1 of 2

৩৮. ডাকাতি

অধ্যায় : ৩৮ ডাকাতি

ধারা-৮৮৭

সংজ্ঞা অস্ত্রের সাহায্যে বা অন্য কোন হিংস্র উপায়ে লোকালয়ে অথবা লোকালয়ের বাহিরে কোন ব্যক্তি কর্তৃক জোরপূর্বক অপর ব্যক্তির অস্থাবর মাল গ্রহণ করাকে “ডাকাতি” বলে এবং আক্রমণকারীকে ডাকাত” বলে।

বিশ্লেষণ, ডাকাতির আরবী প্রতিশব্দ হিরাবাহ (1 ) ও. কাতউত তারীক ( 64 kJA3)। “হিরাবাহ’ শব্দটি দ্বারা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ”ও বুঝায়। তাফসীরকারগণ ও ফকীহগণ শব্দটি উভয় অর্থেই গ্রহণ করিয়াছেন এবং যে আয়াতে শব্দটি উল্লেখিত হইয়াছে সেই আয়াতে উদ্ধৃত তৎসংশ্লিষ্ট শাস্তিকেও ‘ডাকাতি’ ও ‘বিদ্রোহ’ উভয় ক্ষেত্রে প্রয়োগ করিয়াছেন। এই অধ্যায়ে আমরা হিরাবাহ শব্দটি ‘ডাকাতি’ অর্থে গ্রহণ করিয়াছি। কাতউত-তারীক-এর শাব্দিক অর্থ রাস্তা বিচ্ছিন্ন করা, ইহার পারিভাষিক অর্থ ‘ডাকাতি’। অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে অবরোধ করিয়া বা তাহার কোন দিকে সরিয়া যাওয়ার পথ অবরুদ্ধ করিয়া দেওয়া। মুজামু লুগাতিল ফুকাহা গ্রন্থে বলা হইয়াছেঃ “লোকালয়ে অথবা লোকালয়ের বাহিরে কোন ব্যক্তির পথরুদ্ধ করিয়া উন্মুক্ত অস্ত্রসহ তাহার উপর ঝাপাইয়া পড়াকে ‘ডাকাতি’ বলে। বাদাইউস সানাই গ্রন্থে বলা হইয়াছেঃ “এক বা একাধিক ব্যক্তির অস্ত্রসহ অথবা লাঠিসোটা, পাথর ইত্যাদিসহ জোরপূর্বক কোন পথচারীর পথরুদ্ধ করিয়া তাহার মাল ছিনাইয়া লওয়ার উদ্দেশ্যে তাহার উপর ঝাপাইয়া পড়াকে ডাকাতি বলে।

৭০০

কোন ঘটনাকে ডাকাতি হিসাবে গণ্য করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের সমন্বয় ঘটিতে হইবে- (১) জোরপূর্বক পথচারীর মাল ছিনাইয়া লওয়ার জন্য অস্ত্র বা অন্য কোন উপকরণসহ তাহার উপর ঝাপাইয়া পড়ার ঘটনা ঘটিতে হইবে, (২) ডাকাতের ঝাপাইয়া পড়ার দৈহিক শক্তি থাকিতে হইবে, (৩) পথচারীর পলায়নে বা সাহায্যলাভে নিরুপায় হইতে হইবে, (৪) ডাকাতিতে সকল ডাকাতের অংশগ্রহণ জরুরী নহে, সহায়ক শক্তি হিসাবে যোগদানই যথেষ্ট। ডাকাতের সংখ্যা একাধিক হওয়াও জরুরী নহে, কারণ এক ব্যক্তির দ্বারাও ডাকাতি সংঘটিত হইতে পারে।

ধারা-৮৮৮

হযোগ্য ডাকাতির শর্তাবলী কোন ডাকাতিকর্ম নিম্নোক্ত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে হদ্দযোগ্য শাস্তির আওতাভুক্ত হইবে—(ক) ডাকাতকে বালেগ, বুদ্ধিমান ও শক্তিমান হইতে

হইবে;

(খ) আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হইতে হইবে; (গ) ডাকাত ও আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে বংশগত মুহরিম আত্মীয়-সম্পর্ক অনুপস্থিত থাকিতে হইবে;

(ঘ) লুষ্ঠিত বস্তু হালাল মাল হইতে হইবে এবং উহার আর্থিক মূল্য থাকিতে হইবে;

(ঙ) লুণ্ঠিত মালের সহিত ডাকাতের মালিকানা যুক্ত থাকার সন্দেহমুক্ত হইতে হইবে;

(চ) লুণ্ঠিত মালের উপর ডাকাতের পূর্ণ দখল প্রতিষ্ঠিত হইতে হইবে;

(ছ) লুণ্ঠিত মালের পরিমাণ অন্ততপক্ষে দশ দিরহাম-এর সমমূল্যের হইতে হইবে;

(জ) লুণ্ঠিত মালের উপর মালিকের বৈধ দখল থাকিতে হইবে; (ঝ) লুণ্ঠিত মাল স্থানান্তরযোগ্য হইতে হইবে;

৭০১

(ঞ) রাষ্ট্রের চতুঃসীমার মধ্যে ডাকাতি সংঘটিত হইতে হইবে;

(ট) ডাকাতদিগকে তওবা করিয়া সংশোধন হওয়ার এবং মাল মালিককে ফেরত প্রদানের পূর্বে গ্রেপ্তার করিতে সক্ষম হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

ডাকাত নাবালেগ ও পাগল হইলে তাহারা হদ্দের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে না। কারণ নীতিগতভাবে নাবালেগ ও পাগল ব্যক্তি হদ্দের আওতাবহির্ভূত। যাহিরী মাযহাবমতে ডাকাতকে পুরুষ হইতে হইবে। অতএব নারী কর্তৃক ডাকাতি সংঘটিত হইলে তাহার উপর হদ্দ কার্যকর হইবে না। কিন্তু ইমাম তাহাবী (র) বলেন, কোন নারী ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করিলে তাহার উপর হদ্দ কার্যকর হইবে। এই ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান। কুরআনের যে আয়াতে ডাকাতির শাস্তির উল্লেখ রহিয়াছে তাহাতে নারী ও পুরুষ এবং মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় নাই। উপরন্তু ডাকাতি হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধ। হদ্দের শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় নাই। কোন নারী চুরি করিলে বা যেনা করিলে তাহার উপর যেমন সংশ্লিষ্ট অপরাধের শাস্তি কার্যকর হয়, তদ্রপ ডাকাতির ক্ষেত্রেও তাহার উপর সংশ্লিষ্ট অপরাধের শাস্তি কার্যকর হইবে। বর্তমান কালে ইমাম তাহাবী (র)-এর মতই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিৎ।

যাহিরী বা প্রসিদ্ধ মতে নারীকে এই শাস্তির বাহিরে রাখা হইয়াছে এই কারণে যে, নারী সাধারণত সন্ত্রাসী হয় না, তাহার মন কোমল এবং কোন সন্ত্রাসী ঘটনায় সে স্বভাবতই বিচলিত হইয়া পড়ে। তাই তাহার পক্ষে ডাকাতি করা সম্ভব নহে। এই মত অনুসারে ডাকাত দলে নারী অন্তর্ভুক্ত থাকিলে ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে ঐ দলের পুরুষদের উপরও হদ্দ কার্যকর হইবে না, বরং তাহারা সকলে তাযীরের আওতায় শাস্তিভোগ করিবে। নাবালেগের বেলায়ও তাহাদের এই মত। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ (র) নাবালেগ ও নারীর মধ্যে পার্থক্য করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, মূল ডাকাতি নাবালেগ কর্তৃক সংঘটিত হইলে, ডাকাত দলের বালেগ সদস্যদের উপরও হদ্দ কার্যকর হইবে না, কিন্তু ইহার বিপরীত হইলে বালেগদের উপর হদ্দ কার্যকর হইবে। পক্ষান্তরে মূল

৭০২

ডাকাতি নারী কর্তৃক সংঘটিত হইলে ডাকাত দলের পুরুষ সদস্যদের উপর হদ্দ কার্যকর হইবে। তাহার মতে নারীকে ডাকাতির ক্ষেত্রে হদ্দের আওতা বহির্ভূত রাখার কারণ এই যে, নারীর মধ্যে স্বভাবগতভাবেই ডাকাতি করার মত দুঃসাহস নাই।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে অর্থাৎ যে ব্যক্তি ডাকাতদের কবলে পড়িয়াছে তাহাকে ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হইতে হইবে, সে মুসলিম রাষ্ট্রে আসার পর ডাকাতির শিকার হইলে সেই ক্ষেত্রে ডাকাতগণ হদ্দের শাস্তি ভোগ না করিয়া তাযীরের

অধীনে শাস্তিযোগ্য হইবে।

আক্রান্ত ব্যক্তি ও ডাকাত পরস্পর রক্তসম্পর্কের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হইলে সে এবং তাহার সংগীরা হদ্দের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে না। আবূ বাক্র আল-জাসসাস (র) বলিতেন যে, ডাকাতরা একাধিক ব্যক্তির মাল একত্রে ছিনতাই করিলে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের মাল ভিন্ন ভিন্ন হইলে সেই ক্ষেত্রে কেবল রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় ডাকাত তাযীরের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে এবং অন্যরা হদ্দের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে।

লুণ্ঠিত বস্তু ইসলামী শরীআর নীতি অনুযায়ী হালাল মাল হইতে হইবে এবং উহার আর্থিক মূল্য থাকিতে হইবে। লুষ্ঠিত বস্তু হালাল মাল না হইলে বা হালাল মাল হওয়া সত্ত্বেও উহার আর্থিক মূল্য না থাকিলে ডাকাতদের উপর হদ্দ কার্যকর হইবে না। মালের উপর মালিকের মালিকানাও নিরংকুশ হইতে হইবে। ডাকাতের তাহাতে মালিকানা সাবস্ত হওয়ার কোন সন্দেহ যুক্ত থাকিলে সে হদ্দের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে না। উপরন্তু লুণ্ঠিত মালের উপর ডাকাতের পূর্ণ দখল প্রতিষ্ঠিত না হইলে সে হদ্দের আওতায় আসিবে না।

লুণ্ঠনকৃত মাল অন্তত দশ দিরহামের সম-পরিমাণ মূল্যের হইতে হইবে, যদি ডাকাত একজন মাত্র হয়। ডাকাতের সংখ্যা, একাধিক হইলে তদনুপাতে তাহাদের প্রত্যেকের ভাগে কমপক্ষে দশ দিরহামের সম-পরিমাণ মাল পড়িলে তাহারা হদ্দের আওতাভুক্ত হইবে, অন্যথায় তাযীরের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে। হাসান ইবন যিয়াদ (র)-এর মতে ডাকাতদের প্রত্যেকের ভাগের মাল বিশ দিরহামের সম-পরিমাণ হইলে তাহারা হদ্দের আওতায় আসিবে। আল্লামা কুদূরীর বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মালেক (র)-এর মতে নেসাব তিরিশ দিরহাম, অন্যমতে পাঁচ দিরহাম, ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে এক দীনারের চার ভাগের

• ৭০৩

এক ভাগ অর্থাৎ তিন দিরহাম।

মালের উপর মালিকের বৈধ দখল থাকিতে হইবে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ছিনতাইকৃত মাল কোন বৈধ পন্থায় তাহার দখলভুক্ত হইলে সেই অবস্থায় ডাকাতরা হদ্দের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে। বৈধ পন্থা বলিতে ক্রয়, উত্তরাধিকার, ওয়াফ, হেবা, ওসিয়াত, আমানত ইত্যাদি সূত্রে মালটি তাহার দখলভুক্ত হইয়াছে। অবৈধ পন্থায়, যেমন গসব, চুরি, আত্মসাৎ, সূদ, ঘুষ ইত্যাদি সূত্রে উহা তাহার দখলভুক্ত হইলে ডাকাতদের উপর হদ্দ কার্যকর হইবে না।

লুণ্ঠনকৃত মাল স্থানান্তরযোগ্য না হইলে ডাকাতরা হদ্দের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে না। অর্থাৎ মালটি অস্থাবর হইলেই কেবল হদ্দের শাস্তি প্রযোজ্য হইবে।

ডাকাতি ইসলামী রাষ্ট্রের চতুঃসীমার বাহিরে সংঘটিত হইলে সেই ক্ষেত্রেও হদ্দের শাস্তি প্রযোজ্য হইবে না। কারণ হদ্দের শাস্তি কেবল সরকারই কার্যকর করিতে পারে। নিজ রাষ্ট্রের বাহিরে হদ্দ কার্যকর করার কর্তৃত্ব কোন সরকারের নাই।

ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে লোকালয়ের বাহিরে ডাকাতি সংঘটিত হইলে সেই ক্ষেত্রে হদ্দ প্রযোজ্য হইবে, লোকালয়ে সংঘটিত হইলে হদ্দ প্রযোজ্য হইবে না, বরং তাযীরের আওতায় শাস্তি প্রদান করা হইবে। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসূফ (র)-এর মতে ডাকাতি লোকালয়ে সংঘটিত হউক বা লোকালয়ের বাহিরে, উভয় ক্ষেত্রেই, হদ্দ প্রযোজ্য হইবে। কারণ জনপদে সংঘটিত ডাকাতির মধ্যেও ডাকাতির উপাদান বিদ্যমান। তবে তাহার মতে দিনের বেলায় ও রাত্রে জনপদে সংঘটিত ডাকাতির শাস্তির মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমন, জনপদে দিনের বেলা অস্ত্রসহ ডাকাতি সংঘটিত হইলে সেই ক্ষেত্রে হদ্দ কার্যকর হইবে এবং শুধু লাঠিসোটার সাহায্যে ডাকাতি সংঘটিত হইলে সেই ক্ষেত্রে হদ্দ কার্যকর হইবে না, কিন্তু রাত্রি বেলার ডাকাতির ক্ষেত্রে কার্যকর হইবে।

ইমাম আবু হানীফা (র)-এর অভিমতের ব্যাপারে বলা হইয়াছে যে, তিনি তাহার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তাহার রায় প্রদান করিয়াছেন। তৎকালে জনপদ বা শহরের লোকেরা নিজ নিজ আত্মরক্ষার জন্য সব সময় সংগে অস্ত্র রাখিত। ফলে ডাকাতরা জনপদে আক্রমণ করিতে সাহস পাইত না। অনন্তর আরও বলা যাইতে পারে যে, তিনি যে এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিয়া তাহার মত ব্যক্ত করিয়াছেন সেসব এলাকার লোকেরা গোত্রবদ্ধভাবে একই স্থানে বসবাস করিত।

৭০৪

ফলে ডাকাত দলের পক্ষে গোত্রের বসতিতে প্রবেশ করিয়া ডাকাতি করার দুঃসাহস হইত না। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলাইয়া গিয়াছে।

দুইটি অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীর তওবা গ্রহণযোগ্যঃ ডাকাতি ও বিদ্রোহ। ডাকাত বা বিদ্রোহী অপরাধ করার পর সরকারের হাতে ধরা পড়ার পূর্বে তওবা করিয়া সংশোধন হইলে এবং লুণ্ঠিত মাল উহার মালিককে ফেরত প্রদান করিলে তাহাদের উপর হদ্দ কার্যকর হইবে না। এই দুই ক্ষেত্রে ধরা পড়ার পূর্ব পর্যন্ত অপরাধীর তওবা গ্রহণযোগ্য, কিন্তু অন্য কোন অপরাধের ক্ষেত্রে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে না।

ধারা-৮৮৯ ডাকাতির শ্রেণীবিভাগ ও উহার শাস্তি

(ক) ডাকাতি চারি প্রকারের হইতে পারে—(১) জোরপূর্বক শুধু মাল। ছিনাইয়া লওয়া হইয়াছে, অন্য কোন ক্ষতি করা হয় নাই;

(২) মাল ছিনাইয়া লইতে না পারিয়া হত্যা করা হইয়াছে; (৩) মালও ছিনাইয়া লওয়া হইয়াছে এবং হত্যাও করা হইয়াছে; (৪) মালও ছিনাইয়া লওয়া হয় নাই এবং হত্যাও করা হয় নাই, শুধু ভীতি প্রদর্শন করা হইয়াছে।

(খ) উপধারা (ক) (১)-এ উল্লেখিত ক্ষেত্রে অপরাধীর ডান হস্ত ও বাম পা কর্তন করা হইবে;

(গ) উপধারা (ক) (২) ও (ক) (৩)-এ উল্লেখিত ক্ষেত্রেদ্বয়ে অপরাধী মৃত্যুদণ্ড ভোগ করিবে;

(ঘ) উপধারা (ক) (৪)-এ উল্লেখিত ক্ষেত্রে অপরাধী নির্বাসন দণ্ড ভোগ করিবে, যাহা কারাদণ্ডের মাধ্যমে কার্যকর করা হইবে।

বিশ্লেষণ

কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতে ডাকাতির শান্তি বর্ণিত হইয়াছেঃ

‘ 

৭o

)

ائما جزاء الذين يحاربون الله و رسوله ويسعون في الأرض فسادا أن يقوا أو يصلبوا أو تقطع أيديهم وأرجلهم من خلاف أو ينفوا من الأرض ط ذلك لهم خزي في الدنيا ولهم في الأخيرة عذاب عظيم

“যাহারা আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করিয়া বেড়ায় তাহাদের শাস্তি এই যে, তাহাদেরকে হত্যা করা হইবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হইবে অথবা বিপরীত দিক হইতে তাহাদের হস্ত-পদ কর্তন করা হইবে অথবা তাহাদেরকে দেশ হইতে নির্বাসিত করা হইবে। ইহা পার্থিব জীবনে তাহাদের লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে তাহাদের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি”-(সূরা মাইদাঃ ৩৩)।

উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা হইয়াছে। অতএব অপরাধ মারাত্মক পর্যায়ের হইলে শাস্তিও তদনুরূপ হইবে এবং অপরাধ হালকা হইলে শাস্তিও হালকা হইবে। অপরাধের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত শাস্তি প্রদান করিলে তাহা শরীআত বিরুদ্ধ হইবে। যেমন কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ।

وجزاؤا سيئة سيئة مثلها۔

“মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ”- (সূরা শূরাঃ ৪০)।

والذين كسبوا السيات جزاء سيئة بمثلها ۔

“যাহারা মন্দকাজ করে তাহাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ”- (সূরা ইউনুসঃ ২৭)।

অপরাধটি ডাকাতি হওয়া সত্ত্বেও উহার বৈশিষ্ট্যের দিক হইতে তাহা কয়েক প্রকারের হইতে পারে। যেমন কখনও ডাকাতদল শুধু মাল ছিনতাই করিয়াই সন্তুষ্ট থাকে, আবার কখনও শুধু হত্যাকাণ্ড ঘটাইয়া ক্ষান্ত হয়, আবার কখনও হত্যাকাণ্ডও ঘটায় এবং মালও ছিনতাই করে, আবার কখনও শুধু সন্ত্রাস সৃষ্টি করিয়াই ক্ষান্ত হয়। অতএব ডাকাত মাল ছিনতাই করিয়াই ক্ষান্ত হইলে তাহার

৭০৬

শাস্তি হইবে ও ডান হাত কজি হইতে এবং বাম পা গোছা হইতে কর্তন করা। ডাকাত যদি শুধু হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং মাল না নেয় অথবা হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং মালও ছিনতাই করে তবে তাহার শাস্তি হইবে মৃত্যুদণ্ড, তাহা তরবারির সাহায্যেও কার্যকর করা যাইতে পারে অথবা শূলীবিদ্ধ করিয়াও কার্যকর করা যাইতে পারে। ডাকাত যদি সন্ত্রাস সৃষ্টি করিয়াই ক্ষান্ত হয় এবং হত্যাকাও না ঘটায় বা মাল ছিনতাই না করে তবে সেই ক্ষেত্রে তাহার শাস্তি হইবে নির্বাসন, যাহা কারাদণ্ডের মাধ্যমে কার্যকর করা হইবে (ইবরাহীম নাখঈর দ্বিতীয় মত)। নির্বাসন দণ্ডের মেয়াদ আদালত নির্ধারণ করিবে। একটি ডাকাতির ঘটনায় হযরত জিবরীল (আ) মহানবী (স)-কে বলেন, “যে হত্যা করিয়াছে তাহাকে হত্যা করা হইবে, যে মাল লুণ্ঠন করিয়াছে তাহার বিপরীত দিক হইতে হাত-পা কর্তন করা হইবে, যে হত্যাও করিয়াছে এবং মালও লুণ্ঠন করিয়াছে তাহাকে শূলীবিদ্ধ করা হইবে”।

যে ডাকাত হত্যাকাণ্ডও ঘটায় এবং মালও লুণ্ঠন করে তাহার শাস্তি সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, ইমাম (শাসক) ইচ্ছা করিলে প্রথমে বিপরীত দিক হইতে তাহার হাত-পা কর্তনের, অতঃপর হত্যা বা শূলীবিদ্ধ করার নির্দেশ প্রদান করিতে পারে। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে, তাহাকে শুধু মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হইবে, হস্ত-পদ কর্তনের শাস্তি প্রদান করা হইবে না।

ধারা—৮৯০

ডাকাতির উদ্যোগ অপরাধী ডাকাতির উদ্যোগ গ্রহণ করার পর স্বেচ্ছায় অথবা অন্য কোন কারণে তাহা কার্যকর না করিলে সে হদ্দের আওতায় শাস্তিপ্রাপ্ত না হইয়া বরং তাযীরের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

ডাকাতি সংঘটিত হইলে কেবল হদ্দের শাস্তি কার্যকর করা যায়। এখানে অপরাধী কেবল অপরাধের উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে এবং এমন কিছু অপরাধও হয়ত করিয়াছে যাহার জন্য হদ্দের আওতায় শাস্তি দেওয়া যায় না। এই অবস্থায় অপরাধী তাযীরের আওতায় শাস্তি ভোগ করিবে এবং আদালত অপরাধের মাত্রা

৭০৭

বিবেচনা করিয়া শাস্তির ধরন ও পরিমাণ নির্ধারণ করিবে।

ধারা-৮৯১

ডাকাতকে হত্যা করিলে আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রতিরোধ বা আত্মরক্ষা করিতে গিয়া, আক্রমণকারী ডাকাতকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করিলেও শাস্তিযোগ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

আত্মরক্ষা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। ডাকাত অপর ব্যক্তির উপর আক্রমণ চালাইয়া নিজের এই অধিকার খর্ব করিয়াছে এবং অপরের অধিকারে অন্যায় হস্তক্ষেপ করিয়াছে। অনন্তর আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ডাকাতকে প্রতিরোধ না করে এবং সে নিহত হয় তবে সেই ক্ষেত্রে দুইটি প্রাণ ধ্বংস হয়। অর্থাৎ কিসাসস্বরূপ ডাকাত নিহত হয়। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি ডাকাতকে হত্যা করিলে

অন্তত একটি প্রাণ রক্ষা পায় এবং জানের ক্ষতির পরিমাণ অর্ধেক কমিয়া যায়।

ধারা-৮৯২

ডাকাতির প্রমাণ আদালতে মামলা রুজু হওয়ার পর সাক্ষ্য-প্রমাণ অথবা স্বীকারোক্তির দ্বারা অপরাধ প্রমাণিত হইবে।

বিশ্লেষণ

দুইটি পন্থায় অপরাধ প্রমাণিত হইবে- (এক) সাক্ষ্য-প্রমাণের দ্বারা। যেমন একদল লোক ডাকাতি করিয়াছে এবং কিছু লোক তাহা প্রত্যক্ষ করিয়াছে এবং আদালতে অপরাধীকে সনাক্ত করিতে সক্ষম হইয়াছে। অথবা ডাকাতদল হাতেনাতে পুলিশের নিকট বা জনতার নিকট ধরা পড়িয়াছে। (দুই) স্বীকারোক্তি দ্বারা, যেমন অপরাধী স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি প্রদান করিয়াছে।

৭০৮

ধারা-৮৯৩

লুণ্ঠনকৃত মাল সম্পর্কিত বিধান (ক) লুণ্ঠনকৃত মাল অবিকল বিদ্যমান থাকিলে তাহা মালিক ফেরত পাইবে;

(খ) লুণ্ঠনকৃত মাল বিদ্যমান না থাকিলে ডাকাতের উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

ডাকাত তাহার অপরাধের দণ্ড ভোগ করিবে এবং লুণ্ঠনকৃত মাল তাহার নিকট বা অপরের নিকট বিদ্যমান পাওয়া গেলে তাহা মালিক ফেরত পাইবে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেনঃ

من وجد عين ماله فهو أحق به .

“কোন ব্যক্তি তাহার মাল হুবহু বিদ্যমান পাইলে সে উহার সর্বাধিক হকদার।” অনন্তর মহানবী (স) সাফওয়ান (রা)-র চাদর তাহাকে ফেরত প্রদান করেন এবং চোরের হস্ত কর্তনের নির্দেশ দেন।

কিন্তু মাল বিদ্যমান না থাকিলে সে কেবল ডাকাতির দণ্ড ভোগ করিবে এবং মালের ক্ষতিপূরণ তাহার উপর আরোপিত হইবে না। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি সুস্পস্ট হইবে। একদল ডাকাত কোন ব্যাংক হইতে টাকা ছিনতাই করিল। অতঃপর তাহারা টাকাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়িল। এই অবস্থায় উদ্ধারকৃত টাকা ব্যাংক ফেরত পাইবে এবং ডাকাতদল তাহাদের অপরাধের শাস্তি ভোগ করিবে। কিন্তু টাকা উদ্ধার করা সম্ভব না হইলে ডাকাতদল কেবল তাহাদের অপরাধের শাস্তি ভোগ করিবে। তাহাদের উপর ছিনতাইকৃত টাকার ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে না, কিন্তু শাফিঈ মাযহাবমতে মালের ক্ষতিপূরণ প্রদানও বাধ্যকর হইবে।

ধারা-৮৯৪

ডাকাতির একাধিক অপরাধ একাধিক বার ডাকাতির জন্য একাধিক দণ্ড প্রদত্ত হইলে অপরাধী কেবল গুরুতর দণ্ডটি ভোগ করিবে।

৭০১

বিশ্লেষণ

ডাকাতদল একাধিক বার ডাকাতি করিয়া অবশেষে গ্রেপ্তার হইয়াছে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী প্রতিটি ক্ষেত্রে তাহাদের হস্তপদ কর্তনের শাস্তি হইলে কেবল একবারই হস্তপদ কর্তন করা হইবে। যদি অবস্থা এইরূপ হয় যে, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী কোন ক্ষেত্রে হস্তপদ কর্তন, কোন ক্ষেত্রে কারাদণ্ড এবং কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বাধ্যকর হইয়াছে, সেই অবস্থায় অপরাধী শুধু মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ভোগ করিবে। হস্তপদ কর্তন ও কারাদণ্ডের শাস্তি বাধ্যকর হইলে কেবল হস্তপদ কর্তনের শাস্তি কার্যকর হইবে। অর্থাৎ একাধিক অপরাধে দণ্ডিত হইলে ডাকাত কেবল গুরুতর দণ্ডটিই ভোগ করিবে।

ধারা—৮৯৫

অপরাধ ক্ষমা বা সমঝোতা (ক) আদালত বা ক্ষত্মিস্ত পক্ষ অপরাধীকে ক্ষমা করিতে পারে না; (খ) আদালত হদ্দ রহিত করিতে পারে না এবং অপরাধীকে নিঃশর্ত মুক্তিও দিতে পারে না;

(গ) ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ অপরাধীর সহিত সমঝোতাও করিতে পারে না।

বিশ্লেষণ

অপরাধীর জন্য মৃত্যুদণ্ড, হস্তপদ কর্তন বা কারাদণ্ড যে কোন প্রকারের শাস্তি হইলে আদালত বা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ তাহা ক্ষমা করিতে পারে না। অনুরূপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ কোন কিছুর বিনিময়ে অথবা বিনিময় ব্যতীত অপরাধীর সহিত সমঝোতা (21)-ও করিতে পারে না এবং তাহাকে অপরাধের দায়মুক্ত (।)-ও করিতে পারে না। অনুরূপভাবে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর আদালত অপরাধীকে ছাড়িয়াও দিতে পারে না এবং শাস্তি মওকুফও করিতে পারে না।

ধারা—৮৯৬

হদ্দ রহিত হওয়ার কারণসমূহ নিম্নোক্ত যে কোন কারণে হদ্দ রহিত হইয়া যাইতে পারে—(১) ক্ষতিগ্রস্ত

৭১০

ব্যক্তি ডাকাতের অপরাধ বা স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান করিলে;

(২) অপরাধী স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করিলেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, কেবল হ-এর ক্ষেত্রে স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারযোগ্য হইবে, কিসাস বা মালের দামান-এর ক্ষেত্রে নহে;

(৩) ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সাক্ষীগণের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করিলে;

(৪) মোকদ্দমা দায়েরের পূর্বে অথবা পরে অপরাধী লুণ্ঠনকৃত মালের মালিক হইয়া গেলে;

(৫) অপরাধী ধরা পড়ার পূর্বে লুণ্ঠনকৃত মাল ফেরত দিয়া তওবা করিলে;

(৬) প্রত্যেক অপরাধীর ভাগে প্রাপ্ত মাল নেসাব পরিমাণ না হইলে।

বিশ্লেষণ

‘ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ডাকাতের অপরাধ অস্বীকার বা তাহার স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান করিলে অর্থাৎ সে অপরাধীকে দেখাইয়া দিয়া বলিল, এই ব্যক্তি ডাকাতি করে নাই বা সে ডাকাত দলে অন্তর্ভুক্ত ছিল না বা তাহার স্বীকারোক্তি সত্য নহে। এই অবস্থায় হদ্দ কার্যকর হইবে না।

অপরাধী স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি করার পর তাহা প্রত্যাহার করিতে পারে। এই অবস্থায় সে ডাকাতির শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে। কিন্তু কিসাস ও দামান অর্থাৎ মালের ক্ষতিপূরণ-এর বেলায় অপরাধীর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের কোন কার্যকারিতা নাই। একটি মূলনীতি এই যে, “হদ-এর ক্ষেত্রে অপরাধীর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারযোগ্য, কিন্তু কিসাস ও মাল সম্পর্কিত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যাহারযোগ্য নহে”।

‘ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করিলে অর্থাৎ সে বলিল, অমুক ব্যক্তি যে সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে তাহা সত্য নহে অথবা যেই ব্যক্তি ৬াকাতি করিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে সেই ব্যক্তি ডাকাতি করে নাই। এই অবস্থায়ও হদ্দ রহিত হইয়া যাইবে।

৭১১

মোকদ্দমা রুজু করার পূর্বে বা পরে কিন্তু আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পূর্বে অপরাধী কোন বৈধ পন্থায় লুণ্ঠনকৃত মালের মালিক হইয়া গেলে হদ্দ রহিত হইয়া যাইবে। যেমন মালের মালিক উক্ত মাল ডাকাতকে হেবা করিয়া দিল বা তাহার নিকট বিক্রয় করিল ইত্যাদি। আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পরে কিন্তু তাহা কার্যকর করার পূর্বে মালের এই হস্তান্তর ঘটিলে সেই ক্ষেত্রে হদ্দ রহিত হইবে কি না এই বিষয়ে মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে আদালতের রায় কার্যকর করার পূর্বে মালিকানার হস্তান্তর ঘটিলে হদ্দ রহিত হইয়া যাইবে। পক্ষান্তরে ইমাম আবু ইউসুফ ও শাফিঈ (র)-এর মতে আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পরে এই হস্তান্তর ঘটিলে হদ্দ রহিত হইবে না, যদিও অপরাধী মালের মালিক হইয়া যাইবে। হদ্দ রহিত না হওয়ার সমর্থনে তাহা নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করেনঃ “এক ব্যক্তি সাফওয়ান (রা)-র চাদর চুরি করিল তাহাকে রাসূলুল্লাহ (স)-এর সামনে হাযির করা হয়। রসূলুল্লাহ (স) তাহার হত কর্তনের নির্দেশ দেন। সাফওয়ান (রা) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো ইহা কামনা করি নাই। আমি চাদরটি তাহাকে দান করিতেছি। রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন, তাহাকে আমার নিকট উপস্থিত করার পূর্বে তাহা কর নাই কেন?”

অপরাধী ধরা পড়িবার আগেই লুণ্ঠনকৃত মাল উহার মালিককে ফেরত প্রদান করিয়া তওবা করিলেও হদ্দ রহিত হইয়া যাইবে। মহান আল্লাহর বাণীঃ

الا الذين تابوا من قبل أن تقدروا عليهم فاعلموا أن الله غفور رحيم.

“তবে তোমাদের আয়ত্তাধীনে আসিবার পূর্বে যাহারা তওবা করিবে তাহারা ব্যতীত। জানিয়া রাখ, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”- (সূরা মাইদাঃ ৩৪)।

প্রত্যেক অপরাধীর ভাগের মাল দশ দিরহামের (অর্থাৎ ৪.৪৫৭ গ্রাম স্বর্ণের বা উহার মূল্যের সমপরিমাণ অপেক্ষা কম হইলে হদ্দ রহিত হইয়া যাইবে এবং অপরাধী তাযীরের আওতায় শাস্তি ভোগ করিবে। মহানবী (স) বলেনঃ

قطع فيما دون عشرة دراهم.

“দশ দিরহামের কমে হস্তকর্তন নাই।”

৭১২

ধারা-৮৯৭’

হদ্দ রহিত হওয়ার ফলাফল (ক) তওবার কারণে অথবা স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যানের কারণে অথবা ধারা (৮৮৭) মোতাবেক হদ বাধ্যকর হওয়ার শর্তাবলীর মধ্যে কোন শর্ত অপূর্ণ থাকার কারণে হ রহিত হইলে এবং অপরাধ——(১) শুধু মাল লুণ্ঠন পর্যন্ত সীমিত থাকিলে অপরাধী মালিককে লুণ্ঠনকৃত মাল ফেরত প্রদান করিবে, যদি তাহা হুবহু বিদ্যমান থাকে, অন্যথায় ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবে;

(২) হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়াইলে, যেই অপরাধী হত্যা করিয়াছে তাহাকে নিহতের ওয়ারিসগণ ক্ষমা না করিলে তাহার মৃত্যুদণ্ড হইবে;

(৩) মাল লুম ও হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়াইলে সেই ক্ষেত্রে উপধারা (১) ও (২)-এর বিধান প্লযোজ্য হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, লুণ্ঠনকৃত মাল বিদ্যমান না থাকিলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর উপর মালের ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে না;

(৪) মাল লুণ্ঠন ও আহত করা পর্যন্ত গড়াইলে সেই ক্ষেত্রে কিসাস বাধ্যকর হইবে, যদি তাহা কার্যকর করা সম্ভব হয়, অন্যথায় “আরশ’ প্রদান ৰাষ্যকর হইবে এবং লুণ্ঠনকৃত মাল হুবহু বিদ্যমান থাকিলে তাহাও ফেরত প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(খ) ক্ষত্মিস্ত পক্ষ কর্তৃক অপরাধীর স্বীকারোক্তি অথবা সাক্ষীগণের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে হদ্দ রহিত হইলে সেই ক্ষেত্রে অপরাধী বেকসুর খালাস পাইবে।

বিশ্লেষণ

অপরাধী ধরা পড়ার পূর্বে তওবা করিয়া লুণ্ঠনকৃত মাল ফেরত দিলে সে হদ্দের দণ্ড হইতে রেহাই পাইবে। সে যদি হত্যাকাণ্ড ঘটাইয়া থাকে অথবা আহত করিয়া থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে সে হদ্দের দণ্ড হইতে রেহাই পাইবে বটে, কিন্তু

৭১৩

কিসাসের দণ্ড হইতে রেহাই পাইবে না। তবে এই ক্ষেত্রে তাহার কিসাসের দণ্ড হইতে রেহাই পাইবার একটি সুযোগ সৃষ্টি হইতে পারে। তাহা এই যে, নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ বা আহত ব্যক্তি ইচ্ছা করিলে তাহাকে ক্ষমা করিয়া দিতে পারে, বিনিময় (দিয়াত) গ্রহণ করিয়া অথবা বিনিময় ব্যতীত। আহত করার ক্ষেত্রে কোন কারণে কিসাস কার্যকর করা সম্ভব না হইলে “আরশ” প্রদান বাধ্যকর হইবে। স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান করার কারণে অথবা যেসব শর্ত বিদ্যমান পাওয়া গেলে হদ্দ কার্যকর করা যায় উহার মধ্যে কোন শর্ত বিদ্যমান না থাকায় হদ্দ রহিত হওয়ার ক্ষেত্রেও উপরোক্ত বিধান প্রযোজ্য।

উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে অপরাধীর সংখ্যা একাধিক হইলে যে অপরাধী হত্যাকাও ঘাইয়াছে তাহার মৃত্যুদণ্ড হইবে এবং যে অপরাধী আহত করিয়াছে তাহার তদনুপাতে শাস্তি হইবে। সকলে মিলিয়া একত্রে হত্যা করিলে সকলের মৃত্যুদণ্ড হইবে।

ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ অপরাধীর স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান করিলে অথবা সাক্ষীগণের সাক্ষ্য মিথ্যা বলিয়া সাব্যস্ত করিলে অপরাধী বেকসুর খালাস পাইবে। কারণ অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হয় নাই।

95 8.

তথ্য নির্দেশিকা

و این ی ۱۹۹ .*,Haq affen II .5

الحرابة قطع الطريق او اشهار السلاح خارج المصر و قال البعض تتحقق الحرابة داخل المصر. قطع الطريق واشهار السلاح و الصيال على من مر فيه خارج

المدن و قال البعض او داخلها .

و ده -oه .9,98,II

31

135 فهو الخروج على المارة لاخذ المال على سبيل المغالبة على وجه يمننع المارة عن المرور وينقطع الطريق سواء كان القطع من جماعة او من واحد بعد ان يكون له قوة القطع و سواء كان القطع بسلاح او غيره من العصا والحجر والخشب ونحوها..

اده .9,98,113 .3

.۹,8۹ 84, II;له -oه .9,98,19 یاری

SITTxSl

,

for

Isr

, for .9

۹-اطلا

৪. আবু দাউদ, কিতাবুল হুদ্দ, বাব ফীমান সারাকা মিন হির।

গ্রন্থপঞ্জী।

(ক) কুরআন (তরজমা)

• আল-কুরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদসহ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, আয়াতের তরজমায় প্রধানত ই. ফা.-র এই তরজমাই অসুনরণ করা হইয়াছে।

(খ) তাফসীর ০ আহকামুল কুরআন, আবু বা আহমাদ ইবন আলী আর-রাযী আল-জাসসাস আল-হানাফী (জন্ম ৩০৫/৯১৭, মৃ. ৩৭৫/৯৮০), বাংলা অনু. মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম খণ্ড, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮/১৯৮৮; ২য় খণ্ড, ১ম সংস্করণ, ১৪০৯/১৯৮৮। অনুবাদকের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট খণ্ড এখনও অনূদীত হয় নাই। আরবী সংস্করণ : দারুল ফি, বৈরূত, তিন খণ্ডে সমাপ্ত।

• আল জামে লি-আহকামিল কুরআন, আবু আবদিল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ আল-আনসারী আল-কুরতবী (মৃ. ৬৭১/১২৭২), বিশ খণ্ডে সমাপ্ত, বৈরূত ১৯৬৪ খৃ.।

• তাফসীরুল কাবীর, ইমাম ফাখরুদ্দীন রাযী আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন উমার (জন্ম ৫৪৩/১১৪৯, মৃ. ৬০৬-১২০৯), ৩য় সংস্করণ, বৈরূত, ২য়

সংস্করণ, তেহরান, ৩০ খণ্ডে সমাপ্ত।

০ তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (তাফসীরে ইব্‌ন কাছীর নামে প্রসিদ্ধ), আবুল ফিদা ইসমাঈল ইব্‌ন কাছীর আম্‌দ-দিমাশকী (মৃ. ৭৭৪/১৩৭২)। মুহাম্মাদ আলী আস-সাবুনীকৃত সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, বৈরূত ১৪০০/১৯৮০ (পঞ্চম সং)। বৃহৎ সংস্করণের তিন খণ্ডের বংগানুবাদ ই. ফা. কর্তৃক প্রকাশিত হইয়াছে।

৭১৬

তাফহীমুল কুরআন (উর্দু), মাওলানা সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী, জন্ম ১৩২১/১৯০৩, মৃ. ১৪০০/১৯৭৯, ছয় খণ্ডে সমাপ্ত, ৮ম সংস্করণ, লাহাের ১৯৮৩ খৃ.; বাংলা অনুবাদ ও মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, ১৯ খণ্ডে সমাপ্ত, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা। ইংরাজী ও তুর্কী ভাষা ছাড়াও উপমহাদেশীয় গুরুত্বপূর্ণ চৌদ্দটি ভাষায় পূর্ণ অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে।

০ বায়ানুল কুরআন (উর্দু), হাকীমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, জন্ম ১২৮০/১৮৬২, মৃ. ১৩৬২/১৯৪৩, তাজ পাবলিশার্স, দিল্লী। বাংলা অনুবাদ : মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, ছয় খণ্ডে প্রকাশিত, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ঢাকা। পরবর্তী কালের উর্দু তাফসীরসমূহ বলিতে গেলে এই তাফসীরকে ভিত্তি করিয়াই রচিত।

• মাআরিফুল কুরআন (উর্দু), মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী, করাচী সংস্করণ, আট খণ্ডে সমাপ্ত, ফিকহী বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হইয়াছে। বাংলা অনুবাদ : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা।

আল মুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন, আবুল কাসিম আল-হুসায়ন ইন মুহাম্মাদ (রাগিব ইসফাহানী নামে প্রসিদ্ধ), মৃ. ৫০২ হি. (১১০৮ খৃ.), আরামবাগ, করাচী সংস্করণ।

(গ) হাদীস আবূ দাউদ (মূল নাম সুনান আবী দাউদ), সংকলক : সুলায়মান ইবনুল আশআছ আস-সিজিস্তানী, জ. ২০২ হি. (৮১৭ খৃ.), মৃ. ২৭৫ হি. (৮৮৮ খৃ.)।

০ ইবন মাজা, সংকলক ও হাফেজ আবূ আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইয়াযীদ ইবন মাজাহ আল-কায়বীনী, জ, ২০৭ হি. (৮২২ খৃ.), মৃ. ২৭৫ হি. (৮৮৮ খৃ:)। মুহাম্মাদ ফুআম্‌দ আবদুল বাকী সম্পা., বৈরূত সংস্করণ, হাদীসগুলি অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে সাজানো হইয়াছে।

( কানযুল উম্মাল ফী সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী মুত্তাকী ইন হুসামুদ্দীন আল-হিন্দী আল-বুরহানপুরী (মৃ. ৯৭৫/১৫৬৭), গ্রন্থখানিকে হাদীসের একটি বিশ্বকোষ বলা যায়। ১ম সংস্করণ, আলেপ্পো ১৩৭৯/১৯৬৯, ষোল খণ্ডে সমাপ্ত, ইহা (হায়দরাবাদ, ভারত) হইতে

৭১৭

প্রকাশিত সংস্করণের সুবিন্যস্ত রূপ।

০ তিরমিযী, আবু ঈসা মুহাম্মাদ ইবন ঈসা ইব্‌ন সাওরাহ (সূরাহ), জ. ২০৯ হি., (৮২৪ খৃ.), মৃ. ২৭৯ হি. (৮৯২ খৃ.)। আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির সম্পা. বৈরূত সংস্করণ, পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার হইতে আংশিক বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে।

দারিমী (আস-সুনান), আবূ মুহাম্মাদ আবদিল্লাহ ইবন আবদির রহমান সামারকান্দী আম্‌দ-দারিমী (সোভিয়েট উজবেকিস্তানের অন্তর্গত), জন্ম ১৮১/৭৯৮, মৃ. ২৫৫/৮৬৯। কতিপয় হাদীসবেত্তা ইব্‌ন মাজার পরিবর্তে এই গ্রন্থকে সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন।

দারু কুতনী (সুনান), আবুল হাসান আলী ইবন উমার দারা কুতনী, ৩০৫ বা ৩০৬ হিজরীতে (৯১৭-১৮ খৃ.) বাগদাদে জন্ম, ৩৮৫ হি. (৯৯৫ খৃ.) মৃত্যু।

নায়লুল আওতার, মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন মুহাম্মাদ আশ-শাওকানী আস-সানআনী, জ. ১১৭২/১৭৫৮; মৃ. ১২৫০/১৯৩৪, চার ভলমে আট খণ্ডে সমাপ্ত, ইহাকে হাদীস ভিত্তিক ফিকহ গ্রন্থ বলা হয়। মিসরীয় সংস্করণ।

. নাসাঈ, ১ম সংস্করণ, বৈরূত ১৩৪৮/১৯৩০। মূল নাম আস-সুনান। হাফেজ আবু আবদির রহমান ইব্‌ন শুআয়ব আন-নাসাঈ (র), জ, ২১৫ হি. (৮৩০ খৃ.), মৃ. ৩০৩ হি. (৯১৫ খৃ.)।

বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা (মূল নাম), আবু বা আহমাদ ইন হুসায়ন, খুরাসানের বায়হাক নামক স্থানে ৩৮৪/৯৯৪ সালে জন্ম, মৃ. ৪৫৮/১০৬৬ সালে নিশাপুরে। ১ম সংস্করণ, হায়দরাবাদ (দাক্ষিণাত্য) ১৩৪৪ হিজরী, বৃহৎ দশ খণ্ডে সমাপ্ত।

০ বুখারী (আস-সহীহ) আবু আবদিল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল আল-বুখারী (র), জন্ম ১৮৪ হি. (৮০৯ খৃ.), মৃ. ২৫৬ হি. (৮৬৯ খৃ.)। ভারতীয় সংস্করণ, বৃহৎ দুই খণ্ডে সমাপ্ত, পূর্ণাংগ বাংলা ও ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে।

০ মাসআলা মিলকিয়াতে যমীন, সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী, ইসলামিক

৭১৮

পাবলিকেশন্স লি, লাহাের, ৬ষ্ঠ সং, ১৯৮২ খৃ.।

• মিশকাতুল মাসাবীহ, মুহীউস সুন্নাহ বাগাবী মৃ. ৫১৬ (র)-এর মাসাবীহুস সুন্নাহ্ গ্রন্থের বর্ধিত বা সংযোজিত সংস্করণ, সংকলক : ওয়ালিয়ুদ্দী আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন আবদিল্লাহ্ (খতীব তাবরীযী নামে সমধিক প্রসিদ্ধ), মৃ. ৭৩৭, মুহাম্মাদ নাসেরুদ্দীন আল-আলবানী কর্তৃক সম্পাদিত, ২য় সংস্করণ, বৈরূত ১৩৯৯/১৯৭৯, তিন খণ্ডে সমাপ্ত। ভারতীয় সংস্করণ এক ভলিউমে সমাপ্ত। গ্রন্থখানির বাংলা ও ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে। বাংলা অনু. মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ঢাকা।

• মুওয়াত্তা ইমাম মালিক (র), জন্ম. ৯৩ হি. (৭১১ খৃ.), মতান্তরে ৯৫ হি.; মৃ. ১৭৯ হি. (৭৯৮ খৃ.), ২য় সংস্করণ, আল-মাকতাবাতুল ইলমিয়্যা ১৩৯৯/১৯৭৯। গ্রন্থখানির পূর্ণাংগ বাংলা ও ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে।

০ মুওয়াত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ (র), বাংলা অনু. মুহাম্মদ মূসা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম সংস্করণ ১৪০৮/১৯৮৮, অনুবাদক কর্তৃক প্রয়োজনীয় মূল্যবান টীকা সংজোযিত।

. আল-মুসতাদরাক, হাকেম নীশাপূরী, ৪ খণ্ডে. বৃহৎ দুই ভলমে সমাপ্ত।

মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (র) জন্ম, ১৬৪/৭৮০, মৃত্যু ২৪১/৮৫৫, মিসরীয় সংস্করণ, মোট ছয় খণ্ডে সমাপ্ত।

মুসলিম (আস-সহীহ), আবুল হাসান মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ ইন মুসলিম আল-কাসীরী, জ, ২০২ হি. (৮১৭ খৃ.), মৃ. ২৬১ হি. (৮৭৪ খৃ.)। মাআ শারহিন নাবাবী, ১ম সংস্করণ, বৈরূত ১৩৪৭/১৯২৯, নয় ভলমে আঠার খণ্ডে সমাপ্ত। আংশিক বাংলা ও পূর্ণাংগ ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে।

. শারহু মাআনিল আছার (তহাবী শরীফ নামে প্রসিদ্ধ), আবু জাফর আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন সালামা ইবন আবদিল মালিক আল-মিসরী আত-তাহাবী (জ. ২২৯/৮৪৩, মৃ. ৩২১/৯৩৩)। ১ম সংস্করণ, বৈরূত ১৩৯৯/১৯৭৯, চার খণ্ডে সমাপ্ত।

(ঘ) হাদীসের ভাষ্যগ্রন্থ। আওনুল মাবুদ, আবুত তায়্যিব মুহাম্মদ শামসুল হক আজীমাবাদী (সুনান আবী দাউদের ভাষ্যগ্রন্থ), ২য় সংস্করণ, মদীনা মুনাওয়ারা ১৩৮৮/১৯৬৮, চৌদ্দ খণ্ডে সমাপ্ত।

1ণাধবদ্ধ ইসলামী আইন

৭১১

• আকদিয়াতুর রাসূল (স), আশ-শায়খুল ইমাম আল-মুহাদ্দিস আল্লামা আৰু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনুল ফারাজ আল-মালিকী আল-কুরতবী, ইবনুত তুল্লা আল-আন্দালুসী নামে প্রসিদ্ধ (মৃ. ৪৯৭/১১০৪), আল কাসীম, বুরায়দা (সৌদী আরব) সংস্করণ। উর্দু অনু. ও বিস্তারিত টীকা সংযোজন : ডঃ মুহাম্মাদ যিয়াউর রহমান আজমী, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সংস্করণ, ইদারা মাআরিফ ইসলামী, মানসূরা, লাহাের ১৯৮৮ খৃ.।

উমদাতুল কারী (শারহু সহীহ বুখারী), বাদরুদ্দীন আবু মুহাম্মাদ মাহমূদ ইবন আহমাদ আল-আয়নী (মৃ. ৮৫৫/১৪৫১)। বৈরূত সংস্করণ, ১২ ভমে ২৪ খণ্ডে সমাপ্ত।

তুহফাতুল আহওয়াযী (শারহুত তিরমিযী), ৮ খণ্ডে সমাপ্ত।

নাসাবুর রায়াহ আল-আহাদীসিল হিদায়া, আবদুল্লাহ্ ইউসুফ আয যায়লাঈ (৭৪৩/১৩৪২), যেসব হাদীসের ভিত্তিতে হিদায়ার গ্রন্থকার তাঁহার ফকীহসূলভ মত ব্যক্ত করিয়াছেন অত্র গ্রন্থে সেইসব হাদীস পূর্ণ সনদসহ সংগ্রহ করা হইয়াছে।

ফাতুহল বারী, ইবন হাজার আল-আসকালানী (জ. ৭৭৩/১৩৭১, মৃ. ৮৫২/১৪৪৮), (সহীহ বুখারীর অন্যতম বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ), বৈরূত সংস্করণ, তের খণ্ডে সমাপ্ত।

বাযলুল মাজহুদ ফী হাল্লি আবী দাউদ, মাওলানা খলীলুর রহমান সাহারানপুরী (মৃ. ১৩৪৬/১৯২৭), কায়রো সংস্করণ ১৪০৮/১৯৮৮ (বিশ খণ্ডে সমাপ্ত)।

(ঙ) ফিকহ, উসূল ও অন্যান্য

• আলামগীরী, ৩য় সংস্করণ (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া নামে), বৈরূত ১৪০০/১৯৮০, ৬ খণ্ডে সমাপ্ত, ভারতীয় সংস্করণ ফাতাওয়া আলামগীরী নামে, সরকারী উদ্যোগে ইহাই সর্বপ্রথম ফিকহ বা ফাতাওয়ার সংকলন। সম্রাট আওরংগযেব আলমগীর (জ. ১০২৭/১৬১৮, মৃ. ১১১৮/১৭০৭)-এর নির্দেশে তৎকালীন ভারতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমগণের একটি বাের্ড কর্তৃক রচিত।

• আহকামুস সুলতানিয়্যা=আল-উলায়াতুদ দীনিয়া ফী আহকামিস

৭২০

সুলতানিয়া, আবুল হাসান আলী ইবন মুহাম্মাদ ইবন হাবীব আল-মাওয়ারদী (মৃ. ৪৫০/১০৫৮), বৈরূত ১৩৯৮/১৯৭৮।

০ আল ইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা, ইব্‌ন হাজার আল-আসকালানী (জ. ৭৭৩/১৩৭২, মৃ. ৮২৫/১৪৪৯), মিসর ১৩৮৮ হিজরী, চার খণ্ডে সমাপ্ত সাহাবায়ে কিরামের জীবনীমূলক গ্রন্থ।

আল-আহ্কাম ফী উসূলিল আহকাম, ইবন হাযম আল-আন্দালুসী (জন্ম. ৩৮৪/৯৯৪, মৃ. ৪৫৬/১০৬৪), ১ম সংস্করণ, বৈরূত। একই নামের অপর গ্রন্থের লেখক সায়ফুদ্দীন আবুল হাসান আল-আমিদী, দারুল কুতুব, রূৈত।

ইসলাম কা কানূনে তিজারাত, মাওলানা ডঃ নূর মুহাম্মাদ গিফারী, ২য় সংস্করণ, লাহাের ১৯৮৯ খৃ.।

০ কাওয়াইদুল ফিক্হ, মুফতী মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান, ঢাকা ১৩৮১/১৯৬১ সালের সংস্করণ, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, কুরআন মনজিল, ঢাকা।

কিতাবুল ফিক্‌হ আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ, আবদুর রহমান আল-জাযীরী, চার মাযহাবের বিস্তারিত মতামত সন্নিবেশিত, বৈরূত সংস্করণ।

০ তাবঈনুল হাকাইক শারহি কানযিদ দাকাইক, ফাখরুদ্দীন উসমান ইবন আলী আয-যায়লাঈ (মৃ. ৭৪৩/১৩৪২), ১ম সং., কূলাক (মিসর) ১৩১৫ হি. এবং মুলতান (পাকিস্তান) সংস্করণ।

আত-তাবাকাতুল কুবরা, মুহাম্মাদ ইবন সাদ (মৃ. ২৩১/৮৪৫), বৈরূত সংস্করণ, ৮ খণ্ডে সমাপ্ত জীবনমূলক ইতিহাস গ্রন্থ।

. আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী (ইসলামের ফৌজদারী দণ্ডবিধি), আবদুল কাদের আওদাহ শহীদ (মিসর), বৃহৎ দুই খণ্ডে সমাপ্ত, ৪র্থ সংস্করণ ‘বৈরূত ১৪০৪/১৯৮৩।

। নিহায়াতুল মুহতাজ ইলা শারহিল মিনহাজ, আবুল আবাস আর-রামলী, ১ম সংস্করণ, হালাব (আলেপ্লো), শাফিঈ মাযহাবের ফিকহ গ্রন্থ।

• ফাতহুল কাদীর (শারহু), কামালুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ওয়াহিদ (ইবনুল হুমাম নামে প্রসিদ্ধ), মৃ. ৬৭১/১২৭২, বৈরূত সংস্করণ।

আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, ডঃ ওয়াহ্বা আয-যুহায়লী,

৭২১

দারুল ফিকর, বৈরূত, বৃহৎ আট খণ্ডে সমাপ্ত, দ্বিতীয় সংস্করণ, বৈরূত ১৪০৯/১৯৮৯, চার মাযহাবের মতামতসহ অপরাপর ইমামের গুরুত্বপূর্ণ মতও সংযোজিত (এই গ্রন্থখানির ব্যাপক সহায়তা গ্রহণ করা হইয়াছে)।

০ ফিকহুস সুন্নাহ, আস-সায়্যিদ সাবিক, ৪র্থ সংস্করণ, বৈরূত ১৪০৩/১৯৮৩, তিন খণ্ডে সমাপ্ত এবং চার মাযহাবের মতামত সংযোজিত।

০ বাদাইউস সানাঈ ফী তারতীবিশ শারাই, ইমাম আলাউদ্দীন আবূ বা ইবন মাসউদ আল-কাসানী আল-হানাফী (মৃ. ৫৮৭/১১৯১), গ্রন্থখানি বৃহৎ সাত খণ্ডে বিভক্ত, ২য় সংস্করণ, বৈরূত ১৪০৩/১৯৮২। গ্রন্থখানির চমৎকার উর্দু অনুবাদ লাহাের হইতে প্রকাশিত হইয়াছে।

. বিদায়াতুল মুজতাহিদ, আবুল ওয়ালীদ মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ (ইন রুশদ নামে প্রসিদ্ধ), জ, ৫২০/১১২৬, মৃ. ৫৯৫/১১৯৮, ৫ম সংস্করণ, বৈরূত ১৪০৩/১৯৮১, চার খণ্ডে সমাপ্ত।

• আল-বাহরুর রাইক শারহি কানযিদ দাকাইক, যায়নুদ্দীন ইন নুজায়ম আল-হানাফী (জ. ৯২৬/১৫২০, মৃ. ৯৭০/১৫৬৩), করাচী সংস্করণ।

• আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২৬ খণ্ডের কাজ সমাপ্ত হয়েছে ফিকহ-এর উপর একটি মূল্যবান বিশ্বকোষ, কুয়েত সরকারের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত, ১ম সংস্করণ ১৪০৩/১৯৮৬।

আল-মাবসূত, আবূ বা মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ ইবন আবূ সাল শামসুল আইম্মা আস-সারাখসী, করাচী সংস্করণ ১৪০৭/১৯৮৭, তিরিশ খণ্ডে সমাপ্ত।

• আল-মুখতাসার ফিল ফিকহ (কুদূরী নামে প্রসিদ্ধ), আবু আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন জাফর আল-বাগদাদী আল-কুদূরী (জ. ৩৬৩/৯৭৩, মৃ. ৪২৮/১০৩৬)। হানাফী মাযহাবের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ফিকহ গ্রন্থ, এমদাদীয়া লাইব্রেরী, ঢাকা।

আল-মুগনী, মুওয়াফফাকুদ্দীন মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ ইবন কুদামা (জন্ম ৫৪১/১১৪৬, মৃ. ৬২০/১২২৩), কায়রো, ১ম সংস্করণ, গ্রন্থখানি বৃহৎ আট খণ্ডে বিভক্ত (হাম্বলী মাযহাবের ফিকহ গ্রন্থ)।

• ৭২২.

মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, ডঃ মুহাম্মাদ রাওয়ান ও ডঃ হামেদ সাদেক, ১ম সংস্করণ, করাচী (পাকিস্তান)।

আল-মুনজিদ (অভিধান গ্রন্থ, আরবী-আরবী), লুইস মার্ফ, ১৯শ সংস্করণ, বৈরূত।

রদুল মুহতার আলাদ-দুররিল মুখতার (ফাতওয়া শামী নামে সুপ্রসিদ্ধ), মুহাম্মদ আমীন (ইবন আবিদীন শামী নামে প্রসিদ্ধ, জ. ১১৯৮১৭৫৪, মৃ. ১২৫৮/১৮৪২), ৬ খণ্ডে সমাপ্ত, বৈরূত সংস্করণ।

লিসানুল আরাব, ইবন মানজুর (মৃ. ৭১১/১৩১১), দারুল মাআরিফ, কায়রো, বৃহৎ ছয় খণ্ডে সমাপ্ত, আরবী ভাষা সংক্রান্ত বিশ্বকোষ।

আশ-শারহুল কাবীর আলা মানিল মুকনা, শামসুদ্দীন আবুল ফারাজ আবদুর রহমান ইবন কুদামা, জন্ম ৫৯৭/১২০০, মৃ. ৬৮২/১২৮৩ (হাম্বালী মাযহাবের ফিকহ গ্রন্থ)।

শারহুল বিকায়া, ভারতীয় সংস্করণ, দুই খণ্ডে সমাপ্ত।

শারহুয যারকানী আলা মুখতাসারিল খালীল, আবদুল বাকী আয-যারকানী (জন্ম. ১০২০/১৬১১, মৃ. ১০৯৯/১৬৮৭), মুহাম্মাদ আফিন্দী মুসতাফা সংস্করণ (মালিকী মাযহাবের ফিকহ গ্রন্থ)।

০ আল-হিদায়া, বুরহানুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইব্‌ন আবূ বা ইবন আবদিল জালীল আল- ফারগানী আল-মারগীনানী (মৃ. ৫৯৩/১১৯৯), চার খণ্ডে সমাপ্ত, হানাফী মাযহাবের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ ফিকহ গ্রন্থ। কুতুবখানা রহীমিয়া, দেওবন্দ (ভারত)। গ্রন্থখানির ইংরাজী অনুবাদক চার্লস হ্যামিলটন, নয়াদিল্লী ১৯৭৯ খৃ. সংস্করণ।

ইফাবা/গবেষণা/২০০৭-২০০৮[৫৭৫২/(উন্নয়ন)—৩,২৫০

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *