1 of 2

৩১. হাজর (প্রতিবন্ধকতা) ও ইকরাহ (অবৈধ বলপ্রয়োগ)

অধ্যায় : ৩১ হাজর (প্রতিবন্ধকতা) ও ইকরাহ (অবৈধ বলপ্রয়োগ)

ধারা-৭৪৮

ইকরাহ-এর সংজ্ঞা (ক) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ক্ষমতা বঞ্চিত করিয়া তাহার স্বেচ্ছাসম্মতি ব্যতীত কোন কাজ করিতে বাধ্য করিলে তাহাকে ‘ইকরাহ’ (১২)।) বা অবৈধ বলপ্রয়োগ বলে।

(খ) যে ব্যক্তি কাজ করিতে বাধ্য করে তাহাকে মুকরি (s বলপ্রয়োগকারী বলে। ‘ (গ) যাহাকে কাজ করিতে বাধ্য করা হয় তাহাকে মুরাহ (১২) বা বলপ্রয়োগকৃত বলে।

(ব) কথা বা কার্যের দ্বারা যে কাজ করিতে বাধ্য করা হয় সেই কাজকে ‘মুকরাহু আলায়হ”.c১২০ ) রা.”বলপ্রয়োগে কৃত কাজ”বলে।

(ঙ) যে “উপায়” বা উপকরণের সাহায্যে বলপ্রয়োগ করা হয় সেই উপায় বা উপকরণকে “স্মাকরূহু বিহু” (4২, বা “বলপ্রয়োগে ব্যবহৃত অস্ত্র” বলে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অপর ব্যক্তির উপর নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে তাহার স্বেচ্ছাসম্মতি ও কর্তৃত্বশক্তি বিলুপ্ত করিয়া

৪৪৬

তাহাকে কোন কাজ করিতে বাধ্য করিলে শক্তি প্রয়োগকারীর উক্ত আচরণকে “ইকরাহ’ বা ‘‘অবৈধ বল প্রয়োগ” বলে। হিদায়া গ্রন্থে বলা হইয়াছেঃ

لأن الإكراه اسم لفعل يفعله المربی ره فينتفى به رضاه أو يفسد به اختياره مع

– 4,121 vi,

‘ইকরাহ” এমন কাজের নাম যাহা স্বেচ্ছাসম্মতি প্রদানের ও এখতিয়ার প্রয়োগের যোগ্য কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছাসম্মতি ও এখতিয়ার বঞ্চিত হইয়া অপর ব্যক্তির জন্য করে।”

যেমন কয়েকজন অস্ত্রধারী দুস্কৃতিকারী এক যুবককে রাস্তা হইতে ধরিয়া নিয়া নির্জনে কোথাও বন্দী করিয়া বলিল, তুমি এই মদ পান না করিলে অথবা এই মৃতজীবের গোশত ভক্ষণ না করিলে আমরা তোমাকে এই অস্ত্র দ্বারা হত্যা করিব অথবা তোমার অংগছেদন করিব। যুবকটি উক্ত হারাম কাজে লিপ্ত হইতে সম্মতি বা অসম্মতি প্রদানের বা এখতিয়ার প্রয়োগের যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও দুষ্কৃতিকারীদের অস্ত্রের মুখে তাহার উক্ত যোগ্যতা প্রয়োগে অক্ষম হইয়া পড়িল এবং অনিচ্ছায় উক্ত কাজ করিল। এই ধরনের যাবতীয় কার্যক্রম “ইকরাহ” বা অবৈধ বলপ্রয়োগের আওতাভুক্ত।

এখানে দুষ্কৃতিকারীরা ‘মুকরি” (অবৈধ বলপ্রয়োগকারী), তাহাদের অবৈধ বলপ্রয়োগের কার্যক্রমটি ‘ইাহ’’, বলপ্রয়োগে কৃত কার্যটি “মুকরাহ আলায়হ”, কার্যটি সম্পাদনকারী ‘‘মুকরাহ’, এবং দুষ্কৃতিকারীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ‘মাকরূহ বিহু” হিসাবে গণ্য।

ধারা-৭৪৯

ইকরাহ্ -এর শ্রেণীবিভাগ ইকরাহ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত—(ক) ইকরাহে তাম (পূর্ণ বলপ্রয়োগ) : বলপ্রয়োগকারী বলপ্রয়োগকৃতের দ্বারা যে কাজ করাইতে চাহে সে তাহা না করিলে তাহার জীবন নাশ করা হইবে অথবা অঙ্গ কর্তন করা হইবে এইরূপ

৪৪৭

ভীতি প্রদর্শন করিলে তাহা ইকরাহে তাম (es। SI বা পূর্ণ বলপ্রয়োগ গণ্য এইবে। (খ) ইকরাহে নাকিস (অপূর্ণ বলপ্রয়োগ)ঃ বলপ্রয়োগকারী বলপ্রয়োগকৃতকে জীবননাশ বা অংগহানির ভয় না দেখাইয়া বরং কয়েদ করার, হাতে-পায়ে শৃংখল পরাইয়া রাখার বা মারপিট করার ভীতি প্রদর্শন করিলে তাহা ইকরাহে নাকি ( ১৪বা অপূর্ণ বলপ্রয়োগ গণ্য হইবে।

ধারা ৭৫০

ইকরাহ-এর শর্তাবলী ইকরাহ বা অবৈধ বলপ্রয়োগের শর্তাবলী নিম্নরূপ—(ক) মুকরিহ (বলপ্রয়োগকারী) যেই কাজ করাইতে ভীতি প্রদর্শন করিতেছে তাহা সংঘটিত করার এবং ভীতি কার্যকর করার সামর্থ্য তাহার থাকিতে হইবে, অন্যথায় তাহার বলপ্রয়োগ বিবেচনাযোগ্য হইবে না;

(খ) মুকরা অর্থাৎ বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তির প্রবল ভীতি জন্মিতে হইবে যে, সে উদ্দিষ্ট কাজ না করিলে তাহার উপর নিশ্চয়ই বলপ্রয়োগ করা হইবে অর্থাৎ বলপ্রয়োগকারী তাহার দ্বারা যে কাজ করাইতে চাহে সে তাহা না করিলে বলপ্রয়োগকারী যে শাস্তির ভয় দেখাইতেছে তাহা কার্যকর করিবে।

(গ) সংশ্লিষ্ট কাজটি বলপ্রয়োগকারী বা তাহার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সংঘটিত হইলে কেবল তাহা বলপ্রয়োগে সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন কাজ অবৈধ বলপ্রয়োগে কৃত হইয়াছে বলিয়া সাব্যস্ত করিতে হইলে তিনটি শর্ত বিদ্যমান থাকিতে হইবে। যেমন বলপ্রয়োগকারী যে শাস্তির ভয় দেখাইতেছে তাহা কার্যকর করার শক্তি তাহার থাকিতে হইবে। বল প্রয়োগের বা শাস্তি কার্যকর করার সামর্থ্য তাহার না থাকিলে তাহার দ্বারা ভীতসন্ত্রস্ত হইয়া কোন ব্যক্তির কৃত কাজ বলপ্রয়োগে সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।

দ্বিতীয়তঃ বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তিরও নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মিতে হইবে যে, বলপ্রয়োগকারীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না করিলে সে তাহাকে যে শাস্তির ভয়

৪৪৮

দেখাইতেছে তাহা কার্যকর করিবে। এইরূপ নিশ্চিত বিশ্বাস না জন্মিলে তাহার দ্বারা কৃত কাজটি তাহার স্ব-ইচ্ছায় সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

তৃতীয়তঃ বলপ্রয়োগে কৃত কাজটি বলপ্রয়োগকারী বা তাহার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সংঘটিত হইতে হইবে। যেমন বলপ্রয়োগকারী কোন ব্যক্তিকে বলিল, তুমি তোমার অমুক মাল অমুক ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করিবে, অন্যথায় তোমাকে হত্যা করিব বা তোমার অংগ কর্তন করিব। মাল বিক্রয়ের সময় বলপ্রয়োগকারী অথবা তাহার প্রতিনিধি কেহই উপস্থিত না থাকিলে বিক্রয়ের কাজটি বলপ্রয়োগে সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না; বরং তাহা মালিকের স্বেচ্ছা-সম্মতিতে হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

ধারা—৭৫১

বলপ্রয়োগে কৃত লেনদেন বলপ্রয়োগে কৃত লেনদেন যেমন ক্রয়-বিক্রয়, মাল হস্তান্তর, ভাড়া প্রদান বা গ্রহণ, হেবা, মাল সম্পর্কে সমঝোতা স্থাপন, ঋণস্বীকার, শুফআর দাবিত্যাগ ইত্যাদি কার্যকর হইবে না। তবে বলপ্রয়োগ সম্পূর্ণ দূরীভূত হওয়ার পর বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তি লেনদেনের স্বীকৃতি প্রদান করিলে তাহা কার্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বলপ্রয়োগকারী কোন ব্যক্তিকে হত্যা, অঙ্গহানি, পাশবিক নির্যাতন বা বন্দী করার ভয় প্রদর্শন করিয়া তাহার মাল ক্রয় করিল, অথবা তাহার বাড়ি ভাড়ায় গ্রহণ করিল, অথবা ঋণের স্বীকারোক্তি করাইল অথবা শুফআর দাবি ত্যাগ করিতে বাধ্য করিল অথবা তাহার মাল বলপ্রয়োগকারীর দখলে ছাড়িয়া দিতে বাধ্য করিল। এই অবস্থায় বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তি বলপ্রয়োগের পরিস্থিতি হইতে মুক্তিলাভের পর ইচ্ছা করিলে উক্ত লেনদেন বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে। কারণ পারস্পরিক লেনদেন কেবল পক্ষদ্বয়ের স্বেচ্ছাসম্মতির ভিত্তিতে সহীহ হইতে পারে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

11ধিবদ্ধ ইসলামী আইন

৪৪৯

৪৪৯

گم۔

الأ أن تكون تجارة عن تراض

“কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাজী হইয়া ব্যবসায় করা বৈধ” (সূরা নিসাঃ ২৯)।

ধারা-৭৫২

হারাম বস্তু ভক্ষণে বাধ্য করা হইলে

কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে মৃত জীব বা হারাম প্রাণীর গোশত খাইতে বা হারাম পানীয় পান করিতে বাধ্য করার জন্য তাহাকে কয়েদ করিলে অথবা

দৈহিক নির্যাতন করিলে তাহার জন্য উল্লেখিত জিনিস ভক্ষণ বা পান করা বৈধ হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাহার জীবননাশের অথবা অঙ্গহানির আশংকা করিবে।

বিশ্লেষণ

বলপ্রয়োগকারী জীবননাশ বা অঙ্গহানি করিতে উদ্যত হইলে তখনই কেবল হারাম জিনিস ভক্ষণ বা পান করা বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তির জন্য বৈধ হইবে। সাধারণ নির্যাতন বা হুমকির মুখে তাহা ভক্ষণ বা পান করা বৈধ হইবে না।”

ধারা-৭৫৩ অপরের মাল ধ্বংস করিতে বাধ্য করা হইলে (ক) বলপ্রয়োগকারী বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তিকে জীবন সংহারক বা অঙ্গছেদক অস্ত্রের দ্বারা ভয় প্রদর্শন করিয়া কোন ব্যক্তির মাল নষ্ট বা ধ্বংস করিতে বাধ্য করিলে এবং সে তাহা না করিলে তাহার জীবননাশ বা অংগহানির প্রবল আশংকা জন্মিলে অপরের মাল ধ্বংস করা তাহার জন্য বৈধ হইবে।

(খ) মালের মালিক বলপ্রয়োগকারীর নিকট হইতে তাহার মালের ক্ষতিপূরণ আদায় করিবে এবং আদালতের বিবেচনায় বলপ্রয়োগকারীর তাযীরের আওতায় অতিরিক্ত শাস্তিও হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

. সংকটাপন্ন অবস্থায় কোন ব্যক্তির জন্য অপরের মালে হস্তক্ষেপ করা বৈধ হইয়া যায়। বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তি নিরুপায় হইয়া জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে অনিচ্ছা

৪ ৫০

সত্ত্বেও অপরের মাল নষ্ট বা ধ্বংস করিতে বাধ্য হইয়াছে। তাই সে নির্দোষ। কিন্তু বলপ্রয়োগকারী স্বেচ্ছায় অন্যায়ভাবে বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তিকে অপরের মাল নষ্ট বা ধ্বংস করিতে বাধ্য করিয়াছে। তাই সে উহার ক্ষতিপূরণ করিতে বাধ্য এবং সে অপরের উপর অন্যায়ভাবে বলপ্রয়োগের জন্য অতিরিক্ত শাস্তিও ভোগ করিবে যাহার ধরন ও পরিমাণ আদালতের বিবেচনায় নির্ধারিত হইবে।

ধারা-৭৫৪ বলপ্রয়োগে আল্লাহর সহিত শিরক করিতে বাধ্য করা হইলে (১) কোন ব্যক্তিকে বলপ্রয়োগে আল্লাহর সহিত শরীক করিতে অথবা রাসূলুল্লাহ (স)-কে গালি দিতে বাধ্য করা হইলে—(ক) বলপ্রয়োগ ভীতি প্রদর্শন, দৈহিক নির্যাতন বা কয়েদের পর্যায়ভুক্ত হইলে উক্ত কাজ করা তাহার জন্য বৈধ হইবে না;

(খ) সে তাহার জীবননাশ বা অঙ্গহানির প্রবল আশংকা করিলে অন্তরে ঈমান লুকাইয়া রাখিয়া তাহার জন্য বাহ্যিকভাবে উক্ত কাজ করা বৈধ হইবে।

(২) বলপ্রয়োগকারী আদালতের সুবিবেচনা অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করিবে।

বিশ্লেষণ

একমাত্র অঙ্গহানি বা জীবননাশের প্রবল আশংকা করিলেই বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তির জন্য বাহ্যিকভাবে আল্লাহ্র সহিত শরীক করা বা রাসূলুল্লাহ (স)-কে গালি দেওয়া বা ইসলামের কোন অকাট্য বিধান অমান্য করার অনুমতি রহিয়াছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

u

من كفر بالله من بعد ايمانه الأ من أكره وقلبه مطمئن بايمان ولكن من شرح بالكفر صدرا فعليهم غضب من الله ولهم عذاب عظيم

৪৫১

“কোন ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহ্র সহিত কুফরী করিলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত করিয়া দিলে তাহার উপর আপতিত হইবে আল্লাহর গযব এবং তাহার জন্য আছে মহাশাস্তি; তবে তাহার জন্য নহে যাহাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তাহার হৃদয় ঈমানে অবিচল থাকে” –(সূরা নাহলঃ ১০৬)।

আম্মার ইবন ইয়াসির (রা) ও আরও কয়েকজন সাহাবী মক্কা থেকে মদীনায় পলায়ন করিলে পথিমধ্যে তাঁহারা মক্কার মুশরিকদের হাতে ধৃত হন। মুশরিকরা তাহাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে এবং বলে, তোমরা মুহাম্মাদ (স)-কে গালি দিলে এবং আমাদের প্রতীমাগুলির প্রশংসা করিলে আমরা তোমাদেরকে মুক্ত করিয়া দিব। আম্মার (রা) তাহাদের কথামত কাজ করেন এবং তাহারা তাহাকে মুক্ত করিয়া দেয়। তিনি মদীনায় পৌছিয়া রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট ঘটনার বর্ণনা দিলে তিনি তাহাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার হৃদয়ের অবস্থা তখন কিরূপ ছিল? তিনি বলেন, ঈমানে অবিচল ছিল। মহানবী (স) বলেন, কখনও উত্তরূপ পরিস্থিতির শিকার হইলে পুনরায় অনুরূপ করিও। ৬

ধারা-৭৫৫

হাজর (মাল হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা) (ক) মাল হস্তান্তরের প্রতিবন্ধকতাকে “হাজর” ( )বলে এবং যাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপিত হয় তাহাকে “ম্মাহজুর” (3, লে।

(খ) প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধিকার তুলিয়া নেওয়াকে অনুমতি প্রদান”। বলে এবং অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মায়ূন (১) বলে।

(গ) যে নাবালেগ ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় বুঝে না অর্থাৎ বিক্রয়ের দ্বারা মালিকানা স্বত্ব বিলুপ্ত হইয়া যায় এবং ক্রয়ের দ্বারা মালিকানা স্বত্ব অর্জিত হয় তাহা বুঝে না এবং প্রতারণা ও অতি মূল্যের মধ্যে পার্থক্য করিতে সক্ষম নহে তাহাকে সগীর গায়র মুমায়্যিষ” (২০ ১ ১৭ বলে এবং

যে নাবালেগ পার্থক্য করিতে সক্ষম তাহাকে সগীর মুমায়্যিয” (১L০ ) বা “বুদ্ধিমান নাবালেগ”বলে।

৪৫২

(ঘ) যে ব্যক্তি সব সময় মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় থাকে তাহাকে ‘মাজনূন মুতবাক” (GMT 5$১r বা বদ্ধ পাগল”বলে এবং যে ব্যক্তি কখনও মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় আবার কখনও সুস্থ অবস্থায় থাকে তাহাকে ‘মাজনূন গায়র মুতবাক”(6%• ১ ১৪ বা আধা পাগল” বলে।

(ঙ) বুদ্ধিভ্রষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ যাহার বােধশক্তি কম, কথাবার্তা বিশৃংখল এবং কার্যক্রম দোষদুষ্ট, তাহাকে “মাতৃহ” (১aj1) বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ বলে।

(চ) যে ব্যক্তি তাহার মাল অপ্রয়োজনে খরচ করিয়া, প্রয়োজনীয় খাতে অপব্যয় করিয়া ও অপচয় করিয়া ধ্বংস করে তাহাকে সাফীহ ( 1) বা নির্বোধ বলে।

(ছ) যে ব্যক্তি সযত্নে নিজের মাল রক্ষণাবেক্ষণ করিতে সক্ষম এবং বােকামী ও অপব্যয় হইতে দূরে থাকে তাহাকে “বুদ্ধিমান” ( J)বলে।

৫. ০

+

+

..

ধারা—৭৫৬ প্রতিবন্ধকতা আরোপিত ব্যক্তিদের শ্রেণীবিভাগ ও তাহার বিধান (ক) নাবালেগ, পাগল ও মাতূহ ব্যক্তিগণই মূলতঃ মাহুজুর (১১ ) বা প্রতিবন্ধকতাপ্রাপ্ত হিসাবে গণ্য এবং তাহাদেরকে তাহাদের মাল সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ হইতে বিরত রাখা যাইতে পারে।

(খ) সাফীহ-কে তাহার মাল সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ হইতে আদালত বিরত রাখিতে পারে।

(গ) পাওনাদারগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত দেনাদারকে তাহার মাল সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ হইতে বিরত রাখিতে পারে।

(ঘ) উপরের ধারাসমূহে বর্ণিত প্রতিবন্ধকতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ মৌখিকভাবে মাল হস্তান্তর করিলে, যেমন ক্রয়-বিক্রয় করিলে, তাহা সহীহ হইবে না, কিন্তু তাহাদের উপরোক্ত কার্যের দ্বারা ক্ষতি বা লোকসান ঘটিলে তাহারা ক্ষতিপূরণ করিতে বাধ্য হইবে।

(ঙ) যাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হইবে তাহার আদালতে

1.11বদ্ধ ইসলামী আইন

৪৫৩

উপস্থিত থাকা অপরিহার্য নহে, তাহার অনুপস্থিতিতে প্রতিবন্ধকতা আরোপ। করা হইলে তাহা সহীহ হইবে; তবে ইহার বিজ্ঞপ্তি অবশ্যই প্রতিবন্ধকতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট পৌছাইতে হইবে এবং তাহাকে যতক্ষণ তাহা অবহিত না করা হইবে ততক্ষণ সে প্রতিবন্ধকতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নহে এবং উক্ত সময়ে কৃত তাহার চুক্তি বা লেনদেন বৈধ গণ্য হইবে।

(চ) কোন ব্যক্তিকে কেবল তাহার দুষ্টামীর কারণে প্রতিবন্ধকতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা যাইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাহার মাল অপচয় বা অপব্যয় করে।

(ছ) জনস্বার্থে কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যায়, যেমন অদক্ষ চিকিৎসককে তাহার পেশা হইতে বিরত রাখা যায়; কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতা তাহার মাল সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।

(জ) কোন ব্যক্তি বাজারে কোন ব্যবসা বা কারিগরি পেশা নির্বাহ করিলে একই ব্যবসা বা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এই বলিয়া তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনিলে যে, তাহার ব্যবসা বা পেশা তাহাদের কর্ম বা মুনাফার জন্য ক্ষতিকর, উহার ভিত্তিতে তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা যাইবে না।

ধারা৭৫৭ নাবালেগ, পাগল ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির সহিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় বিধান

(ক) সগীর গায়র মুমায়্যিয কর্তৃক তাহার মাল হস্তান্তর সর্বাবস্থায় অবৈধ। (খ) সগীর মুমায়্যিয তাহার জন্য লাভজনক কার্য, যেমন দান গ্রহণ করা, এমনকি তাহার অভিভাবকের সম্মতি ব্যতীত করিলেও তাহা বৈধ ও কার্যকর হইবে; কিন্তু তাহার স্বার্থহানিকর কোন কার্য, যেমন কোন ব্যক্তিকে কিছু দান করা, এমনকি তাহার অভিভাবকের সম্মতিতে করিলেও তাহা বৈধ হইবে না; তবে সে কোন চুক্তি করিলে, তাহা তাহার জন্য লাভজনক বা ক্ষতিকর যাহাই হউক, তাহার অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে কার্যকর হইবে এবং তাহার সম্মতি প্রদান তাহার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। অতএব সে তাহা নাবালেগের জন্য উপকারী মনে করিলে সম্মতি প্রদান করিবে এবং ক্ষতিকর মনে করিলে সম্মতি প্রদান করিবে না।

৪৫৪

উদাহরণঃ সগরীর মুমায়্যিয তাহার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত এমনকি বাজারদর অপেক্ষা অধিক মূল্যে তাহার মাল বিক্রয় করিলে তাহা তাহার অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে কার্যকর হইবে। কারণ বিক্রয় চুক্তি সেইসব চুক্তির অন্তর্ভুক্ত যাহার দ্বারা লাভবান হওয়ার যেমন সম্ভাবনা থাকে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

(গ) সগীর মুমায়্যিয-এর অভিভাবক পরীক্ষামূলকভাবে তাহার নিকট কিছু মাল অৰ্পণ করিয়া উহার দ্বারা তাহার বুদ্ধিমত্তা যাচাই করিয়া তাহাতে সে পরিপক্ক প্রমাণিত হইলে তাহার মাল তাহার নিকট অৰ্পণ করিতে পারে এবং সে যদি সুষ্ঠুভাবে উহার ব্যবস্থাপনা করিতে সক্ষম বলিয়া প্রমাণিত হয় তবে তাহার অবশিষ্ট মালও তাহার নিকট অৰ্পণ করিবে।

(ঘ) কোন অভিভাবক সগীর মুমায়্যিযকে বাজারে কোন মালের ব্যবসা করিবার বা ক্রয়-বিক্রয় করিবার অনুমতি প্রদান করিলে তাহাকে অনবরত ব্যবসা করিতে অনুমতি প্রদান করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে; কিন্তু তাহাকে বাজারে একবার মাত্র কোন মাল ক্রয় বা বিক্রয়ের অনুমতি প্রদান করা হইলে তাহা ব্যবসা করিবার অনুমতি প্রদান করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।

(ঙ) অভিভাবকের প্রদত্ত অনুমতি নির্দিষ্ট স্থান বা কালে নির্দিষ্ট কোন প্রকার ব্যবসা দ্বারা সীমাবদ্ধ হইবে।

উদাহরণঃ কোন সগীর মুমায়্যিযকে তাহার অভিভাবক এক দিন বা এক মাসের জন্য ব্যবসা করিবার অনুমতি প্রদান করিলে সে অনুমতি লাভ করার বাধ্যবাধকতা হইতে সব সময়ের জন্য মুক্ত হইয়া যাইবে এবং তাহার অভিভাবক তাহার উপর আর কোন বাধানিষেধ আরোপ করিতে পারিবে

। অনুরূপভাবে সে তাহাকে কোন নির্দিষ্ট বাজারে অথবা কোন নির্দিষ্ট মালের ব্যবসা করিবার অনুমতি প্রদান করিলে সে যে কোন বাজারে এবং যে কোন মালের ব্যবসা করিতে পারিবে।

(চ) মৌখিক বা লিখিতভাবে যেমন সম্মতি প্রদান করা যায় তেমনিভাবে মৌনতাও সম্মতি গণ্য হইতে পারে।

উদাহরণঃ কোন অভিভাবক সগীর মুমায়্যিযকে বাজারে ব্যবসা করিতে দেখিয়া নীরব রহিল এবং তাহাকে নিষেধ করিল না, তাহার এই নীরবতা সম্মতি হিসাবে গণ্য হইবে।

‘ • • ইসলামী আইন

৪৫৫

(ছ) অভিভাবক কর্তৃক অনুমতি প্রদানের পর অনুমতিপ্রাপ্ত সগীর মুমায়্যিষ নালেগ ব্যক্তির সমকক্ষ গণ্য হইবে এবং তাহার কৃত আর্থিক চুক্তিসমূহ বৈধ

গণ্য হইবে।

(জ) অভিভাবক তাহার প্রদত্ত অনুমতি প্রত্যাহার করিতে পারিবে এবং তাহা সে যে পন্থায় প্রদান করিয়াছে সেই পন্থায় প্রত্যাহার করিবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, অনুমতিপ্রাপ্ত সগীর মুমায়্যিয দ্বারা কোন কাজ করা হইলে এবং তদ্বারা অন্য কোন ব্যক্তির অনুকূলে কোন স্বার্থ উপজাত হইলে তাহা প্রত্যাহার করা যাইবে না।

উদাহরণঃ কোন ব্যক্তি তাহার অধীনস্থ নাবালেগকে অনুমতি প্রদানের পর তাহা জনসমক্ষে প্রচার করিয়াছে। দ্রুপ তাহা প্রত্যাহার করিলেও জনসমক্ষে প্রচার করিতে হইবে, নিজ বাড়িতে দুই বা তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে প্রত্যাহার করিলে তাহা কার্যকর হইবে না।

(ঝ) এই অধ্যায়ে পর্যায়ক্রমে নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ অভিভাবক হিসাবে গণ্য হইবেন এবং একজনের অনুপস্থিতিতে তাহার পরবর্তী জন অভিভাবক গণ্য হইবেন—

(১) নাবালেগের পিতা;

(২) পিতার মৃত্যুর পর তাহার জীবদ্দশায় নিয়োগকৃত সর্বময় কর্তৃত্ব সম্পন্ন ওসী;

(৩) সর্বময় কর্তৃত্ব সম্পন্ন ওসীর মৃত্যুর পর তাহার জীবদ্দশায় তাহার নিয়োগকৃত ওসী;

(৪) পিতামহ (দাদা) অথবা পিতার পিতামহ (পরদাদা); (৫) পিতামহ বা পিতার পিতামহ কর্তৃক তাহার জীবদ্দশায় নিয়োগকৃত সর্বময় কর্তত্ব সম্পন্ন ওসী;

(৬) সর্বময় কর্তৃত্ব সম্পন্ন ওসীর নিয়োগকৃত ওসী;

(৭) বিচারক, অথবা বিচারক কর্তৃক নিযোগকৃত ওসী।

(ঞ) ভ্রাতা, চাচা অথবা অন্য কোন নিকটাত্মীয় অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত না হইয়া থাকিলে তাহার প্রদত্ত অনুমতির কোন আইনগত বৈধতা নাই।

(ট) সগীর মুমায়্যিযের মাল তৎকর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে আদালত

৪৫৬

তাহার কল্যাণ লক্ষ্য করিলে সে অভিভাবক কর্তৃক আরোপিত প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করিতে পারে এবং ইহার পর আর কোন অভিভাবক তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করিতে পারিবে না।

(ঠ) অভিভাবক কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি তাহার মৃত্যুর সংগে সংগে বাতিল হইয়া যাইবে, কিন্তু বিচারক কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি তাহার মৃত্যুর বা বরখাস্তের কারণে বাতিল হইব না।

‘ড) বিচাবক কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি পুনরায় তৎকর্তৃক বা তাহার স্থলাভিষিক্ত বিচারক কর্তৃক প্রত্যাহৃত হইতে পারে; বিচারকের মৃত্যু বা বরখাস্তের পর নাবালেগের পিতা অথবা দাদা অথবা অন্য কোন অভিভাবক তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করিতে পারিবে না।

(ঢ) “আহ” বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি সগীর মুমায়্যিয-এর বিধানের আওতাভুক্ত।

(ণ) মাজনূন মুতবাক” বা বদ্ধ পাগল ব্যক্তি সগীর গায়র মুমায়্যিয-এর বিধানের আওতাভুক্ত।

(ত) মাজনূন গায়র মুতবাক” বা অর্ধ-পাগল ব্যক্তির সুস্থ থাকা অবস্থায় কৃত কার্যাবলী সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তির কার্যাবলীর অনুরূপ গণ্য হইবে।

(থ) নাবালেগের মাল বালেগ হওয়ার সংগে সংগে তাহার নিকট হস্তান্তর করা যাইবে না, বরং তাহাকে যাচাই করার পর মাল রক্ষণাবেক্ষণে সামর্থ্যবান প্রমাণিত হইলে তাহার নিকট তাহার মাল হস্তান্তর করিতে হইবে এবং সামর্থ্যবান প্রমাণিত না হইলে হস্তান্তর স্থগিত থাকিবে। এই অবস্থায় তাহার নিকট মাল হস্তান্তর করা হইলে এবং তাহা তাহার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইলে তাহার অভিভাবক উহার জন্য দায়ী হইবে। নিজ মাল রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষম প্রমাণিত হওয়ার পর উহা তাহার নিকট হস্তান্তর করা হইলে এবং নির্বোধের (4_ মত তাহা অপচয় বা ধ্বংস করিতে থাকিলে অভিভাবক আদালতের শরণাপন্ন হইয়া তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপের আবেদন করিবে।

(দ) পুরুষের ক্ষেত্রে স্বপ্নদোষ হইলে এবং নারীর ক্ষেত্রে মাসিক ঋতু হইলে অথবা উভয়ে পরবৎসর বয়সে পদার্পণ করিলে তাহারা বালেগ বলিয়া গণ্য হইবে।

৪৫৭

ধারা—৭৫৮ প্রতিবন্ধকতা আরোপিত সাফীহ (নির্বোধ) (১৪ এiLJI) (ক) যে সাফীহ” বা নির্বোধ ব্যক্তি তাহার মাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করে এবং যাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপিত আছে তাহার লেনদেন সগীর মুমায়্যি-এর বিধানের আওতাভুক্ত হইবে; কিন্তু কেবল বিচারক যে নির্বোধের অভিভাবক তাহার পিতা, দাদা বা পিতার দাদার তাহার উপর

অভিভাবকত্বের অধিকার নাই।

(খ) প্রতিবন্ধকতা আরোপের পর নির্বোধ ব্যক্তির আর্থিক কার্যক্রম বা লেনদেন বাতিল গণ্য হইবে এবং প্রতিবন্ধকতা আরোপের আগের কার্যক্রম বৈধ গণ্য হইবে।

(গ) প্রতিবন্ধকতা আরোপিত নির্বোধের ও তাহার পরিবারের ভরণপোষণ তাহার মাল হইতে নির্বাহ করা হইবে।

(ঘ) সে তাহার মাল বিক্রয় করিলে তাহা কার্যকর হইবে না, তবে আদালত উক্ত বিক্রয়ে তাহার কল্যাণ লক্ষ্য করিলে তাহা অনুমোদন করিবে।

(ঙ) সে নিজের উপর অপরের ঋণের স্বীকারোক্তি করিলে তাহা বৈধ হইবে, এমনকি প্রতিবন্ধকতা আরোপের সময় তাহার মাল বিদ্যমান থাকিলেও অথবা পরে অস্তিত্ব লাভ করিলেও।

(চ) তাহার নিকট মানুষের পাওনা তাহার মাল হইতে পরিশোধিত হইবে।

(ছ) সে ঋণ গ্রহণ করিয়া তাহা নিজের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করিলে এবং তাহা ন্যায়সংগত পরিমাণ হইলে আদালত তাহা তাহার মাল দ্বারা পরিশোধ করিয়া দিবে, এবং ন্যায়সংগত পরিমাণের অধিক হইলে শুধু ন্যায়সংগত পরিমাণ পরিশোধ করিবে এবং অতিরিক্ত অংশ বাতিল ঘোষণা করিবে।

(জ) সে উপযুক্ত অবস্থায় ফিরিয়া আসিলে আদালত তাহার উপর আরোপিত প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করিবে।

৪৫৮

ধারা-৭৫৯ প্রতিবন্ধকতা আরোপিত দেনাদার

(المديون المحجور)

(ক) ঋণদাতাহাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নিকট যদি প্রমাণিত হয় যে, কোন ব্যক্তির স্বীয় ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাহা পরিশোধ করিতেছে না, তাহা হইলে আদালত তাহার মাল সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাহার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করিতে পারে। দেনাদার তাহার মাল বিক্রয় করিয়া পাওনাদারগণের ঋণ পরিশোধে অস্বীকৃত হইলে আদালত তাহার মাল বিক্রয় করিয়া উক্ত ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করিতে পারে। আদালত মাল বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দেনাদারের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখিবে এবং নিম্নোক্ত পন্থায় তাহার দেনা পরিশোধ করিবে

(১) প্রথমে দেনাদারের নগদ অর্থ দ্বারা; তাহাতে সংকুলান না হইলে (২) তাহার অস্থাবর মাল দ্বারা; তাহাতেও সংকুলান না হইলে (৩) তাহার স্থাবর মাল (ঘারবাড়ি) দ্বারা।

(খ) দেনাদার নিজের উপর অপরের ঋণের স্বীকারোক্তি করিলে অথবা দেউলিয়া (মুফলিস) হইলে অর্থাৎ তাহার দেনার পরিমাণ তাহার মালের সমান বা অধিক হইলে এবং সে তাহার মাল ব্যবসা করিয়া, কালোবাজারী করিয়া ধ্বংস করিতে অথবা অপরের অনুকূলে হস্তান্তর করিতে পারে এইরূপ আশংকা করিয়া পাওনাদারগণ আদালতে তাহার মাল সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ হইতে তাহাকে বিরত রাখিবার আবেদন করিলে আদালত তাহার উপর “প্রতিবন্ধকতা আরোপ করিবে।

(গ) প্রতিবন্ধকতার আওতাধীন দেনাদার ও তাহার ভরণপোষণাধীন ব্যক্তিগণের ভরণপোষণের ব্যবস্থা প্রতিবন্ধকতা চলাকালে তাহার মাল হইতে করিতে হইবে।

(ঘ) প্রতিবন্ধকতা আরোপকালে দেনাদারের যে পরিমাণ মাল ছিল কেবল ঐ মালের উপর উক্ত প্রতিবন্ধকতা কার্যকর হইবে এবং পরে সে যে মাল অর্জন করিবে সেই মালের উপর উক্ত প্রতিবন্ধকতা কার্যকর হইবে না।

(ঙ) পাওনাদারগণের স্বার্থহানিকর, দেনাদারের এইরূপ যে কোন কার্য, যেমন দান-খয়রাত, ওয়াকফ, হেবা, বাজারদরের তুলনায় কম মূল্যে মাল বিক্রয় ইত্যাদি, প্রতিবন্ধকতার আওতায় পড়িবে। অতএব প্রতিবন্ধকতা

৪৫৯

চলাকালে তাহার উক্তরূপ কার্যক্রম সহীহ হইবে না। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা আরোপের পর তাহার অর্জিত মালের ক্ষেত্রে তাহার উক্তরূপ কার্যক্রম সহীহ ও আইনত বলবৎযোগ্য হইবে।

(চ) প্রতিবন্ধকতা চলাকালে দেনাদার নিজের উপর অপরের ঋণের স্বীকারোক্তি করিলে প্রতিবন্ধকতা আরোপকালে তাহার যে মাল ছিল উহার দ্বারা উক্ত ঋণ পরিশোধযোগ্য হইবে না, বরং প্রতিবন্ধকতার মেয়াদ শেষ হইলে পরিশোধযোগ্য হইবে, অথবা প্রতিবন্ধকতা আরোপের পর সে যে মাল অর্জন করিয়াছে সেই মালের দ্বারা উহা পরিশোধযোগ্য হইবে।

হইলে ঋণ পরিশোধযোগ্য হইলোপকালে তাহার যে মাল চিণের

ধারা-৭৬০

তালজিয়া ভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় (ক) যেই ক্ষেত্রে মালের লেনদেনে যাহা বাহ্যত দেখা যায় তাহা প্রকৃত অবস্থার বিপরীত, সেই ক্ষেত্রে কোন প্রয়োজনে উহা করা হইয়া থাকিলে তাহাকে ত্যালজিআ” বলে।

(খ) তালজিয়ার অধীন ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি পক্ষদ্বয়ের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ফাসিদ গণ্য হইবে।

(গ) পক্ষদ্বয় যদি বলে যে, তালজিয়ার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি করার পূর্বক্ষণে তাহারা মত পরিবর্তন করিয়া প্রকৃত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি করিয়াছে তবে উক্ত চুক্তি বৈধ গণ্য হইবে। * (ঘ) এক পক্ষ তালজিয়ার অধীন ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার এবং অপর পক্ষ তালজিয়ার কথাবার্তা ত্যাগ করিয়া প্রকৃত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবি করিলে শেষোক্ত পক্ষের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং উক্ত চুক্তি বৈধ গণ্য হইবে।

(ঙ) পক্ষদ্বয় তালজিয়ার অধীন চুক্তি সম্পাদনে একমত হওয়ার পর যদি দাবি করে যে, চুক্তি সম্পাদনকালে তাহাদের মনে কোন খেয়াল ছিল না, তবে উক্ত চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে।

(চ) তালজিয়ার অধীন ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কেবল এক পক্ষের অনুমতি দ্বারা উক্ত চুক্তি প্রকৃত চুক্তি হিসাবে গণ্য হইবে না, যতক্ষণ না অপর পক্ষও অনুমতি ব্যক্ত করে।

৪৬০

বিশ্লেষণ

তালজিআ ( 13) শব্দটি

শব্দ হইতে গৃহীত, যাহার অর্থ আশ্রয় লওয়া বা আশ্রয়স্থল অর্থাৎ বিশেষ কোন প্রয়োজনে কোন কিছুর আশ্রয় গ্রহণ। পরিভাষায় এমন কোন কাজ করিতে বাধ্য করা যাহার বাহ্যিক দিক প্রকৃত দিকের বিপরীত। যেমন এক ব্যক্তি বাহ্যত অপর ব্যক্তিকে বলিল, আমি আমার বাড়িটি ৮০,০০০.০০ টাকায় তোমার নিকট বিক্রয় করিলাম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহা

ক্রয়-বিক্রয় ছিল না।

তালজিআর অধীন কৃত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি ফাসিদ হওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যে দ্বিমত নাই। তালজিআর পদ্ধতিতে চুক্তি করার আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর চুক্তি সম্পাদনের পূর্বক্ষণে পক্ষদ্বয় মত পরিবর্তন করিয়া প্রকৃত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি করিলে তাহা সহীহ হওয়ার ব্যাপারেও ফকীহগণের মধ্যে দ্বিমত নাই।

ধারা (ঘ)-এ ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মত উল্লেখ করা হইয়াছে। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ ও আবু ইউসুফ (র)-এর মতে উক্ত চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। কারণ চুক্তি দুই পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইয়াছে তাহাতে এক পক্ষ দ্বিমত করিয়াছে। ধারা (ঙ)-এ ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মত উল্লেখ করা হইয়াছে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে উক্ত চুক্তি বৈধ গণ্য, হইবে এবং তালজিআ পরিত্যক্ত সাব্যস্ত হইবে। তালজিআ পদ্ধতিতে কৃত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। উহাকে বৈধ চুক্তিতে পরিণত করিতে হইলে এক পক্ষের অনুমতি যথেষ্ট হইবে না, এইজন্য উভয় পক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হইবে।

৪৬১

তথ্য নির্দেশিকা

১. হিদায়া, কিতাবুল ইরাহ, ৩, পৃ ৩৩০। ২. হিদায়া, কিতাবুল ইহ, ৩৩, পৃ. ৩৩০; আলামগীরী, কিতাবুল ইব্রাহ, বাবুল আওয়াল; তুর্কী

মাজাল্লা, ধারা ১০০৩, ১০০৪, ১০০৫। ৩. হিদায়া, কিতাবুল ইকরাহ, ৩৩, পৃ. ৩৩০; তুর্কী মাজাল্লা, ধারা ১০০৬। ৪. হিদায়া, কিতাবুল ইকরাহ, ৩, পৃ. ৩৩২। ৫. হিদায়া, কিতাবুল ইকরাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৩। ৬. হাকেমের আল-মুসতদরাক-এর বরাতে হিদায়ার ২নং টীকায় উদ্ধৃত, ৩২, পৃ. ৩৩৩। ৭. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা গ্রন্থে (পৃ. ১৪৪) তালজিআর নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে?

بيع التلجئة أن يضطر لاظهار عقد وابطان نميره مع ارادة ذلك الباطن –

কাওয়াইদুল ফিকহ গ্রন্থে (পর্যায়ক্রমে পৃ. ২১৩ ও ২৩৬) তালজিআর নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে।

بيع التلجئة هو العقد الذي يباشره انسان عن ضرورة ويصير کالمدفوع اليه صورته أن يقول الرجل لغيره ابيع داری من بكذافي الظاهر ولا يكون بيعا في الحقيقة و يشهد على ذلك .

و ان يلجئك الى ان تائی امرا باطنه خلاف ظاهره .

মিসবাহুল লুগাত (আরবী-উর্দু শীর্ষক অভিধানে বলা হইয়াছে?

کسی ایسے فعل کے کرنے پر مجبور کرنا جسكا ظاهر باطن کے خلاف هو.

৮. আলামগীরী, কিতাবুল ইকরাহ, ৩য় বাব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *