1 of 2

২২. সাক্ষ্য আইন

অধ্যায় : ২২ সাক্ষ্য আইন

14) ধারা ৫৭১

সংজ্ঞা (ক) ৫ অধিকার” প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে আদালতে উপস্থিত হইয়া আমি সাক্ষ্য দিতেছি” শব্দযোগে কোন ব্যক্তি কর্তৃক যথার্থ সংবাদ প্রদানকে সাক্ষ্য” বলে।

(খ) সংবাদ বা সাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে সাক্ষী” বলে।

বিশ্লেষণ

“সাক্ষ্য”-এর আরবী প্রতিশব্দ শাহাদাহ। ইহার শাব্দিক অর্থ উপস্থিতি; অকাট্য সংবাদ। পরিভাষায়ঃ

اخبار صادق لإثبات حق بلفظ الشهادة في مجلس

– La।

“অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাক্ষ্য’ শব্দের দ্বারা আদালতে যথার্থ সংবাদ পরিবেশনকে সাক্ষ্য বলে।”

তুর্কী মাজাল্লায় সাক্ষ্যের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে?

U

الشهادة هي الإخبار بلفظ الشهادة يعني بقول أشهد اثبات حتي احي الذي هو في ذمة الأخرة

و الحاكم في مواجهة الخشمين .

“বিচারকের বা বিচারক পর্যায়ের কাহারও সম্মুখে এবং বাদী ও বিবাদীর উপস্থিতিতে বা তাহাদের কোন পক্ষের উপস্থিতিতে তাহাদের একজনের উপর অপর জনের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা বা কোন অপরাধ প্রমাণের উদ্দেশ্যে “আমি

সাক্ষ্য দিতেছি” শব্দযোগে সংবাদ প্রদান করাকে “সাক্ষ্য” বলে।”

(Sahadat is to give information by the word “Sahadat”, the two parties are face to face, and in the presence of the judge, when to prove the right which one person has against another).

যেসব লোক বিবদমান বিষয়ে অবহিত তাহাদেরকে বাদী সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আহবান করিলে তাহার ডাকে সাড়া দিয়া সাক্ষ্য প্রদান করা তাহাদের কর্তব্য” (ফারদুল কিফায়া)। কিন্তু কেহই সাড়া না দিলে তখন উহা তাহাদের জন্য “অবশ্য কর্তব্য” (ফারদুল আয়ন) হইয়া দাঁড়ায়।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

ولا يأب الشهداء اذا ماعوا ۔

“সাক্ষীগণকে তলব করা হইলে তাহারা যেন অস্বীকার না করে।”

وأقيموا الشهادة لله.

“আল্লাহর (সন্তোষ লাভের জন্য তোমরা সাক্ষ্য প্রদান কর।”

ولا تكتموا الشهادة و من يكتمها فاه اثم قلبه –

“তোমর সাক্ষ্য গোপন করিও না। যে কেহ উহা গোপন করে তাহার অন্তর অপরাধী।”

ধারা-৫৭২।

সাক্ষ্যের সাধারণ শর্তাবলী কোন ব্যক্তির মধ্যে নিম্নোক্ত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকিলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে– (ক) সাক্ষীকে বােধশক্তি সম্পন্ন হইতে হইবে;

(খ) সাক্ষীকে বালেগ হইতে হইবে;

(গ) সাক্ষী যেই ঘটনা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করিবে সেই ঘটনা তাহাকে চাক্ষুস দেখিতে হইবে;

(ঘ) সাক্ষীকে মুসলমান হইতে হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, অমুসলমানদের ক্ষেত্রে অমুসলমানদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য;

(ঙ) সাক্ষীকে বাকশক্তিসম্পন্ন হইতে হইবে;

ধবদ্ধ ইসলামী আইন

২৫৭

(চ) সাক্ষীকে ন্যায়পরায়ণ হইতে হইবে; (ছ) সাক্ষীর সংখ্যা কমপক্ষে দুইজন হইতে হইবে; (জ) সাক্ষীগণের সাক্ষ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকিতে হইবে; (ঝ) “আমি সাক্ষ্য দিতেছি” শব্দযোগে সাক্ষ্য প্রদান করিতে হইবে;

(ঞ) যে বিষয়ের সাক্ষ্য প্রদান করা হইবে সেই বিষয় সাক্ষীগণের জ্ঞা থাকিতে হইবে;

(ট) আদালতে উপস্থিত হইয়া সাক্ষ্য প্রদান করিতে হইবে; (ঠ) সাক্ষী বিপরীত পক্ষের শত্রু হইতে পারিবে না;

(ড) সাক্ষী ইতিপূর্বে যেনার অপবাদ আরোপের অপরাধে শাস্তি ভোগ করে নাই;

(ঢ) সাক্ষ্যদান নিঃস্বার্থ ও প্রভাবমুক্ত হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি বােধশক্তি সম্পন্ন না হইলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। কারণ সাক্ষী হওয়ার অর্থই হইল ঘটনা অনুধাবন করা এবং তাহা স্মরণ রাখা। ইহা বােধশক্তি ও স্মৃতিশক্তি ব্যতীত সম্ভব নহে। অতএব সাক্ষীকে বােধশক্তি সম্পন্ন হইতে হইবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত। মহানবী (স) বলেনঃ

اذا علمت مثل الشمس فاشهد والآ فۓ ۔

“তুমি (ঘটনা সম্পর্কে) দিবালোকের মত অবহিত থাকিলেই সাক্ষ্য প্রদান কর, অন্যথায় বিরত থাক।”

সাক্ষীকে বালেগ অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হইতে হইবে। এই বিষয়েও ফকীহগণ একমত। নাবালেগ ব্যক্তি বােধশক্তি সম্পন্ন হইলেও তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য

নহে। ১১

কোন ব্যক্তি যেই ঘটনা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করিবে সেই ঘটনা তাহাকে স্বচক্ষে দেখিতে হইবে। অতএব অন্ধ ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। কারণ সে বাদী ও বিবাদীকে সনাক্ত করিতে সক্ষম নহে। কণ্ঠস্বরের অনুসরণ করিয়া সনাক্ত করা কখনও সম্ভব হইলেও তাহা সন্দেহমুক্ত নহে। ইমাম শাফিঈ (র)-এর

২৫৮

মতে অন্ধের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য, যেইসব ক্ষেত্রে সরাসরি দর্শনের প্রয়োজন হয় না। উপরোক্ত হাদীস হইতে এই বিষয়ের সমর্থনও পাওয়া যায়।

সাক্ষীকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী হইতে হইবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত। অতএব মুসলমানের বিষয়ে বিধর্মীদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। তবে তাহারা পরস্পরের বিষয়ে সাক্ষী হইতে পারিবে।১৩।

সাক্ষীকে স্বাধীন ব্যক্তি হইতে হইবে। এই বিষয়ে হানাফী, শাফিঈ ও মালিকী ফকীহগণ একমত। কারণ অস্বাধীন ব্যক্তি অভিভাবক হইতে পারে না এবং সাক্ষ্যের মধ্যে অভিভাবকত্বের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মহান আল্লাহ বলেন,

ضرب الله مثلا عبدا مملوكا لا يقدر على شيئ ۔

“আল্লাহ অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করিয়াছেন, যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না।”১৫

সাক্ষীর সরাসরি কথা বলার শক্তি থাকিতে হইবে। বাকশক্তিহীন ব্যক্তি সাক্ষী হওয়ার যোগ্য নহে। এই বিষয়ে হানাফী, শাফিঈ ও হাম্বলী ফকীহগণ। একমত। ১৬ অবশ্য মালিকী মাযহাবমতে বাকশক্তিহীনের সুস্পষ্ট ইশারা-ইংগিতে প্রদত্ত সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। ১৭

সাক্ষীকে ন্যায়পরায়ণ ও সত্যবাদী হইতে হইবে। সমাজে মিথ্যাবাদী, প্রতারক ও পাপাচারী হিসাবে কুখ্যাত লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। মহান আল্লাহ বলেন, :

ممن ترضون ين الشهداء .

“সাক্ষীদের মধ্যে যাহাদের প্রতি তোমরা সন্তুষ্ট।”১৮

واشهدوا ذوي عدل بگم۔

“এবং তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখিবে।”১৯।

“ন্যায়পরায়ণতা” (আদালাত)-র বিভিন্নরূপ সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে। “যাহার বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ নাই সে ন্যায়পরায়ণ”।২° “যাহার সৎকার্যই বেশী এবং অসৎকার্য কম”। “যে ব্যক্তি কবীরা গুনাহ পরিহার করে ও অবশ্য পালনীয় ফরজ আদায় করে এবং যাহার খারাপ কার্যকলাপের তুলনায় সৎকার্যই

২৫৯,

প্রসিদ্ধ সে ন্যায়পরায়ণ।” ইমাম ফাখরুদ্দীন আলী বাযদাবী (র) এই শেষোক্ত মত ব্যক্ত করিয়াছেন। ২২ মতান্তরে “যে ব্যক্তি তাহার সামগ্রিক লেনদেনে সৎ বলিয়া পরিচিত, যাহারা অসৎ কার্যের তুলনায় সৎকার্যই প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে, যে মিথ্যাবাদী বা প্রতারক হিসাবে বা কবীরা গুনাহে লিপ্ত হিসাবে কুখ্যাত নহে সে ন্যায়পরায়ণ।”২৩

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) কবীরা গুনাহ”-এর সংজ্ঞায় বলিয়াছেনঃ “যেসব অপরাধে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারিত হইয়াছে, তাহাই ‘কবীরা গুনাহ।” যেমন অন্যায়ভাবে নরহত্যা করা, সতীস্বাধ্বী নারীর প্রতি যেনার অপবাদ আরোপ করা, যেনায় লিপ্ত হওয়া, ইয়াতীমের সম্পত্তি আত্মসাত করা, সূদের লেনদেন করা, যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করা ইত্যাদি।

যেনা ও যেনার অপবাদ সম্পর্কিত মোকদ্দমা ব্যতীত অন্য সকল মোকদ্দমায় সাধারণত কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর প্রয়োজন। মহান আল্লাহর বাণী :

“তোমরা পুরুষদের মধ্য হইতে দুইজন সাক্ষী রাখ। যদি দুইজন পুরুষ সাক্ষী পাওয়া যায় তবে একজন পুরুষ ও দুইজন নারী।”

واشهدوا ذوي عدل منگم۔

“এবং তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী

রাখিবে।”২৬।

মহানবী (স) বাদীকে সম্বােধন করিয়া বলেন :

شاهداك أو يمينه .

“তোমার দুইজন সাক্ষী উপস্থিত কর, অন্যথায় তাহার (বিবাদীর) শপথের উপর নির্ভর করিতে হইবে।”২৭

সাক্ষীগণের পরস্পরের বিবৃতির মধ্যে অবশ্যই সামঞ্জস্য থাকিতে হইবে এবং যেই বিষয়ের অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদান করিবে উহার সহিতও সংগতিপূর্ণ হইতে হইবে, অন্যথায় সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে শব্দগত ও ভাবার্থগত উভয় দিক হইতে মিল থাকিতে হইবে এবং ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে ভাবার্থগত মিল থাকাই যথেষ্ট। ২৮

সাক্ষীগণকে “আমি সাক্ষ্য দিতেছি” শব্দযোগে সাক্ষ্য প্রদান শুরু করিতে

২৬০

হইবে। আমি বর্ণনা করিতেছি’, “আমি তথ্য প্রদান করিতেছি”, “আমি অবহিত; করিতেছি” ইত্যাদি শব্দ বা অনুরূপ অর্থবােধক শব্দ দ্বারা সাক্ষ্য প্রদান আরম্ভ করা যাইবে না। ২৯

সাক্ষীগণ যেই বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করিবে সে বিষয় তাহাদের জ্ঞাত থাকিতে হইবে। অনুমানের ভিত্তিতে বা কাহারও মুখে বর্ণনা শুনিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিলে তাহা গ্রহণযোগ্য নহে। ৩০

সাক্ষীগণকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হইয়া সাক্ষ্য প্রদান করিতে হইবে। কারণ আদালত সাক্ষীগণের সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করিয়া রায় প্রদান করে এবং তাহার রায়ের দ্বারা সাক্ষ্যের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত হয়।”

সাক্ষী বিপরীত পক্ষের শত্রু হইতে পারিবে না, কোন ব্যক্তি তাহার শত্রুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানের সুযোগ পাইলে সে উহার সদ্ব্যবহার করিবে না ইহার

কোন নিশ্চয়তা নাই। মহানবী (স) বলেনঃ

الأتجوز شهاده خائن و خائنة ولا ذي غمر على

– “বিশ্বাসঘাতক, বিশ্বাসঘাতকিনী ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।”৩২

لا تجوز شهادة خصم و لا ظنين –

“শত্রু ও অপবাদযুক্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।”৩৩। এখানে শত্রুতা বলিতে পার্থিব বিষয়ে শত্রুতা বুঝানো হইয়াছে। ৩৪

যেনার অপবাদ আরোপ করার অপরাধে কোন ব্যক্তি ইতিপূর্বে দণ্ডিত না হইয়া থাকিলে সে সাক্ষ্য প্রদানের উপযুক্ত বিবেচিত হইবে। কোন ব্যক্তি উপরোক্ত অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পর তওবা করিলেও তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। মহান আল্লাহ বলেন :

ولا تقبلوا لهم شهادة أبدا أولئك هم الفسقون –

“এবং কখনও তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করিও না, ইহারা তো ফাসিক।”৩৫ তবে অন্য সকল মাযহাবের ইমামগণের মতে, সে তওবা করিয়া সংশোধন

২৬১

হইলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

কিন্তু কোন ব্যক্তি যেনা বা চুরির শাস্তি ভোগের পর তওবা করিয়া সংশোধন হইলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

কোন ব্যক্তির সাক্ষ্যদান নিঃস্বার্থ, প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ হইতে হইবে। সে সত্য ঘটনা ব্যক্ত করিয়া কেবল আল্লাহ্র সন্তোষ লাভের জন্যই সাক্ষ্য প্রদান করিবে। মহান আল্লাহ বলেন :

وأقيموا الشهادة لله.

“আল্লাহর ( সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে তোমরা সাক্ষ্য প্রদান কর।”৩৮

يأيها الذين أما كونوا قوامین لله شهداء بالقسط ولا يجرم

شنان قوم على ألا تعدلوا

اعدلوا هو أقرب لتقوای واتقوا الله.

“হে মুমিনগণ! আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ন্যায়সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকিবে। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, তোমরা সুবিচার করিবে ইহা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর।”৩৯

সাক্ষ্যদানের অন্তরালে কোন স্বার্থ থাকিতে পারিবে না। মহানবী (স) বলেন?

الأشهادة الجار المفتم و الدافع المفرم۔

“যে ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করিয়া স্বার্থ উদ্ধার করিতে চাহে অথবা ঋণমুক্ত হইতে চাহে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।”82

ইসলাম সাক্ষ্যগণের এতটা প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ হওয়ার দাবি করে যে, এমনকি পিতা-পুত্রের অনুকূলে বা পুত্র পিতা-মাতার অনুকূলে এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের অনুকূলে সাক্ষী হইতে পারে না। মহানবী (স) বলেন :

لا تقبل شهادة الوالد لولده ولا الولد لوالده و

الزوجة لزوجها و الزوج لجوزته ۔

“সন্তানের অনুকূলে পিতার সাক্ষ্য, পিতার অনুকূলে সন্তানের সাক্ষ্য, স্বামীর অনুকূলে স্ত্রীর সাক্ষ্য এবং স্ত্রীর অনুকূলে স্বামীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।”*২

২৬২

ধারা-৫৭৩

সাক্ষী হওয়ার অযোগ্য ব্যক্তিগণ নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না–(ক) অন্ধ ব্যক্তির সাক্ষ্য (যে বিষয় দেখার সহিত সম্পর্কিত);

(খ) যেনার মিথ্যা অপবাদ আরোপের কারণে শাস্তি ভোগকারীর সাক্ষ্য; (গ) পিতা-মাতার অনুকূলে সন্তানের সাক্ষ্য; (ঘ) সন্তানের অনুকূলে পিতা-মাতার সাক্ষ্য; (ঙ) স্বামীর অনুকূলে স্ত্রীর সাক্ষ্য; (চ) স্ত্রীর অনুকূলে স্বামীর সাক্ষ্য; (ছ) এক অংশীদারের অনুকূলে অপর অংশীদারের সাক্ষ্য;

(জ) বােবা ও বধির যদি নিশ্চিতভাবে লিখিত আকারে নিজ নিজ বক্তব্য ব্যক্ত করিতে না পারে তবে তাহাদের সাক্ষ্য;

(ঝ) নাবালেগের সাক্ষ্য; (ঞ) পাগলের সাক্ষ্য; (ট) মিথ্যাবাদী (প্রতারক)-এর সাক্ষ্য (যে মিথুক হিসাবে প্রমাণিত); (ঠ) কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য; (ড) সূদখােরের সাক্ষ্য; (ঢ) ফরজ বিধান ত্যাগকারীর সাক্ষ্য; (ত) মক্কেলের অনুকূলে উকীলের সাক্ষ্য; (থ) সাহাবী, তাবিঈ ও সালাফে সালিহীনকে গালমন্দকারীর সাক্ষ্য।

বিশ্লেষণ

অন্ধের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। কারণ সে সাক্ষ্য প্রদানকালে বাদী ও বিবাদীকে সনাক্ত করিতে অক্ষম। যেমন হত্যাকাণ্ড, আত্মসাৎ, অপহরণ, যেনা, শরাবপান বা অনুরূপ অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটন স্থান ও অপরাধীকে সনাক্ত না করিয়া সাক্ষ্য প্রদান সম্ভব নহে।৪৩ ঘটনা সংঘটনকালে কোন ব্যক্তি চক্ষুম্মান থাকিলে ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।৪৪

২৬৩

ইমাম শাফিঈ (র)-এরও এই মত।৪৫

পিতা-মাতার অনুকূলে সন্তানের, সন্তানের অনুকূলে পিতা-মাতার, স্বামীর অনুকূলে স্ত্রীর, স্ত্রীর অনুকূলে স্বামীর এবং এক অংশীদারের অনুকূলে অপর অংশীদারের সাক্ষ্য এইজন্য গ্রহণযোগ্য নহে যে, তাহাদের মধ্যে ভরণপোষণ, মীরাস ও অনুরূপ আর্থিক স্বার্থ জড়িত রহিয়াছে। অতএব তাহারা নিঃস্বার্থ সাক্ষী নহে। তবে ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের অনুকূলে সাক্ষী হইতে পারে। কারণ তাহাদের মধ্যকার আর্থিক স্বার্থ চুক্তির দ্বারা উদ্ভূত। যেমন শ্রমিকের সাক্ষ্য নিয়োগকর্তার অনুকূলে গ্রহণযোগ্য। এক শরীক অপর শরীকের অনুকূলে কেবল তাহাদের চুক্তিভিত্তিক ব্যাপারসমূহে সাক্ষী হইতে পারে না, অন্যসব ক্ষেত্রে সাক্ষী হইতে পারিবে।”

বােবার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। কারণ সে বাদী ও বিবাদীকে সনাক্ত করিতে পারিলেও এবং বিচারাধীন ঘটনা স্বচক্ষে দেখিলেও যেহেতু ইশারা-ইংগিতই তাহার অবলম্বন, তাই উহা স্পষ্ট বক্তব্যের সমতুল্য ও সন্দেহমুক্ত হইতে পারে

। এই বিষয়ে হানাফী, শাফিঈ ও হাম্বলী ফকীহগণ একমত। অবশ্য মালিকীগণের মতে বােবার ইশারা-ইংগিতের দ্বারা আলোচ্য বিষয় সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

নাবালেগের সাক্ষ্য যে গ্রহণযোগ্য নহে এই বিষয়ে সকল মাযহাবের ফকীহগণ একমত, এমনকি সে বােধশক্তি সম্পন্ন হইলেও। অনুরূপভাবে পাগল ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন লোকের সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নহে।

যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী ও প্রতারক হিসাবে সমাজে কুখ্যাত তাহার সাক্ষ্যও কখনও গ্রহণযোগ্য নহে। কারণ তাহার মধ্যে ন্যায়নিষ্ঠা ও খােদাভীতি বিদ্যমান নাই। তবে কেহ ভুল বশত মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের পর তওবা করিলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।৫০

রাসূলুল্লাহ (স)-এর সাহাবী, তাবিঈ এবং মুজতাহিদ ফকীহ ও ইমামগণকে যাহারা গালিগালাজ করে তাহাদের সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নহে।”

পেশাদার গায়িকা ও বিলাপকারিনীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। হাদীসে বলা হইয়াছে?

نهى عن صوتين أحمقين النائحة والمفية.

২৬৪

 ·

“রাসূলুল্লাহ (স) দুই আহাম্মকের আওয়ায নিষিদ্ধ করিয়াছেন ও পেশাদার বিলাপকারিণী ও গায়িকা।”

তবে পেশা হিসাবে নহে, মনের দুঃখ-বেদনা লাঘরের জন্য কেহ গান গাহিলে ইহাতে তাহার ন্যায়পরায়ণতা ক্ষুন্ন হইবে না।

সূদখাের এবং হারাম জিনিস ভক্ষণকারী হিসাবে যে কুখ্যাত তাহার সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নহে।৫৩

ফরয বিধান লঙ্গন করা কবীরা গুনাহ। কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নহে।৫৪।

ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে কৃপণ ব্যক্তির সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নহে।

ধারা--৫৭৪

যাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে– (ক) পাপাত্মা ব্যক্তি তওবা করিয়া সংশোধন হইলে;

(খ) ব্যভিচারজাত ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ হইলে; (গ) নপুংসক ব্যক্তি। (ঘ) ভ্রাতার অনুকূলে ভ্রাতার সাক্ষ্য; (ঙ) চাচার অনুকূলে ভ্রাতুস্পুত্রের সাক্ষ্য; (চ) ভাগ্নের অনুকূলে মামার সাক্ষ্য; (ছ) বন্ধুর অনুকূলে বন্ধুর সাক্ষ্য; (জ) যেনার শাস্তি ভোগকারী শাস্তি ভোগের পর সংশোধন হইলে; (ঝ) চুরির শাস্তি ভোগকারী শাস্তিভোগের পর সংশোধন হইলে; (ঞ) সরকারী পদে নিয়োজিত ব্যক্তিগণের সাক্ষ্য।

বিশ্লেষণ

পাপাচারী ব্যক্তি তওবা করিয়া সংশোধন হইলে তাহার মধ্যে ন্যায়নিষ্ঠা ও সততার ভাবধারা সৃষ্টি হয় এবং তখন সে একজন ন্যায়বান ব্যক্তি হিসাবে

২৬৫

গণ্য হয়।৫৫

ব্যভিচারজাত ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ হইলে তাহার সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য হইবে। কারণ তাহার জন্মদাতা ও জন্মদাত্রীর পাপাচারের জন্য তাহাকে দায়ী করা যাইবে না। যেমন কোন মুসলিম ব্যক্তির পিতামাতা কাফের হইলেও তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।৫৬

নপুংসক ব্যক্তির সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য হইবে। অনুরূপভাবে খুন সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য। কারণ সে হয় নারী হইবে অথবা পুরুষ। আর শরীআতে নারী-পুরুষ উভয়ের সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য।

যেনা, চুরি বা শরাব পানের অপরাধের শাস্তিভোগের পর অপরাধী তওবা করিয়া সংশোধন হইয়া গেলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত।৫৮

সরকারী কর্মচারীগণের সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য, যদি তাহারা জালেম ও স্বৈরাচারী না হয়।৫৯

ধারা--৫৭৫

সাক্ষ্য প্রদান বাধ্যতামূলক (ক) যে ব্যক্তি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত তাহাকে বাদী সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আহবান করিলে সে আদালতে হাযির হইয়া সাক্ষ্য প্রদান করিতে বাধ্য;

(খ) হদ্দ-এর আওতাভুক্ত বিষয় যদি আল্লাহর অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট হয় তবে সেই ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করিলে সাক্ষ্য প্রদান করিতে পারে অথবা গোপনও করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তিকে বাদী সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আহবান করিলে তাহার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করা বাধ্যতামূলক হইয়া যায় এবং সাক্ষ্য না দেওয়া অপরাধ হইয়া দাঁড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন।

ولا يأب الشهداء اذا ماعوا۔

২৬৬

“সাক্ষীগণকে যখন ডাকা হইবে তখন তাহারা যেন অস্বীকার না করে” (সূরা বাকারাঃ ২৮২)।

ولا تكتموا الشهادة ومن يكتمها فائه أثم قلبه .

“তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না। যে কেহ উহা গোপন করে তাহার অন্তর অপরাধী”- (সূরা বাকারা : ২৮৩)।

বাদী যদি সাক্ষীকে সাক্ষ্য প্রদান করিতে না ডাকে তবে তাহার স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য প্রদান বাধ্যতামূলক নহে। কারণ সাক্ষ্যের দ্বারা তাহারই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইবে। কিন্তু বাদীর যদি এই কথা জানা না থাকে যে, অমুক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত আছে, সেই ক্ষেত্রে জ্ঞাত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য প্রদান করিবে। অন্যথায় তাহার সাক্ষ্য গোপন করার কারণে বাদী তাহার অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবে এবং এজন্য জ্ঞাত ব্যক্তি গুনাহগার হইবে। মহান আল্লাহ বলেন।

وأقيموا الشهادة لله .

“আল্লাহ্র (সন্তোষ লাভের জন্য) তোমরা সাক্ষ্য প্রদান কর”- (সূরা তালাক? ২। তবে হদ্দের আওতাভুক্ত যেসব বিষয় সরাসরি আল্লাহর অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তি ইচ্ছা করিলে সাক্ষ্য প্রদান করিতে পারে, অথবা গোপন করিতে পারে। যেমন চারিজন লোক, দুইজন নারী-পুরুষকে যেনায় লিপ্ত দেখিল। এই ক্ষেত্রে তাহারা ইচ্ছা করিলে ঘটনাটি গোপন রাখতে পারে। মহানবী (স) মাইয আসলামীর ঘটনা প্রসংগে সাক্ষীকে লক্ষ্য করিয়া বলিয়াছিলেন?

لوسترته بثوبك لكان خيرا لك.

“তুমি যদি ইহা তোমার পরিধেয় বস্ত্র দ্বারা লুকাইয়া রাখিতে তাহা হইলে তোমার জন্য উত্তম হইত”- (আবু দাউদ, নাসাঈ, হাকেম, আহমাদ, তাবারানী)।

من ستر على مسلم ستر الله عليه في اليا

. . ১১’। “যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের অপরাধ গোপন রাখিল, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাহার দোষ গোপন রাখিবেন”- (বুখারী, মুসলিম)।

২৬৭

অনন্তর মাই আসলামীকে শাস্তি হইতে রেহাই দেওয়ার জন্য মহানবী (স) বলিয়াছিলেন : “সম্ভবত তুমি চুমা দিয়াছিলে, তুমি ঘোরাফেরা করিয়াছিলে অথবা দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়াছিলে।” এক ব্যক্তি চুরি করিয়া মহানবী (স)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া উহার স্বীকারোক্তি করিলে মহানবী (স) তাহাকেও শাস্তি হইতে রেহাই দানের উদ্দেশ্যে বলিয়াছিলেন : “তুমি চুরি করিয়াছ ইহা আমার বিশ্বাস হয় না”- (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবন মাজা)।

চুরির ক্ষেত্রে যেহেতু আল্লাহ ও মানুষ উভয়ের অধিকার সংযুক্ত রহিয়াছে, তাই সেই ঘটনায় সাক্ষ্য প্রদানের সময় এইভাবে বলা উচিত, “সে অমুকের মাল নিয়াছে”। এই অবস্থায় মালের মালিকও তাহার মাল হইতে বঞ্চিত হইবে না এবং চোরও হয়ত হস্তকর্তনের শাস্তি হইতে রেহাই পাইয়া অর্থদণ্ডের শাস্তি ভোগ করিতে পারে।

ধারা--৫৭৬

স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য (ক) “হ” ও “কিসাস”-এর ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।

(খ) হদ্দ ও কিসাস ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সহিত স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।

(গ) বংশ প্রমাণ, দুধপান সম্পর্কিত বিষয় প্রমাণ এবং স্ত্রীলোকের সহিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একজন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য।

বিশ্লেষণ

যেইসব ক্ষেত্রে অপরাধ হদ্দ ও কিসাসের আওতাভুক্ত সেইসব ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। ইমাম যুহরী (র) বলেনঃ

مضت اله من لدن رسول الله صلى الله عليه وسلم والخليفتين من بعده أن شهادة للنساء في الحدود والقصاص –

“রাসূলুল্লাহ (স) ও তাহার পরে দুই খলীফার যুগ হইতে এই নীতি চলিয়া

৩),

আসিয়াছে যে, হদ্দ ও কিসাসের ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষ্য নাই।”৬১

হদ্দ ও কিসাসের আওতাভুক্ত অপরাধ কোন কারণে তাযীরের আওতাভুক্ত হইলে সেই ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। যেমন চুরির ক্ষেত্রে অপরাধ হদ্দের পর্যায়ভুক্ত না হইলে সেই অবস্থায় নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। ৬২ হদ্দ ও কিসাস ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে, ইহা মাল বা আর্থিক বিষয় সম্পর্কিতই হউক অথবা আর্থিক বিষয় বহির্ভূতই হউক, পুরুষদের সহিত নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। যেমন বিবাহ, তালাক, ওয়াকালা, ওসিয়াত, হাওয়ালা, ওয়াকফ, সন্ধি, হেবা,

স্বীকারোক্তি, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি।

নারীদের একান্ত গোপনীয় বিষয়ে এককভাবে নারীদের সাক্ষ্য, এমনকি একজন নারীর সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য। যেমন কোন নারী “বাকিরা” কি না, কোন নারীর হায়েযকাল শেষ হইয়াছে কি না, সন্তান কাহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছে, সন্তান জীবিত ভূমিষ্ঠ হইয়াছে কি না, যদি হইয়া থাকে তবে শব্দ করিয়াছে কি না, কোন নারীর মধ্যে বিশেষ কোন দৈহিক ক্রটি আছে কি না ইত্যাদি ক্ষেত্রে এমনকি একজন নারীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বৈধ। মহাবনী (স) বলেন, “যেই বিষয়ের প্রতি পুরষদের দৃষ্টি পৌছানো অসম্ভব সেই বিষয়ে নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।”৬৪

সন্তানের বংশপরিচয় নিয়া মতভেদ হইলে সেই ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ধাত্রী বা মহিলা চিকিৎসকের একক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। অনুরূপভাবে তাহার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে উক্ত সন্তান তাহার আত্মীয়-স্বজনের মীরাস লাভ করিবে। ইহা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত এবং ইহাই গ্রহণযোগ্য মত। ৬৬ কোন নারীর স্বামী নপুংসক হইলে সেই ক্ষেত্রে তাহার স্ত্রী বালেগা কি না সেই বিষয়েও একজন নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। যদি সে বালেগা হয় তবে স্বামীকে এক বৎসরের চিকিৎসার সুযোগ প্রদানের পরও সে সহবাসে সক্ষম না হইলে আদালত স্ত্রীর দাবি অনুযায়ী বিবাহ রদ করিবে। যে কোন সমাজে পুরুষদের তুলনায় নারীগণের বাড়ির বহির্গমন তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিশেষত একটি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারীর বহিরাংগনে যাতায়াত আরও কম। ইসলামী আইন সর্বাবস্থায় নারীকে মামলা-মোকদ্দমার মত ঝামেলাপূর্ণ ও বিবদমান বিষয়ের সহিত পারতপক্ষে জড়াইতে চাহে না। তা ছাড়া নারীগণ সৃষ্টিগতভাবেই সাধারণত কোমল হৃদয় ও নম্র স্বভাবের হওয়ার কারণে

২৬৯

রক্তপাত দেখিলে ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া পড়ে। তাহার এই স্বভাবগত দুর্বলতার কারণে তাহাকে হদ্দ-এর আওতাধীন বিষয়ে সাক্ষী করা হয় নাই। ইহা তাহার জন্য বিরাট একটি দায়মুক্তিস্বরূপ।

তথাপি এই বিষয়ে ফকীহগণের পুনর্বিবেচনার সুযোগ রহিয়াছে। কারণ সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য মুমিন পুরুষের যেরূপ দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে, মুমিন নারীরও অনুরূপ দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। আর সাক্ষ্যের দ্বারাও সত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকে। ইমাম যুহরী (র) যদিও বলিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) ও তাহার পরের খলীফাগণের যুগ হইতে হদ্দের আওতাভুক্ত বিষয়ে নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় নাই, কিন্তু তাহার এই মত রিওয়ায়াত ও দিরায়াতসহ বিভিন্নভাবে সমালোচিত হইয়াছে। বিশেষ করিয়া তিনি তাহার উপরোক্ত মন্তব্যের সমর্থনে রাসূলুল্লাহ (স) বা খােলাফায়ে রাশিদার আমলের কোন আদালতের নজির পেশ করিতে পারেন নাই। দ্বিতীয়তঃ উহা রাসূলুল্লাহ (স)-এর বাণীও নহে, কোন সাহাবীর বক্তব্যও নহে, বরং একজন তাবিঈর মন্তব্য মাত্র।

যেখানে অন্তত দুইজন সাক্ষীর প্রয়োজন এইরূপ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও মহানবী (স) একজন মাত্র নারীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চুক্তি বাতিল করিয়াছেন বলিয়া প্রমাণ আছে। উকবা ইবনুল হারিস (রা) বলেন, আমি এক মহিলাকে বিবাহ করি। একটি কৃষ্ণকায় স্ত্রীলোক আসিয়া বলিল, আমি তোমাদের উভয়কে দুধপান করাইয়াছি। অতএব আমি রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলাম, আমি অমুক নারীকে বিবাহ করিয়াছি। কৃষ্ণকায় এক মহিলা আসিয়া বলিতেছে যে, সে আমাদের উভয়কে দুধপান করাইয়াছে। অথচ সে মিথ্যাবাদিনী। এই কথায় রাসূলুল্লাহ (স) আমার দিক হইতে মুখ ঘুরাইয়া নিলেন। আমি আবার তাঁহার সামনে গিয়া পুনরায় বলিলাম, ঐ নারী মিথ্যাবাদিনী। তিনি বলিলেন, কিভাবে সে মিথ্যাবাদিনী হইতে পারে, অথচ সে দাবি করিতেছে যে, সে তোমাদের উভয়কে দুধপান করাইয়াছে। অতএব তুমি তাহাকে ত্যাগ কর (তিরমিযী, রিদা, বাব ৪, নং ১১৫১)।

ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা কর্তৃক অপরাধীকে সনাক্ত করার ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ (স) মৃত্যুদণ্ড দান করিয়াছেন। এক ইহুদী দুই পাথরের মধ্যখানে এক যুবতীর মাথা রাখিয়া তাহাকে নির্মমভাবে আহত করিয়া তাহার গলার হার ছিনাইয়া নেয়। তাহাকে রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট উপস্থিত করা হইলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন,

২৭০

অমুক ব্যক্তি কি তোমাকে আহত করিয়াছে? সে মাথার ইশারায় বলে, না। তিনি বলেন, তবে অমুক ব্যক্তি কি? সে মাথার ইশারায় বলে, না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করেন, অমুক ইহূদী কি তোমাকে আহত করিয়াছে? সে বলে, হাঁ। অতএব তাহাকে গ্রেফতার করিয়া আনা হইলে, সে তাহার অপরাধের স্বীকারোক্তি করে। যুবতী মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (স) তাহাকে মৃত্যুদণ্ড দান করেন (তিরমিযী, দিয়াত, বাব ২৪, নং ২৬৬৫-৬; বুখারী, ওয়াসায়া, আরও বহু স্থানে; মুসলিম কাসামা, নং ১৬৭২; নাসাঈ, কাসামা, নং ৪৭৪৫, আবৃ দাউদ, দিয়াত, নং ৪৫২৭-৯; ইবন মাজা, দিয়াত, নং ২৬৬৬)।

রাসূলুল্লাহ (স)-এর জীবদ্দশায় এক মহিলা মসজিদে নববীত ফজরের নামায পড়িতে যাওয়াকালে পথিমধ্যে এক ব্যক্তি জোরপূর্বক তাকাকে ধর্ষণ করে। তাহার চিৎকারে লোকজন আসিয়া অপরাধীকে ধরিয়া ফেলে। তাহাকে মহানবী (স)-এর নিকট উপস্থিত করা হইলে উক্ত মহিলা তাহাকে সনাক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ (স) অপরাধীকে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দেন (ইবন মাজা, হুদূদ, অনুচ্ছেদ : কোন নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করিলে,

নং ১৪৫৪)।

উপরোক্ত দুইটি হাদীসের বিবরণে দেখা যাইতেছে যে, একজন মাত্র নারী কর্তৃক অপরাধীকে সনাক্ত করার এবং তৎকর্তৃক স্বীকারোক্তি করার ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ (স) মৃত্যুদণ্ডের মত কঠোরতম শাস্তি কার্যকর করিয়াছেন। অতএব হদ্দ সম্পর্কিত অপরাধের ক্ষেত্রে ঘটনার বিবরণ, স্থান ও আদালতের সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণের সহিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহিলার প্রদত্ত জবানবন্দীর সামঞ্জস্য থাকিলে এই অবস্থায় তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কোন কারণ থাকিতে পারে না।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্থানীয় দুষ্কৃতিকারীরা কোন বাড়িতে প্রবেশ করিয়া মা, বােন, স্ত্রী বা কন্যার সামনে এক ব্যক্তিকে হত্যা করিল এবং তিনি অরপরাধীদেরকে আদালতে সনাক্ত করিলেন। এখন বিচারকের সংগৃহীত তথ্য ও উক্ত মহিলার বক্তব্যে সামঞ্জস্য থাকিলে তাহার সাক্ষ্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিৎ। বিচারক যদি তাহার বক্তব্যের উপর আস্থা স্থাপন করিতে পারেন তবে স্ত্রীলোকের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে হদ্দ-এর ক্ষেত্রেও রায় প্রদান করিতে বাধা কোথায়? সর্বোপরি এই ক্ষেত্রে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য না হওয়ার পক্ষে

২৭১

কুরআনে ও মহানবী (স)-এর সুন্নায় কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ বিদ্যমান নাই।

কোন কোন ক্ষেত্রে, বিশেষত চুক্তি আইনের বেলায় দুইজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমতুল্য গণ্য করা হইয়াছে। ইহা নারী ও পুরুষের মধ্যকার মর্যাদাগত পার্থক্য নির্দেশ করে না, বরং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই পার্থক্য করা হইয়াছে। কারণ ব্যক্তি হিসাবে নারী ও পুরুষের মধ্যে মর্যাদাগত কোন পার্থক্য ইসলাম স্বীকার করে না। কোন নারী কোন পুরুষকে হত্যা করিলে ইসলামী আইন অনুযায়ী তাহার যেমন মৃত্যুদণ্ড হইবে, তদ্রূপ কোন পুরুষ কোন নারীকে হত্যা করিলে তাহারও মৃত্যুদণ্ড হইবে। অনুরূপভাবে নারী-পুরুষের দিয়াতের মধ্যেও কোনরূপ পার্থক্য করা হয় নাই। যেখানে জীবন ও রক্তের মূল্যের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন বৈষম্য করা হয় নাই, সেখানে অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনরূপ পার্থক্য করা হইয়া থাকিলেও তাহার কারণ ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। যেমন উত্তরাধিকারের বেলায় নারীকে কোন কোন অবস্থায় পুরুষের অর্ধেক প্রদান করা হইয়াছে। ইহাও উভয়ের মধ্যে মর্যাদাগত পার্থক্য নির্দেশ করে না। বরং ইসলামী আইন নারীকে যাবতীয় আর্থিক দায় হইতে অব্যাহতি দিয়াছে, তাহার ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তির যাকাত ও রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত কর ব্যতীত। তাই উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব বহনের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া বণ্টন ব্যবস্থায় কিছুটা পার্থক্য করা হইয়াছে।

ধারা--৫৭৭

যে ক্ষেত্রে অন্ধের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য যেই ক্ষেত্রে সরাসরি দেখার প্রয়োজন হয় না সেই ক্ষেত্রে শ্রবণপূর্বক ঘটনা অবহিত হইয়া অন্ধের সাক্ষ্য প্রদান বৈধ, যদি তাহার শ্রবণশক্তি সুস্থ হয়।

বিশ্লেষণ

অন্ধের দর্শনশক্তি না থাকিলেও তাহার শ্রবণশক্তি সুস্থ থাকিলে কোন কোন ক্ষেত্রে ঘটনার বিবরণ শুনিয়া সে সাক্ষ্য প্রদান করিতে পারে। তবে এই অবস্থায় তাহার শ্রবণশক্তি সুস্থ থাকিতে হইবে। ইহা ইমাম আবূ ইউসুফ, শাফিঈ ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর অভিমত।৬৮

১।

ধারা--৫৭৮

যে ক্ষেত্রে শরীকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য চুক্তিভিত্তিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যসব ক্ষেত্রে এক শরীক অপর শরীকের অনুকূলে সাক্ষী হইতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

শরীকানা বিষয় না হইলে সেই ক্ষেত্রে আর্থিক স্বার্থ দ্বারা শরীক সাক্ষীর প্রভাবিত হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে না। অবশ্য ইমাম মালেক (র)-এর মতে চুক্তিভিত্তিক শরীকানা বিষয়েও এক শরীক অপর শরীকের অনুকূলে সাক্ষী হইতে পারিবে। ৬৯

ধারা--৫৭৯

• যে ক্ষেত্রে নাবালেগের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নাবালেগ কর্তৃক নাবালেগকে হত্যা বা আহত করার ক্ষেত্রে নাবালেগের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।

বিশ্লেষণ

ইমাম মালেক (র)-এর মতে হত্যা ও আহত করার ঘটনায় নাবালেগ পরস্পরের সাক্ষী হইতে পারে।

ধারা-৫৮০ যিম্মীর (অমুসলিম নাগরিকের) সাক্ষ্য (ক) মুসলমানদের বিষয়ে যিম্মীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। (খ) যিম্মীগণের পারস্পরিক বিষয়ে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।

বিশ্লেষণ

মুসলমানদের সহিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যিম্মীগণের সাক্ষ্য যে গ্রহণযোগ্য নহে

২৭৩

এই বিষয়ে সব মাযহারের ফকীহগণ একমত। কারণ সাক্ষ্য হইতেছে এক ধরনের অভিভাবকত্ব। আর কাফেররা মুসলমানদের অভিভাবক হইতে পারে না। মহান আল্লাহর বাণীঃ

و لن يجعل الله للكافرين على المؤمنين

سبيلا۔

“আল্লাহ মুমিনদের উপর কাফেরদের কোন পথই অবশিষ্ট রাখেন নাই” (সূরা নিসাঃ ১৪১)।

হাম্বলী ফকীহগণ কেবল একটি মাত্র ক্ষেত্রে মুসলমানের বিষয়ে যিম্মীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য বলিয়াছেন। তাহা হইল : সফররত অবস্থায় যদি কোন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং ঐ সময় কৃত তাহার ওসিয়াতের অনুকূলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মুসলিম সাক্ষী না পাওয়া যায় তবে সেই ক্ষেত্রে দুইজন অমুসলিম ব্যক্তিকে সাক্ষী বানানো যাইবে। তাহারা সূরা মাইদার ১০৬ নং আয়াত নিজেদের মতের অনুকূলে প্রমাণ হিসাবে পেশ করিয়াছেন।’

তবে যিম্মীদের পারস্পরিক ব্যাপারে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে, তাহারা একই ধর্মের অনুসারী না হইলেও। মহান আল্লাহ বলেন :

والذين كفروا بعضهم أولياء بعض –

“যাহারা কাফের তাহারা পরস্পর পরস্পরের অভিভাবক”- (সূরা আনফাল ও ৭৩)।

অতএব কাফেররা পরস্পরের অভিভাবক হইতে পারে। তাহা ছাড়া তাহাদের মধ্যেও যে বিশ্বস্ত লোক আছে তাহা কুরআন মজীদ স্বীকার করে। যেমন কুরআনে বলা হইয়াছে?

و من أهل الكتاب من ان تأمنه بقنطار يؤه

…। “আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন লোকও আছে যাহাদের নিকট তুমি সম্পদের বিরাট স্থূপও আমানত রাখিলে তাহারা উহা তোমাকে ফেরত দিবে” (সূরা আল ইমরানঃ ৭৫)।

২৭৪

মহানবী (স)-এর হাদীসে বর্ণিত আছে যে, দুই ইহূদী নারী-পুরুষ যেনা করিলে ইহূদীরা তাহাদেরকে মহানবী (স)-এর নিকট উপস্থিত করে। মহানবী (স) তাহাদের মধ্য হইতে চারিজন সাক্ষী তলব করেন। তাহারা চারিজন সাক্ষী উপস্থিত করিলে মহানবী (স) তাহাদের উপর যেনার শাস্তি কার্যকর করান। ৭২

عن جابر بن عبد الله أن البي صلى الله عليه و سلم أجاز شهادة أهل الة بعضهم على بعض –

জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রা) হইতে বর্ণিত। মহানবী (স) যিম্মীগণের পরস্পরের মধ্যে সাক্ষী হওয়ার অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। (ইবন মাজা)। ৩

ধারা--৫৮১

পরোক্ষ সাক্ষী (ক) কোন যোগ্য সাক্ষী সংগত ওজরবশত আদালতে উপস্থিত হইয়া সাক্ষ্য প্রদান করিতে অপরাগ হইলে বা তাহাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব

হইলে তাহার বক্তব্য, সাক্ষ্য, তন্নিয়োগকৃত ব্যক্তি বা অন্য ব্যক্তির সাক্ষ্যের মাধ্যমে আদালতে গ্রহণযোগ্য হইবে। ঐ ব্যক্তিকে পরোক্ষ সাক্ষী বলে।

(খ) একজন মূল সাক্ষীর স্থলে পরোক্ষ সাক্ষীর সংখ্যা দুইজন হইতে হইবে।

(গ) নারীগণকেও পরোক্ষ সাক্ষীরূপে গ্রহণ করা যায়। (ঘ) হদ্দ ও কিসাস ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে পরোক্ষ সাক্ষী গ্রহণযোগ্য। (ঙ) পরোক্ষ সাক্ষীর ক্ষেত্রেও ধারা (৫৭২)-এ উল্লেখিত শর্তাবলী প্রযোজ্য।

(চ) কোন ব্যক্তিকে পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ করিলেই বা আদালত কর্তৃক অনুমোদিত হইলে কেবল সে পরোক্ষ সাক্ষী গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি সংগত ওজরবশত, যেমন রোগের কারণে, বিদেশে অবস্থানের

২৭৫

কারণে বা অনুরূপ কোন কারণে আদালতে উপস্থিত হইয়া সাক্ষ্য প্রদান করিতে না পারিলে সে তাহার বক্তব্য অপর ব্যক্তির নিকট বিবৃত করিয়া সেইগুলি আদালতে পেশ করার জন্য পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ করিতে পারে। একজন মূল সাক্ষীর স্থলে পরোক্ষ সাক্ষী অবশ্যই দুইজন হইতে হইবে। অর্থাৎ প্রত্যেক মূল সাক্ষীর পরিবর্তে পরোক্ষ সাক্ষীর সংখ্যা দুইজন করিয়া হইতে হইবে, ইহার কম হইলে পরোক্ষ সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে না। তবে একজন মূল সাক্ষী যে দুই ব্যক্তিকে পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ করিয়াছে, অপর মূল সাক্ষীও স্বতন্ত্রভাবে ঐ দুই ব্যক্তিকে পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ করিতে পারিবে। সাধারণত দুইজন সাক্ষীর কমে কোন অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। কোন ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রদানও একটি অধিকার। সাফাই সাক্ষীদ্বয় তাহাদের নিয়োগকর্তার এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।

হদ্দ ও কিসাস ব্যতীত অন্য সকল বিষয়ে পরোক্ষ সাক্ষী গ্রহণযোগ্য। হদ্দ ও কিসাসের বেলায় মূল সাক্ষীকেই আদালতে উপস্থিত হইয়া সাক্ষ্য প্রদান করিতে হইবে। আদালতে উপস্থিত হইতে তাহার ওজর থাকিলে তাহা দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইবে। কিন্তু তাযীরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পরোক্ষ সাক্ষী গ্রহণযোগ্য।

কোন ব্যক্তির মধ্যে যেসব শর্ত বিদ্যমান থাকিলে সে সাক্ষী হওয়ার বা সাক্ষ্য প্রদানের যোগ্য বিবেচিত হয়, পরোক্ষ সাক্ষীর বেলায়ও সেইসব শর্ত প্রযোজ্য হইবে। কোন ব্যক্তিকে পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ করিলেই কেবল সে পরোক্ষ সাক্ষী হিসাবে গণ্য হইবে, অন্যথায় নহে। কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বক্তব্য শ্রবণপূর্বক তাহার বরাতে তাহা আদালতের সামনে বিবৃত করিলে সে পরোক্ষ সাক্ষী গণ্য হইবে না। ৭৪

ধারা--৫৮২। পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ ও সাক্ষ্য প্রদানের পদ্ধতি (ক) মূল সাক্ষী যখন কোন ব্যক্তিকে পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ করিতে ইচ্ছা করে তখন সে তাহাকে তাহার প্রত্যক্ষ জ্ঞানের কথা স্পষ্টভাবে শুনাইয়া দিবে, যাহাতে সে পরোক্ষ সাক্ষীরূপে মূল সাক্ষীর বক্তব্য আদালতে পেশ করিতে পারে।

২৭৬

(খ) পরোক্ষ সাক্ষী মূল সাক্ষীর বক্তব্য অবিকল ও অবিকৃত অবস্থায় আদালতে পেশ করিতে বাধ্য।

বিশ্লেষণ

পরোক্ষ সাক্ষী এক ধরনের প্রতিনিধি স্থানীয়। সে মূল সাক্ষীর নিয়োগকৃত প্রতিনিধি হিসাবে আদালতের সামনে নিয়োগকর্তার বক্তব্য পেশ করিয়া থাকে। ৭৫ পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োজিত না হইলেও আদালত নিজ বিবেচনায় পরোক্ষ সাক্ষী নিয়োগ করিতে পারে।

ধারা--৫৮৩

সাক্ষীর যোগ্যতা বিবেচনা কোন পক্ষ সাক্ষীগণের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করুক বা না করুক, আদালতকে অবশ্যই নিশ্চিত হইতে হইবে যে, সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রদানের যোগ্য।

ধারা-৫৮৪

সাক্ষী সম্পর্কে অপর পক্ষের স্বীকৃতি (ক) কোন পক্ষ যদি স্বীকার করে যে, সাক্ষীগণ যথার্থ সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে তবে সেই পক্ষের এই উক্তি অপর পক্ষের অধিকারের স্বীকারোক্তি হিসাবে গণ্য হইবে এবং আদালত তদনুযায়ী রায় প্রদান করিবে এবং সেই ক্ষেত্রে সাক্ষীগণের অবস্থা সম্পর্কে আদালতের অবহিত হওয়ার প্রয়োজন নাই।

(খ) কোন পক্ষ অপর পক্ষের দাবি অস্বীকার করিলে এবং সাক্ষীগণের সততা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলিলে আদালত অবশ্যই সাক্ষীগণের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হইবে এবং তদনুসারে রায় প্রদান করিবে।

(গ) কোন পক্ষ অপর পক্ষের দাবি অস্বীকার করিলে এবং সাক্ষীগণকে সাক্ষ্য প্রদানের পর সত্যবাদী বলিয়া স্বীকার করিলে আদালত সাক্ষীগণের সাক্ষ্য মোতাবেক রায় প্রদান করিবে এবং এই অবস্থায়ও সাক্ষীগণের

২৭৭

বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আদালতের অবহিত হওয়ার প্রয়োজন নাই।

ধারা-৫৮৫

সাক্ষ্যদানের পদ্ধতি (ক) সাক্ষীগণ আদালতে হাযির হইয়া বাদী ও বিবাদীর উপস্থিতিতে তাহারা কোন পক্ষের অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদান করিবে তাহা নিবেদন করিবে

এবং তাহাদের পরিচয় প্রদান করিবে।

(খ) শুনানীর দিন বাদী ও বিবাদী আদালতে হাযির থাকিলে বাদী তাহার সাক্ষীগণের পরিচয় দিবে ও পর্যায়ক্রম নির্দেশ করিবে এবং সেই পরিচিতি ও পর্যায়ক্রম অনুসারে আদালত সাক্ষীগণকে সাক্ষ্য প্রদান করিতে আহবান করিবে।

(গ) বাদী বা বিবাদী অনুপস্থিত থাকিলে অথবা মৃত হইলে এবং তাহাদের প্রতিনিধি (ওয়াকীল) বা ওসী (ওয়াসী) উপস্থিত থাকিলে সেই ক্ষেত্রেও বাদী ও বিবাদীর নামোল্লেখ করিয়া সাক্ষী প্রদান করিতে হইবে।

(ঘ) বিবদমান বিষয় জীবজন্তু হইলে সাক্ষ্য প্রদানকালে উহার পূর্ণ পরিচয় দিতে হইবে।

(ঙ) বিবদমান বিষয় জায়গা-জমি ও বাড়ি-ঘর হইলে উহার চতুঃসীমার বর্ণনা প্রদান করিতে হইবে।

(চ) মৃতের ওয়ারিসের অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে মৃতের সহিত ওয়ারিসের কি ধরনের সম্পর্ক তাহা সাক্ষীগণকে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করিতে হইবে।

ধারা--৫৮৬

সাক্ষীর সংখ্যা দুই-এর কম হইলে বাদী অন্ততপক্ষে দুইজন সাক্ষী উপস্থিত করিতে না পারিলে বিবাদীকে শপথ করিয়া বলিতে হইবে যে, বাদীর দাবি সত্য নহে এবং সে শপথ করিতে সম্মত না হইলে বাদীর দাবি যথার্থ সাব্যস্ত হইবে।

২৭৮

বিশ্লেষণ

হানাফী ফকীহগণের মতে বাদী মাত্র একজন সাক্ষী উপস্থিত করিতে সক্ষম হইলে উহার ভিত্তিতে রায় প্রদান করা বৈধ নহে। কারণ আল্লাহ তাআলা অন্ততপক্ষে দুইজন সাক্ষী উপস্থিত করার কথা বলিয়াছেন। এই অবস্থায় বাদীকে তাহার দাবির অনুকূলে শপথও করানো যাইবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (স) বলিয়াছেনঃ

البينة على المعی و اليمين على من أنكر –

“বাদীকে সাক্ষী উপস্থিত করিতে হইবে এবং যে বাদীর দাবি অস্বীকার করিল তাহাকে শপথ করিতে হইবে।” অপর বর্ণনায় আছেঃ “বিবাদী শপথ করিবে।”৭৬ অনন্তর মহানবী (স) বাদীকে লক্ষ্য করিয়া বলিয়াছিলেনঃ

شاهداك أو يمي.

“হয় তোমার দুইজন সাক্ষী (উপস্থিত কর) অন্যথায় তাহার শপথ (দ্বারা ফয়সালা হইবে।”

অতএব একজন সাক্ষীর ক্ষেত্রে বাদীকে শপথ করানো হইলে বিবাদীকে শপথ করানোর বাধ্যবাধকতা লুপ্ত হইয়া যায়। তাই বাদী একজনের অধিক সাক্ষী উপস্থিত করিতে না পারিলে তাহাকে বিবাদীর শপথের উপর নির্ভর করিতে হইবে, এমনকি বিবাদী অবিশ্বস্ত হইলেও। বিবাদী শপথ করিলে বাদীর দাবি নাকচ হইয়া যাইবে এবং সে শপথ না করিলে তাহার দাবি প্রতিষ্ঠিত হইবে।

মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে মাল সম্পর্কিত মোকদ্দমায় বাদী একজন মাত্র সাক্ষী উপস্থিত করিতে সক্ষম হইলে তাহাকে (বাদীকে) তাহার দাবির অনুকূলে শপথ করাইতে হইবে। সে শপথ করিলে একজন সাক্ষী ও শপথের ভিত্তিতে বিচারক রায় প্রদান করিবেন। কারণ মহানবী (স) “একজন সাক্ষী ও বাদীর শপথের ভিত্তিতে রায় প্রদান করিয়াছেন।”

ধারা-৫৮৭ ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায়দান উপযুক্ত সাক্ষী না পাওয়া গেলে ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

২৭৯

বিশ্লেষণ, বাদাইউস সানাই গ্রন্থে বলা হইয়াছে যে, আমাদের (হানাফী) মতে যেহেতু ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইতে পারে, এইজন্যই তাহাকে বিচারক হিসাবেও নিয়োগ করা বৈধ। ৯ অতএব ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচারক মোকদ্দমার রায় প্রদান করিলে তাহা কার্যকর হইবে।

সাক্ষীর ন্যায়পরায়ণ ও সত্যবাদী হওয়ার ব্যাপারে সব মাযহাবের ফকীহগণ একমত। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি ব্যক্তিগত জীবনে সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ না হইলে ফকীহগণের ঐক্যমত অনুযায়ী তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলিয়াছেন :

واشهدوا ذوي عدل منكم.

“এবং তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী

রাখিবে।”৮০

অতএব ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। ইমাম আবু ইউসুফ (র) বলেন, ফাসিক ব্যক্তি সমাজে মর্যাদাবান, ভদ্র ও বদান্য হিসাবে জনপ্রিয় হইলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে। কারণ সে তাহার ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা ও বদান্যতার কথা বিবেচনা করিয়া কাহারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান হইতে বিরত থাকিবে। হানাফী ফকীহগণের অধিকাংশের মতে ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্য সাধারণত গ্রহণযোগ্য নহে। তবে বিচারক ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় প্রদান করিলে তাহা কার্যকর হইবে।

কিন্তু পরবর্তী কালের হানাফী ফকীহগণ বলিয়াছেন যে, ফাসিকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য কি না সেই সম্পর্কিত মতভেদ কালগত, দলীল-প্রমাণগত নহে। কারণ আবূ হানীফা (র)-এর যুগ ছিল কল্যাণকর যুগ, তাহা ছিল তাবিঈগণের যুগ। এই যুগ উত্তম হওয়া সম্পর্কে মহানবী (স)-এর বাণী বিদ্যমান। তিনি (স) বলেনঃ

خير أمتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم ثم ان من بعدهم قوما يشهدون ولا يستشهدون ويخونون ولا يؤتمنون و يدرون ولا يوفون و يظهر فيهم السمن۔

২৮০

“আমার যুগই আমার উম্মতের উত্তম যুগ, অতঃপর তাহাদের পরবর্তীগণের যুগ, অতঃপর তাহাদের পরবর্তীগণের যুগ। তাহাদের পরে এমন লোকের উদ্ভব হইবে যাহারা সাক্ষ্য দিতে আহবান না করা সত্ত্বেও সাক্ষ্য প্রদান করিবে এবং খেয়ানত করিবে, আমানত ঠিক রাখিবে না, মানত করিলে তাহা পূর্ণ করিবে না। তাহাদের মধ্যে মেদবহুল লোক আবির্ভূত হইবে।”৮২

কালের প্রবাহে ক্রমান্বয়ে মানুষের নৈতিক মূল্যমান নিম্নগামী হইয়াছে। সুতরাং সাধারণভাবে ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্য অগ্রাহ্য করিলে বহু বিষয় প্রমাণ করা সম্ভব হইবে না। পাকিস্তান সরকার ইসলামী শরীআর ভিত্তিতে যে “হুদূদ আইন প্রণয়ন করিয়াছে তাহাতে সাক্ষ্য আইনের অনুরূপ একটি ধারা বিধিবদ্ধ করিয়াছে।

ধারা--৫৮৮ মিথ্যা সাক্ষ্যদান (হদ্দ বহির্ভূত বিষয়ে)

কোন ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে বলিয়া প্রমাণিত হইলে বা সে স্বীকারোক্তি করিলে বিচারক তাহার সুবিবেচনা অনুযায়ী ইহার শাস্তির ধরন ও মাত্রা নির্ধারণ করিবেন।

বিশ্লেষণ

মিথ্যা সাক্ষ্যদান বলিতে গেলে আল্লাহর সহিত শরীক করার মত জঘন্য অপরাধ। কারণ ইহার দ্বারা নির্দোষ ব্যক্তি হয় শাস্তির সম্মুখীন হয় অথবা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় অথবা প্রাপ্য অধিকার হইতে বঞ্চিত হয়। খুরায়ম ইবন ফাতিক (রা) বলেনঃ

صلی رسول الله صلى الله عليه و سلم صلاة الصبح فلما انصرف قام قائما ثم قال علت شهادة الزور بالاشراك بالله ثلاث مرات ثم تلا قول عز و جل فاجتنبوا الرجس من الأوثان

২৮১

واجتنبوا قول الزور –

“রাসূলুল্লাহ (স) ফজরের নামায পড়িলেন, অতঃপর নামায হইতে অবসর হইয়া উঠিয়া দাড়াইলেন, অতঃপর বলিলেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে আল্লাহর সহিত শরীক করার সমতুল্য অপরাধ গণ্য করা হইয়াছে। এই কথা তিনি তিনবার বলিলেন। অতঃপর তিনি মহান আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী তিলাওয়াত করিলেনঃ “সুতরাং তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা বর্জন কর এবং মিথ্যা কথন হইতে দূরে থাক”- (সূরা হজ্জ : ৩০)।

ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীকে আসরের নামাযের পড়ে বাজারের মধ্যে ঘুরাইতে হইবে এবং তাহার সহিত ঘোষণাকারী বলিবে, এই ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে। অতএব হে লোকেরা! মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান হইতে বিরত থাক। কিন্তু তাহাকে তাযীরের আওতায় প্রহার করা যাইবে না এবং জেলহাজতেও দেওয়া যাইবে না। আমাদের উদ্দেশ্য হইতেছে মিথ্যা সাক্ষ্যদান করা হইতে বিরত থাকার জন্য জনগণকে সতর্ক করা। তাহা উপরোক্ত ঘোষণার মাধ্যমে অর্জিত হইয়াছে। কারণ উপরোক্ত শাস্তি প্রায়ই মানুষের বিবেচনায় দৈহিক প্রহারের তুলনায় অধিক অপমানকর।

ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী বেত্রাঘাতের শাস্তিও ভোগ করিবে এবং হাজতবাসের শাস্তিও, যতক্ষণ না তওবা করিয়া সংশোধন হইবে।শাফিঈ মাযহাবের ইমামগণও প্রায় অনুরূপ মত ব্যক্ত করিয়াছেন। তাহারা বলিয়াছেন, বেত্রাঘাত, হাজতবাস, তিরস্কার, জনতার সম্মুখে অপমান ইত্যাদি যে ধরনের শাস্তি বিচারক উপযুক্ত বিবেচনা করিবেন মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীকে সেই ধরনের শাস্তি প্রদান করিবেন। মালিকী ও হাম্বলী ফকীহগণ মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীর জন্য একই সংগে তিনটি শাস্তি নির্ধারণ করিয়াছেনঃ বেত্রাঘাত, লোক সম্মুখে ঘুরানো ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের ঘোষণা প্রদান এবং হাজতবাস।

ধারা-৫৮৯

সাক্ষীগণের বক্তব্যে পার্থক্য (ক) ঘটনার মূল বিবরণে সাক্ষীগণের বক্তব্যের মধ্যে শব্দগত দিক হইতে মিল না থাকিলেও তাৎপর্যগত মিল থাকিলে তাহাদের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য

২৮২

হইবে। উদাহরণ : কোন মাল বাদীকে হেবা করা হইয়াছে বলিয়া একজন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং অপরজন উপঢৌকন প্রদান করা হইয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিলে তাহাদের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য হইবে।

(খ) বাদী যে পরিমাণ ঋণের দাবি করিয়াছে, একজন সাক্ষী সেই পরিমাণ বা তাহার অধিক পরিমাণের অনুকূলে এবং অপরজন উহার কম পরিমাণের অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদান করিলে কম পরিমাণের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

(গ) কোন বস্তুর পরিমাণ লইয়া সাক্ষীগণের মধ্যে মতভেদ হইলে যেই পরিমাণের উপর সাক্ষীগণের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে সেই পরিমাণের উপর তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

(ঘ) কোন জিনিসের প্রজাতি লইয়া সাক্ষীগণের মধ্যে মতভেদ হইলে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না।

(ঙ) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট নির্দিষ্ট পরিমাণ পাওনার দাবি করিলে এবং সাক্ষীদ্বয় পাওনার অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদানের সাথে সাথে অপরজন তাহা পরিশোধ করিয়া দেওয়ার অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদান করিলে সম্পূর্ণ পাওনার অনুকূলে সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

(চ) ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করিয়া দেওয়ার দাবি করিলে, একজন সাক্ষী ঋণদাতা ঋণ ফেরত পাইয়াছে বলিয়া স্বীকারোক্তি করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং অপরজন ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে দায়মুক্ত করিয়া দিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিলে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

ঘটনার বিবরণে সাক্ষীগণের বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা জরুরী। শাব্দিক পার্থক্যের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর মিল থাকিলে সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। যেমন এক সাক্ষী বলিল, অমুকের সহিত অমুকে বিবাহ হইয়াছে এবং অপর সাক্ষী বলিল, অমুক অমুককে নিকাহ করিয়াছে। এই ক্ষেত্রে শব্দের পার্থক্য হইলেও বিষয়বস্তুর মধ্যে মিল রহিয়াছে। ইহা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে সাক্ষীগণের সাক্ষ্যের মধ্যে শব্দগত ও অর্থগত উভয় দিক হইতে মিল থাকিতে হইবে, অন্যথায় সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।

২৮৩

ঋণের ক্ষেত্রে বাদী যে পরিমাণ ঋণের দাবি পেশ করিয়াছে একজন সাক্ষী। সেই পরিমাণ এবং অপর সাক্ষী তাহার কম বা বেশী পরিমাণ পাওনার সাক্ষ্য প্রদান করিলে কম পরিমাণের উপর রায় প্রদান করিতে হইবে। যেমন বাদী বিবাদীর নিকট দশ হাজার টাকার ঋণ পাওনা আছে বলিয়া দাবি করিল। একজন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করিলে যে, বাদী দশ হাজার টাকা পাইবে। অপর সাক্ষী বলিল, বার হাজার টাকা পাইবে, অথবা বলিল, নয় হাজার টাকা পাইবে। এই অবস্থায় প্রথম ক্ষেত্রে দশ হাজার এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নয় হাজার টাকার দাবি উভয় সাক্ষীর সাক্ষ্যের মধ্যে বিদ্যমান।

বস্তুনিচয়ের ক্ষেত্রেও একই বিধান। তবে বস্তুনিচয়ের প্রজাতি লইয়া সাক্ষীগণের মধ্যে মতভেদ হইলে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। যেমন একজন সাক্ষী বলিল, বাদী বিবাদীর নিকট এক মন ধান পাইবে, কিন্তু অপর সাক্ষী বলিল, এক মন সরিষা পাইবে। এই ক্ষেত্রে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।৬।

ধারা--৫৯০

সাক্ষ্য প্রতিহত করা।

কোন ব্যক্তি যদি অপর ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করে যে, উক্ত ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন কাজ করিয়াছে এবং উক্ত ব্যক্তির সাক্ষীগণের সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয় যে, সে উল্লেখিত সময়ে উল্লেখিত স্থানে ছিল না, তবে প্রথমোক্ত পক্ষের সাক্ষ্য বাতিল গণ্য হইবে।

ধারা--৫৯১

সাক্ষীর সহিত জেরা (ক) বিচারককে সাক্ষীগণের ব্যক্তিগত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হইতে হইবে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাহাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে সমর্থ না হইলে এই উদ্দেশ্যে লোক নিয়োগ করিবেন।

(খ) সাক্ষীগণের বক্তব্য যথার্থ কি না সেই সম্পর্কে বিচারক তাহাদের জেরা করিয়া নিশ্চিত হইবেন।

২৮৪

(গ) সাক্ষীগণকে বাদী ও বিবাদীর জেরা করিবার অধিকার থাকিবে।

বিশ্লেষণ

যে কোন মোকদ্দমায়, বিবাদী সাক্ষীগণের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি উত্থাপন করুক বা না করুক, বিচারক তাহাদের ব্যক্তিগত অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়া নিশ্চিত হইবেন যে, সাক্ষ্যের যাবতীয় শর্তাবলী তাহাদের মধ্যে বিদ্যমান আছে কি না। কারণ তাহাকে সাক্ষীগণের বক্তব্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে হইবে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে ইহা বিচারকের পালনীয় শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত এবং ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে ইহা বিচারকের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আদালতে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেও এই সম্পর্কে অবহিত হইতে পারেন, অথবা লোক নিয়োগ করিয়া অনুসন্ধানের মাধ্যমেও অবহিত হইতে পারেন। পূর্বকালে বিচারকগণ সাক্ষীগণের আবাসিক এলাকায় যাইয়া তথাকার সৎকর্মপরাণয়, ন্যায়নিষ্ঠ ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া সাক্ষীগণের ব্যক্তিগত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হইতেন। কিন্তু বর্তমান কালে বিচারকের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে অনুসন্ধান চালানো সম্ভব নহে। তাই তিনি সরাসরি লোক নিয়োগ করিয়া অথবা সরকারী সংস্থাসমূহের স্থানীয় শাখার সহায়তায় সাক্ষী সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে অবহিত হইতে পারেন। নৈতিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে। বর্তমান যুগে সাক্ষীর ব্যক্তিগত অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া পূর্বকালের তুলনায় আরও অধিক প্রয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছে।

সাক্ষী আদালতে যে বক্তব্য প্রদান করিবে সেই সম্পর্কে তাহার সহিত বিভিন্নভাবে জেরা করিয়া বিচারক তাহার বক্তব্য যাচাই করিয়া নিবেন। মহানবী (স) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগ হইতে এই নীতি প্রচলিত আছে। এক ব্যক্তি যেনার স্বীকারোক্তি করিলে মহানবী (স) তাহার সহিত এইভাবে জেরা করেনঃ সম্ভবত তুমি চুম্বন করিয়াছ, জড়াজড়ি করিয়াছ, কামনার দৃষ্টিতে তাকাইয়াছ, তুমি কি তাহার সহিত সঙ্গম করিয়াছ? তুমি কি জান, যেনা কি? সম্ভবত তুমি অবিবাহিত, তুমি হয়ত মদাসক্ত অবস্থায় ছিলে, তোমার সেই অঙ্গ কি তাহার সেই অঙ্গের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রবিষ্ট হইয়াছিল? তাহা কি সেইভাবে প্রবিষ্ট .. হইয়াছিল, যেইভাবে সুরমা শলাকা সুরমাদানির মধ্যে প্রবেশ করে এবং পানি তোলার রশি কূপের মধ্যে প্রবেশ করে? অতএব তিনি (স) স্থানীয় লোকদের

২৮৫

নিকট জিজ্ঞাসা করেন যে, লোকটি মস্তিষ্ক বিকৃত নয় তো? (তাফহীমুল কুরআন, বাংলা অনু, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১২১-২২)। এখানে উল্লেখ্য যে, স্বীকারোক্তিও এক ধরনের সাক্ষ্য অর্থাৎ ব্যক্তির নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য।

ধারা-৫৯২.

অনুসন্ধানকার্যের শর্তাবলী (ক) যেই ব্যক্তিকে সাক্ষীর ব্যক্তিগত অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধান করার জন্য নিয়োগ করা হইবে সেই ব্যক্তিকে মুসলমান, বালেগ, বুদ্ধিমান ও ন্যায়পরায়ণ হইতে হইবে;

(খ) অনুসন্ধানকারী প্রথমে গোপনে অনুসন্ধানকার্য চালাইবেন এবং ইহাতে সাক্ষী ন্যায়পরায়ণ প্রমাণিত হইলে অতঃপর প্রকাশ্যে তাহার সম্পর্কে খোঁজখবর লইবেন;

(গ) সাক্ষী ন্যায়পরায়ণ ও সাক্ষ্যদানের যোগ্য কি না তাহা অনুসন্ধানকারীকে সুস্পষ্ট বাক্যে ব্যক্ত করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

নাবালেগ, পাগল ও অমুসলিম ব্যক্তিকে অনুসন্ধানকার্যে নিয়োগ করা বিশুদ্ধ নহে। বিবাদীকেও অনুসন্ধানকার্যে নিয়োগ করা যাইবে না। উল্লেখিত ধরনের লোকদের প্রদত্ত তথ্য আদালতে গ্রহণযোগ্য হইবে না। অনুসন্ধানকারীর পুরুষ হওয়া জরুরী নহে। যে স্ত্রীলোক সচরাচর বাড়ির বহিরাঙ্গনে কাজেকর্মে লিপ্ত থাকে এইরূপ স্ত্রীলোককেও অনুসন্ধানকার্যে নিয়োগ করা যাইতে পারে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর কিতাবুল আসল-এ ইহা উল্লেখিত হইয়াছে। পিতা-পুত্র, মাতা-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোেন পরস্পরের পক্ষে সাফাই গাহিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে। আদালত প্রয়োজনবােধে এক বা একাধিক অনুসন্ধানকারী পাঠাইতে পারে। দুইজন অনুসন্ধানকারীর বিবৃতি পরস্পর বিপরীত হইলে আদালত তৃতীয় অনুসন্ধানকারী পাঠাইবে এবং তাহার বিবৃতি পূর্বের দুইজনের যাহার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইবে তাহাদের বিবৃতি গ্রহণ করিবেন। অনুসন্ধানকারীকে সুস্পষ্টভাবে বলিতে হইবে যে, সাক্ষী ন্যায়পরায়ণ ও সাক্ষ্যদানের যোগ্য কি না। তিনি সাক্ষী সম্পর্কে শুধু ন্যায়পরায়ণ অথবা শুধু সাক্ষ্যদানের যোগ্য বলিলে তাহার বিবৃতি গ্রহণযোগ্য হইবে না। একই সংগে

২৮৬

তাহাকে ন্যায়পরায়ণতা ও সাক্ষ্যদানের যোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করিতে

হইবে ৮৮

ধারা--৫৯৩ ‘

কিসাসের সাক্ষ্য

দুইজন সাক্ষীর প্রয়োজন। (ক) হত্যাকারীর অপরাধ প্রমাণের জন্য ন্যূনপক্ষে দুইজন পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন হইবে;

(খ) কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তি হত্যার সাক্ষ্য প্রদান করিলে সেই ব্যক্তিকে আটক করিতে হইবে এবং সাক্ষীগণের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে হইবে;

(গ) কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি হত্যার সাক্ষ্য প্রদান করিলেও সেই ব্যক্তিকে আটক করিতে হইবে এবং আরও একজন সাক্ষী বা নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া গেলে তাহাকে কয়েদমুক্ত করিয়া দিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

হত্যার অপরাধ প্রমাণের জন্যও অন্ততপক্ষে দুইজন মুসলিম পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন হইবে। মহান আল্লাহর বাণীঃ

واستشهدوا شهيدين من رجالكم.

“তোমাদের পুরুষদের মধ্য হইতে দুইজন সাক্ষী বানাও”- (সূরা বাকারাঃ ২৮২)।

واشهوا وی عدل منكم.

“তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখিবে”- (সূরা তালাকঃ ২)।

মুহায়্যাসার কনিষ্ঠ পুত্রকে খায়বারের দ্বারপ্রান্তে নিহত অবস্থায় পড়িয়া থাকিতে দেখা গেল। কিসাসের দাবিদারগণকে মহানবী (স) বলিলেনঃ

أقمشاهدين على من قتله.

“যে ব্যক্তি তাহাকে হত্যা করিয়াছে তাহার বিরুদ্ধে দুইজন সাক্ষী উপস্থিত

কর” ৯

২৮৭

কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তি এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, সে অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছে এবং তাহারা তাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছে তাহা হইলে বিচারক হত্যাকারীকে আটক করিবেন এবং সাক্ষীগণের বক্তব্য ও অবস্থা সম্পর্কে খোজ নিবেন এবং তদনুযায়ী মোকদ্দমা পরিচালনা করিবেন। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি অনুরূপ সাক্ষ্য প্রদান করিলেও বিচারক উক্ত ব্যক্তিকে আটক রাখিবেন। নিহতের দাবিদারগণ আরও একজন সাক্ষী উপস্থিত করিতে না পারিলে অথবা তদন্তে সে অপরাধী প্রমাণিত না হইলে বিচারক তাহাকে কয়েদমুক্ত করিয়া দিবেন। ৯০

ধারা--৫৯৪ নিহতের এক পুত্ৰ উপস্থিত ও অপর পুত্র অনুপস্থিত থাকিলে নিহতের একজন ওয়ারিস দুইজন সাক্ষী উপস্থিত করার পর অনুপস্থিত ওয়ারিস আসিয়া হাযির হইলে তাহাকে পুনরায় সাক্ষী উপস্থিত করিতে হইবে

; তবে তাহার সম্মতি ব্যতীত কিসাস কার্যকর করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর তাহার উপস্থিত এক ওয়ারিস আদালতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষী পেশ করিয়া হত্যাকারীর অপরাধ প্রমাণ করার পর অপর ওয়ারিস আসিয়া উপস্থিত হইলে তাহাকেও পুনরায় সাক্ষী পেশ করিতে হইবে কি না এই বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে তাহাকে পুনরায় দুইজন সাক্ষী উপস্থিত করিতে হইবে যদি হত্যাকাণ্ড কতলে আম্‌দ-এর অন্তর্ভুক্ত হয়, এবং কতলে খাতার ক্ষেত্রে পুনরায় সাক্ষী পেশ করিতে হইবে না। পক্ষান্তরে ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে কতলে আম্‌দ ও কতলে খাতা উভয় ক্ষেত্রেই তাহাকে পুনর্বার সাক্ষী পেশ করিতে হইবে না। তবে অনুপস্থিত ওয়ারিসের সম্মতি ব্যতীত কিসাস (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাইবে না। এই বিষয়ে সকল ইমাম একমত। ৯১

২৮৮

ধারা--৫৯৫ অনুপস্থিত ওয়ারিস ক্ষমা করিয়াছে বলিয়া

হত্যাকারী সাক্ষী পেশ করিলে হত্যাকারী যদি এই মর্মে দুইজন সাক্ষী পেশ করে যে, নিহতের অনুপস্থিত ওয়ারিস তাহাকে ক্ষমা করিয়াছে, তবে তাহার সাক্ষীদ্বয়ের সাক্ষ্য শুনানীযোগ্য হইবে এবং ক্ষমা প্রমাণিত হইলে কিসাস রহিত হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

এই ক্ষেত্রে উপস্থিত ওয়ারিস ক্ষমা না করিলে সে হত্যাকারীর নিকট হইতে অর্ধ-দিয়াত পাইবে। এখানে উল্লেখ্য যে, হত্যাকারীর ওয়ারিসগণের কোন একজন হত্যাকারীকে ক্ষমা করিলে সে মৃত্যুদণ্ড হইতে রেহাই পাইবে, তবে যে সকল ওয়ারিস তাহাকে ক্ষমা করে নাই তাহারা অংশমত দিয়াত প্রাপ্ত হইবে।

ধারা--৫৯৬

আহত করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তি এইরূপ সাক্ষ্য প্রদান করিলে যে, এক ব্যক্তি তাহার আঘাতে শয্যাশায়ী হইয়া মারা গিয়াছে, সেই ক্ষেত্রে আঘাতকারী কিসাসের দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।

বিশ্লেষণ

যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে আহত করার ফলে সে কিছু দিন বিছানাগত থাকার পর মারা গেল। দুইজন সাক্ষী এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, অমুক ব্যক্তি তাহাকে আহত করিয়াছিল। এই অবস্থায় আহতকারী ব্যক্তি কিসাস স্বরূপ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হইবে। ৩।

ধারা-৫৯৭ ভুলবশত হত্যার সাক্ষ্য প্রদান করিলে (ক) সাক্ষীগণ যদি সাক্ষ্য প্রদান করে যে, হত্যাকারী ভুলবশত হত্যা

২৮৯

সংঘটন করিয়াছে তবে তাহাদের সাক্ষ্য প্রমাণ হিসাবে গৃহীত হইবে এবং হত্যাকারীর উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(খ) সাক্ষীগণ যদি সাক্ষ্য প্রদান করে যে, হত্যাকারী ইচ্ছাকৃতভাবে না ভুলবশত হত্যা করিয়াছে সেই বিষয়ে তাহারা নিশ্চিত নহে, তবে তাহাদের সাক্ষ্য প্রমাণ হিসাবে গৃহীত হইবে এবং হত্যাকারীর উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।৪।

ধারা-৫৯৮ যেসব অবস্থায় সাক্ষ্য বাতিল গণ্য হইবে নিম্নলিখিত অবস্থায় সাক্ষীগণের সাক্ষ্য বাতিল গণ্য হইবে– (ক) একজন সাক্ষী হত্যাকারী ভুলবশত হত্যা করিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং অপরজন হত্যাকারী ভুলবশত হত্যার স্বীকারোক্তি করিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদান করিলে;

(খ) একজন সাক্ষী এক ধরনের অস্ত্র দ্বারা এবং অপর জন অন্য ধরনের অস্ত্র দ্বারা হত্যা করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে;

(গ) একজন সাক্ষী এক স্থানে এবং অপরজন অন্য স্থানে হত্যা করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে;

(ঘ) একজন সাক্ষী এক সময়ে এবং অপর জন অন্য সময়ে হত্যা করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে;

(ঙ) একজন সাক্ষী নির্দিষ্ট অস্ত্র দ্বারা হত্যা করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং অপরজন শুধু হত্যা করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং কোন প্রকারের অস্ত্র দ্বারা হত্যা করা হইয়াছে তাহা বলিতে না পারিলে;

(চ) দুই ব্যক্তি দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং কি ধরনের অস্ত্র দ্বারা তাহাকে হত্যা করিয়াছে তাহা বলিতে না পারিলে;

(ছ) আহত ব্যক্তি যে যখম বা আঘাতের ফলে নিহত হইয়াছে সেই যখম বা আঘাত তাহার দেহের কোন স্থানে লাগিয়াছিল তাহা সাক্ষীগণ নির্দিষ্ট করিয়া বলিতে না পারিলে;

২৯০

(জ) সাক্ষীগণ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপর ব্যক্তির দেহের কোন অংগ বা প্রত্যঙ্গ কর্তনের সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং তাহার দেহের কোন অংগ বা প্রত্যঙ্গ কর্তন করিয়াছে তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলিতে না পারিলে।

বিশ্লেষণ

সাক্ষীগণের মধ্যে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের স্থান সম্পর্কে মতভেদ হইলে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। তবে স্থান যদি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ বা স্বল্প পরিসরের হয় তবে স্থানের মতভেদ হইলেও সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে (ইসতিহ্সানান)। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি তাহার দেহের কোন্ স্থানে জখম হওয়ার ফলে নিহত হইয়াছে তাহা সাক্ষীগণ সঠিকভাবে বলিতে না পারিলে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। অস্ত্রের ব্যাপারে সাক্ষীগণের মধ্যে মতভেদ হইলেও তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। যেমন একজন সাক্ষী বলিল, অপরাধী তরবারির আঘাতে এবং অপরজন বলিল, পাথরের আঘাতে হত্যা সংঘটন করিয়াছে, এই অবস্থায়ও তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। অবশ্য হত্যাকাণ্ড সংঘটনে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ব্যবহার করা হইয়া থাকিলে সেই ক্ষেত্রে তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে। তাহা ছাড়া একই শ্রেণীভুক্ত অস্ত্র হইলে যেমন নেযা, বল্লম ও ছুরি অথবা পিস্তল, বন্দুক ও রাইফেল এবং তাহাতে মতভেদ হইলেও সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

দুই ব্যক্তি এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছে কিন্তু কি ধরনের অস্ত্র দ্বারা হত্যা করিয়াছে তাহা বলিতে পারে না। এই অবস্থায় ইসতিহসানের দাবি অনুযায়ী তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে, কিন্তু এইরূপ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যাইবে না, বরং অপরাধীর উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

দুইজন সাক্ষী এক অপরাধী সম্পর্কে এইরূপ সাক্ষ্য প্রদান করিলে যে, সে আহত ব্যক্তির একটি আঙ্গুল কর্তন করিয়াছে এবং অপর অপরাধী সম্পর্কে এইরূপ সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, সে ঐ ব্যক্তির অপর আঙ্গুল কর্তন করিয়াছে, কিন্তু কে কোন্ আঙ্গুল কর্তন করিয়াছে তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলিতে পারিতেছে

, এই অবস্থায় তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে না। অপরাধী সম্পর্কে দুইজন সাক্ষী যদি এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করে যে, সে প্রথমে

২৯১

নিহত ব্যক্তির হস্ত কর্তন করিয়াছে, অতঃপর তাহাকে হত্যা করিয়াছে, তবে নিহতের ওয়ারিসগণ ইচ্ছা করিলে প্রথমে হস্ত কর্তনের কিসাস, অতঃপর হত্যার কিসাস গ্রহণ করিতে পারে। কিন্তু বিচারকের শুধু হত্যার কিসাস গ্রহণের রায় প্রদান করাই উত্তম। ইহা ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মত। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে বিচারক হস্ত কর্তনের কিসাস গ্রহণের নির্দেশ প্রদান

করিয়া শুধু হত্যার কিসাস গ্রহণের রায় প্রদান করিবেন। অপরাধী উপরোক্ত দুইটি অপরাধের মধ্যে একটি অপরাধ ভুলবশত এবং অপরটি ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত করিলে ভুলবশত কৃত অপরাধের জন্য দিয়াত প্রদান এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত অপরাধের জন্য কিসাস বাধ্যকর হইবে।

এখানে স্মর্তব্য যে, সাক্ষ্যের ত্রুটির কারণে কিসাস কার্যকর করা বা দিয়াত আরোপ করা সম্ভব না হইলেও অপরাধী তাযীরের আওতায় শাস্তিপ্রাপ্ত হইবে যদি বিচাকর তথ্য-প্রমাণে বুঝিতে পারেন যে, আসামী আসলেই অপরাধ সংঘটন করিয়াছে।

ধারা-৫৯৯ নিহত ব্যক্তি জীবিত আবির্ভূত হইলে (ক) সাক্ষীগণ এইরূপ সাক্ষ্য প্রদান করিলে যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করিয়াছে এবং বিচারক কর্তৃক তাহাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান এবং তাহা কার্যকর করার পর কথিত নিহত ব্যক্তি জীবিত আবির্ভূত হইলে, শেষোক্ত নিহতের ওয়ারিসগণ ইচ্ছা করিলে সাক্ষীগণের নিকট হইতে অথবা জীবিত আবির্ভূত ব্যক্তির অভিভাবকের নিকট হইতে দিয়াত আদায় করিতে পারিবে;

(খ) ভুলবশত হত্যার সাক্ষ্য প্রদান করা হইলেও এবং কথিত নিহত ব্যক্তি জীবিত আবির্ভূত হইলে পূর্বোক্ত নিয়মে দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(গ) সাক্ষীগণ যদি এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করে যে, হত্যাকারী তাহাদের নিকট স্বীকারোক্তি করিয়াছিল যে, সে অপর ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলবশত হত্যা করিয়াছে, তবে এইরূপ ক্ষেত্রে কেবল জীবিত আবির্ভূত ব্যক্তির অভিভাবকের উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে।

‘ ২৯২

বিশ্লেষণ

ধারা (ক) ও (খ)-এ বর্ণিত অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ সাক্ষীগণের নিকট হইতে অথবা জীবিত আবির্ভূত ব্যক্তির অভিভাবকের নিকট হইতে দিয়াত আদায় করিতে পারিবে, তবে এক পক্ষের নিকট হইতে দিয়াত আদায় করিলে অপর পক্ষের নিকটও তাহা দাবি করিতে পারিবে না। ধারা (গ)-এ বর্ণিত ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ কেবল জীবিত আবির্ভূত ব্যক্তির অভিভাবকের নিকট হইতে দিয়াত আদায় করিবে, সাক্ষীগণের নিকট দিয়াত দাবি করিতে পারিবে না।

ধারা-৬০০ আলামতের ভিত্তিতে বিচারকার্য পরিচালনা

(ক) সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কোন কারণে তাহা সন্দেহযুক্ত হইলে অথবা বিতর্কিত বিষয়টি পূর্ণভাবে প্রমাণের জন্য যথেষ্ট বিবেচিত না হইলে অথবা সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমান না থাকিলে আলামতের উপর নির্ভর করিয়া বা আলামতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া বিচারকার্য সম্পন্ন করা যাইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, হদ ও কিসাস-এর বেলায় শুধুমাত্র আলামতের উপর ভিত্তি করিয়া নির্ধারিত শান্তি কার্যকর করা যাইবে না।

(খ) আলামত এতটা প্রকাশ্য ও পরিচিত হইতে হইবে যাহা আস্থা স্থাপনের ভিত্তি হিসাবে গণ্য হইতে পারে;

(গ) আলামতের ক্ষেত্রে প্রসংগের বাহ্যিক ও উহ্য দিকের মধ্যে ইংগিতসূচক সংযোগ বিদ্যমান থাকিতে হইবে;

(ঘ) আলামত যদি ততটা শক্তিশালী না হয় এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনার অনুকূলে উক্তরূপ আলামত ব্যতীত অন্য কোন প্রমাণ বিদ্যমান না থাকে অথবা উক্তরূপ আলামতের বিপরীতে কোন শক্তিশালী প্রমাণ বিদ্যমান না থাকে, তাহা হইলে উক্তরূপ আলামতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া বিচারকার্য সম্পন্ন করা যাইবে।

ব্যাখ্যা। আলামত : যে প্রকাশ্য চিহ্ন বা বস্তু কোন উহ্য বা বিতর্তিক বিষয় বা জিনিসের সহিত সম্পর্কযুক্ত হইয়া উহ্য বা বিতর্কিত বিষয় বা জিনিসকে

২৯৩

নির্দেশ করে বা নির্দেশনা দেয় তাহাকে “আলামত”বলে।

বিশ্লেষণ

কোন কোন সময় আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমান থাকিলেও কোন কারণে তাহা অস্পষ্ট, সন্দেহযুক্ত বা অন্য কোন দোষদুষ্ট হইতে পারে। যেমন পিতার মোকদ্দমায় পুত্রের সাক্ষ্য, বিবাদীর শত্রুর সাক্ষ্য, মক্কেলের অনুকূলে উকীলের সাক্ষ্য যথার্থ হইলেও তাহা পক্ষপাতদুষ্ট ও সন্দেহযুক্ত হইতে পারে। অথবা ঘটনার অনুকূলে কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমান নাই। এই অবস্থায় ঘটনার সহিত সংশ্লিষ্ট আলামতের উপর ভিত্তি করিয়া বিচারকার্য সম্পন্ন করা বৈধ। মহানবী (স), তাঁহার সাহাবীগণ, খােলাফায়ে রাশেদীন ও পরবর্তী কালের মুসলমানগণ আলামতকে ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করিয়া মোকদ্দমার ফয়সালা করিয়াছেন। উদাহরণস্বরূপ একটি স্ত্রীলোেক মহানবী (স)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া সে যেনার দ্বারা গর্ভবর্তী হইয়াছে বলিয়া স্বীকারোক্তি করিলে মহানবী (স) তাহার স্বীকারোক্তিকে প্রমাণ হিসাবে এবং তাহার অন্তঃসত্তাকে আলামত হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন। আলামত দেখিয়া কোন ব্যক্তিকে মুমিন অথবা মোনাফিক হিসাবে চিহ্নিত করার বিষয়টি শরীআতে স্বীকৃত। পথিমধ্যে পড়িয়া থাকা একটি টাকার থলি পাওয়া গেল। একটি লোক উপস্থিত হইয়া থলি, টাকার অংক, কত টাকার নোট কয়টি ইত্যাদির বিবরণ পেশ করিল এবং প্রাপ্ত থলি ও উহার মধ্যে রক্ষিত টাকার সহিত তাহার বিবরণ মিলিয়া গেল। এই ক্ষেত্রে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমান না থাকা সত্ত্বেও আলামতের উপর ভিত্তি করিয়া থলিয়াটি উক্ত ব্যক্তিকেই প্রদান করা হইবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংসারের মালপত্র লইয়া বিবাদ বাধিলে বিচারক সহজেই নির্ধারণ করিতে পারিবেন যে, টুপি, পাগড়ি, লুঙ্গি, তরবারি, ঢাল ইত্যাদি স্বামীর মাল, অপরদিকে শাড়ি, গহনা ইত্যাদি স্ত্রীর মাল। একটি ছেলে বা মেয়ে বালেগ হইয়াছে কি না তাহাও প্রাসংগিক দৈহিক আলামতের মাধ্যমে সহজেই নির্ণয় করা যায়।

অবশ্য হদ্দ ও কিসাস বহির্ভূত ক্ষেত্রসমূহেই আলামতের ভিত্তিতে মোকদ্দমার ফয়সালা করা যাইবে। হদ্দ ও কিসাসের বেলায় শুধু আলামতের ভিত্তিতে নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর করা যাইবে না। এই ক্ষেত্রে শাস্তি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ অথবা অপরাধীর স্বীকারোক্তি বিদ্যমান থাকিতে হইবে।

২৯৪

আলামত অপরাধ প্রমাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করিবে।

আলামত (আলামাই) শব্দটি আরবী, ইহার আভিধানিক অর্থ চিহ্ন, নিদর্শন, লক্ষণ, উদ্দিষ্ট বস্তুর প্রতি ইংগিতকারী চিহ্ন। পরিভাষায় সেই প্রকাশ্য চিহ্ন বা নিদর্শনকে আলামত বলে যাহা কোন উহ্য জিনিসের সহিত সম্পর্কযুক্ত হইয়া উক্ত জিনিসকে নির্দেশ করে বা চিহ্নিত করে। ** প্রমাণ হিসাবে ব্যবহারের জন্য আলামতের মধ্যে অবশ্যই দুইটি শর্ত বিদ্যমান থাকিতে হইবে। এক, আলামত এতটা সুস্পষ্ট ও সুপরিচিত হইতে হইবে যাহাতে উহা আস্থা স্থাপনের ভিত্তি হিসাবে গণ্য হইতে পারে। দুই, ঘটনাপ্রবাহের বাহ্যিক ও উহ্য দিকের মধ্যে ইংগিতসূচক সংযোগ বিদ্যমান থাকিতে হইবে।

এই হিসাবে আলামত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ও শক্তিশালী আলামত ও দুর্বল আলামত। শক্তিশালী আলামত দ্বারা নিশ্চিত ধারণা লাভ করা যায়। অপর প্রকারের আলামত শক্তিশালী না হইলেও তাহার দ্বারা প্রর্বল ধারণা লাভ করা যায়। এইরূপ আলামতের উপর নির্ভর করিয়া বিচারক কখন মোকদ্দমার ফয়সালা করিতে পারিবেন? যদি ঘটনার অনুকূলে উক্তরূপ আলামত ব্যতীত অন্য কোন প্রমাণ বিদ্যমান না থাকে অথবা উক্ত আলামতের বিপরীতেও কোন শক্তিশালী প্রমাণ বিদ্যমান না থাকে তখন বিচারক উক্ত আলামতের ভিত্তিতে মোকদ্দমার ফয়সালা করিতে পারিবেন।

ধারা-৬০১ সাক্ষ্য প্রত্যাহার (রুজু ‘আনিশ-শাহাদাহ) কোন সাক্ষী তাহার সাক্ষ্যের দ্বারা আদালতে যাহা প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিল তাহার সেই সাক্ষ্য স্বেচ্ছায় আদালতের সামনে প্রত্যাহার করাকে সাক্ষ্য প্রত্যাহার” বলে।

বিশ্লেষণ

সাক্ষী তাহার সাক্ষ্য এইভাবে প্রত্যাহার করিবে, “আমি যেই সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছিলাম তাহা প্রত্যাহার করিলাম”, অথবা “আমি ইতিপূর্বে যে সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছি তাহা মিথ্যা”, অথবা “আমি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছি”। আদালতে

২৯৫

সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিতে হইবে এবং বিচারকের পরিবর্তন হইলে তাহাতে কিছু যায় আসে না। আদালতের বাহিরে বা অন্যত্র সাক্ষ্য প্রত্যাহার গ্রহণযোগ্য নহে। কারণ সাক্ষী অন্যত্র সাক্ষ্য প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে বিবাদী তাহাকে আদালতে হাযির করিলে এবং তথায় সে সাক্ষ্য প্রত্যাহারের বিষয় অস্বীকার করিলে কিছু করার নাই, ইহার জন্য শুনানীর ব্যবস্থাও নাই এবং সাক্ষীকে শপথও করানো যাইবে না। তবে যে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করা হইয়াছে সেই আদালত ব্যতীত অন্য আদালতে সাক্ষী তাহার সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে তাহা কার্যকর হইবে (হিদায়া ও কাফী)। ৯৮

ধারা-৬০২।

সাক্ষ্য প্রত্যাহারের ফলাফল (ক) আদালত কর্তৃক রায়দানের পূর্বে অথবা রায়দানের পর কিন্তু তাহা কার্যকর করার পূর্বে, সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে সাক্ষীগণের কোন আর্থিক দণ্ড হইবে না।

(খ) যে ক্ষেত্রে মোকদ্দমায় মাল সম্পর্কিত বিষয়ে রায় প্রদান করা হইয়াছে সেই ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পর সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে সাক্ষীগণকে “দামান” (ক্ষতিপূরণ) দিতে হইবে; অথবা “দিয়াত” প্রদান করিতে হইবে, যদি মোকদ্দমা মানবজীবন বা মানবদেহের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে হয়।

বিশ্লেষণ

সাক্ষীগণের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পূর্বে তাহারা সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে তাহাদিগকে কোনরূপ ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না। কারণ রায় প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত বিবাদীর উপর কোনরূপ দায় বর্তায় না। অবশ্য এই ক্ষেত্রেও আদালত বিবেচনা করিলে সাক্ষীগণকে সাক্ষ্য প্রত্যাহারের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করিতে পারে। ৯৯

আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পর সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে এবং মোকদ্দমা মাল সম্পর্কিত বিষয়ে হইলে সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীকে ক্ষতিপূরণ (দামান) প্রদান করিতে হইবে। যেমন দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করিল যে,

২৯৬

“ক”-এর নিকট “খ” এক হাজার টাকা পাইবে। আদালত তাহাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে “ক”-এর বিরুদ্ধে “খ”-একে হাজার টাকা প্রদানের ডিক্রি প্রদান করিল। পরে সাক্ষীদ্বয় তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিয়া বলিল যে, তাহারা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে এবং “ক”-এর নিকট “খ”-এর কোন পাওনা নাই। এই ক্ষেত্রে সাক্ষীদ্বয় ক্ষতিপূরণ স্বরূপ “ক”-কে এক হাজার টাকা প্রদান করিবে, যদি “ক” ইতিমধ্যে “খ”-কে এক হাজার টাকা প্রদান করিয়া থাকে। “ক” টাকা প্রদান না করিয়া থাকিলে সাক্ষীদ্বয়কে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে না। অবশ্য সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারী মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের কারণে আদালতের বিবেচনা অনুযায়ী দণ্ড ভোগ করিবে।১০০।

আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পর সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে এবং মোকদ্দমা মানবদেহ বা মানবপ্রাণের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট হইলে, সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীকে অপরাধের ধরন অনুযায়ী “দিয়াত” প্রদান করিতে হইবে। যেমন দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, “ক” “খ”-কে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে হত্যা (কতলে আম্‌দ) করিয়াছে। আদালত তাহাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে “ক”-এর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করিল এবং তাহা কার্যকর করা হইল। অতঃপর সাক্ষীদ্বয় আদালতে উপস্থিত হইয়া তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিল। এই ক্ষেত্রে সাক্ষীদ্বয় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবারকে দিয়াত প্রদান করিবে এবং আদালত বিবেচনা করিলে তাহাদেরকে অতিরিক্ত শাস্তিও প্রদান করিতে পারে।

দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, “ক” “খ”-এর মাল চুরি করিয়াছে, আদালত তাহাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে “ক”-এর হাত কর্তনের রায় প্রদান করিল এবং তাহা কার্যকর করা হইল। অতঃপর সাক্ষীদ্বয় তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে তাহাদের উপর হাতের “দিয়াত” প্রদান বাধ্যকর হইবে। বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী (র)-র আদালতে দুই ব্যক্তি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করিল। তিনি উক্ত ব্যক্তির হস্ত কর্তনের রায় প্রদান করিলেন এবং তাহার হস্ত কর্তন করা হইল। অতঃপর সাক্ষীদ্বয় এক ব্যক্তিকে তাহার দরবারে উপস্থিত করিয়া বলিল, আমীরুল মুমিনীন! আমাদের মনে হয় চোর এই ব্যক্তি। আলী (রা) বলিলেন, এই সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে বিশ্বাস করি না এবং তোমরা ঐ ব্যক্তির হাতের দিয়াত পরিশোধ করিবে। আমি যদি জানিতে পারিতাম যে, তোমরা স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এই কাজ করিয়াছ, তাহা হইলে আমি তোমাদের

;

২৯৭

হাত কাটিয়া ফেলিতাম।১০১

অবশ্য শাস্তি কার্যকর করার পূর্বে সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে তাহাদের উপর দিয়াত বাধ্যকর হইবে না। তবে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়া হয়রানি করার জন্য আদালত তাহার সুবিবেচনা অনুযায়ী সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীকে ভিন্নতর শাস্তি প্রদান করিতে পারে।

ধারা--৬০৩

ক্ষতিপূরণের পরিমাণ (ক) মাল সম্পর্কিত মোকদ্দমার ক্ষেত্রে আদালত বিবাদীকে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান করিয়াছে, সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীদের উপর সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(খ) মানবদেহ ও মানবজীবনের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ সম্পর্কিত মোকদ্দমার ক্ষেত্রে অপরাধকারীকে যে শাস্তি প্রদান করা হইয়াছে, সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীদের উপর সেই পরিমাণ “দিয়াত প্রদান” বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

বিবাদীকে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে, সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীগণের উপর সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে। যেমন সাক্ষীগণ বলিল যে, বিবাদীর নিকট বাদী দশ হাজার টাকা পাইবে। আদালতের রায় কার্যকর হওয়ার পর তাহারা সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিয়া বলিল যে, তাহারা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে। আসলে বিবাদীর নিকট বাদীর কোন পাওনা নাই। এই অবস্থায় সাক্ষীগণ বিবাদীকে দশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে।১০২

অনুরূপভাবে মানবদেহ ও মানবজীবনের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের ধরন অনুযায়ী সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীগণের উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। যেমন সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, “ক” “খ”-কে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে (আমদান) হত্যা করিয়াছে। আদালত “ক”-এর মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করিল। শাস্তি কার্যকর করার পর সাক্ষীগণ তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিয়া বলিল যে, “ক” “খ”-কে হত্যা করে নাই। তাহারা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে। এই ক্ষেত্রে সাক্ষীগণের

২৯৮

উপর “কতলে আম্‌দ”-এর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। অনুরূপভাবে ভুলবশত হত্যার সাক্ষ্য প্রদান করিয়া তাহা প্রত্যাহার করা হইলে “কতলে খাতা”-এর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। অনুরূপভাবে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রত্যাহারের বেলায় অঙ্গের দিয়াত বাধ্যকর হইবে। যেমন দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, “ক” “খ”-এর মাল চুরি করিয়াছে। ফলে “ক”-এর হস্তকর্তন করা হইল। অতঃপর সাক্ষীদ্বয় বলিল যে, “ক” চুরি করে নাই, বরং “গ” চুরি করিয়াছে। এই অবস্থায় সাক্ষীদ্বয়ের উপর হাতের জন্য নির্ধারিত দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। ১০৩

ধারা-৬০৪

যেনার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রত্যাহার যেনার ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক– (ক) রায় প্রদান ও দণ্ড কার্যকর করার পূর্বে অথবা পরে চারিজন সাক্ষীর সকলে তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে তাহারা কাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে;

(খ) রায় প্রদানের পূর্বে এক বা একাধিক সাক্ষী তাহার বা তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলেও সে বা তাহারা সকলে কাযাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে;

(গ) রায় প্রদানের পর এবং দণ্ড কার্যকর করার পূর্বে এক বা একাধিক সাক্ষী সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলেও সে বা তাহারা কাযাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে;

(ঘ) আদালত কর্তৃক ঘোষিত দণ্ড কার্যকর করার পর যেই সাক্ষী সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিবে কেবল সে-ই কাযাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে;

(ঙ) ঘোষিত দণ্ড ‘রজম’ হইলে এবং তাহা কার্যকর করার পর সাক্ষ্য প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটিলে সাক্ষীগণের জন্য দিয়াত প্রদানও বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পূর্বে সাক্ষ্য প্রত্যাহারের কারণে সাক্ষীগণের বক্তব্য সাক্ষ্য হিসাবে পূর্ণতা লাভের পূর্বে কাযাফ-এ পরিণত হইয়াছে। কারণ

সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত কর্তৃক রায় প্রদানের পরই সাক্ষীর বক্তব্য সাক্ষ্য হিসাবে পূর্ণতা লাভ করে। আবার রায় প্রদানের পর তাহাদের সাক্ষ্য পূর্ণতা লাভ করিলেও সাক্ষ্য প্রত্যাহারের কারণে এই ক্ষেত্রেও তাহাদের সাক্ষ্য কাযাফ-এ পরিণত হইয়াছে। রায় প্রদানের পরে এবং তদনুযায়ী হদ্দ কার্যকর করার পরে সাক্ষীগণের সাক্ষ্য প্রত্যাহারের পরিণতিও একই। তবে হদ্দ বেত্রাঘাত হইলে সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীগণও বেত্রাঘাতের শাস্তি ভোগ করিবে এবং হদ্দ ‘রজম’ (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) হইলে বেত্রাঘাত ভোগর পরও সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীগণ দিয়াত প্রদান করিতেও বাধ্য হইবে। কারণ তাহাদের মিথ্যা সাক্ষ্যের কারণে একটি জীবন বিনষ্ট (ইতলাফ) হইয়াছে।

রায় প্রদানের পূর্বে এক বা একাধিক ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলেও সকল সাক্ষী কাযাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে। কারণ এক বা একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রত্যাহারের কারণে সাক্ষ্যের নেসাব (চার) পূর্ণ হয় নাই। যেমন তিন ব্যক্তি যেনার সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং তাহারা তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার না করিলেও কাযাফ-এর দণ্ডে দণ্ডিত হইয়া থাকে।

• রায় প্রদানের পর কিন্তু তাহা কার্যকর করার পূর্বে কোন ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলেও ইমাম আবু হানীফা ও আবূ ইউসুফ (র)-এর মতে সাক্ষীগণের সকলে কাযাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে, কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে কেবল সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারী কাযাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে।

রায় কার্যকর করার পর কেবল যেই সাক্ষী সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিয়াছে সে-ই কাযাফ-এর দণ্ড ভোগ করিবে, অন্যরা নহে।১০৪

ধারা-৬০৫ ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত বিষয়ে সাক্ষ্য প্রত্যাহার (ক) কোন বস্তু উহার প্রকৃত মূল্যে অথবা অধিক মূল্যে বিক্রয় করার সাক্ষ্য প্রদানের পর তাহা প্রত্যাহার করা হইলে সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীকে কোনরূপ ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না, কিন্তু যথার্থ মূল্য অপেক্ষা কম মূল্যে বিক্রয় করার সাক্ষ্য প্রদানের পর তাহা প্রত্যাহার করা হইলে ক্ষতির সম-পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে- বিক্রয় চূড়ান্তভাবেই হউক

৩০০

অথবা বিক্রেতা কর্তৃক বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের শর্তেই হউক।

(খ) কোন বস্তু উহার প্রকৃত মূল্যে অথবা উহার কম মূল্যে ক্রয় করার সাক্ষ্য প্রদানের পর পুনরায় তাহা প্রত্যাহার করা হইলে সাক্ষী প্রত্যাহারকারীগণকে কোনরূপ ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না; অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করার সাক্ষ্য প্রদানের পর তাহা প্রত্যাহার করা হইলে ক্ষতির সম-পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে।

(গ) ক্রেতার ক্রীত বস্তুর মূল্য পরিশোধের দাবির অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদানের পর তাহা প্রত্যাহার করা হইলে সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীগণ বিক্রেতাকে উক্ত মালের মূল্য পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবে।

(ঘ) ক্রেতা কর্তৃক কিস্তিতে ক্রীত বস্তুর মূল্য পরিশোধের দাবি করা হইলে এবং উহার অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদানের পর তাহা প্রত্যাহার করা হইলে বিক্রেতা তৎক্ষণাৎ সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীর নিকট হইতেও সম্পূর্ণ মূল্য আদায় করিতে পারে অথবা ক্রেতার নিকট হইতে কিস্তিতে তাহা আদায় করিতে পারে; তবে সে একজনের নিকট হইতে ক্ষতিপূরণ আদায় করিলে অপরজন দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

ধারা--৬০৬ হেবা, ওয়াদিয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রত্যাহার (ক) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তাহার কোন মাল হেবা করিয়াছে এবং হেবা গ্রহীতা তাহা নিজ দখলভুক্ত করিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য প্রদানের পর তাহা প্রত্যাহার করা হইলে উক্ত মালের মূল্য পরিশোধ করা সাক্ষ্য প্রত্যাহারকারীগণের জন্য বাধ্যকর হইবে এবং মূল্য গ্রহণের পর হেবাকারী তাহার হেবা প্রত্যাহার করিতে পারিবে না; তবে মূল্য গ্রহণ না করিলে বিচারকের নির্দেশে হাে প্রত্যাহার করিতে পারিবে।

(খ) দান-খয়রাতের (সাদাকা) বিধানও হেবার অনুরূপ, তবে দান কোন অবস্থায় প্রত্যাহার করা যাইবে না।

(গ) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট কোন জিনিস গচ্ছিত (ওয়াদি’আহ্) রাখিয়াছে বলিয়া দাবি করিলে এবং অপর ব্যক্তি তাহা অস্বীকার করিলে, সাক্ষ্যের

৩০১

ভিত্তিতে তাহার দাবি প্রমাণিত হওয়ার পর সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে সাক্ষীগণের উপর ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে। বিদাআত (বিদাআহ্) ও আরিয়া (আরিয়াহ্)-এর বেলায়ও অনুরূপ বিধান প্রযোজ্য।০৫।

(ঘ) উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রে বিচারকের রায় প্রদান ও তাহা কার্যকর হওয়ার পর সাক্ষ্য প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট মাসিক দুই হাজার টাকায় তাহার বাড়ি ভাড়া প্রদান করিল। পরে ভাড়াটিয়া দাবি করিল যে, মাসিক দেড় হাজার টাকায় তাহাকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হইয়াছে। দুইজন সাক্ষী ভাড়াটিয়ার অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদান করিল এবং বিচারক তদনুযায়ী রায় প্রদান করিলেন। অতঃপর সাক্ষীগণ তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিল। এখন দেখিতে হইবে যে, বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ প্রচলিত হারের অধিক না কম। ভাড়া প্রচলিত হারের কম হইয়া থাকিলে যতটুকু পরিমাণ কম হইয়াছে ততটুকু পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান সাক্ষীগণের জন্য বাধ্যকর হইবে, যদি এই বিরোধ চুক্তির মেয়াদকালের প্রথম দিকে হইয়া থাকে। চুক্তির মেয়াদশেষে এই বিরোধ হইলে বাড়িওয়ালার দাবিকৃত ভাড়ার সম-পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান সাক্ষীগণের জন্য বাধ্যকর

হইবে। ১০৭

ধারা—৬০৭

ওসিয়াত সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রত্যাহার কোন ব্যক্তি আদালতে এই মর্মে দুইজন সাক্ষী পেশ করিল যে, মৃত ব্যক্তি তাহার পরিত্যক্ত মালের এক-তৃতীয়াংশ তাহার অনুকূলে ওসিয়াত করিয়াছেন; এই ক্ষেত্রে বিচারক তাহার রায় প্রদান ও উহা কার্যকর করার পর সাক্ষীগণ তাহাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে এক-তৃতীয়াংশ মালের ক্ষতিপূরণ প্রদান সাক্ষীগণের জন্য বাধ্যকর হইবে।১০৮

৩০২

ধারা-৬০৮ মুদারাবার মুনাফা ও শিরকাতে মুফাওয়াদা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রত্যাহার

(ক) মুদারিব অর্ধেক মুনাফার এবং পুঁজিপতি এক-তৃতীয়াংশ মুনাফার শর্তে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার দাবি করিলে এবং অর্ধেক মুনাফার অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদানের পর তাহা প্রত্যাহার করা হইলে ক্ষতিপূরণ প্রদান সাক্ষীগণের জন্য বাধ্যকর হইবে না, যদি মুনাফা বণ্টনের পূর্বে সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইয়া থাকে। কিন্তু বিচারকের রায়ের পর এই মুনাফা অর্ধাঅর্থি বণ্টন করিয়া নেওয়ার পর সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে সাক্ষীগণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে।

(খ) কোন ব্যক্তির দখলভুক্ত মালের ব্যাপারে দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, উহা শিরকাতে মুফাওয়াদার মাল এবং অন্য কোন ব্যক্তি উহার অর্ধেক অংশীদার, এই অবস্থায় বিচারকের রায় প্রদানের এবং তাহা কার্যকর হওয়ার পর সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে অর্ধেক মাল মূল মালিককে ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদান সাক্ষীগণের জন্য বাধ্যকর হইবে।

ধারা৬০৯

ভাড়া সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রত্যাহার বিচারকের রায় প্রদান ও তাহা কার্যকর করার পর বাড়ি ভাড়া সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে ক্ষতির সম-পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান সাক্ষীগণের জন্য বাধ্যকর হইবে।

ধারা—৬১০ মূল সাক্ষী ও সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রত্যাহার বিচারকের রায় প্রদান এবং তাহা কার্যকর করার পর (ক) মূল সাক্ষীগণ এবং সাফাই সাক্ষীগণ একত্রে সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ মূল সাক্ষী অথবা সাফাই সাক্ষীগণের মধ্যে যাহাদের নিকট হইতে ইচ্ছা ক্ষতিপূরণ আদায় করিতে পারিবে, কিন্তু যুগপভাবে উভয়ের নিকট হইতে ক্ষতিপূরণ আদায় করিতে পারিবে না;

৩০৩

(খ) সাফাই সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ কেবল সাফাই সাক্ষীগণের নিকট হইতেই ক্ষতিপূরণ আদায় করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

মূল সাক্ষী ও সাফাই সাক্ষীগণ সকলে সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে ইমাম আবু হানীফা ও আবু ইউসুফ (র)-এর মতে মূল সাক্ষীর উপর কোন ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে না, বরং সাফাই সাক্ষীগণের উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত মূল ধারায় ব্যক্ত হইয়াছে।১০৯

ধারা-৬১১ মীরাস সম্পর্কিত বিষয়ে সাক্ষ্য প্রত্যাহার মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তি মৃতের ওয়ারিস সাব্যস্ত হইলে, সাক্ষ্য প্রত্যাহারের পর, ওয়ারিস হিসাবে সে যাহা গ্রহণ করিয়াছিল তাহা প্রকৃত ওয়ারিসগণকে ফেরত প্রদান উক্ত ব্যক্তির জন্য বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি সম্পর্কে মৃতের ওয়ারিস বলিয়া সাক্ষ্য প্রদানের পর এবং বিচারক কর্তৃক রায় প্রদান ও তাহা কার্যকর করার পর উক্ত সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে উক্ত ব্যক্তি ওয়ারিস হিসাবে যে মাল প্রাপ্ত হইয়াছিল তাহা প্রকৃত ওয়ারিসকে ফেরত প্রদান করিবে।

দুইজন সাক্ষী এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করিলে যে, কোন ব্যক্তি নিহত ব্যক্তির একমাত্র ওয়ারিস এবং হত্যাকারী তাহাদের নিকট কতলে আম্‌দ-এর স্বীকারোক্তি করিলে, বিচারক কিসাসের নির্দেশ দেওয়ার এবং তাহা কার্যকর করার পর সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রত্যাহার করিলে, কথিত ওয়ারিস প্রকৃত ওয়ারিসগণকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবে এবং সাক্ষীগণ তাযীরের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে।

কোন নারী সম্পর্কে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বলিয়া সাক্ষ্য দেওয়ার পর এবং বিচারক কর্তৃক রায় প্রদান করা ও তাহা কার্যকর হওয়ার পর সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা

৩০৪

হইলে, উক্ত নারী ওয়ারিসী সূত্রে যাহা প্রাপ্ত হইয়াছে তাহা মৃতের ওয়ারিসগণকে ফেরত প্রদান করিবে।

মুসলিম পুত্রের পক্ষ হইতে তাহার পিতা মুলসমান অবস্থায় মারা গিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য দেওয়ার পর এবং আদালত কর্তৃক রায় প্রদান ও তাহা কার্যকর হওয়ার পর সাক্ষ্য প্রত্যাহার করা হইলে মৃতের মুসলিম পুত্র অমুসলিম পুত্রকে ওয়ারিসী সূত্রে প্রাপ্ত মাল ফেরত প্রদান করিবে।

ধারা-৬১২

শপথের পদ্ধতি শপথকারী মুসলিম বা অমুসলিম হইলে আদালত তাহাকে আল্লাহর নামে তিনবার শপথ করাইবে।

বিশ্লেষণ

মহানবী (স) নিম্নোক্ত বাক্যে ইয়াযীদ ইব্‌ন রুকানা অথবা রুকানা ইবন ইয়াযীদকে শপথ করাইয়াছেনঃ

بالله عز و جل ما أردت بالبة ثا۔

“মহামহিম আল্লাহর শপথ! আমি ‘বাত্তা’ শব্দ দ্বারা তিন তালাকের সংকল্প করি নাই।”

কিছু লোক কেবল “আল্লাহর নাম লইয়া মিথ্যা শপথ করিতে মোটেই দ্বিধা করে না, তাহাদের আদালত কঠোর বাক্যে শপথ করাইবে। মহানবী (স) ইহূদী ইন সূরিয়া আওয়ারকে কঠোর শব্দ সহযোগে শপথ করাইয়াছিলেন।

(و البني أنزل التوراة على سيدنا موسى عليه

-(L

কোন কোন মনীষী বলেন, বিবাদের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হইলে কঠোর বাক্যে এবং সাধারণ বা তুচ্ছ হইলে সহজ বাক্যে শপথ করাইবে।১১

শপথকারী অমুসলিম হইলে সেও আল্লাহর নামে শপথ করিবে। কারণ অমুসলিমগণও বিশ্বজগতের একজন স্রষ্টা আছেন বলিয়া বিশ্বাস করে। যেমন

৩০৫

পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছেঃ

ولئن سئلتهم من خلق السموات والأرض

ليقولن الله۔

“তুমি যদি তাহাদেরকে জিজ্ঞাসা কর-আসমানসমূহ ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা হইলে তাহারা অবশ্যই বলিবে- আল্লাহ”- (সূরা লুকমানঃ ২৫; যুমারঃ ৩৮; আরও দ্র আনকাবুতঃ ৬১, যুখরুফঃ ৯)।

অতএব মুশরিকদের মধ্যেও একজন সষ্টার ধারণা এবং তাহার প্রতি শ্রদ্ধবােধ বিদ্যমান রহিয়াছে। অবশ্য আদালত বিবেচনা করিলে অমুসলিমকে তাহার ধর্মের কঠোর বাক্যে শপথ করাইতে পারে।

ধারা-৬১৩ – বিবাদী শপথ করিতে অস্বীকার করিলে বিবাদী তিনবার শপথ করিতে অস্বীকার করিলে আদালত তাহার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করিবে।

বিশ্লেষণ

এই ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা এই যে, আদালত বিবাদীকে একে একে তিনবার শপথ করিতে বলিবে। ইহার পরও সে শপথ না করিলে আদালত তাহার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করিবে।

ধারা-৬১৪

বিবাদীকে শপথ করিতে হয় বাদীর দাবি অস্বীকার করিলে বিবাদীকে শপথ করিয়া নিজের দায়মুক্তি ঘোষণা করিতে হয়।

বিশ্লেষণ

মহানবী (স) বাদীর উপর তাহার দাবির অনুকূলে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করিবার

৩০৬

এবং বিবাদীর উপর বাদীর দাবি অস্বীকার করার ক্ষেত্রে শপথ করার দায়িত্ব আরোপ করিয়াছেন। তিনি বলেন।

البينة على المدعى واليمين على من أنكر –

“সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা দাবিদারের (বাদীর) কর্তব্য এবং যে (দাবি) প্রত্যাখ্যান করে তাহার (বিবাদীর) কর্তব্য শপথ করা।”১১৪

ধারা-৬১৫

শপথের শর্তাবলী (ক) শপথকারীকে বালেগ ও সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী হইতে হইবে; (খ) বিবাদী কর্তৃক বাদীর দাবি প্রত্যাখ্যাত হইতে হইবে; (গ) বাদীকে বিচারকের সামনে বিবাদীর শপথ দাবি করিতে হইবে; (ঘ) বিবাদীকেই শপথ করিতে হইবে;

(ঙ) যে সম্পর্কে শপথ করিতে হইবে তাহা মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হইতে হইবে;

(চ) যেইসব বিষয়ে স্বীকারোক্তি কার্যকর হয়, শপথের বিষয়বস্তু উহার অন্তর্ভুক্ত হইতে হইবে;

(ছ) যেই বিষয়ে শপথ করা বৈধ কেবল সেই বিষয়ে শপথ করিতে হইবে; (জ) বাদীকে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করিতে অক্ষম হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

প্রথমোক্ত ছয়টি শর্ত সম্পর্কে সকল মাযহাবের ফকীহগণ একমত। শপথকারী বালেগ ও সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী না হইলে তাহার কৃত শপথের কোন মূল্য নাই। অতএব নাবালেগ ও পাগলকে শপথ করানো যাইবে না। ঘুমন্ত ব্যক্তির শপথ এবং বলপ্রয়োগে কৃত শপথও ধর্তব্য নহে। বিবাদী বাদীর দাবি অস্বীকার করিলেই শপথের প্রয়োজন। সে যদি তাহার দাবি স্বীকার করে তবে শপথের কোন প্রয়োজন নাই। বাদীকেও আদালতে বিবাদীর শপথ দাবি করিতে হইবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই শপথ করিতে হইবে, তাহার প্রতিনিধি বা

৩০৭

অভিভাবকের শপথ গ্রহণযোগ্য নহে। শপথের বিষয়বস্তু মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট হইতে হইবে এবং একান্তই আল্লাহর অধিকার সংশ্লিষ্ট হইলে সেই ক্ষেত্রে শপথ করানোনা যাইবে না। যেমন যেনা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ইতাদি। শপথ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি এমন হইতে হইবে যেই ক্ষেত্রে স্বীকারোক্তি করিলে তাহা বৈধ গণ্য হয়। অতএব যেই ক্ষেত্রে স্বীকারোক্তি বৈধ গণ্য হয় না সেই ক্ষেত্রে শপথ করানোও বৈধ নহে। যেমন প্রতিনিধি বা ওসী তাহার নিয়োগকর্তার বিষয়ে স্বীকারোক্তি করিলে তাহা বৈধ হইবে না। অতএব তাহাদেরকে শপথ করানোও বৈধ হইবে না। শপথের বিষয়বস্তু এমন হইতে হইবে যেই ক্ষেত্রে শপথ করা বৈধ, যেই ক্ষেত্রে শপথ করা বৈধ নহে, শপথের বিষয়বস্তু সেইরূপ হইতে পারিবে না। যেমন একান্তভাবে আল্লাহর অধিকারভুক্ত বিষয় ইত্যাদি।

বাদীর সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশে অপরাগতাও শপথ অনুষ্ঠানের একটি শর্ত। আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত থাকিলে সেই ক্ষেত্রে বিবাদীকে শপথ করানো যাইবে না। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে, এই অবস্থায়ও বিবাদীকে শপথ করানো যাইবে।

ধারা—৬১৬

যেসব ক্ষেত্রে শপথ বৈধ (ক) মাল এবং মালের স্থলাভিষিক্ত হইতে পারে এইরূপ বিষয় সম্পর্কে শপথ করা যাইবে;

(খ) কিসাস, মানবদেহের ক্ষতিসাধন (জুরহ) এবং কোন কোন ব্যক্তিগত ব্যাপারে শপথ করা যাইবে।

বিশ্লেষণ

মাল ও মাল স্থানীয় বিষয়ে যে শপথ করা বৈধ এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত। এই ক্ষেত্রে বিবাদী ইতিবাচক বা নেতিবাচক যে কোনরূপ শপথ করিতে পারিবে। মানবজীবন ও মানবদেহের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের ক্ষেত্রেও শপথ বৈধ হওয়ার বিষয়ে ফকীহগণ একমত। অবশ্য কোন কোন ব্যক্তিগত বিষয়ে শপথ করা বৈধ এবং কোন কোন বিষয়ে বৈধ নহে।

৩০৮

ধারা-৬১৭

যেসব ক্ষেত্রে শপথ বৈধ নহে। (ক) একান্তই আল্লাহর অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিবাদীকে শপথ করানো যাইবে না, তাহা হদ্দ সম্পর্কিত বিষয়ই হউক অথবা ইবাদত সম্পর্কিত বিষয়

(খ) বিবাহ, তালাক প্রত্যাহার, বংশপরিচয় (নসব), ঈলা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয়েও বিবাদীকে শপথ করানো যাইবে না।

বিশ্লেষণ

আল্লাহুর অধিকারভুক্ত বিষয়ে যে শপথ বৈধ নহে সেই সম্পর্কে ফকীহগণ একমত। আল্লাহর অধিকারভুক্ত হদ্দ সম্পর্কিত বিষয়- যেমন যেনা, চুরি, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ইত্যাদি এবং ইবাদত সম্পর্কিত বিষয়- যেমন নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, মানত, কাফফারা ইত্যাদি। কিন্তু উহার সহিত কোন ব্যক্তির মাল প্রাপ্য হওয়ার বিষয় সংশ্লিষ্ট হইলে সেই ক্ষেত্রে শপথ করানো যাইবে। যেমন সাক্ষ্য-প্রমাণে সুস্পষ্টভাবে চুরি প্রমাণিত না হওয়ার কারণে হদ্দ রহিত হইয়া গেল, কিন্তু অপরাধী যে অন্যের মাল ঐ পন্থায় গ্রহণ করিয়াছে তাহা সুস্পষ্ট। এইরূপ ক্ষেত্রে বিবাদীকে শপথ করানো যাইবে।

বিবাহের বিষয়টি এইরূপ যে, কোন পুরুষ কোন নারীকে নিজের স্ত্রী বলিয়া অথবা কোন নারী কোন পুরুষকে নিজের স্বামী বলিয়া দাবি করিল এবং তাহার দাবির অনুকূলে তাহার নিকট সাক্ষ্য-প্রমাণ নাই। এই অবস্থায় যাহাকে স্বামী বা স্ত্রী বলিয়া দাবি করা হইয়াছে সে ঐ দাবি প্রত্যাখ্যান করিলে তাহাকে শপথ করানো যাইবে না। ইহা ইমাম আবু হানীফা (র)-এর অভিমত। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে বিবাহের ক্ষেত্রেও বিবাদীকে শপথ করানো যাইবে।

তালাকের বিষয়টি এইরূপ যে, কোন ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে রিজঈ তালাক দিল। ইদ্দাত শেষ হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীকে বলিল, তোমার ইদ্দাত কাল শেষ হওয়ার পূবেই আমি তোমাকে রুজু করিয়াছি, কিন্তু স্ত্রী তাহা অস্বীকার করিল এবং স্বামীর নিকটও রুজু করার পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ নাই। এই অবস্থায় ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে স্ত্রীকে শপথ করানো যাইবে না, কিন্তু ইমাম আবু

ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে তাহাকে শপথ করানো যাইবে।

বংশপরিচয়ের বিষয়টি এইরূপ যে, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে নিজের পিতা বা পুত্র বলিয়া দাবি করিল এবং যাহার উপর উক্ত দাবি করা হইয়াছে সে তাহা প্রত্যাখ্যান করিল। দাবিদারের নিকট কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নাই। এই অবস্থায় সে দাবি প্রত্যাখ্যানকারীকে শপথ করানোর দাবি করিলে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে না, কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে গ্রহণযোগ্য হইবে।

ঈলার বিষয়টি এইরূপ যে, স্বামী তালাকের নিয়াতে স্ত্রীর সহিত চার মাস পর্যন্ত সহবাস না করার শপথ করিল। চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীকে বলিল, আমি ইতিপূর্বেই তোমার সহিত সংগম করিয়া শপথ ভংগ করিয়াছি। অতএব তুমি (বাইন) তালাকপ্রাপ্তা হও নাই। কিন্তু স্ত্রী বলিল, তুমি আমার সহিত ঈলার মুদ্দতের মধ্যে সঙ্গম কর নাই, স্বামীর নিকটও কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নাই। এই অবস্থায় স্বামী দাবি করিলে, ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে, স্ত্রীকে শপথ করানো যাইবে না, কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে শপথ করানো যাইবে।১৫।

তথ্য নির্দেশিকা ১. ডঃ ওয়াহ্বা আয-যুহায়লী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, ২য় সংস্করণ ১৪০৯/১৯৮৯,

৬., পৃ., ৫৫৬। নিম্নোক্ত গ্রন্থের বরাতে ও ফাতহুল কাদীর, ৬খ., পৃ. ২; দুররুল মুখতার, ৪খ., পৃ.

৩৮৫; আশ-শারহুল কাবীর, ৪খ, পৃ. ১৬৪; মুগনী আল-মুহতাজ, ৪খ., পৃ. ৪২৬। ২. তুর্কী মাজাল্লা, ধারা ১৬৮৪। ৩. সূরা বাকারা, ২৮২ নং আয়াত। ৪. সূরা তালাক, আয়াত নং ২। ৫. সূরা বাকারা, ২৮৩ নং আয়াত। ৯. আল-ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬২; বাদাইউস সানাই, কিতাবুশ শাহাদাত, ৬২, পৃ. ২৬৬। ১০. আল-জামে আল-খাল্লাল (ফিকহুল ইসলামী, ৬২, পৃ. ৫৫৯ হইতে এখানে উদ্ধৃত)। ১১. আল-ফিকহল ইসলামী, ৬, পৃ. ৫৬৩, ১২. আল ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৫৮-৯; বাদাইউস-সানাই, ৬২, পৃ. ২৬৬। ১৩. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৩; বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৮২। ১৪. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৩; বাদাই, ৬খ, পৃ. ২৮২। ১৫. সূরা নাহল, আয়াত নং ৭৫। ১৬. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৪; আলামগীরী, ৩খ, পৃ. ৪৫০।

৩১০

১৭. আল-মুগনী, খ, পৃ. ১১০; হাশিয়াতুদ দাসূকী আলা শারহিল কাবীর, ৪খ, পৃ. ১৬৮ (ফিকহল

ইসলামী, ৬/১৬৪)।

১৮. সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৮২। ১১. সূরা তালাক, আয়াত নং ২। ২০. বাদাইউস সানাই, ৬, পৃ. ২৬৮। ২১. ঐ, পৃ. ২৬৮ : .J_ ১ ১, ১২, L• ১৯৭১

من غلبت حسناته سيئاته فهو عدل.

ঐ, পৃ. ২৬৮। ২২. এ,

من يجتنب الكبائر وادي الفرائض وغلبت حسناته سيئاته “

১৫

اذا كان الرجل صالحا في اموره تغلب حسناته سيئاته ولايعرف .29

بالكذب ولا بشيئ من الكبائر.

ঐ, পৃ. ২৬৮। ২৪. বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৬৮ঃ 1 3 98 9 Lya re Lal< ২৫. সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৮২। ২৬. সূরা তালাক, ২ নং আয়াত। ২৭. বুখারী ও মুসলিম (নায়লুল আওতার, ৮২, পৃ. ৩০২)। ২৮. ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৭৩, টীকা ১; বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৭৩। ২৯. বাদাইউস সানাই, ৬২, পৃ. ২৭৩; ফিকহল ইসলামী, ৬২, পৃ. ৫৭৪-৫। ৩০. বাদাইউস সানাই, ৬২, পৃ. ২৭৭। ৩১. বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৭৭। ৩২. আবু দাউদ, আহমাদ, বায়হাকী, ইবন মাজা ইত্যাদি গ্রন্থের বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ৬২, পৃ. ৫৬৮। ৩৩. মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, বায়হাকী ও হাকেম-এর বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৮;

বাদাইউস সানাই, ৬২, পৃ. ২৭২। ৩৪. ফিকহল ইসলামী, ৬খ., পৃ. ৫৬৯। ৩৫. সূরা নূর, আয়াত নং ৪। ৩৬. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, ৫৬৭; বাদাই, ৬খ, পৃ. ২৭১। ৩৭. বাদাই, ৬খ, পৃ. ২৭১। ৩৮. সূরা তালাক, ২ নং আয়াত। ৩৯. সূরা মাইদা, ৮ নং আয়াত। ৪০. বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৭২। ৪১. বাদাইউস সানাই, ৬, পৃ. ২৭২; ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৮। ৪২. বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৭২। ৪৩. হিদায়া, শাহাদাত, বাব মান ইউকবালু শাহাদাতুহু ওয়া মান লা ইউকবালুহ, ৩, পৃ. ১৪৪;

৩১১

ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৫৮-৯; বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৬৬; আলামগীরী, ৩খ, পৃ. ৪৬৪। ৪৪. আলামগীরী, ৩থ, পৃ. ৪৬৫; হিদায়া, ৩২, পৃ. ১৪৪। ৪৫. হিদায়া, ৩, পৃ. ১৪৪। ৪৬. ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৯; হিদায়া, ৩, পৃ. ১৪৫। ৪৭. ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৮; হিদায়া, ৩২, পৃ. ১৪৬। ৪৮. ফিকহল ইসলামী, ৬, পৃ. ৫৬৪; আলামগীরী, ৩২, পৃ. ৪৬৪। ৪৯. বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৬৭; আলামগীরী, ৩, পৃ. ৪৬৫; ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬২। ৫০. বাদাইউস সানাইর বরাতে আলামগীরী, ৩, পৃ. ৪৬৭। ৫১. আলামগীরী, ৩, পৃ. ৪৬৮; হিদায়া, ৩, পৃ. ১৪৭। ৫২. হিদায়া, ৩, পৃ. ১৪৬; আলামগীরী, ৩, পৃ. ৪৬৭; বাদাইউস সানাই, ৬, পৃ. ২৬৷ ৫৩. আলমগীরী, ৩খ, পৃ. ৪৬৬; হিদায়া, ৩, পৃ. ১৪৬। ৫৪. আলামগীরী, ৩, পৃ. ৪৬৬। ৫৫. বাদাইউস সানাই, ৬ খ, পৃ. ২৬৯। ৫৬. হিদায়া, ৩ খ, পৃ. ১৪৮; বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৬৯; আলামগীরী ৩, পৃ. ৪৬১। ৫৭. হিদায়া, ৩খ পৃ. ১৪৮; আলামগীরী, ৩, পৃ. ৪৬৯। ৫৮. আলামগীরী, ৩২, পৃ. ৪৬৮। ৫৯. হিদায়া, ৩২, পৃ. ১৪৮। ৬০. হিদায়া, কিতাবুশ শাহাদাত, ৩২, পৃ. ১৩৮। ৬১. হিদায়া, কিতাবুশ শাহাদাত, ৩২, পৃ. ১৩৮। ৬২. আলমগীরী, কিতাবুশ শাহাদাত, ৪র্থ বাব, ১ম ফাসল, ৩, পৃ. ৪৬৫। ৬৩. হিদায়া, শাহাদাত, ৩খ পৃ. ১৩৮-৯। ৬৪. ই আবূ শায়বা ও আবদুর রাযযাকের বরাতে হিদায়া, ৩., পৃ. ১৩৯। ৬৫. হিদায়া, ৩খ, পৃ. ১৩৯; আলামগীরী, ৩থ, পৃ. ৪৬৫। ৬৬. বাহরুল মুহীত ও ফাতহুল কাদীর-এর বরাতে আলামগীরী, ৩থ, পৃ. ৪৬৫; হিদায়া, ৩২, পৃ.

১৩৯-৪০। ৬৭. হিদায়া, ৩, পৃ. ১৩৯। ৬৮. ফিকহল ইসলামী, ৬, পৃ. ৫৬৮-৯। ৬৯. ফিকহল ইসলামী, ৬খ পৃ. ৫৬৮। ৭০. ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৩। ৭১. ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৮৬। ৭২. ফিকহল ইসলামী, ৬, পৃ. ৫৮৪। ৭৩. হিদায়া, ৩, পৃ. ১৪৭, টীকা ১০। ৭৪. বাদাইউস সানাই, কিতাবুশ শাহাদাত, ৬, পৃ. ২৮১-৮২; আলামগীরী, কিতাবুশ শাহাদাত, ১১

নং বাব ৩খ। ৭৫. বাদাই, শাহাদাত, ৬খ, পৃ. ৮১-৮২; আলামগীরী, শাহাদাত, ১১ নং বাব, ৩খ। ৭৬. মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ।

৩১২

৭৭. বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ। ৭৮. হাদীসটি বিশ্বে অধিক সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত। ৭৯. বাদাইউস সানাই, কিতাব আদাবিল কাদী, ৭, পৃ. ৩। ৮০. সূরা তালাক, আয়াত নং ২। ৮১. ফিকহল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫৬৪-৬। ৮২. বুখারী, কিতাবুল শাহাদাত, বাব ৯, ফাদাইল সাহাবা, বাব ১, আযান, বাব ১০; মুসলিম,

ফাদাইপুস সাহাবা; আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ, বাব ৯; তিরমিযী, ফিতান, বাব ৪৫, শাহাদাত,

বাব ৪, মানাকিব, বাব ৫৬; ইবন মাজা, আহকাম, বাব ২৭, নং ২৩৬২। ৮৩. আবু দাউদ, কিতাবুল আকদিয়া, বাব ফী শাহাদাতিয যাওর, নং ৩৫৯৯; তিরমিযী, আবওয়াবুশ

শাহাদাত, বাব ঐ, নং ২৩১০; ইবন মাজা, কিতাবুল আহকাম, বাব ঐ, নং ২৩৭২। ৮৪. তাবঈনুল হাকাইক (শারহি কানযিদ দাকাইক), ৪খ, পৃ. ২৪১ (ফিকহল ইসলামী হইতে এখানে

উদ্ধৃত, ৬, পৃ. ৫৮২-৮৩)। ৮৫. ফিকহল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, ৬২, পৃ. ৫৮২-৮৩। ৮৬. আলমগীরী, কিতাবুস শাহাদাহ বাব ৮, ৩খ.। ৮৭. বাদাইউস সানাই, ৭, পৃ. ১০, ফাসল তাযকিয়াতুশ শুহৃদ। ৮৮. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ১০, ফাসল তাযকিয়াতুশ শুহৃদ। ৮৯. নাসাঈ, কিতাবুল কাসামা। ৯০. আলামগীরী, কিতাবুল জিয়াত, ৫ম বাব। ১১. আল-হিদায়া, কিতাবুল জিয়াত, বাবুশ শাহাদাতি ফিল কাতলি, ৪খ, পৃ. ৫৬৪; আলামগীরী,

জিয়াত, ৫ম বাব। ১২. হিদায়া, একই স্থানে। ৯৩. হিদায়া, জিনায়াত, বাবুশ শাহাদাতি ফিল কাতল, ৪খ, পৃ. ৫৬৪; আলামগীরী, জিয়াত, ৫ম বাব। ৯৪. আলমগীরী, কিতাবুল জিনায়াত, ৫ম বাব। ৯৫. আলামগীরী, কিতাবুল জিয়াত, ৫ম বাব; হিদায়া, কিতাবুল জিয়াত, বাবুশ শাহাদাতি ফিল কাতলি, ৪খ, পৃ. ৫৬৪-৫। ১৬. আলমগীরী, কিতাবুল জিয়াত, ৫ম বাব, ৬খ, পৃ. ৩১৯। ৯৭. ফিকহল ইসলামী, ৬, পৃ. ৬৪৪৪।

هي كل امارة ظاهرة تقارن شيئا خفيا فتدل عليه.

৯৮. আলমগীরী, কিতাবুর রুজু আনিশ-শাহাদাহ, ১ম বাব, ৩থ। ৯৯. বাদাইউস সানাই, কিতাবুর ॥ আনিশ-শাহাদাহু ৬খ, পৃ. ২৮২। ১০০. আলমগীরী, কিতাবুর রুজু আনিশ-শাহাদাহ ১ম বাব, ৩৩. (হিদায়া ও আল-কাফীর বরাতে)। ১০১. বাদাইউস সানাই, ৬খ, পৃ. ২৮২। ১০২, বাদাইউস সানাই, ৬, পৃ. ২৮৩ (উর্দু অনু, ৬খ, পৃ. ৬৭৭-৭৮)। ১০৩. বাদাইউস সানাই, ৬২, পৃ. ২৮৩ (উর্দু অনু, ৬২, পৃ. ৬৭২)। ১০৪. বাদাইউস সানাই, ৬, পৃ. ২৮৩ (উর্দু অনু. ৬খ, পৃ. ৬৮০-৮২)। ১০৫. আলামগীরী, রুজু আনিশ শাহাদাহ ৪র্থ বাব।

ইজারা

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *