1 of 2

৩৭. খুনছা (উভয় লিঙ্গধারী) ও মাফকূদ (নিখোঁজ ব্যক্তি)

অধ্যায় : ৩৭ খুনছা (উভয় লিঙ্গধারী) ও মাফকূদ (নিখোঁজ ব্যক্তি)

ধারা-৮৭৪

সংজ্ঞা (ক) জন্মগতভাবে যেই ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ ও যৌনাঙ্গ উভয়টিই বিদ্যমান তাহাকে “খুনছা” বলে।

(খ) বাল্যকালে যদি তাহার—(১) পুরুষাঙ্গ দিয়া সমস্ত বা বেশীরভাগ পেশাব নির্গত হয় তবে তাহাকে “পুরুষ” গণ্য করা হইবে এবং যৌনাঙ্গ দিয়া সমস্ত বা বেশীরভাগ পেশাব নির্গত হইলে তাহাকে “নারী” গণ্য করা হইবে;

(২) উভয় লিঙ্গ দিয়া সম-পরিমাণ পেশাব নির্গত হয় তবে যে লিঙ্গ দিয়া সর্বপ্রথমে তাহা নির্গত হয় তদনুযায়ী সে পুরুষ অথবা নারী গণ্য হইবে;

(৩) উভয় লিঙ্গ দিয়া একই সময় সম-পরিমাণ পেশাব নির্গত হয় তবে তাহাকে “খুনছা মুশকিল” গণ্য করা হইবে;

(৪) পুরুষাঙ্গ দিয়া অথবা যৌনাঙ্গ দিয়া প্রথমে পেশাব নির্গত হয় এবং পরিমাণও সমান থাকে তবে তাহাকেও “খুনছা মুশকিল”গণ্য করা হইবে।

(গ) বালেগ হওয়ার পর যদি তাহার—(১) দাড়ি-মোচ গজায় অথবা পুরুষাঙ্গ দ্বারা নারীর সহিত সঙ্গম করিতে সক্ষম হয়, অথবা স্বপ্নদোষ হইলে পুরুষাঙ্গ দিয়া বীর্য নির্গত হয় অথবা স্তন স্ফীত না হয় তবে তাহাকে পুরুষ গণ্য করা হইবে;

(২) স্তন স্ফীত হয় অথবা স্তন হইতে দুর্গ নির্গত হয়, ঋতুস্রাব হয় এবং

৬৭৮

তাহার যৌনাঙ্গে সংগম করা সম্ভব হয় বা গর্ভবতী হয় তবে তাহকে নারী গণ্য করা হইবে; (৩) মধ্যে উপধারা (১) ও (২)-এ বর্ণিত কোন আলামত পরিলক্ষিত না হয় তবে তাহাকে “খুনছা মুশকিল” গণ্য করা হইবে; (৪) মধ্যে উপধারা (১) ও (২)-এ বর্ণিত উভয় প্রকারের আলামত পরিলক্ষিত হয় তবে সই ক্ষেত্রেও তাহাকে “খুনছা মুশকিল” গণ্য করা হইবে। (ঘ) “খুনছা মুশকিল” নিজেকে পুরুষ অথবা নারী বলিয়া দাবি করিলে তাহার দাবি গ্রাহ্য হইবে নাঃ তবে শর্ত থাকে যে, সে “খুনছা মুশকিল” না হইলে তাহার উক্তরূপ দাবি গ্রহণযোগ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

যে ব্যক্তি পুরুষলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়টিসহ জন্মগ্রহণ করিয়াছে তাহাকে আইনের পরিভাষায় “খুনছা” (Hermaphrodite) অর্থাৎ উভয়লিঙ্গধারী মানব (**) বলে। সে নপুংসক (খােজা) নহে, কারণ নপুংসক ব্যক্তি পুরুষ, যদিও তাহার পুরুষাঙ্গ ক্ষুদ্র যাহা দ্বারা সঙ্গম করা সম্ভব নহে। বাংলা ভাষায় খুনছার, প্রতিশব্দ হিসাবে “হিজরা” শব্দটি ব্যবহৃত হইতে দেখা যায়। বাস্তবিকপক্ষে কোন ব্যক্তি একই সংগে নারী ও পুরুষ উভয়টি হইতে পারে না, হয় সে পুরুষ হইবে অথবা নারী হইবে। অবশ্য খুনছার ক্ষেত্রে সে পুরুষ কি নারী তাহা নির্ণয় করা কখনও কষ্টকর হইয়া পড়ে। শারীরিক বিভিন্ন আলামতের উপর নির্ভর করিয়া “খুনছা” পুরুষ কি নারী তাহা নির্ধারণ করিতে হয়। মহানবী (স) -কে খুনছার মীরাস সম্পর্কিত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলেনঃ “সে যে অঙ্গ দ্বারা পেশাব করে ( 5:54 )আলী (র) কর্তৃকও অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হইয়াছে। ৩

বয়সের দিক হইতে খুনছাকে দুই অবস্থায় বিভক্ত করা হইয়াছেঃ নাবালেগ অবস্থা ও বালেগ অবস্থা। নাবালেগ অবস্থায় তাহার পুরুষাঙ্গ দিয়া সমস্ত বা অধিকাংশ পেশাব নির্গত হইলে সে পুরুষ সাব্যস্ত হইবে এবং যৌনাঙ্গ দিয়া নির্গত হইলে নারী সাব্যস্ত হইবে। এই অবস্থায় অপর অঙ্গ দিয়া পেশাব নির্গত হওয়া দৈহিক ক্রটি হিসাবে গণ্য হইবে।

৬৭১

উভয় লিঙ্গ দিয়া পেশাব নির্গত হইলে যে অঙ্গ দিয়া তাহা প্রথমে নির্গত হয় তদনুযায়ী ফয়সালা হইবে। কারণ প্রথমে যে অঙ্গ দিয়া পেশাব নির্গত হয় তাহা মূল অঙ্গ এবং যে অঙ্গ দিয়া পরে নির্গত হয় তাহা দৈহিক বৈকল্যের কারণে নির্গত হয় এবং উহা মূল অঙ্গ নহে। কোন অঙ্গ দিয়াই আগে পেশাব নির্গত না হইয়া উভয় অঙ্গ দিয়া একত্রে নির্গত হইলে সেই ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (র) তাহাকে “খুনছা মুশকিল” সাব্যস্ত করেন। অপর দিকে ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) বলিয়াছেন, যেই অঙ্গ দিয়া অধিক পেশাব নির্গত হয় তদনুযায়ী ফয়সালা হইবে। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (র)-ও অনুরূপ মত ব্যক্ত করিয়াছেন।

উভয় অঙ্গ দিয়া সম-পরিমাণ পেশাব নির্গত হইলে উপরোক্ত তিনজন ফকীহর ঐক্যমত অনুযায়ী সে খুনছা মুশকিল হিসাবে গণ্য হইবে। কারণ সেই ক্ষেত্রে কোন দিককে অগ্রাধিকার প্রদানের মত কোন কারণ বিদ্যমান নাই। অনুরূপভাবে কখনও পুরুষাঙ্গ দিয়া প্রথমে আবার কখনও যৌনাঙ্গ দিয়া প্রথমে পেশাব নির্গত হইলে এবং পরিমাণও সমান হইলে সেই ক্ষেত্রেও সে খুনছা মুশকিল গণ্য হইবে।

এই পর্যন্ত নাবালেগ খুনছার বিধান বর্ণিত হইল। খুনছা বালেগ হইলে সেই ক্ষেত্রে তাহার দাড়ি-গোঁফ গজাইলে, নারীর সহিত সঙ্গম করিতে সক্ষম হইলে, অথবা স্তন স্ফীত না হইলে সে পুরুষ গণ্য হইবে। কারণ উপরোক্ত আলামতগুলি পুরুষের চিহ্নবাহী। পক্ষান্তরে তাহার হায়েয অর্থাৎ মাসিক ঋতু হইলে, স্তন স্ফীত হইলে, বা তাহা হইতে দু নির্গত হইলে, যৌনাঙ্গে সঙ্গম করা সম্ভব হইলে অথবা সে গর্ভবতী হইলে নারী গণ্য হইবে। কারণ উপরোক্ত আলামতগুলি নারীর চিহ্নবাহী। “যৌনাঙ্গ” শব্দটি যদিও নারী-পুরুষ উভয়ের যৌনাঙ্গ বুঝায়, কিন্তু এই অধ্যায়ে উহা কেবল নারীর যৌনাঙ্গ বুঝাইবে।

যদি তাহার মধ্যে নারী বা পুরুষের চিহ্নবাহী কোন আলামতই পরিলক্ষিত না হয় অথবা যুগপভাবে উভয় প্রকার আলামত পরিলক্ষিত হয় তবে সে খুনছা মুশকিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং তাহার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমধর্মী বিধান প্রযোজ্য হইবে।

খুনছা মুশকিল নিজেকে পুরুষ অথবা নারী বলিয়া দাবি করিলে তাহার উক্তরূপ দাবি গ্রহণযোগ্য হইবে না। কারণ তাহার দাবির অনুকূলে কোন সুস্পষ্ট বা সন্দেহমুক্ত প্রমাণ বিদ্যমান নাই। তবে সে কেবল খুনছা হইলে সেই ক্ষেত্রে

৬৮০

তাহার দাবি বিবেচনাযোগ্য হইবে। কারণ সে নিজের সম্পর্কে অপরের তুলনায় অধিক অবগত।

ধারা-৮৭৫ খুনছা মুশকিল-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধান (ক) মীরাসের ক্ষেত্রে খুনছা মুশকিলকে নারী অথবা পুরুষ যাহা গণ্য করিলে সে তুলনামূলকভাবে কম পাইবে তাহাকে সেইটি গণ্য করিতে হইবে।

(খ) খুনছা মুশকিল হত্যাকাণ্ড অপেক্ষা নিম্নতর কোন অপরাধ করিলে সেই ক্ষেত্রে নারীর উপর প্রযোজ্য বিধান তাহার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।

(গ) খুনছা মুশকিল কাসামাহ”-এর অন্তর্ভুক্ত হইবে না। (ঘ) খুনছা মুশকিল মাআকিল” বহন করিবে না। (ঙ) খুনছা মুশকিল মারা যাওয়ার পর কেহ তাহাকে নিজের স্বামী বা স্ত্রী বলিয়া দাবি করিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে না; তবে তাহার মৃত্যুর পূর্বে উক্ত দাবি উত্থাপন করিলে এবং তাহা সাক্ষ্যের দ্বারা প্রমাণিত হইলে আদালত তাহার পক্ষে রায় প্রদান করিবে।

(চ) দুই খুনছা মুশকিল, পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাহাদের মধ্যে কে পুরুষ এবং কে নারী তাহা প্রতীয়মান হওয়ার পূর্বে তাহারা মারা গেলে, একে অপরের ওয়ারিস হইবে না।

(ছ) গর্ভস্থ সন্তানের অনুকূলে ওসিয়ত করা হইলে এবং সে নারী বা পুরুষ হওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইলে, অতঃপর খুনছা মুশকিল ভূমিষ্ঠ হইলে সে নারীর জন্য নির্ধারিত অংশ পাইবে।

বিশ্লেষণ

ওয়ারিসী স্বত্ব লাভের ক্ষেত্রে খুনছা মুশকিলকে নারী অথবা পুরুষ যাহা গণ্য করিলে সে তুলনামূলকভাবে কম পাইবে তাহাকে তদনুযায়ী পুরুষ অথবা নারী গণ্য করিতে হইবে। ইহা ইমাম আবু হানীফা (র)-এর অভিমত। যেমন কোন ব্যক্তি মৃত্যুকালে একটি পুত্রসন্তান ও একটি খুনছা মুশকিল রাখিয়া গেল। এই

 :

: ৬৮১

ক্ষেত্রে তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই ভাগ পুত্র ও এক ভাগ খুনছা মুশকিল পাইবে। অর্থাৎ উপরোক্ত অবস্থায় তাহাকে নারী গণ্য করিলে সে তুলনামূলকভাবে কম পায়। অনুরূপভাবে কোন স্ত্রীলোক মৃত্যুকালে স্বামী, এক সহােদর বােন এবং বিমাতার গর্ভজাত এক খুনছা মুশকিল রাখিয়া গেল। এই ক্ষেত্রে তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে স্বামী অর্ধাংশ ও সহােদর বােন অর্ধাংশ পইবে এবং খুনছা মুশকিল বঞ্চিত হইবে। এখানে খুনছা মুশকিলকে পুরুষ গণ্য করা হইয়াছে। কিন্তু ইমাম শাবী (র) বলিয়াছেন, খুনছা মুশকিলকে পুরুষের অংশের অর্ধেক এবং নারীর অংশের অর্ধেক প্রদান করা হইবে। কারণ তাহার পুরুষ অথবা নারী যে

কোনটি হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) ইমাম শাবী (র)-এর মত গ্রহণ করিয়াছেন। অবশ্য ইমাম শাবীর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-মধ্যে মতভেদ হইয়াছে। যেমন কোন ব্যক্তি একটি পুত্র সন্তান ও একটি খুনছা মুশকিল রাখিয়া মারা গেল। এই অবস্থায় ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে তাহার পরিত্যক্ত মাল মোট সাত ভাগে বিভক্ত হইবে এবং চার ভাগ পুত্র ও তিন ভাগ খুনছা মুশকিল লাভ করিবে। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে উক্ত মাল মোট বার ভাগে বিভক্ত হইবে এবং সাত ভাগ পুত্র ও পাঁচ ভাগ খুনছা মুশকিল লাভ করিবে। এক অবস্থায় দুই পুত্র। এবং অপর অবস্থায় এক পুত্র ও এক কন্যা (২ + ২ + ৪)। এই দুই অবস্থার যোগফলের অর্ধেক খুনছা লাভ করিবে। খুনছা মুশকিলের বেলায় একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাহার উপর নারীর বিধান প্রযোজ্য হয়। যেমন কাসামাহ, মাআকিল, জিয়া, হত্যাকাণ্ড অপেক্ষা নিম্নতর অপরাধ, যুদ্ধলব্ধ মাল ইত্যাদির ক্ষেত্রে নারীর উপর যেই বিধান প্রযোজ্য হয়, খুনছা মুশকিলের উপরও অবিকল সেই বিধান প্রযোজ্য হয়। ৪

মাফকূদ (নিখোঁজ ব্যক্তি) ধারা—৮৭৬

সংজ্ঞা যে ব্যক্তি আপন পরিবার-পরিজন ও বসতি এলাকা হইতে নিখোঁজ হইয়া গিয়াছে অথবা যাহাকে শত্রুরাষ্টের লোকেরা ধরিয়া লইয়া গিয়াছে, অতঃপর

৬৮২

সে জীবিত আছে কি না বা কোথায় আছে তাহা একটি উল্লেখযোগ্য কাল যাবত অজ্ঞাত রহিয়াছে, সেই ব্যক্তিকে মাফকূদ” বলে।

বিশ্লেষণ

আরবী শব্দ মাফকূদ (3 ) ফা (3) শব্দ হইতে উদ্ভূত। ইহার অর্থ নিখোঁজ বা নিরুদ্দেশ ব্যক্তি। হিদায়া গ্রন্থে মাফকূদের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছেঃ “যে ব্যক্তি নিখোজ হইয়া গিয়াছে এবং যাহার অবস্থানস্থল ও জীবন-মৃত্যু সম্পর্কে কিছু জানা যায় না তাহাকে ‘মাফকূদ” বলে।”

বাদাই গ্রন্থে বলা হইয়াছে, “যে ব্যক্তি স্বীয় বসতি এলাকা হইতে নিখোঁজ (৩ ) হইয়া গিয়াছে এবং যাহার জীবন মৃত্যু সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না তাহাকে “মাফকূদ” বলে।”

ফাতাওয়া আলামগীরীতে বলা হইয়াছেঃ কোন ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজন অথবা বসতি এলাকা হইতে নিখোঁজ হইয়া গেল, অথবা শত্রু রাষ্ট্রের লোকেরা তাহাকে গ্রেপ্তার করিয়া লইয়া গেল, অতঃপর সে জীবিত আছে

মারা গিয়াছে, জীবিত থাকিলে কোথায় আছে তাহা পরিচিত কাহারও জানা নাই এবং এইভাবে উল্লেখযোগ্য কাল অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে-এই ব্যক্তিকে ‘মাফকূদ” বলে।৭

মানুষ বিভিন্নভাবে নিখোঁজ বা নিরুদ্দেশ হইতে পারে। যেমন কোন ব্যক্তি কোন কাজে বাড়ির বাহিরে গিয়াছে অতঃপর আর ফিরিয়া আসে নাই, সে কোথায় কি অবস্থায় আছে তাহাও কোন পরিচিত ব্যক্তির জানা নাই, অথবা যুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্র হইতে হারাইয়া গিয়াছে এবং তাহার সংগীরা বলিতে পারে না যে, সে নিহত হইয়াছে না শত্রুবাহিনী তাহাকে ধরিয়া লইয়া গিয়াছে, অথবা শিকারের উদ্দেশ্যে গভীর অরণ্যে প্রবেশ করিয়া আর বাহির হইয়া আসে নাই, অথবা সমুদ্র ভ্রমণে গিয়া জলোচ্ছাস বা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়িয়াছে, তাহার সংগীরা ফিরিয়া আসিলেও তাহারা বলিতে পারে না যে, সে জীবিত আছে কি না। এইরূপ অবস্থায় সম্ভাব্য প্রচেষ্টা চালানোর পরও তাহার কোন সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয় নাই এবং এভাবে একটি উল্লেখযোগ্য কাল অতিবাহিত হইয়া

৬৮৩

গিয়াছে। এই ব্যক্তি সম্পর্কে ইসলামী আইনে স্বতন্ত্র বিধান রহিয়াছে।

ধারা-৮৭৭

মাফকূদ-এর মাল সম্পর্কিত বিধান (ক) মাফকূদের মালের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালত একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করিবে, যদি মাফকূদের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি না থাকে।

(খ) আদালত কর্তৃক নিযুক্ত প্রতিনিধি—(১) মাফকূদের মাল হইতে প্রাপ্ত আয় সংগ্রহ করিয়া জমা করিবে; (২) প্রদত্ত ঋণ সংগ্রহ করিবে; (৩) কোন মাল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হইলে তাহা বিক্রয় করিবে; (৪) মাফকূদের পরিবার-পরিজন ও পোষ্যদের ভরণ-পোষণ করিবে;

(৫) আদালত বৈধ মনে করিলে মাফকূদের পক্ষে মোকদ্দমা দায়ের করিতে পারিবে;

(গ) আদালত কর্তৃক নিযুক্ত প্রতিনিধি (১) মাফকূদের রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য মাল বিক্রয় করিতে পারিবে না;

(২) মাফকূদের পরিবার-পরিজন ও পোষ্যদের ব্যতীত অন্য কাহারও ভরণপোষণ করিতে পারিবে না;

(৩) মাফকূদের স্থাবর মাল দ্বারা তাহার পরিবার-পরিজন ও পোষ্যদের ভরণপোষণ করিতে পারিবে না।

(৪) অপরের নিকট রক্ষিত মাফকূদের “আমানত আদায় করিতে পারিবে; তবে আমানতদার অবিশ্বস্ত হইলে আদায় করিতে পারিবে;

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার পূর্বে তাহার প্রতিনিধি নিয়োগ করিয়া না থাকিলে তাহার মালের হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আদালতের উপর বর্তায়। যেমন অভিভাবকহীন নাবালেগ ও পাগলের মাল হেফাজতের দায়িত্ব

৬৮৪

আদালতের। এই উদ্দেশ্যে আদালত তাহার একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করিতে পারে। প্রতিনিধির সমস্ত কাজ আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষ হইবে। মাফকূদের মাল হইতে প্রাপ্ত আয়, যেমন জমি হইতে উৎপন্ন ফসল, ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থ, ব্যবসা বা অর্থলগ্নি হইতে প্রাপ্ত মুনাফা ইত্যাদি প্রতিনিধি সংগ্রহ করিয়া জমা করিবে।

কোন ব্যক্তির নিকট মাফকূদের ঋণের পাওনা থাকিলে এবং দেনাদার তাহা স্বীকার করিলে প্রতিনিধি উক্ত ঋণ আদায় করিবে। কিন্তু দেনাদার ঋণ অস্বীকার করিলে প্রতিনিধি উহা প্রমাণ সাপেক্ষে আদায় করিতে পারিবে।

মাফকূদের কোন মাল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া যাওয়ার উপক্রম হইলে এবং বিক্রয় করা ব্যতীত তাহা র করা অসম্ভব হইলে প্রতিনিধি উক্ত মাল বিক্রয় করিতে পারিবে। তবে যে • বিকল অবস্থায় রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব সেই মাল সে বিক্রয় করিতে পারিবে না।

কোন ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার পূর্বে পর্যন্ত যাহাদের ভরণপোষণ করিত, যেমন স্ত্রী, নাবালেগ পুত্র সন্তান, অবিবাহিতা কন্যা সন্তান, বালেগ কিন্তু পঙ্গু সন্তান, পিতা-মাতা ইত্যাদি, প্রতিনিধি মাফকূদের অস্থাবর মাল, প্রধানত নগদ অর্থ, দ্বারা তাহাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিবে। তাহাদের ভরণপোষণের জন্য মাফকূদের স্থাবর মাল ব্যয় করা যাইবে না। যাহাদের ভরণপোষণ মাফকূদের জন্য বাধ্যতামূলক নহে, যেমন ভাই-বােন, খালা-ফুফু ইত্যাদি, প্রতিনিধি ॥ তাহাদের জন্য মাফকূদের মাল ব্যয় করিতে পারিবে না। অনুপস্থিত ব্যক্তির পক্ষে বা বিপক্ষে মোকদ্দমা পরিচালনা করা যায় কি না এই বিষয়ে মতভেদ আছে। বিষয়টি আদালতের ইজতিহাদের এখতিয়ারভুক্ত। কোন আদালত অনুপস্থিত ব্যক্তির পক্ষে বা বিপক্ষে মোকদ্দমা পরিচালনা বৈধ মনে করিলে উক্ত আদালত কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রতিনিধি মাফকূদের মাল উদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করিতে পারিবে।

মাফকূদের কোন মাল অপর ব্যক্তির নিকট আমানত হিসাবে গচ্ছিত থাকিলে প্রতিনিধি তাহা আমানতদারের নিকট হইতে ফেরত লইতে পারিবে না৷৮ তবে আমানতদার অবিশ্বস্ত হইলে সে তাহার নিকট হইতে উহা আদায় করিয়া বিশ্বস্ত আমানতদারের নিকট আমানত রাখতে পারিবে।

৬৮৫

ধারা—৮৭৮

মাফকূদের দায় কোন ব্যক্তি মাফকূদের দায় সৃষ্টিকর কোন দাবি উত্থাপন করিলে তাহা সাক্ষী-প্রমাণ ব্যতীত গ্রহণযোগ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

যেমন কোন ব্যক্তি দাবি করিল যে, সে মাফকূদকে দশ হাজার টাকা ঋণ দিয়াছিল বা উক্ত পরিমাণ টাকা তাহার নিকট আমানত রাখিয়াছিল, বা তাহাকে বিবাহ করিয়াছিল, বা তালাক প্রদান করিয়াছিল কিন্তু মোহরানা অপরিশোধিত রহিয়াছে, বা তাহার সহিত অংশীদারী করবার করিয়াছিল বা ওসিয়াত করিয়াছিল। এই জাতীয় দাবি সন্তোষজনক সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত গ্রহণযোগ্য

হইবে না।৯

ধারা-৮৭৯ ‘

মাফকূদের অনুকূলে ওসিয়াত কোন ব্যক্তি মাফকূদের অনুকূলে ওসিয়াত করিলে ওসিয়াতকৃত মাল ওসিয়াতকারীর ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টিত না হইয়া স্থগিত থাকিবে যতক্ষণ না মাফকূদের মৃত্যুর রায় প্রদান করা হয়।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি মৃত্যুকালে কোন নিখোঁজ ব্যক্তির অনুকূলে কোন জিনিসের ওসিয়াত করিয়া গেল। তাহার মৃত্যুর পর উক্ত মাল তাহার ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে না। আদালত নিখোঁজ ব্যক্তির মৃত্যু ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাহা স্থগিত থাকিবে। ইতিমধ্যে সে ফিরিয়া আসিলে উক্ত মাল তাহার প্রাপ্য হইবে। অন্যথায় তাহাকে মৃত্যু ঘোষণার পর উক্ত মাল ওসিয়াতকারীর ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে।১১

৬৮৬

ধারা—৮৮০

মাফকূদ ও ওয়ারিসী স্বত্ব (ক) মৃতের ওয়ারিসগণের মধ্যে মাফকূদ অন্তর্ভুক্ত থাকিলে তাহার প্রাপ্য অংশের বণ্টন স্থগিত রাখিয়া অবশিষ্ট মাল মৃতের অন্যান্য ওয়ারিসের মধ্যে বণ্টিত হইবে। মাফকূদ আদালত কর্তৃক মৃত ঘোষিত হওয়ার পর স্থগিত অংশ প্রথমোক্ত মৃতের সেই সকল ওয়ারিসের মধ্যে বন্টিত হইবে, যাহারা তাহার মৃত্যুকালে জীবিত ছিল।

(খ) মাফকূদের মাল, আদালত কর্তৃক ঘোষিত তাহার মৃত্যুর তারিখে তাহার যেই সকল ওয়ারিস জীবিত ছিল, তাহাদের মধ্যে বণ্টিত হইবে;

(গ) আদালত কর্তৃক ঘোষিত মৃত্যুর তারিখে মাফকূদের কোন পর্যায়ের ওয়ারিস না থাকিলে তাহার মাল বায়তুল মালে জমা হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি নিখোজ থাকা অবস্থায় তাহার কোন আত্মীয় মারা গেলে সে তাহার ওয়ারিস হইবে না। “ওয়ারিস হইবে না” কথার অর্থ এই যে, মাফকূদ আইনত উক্ত মৃতের ওয়ারিস, কিন্তু সে জীবিত আছে না মারা গিয়াছে তাহা নিশ্চিতভাবে জ্ঞাত না থাকার কারণে তাহার প্রাপ্য অংশ তাহার মালের সহিত যুক্ত হইবে না। তাই তাহার প্রাপ্য অংশের বণ্টন স্থগিত থাকিবে। কারণ উক্ত অংশ উপস্থিত ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিলে এবং সে জীবিত ফিরিয়া আসিলে এই অবস্থায় তাহার স্বত্ব বিলুপ্ত হইয়া যায়। আবার উক্ত অংশ বণ্টন করিয়া তাহার মালের সহিত যুক্ত করিলে এবং সে বাস্তবিকই মৃত ব্যক্তির পূর্বে মৃত্যবরণ করিয়া থাকিলে উপস্থিত ওয়ারিসগণের স্বত্ব বিলুপ্ত হইয়া যায়। অনুমানের ভিত্তিতে স্বত্ব সম্পর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বৈধ নহে। ইসলামী আইনের একটি মূলনীতি হইলঃ।

الثابت بيقين لا يزول بالشك و غير الثابت بيقين لا يثبت بالش.

• ৬৮৭

“নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত বিষয় সন্দেহের দ্বারা বিলুপ্ত হয় না এবং নিশ্চিতভাবে অপ্রমাণিত বিষয়ে সন্দেহের দ্বারা প্রমাণিত হয় না।”১২ এইখানে উল্লেখ্য যে, মাফকূদের জন্য স্থগিত অংশ সেই সকল ওয়ারিসের মধ্যে বণ্টিত হইবে যাহারা সম্পত্তির মালিকের মৃত্যুকালে জীবিত ছিল, মাফকূদকে মৃত ঘোষণার তারিখে জীবিত ওয়ারিসগণের মধ্যে নহে।

অনুরূপভাবে মাফকূদের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত খবর না পাওয়া পর্যন্ত তাহার সম্পত্তি তাহার ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে না। নির্দিষ্ট কাল অপেক্ষার পরও সে ফিরিয়া না আসার পর অথবা আদালত তাহাকে মৃত ঘোষণা করার পর তাহার সম্পত্তি তাহার ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে। এখানে উল্লেখ্য যে, নির্দিষ্ট মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার দিন অথবা আদালত কর্তৃক ঘোষিত মৃত্যুর তারিখে তাহার যেইসব ওয়ারিস জীবিত থাকিবে তাহাদের মধ্যে উক্ত সম্পত্তি বণ্টিত হইবে। ১৩

মাফকূদের কোন পর্যায়ের ওয়ারিস না থাকিলে তাহার পরিত্যক্ত মাল জনসাধারণের সম্পত্তিতে পরিণত হইয়া বায়তুল মালে জমা হইবে। ১৪

ধারা—৮৮১

মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) মাফকূদ (ক) মুরতাদ মাফকূদ অমুসলিম রাষ্ট্রে চলিয়া গিয়াছে কি না তাহা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাহার ওয়ারিসগণের মধ্যে তাহার মাল বণ্টন স্থগিত থাকিবে।

(খ) মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসগণের মধ্যে মুরতাদ মাফকূদ অন্তর্ভুক্ত থাকিলে তাহার পরিত্যক্ত মাল উপস্থিত ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি মুরতাদ হওয়ার পর নিখোজ হইলে তাহার মালের ক্ষেত্রেও মাফকূদের বিধান প্রযোজ্য হইবে। সে অমুসলিম রাষ্ট্রে ( 3) চলিয়া গিয়াছে বলিয়া নিশ্চিত খবর পাওয়া গেলে তাহার সম্পত্তি তাহার ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টন করা হইবে। পক্ষান্তরে নিখোঁজ মুরতাদ ওয়ারিসের কারণে কোন

৬৮৮

মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাহার অন্যান্য ওয়ারিসের মধে বণ্টিত হওয়া স্থগিত থাকিবে না। কারণ সে উপস্থিত থাকিলেও তাহার মুসলিম আত্মীয়ের সম্পত্তিতে ওয়ারিস হইতে পারিত না।১৫

ধারা-৮৮২

মাফকূদের বৈবাহিক অবস্থা (ক) মাফকূদের স্ত্রীর সহিত তাহার বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকিবে।

(খ) মাফকূদের স্ত্রী চার বৎসর অপেক্ষা করার পর প্রয়োজনবােধে বিবাহরদের জন্য আদালতে আবেদন করিতে পারিবে এবং আদালত তাহার সুবিবেচনা অনুযায়ী স্ত্রীলোকটিকে আরও কিছু কাল অপেক্ষা করিতে বলিবে অথবা তৎক্ষণাৎ বিবাহরদ করিতে পারিবে।

(গ) বিবাহরদের পর মাফকূদের স্ত্রী চার মাস দশ দিন ইদ্দাত পালন করিবে।

(ঘ) বিবাহরদের পর মাফকূদ ফিরিয়া আসিলে সে তাহার স্ত্রীকে ফেরত পাওয়ার অধিকারী হইবে।

(ঙ) ইদ্দাত পালনশেষে স্ত্রীলোকটি কোন ব্যক্তির সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর মাফকূদ ফিরিয়া আসিলে সে তাহাকে ফিরাইয়া পাওয়ার অধিকারী হইবে না।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার কারণে তাহার দাম্পত্য বন্ধন ছিন্ন হইয়া যায়। কারণ স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক বন্ধন একটি সুনিশ্চিত বিষয়, অন্যদিকে নিখোঁজ স্বামীর মৃত্যু বা জীবিত থাকার বিষয়টি অনিশ্চিত। অতএব অনিশ্চিত বিষয়ের দ্বারা সুনিশ্চিত বিষয় বাতিল হইতে পারে না।

অবশ্য মাফকূদের স্ত্রীর কোন সংগত কারণে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। কারণ স্বামী নিখোজ হইয়া তাহার অনেক অধিকারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছে। ফলে সে ক্ষতির সম্মুখীন। ইসলামের নীতি অনুযায়ী

৬৮১

“ক্ষতি করাও যাইবে না এবং সহাও যাইবে না।” ইমাম মালেক (র)-এর মতানুযায়ী এইরূপ অবস্থার শিকার স্ত্রীকে চার বৎসর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে। অতঃপর সে প্রয়োজনবােধে আদালতে বিবাহরদের আবেদন করিতে পারিবে। তিনি হযরত উমার (রা)-র কার্যক্রম তাহার মতের সমর্থনে পেশ করিয়াছেন।

عن سعيد بن المسيب آن عمر بن الخطاب قال أيما امرأة فقدت زوجها فلم تدر اين هفائها تنظر اربع سنين ثم تغت أربعة أشهر

“সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (র) হইতে বর্ণিত। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেন, কোন স্ত্রীলোকের স্বামী নিখোঁজ হইয়া গেলে এবং সে কোথায় আছে তাহা অজ্ঞাত থাকিলে সে চার বৎসর পর্যন্ত অপেক্ষা করিবে। অতঃপর সে চার মাস দশ দিন ইদ্দাত পালন করিবে। অতঃপর সে হালাল হইয়া যাইবে (পুর্নবিবাহের

জন্য)।”১৬

হযরত আলী ও হযরত উসমান (রা)-ও অনুরূপ মত পোষণ করেন বলিয়া বর্ণিত আছে। কেহ কেহ এই মতের অনুকূলে সাহাবীগণের ইমজা অনুষ্ঠিত হইয়াছে বলিয়া দাবি করিয়াছেন (আয-যুরকানী)। ইনুল হুমাম বলেন, এই বিষয়ে সাহাবীগণের মধ্যে মতভেদ ছিল এবং ইবন মাসউদ (রা)-ও আলী। (রা)-ও অনুরূপ মত পোষণ করিতেন। তাবিঈগণের মধ্যে আবু কিলাব, জাবির ইব্‌ন যায়দ, শোবা ও ইবরাহীম নাখঈ এই মত পোষণ করিতেন বলিয়া ইন আবী শায়বা বর্ণনা করিয়াছেন।১৭ রদ্দল মুহতারের গ্রন্থকার ইব্‌ন আবেদীন শামী (র) ইন রাহবান, যাহিদী প্রমুখের মত উল্লেখ করিয়া বলিয়াছেন, প্রয়োজনবােধে ইমাম মালেক (র)-এর মত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ বৈধ হইবে। ১৮ ফাতাওয়া বাযযিয়ায় বলা হইয়াছে যে, বর্তমান কালে ইমাম মালেক (র)-এর মত অনুযায়ী ফতোয়া প্রদত্ত হইবে।১৯

৬১০

ধারা-৮৮৩

মাফকূদের মৃত্যুর তারিখ নির্ধারণ (ক) যে ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজন বা স্থানীয় সরকারী প্রতিনিধি বা সংস্থা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কোন ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার বিষয় অবহিত করে সেই ক্ষেত্রে ঐ বক্তি ‘মাফকূদ” গণ্য হইবে।

(খ) মাফকূদ যেই দিন তাহার পরিবার-পরিজন বা বসতি এলাকা হইতে নিখোঁজ হইয়া গিয়াছে সেই দিন হইতে তাহার নিখোঁজ হওয়ার মেয়াদ গণনা করা হইবে।

(গ) ধারা (৮৮১) (খ)-এ বর্ণিত পরিস্থিতির উদ্ভব না হইলে আদালত মাফকূদের বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও প্রাসংগিক অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করিয়া তাহার মৃত্যু তারিখ নির্ধারণ করিবে।

বিশ্লেষণ

স্থানীয় সরকারী প্রতিনিধি বা সংস্থা বলিতে বর্তমান কালের ইউনিয়ন পরিষদ ও ইহার সদস্য, চেয়ারম্যান এবং চৌকিদার ও দফদারগণকে বুঝানো হইয়াছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বলিতে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন (থানা) বা আদালত বুঝানো হইয়াছে। কোন ব্যক্তি হয়ত কোন কাজে বাড়ির বাহিরে কোথাও গিয়াছে, কিন্তু সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে বাড়িতে ফিরিয়া আসে নাই বা যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, খোজ নিয়া দেখা গেল যে, সে সেখানেও যায় নাই। সম্ভাব্য খোজ-খবর নেওয়ার পরও তাহার কোন হদিস পাওয়া যাই নাই। এই অবস্থায় তাহার সম্পর্কে পুলিশ স্টেশনে বা আদালতকে অবহিত করার পর হইতে সে “মাফকূদ” (নিখোজ) গণ্য হইবে। কোন ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার পর দেখা গেল যে, একটি উল্লেখযোগ্য সময়, যেমন তিন মাস, ছয় মাস, এক বৎসর, দুই বৎসর ইত্যাদি, অতিবাতিহ হওয়ার পরও সে ফিরিয়া আসিতেছে না বা অপর কেহ তাহার অবস্থান সম্পর্কেও কিছু বলিতে পারিতেছে না। সকলের বদ্ধমূল ধারণা হইল যে, আসলেই সে নিখোঁজ হইয়াছে। এই অবস্থায় সে যেই দিন তাহার পরিবার-পরিজন বা বসতি এলাকা হইতে নিরুদ্দেশ হইয়াছে সেই দিন হইতে তাহার নিখোঁজ হওয়ার মেয়াদ গণনা শুরু হইবে।

৬৯১

নিখোঁজ ব্যক্তির স্ত্রী কত কাল তাহার অপেক্ষায় থাকিবে বা কত দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সে প্রয়োজনবােধে বিবাহরদের আবেদন করার অধিকারী হইবে এবং কত কাল তাহার সম্পত্তি তাহার ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টন স্থগিত থাকিবে—এই ব্যাপারে একটি মেয়াদ নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। বিবাহের ক্ষেত্রে উমার (রা) চার বৎসর মেয়াদ নির্ধারণ করিয়াছেন এবং ইমাম মালেক (র) উক্ত মত গ্রহণ করিয়াছেন। হানীফা মাযহারের ফকীহগণ প্রয়োজনবােধে উক্ত মতানুয়ায়ী ফতোয়া দেয়ার কথা বলিয়াছেন, যদিও এই মাযহাবের গৃহীত মত মাফকূদের জন্ম তারিখ হইতে নব্বই বৎসর। হাসান বসরীর সূত্রে ইমাম আবু হানীফা (র)-র মতানুযায়ী নিখোঁজ ব্যক্তিকে, তাহার জন্মতারিখ হইতে ১২০ বৎসর পূর্ণ হইলে মৃত্যু ঘোষণা করিতে হইবে এবং আবু ইউসুফ (র)-এর মতে ১০০ বৎসর পূর্ণ হইলে, ইবনুল হুমামের মতে ৭০ বৎসর। কারণ মহানবী (স) বলিয়াছেনঃ

متى مابين الستين الى السبعين –

اعمار

“আমার উম্মতের বয়স ষাট হইতে সত্তর বৎসর।”

পরবর্তী কালের আলেমগণ (মুতাআখখিরীন) ৬০ বৎসর নির্ধারণ করিয়াছেন। যাহিরী মাযহাবে বলা হইয়াছে, মাফকূদের সমবয়সী লোকেরা মারা গেলে তাহাকে মৃত গণ্য করা হইবে।

হানাফী ফকীহ ইমাম যায়লাঈ বলিয়াছেন, মাফকূদকে মৃত ঘোষণার ব্যাপারটি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারের উপর ন্যস্ত করাই উত্তম, মতান্তরে আদালতের উপর ন্যস্ত করা উচিৎ। কারণ নিখোঁজ হওয়ার সময় মাফকূদের বয়স, তাহার স্বাস্থ্যগত অবস্থা পরিবেশ-পরিস্থিতি, গন্তব্য স্থান ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া তাহার মৃত্যুতারিখ নির্ধারণ করিতে হইবে। ২০ যেমন এক ব্যক্তি বার্ধক্যে এবং অপর ব্যক্তি যৌবনে, এক ব্যক্তি সুস্থ অবস্থায় এবং অপর ব্যক্তি রোগাক্রান্ত অবস্থায়, এক ব্যক্তি গৃহযুদ্ধ চলাকালে নিখোজ হইয়াছে। এক ব্যক্তি কোন লোকালয়ে ভ্রমণ করিতে গিয়া এবং অপর ব্যক্তি হিংস্র প্রাণীসংকুল অরণ্যে গিয়া নিখোজ হইয়াছে। এক ব্যক্তি নৌ-ভ্রমণে গিয়া ঝড়ের কবলে পড়িয়া এবং অপর ব্যক্তি স্থলপথে ভ্রমণে গিয়া নিখোজ হইয়াছে। এইসব বিষয় বিবেচনা করিলে প্রত্যেক নিখোঁজ ব্যক্তির ক্ষেত্রে একই সমান মেয়াদ প্রযোজ্য হইতে পারে না।

৬১২

হিদায়ার গ্রন্থকার বলিয়াছেন, কোন মেয়াদ নির্ধারণ না করাই অধিক যুক্তিসংগত।২১ কোন একটি প্রসংগে মাফকূদের মৃত্যুর তারিখ ঘোষণা করা হইলে তাহা তাহার সহিত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।২২ যেমন মাফকূদের স্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাহাকে একটি নির্দিষ্ট তারিখে মৃত ঘোষণা করিয়া বিবাহরদের রায় প্রদান করিল। ঐ তারিখের পর তাহার মালও তাহার ওয়ারিসগণের মধ্যে বণ্টনযোগ্য হইবে এবং আদালত কর্তৃক নিয়োজিত প্রতিনিধির দায়িত্বেরও অবসান ঘটিবে।

ধারা—৮৮৪

মাফকূদের প্রতিনিধি (ক) কোন ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার পূর্বে নিজের প্রতিনিধি নিয়োগ করিয়া থাকিলে সে তাহার মালের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করিবে।

(খ) কোন ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার কারণে তাহার প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্বের অবসান ঘটিবে না, তবে তাহার নিয়োগ মেয়াদ ভিত্তিক হইলে উক্ত মেয়াদশেষে তাহার প্রতিনিধিত্বের অবসান ঘটিবে।

বিশ্লেষণ

এই ক্ষেত্রেও প্রতিনিধিত্ব আইনের বিধান অনুসৃত হইবে। প্রতিনিধি তাহাকে প্রদত্ত কার্যসীমা বহির্ভূত কোন কাজ করিতে পারিবে না। তাহাকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নিয়োগ করা হইলে মেয়াদশেষে তাহার প্রতিনিধিত্বের অবসান ঘটিবে এবং তখন আদালত মাফকূদের মাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করিবে।

কোন ব্যক্তি নিখোজ হইলে উহাতে তাহার প্রতিনিধির নিয়োগ বাতিল হইবে, বরং সে তাহার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করিয়া যাহঁবে। ২৩

ধারা-৮৮৫ ‘

মাফকূদের ইজারা কোন ব্যক্তি তাহার কোন মাল ইজারায় প্রদান করিলে তাহার নিখোঁজ

৬১৩

হওয়ার কারণে ইজারা চুক্তি মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রদ হইবে না।২৪

ধারা—৮৮৬ মাফকূদের পরিবারের জন্য দেনাদার বা আমানতদারের ব্যয় (ক) কোন ব্যক্তি মাফকূদের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিয়া থাকিলে এবং আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে তাহা হইতে মাফকূদের পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করিলে সে ঋণের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে।

(খ) মাফকূদের আমানতদার তাহার নিকট রক্ষিত আমানত হইতে আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে মাফকূদের পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করিলে সে আমানতের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে।

বিশ্লেষণ

ঋণী ব্যক্তি ও আমানতদার আদালতের অনুমোদনক্রমে মাফকূদের পরিবার -পরিজনের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করিলে তাহাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ খরচের সম-পরিমাণ দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে। কিন্তু আদালতের অনুমোদান ব্যতীত বয় করিলে তাহা ঐচ্ছিক ব্যয় হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহারা ঋণ বা আমানতের দায় হইতে মুক্ত হইতে পারিবে না।২৫

৬৯৪

তথ্য নির্দেশিকা

১. হিদায়া, কিতাবুল খুনছা, ৪খ, পৃ. ৬৮৫ঃ

اذا كان للمولود فرج و ذكر فهو خنثی –

বাদাই, কিতাবুল খুনছা, ৭খ, পৃ. ৩২৭ ও

فالخنشی من له الة الرجال و النساء و الشخص الواحد لايكون ذكرا و انثي حقيقة.

২. ইন আদী ও বায়হাকীর বরাতে হিদায়া, ৪, পৃ. ৬৮৫; বাদাই, ৭, পৃ. ৩২৭। অবশ্য

হাদীসটি সনদের বিচারে ব্যাপক সমালোচিত। ৩. ইবন আবী শায়বার বরাতে হিদায়া, ৪খ, পৃ. ৬৮৫। ৪. খুনছা সম্পর্কিত সম্পূর্ণ আলোচনাটি নিম্নোক্ত গ্রন্থাবলী হইতে গৃহীতঃ (ক) হিদায়া, কিতাবুল খুনছা,

৪খ, পৃ. ৬৮৫-৮৮; (খ) বাদাইউস সানাই, কিতাবুল খুনছা, ৭খ, পৃ. ৩২৭-৩৩; (গ) আল

মিগীরী, কিতাবুল খুনছা, ৬খ, পৃ. ৪৩৭-৪২। ৫. হিদায়া, কিতাবুল মাফকূদ, ১খ, পৃ. ৬০০।

اذا غاب الرجل فلم يعرف له موضع و لا يعلم احي ام ميت –

৬. বাদায়ে, কিতাবুল মাফকূদ, ৬খ, পৃ. ১৯৬৪

فالمفقود اسم الشخص غاب عن بلده ولا يعرف خبره انه حسی ام

:

৭. আলমগীরী, কিতাবুল মাফকূদ, ২২, পৃ. ২৯৯৪।

هو الذي غاب عن اهله او بلده او اسره العدو ولا يدري احي هو او ميت ولا يعلم له مكان ومضى على ذلك زمان فهو معدوم بهذا

• ১৬ )। ৮. হিদায়া, কিতাবুল মাফকূদ, ১খ, পৃ. ৬০০-৬০৮; বাদাই, কিতাবুল মাফকূদ, ৬, পৃ. ১৯৬;

আলামগীরী, কিতাবুল মাফকূদ, ২২, পৃ. ২৯৯-৩০১. ৯. রব্দুল মুহতার, মাফকূদ, ৩২, পৃ. ৩২৭। ১০. আলামগীরী, মাফকূদ, ২৩, পৃ. ৩০১। ১১. হিদায়া, মাফকূদ, ১খ, পৃ. ৬০২ প; আলামগীরী, মাফকূদ, ২খ, পৃ. ৩০০; রদুল মুহতার, ৩খ,

পৃ. ৩৩১। ১২. বাদাই, ৬খ, পৃ. ১৯৬। ১৩. হিদায়া, মাফকূদ, ১ম খণ্ড; আলামগীরী, ২য় খণ্ড, মাফকূদ; বাদাই, ৬ষ্ঠ খণ্ড, মাফকূদ। ১৪. রদুল মাতৃতার, মাফকূদ, ৩থ, পৃ. ৩২৯। ১৫. আলমগীরী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০১; বাদাই, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৯৬; রদুল মুহতার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৮। ১৬. মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, কিতাবুত তালাক, বাব ইদ্দাতুল্লাতী তাফকিদু যাওজাহা। ইন আবিদ দুনয়া, ইবন আবী শায়রা, আবদুর রায্যাক ও দারু কুতনীও উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

৬৯৫

১৭. আইনুল হিদায়া (হিদায়ার উদ্ অনু.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৬২১। ১৮. রব্দুল মুহতারের বরাতে আইনুল হিদায়া, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬২১; রদুল মুহতার, ৩য় খণ্ড, মাফকূদ

অধ্যায়ও দ্র, পৃ. ৩২৮-৩১। ১৯. আইনুল হিদায়া, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬২১। ২০. তাবঈনুল হাকাইক, ৩, পৃ. ৩১২৪।

والمحتار انه يفوض الى رأي الامام لانه يختلف باختلاف البلاد و كذا غلبة الظن تختلف باختلاف الأشخاص .

নাহরুল ফাইক, ফাতহুল কাদীরের নিম্নে, ৩, পৃ. ৩৩১। ২১. হিদায়া, মাফকূদ, ১৩, পৃ. ৬০৪ঃ।

(والاقيس ان لايقدر بشيئ)

২২. তাবঈনুল হাকাইক, মাফকূদ, ৩, পৃ. ৩৩১। ২৩. রব্দুল মুহতার, মাফকূদ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৯। ২৪. রদুল মুহতার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৯। ২৫. হিদায়া, ১৩, পৃ. ৬০১।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *