1 of 2

৩২. কাসামাহ, স্বীকারোক্তি ও মাআকিল

ধারা-৭৬১

অধ্যায় : ৩২ কাসামাহ, স্বীকারোক্তি ও মাআকিল

ধারা-৭৬১

সংজ্ঞা (ক) কোন মহল্লায় বা পাড়ায় কোন ব্যক্তিকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেলে এবং তাহার হত্যাকারী অজ্ঞাত থাকিলে সংশ্লিষ্ট মহল্লা বা পাড়ার পঞ্চাশজন বাসিন্দাকে স্বতন্ত্রভাবে আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলিতে হয় যে, তাহারা উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করে নাই এবং তাহার হত্যাকারী সম্পর্কেও তাহারা জ্ঞাত নহে; তাহাদের এইরূপ শপথকে “কাসামাহ” (L.) বলে।

(খ) মহল্লা বা পাড়ার পঞ্চাশ ব্যক্তি কাসামাহ করিলে তথাকার বাসিন্দাগণ কিসাসের দায় হইতে মুক্ত হইয়া যাইবে, কিন্তু তাহাদের উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(গ) মহল্লা বা পাড়ার পঞ্চাশ ব্যক্তি কাসামাহ করিতে সম্মত না হইলে তাহাদেরকে আটক করা হইবে এবং তাহারা যাবত না শপথ করে অথবা হত্যার স্বীকারোক্তি করে তাবৎ আটকাবস্থায় থাকিবে।

(ঘ) সম্ভাব্য সকল উপায়ে অনুসন্ধান করিয়াও হত্যাকারীকে সনাক্ত করা

গেলেই কাসামাহর পদ্ধতি অনুসৃত হইবে। (ঙ) যে ব্যক্তিবর্গকে বিচারক কাসামার জন্য নির্দেশ করিবেন তাহারা তৎকর্তৃক নির্ধারিত হইবে। ৩০

৪৬৬

বিশ্লেষণ

‘কাসামাহ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সৌন্দর্য। যেমন বলা হয় ও ও অমুক ব্যক্তি সুশ্রী ও সুন্দর। “কাসীম মহানবী (স)-এর একটি গুণবাচক নামও বটে। শব্দটি কসম অর্থাৎ শপথ অর্থেও ব্যবহৃত হয় এবং এখানে এই অর্থই উদ্দেশ্য। নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ যদি দাবি করে যে, নির্দিষ্ট কোন পাড়া বা মহল্লার লোকেরা তাহাকে হত্যা করিয়াছে এবং কে হত্যা করিয়াছে তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলিতে না পারে, তবে উক্ত মহল্লা বা পাড়ার পঞ্চাশজন বাসিন্দাকে এক এক করিয়া আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলিতে হয় যে, তাহারা উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করে নাই এবং কে তাহাকে হত্যা করিয়াছে তাহাও তাহারা অবহিত নহে। শপথবাক্য নিম্নরূপঃ “আমি আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলিতেছি যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করি নাই এবং তাহার হত্যাকারী সম্পর্কেও জ্ঞাত নহি।” পঞ্চাশ ব্যক্তি এইভাবে শপথ করিলে মহল্লাবাসীগণ হত্যার দায় হইতে মুক্ত হইয়া যাইবে এবং তাহাদের উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। ইহা হানাফী ফকীহগণের অভিমত। ইমাম মালেক (র) বলেন, সংশ্লিষ্ট মহল্লার কোন ব্যক্তির মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার আলামত পাওয়া গেলে অথবা তথাকার কাহারও সহিত শত্রুতা থাকিলে নিহত ব্যক্তির পক্ষের পঞ্চাশ ব্যক্তিকে পূর্বোক্ত নিয়মে শপথ করিয়া বলিতে হইবে যে, অমুক ব্যক্তি তাহাকে হত্যা করিয়াছে। তাহারা শপথ করিলে সেই ব্যক্তি কিসাসের দণ্ডে দণ্ডিত হইবে। ইমাম শাফিঈ (র) বলেন, সংশ্লিষ্ট মহল্লার কোন ব্যক্তির সহিত নিহত ব্যক্তির শত্রুতা থাকিলে এবং তথায় প্রবেশ করার পর সে নিহত হইলে তাহার ওয়ারিসগণকে বলা হইবে যে, হত্যাকারী কে তাহা নির্ণয় কর। হত্যাকারীকে নির্দিষ্ট করার পর তাহাদেরকে বলা হইবে যে, পঞ্চাশবার শপথ করিয়া বল যে, তোমার সনাক্তকৃত ব্যক্তি তাহাকে হত্যা করিয়াছে। যদি সে শপথ করে তবে সেই ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈর দুইটি মত লক্ষ্য করা যায়। প্রথম মতানুযায়ী সে যাহাকে হত্যাকারী সাব্যস্ত করিয়াছে তাহাকে কিসাসস্বরূপ হত্যা করা হইবে, যেমন ইমাম মালেক (র) অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। তাঁহার দ্বিতীয় মতানুযায়ী সনাক্তকৃত ব্যক্তির উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। উপরোক্ত দুইটি শর্ত (খুনের আলামত ও শত্রুতা) বিদ্যমান না থাকিলে সংশ্লিষ্ট পাড়া বা মহল্লার পঞ্চাশজন বাসিন্দা শপথ করিয়া বলিবে যে, তাহারা ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করে নাই এবং তাহার হত্যাকারী সম্পর্কেও জ্ঞাত

,

৪৬৭

নহে। তাহারা এইরূপ শপথ করিলে হত্যার দায় হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত হইয়া যাইবে এবং তাহাদের উপর কোনরূপ আর্থিক দায়ও বর্তাইবে না। ৩.

কাসামাহ বিধিবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি হানাফী, মালিকী, শাফিঈ, হাম্বালী, যাহিরী ও ইমামী শীআদের মতে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। একজন আনসার সাহাবী কর্তৃক বর্ণিতঃ

ان النبي صلى الله عليه و سلم أقر القسامة على ما كانت عليه في الجاهلية.

“মহানবী (স) জাহিলী যুগের কাসামাহ পদ্ধতিকে স্ব-অবস্থায় বহাল রাখিয়াছেন”। ৪

و قال رسول الله صلى الله عليه و سلم البنين على المدعى واليمين على من أنكر الأ في

القسامة.

“রাসূলুল্লাহ (স) বলেনঃ বাদীর দায়িত্ব সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা এবং যে অস্বীকার করে তাহার (বিবাদীর) দায়িত্ব শপথ করা, কাসামার ক্ষেত্র ব্যতীত।” ৫

“আবদুল্লাহ্ ইবন সাহল (রা) ও মুহায়্যাসা (রা) দুর্ভিক্ষে পতিত হইয়া খায়বার এলাকায় চলিয়া যান। মুহায়্যাসা (রা)-র নিকট আসিয়া খবর দেওয়া হইল যে, আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাহল (রা)-কে হত্যা করিয়া কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করা হইয়াছে। মুহায়্যাসা (রা) ইহুদীদের নিকট আসিয়া দাবি করিলেন, তোমরা তাহাকে হত্যা করিয়াছ। তাহারা বলিল, আল্লাহর শপথ! আমরা তাহাকে হত্যা করি নাই। অতঃপর তিনি স্বীয় গোত্রে ফিরিয়া আসিয়া তাহাদেরকে এই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করিলেন। অতঃপর তিনি (মুহায়্যাসা), তাহার বড় ভাই হুয়ায়্যাসা (রা) ও আবদুর রহমান ইবন সাহল (রা) মহানবী (স)-এর দরবারে আসিলেন। মুহায়্যাসা (রা) কথা বলিতে শুরু করিলে, কারণ তিনি খায়বারে গিয়াছিলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে আগে কথা বলিবার সুযোগ দিতে বলিলেন। অতএব প্রথমে হুয়ায়্যাসা (রা) ও পরে মুহায়্যাসা (রা) কথা বলিলেন। রাসূলুল্লাহ (স) এই বিষয়ে খায়বারের ইহুদীদের নিকট পত্র লিখিয়া পাঠাইলেন। উত্তরে তাহারা লিখিল, আল্লাহর শপথ! আমরা তাহাকে হত্যা করি নাই।

৪৬৮

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স) হইয়ায়্যাসা, মুহায়্যাসা ও আবদুর রহমান (রা)-কে বলিলেন, তোমরা শপথ কর এবং তোমাদের সাথীর দিয়াতের অধিকারী হও। তাঁহারা বলিলেন, না। তিনি (স) বলিলেন, তাহা হইলে ইহূদীরা তোমাদের জন্য শপথ করিবে। তাহারা বলিলেন, তাহারা তো মুসলিম নহে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স) তাহার নিজের (সরকারের পক্ষ হইতে তাহার দিয়াত পরিশোধ করিলেন এবং তাহাদের নিকট এক শত উষ্ট্ৰী পাঠাইয়া দিলেন”। ‘

কাদী আয়াদ (র) একদল প্রবীণের নিকট হইতে, যাহাদের মধ্যে রহিয়াছেন আকূ কিলাব, সালিম ইবন আবদুল্লাহ, আল-হাকাম ইবন উতবা, কাতাদা, সুলায়মান ইবন ইয়াসার, ইবরাহীম ইব্‌ন উলায়্যা, মুসলিম ইবন খালিদ ও উমার ইবন আবদুল আযীয (র), বর্ণনা করিয়াছেন যে, কয়েকটি কারণে ‘কাসামাহ’ শরীআতে প্রমাণিত বা স্বীকৃত নহে। যেমন কোন বিষয় সম্পর্কে সন্দেহাতীতভাবে জানা থাকিলেই কেবল সেই সম্পর্কে শপথ করা যাইতে পারে। তাহা ছাড়া বাদীর দায়িত্ব হইতেছে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা এবং বাদীর কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকিলে এবং বিবাদী তাহার দাবি প্রত্যাখ্যান করিলেই কেবল বিবাদীকে শপথ করিতে হয় ইত্যাদি।

. ধারা-৭৬২

কাসামাহ-এর প্রয়োগস্থল কেবল হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে কাসামার প্রয়োগ সীমাবদ্ধ থাকিবে।

বিশ্লেষণ

হত্যার অপরাধ সংঘটিত হইলে এবং অপরাধীকে সনাক্ত করা সম্ভব না হইলে সেই ক্ষেত্রে কাসামার বিধান প্রযোজ্য হইবে, হত্যাকাণ্ড কতলে আব্দ, কতলে শিব্‌হে আম্‌দ, কতলে খাতা যাহাই হউক না কেন। ইহা ব্যতীত অন্য কোন অপরাধের ক্ষেত্রে কাসামার বিধান প্রযোজ্য হইবে না। কারণ নস দ্বারা শুধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে কাসামার প্রয়োগ প্রমাণিত বা সীমাবদ্ধ। ৮

1ণাধবদ্ধ ইসলামী আইন

৪৬৯

ধারা-৭৬৩ কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যতামূলক হওয়ার শর্তাবলী নিম্নোক্ত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকিলে কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবে— (ক) নিহত ব্যক্তির মধ্যে হত্যার কোন আলামত বিদ্যমান থাকিতে হইবে, যেমন যখম, আঘাত, শাসরুদ্ধকরণ ইত্যাদি;

(খ) নিহত ব্যক্তিকে কে হত্যা করিয়াছে তাহা অজ্ঞাত হইতে হইবে; (গ) নিহত প্রাপ্ত লাশ মানুষের হইতে হইব; (ঘ) নিহতের ওয়ারিসগণ কর্তৃক বিচারের দাবি উত্থাপিত হইতে হইবে;

(ঙ) যাহাকে হত্যাকারী বলিয়া সন্দেহ করা হইয়াছে, যদি সন্দেহ করা হইয়া থাকে, তকর্তৃক হত্যার অপরাধ অস্বীকার করিতে হইবে;

(চ) ওয়ারিসগণ কর্তৃক কাসামার দাবি করিতে হইবে;

(ছ) যেই স্থানে লাশ পাওয়া যাইবে সেই স্থান কাহারও মালিকানাভুক্ত হইতে হইবে;

(জ) যেই স্থানে লাশ পাওয়া যাইবে সেই স্থান নিহত ব্যক্তির মালিকানাভুক্ত হইবে না।

বিশ্লেষণ

প্রাপ্ত লাশের মধ্যে নিহত হওয়ার কোন আলামত না থাকিলে সেই ক্ষেত্রে কাসামাহ্ বাধ্যকর হইবে না এবং ফলে দিয়াতও বাধ্যকর হইব না। কারণ এই জাতীয় কোন আলামত না থাকিলে সে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। অবশ্য মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনবোেধ চিকিৎসা শাস্ত্রের সহায়তা লওয়া যাইবে। সে হয়ত স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করিয়াছে অথবা তাহাকে হত্যা করা হইয়াছে এইরূপ উভয়বিধ ধারণা হইলে কাসামাহ বা দিয়াত কোন কিছুই বাধ্যকর হইবে না।

কোন ব্যক্তি কোন মহল্লা বা পাড়া অতিক্রমকালে অতর্কিতে আক্রান্ত হইয়া আহত হইলে এবং কে তাহাকে আক্রমণ করিয়াছে তাহা অজানা থাকিলে এবং এই অবস্থায় সে বিছানাগত থাকিয়া মারা গেলে মহল্লাবসীর উপর কাসামাহ ও দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। কিন্তু সে যদি বিছানাগত না হয় এবং এই অবস্থায় মারা যায় তবে ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে কাসামাহ ও

8१०

,

দিয়াত কোনটিই বাধ্যকর হইবে না। আর ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে উভয়বিধ অবস্থায় কাসামাহ ও দিয়াত কোনটিই, বাধ্যকর হইবে না। ইবন আবী লায়লা (র)-ও এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন। ইমাম আবু ইউসুফ (র) বলেন, আহত হওয়ার বিষয়টি নিহত হওয়ার তুলনায় নিম্ন পর্যায়ের অপরাধ। আর সংশ্লিষ্ট মহল্লায় আহত হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হইয়াছে, নিহত হওয়ার ঘটনা নহে। তাই নিহত হওয়ার তুলনায় নিম্নতর অপরাধের জন্য কাসামার বিধান নাই। অতএব মহল্লাবাসীর উপর কাসামাহ বা দিয়াত কোনটিই বাধ্যকর হইবে না।

কোন মহল্লায় নিহত ব্যক্তির দেহের অর্ধেক বা উহার অধিক. পাওয়া গেলে কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবে। কিন্তু দেহের অর্ধেকের কম বা দেহের কোন অংগ বা প্রত্যংগ পাওয়া গেলে কাসামাহ ও দিয়াত কোনটিই বাধ্যকর হইবে না।

জমহূরের মতে কোন মহল্লায় নিহত ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেলেই কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবে না, বরং উহার জন্য সংশ্লিষ্ট মহল্লার সহিত নিহত ব্যক্তির শত্রুতা থাকিতে হইবে এবং কোন ব্যক্তির মধ্যে হত্যার সহিত জড়িত থাকার আলামত বিদ্যমান থাকিতে হইবে।

হত্যাকরী কে তাহা জানা না থাকিলেই কাসামাহ ও দিয়াতের প্রসংগ আসিবে। কারণ হত্যাকারী কে তাহা জ্ঞাত থাকিলে হত্যার ধরন অনুযায়ী (আমৃন্দ, শিবহি আব্দ, খাতা) হয় সে কিসাসের সম্মুখীন হইবে অথবা দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

নিহত প্রাণীটি মানুষ হইলেই কাসামাহ ও দিয়াতের প্রশ্ন আসিবে। মানুষ ব্যতীত অন্য কোন প্রাণী, যেমন গৃহপালিত পশু, পাখি ইত্যাদি কোন মহল্লায় নিহত অবস্থায় পাওয়া গেলে সেই ক্ষেত্রে কাসামাহ ও দিয়াতের প্রসংগ আসিবে। তাহা ছাড়া অন্য কোন দাবির ক্ষেত্রেও কাসামার প্রয়োগ অনুমোদিত নহে।

ওয়ারিসগণের পক্ষ হইতে নিহত ব্যক্তির খুনের দাবি আদালতে উথাপিত হইতে হইবে। কারণ অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপাদান হইতেছে উহার জন্য দাবি উত্থাপন। অতএব ওয়ারিসগণ দাবি না করিলে কাসামাহ বাধ্যকর হইবে না। মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বালী ফকীহগণের মতে, কাসামার দাবির ক্ষেত্রে ওয়ারিসগণের মধ্যে ঐক্য বিদ্যমান থাকিতে হইবে। কেহ ভিন্নমত পোষণ করিলে কাসামাহ বাধ্যকর হইবে না।

যে ব্যক্তি হত্যা করিয়াছে বলিয়া সনাক্ত বা ধারণা করা হইবে সেই ব্যক্তি

৪৭১

হত্যার অপরাধ অস্বীকার করিলেই কাসামাহ বাধ্যকর হইবে। কারণ বাদীর দাবি প্রত্যাখ্যানকারীর (অর্থাৎ, বিবাদী) উপরই শপথ করা বাধ্যতামূলক হয়। মহানবী (স) বলেনঃ ২ ২

, “যে প্রত্যাখ্যান করে তাহার উপর শপথ বাধ্যকর হয়।”

অপরাধী হত্যার অপরাধ স্বীকার করিলে কাসামার প্রশ্নই আসে না।

আদালতে খুনের দাবির মত কাসামার দাবিও ওয়ারিসগণকে উথাপন করিতে, হইবে। কারণ বাদী বিবাদীর শপথ দাবি করিলেই তাহার জন্য শপথ করা বাধ্যকর হয়। শপথ করিতে অস্বীকার করিলে শপথের জন্য নির্বাচিত সংশ্লিষ্টগণকে আটক করা হইবে এবং তাহারা যাবত না শপথ করিবে অথবা দোষ স্বীকার করিবে

অথবা দিয়াত প্রদান করিবে ততক্ষণ আটকাবস্থায় থাকিবে।

নিহত ব্যক্তির লাশ যে স্থানে পতিত পাওয়া যাইবে সেই স্থান কোন ব্যক্তির মালিকানাধীন হইতে হইবে, ব্যক্তি মালিকানাধীন না হইলে কাসামাহ বাধ্যকর হইবে না। জনসাধারণের এজমালী জায়গা হইলে সেই ক্ষেত্রে কাসামাহ বাধ্যকর হইবে না কিন্তু দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে এবং তাহা বায়তুল মাল হইতে পরিশোধযোগ্য হইবে।

লাশ যে স্থানে পাওয়া যাইবে সেই স্থান নিহত ব্যক্তির মালিকানাধীন হইলে কাসামাহ বাধ্যকর হইবে না। ৯

ধারা-৭৬৪

বিভিন্ন স্থানে লাশ পাওয়া গেলে (ক) দুই মহল্লা বা পাড়ার মাঝখানে নিহতের লাশ পতিত অবস্থায় পাওয়া গেলে তাহা যেই মহল্লা বা পাড়ার নিকটবর্তী হইবে সেই মহল্লা বা পাড়ার উপর কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবেঃ।

তবে শর্ত থাকে যে, লাশ পতিত হওয়ার স্থান হইতে ডাক দিলে তাহা মহল্লা বা পাড়া পর্যন্ত না পৌছিলে উক্ত মহল্লা বা পাড়ার উপর কোনরূপ দায় বর্তাইবে না।

(খ) কোন বসতবাড়িতে নিহতের লাশ পতিত অবস্থায় পাওয়া গেলে বসতবাড়িটির বাসিন্দাদের উপর কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবে;

৪৭২

(গ) পাড়া বা মহল্লার মসজিদে নিহতের লাশ পাওয়া গেলে পাড়া বা মহল্লাবাসীর উপর কাসামাহ ও দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ঘ) জামে মসজিদ, সরকারী স্থান, রাজপথ, পুল, জেলখানা, বাজার, বন-জঙ্গল, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদিতে নিহতের লাশ পাওয়া গেলে সরকারের উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ঙ) কাসামার যেইসব ক্ষেত্রে জনসাধারণের উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হয় সেইসব ক্ষেত্রে সরকার তাহার সুবিবেচনা অনুযায়ী জনসাধারণের পক্ষ হইতে দিয়াত পরিশোধ করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

দুই মহল্লা বা পাড়ার মাঝখানে নিহত ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেলে এবং তাহার দূরত্ব সমান হইলে উভয় মহল্লার লোকেরা দিয়াত পরিশোধ করিবে, অন্যথায় যে মহল্লা নিকটতর হইবে সেই মহল্লার লোকেরা দিয়াত প্রদান করিবে। অনুরূপভাবে দুই রাস্তার মধ্যবর্তী স্থানে নিহতের লাশ পাওয়া গেলে পূর্বোক্ত নিয়মে কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবে। আবু সাঈদ খুদরী (র) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) দুই বস্তির মাঝখানে প্রাপ্ত একটি লাশের ব্যাপারে উক্তরূপ ফয়সালা দিয়াছেন। কোন এক এলাকায় দুই বস্তির মাঝখানে একটি লাশ পাওয়া গেলে তথাকার শাসনকর্তা (হাকেম) হযরত উমার ফারূক (রা)-কে এই বিষয় সম্পর্কিত বিধান জিজ্ঞাসা করিয়া পত্র লিখেন। তিনি উত্তরে বলেন যে, লাশ যে স্থানে পড়িয়াছিল সেই স্থান হইতে উভয় বস্তির দূরত্ব মাপিয়া নির্ণয় করিতে হইবে যে, তাহা কোন্ বস্তির নিকটতর। নিকটতর বস্তির লোকের উপর কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবে। এই বিধান সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে যদি লাশ পতিত হওয়ার স্থান হইতে ডাক দিলে বস্তি হইতে তাহা শোনা যায়। বস্তি পর্যন্ত ডাক না পৌছিলে বস্তিবাসীর উপর কোন দায় বর্তাইবে না। ইমাম মুহাম্মাদ (র) তাঁহার কিতাবুল আসল-এ এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

কোন বসতবাড়িতে নিহতের লাশ পাওয়া গেলে সেই বসতবাড়ির বাশিন্দাদের উপর কাসামাহ ও দিয়াত বাধ্যকর হইবে, এলাকাবাসীর উপর নহে। ইমাম মুহাম্মাদ (র) তাহার কিতাবুল আসল-এ এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। লাশ কোন খােলা ময়দানে অথবা এমন স্থানে পতিত অবস্থায় পাওয়া গেল যেখান

বিধবদ্ধ ইসলামী আইন

8१७

হইতে ডাক দিলে নিকটস্থ লোকালয় তাহা পৌছায় না। এই ক্ষেত্রে নিকটস্থ লোকালয়ের উপর দিয়াত ধার্য হইবে না, বরং বায়তুল মাল হইতে দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। জনগণের যৌথ সম্পত্তি ও সরকারী সম্পত্তিতে লাশ পাওয়া গেলে সেই ক্ষেত্রেও বায়তুল মাল হইতে দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

যেসব ক্ষেত্রে জনগণের উপর দিয়াত বাধ্যকর হয় সেই সব ক্ষেত্রে সার্বিক কল্যাণের দিক বিবেচনা করিয়া সরকার জনগণের পক্ষ হইতে দিয়াত পরিশোধ করিতে পারে। যেমন মহানবী (স) খায়বারের ইহূদীদের নিকট হইতে দিয়াত আদায় না করিয়া নিজের (সরকারের পক্ষ হইতে তাহা পরিশোধ করিয়াছিলেন। ১০

ধারা-৭৬৫

নিজ গৃহে নিহত পাওয়া গেলে কোন ব্যক্তিকে স্বগৃহে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেলে ঐ গৃহের অন্যান্যদের উপর কাসামাহ ও দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মত মূল ধারায় উল্লেখ করা হইয়াছে। ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে এই ক্ষেত্রে কিছুই বাধ্যকর হইবে না। যুফার ও হাসান ইবন যিয়াদও অনুরূপ মত ব্যক্ত করিয়াছেন। ১১

ধারা-৭৬৬। ভিন্ন স্থানের লোককে হত্যাকরী বলিয়া অভিযোগ করিলে

যে মহল্লা বা পাড়ায় নিহতের লাশ পাওয়া গিয়াছে, নিহতের ওয়ারিস সেই মহল্লা বা পাড়া ব্যতীত অন্য মহল্লা বা পাড়ার কোন ব্যক্তিকে হত্যাকারী বলিয়া অভিযোগ করিলে তাহাকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষী উপস্থিত করিতে হইবে, অন্যথায় অভিযুক্ত ব্যক্তি শপথ করিয়া দায়মুক্ত হইয়া যাইবে এবং সে শপথ করিতে অস্বীকার করিলে তাহাকে আটকাবস্থায় রাখা হইবে যাবত না সে শপথ করে অথবা হত্যার দায় স্বীকার করে। ১২

৪৭৪

ধারা-৭৬৭ শপথকারীদের সংখ্যা পঞ্চাশের কম হইলে। (ক) কাসামাহ-এর আওতায় শপথকারীদের সংখ্যা যদি পঞ্চাশের কম হয় তাহা হইলে যত জন কম হইবে শপথকারীদের মধ্য হইতে তত সংখ্যক ব্যক্তি দ্বিতীয় বার শপথ করিবে এবং এইভাবে পঞ্চাশ সংখ্যা পূর্ণ করিতে হইবে।

(খ) নিহতের ওয়ারিস পঞ্চাশের অধিক ব্যক্তিকে শপথ করাইবার দাবি করিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

হযরত উমার ফারূক (র) কোন মহল্লার ৪৯ ব্যক্তিকে কাসামার আওতায় শপথ করান এবং তাহাদের মধ্য হইতে এক ব্যক্তিকে পুনর্বার শপথ করাইয়া পঞ্চাশ সংখ্যা পূর্ণ করেন।১৩

ধারা-৭৬৮

কাসামার অযোগ্য ব্যক্তিগণ (ক) নাবালেগ, পাগল ও স্ত্রীলোক কাসামার আওতায় পড়িবে নাঃ

তবে শর্ত থাকে যে, কোন মহল্লা বা পাড়ায় নাবালেগ অথবা পাগলের মালিকানাধীন ভূমিতে নিহত ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেলেই কেবল সেই ক্ষেত্রে নাবালেগ বা পাগল দিয়াত প্রদানে অংশীদার হইবে;

আরও শর্ত থাকে যে, কোন স্ত্রীলোকের বাসগৃহে অথবা যে স্থানে কেবল স্ত্রীলোকেরা বসবাস করে সেখানে নিহতের লাশ পাওয়া গেলে তথাকার স্ত্রীলোকেরা কাসামাহ ও দিয়াতের আওতায় পড়িবে।

বিশ্লেষণ

কাসামাহ্-ও এক প্রকার শপথ। শপথ করার জন্য যে যোগ্যতা থাকা জরুরী, (যেমন বালেগ হওয়া, সুস্থ বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হওয়া ইত্যাদি) তাহা নাবালেগ ও পাগলের মধ্যে অনুপস্থিত। অতএব তাহাদেরকে কাসামার আওতায় শপথ করানো

৪৭৫

যাইবে না, এমনকি তাহাদের মালিকানাভুক্ত জমীতে নিহত ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেলেও।

নাবালেগ ও পাগল যে মহল্লায় বাস করে সেই মহল্লায় নিহতের লাশ পাওয়া গেলে তাহাদের উপর দিয়াত ধার্য হইবে না। কেবল তাহাদের নিজস্ব মালিকানাভুক্ত স্থানে লাশ পাওয়া গেলেই তাহারা দিয়াত প্রদানে অংশীদার হইবে, যদি তাহাদের আর্থিক সংগতি থাকে। তবে ইমাম তাহাবী (র)-এর মতে তাহারা কোনও অবস্থায় দিয়াত প্রদানে অংশীদার হইবে না।

মাহজুর (যাহাকে নিজ আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা হইতে আদালত কর্তৃক বিরত রাখা হইয়াছে) ব্যক্তি কাসামাহ-এ শামিল হইবে না। মাহজুর ব্যক্তি দিয়াত প্রদানেও অংশগ্রহণ করিবে না। কারণ তাহার মাল থাকিলেও উহার ব্যবহার হইতে তাহাকে আইন কর্তৃক বিরত রাখা হইয়াছে। মায়ূন ( আদালত যাহাকে নিজ আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান করিয়াছে) ব্যক্তির বাসগৃহে নিহতের লাশ পাওয়া গেলে কেবল সেই ক্ষেত্রে সে দিয়াত প্রদানে বাধ্য থাকিবে।

কোন মহল্লা বা পাড়ায় নিহতের লাশ পাওয়া গেলে সেই মহল্লা বা পাড়ার নারীগণ কাসামাহ ও দিয়াতের আওতায় আসিবে না। তবে কোন স্ত্রীলোকের বাসগৃহে লাশ পাওয়া গেলে অথবা যেখানে স্ত্রীলোকেরা ব্যতীত পুরুষ লোক নাই সেই অবস্থায় নারীগণ কাসামাহ ও দিয়াতের আওতায় আসিবে। ইহা ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মাদ (র)-এর মত। ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে, নারীগণের উপর দিয়াত বাধ্যকর না হইয়া সংশ্লিষ্ট মহল্লা বা পাড়ার অধিবাসীদের উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। ইমাম ইবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (র)-এর যুক্তি এই যে, নারীগণ ব্যক্তিগতভাবে মালের মালিক হইতে পারে এবং তাহা স্বাধীনভাবে উপার্জন, হস্তান্তর ও ব্যবহার করিতে পারে। দ্বিতীয়ত, শপথ করার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকিতে হয় তাহা নারীর মধ্যে বিদ্যমান। অতএব সে দিয়াত প্রদানে অংশীদার হইবে। ইমাম আবু ইউসুফ (র) বলিয়াছেন যে, সামাজিক কোন ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করা স্ত্রীলোকদের উপর বাধ্যতামূলক নহে (যেমন অভাবী পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ স্বচ্ছল পুত্রের জন্য বাধ্যতামূলক হইলেও স্বচ্ছল কন্যার জন্য বাধ্যতামূলক নহে)। অতএব সে সম্মিলিতভাবে দিয়াত প্রদান হইতে অব্যাহতি পাইবে। ফকীহগণ প্রথমোক্ত মত গ্রহণ করিয়াছেন।

অন্ধ, বধির, যেনার অপবাদ আরোপের অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত ও অমুসলিম

৪৭৬

ব্যক্তিও কাসামাহ ও দিয়াতের আওতায় আসিবে। কারণ তাহারা সকলে শপথ করার যোগ্য এবং নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার যোগ্য লোকের অন্তর্ভুক্ত। ১৪।

ইসলামী শরীআর বিধান অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকার শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা উক্ত এলাকার বাসিন্দাদের দায়িত্ব। সেখানে কোন ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত হইলে তাহাকে বিপদমুক্ত করাও তাহাদের কর্তব্য। অতএব সেখানে কোন ব্যক্তিকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাহারা শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখিতে অবহেলা করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং এইজন্য তাহারা সম্মিলিতভাবে দায়ী হইবে। বিশেষত যে স্থান কোন ব্যক্তির মালিকানাভুক্ত সেই স্থানের উপর স্বীয় মালিকানা বজায় রাখার জন্য এবং উহার দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তি যেরূপ যত্নবান হয়, তদনুরূপ উক্ত স্থানে যাহাতে কোন অঘটন ঘটিতে না পারে তদপ্রতি লক্ষ্য রাখাও তাহার কর্তব্য। যদি সেখানে কোন অঘটন ঘটে তবে উক্ত ব্যক্তি তাহার দায়িত্বে অবহেলা করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। মহান আল্লাহ বলেঃ

لها ما كسبت وعليها ما اكتست ۔

“সে ভালো যাহা উপার্জন করে তাহা তাহারই এবং সে মন্দ যাহা উপার্জন করে তাহাও তাহারই”- (সূরা বাকারাঃ ২৮৬)।

মহানবী (স)-এর বাণী মোতাবেক মূলনীতে এই যেঃ

الخراج بالضمان.

“উপকার লাভ দায়িত্বের সহিত সংশ্লিষ্ট”।১৫

ধারা-৭৬৯

কাসামাহ ও দিয়াত হইতে দায়মুক্তি (ক) নিহতের ওয়ারিস সুস্পষ্ট বাক্যে কাসামাহ ও দিয়াতের দাবি ত্যাগ করিলে দায়বদ্ধ লোকেরা দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

(খ) যে মহল্লা বা পাড়ায় নিহতের লাশ পাওয়া গিয়াছে, নিহতের ওয়ারিস সেই মহল্লা বা পাড়া ব্যতীত অন্য মহল্লা বা পাড়ার লোককে হত্যার

8११

জন্য দায়ী করিলে উক্ত মহল্লা বা পাড়ার লোকেরা দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

কাসামাহ দাবি করা এবং দিয়াত লাভ করা নিহতের ওয়ারিসের অধিকার। সে স্বেচ্ছায় এই অধিকার ত্যাগও করিতে পারে। সে যদি পরিষ্কার বাক্যে বলে, ‘আমি দায়মুক্ত করিলাম’, ‘আমি নাকচ করিলাম’, ‘আমি ত্যাগ করিলাম’, ‘আমি ক্ষমা করিলাম’, অথবা অনুরূপ কোন বাক্য, তবে যেখানে নিহতের লাশ পাওয়া গিয়াছে সেখানকার লোকেরা কাসামাহ ও দিয়াতৈর দায় হইতে মুক্ত হইয়া যাইবে।

পরোক্ষভাবেও এই দায়মুক্তি ঘটিতে পারে। যেমন নিহতের লাশ যে স্থানে পাওয়া গিয়াছে, তাহার ওয়ারিস সেই স্থান ব্যতীত অন্য স্থানের কোন বাসিন্দাকে হত্যাকারী বলিয়া সনাক্ত করিলে উক্ত স্থানের লোকের দায়মুক্ত হইয়া যাইবে। কারণ তাহার উক্তরূপ কার্যক্রম তাহাদেরকে নিরপরাধ প্রমাণিত করে। ১৬

ধারা-৭৭০। স্বীকারোক্তি (১১) .

স্বীকারোক্তি ও উহার শর্তাবলী (ক) কোন ব্যক্তির নিজের উপর অপর ব্যক্তির বৈধ অধিকার স্বেচ্ছায় স্বীকার করিয়া লওয়াকে ইকরার বা স্বীকারোক্তি বলে।

(খ) স্বীকারোক্তিকারীকে বুদ্ধিমান (আকিল) ও বালেগ হইতে হইবে। অতএব নাবালেগ, পাগল ও জড়বুদ্ধিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি এবং তাহাদের অনুকূলে তাহাদের অভিভাবক ও ওসীর স্বীকারোক্তি সহীহ হইবে না। কিন্তু সগীর মুমায়্যিয, যাহাকে তাহার মাল সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালত কর্তৃক অনুমতি প্রদান করা হইয়াছে, তাহার স্বীকারোক্তি সহীহ হইবে।

(গ) যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করা হয় তাহার বালেগ হওয়া শর্ত নহে। অতএব কোন ব্যক্তি যদি স্বীকারোক্তি করে যে, কোন নাবালেগের মাল তাহার নিকট প্রাপ্য আছে তবে ঐ মাল নাবালেগকে প্রদান স্বীকারোক্তিকারীর জন্য বাধ্যকর হইবে।

(ঘ) স্বীকারোক্তিকারীর স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হইতে হইবে। অতএব

৪৭৮

যেখানে স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছাপ্রণােদিত নয় বলিয়া অবস্থাদৃষ্টে প্রমাণিত হয় সেখানে স্বীকারোক্তি করিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে না।

(ঙ) বাহ্যিক অবস্থা স্বীকারোক্তির সহিত অসংগতিপূর্ণ হইতে পারিবে না। অতএব নাবালেগ নিজেকে বালেগ বলিয়া দাবি করিয়া স্বীকারোক্তি করিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে না।

(চ) যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করা হয় তাহাকে পরিচিত বা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

স্বীকারোক্তির মূল পরিভাষা “ইকরার”। হিদায়া গ্রন্থে স্বীকারোক্তির নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছেঃ

الاقرار هو اخبار الانسان عن حق عليه لاخر .

“কোন ব্যক্তির নিজের উপর অপর ব্যক্তির কোন অধিকার প্রাপ্তির বর্ণনা প্রদানকে স্বীকারোক্তি বলে। ১৭

মহানবী (স) কোন ব্যক্তির স্বীকারোক্তি গ্রহণপূর্বক উহার ভিত্তিতে বিচার মীমাংসা করিয়াছেন। যেমন মাইয ইবন মালিক আল-আসলামীর এবং গামিদ গোত্রের এক নারীর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তিনি তাহাদের স্বস্ব মামলায় রায় প্রদান করিয়াছেন। ১৮

স্বীকারোক্তিকারী যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করে তাহার সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি হওয়া আবশ্যক। যেমন কোন ব্যক্তি যদি কোন মাল দেখাইয়া বলে যে, এই মাল এই শহরের কতিপয় লোকের এবং সে সেই লোকদের নামঠিকানা নির্দেশ করে নাই। এই অবস্থায় তাহার স্বীকারোক্তি সহীহ হইবে না। তবে স্বীকারোক্তিকারী যদি দুই বা তিন ব্যক্তিকে দেখাইয়া দিয়া বলে যে, উক্ত মাল এই দুই বা তিন জনের কোন একজনের তবে তাহার স্বীকারোক্তি সহীহ হইবে। এই অবস্থায় তাহাদের কোন একজন উক্ত মাল দাবি করিলে সে তাহা পাইয়া যাইবে।

ধারা-৭৭১

স্বীকারোক্তি যে পন্থায় সহীহ হয় (ক) নির্দিষ্ট মালের উল্লেখপূর্বক মালের মালিকানা ও দখল সম্পৰ্কীয়

৪৭৯

স্বীকারোক্তি করা যেমন বৈধ, মাল নির্দিষ্ট না করিয়া স্বীকারোক্তি করাও তেমন বৈধ। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে মাল নির্দিষ্ট না করিয়া চুক্তি সম্পাদন করিলে উক্ত চুক্তি সহীহ হয় না (যেমন ক্রয়-বিক্রয় ও ইজারা চুক্তি), সেইসব ক্ষেত্রে মাল নির্দিষ্ট না করিয়া স্বীকারোক্তি করিলে তাহা সহীহ হইবে না।

(খ) যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করা হয় সেই স্বীকারোক্তির অনুকূলে তাহার সম্মতি প্রকাশ আবশ্যকীয় নহে। কিন্তু সে যদি স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান করে তাহা হইলে উক্ত স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যাত হইবে এবং উহার কোন বৈধতা থাকিবে না। তবে সে যদি স্বীকারোক্তি আংশিক প্রত্যাখ্যান করে তাহা হইলে উক্ত স্বীকারোক্তি আংশিক সহীহ হইবে এবং আংশিক প্রত্যাখ্যাত হইবে।

(গ) স্বীকারোক্তিকারী এবং যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করা হইয়াছে তাহাদের মধে অধিকার সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে মতভেদ হইলে তাহাতে স্বীকারোক্তি শুধু সেই কারণে অবৈধ হইবে না।

(ঘ) কোন মাল সম্পর্কে সমঝোতার প্রস্তাব করা হইলে উক্ত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মালের স্বীকারোক্তি হিসাবে গণ্য হইবে। কিন্তু কোন মালের দাবি সম্পর্কে সমঝোতার প্রস্তাব করা হইলে উক্ত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মালের স্বীকারোক্তি হিসাবে গণ্য হইবে না।

(ঙ) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির দখলিভুক্ত মাল তাহার নিকট বিক্রয় করিবার, ইজারা দেওয়ার, গচ্ছিত রাখার, হেবা করার অথবা ঋণ হিসাবে প্রদান করার প্রস্তাব করিলে ইহার দ্বারা প্রমাণিত হইবে যে, উক্ত মাল তাহার নহে বলিয়া সে স্বীকারোক্তি করিয়াছে। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তাহার মাল আমানত হিসাবে রাখার প্রস্তাব করিলে এবং সে তাহাতে সম্মতি প্ৰকাশ করিলে তাহার সম্মতি দ্বারাও প্রমাণিত হইবে যে, উক্ত মাল তাহার নহে বলিয়া সে স্বীকারোক্তি করিয়াছে।

(চ) শর্তযুক্ত স্বীকারোক্তি বাতিল গণ্য হইবে। (ছ) মুশা (+ LAU)সম্পর্কে স্বীকারোক্তি সহীহ গণ্য হইবে।

(জ) বােবার সুস্পষ্ট ইংগিতে কৃত স্বীকারোক্তি সহীহ গণ্য হইবে, কিন্তু বাকশক্তিহীন ব্যক্তির সুস্পষ্ট ইংগিতে কৃত স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য হইবে না।

L

.

৪৮০

বিশ্লেষণ

মালের নাম নির্দিষ্ট করিয়া অথবা উহ্য রাখিয়া স্বীকারোক্তি করিলে তাহা বৈধ গণ্য হইবে। যেমন কোন ব্যক্তি বলিল যে, তাহার নিকট কোন ব্যক্তির মাল আমানত আছে, অথবা বলিল যে, সে অমুক ব্যক্তির মাল চুরি করিয়াছে অথবা গসব (অন্যায়ভাবে দখল করিয়াছে, এই অবস্থায় তাহার নিকট কি মাল আমানত রহিয়াছে, সে কোন্ মাল চুরি বা গসব করিয়াছে তাহা চিন্থিত করিবার জন্য তাহার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাহার উপর বলপ্রয়োগ করা যাইবে। কিন্তু সে যদি বলে, আমি অমুক ব্যক্তির নিকট কিছু বিক্রয় করিয়াছি, অমুক ব্যক্তির নিকট হইতে কিছু ইজারা লইয়াছি, তাহা হইলে তাহার স্বীকারোক্তি সহীহ হইবে না এবং মাল চিন্থিত করার জন্য তাহার উপর বল প্রয়োগ করাও যাইবে না।

‘স্বীকারোক্তিকারী ও যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করা হইয়াছে তাহাদের মধ্যে অধিকার সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে মতভেদ হইলে অর্থাৎ স্বীকারোক্তিকারী বলিলঃ অমুক ব্যক্তির ঋণ বাবদ আমার নিকট এক হাজার টাকা পাওনা আছে, কিন্তু পাওনাদার বলিল যে, ঐ টাকা তাহার নিকট বিক্রীত মালের মূল্য বাবদ পাওনা আছে, তবে এই মতভেদ স্বীকারোক্তি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হইবে না।

‘কোন মাল সম্পর্কে সমঝোতার (সুহ) প্রস্তাব করা হইলে অর্থাৎ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলিল, তোমার নিকট আমার যে এক হাজার টাকা পাওনা আছে তাহা পরিশোধ কর, অপর ব্যক্তি বলিল, আমি উহার পরিবর্তে সর্বসাকুল্যে সাত শত টাকা দিতে সম্মত আছি। এই কথার দ্বারা সে এক হাজার টাকার ঋণের স্বীকারোক্তি করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। কিন্তু বিবাদ মীমাংসার লক্ষ্যে যদি কেহ সমঝোতা স্থাপন করিতে চায় অর্থাৎ যদি কেহ বলে, “তোমার এই এক হাজার টাকার দাবি” আমার সহিত ছয় শত টাকায় সমঝোতা করিয়া লও, তবে তাহার এই কথার দ্বারা সে এক হাজার টাকার ঋণের স্বীকারোক্তি করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।

“শর্তযুক্ত স্বীকারোক্তি” অর্থাৎ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলিল, “আমি যদি অমুক স্থানে উপস্থিত হই” অথবা “আমি যদি অমুক কাজ করি” তাহা হইলে বুঝিবে যে, আমি তোমার নিকট এক হাজার টাকা ঋণী আছি। এই ধরনের শর্তযুক্ত স্বীকারোক্তি বাতিল গণ্য হইবে এবং উল্লেখিত পরিমাণ ঋণ পরিশোেধও

৪৮১

বাধ্যকর হইবে না। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি বলে, “অমুক মাসের ১লা তারিখ আসিলে আমি তোমার নিকট এক হাজার টাকা ঋণগ্রস্ত হইব” তবে সে এই কথার দ্বারা ভবিষ্যতে পরিশোধযোগ্য ঋণের স্বীকারোক্তি করিল ( 3 26 ) এবং নির্দিষ্ট তারিখ আসিলে সে উক্ত ঋণ পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবে।

“মুশা” অর্থাৎ কোন ব্যক্তি তাহার দখলিভুক্ত অবিভক্ত স্থাবর মাল সম্পর্কে যদি বলে যে, অমুক ব্যক্তি এই মালের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশের শরীক এবং যাহার অনুকূলে এই কথা বলা হইয়াছে সে তাহা সমর্থন করিয়াছে, তাহা হইলে উক্ত স্বীকারোক্তিকারীর মৃত্যুতে তাহার এই স্বীকারোক্তি বাতিল হইবে না এবং যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করা হইয়াছে সে উক্ত অবিভক্ত মালের অংশীদার হইবে।

ধারা-৭৭২। স্বীকারোক্তি সম্পর্কিত সাধারণ নীতিমালা (ক) মানুষের অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করা যায় এবং স্বীকারোক্তিকারী তাহার বক্তব্য অনুযায়ী বিচারের সম্মুখীন হইবে।

(খ) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে যদি বলে যে, তাহার নিকট নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার ঋণ পাওনা আছে এবং অপর ব্যক্তি যদি বলে যে, উক্ত টাকা তাহার প্রাপ্য নহে, বরং অমুক ব্যক্তির প্রাপ্য এবং প্রথমোক্ত ব্যক্তি যদি তাহার এই কথা সত্য বলিয়া সমর্থন করে তবে উক্ত স্বীকারোক্তি এই শেষোক্ত ব্যক্তির অনুকূলে বর্তাইবে।

(গ) কোন ব্যক্তি স্বীকারোক্তি করার পর যদি বলে যে, সে মিথ্যা স্বীকারোক্তি করিয়াছে, তাহা হইলে সে যাহার অনুকূলে স্বীকারোক্তি করিয়াছে সেই ব্যক্তিকে আদালতে শপথ করিয়া বলিতে হইবে যে, উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা স্বীকারোক্তি করে নাই।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি স্বীয় স্বীকারোক্তি দ্বারা দোষী সাব্যস্ত হইবে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি উপস্থিত হইয়া অপর ব্যক্তির দখলিভুক্ত একটি মাল নিজের বলিয়া দাবি করিল,

৪৮২

যাহা দখলদার কোন ব্যক্তির নিকট হইতে ক্রয় করিয়াছে। এই অবস্থায় দখলদার ব্যক্তি আদালতের সামনে বলিল, “এই মাল অমুক ব্যক্তির মালিকানায় ছিল, সে আমার নিকট ইহা বিক্রয় করিয়াছে,” এবং মালের দাবিদার ব্যক্তিও আদালতের সামনে তাহার অধিকার প্রমাণিত করিয়াছে এবং আদালতও তাহার অনুকূলে রায় প্রদান করিয়াছে, তখন ক্রেতা বিক্রেতার নিকট হইতে তাহার প্রদত্ত ক্রয়মূল্য আদায় করিবে। ক্রেতা যদি আগন্তক ব্যক্তির দাবি প্রত্যাখ্যান করিয়া বলে যে, বিক্রেতাই উক্ত মালের মালিক, তবে তাহার এই স্বীকারোক্তির কোন কার্যকারিতা নাই। কারণ আদালতের বিবেচনায় তাহার স্বীকারোক্তি মিথ্যা সাব্যস্ত হইয়াছে।

“মানুষের অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট স্বীকারোক্তি” অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বলিল, “আমি অমুক ব্যক্তির নিকট হইতে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়াছি,” অতপর বলিল, “আমি আমার এই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করিলাম,” তাহা হইলে তাহার এই প্রত্যাহার গ্রহণযোগ্য হইবে না। তাহার স্বীকারোক্তি মোতাবেক সে বিচারের সম্মুখীন হইবে।

“স্বীকারোক্তি করার পর সে যদি বলে যে, মিথ্যা স্বীকারোক্তি করিয়াছে,” অর্থাৎ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে লিখিতভাবে ঋণপত্র প্রদান করিল এবং তাহাতে লিখিয়া দিল, “আমি অমুক ব্যক্তির নিকট হইতে দশ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করিলাম,” পরে সে বলিল, “যদিও আমি তাহাকে স্বীকারোক্তিমূলে ঋণপত্র প্রদান করিয়াছি, কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে তাহার নিকট হইতে আজ পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করিনাই,” এই অবস্থায় যাহার অনুকূলে ঋণপত্র প্রদান করা হইয়াছে তাহাকে আদালতের সামনে এই মর্মে শপথ করিতে হইবে যে, সে মিথ্যা স্বীকারোক্তি করে নাই।

ধারা-৭৭৩ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি।) (ক) যদি কোন ব্যক্তির ওয়ারিস না থাকে, অথবা স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন ওয়ারিস না থাকে, তাহা হইলে মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় সে মাল সংক্রান্ত কোন স্বীকারোক্তি করিলে তাহা “ওসিয়াত” হিসাবে গণ্য হইবে এবং

৪৮৩

তাহা সহীহ হইবে। অতএব এই ধরনের কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় স্বীকারোক্তি করে যে, তাহার দখলিভুক্ত সমস্ত মালের মালিক অমুক ব্যক্তি, তাহা হইলে তাহার এই স্বীকারোক্তি বৈধ গণ্য হইবে এবং তাহার মৃত্যুর পর সরকার তাহার পরিত্যক্ত মাল বায়তুল মাল-এ অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবে না। অনুরূপভাবে যাহার স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন ওয়ারিস নাই সে যদি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় তাহার মালিকানা অস্বীকার করিয়া বলে যে, তাহার দখলিভুক্ত সমস্ত মালের মালিক তাহার স্বামী বা স্ত্রী, তবে তাহার উক্ত বিবৃতি বৈধ হইবে এবং তাহার মৃত্যুর পর সরকার তাহার পরিত্যক্ত মাল বায়তুল-মাল-এ অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবে না।

(খ) কোন ব্যক্তি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় কোন মাল সম্পর্কে স্বীকারোক্তি করিল যে, তাহার কোন ওয়ারিস উক্ত মালের মালিক, অতঃপর সে রোগমুক্ত হইয়া গেলে তাহার স্বীকারোক্তি বৈধ গণ্য হইবে।

(গ) কোন ব্যক্তি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় কোন স্থাবর মাল বা প্রাপ্য ঋণ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি করিল যে, উক্ত মাল বা ঋণের মালিক তাহার অমুক ওয়ারিস, অতঃপর সে মারা গেল, তাহার এই স্বীকারোক্তি অপরাপর ওয়ারিসের সম্মতি সাপেক্ষে বৈধ গণ্য হইবে। তাহারা সম্মতি প্রদান না করিলে উক্ত স্বীকারোক্তি বাতিল গণ্য হইবে। তবে তাহার জীবদ্দশায় তাহার ওয়ারিসগণ তাহার উক্ত স্বীকারোক্তি অনুমোদন করিলে তাহার মৃত্যুর পর তাহারা তাহাদের অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে না।

(গ) কোন ওয়ারিসের অনুকূলে আমানতের স্বীকারোক্তি সর্বাবস্থায় বৈধ গণ্য হইবে। অতএব কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় স্বীকারোক্তি করে যে, তাহার যে মাল তাহার অমুক ওয়ারিসের নিকট আমানত ছিল তাহা সে ফেরত পাইয়াছে, অথবা যদি বলে যে, তাহার নিকট তাহার অমুক ওয়ারিসের যে আমানত গচ্ছিত ছিল তাহা তাহার দ্বারা ধ্বংস হইয়া গিয়াছে, তবে তাহার এই স্বীকারোক্তি বৈধ গণ্য হইবে এবং তাহার পরিত্যক্ত মাল দ্বারা উহার ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে।

(ঘ) এই অধ্যায়ে ওয়ারিস বলিতে সেইসব লোককে বুঝাইবে যাহারা স্বীকারোক্তিকারীর মৃত্যুর সময় তাহার ওয়ারিস গণ্য হইবে। স্বীকারোক্তিকারীর মৃত্যুকালে নূতন কোন কারণে কোন ব্যক্তি তাহার ওয়ারিস

৪৮৪

হইলে ইহার দ্বারা তাহার পূর্বোক্ত স্বীকারোক্তি বৈধতা হারাইবে না, কিন্তু পুরাতন কারণে ওয়ারিস হইলে বৈধতা থাকিবে না।

(ঙ) মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি কোন আত্মীয়-সম্পর্কহীন নারীর অনুকূলে কোন মালের স্বীকারোক্তি করে, অতঃপর তাহাকে বিবাহ করার পর সে মারা যায় তাহা হইলে উক্ত স্বীকারোক্তি কার্যকর হইবে।

(চ) কোন ব্যক্তি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তির অনুকূলে কোন স্থাবর মাল বা ঋণের স্বীকারোক্তি করে তাহা হইলে উক্ত স্বীকারোক্তি বৈধ গণ্য হইবে, এমনকি তাহার সমস্ত মাল সম্পর্কে স্বীকারোক্তি করিলেও। কিন্তু তাহার স্বীকারোক্তি মিথ্যা প্রমাণিত হইলে অর্থাৎ স্বীকারোক্তি করাকালে সে ওয়ারিসীসূত্রে, ক্রয়সূত্রে অথবা দানসূত্রে স্বীকারোক্তিকৃত মালের স্বত্ব লাভ করিয়াছে, এই অবস্থায় ওসিয়াতের কথাবার্তা চলাকালে (১) উক্ত স্বীকারোক্তি করা না হইয়া থাকিলে তাহা হেবা (দান) গণ্য হইবে এবং এক-তৃতীয়াংশ মাল হস্তান্তর বাধ্যকর হইবে;

(২) উক্ত স্বীকারোক্তি করা হইয়া থাকিলে তাহা ওসিয়াত হিসাবে গণ্য হইবে এবং এক-তৃতীয়াংশ মাল প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ছ) কোন ব্যক্তি সুস্থাবস্থায় ঋণ গ্রহণ করিয়া থাকিলে এবং মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায়ও স্বতন্ত্র ঋণের স্বীকারোক্তি করিলে প্রথমে তাহার পরিত্যক্ত মাল হইতে সুস্থাবস্থার ঋণ পরিশোধযোগ্য হইবে, অতঃপর উদ্বৃত্ত মাল থাকিলে তাহা দ্বারা স্বীকারোক্তিকৃত ঋণ পরিশোধযোগ্য হইবে। অনুরূপভাবে মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় ধারে কিছু ক্রয় করিলে তাহাও ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় স্বীকারকৃত ঋণের আগে পরিশোধযোগ্য হইবে।

(জ) কোন ব্যক্তি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় তাহার কোন ওয়ারিসের দেনা অথবা দাবির কাফীল (যামিন) হওয়ার স্বীকারোক্তি করিলে তাহা বলবৎযোগ্য হইবে না, তবে ওয়ারিস হওয়ার স্বীকারোক্তি করিলে তাহা তাহার পরিত্যক্ত মালের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কার্যকর হইবে।

:

. ৪৮৫।

. ৪৮৫

ধারা-৭৭৪

লিখিত স্বীকারোক্তি

(ক) কোন ব্যক্তির লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি তাহার মৌখিক স্বীকারোক্তির সমতুল্য গণ্য হইবে।

(খ) কোন ব্যক্তি নিজের স্বীকারোক্তি অপর ব্যক্তিকে লিখিয়া দেওয়ার নির্দেশ দিলে এবং সে তাহা লিখিয়া দিলে উহাও তাহার স্বীকারোক্তি হিসাবে গণ্য হইবে।

(গ) কোন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতায় তাহার লিখিত বিষয়ও তাহার লিখিত স্বীকারোক্তি হিসাবে গণ্য হইবে।

(ঘ) কোন ব্যক্তি লিখিতভাবে ঋণের স্বীকারোক্তি করিলে তাহা কার্যকর হইবে।

(ঙ) কোন ব্যক্তি লিখিতভাবে ঋণের স্বীকারোক্তি করার পর মারা গেলে এবং তাহার ওয়ারিসগণ উক্ত ঋণপত্রের সত্যতা স্বীকার করিলে অথবা অস্বীকার করার ক্ষেত্রে তাহা জাল প্রমাণিত না হইলে তাহার পরিত্যক্ত মাল হইতে উক্ত ঋণ পরিশোধ করা বাধ্যকর হইবে।

(চ) কোন মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত মালের মধ্যে এমন কোন মাল পাওয়া গেলে, যাহার উপর পরিষ্কার ভাষায় লেখা আছে যে, উক্ত মাল অমুক ব্যক্তির এবং তাহা তাহার নিকট আমানত রাখা হইয়াছে”, উক্ত মাল নামোল্লেখিত ব্যক্তির প্রাপ্য হইবে।

ধারা-৭৭৫

মাআকিল

মাআকিল ও আকিলা (ক) দিয়াত পরিশোধের দায় কেবল অপরাধীর উপর না বর্তাইয়া অন্যদের উপরও বর্তাইলে উক্তরূপ দিয়াতকে “ম্মাআকিল” বলে।

(খ) অপরাধীর উপর ধার্যকৃত মাআকিল পরিশোধে যাহারা অংশগ্রহণ করে তাহাদেরকে আকিলা (13) বলে।

৪৮৬

(গ) কতলে শিব্‌হে আম্‌দ, কতলে খাতা ও ভুলবশত আহত ( ৪) করার

কারণে অপরাধীর উপর ধার্যকৃত “মাআকিলই আকিলা” বহন করিবে এবং অপরাধীও আকিলার মধ্যে শামিল থাকিবে।

তবে শর্ত থাকে যে, মাআকিলের পরিমাণ পূর্ণ দিয়াতের এক-পঞ্চমাংশের কম হইলে তাহা আকিলা বহন না করিয়া কেবল অপরাধীই বহন করিবে।

(ঘ) অপরাধী কতলে শিব্‌হে আম্‌দ, কতলে খাতা ও ভুলবশত আহত করার স্বীকারোক্তি করিলে অথবা ক্ষগ্রিস্ত পক্ষের সহিত সমঝোতা (c L০) করিলে সেই ক্ষেত্রে শুধু অপরাধীই আর্থিক দায় বহন কিরবে, আকিলা উহাতে শরীক হইবে না।

(ঙ) চাকুরিজীবির আকিলা হইবে তাহার সংস্থায় কর্মরত চাকুরিজীবীগণ?

তবে শর্ত থাকে যে, নারী চাকুরিজীবী আকিলার অন্তর্ভুক্ত হইবে না। (চ) কোন ব্যক্তির আকিলা হইবে পর্যায়ক্রমে-তাহার বংশ, গোত্র ও প্রতিবেশীগণ, কিন্তু নারীগণ ও নাবালেগগণ আকিলার অন্তর্ভুক্ত হইবে না।

(ছ) যিম্মীর আকিলা হইবে তাহার আত্মীয়-স্বজন ও স্বধর্মী প্রতিবেশীগণ। (জ) লিআনকারিনীর সন্তানের আকিলা হইবে তাহার মাতুল গোষ্ঠী। (ঝ) জারজ সন্তানের আকিলা হইবে তাহার মাতুল গোষ্ঠী।

(ঞ) আকিলার প্রত্যেক সদস্য সর্বমোট তিন অথবা চার দিরহাম করিয়া মাআকিলের দায় বহন করিবে।

(ট) যাহাদের কোন আকিলা নাই তাহাদের উপর ধার্যকৃত মাআকিল বায়তুল মাল হইতে পরিশোধযোগ্য হইবে।

(ঠ) আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের তারিখ হইতে তিন বৎসরের সহজ কিস্তিতে মাআকিল পরিশোধযোগ্য হইবে।

(ড) শহরবাসী গ্রামবাসীর এবং গ্রামবাসী শহরবাসীর আকিলা হইবে না। (চ) স্বামী স্ত্রী এবং স্ত্রী স্বামীর আকিলা হইবে না। (ন) পুত্র মাতার আকিলা হইবে না।

তবে শর্ত থাকে যে, পিতা মাতার পিতৃকূলের বংশীয় আত্মীয় হইলে পুত্র মাতার আকিলা হইবে।

1ণবদ্ধ ইসলামী আইন

.৪৮৭

বিশ্লেষণ

‘মাআকিল’ (3 ) শব্দটি মাক্লাহ (15 ) শব্দের বহুবচন, অর্থ তিরোধ, বন্ধন; পারিভাষিক অর্থ ‘দিয়াত’। দিয়াত যেহেতু মানুষকে রক্তপাত টানো হইতে বিরত রাখে তাই ইহার মাআকিল নামকরণ করা হইয়াছে। যাহারা অপরাধীর সহিত এই জাতীয় অর্থদণ্ড ভোগে শরীক হয় তাহারা ‘আকিলা হিসাবে গণ্য। কারণ সংখ্যায় অধিক হওয়ার কারণে তাহারা তাহাদের সহিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রক্তপাত ঘটানো হইতে বিরত রাখে এবং তাহারা নিজেরাও আর্থিক দণ্ড ভোগ করার কারণে সতর্কতার সহিত রক্তপাত ঘটানো হইতে বিরত থাকিবে।

মহানবী (স) ও খােলাফায়ে রাশেদীনের কার্যক্রম দ্বারা মাআকিল ব্যবস্থা অনুমোদিত। হামল ইব্‌ন মালিক (র) শীর্ষক হাদীসে মহানবী (স) অপরাধীর অভিভাবকগণকে বলিলেনঃ “তোমরা প্রস্তুত হও এবং তাহার দিয়াত পরিশোধ কর”। ঘটনাটি এই যে, ইবন মালিকের এক স্ত্রী অপর গর্ভবতী স্ত্রীর প্রতি তাবুর খুঁটি নিক্ষেপ করিলে তাহার গর্ভপাত হইয়া যায় এবং ভূমিষ্ঠ ভ্রণ ও প্রসূতী উভয়ে নিহত হয়। মহানবী (স) ক্রুণের জন্য একটি ক্রীতদাসী বা দাস আযাদ করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং অপরাধী স্ত্রীর গোত্রকে নিহত স্ত্রীর ওয়ারিসদের দিয়াত (মাআকিল) পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করেন।

কতলে শিব্‌হে আমৃন্দ, কতলে খাতা ও ভুলবশত আহত করার অপরাধের জন্য ধার্যকৃত মাআকিলই কেবল আকিলা পরিশোধ করিবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের সহিত অপরাধীর আপোষ-মীমাংসার মাধ্যমে অথবা অপরাধের স্বীকারোক্তি করার কারণে দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইলে সেই ক্ষেত্রে অপরাধী এককভাবে দায় বহন করিবে, তাহার আকিলা উহাতে শরীক হইবে না। অনন্তর ধার্যকৃত দিয়াতের পরিমাণ পূর্ণ দিয়াতের এক-পঞ্চমাংশের কম হইলে সেই ক্ষেত্রেও আকিলা দিয়াতের দায় বহন হইতে রেহাই পাইবে। অনন্তর কতলে আম্‌দ-এর দিয়াতও আকিলা বহন করিবে না। উহার সম্পূর্ণটাই অপরাধীকে বহন করিতে হইবে। মহানবী (স) বলেনঃ

بنقل العاقتهما ولا عبدا ولا صلا ولا

اعترافا ولا مادون آر” ش المؤضحة.

৪৮৮

“কতলে আম্‌দ, গোলাম, সমঝোতা ও স্বীকারোক্তির কারণে আরোপিত দিয়াত আকিলা বহন করিবে না এবং মূদিহার কম পরিমাণ দিয়াতেও অংশগ্রহণ করিবে ন।”

কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত ব্যক্তির আকিলা হইবে ঐ প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত ব্যক্তিগণ (আহ্লুদ দীওয়ান)। অবশ্য পূর্বকালে (আকিলার ক্ষেত্রে) দীওয়ান বলিতে কেবল সৈন্যবিভাগকে বুঝাইত। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর কোন ইউনিটের কোন সৈনিকের ঘাড়ে মাআকিলের দায় চাপিলে তাহা তাহার ইউনিটের সৈনিকগণকে বহন করিতে হইত। হযরত উমার (রা) তাঁহার খিলাফতকালে উক্তরূপ মীমাংসা প্রদান করিয়াছেন। কিন্তু বর্তমান কালের ফকীহগণের মতে, দীওয়ান বলিতে সরকারী, আধা-সরকারী ও বেসরকারী যে কোন সংস্থাকে বুঝাইবে। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মচারীদের মধ্যে দিয়াত প্রদানের দায় বণ্টন করার পরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তাহা অপরাধীর বংশ বা গোত্রের সদস্যদের উপর আরোপিত হইবে। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, মহিলা কর্মচারীগণ ও নাবালেগগণ মাআকিল জাতীয় দিয়াতের দায় হইতে মুক্ত থাকিবে।

কোন ব্যক্তির উপর মাআকিলের দায় বর্তাইলে তাহা তাহার বংশ ও গোত্রের সদস্যগণ কর্তৃক পরিশোধযোগ্য হইবে। তাহাদের দ্বারা সম্পূর্ণ দেয় শোধ না হইলে সংশ্লিষ্ট মহল্লা বা প্রতিবেশীদের উপর তাহা বর্তাইবে। শহরের কোন লোক গ্রামাঞ্চলে গিয়া তথায় হত্যাকাণ্ড ঘটাইলে এবং উহার পরিণতিতে তাহার উপর মাআকিল ধার্য হইলে তাহা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গ্রামবাসীগণের উপর না বৰ্তাইয়া অপরাধীর আকিলার উপর বর্তাইবে। অনুরূপভাবে গ্রামের কোন অধিবাসী শহরে যাইয়া হত্যাকাণ্ড ঘটাইলে এবং তাহার উপর মাআকিল ধার্য হইলে শহরবাসীগণ তাহার দায় বহন করিবে না।

যিম্মী অর্থাৎ মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকের উপর মাআকিলের দায় বর্তাইলে তাহা তাহার গোত্র ও স্বধর্মীয় প্রতিবেশীগণের উপর পরিশোধ করা বাধ্যকর হইবে। এই বিষয়ে মুসলিম নাগরিকদের ক্ষেত্রে যেইরূপ বিধান, যিম্মীদের ক্ষেত্রেও তদনুরূপ বিধান প্রযোজ্য হইবে।

ইবনুল মুলাইনা অর্থাৎ লিআনকারিনীর সন্তানের অপরাধের কারণে তাহার উপর মাআকিলের দায় বর্তাইলে তাহা ইবনুল মুলাইনার মাতুল গোষ্ঠী বহন করিবে। কারণ তাহার বংশ তাহার মায়ের সূত্রে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত, পিতার

৪৮৯

সূত্রে নহে। তবে পিতা পরে তাহাকে নিজ সন্তান বলিয়া দাবি করিলে তাহার মাতুল গোষ্ঠী তাহার পিতার আকিলার নিকট হইতে মাআকিল বাবদ প্রদত্ত অর্থ আদায় করিয়া লইবে। জারজ সন্তানের বিধানত্ত তদ্রূপ।

আকিলা মাআকিল বহন করিলে সেই ক্ষেত্রে মাথা পিছু প্রক্যেক সদস্যকে তিন অথবা চার দিরহাম আদায় করিতে হইবে, ইহার অতিরিক্ত নহে। কারণ অপরাধীর দায় হালকা বা সহজতর করার জন্যই তাহা তাহাদের উপর বণ্টন করা হইয়াছে। সুতরাং তাহাদের উপর অতিরিক্ত বােঝা চাপাইলে তাহা তাহাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শনের শামিল হইবে। তাহা সংগত নহে। তবে আকিলার সংখ্যা অধিক হইলে তাহাদের নিকট হইতে মাথাপিছু তিন বা চার দিরহামের কম আরোপ করা যাইবে। আর আকিলার সংখ্যা কম হইলে সেই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আকিলার সংগে উহার নিকটতর আকিলাও শরীক হইবে। ১৯।

কোন অপরাধীর আকিলা না থাকিলে বায়তুল মাল তথা রাজকোষ হইতে তাহার উপর আরোপিত মাআকিল পরিশোধযোগ্য হইবে। যেমন লাকীত (পরিত্যক্ত শিশু), যাহার পিতা-মাতা কে তাহা অজ্ঞাত। সে বড় হইয়া অপরাধ সংঘটন করিলে তাহার দিয়াত বায়তুল মাল হইতে পরিশোধযোগ্য হইবে। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর তাহার উপর মাআকিল আরোপিত হইলে, অথবা শক্ররাষ্ট্রের নাগরিক (হারবী) দারুল ইসলামে অপরাধ করার কারণে তাহার উপর মাআকিল আরোপিত হইলে তাহা বায়তুল মাল হইতে পরিশোধযোগ্য হইবে। ২০.

তিন বৎসরে সহজে আদায়যোগ্য কিস্তিতে মাআকিল পরিশোধ করিতে হইবে। কত কিস্তিতে এবং কি পদ্ধতিতে উহা পরিশোধ করিতে হইবে তাহা আদালত নির্ধারণ করিয়া দিবে। রায় প্রদানের তারিখ হইতে তিন বৎসর গণনা করা হইবে। অবশ্য আদালত যদি মনে করে যে, অপরাধী পক্ষ এক বা একাধিক কয়েকটি কিস্তিতে মাআকিল পরিশোধ করিতে সক্ষম তবে আদালত তদনুরূপ নির্দেশও প্রদান করিতে পারে। ২১।

স্বামী-স্ত্রী একে অপরের এবং পুত্র মাতার আকিলা হইবে না। কিন্তু পিতা মাতার পিতৃ বংশীয় আত্মীয় হইলে, যেমন চাচাত ভাই, পুত্র মাতার আকিলা হইবে। ২২

৪৯০

 ..

ধারা-৭৭৬ নাবালেগ ও পাগলের উপর ধার্যকৃত দিয়াত (ক) নাবালেগ ও পাগলের উপর আরোপিত দিয়াত আকিলা বহন করিবে।

(খ) কোন ব্যক্তির আদেশক্রমে নাবালেগ অপর ব্যক্তিকে হত্যা করিলে উহার দিয়াত আদেশদাতা ও তাহার আকিলা বহন করিবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, আদেশদান সাক্ষ্যের দ্বারা প্রমাণিত হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

নাবালেগ বা পাগল ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলবশত কোন ব্যক্তিকে হত্যা বা আহত করিলে তাহাদের উপর কিসাস বাধ্যকর হইবে না, বরং দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। এই দিয়াত প্রদান নাবালেগ বা পাগলের পরিবার, বংশ বা গোত্রের উপর বাধ্যকর হইবে। শাফিঈ মাযহাবমতে নাবালেগের জ্ঞান-বুদ্ধির উন্মেষ হইলে (সগীর মুমায়্যিয) এবং সে কোন ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করিলে তাহা ‘কতলে আম্‌দ’ গণ্য হইবে, কিন্তু তাহার মৃত্যুদণ্ড হইবে না। তাহাকে নিজের মাল হইতে দিয়াত পরিশোধ করিতে হইবে এবং তাহার পরিবার, বংশ বা গোত্র তাহার দিয়াত বহন করিবে না।২৩

আদেশের মাধ্যমে নাবালেগ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করিলে আদেশদাতা যে প্রকৃতই তাহাকে আদেশ প্রদান করিয়াছে তাহা সাক্ষ্য-প্রমাণে সাব্যস্ত হইতে হইবে। অন্যথায় নাবালেগের আকিলা দিয়াতের দায় বহন করিবে। আর আদেশদাতা আদেশদানের স্বীকারোক্তি করিলে তাহার মাল হইতে দিয়াত পরিশোধ বাধক্যর হইবে এবং তাহার আকিলা দিয়াতের দায় হইতে মুক্ত থাকিবে। ২৪

৪৯১

তথ্য নির্দেশিকা

১. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৩৯৩।

القسامة هي الايمان المكررة في دعوى القتل و هي خمسون يمينا من خمسين رجلا اهل المحلة التي وجد فيها القتيل .

আরও দ্র. বাদাইউস সানাই, ৭৩, পৃ. ২৮৬; তাবঈনুল হাকাইক, ৬খ, পৃ. ১৬৯; দুররুল

মুখতার, ৫, পৃ. ৪৪২। ২. ফিহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৩৯৩।

بالله ما قتلته ولا علمت له قاتلا.

৩. বাদাইউস সানাই, কিতাবুল জিয়াত, বাবুল কাসামাহ, ৭খ; পৃ. ২৮৬; ফিকহুল ইসলামী,

আল-ফাসলুল খামিস-তুরুকু ইছবাতিল জিয়াত, আল-মাবহাছুছ-ছানীঃ কাসামাহ, ৬খ, পৃ.

৩৯৩-৪। ৪. ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৩৯৪, মুসলিম, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদের বরাতে (নায়লুল

আওতার, ৭খ, পৃ. ৩৪)। ৫. পূর্বোক্ত বরাত, দারু কুতনীর বরাতে (নায়লুল আওতার, ৭খ, পৃ. ৩৯)। ৬. পূর্বোক্ত বরাত (নায়লুল আওতার, ৭খ, পৃ. ৩৪; মুসনাদে আহমাদ; মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ,

বাংলা অনু, কিতাবুদ দিয়াত (রক্তপণ), অনুচ্ছেদ ১৪ (কাসামাহ), নং ৬৮২, পৃ. ৪১৩-৪। ৭. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৩৯৬-৭। ৮. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৩৯৭; নিম্নোক্ত গ্রন্থসমূহের বরাতেঃ বাদাই, ৭, পৃ. ২৮৮; তাকমিলা

ফাতহুল কাদীর, ৮, পৃ. ৩৮৩; তাবঈনুল হাকাইক, ৬খ, পৃ. ১৬৯। ৯. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ২৮৭-৯; তাবঈনুল হাকাইক, ৬খ, পৃ. ১৭১; দুররুল মুখতার, ৫খ, পৃ.

৪৪৩-৪; ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪০০-৪০৩। ১০. বাদাইউস সানাই, ৭৩, পৃ. ২৮৭-৯; ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪০০-৪০৩। ১১. বাদাই, ঐ। ১২. বাদাই, ৭খ, ফাসল ইবরা। ১৩. বাদাই, কিতাবুল জিয়াত, বাবুল কাসামাহ, ৭খ.। ১৪. বাদাইউস সানাই, ৭খ, কিতাবুল জিয়াত, বাবুল কাসামাহ। ১৫. বাদাইউস সানাই, ৭খ, কিতাবুল জিয়াত, বাবুল কাসামাহ। ১৬. বাদাই, ৭খ, কিতাবুল জিয়াত, বাবুল কাসামাহ। ১৭. হিদায়া, কিতাবুল ইকরার। ১৮. হিদায়া, কিতাবুল ইকরার। ১৯. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৪৩৮

৪৯২

معاقل جمع المعقلة الغرم . صار دمه معفلة على قومه .

: (fore feraT

?

TS

,

Sr aa

(

aranfee

,يا .,,SITY

وتسمى الدية عقل اومعقلا لانها تعقل الدماء من أن تسفك ای تمسك .

২০. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৪৩৮ঃ

العاقلة اي الجماعة العاقلة يقال عقل القتيل فهو عاقل اذا غرم

ديته. و الجماعة عاقلة و سميت بذالك لإن الابل تجمع فتعقل بفناء اولياء المقتول ای تشد في عقلها لتسلم اليهم.

– و 005 .3

elsa3a fe.

من يحملون دية الخطأ، وهم ع بة الرجل وعند بعضهم اهل ديوانه وعند آخرين اهل نصرته. العاقلة اهل ديوان لمن هو منهم وقبيلته التي تحميه ممن ليس منهم . قال النسفي العاقلة الذين يودون الدية . وعند الشافعي العاقلة اهل العشيرة و هم العصبات..

(. 990)

আলামগীরী, ৬খ, পৃ. ৮৩ঃ।

العاقلة الذين يعقلون العقل ای يؤدون الدية.

২১. মাআকিল সংশ্লিষ্ট সম্পূর্ণ আলোচনাটির জন্য দ্র. হিদায়া, কিতাবুল মাআকিল, ৪খ, পৃ. ৬২৯-৩৮;

বাদাইউস সানাই, কিতাবুল জিয়াত, ফাসল আকিলা, ৭৩, পৃ. ২৫৫; আলামগীরী, কিতাবুল জিয়াত, ৬খ, ১৬শ বাব (মাআকিল); ফিকহুল ইসলামী, ৬খ।

اما .*,(gif/8) 313 لاند, II2 .33 S

/

= Tr

=

*

*

,

for

;ا ۹۹ .9,98,12 –

g2I

<

<

<

<

I . 99 SIST ي faz31) دين .9,87,3 15 = f .مد

দুররুল মুখতার, ৫খ, পৃ. ৪১৫প; বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২খ, পৃ. ৪০৪প; আল-কাওয়ানীনুল

ا (198 .,27,f 3II

,

*

.

08 ۹

;

215 SIT

A2CTS

,

87

,

9

.

So

;

SIR

SAIPA16

.

fanfal, 87, 9. bob

38. fan1?l, for

যাকাত

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *