর্মচারীর নিজ নিজ ধর্মীয় বিধানমতে তাহার পরিবার সংজ্ঞায়িত হইবে।

এখানে কর্মচারী বলিতে সরকারী কার্যসমূহ সম্পাদনের জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিগণকে বুঝায়। তাহারা মুসলিম, অমুসলিম, নারী-পুরুষ যাহাই হউক। সরকারী কার্যে মহিলা ও অমুসলিমদের নিয়োগ দান বৈধ। রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কা হইতে হিজরত করাকালে এক পৌত্তলিককে পারিশ্রমিক প্রদানের বিনিময়ে পথপ্রদর্শক নিয়োগ করেন। উমার ফারূক (রা)-র খেলাফতকালে মিসর বিজয়ের পর কিবতী খৃষ্টানদেরকে প্রাদেশিক সরকারের রাজস্ব ও হিসাব বিভাগে নিয়োগ করা

Obbo

হয়। সরকার তাহার সুবিবেচনা অনুযায়ী যে কোন পদে অমুসলিম নাগরিককে নিয়োগ দান করিতে পারে, যাকাত বিভাগ ব্যতীত।

সরকার প্রয়োজনবােধে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ, অপরিহার্য ও জরুরী প্রয়োজনে কর্মচারীগণের নিকট হইতে বাধ্যতামূলক সেবা আদায় করিতে পারিবে। রাসূলুল্লাহ (সা) এই ধরনের বাধ্যতামূলক সেবা গ্রহণ করিয়াছেন এবং যাহারা সেবাদানে বিরত থাকে তাহাদের শাস্তির ব্যবস্থা করিয়াছেন। তিনি উহুদের যুদ্ধকালে একদল তীরন্দাজকে একটি গিরিপথে মোতায়েন করিয়া তাহাদেরকে নির্দেশ দেন : তোমরা কখনও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থান ত্যাগ করিবে না। এমনকি তোমরা যদি দেখ যে, আমাদের লাশ শকুনে ভক্ষণ করিতেছে তবুও না। খন্দক যুদ্ধকালে তিনি পরিখা খননের এবং রাত্রে পাহারা দেওয়ার বাধ্যতামূলক সেবা গ্রহণ করিয়াছেন। তাবুকের যুদ্ধকালে তিনি যুদ্ধক্ষম সকল পুরুষের জন্য যুদ্ধে যোগদান বাধ্যতামূলক করিয়াছিলেন এবং যাহারা যুদ্ধে যোগদান করে নাই যুদ্ধশেষে তাহাদের শাস্তির ব্যবস্থা করিয়াছেন (দ্র. সূরা তাওবা)। বস্তুত শরীআতের বিধানমতে সরকারী পদে নিয়োজিত হওয়ার সংগে সংগে কর্মচারীর সেবা প্রদান বাধ্যতামূলক হইয়া যায়। এখানে অপরিহার্য ও সাধারণ সেবার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।

সরকার শুধু তাহার কর্মচারীরই নহে, যে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ করিতে পারে। শরীআতের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকেই বাধ্যতামূলকভাবে নিজ নিজ সম্পত্তির হিসাব রাখিতে হয়, তাহার উপর যাকাত ও উশর প্রদান ফরয হইয়াছে কিনা তাহা জ্ঞাত হওয়ার জন্য। যাকাত ও উশর সংগ্রহের দায়িত্ব যেহেতু সরকারের, তাই সে তাহা ধার্য করার জন্য সাধারণ নাগরিকসহ তাহার কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব তলব করিতে পারে। যাকাত ও উশর ছাড়াও সামগ্রিক প্রয়োজনে সরকার কতগুলি শর্তসাপেক্ষে জনগণের উপর করারোপ করিতে পারে। এই উদ্দেশ্যেও সরকার যে কোন ব্যক্তির সম্পত্তির হিসাব তলব করিতে পারে।

ধারা—৯৯৭

কর্মচারীর অসদাচরণ (ক) নিম্নে বর্ণিত যে কোন কাজে লিপ্ত হইলে তাহা কর্মচারীর অসদাচরণ বলিয়া গণ্য হইবে

(১) কোন ব্যক্তির সহিত দুর্ব্যবহার, অভদ্র আচরণ, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্যকরণ;

৩৮৯

(২) প্রতারণা; (৩) আত্মসাৎ (৪) উৎকোচ গ্রহণ; (৫) নিষিদ্ধ জিনিস গ্রহণ; (৬) দায়িত্বে অবহেলা ও ফাঁকি; (৭) বিনা ছুটিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি;

(৮) অফিসের দায়িত্ব বহির্ভূত যেসব কাজে সংশ্লিষ্ট হইতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক সেইসব কাজে উক্ত অনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে সংযুক্ত হওয়া।

(খ) কর্মক্ষেত্রের আওতা বহির্ভূত এলাকায় উপধারা (২), (৩), (৪) ও (৫)-এ বর্ণিত কোন কাজে কর্মচারী লিপ্ত হইলে এবং তাহা যথাযথ কর্তৃপক্ষের গোচরিভূত করা হইলে উক্ত কাজও কর্মচারীর অসদাচরণ বলিয়া গণ্য হইবে।

(গ) মুসলিম কর্মচারীর বেলায় শরীআতের বিধান অনুযায়ী যেসব কাজ করা তাহার জন্য বাধ্যতামূলক তাহা না করা এবং যেসব কাজ করা নিষিদ্ধ তাহাতে লিপ্ত হওয়াও কর্মচারীর অসদাচরণ বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঘ) কর্মচারীকে কোন আইন বিরুদ্ধ কাজ করিতে নির্দেশ প্রদান করা হইলে এবং সে তাহা করিতে বাধ্য হইলে সেই ক্ষেত্রে তাহার কর্মের জন্য সে দায়ী হইবে না, বরং নির্দেশ প্রদানকারী অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হইবে।

(সা) উপরোক্ত ধারাসমূহে বর্ণিত কর্মচারীকে কোনরূপ অসদাচরণের জন্য উহার মাত্রা অনুযায়ী চাকুরিচ্যুত করা যাইতে পারে, জরিমানা করা যাইতে পারে, আদালতে সোপর্দ করা যাইতে পারে অথবা ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা যাইতে পারে।

বিশ্লেষণ

কর্তৃপক্ষের সহিত কর্মচারীকে কথা-বার্তায়, আচার-আচরণে কাজে-কর্মে ও নির্দেশ পালনের মাধ্যমে সৌজন্য ও আনুগত্য প্রদর্শন করিতে হইবে। ইতিপূর্বে আমরা ধারা (৯৯৬)-এর বিশ্লেষণে এই বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ হইতে দলীল পেশ করিয়াছি। অতএব উহার বিপরীত কর্ম তাহার অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হইবে।

৩৯০

সরকারের বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বাস্তবায়ন করার জন্য কর্মচারী নিয়োগ করা হইয়া থাকে। অতএব নির্দেশ অমান্য করা বা বাস্তবায়নে গড়িমসি করা তাহার অবহেলা ও অসদাচরণ বিবেচিত হইবে।

প্রতারণা, ফাঁকি, জালিয়াতি ও শঠতা ইত্যাদি মারাত্মক অন্যায় ও শরীআ বিরোধী কাজ। মহানবী (সা) একদিন বাজারে গিয়া একটি খাদ্যশস্যের স্কুপের মধ্যে হাত ঢুকাইয়া দিলেন এবং ভিজা অনুভব করিলেন। তিনি উক্ত স্কুপের মালিককে জিজ্ঞাসা করিলে সে বলে যে, কিছু শস্য বৃষ্টির পানিতে ভিজিয়া গিয়াছে এবং তাহা ভেতরে রাখা হইয়াছে। তিনি বলেন : তুমি তাহা উপরে রাখ নাই কেন? লোকেরা দেখিয়া ক্রয় করিতে পারিত। অতএব

من ش فليس منی .

“যে ব্যক্তি প্রতারণা করে আমাদের সহিত তাহার কোন সম্পর্ক নাই”।২০

ما من واليلى رعية من المسلمين فيموت وهو غاش لهم الأ

حم الله عليه الج.

“মুসলিম জনগণের জন্য নিয়োগকৃত কোন শাসক তাহাদের সহিত প্রতারণাকারী হিসাবে মারা গেলে আল্লাহ তাহার জন্য জান্নাতে প্রবেশ হারাম করিয়া দেন”।২১

প্রতারণা বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিচিত্র পন্থায় হইতে পারে। কাজে ফাঁকি দেওয়া, মিথ্যা আশ্বাস দিয়া হয়রানি করা, নিজের পদমর্যাদা বাড়াইয়া বলা এবং ইহার দ্বারা কাহাকেও প্রভাবিত করা ইত্যাদি সবই প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত এবং শরীআতে ইহা নিষিদ্ধ।

আত্মসাৎ বা আমানতের খেয়ানত একটি মারাত্মক অন্যায়। কুরআন মজীদে অত্যন্ত জোরের সহিত আমানত রক্ষা করা এবং আত্মসাৎ না করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে।

يائها الذين أموا لأتوا الله والرسول وتقنوا أنتم

وانتم تعلمون .

“হে মুমিনগণ! তোমরা জ্ঞাতসারে আল্লাহ ও রাসূলের সহিত বিশ্বাস ভংগ করিও না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও না” (সূরা আনফাল : ২৭)।

৩৯১

وانما تخافين من قوم خيانه انبذ اليهم على سواء ط ان الله لا

حي الخائنين .

“যদি তুমি কোন সম্প্রদায়ের বিশ্বাসভঙ্গের আশংকা কর তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথারীতি বাতিল করিবে। আল্লাহ বিশ্বাসভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না”(সূরা আনফাল : ৫৮)।

মহানবী (সা) বলেন :

لا ايمان لمن لا أمانة له .

“যে ব্যক্তি আমানতের খেয়ানত করে তাহার ঈমান নাই”।২২ সরকারের যে কোন সম্পদ, যে কোন নির্দেশ এবং যে কোন তথ্য সরকারী কর্মচারীর নিকট আমানত হিসাবে গণ্য এবং এই আমানত রক্ষা করা তাহার জন্য বাধ্যকর। সম্পদ আত্মসাৎ করিয়া, নির্দেশ অমান্য করিয়া এবং তথ্য পাচার করিয়া কোন কর্মচারী বিশ্বাসভঙ্গ করিলে সে অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হইবে। উপরে উদ্ধৃত আয়াত ও হাদীসে একই সঙ্গে আমানতের খেয়ানত অর্থাৎ আত্মসাৎ ও প্রতারণা উভয়ই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হইয়াছে।

কর্মচারী তাহার কার্যব্যাপদেশে কোন ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে কোনরূপ অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করিতে পারিবেন না। এই জাতীয় অন্যায় সুবিধা গ্রহণ উৎকোচ বা ঘুষ হিসাবে গণ্য এবং ইহা শরীআতে নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। কুরআন মজীদে পারোক্ষভাবে এই জাতীয় অবৈধ লেনদেনের নিন্দা করা হইয়াছে।

سمعون للكذب أون للسحت .

“তাহারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত” (সূরা মাইদা : ৪২)।

ان واكلهم السحت

وترى كثيرا منهم يسارع

طلبئس ما كانوا يعملون .

“তুমি তাহাদের অনেককেই পাপকাজে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর দেখিবে। তাহারা যাহা করে তাহা কতই নিকৃষ্ট” (সূরা মাইদা : ৬২)।

لولا يهم البنيون والأخبارعن قولهم الأثم وأكلهم السحت ط

لبس ما كانوا يصنعون .

৩৯২

“রিব্বী ও পুরহিতগণ কেন তাহাদেরকে পাপের কথা বলিতে এবং হারাম মাল ভক্ষণ হইতে বিরত রাখে না? তাহারা যাহা করে তাহা কতই না নিকৃষ্ট” (সূরা মাইদা : ৬৩)।

একদল তাফসীরকার বলেন, “অবৈধ ভক্ষণ” (L.) দ্বারা ঘুষ বুঝানো হইয়াছে। ২৩ ঘুষ নিষিদ্ধ হওয়ার অনুকূলে ফকীহগণও উপরোক্ত আয়াত পেশ করিয়াছেন। ঘুষ নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে মহানবী (সা)-এর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান রহিয়াছে। তিনি বলেন?

الراشي والمرتشی كهما في النار .

“উৎকোচদাতা ও উৎকোচ গ্রহণকারী উভয়ে দোযখে যাইবে” ২৪

لعنة الله على الراشي والمرتشي في الحكم.

“রাষ্ট্রীয় বা সরকারী ব্যাপারে যে ব্যক্তি ঘুষ দেয় এবং যে ব্যক্তি ঘুষ নেয় নাহাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত”।

لعن رسول الله له الراشي والمرتشي والرائش .

“ঘুষদাতা, ঘুষগ্রহীতা ও ঘুষের দালালকে রাসূলুল্লাহ (সা) অভিশাপ দিয়াছেন” (আহমাদ, ৫খ, পৃ. ২৭৯, নং ২২৭৬২)।

রাসূলুল্লাহ (সা) আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা (রা)-কে খায়বারের খেজুর বাগানের উৎপাদিত ফল অনুমানে নির্ধারণ করিয়া উহার খাজনার পরিমাণ স্থির করার জন্য তথায় প্রেরণ করেন। ইয়াহূদীরা তাহার সম্মুখে কিছু মাল ঘুষস্বরূপ উপস্থিত করে। ইহা দেখিয়া তাহার সঙ্গী সাওবান (রা) বলেন, তোমরা যে ঘুষ পেশ করিয়াছ তাহা হারাম। আমরা কিছুতেই তাহা গ্রহণ করিব না।২৬

عن عبد الله بن عمرو قال لعن رسول الله صلى الله عليه

وسلم الراشي والمرتشی .

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা) ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতাকে অভিসম্পাত করিয়াছেন।”২৭

من استعملناه على عمل فرزقناه رزقا فما أخذه بعد ذلك

• lol 5 

৩৯৩

“আমরা কোন ব্যক্তিকে সরকারী কার্যে নিয়োগ করার পর তাহার জন্য বেতন নির্ধারণ করিয়া দিলে পর সে উহার অতিরিক্ত যাহা গ্রহণ করে তাহা আত্মসাস্কৃত মাল হিসাবে গণ্য”। ২৮

একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) এক মর্মস্পর্শী ভাষায় সরকারী কর্মচারীদেরকে সতর্ক করিয়া দিয়া বলেন :

لا ألفين أحدكم يوم القيامة على رقبته شاة لهائقاء على رقبته فرس له حمحمة يقول يارسول الله أغثنى فأقول لا أملك لك شيئا قد أبلغت وعلى رقبته بعير له غاء يقول يا رسول الله أعثنی فاقول لا أملك شيئا قد أبلغك وعلى رقبته صامت يقول یارسول الله أغثنی فاقول لا أملك لك شيئا قد أبلغتك وعلى رقبته رقاع تخفق فيقول يا رسول الله اغثنى فاقول لا أملك لك شيئا

aliL “আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের কাহাকেও এমন অবস্থায় দেখিতে চাহি না যে, সে তাহার ঘাড়ে একটি চিত্তাররত বকরী অথবা একটি হ্রেসারত ছােড়া বহন করিবে এবং বলিবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে (এই বিপদ হইতে) উদ্ধার করুন। তখন আমি বলিব, আমি তোমার জন্য কিছুই করিতে পারিব না। আমি তো ইতিপূর্বেই তোমার নিকট আল্লাহর বিধান পৌছাইয়া দিয়াছি। আমি তোমাদের কাহাকেও এমন অবস্থায় দেখিতে চাহি না যে, সে তাহার ঘাড়ে একটি চিত্তাররত উট বহন করিবে এবং বলিবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে (এই বিপদ হইতে) উদ্ধার করুন। তখন আমি বলিব, আমি তোমার জন্য কিছুই করিতে পারিব না। আমি তো ইতিপূর্বেই তোমার নিকট আল্লাহর বিধান পৌছাইয়া দিয়াছি। আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের কাহাকেও এমন অবস্থায় দেখিতে চাহি না যে, সে তাহার ঘাড়ে সম্পদের বােঝা বহন করিবে এবং বলিবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে (এই বিপদ হইতে) উদ্ধার করুন। তখন আমি বলিব, আমি তোমার জন্য কিছুই করিতে পারিব না। আমি তো তোমার নিকট আল্লাহর বিধান পৌছাইয়া দিয়াছি। তোমাদের কোন ব্যক্তি তাহার ঘাড়ে কাপড়ের গাঁট বহন করিবে এবং বাতাসে তাহার ঘাড়ের কাপড় উড়িতে থাকিবে। সে বলিবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বিপদমুক্ত করুন। আমি বলিব, আমি তোমার জন্য কিছুই করিতে পারিব

। আমি তো তোমার নিকট আল্লাহর বিধান পৌছাইয়াছিলাম”।

৩৯৪

কারকারাহ নামক এক ব্যক্তিকে (যুদ্ধক্ষেত্রে) নবী (সা)-এর মালপত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করা হইয়াছিল। সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন : সে দোযখবাসী হইবে। লোকেরা খোঁজ লইয়া জানিতে পারিল যে, সে গনীমাতের (সরকারী) মাল হইতে একটি আবা (লম্বা জুব্বা বিশেষ) আত্মসাৎ করিয়াছে।

عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه

وسلم لعنه الله على الراشي والمرتشي والرائش .

“আবদুল্লাহ্ ইবন আমর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন। উৎকোচদাতা, উৎকোচ প্রদানকারী ও এতদুভয়ের মধ্যকার দালালের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত”।৩২।

‘নিষিদ্ধ জিনিস গ্রহণ’ বলিতে মাদক বা অনুরূপ কোন হারাম বস্তু গলাধকরণ বা উহার আদান-প্রদান ইত্যাদির সহিত জড়িত হওয়া বুঝায়। শরীআতে যে বস্তু হারাম ঘোষিত হইয়াছে তাহা গ্রহণ করা হারাম বিধায় উহা একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য। কর্মচারী এইরূপ কোন কাজে জড়িত হইলে তাহা তাহার অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হইবে।

দায়িত্বে অবহেলা বা ফাঁকি দেওয়া আমানতের খেয়ানত এবং কর্মচারীর কর্তব্যপরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও নিয়োগ চুক্তির পরিপন্থী কাজ। কর্মচারী তাহার নিয়োগ লাভের চুক্তিপত্রে বিশ্বস্ততার সহিত যথাযথভাবে তাহার দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করিয়াছে। কর্মচারী দায়িত্বে অবহেলা ও ফাঁকির মাধ্যমে তাহার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী আচরণ করিলে তাহা পাপাচার বলিয়া গণ্য হইবে। মহান আল্লাহ বলেন :

وأوفوا بالعهد ان العهد كان مسؤ .

“তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন কর, প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হইবে” (সূরা ইসরাঈল : ৩৪)।

عن معقل بن يسار قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ابنما وال ولی من أمر المسلمين شيئا لم ينصح لهم ولم يجد لهم نصحه وجهده لنفسه كبه الله على وجهه

في النار –

৩৯৫

“মাকিল ইবন ইয়াসার (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হইল, অতঃপর সে তাহাদের কল্যাণ ও স্বার্থের জন্য সেই ধরনের চেষ্টা করে নাই, যেই ধরনের চেষ্টা সে নিজের কল্যাণ ও স্বার্থের জন্য করে, আল্লাহ তাহাকে অধঃমুখে দোযখে নিক্ষেপ করিবেন”।৩২

রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতিশ্রুতি ভংগকারীকে বেদীন

। এবং প্রতিশ্রুতি ভংগ করাকে মোনাফিকের চরিত্র বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন।

• ১১ _AL 15….. 5 62aula যদিও কোন ব্যক্তি আমানতের খেয়ানত করিয়া ঈমানচ্যুত হয় না কিন্তু খেয়ানত অর্থাৎ আত্মসাৎ যে এক মারাত্মক কবীরা গুনাহ তাহা উপরোক্ত হাদীসের ভাষা হইতে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলেন :

.

يأيها الناس من عمل منكم لنا على عمل قمنا منه مخيطا فما فوقه فهو غل ياتي به يوم القيامة فقام رجل من الأنصار أسو؛ فقال يارسول الله أقبل عتي عمل قال وما ذلك قال سمعتك تقول كذا وكذا قال وأنا أقول ذلك من استعملناه على عمل قليات بقليله أو كثيره فما أوتي منه أخ وماهي عنه انتهى .

“হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি আমাদের সরকারের কোন পদে নিয়োজিত হইল, অতঃপর একটি সুই বা উহার অধিক কিছু গোপনে আত্মসাৎ করিল, সে চোর, আত্মসাৎকারী। সে কিয়ামতের দিন উহাসহ হাযির হইবে। আনসার সম্প্রদায়ের এক কৃষ্ণকায় ব্যক্তি উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার নিকট হইতে আপনার (প্রদত্ত) পদ ফিরাইয়া নিন। তিনি বলেন : কি জন্য? আনসারী বলেন, আমি আপনাকে এই এই কথা বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন : আমি তো এই কথা বলিয়াছি যে, আমরা কোন ব্যক্তিকে কোন পদে নিয়োগ করিলে সে সরকারী খাতে কম-বেশি যাহা আয় করিবে তাহার পুরাটাই সরকারী তহবিলে জমা দিবে। অতঃপর তাহা হইতে তাহাকে কিছু দেওয়া হইলে সে তাহা গ্রহণ করিবে, আর না দেওয়া হইলে বিরত থাকিবে”।৪

عن معاذ بن جبل قال بعثني رسول الله صلى الله عليه وسام الى اليمن فلما سرت أرسل فى أثرى فترددت فقال أتدرى لم بعثت

৩৯৬

اليك لا تصيب شيئا بغير انني فانه أول من يغثل يات بما نمل يوم القيامة لهذا دعوتك وامض لعملك .

“মুআয ইবন জাবাল (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে ইয়ামনে প্রেরণ করিলেন। আমি রওয়ানা হইয়া গেলে আমাকে ডাকিয়া আনার জন্য তিনি আমার পিছনে একটি লোক পাঠাইলেন। আমাকে ফিরাইয়া আনার পর রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেনঃ তুমি কি জান আমি কেন তোমাকে ফিরাইয়া আনার জন্য লোক পাঠাইয়াছি? আমার অনুমোদন ব্যতীত (জনগণের নিকট হইতে অতিরিক্ত কিছু) গ্রহণ করিবে না। গ্রহণ করিলে তাহা আত্মসাৎ হিসাবে গণ্য হইবে। কেহ আত্মসাৎ করিলে সে যাহা আত্মসাৎ করিয়াছে কিয়ামতের দিন উহাসহ উপস্থিত হইবে”।

শেষের বক্তব্যটুকু (“কেহ আত্মসাৎ করিলে…উপস্থিত হইবে”) কুরআনের আয়াতের অংশবিশেষ (দ্র. সূরা আল ইমরান : ১৬১)। উৎকোচ, আত্মসাৎ, প্রতারণা ও অনুরূপ অবৈধ পন্থায় উপার্জিত মালের মধ্যে কোন কল্যাণ নিহিত নাই। উহা দ্বারা কোন পুণ্য কর্ম করা হইলেও তাহা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নহে। মহানবী (সা) বলেনঃ

يكسب عبد مال حرام قيصدق منه فيقبل منه ولا ينفق منه

فيبارك له فيه ولا يترك خلف ظهره الأ كان يراه الى النار ان الله لا يمحو السيئ بالی

ولكن يمحو السيئ بالحسن ان الخبيث لا

• ২০১১ “কোন ব্যক্তি হারাম পন্থায় উপার্জন করিয়া তাহা দ্বারা দান-খয়রাত করিলে তাহা (আল্লাহ্র নিকট) কবুল হইবে না, উহা স্বীয় প্রয়োজনে ব্যয় করিলে তাহাতে বরকত হইবে না এবং তাহা তাহার ওয়ারিসগণের জন্য রাখিয়া গেলে তাহা তাহার জন্য দোযখের পাথেয় হইবে। আল্লাহ তাআলা মন্দ দ্বারা মন্দ দূরীভূত করেন না, ভালোর দ্বারা মন্দ দূর করেন। মন্দ মন্দকে দূরীভূত করিতে পারে না”।৬

يدخل الجنة لحم نبت من السحت و تحمرتبت من

السحت كانت النار أولى به .

“যেই দেহের গোশত হারাম (পন্থায় উপার্জিত) মালে গঠিত সেই দেহ বেহেশতে প্রবেশ করিবে না। হারাম (পন্থায় উপার্জিত) মালে বর্ধিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী”।৩৭

৩৯৭

لا يدخل الجنة جسد غذي بالحرام .

“যেই দেহ হারাম (পন্থায় উপার্জিত মাল দ্বারা) প্রতিপালিত হইয়াছে সেই দেহ জান্নাতে প্রবেশ করিবে না”।

عن ابن عمر قال من اشتری ویا بعشرة دراهم وفيه درهم حرام لن يقبل الله تعالی صلوته ما دام عليه ثم أدخل اصبعيه في أيه وقال صتا ان لم يكن النبى صلى الله عليه وسلم

a. “আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলেন, যেই ব্যক্তি দশ দিরহামে একটি কাপড় খরিদ করিয়াছে, যাহার একটি দিরহাম হারাম (পন্থায় উপার্জিত) ছিল, আল্লাহ তাআলা তাহার নামায কবুল করিবেন না, যাবত উক্ত কাপড় তাহার পরিধানে থাকিবে। ইবন উমার (রা) উপরোক্ত কথা বলার পর তাঁহার দুই কানে দুইটি আঙ্গুল ঢুকাইয়া বলিলেন, আমি উপরোক্ত কথা নবী (সা)-কে বলিতে শুনিয়া না থাকিলে আমার এই কর্ণদ্বয় বধির হইয়া যাইবে”।৩৯

দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা বা কাজে ফাঁকি দেওয়া চরম অন্যায় এবং চাকুরিবিধি তথা চাকুরির শর্তাবলীর পরিপন্থী কাজ। আল্লামা ইউসুফ আল-কারদাবী তাহার “আল-হালাল ওয়াল-হারাম ফিল-ইসলাম” গ্রন্থে বলেন, কাজ করার সামর্থ্য ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাজ না করিয়া অলস বসিয়া থাকা ইসলামী শরীআতে হারাম। তিনি তাঁহার মতের সমর্থনে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি হাদীস পেশ করিয়াছেন, যাহাতে তিনি কর্মক্ষম ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

বস্তুত কাজে অবহেলা ও ফঁাকি আমানতের খেয়ানত ও চুক্তির পরিপন্থী আচরণ হিসাবে গণ্য। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :

المسلمون على شروطهم.

“মুসলমানরা তাহাদের চুক্তির শর্তাবলী মান্য করিতে বাধ্য”।৪০ * কাজের পারিতোষিক হিসাবে কর্মাচারীকে বেতন-ভাতা প্রদান করা হইয়া থাকে। যদি তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেন বা ফাকিবাজি করেন তবে তিনি কাজ না করিয়া অন্যায় আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করিয়াছেন। মহানবী (সা) বলেন :

৩৯৮

مامن أمير يلي أمر المسلمين ثم لا يجد لهم ولا ينصح الأ

لم يدخل معهم الج.

“মুসলিম রাষ্ট্রের কোন পদাধিকারী নিজের পদের দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা না করিলে এবং নিষ্ঠার সহিত কাজ না করিলে সে কখনও মুসলমানদের সহিত বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারিবে না”।৪১

অনুরূপভাবে সংগত কারণ ব্যতীত বিনা ছুটিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিতিও একদিকে দায়িত্বে অবহেলা ও ফাঁকির পর্যায়ভুক্ত এবং অপরদিকে কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্যহীনতা প্রকাশ পায়, যাহা কর্মচারীর সদাচরণের পরিপন্থী। কোন কর্মচারীর বিনা নোটিশে অনুপস্থিতি তাহার একার জন্যই ক্ষতিকর নহে, বরং তাহার সহিত

সংশ্লিষ্ট অপরাপর কর্মচারীর দায়িত্ব পালনেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

কর্মচারী অফিস সংশ্লিষ্টহীন কোন উত্তম কাজে অংশগ্রহণ করিতে পারে। যেমন তাহার বসতি এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে স্বেচাসেবী হিসাবে সেবা প্রদান তাহার জন্য নিষিদ্ধ নহে, বরং পুণ্যের কাজ। কিন্তু তাহার এই জাতীয় কাজে জড়িত হওয়ার বিষয়ে সরকার তাহার সুবিবেচনা অনুযায়ী তাহার উপর ক্ষেত্রবিশেষে যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করিতে পারে। যেমন আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সরকারী কর্মচারীকে ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হইতে নিষেধ করিয়াছেন।

কর্মচারী সরকারের একজন প্রতিনিধি। সেই হিসাবে তাহার উত্তম আচরণে যেমন সরকারের সুনাম বৃদ্ধি পাইতে পারে, অন্ধ্রপ তাহার অসদাচরণে সরকারের দুর্নামও হইতে পারে। এমতাবস্থায় সর্বক্ষেত্রে তাহার কার্যকলাপ দ্রতা ও সৌজন্যতার দ্বারা সুশোভিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি যদি ইহার বিপরীত কাজ করেন এবং তাহা কর্তৃপক্ষের গোচরিভূত করা হয় তবে তিনি তাহার অফিস বহির্ভূত কাজের জন্য দায়ী হইবেন। যেমন কোন ব্যক্তির সহিত অভদ্র ব্যবহার, সরকারী কর্মচারী পরিচয়ে কোন স্বার্থ উদ্ধার বা আইন বিরোধী কোন কাজে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।

ইসলামী শরীআত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে বাধা দেয় না বা তাহারা নিজ নিজ ধর্ম পালন না করিলে শাস্তির ব্যবস্থা করে না। কিন্তু মুসলিম কর্মচারী বাধ্যতামূলক ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান পালন না করিলে সরকার তাহাকে দায়ী করিতে পারেন। যেমন নামায না পড়া, রোযা ভঙ্গ করা, যাকাত না দেওয়া, নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। এইসব ক্ষেত্রে সরকার যেমন মুসলিম জনগণের উপর কর্তৃত্ব খাটাইতে পারে, অন্ধ্রপ কর্মচারীর উপরও কর্তৃত্ব খাটাইতে পারে।

৩৯৯

মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তাহাদের দায়িত্ব সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

الذين ان منهم في الأرض أقاموا الصلوة واوا الكوة وامروا

بالمعروف ونهوا عن المنكر .

“আমি তাহাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করিলে তাহারা নামায কায়েম করিবে, যাকাত প্রদান করিবে, সকার্যের নির্দেশ দিবে এবং অসৎ কার্য নিষেধ করিবে” (সূরা হজ্জ : ৪১)।

উপরোক্ত আয়াতে নামায কায়েম, যাকাত প্রদান, ন্যায়সংগত কাজের প্রসার এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসাবে নির্ধারণ করা হইয়াছে। অতএব কোন সরকারী কর্মচারী শরীআতের বাধ্যতামূলক বিধান লংঘন করিলে তাহা তাহার অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হইবে এবং সে ক্ষেত্রে সরকার অবশ্যই তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।

ইতিপূর্বে (৯৯৬) ধারার অধীনে বলা হইয়াছে যে, কর্মচারীকে আইন বিরুদ্ধ কোন কাজ করিতে বাধ্য করা যাইবে না। যদি কোন কর্মচারী অপর কর্মচারীকে এই ধরনের কোন কাজ করিতে বাধ্য করে এবং সে উক্ত কাজ করিলে তাহা প্রথমোক্ত কর্মচারীর অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হইবে। আর শেষোক্ত ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় এই জাতীয় নির্দেশ পালন করে এবং বল প্রয়োগ প্রমাণিত না হয় তবে সেও অসদাচরণের দায়ে দায়ী হইবে।

উপরোক্ত ধারাসমূহে বর্ণিত অসদাচরণের জন্য উহার মাত্রা অনুযায়ী কর্মচারীর শাস্তির ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। চাকুরিচ্যুতি, জরিমানা, সতর্কিকরণ, তিরস্কার বা বেতন কর্তন করা যাইতে পারে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আদালতে সোপর্দ করাও যাইতে পারে।

দুর্ব্যবহার, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করা, দায়িত্বে অবহেলা বা ফাঁকি, বিনা ছুটিতে অনুপস্থিতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রথমবারের মত কর্মচারীকে সতর্ক করা যাইতে পারে। সাময়িকভাবে বেতন প্রদান বন্ধ রাখা যাইতে পারে বা সংশোধনমূলক অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করা যাইতে পারে। প্রতারণা, আত্মসাৎ ও উৎকোচ গ্রহণের ক্ষেত্রে চাকুরিচ্যুত করা যাইতে পারে। ফকীহগণ ঘুষ গ্রহণের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে চাকুরিচ্যুতির সুপারিশ করিয়াছেন। ৪২ নিষিদ্ধ জিনিস গ্রহণ, যেমন মাদক গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান আছে। অলসতাবশত শরীআতের কোন

৪০০

অলংঘনীয় বিধান পালনে শৈথিল্যের ক্ষেত্রে হানাফী ফকীহগণ সংশোধনমূলক কয়েদের সুপারিশ করিয়াছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে দুঃসাহসিকতার সাথে শরীআতের কোন অলংঘনীয় বিধান উপেক্ষা করার ক্ষেত্রে কঠোরতর শাস্তির সুপারিশ করা হইয়াছে।

ধারা-৯৯৮

কর্মচারীর যোগ্যতা কর্মচারীকে – (ক) সৎ ও বিশ্বস্ত হইতে হইবে; (খ) দৈহিকভাবে সবল হইতে হইবে;

(গ) সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অধিকারী হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

কুরআন মজীদে কর্মচারীর যোগ্যতা সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে তিনটি শর্ত পাওয়া যায়। সততা ও বিশ্বস্ততা, দৈহিক শক্তি এবং জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি। শুআয়ব (আ) ও মূসা (আ)-এর ঘটনা প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন।

ان خير من استأجرت القوى الأمين .

“তোমার কর্মে নিয়োগের জন্য শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিই উত্তম”

(সূরা কাসাস : ২৬)। উপরোক্ত আয়াতে কর্মচারীর অতি প্রয়োজনীয় দুইটি যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হইয়াছে : দৈহিক শক্তি ও বিশ্বস্ততা। বস্তুত যে কোন কাজ করিতে হইলে সর্বপ্রথম দৈহিক শক্তির প্রয়োজন হয়। কোন ব্যক্তির দৈহিক শক্তি না থাকিলে সে স্বস্থান হইতেই নড়িতে পারিবে না, অতঃপর কাজ করিবে কিভাবে। দ্বিতীয়ত, কর্মচারী বিশ্বস্ত হইলে সে দায়িত্ব পালনেও মনোেযোগী হইবে, যত্ন সহকারে কর্ম সম্পাদন করিবে এবং লেনদেনে সততার পরিচয় দিবে। আল্লাহ তাআলা হযরত ইউসুফ (আ)-এর জবানীতে কুরআন মজীদে বলেন

قال اجعلني على خزائن الأرض اني حفيظ عليم”

“ইউসুফ বলিল, আপনি আমাকে দেশের ধনসম্পদের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন— আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও সুবিজ্ঞ”(সূরা ইউসুফ : ৫৫)।

,

৪০১

উপরোক্ত আয়াতে কর্মচারীর দুইটি অতি প্রয়োজনীয় যোগ্যতার কথা ব্যক্ত হইয়াছে ও বিশ্বস্ততা ও জ্ঞান। দৈহিক শক্তির পরেই সংশ্লিষ্ট কর্মের জন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের। জ্ঞান বা প্রজ্ঞাই মানুষের পথনির্দেশক। যে কোন কাজের জন্য বাস্তব জ্ঞানের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য-তাহা হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমেই অর্জিত হউক অথবা বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের মাধ্যমেই অর্জিত হউক।

দাউদ (আ)-এর সমকালীন বনী ইসরাঈলগণ তাহার নিকট তাহাদের জন্য একজন শাসক নিয়োগের আবেদন করিলে আল্লাহ তাআলা তাঁহার নবীর মারফত তালুতের নাম ঘোষণা করেন। ইহাতে তাহারা আপত্তি উত্থাপন করিয়া বলে যে, সে একজন দরিদ্র লোক, তাহাকে পর্যাপ্ত ধন-সম্পদ দান করা হয় নাই। অতএব সে শাসক হওয়ার যোগ্য নহে। ইহার উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেন।

ان الله اصطف عليكم وزاده بشط في العلم والجسم .

“আল্লাহই তাহাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করিয়াছেন এবং তিনি তাহাকে জ্ঞানে ও দৈহিক শক্তিতে সমৃদ্ধ করিয়াছেন” (সূরা বাকারা : ২৪৭)।

উপরোক্ত আয়াতেও আবশ্যকীয় দুইটি যোগ্যতার কথা উল্লেখিত হইয়াছে? জ্ঞান ও দৈহিক শক্তি। বস্তুত দৈহিক সামর্থ্য ও জ্ঞানই হইল সরকারী কর্মে নিয়োগ লাভের সর্বপ্রথম যোগ্যতা। ইহার পর অন্যান্য আবশ্যকীয় মোগ্যতা বিবেচনা করিতে হইবে। যোগ্য ব্যক্তিকে সরকারী পদে নিয়োগ বাঞ্ছনীয়। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

ان الله يأمركم أن تؤدوا الأمانات إلى أهلها .

“আমানত উহার হকদারকে প্রত্যর্পণ করিতে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিতেছেন” (সূরা নিসা : ৫৮)।

কুরআনের ভাষ্যকারগণের মতে অত্র আয়াতে আমানত’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। যোগ্য ব্যক্তির উপর সরকারী কর্মের দায়িত্ব অর্পণও উহার অন্তর্ভুক্ত। একটি হাদীস হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া যায়। মহানবী (সা) বলেন :

يا أبا ر ا ضعيف وانها أمانة وائها يوم القيامة خزي و

تدامة الأمن أخذ بحقها وادى الذي عليه فيها .

“হে আবু যার! তুমি দুর্বল মানুষ, আর সরকারী পদ একটি আমানত। কিয়ামতের দিন উহা লজ্জা ও অপমানের কারণ হইবে। অবশ্য তাহার জন্য নহে যে পুরাপুরি উহার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিবে”।৪৪

৪০২

রাসূলুল্লাহ (সা)-ও সরকারী কর্মে যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করিয়া বলিয়াছেন যে, ইহার অন্যথা করিলে বিপর্যয় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হইবে। যেমন তিনি বলেন :

اذا وسد الأمر الى غير أهله فانتظر الساعة .

“যখন অযোগ্য ব্যক্তির উপর কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হইবে তখন তুমি কিয়ামতের (মহা প্রলয়ের) অপেক্ষা কর”।৪৩

উপরোক্ত আয়াতসমূহ ও হাদীসের ভাষ্য হইতে অনুধাবন করা যায় যে, সংশ্লিষ্ট কর্মে যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগদান কত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সরকারী পদে যোগ্য কর্মচারী নির্বাচনের জন্য নাগরিকগণের নিকট হইতে দরখাস্ত আহ্বান করা হইয়া থাকে। অতঃপর বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আবেদনকারীগণের মধ্য হইতে যোগ্য কর্মচারী নির্বাচনের যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সরকারী পদে নিয়োগ লাভের প্রার্থনা করিতে নিষেধ করিয়াছেন। যেমন তিনি বলিয়াছেন?

عن أبي موسى قال دخلت على النبي صلى الله عليه وسلم أنا

ورجلان من بني عمي فقال أحدهما يا رسول الله أمرنا على بعض ما ولا الله وقال الاخ مثل ذلك فقال انا والله لأولى على هذا العمل أحدا سئله ولا أحدا حرص عليه وفي رواية لا نستعمل على

. ১at – L. “আবু মূসা (রা) বলেন, আমি আমার দুই চাচাত ভাইসহ নবী (সা)-এর সহিত সাক্ষাত করিলাম। তাহাদের একজন বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে শাসন ক্ষমতার অধিকারী করিয়াছেন তাহার অধীনে আমাকেও কোন এলাকার দায়িত্ব প্রদান করুন। অপরজনও অনুরূপ কথা বলিল। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন : আল্লাহর শপথ! আমরা এই পদে এমন কোন ব্যক্তিকে অবশ্যই নিয়োগ করিব না যে উহা প্রার্থনা করে এবং এমন কোন ব্যক্তিকেও নয় যে উহার জন্য লালায়িত। অপর বর্ণনায় আছে? আমাদের কর্মে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ করিব না

যে উহার আকাঙ্ক্ষা করে”।৪৬।

يا عبد الرحمن بن سمرة لا تسئل الإمارة انك اذا أوتيتها عن

مسئلة وكلت اليها وان أو تيتها عن غير مسئلة أعنت عليها .

৪০৩

“হে আবু আবদুর রহমান ইব্‌ন সামুরা! সরকারী পদ প্রার্থনা করিও না। কেননা চেষ্টা-তদবীর করার পর যদি তাহা তোমাকে দেওয়া হয় তবে তোমাকে উহার হাতে সোপর্দ করা হইবে। আর যদি চেষ্টা তদবীর ব্যতীত তাহা তোমাকে প্রদান করা হয় তবে উহার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হইতে তোমাকে সাহায্য করা হইবে”।৪৭

ان اخوتكم عندنا من طلبه .

“যে ব্যক্তি নিজে তাহা দাবি করে সে-ই আমাদের নিকট সর্বাপেক্ষা বড় খেসানতকারী”।

تجون من خير الناس أشدهم گاهه لهذا الأمر حتى يقع فيه .

“যাহারা এই (সরকারী) পদকে ভীষণভাবে অপছন্দ করে, অতঃপর যখন তাহাতে সংশ্লিষ্ট হয় তখন তোমরা তাহাদেরকে সর্বোত্তম লোক হিসাবে দেখিতে পাইবে”।

উপরে উল্লেখিত হাদীসসমূহ হইতে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সরকারী পদ প্রার্থনা বা দাবি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। অপরদিকে আল্লাহর কিতাবে ও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসে রাষ্ট্ৰীয় পদসমূহে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে। বস্তুত কর্মচারীগণ যোগ্য, ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত হইলেই একটি সফল প্রশাসন গড়িয়া তোলা সম্ভব। উপরোক্ত হাদীসমূহে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, নিজে উদ্যোগী হইয়া পদ প্রার্থনা করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। কিন্তু যেখানে সরকার কর্মচারী নিয়োগের জন্য নাগরিকদের নিকট হইতে দরখাস্ত আহ্বান করে সেই ক্ষেত্রে উক্ত পদে নিয়োগ লাভের আশায় দরখাস্ত করিতে নিষেধ করা হয় নাই। অনন্তর মিসর-রাজের নিকট হযরত ইউসুফ (আ)-এর সরকারী পদ দাবি সম্পর্কিত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে তাফসীরকারগণ বলেন, উপরোক্ত আয়াত হইতে প্রমাণিত হয় যে, যদি কোন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস থাকে যে, সে রাষ্ট্রের কোন বিশেষ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করিতে সক্ষম হইবে, তখন তাহার যোগ্যতার কথা প্রকাশ করায় এবং পা প্রার্থনা করায় দোষের কিছু নাই। তবে পদ গ্রহণের উদ্দেশ্য হইতে হইবে জনসেবা, নিজের ভোগবিলাস ও স্বার্থসিদ্ধি কাম্য হইতে পারিবে না।৫০।

অতএব সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য, ভোগবিলাস ও ক্ষমতা দখলের হীন উদ্দেশ্যে পদ প্রার্থনা করিতেই মূলত রাসূলুল্লাহ (সা) নিষেধ করিয়াছেন।

৪০৪

ধারা-৯৯৯ কর্মচারীর সহিত সৌজন্যমূলক ব্যবহার ও সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব।

বণ্টন কর্মচারীর সহিত সৌজন্যমূলক আচরণ করিতে হইবে এবং তাহার উপর তাহার সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব অর্পণ করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

মানুষ হিসাবে যে কোন ব্যক্তি সৌজন্যমূলক ব্যবহার লাভের অধিকারী। সরকারী কর্মচারীও পরস্পরের নিকট দ্র আচরণ লাভের আশা করিতে যে। হযরত শুআইব (আ) হযরত মূসা (আ)-কে নিজের কর্মচারী হিসাবে নিয়োগদানের পর তাহার সহিত ভদ্র ব্যবহারের ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কুরআনের ভাষায় :

وما أريد أن أشق عليك ستجدني ان شاء الله من الصلحين .

“আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাহি না। আল্লাহর মর্জি তুমি আমাকে সদাচারী পাইবে” (সূরা কাসাস ও ২৭)।

কুরআন মজীদে আরও বলা হইয়াছে।

لا يكلف الله نفسا إلا وسعها.

“আল্লাহ কাহারও উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যাহা তাহার সাধ্যাতীত” (সূরা বাকারা : ২৮৬)।

لا يكلف نفس الا وسعها .

“কাহারও উপর তাহার সাধ্যাতীত কার্যভার চাপানো যায় না” (সূরা বাকারা :

২৩৩)।

تكلف الله نفسا الا ما أتها .

“আল্লাহ যাহাকে যে সামর্থ্য দিয়াছেন তদপেক্ষা গুরুতর বােঝা তিনি তাহার উপর চাপান না” (সূরা তালাক : ৭)।

মহানবী (সা)-এর বাণী।

عن عائشة قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا

أمرهم من الأعمال أمرهم بما يطيقون .

৪o৫

আইশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদেরকে তাহাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কোন কাজের আদেশ দিতেন”।৫১।

4. L ik $ ……. .. ..।

قان تكلفتموهم فأعينوهم.

“ইহারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাহাদেরকে তোমাদের অধীন করিয়াছেন… তোমরা তাহাদের উপর এমন দায়িত্বভার চাপাইও না যাহা তাহাদের সামর্থ্যের বাহিরে। যদি তাহাদের উপর এইরূপ দায়িত্বভার অর্পণ কর তবে তোমরা তাহাদের সহযোগিতা কর”।৫২

لقوا من العمل ما تطيقون .

“তোমরা সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ কর” ৫৩

فاذا أمرتكم بشفوا منه ما استطعتم .

“আমি তোমাদেরকে কোন কিছুর আদেশ করিলে তোমরা যথাসাধ্য তাহা পালন কর” ৫৪

ولا يكلف من العمل الأ ما يطيق .

“কাহারও উপর তাহার সামর্থ্যের অধিক কাজ চাপানো যায় না”।৫৫

بايع على السمع والطاعة ثم يقول فيما استطعت .

“মহানবী (সা) (নেতৃআদেশ) শ্ৰবণ উহার আনুগত্য করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিতেন এবং বলিতেন, (তোমরা বল) যতদূর আমার সাধ্যে কুলায়”।৫৬

الخلقوا من العمل ما نگم به طاقه .

“তোমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ কর”।৫৭ অতএব মানুষের উপর তাহার সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব চাপানো যায় না। এই প্রসংগে প্রখ্যাত ইসলামী রাষ্ট্রতত্ত্ববিধ আল্লামা আল-মাওয়ারদী বলেন, “সরকারী পরিদর্শকের কত এই যে, কোন পুরুষ অথবা নারী কর্মচারীর সহিত অন্যায় আচরণ করা হইলে তিনি তাহাদের নিয়োগকর্তা বা দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিবেন এবং তাহাদের সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজ তাহাদের চাপাইতে নিষেধ করিবেন”।৫৮

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার ফারূক (রা) তাঁহার অভ্যাস অনুযায়ী প্রতি শনিবার মদীনার আশেপাশে তদারকী করিতেন এবং কোন ব্যক্তিকে তাহার সামর্থ্যের

৪০৬

অতিরিক্ত কাজে নিয়োজিত অবস্থায় দেখিলে তাহার দায়িত্বের বােঝা লাঘব করিয়া দিতেন।৫৯

ধারা-১০০০

কর্মচারীর জবাবদিহি কর্মচারী তাহার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহি করিতে বাধ্য।

বিশ্লেষণ

কর্মচারীর উপর অর্পিত কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা তাহার কর্তব্য। কর্তব্যে অবহেলা করিলে ইহার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযুক্ত হইবেন এবং কর্তৃপক্ষ তাহার কৈফিয়ত তলব করিতে পারিবে। মহান আল্লাহর বাণী :

وسئل عما كنتم تعملون .

“তোমরা যাহা কর সেই বিষয়ে অবশ্যই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইবে” (সূরা নাহল : ৯৩)।

وأوفوا بالعهد ان المهد كان مسؤ .

“তোমরা তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করিও। কেননা অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হইবে” (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৪)।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন :

الأكلكم راع وكم مشئول عن رعيته الامام على الناس راع وهو مسئول عنه والرجل راع على أهل بيته وهو مسئول عنه …..

. J.:. ২l২, ৫২২। “সাবধান! তোমাদের সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের সকলকেই স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে। ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) জনগণের দায়িত্বশীল এবং তাহাকে উহা সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে। ব্যক্তি তাহার পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল এবং তাহাকে উহার জন্য জবাবদিহি করিতে হইবে….. অতএব তোমাদের সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের সকলকেই উহার জন্য জবাবদিহি করিতে হইবে”।

وانها أمانة وائها يوم القيامة خزي وندامة الأمن أخذ بحقها

واني الذي عليه فيها .

৪০৭

“সরকারী দায়িত্ব একটি আমানত। কিয়ামতের দিন তাহা লজ্জা ও অপমানের কারণ হইবে; অবশ্য সেই ব্যক্তির জন্য নহে যে উহা দায়িত্বানুভূতি সহকারে গ্রহণ করে এবং তাহার উপর অর্পিত কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করে”।৬১

অতএব একজন মুসলিম কর্মচারীর জন্য তাহার দায়িত্ব ও কর্তব্যের জন্য পার্থিব জীবনে প্রথমত কর্তৃপক্ষের নিকট এবং আখেরাতে আল্লাহ লা শারীকা লাহুর নিকট চূড়ান্তভাবে জবাবদিহি করিতে হইবে। জবাবদিহির এই ভয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বহু সাহাবী সরকারী পদ গ্রহণ করেন নাই এবং বহু সাহাবী সরকারী নির্দেশে পদ গ্রহণের পরও বারবার রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট তাহাকে দায়িত্বভার হইতে অব্যাবহিত প্রদানের আবেদন করিতেন।

ধারা-১০০১ কর্মচারী বরখাস্ত, অপসারণ ও পদাবনতি (ক) সরকার কোন সংগত কারণে অথবা ধারা (৯৯৭)-এ বর্ণিত অসদাচরণের কারণে কর্মচারীকে তাহার পদ হইতে অপসারণ, বরখাস্ত বা পদাবনতি প্রদান করিতে পারিবে;

(খ) বরখাস্ত, অপসারণ বা পদাবনতি প্রদানের আদেশের পূর্বে কর্মচারীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে তাহাকে নিজ বক্তব্য পেশের সুযোগ প্রদান করিতে হইবে।

তবে শর্ত থাকে যে, আদালত কর্তৃক দণ্ড প্রদানের কারণে অথবা কারণ দর্শানোর সুযোগদান যুক্তিসংগতভাবে অসম্ভব প্রতীয়মান হইলে অথবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে কারণ দর্শানোর সুযোগদান অসমীচীন প্রতীয়মান হইলে সেই সব ক্ষেত্রে তাহাকে কারণ দর্শানোর সুযোগদানের প্রয়োজন হইবে না।

(গ) কোন কর্মচারীকে তাহার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা নিম্নতর কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত (বর্ধণট), অপসারণ (রণবমশণট) বা পদাবনতি প্রদান (রণঢলডণ) করিতে পারিবে না।

বিশ্লেষণ

ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, সরকার কর্মচারীর অসদাচরণের কারণে তাহার বিভিন্নরূপ শাস্তির ব্যবস্থা করিতে পারে, এমনকি পদচ্যুত বা আদালতে

৪o৮

সোপর্দও করিতে পারে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এবং খােলাফায়ে রাশিদূনের যুগেও এই নীতি কার্যকর ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা) ইবনুল লুতবিয়্যাকে, যাকাত আদায়কালে উপঢৌকন গ্রহণের অপরাধে পদচ্যুত করিয়াছিলেন। উমার ফারূকরা) তাঁহার খিলাফতকালে নুমান ইবন আদী (রা)-কে মায়সান এলাকার কর সংগ্রাহক নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তিনি কিছু কবিতা রচনা করেন এবং তাহাতে মদের উল্লেখ থাকায় খলীফা তাহাকে পদচ্যুত করেন এবং ভবিষ্যতে তাহাকে কোন পদে নিযোগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উমার (রা)-র ভগ্নিপতি কুদামা ইবন মাযউন ছিলেন বাহ্রায়নের শাসনকর্তা। তিনি ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী সাহাবী। তাহার বিরুদ্ধে মদ্যপানের অভিযোগ প্রমাণিত হইলে উমার (রা) তাঁহাকে তাঁহার পদ হইতে অপসারণ করেন এবং অপরাধের শাস্তি প্রদান করেন।

একই খলীফা কর্তৃক বিশ্ববিখ্যাত বীর সেনানী আল্লাহর তরবারি উপাধিতে ভূষিত খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রা)-র পদাবনতি প্রদান ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনা হইয়া আছে।

হযরত উসমান (রা) তাহার খিলাফতকালে সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)-কে কুফার গভর্ণরের পদ হইতে, আবু মূসা আশআরী (রা)-কে বসরার গভর্ণরের পদ হইতে এবং আমর ইবনুল আস (রা)-কে মিসরের গভর্ণরের পদ হইতে বরখাস্ত করেন।

ধারা-১০০২

কর্মচারীদের পর্যবেক্ষণ কর্মচারীদের কাজকর্ম তদারকির জন্য একটি পর্যবেক্ষণ বিভাগ থাকিবে।

বিশ্লেষণ

ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হইতেছে জনগণের কল্যাণ সাধন এবং পূর্ণ আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা সহকারে আল্লাহর বিধানসমূহ পুরাপুরি কার্যকর করা। তাই এই উদ্দেশ্যে নিয়োজিত জনগণের ধন-ভাণ্ডার হইতে নিয়মিত বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত লোকেরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করিতেছে কিনা সেদিকে অবশ্যই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, ইসলামের বিশেষ চেষ্টা থাকে সরকারী দায়িত্বপূর্ণ পদে

৪০৯

সর্বাধিক যোগ্যতা সম্পন্ন লোকদের নিয়োগ, যেন জনগণ সর্বাধিক উন্নত মানের খেদমত লাভ করিতে পারে। ইসলামের এই লক্ষ্য পূর্ণমাত্রায় অর্জিত হইতেছে কিনা, কর্মচারীবৃন্দ সততা, নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা সহকারে দায়িত্ব পালন করিতেছে কিনা, জনগণের সহিত আম্‌দর্শিক ও মানবিক আচরণ করিতেছে কিনা তাহাও সরকারী কর্তৃপক্ষকে তীক্ষভাবে দেখিতে হইবে। এই কারণে রাসূলুল্লাহ (সা) যখনই বাহিরে কোথাও কোন বাহিনী প্রেরণ করিতেন তখন তিনি তাহার সহিত এমন সব বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য লোক পাঠাইতেন যাহারা বাহিনীর লোকদের খবরাখবর জানিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) জানাইতেন d we • Lai) (+ w, ১১; (আল-হুকুমাতুল ইসলামিয়া, পৃ. ৬০২)। হযরত আলী (রা) খলীফাতুল মুসলিমীন হিসাবে মালিক আশরকে লিখিত পত্রে নির্দেশ দিয়াছিলেন যে, তিনি যেন তাহার নিয়োজিত কর্মচারীদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখিবার জন্য তোক নিয়োগ করেন। এই পর্যায়ে তাহার নির্দেশ ছিল?

وابعث العيون من أهل الصدق والوفاء عليهم فان تعاهدك في السر الامورهم حدوة لهم على استعمال الأمانة والرفق بالرعية وتنفظ من الاعون فان احد منهم بسط يديه الى خيانة اجتمعت بها:ليه عندك اخبار عيونك اكتفيت بذالك شاهدا فبسطت عليه العقوبة في بدنه واخذته بما إصاب من عمله ثم نصبته بمقاما المذلة وسمته بالحيانة قلدته عار التهمة (نهج البلاغة قسم

• (or el! :</ “সরকারী কর্মচারীদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখিবার জন্য সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত গোয়েন্দা নিয়োগ কর। তাহারা যদি গোপনে তাহাদের ব্যাপারাদি তোমাকে জানাইতে থাকে, তাহা হইলে আমানত রক্ষা ও জনগণের প্রতি দয়ার্দ্রতা প্রদর্শনে তাহারা সতর্ক ও সক্রিয় হইবে। ইহাদের সহযোগিতায় তুমিও রক্ষা পাইবে। তোমার নিকট যদি এমন খরব পৌছায় যে, তাহারা বিশ্বাস ভঙ্গের উদ্যোগ লইতেছে, তাহা হইলে তোমার নিযুক্ত খবরদাতা লোকদেরকে সেজন্য সাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করিবে। পরে তাহাদের উপর শাস্তি প্রয়োগ করিবে এবং তাহারা কাজের যে ক্ষতিসাধন করিয়াছে তাহা পূরণ করিতে পারিবে। পরে অপরাধীদের লাঞ্ছিত করিবে বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে দায়ী করিয়া, এক। লজ্জা তাহাদের গলায় ঝুলাইয়া দিবে” (নাহজুল বালাগা, পত্র নম্বর ৫৩)।

৪১০

কর্মচারীদের কাজকর্ম তদারকি করা সম্পর্কে হযরত আলী (রা) তাহার অধীনস্ত কর্মকর্তা গভর্নর মালিক ইবন হারিসকে উদ্দেশ্য করিয়া লিখিয়া ছিলেনঃ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা বা প্রশাসকবৃন্দের কাজকর্ম দেখাশুনরার দায়িত্ব তোমার, তাহাদের চরিত্র, যোগ্যতা ও আচরণ ভাল করিয়া পরীক্ষা করিবার পর তাহাদেরকে নিযুক্ত করা উচিত। পরীক্ষার ভিত্তিতে এবং কোন ধরনের পক্ষপাত ও অপরের প্রভাবমুক্ত থাকিয়া তাহাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। তোমার নিযুক্ত কর্মচারীদেরকে ভাল এবং পর্যাপ্ত বেতন দিও যেন তাহারা নৈতিক অধঃপতনের দিকে ঝুঁকিয়া না পড়ে। ইহা তাহাদেরকে নিজেদের উপর আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং তাহারা যে তহবিলের যিম্মাদার তাহার উপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করিতে সমর্থ করিবে। পর্যাপ্ত ভাতা লাভের পরেও যদি তাহারা সরকারী দায়িত্ব যথাযথ পালন না করে, নিজেদেরকে অসাধু হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে তাহা হইলে তুমি তাহাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি সংগত কারণ পাইবে। সুতরাং তাহাদের কাজের পদ্ধতি ও খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিবে এবং তাহাদের নিযুক্তির পর পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করিবার জন্য তোমার সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করা উচিত। যদি তাহারা জানে যে, তাহাদের কার্যাবলী গোপনে দেখা হইতেছে তাহা হইলে তাহারা অসাধুতা ও অসৎকর্ম হইতে বিরত থাকিবে। জনগণের প্রতি আন্তরিকতাপূর্ণভাবে নিবেদিত হও এবং তোমার সরকারকে অসাধু কর্মকর্তাদের অনুপ্রবেশ হইতে রক্ষা কর। ইহার পর যদি তুমি কোন কর্মকর্তাকে অসৎ দেখিতে পাও এবং গুপ্তচররাও যদি তাহার সমর্থন দেয় তাহা হইলে তুমি অবশ্যই তাহাকে শাস্তি দিবে।

ধারা-১০০৩

তদন্ত বিভাগ প্রতিষ্ঠা (ক) কর্মচারীদের কাজকর্ম তদারকি করিবার জন্য একটি তদন্ত বিভাগ থাকিবে।

(খ) ঘটনা তদন্তের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা যায়।

বিশ্লেষণ

কর্মচারীদের কাজকর্ম তদারকির জন্য একটি তদন্ত বিভাগ থাকিতে হইবে সময় সময় কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উত্থাপিত হইবে সেগুলি যথার্থতা তদন্ত করিয়া উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। হযরত উমার (রা)-এর

৪১১

খেলাফতকালে এ বিষয়ে একটি বিভাগ খােলা হইয়াছিল। হযরত উমার (রা) এই বিভাগে মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা আনসারীকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তিনি একজন প্রবীণ ও বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন। তিনি সকল জিহাদেই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে ছিলেন। একবার কোন কার্যোপলক্ষে রাজধানীর বাহিরে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাকে মদীনার শাসনভার অর্পণ করিয়াছিলেন। এ সমস্ত কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য হযরত উমার (রা) তাহাকেই নির্বাচিত করিয়াছিলেন। দেশের কোথাও হইতে কোন অভিযোগ আসিলে তাহা তদন্তের জন্য হযরত উমার (রা) তাহাকেই প্রেরণ করিতেন। তিনি ঘটনাস্থলে যাইয়া জনসাধারণের নিকট হইতে অভিযোগ শ্রবণ করিতেন এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ করিয়া খলীফার নিকট উহার রিপোর্ট পেশ করিতেন (উসদুল গাবা হইতে আল-ফারুক, পৃ. ১৭৫-৭৬)।

হিজরী ২১ সনে একজন লোক আসিয়া কাদিসিয়া বিজেতা কুফার গভর্নর হযরত সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিল। পরিস্থিতি ছিল তখন খুবই সংকটজনক। ইরানীগণ তখন অত্যন্ত তোড়জোড় সহকারে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করিতেছিল। তাহারা প্রায় দেড় লক্ষ সৈন্যসহ নিহাওয়ান্দের নিকট আসিয়া পৌঁছিল। মুসলমানগণ তখন সম্পূর্ণ সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করিতেছিলেন। অভিযোগকারীগণ ঠিক এমনি সময় আসিয়া মদীনায় পৌঁছিয়াছিল। অভিযোগ শুনিয়া হযরত উমার (রা) বলিলেন, “এই রকম বিপজ্জনক মুহূর্তেও আমি অভিযোগের তদন্ত হইতে বিরত থাকিতে পারি না”। তৎক্ষণাৎ মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা (রা)-কে কুফায় প্রেরণ করিলেন। তথায় পৌঁছাইয়া তিনি শহরের প্রতিটি মসজিদে উপস্থিত হইয়া জনসাধারণের নিকট হইতে সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ করিলেন এবং হযরত সাদ (রা) মদীনাতে চলিয়া আসিলেন। মদীনায় স্বয়ং খলীফা সাদ (রা)-এর জবানবন্দী গ্রহণ করিয়াছিলেন (তারীখ তাবারী হইতে আল-ফারুক, পৃ. ১৭৬)।

ঘটনা তদন্তের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা যায়। খােলাফায়ে রাশেদীনের যুগে ইহার নজীর রহিয়াছে। হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতকালে কোন কোন ঘটনার তদারকির জন্য একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিশন প্রেরণ করা হইত।

কোন কোন ক্ষেত্রে আবার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সরাসরি খলীফার দরবারে তলব করা হইত। সাধারণত প্রদেশের গভর্নর বা অন্য কোন প্রকারের উচ্চ পদস্থ কর্মচারীর ক্ষেত্রে এইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইত। একবার বসরার শাসনকর্তা হযরত আবু মূসা আশআরীর বিরুদ্ধে খলীফার দরবারে আসিয়া একদল লোক

৪১২

অভিযোগ করিয়াছিল। হযরত উমার (রা) অভিযোগকারীদের অভিযোগ নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেন এবং হযরত আবু মূসাকে মদীনাতে তলব করিয়া আনিয়া স্বয়ং তাহার তদন্ত করেন। আবু মূসার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল নিম্নরূপঃ

(ক) তিনি যুদ্ধবন্দীদের ষাটজন রইস সন্তানকে পৃথকভাবে নিজের সেবায় নিযুক্ত করিয়াছেন। (খ) তিনি শাসন ব্যাপারের সমস্ত দায়িত্ব যিয়াদ ইবন আবীহি-র হাতে ছাড়িয়া দিয়াছেন, এমনকি ঐ অনভিজ্ঞ যুবকই রাজ্যের সমস্ত ভালমন্দের মালিক। (গ) তাহার এক বাঁদীকে তিনি দুই বেলা এমন উৎকৃষ্ট খাদ্য খাইতে দেন যাহা সাধারণ মুসলমানরা খাইতে পায় না।

তদন্তে প্রথম অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতিপন্ন হইল। দ্বিতীয় অভিযোগের জবাবে হযরত আবু মূসা আশআরী (রা) জানাইলেন যে, যিয়াদ অত্যন্ত কর্মদক্ষ এবং বুদ্ধিমান যুবক। সুতরাং তাহাকে আমি আমার পরামর্শদাতা নিযুক্ত করিয়া রাখিয়াছি। তাহার জবাবের সত্যতা প্রমাণের জন্য খলীফা যিয়াদকে মদীনায় তলব করিলেন। তাহার পরীক্ষায় যিয়াদ যোগ্যতাসম্পন্ন বলিয়া প্রমাণিত হইলে তিনি তাহাকে স্থায়ীভাবে হযরত আবু মূসার পরামর্শদাতা নিযুক্ত করেন। তৃতীয় অভিযোগে হযরত আবু মূসা ইহার কোন গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে না পারায় উক্ত বাদী তাহার নিকট হইতে অপসারিত করা হয় (তারীখে তাবারী হইতে আল-ফারুক, পৃ. ১৭৭)।

হযরত উমার (রা) কর্মচারীদের সামান্যতম ত্রুটি-বিচ্যুতিও কঠোর হস্তে প্রতিকার করিতেন। বিশেষ করিয়া কর্মচারীদের যে সমস্ত কাজে সামান্য অহমিকা বা ক্ষমতার মদমত্ততা প্রমাণিত হইত, হযরত উমার (রা) সর্বদাই তাহার প্রতি ক্ষমাহীন আচরণ করিতেন। যে সকল কর্মচারী রুগ্ন ব্যক্তির খোঁজখবর রাখে না বা কোন দুর্বল ব্যক্তি তাহার নিকট হইতে বিফল মনোরথ হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে, এইরূপ অভিযোগ প্রমাণিত হইলে তৎক্ষণাৎ তাহাদিগকে পদচ্যুত করা হইত (কিতাবুল খারাজ, পৃ. ৬০)। একদা হযরত উমার (রা) বাজারে ভ্রমণকালে শুনিতে পাইলেন, পিছন হইতে কে যেন বলিতেছে, উমার! কর্মচারীদের জন্য গুটিকতক আইন বাঁধিয়া দিয়াই কি তুমি আল্লাহর আযাব হইতে নিষ্কৃতি পাইবে? তুমি কি খবর রাখ যে, মিসরের জনৈক পদস্থ কর্মচারী ইয়াদ ইবন গানাম অত্যন্ত মসৃন পোশাক পরিধান করে এবং গৃহদ্বারে দারোয়ান নিযুক্ত করিয়াছে? হযরত উমার (রা) তৎক্ষণাৎ মুহাম্মাদ ইবন মাসলামাকে মিসর প্রেরণ করিলেন এবং বলিয়া দিলেনঃ ইয়াদকে যে অবস্থায় পাও মদীনায় লইয়া আসিবে। মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা তথায় পৌঁছাইয়া সত্য সত্যই দেখিলেন, ইয়াদের গৃহদ্বারে দারোয়ান দণ্ডায়মান এবং তিনি

৪১৩

অত্যন্ত মসৃন পোশাক পরিধান করিয়া বসিয়া আছেন। ঠিক এই পোশাকেই তাহাকে মদীনায় লইয়া আসিলেন। হযরত উমার (রা) নিজ হাতে ইয়াদের শরীর হইতে মসৃন পোশাক খুলিয়া মোটা পশমী জামা পরাইয়া দিলেন এবং একপাল ছাগ আনাইয়া হুকুম দিলেনঃ যাও, মাঠে যাইয়া এগুলি চরাও। ইয়াদের পক্ষে এই হুকুমের অন্যথা করিবার কোন উপায় ছিল না। তবুও সে বারবার বলিতেছিল, হায়! ইহার পূর্বে কেন আমার মৃত্যু আসিল না। ইহা শুনিয়া উমার (রা) বলিলেন, ইহাতে তোমার লজ্জার কি আছে? তোমার পিতা ছাগল চরাইতেন বলিয়াই তাহার নাম গানাম (ছাগল) হইয়াছিল। অতঃপর ইয়াদ অন্তরের সহিত তাওবা করিলেন এবং যত দিন জীবিত ছিলেন অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে নিজ কর্তব্য সম্পাদন করিয়া গিয়াছেন।

ধারা-১০০৪ কর্মচারী নিয়োগপত্র দান ও বেতন নির্ধারণ (ক) সরকারীর পদে নিযুক্ত কর্মচারীকে নিয়োগপত্র প্রদান করিতে হইবে।

(খ) সরকারী কর্মচারীর জন্য নির্দিষ্ট হারে বেতন নির্ধারণ করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

ইসলামের প্রথম যুগে সরকারী কর্মচারীদের জন্য কোন বেতন নির্ধারিত ছিল না। হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতকালেও অনেকেই রাষ্ট্রের সেবা করিয়া বেতন গ্রহণ করা পছন্দ করিতেন না, এমনকি অনেকেই উহাকে তাকওয়া-পরহেজগারীর পরিপন্থী মনে করিতেন। অপরদিকে জনসাধারণের নিকট হইতে নানা রকম নযরানা, উপহার, হাদিয়া গ্রহণ করাকে আবার অনেকেই দূষণীয় মনে করিতেন না। ইহা রাষ্ট্রের শাসন শৃংখলার ব্যাপারে অনেক রকমের বাধার সৃষ্টি করে। হযরত উমার (রা) এই ভুল ধারণার নিরসন করার চেষ্টা করেন এবং প্রত্যেক কর্মচারীর জন্য বেতন নির্ধারিত করিয়া দেন। প্রসিদ্ধ সাহাবী ও সেনাপতি হযরত আবু উবায়দা (রা) একদা বেতন গ্রহণে আপত্তি করায় হযরত উমার (রা) তাহাকে অনেক প্রবােধ দিয়া বেতন গ্রহণে বাধ্য করেন। হযরত হাসীম ইবনে হােয়াম (রা) নামক জনৈক সাহাবীকে হযরত উমার অনেক চেষ্টা করিয়াও কোন দিন কোন প্রকার বেতন ও ভাতা লইতে বাধ্য করিতে পারেন নাই (আল-ফারূক, পৃ. ১৭৩)।

৪১৪

সরকারী পদে কোন কর্মচারীকে নিযুক্ত করা হইলে তাহাকে নিয়োগপত্র প্রদান করা হইত এবং উক্ত নিয়োগপত্রে কিছু সংখ্যক মুহাজির ও আনসার নাগরিকের সাক্ষ্যসূচক দস্তখত লওয়া হইত। উক্ত কর্মচারী নিজ কর্মস্থলে যাইয়া লোকদিগকে জমায়েত করিয়া এই নিয়োগপত্রটি পড়িয়া শুনাইতেন। এইভাবে তথাকার জনসাধারণ উক্ত কর্মচারীর দায়িত্ব ও অধিকার সম্বন্ধে সম্যকভাবে অবগত হইয়া যাইতেন। উক্ত কর্মচারী তাহার অধিকারের সামান্য ব্যতিক্রম করিলেই জনসাধারণ তাহা ধরিয়া ফেলিবার সুযোগ পাইত।

হযরত উমার (রা) এই বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছিলেন, যেন জনসাধারণ প্রত্যেক কর্মচারীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্বন্ধে অবগত থাকিতে পারে। তিনি অনেক খােতবা ও ফরমানের মারফত প্রত্যেক কর্মচারী ও নাগরিককে ইহা অবহিত করাইবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন। একবার তিনি এক সাধারণ সভায় তাহার কর্মচারীদের উদ্দেশে ভাষণে উল্লেখ করিয়াছিলেন, স্মরণ রাখিও! আমি তোমাদেরকে আমীর অথবা অত্যাচারী হিসাবে জনগণের নিকট প্রেরণ করি নাই, বরং সত্য এবং সরল পথের ইমামরূপে প্রেরণ করিয়াছি যেন জনসাধারণ তোমাদের অনুসরণ করিতে পারে। সর্বদা তোমরা মুসলমানদের হক আদায় করিবে। কখনও জোর-জবরদস্তি করিয়া তাহাদের বেইজ্জত করিও না অথবা প্রশংসা করিয়া তাহাদেরকে বিভ্রান্ত করিও না। তোমার দরজা কখনও জনসাধারণের জন্য বন্ধ করিবে না। যেন দুর্বল সবলকে কোন দিন গ্রাস করিতে না পারে। কোন অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের উপর নিজকে প্রাধান্য দিবে না। ইহাতে জনগণের উপর জুলুম করা হয়।

ধারা-১০০৫ কর্মচারীদের সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন সরকারী কর্মচারীদের স্থাবর, অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তির বিস্তারিত তালিকা সরকারের নিকট থাকিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

সরকারী কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের চাকুরীতে নিয়োগকালে তাহাদের সকল সম্পত্তির হিসাব সরকারের নিকট পেশ করিতে হইবে। যাহাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রিত হইতে পারে। হযরত উমার (রা) তাহার খেলাফত কালে এই ব্যবস্থা গ্রহণ

৪১৫

করিয়াছিলেন। তিনি যে কোন কর্মচারী নিয়োগকালে তাহার স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তির বিস্তারিত তালিকা প্রস্তুত করিয়া তাহা খলীফার দফতরে সযত্নে রক্ষা করিতেন। কোন কর্মচারীর সম্পত্তিতে অস্বাভাবিক উন্নতি ঘটিলে তৎক্ষণাৎ তাহার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইত। এক সময় কোন কোন বিশিষ্ট কর্মচারীর সম্পত্তিতে প্রাচুর্য দেখা দিলে খালিদ ইবন সাদ নামক জনৈক কবি কয়েক পংক্তি কবিতার দ্বারা এইদিকে খলীফার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হযরত উমার সকল কর্মচারীর সম্পত্তির পুনরায় হিসাব লইয়া প্রত্যেকের অর্ধেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিয়া সরকারী বাইতুল মালে অন্তর্ভুক্ত করেন (আল-ফারূক, পৃ. ১৭৩-৪)।

ধারা-১০০৬

কর্মচারীদের শাস্তির ব্যবস্থা সরকারী কর্মচারী আইন বা শৃংখলা ভঙ্গ করিলে তাহার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন কর্মচারী সরকারের নির্দিষ্ট নীতিমালা ও শৃংখলা ভঙ্গ করিলে তাহার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে। খুলফায়ে রাশেদুনের যুগে এইরূপ প্রচলন ছিল। বিশেষ করিয়া হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতকালে প্রত্যেক সরকারী কর্মচারীর প্রতি নির্দেশ জারী ছিল, যেন হজ্জের সময় সকলেই মক্কায় উপস্থিত থাকেন। হজ্জ উপলক্ষে রাষ্ট্রের প্রত্যেক এলাকা হইতেই অসংখ্য লোক মক্কায় সমবেত হইত। হযরত উমার (রা) সমবেত জনতার সম্মুখে দাঁড়াইয়া ঘোষণা করিতেন, কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে কাহারও কিছু অভিযোগ থাকিলে বলিতে পারেন। ইহাতে লোকেরা সামান্য অভিযোগ পর্যন্ত তাহার নিকট পেশ করিতে পারিত। হযরত উমার সূক্ষ্ম বিবেচনার সহিত প্রকাশ্য সভায় ঘোষণা করিলেন, ভাইসব! যে সকল কর্মচারী তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয় তাহাদেরকে আমি কখনও এই উদ্দেশ্যে পাঠাই না যে, তাহারা তোমাদের ধন-সম্পদ শোষণ করুক বা তোমাদের প্রহার করুক, বরং কেবল এইজন্য পাঠাই যে, তাহারা তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করুক এবং সুষ্ঠভাবে তাহা শিক্ষা দিক। সুতরাং কোন কর্মচারী যদি তাহার খেলাফ করিয়া থাকে তবে আমার কাছে বলল। আমি তাহার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করিব। এই কথা শুনিয়া মিসরের

৪১৬

শাসনকর্তা হযরত আমর ইবনে আস (রা) দাঁড়াইয়া বলিলেন, যদি কোন কর্মচারী কাহাকেও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সামান্য প্রহার করিয়া থাকে তবুও কি আপনি তাহার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান করিবেন। জবাবে হযরত উমার (রা) বলিলেন, আমার জীবনের মালিক আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এইরূপ করিতে দেখিয়াছি। সাবধান! মুসলমানদের কখনও প্রহার করিবে না। ইহাতে দিন দিন মুসলিম জাতি দুনিয়ার সম্মুখে হেয় হইতে থাকিবে। কখনও তাহাদের হক নষ্ট করিও না। নতুবা তাহারা অবাধ্য হইতে থাকিবে (কিতাবুল খারাজ, পৃ. ৫৬)।

একদা প্রকাশ্য সভায় এক ব্যক্তি হযরত উমারের নিকট নালিশ করিল, আপনার এক কর্মচারী অযথা আমাকে এক শত বেত্রাঘাত করিয়াছে। তখন হযরত উমার (রা) তাহাকে বলেন, এই সভায় তুমি উক্ত কর্মচারীকে এক শত বেত্রাঘাত করিয়া প্রতিশোধ গ্রহণ কর। এই রকম কঠোর নির্দেশ শুনিয়া হযরত আমর ইবন আস দাঁড়াইয়া বলিলেন, এই রকম ব্যবস্থায় সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। জবাবে হযরত উমার (রা) বলিলেন, তাই বলিয়া আমি দোষী

ব্যক্তির শাস্তির বিধান হইতে বিরত থাকিতে পারি না। অতঃপর হযরত আমর ইবন

• আস অভিযোগকারীকে অনুরোধ করিয়া প্রত্যেকটি বেত্রাঘাতের পরিবর্তে দুইটি করিয়া স্বর্ণমুদ্রা দিয়া তাহাকে সন্তুষ্ট করেন (আল-ফারূক, পৃ. ১৭৫)।

মা

তথ্য নির্দেশিকা ও ১. বুখারী ও মুসলিম। ২. বুখারী ও মুসলিম, ১২খণ্ড পৃ. ২২৬ (কায়রো সং.)। ৩. মুসলিম। ৪. মুসলিম, ইসারা, হাদীস নং ৬২ ও ৬৩; আবু দাউদ, সুন্নাত, বাব ২৭; তিরমিযী, ফিতাম,

বাব ৭৮। ৫. ফাতহুল বারী, ৮ খ., পৃ. ৭৪১। ৬. ইন হিশাম, সীরা, ৪খ, পৃ. ৩৪১। ৭. তাফসীর মাফাতীহুল গায়ব, ১খ, পৃ. ৩৫৯। ৮. ফাতহুল বারী, ১৭খ., পৃ. ১৪।

কিতাবুল খারাজ (আবু ইউসুফ), পৃ. ১১৭। ১০. কানযুল উম্মাল, ৬খ, হাদীস নং ৬৮১২২। ১১. দ্র. তিরমিযী, যাকাত, বাব ১৫, নং ৬৩১; মুত্তয়াত্তা, যাকাত, বাব ১২।

৪১৭

১২. ইব্‌ন আবী হাতিম (আল-জিহাদ গ্রন্থ হইতে উদ্ধৃতি পৃ.১৪৫)। ১৩. বুখারী, মাগাযী, বাব ৬১, নং ৪০৪১-২ঃ দারিমী, মুকাদ্দিমা। ১৪. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বরাতে রিয়াদুস সালেহীন (বাংলা অনু), ৪খ, পৃ. ৮২

হাদীস নং ১৫৮৫। ১৫. সহীহ মুসলিমের বরাতে রিয়াদুস সালেহীন (বাংলা), ৪খ, পৃ.৮২, নং ১৫৮৬। ১৬, আবু দাউদ, খারাজ, বাব ১০, নং ২৯৪৩। ১৭. বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ইত্যাদি। ১৮. আবু দাউদ, কিতাবুল বুয়ু, বাব ফির-রাজুল ইয়াকুলু মিন মালি ওয়ালাদিহী, নং ৩৫৩০; ইন

মাজা, কিতাবুত তিজারাত, বাব মা লির-রাজুল মিন মালি ওয়ালাদিহী, নং ২২৯২। ১৯. বুখারী, কিতাবুল হি, বাব ৩৯; কিতাবুল আদাব, বাব ৮; আবু দাউদ, কিতাবুয যাকাত, বাব

৩৪, নং ১৬৬৮। ২০. মুসলিমের বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু, মেশকাত শরীফ), কিতাবুল বুয়ু, বাবঃ

নিষিদ্ধ শ্রেণীর ক্রয়-বিক্রয়, ২য় ফাসল, ৬খ., পৃ. ৫৪-৫, নং ২৭৩৫-(২৬); রিয়াদুস

সালেহীন (বাংলা অনু.), ৪খ, পৃ. ৮০, নং ১৫৭৯। ২১. সহীহ বুখারী, কিতাবুল আহকাম, বাব ৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, বাব ৬১; কিতাবুল

ইমারাহ, বাব ৫। ২২. বায়হাকীর শুআবুল ঈমানের বরাতে মিশকাত (বাংলা অনু), ১খ, পৃ. ৫৫, নং ৩১, (৩০)। ২৩. তাফহীমুল কুরআন, সূরা মাইদার ৪২ নং আয়াতের ব্যাখ্যাধীন, টীকা নং ৬৯; আরও দ্র.

মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা, ২২ খ., পৃ. ২২১, শিরো, রিশওয়া। হাসান বসরী ও সাঈদ ইবন

জুবায়র (র) উক্ত আয়াতে “আস-সুয়ূত”-এর অর্থ “ঘুষ” বলিয়াছেন। ২৪. আল-হালাল ওয়াল-হারাম ফিল ইসলাম। ২৫. মুসনাদ আহমাদ (২ খ, পৃ. ৩৮৭-৮, নং ৯০১১ ও ৯০১৯)-এর বরাতে ইসলামে

হালাল-হারামের বিধান, পৃ. ৫১৪; তিরমিযী, আবওয়াবুল আহকাম, বাব মা জাআ ফির-রাশী

ওয়াল-মুরতাশী ফিল-হাকাম। ২৬. মুওয়াত্তা ইমাম মালেকের বরাতে ইসলামে হালাল-হারামের বিধান, পৃ. ৫১৫। ২৭. আবু দাউদ, কিতাবুল কাদা, বাব ফী কারাহিয়াতির রিশওয়াহ; ইবন মাজা, আহকাম, বাব ২;

আহমাদ, ২ খ, পৃ. ১৬৪, ১৯০, ১৯৪ ইত্যাদি। ২৮. আবু দাউদ, ইমারা, বার ১০, নং ২৯৪৩। ২৯. বুখারী (বাংলা অনু, আধুনিক প্রকাশনী), কিতাবুল জিহাদ, অনুচ্ছেদ : যুদ্ধলব্ধ মাল আত্মসাৎ

করা, ৩, পৃ. ১৯৬, নং ২৮৪২।

৪১৮

৩০. ঐ গ্রন্থ, কিতাবুল জিহাদ, বাবঃ যুদ্ধলব্ধ সামান্য মাল আত্মসাৎ করা, ৩, পৃ. ১৯৭, নং

২৮৪৩। ২৩. তিরমিযী, ৩২, পৃ. ৬১৪ (কিতাবুল আহকাম, বাব ৯); মুসনাদ আহমাদ, ৫খ, পৃ. ২৭৯

(আরও দ্র. ২খ, ১৬৪, ১৯০, ১৯৪)-এর বরাতে আলা-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২২খ, পৃ.

২২১; আবু দাউদ, কিতাবুল আকদিয়া, বাব ৪; ইন মাজা, আহকাম, বাব ২, নং ২৩১৩। ৩৫. তিরমিযী, আবওয়াবুল আহকাম, বাব মা জাআ হাদয়াল উম্মাল। ৩৬. মুসনাদ আহমাদ ও শারহুস সুন্নার বরাতে মেশকাত শরীফ (বাংলা অনু.) কিতাবুল বুয়ু, বাবুল

কাস্ব ওয়া তালাবিল হালাল, ২য় ফাসল, নং ২৬৫১ (১৩), ৬খ, পৃ. ৯। ৩৭. পূর্বোক্ত বরাত, নং ২৬৫২ (১৪), ৬খ, পৃ. ৯ (মুসনাদে আহমাদ, দারিমী ও বায়হাকীর

শুআবুল ঈমান-এর বরাতে)। ৩৮. পূর্বোক্ত বরাত, নং ২৬৬৭ (২৯), ৬খ, পৃ. ১৬ (বায়হাকীর শুআবুল ঈমানের বরাতে)। ৩৯. পূর্বোক্ত বরাত, নং ২৬৬৮ (৩০), ৬খ, পৃ. ১৬ (মুসনাদে আহমাদ ও বায়হাকীর শুআবুল

ঈমানের বরাতে)। ৪০. তিরমিযী, কিতাবুল আহকাম, বাব ৯; আবু দাউদ, কিতাবুল আকদিয়া, বাব ফিস সুলহি, নং

৩৫৫৪; বুখারী, কিতাবুল ইজারা, বাব আজরিস সামসিরাহ। . ৪১. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, বাব ৬। ৪২. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২৮খ, পৃ. ৮৩। ৪৩. রদুল মুত্তার, ২৩, পৃ. ১১০ ও ১খ, পৃ. ২৩৫-এর বরাতে মাওসূআ, ২৬ খ.। ৪৪. কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, নং ৬৮ ও ১২২। আরও দ্র. হযরত উমার (রা)-র ভাষণ

(আপনাদের কার্যাদির যে আমানতের ভার আমার উপর ন্যস্ত হইয়াছে), আবু ইউসুফের

কিতাবুল খারাজ, পৃ. ২৫। ৪৫. বুখারী, কিতাবুল ইলম, বাব ২, নং ৫৭ (আধুনিক প্রকাশনী সং); আরও দ্র. তিরমিযী,

আবওয়াবুল আদাব, বাব ৭৬; দারিমী, মুকাদ্দিমা, বাব ২; আহমাদ, খ, পৃ. ৩৬১। ৪৬. বুখারী, কিতাবুল আহ্কাম, বাব ৭; মুসলিম, কিতাবুল ইমারা, বাব ৩; কানযুল উম্মাল, ৬খ,

নং ২০৬। ৪৭. কানযুল উম্মাল, ৬খ, নং ৬৯। ৪৮. আবু দাউদ, কিতাবুল ইমারাহ, বাব ২। ৪৯. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে হাদীসের আলোকে মানব জীবন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯৪, নং ২৫১। ৫০. আশরাফ আলী থানবী, বায়ানুল কুরআন (বাংলা অনু, তাফসীরে আশরাফী), সূরা ইউসুফের

৫৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.। আরও দ্র. মুফতী মুহাম্মাদ শফী, মাআরিফুল কুরআন, ৫খ, পৃ. ৭৮ (কুরতুবীর আকামুল কুরআনের বরাতে), উপরোক্ত ৫৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যাধীন।

৪১৯

৫১. বুখারী, কিতাবুল ঈমান, বাব কাওলিন নাবিয়্যী (স) আনা আলামুকুম বিল্লাহ। ৫২. ইবন মাজা, কিতাবুল আদাব, বাবুল ইহসান ইলাল মামালীক, নং ৩৬৯০; মুসলিম, কিতাবুল

আয়মান, বাব সুহবাতিল মামালীক; আহমাদ, ৬খ, পৃ. ৫৬; তিরমিযী, বির, বাবুল ইহসান

ইলাল খাদিম, বাব ২৭। ৫৩. ইবন মাজা, আদাব, বাব ঐ, নং ৪২৪০; বুখারী, সাওম, বাব ৪৯, ৫২; লিবাস, বাব ৪৩;

রিকাক, বাব ১৮। ৫৪. ইবন মাজা, মুকাদ্দিমা, বাব ইত্তিবা সুন্নাতি রাসূলিল্লাহ (স), নং ২; বুখারী, ইতিসাম, বাব ২;

মুসলিম, হজ্জ, নং ১২। ৫৫. মুসলিম, কিতাবুল আয়মান, বাব সুহবাতিল মামালীক। ৫৬. মুসনাদে আহমাদ, ২, পৃ. ৯। ৫৭. মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, বাব মা জাআ ফী সালাতিল লায়ল। ৫৮. আহকামুস সুলতানিয়া, পৃ. ২৪৪-এর বরাতে ইসলামে মানবাধিকার, পৃ. ২৯৩। ৫৯. মুওয়াত্তা ইমাম মালেক-এর বরাতে ইসলামে মানবাধিকার, পৃ. ২৯৩। ৬০. বুখারী, জুমুআ, নিকাহ, ইসতিকরাদ, আহকাম (৫) ইত্যাদি অধ্যায়; মুসলিম ইমারাহ (৫)

অধ্যায়; তিরমিযী, জিহাদ অধ্যায়; আবু দাউদ, খারাজ অধ্যায়। ৬১. কানযুল উম্মাল, ৬খ., নং ৬৮ ও ১২২। ৬২. ইবন আবদুল বার, আল-ইসতীআব, ১খ, পৃ. ২৯৬, হায়দরাবাদ (দাক্ষিণাত্য) সংস্করণ;

ইয়াকূত আল-হামারী, মুজামুল বুলদান, ৫খ, পৃ. ২৪২-৩, বৈরূত সংস্করণ ১৯৫৭ খৃ.।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *