1 of 2

৩৫. কর্জ, দায়ন (ঋণ) ও ইফলাম (দেউলিয়া)

অধ্যায় : ৩৫ কর্জ, দায়ন (ঋণ) ও ইফলাম (দেউলিয়া)

ধারা-৮৩৬

কর্জ-এর সংজ্ঞা (ক) ফেরতের শর্তে কোন ব্যক্তি কর্তৃক তাহার মাল অপর ব্যক্তিকে প্রদান করাকে কর্জ বলে।

(খ) পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক ঈজাব-কবুলের মাধ্যমে কর্জ চুক্তি সম্পাদিত

বিশ্লেষণ

‘কর্জ’ শব্দের অর্থ ‘কর্তন’ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি তাহার মালের একটি অংশ বিচ্ছিন্ন বা কর্তন করিয়া অপর ব্যক্তিকে প্রদান করে। কর্জের সংজ্ঞায় বলা হইয়াছেঃ “তোমার মাল হইতে তুমি অন্য ব্যক্তিকে এই শর্তে প্রদান করিলে যে, সে উহা ফেরত দিবে।”

কর্জ চুক্তিকে ফকীহগণ একটি “বিশেষ চুক্তি” হিসাবে গণ্য করিয়াছেন। তাঁহারা বলিয়াছেনঃ “যে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তাহার এমন মাল অপর ব্যক্তিকে প্রদান করিতে, যাহার অনুরূপ (14) মাল সহজলভ্য, এবং শেষোক্ত পক্ষ উক্ত মাল বা উহার অনুরূপ মাল ফেরত প্রদান করিতে সংকল্পবদ্ধ হয়, সেই চুক্তিকে “কর্জ চুক্তি” বলে।

কর্জ চুক্তিও পক্ষবৃন্দের ঈজাব-ককূলের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। কর্জদাতা বা কর্জগ্রহীতা যে কোন পক্ষ ঋণের আদান-প্রদানের জন্য প্রস্তাব বা সম্মতি প্রদান

৫৯৮

করিতে পারে। যেমন এক পক্ষ বলিল, আমাকে কর্জ প্রদান কর, এই প্রস্তাবটি অপর পক্ষও প্রদান করিতে পারে। যেমন আমার নিকট হইতে কর্জ লও।

এখানে কর্জ বলিতে “কর্জে হাসানা” বুঝানো হইয়াছে অর্থাৎ যে কর্জ প্রদানের জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁহার বান্দাগণকে উৎসাহিত করিয়াছেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ

من الذي يقرض الله قرضا حسنا فيضعفه له أضعافا كثيرا .

“কে আছে এমন যে আল্লাহকে উত্তম কর্জ প্রদান করিবে? তিনি তাহার জন্য ইহা বহু গুণে বর্ধিত করিবেন”- (সূরা বাকারাঃ ২৪৫)।

وأقرضت الله قرضا حسنا.

“আল্লাহূকে তোমরা উত্তম কর্জ প্রদান কর” (সূরা মাইদাঃ ১২)।

من ذالذی یقرض الله قرضا حسناقضعه له

০ ০

+ ০

وله أجر كريم –

“কে আছে এমন যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করিবে? তাহা হইলে তিনি উহা তাহার জন্য বহু গুণে বর্ধিত করিবেন এবং তাহার জন্য রহিয়াছে মহাপুরস্কার”- (সূরা হাদীদঃ ১১; আরও দ্র. আয়াত নং ১৮)।

ان تقرضوا الله قرضا حسنا يضعفه لكم ويغفرلكم والله شكور حليم

“তোমরা যদি আল্লাহ্কে উত্তম কর্জ দান কর তবে তিনি উহা তোমাদের জন্য বহু গুণে বর্ধিত করিবেন এবং তিনি তোমাদের ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহিষ্ণও”- (সূরা তাগাবুনঃ ১৭; আরও দ্র. সূরা মুযযাম্মিলঃ ২০)।

ধারা-৮৩৭

কর্জের সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী (ক) কর্জের লেনদেন সহীহ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী পালন করিতে হইবে— (১) কর্জ প্রদানকারী যে মাল কর্জ প্রদান করিবে তাহাতে তাহার

পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকিতে হইবে;

(২) কর্জদাতাকে বালেগ অথবা সগীর মুমায়্যিয হইতে হইবে;

(৩) কর্জদাতা কর্তৃক কর্জের মাল কর্জগ্রহীতার দখলে অর্পণ করিতে হইবে;

(৪) কর্জের মাল এমন প্রকৃতির হইতে হইবে যাহার অনুরূপ মাল সহজলভ্য এবং যাহা ওজন, পরিমাপ অথবা গণনাযোগ্য;

(৫) কর্জ প্রদানের দ্বারা কর্জদাতার লাভবান হওয়ার স্বার্থমুক্ত হইতে হইবে।

(খ) কর্জের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা শর্ত নহে। (গ) কর্জ পরিশোধকালে কর্জদাতা স্বেচ্ছায় কর্জের অতিরিক্ত পরিমাণ প্রদান করিলে তাহা গ্রহণ বৈধ হইবে।

বিশ্লেষণ

যে ব্যক্তি দান-খয়রাত করার যোগ্য নহে সে কর্জ প্রদান করিতে পারে না বা কর্জ চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে পারে না। পিতা বা ওসীও নিজ নিজ তত্ত্ববানাধীন ব্যক্তির মাল হইতে যেমন দান-খয়রাত করিতে পারে না, তদ্রূপ তাহার মাল হইতে কর্জও প্রদান করিতে পারে না। অনুরূপভাবে নাবালেগও নিজ মাল হইতে কর্জ প্রদান করিতে পারে না। অতএব যে ব্যক্তির দান-খয়রাত করার কর্তৃত্ব আছে। কেবল সে-ই কর্জ প্রদান করিতে পারে।

কর্জচুক্তি কার্যকর হওয়ার জন্য কর্জদাতাকে অবশ্যই কর্জম্বরূপ প্রদেয় মাল কর্জদাতার নিকট অৰ্পণ করিতে হইবে, অন্যথায় উক্ত চুক্তি কার্যকর হইবে না।

কৰ্জস্বরূপ প্রদত্ত মাল ওজনযোগ্য, পরিমাপযোগ্য অথবা গণনাযোগ্য হইতে হইবে এবং উহার অনুরূপ মাল বাজারে সহজলভ্য হইতে হইবে। যে মাল ওজন, পরিমাপ বা গণনার আওতায় পড়ে না এবং যে মালের অনুরূপ মাল সহজলভ্য নহে তাহার কর্জ ভিত্তিক লেনদেন বৈধ নহে।

কর্জদাতা নিঃস্বার্থভাবে কর্জ প্রদান করিবে। কর্জের সহিত কর্জদাতার স্বার্থ বা মুনাফা সংযুক্ত হইলে কর্জচুক্তি অবৈধ গণ্য হইবে। মহানবী (স) “মুনাফা যুক্ত

৬০০

,

করিয়া কর্জ প্রদান করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কারণ কর্জের সহিত মুনাফা যুক্ত হইলে উহা সূদ হিসাবে গণ্য হয়।

কর্জচুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য উহার মেয়াদকাল নির্ধারণ করিয়া লওয়া শর্ত নহে অর্থাৎ মেয়াদ নির্দিষ্ট না করিয়া চুক্তি করিলে তাহা বৈধ গণ্য হইবে। কারণ এই ধরনের কর্জ সওয়াব লাভের আশায় প্রদান করা হইয়া থাকে, মুনাফা লাভের আশায় নহে।

কর্জদাতা কর্জ পরিশোধকালে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কিছু প্রদান করিলে বা কর্জের মালের তুলনায় উন্নত মানের মাল দিলে তাহা গ্রহণ করা বৈধ। ইহা সূদের আওতায় পড়িবে না। এই অতিরিক্ত অংশ প্রদান করা হয় উত্তমরূপে কৰ্জ পরিশোধের জন্য এবং ইহা সুন্নাত।

রাসূলুল্লাহ (স) তাঁহার সাহাবীগণকে একটি উট ক্রয় পূর্বক তাঁহার ঋণ পরিশোধ করিতে বলেন। সাহাবীগণ বলেন, লোকটির নিকট হইতে কর্জ নেওয়া উটের তুলনায় বড় উট পাওয়া যাইতেছে। রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন, বড়টিই ক্রয় করিয়া তাহাকে দিয়া দাও। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধে উত্তম। ৪

রাসূলুল্লাহ (স) যুদ্ধের জন্য এক ব্যক্তির নিকট হইতে একটি যুবা উট কর্জ লইলেন। যুদ্ধশেষে তাঁহার নিকট মাল আসিলে তিনি আবু রাফে (র)-কে কর্জ পরিশোধের নির্দেশ দেন। তিনি আসিয়া বলিলেন, কর্জের উটের তুলনায় বড় ও উত্তম উট আছে, উহার সমান মানের উট নাই। রাসূলুল্লাহ (স) বলেনঃ ঐ বড় উটটিই তাহাকে দিয়া দাও। লোেকদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে প্রাপ্য পরিশোধে ভাললাটি প্রদান করে।

জাবির (রা) বলেন, মহানবী (স)-এর নিকট আমার কিছু পাওনা ছিল। তাহা পরিশোধকালে তিনি আমাকে আমার প্রাপ্যের অধিক প্রদান করিলেন।

সুওয়ায়দ ইবন কায়স (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের নিকট হইতে একটি পাজামা ক্রয় করেন। উহার মূল্য পরিশোধকালে যে ব্যক্তিকে দিয়া তিনি বিনিময়ের বস্তু ওজন করাইলেন তাহাকে বলিলেন, প্রাপ্য অপেক্ষা একটু বেশি

দিও। ৭

৬০১

ধারা-৮৩৮

ঋণ (দায়ন) ও উহার শ্রেণীবিভাগ (ক) কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির সহিত চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে অথবা কোন কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে অথবা অপর ব্যক্তির নিকট হইতে কর্জ গ্রহণের কারণে বা অন্য কোন কারণে ঐ ব্যক্তির উপর যে অর্থের দায় বর্তায় এবং যাহা হইতে মুক্ত হওয়া তাহার জন্য বাধ্যকর হয় তাহাকে ঋণ” (১১) বলে।

(খ) পরিশোধের মেয়াদ অনুসারে ঋণ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত— (১) যে ঋণ চাহিবামাত্র পরিশোধ করা বাধ্যকর হয় তাহাকে তলবী ঋণ” ( 2 )বলে;

(২) যে ঋণ মেয়াদান্তে পরিশোধ করা বাধ্যকর হয় তাহাকে “মেয়াদী ঋণ” ( 6 )বলে।

(৩) যে ঋণ প্রদানের মেয়াদ নির্ধারিত হয় নাই তাহাকে স্থগিত ঋণ” বলে।

বিশ্লেষণ

আরবী ভাষায় “ঋণ”-এর প্রতিশব্দ দায়ন (১২১) কোন বস্তু ক্রয়-বিক্রয় কালে অবিকল সামনে উপস্থিত না থাকিলে আরবরা তাহাকে “দায়ন” বলিত। পক্ষান্তরে বস্তুটি ক্রয়-বিক্রয়কালে অবিকল সামনে উপস্থিত থাকিলে তাহাকে বলা হইত “আয়ন” ( ) অর্থাৎ মূল বস্তু। দায়ন ও কর্জের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য বিদ্যমান। “দায়ন” সাধারণ বা ব্যাপক অর্থবােধক, যাহার মধ্যে “কর্জও” অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে “কর্জ” বিশেষ বা নির্দিষ্ট অর্থবােধক, যাহার মধ্যে “দায়ন” অন্তর্ভুক্ত নহে। অতএব সকল “দায়ন”-কে “কর্জ” বলা যায় না। হিদায়ার গ্রন্থকারের মতে দায়ন মূলত “অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় “(L )-এর একটি রূপ। মেয়াদ শেষ না হওয় পর্যন্ত দায়ন-এর প্রত্যর্পণ দাবি করা যায় না। কিন্তু কর্জের প্রত্যর্পণের জন্য তাগাদা দেওয়া যায়। আমাদের আলোচনায় আমরা “ঋণ” শব্দটিকে দায়ন-এর প্রতিশব্দ হিসাবে গ্রহণ করিয়াছি।

৬০২

আল্লামা তাহানুবী ঋণ-এর সংজ্ঞায় বলেন, আম্‌দ (চুক্তি), ইসতিহ্লাক (ধ্বংস) ও ইসতিকরাদ (কর্জগ্রহণ)-এর কারণে যাহা কোন ব্যক্তির উপর দায় হিসাবে বাধ্যকর হয় তাহাকে “ঋণ” বলে। কিন্তু পরোক্ষ অর্থে সেই দায়িত্বকেও ঋণ বলা হয় যাহা হইতে কোন বস্তুর মাধ্যমেই কেবল মুক্ত হওয়া যায়। শরীআতের দৃষ্টিতে সেইসব জিনিসকে ঋণ বলা হয় যাহা কোন চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার ফলে অথবা বিশেষ কোন কাজে জড়িত হওয়ার কারণে কোন ব্যক্তির দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং যাহা পরিশোধ করা বাধ্যকর হয়।

চুক্তির মাধ্যমেও ঋণ উদ্ভূত হইতে পারে। যেমন দুইজন নারী-পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর স্বামীর উপর স্ত্রীকে মোহর প্রদান বাধ্যকর হয়। মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত উহা স্বামীর উপর ঋণ হিসাবে থাকিয়া যায়। ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমেও ঋণ উদ্ভূত হইতে পারে। কোন জিনিস ক্রয় করার পর উহার মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতার নিকট দায়বদ্ধ থাকে।

কোন কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণেও ঋণের উদ্ভব হইতে পারে। যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাল গসব করিয়া উহা ধ্বংস বা নষ্ট করিয়া ফেলিল। এই অবস্থায় তাহার উপর যে ক্ষতিপূরণ ধার্য হয় তাহা, পরিশোধ না করা পর্যন্ত, ঋণ হিসাবে গণ্য হয়। অপরাধকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণেও ঋণের উদ্ভব হইতে পারে। যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে আহত বা হত্যা করিল। বিচারে তাহার উপর দিয়াত ধার্য হইল। উহা, পরিশোধ না করা পর্যন্ত, অপরাধীর ঋণ হিসাবে গণ্য হইবে।

কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট হইতে কর্জে হাসানা গ্রহণ করিলে তাহাও ঋণ হিসাবে গণ্য। কর্জ মূলতই ঋণের অন্তর্ভুক্ত।

পরিশোধের সময়সীমা অনুসারে ঋণ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। চুক্তিপত্রে যে ঋণ চাহিবামাত্র পরিশোধ করার শর্ত করা হইয়াছে তাহা “তলবী ঋণ” হিসাবে গণ্য। ঋণদাতা যখনই তাহা ফেরত চাহিবে, তাহা তৎক্ষণাৎ ফেরত দেওয়া ঋণগ্রহীতার জন্য বাধ্যকর হইবে, এই ব্যাপারে সে সময় ক্ষেপণ করিতে পারিবে। ব্যবসায়ীগণ কর্তৃক গৃহীত ব্যাংকের ‘সর্ট টাম লোন’ অনেকটা এই প্রকৃতির।

চুক্তিপত্রে যে ঋণ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদশেষে পরিশোধ করার শর্তযুক্ত করা হইয়াছে তাহা “মেয়াদী ঋণ হিসাবে গণ্য। মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ঋণের প্রত্যর্পণ দাবি করা যায় না, এমনকি ঋণ গ্রহীতার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপের আবেদন করিয়া আদালতে মামলাও দায়ের করা যায় না। তবে

৬০৩

ঋণগ্রহীতা মেয়াদ শেষ না হওয়ার পূর্বেও উহা পরিশোধ করিতে পারে এবং তাহাতে সে দায়মুক্ত হইয়া যায়।

ধারা-৮৩৯

বন্ধযুক্ত ঋণ (ক) ঋণ পরিশোধকালে বন্ধুকযুক্ত ঋণদাতাগণ বন্ধকহীন ঋণদাতাগণের তুলনায় অগ্রাধিকার পাইবে।

(খ) ঋণদাতার দখলে থাকা অবস্থায় বন্ধকী মাল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে উহার মূল্য অনুপাতে ঋণের পাওনা হ্রাস পাইবে।

(গ) ধারা (ক) ও (খ)-এ বর্ণিত বিধান মুফলিসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

ঋণগ্রহীতা মৃত্যুবরণ করিলে অথবা মুফলিস হইয়া গেলে এবং এই অবস্থায় তাহার কোন মাল ঋণদাতার নিকট বন্ধক থাকিলে, সে ঋণ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে অন্যান্য ঋণদাতার তুলনায় অগ্রাধিকার পাইবে অর্থাৎ তাহার দাবি আগে মিটাইতে হইবে, অতঃপর অপরাপর ঋণদাতার পাওনা পরিশোধ করিতে হইবে। বন্ধকী মাল ঋণদাতার দখলে থাকা অবস্থায় নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে সেই ক্ষেত্রে তিন রকম ব্যবস্থা হইবে। (এক) বন্ধকী মালের মূল্য ঋণের সম-পরিমাণ হইলে উক্ত বন্ধকের দ্বারা তাহার ঋণ পরিশোধ হইয়া যাইবে। (দুই) বন্ধকী মালের মূল্য ঋণের পরিমাণের তুলনায় কম হইলে অবশিষ্ট ঋণের জন্য সে বন্ধকহীন ঋণদাতাগণের অন্তর্ভুক্ত হইবে। (তিন) বন্ধকী মালের মূল্য ঋণের তুলনায় বেশী হইলে অতিরিক্ত অংশ ঋণগ্রহীতা ফেরত পাইবে, অথবা তাহার অন্যান্য অংশীদারগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে।

ধারা-৮৪০

বিক্রীত মাল বাবদ উদ্ভূত ঋণ (ক) মাল বিক্রয়ের পর, উহার মূল্য আদায়ের পূর্বে, ক্রেতার দখলে অর্পণ করা হইলে এবং এই অবস্থায় ক্রেতা মারা গেলে বা মুফলিস ঘোষিত

৬০৪

হইলে, বিক্রেতা ক্রেতার অন্যান্য ঋণদাতার মধ্যে শামিল হইবে।

(খ) বিক্রীত মাল বিক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় ক্রেতা মারা গেলে বা মুফলিস ঘোষিত হইলে, এই অবস্থায় সে ক্রেতার অন্যান্য ঋণদাতার তুলনায় অগ্রাধিকার পাইবে।

(গ) মূল্য গ্রহণ ও মাল অর্পণের পূর্বে বিক্রেতা মারা গেলে বা মুফলিস ঘোষিত হইলে এবং উক্ত মাল অবিকল বিদ্যমান থাকিলে, এই অবস্থায় ক্রেতা বিক্রেতার অন্যান্য ঋণদাতার তুলনায় অগ্রাধিকার পাইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি তাহার মাল বিক্রয়ের পর উহার মূল্য আদায় করার পূর্বে তাহা ক্রেতার দখলে অর্পণ করিল। ক্রেতা উহার মূল্য পরিশোধ করার পূর্বে মারা গেল অথবা মুফলিস ঘোষিত হইল। এই অবস্থায় বিক্রেতা একজন সাধারণ ঋণদাতা হিসাবে ক্রেতার অন্যান্য ঋণদাতার সহিত যুক্ত হইবে এবং তাহারা ক্রেতার পরিত্যক্ত মাল হইতে তাহাদের ঋণের অনুপাত অনুসারে অংশ পাইবে।

বিক্রীত মালের মূল্য পরিশোধ না করা অবস্থায় তাহা বিক্রেতার দখলে থাকিলে, ক্রেতার অন্যান্য ঋণদাতার ঋণ পরিশোধের পূর্বে তাহার ঋণ পরিশোধ করিতে হইবে। নিয়ম এই যে, উক্ত মাল সে নিজে বিক্রয় করিতে পারিবে না, বরং আদালত তাহা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিবে। প্রাপ্ত মূল্য দ্বারা প্রথমে বিক্রেতার দাবি মিটানো হইবে, অতঃপর কিছু অবশিষ্ট থাকিলে তাহা অন্যান্য পাওনাদারের মধ্যে বণ্টিত হইবে। যদি প্রাপ্ত মূল্য দ্বারা বিক্রেতার দাবি সম্পূর্ণ মিটানো সম্ভব

হয় তবে অবশিষ্ট পাওনার জন্য সে অন্যান্য ঋণদাতার মধ্যে শামিল হইবে।

বিক্রেতা তাহার মালের মূল্য গ্রহণের পর এবং মাল ক্রেতার দখলে অর্পণের পূর্বে মারা গেল অথবা মুফলিস ঘোষিত হইল। এই অবস্থায় উক্ত মাল অবিকল বিদ্যমান থাকিলে উহা দ্বারা সর্বপ্রথমে ক্রেতার পাওনা মিটাইতে হইবে। অতঃপর কিছু অবশিষ্ট থাকিলে তাহা বিক্রেতার অন্যান্য ঋণদাতার মধ্যে বণ্টিত হইবে। কারণ মূল্য গ্রহণের পর মাল নিজ দখলে রাখার অধিকার বিক্রেতার থাকে না। উহা তখন তাহার নিকট ক্রেতার আমানত হিসাবে গণ্য হয়। ক্রেতা যেমন বিক্রেতার জীবদ্দশায় উক্ত মাল তাহার নিকট অর্পণের জোর দাবি করিতে পারে, তদ্রূপ তাহার মৃত্যুর পরও ক্রেতার উক্ত দাবি বহাল থাকে।

৬০৫

ধারা-৮৪১

শরীকী ঋণ

(ক) একাধিক শরীকের প্রদত্ত যৌথ ঋণের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ কোন শরীক ঋণগ্রহীতার নিকট হইতে আদায় করিলে, সকল শরীক নিজ নিজ অংশমত উহার ভাগ পাইবে।

(খ) আদায়কৃত ঋণ আদায়কারী অংশীদারের দখলে থাকা অবস্থায় তাহার অবহেলা বা অযত্নের কারণে ধ্বংস বা নষ্ট হইলে অন্যান্য শরীক উহার দায় বহন করিবে না।

(গ) কোন শরীক যৌথ ঋণ আদায় করার পর তাহা নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করিলে বা হেবা করিলে সে অন্যান্য অংশীদারের অংশের জন্য দায়বদ্ধ থাকিবে।

(ঘ) কোন শরীকের প্রতিনিধি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে তাহার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হইবে।

(ঙ) যৌথ ঋণের যে পরিমাণ আদায় হইবে তাহাতে সকল অংশীদারের অংশমত আনুপাতিক হারে অংশ বর্তাইবে এবং যত পরিমাণ অনাদায়ী থাকিবে তাহাতেও সকলের অংশ অনাদায়ী থাকিয়া গিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(চ) যৌথভাবে গৃহীত ঋণের দায় অংশীদারগণ নিজ নিজ অংশমত বহন করিবে।

বিশ্লেষণ

যৌথভাবে প্রদত্ত ঋণের আদায়কৃত অংশে সকল শরীক নিজ নিজ অংশমত ভাগ পাইবে। তবে অন্যান্য অংশীদার এই শর্তে তাহা আদায়কারী অংশীদারকে ছাড়িয়া দিতে পারে যে, তাহারা অবশিষ্ট ঋণ আদায় করিয়া নিজ নিজ অংশমত ভাগ করিয়া নিবে। আদায়কৃত ঋণ আদায়কারী শরীকের দখলে থাকা অবস্থায়, তাহার অবহেলা বা অযত্নের কারণে ধ্বংস বা নষ্ট হইলে তাহার ক্ষতি অন্যান্য শরীক বহন করিবে না। বরং তাহারা ঋণগ্রহীতার নিকট হইতে অবশিষ্ট পাওনা

৬০৬

আদায় করিয়া নিজ নিজ অংশমত ভাগ করিয়া নিবে। কিন্তু ঋণ আদায় করিয়া আনার পথে কোন অনিবার্য দুর্ঘটনায় তাহা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে সকল অংশীদারকে নিজ নিজ অংশমত উহার লোকসান বহন করিতে হইবে। সম্পূর্ণ ঋণ আদায় করার পর তাহা আদায়কারী শরীকের দখলে থাকা অবস্থায় তাহার অবহেলা বা অযত্নের কারণে ধ্বংস হইয়া গেলে তাহাকে অপরাপর শরীকের ঋণের দায় বহন করিতে হইবে।

যৌথ ঋণ আদায়ের পর তাহা আদায়কারী শরীক নিজ প্রয়োজনে খরচ করিলে বা দান-খয়রাত করিলে অথবা তাহা দ্বারা নিজের ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধ করিলে, সে অন্যান্য শরীকের নিকট দায়বদ্ধ থাকিবে। অন্যান্য শরীক অবশিষ্ট ঋণ আদায় করিয়া তাহাদের মধ্যে বণ্টন করিয়া নিতে পারিবে, কিন্তু উক্ত শরীক তাহার আদায়কৃত ঋণ যাহাকে হেবা করিয়াছে বা ঋণ রাবদ প্রদান করিয়াছে তাহার নিকট হইতে উহা ফেরত লইতে পারিবে না। কোন শরীক যৌথ ঋণ তাহার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি দ্বারা আদায় করিলে এবং তাহা উক্ত শরীকের নিকট ধ্বংস হইলে সে অন্যান্য শরীকের পাওনা ঋণের জন্য দায়ী হইবে। তাহারা ঋণ গ্রহীতার নিকট হইতে বাকি পাওনা আদায় করিয়া নিজ নিজ অংশ পূর্ণ করিবে। তাহার নিকট পাওনা না থাকিলে উক্ত শরীকের নিকট হইতে তাহাদের পাওনা বুঝিয়া লইবে।

যৌথ ঋণের যে পরিমাণ আদায় হইবে, অংশীদারগণ তাহাতে নিজ নিজ অংশমত ভাগ পাইবে, উহা যে শরীকই আদায় করুক। আর যে পরিমাণ অনাদায়ী থাকিবে তাহাতেও সকলের অংশ থাকিবে। ১৩ অনুরূপভাবে যৌথভাবে ঋণ গ্রহণ করা হইলে তাহার দায় অংশীদারগণ নিজ নিজ অংশমত বহন করিবে। কোন শরীক যৌথ ঋণ পরিশোধ করিলে সে অন্যান্য শরীকের নিকট পাওনাদার হিসাবে গণ্য হইবে।

ধারা-৮৪২

ঋণ পরিশোধ ঋণগ্রহীতা নিম্নোক্ত যে কোন পন্থায় ঋণের দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিতে পারে, ইহাকে ঋণ পরিশোধ বলে-(ক) ঋণগ্রহীতা নিজে অথবা

৬০৭

তাহার প্রতিনিধি অথবা তাহার যামিনদার অথবা অন্য কেহ, ঋণদাতা বা তাহার কর্তৃত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধির নিকট ঋণ অৰ্পণ করিলে;

(খ) ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে ঋণের দায় হইতে মুক্ত করিয়া দিলে;

(গ) দুই ব্যক্তির পরস্পরের নিকট ঋণ পাওনা থাকিলে এবং উভয়ের ঋণের পরিমাণ সমান হইলে, এই অবস্থায় তাহারা পরস্পরের পাওনা কর্তন করিলে;

(ঘ) ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে একমাত্র ওয়ারিস রাখিয়া মারা গেলে; (ঙ) ঋণ বাধ্যকর হওয়ার পর উহার কারণ রদ হইয়া গেলে; (চ) ঋণচুক্তি নবায়ন করিলে; (ছ) ঋণগ্রহীতা বা তাহার যামিনদারের পক্ষে কোন ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের দায় গ্রহণ করিলে এবং ঋণদাতা তাহা অনুমোদন করিলে;

(জ) ঋণগ্রহীতা মুফলিস অবস্থায় মারা গেলে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করিলে তাহা পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে ঋণদাতার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। ঋণ পরিশোধের বিভিন্ন পন্থা রহিয়াছে। ঋণগ্রহীতা বা তাহার প্রতিনিধি বা তাহার যামিনদার বা অপর কেহ তাহার ঋণ পরিশোধ করিয়া দিলে সে দায়মুক্ত হইতে পারে। তবে এই ঋণ ঋণদাতা বা তাহার বৈধ অভিভাবক বা প্রতিনিধির নিকট অৰ্পণ করিতে হইবে, অন্যথায় ঋণগ্রহীতা ঋণের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে না।

ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে ঋণের দায় হইতে অব্যাহতি দিলেও সে ঋণমুক্ত হইতে পারে। যেমন আমীনের নিকট, মাল বিক্রয় জনিত কারণে, উহার মূল্য বাবদ আব্বাসের এক হাজার টাকা পাওনা হইয়াছে। আব্বাস তাহার এই দাবি ত্যাগ করিলে আমীন দায়মুক্ত হইয়া যাইবে। ইহাকে ইরা (e) ) বা দায়মুক্তকরণ বলে।

পরস্পরের নিকট পাওনা কর্তন করিয়াও ঋণের দায় হইতে মুক্তিলাভ করা যায়। যেমন আমীন আব্বাসের নিকট এক হাজার টাকা পাইবে। আব্বাস আমীনের

৬০৮

নিকট বাকিতে এক হাজার টাকার মাল বিক্রয় করিল। এই অবস্থায় আব্বাস তাহার পণ্যের মূল্য বাবদ আমীনের প্রাপ্য এক হাজার টাকা কাটিয়া রাখিলে উভয়ে ঋণমুক্ত হইয়া যাইবে। এই পদ্ধতিকে বলে আল-মুকাসা; বা কর্তন পদ্ধতি। উভয়ের নিকট উভয়ের পাওনার পরিমাণে ব্যবধান থাকিলে যতটুকু কর্তন করা হইবে ততটুকু ঋণ পরিশোধিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে ওয়ারিস রাখিয়া মারা গেলেও ঋণ পরিশোধিত হইতে পারে। যেমন আমর তাহার সহােদর ভাই উমারকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করিল। অতঃপর সে উমারকে আহার একমাত্র ওয়ারিস রাখিয়া মারা গেল। এই অবস্থায় উমার তাহার ভ্রাতার যাবতীয় সম্পত্তির ওয়ারিসী সূত্রে মালিক হইবে। সে তাহার ভ্রাতার নিকট হইতে যে ঋণ লইয়াছিল উহারও সে মালিক হইয়া গেল। ঋণগ্রহীতা ওয়ারিসী সূত্রে ঋণদাতার পরিত্যক্ত সম্পত্তির যতুটুকু অংশ পাইবে, তদনুপাতে তাহার ঋণ পরিশোধিত হইবে।

যে কারণে কোন ব্যক্তির উপর ঋণের দায় চাপে সেই কারণ রদ হইয়া গেলেও ঋণের দায় হইতে অব্যাহতি পাওয়া যায়। যেমন আমীন মায়ূনের নিকট হইতে পারে এই শর্তে দশ হাজার টাকার মাল ক্রয় করিল যে, তাহার পছন্দ হইলে সে মাল রাখিবে এবং পছন্দ না হইলে তিন দিনের মধ্যে উহা ফেরত প্রদান করিবে। এই অবস্থায় আমীন তাহার ক্রীত পণ্য তিন দিনের মধ্যে ফেরত প্রদান করিলে চুক্তিমূলে যে দায় সৃষ্টি হইয়াছিল তাহা রদ হইয়া যাইবে। অনুরূপভাবে একটি বাস চুক্তিমূলে ভাড়া নেওয়া হইল। কিন্তু ইঞ্জিন বিকল হইয়া যাওয়ায় উহা আর পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হইল না। এই অবস্থায় চুক্তির কারণে ইজারাদাতার নিকট ইজারাদারের যে দায় সৃষ্টি হইয়াছিল, পরিবহন যানটি অকেজো হইয়া যাওয়ায় তাহা হইতে অব্যাহতি পাওয়া যাইবে। এমনকি ইজারাদার অগ্রিম ভাড়া প্রদান করিয়া থাকিলে তাহাও ফেরত পাইবে। ইহাকে বলে “বাধ্যকর হওয়ার কারণ রদ’ (৩৭-

T A 31 ) পদ্ধতি।

ঋণচুক্তি নবায়নের মাধ্যমেও ঋণ পরিশোধিত হইতে পারে। যেমন আমীন একটি চুক্তিমূলে মামুনের নিকট হইতে দশ হাজার টাকা ঋণ লইয়াছিল। ঋণ ফেরত দেওয়ার মেয়াদান্তে একটি নূতন চুক্তিমূলে মামূন আমীনকে সময় বাড়াইয়া দিল। এই অবস্থায় প্রথমোক্ত চুক্তির অবসান ঘটিবে এবং উক্ত চুক্তিমূলে

৬০৯

প্রদত্ত ঋণ নূতনভাবে দেওয়া হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় তাজদীদ ( 1 ) বা নবায়ন পদ্ধতি।

ঋণগ্রহীতা বা তাহার যামিনদারের পক্ষ হইতে ঋণ পরিশোধ করিয়া দেওয়ার দায়িত্ব অপর ব্যক্তি গ্রহণ করিলে এবং ঋণদাতা তাহা অনুমোদন করিলে এই অবস্থায় ঋণগ্রহীতা তাহার দায় হইতে মুক্তি পাইতে পারে। এই পদ্ধতিকে বলে “হাওয়ালা” ( 309 )। দায়িত্ব গ্রহণকারীর ঋণ গ্রহীতার নিকট হইতে ঋণের প্রত্যর্পণ দাবি করার অধিকার সর্বাবস্থায় বহাল থাকিবে।

কোন ব্যক্তি মুফলিস অবস্থায় মারা গেলে তাহার ঋণের দায় বাতিল হইয়া যাইবে। তবে তাহার জীবদ্দশায় তাহার দায়ের অনুকূলে কেহ যামিন হইলে অথবা বন্ধক থাকিলে ঋণদাতার দাবি বাতিল হইবে না। হানাফী মাযহাব ব্যতীত অন্যান্য মাযহাবমতে ঋণগ্রহীতার মৃত্যুর পরও তাহার ঋণ পরিশোধের যামিন হওয়া বৈধ।১৪

ধারা-১৪৩

ঋণচুক্তি (ক) পক্ষবৃন্দের ঈজাব ও ককূলের মাধ্যমে ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়। (খ) চুক্তিপত্র লিখিত আকারে হইতে হইবে। (গ) চুক্তিপত্রে মেয়াদ উল্লেখ থাকিতে হইবে। (ঘ) চুক্তি অনুষ্ঠানকালে দুইজন মুসলিম ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখিতে হইবে।

(ঙ) সাক্ষী না পাওয়া গেলে ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার নিকট তাহার কোন মাল বন্ধক রাখিবে।

(চ) চুক্তিপত্রে পক্ষবৃন্দের এবং সাক্ষীগণের নাম-ঠিকানা ও স্বাক্ষর যুক্ত হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

অন্যান্য চুক্তির ন্যায় ঋণচুক্তিও পক্ষবৃন্দের ঈজাব-ককূল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সম্মতি প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। প্রস্তাব বা সম্মতি যে কোন পক্ষ কর্তৃক

৬১০

প্রদত্ত হইতে পারে। প্রস্তাব ও সম্মতি অনুষ্ঠানের পর লিখিতভাবে চুক্তিপত্র সম্পাদিত হইতে হইবে। কারণ লিখিত চুক্তিপত্রই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য। হানাফী, মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে ঋণের চুক্তিপত্র লিখিত আকারে হওয়া বাধ্যতমূলক না হইলেও অবশ্যই সুন্নাত। কারণ ইহার দ্বারা সমূহ বিবাদ, অবিশ্বস্ততা ও প্রতারণাসহ অনেক বিপদ হইতে নিরাপদ থাকা যায়। বিশেষত বর্তমান নৈতিক অধঃপতন যুগে চুক্তিপত্র লিখিত আকারে হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। আল্লামা ইন জারীর তাবারী (র)-সহ একদল ফকীহ চুক্তিপত্র লিখিত আকারে হওয়াকে ফরয অর্থাৎ একান্ত বাধ্যতামূলক বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন।

হানাফী, মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে ঋণের আদান-প্রদানে সাক্ষী রাখা বাধ্যতামূলক না হইলেও ইহা সুন্নাত। এই ব্যাপারে দুইজন মুসলিম পুরুষ সাক্ষী রাখিতে হইবে। দুইজন পুরুষ সাক্ষী না পাওয়া গেলে একজন মুসলিম পুরুষ ও দুই জন মুসলিম নারীকে সাক্ষী রাখিতে হইবে, যাহাতে ভবিষ্যতে কেন বিবাদের সৃষ্টি হইলে তাহা সহজে নিষ্পত্তি করা যায়। ঋণের ক্ষেত্রে সাক্ষীর গুৰুত্ব সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীসেও আলোকপাত করা হইয়াছে। মহানবী (স) বলেনঃ

। • • • • •;

تجيب لهم …… و رجل

التة يدعون ال

له على رجل دين و لم يشهد عليه به.

“তিন শ্রেণীর লোক আল্লাহর নিকট দোয়া করে কিন্তু তিনি তাহাদের দোয়া কবুল করেন না ….. যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ঋণ দিয়াছে কিন্তু উহার অনুকূলে। সাক্ষী রাখে নাই।”১৬

সফরে থাকাকালে ঋণের লেনদেন হইলে এবং সাক্ষী রাখার মত লোক না পাওয়া গেলে সহীতা তাহার কোন মাল ঋণদাতার নিকট বন্ধক রাখিবে। হানাফী, মাকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে বন্ধক রাখাও বাধ্যতামূলক নহে। পক্ষমের পরস্পরের প্রতি আস্থা থাকিলে বন্ধক ছাড়াও ঋণের আদান-প্রদান হইতে পারে।

ঋণ মেয়াদী প্রকৃতির হইলে চুক্তিপত্রে মেয়াদের সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকিতে হইবে। কারণ মেয়াদী ও তলবী হওয়ার কারণে উহার বিধানেও পার্থক।

دان

বিদ্যমান। তলবী ঋণ চাহিবামাত্র ফেরত প্রদান করিতে হইবে। কিন্তু মেয়াদী ঋণের সময়সীমা অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত উহার প্রত্যর্পণ দাবি করা যায় না। কুরআন মজীদের সর্বাধিক দীর্ঘ আয়াতে ঋণ সম্পর্কিত বিধান প্রদান করা হইয়াছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

1 ، نا

3

ايها الذين آمنوا إذا تداينتم بدين اللى أجل مسی فاكتبوهو ليكتب بيگم كاتب بالعدل ولا يأب كاتب أن يكتب ما علمه الله فليكتب ج وليملل الذي عليه الحق وليتق الله ربه و

ب س منه شيئا طفان كان الذي عليه الحق

فيها أو ضعيفا أو لا يستطيع أن يمل هو قليملك وله العدل ع واستشهدوا شهيدين من رجالكم ج فان لم يؤنا رجلين فرج وامرأتان م ن

ترضون من الشهداء آن تضل احدهماتذكر احدهما الأخرى ط ولا يأب الشهداء اذا ما وا ط ولا تسئموا أن تكتبوه صغيرا أو كبيرا الى أجله ط ذلكم أقسط عند الله وأقوم للشهادة واذني الأرتابوا إلا أن تكون تجارة حاضرة ديرونها بينكم فليس عليكم

৬১২

جناح الأبوها ط واشهدوا إذا تباغتم ص ولا يضار کاتب و شهده ط واتقوا الله ط ويعلم

الله ط والله بكل شيئ عليه. وان نتم على سفر ولم تجدوا كاتبا فرهن

مقبوض ط قان أمن بعضكم بعضا فليؤ الذي اؤتمن أمانته وليتق الله ره ط ولا تكتموا الشهادة طو من ي مها فائه أثم قلبه لا والله بماتعملون عليم

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোন নির্ধারিত কালের জন্য পরস্পরের মধ্যে ঋণের লেনদেন কর তখন তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া রাখ। তোমাদের পক্ষবৃন্দের মধ্যে এক ব্যক্তি যেন ন্যায়সংগতভাবে (চুক্তিপত্র) লিপিবদ্ধ করিয়া দেয়। যেহেতু আল্লাহ তাহাকে লেখা-পড়ার যোগ্যতা দান করিয়াছেন তাই সে যেন (চুক্তিপত্র) লিপিবদ্ধ করিতে অস্বীকৃতি না জানায়। অতএব সে যেন (চুক্তিপত্র) লিপিবদ্ধ করিয়া দেয় এবং যাহার উপর দায় বর্তায় (ঋণগ্রহীতা) সে যেন (চুক্তির বিষয়বস্তু বলিয়া দেয় এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহুকে ভয় করে, আর স্থিরীকৃত বিষয়ের কিছু না কমায়। যাহার উপর দায় বর্তায় সে যদি নির্বোধ বা দুর্বল হয় অথবা লিপিবদ্ধ করার বিষয়বস্তু বলিয়া দিতে অপারগ হয় তবে তাহার অভিভাবক যেন ন্যায়পরায়ণতার সহিত লিপিবদ্ধ করার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয়। অতঃপর তোমরা তোমাদের আস্থাবান লোকদের মধ্য হইতে দুইজন পুরুষ লোককে সাক্ষী রাখ। যদি দুইজন পুরুষ না পাওয়া যায় তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোককে (সাক্ষী বানাও), তাহাদের একজন ভুল করিলে অন্যজন যেন তাহাকে স্মরণ করাইয়া দেয়। সাক্ষীগণকে যখন তলব করা হইবে তখন তাহারা যেন (সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার না করে। লেনদেন ক্ষুদ্র-বৃহৎ যাহাই হউক,

৬১৩

মেয়াদকালসহ তাহা (চুক্তিপত্রে) লিপিবদ্ধ করিতে তোমরা গড়িমসি করিও না। আল্লাহর নিকট ইহা ন্যায্যতর, প্রমাণের জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি না হওয়ার অনুকূল নিকটতর। কিন্তু তোমরা পরস্পরে ব্যবসায়ের যে নগদ আদান-প্রদান কর তাহা তোমরা না লিখিলে কোন দোষ নাই। তোমরা যখন পরস্পর ব্যবসায়িক লেনদেন (চুক্তি) কর তখন সাক্ষী রাখিও। লেখক ও সাক্ষীকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করা হয়, যদি কর তবে তাহা তোমাদের জন্য পাপ। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহ্ই তোমাদের (সঠিক পন্থা) শিক্ষা দেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত। যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক

পাও তবে বন্ধক রাখা শ্রেয়। তোমাদের একজনের অপরজনের প্রতি আস্থা থাকিলে যাহার উপর আস্থা স্থাপন করা হইয়াছে সে যেন তাহার আমানত যথাযথভাবে প্রত্যর্পণ করে এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না। যে কেহ সাক্ষ্য গোপন করে তাহার অন্তর অপরাধী। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহা সবিশেষ অবহিত”- (সূরা বাকারাঃ ২৮২-৩)।

লিপিবদ্ধ চুক্তিপত্রে পক্ষবৃন্দ, সাক্ষীগণ ও চুক্তিপত্র লেখকের নাম-ঠিকানা ও স্বাক্ষর যুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পক্ষবৃন্দের সীলমোহর যুক্ত হওয়া আরও উত্তম।

ধারা—৮৪৪

যেভাবে ঋণের দায় উদ্ভূত হয় নিম্নোক্ত যে কোন কারণে ঋণের দায় সৃষ্টি হইতে পারে—(ক) চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে;

(খ) আইনবিরুদ্ধ কোন কাজ করার কারণে; (গ) অপরের মাল ধ্বংস বা আত্মসাৎ করার কারণে; (ঘ) আইন সম্মত কোন কারণে;

(ঙ) জনকল্যাণমূলক কোন প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত শর্তাধীনে সরকার কর্তৃক কোন আর্থিক দায়িত্ব আরোপের কারণেঃ

(১) প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে; (২) প্রয়োজন পূরণের জন্য ন্যায়সংগতভাবে ব্যয় করিতে হইবে;

৬১৪

(৩) প্রয়োজনীয় খাতে সঠিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া প্রয়োজন পরিমাণ ব্যয় করিতে হইবে;

(৪) যাহার উপর আর্থিক দায়িত্ব চাপানো হইবে তাহার সে দায়িত্ব সহজে বহনের সামর্থ্য থাকিতে হইবে;

(৫) বায়তুল মালের অর্থ দ্বারা এককভাবে উক্ত প্রয়োজন পূরণ অসম্ভব হইতে হইবে।

(চ) ঋণের দায় আছে মনে করিয়া তাহা পরিশোধ করা হইলে; (ছ) কোন ঋণগ্রহীতার নির্দেশে তাহার ঋণ পরিশোধ করিলে;

(জ) অনিবার্য অবস্থায় শরীআত সম্মত পন্থায় কাহারও মাল ধ্বংস করিলে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তিকে যে কোন প্রকারের ঋণ, দায়-দায়িত্ব অথবা জবাবদিহি হইতে মুক্ত মনে করা হইবে, যতক্ষণ না উহার সমর্থনে কোন কারণ পাওয়া যায়। তাই কোন ব্যক্তির উপর যে কোন প্রকারের ঋণের দায় প্রমাণের জন্য যুক্তিসংগত কারণ অবশ্যই বিদ্যমান থাকিতে হইবে। মোটামুটি যেসব কারণে কোন ব্যক্তির উপর ঋণের দায় চাপিতে পারে, উপরোক্ত ধারাসমূহে তাহা সন্নিবেশিত হইয়াছে।

এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সহিত চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে ঋণের দায় সৃষ্টি হইতে পারে। যেমন ধারে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে আবদ্ধ হইলে ক্রেতা বিক্রেতার খাতক এবং অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে আবদ্ধ হইলে বিক্রেতা ক্রেতার খাতক হিসাবে গণ্য হয়। অনুরূপভাবে বিবাহ, মালের বিনিময়ে তালাক, হাওয়ালা, কাফালা, কারিগরি কার্য ইত্যাদি চুক্তির কারণেও ঋণের দায় সৃষ্টি হয়। একক সংকল্পের দ্বারাও ঋণের দায় সৃষ্টি হইতে পারে। যেমন মানত করা।

শরীআত কর্তৃক নিষিদ্ধ এইরূপ কোন কার্যে লিপ্ত হওয়ার কারণেও ঋণের দায় সৃষ্টি হইতে পারে। যেমন মানবজীবন বা মানবদেহের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের দায়ে অপরাধীর উপর দিয়াত ধার্য হইলে তাহা পরিশোধ না করা পর্যন্ত উহা তাহার উপর ঋণ হিসাবে বিরাজ করে।

৬১৫

অনুরূপভাবে অন্যের মাল নষ্ট বা ধ্বংস করিলে, আমানত হিসাবে গচ্ছিত মাল ধ্বংস করিলে, কাহারও মাল গসব করিলেও ঋণের দায় সৃষ্টি হইতে পারে। যাহার মাল নষ্ট বা ধ্বংস করা হইয়াছে বা গসব করা হইয়াছে, তাহাকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত উহা ধ্বংসকারী বা গসবকারীর দেনা হিসাবে বিরাজ করে।

আইনসম্মত কোন কারণেও ঋণের দায় উদ্ভব হইতে পাব্রে। যেমন কোন ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ মাল থাকিলে এবং তাহা পূর্ণ এক বৎসর তাহার করায়ত্ব থাকিলে বৎসরশেষে তাহার উপর যাকাত ধার্য হয়। উহা, পরিশোধ না করা পর্যন্ত, তাহার উপর ঋণ হিসাবে বিদ্যমান থাকে। অনুরূপভাবে স্ত্রীর খারপোষ আদালত কর্তৃক বা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে ধার্যকৃত হইলে উহার বকেয়া স্বামীর জন্য ঋণ হিসাবে গণ্য হয়।

সরকার জনকল্যাণমূলক বা উন্নয়নমূলক কোন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অথবা কোন জরুরী অবস্থা বা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সামর্থ্যবান লোকদের উপর কোন আর্থিক দায়িত্বভার অর্পণ করিলে তাহা, পরিশোধ না করা পর্যন্ত, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য দেনা হিসাবে গণ্য হয়। তবে এই জাতীয় আর্থিক দায় আরোপের ক্ষেত্রে সরকারকে কতগুলি শর্ত মানিয়া চলিতে হইবে, সেই ওলি ধারা (ঙ)-এর অধীনে উল্লেখ করা হইয়াছে।

কোন ব্যক্তি ধারণা করিল যে, অপর ব্যক্তি তাহার নিকট কিছু টাকা পাইবে। উহা পরিশোধ করার পর তাহার স্মরণ হইল যে, উক্ত ব্যক্তির নিকট হইতে সে ঋণ গ্রহণ করে নাই। এই অবস্থায় শেষোক্ত ব্যক্তি প্রথমোক্ত ব্যক্তির নিকট ঋণী হিসাবে গণ্য হইবে।

ঋণগ্রহীতার নির্দেশে কোন ব্যক্তি নিজ অর্থব্যয়ে তাহার ঋণ পরিশোধ করিয়া দিলে, ঋণগ্রহীতা শেষোক্ত ব্যক্তির নিকট ঋণী থাকিবে, যাবত না সে তাহার

প্রাপ্য পরিশোধ করে।

অনিবার্য পরিস্থিতি বা অনন্যোপায় অবস্থার সম্মুখীন হইয়া কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাল শরীআত সম্মত পন্থায় খরচ বা ধ্বংস করিলে প্রথমোক্ত ব্যক্তি শেষোক্ত ব্যক্তির নিকট ঋণী হিসাবে গণ্য হইবে। যেমন কোন ব্যক্তি দুর্ভিক্ষের শিকার হইয়া মরণাপন্ন অবস্থায় পতিত হইয়া অপর ব্যক্তির খাদ্যশস্য তাহার

৬১৬

অনুমতি ব্যতীত খাইয়া নিঃশেষ করিয়া ফেলিল অথবা তাহার নিকট গচ্ছিত অর্থ ব্যয় করিয়া বিপদমুক্ত হইল। এই অবস্থায় প্রথমোক্ত ব্যক্তিকে সময়-সুযোগমত শেষোক্ত ব্যক্তির পাওনা পরিশোধ করিতে হইবে। উহা পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে তাহার খাতক হিসাবে গণ্য হইবে। কারণ অনিবার্য বা অনন্যোপায় অবস্থা অপরের অধিকার নস্যাৎ করিতে পারে না।১৭ এই ধরনের ধ্বংসসাধনকে “শরীআত সম্মত” বলার তাৎপর্য এই যে, দুর্ভিক্ষের কারণে বা অন্য কোন কারণে মরণাপন্ন অবস্থার শিকার হইলে হারাম বস্তু ব্যবহার করিয়া হইলেও জীবন বাঁচানোর জন্য শরীআতের অনুমোদন রহিয়াছে।

ধারা-৮৪৫

যে ক্ষেত্রে ঋণের দায় উদ্ভূত হয় না নিম্নোক্ত অবস্থায় কোন ব্যক্তির জন্য ঋণের দায় উদ্ভূত হইবে না— (ক) ঋণদাতার নির্দেশ ব্যতীত কোন ব্যক্তি স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া তাহার ঋণ পরিশোধ করিলে;

(খ) বন্ধকদাতা বা বন্ধক গ্রহীতা প্রতিপক্ষের নির্দেশ ব্যতীত স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া বন্ধকের জন্য কিছু খরচ করিলে;

(গ) ইজারাদার ইজারাদাতার নির্দেশ ব্যতীত তাহার কোন অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহ করিলে;

(ঘ) ঋণগ্রহীতার নির্দেশ বা অনুমোদন ব্যতীত কোন ব্যক্তি তাহার ঋণের যামিন হইয়া তাহা পরিশোধ করিলে;

(ঙ) ওয়াদিআ গ্রহণকারী ওয়াদিয়ার মালিকের নির্দেশ ব্যতীত উহার জন্য কিছু খরচ করিলে;

(চ) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জায়গায় তাহার (মালিকের) জন্য তাহার অনুমতি ব্যতিত কোন নির্মাণ কাজ করিলে;

(ছ) কোন শরীক তাহার অপর শরীকের বা আদালতের নির্দেশ ব্যতীত স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া শরীকানা সম্পত্তির উপর নির্মাণ কাজ করিলে;

(জ) কোন ব্যক্তি মালিকের নির্দেশ ব্যতীত তাহার সম্পত্তির জন্য যাহা ব্যয় করে।

৬১৭

বিশ্লেষণ

হানাফী ফিকহ-এর একটি মূলনীতি এই যে, “কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির অপরিহার্য আর্থিক দায় তাহার নির্দেশ বা আদালতের অনুমোদন ব্যতীত পরিশোধ করিলে তাহা ঐচ্ছিক দায় হিসাবে গণ্য হইবে”। অনেক লেনদেন এই মূলনীতির আওতাভুক্ত হইতে পারে। এখানে অনুরূপ কয়েকটি লেনদেন সম্পর্কে আলোচনা করা হইতেছে।

ঋণগ্রহীতার নির্দেশ ব্যতীত কোন ব্যক্তি তাহার ঋণ পরিশোধ করিয়া দিলে এবং ঋণগ্রহীতা, উহা স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া তাহাকে ফেরত না দিলে কিছু করার নাই। উহা ঋণগ্রহীতার নিকট ফেরত দাবির অধিকার তাহার নাই। ইহা ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শাফিঈ (র)-এর অভিমত। মুরশিদ আল-হায়রান তাঁহার মাজাল্লাতুল আহকামিল আদালিয়া গ্রন্থে (ধারা ২০৫) লিখিয়াছেন, “কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ঋণ তাহার নির্দেশ ব্যতীত পরিশোধ করিয়া দিলে ঋণগ্রহীতা দায়মুক্ত হইয়া যাইবে, সে উহার স্বীকৃতি প্রদান করুক বা না করুক। ঋণ পরিশোধকারী ঐচ্ছিক দানকারী হিসাবে গণ্য হইবে, সে ঋণগ্রহীতাগণের নিকট হইতে তাহাদের নির্দেশ ব্যতীত যাহা অৰ্পণ করিয়াছে তাহার কিছুই ফেরত পাইবে না, ঋণ হস্তগতকারী ঋণদাতার নিকট হইতেও ফেরত চাহিতে পারিবে।

। ৮

ইমাম মালেক ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতে ঋণ পরিশোধকারী তাহার অর্থ ঋণগ্রহীতার নিকট হইতে ফেরত পাইবে।

বন্ধকদাতা বা বন্ধক গ্রহীতা প্রতিপক্ষের নির্দেশ ব্যতীত বন্ধকী মালের জন্য কিছু ব্যয় করিলে সে তাহা প্রতিপক্ষের নিকট দাবি করিতে পারিবে না। কারণ এই জাতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য সে বাধ্য (6 ) ছিল না।

ইজারাদাতার এমন কতিপয় খরচ রহিয়াছে যাহা বহন করিতে সে বাধ্য। তাহার এই জাতীয় কোন খরচ তাহার নির্দেশ ব্যতীত ইজারাদার বহন করিলে তাহা ফেরত দিতে ইজারাদাতা বাধ্য নহে। যেমন ইজারাদাতা তাহার একটি মোটর গাড়ীর ইজারা প্রদান করিল। ইজারাদার মালিকের নির্দেশ ব্যতীত নিজ খরচে মোটর গাড়ি রং করাইল। এই অবস্থায় ইজারাদাতা রং করানো বাবদ খরচ ইজারাদারকে প্রদান করিতে বাধ্য নহে।

কেন ব্যক্তি ঋণগ্রহীতার নির্দেশ ব্যতীত তাহার ঋণের যামিন হইলে এবং

৬১৮

তাহা পরিশোধ করিয়া দিলে সে উহা ঋণদাতাব নিকট দাবি করিতে পারিবে না।

গচ্ছিত রাখা জিনিসের ( 3 ) জন্য মানতদার :লিকের নির্দেশ তীত কিছু খরচ করিলে তাহা আমানতদারকে প্রদান করা মালিকের জন্য বাধ্যতামূলক

নহে।

কোন ব্যক্তির জায়গায় তাহার নির্দেশ ব্যতীত তাহার জন্য অপর ব্যক্তি দালানকোঠা বা অন্য কিছু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করিলে উক্ত ব্যক্তি উহার খরচ জায়গার মালিকের নিকট দাবি করিতে পারিবে না। মালিকের উপর তাহা প্রদান করা বাধ্যতামূলক না হইলেও সে উক্ত নির্মাণ কাজের মালিক হইবে। অনুরূপভাবে শরীকানা জমিতেও এক শরীক অপর শরীকের বা আদালতের নির্দেশ ব্যতীত কিছু নির্মাণ করিলে উহার খরচ প্রদান করা উক্ত শরীকের উপর বাধ্যকর নহে। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি মালিকের নির্দেশ ব্যতীত তাহার সম্পত্তির উন্নয়ন বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু ব্যয় করিলে তাহা প্রদান করা বাধ্যতামূলক নহে।

উপরোক্ত সব ক্ষেত্রে যাহার অনুকূলে ব্যয় করা হয় সে ইচ্ছা করিলে তাহা ব্যয় নির্বাহকারীকে ফেরত প্রদান করিতে পারে, তবে ইহা তাহার জন্য বাধ্যতামূলক নহে। ব্যয় নির্বাহকারীও তাহা দাবি করিয়া আদায় করিতে পারিবে

। তবে সে আদালতের শরণাপন্ন হইতে পারে এবং আদালত উচিৎ বিবেচনা করিলে যাহার অনুকূলে ব্যয় নির্বাহ করা হইয়াছে তাহাকে উহা বহনের নির্দেশ দিতে পারে।

ধারা-৮৪৬

ঋণগ্রহীতাকে কয়েদ করা (ক) ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করিলে ঋণদাতাগণের আবেদনক্রমে আদালত তাহাকে কয়েদ করিবে?

তবে শর্ত থাকে যে, ঋণগ্রহীতা নিঃসম্বল হইলে তাহাকে কয়েদ করা যাইবে না, কিন্তু সে স্বচ্ছল বলিয়া আদালতের সন্দেহ হইলে কয়েদ করা যাইবে।

(খ) ঋণগ্রহীতা নিজেকে নিঃসম্বল এবং ঋণদাতাগণ তাহাকে স্বচ্ছল

৬১ ৯

বলিয়া দাবি করিলে আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করিবে।

(গ) ঋণগ্রহীতা পিতা বা মাতা হইলে তাহাকে ঋণের দায়ে কয়েদ করা যাইবে না।

(ঘ) ঋণগ্রহীতাকে তিন মাসের অধিক কয়েদ করিয়া রাখা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করা অন্যায় এবং ইহা অপরাধ হিসাবে গণ্য। মহানবী (স) বলেনঃ

مطل الفني ظلم۔

“স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য (অপরের পাওনা পরিশোধে) টালবাহানা করা অন্যায়।” ২১

عن الشريد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى الواجد يحل عرضه وعقوبته قال ابن المبارك يحل عرضه يقلظ له وعقوبته يحبس

শারীদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলিয়াছেনঃ “স্বচ্ছল ব্যক্তি (ঋণ পরিশোধে) টালবাহানা করিলে তাহাকে লজ্জিত করা এবং শাস্তি প্রদান করা বৈধ হইয়া যায়”। ইবনুল মুবারক (র) বলেন, “লজ্জিত করার” অর্থ “তাহার প্রতি কঠোর বাক্য প্রয়োগ করা” এবং “শাস্তি প্রদান করা” অর্থ (আইনের আওতায়), “তাহাকে আটক করা”।২২

ঋণদাতাগণ সকলে বা যে কোন একজন আদালতে ঋণগ্রহীতাকে আটকের আবেদন করিলেই কেবল তাহাকে আটক করা যাইবে, অন্যথায় নহে। কারণ ঋণ ফেরত পাওয়া ঋণদাতার অধিকার এবং আটক করাটা তাহার অধিকার আদায়ের একটা উপায়। তাই তাহার দাবির ভিত্তিতেই ঋণগ্রহীতাকে আটক করা যাইতে পারে।

৬২০

যদি স্বাভাবিকভাবেই জানা যায় যে, ঋণগ্রহীতা নিঃসম্বল, তাহা হইলে আদালত তাহাকে ঋণদাতাগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে আটক করিবে না। আদালত তাহাকে ঋণ পরিশোধের জন্য সময় দিতে ঋণদাতাগণকে নির্দেশ দিবে। কারণ মহান আল্লাহ বলেনঃ

و إن كان و سرة نظرة الى ميسرة .

“খাতক যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে স্বচ্ছলতা পর্যন্ত তাহাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়”- (সূরা বাকারাঃ ২৮০)।

অতএব নিঃসম্বল ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ না করা জুলুমের আওতাভুক্ত নহে। কারণ সে ঋণ পরিশোধ করিতে সক্ষমই নহে। এই অবস্থায় তাহাকে কয়েদ করায় কোন ফায়দা নাই। ঋণ আদায়ের উপায় হিসাবেই কয়েদ-এর ব্যবস্থা রাখা হইয়াছে, অযথা আটক করিয়া রাখার জন্য নহে। ২৩

তবে ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে সক্ষম বলিয়া আদালতের সন্দেহ হইলে এবং ঋণদাতা বা ঋণগ্রহীতা কোন পক্ষ হইতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই বিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণ পেশ করা না হইয়া থাকিলে, আদালত তাহাকে আটক করিতে পারিবে, যাহাতে তাহার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। সে স্বচ্ছল প্রমাণিত হইলে তাহাকে আটক রাখা হইবে যাহাতে সে ঋণ পরিশোধে বাধ্য হয়। কারণ সে স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করিয়া অন্যায় করিয়াছে। যদি সে নিঃসম্বল প্রমাণিত হয় তবে তাহাকে তৎক্ষণাৎ কয়েদমুক্ত করিয়া দিতে হইবে। কারণ সে কয়েদ হওয়ার যোগ্য নহে। সন্দেহের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাকে তিন মাসের অধিক কয়েদ করিয়া রাখা যাইবে না। কারণ সে ঋণ পরিশোধে সক্ষম কি না সেই সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত বা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিন মাসের সময় যথেষ্ট।

ঋণগ্রহীতা পিতা বা মাতা অথবা তদুর্ধগণ হইলে ঋণদাতার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাহাদেরকে আটক করা বৈধ নহে। কারণ পিতা-মাতার সহিত সন্তানের আচরণ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ

وصاحبهما في الدنيا معروفا ۔

৬২১

“পৃথিবীতে তাহাদের সহিত সদ্ভাবে বসবাস কর”-(সূরা লোকমানঃ ১৫)।

وبالوالدين احسانا۔

“পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করিতে (তোমার প্রতিপালক তোমাকে নির্দেশ দিয়াছেন)”- (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩)।

অতএব ঋণের দায়ে তাহাদেরকে আটক করা হইলে তাহা তাহাদের সহিত সদ্ভাবে জীবন যাপন ও সদ্ব্যবহারের পরিপন্থী কাজ হইবে। পিতা-মাতার পিতা-মাতা ও তদুর্ধগণও এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। তবে যে সন্তানের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা পিতার দায়িত্বভুক্ত সেই অবস্থায় পিতা যদি নিজের সেই দায়িত্ব পালন না করে তবে তাহাকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাযীরের আওতায় আটক করা যাইবে, ঋণের দায়ে নহে। অবশ্য ঋণগ্রস্ত সন্তানকে পিতা-মাতার পাওনার জন্য তাহাদের আবেদনক্রমে আদালত আটক করিতে পারিবে। কারণ পিতা-মাতাকে আটক করার পথে অন্তরায় হইতেছে “সদ্ব্যবহার”। এখানে সেই অন্তরায় নাই। অন্যান্য আত্মীয়ের ক্ষেত্রেও একই বিধান। ২৪ কয়েদের ব্যাপারে নারী-পুরুষ সকলে সমান। অর্থাৎ ঋণের দায়ে ঋণগ্রস্ত নারীকেও কয়েদ করা যাইবে। ঋণগ্রহীতা নাবালেগ হইলে এবং তাহার অভিভাবক তাহার ঋণ পরিশোধে কৰ্তত্বসম্পন্ন হইলে ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করার ক্ষেত্রে তাহাকেও কয়েদ করা যাইবে।

ঋণদাতাগণ ঋণগ্রহীতাকে স্বচ্ছল এবং ঋণগ্রহীতা নিজেকে নিঃসম্বল বলিয়া দাবি করিলে, সেই ক্ষেত্রে যেই পক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করিতে পারিবে সেই পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে। যদি উভয় পক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করে তবে সেই ক্ষেত্রে ঋণদাতাগণের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে। কারণ তাহারা “বর্ধনশীলতা” (ইদাফাহ) প্রমাণ করিতেছে। এখানে বর্ধনশীলতার অর্থ “স্বচ্ছলতা”।

যদি কোন পক্ষই সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করিতে না পারে তবে সেই অবস্থা সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মাদ (র) বলেন, যদি কোন পারস্পরিক চুক্তির দ্বারা ঋণের উদ্ভব হইয়া থাকে (যেমন ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ, যামিন, কতলে, আম্‌দ-এর ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে সমঝোতা, গসব ও ইতলাফের ক্ষেত্রে মাল প্রদানের ভিত্তিতে সমঝোতা, খােলার কারণে অথবা চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ফলে উদ্ভূত

৬২২

দায়িত্বের কারণে-যেমন স্ত্রীর খােরপোষ), তবে সেই ক্ষেত্রে ঋণদাতার দাবি গ্রহণযোগ্য হইবে।

উপরোক্ত কারণ ব্যতীত অন্য কোন কারণে ঋণের উদ্ভব হইলে (যেমন কাহারও কাপড়-চোপড় পোড়াইয়া ফেলার কারণে অথবা এমন প্রকৃতির নরহত্যার কারণে যাহার জন্য মৃত্যুদণ্ড না হইয়া হত্যাকারীর নিজের উপর দিয়াত ধার্য হয় এবং কতলে খাতা), সেই ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার দাবি গ্রহণযোগ্য হইবে। একদল ফকীহ বলেন, উপরোক্ত সব ক্ষেত্রে শপথ সহযোগে ঋণগ্রহীতার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে, যদি সে নিজেকে নিঃসম্বল বলিয়া দাবি করে। অপর দল বলেন, উপরোক্ত সব ক্ষেত্রে ঋণদাতার (দাবিদারের) বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে। আরেক দল ফকীহ বলিয়াছেন যে, এই সকল ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার পোশাক-পরিচ্ছদ ও জীবন যাপনের মানের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া সিদ্ধান্তে পৌছাইতে হইবে। অর্থাৎ তাহাকে স্বচ্ছল মনে হইলে ঋণদাতাগণের বক্তব্য এবং অস্বচ্ছল মনে হইলে তাহার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে। ২৫

ধারা-৮৪৭

ঋণগ্রস্ত কয়েদীর সুযোগ-সুবিধা (ক) ঋণদাতাগণের আবেদনক্রমে আদালত ঋণ গ্রহীতাকে কয়েদ করিলে সে বিনাশ্রম কয়েদ ভোগ করিবে এবং সেই অবস্থায়—(১) সে অসুস্থ হইয়া পড়িলে তাহার সুচিকিৎসা ও সেবা- সুশ্রুষার ব্যবস্থা করিতে হইবে;

(২) তাহাকে দৈহিক নির্যাতন করা যাইবে না, ভীতি প্রদর্শন করা যাইবে

, বেড়ি পরানো যাইবে না, বস্ত্রহীন করা যাইবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ঋণদাতাগণের সম্মুখে দণ্ডায়মান করিয়া রাখা যাইবে না;

(৩) কয়েদখানায় স্ত্রীসহবাসের সুযোগ-সুবিধা থাকিলে তাহাকে সেই সুযোগ প্রদান করিতে হইবে;

(৪) তাহার আত্মীয়-স্বজন তাহার সহিত দেখা-সাক্ষাত করিতে পারিবে।

(৫) তাহাকে জামাআতে নামায পড়িতে, রুগ্নকে দেখিতে, আহারের দাওয়াতে বা অনুরূপ উদ্দেশ্যে জেলখানার বাহিরে যাওয়া হইতে বিরত রাখিতে হইবে;

৬২৩

(৬) তাহার দান-খয়রাত (হে), ঋণের স্বীকারোক্তি, ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বা অনুরূপ কর্ম বৈধ গণ্য হইবে, যদি ঋণদাতাগণ তাহাকে অনুরূপ কার্য হইতে বিরত রাখার জন্য আদালতে আবেদন না করিয়া থাকে।

(খ) ধারা (ক)-এর অধীনে বর্ণিত বিধানসমূহ মুফলিসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

ঋণদাতাগণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণগ্রহীতাকে কয়েদ করা হইলে সে বিনাশ্রম দণ্ড ভোগ করিবে। তাহাকে দৈহিক বা মানসিক কোনরূপ নির্যাতন করা যাইবে না। সে অসুস্থ হইলে সুচিকিৎসার সুযোগ পাইবে এবং স্ত্রী-পুত্র-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন তাহার সহিত সাক্ষাত করিতে পারিবে। তবে সে পাচ ওয়াক্তসহ জুমুআ ও ঈদের নামায ও জানাযার নামায পড়ার জন্য জেলখানার বাহিরে যাওয়ার অনুমতি পাইবে না, তবে জেলখানার অভ্যন্তরে জামাআতে নামায পড়ার ব্যবস্থা থাকিলে তাহাতে শরীক হইতে পারিবে। সে কয়েদ অবস্থায় দান-খয়রাত করিতে পারিবে, কাহারও অনুকূলে ঋণের স্বীকারোক্তি করিতে পারিবে এবং ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে পারিবে। তবে ঋণদাতাগণ তাহাকে উক্তরূপ কাজ হইতে বিরত রাখার জন্য আদালতে আবেদন করিলে আদালত তাহাকে উক্তরূপ কার্য হইতে বিরত রাখিবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্বে কৃত তাহার উক্তরূপ কাজ বৈধ গণ্য হইবে। মুফলিস ব্যক্তিকে কয়েদ করা হইলে সেও ঋণগ্রহীতার অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিবে এবং অনুরূপ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হইবে। ২৬

ধারা৮৪৮ ঋণের সহিত সূদ বা মুনাফা যুক্ত হইলে (ক) ঋণচুক্তিতে সূদ অন্তর্ভুক্ত হইলে চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে; (খ) ঋণদাতা কর্তৃক লোকসানের দায় বহনের শর্তে ঋণচুক্তিতে মুনাফা অন্তর্ভুক্ত হইলে চুক্তি বৈধ হইবে।

৬২৪

বিশ্লেষণ

যে কোন ধরনের চুক্তিতে সূদ অন্তর্ভুক্ত থাকিলে উক্ত চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে। কারণ ইসলামী শরীআতে সূদকে সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হইয়াছে। ইসলামী আইনের মূলনীতি অনুযায়ী “যে চুক্তি হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে সেই চুক্তি বাতিল”।

তবে ঋণের সতিহ লাভ যুক্ত হইতে পারে। সেই ক্ষেত্রে লোকসানের ঝুঁকি বহনের দায়িত্বও থাকিতে হইবে, অন্যথায় চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে। যেমন মুদারাবা কারবারে এক অংশীদার অর্থাৎ ঋণদাতা শুধু অর্থের যোগান দেয় এবং কারবারে সরাসরি অংশগ্রহণ করে না। যাহাকে উক্ত ঋণ প্রদান করা হয় অর্থাৎ মুদারিব, সে তাহা দ্বারা কারবার করিয়া যে মুনাফা অর্জন করে তাহা চুক্তি মোতাবেক তাহার ও ঋণদাতার মধ্যে বণ্টিত হয়। যদি এই কারবারে লোকসান হয় তবে তাহা ঋণদাতা বহন করে। অনুরূপভাবে বাই সাম অর্থাৎ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা মাল হস্তগত করার পূর্বেই বিক্রেতাকে উহার মূল্য অগ্রিম প্রদান করে। মাল হস্তান্তর না করা পর্যন্ত বিক্রেতা ক্রেতার নিকট ঋণী থাকে। এই প্রকৃতির ঋণের ক্ষেত্রে ক্রেতার যেমন লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তদ্রূপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও আশংকা আছে। ইসলামী আইন অনুযায়ী যেখানে লাভের প্রসংগ আছে সেখানে উহার সহিত লোকসানের ঝুঁকি বহনের প্রসংগও যুক্ত আছে।

ধারা-৮৪৯ ইফলাস দেউলিয়া)-এর বিধান

সংজ্ঞা (ক) কোন ব্যক্তির ঋণের পরিমাণ তাহার মাসের অধিক হইলে সেই অবস্থাকে ইফলাস” বলে এবং যে ব্যক্তির ঋণের পরিমাণ তাহার মালের অধিক সেই ব্যক্তিকে “মুফলিস” বলে।

বিশ্লেষণ

আরবী ভাষায় ফালাস (1) শব্দের অর্থ টাকা-পয়সা। এখানে ফালাস হইতে নির্গত ইফলাস ( 3) শব্দটি কোন ব্যক্তির টাকা-পয়সা হইতে বঞ্চিত

e

৬২৫

তথা দেউলিয়াত্ব (bankruptcy) এবং মুফলিস (( i) শব্দটি দেউলিয়া ব্যক্তি (Bankrupt)-কে বুঝাইতে পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হইয়াছে। ইন হাজার আসকালানী (র) ইফলাস ও মুফলিস-এর সংজ্ঞায় বলেনঃ “কোন ব্যক্তির ঋণ তাহার মালকে গ্রাস করিয়া ফেলিলে এবং তাহার মাল দ্বারা উক্ত ঋণ শোধ করা অসম্ভব হইয়া পড়িলে সেই অবস্থাকে “ইফলাস’ (দেউলিয়াত্ব) বলে।” আর “যে ব্যক্তির ঋণের পরিমাণ তাহার বিদ্যমান মালের অধিক সেই ব্যক্তিকে ‘মুফলিস’ (দেউলিয়া) বলে”। ২৭ ইবন কুদামা (র) বলেন, “যেই ব্যক্তির ঋণ তাহার মালের তুলনায় অধিক এবং যাহার ব্যয় তাহার অয়ের তুলনায় অধিক, সেই ব্যক্তিকে মুফলিস বলে”। ২৮ আলামগীরী গ্রন্থে বলা হইয়াছে,কোন ব্যক্তির ঋণ তাহার সমস্ত মালকে গ্রাস করিয়া ফেলিলে অথবা উহা তাহার মালের অধিক হইলে সেই ব্যক্তিকে “মুফলিস” বলে। ২৯

ধারা—৮৫০ মুফলিসের উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপের শলী (ক) মুফলিস যাহাতে তাহার মাল কোন উপায়ে হকার করিতে না পারে সেইজন্য ঋণদাতা বা ঋণদাতাগণ কর্তৃক তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপের জন্য আদালতে আবেদন পেশ করিতে হইবে;

(খ) মুফলিসের ঋণের পরিমাণ তাহার মালের অধিক হইহইবে; (গ) ঋণ তলবী প্রকৃতির হইতে হইবে; (ঘ) ঋণ মানুষের সহিত সংশ্লিষ্ট হইতে হইবে; (ঙ) মাল ক্রয়ের দ্বারা ঋণ উদ্ভূত হইলে সেই ক্ষেত্রে মূলোৎ প্রদেয় হইতে হইবে;

(চ) আদালতের ঘোষণার দ্বারাই কোন ঋণগ্রহী সিস” গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

ঋণদাতাগণ মুফলিসের উপর প্রতিবন্ধকতা (হাজর) (ধার ) আরো করিতে চাহিলে সেইজন্য তাহাদেরকে আদালতে আবেদন পেশ করিতে হইবে।

৬২৬

তাহাদের আবেদনের পর আদালত মুফলিসের উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপের উদ্যোগ গ্রহণ করিবে। ৩০ ঋণদাতার সংখ্যা একাধিক হইলে তাহাদের সকলের একত্রে আবেদন পেশ করা জরুরী নহে, যে কোন একজনের আবেদন পেশ করাই যথেষ্ট।

মুফলিসের উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করিতে হইলে তাহার ঋণের পরিমাণ তাহার মালের অধিক হইতে হইবে। ঋণের পরিমাণ ইহার কম হইলে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাইবে না।

গৃহীত ঋণ লবী প্রকৃতির ( %) না হইলে মুফলিসের উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাইবে না। ঋণ মেয়াদী প্রকৃতির (%)হইলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাইবে না।

ঋণ মানুষের সহিত সংশ্লিষ্ট না হইয়া আল্লাহর অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট হইলে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাইবে না। আল্লাহর অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট ঋণ বলিতে বুঝায়-অনাদায়ী যাকাত, রোযার কাফফারা ইত্যাদি।

মাল ক্রয়ের দ্বারা ঋণ উদ্ভূত হইলে এবং সেই ক্ষেত্রে মূল্য তৎক্ষণাৎ পরিশোধযোগ্য হইলে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাইবে। মূল্য যদি বিলম্বে প্রদেয় হয় অথবা ক্রয় প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার যুক্ত থাকে তবে প্রত্যাখ্যানের সময়সীমা অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাইবে না।

কোন ব্যক্তির ঋণের পরিমাণ তাহার মালের পরিমাণের তুলনায় অধিক হইলেই সে মুফলিস গণ্য হইবে না। ঋণদাতাগণ তাহাদের প্রদত্ত ঋণ আদায়ের জন্য এবং ঋণগ্রহীতা যাহাতে তাহার মাল অন্যত্র হস্তান্তর করিতে না পারে, ইহার জন্য প্রতিবন্ধকতা আরোপের জন্য আদালতে মোকদ্দমা পেশের পর আদালত বিচার-বিবেচনার পর উক্ত ব্যক্তিকে মুফলিস (দেউলিয়া) ঘোষণা করিলেই কেল, সে মুফলিস গণ্য হইবে।”

ধারা৮৫১

মুফলিস অনুপস্থিত থাকিলে মুফলিস আদালতে বা আদালতের কার্যসীমার মধ্যে অনুপস্থিত থাকিলেও আদালত তাহার উপর মাল হস্তান্তরের ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা আরোপ

৬২৭

করিতে পারিবে এবং সেই ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মুফলিসের কৃত লেনদেন বৈধ গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

মুফলিসের আদালতে অনুপস্থিতি কয়েকভাবে হইতে পারে। যেমন হয় সে আত্মগোপন করিয়াছে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই আদালতে অনুপস্থিত রহিয়াছে অথবা কোন কাজে আদালতের কার্যসীমার বাহিরে বা বিদেশে রহিয়াছে। এইরূপ অবস্থায়ও তাহার উপর আদালত প্রতিবন্ধকতা আরোপ করিতে পারিবে, যাহাতে সে ঋণগ্রহীতাগণকে ফাকি দেওয়ার জন্য তাহার মাল অন্যের নিকট হস্তান্তর করিতে না পারে। আদালত তাহাকে দেউলিয়া ঘোষণা করিলে তাহা তাহাকে অবহিত করিতে হইবে। দেউলিয়া ঘোষণা করা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহার কৃত লেনদেন বৈধ গণ্য হইবে।

ধারা—৮৫২

মুফলিসের স্বীকারোক্তি আদালত কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা আরোপিত হওয়ার পর মুফলিস অপরের অনুকূলে ঋণের স্বীকারোক্তি করিলে সেই ক্ষেত্রে ঋণদাতাগণের প্রাপ্য পরিশোধের পর কিছু অবশিষ্ট থাকিলে তাহা, যাহার অনুকূলে পরে স্বীকারোক্তি করা হইয়াছে, সে পাইবে।

বিশ্লেষণ

আদালত কর্তৃক মুফলিসের উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপিত হওয়ার পর সে যদি কোন ব্যক্তির অনুকূলে ঋণের স্বীকারোক্তি করে তবে তাহার সেই স্বীকারোক্তি তৎক্ষণাৎ কার্যকর হইবে না। বরং পূর্বোক্ত ঋণদাতাগণকে সন্তুষ্ট করার পর কিছু মাল অবশিষ্ট থাকিলে তাহা, যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করা হইয়াছে, সে পাইবে। কারণ বিদ্যমান মালের সহিত, আগে যাহারা আসিয়াছে, তাহাদের স্বার্থ বা অধিকার যুক্ত হইয়া গিয়াছে। অতএব উক্ত স্বীকারোক্তির দ্বারা তাহাদের অধিকার বা স্বার্থ খর্ব হইতে পারে না। তবে প্রতিবন্ধকতা আরোপের পর

৬২৮

মুফলিসের হাতে কোন উপায়ে মাল আসিলে তাহাতে বিদ্যমান ঋণদাতাগণের সহিত, যাহার অনুকূলে পরে স্বীকারোক্তি করা হইয়ায়ে, সে অংশমত ভাগ

পাইবে। ৩৩।

ধারা-৮৫৩

মুফলিস অপরের মাল ধ্বংস করিলে মুফলিস প্রতিবন্ধকতা আরোপিত অবস্থায় অপরের মাল গসব করিলে এবং তাহা নষ্ট বা ধ্বংস করিয়া ফেলিলে, যাহার মাল গসব বা ধ্বংস করা হইয়াছে সে ঋণদাতাগণের মধ্যে শামিল হইবে।

বিশ্লেষণ

মুফলিস তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপিত অবস্থায় কোন ব্যক্তির মাল গসব করিয়া ধ্বংস বা নষ্ট করিয়া ফেলিলে ঐ ব্যক্তিও তাহার ঋণদাতাগণের মধ্যে শামিল হইবে। ঋণ পরিশোধের পর উক্ত ঘটনা ঘটিলে এবং গসবকৃত মাল তাহার নিকট বিদ্যমান থাকিলে মূল মালিক উহা ফেরত পাইবে। মাল বিদ্যমান

থাকিলে বা ধ্বংস করিয়া ফেলিলে সে মুফলিসের নিকট পাওনাদার হিসাবে থাকিয়া যাইবে।৩৪

ধারা-৮৫৪ ঋণদাতার মাল মুফলিসের নিকট বিদ্যমান থাকিলে ঋণদাতাগণের কাহারও মাল হুবহু মুফলিসের নিকট বিদ্যমান পাওয়া গেলেও উক্ত মালের মালিক তাহা ফেরত পাইবে না, বরং অন্যান্য ঋণদাতার সহিত অংশমত ফেরত পাইবে।

বিশ্লেষণ

ঋণদাতাগণের মধ্যে কোন ব্যক্তির মাল অবিকল অবস্থায় মুফলিসের নিকট পাওয়া গেলে উক্ত মাল সে একাই পাইবে কি না এই বিষয়ে মতভেদ আছে।

৬২১

হানাফী মাযহাবমতে উক্ত মাল ঋণদাতাগণের মধ্যে তাহাদের ঋণের অনুপাত অনুসারে বণ্টিত হইবে। ৩৫ এই মতের সপক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করা হইয়াছেঃ

اما رجل مات أو أفلس فوجد بعض محرمانه ماله بعينه فهو في أسوة الغرماء –

“কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত বা দেউলিয়া অবস্থায় মারা গেল। ঋণদাতাগণের মধ্যে কেহ তাহার মাল উক্ত ব্যক্তির নিকট অবিকল বিদ্যমান পাইল। এই অবস্থায় সে অবশিষ্ট ঋণদাতাগণের মধ্যে শামিল হইবে।”৩৬

কিন্তু মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে উক্ত মাল ঐ ব্যক্তিই ফেরত পাইবে, তাহা অন্যান্য ঋণদাতাগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে না। এই মতের অনুকূলে নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করা হইয়াছে।

اما رجل أفلس فأدرك رجل ماله بعينه فهو أحق به من غيره .

“কোন ব্যক্তি দেউলিয়া সাব্যস্ত হইল এবং অপর ব্যক্তি তাহার মাল ঐ ব্যক্তির নিকট অবিকল বিদ্যমান পাইল। সে উক্ত মাল ফেরত পাইবার ব্যাপারে অন্যের তুলনায় অগ্রাধিকার পাইবে। ৩৭

اما رجل مات أو أفلس صاحب المتاع أحق بمتاعه اذا وجده بعينه.

“যদি কোন ব্যক্তি মরিয়া যায় বা দেউলিয়া সাব্যস্ত হয়, তাহার নিকট কোন ব্যক্তি স্বীয় কোন বস্তু অবিকল বিদ্যমান পায়, তবে সে-ই উহার অধিক হকদার

হইবে।”৩৮

এই শেষোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা যায়, উক্ত হাদীসে মালের মালিক অন্যান্য ঋণদাতার তুলনায় অগ্রাধিকার পাইতে পারে, এই কথাই বলা হইয়াছে, কেবল তাহাকেই যে দিতে হইবে তাহা বলা হয় নাই।

৬৩০

ধারা-৮৫৫

মুফলিসের বৈধ ও অবৈধ লেনদেন (ক) ঋণদাতাগণের স্বার্থের অনুকূলে যায়, মুফলিস এইরূপ কার্য করিতে পারিবে। যেমন দান-খয়রাত গ্রহণ।

(খ) ঋণদাতাগণের স্বার্থের প্রতিকূলে যায়, মুফলিস এইরূপ কার্য করিতে পারিবে না। যেমন দান-খয়রাত প্রদান।

(গ) ঋণদাতাগণের স্বার্থের অনুকূলেও যায় আবার প্রতিকূলেও যায়, মুফলিস এইরূপ কার্যও করিতে পারিবে। যেমন উপযুক্ত মূল্যে মাল বিক্রয় করা। তবে এইরূপ কার্য কেবল তাহার যে কোন ঋণদাতার সহিত হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

মুফলিসের উপর আদালত কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা আরোপের পরও তাহার কোন কোন কাজ বৈধ গণ্য হইবে। ঋণদাতাগণের অনুকূলে যায়, তাহার এইরূপ কাজ বৈধ এবং প্রতিকূলে যায় এইরূপ কাজ অবৈধ গণ্য হইবে।

কোন কাজ এমন প্রকৃতিরও হইতে পারে যাহা একই সময় ঋণদাতাগণের অনুকূলেও যায় এবং প্রতিকূলেও যায়। যেমন মুফলিস উপযুক্ত মূল্যে তাহার কোন মাল বিক্রয় করিলে তাহার দ্বারা ঋণদাতাগণ লাভবান হইতে পারে, আবার বিক্রয় মূল্য অন্যত্র হস্তান্তর করিলে ঋণদাতাগণ ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে। তাই এই জাতীয় কাজ বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত এই যে, উক্ত কাজ তাহার ঋণদাতাগণের সহিত করিতে হইবে, অন্য কাহারও সহিত নহে। ঋণদাতা একাধিক হইলে তাহাদের কোন একজনের নিকট কেবল তাহার প্রাপ্য ঋণের সম-পরিমাণ মাল বিক্রয় করা বৈধ হইবে, উহার অতিরিক্ত নহে। ইহা হানাফী মাযহাবের অভিমত। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে আদালতের অনুমতি ব্যতীত তাহার এই জাতীয় কাজ বৈধ হইবে না।৩৯

ধারা—৮৫৬ ঋণদাতাগণের মধ্যে মুফলিসের মাল বণ্টন (ক) আদালত মুফলিসের মাল ঋণদাতাগণের মধ্যে তাহাদের পাওনার

৬৩১

অংশ অনুপাতে বণ্টন করিবে।

(খ) মুফলিস তাহার মাল বিক্রয় করিতে সম্মত না হইলে আদালত তাহা বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

(গ) মুফলিস তাহার মাল লুকাইয়া রাখিলে আদালত তাহাকে কয়েদ করিয়া রাখিবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাহার মালের উৎস বলিয়া দেয়।

(ঘ) মোকদ্দমা চলাকালে আদালত মুফলিসের মাল হইতে তাহার ও তাহার পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিবে।

(ঙ) মুফলিসের মাল, দ্বারা প্রথমে তাহার কর্মচারীর বেতন প্রভৃতি পরিশোধ করিতে হইবে এবং কোন বন্ধক থাকিলে তাহা ছাড়াইতে হইবে, অতঃপর উক্ত বন্ধকসহ অবশিষ্ট মাল ঋণদাতাগণের মধ্যে বন্টন করিতে হইবে।

(চ) প্রথমে মুফলিসের নগদ অর্থ, অতঃপর অস্থাবর মাল, অতঃপর স্থাবর মাল দ্বারা ঋণদাতাগণের ঋণ পরিশোধ করিতে হইবে।

(ছ) মুফলিসের পরিধেয় বস্ত্র, বই-পুস্তক ও বাসস্থান বিক্রয় করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

মুফলিস (দেউলিয়া) ব্যক্তির নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল তাহার ঋণদাতাগণের মধ্যে তাহাদের ঋণের অনুপাত অনুসারে বণ্টিত হইবে। যেমন একজন ঋণদাতার প্রাপ্য দশ হাজার, অপর জনের বিশ হাজার এবং অপরজনের ত্রিশ হাজার টাকা। এই অবস্থায় বণ্টনের হার হইবে ১০৪ ২০ঃ ৩০ অর্থাৎ ১৪ ২ ৩। ঋণগ্রহীতার নিক প্রাপ্ত মাল বিক্রয় করিয়া পাওয়া গিয়াছে আঠার হাজার টাকা। এখন উক্ত টাকা এক, দুই ও তিন অনুপাতে ঋণদাতাগণের মধ্যে বণ্টিত হইলে দশ হাজার টাকার পাওনাদার পাইবে তিন হাজার, বিশ হাজার টাকার পাওনাদার পাইবে ছয় হাজার এবং ত্রিশ হাজার টাকার পাওনাদার পাইবে নয় হাজার টাকা।

মুফলিস স্বেচ্ছায় তাহার মাল বিক্রয় করিতে সম্মত না হইলে আদালত তাহা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিবে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে আদালত তাহার মাল বিক্রয় করিতে পারিবে না। বরং মুফলিস ব্যক্তি তাহার মাল বিক্রয় করিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত আদালত তাহাকে আটক রাখিবে।

৬৩২

মুফলিস (

নেয়া) ব্যক্তি তাহার মাল লুকাইয়া রাখিয়াছে বলিয়া সন্দেহ হইলে আম্‌দত তাহাকে আটক রাখিতে পারে, যাবত না সে তাহার মাল কোথায় লুকাইষ্যা রাখিয়াছে তাহা প্রকাশ করে। যদি প্রমাণিত হয় যে, সে তাহার মাল কোথাও লুকাইয়া রাখে নাই, তবে আদালত তাহাকে কয়েদমুক্ত করিয়া

দিবে।

ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে মোকদ্দমা চলাকালে আদালত তাহার ও তাহার পরিবার-পরিজরে ভরণপোষণের ব্যবস্থা তাহার নিকট প্রাপ্ত মাল দ্বারা করিবে। মোকদ্দমা নিস্পত্তির পর আদালত অবশিষ্ট মাল হইতে প্রথমে দেউলিয়া ব্যক্তির কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ও মাল বিক্রয়ের জন্য যাহা খরচ হয় তাহা পূরণ করিবে। অতর তাহার কোন বন্ধক থাকিলে তাহা ছাড়াইবে, অতঃপর বন্ধকসহ অবশিষ্ট মাল খাতাগণের মধ্যে বণ্টন করিবে। আদালত ঋণগ্রহীতার পরিধেয় বস্ত্র, পারিবারিক পাঠাগারের বই-পুস্তক ও বাসস্থান বিক্রয় করিবে না। তবে তাহার পরিধেয় বস্ত্র খুব মূল্যবান হইলে তাহা বিক্রয় করিয়া তাহাকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যবান পরিধেয় বস্ত্র ক্রয় করিয়া দিতে হইবে। অনুরূপভাবে তাহার বসতবাড়ী বৃহ বা বেশী মূল্যবান হইলে তাহাও বিক্রয় করিয়া দেউলিয়া ও তাহার পরিবারে বাসোপযোগী অপেক্ষাকৃত কম মূল্যবান বসত বাড়ি ক্রয় করিয়া দিতে হইবে এক এই দুই খাতে প্রাপ্ত অবশিষ্ট অর্থ ঋণদাতাগণের মধ্যে বণ্টিত

হইবে।৪০

ان معاذا كان يدان فاتی رماه الی النبی صلی الله عليه و سلم فباع النبي صلى الله عليه و سلم ماله كله في دينه حتى قام قلبفير

شی

“মুআয ই জাবাল (রা) কর্জ গ্রহণ করিতেন। তাঁহার পাওনাদারগণ (নিজ নিজ দাবি লইয়া) মহানবী (স)-এর নিকট উপস্থিত হইল। তাঁহাদের প্রাপ্য পরিশোধের জন্য মহানবী (স) মুআয (রা)-র সমুদয় মাল বিক্রয় করিয়া দিলেন, এমনকি তিনি সিঙ্কল হইয়া পড়িলেন।”৪১

। ৭

عن أبي سعيد الخدري قال أصيب رجل في عهد النبي صلى الله عليه و سلم في ثمار

ي ه فقال رسول الله صلى الله

ابتاعها ف عليه و سلم تصدقوا عليه فتصدق الناس عليه قلم يبلغ ذالك وفاء دينه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لقرائه وا ما وجدتم وليس .

-L3 < আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, মহানবী (স)-এর যুগে এক ব্যক্তি (ব্যবসায়ের জন্য বিভিন্ন লোকের বাগানের) ফল ক্রয় করিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইহাতে ঋণগ্রস্ত হইয়া নিঃস্ব হইয়া পড়ে। রাসূলুল্লাহ (স) লোকদেরকে বলিলেনঃ তাহাকে দান-খয়রাত করিয়া সাহায্য কর। অতএব লোকেরা তাহাকে দান-খয়রাত করিল। কিন্তু তাহা তাহার ঋণ পরিশোধের সম-পরিমাণ হইল না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স) ঐ ব্যক্তির পাওনাদারগণকে বলিলেনঃ যাহা উপস্থিত আছে তাহা তোমরা নিয়া যাও, ইহার অতিরিক্ত আর পাইবে না।”

ঋণ প্রদানে উৎসাহ ও পরিশোধে তাকিদ

মহানবী (স) এক দিকে যেমন ঋণ প্রদানের জন্য মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করিয়াছেন, অপর দিকে তাহা যথারীতি পরিশোধের জন্য ঋণগ্রহীতাগণের প্রতি কঠোর তাগাদা দিয়াছেন। কুরআন মজীদে এইরূপও বলা হইয়াছে যে, ঋণগ্রহীতা অক্ষম বা অপারগ হইয়া পড়িলে ঋণদাতা যেন তাহাকে সময় বাড়াইয়া দেয় এবং সম্ভব হইলে ঋণের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ দাবি ত্যাগ করে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

وان كان و سرة فنظرة اللى ميسرة طوآن تصدقوا خيركم أن كنتم تعلمون –

“খাতক যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে স্বচ্ছলতা পর্যন্ত তাহাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা ছাড়িয়া দাও তবে উহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর,

৬৩৪

যদি তোমরা উপলব্ধি করিতে”–(সূরা বাকারাঃ ২৮০)।

মহানবী (স) বলেনঃ

كان رجل يداين الناس فكان يقول لفتاه اذا أتيت مغسرا تجاوز عنه لعل الله أن يتجاوز عنا قال قلقي الله فتجاوز عنه.

“এক ব্যক্তি লোকদেরকে ঋণ প্রদান করিত। সে তাহার কর্মচারীকে বলিত, তুমি অক্ষম খাতকের নিকট আসিলে তাহাকে অবকাশ দিও। আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের (অপরাধ) উপেক্ষা করিবেন। ঐ ব্যক্তি আল্লাহ্র দরবারে পৌছিলে আল্লাহ তাহার (গুনাহ) উপেক্ষা করিলেন।” ৪৩

من سره أن ينجيه الله من كرب يوم القيامة فليس عن معسر أو يضع عنه.

“যে ব্যক্তি এইভাবে আনন্দিত হইতে চায় যে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাহাকে দুঃখ-কষ্ট হইতে মুক্তি দিন, সে যেন অক্ষম খাতকের জন্য সহজ ব্যবস্থা করে অথবা ঋণ কমাইয়া বা মাফ করিয়া দেয়।”

من أنظر معسرا أو وضع عنه أظله الله في ظله –

“যে ব্যক্তি অক্ষম খাতককে সময় দান করিবে অথবা তাহার ঋণ কমাইয়া বা মাফ করিয়া দিবে, আল্লাহ তাআলা (কিয়ামতের দিন) তাহাকে তাঁহার (রহমতের) ছায়ায় আশ্রয় দান করিবেন।”৪৫।

من كان له على رجل حق فمن أره كان له بكل يوم صدقة

“কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির উপর প্রাপ্য থাকিলে সে যদি তাহাকে সময় দান করে, তবে সে প্রতি দিনের বিনিময়ে দান-খয়রাত করার সাওয়াব পাইবে।”৪৬

ليس من عبد مسلم يقضى عن أخيه دينه الأ

৬৩৫

فك الله رهانه يوم القيامة.

“যে মুসলিম ব্যক্তিই তাহার ভাইকে ঋণমুক্ত করিবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাহাকে মুক্তিদান করিবেন।”৪৭

فان خير الناس أحسنهم قضاء ۔

“লোকদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে উত্তমরূপে প্রাপ্য পরিশোধ করে।”৪৮

فان خيركم أحسم

قضاء .

“তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে অন্যের প্রাপ্য পরিশোধে উত্তম।” ৪৯

مطل الفني ظلم۔

“সক্ষম ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করা অন্যায়।”৫০

من أخذ أموال الاس يريد أداءها أي الله عنه ومن أخذها يريد اتلافها ألفه الله عليه .

“যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাল (ঋণস্বরূপ) গ্রহণ করে এবং তাহা ফেরতদানের সংকল্প করে, আল্লাহ তাহার ঋণ পরিশোধের উপায় করিয়া দেন। আর যে ব্যক্তি উহা গ্রহণ করে এবং উহা ধ্বংস (বা আত্মসাৎ করার সংকল্প করে, আল্লাহ তাআলা তাহাকে ধ্বংস করেন।”

غفر للشهيد كل ذنب الأ الدين۔

“শহীদ ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ মাফ করা হয়, কিন্তু ঋণ মাফ করা হয় না।”৫২

نفس المؤمن علقة بدينه حتى يقضي عنه .

“মুমিন ব্যক্তি মৃত্যুর পর তাহার ঋণের জন্য বাধাপ্রাপ্ত হইয়া থাকে (বেহেশতে যাওয়ার পথে), যাবত না তাহার পক্ষ হইতে উহা পরিশোধ করা

য়।৫৩

ومن آذان دینانوي أن يقضيه فهو سارق”۔

“যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করিয়া তাহা পরিশোধের ইচ্ছা রাখিল না, সে চোর।”৫৪

৬৩৬

يدع له

إن أعظم الأتوب عند الله أن يلقاه قضاء .

“যেসব কবীরা গুনাহে লিপ্ত হইতে আল্লাহ নিষিদ্ধ করিয়াছেন সেগুলির পরে সর্বাপেক্ষা মারাত্মক গুনাহ হইল- কোন ব্যক্তি ঋণ রাখিয়া মারা গেল এবং তাহা পরিশোধের কোন ব্যবস্থা রাখিয়া গেল না।”৫৫।

والذي نفس محمد بيده لو أن رجلا قتل في سبيل الله ثم عاش ثم قتل في سبيل الله ثم عاش ثم قتل في سبيل الله ثم عاش وعليه دين ما دخل الجثة حتى يقضی دی۔

“সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁহার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর পথে শহীদ হইয়া পুনরায় জীবন লাভ করে, আবার আল্লাহর রাহে শহীদ হইয়া পুনরায় জীবন লাভ করে, আবার আল্লাহর রাহে শহীদ হইয়া পুনরায় জীবন লাভ করে এবং তাহার নিকট প্রাপ্য ঋণ থাকে, তবে তাহার উক্ত ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সে বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারিবে

ন।”৫৬

আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, নবী (স)-এর নিকট জানাযার নামায পড়ানোর জন্য একটি লাশ উপস্থিত করা হইল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তোমাদের সংগীর কি অনাদায়ী কোন ঋণ আছে? লোকেরা বলিল, হাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তাহা পরিশোধের জন্য সে কি কোন মাল রাখিয়া গিয়াছে? লোকেরা বলিল, না। নবী (স) বলিলেনঃ তাহা হইলে তোমরা তোমাদের সংগীর জানাযা পড় (আমি পড়িব না)। আলী (রা) তাহার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করিলে নবী (স) উক্ত লাশের জানাযা পড়েন।৫৭

সালামা ইবনুল আকওয়া (রা) বলেন, একদা আমরা মহানবী (স)-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় (তাঁহার নিকট) একটি লাশ উপস্থিত করা হইল। লোকেরা বলিল, তাহার জানাযা পড়ুন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তাহার কি

৩৭

ঋণের দায় আছে? তাহারা বলিল, না। তিনি তাহার জানাযা পড়িলেন। অতঃপর আরও একটি লাশ আনিয়া উপস্থিত করা হইল। মহানবী (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তাহার কি ঋণের দায় আছে? লোকেরা বলিল, হাঁ। মহানবী (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ সে তাহা পরিশোধের ব্যবস্থা রাখিয়া গিয়াছে কি? লোকেরা বলিল, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা রাখিয়া গিয়াছে। তিনি তাহার জানাযা পড়িলেন। অতঃপর আরও একটি লাশ আনিয়া উপস্থিত করা হইল। মহানবী (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তাহার কি ঋণের দায় আছে? লোকেরা বলিল, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা (ঋণ আছে)। মহানবী (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ কিছু রাখিয়া গিয়াছে কি? লোকেরা বলিল, না। মহানবী (স) বলিলেনঃ তোমরা তোমাদের সংগীর জানাযা পড়। তখন আবু কাতাদা (রা) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহার জানাযা পড়ন, আমি তাহার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিলাম। অতঃপর তিনি তাহার জানাযার নামায পড়ান।”৫৮

قال رسول الله صلى الله عليه و سلم رايت ليلة أسرى بي على باب الجنة مكتوبا الصدق بعشر أمثالها والقرض بثمانية عشر فقلت ياجبريل مابا القرض أفضل من الصدقة قال لأن السائل يسأل عنه والمستقرض لا يستقرض

الأمن حاجة .

রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, “মিরাজের রাত্রে আমি জান্নাতের দরজায় লিপিবদ্ধ দেখিতে পাইলামঃ দান-খয়রাতের জন্য দশ গুণ এবং কর্জ প্রদানের জন্য আঠার গুণ সওয়াব দান করা হয়। আমি বলিলাম, হে জিবরাঈল! দান-খয়রাতের তুলনায় কর্জ প্রদানের মর্যাদা বেশী হওয়ার কারণ কি? তিনি বলেন, কোন যাঞ্চাকারী তাহার নিকট মাল থাকা অবস্থায় যাঞ্চা করে, আর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঠেকায় পড়িয়া ঋণ গ্রহণ করে।”

ادا

ما من سيرفرض مسلما رضا

من الأ

ا

كان كصدقة م

“কোন মুসলিম ব্যক্তি অপর মুসলিম ব্যক্তিকে দুইবার কর্জ প্রদান করিলে তাহা একবার দান-খয়রাত করার মত (মর্যাদাপূর্ণ)”।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

ولا تأكلوا أموالكم بينكم بالباطل و دلوا بها الى الحكام لتأتوا فريقا من أموال الناس بالاثم و انتم تعلمون .

“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না এবং মানুষের মালের কিয়দংশ জানিয়া শুনিয়া অন্যায়ভাবে গ্রাস করিবার উদ্দেশ্যে উহা বিচারকের নিকট পেশ করিও না”-(সূরা বাকারাঃ ১৮৮)।

ياها الذين آمنوا لا تأكلوا أموالكم بينكم

بالباطل.

“হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না” (সূরা নিসাঃ ২৯)।

৬৩১

তথ্য নির্দেশিকা

১. আল-কামূসুল ফিকহী, পৃ. ৩০০।

২. আল-কামূসুল ফিকহী, পৃ. ৩০০; রল মুহতার, ৪খ, পৃ. ১৭৯৪

ما تعطيه غيرك من مال أن يرده اليك هو عقد مخصوص يرد على دفع مال مثلى لاخر لير مثله.

৩. যে ঋণ বিনা লাভে নিঃস্বার্থভাবে দেওয়া হয় তাহাকে কর্জে হাসানা’ বলে কুরআনুল করীম, ১৬শ

সং, ১৯৯২ খৃ., পৃ. ৬১, টীকা নং ১৬৯। ৪. বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযীর বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬৩, পৃ. ৭৭, নং ২৭৮০ (৮)। ৫. মুসলিম ও তিরমিযীর বরাতে উপরোক্ত গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৭৬, নং ২৭৭৯ (৭)। ৬. আবূ দাউদের বরাতে মিশকাত (বাংলা অনু.), ৬, পৃ. ৮৬, নং ২৭৯৭ (২৫)। ৭. আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজা ও দারিমীর বরাতে মিশকাত (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ.

৮৬, নং ২৭৯৬ (২৪)। ৮. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২১খ, পৃ. ১০২-৩ঃ

ان الدين هو ما يثبت في الذمة من غير أن يكون معينا مشخصا سواء أكان نقدا أم غيره . و في عرف الحنفية الدين

عبارة عن ما يثبت في الذمة من مال في معارضة او اتلاف او قرض . وعند جمهور الفقهاء من الشافعية و المالكية والحنابلة عبارة عن ما يثبت فی الذمة من مال بسبب

– 9A. ৯. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২১খ, পৃ. ১১৯। ১০. আহকামুল কুরআন (বাংলা অনু.), ২খ, পৃ. ১৯২, ১৯৮, ১৯৯,২০০। ১১. রব্দুল মুহতার, ১ম সং মাকতাবা মাজেদিয়া, কোয়েটা ১৩৯৯ হি ৪খ, পৃ. ৪৯। ১২. আলমগীরী, ২, পৃ. ৩৩৬-৭। ১৩. বন্দুল মুহতার (মুলতান সংস্করণ), ৪খ, পৃ. ৫৩। ১৪. পূর্ণ আলোচনাটি আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২১৩, পৃ. ১৩৮-১৪১ হইতে গ্রহণ করা হইয়াছে।

তথায় ফিকহ গ্রন্থসমূহের বরাত সংযোজিত আছে। ১৫. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২খ, পৃ. ১২৩। ১৬. আহকামুল কুরআন (বাংলা অনু.), ২খ, পৃ. ৯৯। ১৭. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২১খ, ইহা ইসলামী আইনের একটি মূলনীতিঃ

الاضطرار لا يسقط حق الغير

৬৪০

“অনিবার্য অবস্থা অপরের অধিকার ক্ষুন্ন করে না।” ১৮. পূর্ণ আলোচনাটি আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২১খ, হইতে গৃহীত। তথায় সংশ্লিষ্ট বরাতসমূহের

উল্লেখ আছে।

من اى مصروفا عائدا على غيره بدون أمره أو ان الحاكم .هد يكون متبرعا۔

২০. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২১খ, পৃ. ১১৩-৪ঃ

اذا قضى احد دين غيره بلا امره سقط الدين عن المديون سواء

اقبل ام لم يقبل و يكون الدافع متبرعا لا رجوع له على المديون بشيئ مما دفعه بلا امره و لا رجوع له على رب الدين

القابض لاسترداد ما دفعه اليه.

২১. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ. ৭৭, নং ২৭৮১(৯);

হাদীসটি তিরমিযী শরীফেও উল্লেখ আছে। ২২. আবু দাউদ ও নাসাঈর বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ. ৮৩-৪, নং ২৭৯১ (১৯)। ২৩. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ১৭৩। ২৪. বাদাইউস সানাই, ৭৩, পৃ. ১৭৩। ২৫. বাদাইউস সানাই, ৭খ। ২৬. আলমগীরী, ৫২, পৃ. ৬১-৬৪; বাদাইউস সানাই, ৭, পৃ. ১৭৩-৪। ২৭. আবু সাইদ আবু জায়ব, আল-কামূসুল ফিকহী, পৃ. ৯০

الافلاس أن يستغرق الين مال الدين فلا يكون في ماله وفاء

دیونه.

২৮. উপরোক্ত গ্রন্থ, পৃ. ২৯০৪ :

২৯, ফাতাওয়া আলামগীরী, ৫খ, পৃ. ৬১৪ :

من ديب أكثر من ماله و جه أكثر من دخله. فالحجر بسبب الدين أن يركب الرجل ديون تستغرق أمواله أو تزيد على أمواله .

৩০. হিদায়া, কিতাবুল হাজর, ২, পৃ. ৩৪২। ৩১. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৫, পৃ. ৩০০। ৩২. আলমগীরী, কিতাবুল হাজর, ৫খ, পৃ. ৬১; আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৫২, পৃ. ৩০০। ৩৩. হিদায়া, কিতাবুল হাজর, ২, পৃ. ৩৪৩; আলামগীরী, ৫, পৃ. ৬২। ৩৪. আলমগীরী, কিতাবুল হাজর, ৫খ, পৃ. ৬২; মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৫খ, পৃ. ৩০৯-১০; হিদায়া,

৬৪১

২খ, পৃ. ৩৪৩-৪। ৩৫. হিদায়া, ২, পৃ. ৩৪৫। ৩৬. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৫খ। ৩৭. বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযীর বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ. ৭৪, নং ২৭৭৩ (১)। ৩৮. ইবন মাজা ও শাফিঈর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৮১-২, নং ২৭৮৮ (১৬)। ৩৯. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৫খ, পৃ. ৩০৬-৭; হিদায়া ২খ, পৃ. ৩৪৩। ৪০. আলামগীরী, ৫৩, পৃ. ৬১-৬৪; আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৫, পৃ. ৩১৮-২১। ৪১. মাসাবীহস সুন্নাহ-এর বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ. ৮২-৩, নং ২৭৯০ (১৮)। ৪২. মুসলিমের বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৭৪-৫, নং ২৭৭৪ (২)। ৪৩. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ. ৭৫, নং ২৭৭৫ (৩)। ৪৪. মুসলিমের বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ. ৭৫, নং ২৭৭৬ (৪); আরও দ্র. নং

২৭৭৭৫৫), পৃ. ৭৬। ৪৫. মুসলিমের বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬, পৃ. ৭৬, নং ২৭৭৮ (৬)। ৪৬. মুসনাদে আহমাদ-এর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৮৭, নং ২৭৯৯ (২৭)। ৪৭. শারহুস সুন্নাহ-এর বরাতে, ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৮৪, নং ২৭৯২ (২০)। ৪৮. মুসলিম ও তিরমিযীর) বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬২, পৃ. ৭৬, নং ২৭৭৯ (৭)। ৪৯. বুখারী, মুসলিম (ও তিরমিযীর) বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬২, পৃ. ৭৭, নং ২৭৮০ (৮)। ৫০. বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযীর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৭৭, নং ২৭৮১ (৯)। ৫১. বুখারীর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৭৯, নং ২৭৮৪(১২)। ৫২. বুখারীর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৭৯, নং ২৭৮৪(১২)। ৫৩. শাফিঈ, আহমাদ, তিরমিযী, ইবন মাজা ও দারিমীর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৮২, নং ২৭৮৯ (১৭)। ৫৪. কানযুল উম্মাল। ৫৫. মুসনাদে আহমাদ ও আবূ দাউদের বরাতে মিশকাত (বাংলা অনু.), ৬খ, পৃ. ৮৫, নং ২৭৯৪-(২২)। ৫৬. মুসনাদে আহমাদ ও শারহুস সুন্নাহ-এর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬খ, পৃ. ৮৮, নং ২৮০১ (২৯)। আরও দ্র.

নং ২৭৮৫ (১৩)। ৫৭. শারহুস সুন্নাহ-এর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬, পৃ. ৮৪, নং ১৭৯২ (২০)। আরও দ্র. নং ২৭৮৭ (১৫)। ৫৮. বুখারীর বরাতে ঐ গ্রন্থ, ৬, পৃ. ৭৮, নং ২৭৮৩ (১১)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *