1 of 2

২৩. ইজারা

অধ্যায় : ২৩ ইজারা

ধারা—৬১৮

সংজ্ঞা। (ক) নির্দিষ্ট মুনাফাকে প্রতিদানের পরিবর্তে বিনিময় করাকে ইজারা বলে।

(খ) মুনাফা ভোগ করার প্রতিদান স্বরূপ যাহা প্রদান করা হয় তাহাকে ভাড়া বা মজুরি প্রলে।

(গ) যে ব্যক্তি নিজের মাল অপর ব্যক্তির নিকট ইজারা প্রদান করে সেই ব্যক্তিকে ইজারাদাতা বলে।

(ঘ) যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাল ইজারায় গ্রহণ করে তাহাকে ইজারাদার বরে।

(ঙ) কোন মাল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে অনুরূপ মাল সহজলভ্য না হইলে উহার মূল্য মালিককে প্রদান করাকে দামান (3,L2)বলে।

বিশ্লেষণ

ইজার(

52)শব্দ আজর (১৭ হইতে গৃহীত, যাহার অর্থ প্রতিদান, বিনিময়, পুরস্কার, মজুরি, ভাড়া ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে শব্দটি কোন মাল মাল ভাড়ার বিনিময়ে প্রদান বা গ্রহণ করা বুঝাইতে ব্যবহৃত হইয়াছে। মানব শ্রমের ক্রয়-বিক্রয়ও ইজারার আওতাভুক্ত। আল-হিদায়া গ্রন্থে ইজারা-এর নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে?

الاجارة عقد يرد على المنافع بعوض لان الاجارة في اللغة بيع المنافع ۔

৩১৬

“প্রতিদানের বিনিময়ে মুনাফা ভোগের চুক্তিকে ইজারা বলে। কারণ ইজারার শাব্দিক অর্থ মুনাফা বিক্রয় করা।” →

শরীআতে ইজারা প্রথাকে অনুমোদন করা হইয়াছে। মহান আল্লাহ্ বলেন :

ان خیر من استأجرت القوى الأمين –

“তোমার শ্রমিক হিসাবে উত্তম হইবে সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত” (সূরা কাসাস : ২৬)।

মহানবী (স) বলেন :

“শ্রমিকের মজুরী পরিশোধ কর তাহার দেহের ঘাম শুকাইবার পূর্বেই।” ২

أعطوا الأجير أجره قبل أن يجف عرقه. استأجر رسول الله صلى الله عليه وسلم و أبوا بكر رجلا من بني اليل هاديا خرا۔

“রাসূলুল্লাহ (স) ও আবূ বাকর (রা) দীল গোত্রের একজন বিচক্ষণ পথপ্রদর্শককে শ্রমিক নিয়োগ করেন।” ৩

عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه و سلم قال قال الله تعالى ثلاثة أنا خصمهم يوم القيامة ……… ورجل استأجر أجيرا فاستوفی منه و لم

يعطوه و يعطه اجره .

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। মহানবী (স) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হইবঃ …… যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে শ্রমিক নিয়োগ করিল এবং তাহার নিকট হইতে পূর্ণরূপে কাজ আদায় করিল, কিন্তু তাহার পারিশ্রমিক প্রদান করিল না”।

এখানে বিশ্লেষণে আরও কয়েকটি বিষয় আলোচিত হইলে যাহা মূল ধারায় থাকিলেও প্রাসংগিকভাবে আলোচনায় আসিবে। নিয়োগকৃত ব্যক্তির নিকট যে উপকরণ সোপার্দ করা হয়, যেমন কোন ব্যক্তি পোশাক-পরিচ্ছদ তৈরীর উদ্দেশ্যে দর্জি নিয়োগ করিল এবং তাহার নিকট পোশাক তৈরীর কাপড় সোপর্দ করিল।

“,

৩১৭

‘প্রচার বা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মুআদ্দ লিল-ইসতিগলাল’ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি একটি বাড়ি নির্মাণ করিল, অতঃপর উক্ত বাড়ি ভাড়ায় খাটানোর জন্য বাড়ির সামনে “ভাড়া দেওয়া হইবে” লিখিত ফলক টানাইয়া দিল অথবা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিল। মালিকের উক্ত কর্ম তাহার বাড়িটিকে ‘মুআদ্দ লিল- ইসতিগলাল’

গণ্য করিবে।

‘মুহায়াহ’ অর্থাৎ দুই ব্যক্তি একটি বাড়ির যৌথ মালিক। তাহারা পরস্পর চুক্তি করিল যে, উক্ত বাড়ি হইতে প্রাপ্ত এক বৎসের ভাড়া প্রথম অংশীদার এবং পরবর্তী বৎসরের ভাড়া দ্বিতীয় অংশীদার লাভ করিবে। তাহাদের ভাড়া বা মুনাফা বণ্টনের উক্ত চুক্তিকে ‘মুহায়াহ’ বলা হয়।

‘দামান’ কোন কর্ম সম্পাদনের জন্য নিয়োগকর্তা নিয়োগকৃত ব্যক্তির নিকট যে মাল সোপর্দ করে তাহা তাহার অবহেলা বা অযত্নের কারণে নষ্ট হইলে অথবা যে মাল ভাড়ায় প্রদান করা হয় তাহা ভাড়ায় গ্রহণকারীর নিকট ক্ষতিগ্রস্ত হইলে যে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় তাহা ‘দামান হিসাবে গণ্য।

ধারা-৬১৯

ইজারার রুকন (উপাদান)-সমূহ (ক) এক পক্ষের প্রস্তাব ও অপর পক্ষের সম্মতি প্রদানের দ্বারা ইজারা অনুষ্ঠিত হয়।

(খ) মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে প্রস্তাব এবং সম্মতি প্রদান করা যায়। বােবা ব্যক্তি সুস্পষ্ট ইশারা-ইঙ্গিতে প্রস্তাব বা সম্মতি প্রদান করিতে পারে।

(গ) আমি ভাড়া দিলাম,” আমি ইজারা দিলাম” ইত্যাদি শব্দ দ্বারা প্রস্তাব প্রদান এবং আমি কবুল করিলাম” বা “আমি ভাড়ায় গ্রহণ করিলাম” ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্মতি প্রদান করা যায়।

(ঘ) পরিস্থিতি বিশেষে ভাড়ার উদ্দেশ্যে আল-এর আদান-প্রদানও” প্রস্তাব ও সম্মতি হিসাবে গণ্য হইতে পারে।

(ঙ) এক পক্ষের প্রস্তাবে অপর পক্ষের “মৌনতাও” ক্ষেত্রবিশেষে সম্মতি হিসাবে গণ্য হইতে পারে।

(চ) চুক্তি সম্পাদনের পরবর্তী কালে উভয় পক্ষের সম্মতিমূলে “শর্তাবলীতে কোন পরিবর্তন, ভাড়া বৃদ্ধি বা কমাননা” হইলে তাহা বলবৎ হইবে।

(ছ) ভবিষ্যতের কোন একটি নির্দিষ্ট তারিখ হইতে ভাড়ার চুক্তি বলবৎ

৩১৮

হওয়ার শর্ত রাখা বৈধ এবং কোন পক্ষই এককভাবে উক্ত তারিখের পূর্বে চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে না।

(জ) চুক্তি সম্পাদনের পর তৃতীয় কোন ব্যক্তি অতিরিক্ত ভাড়া প্রদানের প্রস্তাব করিলে মাল ভাড়ায় প্রদানকারী একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে না।

(ঝ) কোন অভিভাবক অথবা মোতাওয়াল্লী পর্যায়ক্রমে নাবালেগের বা ওয়াকফ-এর স্থাবর মাল যথাযোগ্য ভাড়ার চাইতে কম ভাড়ায় প্রদান করিলে ইজারা ফাসিদ গণ্য হইবে এবং যথাযোগ্য ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ঞ) ভাড়ায় গ্রহণকারী ব্যক্তি ওয়ারিসী সূত্রে অথবা হেবার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন বৈধ পন্থায় ভাড়াকৃত মাল-এর মালিক হইয়া গেলে ইজারা চুক্তির কার্যকারিতার সমাপ্তি ঘটিবে।

(ট) ইজারা চুক্তি বহাল রাখার ক্ষেত্রে কোন বৈধ প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে উক্ত চুক্তি রদ হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

প্রস্তাব ও সম্মতি অতীত কাল ক্রিয়াবাচক শব্দে ব্যক্ত করিতে হইবে। যদি কেহ বলে, “আমি ভাড়া দিব” এবং অপর ব্যক্তি বলে, “আমি ভাড়ায় গ্রহণ করিলাম”, অথবা একজন বলিল, “ভাড়ায় গ্রহণ কর” এবং অপরজন বলিল, “ভাড়ায় গ্রহণ করিলাম,” ইহাতে ইজারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হইবে না।

“দখল প্রদান” দ্বারাও চুক্তি সম্পাদিত হইতে পারে। যেমন কোন ব্যক্তি বাসে, রেলগাড়ীতে বা স্টীমারে আরোহণ করিল। এই ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে কোন কথাবার্তা না হইলেও যেহেতু বিনা বাধায় যানে আরোহণ করিয়াছে তাই সে নির্ধারিত ভাড়া প্রদান করিতে বাধ্য।

“মৌনতাও সম্মতি হইতে পারে, যেমন কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য নির্দিষ্ট ভাড়ায় একটি দোকানের দখল নিল। সময়সীমা অবশিষ্ট থাকিতে দোকানের মালিক দখলদারকে বলিল, আপনি মাসিক দশ টাকা বর্ধিত ভাড়া প্রদান করিতে সম্মত, হইলে থাকিতে পারেন, অন্যথায় দোকান খালি করিয়া দিন। দখলদার বর্ধিত ভাড়া প্রদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করিল এবং তাহার দখল বজায় রাখিল, এই ক্ষেত্রে তাহাকে পূর্বের ভাড়াই পরিশোধ করিতে হইবে। তবে ভাড়ার

৩১৯

পরিমাণ নিয়া মালিক ও দখলদারের মধ্যে বিভেদ হইলে সেই ক্ষেত্রে যথাযোগ্য ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

“বৈধ প্রতিবন্ধকতা”, যেমন বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য একটি হােটেল ভাড়া করা হইল এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পূর্বেই পাত্র বা পাত্রী বা উভয়ে মারা গেল। এই ক্ষেত্রে ভাড়ার চুক্তি স্বয়ং রদ হইয়া যাইবে।

অথবা বলা যায়, কোন ব্যক্তি তাহার রোগ যন্ত্রণা নিরাময় করিয়া দেওয়ার জন্য ডাক্তারের সহিত চুক্তিবদ্ধ হইল। কিন্তু চুক্তি কার্যকর হওয়ার পূর্বেই সে ভালো হইয়া গেল। এই ক্ষেত্রেও চুক্তিটি স্বয়ং রদ হইয়া যাইবে।

ধারা-৬২০ ইজারা সম্পাদনের ও কার্যকর হওয়ার শর্তাবলী (ক) ইজারার পক্ষবৃন্দকে বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন এবং চুক্তির পরিণতি অনুধাবনে সক্ষম হইতে হইবে; (খ) প্রস্তাব ও সম্মতির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকিতে হইবে এবং একই মজলিসে উহা অনুষ্ঠিত হইতে হইবে; (গ) ইজারায় প্রদানকারীকে ইজারায় প্রদানকৃত বস্তুর মালিক অথবা মালিকের প্রতিনিধি অথবা তাহার অভিভাবক অথবা ওসী হইতে হইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, কর্তৃত্ব সম্পন্ন নহে এমন ব্যক্তি ইজারা প্রদান করিলে তাহা ইজারায় প্রদত্ত মালের মালিক এবং মালিক নাবালেগ বা পাগল হওয়ার ক্ষেত্রে তাহার অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে কার্যকর হইবে। তবে সম্মতি যথার্থ (সহীহ) হওয়ার জন্য চারটি জিনিস বিদ্যমান থাকা শর্তঃ চুক্তিবদ্ধ পক্ষদ্বয়, মালিক, ইজারায় প্রদত্ত মাল এবং মালের ভাড়া, যদি তাহা মালের (আরাদ) মাধ্যমে প্রদেয় হয়, উহার কোন একটি জিনিস বিদ্যমান না থাকিলে সম্মতি প্রদান যথার্থ হইবে না। (ঘ) ইজারায় প্রদত্ত মাল ইজারা গ্রহণকারীর নিকট সোপর্দ করিতে হইবে; (ঙ) কোন পক্ষের জন্য ইজারা বহাল বা বাতিলের এখতিয়ার (খিয়ারে শর্ত, খিয়ারে আইব, খিয়ারে রুইয়াত) সংরক্ষিত থাকিব না।

৩২০

বিশ্লেষণ

ইজারা সম্পাদনের জন্য পক্ষবৃন্দের বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হওয়া শর্ত, কিন্তু বালেগ হওয়া শর্ত নহে। অতএব পাগল অথবা বুদ্ধিশূন্য ব্যক্তির ইজারা কার্যকর হইবে

। নাবালেগ ব্যক্তি নিজের মাল অথবা শ্রম ইজারায় প্রদান করিলে তাহার অভিভাবকের সম্মতি থাকিলে তাহা কার্যকর হইবে।

পক্ষবৃন্দের প্রস্তাব ও সম্মতির মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকিলে ইজারা সহীহ হইবে না। যেমন এক পক্ষ একটি ঘোড়া ভাড়ায় প্রদানের প্রস্তাব করিল এবং অপর পক্ষ একটি গরু ভাড়ায় গ্রহণের সম্মতি ব্যক্ত করিল। এই ক্ষেত্রে ইজারা অনুষ্ঠিত হইবে না। অনুরূপভাবে প্রস্তাব এক মজলিসে এবং সম্মতি ভিন্ন মজলিসে প্রদান করিলেও ইজারা অনুষ্ঠিত হইবে না।

যে মাল ইজারায় প্রদানের চুক্তি করা হইয়াছে তাহা ইজারা গ্রহণকারীর নিকট সোপর্দ করিতে হইবে, অন্যথায় ভাড়া প্রাপ্তির অধিকার সৃষ্টি হইবে না। কিছু কাল অতিবাহিত হওয়ার পর ইজারার বস্তু ইজারা গ্রহণকারীর নিকট সোপর্দ করা হইলে অতীত হওয়া সময়ের জন্য ভাড়া প্রদেয় হইবে না।

ইজারা চুক্তি বহাল অথবা বাতিলের এখতিয়ার (Option) কোন পক্ষের জন্য সংরক্ষিত করা হইলে এখতিয়ারের মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি কার্যকর হইবে না।

ধারা—৬২১ ইজারা সহীহ (বৈধ) হওয়ার শর্তাবলী (ক) পক্ষবৃন্দের স্বেচ্ছা সম্মতিতে চুক্তি সম্পাদিত হইতে হইবে; (খ) যে মাল ইজারা দেওয়া হইবে তাহা সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে;

(গ) ইজারার উপকারিতা এবং ব্যবহার সম্পর্কে উভয় পক্ষকে ওয়াকিফহাল হইতে হইবে;

(ঘ) ইজারাটি ভাড়া সংক্রান্ত হইলে ইহার পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে;

(ঙ) বসতবাড়ি, দোকানপাট, ধাত্রীমাতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইজারার মেয়াদ উল্লেখ থাকিতে হইবে;

(চ) জমি ইজারার ক্ষেত্রে ইজারার মেয়াদসহ উহা কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হইবে তাহার উল্লেখ থাকিতে হইবে;

(ছ) যানবাহন ইজারার ক্ষেত্রে ইজারার মেয়াদসহ কত দূর পর্যন্ত

৩২১

যাতায়াত করা হইবে, মাল বহন করা হইবে না আরোহণ করা হইবে তাহা নির্ধারিত থাকিতে হইবে;

(জ) যে মাল ইজারা দেওয়া হইবে তাহার দ্বারা উপকৃত হওয়া সম্ভবপর হইতে হইবে;

(ঝ) মাল বহনের জন্য মানুষ বা যানবাহন ভাড়া করা হইলে মালের বর্ণনা, পরিমাণ এবং উহা কোন স্থানে পৌছাইতে হইবে তাহার উল্লেখ থাকিতে হইবে;

(ঞ) যে মাল ইজারা দেওয়া হইবে তাহা মালিকের দখলভুক্ত হইতে হইবে; দখলভুক্ত না হইলে ইজারা প্রদান বৈধ হইবে না;

(ট) ইজারার উপাদানের মধ্যে এমন কোন শর্ত থাকিবে না যাহা ইজারাকে ত্রুটিপূর্ণ করিতে পারে অথবা হেবায় পরিণত করিতে পারে।

(ঠ) যে কাজের জন্য ইজারা লওয়া হইবে সমাজে সেই কাজ নিন্দনীয় হইবে না।

বিশ্লেষণ

চুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য পক্ষবৃন্দের স্বেচ্ছাসম্মতি অপরিহার্য। বল প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন করিয়া কোন পক্ষকে চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে বাধ্য করা যাইবে না। মহান আল্লাহর বাণী :

يأيها الذين آمنوا لا تأكلوا أموالكم بی گم بالباطل الأ أن تكون تجارة عن تراض منكم.

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না, তবে তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ”-(সূরা নিসাঃ ২৯)।

ইজারা এক প্রকারের ব্যবসা। কারণ মালের বদলে মালের বিনিময়কে ব্যবসা বলে। ইজারাতেও অনুরূপ ঘটিয়া থাকে। মহানবী (স) বলেনঃ

يحل مال إمرئ سلم الأبطيبة نفسه .

“কোন মুসলমানের মাল তাহার সম্মতি ব্যতীত ভোগ করা বৈধ নহে।” অতএব বলপ্রয়োগে, সন্ত্রাসের মাধ্যমে, হাসি-ঠাট্টা করিয়া বা ভুলবশত কোন

৩২২

চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে না। কারণ উপরোক্ত বিষয়সমূহ চুক্তিকারীর স্বেচ্ছা সম্মতির পরিপন্থী।

তবে চুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য চুক্তিভুক্ত পক্ষবৃন্দের মুসলমান হওয়া শর্ত নহে। অতএব দুই ভিন্ন ধর্মের অনুসারী ব্যক্তিগণ ইজারা চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে পারে।

ইজারায় প্রদত্ত মাল সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে, যাহাতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর উহাকে কেন্দ্র করিয়া কোন বিবাদের সূত্রপাত হইতে না পারে। যেমন কোন ব্যক্তির একই স্থানে পাশাপাশি দুইটি বাড়ি আছে। সে উহার একটি ইজারা প্রদানের জন্য অপর ব্যক্তির সহিত চুক্তিবদ্ধ হইয়াছে। এই অবস্থায় বাড়ি দুইটির কোটি ভাড়া দেওয়া হইতেছে তাহা সুনির্দিষ্ট করিয়া উল্লেখ করিতে হইবে। কারণ “অজ্ঞতা চুক্তি সহীহ হওয়ার প্রতিবন্ধক”। এই নীতির ভিত্তিতে ইমাম আবূ হানীফা (র) বলেন, কোন ব্যক্তি যৌথ মালিকানাভুক্ত মালে তাঁহার অনির্দিষ্ট অংশ বিক্রয় করিলে এবং ক্রেতাও উক্ত অংশ সম্পর্কে অনবহিত থাকিলে বিক্রয় বৈধ হইবে না। অবশ্য ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) বলেন, চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত অংশ সুনির্দিষ্ট করিয়া দিলে বিক্রয় বৈধ হইবে।

ইজারা চুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য উহার মেয়াদ অর্থাৎ কত দিন, মাস বা বৎসরের জন্য মাল ইজারা দেওয়া হইল তাহার উল্লেখ থাকিতে হইবে। কারণ ইজারাদার ইজারাকৃত মাল দ্বারা কত কাল উপকৃত হইতে পারিবে তাহারা

মেয়াদ উল্লেখ না থাকিলে জ্ঞাত হওয়া সম্ভব নহে। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে দিন, মাস বা বৎসর উল্লেখ করাই যথেষ্ট নহে, বরং ইজারার মেয়াদ শুরু হওয়ার ও শেষ হওয়ার তারিখও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকিতে হইবে। অন্যথায় চুক্তি সহীহ হইবে না।

মাসের দুই/তিন দিন গত হওয়ার পর ইজারা চুক্তি অনুষ্ঠিত হইলে পূর্ণ মাসের বাড়া প্রদান করিতে হইবে। মাসের কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর চুক্তি অনুষ্ঠিত হইলে মাল হস্তান্তরের তারিখ হইতে মাস গণনা করা হইবে।

ইজারায় প্রদত্ত মাল বাড়ি-ঘর হইলে তাহা কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হইবে উহার উল্লেখ না থাকিলেও চুক্তি সহীহ হইবে। তবে ইজারাদার মালিকের অনুমতি ব্যতীত উহাতে দোকানপাট, কল-কারখানা ইত্যাদি স্থাপন করিতে পারিবে না এবং গবাদি পশু ও হাস-মুরগীর খামাড়ও বানাইতে পারিবে না।

৩২৩

তবে যে এলাকায় মালিকের অনুমতি ব্যতীত ভাড়া বাড়িতে গবাদি পশু ও হাস-মুরগী পালনের প্রথা প্রচলিত আছে সেই এলাকায় উক্ত কাজের জন্য মালিকের অনুমতি লওয়ার প্রয়োজন নাই।

ইজারার বস্তু জায়গা-জমি হইলে তাহা চাষাবাদের জন্য না কল-কারখানা স্থাপনের জন্য ইজারা লওয়া হইয়াছে তাহা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকিতে হইবে, অন্যথায় চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। অবশ্য জমির মালিক ইজারাদারকে যেভাবে ইচ্ছা জমি ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করিলে চুক্তি ফাসিদ হইবে না। জমি চাষাবাদের জন্য ইজারা লওয়া হইয়া থাকিলে তাহাতে কি ফসল উৎপন্ন করা হইবে তাহারও উল্লেখ থাকিতে হইবে।

যানবাহন ইজারা লওয়া হইলে সেই ক্ষেত্রেও ইজারার মেয়াদ, যানবাহন কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হইবে ইত্যাদি যাবতীয় আনুষংগিক বিষয় চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকিতে হইবে, অন্যথায় ইজারা চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। মানুষ অথবা মাল পরিবহনের জন্য, যানবাহন ইজারা লওয়া হইলে ভাড়ার পরিমাণ, দূরত্ব ও কি ধরনের মাল বহন করা হইবে (এবং উহার পরিমাণ) তাহারও উল্লেখ থাকিতে হইবে।

ইজারার মাল দ্বারা উপকৃত হওয়া সম্ভব ও সহজসাধ্য হইতে হইবে, অন্যথায় চুক্তির কার্যকারিতা ক্ষুন্ন হইবে। অনুরূপভাবে চুক্তির সহিত সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকিতে হইবে। চুক্তিটি কত মাসের জন্য, কত দূরত্ব অতিক্রমের জন্য, কত টাকা ভাড়ার বিনিময়ে, ভাড়া কখন প্রদেয় হইবে ইত্যাদির সুস্পষ্ট বিবরণও থাকিতে হইবে, যাহাতে বিবাদ এড়ানো সম্ভব

য়।

ধারা—৬২২ ইজারা বাধ্যতামূলক হওয়ার শর্তাবলী (ক) ইজারা বৈধ হইতে হইবে;

(খ) ইজারায় প্রদত্ত মালের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনকালে অথবা মাল সমর্পণকালে এমন কোন দোষ থাকিতে পারিবে না, যাহার ফলে মাল হইতে উপকার লাভ অসম্ভব হইয়া পড়ে; ঐরূপ দোষ থাকিলে চুক্তি বাধ্যতামূলক হইবে না;

৩২৪

(গ) ইজারা গ্রহণকারী মাল দেখিয়া লইবে;

(ঘ) ইজারায় গৃহীত মাল ত্রুটিমুক্ত হইতে হইবে যাহাতে ইজারার উদ্দেশ্য পূরণ হইতে পারে; ক্রটি সৃষ্টি হইলে চুক্তি বাধ্যতামূলক থাকিবে না;

(ঙ) পক্ষবৃন্দের অথবা ইজারার মালের মধ্যে কোন দৈব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হইলে চুক্তি বাধ্যতামূলক থাকিবে না;

ধারা-৬২৩

ইজারার শ্রেণীবিভাগ ইজারা প্রধানত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত—(ক) কোন ‘মাল’ ব্যবহারের জন্য ইজারায় প্রদান বা গ্রহণ; ইহা আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্তঃ

(১) অস্থাবর মালের ইজারা, যেমন: বাড়িঘর, জায়গাজমি, ইজারায় আদান-প্রদান;

(২) পণ্য ইজারা, যেমন কাপড়, তৈজসপত্র বা আসবাবপত্রের ইজারা; (৩) পশু বা যানবাহন ইজারা; (৪) মানুষের শ্রম ইজারা।

ধারা-৬২৪

ফাসিদ ও বাতিল ইজারা (ক) ধারা (৬২০)-এ উল্লেখিত কোন শর্তের অনুপস্থিতিতে ইজারা বাতিল গণ্য হইবে এবং বাতিল ইজারা চুক্তি সংশোধনযোগ্য নহে।

(খ) ইজারা বাতিল হইলে ইজারাদাতা ইজারাদারের নিকট কিছু পাইবে নাঃ

তবে শর্ত থাকে যে, তাহা ওয়াকফ অথবা নাবালেগ বা পাগলের সম্পত্তি হইলে যথাযোগ্য ভাড়া প্রদেয় হইবে।

(গ) ধারা (৬২০)-এ উল্লেখিত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকিলেও ধারা (৬২১)-এ উল্লেখিত কোন শর্তের অনুপস্থিতিতে ইজারা ফাসিদ (ত্রুটিপূর্ণ) গণ্য হইবে;

(ঘ) ফাসিদ ইজারার ক্ষেত্রে উল্লেখিত হারে ভাড়া প্রদেয় না হইয়া যথাযোগ্য ভাড়া প্রদেয় হইবে; এবং ফাসিদ ইজারা সংশোধনযোগ্য;

৩২৫

(ঙ) ভাড়ার পরিমাণ অজ্ঞাত বা অনির্ধারিত থাকার কারণে ইজারা ফাসিদ হইলে “যথাযোগ্য ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(চ) ধারা (৬২১)-এ উল্লেখিত কোন শর্তের অনুপস্থিতির কারণে ইজারা ফাসিদ হইলে “যথাযোগ্য ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, উহার পরিমাণ নির্ধারিত ভাড়ার পরিমাণের অতিরিক্ত হইতে পারিবে না।

বিশ্লেষণ

ইজারা চুক্তি অনুষ্ঠান (সম্পাদন) ও কার্যকর হওয়ার জন্য যেসব শর্ত রহিয়াছে উহার কোন এক বা একাধিক শর্ত অনুপস্থিত থাকিলে উক্ত চুক্তি বাতিল চুক্তি হিসাবে গণ্য হইবে। এই অবস্থায় কৃত চুক্তি আইনত বলবৎ অযোগ্য অর্থাৎ উহার কোন আইনগত কার্যকারিতা নাই। ইহার দ্বারা চুক্তিভুক্ত কোন পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হইলে উহার ক্ষতিপূরণ নাই।

ইজারা চুক্তি কার্যকর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও উক্ত চুক্তি সহীহ (যথার্থ) হওয়ার জন্য যেসব শর্ত রহিয়াছে উহার কোন এক বা একাধিক শর্ত অপূর্ণ থাকিলে কৃত চুক্তি ফাসিদ চুক্তি হিসাবে গণ্য হইবে। ফাসিদ চুক্তি সংশোধনযোগ্য অর্থাৎ যে কারণে চুক্তিটি ফাসিদ হইয়াছে সেই কারণটি দূরীভূত করিলে উক্ত চুক্তি সহীহ চুক্তিতে পরিণত হইবে এবং চুক্তির যাবতীয় শর্ত মোতাবেক পক্ষবৃন্দ কার্য করিতে বাধ্য থাকিবে। চুক্তি সংশোধন না করা হইলেও ইজারাদাতা যুক্তিসংগত ভাড়া পাইবে। ফাসিদ চুক্তির অধীনে প্রদত্ত মাল ইজারাদারের নিকট আমানত হিসাবে গণ্য হইবে। উহা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হইলে ইজারাদার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য নহে (যদি উহা তাহার অবহেলা বা অযত্নে না ঘটিয়া থাকে)।

ধারা—৬২৫

ভাড়া প্রদানের স্থান (ক) ভাড়া “নগদ অর্থে” অথবা “মালদ্বারা পরিশোধ করা যাইতে পারে। (খ) নগদ অর্থে ভাড়া পরিশোেধযোগ্য হইলে তাহার পরিমাণ নির্ধারিত

৩২৬

হইতে হইবে।

(গ) ভাড়া ‘মাল’ দ্বারা পরিশোধযোগ্য হইলে মালের—(১) পরিমাণ (যদি উহা ওজন বা পরিমাপযোগ্য হয়), (২) সংখ্যা (যদি উহা গণনাযোগ্য হয়), (৩) বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি উল্লেখ থাকিতে হইবে।

(ঘ) পরিবহনের ক্ষেত্রে মাল নির্দিষ্ট স্থানে পৌছাইয়া দেওয়ার উল্লেখ থাকিতে হইবে এবং ভাড়া কোথায় প্রদেয় হইবে তাহারও উল্লেখ থাকিতে হইবে।

(ঙ) স্থাবর মালের ভাড়া মালের অবস্থান স্থলে প্রদেয় হইবে।

ধারা—৬২৬

ভাড়া কখন প্রাপ্য হয় (ক) শুধু চুক্তি সম্পাদনের দ্বারা ভাড়া প্রদান বাধ্যতামূলক হয় না, বরং চুক্তির শর্ত মোতাবেক ভাড়া প্রদান বাধ্যতামূলক হয়;

(খ) ইজারাদার অগ্রিম ভাড়া প্রদান করিলে ইজারাদাতা উহার মালিক হইয়া যায় এবং ইজারাদার তাহা আর ফেরত চাহিতে পারিবে না।

(গ) “মাল” অথবা “শ্রম” ইজারার ক্ষেত্রে ভাড়া বা মজুরি তৎক্ষণাৎ (তাজীল) প্রদানের শর্ত থাকিলে ইজারাদার তাহা তৎক্ষণাৎ প্রদাণ করিতে বাধ্য এবং

(১) “মাল”-এর ক্ষেত্রে ভাড়া না পাওয়া পর্যন্ত ইজারাদাতা তাহা ইজারাদারের নিকট অৰ্পণ করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবে;

(২) “শ্রম”-এর ক্ষেত্রে শ্রমিক মজুরি না পাওয়া পর্যন্ত শ্রম বিনিয়োগে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবে, এবং

(৩) উভয় ক্ষেত্রে ইজারাদার তৎক্ষণাৎ ভাড়া বা মজুরি প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলে ইজারাদাতা একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

(ঘ) ইজারার “মাল’ হইতে ‘উপকারিতা লাভের সংগে সংগে ভাড়া প্রদান বাধ্যতামূলক হইয়া যায়।

(ঙ) সহীহ ইজারার ক্ষেত্রে, ইজারাদার ইজারাকৃত মাল” হইতে উপকার লাভে সক্ষম হইলেই ভাড়া প্রদান বাধ্যতামূলক হইবে, সে উপকার লাভ

৩২৭

করুক বা না করুক।

(চ) ফাসিদ ইজারার ক্ষেত্রে, ইজারাদার ইজারাকৃত মাল হইতে উপকার লাভে সক্ষম হইলেই ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে উপকার লাভ না করিবে।

(ছ) কোনরূপ “চুক্তি” বা “অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির “মাল” ব্যবহার করিলে যদি উক্ত মাল—

(১) ইজারা দেওয়ার জন্য তৈরী করা হইয়া থাকে তাহা হইলে “যথাযোগ্য ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(২) ইজারা দেওয়ার জন্য তৈরী না করা হইয়া থাকে তাহা হইলে ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে নাঃ

তবে শর্ত থাকে যে, মালিক ভাড়া দাবি করিলে ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(জ) ভাড়া অগ্রিম প্রদান” অথবা “বিলম্বে প্রদানের শর্ত থাকিলে সেই মোতাবেক ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ঝ) “বিলম্বে” ভাড়া প্রদানের শর্ত থাকিলে ইজারার মাল ইজারাদারের নিকট অর্পণ করা ইজারাদাতার কর্তব্য এবং সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ঞ) ভাড়া বা মজুরি অগ্রিম অথবা বিলম্বে প্রদানের কোনরূপ শর্ত না থাকিলে–

(১) স্থাবর মাল ইজারার ক্ষেত্রে উহা প্রথমে ইজারাদারের নিকট অর্পণ করিতে হইবে;

(২) শ্রমের ক্ষেত্রে প্রথমে শ্রম প্রদান করিতে হইবে। (ট) নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে ভাড়া প্রদানের শর্ত থাকিলে উক্ত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ঠ) মাল ইজারাদারের নিকট অর্পণের সময় হইতে ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে এবং অর্পণের পূর্বে ইজারাদাতা ভাড়া দাবি করিতে পারিবে না।

(ড) মাল ইজারাদারের নিকট অর্পণ করার পূর্বেই ইজারার মেয়াদ শেষ

৩২৮

হইয়া গেলে কোন ভাড়া প্রাপ্য হইবে না।

(ঢ) ইজারাকৃত মালের উপকারিতা বিলুপ্ত বা ধ্বংস হইয়া গেলে বা ব্যবহার অনুপযোগী হইয়া গেলে ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে না।

(ণ) দোকানপাট ইজারার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ে মন্দা বা অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণে দোকান বন্ধ থাকিলেও ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ত) যানবাহন ইজারার ক্ষেত্রে, গন্তব্যে পৌঁছার পূর্বেই ইজারার মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য পূর্বের নির্ধারিত হারে ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

ধারা-৬২৭

ইজারার সময়সীমা (ক) কোন ব্যক্তি তাহার মালিকানাভুক্ত মাল অথবা জায়গাজমি স্বল্প মেয়াদে অথবা দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা প্রদান করিতে পারে।

(খ) চুক্তি সম্পাদনের তারিখ অথবা চুক্তিপত্রে উল্লেখিত তারিখ হইতে ইজারার মেয়াদ শুরু হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, এখতিয়ারের ক্ষেত্রে এখতিয়ারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর হইতে মেয়াদ শুরু হইবে।

(গ) স্থাবর মাল নির্ধারিত মাসিক, বাৎসরিক বা মেয়াদী ভাড়ায় ইজারা দেওয়া বৈধ।

(ঘ) মাসিক ভাড়া প্রদানের শর্তে ইজারা প্রদান করা হইলে মাস তিরিশ দিনে বা ইহার কম-বেশি হইলেও মাসিক নির্ধারিত ভাড়াই প্রাপ্য হইবে।

(ঙ) মাসের অংশবিশেষ অতীত হওয়ার পর এক মাসের জন্য ইজারা প্রদান করা হইলে চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হইতে মাস গণনা শুরু হইবে এবং মাস হইবে তিরিশ দিনের।

(চ) মাসের অংশবিশেষ অতীত হওয়ার পর কয়েক মাসের জন্য ইজারা প্রদান করা হইলে উক্ত অংশবিশেষের জন্য দৈনিক হারে ভাড়া প্রদেয় হইবে।

৩২৯

(ছ) বৎসরের কয়েক মাস অতীত হওয়ার পর এক বৎসরের মেয়াদে ইজারা প্রদান করা হইলে ইজারা প্রদানের মাস হইতে মেয়াদ গণনা শুরু

হইবে।

(জ) মেয়াদ নির্ধারণ না করিয়া মাসিক নির্দিষ্ট ভাড়ায় স্থাবর মাল ইজারা প্রদান করা হইলে তাহা সহীহ হইবে এবং এই অবস্থায়—

(১) দ্বিতীয় এবং পরবর্তী মাসসমূহের পহেলা তারিখে ইজারাদাতা ও ইজারাদার যে কোন পক্ষ চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে কিন্তু পহেলা তারিখ

অতীত হওয়ার পর তাহা বাতিল করিতে পারিবে না;

(২) কোন পক্ষ যদি বলে, “আগামী মাসের পহেলা তারিখ হইতে চুক্তি বাতিল,”তবে পরবর্তী মাসের পহেলা তারিখ হইতে চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে; কিন্তু কয়েক মাসের ভাড়া অগ্রিম প্রদান করা হইয়া থাকিলে সেই কয় মাসে কোন পক্ষই চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে না।

ধারা—৬২৮ চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার (খিয়ারুশ শত) (ক) চুক্তিভুক্ত পক্ষ কর্তৃক ইজারা বহাল অথবা বাতিল করার “এখতিয়ার” শর্ত রাখা বৈধ; তবে সময়সীমার উল্লেখ থাকিতে হইবে;

(খ) যাহার অনুকূলে “এখতিয়ার” সংরক্ষণ করা হইবে সে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

(গ) সময়সীমা অতীত হওয়ার সংগে সংগে “এখতিয়ার” বাতিল হইয়া যইবে।

(ঘ) চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হইতে “এখতিয়ারের মেয়াদ গণনা করা হইবে।

(ঙ) এখতিয়ারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইজারার মেয়াদ শুরু হইবে।

(চ) নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ায় ইজারা প্রদান করা হইলে এবং ভূমির পরিমাণ চুক্তিপত্রে উল্লেখিত পরিমাণের কম হইলে নির্ধারিত ভাড়াই প্রদেয় হইবে, তবে এই ক্ষেত্রে ইজারাদারের চুক্তি বাতিলের

“এখতিয়ার” থাকিবে।

(ছ) “বর্গফুট প্রতি” নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ায় ভূমি ইজারা প্রদান করা হইলে বর্গফুটের পরিমাণ অনুযায়ী ভাড়া প্রাপ্য হইবে।

ধারা—৬২৯

পরিদর্শনের এখতিয়ার (খিয়ারুর রুয়া) (ক) ইজারাদারের ইজারার মাল পরিদর্শনের এখতিয়ার” রহিয়াছে। (খ) ভাড়াকৃত মালের পরিদর্শন ইহার উপকারিতার পরিদর্শন হিসাবে গণ্য হইবে।

(গ) কেহ পূর্বে না দেখিয়া বাড়ি ভাড়া করিলে তাহার পরিদর্শনের এখতিয়ার” থাকিবে এবং পছন্দ না হইলে চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

(ঘ) ইতিপূর্বে দেখা বাড়ি ইজারা গ্রহণ করিলে সেই ক্ষেত্রে “পরিদর্শনের এখতিয়ার” বাতিল হইয়া যাইবে; তবে ইতিমধ্যে বসবাসের অনুপযোগী কোন পরিবর্তন সূচীত হইয়া থাকিলে “পরিদর্শনের এখতিয়ার” বহাল থাকিবে।

(ঙ) প্রকৃতিগতভাবে যে কর্ম অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়, সেই কর্মের জন্য ইজারায় নিয়োজিত ব্যক্তি কর্ম আরম্ভের পূর্বে উহা গ্রহণ বা অগ্রহণের জন্য পরিদর্শনের অধিকার রাখে।

ধারা—৬৩০ ত্রুটির জন্য এখতিয়ার (খিয়ারুল আইব) (ক) ইজারার মালে ত্রুটির কারণে ইজারাদারের ইজারা চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার রহিয়াছে।

(খ) যে “ত্রুটির কারণে ইজারাকৃত মাল দ্বারা ইপ্সিত উপকার লাভ হয়

, সেই অবস্থায় ইজারা চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার অর্জিত হয়।

(গ) ইজারাকৃত মাল হইতে উপকার লাভের পূর্বে সদ্য ক্রটি সৃষ্টি হইলে তাহা চুক্তি সম্পাদনকালে মালের মধ্যে বিদ্যমান ছিল বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঘ) সদ্য সৃষ্ট ত্রুটির কারণে ইজারাদার চুক্তি বহাল অথবা বাতিলের

৩৩১

এখতিয়ার লাভ করিবে এবং ত্রুটি সত্ত্বেও চুক্তি বহাল রাখিয়া উক্ত মাল দ্বারা উপকার লাভ করিলে নির্ধারিত ভাড়া প্রদান বাধ্যতামূলক হইবে।

(ঙ) ইজারাদার কর্তৃক চুক্তি বাতিলের পূর্বে ইজারাদাতা সদ্য সৃষ্ট ত্রুটি দূর করিয়া দিলে ইজারাদারের এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে এবং ইজারাদার অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাল দখলে রাখিতে চাহিলে ইজারাদাতা বাধা প্রদান করিতে পারিবে না।

(চ) সদ্য সৃষ্ট ত্রুটির কারেণ ইজারাদার চুক্তি বাতিল করিতে চাহিলে তাহা ইজারাদাতার অবগতিতে করিতে হইবে, তাহার অবগতি ব্যতীত বাতিল করিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে না এবং তাহাকে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করিতে হইবে; তবে মালের উপকার সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হইয়া গেলে ইজারাদাতাকে অবহিত না করিয়াও চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে এবং এই ক্ষেত্রে চুক্তি বাতিল না করিলে উপকার বিলুপ্ত হওয়ার ফলে ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে না।

(ছ) বাড়ির অংশবিশেষ অথবা বাড়ির ছাট দেওয়াল ভাংগিয়া যাওয়া সত্ত্বেও ইজারাদার চুক্তি বাতিল না করিলে এবং উক্ত বাড়ির অবশিষ্টাংশে বসবাস অব্যাহত রাখিলে পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করিতে হইবে।

(জ) কোন ব্যক্তি একত্রে দুইটি বাড়ি ইজারা নেওয়ার পর একটি বাড়ি নষ্ট হইয়া গেলে সে দুইটি বাড়ির ইজারা চুক্তিই বাতিল করিতে পারিবে।

(ঝ) কোন ব্যক্তি কোন বাড়ির একটি নির্দিষ্ট কামরা ইজারা নিলে এবং উক্ত কামরায় ত্রুটি দেখা দেওয়া সত্ত্বেও চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার প্রয়োগ না করিয়া উহাতে বসবাস করিতে থাকিলে পূর্ণ ভাড়া প্রদেয় হইবে।

ধারা-৬৩১

স্থাবর মাল ইজারার নীতিমালা (ক) কোন বাড়ি অথবা দোকান কি উদ্দেশ্যে ইজারা লওয়া হইয়াছে তাহার উল্লেখ না থাকিলেও চুক্তি বৈধ গণ্য হইবে এবং এই ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রথার দ্বারা উহা ব্যবহারের প্রকৃতি নির্ধারিত হইবে।

(খ) বাড়ি অথবা দোকানে মালপত্র থাকা অবস্থায় তাহা ইজারা প্রদান

৩৩২ .

করা বৈধ এবং মালপত্র অপসারণ করিয়া উহা ইজারাদারের নিকট হস্তান্তর করিতে হইবে।

(গ) কোন ব্যক্তি শস্যের জন্য জমি ইজারা নিলে এবং তাহাতে কি শস্য রোপন করিবে তাহা নির্দিষ্ট না করিলে অথবা তাহা ইজারাদারের ইচ্ছার উপর ছাড়িয়া দিলে এই ক্ষেত্রে ইজারা চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে, কিন্তু চুক্তি বাতিল করার পূর্বে ইজারাদার শস্যের নাম নির্ধারণ করিলে এবং ইজারাদাতা তাহাতে সম্মত হইলে চুক্তি সহীহ গণ্য হইবে।

(ঘ) ইজারাদার ‘যাহা ইচ্ছা তাহাই বপন করিতে পারিবে এই শর্তে জমি ইজারা প্রদান করিলে চুক্তি বৈধ গণ্য হইবে।

(ঙ) শস্য পাকিবার পূর্বে চুক্তির মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে উহা না পাকা পর্যন্ত ইজারাদার উহা জমিতে রাখিতে পারিবে এবং অতিরিক্ত সময়ের জন্য পূর্বনির্ধারিত হারে ভাড়া প্রদান করিতে হইবে।

(চ) ব্যবহারের প্রকৃতি নির্ধারণ না করিয়া বাড়ি ইজারা নিলে ইজারাদার তাহাতে ইজারাদাতার অনুমতি ব্যতীত এমন কোন পেশা নির্বাহ করিতে পারিবে না যাহার দ্বারা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে অথবা বাড়ির অবচয় ঘটিতে পারে। দোকান ভাড়ার ক্ষেত্রেও ঐ একই নীতি প্রযোজ্য।

ধারা-৬৩২

পণ্যদ্রব্য (আরূদ) ইজারা প্রদান (ক) পোশাক-পরিচ্ছদ, অস্ত্রশস্ত্র, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, অলংকারপত্র, তাঁবু ও অনুরূপ অস্থাবর প্রকৃতির মাল মেয়াদ ও ভাড়া নির্ধারণ করিয়া ইজারা প্রদান করা বৈধ।

(খ) কোন ব্যক্তি পরিধানের জন্য পোশাক-পরিচ্ছদ বা অলংকার ইজারা নিলে সে তাহা ব্যবহার না করিলেও ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(গ) কোন ব্যক্তি নিজে ব্যবহারের জন্য অস্থাবর মাল ইজারা নিলে সে তাহা অপর ব্যক্তির নিকট পুনরায় ইজারা প্রদান করিতে পারিবে না।

৩৩৩

ধারা-৬৩৩

যানবাহন ইজারা প্রদান (ক) যানবাহন ইজারা প্রদান যেমন বৈধ অজ্রপ কোন মাল নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাইয়া দেওয়ার শর্তে যানবাহনের মালিকের সংগে চুক্তিবদ্ধ হওয়াও বৈধ।

(খ) যানবাহন ভাড়া করার পর তাহা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছার পূর্বে পথিমধ্যে অক্ষম বা বিকল হইয়া গেলে ইজারাদার উহা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে পারে অথবা ঐ অবস্থায় চুক্তি বাতিলও করিতে পারে; তবে সে যতখানি দূরত্ব অতিক্রম করিয়াছে, নির্ধারিত হারে তাহার ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(গ) যানবাহনের মালিক নির্দিষ্ট পরিমাণ মাল নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাইয়া দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হইলে এবং পথিমধ্যে যানবাহন অকেজো বা অপারগ হইয়া পড়িলে সে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া উক্ত মাল নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাইয়া দিতে বাধ্য থাকিবে।

(ঘ) যানবাহন নির্দিষ্ট না করিয়া ইজারা প্রদান বৈধ নহে, তবে চুক্তিপত্র সম্পাদনের পর তাহা নির্দিষ্ট করিলে এবং ইজারাদার তাহাতে সম্মতি প্রকাশ করিলে তাহা বৈধ হইবে।

(ঙ) চুক্তির শর্তাবলী নির্দিষ্ট না করিয়া বরং স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী কোন নির্দিষ্ট যানবাহন ইজারা প্রদান করা হইলে তাহা বৈধ হইবে এবং প্রথা অনুযায়ী চুক্তি কার্যকর হইবে।

(চ) যানবাহন ইজারার ক্ষেত্রে শুধু দূরত্বের উল্লেখ যথেষ্ট হইবে না, বরং নির্দিষ্ট গন্তব্যের উল্লেখও থাকিতে হইবে।

(ছ) কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্য যানবাহন ভাড়া করিলে সে মালিকের অনুমতি ব্যতীত উক্ত যানবাহন লইয়া অন্যত্র যাইতে পারিবে না; যদি যায় এবং অননুমোদিত পথে যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহা হইলে ইজারাদারকে ক্ষতিপূরণ বহন করিতে হইবে।

(জ) কোন স্থানে পৌছার একাধিক বিকল্প রাস্তা থাকিলে ইজারাদার যে কোন রাস্তা অনুসরণ করিতে পারিবে; তবে যানবাহনের মালিক রাস্তা নির্দিষ্ট করিয়া দিলে সেই ক্ষেত্রে ইজারাদার বিকল্প রাস্তা দিয়া গমন করিলে এবং

৩৩৪

যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হইলে—(১) সেই রাস্তার দূরত্ব সমান বা অপেক্ষাকৃত কম

এবং যাতায়াত সুগম হইলে তাহাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে না;

(২) দূরত্ব অধিক এবং যাতায়াত সুগম না হইলে ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে।

(ঝ) কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যানবাহন ভাড়া করিলে উক্ত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সে তাহা ব্যবহার করিতে পারিবে না; নির্দিষ্ট মেয়াদের পরও সে তাহা কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার করিলে এবং তাহার দখলে থাকা অবস্থায় উহার ক্ষতি হইলে তাহাকে ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে।

(ঞ) কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়ার শর্তে যানবাহন ইজারা লইলে তাহা বৈধ হইবে।

(ট) কোন ব্যক্তি তোক পরিবহনের জন্য যানবাহন ইজারা নিলে তাহা মাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করিতে পারিবে না; যদি মাল পরিবহন করে এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তাহাকে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে।

(ঠ) যানবাহনের জ্বালানী খরচ এবং পশুর ক্ষেত্রে উহার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ইজারাদারকে বহন করিতে হইবে।

ব্যাখ্যা। যানবাহন বলিতে যান্ত্রিক যানবাহন এবং পশু উভয়টিই বুঝানো হইয়াছে।

ধারা-৬৩৪

ইজারার মাল অর্পণ (ক) ইজারাদাতা ইজারাদারের নিকট মাল রাখিয়া দিলে এবং তাহাকে উহা হইতে বিনা বাধায় উপকার লাভ করার অনুমতি প্রদান করিলে প্রথমোজন শেষোক্তজনের নিকট মাল অৰ্পণ করিয়াছে বুঝাইবে।

(খ) মেয়াদ অথবা দূরত্ব নির্ধারণ করিয়া মাল ভাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে তাহা ইজারাদারের নিকট এমনভাবে অর্পণ করিতে হইবে যে, মেয়াদ অথবা দূরত্বের সমাপ্তি পর্যন্ত অব্যাহতভাবে উহা ইজারাদারের দখলে থাকিবে।

(গ) স্থাবর মাল ভাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে উহাতে অবস্থিত অস্থাবর মাল

৩৩৫

অপসারণ করিয়া উহা খালি না করিয়া দেওয়া পর্যন্ত অথবা ইজারাদারের নিকট বিক্রয় করিয়া না দেওয়া পর্যন্ত ভাড়া প্রাপ্তির সূচনা হইবে না।

(ঘ) ইজারাদাতা তাহার বাড়ি ইজারাদারের নিকট অর্পণ করার পর ইহার কোন একটি কোঠা নিজের দখলে রাখিলে ইজারাদার চাহিলে ইজারা চুক্তি বাতিল করিতে পারে এবং উক্ত কোঠার ভাড়া দেয় হইবে না, কিন্তু চুক্তি বাতিলের পূর্বে উহার দখল বুঝাইয়া দিলে ইজারাদারের এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

ধারা-৬৩৫ চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ইজারার মালের উপর পক্ষদ্বয়ের কর্তৃত্ব (ক) ইজারাদার স্থাবর মাল পুনঃ ইজারা প্রদান করিতে পারিবে, কিন্তু অস্থাবর মাল পুনঃ ইজারা প্রদান করিতে পারিবে না।

(খ) হাত বদল হইলেও যে মালের ব্যবহার ও উপকারিতা একইরূপ থাকে সেই প্রকৃতির মাল ইজারা লওয়ার পর পুনঃ ইজারা প্রদান বৈধ।

(গ) কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদে তাহার মাল ইজারা দেওয়ার পর তাহা ঐ মেয়াদের জন্য পুনরায় ইজারা প্রদান করিতে পারে না।

(ঘ) কোন ব্যক্তি ইজারায় প্রদত্ত তাহার মাল ইজারার মেয়াদের মধ্যে বিক্রয় করিতে পারিবে, কিন্তু তাহা মেয়াদশেষে কার্যকর হইবে; অতপর ক্রেতা উক্ত মাল গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিতে পারিবে না। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ক্রেতা মালের অর্পণ দাবি করিলে এবং তাহা সম্ভব না হইলে উক্ত ক্রয়-বিক্রয় বাতিল হইবে। ইজারাদারের সম্মতিতে উক্ত ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইলে তাহা সংগে সংগে কার্যকর হইবে। ইজারাদার অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ করিয়া থাকিলে তাহা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত তাহার দখল হইতে মাল নেওয়া যাইবে না। অগ্রিম ভাড়া ফেরত পাওয়ার পূর্বে ইজারাদার মালের দখল বুঝাইয়া দিলে তাহার “মাল আটক রাখার অধিকার” বাতিল হইয়া যাইবে।

ধারা-৬৩৬

ইজারার মাল ফেরত প্রদান (ক) ইজারার, মেয়াদশেষে ইজারাদার ইজারার মাল অবশ্যই ফেরত প্রদান করিবে।

(খ) মেয়াদশেষে ইজারাদার ইজারাকৃত মাল মোটেই ব্যবহার করিতে পারিবে না।

(গ) মেয়াদশেষে ইজারাদাতা তাহার মাল ফেরত চাহিলে ইজারাদার তাহাকে উহা ফেরত প্রদান করিবে।

(ঘ) ইজারার মাল মালিকের নিকট পৌছাইয়া দিতে বা ফেরত দিতে ইজারাদার বাধ্য নহে, মেয়াদশেষে তাহা ইজারাদারের নিকট হইতে বুঝিয়া লওয়ার দায়িত্ব ইজারাদার।

(ঙ) নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছার জন্য যানবাহন ইজারা দেওয়া হইলে উক্ত গন্তব্যস্থানে উপস্থিত হইয়া ইজারাদাতা ইজারাদারের নিকট হইতে তাহার মাল বুঝিয়া লইবে। সে যদি তাহা না করে এবং এই অবস্থায় ইজারাদারের কোনরূপ অবহেলা বা ত্রুটি ব্যতীত উক্ত মাল নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহা হলে ইজারাদার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য নহে।

(চ) ইজারার মাল ফেরত প্রদান করিতে পরিবহন খরচের প্রয়োজন হইলে তাহা ইজারাদাতা বহন করিবে।

ধারা——৬৩৭

উপকারিতার দামান (ক্ষতিপূরণ) (ক) কোন ব্যক্তি মালিকের অনুমতি না লইয়া তাহার মাল ব্যবহার করিলে সে অবৈধ ব্যবহারকারী গণ্য হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, মাল ইজারা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হইলে এবং ব্যবহারকারীর ব্যবহারকে মালিকানা বা চুক্তির দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব না হইলে উভয় ক্ষেত্রে মাল ব্যবহারের জন্য যথাযোগ্য ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(খ) যে যানবাহন ইজারায় প্রদানের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়, কোন ব্যক্তি

৩৩৭

মালিকের অনুমতি ব্যতীত সেই যানবাহন ব্যবহার করিলে উহার জন্য ক্ষতিপূরণসহ যথাযোগ্য ভাড়া প্রদান বাধ্যকর হইবে।

ধারা-৬৩৮।

ইজারার মালের দামান (ক্ষতিপূরণ) (ক) ইজারা চুক্তি সহীহ হউক বা না হউক, ইজারার মাল ইজারাদারের নিকট আমানত হিসাবে গণ্য হইবে।

(খ) ইজারাদারের কোনরূপ অবহেলা, ভুলকর্ম অথবা অননুমোদিত কর্ম ব্যতীত ইজারার মাল ক্ষতিগ্রস্ত হইলে উহার জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে না।

(গ) ইজারাদারের অবহেলা, ভুল কর্ম অথবা অননুমোদিত কর্মের দ্বারা ইজারার মাল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে অথবা উহার মূল্য হ্রাস পাইলে ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(ঘ) ইজারাদারের এমন কোন কাজ, যাহা ইজারার ক্ষেত্রে প্রথা বা ঐতিহ্য বিরোধী, তাহা ‘ভুলকর্ম’ হিসাবে গণ্য হইবে।

(ঙ) মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ইজারার মাল ইজারাদারের নিকট তাহা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত আমানত হিসাবে গণ্য হইবে।

(চ) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইজারার মাল ব্যবহারের কারণে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে ইজারাদার ক্ষতিপূরণ করিতে বাধ্য।

(ছ) মেয়াদশেষে ইজারাদাতা মাল ফেরত চাহিলে এবং ইজারাদার তাহা ফেরত না দিলে—এই অবস্থায় উহা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে, ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে।

৩৩৮

তথ্য নির্দেশিকা

আল-হিদায়া, কিতাবুল ইজারা, ৩, পৃ.২৭৭। মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৪৩ঃ “তামলীকুল

ইওয়াদ”, প্রতিদানের বিনিময়ে মুনাফার মালিকানা লাভ করা। কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃ. ১৫৯৪

الإجار عبارة عن العقد على المنافع بقوض . هو مال ف

المنافع بعوض إجارة و بغير عوض إعارة .

“মালের আকারে বিনিময় প্রদানের পরিবর্তে মুনাফা বা উপকার ভোগের চুক্তিকে ইজারা বলে। অতএব বিনিময় প্রদানের পরিবর্তে মুনাফার মালিকানা অর্জন করাকে ইজারা বলে এবং উহা বিনিময়বিহীন

হইলে তাহাকে ইয়ারা (ধার, ঋণ) বলে। ২.ইক মজা। ৩. বুখারী, কিতাবুল ইজারা, বাংলা অনু. (আধুনিক প্রকাশনী), ২য়, পৃ. ৩৮৬, বাব ৪, নং ২১০৪। ৪. বুখারী, কিতাবুল ইজারা (বাংলা অনু, আধুনিক প্রকাশনী), ২খ, পৃ. ৩৮৯, বাব ১০, নং ২১০৯। ৫. বাদাই, ৪, পৃ. ৫৭১-২।

গসব

ইতলাফ

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *