1 of 2

৩০. বণ্টন ও আপোসচুক্তি

অধ্যায় : ৩০ বণ্টন ও আপোসচুক্তি

ধারা-৭২৩

বণ্টন-এর সংজ্ঞা যৌথ মালিকানাভুক্ত মালে অংশীদারদের অংশ সুনির্দিষ্ট করাকে ‘বন্টন” বলে।

বিশ্লেষণ

আরবী কিসমাহ’ (

i i ) শব্দের অভিধানিক অর্থ ভাগ করা, বণ্টন করা। শরীআ’র পরিভাষায় অধিকারসমূহ পৃথক করা এবং অংশসমূহ সমান করা। একই মালের মধ্যে বিভিন্ন অংশীদারের মালিকানা স্বত্ব থাকিবার কারণে তাহা বণ্টনের প্রশ্ন দেখা দেয়। যে মালের পরিমাণ মাপিয়া নির্ধারণ করা হয় তাহা মাপিয়া, যে মালের পরিমাণ ওজন করিয়া নির্ধারণ করা হয় তাহা ওজন করিয়া এবং যে মালের পরিমাণ গনণা করিয়া নির্ধারণ করা হয় তাহা গনণা করিয়া বণ্টন করিতে হইবে। যৌথ মালিকানাভুক্ত মাল বণ্টন করিবার ফলে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ সুনির্দিষ্ট হইয়া যায়।

ধারা-৭২৪

মালের বণ্টনযোগ্যতা বণ্টনের মালের শর্ত হইল বণ্টনের পরও তাহার উপযোগিতা অক্ষুন্ন থাকিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

বণ্টনের পূর্বে মালের যে উপযযাগিতা থাকে তাহা যদি বণ্টনের পরে নষ্ট বা খর্ব হইয়া যায় তবে উক্ত মাল বণ্টন করা বৈধ হইবে না। যেমন একটি গাড়ীর

৪৩২

বিভিন্ন অংশ খুলিয়া অংশীদারগণের মধ্যে বণ্টন করা হইলে উহার ব্যবহারযোগ্যতাই নষ্ট হইয়া যায়।

ধারা-৭২৫

বণ্টনকারী নিয়োগ (ক) আদালত বায়তুল মাল হইতে পারিশ্রমিক প্রদানের ভিত্তিতে অথবা অংশীদারদের নিকট হইতে পারিশ্রমিক গ্রহণের ভিত্তিতে বণ্টনকারী নিয়োগ করিতে পারিবে।

(খ) বণ্টনকারীকে ন্যায়পরায়ণ, বিশ্বস্ত ও বণ্টন বিষয়ে অভিজ্ঞ হইতে

হইবে।

(গ) যৌথ মালিকানাভুক্ত মালের অংশীদারগণ নিজেরাই আপোসে মাল বণ্টন করিয়া লইলে তাহা বৈধ বলিয়া গণ্য হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, অংশীদারদের কেহ নাবালেগ হইলে সেই ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।

ধারা—৭২৬

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মাল বণ্টন

(ক) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মালের অংশীদারগণ যে ব্যক্তির নিকট হইতে উহা প্রাপ্ত হইয়াছে তাহার মৃত্যুর প্রমাণ পেশ না করা পর্যন্ত আদালত তাহা বন্টন করিবে না।

(খ) যে কোন উত্তরাধিকারী মালের বণ্টন দাবি করিলে উত্তরাধিকারের মালের যে কোন উত্তরাধিকারী আদালতে উত্তরাধিকার পরিত্যাগকারীর মৃত্যু

ও উত্তরাধিকারীদের সংখ্যার বর্ণনা দিয়া উক্ত মালের বণ্টন দাবি করিলে আদালত তাহা বণ্টন করিয়া দিবে।

ধারা—৭২৭

যৌথ মালিকানাভুক্ত মালের বণ্টন যে ক্ষেত্রে যৌথ মালিকানাভুক্ত মালের প্রত্যেক অংশীদার তাহার অংশের উপযোগিতা স্বতন্ত্রভাবে ভোগ করিতেছে সেই ক্ষেত্রে কোন একজন অংশীদার

৪৩৩

উক্ত মালের বন্টন দাবি করিলে আদালত তাহা বস্টন করিয়া দিবে।

ধারা-৭২৮ বণ্টন দাবিকারীদের মধ্যে বালেগ ও নাবালেগ থাকিলে (ক) একজন বালেগ ও একজন নাবালেগ উত্তরাধিকারী আদালতে মালের বণ্টন দাবি করিলে প্রমাণ পেশ সাপেক্ষে আদালত নাবালেগের পক্ষে একজন ওসী নিয়োগ করিয়া মাল বণ্টন করিয়া দিবে।

(খ) একজন বালেগ উত্তরাধিকারী ও ওসিয়াত সূত্রে এক-তৃতীয়াংশ মালের প্রাপক আদালতে বণ্টন দাবি করিলে প্রমাণ সাপেক্ষে আদালত উক্ত মাল বণ্টন করিয়া দিবে।

ধারা—৭২৯ হাম্মামখানা, কূপ, যাঁতা প্রভৃতি বন্টন হাম্মামখানা, কূপ, যাঁতা বা চাকি এবং অনুরূপ অন্যান্য মাল অংশীদারদের সম্মতি ছাড়া বণ্টন করা যাইবে না।”

ধারা—৭৩০ সরাসরি বণ্টনযোগ্য ও মূল্য নিরূপণ করিয়া বন্টনমোগ্য মাল বণ্টনযোগ্য মালসমূহ একই প্রকারের হইলে তাহা সরাসরি বণ্টন করা যাইবে, অন্যথায় সমুদয় মালের মূল্য নিরূপণ করিয়া মূল্যের ভিত্তিতে বণ্টন করিতে হইবে।

ধারা-৭৩১

যৌথ মালিকানাভুক্ত বাড়ী বন্টন যৌথ মালিকানাভুক্ত একাধিক বাড়ীর প্রতিটি উহার অংশীদারদের সম্মতি সাপেক্ষে আলাদাভাবে অথবা যৌথভাবে বণ্টন করা যাইবে।

৪৩৪

ধারা-৭৩২ মাল বণ্টিত হইবার পর নৃতন কোন অংশীদার আবির্ভূত হইলে মাল বন্টিত হইবার পর নূতন কোন ব্যক্তি অংশীদারিত্বের দাবি প্রতিষ্ঠা করিলে উক্ত বণ্টন বাতিল হইয়া যাইবে এবং সমুদয় মাল পুনরায় বণ্টন করিতে হইবে।

ধারা-৭৩৩

ভূমি বণ্টন বাড়ীর আঙিনা বা আবাদী জমি পরিমাপ করিয়া বণ্টন করিতে হইবে। তবে কোন জমিতে বৃক্ষ বা ইমারত থাকিলে তাহার মূল্য নিরূপণ করিয়া মূল্যের ভিত্তিতে বন্টন করিতে হইবে।১৪

ধারা-৭৩৪

যৌথ মালিকানাভুক্ত পথের বণ্টন যৌথ মালিকানাভুক্ত পথের কোন একজন মালিক বণ্টন দাবি করিলে অন্য মালিক বা মালিকগণ তাহাতে সম্মত না হইলেও উহা তাহাদের মধ্যে বণ্টন করা যাইবেঃ

তবে শর্তে থাকে যে, উক্ত পথ বণ্টিত হইবার পর অংশীদারদের প্রত্যেকের অংশ যাতায়াতের স্বতন্ত্র পথের সম-পরিমাণ হইতে হইবে।৫

আপোষ চুক্তি . ধারা-৭৩৫

আপোস চুক্তির সংজ্ঞা কি) বিবাদ নিরসনের জন্য বিবদমান পক্ষবৃন্দের সম্মতিক্রমে সম্পাদিত চুক্তিকে “আপোস চুক্তি” (সুহ) বলে ১৬

17ধবদ্ধ ইসলামী আইন

৪৩৫

(খ) আপোস চুক্তি সম্পাদনকারীগণকে “আপোস চুক্তির পক্ষ” (মুসলিহ) বলে।

(গ) আপোস চুক্তির শর্তকে আপোস শর্ত” (মুসালাহ আনহু) বলে।

(ঘ) যে বিবাদের বিষয়ে আপোস চুক্তি করা হয় তাহাকে আপোস চুক্তির বিষয়” বলে।

(ঙ) যে মালের বিনিময়ে আপোস চুক্তি করা হয় তাহাকে “আপোস চুক্তির মাল” বলে।

ধারা-৭৩৬

আপোস চুক্তির প্রকারভেদ আপোস চুক্তি তিন প্রকার- (ক) যাহার বিরুদ্ধে দায়-দায়িত্বের অভিযোগ আসিয়াছে সেই ব্যক্তির দায়-দায়িত্ব স্বীকারের ভিত্তিতে সম্পাদিত আপোস চুক্তিকে স্বীকারোক্তিমূলক আপোস চুক্তি” বলে।

(খ) বিবাদী কর্তৃক বাদীর দাবির অস্বীকৃতি সত্ত্বেও বিড়ম্বনা এড়াইবার জন্য যে আপোস চুক্তি সম্পাদিত হয় তাহাকে অস্বীকৃতিমূলক আপোস চুক্তি” বলে।

(গ) কোন বিষয়ে বাদীর দাবি সম্পর্কে বিবাদীর নীরবতা অবলম্বনের উপর ভিত্তি করিয়া যে আপোস চুক্তি সম্পাদিত হয় তাহাকে “নীরবতা অবলম্বনমূলক আপোস চুক্তি” বলে।

বিশ্লেষণ

ক দাবি করিলে যে, সে খ-এর কাছে দশ হাজার টাকা পাইবে এবং খ তাহা স্বীকার করিয়া ক- কে পাঁচ হাজার টাকা দিয়া আপোস করিলে ইহাকে ‘স্বীকারোক্তিমূলক আপোস চুক্তি’ বলা হইবে।

ক দাবি করিল যে, সে খ-এর কাছে দশ হাজার টাকা পাইবে। খ তাহা অস্বীকার করিল বটে কিন্তু সে ক-এর এই দাবির বিড়ম্বনা এড়াইবার জন্য ক-কে দুই হাজার টাকা প্রদান করিয়া দাবি হইতে অব্যাহতি লাভের জন্য আপোস চুক্তি করিল। এই চুক্তিকে ‘অস্বীকৃতিমূলক আপোস চুক্তি’ বলা হয়।

ক দাবি করিল যে, সে খ-এর কাছে পাচ তোলা স্বর্ণ পাইবে। ক-এর এই

৪৩৬

দাবি খ স্বীকারও করিল না আবার অস্বীকারও করিল না, বরং ১০ হাজার টাকা দিয়া ক-এর সাথে আপোস চুক্তি করিল। এই চুক্তি ‘নীরবতা অবলম্বনমূলক

আপোস চুক্তি’ বলিয়া গণ্য হইবে।

ধারা-৭৩৭

আপোস চুক্তি যেভাবে সম্পাদিত হয় বাদী বা বিবাদী যে কোন পক্ষ হইতে আপোস চুক্তির জন্য সুস্পষ্ট ভাষায় প্রস্তাব করা হইলে এবং অপর পক্ষ তাহা গ্রহণ করিলে আপোস চুক্তি সম্পাদিত হইবে।১৭

বিশ্লেষণ

বাদী বিবাদীকে কিংবা বিবাদী বাদীকে উদ্দেশ্য করিয়া যদি বলে, আমি অমুক শর্তে অমুক বিষয়ে তোমার সাথে আপোস চুক্তি করিলাম এবং অপর পক্ষ যদি বলে, আমি এই প্রস্তাব গ্রহণ করিলাম, তাহা হইলে এই ক্ষেত্রে আপোস চুক্তি সম্পাদিত হইল।

ধারা—৭৩৮

আপোস চুক্তির শর্তাবলী (ক) আপোস চুক্তির পক্ষবৃন্দকে বুদ্ধিমান হইতে হইবে। অতএব পাগল ও সগীর গায়র মুমায়্যিয কর্তৃক সম্পাদিত আপোস চুক্তি গ্রহণযোগ্য হইবে না।

(খ) সগীর গায়র মুমায়্যিযের পক্ষে আপোস চুক্তি করিতে হইলে চুক্তি সম্পাদনকারীকে তাহার যোগ্য অভিভাবক হইতে হইবে।

(গ) আপোস চুক্তির বিষয় এমন হইতে হইবে যাহার উপর মানুষের অধিকার প্রযুক্ত হয়, শুধুমাত্র আল্লাহর অধিকার প্রযুক্ত হয় এমন কোন বিষয়ে আপোস চুক্তি করা যাইবে না।১৮

৪৩৭

ধারা-৭৩৯

আপোস চুক্তির দায় হইতে মুক্তি (ক) আপোস চুক্তির ফলে বাদী বা বিবাদীর উপর যে দায় বর্তায় তাহা হইতে অব্যাহতি লাভকে আপোস চুক্তিগত দায়মুক্তি বলে।১৯

(খ) আপোস চুক্তির দায়মুক্তি দুই প্রকারের (১) অব্যাহতিদানমূলক দায়মুক্তি (ইবরা ইসকাত);

(২) দায় পরিশোধমূলক দায়মুক্তি (ইবরা ইসতিফা)।২০ (গ) বাদী ও বিবাদী কর্তৃক আপোস চুক্তি সম্পাদনের ফলে বিবাদীর উপর যে দায় বর্তায় বাদী অর্থাৎ দায়ের অধিকারী তাহা মাফ কিংবা পরিমাণ হ্রাসের মাধ্যমে বিবাদীকে অব্যাহতি দান করিলে তাহাকে

অব্যাহতিদানমূলক আপোস চুক্তি” (ইবরা ইসকাত) বলে।২১।

(ঘ) আপোস চুক্তির ক্ষেত্রে বাদী যদি এই মর্মে স্বীকারোক্তি করে যে, বিবাদীর নিকট হইতে সে তাহার আপোস চুক্তিজাত সমুদয় প্রাপ্য বুঝিয়া পাইয়াছে তাহা হইলে বিবাদী তাহার উপর বর্তানো আপোস চুক্তিজাত দায় হইতে মুক্ত হইবে। এই ধরনের দায়মুক্তিকে আপোস চুক্তিগত দায়মুক্তি” (ইবরা ইসতিফা) বলে।২২।

ধারা-৭৪০ মালের দাবি মাল দ্বারা মিটানো হইলে স্বীকারোক্তিমূলক আপোস চুক্তির ক্ষেত্রে যদি মালের দাবি মাল দ্বারা মিটানো হয় তাহা হইলে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাবলী এই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে। সুতরাং ভূমির বিনিময়ে আপোস চুক্তি সম্পাদিত হইলে উক্ত ভূমির উপর শুফআর অধিকার বর্তাইবে।২৩

বিশ্লেষণ

ক যদি দাবি করে যে, সে খ-এর কাছে বিশ হাজার টাকা পাইবে এবং খ তাহার দাবি স্বীকার করিয়া বিশ শতাংশ ভূমির বিনিময়ে ক-এর সহিত আপোস চুক্তি সম্পাদন করে তাহা হইলে ইহা পক্ষান্তরে বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে বিশ শতাংশ ভূমি ক্রয় করাই হইল। সুতরাং ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যে শর্তাবলী

৪৩৮

প্রযোজ্য হইয়া থাকে এই ক্ষেত্রেও সেইগুলি প্রযোজ্য হইবে। অতএব খ যে ভূমি দিয়া ক-এর সহিত আপোস চুক্তি সম্পাদন করিল সেই ভূমিতে শুফআ অর্থাৎ

অগ্র ক্রয়াধিকার কার্যকরী হইবে।

ধারা-৭৪১ মালের বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধা দিয়া আপোস চুক্তি

বিবাদী যদি বাদীকে মালের বিনিময়ে কোন উপকার বা সুযোগ-সুবিধা দিয়া আপোস চুক্তি সম্পাদন করে তাহা হইলে সেই ক্ষেত্রে ইজারা (ভাড়া) চুক্তির শর্তসমূহ প্রযোজ্য হইবে।২৪

বিশ্লেষণ

খ-এর কাছে ক চারি হাজার টাকার দাবি করিল। খ তাহার দাবি স্বীকার করিয়া উক্ত টাকার বিনিময়ে ক-কে তাহার একটি বাড়ীতে বসবাস করিতে দিল। এই ক্ষেত্রে খ কর্তৃক উক্ত বাড়ী ক-এর কাছে ভাড়া দেওয়া হইল বলিয়া গণ্য হইবে এবং এই চুক্তির বেলায় ভাড়াচুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাবলী প্রযোজ্য হইবে। অতএব ক কত দিন পর্যন্ত ঐ বাড়ীতে থাকিতে পারিবে তাহা নির্দিষ্ট করিতে হইবে এবং চুক্তির কোন পক্ষের মৃত্যু হইলে চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে।

ধারা-৭৪২। ঘরের দাবির ক্ষেত্রে আপোস চুক্তি ও শুফআ কোন ব্যক্তি যদি কোন ঘর তাহার বলিয়া দাবি করে এবং বিবাদী তাহা অস্বীকার করে বা এই সম্পর্কে চুপ থাকে এবং কোন মালের বিনিময়ে বাদীর সহিত আপোস চুক্তি সম্পাদন করে তবে সেই ঘরের ক্ষেত্রে শুফআর বিধান প্রযোজ্য হইবে না।২৫

ধারা-৭৪৩ চুক্তিমত অর্থ প্রদানের পর অপরকে মালিক বলিয়া স্বীকার করা কোন দাবি সংক্রান্ত বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক আপোস চুক্তির ক্ষেত্রে বিবাদী চুক্তিতে নির্ধারিত অর্থ বাদীকে সমর্পণ করিবার পর বাদী অপর কাহাকে

৪৩৯

তাহার দাবিকৃত উক্ত মালের বৈধ অংশীদার হিসাবে স্বীকার করিয়া লইলে বিবাদী নূতন অংশীদারের অংশের সমপরিমাণ অর্থ বাদীর নিকট হইতে ফিরাইয়া লইয়া নূতন দাবিদারকে প্রদান করিতে পারিবে।২৬

বিশ্লেষণ

খ-এর একটি ঘর ক তাহার নিজের বলিয়া দাবি করিয়া বসিল এবং খ-ও তাহা স্বীকার করিল। অতঃপর খ ক-কে দুই হাজার টাকা প্রদান করিয়া তাহার সহিত আপোস চুক্তি করিল। ইহার পর খ-কে ক তাহার সহিত উক্ত ঘরের সমান অংশীদার বলিয়া স্বীকার করিয়া লইল। এই ক্ষেত্রে খ আপোস চুক্তি মোতাবেক ক-কে প্রদত্ত দুই হাজার টাকার মধ্য হইতে : এক হাজার টাকা ফিরাইয়া লইবে। কারণ খ তৎকর্তৃক ক-কে প্রদত্ত দুই হাজার টাকার অর্ধাংশের মালিক।

ধারা—৭৪৪ বিবাদী যদি বাদীর দাবি অস্বীকার করে বা নিশুপ থাকে কোন ঘরের দাবির ক্ষেত্রে বিবাদী যদি বাদীর দাবি অস্বীকার করে বা নিশ্চপ থাকে এবং পরে কোন মালের বিনিময়ে আপোস চুক্তি সম্পাদন করে তবে উক্ত ঘরের ক্ষেত্রে শুফআর বিধান প্রযোজ্য হইবে না।২৭

বিশ্লেষণ

শুফআর বিধান প্রযোজ্য না হইবার কারণ হইল বিবাদী বাদীর দাবি অস্বীকার করিয়াছে। সুতরাং এই ঘর তাহার মালিকানা স্বত্বের অন্তর্ভুক্ত। বাদী কর্তৃক দাবির বিড়ম্বনা এড়াইবার জন্য সে আপোস চুক্তি করিয়াছে। সুতরাং এই চুক্তি বিক্রয়ের অনুরূপ বলিয়া গণ্য হইবে না এবং ইহাতে শুফআর বিধানও প্রযোজ্য হইবে না।

ধারা-৭৪৫ ঋণ হইতে অব্যাহতিদানের আপোস চুক্তি ঋণদাতা ঋণের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করিবার শর্তে অবশিষ্ট ঋণ হইতে ঋণগ্রহীতাকে অব্যাহতি দানের প্রস্তাব করিলে এবং ঋণগ্রহীতা প্রস্তাবের শর্ত মানিয়া লইয়া তাহা কার্যকর করিলে সে অবশিষ্ট ঋণ হইতে অব্যাহতি লাভ করিবে।২৮

৪৪০

ধারা-৭৪৬ খ্রীর খােরপোষের ব্যাপারে আপোস চুক্তি (ক) কোন ব্যক্তি তাহার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দতকালীন খােরপোষের জন্য নির্ধারিত অংকের অর্থ প্রদানের শর্তে আপোস চুক্তি সম্পাদন করিলে এবং ইদাতের মেয়াদ গণনা করা হইলে এই আপোস চুক্তি বৈধ বলিয়া গণ্য

ইবে।

(খ) যে ক্ষেত্রে স্ত্রী তাহার খােরপোষের ব্যাপারে স্বামীর সাথে মাসপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রাপ্তির শর্তে আপোস চুক্তি করে সেক্ষেত্রে স্ত্রী বা

আদালত স্বামীকে এই চুক্তি হইতে অব্যাহতি না দেওয়া পর্যন্ত কিংবা দ্রব্যমূল্য হ্রাসপ্রাপ্তির কারণে প্রদত্ত অর্থের চাইতে কম পরিমাণ অর্থই স্ত্রীর জন্য যথেষ্ট

হওয়া পর্যন্ত স্বামী তাহা দিতে বাধ্য থাকিবে।

(গ) আপোস চুক্তির ভিত্তিতে খােরপোষের জন্য স্বামী স্ত্রীকে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করিতেছে তাহা যথেষ্ট নহে বলিয়া পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য স্ত্রী স্বামীর কাছে দাবি করিতে পারিবে, যদি স্বামী আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হইয়া থাকে। অনুরূপভাবে আদালত যদি স্ত্রীর প্রতি মাসের খােরপোষের পরিমাণ নির্দিষ্ট করিয়া দিয়া থাকে এবং তাহা স্ত্রীর জন্য যথেষ্ট না হয় সেই ক্ষেত্রেও স্ত্রী স্বামীর কাছে বর্ধিত খােরপোষের দাবি করিতে পারিবে।২৯

ধারা-৭৪৭ বাড়ী ভাড়ার ব্যাপারে আপোস চুক্তি বাড়ী ভাড়ার মেয়াদ ও পরিমাণ লইয়া মালিক ও ইজারাদারের মধ্যে মতানৈক্য হইলে আপোস চুক্তির মাধ্যমে তাহা মীমাংসা করা যাইবে ৩০

তথ্য নির্দেশিকা

১. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৪। ২. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৪। ৩. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৪। ৪. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৫।

৪৪১

৫. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৫। ৬. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৫। ৭. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৬। ৮. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৭। ১. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৭। ১০. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৯। ১১. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৩৮। ১২. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৩৯৯। ১৩. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৪০৫। ১৬. আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুস সুহ, পৃষ্ঠা ২২৮। ১৪. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৪০০। ১৫. হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুল কিসমাহ, পৃষ্ঠা ৪০১। ১৭. আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুস সুহ, পৃষ্ঠা ২২৮। ১৮. আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুস্ সুহ, পৃষ্ঠা ২২৯ ও ২৩০। ১১. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ। ২০. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ। ২১. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ। ২২. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ। ২৩. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩০। ২৪. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩০। ২৫. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩০। ২৬. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩০। ২৭. হিদায়া, ৩য় খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩০। ২৮. আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩৬। ২১. আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩৪। ৩০. আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, ৪র্থ খণ্ড, কিতাবুস সুলহ, পৃষ্ঠা ২৩৪।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *