1 of 2

৩৩. যাকাত

অধ্যায় : ৩৩ যাকাত

ধারা-৭৭৭

সংজ্ঞা কোন ব্যক্তি কর্তৃক কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তাহার কোন নির্দিষ্ট মালের নির্ধারিত অংশের মালিকানা অর্পণ করাকে “যাকাত” বলে।

ব্যাখ্যা (ক) “নির্দিষ্ট ব্যক্তি” অর্থ যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি; (খ) “নির্দিষ্ট মাল” অর্থ যাকাত আরোপযোগ্য নেসাব পরিমাণ মাল; (গ) “নির্ধারিত অংশ” অর্থ নেসাব পরিমাণ মালের যতটুকু যাকাত বাবদ প্রদান করা বাধ্যতামূলক হয় তাহা;

(ঘ) মালিকানা অর্পণ” অর্থ যাকাত বাবদ মালের প্রদেয় অংশ যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তির মালিকানায় সোপর্দ করা।

বিশ্লেষণ

“যাকাত” শব্দটি আরবী ভাষায় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন পবিত্রকরণ, পরিবৃদ্ধি, প্রশংসা, যোগ্যতা ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেনঃ

قد أفلح من زگا۔

“যেই ব্যক্তি নিজেকে পবিত্র করিবে সে সফল হইবে”- (সূরা শামসঃ ৯)।

৪৯৬

قد أفلح من تزکی ۔

“যেই ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে সে সফলকাম হইবে”- (সূরা আলাঃ ১৪)।

قزوا أنفسكم.

“অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করিও না”- (সূরা নাজমঃ ৩২)।

কিন্তু এখানে যাকাত শব্দটি একটি বিশেষ অর্থ গ্রহণ করিয়াছে। মালিকী মাযহাব যাকাতের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করিয়াছেনঃ

“কোন ব্যক্তির মালিকানাভুক্ত নেসাব পরিমাণ কোন নির্দিষ্ট মাল পূর্ণ এক বৎসর তাহার দখলে থাকার পর মালিক কর্তৃক তাহা হইতে যে নির্দিষ্ট অংশ উহার প্রাপকদিগকে প্রদান করা হয় তাহাকে “যাকাত” বলে।”

আল্লামা ইউসুফ আল-কারদাবী বলিয়াছেন, শরীআতের দৃষ্টিতে “যাকাত” শব্দটি ধন-সম্পদে আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত সুনির্দিষ্ট অংশ বুঝাইবার জন্য ব্যবহৃত হয়, যাকাত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট ও ফরযকৃত অংশ প্রদান করাকেও যাকাত বলা হয়। ‘সাদাকা’ (3 ) শব্দটিও যাকাতের প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। যেমন কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

اما الصدقت للفقراء والمسكين ………..

“সাদাকাত (যাকাত) ফকীর ও মিসকীনদের জন্য ….”–(সূরা তওবা : ৬০)।

“নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা এই কথা বুঝানো হইয়াছে যে, যে ব্যক্তি যাকাত পাওয়ার যোগ্য নহে জ্ঞাতসারে তাহাকে যাকাত প্রদান করা হইলে যাকাত

পরিশোধ করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।

“নির্দিষ্ট মাল” দ্বারা এই কথা বুঝা’ হইয়াছে যে, যে কোন প্রকারের মালের উপর যাকাত ধার্য হয় না, বরং নির্দিষ্ট কতিপয় মালের উপর যাকাত ধার্য হইবে।

“মালিকানা” দ্বারা বুঝানো হইয়াছে যে, যাকাতের প্রাপকের নিকট যাকাত বাবদ প্রদেয় অংশের মালিকানা নিঃশর্তভাবে ও কোনরূপ বিনিময় গ্রহণ ব্যতীত হস্তান্তর করিতে হইবে। যেমন ইয়াতীমদের দাওয়াত করিয়া যাকাতের অর্থ দ্বারা পানাহার করাইয়া দিলে তাহাতে যাকাত আদায় হইবে না, বরং যাকাতের মাল

‘দেব . ৭ হস্তান্তর করিতে হইবে।

৪৯৭

ধারা ৭৭৮

যাকাত বাধ্যতামূলক দেয় (ক) যাকাত প্রদান করা ফরয (বাধ্যতামূলক);

(খ) কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যাকাত প্রদান না করিলে তাহার নিকট হইতে রাষ্ট্র উহা আদায় করিতে পারিবে এবং তাহার এই কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হইবে;

বিশ্লেষণ

যাকাত যে একটি ফরয (বাধ্যতামূলক) দেয় এই বিষয়ে সব যুগের ও সকল দেশের মুসলিম উম্মাহ একমত পোষণ করিয়া আসিয়াছে। যাকাত ইসলামের পাঁচটি মৌল স্তম্ভের (রুকন) অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় হিজরীতে রোযা ফরয হওয়ার পর একই সালের শাওয়াল মাসে যাকাত ফরয হওয়ার বিধান নাযিল হয়। মহান আল্লাহ বলেন :

واقيموا الصلوة و التوا الزكواة –

“তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও”- (সূরা বাকারাঃ ৪৩)।৫ মহানবী (স) বলিয়াছেনঃ

+ ০

أمرت أن أقاتل الثاس حتى يشهدوا أن لا اله الا الله وأن محمدا رسول الله و يقيموا الصلوة ويؤتوا الزكوة.

“আমাকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে যে, আমি যেন লোকদের সহিত যুদ্ধ করিতে থাকি যতক্ষণ না তাহারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল, নামায কায়েম করে এবং যাকাত দেয়।”

بنی الاسلام علی خمس شهادة أن لا اله الا الله و أن محمدا عبده و رسوله واقام الصلاة وإيتاء الزكواة و الحج و صوم رمضان –

৪৯৮

“ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি : এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ করা ও রমযানের রোযা রাখা।”

একদা হযরত জিবরীল (আ) মানুষের বেশে মহানবী (স)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলেনঃ

يا رسول الله ما الاسلام قال الإسلام أن تعبد الله ولا تشرك به شيئا وتقيم الصلواة المكتوبة

….. ১,২ ১৫, “হে আল্লাহর রাসূল! ইসলাম কি? তিনি বলিলেন, ইসলাম এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদত করিবে এবং তাহার সহিত কোন কিছু শরীক করিবে না, বিধিবদ্ধ নামায কায়েম করিবে, ফরযকৃত যাকাত প্রদান করিবে…….।

সাদ ইবন উবাদা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) যাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে রোযার ফিতরা প্রদানের জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়াছিলেন। ইহার পরে যাকাত ফরয হওয়ার বিধান (5s 12 ) নাযিল হয়।’

ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আল্লাহ তাআলা তাহার নবীকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কলেমার সাক্ষ্যসহ পাঠাইয়াছিলেন। লোকেরা তাহা গ্রহণ করিলে পর তাহাদের উপর নামায ফরয করা হয়। তাহারা তাহাও পালন করিতে থাকিলে তাহাদের উপর রোযা ফরয করা হয়। তাহারা উহাও সত্যরূপে গ্রহণ করিলে তাহাদের উপর যাকাত ফরয করা হয়……..।

স্বেচ্ছায় যাকাত পরিশোধ না করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যাহারা কৃপণতার বশবর্তী হইয়া যাকাত পরিশোধ করে না, মহানবী (স) তাহাদের জন্য ইহকালীন শাস্তি নির্ধারণ করিয়াছেন এবং আল্লাহ তাআলা ও তাহার রাসূল পরকালীন শাস্তির ভীতিও প্রদর্শন করিয়াছেন।

মহানবী (স) বলেনঃ “যে জাতি যাকাত দিতে অস্বীকার করিবে, আল্লাহ তাহাদেরকে কঠিন দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করিবেন।”

من أعطاها مؤتجرا فله أجره و من منعها قائا اخوها و شطر ماله عزم ممن عزمات ربنا

-ধিবদ্ধ ইসলামী আইন

৪৯৯

تبارك و تعالى –

“যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় যাকাত দিবে সে তাহার সওয়াব অবশ্যই পাইবে। আর যে ব্যক্তি তাহা পরিশোধ করিতে নারাজ হইবে আমরা তাহা অবশ্যই আদায় করিব এবং তাহার মালের অর্ধেক (জরিমানাস্বরূপ) গ্রহণ করিব। ইহা আমাদের প্রাচুর্যময় ও সুমহান আল্লাহ্র সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তসমূহের অন্যতম।

অতএব যে ব্যক্তি কাপ, লোভ-লালসা ও সম্পদের মোহে পড়িয়া যাকাত দিতে অস্বীকার করিবে, তাহার নিকট হইতে তাহা জোরপূর্বক আদায় করা হইবে এবং জরিমানা বা শাস্তিস্বরূপ তাহার অর্ধেক মাল বাজেয়াপ্ত করা হইবে।৩

কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা দল যদি যাকাত না দেওয়ার সংগে সংগে উহার ফরয হওয়ার বিধানকেই অস্বীকার করে তবে তাহারা বিদ্রোহী ও মুরতাদ গণ্য হইবে এবং তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সরকারের কর্তব্য, যাবত না তাহারা যাকাতের বিধান মানিয়া নেয়। এই পর্যায়ে যাকাত দিতে অস্বীকারকারী লোেকদের বিরুদ্ধে প্রথম খলীফা হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা)-র নেতৃত্বে সাহাবায়ে কিরামের যুদ্ধ সর্বজনবিধিত। এই প্রসংগে হযরত আবূ বাকর (রা) যে ভাষণ দিয়াছিলেন তাহা নিম্নরূপঃ

والله لأقتلن من فرق بين الصلوة والزكواة فان الزكوة حق المال والله لو منعوني عناقا (عقالا) كانوا يؤدونها إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم لقاتلهم على منعها.

“আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই যুদ্ধ করিব সেইসব লোকের বিরুদ্ধে যাহারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করিবে। কেননা যাকাত হইল মালের মধ্যে প্রাপ্য অধিকার। আল্লাহর শপথ! তাহারা যদি একটি উটও দিতে অস্বীকার করে, যাহা রাসূলুল্লাহ (স)-এর যুগে তাহারা দিত, তবে আমি তাহাদের এই

too

1f6f87a3eir sl5

অস্বীকৃতির দরুন তাহাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করিব।”

অবশ্য অজ্ঞতাবশত অথবা কৃপণতা বশত কেহ যাকাত দিতে অস্বীকার করিলে তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাইবে না।

যাকাত না দেওয়ার পার্থিব পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করার সংগে সংগে পরকালীন পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করা হইয়াছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

والذين يكنزون الذهب والفضة ولا ينفقونها في سبيل الله فبشرهم بعذاب أليم. يوم يحمى عليها في نار جهنم فتوی بها جباههم

و و و و و و و وه

و و

و وجنوبهم و ظهورهم هذا ما

فوقوا ما كنتم تكنزون.

“আর যাহারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং উহা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে না তাহাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে উহা উত্তপ্ত করা হইবে এবং উহা দ্বারা তাহাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হইবে সেদিন বলা হইবে, ইহা তাহাই যাহা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করিয়াছিলে। সুতরাং তোমরা যাহা পুঞ্জীভূত করিয়াছিলে তাহা আস্বাদন কর”- (সূরা তওবাঃ ৩৪-৩৫)।

SI2 <I<<l (51) -3 54 5f5f 537ICB, 431() 138

. .

.

و

من أتاه الله ما فلم يؤد زكواته مثل له يوم القيامة شجاعا أقرع له زبيبتان يطوقه يوم القيامة ثم يخبلهزمتيه ثم يقول انا مالك أنا كنزك ثم تلا النبي صلى الله عليه و سلم : ولا يحسبن الذين يبخلون بما اتاهم الله من فضله هو خيرا ئهم بل هو شكهم سيطوقون

مابخلوا به يوم القيامة

ما ۹۱

۹۰ (۰۰

,

৫০১

“আল্লাহ যাহাকে ধন-সম্পদ দান করিয়াছেন সে যদি উহার যাকাত আদায়

করে তবে কিয়ামতের দিন তাহা একটি বিষধর অজগর সর্পে পরিণত হইবে, যাহার দুই চোখের উপর দুইটি কালো চিন্থ থাকিবে। উহা তাহাকে জড়াইয়া পেঁচাইয়া ধরিয়া তাহার উভয় গালে ছােবল দিয়া বলিবে, আমিই তোমার সেই ধন-মাল, আমিই তোমার সেই সঞ্চয়। অতঃপর মহানবী (স) এই আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাহাদিগকে যাহা দান করিয়াছেন তাহাতে যাহারা কৃপণতা করে তাহা তাহাদের জন্য কল্যাণকর-ইহা যেন তাহারা কিছুতেই ধারণা না করে, বরং ইহা তাহাদের জন্য ক্ষতিকর। যাহাতে তাহারা কৃপণতা করিবে তাহাই কিয়ামতের দিন তাহাদের গলায় বেড়ি হইবে”- (সূরা আল ইমরানঃ ১৮০)- (বুখারী)।

মহানবী (স) আরও বলেনঃ “স্বর্ণ ও রৌপ্যের (নগদ অর্থের) যে মালিকই তাহার উপর ধার্য হক (যাকাত) আদায় করিবে না, কিয়ামতের দিন সেইগুলিকে তাহার পার্শ্বে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখিয়া দেওয়া হইবে। অতঃপর তাহা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হইবে। সেই উত্তপ্ত বস্তু দ্বারা তাহার পার্শ্বদেশ, ললাট ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হইবে সেই দিন যাহা পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান দীর্ঘ হইবে। অবশেষে লোকদের মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা করা হইবে। অতঃপর তাহাকে তাহার পথ দেখানো হইবে- হয় জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। গরু বা ছাগলের মালিকও যদি তাহার উপর ধার্য হক (যাকাত) আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন সেইগুলিকে আনিয়া উপস্থিত করা হইবে। সেইগুলি স্বীয় পায়ের দুই ভাগে বিভক্ত ক্ষুর দ্বারা মালিককে পিষ্ট করিতে এবং শিং দ্বারা তাইতে থাকিবে। একটির নিপীড়ন শেষ হইলে অপরটি নিপীড়ন করিতে আসিবে। এই ধারা অব্যাহত থাকিবে যাবত না আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাহার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করিবেন, যে দিনটি পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান দীর্ঘ হইবে। অতঃপর তাহাকে তাহার পথ দেখানো হইবে- হয় জান্নাতের দিকে নতুবা জাহান্নামের দিকে”- (মুসলিম)।

ধারা-৭৭৯

যাহার মালে যাকাত ধার্য হয় বালেগ ও বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন স্বাধীন মুসলিম ব্যক্তির মালের উপর নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে যাকাত ধার্য হইবে—

(ক) মালের উপর তাহার পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকিতে হইবে; (খ) মাল এমন প্রকৃতির হইতে হইবে যাহার উপর যাকাত ধার্য হইতে

পারে;

(গ) মাল নেসাব পরিমাণ অথবা উহার মূল্যের সমপরিমাণ হইতে হইবে;

(ঘ) উক্ত নেসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ এক চান্দ্র বৎসর মালিকের মালিকানায় বিদ্যমান থাকিতে হইবে;

(ঙ) উক্ত নেসাব পরিমাণ মাল মালিকের মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ধার্য করিতে হইলে তাহাকে অবশ্যই স্বাধীন মুসলিম হইতে হইবে। অতএব অমুসলিম ব্যক্তির উপর যাকাত ধার্য হইবে না। এই বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। কারণ যাকাত এক প্রকারের ইবাদত যাহা কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত হইল ইসলাম গ্রহণ। অতএব এখানে প্রথম শর্তই অনুপস্থিত। রাসূলুল্লাহ (স) হযরত মুআয ইবন জাবাল (র)-কে ইয়ামনে প্রেরণকালে বলেনঃ

“তুমি আহলে কিতাবের একটি সম্প্রদায়ের নিকট যাইতেছ। প্রথমে তুমি তাহাদেরকে “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল” এই সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে। তাহারা ইহা মানিয়া নিলে তুমি তাহাদের জানাইয়া দিবে যে, আল্লাহ তাহাদের উপর দিবারাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করিয়াছেন। তাহারা ইহাও গ্রহণ করিলে তুমি তাহাদের বলিবে যে, আল্লাহ তাহাদের উপর যাকাত ফরয করিয়াছেন, যাহা তাহাদের ধনীদের নিকট হইতে আদায় করিয়া তাহাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হইবে।”১৫

৫০৩

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (র) বলিয়াছেন, উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, ইসলাম কবুল করিলেই কোন ব্যক্তিকে ইসলামের ফরযসমূহ পালন করার কথা বলা যাইতে পারে।১৬।

হানাফী মাযহাবমতে সাধারণত বালেগ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তির উপরই যাকাত ধার্য হইবে। অতএব নাবালেগ ও পাগল ব্যক্তির উপর যাকাত ধার্য হইবে না। কারণ তাহাদের উপর শরীআতের বিধান পালনের দায়িত্ব নাই। মহানবী (স) বলেনঃ

رفع القلم عن ثلاثة عن الصبي حتى يبلغ ………. وعن المجون حتى يفيق.

“তিন ব্যক্তির আমল লেখা হয় না- নাবালেগ, যতক্ষণ না বালেগ হয় ….এবং পাগল, যতক্ষণ না সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন হয়।”১৭

অবশ্য বালকের কৃষিজ উৎপাদনের উপর যাকাত ধার্য হইবে (যাহা উশর-এর আওতায় আলোচিত হইবে)।১৮ কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াত হইতেও উপরোক্ত মতের সমর্থন পাওয়া যায়ঃ

خذ من أموالهم صدقة تطهرهم و تزکیهم بها –

“তাহাদের মাল হইতে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ কর। ইহা দ্বারা তুমি তাহাদেরকে পবিত্র করিবে ও পরিশুদ্ধ করিবে”-(সূরা তওবাঃ ১০৩)।

গুনাহের মলিনতা হইতেই পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার কথা উক্ত আয়াতে বলা হইয়াছে। কিন্তু বালক ও পাগলের কোন গুনাহ নাই। অতএব যাকাত গ্রহণপূর্বক তাহাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার কোন প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু মালিকী, শফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে নাবালেগ ও পাগলের মালে যাকাত ধার্য হইবে এবং তাহা তাহাদের মাল দ্বারা তাহাদের অভিভাবকগণ পরিশোধ করিবেন।১৯.

যে মালের কারণে কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ধার্য করা যায় সেই মালের উপর উক্ত ব্যক্তির পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকিতে হইবে। মালিকানা বলিতে “কোন জিনিস ও ব্যক্তির মধ্যকার শরীআত সম্মত যোগসূত্রকে বুঝায়, যাহা ব্যক্তিকে উক্ত জিনিস নিঃশর্তভাবে ভোগ-ব্যবহারের সুযোগ দেয় এবং অপর

৫o৪

লোকদের হস্তক্ষেপে বাধা দেয়।”২° পূর্ণ মালিকানা বলিতে “জিনিসটি মালিকের দখলে ও নিয়ন্ত্রণে থাকা বুঝায়।”২১।

অতএব কোন মালের উপর কোন ব্যক্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত থাকিলেই তাহার উপর যাকাত ধার্য হইতে পারে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

خذ من أموالهم صدقه .

“তাহাদের মাল হইতে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ কর”- (সূরা তওবা : ১০৩)।

وفي أموالهم حق للسائل والمحروم۔

“তাহাদের মালে যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতদের অধিকার রহিয়াছে”- (সূরা যারিয়াতঃ ১৯; আরও দ্র. সূরা মাআরিজঃ ২৪)।

মহানবী (স) বলেনঃ

ان الله فرض عليهم في أموالهم.

“আল্লাহ তাহাদের মালে তাহাদের উপর ফরয করিয়াছেন”। উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসে মালিকানার সুস্পষ্ট উল্লেখ রহিয়াছে।

যে মালের উপর যাকাত ধার্য হইবে তাহা এমন প্রকৃতির হইতে হইবে যাহার উপর যাকাত ধার্য হইতে পারে। যেমন নগদ অর্থ, সোনা-রূপা, ব্যবসায়িক পণ্য, গৃহপালিত পশু, কৃষিজ পণ্য ইত্যাদি। অতএব ওয়াকফ সম্পত্তি, সরকারী সম্পত্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস, বাড়ি-ঘর, স্থাবর সম্পত্তি ইত্যাদির উপর যাকাত ধার্য হয় না। ২২

মালিকানাভুক্ত মাল বা উহার মূল্য ধারা (৭৮১) মোতাবেক নেসাব পরিমাণ না হইলে উহার উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

উক্ত নেসাব পরিমাণ মাল মালিকের দখলে পূর্ণ এক বৎসর বিদ্যমান থাকিতে হইবে। ফকীহগণের ঐক্যমত অনুযায়ী এখানে চান্দ্র বৎসর ধর্তব্য হইবে। নগদ অর্থ, পশু ও ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে এই শর্ত আরোপিত হইবে। কিন্তু কৃষিজ ফসল, ফলমূল ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য নহে।

যাকাত ফরয হওয়ার জন্য যেসব মালের উপর মালিকানাস্বত্ব এক বৎসরকাল স্থায়ী থাকার শর্ত করা হইয়াছে এবং যেসব মালে তাহা করা হয় নাই, এই

coll

দুই-এর মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে ইমাম ইবন কুদামা (র) বলেন, প্রথম পর্যায়ের মাল বর্ধনশীল প্রকৃতির, যেমন পশুর বংশবৃদ্ধি হয়। ব্যবসায়ের পণ্যে মুনাফা হয়। তাই উহার বর্ধনের জন্য অন্তত এক বৎসরের সময় প্রদান করা হইয়াছে। কিন্তু কৃষিজ ফসল ও ফলমূল বর্ধনশীল নহে, তাহা আহরণের পর হইতে হ্রাসপ্রাপ্ত হইতে থাকে। তাই ফসল সগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে উহার যাকাত প্রদান করিতে হয়। এইজন্য এই ক্ষেত্রে এক বৎসরের শর্ত আরোপ করা হয় নাই।

মহানবী (স) বলেনঃ

لا زكوة في مالي

يحول عليه الحول –

“এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন মালে যাকাত ধার্য হয় না।”২৩

ধারা—৭৮০

নেসাব (ক) ধারা (৭৭৯)-এ উল্লেখিত শর্ত সাপেক্ষে কোন ব্যক্তির নিকট যে পরিমাণ মাল থাকিলে তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হয় সেই পরিমাণ মালকে “নেসাব” (5,)বলে।

(খ) বৎসরের প্রারম্ভ ও সমাপ্তিতে নেসাব বিদ্যমান থাকা শর্ত।

বিশ্লেষণ

শুধু নেসাব পরিমাণ মাল কোন ব্যক্তির মালিকানায় বিদ্যমান থাকিলেই তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হইবে না, বরং উহার জন্য একই সংগে অন্যান্য শর্তও বিদ্যমান থাকিতে হইবে। নেসাব হইতে সামান্য পরিমাণ কম হইলেও যাকাত ওয়াজিব হইবে না, কারণ যাকাত প্রদেয় হওয়ার জন্য নেসাব পূর্ণ হওয়া অন্যতম শর্ত।২৫

বৎসরের শুরুতে ও শেষে পূর্ণ নেসাব বিদ্যমান থাকা জরুরী। বৎসরের মাঝখানে নেসাব বিদ্যমান না থাকিলেও যাকাত বাধ্যকর হইবে। অতএব কোন ব্যক্তির মালিকানায় বৎসরের শুরুতে নেসাব পরিমাণ মাল বিদ্যমান ছিল,

৫০৬

বৎসরের কোন এক পর্যায়ে নেসাবে ঘাটতি হইয়া গেল, আবার বৎসরের শেষ প্রান্তে নেসাব পূর্ণ হইল, এই অবস্থায় তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হইবে। কিন্তু বৎসরের শুরুতে নেসাব বিদ্যমান থাকিলে এবং শেষে বিদ্যমান না থাকিলে অথবা ইহার বিপরীত হইলে যাকাত বাধ্যকর হইবে না। এই বিধান গৃহপালিত পশু, সোনা, রূপা, নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক মাল সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অবশ্য ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে ব্যবসায়িক মালের ক্ষেত্রে বৎসরের শেষে নেসাব বিদ্যমান থাকিলেই যাকাত বাধ্যকর হইবে, বৎসরের শুরুতে বা মাঝখানে বিদ্যমান থাক বা না থাক। ২৬

ধারা-৭৮১

সোনা ও রূপার নেসাব। (ক) কোন ব্যক্তির নিকট বায়ান্ন তোলা বা উহার অধিক রৌপ্য বিদ্যমান থাকিলে তাহার উপর প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম রৌপ্য যাকাত বাবদ প্রদেয় হইবে।

(খ) কোন ব্যক্তির নিকট বিশ মিছকাল (সাড়ে সাত তোলা) বা উহার অধিক স্বর্ণ বিদ্যমান থাকিলে তাহার উপর প্রতি বিশ মিছকালে অর্ধ মিছকাল স্বর্ণ যাকাত বাবদ প্রদেয় হইবে।

(গ) কোন ব্যক্তির নিকট স্বর্ণ ও রৌপ্য বিদ্যমান থাকিলে এবং উভয়টির যোগফল দ্বারা নেসাব পূর্ণ হইলে তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হইবে।

(ঘ) কোন ব্যক্তির নিকট স্বর্ণ অথবা রৌপ্যের নেসাবের সম-পরিমাণ বা উহার অধিক নগদ অর্থ বিদ্যমান থাকিলে তাহার উপর প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা যাকাত ধার্য হইবে।

বিশ্লেষণ

সোনা, রূপা ও নগদ অর্থের ক্ষেত্রে প্রতিটির নেসাবের উপর উহার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত বাবদ প্রদেয় হয়। টাকার অংকে যাকাতের হার দাড়ায় প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা। সোনা ও রূপার যাকাত সরাসরি সোনা ও রূপার

৫o৭

দ্বারাও পরিশোধ করা যায় অথবা উহার বাজারমূল্য নির্ধারণ করিয়া নগদ অর্থেও যাকাত পরিশোধ করা যায়। নগদ অর্থের যাকাত প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা। রৌপ্যের নিম্নতম নেসাব বায়ান্ন (৫২) ভোলা। কোন ব্যক্তির নিকট উহার কম পরিমাণ রৌপ্য থাকিলে তাহার উপর যাকাত ধার্য হইবে না। মহানবী (স) বলেনঃ

الفضة ليس فيها صدقة حتى تبلغ مائتي

درهم فاذا بلفت مائتين ففيها خمسة دراهم.

“রৌপ্যের পরিমাণ দুই শত দিরহাম না হওয়া পর্যন্ত উহার উপর যাকাত ধার্য হইবে না। দুই শত দিরহাম পূর্ণ হইলে তাহাতে পাঁচ দিরহাম যাকাত প্রদেয়

হইবে।”২৭।

ليس فيما دون مائتين من الورق شیئ وفى مائتين خمسة

“দুই শত দিরহামের কম পরিমাণ রৌপ্যে যাকাত নাই এবং দুই শত দিরহাম রৌপ্যে পাঁচ দিরহাম যাকাত ধার্য হইবে।”২৮

এখানে উল্লেখ্য যে, মহানবী (স)-এর আমলে দিরহাম ও দীনার নামক মুদ্রা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন দেশে দিরহাম নামক মুদ্রা প্রচলিত আছে। আমরা মনে করি, আইনের ধারায় মহানবী (স)-এর হাদীস সত্ত্বেও দিরহাম শব্দ ব্যবহৃত না হইয়া উহার পরিবর্তে বায়ান্ন তোলা ব্যবহৃত হওয়া ঠিক।

ধারা-৭৮২

শেয়ারের যাকাত (ক) যাকাতদাতা তাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীর শেয়ারের যাকাত প্রদান করিবে।

ব্যাখ্যা কোন কোম্পানী বা যৌথ মূলধনী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদারগণের প্রদত্ত মূলধনের অংশকে “শেয়ার” বলে এবং কোম্পানী কর্তৃক অংশীদারগণকে

cob

প্রদত্ত সনদপত্রকে “শেয়ার সার্টিফিকেট” বলে।

বিশ্লেষণ

অংশীদারগণ কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত মূলধনের উপর যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে। শেয়ার যদি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হইয়া থাকে তবে নেসাব নির্ধারণকালে উহার বাজারদর বিবেচনা করিতে হইবে; আর যদি তালিকাভুক্ত করা না হইয়া থাকে তবে শেয়ার সার্টিফিকেটে উল্লেখিত মূল্য বিবেচ্য হইবে। যদি কোম্পানী স্ব-উদ্যোগে শেয়ারহােল্ডারগণের যাকাত প্রদান করিয়া থাকে তবে তাহারা দায়মুক্ত হইয়া যাইবে। এই ক্ষেত্রে শেয়ারহােল্ডারগণের অনুমতির প্রয়োজন হইবে।২৯

ধারা-৭৮৩

সঞ্চয়ের যাকাত (ক) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লগ্নীকৃত অর্থ, প্রাইজ বন্ড, বীমা পলিসি ও অনুরূপ নিরাপত্তামূলক লগ্নীর যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(খ) চাকুরিজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চিত অর্থ তাহার পূর্ণ মালিকানায় আসার পর সাধারণ নিয়মে উহার যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে রক্ষিত টাকার যাকাত প্রদান বৎসরশেষে বাধ্যকর হইবে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণপত্র (ডিবেঞ্চার) ক্রয়ের মাধ্যমে এবং অন্য উপায়ে সঞ্চিত অর্থের যাকাত অর্থাৎ প্রাইজবন্ড, বীমা পলিসি, পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট পেনশন স্কীম ও অনুরূপ নিরাপত্তামূলক তহবিলে জমাকৃত অর্থের যাকাত প্রতি বৎসর যথানিয়মে প্রদান করিতে হইবে। এইসব প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত টাকা-পয়সা উহার মালিকের মালিকানাভুক্ত আছে বলিয়া গণ্য

হইবে।৩০

চাকুরিজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ডে (Provident Fund) সঞ্চিত অর্থের মালিক চাকুরিজীবী হইলেও উহা স্বাধীনভাবে ভোগ-ব্যবহার করার এখতিয়ার তাহার থাকে না। তাই উক্ত সঞ্চয় তাহার কর্তৃত্বে অর্পিত না হওয়া পর্যন্ত উহার যাকাত

৫০৯

প্রদান বাধ্যকর হইবে না। ইমাম মালেক (র)-এর মতে এই প্রকৃতির মাল মালিকের পূর্ণ কর্তৃত্বে আসার পর উহার যাকাত দিতে হইবে এবং অতীতের বৎসরগুলির যাকাত দিতে হইবে না।

ধারা—৭৮৪

তৈজসপত্র ও অলংকারাদির যাকাত (ক) যেসব তৈজসপত্র ও দ্রব্য সামগ্রী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত হয় সেইগুলির উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

(খ) স্বর্ণ অথবা রৌপ্য দ্বারা নির্মিত তৈজসপত্র ও অন্যান্য বস্তুর উপর যাকাত ধার্য হইবে।

(গ) স্বর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা নির্মিত অলংকারপত্রের উপর যাকাত ধার্য হইবে।

(ঘ) স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যতীত অন্যান্য মূল্যবান পাথর যথা মণিমুক্তা, হিরক ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত অলংকারপত্রের উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত তৈজসপত্র, যেমন থালাবাটি, ঘটি, কাপ, পিরিচ, পেয়ালা, খাট-পালঙ্ক, বিছানাপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি প্রকৃতির যাবতীয় জিনিসের উপর যাকাত আরোপিত হইবে না। তবে এসব তৈজসপত্র সোনা বা রূপার দ্বারা তৈরী হইলে উহার উপর যাকাত আরোপিত হইবে। সোনা বা রূপার তৈরী অলংকারের উপরও যাকাত আরোপিত হইবে। ইমাম আবু হানীফা (র) ও তাঁহার সহচরগণের এই মত। কিন্তু ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতে, নারীদের ব্যবহার্য অলংকারাদির যাকাত দিতে হইবে না। স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যতীত অন্যান্য মূল্যবান পাথর, যথা হিরা, মনিমুক্তা ইত্যাদির তৈরী অলংকারপত্রের উপর যাকাত ধার্য হইবে না। এই পর্যায়ে মহানবী

৫১০

(স)-এর বাণী নিম্নরূপ :

এক মহিলা তাহার কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট উপস্থিত হইল, এই অবস্থায় যে, তাহার কন্যার হাতে মোটা দুই গাছি স্বর্ণের কাকন পরিহিত ছিল। মহানবী (স) জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি ইহার যাকাত দাও? মহিলা বলিল,

। মহানবী (স) বলিলেন, তুমি কি ইহাতে খুশী হইতে পারিবে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ইহার পরিবর্তে তোমার হাতে আগুনের এক জোড়া কাকন পরাইয়া দিবেন?৩৩

মূল্যবান পাথরের তৈরী অলংকারপত্রের উপর যাকাত ধার্য হইবে না। এই বিষয়ে সকল মাযহাবের ফকীহগণ একমত। কেবল শীআপন্থী কতিপয় আলেম বলিয়াছেন যে, উহারও যাকাত প্রদান করিতে হইবে।

ধারা-৭৮৫

ঘর-বাড়ি ও দালাল-কোঠার যাকাত (ক) বসবাসের ঘরবাড়ি, দালান-কোঠা ও যানবাহনের উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

(খ) ঘরবাড়ি, দালান-কোঠা ও যানবাহন ভাড়ায় খাটানো হইলে উহার। আয়ের উপর যাকাত ধার্য হইবে। ‘

বিশ্লেষণ

ঘরবাড়ি, দালান-কোঠা ও যানবাহন ভাড়ায় খাটাইয়া যে মুনাফা পাওয়া যাইবে তাহা মালিকের অন্যান্য সম্পদের সহিত যোগ হইবে এবং বৎসরান্তে উহার যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে।৩৫

ধারা-৭৮৬

যৌথ মালিকানাভুক্ত মালের যাকাত

যৌথ মালিকানাভুক্ত মালের যাকাত যৌথভাবে আদায় করা যাইবে, যদি

মালিকগণের সকলে— (ক) মুসলিম,

৫১১

(খ) বালেগ, (গ) বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন; এবং সার্বিক হিসাবে (ঘ) নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, (ঙ) এক বৎসর সকল মালিকের করায়ত্ত থাকে এবং (চ) যাকাতযোগ্য মাল হয়। ‘

বিশ্লেষণ

কোন মালের একাধিক মালিক থাকিলে এবং মালিকগণের প্রত্যেকের অংশ পৃথকভাবে চিহ্নিত বা বণ্টিত না থাকিলে উক্ত মালকে “যৌথ মালিকানাভুক্ত মাল” বলে। এই প্রকৃতির মালের যাকাতের ক্ষেত্রেও একক মালিকানাভুক্ত মালে যাকাত ফরয হওয়ার সকল শর্ত প্রযোজ্য হইবে।৩৬ যেমন মালিকগণের মধ্যে কেহ অমুসলিম অথবা নাবালেগ অথবা পাগল হইলে যৌথভাবে যাকাত আদায় করা যাইবে না। অনুরূপভাবে তাহাদের মধ্যে কাহারও নেসাব পরিমাণ মাল না থাকিলে বা উক্ত মাল তাহাদের মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হইলে অথবা উহা তাহাদের মালিকানায় পূর্ণ এক বৎসর বিদ্যমান না থাকিলে যাকাত বাধ্যকর হইবে না।

যেমন দুই ব্যক্তির যৌথ মালিকানায় পাঁচটি উট অথবা ত্রিশটি গরু অথবা চল্লিশটি ছাগল রহিয়াছে অথবা আট ভোলা স্বর্ণ বা উহার সমমূল্যের নগদ অর্থ বিদ্যমান আছে। যাকাত আদায়কারী উক্ত মালের মালিকগণের নিকট হইতে যাকাত আদায় করিবে না। কারণ উক্ত মাল দুই শরীকের মধ্যে অংশমত বণ্টন করিলে পৃথকভাবে তাহাদের কাহারও উপর যাকাত ফরয হয় না। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে মালিকগণের মধ্যে যাকাত বাধ্যকর হওয়ার যোগ্যতা বিদ্যমান থাকিলে অর্থাৎ উভয়ে বালেগ ও মুসলিম হইলে তাহাদের উপর যাকাত ফরয হইবে এবং তাহাদের যৌথ সম্পত্তির যাকাত যৌথভাবে আদায় করা যাইবে। কারণ মহানবী (স) বলিয়াছেন?

يجمع بين متفرق ولا يفرق بين مجتمع خشية الصدقة وما كان بين خليطين فانهما يتراجعان بالسوية.

“যাকাত প্রদানের ভয়ে বিচ্ছিন্ন মালকে একীভূত করা যাইবে না এবং একীভূত মালকে পৃথক করা যাইবে না। যৌথ মালের মালিকদ্বয় নিজ নিজ অংশমত মাল ভাগ করিয়া নিবে।”

ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড মালিক বা শেয়ারহােল্ডারগণের একটি যৌথ সম্পত্তি। প্রতি বৎসর ব্যাংক যে মুনাফা অর্জন করে উহার সম্পূর্ণটা মালিকগণের মধ্যে বণ্টন না করিয়া ভবিষ্যত বিপদ-দুর্বিপাক মোকাবিলার জন্য ঐ মুনাফার একটি অংশ দ্বারা এই ফান্ড গড়িয়া তোলা হয়। এইভাবে ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ডে বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত হইতে থাকে। কোন কারণে ব্যাংক ব্যবসা বন্ধ করিয়া দিলে কেবল তখনই উক্ত অর্থ মালিকগণের মধ্যে স্বস্ব অংশ মোতাবেক বণ্টন করা হয়, অন্যথায় নহে। অথবা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে, রিজার্ভ ফান্ডে প্রয়োজনাতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত হইয়াছে এবং এই অবস্থায় অতিরিক্ত অর্থ মালিকগণের মধ্যে বণ্টন করিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেই কেবল উক্ত অর্থ তাহাদের করায়ত্ত হইতে পারে।

এই ফান্ডের উপর যাকাত আরোপ করার ক্ষেত্রে কতগুলি বাধা রহিয়াছে। যেমন ব্যাংকের অংশীদারগণের মধ্যে যাকাতের দায়মুক্ত মুসলিম অথবা অমুসলিম ব্যক্তিও থাকিতে পারে। রিজার্ভ ফান্ড হইতে উপরোক্ত শ্রেণীর লোকের অংশ হিসাব করিয়া যাকাতের বাহিরে রাখিয়া অতঃপর অবশিষ্টদের অংশের যাকাত কর্তন করা যায় হানাফী মত অনুযায়ী।

যাকাতের ক্ষেত্রে ফকীহগণ একটি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখিয়াছেন। তাহা হইলঃ যাকাতের হিসাব এমনভাবে করা উচিত যাহাতে যাকাতের প্রাপকগণ বেশি লাভবান হইতে পারে। এই দিকটি বিবেচনা করিয়া রিজার্ভ ফান্ড বা অনুরূপ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ (র)-এর মত অনুসরণ করা যাইতে পারে। তাহার মতে যৌথ সম্পত্তিতে যাকাত ধার্য হইবে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম

৫১৩

দেশসমূহে এবং পাকিস্তানের সকল ইসলামী ব্যাংক ইমাম শাফিঈর মত অনুসরণ করিয়া ব্যাংকের যাবতীয় প্রকারের রিজার্ভ ফান্ডের উপর যাকাত ধার্য করিয়াছে। পাকিস্তানের যাকাত অধ্যাদেশে বলা হইয়াছে যে, এই অবস্থায় যাহার উপর যাকাত ফরয নহে, তাহার কর্তিত অংশ ঐছিক দান হিসাবে গণ্য হইবে।

এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য রাখিতে হইবে যে, কেবল সরকারই জনগণের নিকট হইতে বাধ্যতামূলকভাবে, এমনকি জোরপূর্বক যাকাত আদায় করিতে পারে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এই কর্তৃত্ব নাই।

ধারা-৭৮৭

বন্ধকী মালের যাকাত কোন ব্যক্তির মাল অপর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট বন্ধক থাকা অবস্থায় উহার যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে না।

বিশ্লেষণ

যাকাত ফরয হওয়ার জন্য মালের উপর মালিকের পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকা জরুরী। অন্যথায় উক্ত মালের উপর যাকাত ধার্য হয় না। বন্ধকী মালের উপর বন্ধকদাতা মালিকের পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকে না। বন্ধক গ্রহীতা তো উহার মালিক নয়ই। আমাদের দেশে সাধারণত কোন মাল বন্ধক রাখিয়া উহার পরিবর্তে বন্ধক গ্রহীতার নিকট হইতে প্রয়োজনীয় কোন জিনিস ধার লওয়া হয়। ধারের জিনিস ফেরত দেওয়ার পরই মালিক তাহার বন্ধকী মাল ফেরত পায়। উক্ত মাল মালিকের দখলে ফিরিয়া আসার পরই উহার উপর যাকাত ধার্য হইবে।

ধারা-৭৮৮ প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ভবিষ্য তহবিল) যাকাত প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত অর্থ মালিকের পূর্ণ দখলে আসার পর উহার যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

৫১৪

বিনে

বিশ্লেষণ

কর্মচারীগণের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য সরকার বা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তাহাদের মূল বেতনের একটি অংশ প্রতি মাসে কর্তন করিয়া একটি ফান্ডে জমা রাখে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও সমপরিমাণ অর্থ উক্ত ফান্ডে চাঁদা দান করে। এইভাবে যে ফান্ড গঠিত হয় তাহাকে প্রভিডেন্ট ফান্ড (Provident Fund) বলে। সাধারণত চাকুরি হইতে অবসর গ্রহণকালে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের এই ফান্ডে জমাকৃত অর্থ ফেরত প্রদান করে। এই অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর করায়ত্ত হওয়ার পর উহার যাকাত প্রদান তাহার উপর বাধ্যকর হইবে, করায়ত্ত হওয়ার পূর্বেকার বৎসরসমূহের যাকাত প্রদান করা বাধ্যকর নহে। ইহা ইমাম আবু হানীফা (র)-এর অভিমত এবং এই মতই হানাফী মাযহাবে গৃহীত হইয়াছে।

ধারা-৭৮৯ হালাল ও হারাম মিশ্রণযুক্ত মালের যাকাত কোন ব্যক্তির দখলিভুক্ত মালের— (ক) সম্পূর্ণটাই যদি হারাম পন্থায় উপার্জিত হইয়া থাকে তবে উহার যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে না;

(খ) আংশিক হালাল পন্থায় এবং আংশিক হারাম পন্থায় উপার্জিত হইয়া থাকে, তবে হালাল অংশের যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

হারাম পন্থায় মাল উপার্জন করিলে তাহার ভোগ-ব্যবহারও হারাম। এখানে হারাম মাল বলিতে সূদ, ঘুষ, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, কালোবাজারি, আত্মসাৎ ইত্যাদি পন্থায় উপার্জিত মাল বুঝানো হইয়াছে। উক্ত মাল প্রকৃত মালিকের নিকট পৌছাইয়া সেক্স কর্তব্য। এই মালের উপর যাকাত ধার্য হইবে না, তবে সরকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাহা বাজেয়াপ্ত করিতে পারে। হালাল পন্থায় উপার্জিত মালের সহিত হারাম পন্থায় উপার্জিত মাল একত্রে থাকিলে কেবল হালাল পন্থায় উপার্জিত অংশের যাকাত প্রদান করিতে হইবে। আরও দ্র. ধারা (৭৯৯)।

বিধিবদ্ধ ইসলামী আই

ধারা-৭৯০

যাকাত প্রদানের অভিপ্রায় যাকাত প্রদানকারীর যাকাত প্রদানকালে অথবা মাল হইতে যাকাতের অংশ পৃথক করাকালে তাহার অভিপ্রায় থাকিতে হইবে যে, সে তাহার যাকাত পরিশোধ করিতেছে।

বিশ্লেষণ

যাকাতদাতা যে যাকাত প্রদান করিতেছে এই বিষয়ে তাহার নিয়াত বা। অভিপ্রায় থাকিতে হইবে। এই বিষয়ে ফকীহগণের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। কেননা মহানবী (স) বলিয়াছেন?

اما الأعمال بالیات .

“কার্যসমূহের ফলাফল নিয়াত অনুযায়ী বিচার্য।”

অতএব যাকাত প্রদান একটি ফরজ কাজ এবং ইবাদত, যেমন নামায একটি ফরয ইবাদত। তাই ঐচ্ছিক দান হইতে ইহাকে পৃথক করার জন্য নিয়াতের প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে। নিজ মাল হইতে যাকাতের অংশ পৃথক করার সময় অথবা যাকাত প্রদানের সময় নিয়াত বিদ্যমান থাকা জরুরী। ইমাম মালেক (র) ও আহমাদ (র) বলিয়াছেন, অন্তরে নিয়াত বিদ্যমান থাকাই যথেষ্ট।

ধারা-৭৯১ যাকাত পরিশোধের সময়

(ক) যাকাত ফরয হওয়ার সংগে সংগে তাহা পরিশোধ করিতে হইবে। (খ) কোন ব্যক্তি অগ্রিম যাকাত পরিশোধ করিলে তাহা বৈধ হইবে। (গ) কৃষি উৎপাদনের যাকাত উহা সংগ্রহের পরপরই পরিশোধ করিতে

হইবে।

৫১৬

বিশ্লেষণ

যাকাত ফরয হওয়ার পরপরই তাহা পরিশোধ করিতে হইবে এবং বিলম্ব করা যাইরে না। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত। হানাফী মাযহাবের ইহাই গৃহীত মত (

4 53)। কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি যাকাত প্রদানে বিলম্ব করিলে ইহার জন্য সে গুনাহগার হইবে এবং হানাফী মাযহাবমতে তাহার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যাত হইবে। ইহা পরিশোধ না করা পর্যন্ত যাকাতদাতা ইহার যামিনদার হিসাবে গণ্য হইবে। নগদ অর্থ, সোনা-রূপা, ব্যবসায়িক পণ্য, গৃহপালিত পশু ইত্যাদির যাকাত এক বৎসর পূর্ণ হওয়ার সংগে সংগে প্রদান করিতে হইবে এবং কৃষিজ উৎপাদন, ফলমূল ইত্যাদির যাকাত উহা সংগ্রহ করার পরপর পরিশোধ করিতে হইবে।

যাকাত ফরয হওয়ার পর মাল ধ্বংস বা বিনষ্ট হইয়া গেলে যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা রহিত হইয়া যাইবে। তবে আংশিক ধ্বংস বা বিনষ্ট হইলে যাকাতও আংশিক রহিত হইবে। কিন্তু জমহূরের মতে মাল ধ্বংস বা বিনষ্ট হইলে যাকাত রহিত হইবে না। তবে মালিক স্বেচ্ছায় তাহা ধ্বংস বা বিনষ্ট করিলে যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিবে।

যাকাত ফরয হওয়ার পূর্বেই তাহা পরিশোধ করা জায়েয নহে। তবে যাকাত ফরয হওয়ার পর এবং বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তাহা অগ্রিম প্রদান করিলে তাহা বৈধ হইবে। কেননা এই অবস্থায় যাকাত বাধ্যকর হওয়ার কারণসমূহ বিদ্যমান আছে, শুধু পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হয় নাই। আলী (র)-র সূত্রে বর্ণিত আছে যে, আব্বাস (রা) তাহার মালের অগ্রিম যাকাত পরিশোধের অনুমতি চাহিলে রাসূলুল্লাহ (স) তাহাকে অনুমতি প্রদান করেন।৩৯

ধারা-৭৯২

ঋণ ও যাকাত (ক) কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হইলে এবং ঋণের অংক বিয়োগ করার পর তাহার নিকট নেসাব পরিমাণ মাল না থাকিলে তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হইবে না।

(খ) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করিলে উক্ত ঋণ ফেরত না

‘৫১৭

পাওয়া পর্যন্ত ঋণদাতার জন্য যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে না।

(গ) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উৎপাদিত ফসল ও ফলমূলের উপর যাকাত ধার্য হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তির ঋণমুক্ত হওয়াও যাকাত বাধ্যকর হওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণের অংক বিয়োগ করার পর নেসাব পরিমাণ মাল না থাকিলে তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হইবে না। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) পরিষ্কার বলিয়াছেন যে, কোন ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করিলে এবং তাহা নেসাবের অধিক হইলেও উক্ত ঋণের যাকাত দিতে হইবে না। তবে ঋণদাতা তাহার প্রদত্ত ঋণ ফেরত পাওয়ার পর তাহাকে উক্ত ঋণের যাকাত পরিশোধ করিতে হইবে। যেই ঋণ ফেরত পাওয়ার আশা নাই, ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) বলিয়াছেন যে, উক্ত ঋণ ফেরত পাওয়া গেলে অতীতের বৎসরগুলির যাকাতও দিতে হইবে না এবং যেই বৎসর ঋণ ফেরত পাওয়া গিয়াছে সেই বৎসরের যাকাতও দিতে হইবে না, বরং পরবর্তী বৎসর হইতে যাকাত দিতে হইবে। ঋণ গ্রহণ করিয়া ব্যবসায়ের জমি, দালান-কোঠা, যন্ত্রপাতি ও পণ্য ক্রয় করা হইলে যাকাতের হিসাব করাকালে সমস্ত ঋণ পণ্যের মূল্য হইতে বিয়োগ হইবে না, বরং ঋণের যেই পরিমাণ অংশ পণ্য ক্রয়ের জন্য ব্যয় করা হইয়াছে, শুধু সেই পরিমাণ পণ্যের মূল্য হইতে বিয়োগ হইবে।

ধারা-৭৯৩

পশুর যাকাত কোন ব্যক্তির মালিকানাধীন গৃহপালিত পশুর ( 9) মধ্যে নিম্নোক্ত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকিলে তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হইবে—

(ক) প্রত্যেক শ্রেণীর পশুর সংখ্যা নেসাব পরিমাণ হইতে হইবে;

৫১৮

(খ) পশুগুলি মালিকের মালিকানায় পূর্ণ এক বৎসর বিদ্যমান থাকিতে হইবে;

(গ) পশুগুলিকে সাইমা (ALL) অর্থাৎ স্বাধীনভাবে বিচরণশীল হইতে হইবে।

ব্যাখ্যা নেসাব পরিমাণ পশুর সবগুলিই দুগ্ধপোষ্য হইলে উহার উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

যাকাত বাধ্যকর হওয়ার জন্য প্রত্যেক শ্রেণীর পশুর সংখ্যা স্বতন্ত্রভাবে নেসাব পরিমাণ হইতে হইবে। যেমন উটের বেলায় কমপক্ষে পাঁচটি, গরু-মহিষের বেলায় কমপক্ষে ত্রিশটি এবং গাছল, ভেড়া, মেষ ইত্যাদির বেলায় চল্লিশটি। যে কোন শ্রেণীর পশুর সংখ্যা উক্ত নেসাবের কম হইলে তাহাতে যাকাত ধার্য হইবে না। অন্যান্য ধন-সম্পদের মত পশুর ক্ষেত্রেও যাকাত বাধ্যকর হওয়ার জন্য পশুগুলি উহার মালিকের মালিকানায় পূর্ণ এক বৎসর বিদ্যমান থাকিতে হইবে। উহার কম সময় বিদ্যমান থাকিলে যাকাত বাধ্যকর হইবে না। এমনকি বৎসরের শেষ প্রান্তে নেসাবের সামান্য ঘাটতি হইলেও যাকাত ধার্য হইবে না।

শরীআতের পরিভাষায় সাইমা ( L).বলা হয় সেই পশুকে যাহা বৎসরের অধিকাংশ সময় মুক্তভাবে বিচরণ করিয়া আহার গ্রহণ করিতে সক্ষম। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, যেমন বংশবৃদ্ধি এবং দুগ্ধ, গোশত, চর্বি, মাখন ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য, পালিত গবাদি পশু সাইমা-এর আওতাভুক্ত হইবে। কিন্তু কৃষিকর্ম, ভার বহনের বা যানবাহন হিসাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে পালিত পশুর উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

নেসাব সংখ্যক পশুর সবগুলি দুগ্ধপোষ্য হইলে উহার জন্য যাকাত দিতে হইবে না। তবে বয়স্ক পশুর মধ্যে অল্প বয়স্ক বা দুগ্ধপোষ্য পশুও থাকিলে সেই ক্ষেত্রে উহা গণনায় ধর্তব্য হইবে।

1ধিবদ্ধ ইসলামী আইন

৫১১

ধারা-৭৯৪

উটের যাকাত উটের নিম্নতম নেসাব পাঁচটি এবং নিম্নোক্ত পন্থায় উহার যাকাত ধার্য হইবে—(ক) ৫ হইতে ৯টি উটের যাকাত ১টি বকরী;

(খ) ১০ হইতে ১৪টি উটের যাকাত ২টি বকরী; (গ) ১৫ হইতে ১৯টি উটের যাকাত ৩টি বকরী; (ঘ) ২০ হইতে ২৪টি উটের যাকাত ৪টি বকরী; (ঙ) ২৫ হইতে ৩৫টি উটের যাকাত একটি বিনতে মাখাদ; (চ) ৩৬ হইতে ৪৫টি উটের যাকাত একটি বিনতে লাবুন; (ছ) ৪৬ হইতে ৬০টি উটের যাকাত একটি হিক্কাহ; (জ) ৬১ হইতে ৭৫টি উটের যাকাত একটি জাযাআহ; (ঝ) ৭৬ হইতে ৯০টি উটের যাকাত দুইটি বিনতে লান; (ঞ) ৯১ হইতে ১২০টি উটের যাকাত দুইটি হিক্কাহ;

(ট) উটের সংখ্যা ১২০টির অধিক হইলে প্রতি ৪০টির জন্য একটি বিনতে লাৰূন অথবা প্রতি ৫০টির জন্য একটি হিক্কাহ।

বিশ্লেষণ

হানাফী মাযহাব অনুযায়ী উটের সংখ্যা ১২০-এর অধিক হওয়ার বেলায় পুনরায় উপধারা (ক) হইতে (ট) পর্যন্ত বর্ণিত পন্থায় যাকাত ধার্য হইবে। আবার উটের সংখ্যা ১২০-এর অধিক হইলে উক্ত পন্থার পুনরাবৃত্তি হইবে। উপধারা (ট)-এ বর্ণিত পদ্ধতিটি মালিকী ও শাফিঈ মাযহাব কর্তৃক অনুসৃত। ‘উট’ শব্দ দ্বারা উট এবং উম্ভী (নর ও মাদী) উভয়টিই বুঝানো হইয়াছে। উটের যাকাত সম্পর্কে মহানবী (স) আবূ বা সিদ্দীক (রা)-কে একটি পত্র লিখেন এবং ঐ পত্রের অবিকল নকল আবূ বাকর (রা) আনাস (রা)-কে লিখিয়া দেন। এই পত্রটিই উপরোক্ত হারে উটের যাকাত ধার্য করার ভিত্তিস্বরূপ।

বিনতে মাখাদ (4; -1) বলা হয় দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণকারী।

৫২০

উষ্ট্রী শাবককে। তৃতীয় বর্ষে পদার্পণকারী উষ্ট্ৰী শাবককে বলা হয় বিনতে লাৰূন ৫৫৬ .)। পূর্ণ তিন বৎসর বয়সের অর্থাৎ চতুর্থ বর্ষে পদার্পণকারী উষ্ট্রী শাবককে বলা হয় হিক্কাহ (is)। পঞ্চম বর্ষে পদার্পণকারী উষ্ট্ৰী শাবককে বলা হয়

জাযাআহ (es)। যাকাতের ক্ষেত্রে মাদী শাবক গ্রহণযোগ্য।৩

ধারা-৭৯৫

গরু ও মহিষের যাকাত (ক) গরুর নেসাব ত্রিশটি এবং নিম্নোক্ত পন্থায় উহার যাকাত ধার্য হইবে—(১) ৩০টি গরুর যাকাত একটি তাবীআহ;

(২) ৪০টি গরুর যাকাত একটি মুসিন্নাহ; (৩) ৬০টি পর যাকাত দুইটি তাবীআহ; (৪) ৭০টি গরুর যাকাত একটি মুসিন্নাহ ও একটি তাবীআহ; (৫) ৮০টি গরুর যাকাত দুইটি মুসিন্নাহ; (৬) ৯০টি গরুর যাকাত তিনটি তাবীআহ; (৭) ১০০টি গরুর যাকাত একটি মুসিন্নাহ ও দুইটি তাবীআহ; (৮) ১১০টি গরুর যাকাত দুইটি মুসিন্নাহ ও একটি তাবীআহ; (৯) ১২০টি ফর যাকাত তিনটি মুসিন্নাহ অথবা চারটি তাবীআহ;

(১০) গরুর সংখ্যা ১২০-এর অধিক হইলে উপধারা (১) হইতে (৯)-এ বর্ণিত নিয়মে যাকাত প্রদেয় হইবে।

(খ) মহিষের যাকাত গরুর যাকাতের নিয়মে প্রদেয় হইবে।

(গ) কোন ব্যক্তির নিকট নেসাব সংখ্যক গরু বা মহিষ না থাকিলে কিন্তু গরু ও মহিষের সমন্বয়ে নেসাব পূর্ণ হইলে উপধারা (১) হইতে (১০)-এ বর্ণিত নিয়মে যাকাত প্রদেয় হইবে।

বিশ্লেষণ

ত্রিশটির কম সংখ্যক গরু বা মহিষের ক্ষেত্রে যাকাত প্রদেয় হইবে না।

৫২১

ত্রিশটি হইতে চল্লিশটি পর্যন্ত গরুর যাকাতের নিয়ম সম্পর্কে ফকীহগণ একমত। এই পর্যায়ে মহানবী (স) বলিয়াছেনঃ

في كل ثلاثين من البقر تبيع او تبيعه وفي كل أربعين سه

“প্রতি ত্রিশটি গরুর জন্য পূর্ণ এক বৎসর বয়সের একটি নর বা মাদী বাচ্চা এবং প্রতি চল্লিশটির জন্য পূর্ণ দুই বৎসর বয়সের একটি নর বা মাদী বাচ্চা যাকাত হিসাবে প্রদেয় হইবে।”৪৪।

তাবীআহ (৭।;) বলা হয় সেইগো-শাবককে যাহা এক বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করিয়াছে। মুসিন্নাহ ( 2) বলা হয় সেই গো-শাবককে যাহা দুই বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করিয়াছে। ৫ যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে নর ও মাদী যে কোন ধরনের শাবক গ্রহণযোগ্য।

গরুর সংখ্যা চল্লিশের অধিক হইলে সেই অবস্থায় যাকাত প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে মতভেদ আছে। ইমাম মুহাম্মাদ (র) তাহার কিতাবুল জামে-এর যাকাত অধ্যায়ে বলিয়াছেন।

وما زاد على الأربعين ففي الزيادة بحساب ذلك –

“গরুর সংখ্যা চল্লিশের অধিক হইলে সেই অধিক সংখ্যকের যাকাত পূর্বোক্ত নিয়মে প্রদেয় হইবে।” তিনি এই কথার কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেন নাই।

সাদ ইবন আমর (র) ইমাম আবু হানীফা (র)-এর এই মত উল্লেখ করিয়াছেন যে, চল্লিশটি গরুর যাকাত বাবদ একটি মুসিন্নাহ প্রদানের পর উহার অতিরিক্ত সংখ্যার জন্য কোন যাকাত দিতে হইবে না। অতএব গরুর সংখ্যা ৬০-এ পৌছিলে যাকাত বাবদ দুইটি তাবীআহ প্রদান করিতে হইবে। ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ ও শাফিঈ (র)-এর মতও ইহাই। উপরোক্ত মতের সমর্থনে মহানবী (স)-এর নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করা হইয়াছে যাহা তিনি মুআয। (রা)-কে বলিয়াছিলেন?

لا تاخذ من أوقاص البقر شيئا.

অতিরিক্ত (চল্লিশ হইতে ষাট-এর মধ্যবর্তী) সংখ্যার জন্য যাকাত গ্রহণ

৫২২

করিও না।”

মুআয (রা)-কে “ওয়াকাস” (503;) শব্দের তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলেন, চল্লিশ ও ষাট-এর মধ্যবর্তী সংখ্যাগুলি। তাহাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, চল্লিশ ও ষাট-এর মধ্যবর্তী সংখ্যাগুলি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলিলেন, এইগুলির জন্য যাকাত প্রদান করিতে হইবে না।’

৭০ হইতে ১২০ সংখ্যক গরুর যাকাতের হার উপধারা (ক) (১) হইতে উপরাধা (ক) (৯)-এ উল্লেখিত হইয়াছে এবং উহার অতিরিক্ত সংখ্যক গরুর যাকাত উপধারা (ক) (১০)-এ উল্লেখিত হইয়াছে। ৮

মহিষের যাকাত গরুর যাকাতের অনুরূপ। ফকীহগণ গরু ও মহিষকে একই শ্রেণীভুক্ত করিয়াছেন, যেমন তাহারা ছাগল, ভেড়া ও মেষকে একই শ্রেণীভুক্ত গণ্য করিয়াছেন।

কোন ব্যক্তির নিকট ত্রিশটি গরু নাই, কিন্তু কিছু মহিষ আছে এবং তাহার গরু ও মহিষ একত্রে গণনা করিলে ত্রিশ সংখ্যা পূর্ণ হয়। এই অবস্থায় তাহার উপর যাকাত ধার্য হইবে। অর্থাৎ গরু ও মহিষ একত্রে যোগ করিয়া যাকাতের হিসাব করিতে হইবে। এই ক্ষেত্রেও স্মরণ রাখিতে হইবে যে, চাষাবাদ, পরিবহন, পরিবারের দুধ সরবরাহ ইত্যাদি প্রয়োজনে পোষা গরু-মহিষের উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

ধারা-৭৯৬

ছাগল-ভেড়ার যাকাত (ক) ছাগল-ভেড়ার নেসাব চল্লিশটি এবং নিম্নোক্ত পন্থায় উহার যাকাত ধার্য হইবে—(১) ৪০টি হইতে ১২০টি ছাগলের যাকাত একটি বকরী;

(২) ১২১টি হইতে ২০০টি ছাগলের যাকাত দুইটি বকরী; (৩) ২০১টি হইতে ৩৯৯টি ছাগলের যাকাত তিনটি বকরী; (৪) ৪০০টি হইতে ৪৯৯টি ছাগলের যাকাত চারটি বকরী;

1:ইসলামী আইন

৫২৩

(৫) ৫০০টি হইতে ৫৯৯টি ছাগলের যাকাত পাঁচটি বকরী; (৬) অতঃপর প্রতি ১০০টি ছাগলের যাকাত একটি বকরী;

(খ) ভেড়ার যাকাত ছাগলের যাকাতের নিয়মে প্রদেয় হইবে এবং পাকাতের ক্ষেত্রে ছাগল ও ভেড়াকে একই শ্রেণীভুক্ত গণ্য করা হইবে।

বিশ্লেষণ

ছাগল বা ভেড়ার সংখ্যা অথবা একত্রে ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৪০টির কম হইলে উহার জন্য যাকাত প্রদান করিতে হইবে না; কেবল চল্লিশ সংখ্যক হইলেই যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে। মহানবী (স) হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা)-কে যাকাত সম্পর্কে যে পত্র লিখাইয়া দিয়াছিলেন তাহা আবু বাকর (রা) আনাস (রা)-কে লিখাইয়া দেন। তাহাতে ছাগল-ভেড়ার যাকাত সম্পর্কে মহানবী (স)-এর নিম্নোক্ত নির্দেশ বিদ্যমান রহিয়াছে

و في أربعين من المشاة و في مائة و واحدة وعشرين شاتان و فى مائتين و واحدة ثلاث شاه إلى أربع مائة ففيها أربع شياه .

“চল্লিশটি ছাগলের যাকাত একটি বকরী। এক শত একুশটি ছাগলের যাকাত দুইটি বকরী। দুই শত একটি ছাগলের যাকাত তিনটি বকরী, চার শতে না পৌছা পর্যন্ত। অতএব চারশত ছাগলের যাকাত চারটি বকরী।”৪৯

‘গানাম’ (33) শব্দটি দ্বারা ছাগল, ভেড়া, মেষ ইত্যাদি পণ্ড বুঝায়। অতএব যাকাত প্রদানকালে ছাগল-ভেড়ার ভিন্ন হিসাব না করিয়া বরং এইগুলিকে একত্রে গণনা করিতে হইবে।

৪০০টি হইতে ৪৯৯টি পর্যন্ত যাকাতের হার অপরিবর্তিত থাকিবে। আবার ৫০০টি হইতে ৫৯৯টি পর্যন্ত যাকাতের হার অপরিবর্তিত থাকিবে। উহার অতিরিক্ত প্রতি ১০০টির জন্য একটি করিয়া বকরী প্রদেয় হইবে।৫০

৫২৪

ধারা-৭৯৭

ঘোড়ার যাকাত

(ক) পারিবারিক প্রয়োজনে, পরিবহনের জন্য অথবা সামরিক উদ্দেশ্যে প্রতিপালিত ঘোড়র উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

(খ) ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে প্রতিপালিত প্রতিটি ঘোড়ার মূল্য নির্ধারণ করিয়া প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা যাকাত প্রদেয় হইবে।

বিশ্লেষণ

ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রতিপালিত অথবা স্বাধীনভাবে বিচরণশীল ( L.) ঘোড়ার যাকাত প্রদান করিতে হইবে। প্রতিটি ঘোড়ার যাকাত বাবদ এক দীনার অথবা ঘোড়ার মূল্য নির্ধারণ করিয়া প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা প্রদান বাধ্যকর হইবে। হযরত জাবের (র)-র সূত্রে বর্ণিত হইয়াছে, মহানবী (স) বলিয়াছেনঃ।

في كل فرس سائة دينار و ليس في الرابطة

شیی –

“স্বাধীনভাবে বিচরণশীল প্রতিটি ঘোড়ার যাকাত এক দীনার এবং জিহাদের উদ্দেশ্যে প্রতিপালিত ঘোড়ার কোন যাকাত নাই।”

ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে, ঘোড়া যে কোন উদ্দেশ্যেই প্রতিপালিত হউক না কেন উহার কোন যাকাত নাই। ইমাম শাফিঈ (র)-ও এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন।৫২

গর্দভ ও খচ্চর স্বাধীনভাবে বিচরণশীল (1_5L) হইলেও উহার যাকাত ধার্য হইবে না। কারণ উহা স্বভাবত পরিবহনের জন্যই প্রতিপালন করা হয়। তবে উহা ব্যবসায়িক পণ্য হইলে উহার উপর বাণিজ্যিক যাকাত আরোপিত হইবে।

ধারা—৭৯৮ স্ত্রীর মুহর, খােরপোষ, খাজনা এবং যাকাত (ক) স্ত্রীর মুহর, তলবী হউক অথবা স্থগিত হউক, ঋণ হিসাবে গণ্য এবং

ধিবদ্ধ ইসলামী আইন

৫২৫

উহা যাকাতের প্রতিবন্ধক;

(খ) স্ত্রীর বকেয়া খােরপোষও, আদালত কর্তৃক অথবা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে উহার পরিমাণ পূর্বেই নির্ধারিত হইয়া থাকিলে, ঋণ হিসাবে গণ্য এবং উহাও যাকাতের প্রতিবন্ধক;

(গ) মুহরিম আত্মীয়ের খােরপোষও, আদালত কর্তৃক এক মাসের কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ প্রদত্ত হইয়া থাকিলে, ঋণ হিসাবে গণ্য এবং উহা যাকাতের প্রতিবন্ধক;

(ঘ) সরকারকে প্রদেয় বকেয়া খাজনাও ঋণ হিসাবে গণ্য এবং উহা যাকাতের প্রতিবন্ধক;

(ঙ) যেসব ঋণ মানুষের প্রাপ্য নহে, বরং আল্লাহর অধিকারের সহিত সম্পর্কিত, সেইসব ঋণ যাকাতের প্রতিবন্ধক নহে।

বিশ্লেষণ

হানাফী মাযহাবমতে স্ত্রীর প্রাপ্য মুহর স্বামীর জন্য ঋণস্বরূপ এবং তাহা তলবী (U০ ) অথবা বিলম্বে প্রদেয় (26) যাহাই হউক না কেন, যাকাতের প্রতিবন্ধক হইয়া দাঁড়ায়। অর্থাৎ যাকাত প্রদানের জন্য ঋণের হিসাব, করাকালে অনাদায়ী মুহরও ঋণের সহিত যুক্ত হইবে এবং মোট প্রদেয় ঋণ বাদ দেওয়ার পর নেসাব নির্ধারিত হইবে। কারণ স্ত্রী তাহার প্রাপ্য মোহর দাবি করিলে উহা পরিশোধ করিয়া দেওয়া স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। কোন কোন হানাফী ফকীহ বলিয়াছেন যে, বিলম্বে আদায়যোগ্য (১৫) মুহর যাকাতের প্রতিবন্ধক নহে। কোন কোন ফকীহ বলিয়াছেন যে, স্বামী মুহর পরিশোধের দৃঢ় সংকল্প করিলেই তাহা ঋণ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উহা যাকাতের প্রতিবন্ধক হইবে, অন্যথায় নহে।

অনুরূপভাবে স্ত্রীর বকেয়া খােরপোষও স্বামীর জন্য ঋণ হিসাবে গণ্য হইবে, যদি তাহা পূর্বেই আদালত কর্তৃক অথবা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত হইয়া থাকে এবং ইহাও নেসাব নির্ধারণের সময় ধর্তব্য হইবে। তবে খােরপোষ পূর্ব নির্ধারিত না হইলে তাহা ঋণ হিসাবে গণ্য হইবে ন।

৫২৬

অনুরূপভাবে কোন মুহরিম আত্মীয়ের জন্য আদালত কর্তৃক এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রদানযোগ্য খােরপোষও যাকাতদাতার জন্য ঋণ হিসাবে গণ্য হইবে এবং নেসাব নির্ধারণকালে তাহাও গণনায় ধর্তব্য হইবে। তবে এক মাসের অধিক সময়ের মধ্যে আদায়যোগ্য খােরপোষ ঋণ হিসাবে গণ্য হইবে না এবং তাহা অনাদায়ে রহিত হইয়া যাইবে। কারণ ইহা কেবল আত্মীয় সম্পর্কের কারণে আদালত কর্তৃক নির্ধারণের ফলে সাময়িকভাবে বাধ্যতামূলক হইয়াছিল। অন্যথায় এই জাতীয় খােরপোষের ভার বহন কোন ব্যক্তির জন্য বাধ্যকর নহে।

ফকীহগণ বলিয়াছেন যে, সরকারকে প্রদেয় বকেয়া খাজনাও ঋণস্বরূপ এবং যাকাত বাধ্যতামূলক হওয়ার অন্তরায়। সরকারের পাওনা খাজনা পরিশোধ করা খাজনাদাতার একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য। তাই উহাও যাকাতের নেসাব নির্ধারণের সময় মোট ঋণের সহিত যোগ হইবে এবং মোট যাকাতযোগ্য মাল হইতে বিয়োগ হইবে।

যেসব দায় মানুষের প্রাপ্য নহে, বরং আল্লাহর প্রাপ্য তাহা এক প্রকারের ঋণ হইলেও যাকাতের প্রতিবন্ধক নহে। যেমন রোযা ভঙ্গের কাফফারা, মানত হজ্জ ইত্যাদি। এইসব বিষয় আখেরাতের সহিত সম্পর্কিত, উহা পালন করিলে সওয়াব পাওয়া যাইবে এবং না করিলে গুনাহ হইবে। উহা পার্থিব বিধানের আওতায় পড়িবে না। ৫৪

ধারা-৭৯৯ হারাম পন্থায় অর্জিত মালের যাকাত হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের উপর যাকাত ধার্য হয় না।

বিশ্লেষণ

যেসব মাল হারাম পন্থায় উপার্জিত হইয়াছে, যেমন অপহরণ, চুরি, প্রতারণা, সূদ, ঘুষ ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জিত, তাহাতে যাকাত ধার্য হইবে না। কারণ উপরোক্ত বাতিল পন্থায় অন্যের মাল হস্তগত করা হইয়াছে, যাহা কুরআন মজীদে নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। ফকীহগণ বলিয়াছেন, খারাপ (হারাম) মাল নেসাব পরিমাণ হইলেও উহাতে যাকাত ধার্য হইবে না। কারণ প্রকৃত মালিকের বা তাহার উত্তরাধিকারীর সন্ধান পাওয়া গেলে উক্ত মাল তাহার নিকট ফেরত দিতে

৫২৭

হইবে। আর মালিকের সন্ধান না পাওয়া গেলে তাহা দরিদ্রদের মধ্যে বিলাইয়া দিতে হইবে।৫৫ মোটকথা হারাম মালের মালিক শরীআতের বিবেচনায় ধনী প্রমাণিত নহে, তাহা প্রচুর পরিমাণে হইলেও এবং দীর্ঘদিন ধরিয়া মালিকের নিকট থাকিলেও। ইমাম সারাখসী (র) বলিয়াছেন, যদি তাহা মালিককে ফিরাইয়া দেওয়া হয় তবে তাহার নিকট কিছুই থাকিবে না। ফলে সে দরিদ্র

ব্যক্তিতে পরিণত হইবে।৫৬

, ধারা-৮০০ ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত প্রদান ফরয ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত প্রদান প্রত্যেক বালেগ ও বুদ্ধিমান মুসলমানের উপর বাধ্যকর।

বিশ্লেষণ

ব্যবসায়ের দ্রব্যাদির যাকাত প্রদান ফরয (বাধ্যকর হওয়ার বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রায় সকল ইমাম একমত। মহান আল্লাহ বলেনঃ

يأيها الذين امنوا أنفقوا من طيبت ما کسبتم

و ما أخرجنالكم من الأرض –

“হে মুমিনগণ! তোমরা যাহা উপার্জন কর এবং আমি যাহা ভূমি হইতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করিয়া দেই তম্মধ্যে যাহা উৎকৃষ্ট তাহা ব্যয় কর” (সূরা বাকারা : ২৬৭)।

ইমাম আবূ বা আল-জাসসাস ও ইবনুল আরাবী (র) বলিয়াছেন যে, উপরোক্ত আয়াতে “তোমরা যাহা উপার্জন কর” দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে উপার্জন বুঝানো হইয়াছে। ইমাম বুখারী (র) তাহার সহীহ বুখারীর কিতাবুয যাকাত-এ “উপার্জন ও ব্যবসায়ের যাকাত” অনুচ্ছেদ দাঁড় করাইয়াছেন উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে। ইমাম তাবারী (র)-এর মতে উপরোক্ত আয়াতে বলা হইয়াছেঃ তোমরা তোমাদের চেষ্টা-সাধনায় যাহা উপার্জন কর- তাহা ব্যবসায় হউক, শিল্প হউক, স্বণ-রৌপ্য ভিত্তিক কারবার হউক- তাহা হইতে যাকাত

দাও।৫৭

৫২৮

হযরত সামুরা ইবন জুনদুব (রা) রাসূলুল্লাহ (স)-এর হাদীস উদ্ধৃত করিয়া বলেনঃ

أما بشقان رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يأمرنا أن نخرج الصدقة من الذي تع للبيع .

“আমরা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে যাহা কিছু প্রস্তুত করি তাহার যাকাত দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (স) আমাদেরকে আদেশ দিতেন।”৫৮

یا مقشر الجار ان البيع يحضره الفؤ والحلف

فشوبوه بالصدقة.

“হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। ব্যবসায়কার্যে অনর্থক কথা ও অপ্রয়োজনীয় শপথ করা হইয়া থাকে। অতএব তোমরা তাহা যাকাত প্রদান করিয়া পরিচ্ছন্ন করিয়া

নাও।”৫৯

রাসূলুল্লাহ (স)-এর সাহাবী, তাবিঈন ও ইমামগণের মতামত এই বিষয়ে ইজমার পর্যায়ে পৌছিয়াছে। উমার (রা)-র খেলাফত আমলে বায়তুল মাল-এর দায়িত্বে নিযুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, তাঁহার আমলে ব্যবসায়ের মাল হিসাব করা হইত-উপস্থিত, অনুপস্থিত সব। অতএব উপস্থিত মাল হইতে উভয় প্রকার মালের যাকাত গ্রহণ করা হইত। ইবনে উমার (রা) বলেন, কাপড়-চোপড় যাহার দ্বারা ব্যবসা করা উদ্দেশ্য হইবে তাহাতে যাকাত ধার্য হইবে। ইমাম বায়হাকী ও ইবন হাযম (র) একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করিয়াছেন, যাহাতে বলা হইয়াছে যে, দ্রব্যসামগ্রী ব্যবসায়ের জন্য হইলে তাহার যাকাত দিতে হইবে। ইবন আব্বাস (রা) হইতেও ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত আরোপিত হওয়ার কথা বর্ণিত হইয়াছে। ৬২

পরবর্তী কালের ফকীহগণ এই বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত অর্থাৎ ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত ধার্য হওয়ার বিষয়ে কোন মতভেদ নাই। ইমাম ইবনুল মুনযির (র) বলিয়াছেন, যেসব জিনিস দ্বারা ব্যবসা করা উদ্দেশ্য, উহার সব কিছুর উপর বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত ফরয হওয়া সম্পর্কে সমস্ত শরীআত অভিজ্ঞ লোক সম্পূর্ণ একমত। ব্যবসায়ের পণ্য সম্পর্কে আবু উবায়দ বলিয়াছেন, মুসলমানগণ এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত যে, তাহাতে যাকাত ফরয।

৫২৯

বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তির বিচারেও ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত ধার্য হওয়া অপরিহার্য। ব্যবসায়ের জন্য নিয়োজিত জিনিসপত্র প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই গৃহীত হয়। ফলে তাহা যাকাত ফরয হয় এমন অপরাপর তিনটি জিনিসের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ হইয়া যায়। তাহা হইতেছে। ক্ষেতের ফসল, গবাদিপশু, স্বর্ণ-রৌপ্য বা নগদ অর্থ। উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গৃহীত দ্রব্যাদি তাৎপর্যগতভাবে নগদ সম্পদ সমতুল্য। দিরহাম-দীনার বা সেইগুলির মূল্য- এই দুইয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নাই।

ধারা-৮০১

ব্যবসায়িক পণ্যের সংজ্ঞা ব্যবসায়িক অভিপ্রায়ে উৎপাদিত বা ক্রয়কৃত “মাল’কে “পণ্য” বলে।

বিশ্লেষণ

উৎপাদিত বা ক্রয়কৃত মাল দ্বারা ব্যবসা করার অভিপ্রায় (4 ) থাকিলে এবং তদনুযায়ী বাস্তবে কার্য সম্পাদন করিলে উক্ত মাল ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে গণ্য হইবে। অভিপ্রায় বাচনিকও হইতে পারে, যেমন চুক্তিপত্রে ব্যবসা করার কথা উল্লেখ করা হইয়াছে, অথবা কার্যকলাপের দ্বারাও প্রকাশ পাইতে পারে। ব্যক্তির অভিপ্রায় ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটিলেই কোন মাল ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে গণ্য হইবে, কেবল অভিপ্রায় যথেষ্ট নহে। কারণ অভিপ্রায়ের বাস্তব প্রতিফলন না হওয়া পর্যন্ত উহা ধর্তব্য নহে। এই পর্যায়ে মহানবী (স) বলিয়াছেনঃ।

ان الله عفائن أمتي ما تحدث به أنفسهم مالم يتكلموا به أو يفقوا ۔

“নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের মনে মনে বলা কথার জন্য দায়ী করেন না, যতক্ষণ তাহারা তাহা প্রকাশ না করে অথবা তদনুযায়ী কাজ না করে।”৬৪ অতএব পারিবারিক প্রয়োজন পূরণের অভিপ্রায়ে কিছু মাল ক্রয়ের পর তাহা দ্বারা ব্যবসা করার অভিপ্রায় করিলেই উহা ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে গণ্য হইবে না, যাবত না উহার সহিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম যুক্ত হয়। ৬৫

ধারা—৮০২ ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত ধার্য হওয়ার শর্ত ধারা (৭৭৯)-এ উল্লেখিত শর্তাবলী সাপেক্ষে ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত ধার্য হইবে।

বিশ্লেষণ

যেসব শর্ত সাপেক্ষে সাধারণ মাল তথা সোনা-রূপা ও নগদ অর্থের যাকাত প্রদান বাধ্যকর হয়, ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রেও সেইসব শর্ত প্রযোজ্য হইবে। যেমন ব্যবসায়ীকে বালেগ, বুদ্ধিমান ও স্বাধীন মুসলমান হইতে হইবে অর্থাৎ নাবালেগ বা অমুসলিম ব্যক্তির পণ্যের উপর যাকাত ধার্য হইবে না। পণ্যের উপর ব্যবসায়ীর পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকিতে হইবে, পণ্য এমন প্রকৃতির হইতে হইবে যাহার উপর যাকাত ধার্য হইতে পারে। যেমন সরকারী মাল বা সরকারের ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত ধার্য হয় না। অনুরূপভাবে মসজিদ, মাদরাসা বা জনকল্যাণমূলক কোন কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির দ্বারা ব্যবসা পরিচালিত হইলে উহার উপরও যাকাত ধার্য হয় না। পণ্য বা উহার মূল্য নেসাব পরিমাণ হইতে হইবে এবং উক্ত পণ্য পূর্ণ এক বৎসর ব্যবসায়ীর মালিকানায় থাকিতে হইবে। উক্ত নেসাব পরিমাণ পণ্য ব্যবসায়ীর মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হইতে হইবে এবং নেসাব নির্ধারণকালে হিসাবের আওতাভুক্ত মাল হইতে ঋণ বাবদ গৃহীত অর্থ বাদ যাইবে, কিন্তু ব্যবসায়ের স্থাবর সম্পত্তি সংযুক্ত ঋণ বিয়োগ হইবে না বা যাকাতের হিসাবে আসিবে না। অতএব অবশিষ্ট নেসাব পরিমাণ মালের উপর যথারীতি যাকাত ধার্য হইবে।

নেসাব সম্পর্কে এখানে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, উহা কি গোটা বৎসর বিদ্যমান থাকিতে হইবে, না বৎসরের শেষে বিদ্যমান থাকিলেই চলিবে, না

বৎসরের প্রারম্ভে ও সমাপ্তিতে বিদ্যমান থাকিলেই চলিবে? ইমাম আবু হানীফা, মুহাম্মাদ ও আবু ইউসুফ (র)-এর মতে বৎসরের প্রারম্ভে ও সমাপ্তিতে নেসাব বিদ্যমান থাকিলে এবং বৎসরের মাঝখানে কখনও বিদ্যমান না থাকিলেও পণ্যের উপর যাকাত ধার্য হইবে। বৎসরের প্রতিটি দিন নেসাব হিসাব করিয়া রাখা কঠিন বিধায় হানাফী মাযহাবে এই মত গৃহীত হইয়াছে। অবশ্য ইমাম মালেক ও শাফিঈ (র)-এর মতে বৎসরের সমাপ্তিতে নেসাব বিদ্যমান থাকাই যথেষ্ট, প্রারম্ভে বা মাঝখানে বিদ্যমান না থাকিলে তাহা যাকাতের অন্তরায় হইবে না।

৫৩১

ইমাম আহমাদ, সুফিয়ান সাওরী, ইসহাক ইবন রাহওয়ায়হ (র) প্রমুখ।

ফাহগণের মতে গোটা বৎসরই নেসাব বিদ্যমান থাকিতে হইবে। বৎসরের কোন এক পর্যায়ে নেসাব বিদ্যমান না থাকিলে পণ্যের উপর যাকাত ধার্য হইবে

ধারা-৮০৩

স্থাবর মালের যাকাত নাই। ব্যবসায়ের স্থাবর মাল, যথা : দালান-কোঠা, জমি, মেশিনারী ইত্যাদির উপর যাকাত ধার্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

ব্যবসায়ের যে মূলধনের যাকাত দিতে হইবে তাহা আবর্তনশীল মূলধন (Circulating capital)। ব্যবসায়ের দালান-কোঠা, দোকানপাট, ব্যবসায় কেন্দ্র স্থাপনের জমিজমা, যন্ত্রপাতি যাহা বিক্রয় করা হয় না এবং স্থানান্তর করাও হয় না বা করা যায় না, নেসাব নির্ধারণের সময় সেইগুলি হিসাবে ধরা হইবে না অর্থাৎ উক্ত মালের যাকাত দিতে হইবে না। এই পর্যায়ে ফকীহগণ আরও বলিয়াছেন যে, আসবাবপত্র, পণ্যদ্রব্য রাখার পাত্র, দাড়িপাল্লা ইত্যাদিরও যাকাত দিতে হইবে না। কেননা এই জিনিসগুলি থাকিয়া যায়, বিক্রয় করা হয়

। ফলে তাহা ব্যবসায়িক সরঞ্জামের মধ্যে গণ্য, পণ্যের মধ্যে নহে।”

ধারা—৮০৪ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ও যাকাত প্রদান (ক) প্রচলিত বাজারদরে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করিতে হইবে। (খ) যাকাতদাতা পণ্যের দ্বারা অথবা নগদ অর্থ দ্বারা যাকাত পরিশোধ করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

যাকাতদাতা অথবা সরকার নিয়োজিত যাকাত আদায়কারী ব্যবসায়িক পণ্যের দাম উহার ক্রয়মূল্যে না যাকাতের হিসাব করাকালে প্রচলিত বাজার দর অনুসারে

৫৩২.

নির্ধারণ করিবে? হানাফী মাযহাবসহ জমহুর ফিকহবিদগণের মতে যাকাত ফরয হওয়াকালে প্রচলিত বাজার দর অনুযায়ী পণ্যের মূল্য নিরূপণ করিতে হইবে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে যেভাবে মূল্য নিরূপণ করিলে গরীব-দুঃখীগণ লাভবান হইতে পারে তদনুযায়ী মূল্য হিসাব করিতে হইবে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে যাকাত প্রদানের উদ্দেশ্যে বৎসরশেষে হিসাব করার দিনের বাজারমূল্যে পণ্যের দাম নির্ধারণ করিতে হইবে। এই মতই যুক্তিসংগত, কারণ পণ্যের বাজারদর ক্রয়মূল্য অপেক্ষা কমিয়াও যাইতে পারে, আবার বাড়িয়াও যাইতে পারে।

ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে ব্যবসায়ী তাহার পণ্যের যাকাত সংশ্লিষ্ট পণ্য দ্বারাও পরিশোধ করিতে পারে, আবার নগদ অর্থ দ্বারাও পরিশোধ করিতে পারে। এই ব্যাপারে তাহার পূর্ণ স্বাধীনতা রহিয়াছে। ইমাম শাফিঈ (র)-এর একটি মতও তদ্রূপ। তাঁহার অপর মত অনুযায়ী নগদ অর্থেই পণ্যের যাকাত পরিশোধ করিতে হইবে।

ধারা-৮০৫ যাকাত বহির্ভূত মালেও যাকাত ধার্য হইতে পারে যেসব মালের উপর সাধারণত যাকাত ধার্য হয় না সেইগুলি ব্যবসায়ের পণ্য হইলে উহার উপর যাকাত ধার্য হইবে।

বিশ্লেষণ

যেসব জিনিসের উপর সাধারণত যাকাত ধার্য হয় না বা যেগুলিকে যাকাতের আওতা বহির্ভূত রাখা হইয়াছে, কোন ব্যক্তি যদি সেইগুলি লইয়া ব্যবসায় করে তবে উহার উপর যাকাত ধার্য হইবে। যেমন পাথর, হিরক, মনিমুক্তা, আসবাবপত্র, থালা-বাসান, কাঠ, বই-পুস্তক, যন্ত্রপাতি, যান-বাহন ইত্যাদি বহু প্রকারের জিনিস রহিয়াছে যাহার উপর যাকাত ধার্য হয় না। কিন্তু কোন ব্যক্তি ঐসব জিনিস লইয়া ব্যবসায় করিলে সেইগুলি ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে গণ্য। হইবে এবং উহার উপর যাকাত আরোপিত হইবে।

ধারা—৮০৬

ব্যবসায়িক পণ্যের নেসাব

(ক) ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্যের সমপরিমাণ হইলে উহার নেসাব পূর্ণ হইবে।

(খ) কোন ব্যক্তির ব্যবসায় বহির্ভূত মাল দ্বারা নেসাব পূর্ণ না হইলে এবং উহার সহিত ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য যোগ করিলে নেসাব পূর্ণ হইলে তাহার উপর যাকাত বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

ব্যবসায়িক পণ্যের নেসাব সোনা বা রূপার নেসাবের সম-পরিমাণ। অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের যে মূল্য, ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য সেই পরিমাণ হইলে উহাই ‘নেসাব’ হিসাবে গণ্য হইবে। অতএব প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা হিসাবে যাকাত প্রদান করিতে হইবে। মহানবী (স) বলেন :

هاتوا أربع محشور أموالكم.

“তোমরা তোমাদের মালের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত প্রদান কর।”

যেহেতু ব্যবসায়িক পণ্যও মাল হিসাবে গণ্য, তাই উহার যাকাতের পরিমাণও উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে নির্ধারিত করা হইয়াছে। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, যাকাতদাতা চাহিলে পণ্য দ্বারাও যাকাত পরিশোধ করিতে পারে অথবা নগদ অর্থেও পরিশোধ করিতে পারে। পণ্যের দ্বারা পরিশোধ করিলেও উহার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসাবে প্রদান করিতে

হইবে।৭১

ধারা-৮০৭ যাকাত প্রদানের পূর্বে মালিকানা হস্তান্তর যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর এবং তাহা পরিশোধ করার পূর্বে যাকাতদাতা তাহার মালের মাকিলানা বিক্রয়, হেৰা, ওয়াকফ, ওসিয়াত

৫৩৪

ইত্যাদি যে কোন পন্থায় হস্তান্তর করিতে পারে, কিন্তু তাহার উপর যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিবে।

বিশ্লেষণ

হানাফী মাযহাবমতে যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর তাহা পরিশোধ করার পূর্বে যাকাতদাতা যে কোন বৈধ পন্থায় তাহার যাকাতযোগ্য সমস্ত মালের মালিকানা হস্তান্তর করিতে পারে। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে যাকাতের সম-পরিমাণ মালের হস্তান্তর বৈধ নহে। যাকাতদাতা নেসাবের সম-পরিমাণ মালের বিনিময়ে মালিকানা হস্তান্তর করিলে উক্ত বিনিময়কৃত মালের উপর যাকাত ধার্য হইবে। সে যদি এমন মালের বিনিময়ে মালিকানা হস্তান্তর করে যাহার উপর সাধারণত যাকাত ধার্য হয় না, যেমন সাংসারিক প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের বিনিময়ে, তবে সেই ক্ষেত্রে সে যাকাতের সম-পরিমাণ মালের যামিন হিসাবে গণ্য হইবে অর্থাৎ এই অবস্থায়ও সে যাকাত প্রদানে বাধ্য

থাকিবে। ৭২

ধারা—৮০৮

মাল ধ্বংস হইয়া গেলে যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর—(ক) মাল ধ্বংস হইয়া গেলে যাকাত প্রদান করিতে হইবে না; তবে আংশিক ধ্বংস হইলে তদনুপাতে যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(খ) যাকাতদাতা স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে মাল ধ্বংস করিলে যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিবে।

বিশ্লেষণ

যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর এবং তাহা পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরিশোধ না করিলে এবং ইত্যবসরে মাল ধ্বংস হইয়া গেলে হানাফী

৫৩৫

মাযহাবমতে যাকাতদাতা যাকাতের দায় হইতে মুক্ত হইয়া যাইবে; কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে দায়মুক্ত হইতে পারিবে না, বরং উহা তাহার যিম্মায় অনাদায়ী ঋণ হিসাবে থাকিয়া যাইবে। অবশ্য সামর্থ্য লাভ করার পূর্বে মাল ধ্বংস হইয়া গেলে তাহার মতে যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিবে না। হানাফী মাযহাবের ফকীহগণ বলিয়াছেন, যে নেসাব পরিমাণ মালে যাকাত বাধ্যকর হইয়াছে সেই নেসাবই ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। সুতরাং এই অবস্থায় যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ নেসাব সংখ্যক গরুর যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর কয়েকটি গরু মারা গেল এবং নেসাবে ঘাটতি হইয়া গেল। এই অবস্থায় গরুর যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিবে না। যেমন যে জমির উপর শুফআর দাবি উত্থাপিত হইয়াছে তাহা নদীর ভাংগনে ধ্বংস হইয়া গেলে উক্ত দাবি রহিত হইয়া যায়। অবশ্য আংশিক মাল ধ্বংস হইলে এবং নেসাব অটুট থাকিলে অবশিষ্ট মালের যাকাত প্রদান করিতে হইবে। ৩।

তবে মালিক স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে মাল ধ্বংস করিলে তাহার যিম্মায় যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিবে। যেমন কোন ব্যক্তির গরুর যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর সে কয়েকটি গরুকে ঘাস-পানি খাইতে না দিয়ে মারিয়া ফেলিল, অথবা সে ইচ্ছাকৃতভাবে তাহার পণ্যের গুদামে আগুন ধরাইয়া দিল এবং ফলে উহা পুড়িয়া ছারখার হইয়া গেল। এই অবস্থায় মালিকের উপর যাকাত বাধ্যকর থাকিবে। * এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মাল ধ্বংস না করিয়া বৈধ পন্থায় হস্তান্তর করিলেও কোন কোন অবস্থায় তাহা ধ্বংসের বিধানের আওতায় পড়িতে পারে এবং মালিকের যিম্মায় যাকাত বাধ্যকর থাকিয়া যাইতে পারে। যেমন কোন ব্যক্তি যাকাত বাধ্যকর হওয়া মাল (ক) কোনরূপ বিনিময় ছাড়া হস্তান্তর করিল, যেমন হেবা করিল, ধনী ব্যক্তিকে দান-খয়রাত করিল, ওসিয়াত করিল, (খ) অথবা মালের এমন বিনিময় গ্রহণ করিল যাহা মূলত মাল নহে, যেমন যাকাতের মালের বিনিময়ে বিবাহ করিল, অথবা কতলে আম্‌দ-এর ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড হইতে রেহাই পাওয়ার জন্য সন্ধি করিল, অথবা খােলার বিনিময় হিসাবে প্রদান করিল, (গ) অথবা এমন বিনিময় গ্রহণ করিল যাহা মাল হইলেও যাকাত প্রদানযোগ্য মাল নহে, যেমন পারিবারিক প্রয়োজনীয় জিনিস গ্রহণ করিল, এই অবস্থায় মালিকের যিম্মায় যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকিয়া

যাইবে। ৭৫

৫৩৬

ধারা-৮০৯ যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর রহিত হওয়া যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর নিম্নোক্ত কারণে তাহা রহিত হইয়া যায় (ক) যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর নেসাবের বিলুপ্তি ঘটিলে;

অথবা

(খ) যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর যাকাতদাতা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করিলে;

অথবা (গ) যাকাত বাধ্যকর হওয়ার পর উহা পরিশোধ করার ওসিয়াত না করিয়া যাকাতদাতা মারা গেলে।

বিশ্লেষণ

যাকাত ফরয হওয়ার পর তিনটি কারণের যে কোন একটি কারণ বিদ্যমান পাওয়া গেলে উক্ত যাকাত প্রদান বাধ্যকর থাকে না। বৎসরশেষে যাকাত পরিশোধের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাহা পরিশোধ করার পূর্বে যাকাতদাতার অবহেলা বা ভূমিকা ছাড়াই নেসাব পরিমাণ মাল ধ্বংস হইয়া গেলে। এই বিষয়ে “মাল ধ্বংস হইয়া গেলে” (৮০৮) ধারার অধীনে বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে।

যাকাত প্রদান বাধ্যকর হওয়ার পর যাকাতদাতা মুরতাদ হইয়া গেলে অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করিলে যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা রহিত হইয়া যায়। পরে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করিলেও সংশ্লিষ্ট বৎসরের যাকাত প্রদান বাধ্যকর হয় না। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে পুনরায় ইসলামে ফিরিয়া আসিলে সংশ্লিষ্ট বৎসরের যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইবে। হানাফী ফকীহগণ তাহাদের মতের সপক্ষে মহানবী (স)-এর নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করেন?

سلام يجب ما قبله.

“ইসলাম গ্রহণ করিলে তৎপূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হইয়া যায়।” অতএব কোন ব্যক্তি মুরতাদ হইয়া গেলে তাহার উপর নামায পড়া, রোযা

নিশিন ইসলামী আইন

৫৩৭

শাখা, হজ্জ করা যেমন বাধ্যকর থাকে না, তদ্রূপ যাকাত প্রদানও বাধ্যকর থাকে না।

কাত ফরয হওয়ার পর তাহা পরিশোধ করার পূর্বে কোন ব্যক্তি মারা গেলে যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা রহিত হইয়া যায়। কারণ তাহার মৃত্যুর সংগে ংগে অন্য জীবিত ব্যক্তিরা তাহার পরিত্যক্ত মালের মালিক হইয়া যায়। আর

কাত মৃত ব্যক্তির এমন একটি ঋণ যাহা পরিশোধ করা ওয়ারিসদের জন্য বাধ্যকর নহে। অবশ্য যাকাতদাতা উহা পরিশোধের জন্য ওসিয়াত করিয়া গেলে ওয়ারিসগণ তাহা মৃতের এক-তৃতীয়াংশ মাল হইতে পরিশোধ করিতে বাধ্য। অবশ্য ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা রহিত হয় না, বরং মৃতের সমস্ত মাল হইতে ওয়ারিসগণ উহা পরিশোধ করিতে বাধ্য, সে ওসিয়াত না করিয়া থাকিলেও। ৬

ধারা—৮১০

যাকাত আদায়কারী কর্তৃপক্ষ সরকার বা তাহার প্রতিনিধি যাকাতদাতার নিকট হইতে যাকাত আদায় করিবেন।

বিশ্লেষণ

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা মহানবী (স)-কে সম্বােধন করিয়া বলিয়াছেনঃ

من أموالهم صدقه.

“তাহাদের মালসমূহ হইতে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ কর”- (সূরা তওবাঃ ১০৩)।

অনন্তর যাকাত ব্যয়ের খাত সম্পর্কিত আয়াতে বলা হইয়াছে।

انما الصدقت للفقراء والمسكين والغملین

.:.

“সাদাকা (যাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য…..” (সূরা তওবা ও ৬০)।

৫৩৮

প্রথমোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা মহানবী (স)-কে জনগণের নিকট হইতে যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়াছেন। ইহা হইতে জানা যায় যে, ইমামের (রাষ্ট্রপ্রধানের) জনগণের নিকট হইতে যাকাত আদায়ের অধিকার রহিয়াছে। শেষোক্ত আয়াতে যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারীদের কথা উল্লেখিত হইয়াছে এবং যাকাতে তাহাদের অংশ প্রাপ্তির স্বীকৃতি দেওয়া হইয়াছে। বুখারী, মুসলিম ও অপরাপর হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (স) মুআয ইবন জাবাল (রা)-কে ইয়ামনে পাঠানোর সময় বলিয়াছিলেন : তুমি তাহাদের (ইয়ামনবাসীদের) জানাইয়া দিবে যে, আল্লাহ তাআলা তাহাদের ধন-সম্পদে যাকাত ফরয করিয়াছেন, যাহা তাহাদের ধনী লোকদের নিকট হইতে আদায় করা হইবে, অতঃপর তাহাদের দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হইবে।

ইবন হাজার আল-আসকালানী (র) বলেন, উপরোক্ত হাদীস এই কথার দলীল যে, রাষ্ট্রপ্রধানই (সরকার) যাকাত সংগ্রহ ও তাহা ব্যয়-বণ্টনের জন্য দায়িত্বশীল, হয় তিনি নিজে এই কাজ করিবেন অথবা তাহার প্রতিনিধি করিবে। আর যেই লোক তাহা দিতে অস্বীকার করিবে তাহার নিকট হইতে উহা বলপ্রয়োগে আদায় করা হইবে। [ সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রা (রা)-র সূত্রে বর্ণিত আছে যে, উমার ফারূক (রা) যাকাত আদায়ের জন্য লোক পাঠাইয়াছেন। ৯ ঐ দুই গ্রন্থে আরও উল্লেখিত হইয়াছে যে, আযদ গোত্রের ইবনুল লুতবিয়্যাকে যাকাত বিভাগের কর্মচারী নিযুক্ত করা হইয়াছিল। ৮° উক্ত গ্রন্থদ্বয়ে আরও উল্লেখিত হইয়াছে যে, উমার (রা) ইন সাদীকে যাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। আবু দাউদে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (স) আবু মাসউদ (রা)-কে যাকাত সংগ্রহকারীরূপে নিযুক্ত করিয়া পাঠাইয়াছিলেন।৮২ উবাই ইবন কাব (রা) বলেন, মহানবী (স) আমাকে যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত করিয়া পাঠাইয়াছিলেন। সরকারের যাকাত প্রদানের দাবি করার অধিকার না থাকিলে আয়াতে যাকাত বিভাগে কর্মরত কর্মচারীদের উল্লেখ করা অর্থহীন হইয়া যায়।

অনন্তর মহানবী (স) যাকাত আদায় করার জন্য আরব দেশের বিভিন্ন গোত্র ও জনপদে সরকারী কর্মচারী নিয়োগ করিয়াছেন। তাহার পরে খােলাফায়ে রাশেদীনও যাকাত আদায়ের এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার “যাকাত ফান্ড” নামে একটি বিভাগ চালু

.৫৩৯

করিয়াছেন। কোন কোন লোক সন্দেহ পোষণ করেন যে, উক্ত ফান্ডে যাকাতের অর্থ জমা দিলে যাকাত প্রদানের দায় হইতে মুক্ত হওয়া যাইবে কি না? এই ফান্ডে সঞ্চিত অর্থ যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহেই খরচ করা হইয়া থাকে। অনন্তর ফকীহ আবু জাফর আল-হিনদাওয়ানী (র) বলেনঃ সরকার যাকাতের অর্থ উহার নির্দিষ্ট খাতসমূহে ব্যয় না করিলেও যাকাতদাতাগণ দায়মুক্ত হইয়া যাইবে। কারণ যাকাতদাতাহাদের নিকট হইতে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব সরকারের। সরকার কোন ব্যক্তির নিকট হইতে উহা আদায় করিলে সে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে। এখন সরকার যদি যাকাতের অর্থ উহার নির্দিষ্ট খাতসমূহে ব্যয় না করে, তবে উহার পরিণতি সরকারের উপরই বর্তাইবে।

ধারা—৮১১ যাকাত আদায়ের অধিকার কখন সৃষ্টি হয়

তিনটি অবস্থা বিদ্যমান থাকিলে সরকার যাকাতদাতাগণের নিকট হইতে যাকাত আদায় করিতে পারিবে— (ক) রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্তৃত্ব ও নাগরিকগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষমতা বহাল থাকিলে;

(খ) যাকাতদাতার উপর যাকাত প্রদান বাধ্যকর হইলে; (গ) যে মালের উপর যাকাত ধার্য হইবে সেই মাল বিদ্যমান থাকিলে এবং মালিক বা তাহার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকিলে।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্তৃত্ব বহাল না থাকিলে এবং তিনি নাগরিকগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম না হইলে তাহার যাকাত আদায়ের অধিকার খর্ব হইয়া যায়। যেমন দেশের কোন এলাকা বা গোটা দেশের উপর বিদ্রোহীরা কর্তৃত্ব লাভের পর যাকাতদাতাহাদের নিকট হইতে যাকাত ও অন্যান্য কর আদায় করিয়া নিল। অতঃপর বিদ্রোহীদের পরাভূত করিয়া বৈধ সরকার ক্ষমতায় আসিল। এই অবস্থায় সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান নাগরিকদের নিকট হইতে পুনরায় যাকাত এবং খাজনা আদায় করিতে পারিবেন না। কারণ যাকাত ও অন্যান্য কর অন্যান্য খাতসহ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হেফাজত করার জন্য ব্যয় করা হইয়া থাকে। বিদ্রোহীগণও ক্ষমতা দখল করিলে যাকাত ও

৫৪০

অন্যান্য কর উক্ত উদ্দেশ্যেই ব্যয় করে।

দ্বিতীয়ত, ধন-সম্পদের মালিকের উপর যাকাত প্রদান বাধ্যকর না হওয়া পর্যন্ত উহা আদায় করার অধিকার জন্মায় না। কারণ বৎসরের শেষ প্রান্তেই জানা যায় যে, কোন ব্যক্তির যাকাতযোগ্য মালের পরিমাণ কত এবং প্রদেয় যাকাতের পরিমাণই বা কত। অবশ্য যাকাতদাতা সম্মতি প্রদান করিলে অগ্রিম যাকাত আদায় করা যাইতে পারে।

তৃতীয়ত, মালিকের বা তাহার প্রতিনিধির উপস্থিতি এবং মালের বিদ্যমানতা যাকাত আদায়ের অধিকার সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম শর্ত। মালিক বিদ্যমান থাকিলেই উহার হেফাজতের দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। তাহা ছাড়া মালিক বা তাহার প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে তাহার মালে, যাকাত আদায় করা যাইবে না। কারণ এমনও হইতে পারে যে, সে তাহার যাকাত অগ্রিম পরিশোধ করিয়া দিয়াছে, অথবা এমন অবস্থা বিদ্যমান আছে যাহার ফলে তাহার উপর যাকাত ফরয হয় নাই এবং সরকারী প্রতিনিধি তাহা জ্ঞাত নহে।

ধারা-৮১২

যাকাত বাবদ প্রদত্ত মালের মান। (ক) যাকাত বাবদ প্রদত্ত মালের আর্থিক মূল্য থাকিতে হইবে;

(খ) গৃহপালিত পশুর যাকাত সংশ্লিষ্ট পশুর দ্বারা প্রদান করা হইলে উহা মধ্যম মানের হইতে হইবে; এবং অর্থের দ্বারা আদায় করিলে উহা মধ্যম মানের পশুর মূল্যের সম-পরিমাণ হইতে হইবে;

(গ) পণ্যের যাকাত অর্থের মাধ্যমে পরিশোধ করার ক্ষেত্রে যাকাত বাবদ যে পরিমাণ পণ্য প্রদান বাধ্যকর হইয়াছে, প্রদত্ত অর্থ উক্ত পরিমাণ পণ্যের মূল্যের সমপরিমাণ হইতে হইবে।

(ঘ) কোন মালের যাকাত অন্য মাল দ্বারা প্রদান করার ক্ষেত্রে যাকাত বাবদ সংশ্লিষ্ট মালের যে পরিমাণ প্রদান বাধ্যকর হয় প্রদত্ত মালের মূল্য সেই পরিমাণ মালের মূল্যের সম-পরিমাণ হইতে হইবে।

৫৪১

বিশ্লেষণ

যাকাত বাবদ প্রদত্ত মালের আর্থিক মূল্য থাকিতে হইবে, তাহা যেই মালের যাকাত প্রদান করা হইতেছে সেই মালের শ্রেণীভুক্ত হউক বা না হউক। এই ক্ষেত্রে ইসলামী আইনের মূলনীতি এই যে, “যে মাল ঐচ্ছিক দান-খয়রাত হিসাবে প্রদান করা বৈধ, তাহা যাকাত বাবদ প্রদান করাও বৈধ।” অতএব যে মাল ঐচ্ছিক দান-খয়রাত হিসাবে প্রদান করা বৈধ নহে তাহা যাকাত বাবদ প্রদান করাও বৈধ নহে।

গৃহপালিত পশুর যাকাত সংশ্লিষ্ট পশু দ্বারা প্রদান করিলে উহা মধ্যম মানের হইতে হইবে। নিকৃষ্ট মানের পণ্ড দেওয়া যেমন বৈধ নহে, তেমন উন্নত মানের পশু নেওয়াও বৈধ নহে। কেহ নিকৃষ্ট পশু প্রদান করিলে উহার মূল্যের সম-পরিমাণ যাকাত আদায় হইবে এবং অবশিষ্ট যাকাত অনাদায়ীরূপে যাকাতদাতার উপর দায় হিসাবে থাকিয়া যাইবে। পশুর যাকাত নগদ মূল্যে আদায় করিলে উহার পরিমাণ মধ্যম মানের পশুর মূল্যের সমপরিমাণ হইতে হইবে।

পণ্যের যাকাত নগদ অর্থেও প্রদান করা যায়। এই অবস্থায় যাকাত বাবদ যে পরিমাণ পণ্য প্রদান বাধ্যকর হইবে, নগদ অর্থ উহার মূল্যের সমপরিমাণ হইতে হইবে। নগদ অর্থের পরিমাণ উহার মূল্যের তুলনায় কম হইলে, অবশিষ্ট যাকাত অনাদায়ী থাকিয়া যাইবে। যেমন যাকাত বাবদ এক হাজার সংখ্যক সাবান প্রদান বাধ্যকর হইয়াছে। উহার বাজার মূল্য ছয় হাজার টাকা। কিন্তু যাকাত বাবদ পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করা হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা যাকাত অনাদায়ী থাকিয়া গেল, যাহা পরিশোধ করা যাকাতদাতার জন্য বাধ্যকর।

কোন মালের যাকাত অন্য মালের দ্বারা প্রদান করা হইল। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মালের যেই পরিমাণ যাকাত বাবদ প্রদান বাধ্যকর হইয়াছে, যাকাত বাবদ প্রদত্ত মালের মূল্য উক্ত পরিমাণ মালের মূল্যের সমপরিমাণ হইতে হইবে। যেমন কোন ব্যক্তির উপর স্বর্ণের যাকাত বাবদ পাচ তোলা স্বর্ণ প্রদান বাধ্যকর হইয়াছে। উক্ত ব্যক্তি স্বর্ণ প্রদান করার পরিবর্তে রৌপ্য প্রদান করিল। এই অবস্থায় প্রদত্ত

৫৪২

.

রৌপ্যের মূল্যের পরিমাণ পাচ তোলা স্বর্ণের মূল্যের সমপরিমাণ হইতে

হইবে।৮৯

ধার—৮১৩

যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ যাকাত নিয়োক্ত আটটি খাতে অথবা উহার এক বা একাধিক খাতে ব্যয় করিতে হইবে—(১) ফকীরদের জন্য;

(২) মিসকীনদের জন্য; (৩) যাকাত বিভাগের কর্মচারীদের জন্য; (৪) মুআল্লাফাতুল কুল (যাহাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য)-এর জন্য; (৫) দাসমুক্তির জন্য; (৬) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য; (৭) আল্লাহর পথে; (৮) মুসাফিরের জন্য।

বিশ্লেষণ

যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

اما الصدقت للفقراء والمسكين والعملين عليها والمؤلفة قلوبهم في الرقاب والغارمين و فی سبیل الله وابن السبيل ط فريضة من

.:.:.

“যাকাত তো কেবল ফকীর, মিসকীন ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাহাদের চিত্ত আকর্ষণ উদ্দেশ্য তাহাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের জন্য, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। ইহা আল্লাহ্র নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”- (সূরা তওবা ও ৬০)।

উপরোক্ত আয়াত যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে।

৫৪৩

এই খাতের সংখ্যা হইল আট। সেইগুলির মধ্যে প্রথম দুইটি খাত হইল ফকীর (নিঃস্ব) ও মিসকীন (অভাবগ্রস্ত)। হাসান বসরী (র)-র মতে যে ব্যক্তি অপরের নিকট যাঞ্চা করে না তাহাকে ফকীর বলে এবং যে ব্যক্তি অপরের নিকট যাঞ্জা করে তাহাকে মিসকীন বলে। যুহরী (র)-ও অনুরূপ কথা বলিয়াছেন। আবু ইউসুফ (র) ইমাম আবু হানীফা (র)-এর নিকট হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। ইবন আব্বাস (রা) হইতেও একই মত ব্যক্ত হইয়াছে। অতএব হানাফী মতে “ফকীর” বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে নিজের জীবন-জীবিকার ব্যাপারে অপর লোকদের মুখাপেক্ষী। যে কোন ধরনের অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্য ‘ফকীর ব্যাপক অর্থবােধক শব্দ, তাহা দৈহিক ত্রুটি, কিংবা বার্ধক্যের কারণে স্থায়ী সাহায্যের মুখাপেক্ষী হউক কিংবা কোন কারণে সাময়িকভাবে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হইয়া পড়ুক এবং কোনরূপ, সাহায্য-সহায়তা পাইলে স্বাবলম্বী হইতে পারে। ইয়াতীম শিশু, বিধবা নারী, বেকার লোেক এবং সাময়িক বিপদে পড়িয়া অভাবগ্রস্ত হওয়া লোক এই পর্যায়ে

পড়ে।৯০

মিসকীন অর্থাৎ মাসকানাত শব্দের মধ্যে অক্ষমতা, ক্লান্তি, শ্রান্তি, বিপদ-দুর্বিপাক, সহায়-সম্বলহীনতা ও লাঞ্ছনার অর্থ বিদ্যমান রহিয়াছে। এই হিসাবে মাসাকীন বলিতে সেইসব লোককে বুঝায় যাহারা সাধারণ অভাবগ্রস্ত লোকদের অপেক্ষা অধিক দুর্দশাগ্রস্ত। মহানবী (স) বলেনঃ

হানবী (স) বলেনঃ

ليس المسكين الذي يطوف على الثاس تره الثقة والأقمتان و الثمرة و التمرتان ولكن المسكين الذي لا يجغي فنيه ولا يفطن له فيتصدق عليه ولا يقوم فيستال الاس۔

“যেই ব্যক্তি লোকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া ভিক্ষা চায় যাহাকে তুমি এক বা দুই গ্রাস খাবার অথবা একটি বা দুইটি খজুর দিয়া বিদায় কর-সে প্রকৃত মিসকীন নহে। বরং মিসকীন সেই ব্যক্তি যে স্বাবলম্বী হওয়ার মত সম্পদ পায়

, লোকেরাও তাহাকে (অভাবগ্রস্ত হিসাবে) চিনিতে না পারার কারণে সাহায্য-সহায়তা করে না এবং সেও (দারিদ্র্য পীড়িত হইয়া) লোকদের নিকট ভিক্ষা চাহিতেও দাড়ায় না।”৯১

৫৪৪

এক কথায় মিসকীন বলিতে দরিদ্র ভদ্রলোককে বুঝায়, যাহারা আত্মসম্মানবোেধ তাহাকে অপরের নিকট হস্ত প্রসারিত করিতে দেয় না এবং তাহার বাহ্যিক অবস্থা দেখিয়া তাহাকে অভাবগ্রস্ত মনে হয় না।

যাকাত বিভাগের কর্মচারী বলিতে সরকার যেসব লোককে যাকাত আদায় করার জন্য নিয়োগ করিয়াছেন তাহাদেরকে বুঝায়। হানাফী মাযহাবমতে, তাহাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পূরণের সম-পরিমাণ যাকাত প্রদান করা হইবে। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে, সে যে পরিমাণ সংগ্রহ করিবে উহার আট ভাগের এক ভাগ পাইবে। হানাফীগণ আরও বলিয়াছেন যে, যাকাতদাতাগণ স্ব-উদ্যোগে নিজ নিজ যাকাত সরকারী তহবিলে জমা দিয়া গেলে তাহা হইতে উক্ত বিভাগের কর্মচারীগণকে দেওয়া যাইবে না। কর্মচারী ধনী হইলেও যাকাতের অংশ পাইবে। ইহা তাহার জন্য যাকাত নহে, বরং বেতনতুল্য।

চতুর্থ খাত হইল মুআল্লাফাতুল কুলুব অর্থাৎ যাহাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য। রাসূলুল্লাহ (স) তাহার যুগে নেতৃস্থানীয় কুরায়শ কাফেরদের মন জয় করার জন্য যাকাত হইতে দান করিতেন। তাহাদের মধ্যে কেহ প্রকৃতই ইসলাম কবুল করেন, কেহ শুধু বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাহারা ছিল মূলত মোনাফিক। হানাফী ফকীহগণের কারো কারো মতে, রাসূলুল্লাহ (স)-এর ইন্তিকালের পর হইতে চিরকালের জন্য এই খাতে যাকাত ব্যয় রহিত হইয়া গিয়াছে।

ইমাম আহমাদ (র) ও তাহার সংগীগণের মতে এই খাতটি যথাপূর্ব কার্যকর আছে, তাহা বাতিল বা রহিত হয় নাই এবং তাহাতে কোনরূপ পরিবর্তনও আনা হয় নাই। ইমাম যুহরী ও ইমাম আবু জাফর আল-বাকেরও এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন। ৯৪ জাফারী (ইসনা আশারিয়া) ও যায়দিয়া মাযহাবেরও এই মত। ইমাম কুরতুবী মালিকী মাযহাবের কাযী আবদুল ওয়াহ্হাবের এই মত উদ্ধৃত করিয়াছেন যে, “কোন সময় প্রয়োজন দেখা দিলে তোমরা তাহা দাও”। কাযী ইবনুল আরাবী বলেন, এই খাতে প্রয়োজন দেখা দিলে যাকাত ব্যয় করা যাইবে। ৯৫

ইমাম নব্বী (র) ইমাম শাফিঈ (র)-এর মত উদ্ধৃত করিয়া বলিয়াছেন যে, কাফেরদের মন জয়ের জন্য অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হইলে তাহা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ

৫৪৫

হইতে ব্যয় করা হইবে, যাকাত হইতে নহে। কারণ যাকাতে কাফেরদের অধিকার স্বীকার করা হয় নাই।

আধুনিক কালের একদল হানাফী ও অন্যান্য মাযহাবের ফকীহ হাম্বলী মাযহাবের মতের সমর্থন করিয়া বলিয়াছেন যে, সমকালীন মুসলমানগণ উক্ত খাতে যাকাত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে বলিয়া মনে করিলে তাহা করিতে পারিবে। কারণ কখনও মুসলমানদের দুর্দিন আসিতে পারে এবং তখন এই খাতে যাকাত ব্যয়ের প্রয়োজন হইতে পারে। মহানবী (স) বলিয়াছেনঃ

سلام عريب سيعود كما بدأ –

“ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় শুরু হইয়াছিল, আবার অপরিচিত অবস্থায় পতিত হইবে-যেমন শুরু হইয়াছিল।”

যাকাত ব্যয়ের কাজটি সংযুক্ত করা হইয়াছে মুআল্লাফাতুল কুলুব-এর সহিত। এখানে যাকাত ব্যয়ের কারণটি (1) হইল মন জয় করা”। এই কারণটি যখন পাওয়া যাইবে- তাহা হইল “মন জয় করার মত লোক বিদ্যমান থাকা”-তখন অবশ্যই তাহাদেরকে উহা দেওয়া হইবে, আর যদি না পাওয়া যায় তবে দেওয়া হইবে না। যেমন দাস মুক্তির জন্য যাকাত ব্যয়ের কথা বলা হইয়াছে। এখন সমাজে দাস না থাকিলে ঐ খাতে যাকাত ব্যয়ও মুলতবী থাকিবে। অনুরূপভাবে সরকার যাকাত আদায় না করিলে যাকাত বিভাগের কর্মচারীর খাতটিও মুলতবী হইয়া যাইবে। আবার সরকারী তত্ত্বাবধানে যাকাত সংগ্রহের ব্যবস্থা হইলে তখন কর্মচারীগণকেও যাকাত হইতে প্রদান করা

হইবে। ৯৮

পঞ্চম খাত হইল দাসমুক্তি। বর্তমান যুগে এই খাতে যাকাত ব্যয়ের সুযোগ নাই। ষষ্ঠ খাত হইল ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করা। গারিম অর্থাৎ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি বলিতে এমন লোককে বুঝায় যাহার দেনার পরিমাণ তাহার মালিকানাধীন মালের অধিক অথবা সমান অথবা তাহার নিকট যে পরিমাণ মাল আছে তাহা হইতে ঋণ পরিশোধ করিলে নেসাব পরিমাণ মাল তাহার মালিকানায় থাকে না। এইরূপ ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করিয়া ঋণমুক্ত করা সরকার ও যাকাতদাতার কতর। হাল যামানায় এই খাত, আমাদের ধারণায়, সাবধানতার সহিত প্রযোজ্য। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীগণ

৫৪৬

ব্যাংক বা এই জাতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে ঋণ গ্রহণ করিয়া শিল্প স্থাপন ও ব্যবসায় পরিচালনা করেন। তাহাদের নিজস্ব মূলধন এবং সম্পদ অনেক সময় ঋণের সহিত তুলনায় কম হইয়া থাকে। ইহাদের জন্য এই খাত প্রযোজ্য নহে।

সপ্তম খাত আল্লাহ্র পথে। “আল্লাহর পথে” কথাটি সাধারণ অর্থ জ্ঞাপক। যেসব কাজের দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তোষ লাভ করা যায় সেইসব কাজই ইহার অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য ও সৎপথে চেষ্টা-সাধনায় রত রহিয়াছে, সে দরিদ্র হইলে এই খাত হইতে যাকাত গ্রহণ করিতে পারে। ইমাম আবু ইউসুফ (র) বলেন, ইহার দ্বারা যুদ্ধরত দরিদ্র মুসলিম সৈনিকগণকে বুঝানো হইয়াছে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে ইহার দ্বারা হজ্জযাত্রীকে বুঝানো হইয়াছে, পথিমধ্যে যাহার রসদপত্র ও পথখরচার অর্থ শেষ হইয়া গিয়াছে। হানাফী আলেমগণ “আল্লাহ্র পথে” বাক্যাংশের ব্যাখ্যায় মতভেদ করিলেও একটি বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত যে, এই খাত হইতে যাকাত পাইতে হইলে তাহাকে গরীব হইতে হইবে- সে যোদ্ধাই হউক, হাজ্জীই হউক, শিক্ষার্থীই হউক অথবা জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিই হউক। হানাফী মাযহাবের আরেকটি লক্ষণীয় সিদ্ধান্ত এই যে, যাকাত “ব্যক্তি মালিকানায়” অর্পণ করিতে হইবে। তাই “আল্লাহর পথে” কথাটি ব্যাপক অর্থবােধক হইলেও যাকাতের অর্থ জনকল্যাণমূলক কোন প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করা যাইবে না। যাকাত গ্রহণকারীকে ব্যক্তি এবং গরীব হইতে হইবে। ১০০

মালিকী মাযহাবমতে “আল্লাহ্র পথে” অর্থ জিহাদ ও তৎসংশ্লিষ্ট কার্যাবলী। মুজাহিদ ধনী হইলেও তাহার যাকাত গ্রহণ বৈধ। এমনকি শত্রুপক্ষকে যুদ্ধের উদ্যোগ হইতে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে নিরস্ত্র করা সম্ভব হইলে সেই উদ্দেশ্যেও যাকাত ব্যয় করা যাইবে। যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধযান, সেনাবাহিনীর যানবাহন ইত্যাদি যুদ্ধ সংক্রান্ত যাবতীয় জিনিস যাকাতের অর্থ দ্বারা ক্রয় করা বৈধ।”

শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে এই খাত হইতে সৈনিকদেরকে যাকাত দেওয়া যাইবে, তবে শাফিঈ মতে যাহারা বেতনভুক সৈনিক নহে, যাহারা স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে যুদ্ধে যোগদান করে এবং যুদ্ধশেষে নিজ নিজ পেশায় আত্মনিয়োগ করে, তাহারা ধনী হইলেও এই খাত হইতে যাকাত পাওয়ার

৫৪৭

অধিকারী।১০২

জনকল্যাণমূলক কাজে যাকাত ব্যয় করা যাইবে না। যেসব কাজ বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ধনী-গরীব সকলে সমভাবে উপকৃত হয় সেইরূপ খাতসমূহে যাকাত ব্যয় করা যাইবে না। যেমন মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পানির কূপ, রাস্তাঘাট, পুল, আশ্রয়কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণের জন্য যাকাত ব্যয় করা যাইবে না। এসব কাজ যাকাত ব্যতীত অন্যান্য খাতের দানের সাহায্যে করা যাইতে পারে। কারণ যাকাত ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করিতে হইবে। এমনকি কোন মৃত ব্যক্তির দেনা পরিশোধে যাকাত ব্যয় করা হইলে তাহাও বৈধ হইবে না। অনুরূপভাবে যাকাত দ্বারা জীবিত ব্যক্তির ঋণ তাহার অনুমতি ব্যতীত পরিশোধ করিলেও যাকাত অনাদায়ী রহিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে (বাদাই, ২খ, পৃ. ৩৯)।

অষ্টম খাত হইল মুসাফির বা পরিব্রাজক। অর্থাৎ সফরকালে পথিমধ্যে পরিব্রাজকের পাথেয় শেষ হইয়া গেলে এবং তাহা সংগ্রহের কোন উপায় না থাকিলে তাহাকেও যাকাত প্রদান করা যাইবে, আবাসে সে স্বচ্ছল হইলেও। কারণ সে এখন বিদেশ-বিভূইয়ে অভাবে পতিত হইয়াছে। এই পর্যায়ে মহানবী (স) বলেনঃ

تحل الصدقة لفني الأ في سبيل الله و ابن

السبيل –

“ধনী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নহে, তবে সৈনিক ও পরিব্রাজকের

জন্য বৈধ।”১০৩

ধারা-৮১৪

যাকাত পাওয়ার অযোগ্য ব্যক্তিগণ (ক) ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাইবে না এবং তাহার নাবালেগ সন্তানগণও ধনী হিসাবে গণ্য হইবে।

(খ) উপার্জনে সক্ষম সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যক্তিকেও যাকাত দেওয়া যাইবে না; তবে হানাফী মাযহাবমতে তাহাকে যাকাত প্রদান করা যাইবে।

(গ) অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাইবে না।

৫৪৮

(ঘ) পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা ও স্বামী-স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া যাইবে না। (ঙ) কুরাইশদের হাশেম বংশীয়দেরকেও যাকাত দেওয়া যাইবে না।

বিশ্লেষণ

মহানবী (স) বলিয়াছেন, ধনী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নহে (i i J . ১ )।১০৪ ইহা ব্যতীত হযরত মুআয (রা) কে’ইয়ামনে প্রেরণ সম্পর্কিত হাদীসে বলা হইয়াছে যে, যাকাত ধনীদের নিকট হইতে আদায় করিয়া গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হইবে।১০৫ ধনী ব্যক্তির নাবালেগ পুত্র-কন্যাকেও যাকাত প্রদান বৈধ নহে। কারণ মানুষ কখনও নিজেই ধনী হয় এবং কখনও অপর ব্যক্তির ধনী হওয়ার কারণে ধনী গণ্য হয়। ধনী ব্যক্তির গরীব পুত্র-কন্যা তাহার কারণে ধনী গণ্য হইবে এবং তাহাদেরকে যাকাত প্রদান বৈধ নহে। তবে ধনী ব্যক্তির নিঃস্ব ও উপার্জনে অক্ষম বালেগ পুত্র ও স্বামীহীনা কন্যাকে যাকাত প্রদান বৈধ। কারণ বালেগ পুত্র-কন্যার ব্যয়ভার বহনে পিতা বাধ্য নহে।১০৬ ইমাম আবু হানীফা, মুহাম্মাদ এবং আবু ইউসুফ (র)-এর একটি মত অনুযায়ী ধনী ব্যক্তির গরীব স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া জায়েয যদিও স্বামী তাহার খােরপোষের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে। কারণ শুধু খােরপোষ প্রাপ্তির দ্বারা কোন ব্যক্তিকে ধনী গণ্য করা যায় না। ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর অপর মত অনুযায়ী আদালত কর্তৃক স্ত্রীর খােরপোষ নির্ধারিত

হইয়া থাকিলে কেবল সেই অবস্থায় তাহার যাকাত গ্রহণ বৈধ। অনুরূপভাবে ধনী পুত্রের গরীব পিতার জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ, যদিও পুত্র পিতার খােরপোষ বহন করিতে বাধ্য। কারণ শুধু খােরপোষ কোন ব্যক্তিকে ধনী করে না।

হানাফী মাযহাবমতে সুস্থ-সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী দরিদ্র ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান বৈধ। হানাফীগণের মূলনীতি এইঃ “নেসাব পরিমাণ মালের অনুপস্থিতি যাকাত পাওয়ার অধিকার সৃষ্টি করে”। অতএব নেসাবের কম পরিমাণ মালের অধিকারী ব্যক্তি ধনী নহে, বরং ফকীর। আর ফকীরের জন্য তো যাকাতে অংশ রাখা হইয়াছে। হানাফীগণ সালমান ফারসী (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস পেশ করেন। তিনি বলেন :

০৭

৫৪১

حمل اللى رسول الله صلى الله عليه و سلم صدقة فقال لأصحابوا ولم يأكل ۔

“রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট যাকাতের মাল উপস্থিত করা হইলে তিনি তাঁহার সাহাবীগণকে বলিলেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খাইলেন না।”

অতএব ইহা অসম্ভব যে, সেখানে উপস্থিত সকল সাহাবী পঙ্গু বা বিকলাঙ্গ ছিলেন, বরং তাহাদের মধ্যে সুস্থ-সবল সুঠাম দেহের অধিকারী সাহাবীগণও উপস্থিত ছিলেন। ইহাতে প্রমাণিত হয় যে, সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম অভাবী লোকদেরকে যাকাত প্রদান করা বৈধ। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম গরীব লোকদের যাকাত দেওয়া বৈধ নহে। কারণ মহানবী (স) দুই সুঠাম ব্যক্তিকে বলিয়াছেন।

ان شئتما أعطيتكما منه ولاحظ فيها لفنی

ولا لقوى مكتسب.

“তোমরা চাহিলে আমি তোমাদের উভয়কে দিতে পারি। কিন্তু ধনী এবং উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তির জন্য যাকাতে কোন অংশ নাই।”

উপরোক্ত হাদীসের জবাবে হানাফীগণ বলিয়াছেন যে, উক্ত হাদীসে ভিক্ষা না করিতে এবং নিজ শ্রমে উপার্জন করিতে উৎসাহ প্রদান করা হইয়াছে। তাহারা উহা নিতে আকাঙ্খী হইলে তিনি অবশ্য তাহা তাহাদেরকে দিতেন। তাহাদের জন্য যাকাত হারাম হইলে মহানবী (স) অনুরূপ কথা বলিতেন না।১০৮

জমহুরের মতে অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করা যাইবে না। তাহারা এই পর্যায়ে হযরত মুআয (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস পেশ করিয়াছেন। উহাতে বলা হইয়াছে যে, “আল্লাহ তাআলা তাহাদের মালে যাকাত ফরয করিয়াছেন, যাহা তাহাদের ধনীদের নিকট হইতে আদায় করিয়া তাহাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হইবেন” এই হাদীসে ‘তাহাদের’ বলিতে মুসলিমদের”কে বুঝানো হইয়াছে। কারণ যাকাত কেবল মুসলমানদের উপরই ফরয এবং ধনী-গরীব বলিতেও মুসলিম ধনী-গরীব বুঝানো হইয়াছে। অবশ্য হযরত উমার ফারুক (রা) আহলে কিতাব নাগরিককে যাকাত প্রদান বৈধ মনে করিতেন। তাহার মতে, আয়াতে ‘মিসকীন’ বলিতে আহলে কিতাব মিসকীনকে বুঝানো হইয়াছে। তিনি

৫৫০.

দামিশকের আল-জারিয়া নামক স্থানের কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত খৃষ্টানদের নিকট। উপস্থিত হইয়া তাহাদের জন্য যাকাত ও খাদ্য সংগ্রহ করিয়া দেওয়ার নির্দেশ দেন।

অবশ্য অমুসলিমগণকে যাকাত ব্যতীত অন্য সব রকমের খাত হইতে দান-খয়রাত প্রদান সকলের মতে বৈধ। তবে মুসলিমগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অমুসলিমগণকে কোনরূপ দান-খয়রাত করা বৈধ নহে। এই বিষয়ে উম্মাতের ফকীহগণ একমত।১০৯

সন্তান দরিদ্র পিতা-মাতাকে এবং পিতা-মাতা দরিদ্র সন্তানকে, ধনী স্ত্রী দরিদ্র স্বামীকে এবং ধনী স্বামী দরিদ্র স্ত্রীকে যাকাত প্রদান করিতে পারিবে না। তাহাদেরকেও যাকাত ব্যতীত অন্য খাত হইতে প্রয়োজনে সাহায্য করিতে হইবে। কারণ ইহাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও দৃঢ় যে, ইহাদেরকে একই দেহভুক্ত মনে করা যাইতে পারে। অবশ্য মালিকী মাযহাবমতে ইহারা পরস্পরকে যাকাত প্রদান করিতে পারে।১০

হাশেম বংশীয়দেরকেও যাকাত প্রদান করা যাইবে না, মহানবী (স) তাহাদেরকে যাকাত গ্রহণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। অনন্তর তিনি বলেনঃ

ان الصدقة محرمة على بني هاشم .

“হাশেম বংশীয়দের জন্য যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ।”

আব্বাস (রা)-র বংশধর, আলী (রা)-র বংশধর, জাফর (রা)-র বংশধর, আকীল (রা)-র বংশধর এবং হারিস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিবের বংশধর হাশেম বংশীয়দের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম কারখী (র) অনুরূপ উল্লেখ করিয়াছেন।১১

ধারা—৮১৫ যাকাত বিভাগে নিয়োগ লাভের শর্ত যাকাত বিভাগে কর্মচারীরূপে নিযুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থীর মধ্যে নিম্নলিখিত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকিতে হইবে—(ক) কর্মচারীকে বালেগ, বুদ্ধিমান ও মুসলিম হইতে হইবে;

(খ) যাকাত ও উশরের বিধান সম্পর্কে কর্মচারীর সম্যক জ্ঞান থাকিতে

৫৫১

হইবে;

(গ) কর্মচারীর যাকাত আদায়ের মোগ্যতা থাকিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

যাকাত আদায়ের কর্মে নিয়োগ লাভের জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই মুসলিম হইতে হইবে। তবে যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের কাজ ব্যতীত অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে এইরূপ শর্ত নহে। ইমাম আহমাদ (র)-এর একটি বর্ণনায় যাকাত বিভাগের কর্মচারী অমুসলিমও হইতে পারে বলিয়া উল্লেখ আছে। কারণ সে তো তাহার শ্রমের মজুরী পাইবে, যাকাত নহে। হাম্বলী ফকীহ ইব্‌ন কুদামা বলেন, যেহেতু এই কাজের জন্য আমানতদারী ও পরম বিশ্বস্ততা থাকা জরুরী শর্তবিশেষ, এইজন্য কর্মচারীরও মুসলিম হওয়া শর্ত। তাই কোন অমুসলিমকে এই কাজে নিযুক্ত করা জায়েয নহে। হযরত উমার (রা) বলেন, “এই লোকদেরকে তোমরা আমানতদার বানাইও না। কারণ তাহারা স্বয়ং আল্লাহ্র সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে।” যাকাত হইল ইসলামের একটি ফরয দায়িত্ব। তাহাতে এই নীতি অবশ্যই বাধ্যতামূলক হইবে।

কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ লাভের জন্য প্রার্থীকে বালেগ ও বুদ্ধিমান হইতে হইবে। নাবালেগ ও বুদ্ধিজ্ঞানশূন্য ব্যক্তির উপর কোন দায়িত্ব অর্পণ করা যায় না। কারণ ইহারা যে কোন বিষয়ে দায়মুক্ত। প্রার্থীকে আমানতদার তথা বিশ্বাসভাজন হইতে হইবে। কারণ মুসলিম জনগণের আমানত তাহার নিকট অর্পণ করা হইবে। তাই কোন পাপাচারী ও প্রবঞ্চককে নিয়োগ করা বৈধ নহে।৩

প্রার্থীর যাকাত ও উশর সংক্রান্ত বিধান সম্পর্কে উত্তমরূপে জ্ঞান থাকিতে হইবে। কারণ সে এই বিষয়ে অজ্ঞ থাকিলে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা তাহার পক্ষে সম্ভব নহে। সে কি গ্রহণ করিবে এবং কি গ্রহণ করিবে না তাহার জ্ঞান না থাকিলে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা ও বিধান লংঘনের ঘটনা ঘটিতে পারে।

প্রার্থীকে যেই কাজে নিয়োগ করা হইবে সেই কাজ সম্পর্কে তাহার যথেষ্ট যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা থাকিতে হইবে। কারণ শুধু বিশ্বস্ততা প্রয়োজনীয় কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতার বিকল্প হইতে পারে না। মহান আল্লাহর বাণীঃ

ان خیر من استأجرت القوى الامین۔

“তোমার শ্রমিক হিসাবে উত্তম হইবে সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত” (সূরা কাসাসঃ ২৬)।

হযরত ইউসুফ (আ) মিসরের বাদশাকে বলিয়াছিলেন (কুরআনের ভাষায়)

قال اجعلنی علی خزائن الأرض اي حفيظ عليم

“সে বলিল, আমাকে দেশের ধন-সম্পদের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন; আমি বিশ্বস্ত রক্ষক, সুবিজ্ঞ”(সূরা ইউসুফঃ ৫৫)।

এই আয়াত হইতে প্রমাণিত হয় যে, কর্মচারীর মধ্যে বিশ্বস্ততা, সংশ্লিষ্ট কাজ যথাযভাবে আঞ্জাম দেওয়ার যোগ্যতা ও জ্ঞান থাকিতে হইবে।১৪

কর্মচারী আদায়কৃত যাকাত হইতে বিন্দু পরিমাণও লুকাইয়া রাখিবে না, যাহা পাওয়া যায় তাহা পুরাপুরি বায়তুল মালে জমা করিবে। সে যাকাতদাতাগণের নিকট হইতেও কোনরূপ উপহার-উপঢৌকন গ্রহণ করিবে না, তাহা তাহারা স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হইয়া প্রদান করিলেও। যদি গ্রহণ করে তবে তাহা ঘুষ হিসাবে গণ্য হইবে।১৫

ধারা—৮১৬

গনী (ধনী) কে? ধনী তিন শ্রেণীতে বিভক্ত— (ক) যে পরিমাণ মালের মালিক হইলে কোন ব্যক্তির উপর যাকাত প্রদান বাধ্যকর হয়;

(খ) যে পরিমাণ মালের মালিক হইলে কোন ব্যক্তির উপর যাকাত প্রদান বাধ্যকর হয় না, কিন্তু কোরবানী করা ও রোযার ফিরতা প্রদান বাধ্যকর হয়;

(গ) যে পরিমাণ মালের মালিক হইলে কোন ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা ও রোযার ফিতরা প্রদান বাধ্যকর হয় না, কিন্তু তাহার জন্য যাঞ্চা করা হারাম হয়।

বিশ্লেষণ

যে ব্যক্তির মালিকানায় তাহার ও তাহার পরিবারবর্গের সাংবৎসরিক মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর পূর্ণ এক বৎসর নেসাব পরিমাণ মাল বিদ্যমান থাকে সে

৫৫৩

প্রথম শ্রেণীর ধনীর অন্তর্ভুক্ত হইবে। ব্যতিক্রমধর্মী কোন পরিস্থিতির শিকার না হইলে তাহার জন্য যাকাত গ্রহণ এবং ভিক্ষা করা হারাম। বরং তাহার উপর যাকাত প্রদান বাধ্যকর হওয়ার সাথে সাথে কোরবানী করা এবং রোযার ফিতরা আদায় করাও বাধ্যকর হয়।

যে ব্যক্তির মালিকানায় তাহার ও তাহার পরিবারবর্গের সাংবৎসরিক মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা উক্ত পরিমাণ স্বর্ণ বা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বিদ্যমান থাকে, যাহার দরুন তাহার উপর কোরবানী করা ও রোযার ফিতরা প্রদান করা বাধ্যকর হয় সে দ্বিতীয় শ্রেণীর ধনীর অন্তর্ভুক্ত হইবে।

যাহার নিকট পূর্ণ এক দিনের পাথেয় বিদ্যমান আছে সে তৃতীয় শ্রেণীর ধনীর অন্তর্ভুক্ত। তাহার জন্য কোরবানী করা ও রোযার ফিতরা প্রদান করা বাধ্যকর হয়

এবং তাহার জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ।

ধারা—৮১৭

একজনকে যতটুকু দেওয়া যাইবে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত কোন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুই শত দিরহাম প্রদান করা যাইতে পারে, যদি তাহার পরিবার-পরিজন না থাকে এবং সে ঋণগ্রস্ত

হয়। পরিবার-পরিজন থাকিলে এবং ঋণগ্রস্ত হইলে তাহাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দেওয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

হানাফী ফকীহগণের মতে, কোন একক ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ যাকাত। প্রদান করা বৈধ হইলেও দুই শত দিরহামের অধিক প্রদান করা মাকরূহ। তবে সে ঋণগ্রস্ত হইলে তাহার ঋণের সম-পরিমাণের চাইতে অধিকও প্রদান করা যাইবে। তাহার পোয্যবর্গ থাকিলেও তাহাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ যাকাত প্রদান করা যাইবে।” উমার ফারূক (রা) বলেনঃ

اذا أعطيتم قاغوا۔

“যখন দাও, স্বচ্ছল বানাইয়া দাও।”১১৮

৫৫৪

,

এক ব্যক্তি হযরত উমার (রা)-র নিকট উপস্থিত হইয়া তাহার দুরবস্থার কথা বিবৃত করিলে তিনি তাহাকে তিনটি উট প্রদান করেন। তিনি যাকাত বণ্টনকারী কর্মচারীদের নির্দেশ দেনঃ

كان عليهم الصدقة و ان راح على أحدهم مائة

من الابل .

“যাকাত পাওয়ার যোগ্য লোেকদের মধ্যে বারংবার তাহা বণ্টন কর। তাহাতে এক একজন এক শতটি উট পাইয়া গেলেও ক্ষতি নাই।”১৯ জামে সাগীর গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, ইমাম আবু হানীফা (র)-এর সুযোগ্য সহকর্মী ইমাম মুহাম্মাদ শায়বানী (র) বলেনঃ

و ان يغني به انسانا أحب الی۔

“যাকাত প্রদান করিয়া কোন ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী বানাইয়া দেওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয়।”১২০.

ধারা—৮১৮

যাকাত স্থানান্তর সরকার এক এলাকা হইতে আদায়কৃত যাকাত প্রয়োজনবােবে অন্য এলাকায় বন্টন করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

হানাফী মাযহাবমতে দেশের যে এলাকা হইতে যাকাত আদায় করা হইবে তাহা সেই এলাকার দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হইবে। ইহাই সাধারণ নিয়ম। তবে সরকার প্রয়োজন বােধ করিলে উহা স্থানান্তর করিতে পারে। যে এলাকা হইতে যাকাত আদায় করা হইয়াছে সেই এলাকার তুলনায় অন্য এলাকার লোকেরা অধিক দরিদ্র হইলে, অথবা উক্ত এলাকায় দরিদ্র না থাকিলে, অথবা অন্যত্র দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হইলে, অথবা যাকাত স্থানান্তর করার মধ্যে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক কল্যাণ নিহিত থাকিলে এইরূপ ক্ষেত্রে যাকাত স্থানান্তর করায় দোষ নাই। মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবের মতও প্রায় হানাফী মাযহাবের অনুরূপ। ১২১

তথ্য নির্দেশিকা

১. ফিহুল ইসলামী, ২খ, পৃ. ৭৩০

و عرفها الحنفية بانها تمليك جزء مال مخصوص من مال مخصوص لشخص مخصوص عينه الشارع لوجه الله تعالی.

২. ঐ গ্রন্থ, ২২, পৃ. ৭৩০

و عرفها المالكية بانها اخراج جزء مخصوص من مال مخصوص بلغ نصابا لمستحقه أن تم الملك وحول غیر

معدن و حرث .

৩. ইউসুফ আল-কারদাবী, ফিকহুয যাকাত, বাংলা অনু. ইসলামের যাকাত বিধান, পৃ. ৪৮। ৪. ফিকহুল ইসলামী, ২৩, পৃ. ৭৩০। ৫. আও দ্র. সূরা বাকারা : ৮৩, ১১০; নিসাঃ ৭৭; তওবা : ৫, ১১, ১৮; হজ্জঃ ৭৮; নূরঃ ৫৬;

আহযাব : ৩৩; মুজাদালা : ১৩; মুযযাম্মিল : ২০, আরও বহু সূরায়। ৬. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ, বাংলা অনু, মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী,

১ম খণ্ড, পৃ. ৩৬, নং ১১ (১০)। ৭. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে ঐ মিশকাতুল মাসাবীহ, ১২, পৃ. ৩১-২, নং ৩ (২)। যাকাত ফরয

সম্পর্কিত বিষয়ে মহানবী (স)-এর আরও বহু হাদীস রহিয়াছে। ৮. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে ফিকহল ইসলামী, ২খ, পৃ. ৭৩৩, টীকা নং ১, হযরত আবু হুরায়রা

(রা) কর্তৃক বর্ণিত। একই গ্রন্থদ্বয়ের বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ১খ, পৃ. ২৩-৫, নং

২(১), উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) কর্তৃক বর্ণিত। উক্ত হাদীসখানা ‘হাদীসে জিবরীল’ নামে প্রসিদ্ধ। ৯. ইসলামের যাকাত বিধান, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১০৪-৫। ১০. পূর্বোক্ত বরাত, পৃ. ১০৭। ১১. ইমাম তাবারানীর আল-আওসাত, মুসতাদরাক হাকেম ও বায়হাকীর বরাতে ইসলামের যাকাত

বিধান, পৃ. ১১৪। ১২. মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ ও আবু দাউদের বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ২৩, পৃ. ৭৩৫ এবং

ইসলামের যাকাত বিধান, ১ খ, পৃ. ১১৬। ১৩. ফিকহুল ইসলামী, ২খ, যাকাত। ১৪. ফিকহল ইসলামী, ২খ, যাকাত। ১৫. ফাতহুল বারী, ৩থ, পৃ. ২২৯। ১৬. ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ১৪১। ১৭. আবু দাউদ ও নাসাঈর বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ১৫৫-৬।

১৮. বাদাইউস সানাই, ২খ, পৃ. ৪-এর বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ১৫৪।

ফিকহল ইসলামী, ২২, পৃ. ৭৩৯। ২০. সদরুশ শারীআর বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ১৯০। ২১. বাহরুর রাইক, ২খ, পৃ. ২১৮-এর বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ১, পৃ. ১৯০-১। ২২. ফিকহুল ইসলামী, ২খ, পৃ. ৭৪০। ২৩. আবু দাউদ, ইবন মাজা ও দারু কুতনীর বরাতে ফিকহল ইসলামী, ২৩, পৃ. ৭৪৪; ইসলামের

যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ২২৮-৩০। ২৪. বাদাই, যাকাত, ২খ খণ্ড। ২৫. ঐ বরাত। ২৬ ফিকহল ইসলামী, ২খ, যাকাত। ২৭. যাকাত বিধান। ২৮. যাকাত বিধান। ২৯. ইসলামী শরীআ মোতাবেক পাকিস্তানের যাকাত ও উশর অধ্যাদেশ, ১৯৮০, অধ্যাদেশ নং ১৮,

১৯৮০ খৃঃ ডঃ নাজাতুল্লাহ সিদ্দীকী, ইসলাম কা নাজরিয়ায়ে মিলকিয়াত, ৪র্থ সং, লাহাের ১৯৮২ খৃঃ ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯; সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী, মাআশিয়াতে ইসলাম, ১ম সং, দিল্পী ১৯৮১

খৃ, পৃ. ৩৫৮-৬২; মাওলানা নূর মুহাম্মাদ গিফারী, ইসলাম কা কানে মাহাসিল, পৃ. ৯১। ৩০. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬১৭-৮। ৩১. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০১; পাকিস্তানের যাকাত ও উশর অধ্যাদেশ ১৯৮০,

অধ্যাদেশ নং ১৮, ১৯৮০ খৃ.। ৩২. আবু দাউদ, যাকাত, টীকা ২, পৃ. ৩৭০; ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৩৫৫ ও ৩৫৮। ৩৩. আবু দাউদ, বাংলা অনু. ই. ফা.বা, ২য় খণ্ড, কিতাবুয যাকাত, বাবুল কান্য মা হওয়া ওয়া

যাকাতুল হুলিয়্যি, নং ১৫৬৩; আরও দ্র. নং ১৫৬৪, ১৫৬৫ ও ১৫৬৬; মুওয়াত্তা ইমাম

মুহাম্মাদ (র), বাংলা অনু, পৃ. ১৮৭, টীকা নং ৫। ৩৪. ইসলামের যাকাত বিধান, ২২, পৃ. ৩৫২-৩; মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (র), বাংলা অনু, ই.

ফা. বা, কিতাবুয যাকাত, ৫ নং অনুচ্ছেদঃ অলংকার সামগ্রীর যাকাত, পৃ. ১৮৭, আরও দ্র. টীকা ন৫।

বিস্তারিত আলোচনার জন্য দ্র. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৪২-৫৬৯। ৩৬. বাদাই, ২খ, পৃ. ২৮। ৩৭. যাকাত বিধান। ৩৮. দ্র. বাহরুর রাইক, ৭খ, পৃ. ৩২৭। ৩৯. আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজা। ৪০. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড। ৪১. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯৯। ৪২. পত্রটির জন্য দ্র. আবু দাউদ, বাংলা অনু., ই. ফা বা., ২য় খণ্ড, কিতাবুয যাকাত, বাব ফী

যাকাতিস সাইমাহ, হাদীস নং ১৫৬৭; আরও দ্র. বুখারী, নাসাঈ, ইবন মাজা, দারু কুতনী। ৪৩. আবু দাউদ, বাংলা অনু, ই. ফা. বা., ২খ, কিতাবুয যাকাত, বাব তাফসীর আসনানিল

৫২.

ইবিল, পৃ. ৩৯৪-৯৬। ৪৪. আবু দাউদ, বাংলা অনু. ই. ফা. বা., ২য় খণ্ড, কিতাবুয যাকাত, বাব ফী যাকাতিস-সাইমাহ,

নং ১৫৭২। ৪৫. পূর্বোক্ত বরাত দ্র.। ৪৬. বাদাইউস সানাই, ২খ, কিতাবুয যাকাত, পৃ. ২৮। ৪৭. বাদাই, ২খ, কিতাবুয যাকাত, পৃ. ২৮। ৪৮. পূর্বোক্ত বরাত। ৪৯. আবু দাউদ, বাংলা অনু, ই. ফা. বা., ২য় খণ্ড, কিতাবুয যাকাত, বাব ফী যাকাতিস সাইমাহ,

নং ১৫৬৮, ১৫৭২; বাদাই, ২খ, পৃ. ২৮। ৫০. বাদাই, ২খ, কিতাবুয যাকাত, পৃ. ২৮। ৫১.. বাদাই, ২, পৃ. ৩৪।

উপরোক্ত বরাত দ্র., পৃ. ৩৪। ৫৩. বাদাই, ২, পৃ. ৩৫। ৫৪. বাদাই, ২খ, যাকাত, পৃ. ৬-৭। ৫৫. আল-বাহরুর রাইক, ২য় খণ্ড, পৃ. ২২১-এর বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড,

পৃ. ১৯৫। ৫৬. ফাতহুল কাদীরের বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯৬। ৫৭. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৮৪-৫। ৫৮. আবু দাউদ, বাংলা অনু, ই. ফা. বা., ২য় খণ্ড, যাকাত, বাবুল আরূদ ইযা কানাত লিত

তিজারাহ…., পৃ. ৩৬৮-৯, নং ১৫৬২। আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইন মাজার বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ, বাংলা অনু., ৬খ,

পৃ. ২০, নং ২৬৭৫ (১)। ৬০. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৮৮। ৬১, ৫, ১২, পৃ. ৩৮৮। ৬২. ঐ, ২খ, পৃ. ৩৮৮-৯। ৬৩. ইসলামের যাকাত বিধান, ১২, পৃ. ৩৮৮-৯। ৬৪. বাদাইউস সানাই, ২খ, পৃ. ১১। ৬৫. বাদাইউস সানাই, ২, পৃ. ১২। ৬৬. ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৪০২-৩। ৬৭. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪০৮-৯; ইসলাম কা কানূনে মাহাসিল, পৃ. ৯৬-৭। ৬৮. ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪০৯। ৬৯. বাদাইউস সানাই, ২খ, কিতাবুয যাকাত, পৃ. ২১। ৭০. বাদাইউস সানাই, ২, কিতাবুয যাকাত, পৃ. ২১। ৭১. বাদাই, ২, পৃ. ২১। ৭২. বাদাই, ১খ, পৃ.২৪। ৭৩. বাদাই, ২খ, পৃ. ২২।

৫৫৮

৭৪. বাদাই, ২খ, পৃ. ২৩। ৭৫. এ, ২, পৃ. ২৪। ৭৬. বাদাইউস সানাই, ২খ, পৃ. ৫২-৫৩। ৭৭. বুখারী, যাকাত, বাব উজুবি-যাকাত, নং ১৪০০; মুসলিম, ঈমান, বাবুদ-দুআ ইলাশ

শাহাদাতায়ন; আবু দাউদ, যাকাত, বাব যাকাতিস সাইমা, নং ১৫৭৪; আরও দ্র. নং ১৫৭৬; তিরমিযী, যাকাত, বাব কারাহিয়াতি আখযি খিয়ারিশ মাল, নং ৬২৫; নাসাঈ, যাকাত, বাব।

উজুবি-যাকাত, নং ২৪৩৭; ইবন মাজা, যাকাত, বাব ফারদিয-যাকাত, নং ১৭৮৩। ৭৮, ফাতহুল বারী, ৩, পৃ. ২৩। ৭৯.. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ২৯২। ৮০. বুখারী (বাংলা অনু, আধুনিক), ২খ, পৃ. ৫৯, নং ১৪০৩। ৮১.. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ২৯২। ৮২. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ২৯২। ৮৩. আবু দাউদ, যাকাত, বাব যাকাতিস সাইমা, নং ১৫৮৩। ৮৪. বাদাই, ২খ, পৃ. ৩৫। ৮৫. বাদাই, ২, পৃ. ৩৬। ৮৬. বাদাই, ২, পৃ. ৩৬। ৮৭. বাদাই, ২খ, পৃ. ৩৬। ৮৮. ঐ, ২খ, পৃ. ৩৬। ৮৯. বাদাইউস সানাই, ২খ, পৃ. ৪১। ৯০. বাদাই, ২খ, পৃ. ৪৩। ৯১. বুখারী, মুসলিম। ৯২. বাদাই, ২খ, পৃ. ৪৪; ইসলামের যাকাত বিধান, ২২, পৃ. ৫১ প.। ৯৩. বাদাই, ২খ, পৃ. ৪৪-৪৫। ৯৪. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ৭৬। ৯৫. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ৭৭-৭৮। ১৬. ঐ, পৃ. ৭৭। ৯৭. মুসলিমের বরাতে মিশকাত (বাংলা অনু.), ১২, পৃ. ১৭০, নং ১৫২ (২০)। ৯৮. ইসলামের যাকাত বিধান, ২, পৃ. ৭১-৯৪ পূর্ণাঙ্গ আলোচনার জন্য দেখা যাইতে পারে। ৯৯. বাদাই, ২খ, পৃ. ৪৫। ১০০. বাদাই, ২খ, পৃ. ৪৫-৬; ইসলামের যাকাত বিধান, ২৩, পৃ. ১২৮-৩১। ১০১. ইসলামের যাকাত বিধান, ২৪, পৃ. ১৩১-২। ১০২. ঐ, পৃ. ১৩৩-৯। ১০৩. বাদাই, ২খ, পৃ. ৪৬। ১০৪. মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (বাংলা অনু.), পৃ. ১৯৪, অনুচ্ছেদ ১২, নং ৩৪৩; আবু দাউদের

বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ২য় খণ্ড।

৫৫১

১০৫. আবু দাউদ, যাকাত, বাব যাকাতিস সাইমাহ। ১০৬. হেদায়া ও ফাতহুল কাদীরের বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ২য় খণ্ড, পৃ. ২১৬-৭। ১০৭. বাদাই, ২, পৃ. ৪৭। ১০৮. বাদাই, ২, পৃ. ৪৮। ১০৯. বাদাই, ২খ, পৃ. ৪১; ইসলামের যাকাত বিধান, ২৩, পৃ. ২২২-২৩৭। ১১০. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ২৪৩-২৫১ (বাদাই-এর বরাতে, ২খ, পৃ. ৪৯)। ১১১. বাদাই, ২, পৃ. ৪১। ১১২. আল-মুগনী, ৬২, পৃ. ৪৬০-এর বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ৫৯-৬৯। ১১৩, ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ৬০। ১১৪. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ৬০-১। ১১৫. ইসলামের যাকাত বিধান, ২খ, পৃ. ৬৭। ১১৬. বাদাইউস সানাই, ২২, পৃ. ৪৭-৮। ১১৭. বাদাই, ২, পৃ. ৪৮। ১১৮. কিতাবুল আমওয়ালের বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান, ২, পৃ. ৩৫। ১১৯. পূর্বোক্ত বরাত, ২৩, পৃ. ৩৫-৬। ১২০. বাদাই, ২, পৃ. ৪৮। ১২১. দুররুল মুখতার ওয়া হাশিয়া ইবন আবিদীন, ২খ, পৃ. ৯৩-৪-এর বরাতে ইসলামের যাকাত

বিধান, ২২, পৃ. ৩৮২-৮৪।

৩৪

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *