২.০৬ গ্যানোয়া পরিবারের অন্যান্য গোষ্ঠীর গণসমূহ

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – গ্যানোয়া পরিবারের অন্যান্য গোষ্ঠীর গণসমূহ

আমেরিকা যখন প্রথম আবিষ্কৃত হয় এর বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসীদের দুটি অসম পরিবেশে দেখা যায়। প্রথম হল গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানরা, যারা ছিল পুরোপুরি উদ্যান-কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় যেসব গোষ্ঠী ছিল তারা ছিল নিউ মেক্সিকো, মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা এবং আসে অধিত্যকা অঞ্চলে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যারা ছিল তারা হল সেইসব ইণ্ডিয়ান যারা নির্ভর করত মাছ ধরা, মূল সংগ্রহ ও শিকারের ওপর। এরা ছিল কলম্বিয়া উপত্যকা, হাডসন উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল, অংশত ক্যানাডা এবং আমেরিকার আরো কিছু অঞ্চল জুড়ে। এই দুই ধারার গোষ্ঠীদের মাঝামাঝি অবস্থাতেও কিছু গোষ্ঠী ছিল, যারা ছিল অংশত উদ্যান-কৃষি এবং অংশত মাছ ধরা, মূল সংগ্রহ ও শিকারের ওপর নির্ভরশীল। এইসব নাম হল : ইরোকোয়া, নিউ ইংল্যাণ্ড, ভার্জিনিয়া ইণ্ডিয়ান, গ্রিক, চোকাটা, চেরোকি, মিনিটারি, ড্রাকোটা ও শওনি। তাদের অস্ত্র, শিল্পকলা, রীতি-প্রথা, নাচ-গান, স্থাপত্যরীতি, সরকার ব্যবস্থা এবং জীবনধারার সবই ছিল এক ধরনের এবং এ থেকে বোঝা যায় এরা এক পর্যায় ও এক মানসিক অবস্থা থেকে গড়ে উঠেছে। আমাদের প্রথম ভ্রান্তি হল আমরা যখন গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের বেশ উঁচু ধারার ভাবতে লাগলাম। আমাদের দ্বিতীয় ভ্রান্তি যারা অ-উদ্যান কৃষি ব্যবস্থায় ছিল অংশত সেই ধরনের গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের খুব নীচ মনে করা। আর তৃতীয় ভ্রান্তি, সেই পার্থক্যের কারণে আমরা যখন এদের দুই পৃথক জাতি ভাবতে শুরু করি। তাদের জীবনযাত্রার পরিবেশে বেশ কিছুটা পার্থক্য ছিল এসম্বন্ধে কোনো দ্বিধা নেই–তবে দেখা যাচ্ছে অ-উদ্যান-কৃষিভিত্তিক গোষ্ঠীরা ছিল অসভ্য পর্বের উচ্চ পর্যায়ে। এই দুই অবস্থার মধ্যবর্তীরা ছিল বর্বর পর্বের নিম্ন পর্যায়ে এবং আমেরিকান ইণ্ডিয়ানরা ছিল বর্বর পর্বের মধ্য পর্যায়ে। এদের সম্বন্ধে এতসব তথ্য পাওয়া গেছে যে এখন আর এসম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই যে এদের উৎপত্তি এক জায়গা থেকে। যদিও এই সিদ্ধান্ত সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত নয়। অবশ্য এস্কিমোরা ভিন্ন পরিবারের লোকজন।

আমার পূর্ববর্তী একটি লেখায় আমি প্রায় সত্তরটি আমেরিকান ইণ্ডিয়ানদের জ্ঞাতি পদ্ধতি সম্বন্ধে বলেছি। দেখা গেছে তারাও প্রায় একই রকম যৌথ পদ্ধতি পালন করত এবং তা একটি উৎস থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিজেদের সমগ্রভাবে গ্যানোয়া নামে অভিহিত করত। তারা বলত আমরা ‘তীর-ধনুক পরিবারের’ লোক।[১]

গ্যানোয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে গণ পদ্ধতি ছিল তার আদি পর্যায়ে। এই পরিচ্ছেদে আমরা সেইসব গণের নাম ও নিয়ম-কানুন সম্বন্ধে আলোচনা করব, কীভাবে তারা সম্পত্তি হস্তান্তরিত করত, উত্তরাধিকার নির্ণয় করত, ইত্যাদি। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাখ্যাও প্রয়োজন অনুসারে যুক্ত করা হবে। আমাদের মূল্য উদ্দেশ্য হল তাদের মাঝে গণ পদ্ধতি ছিল কি ছিল না স্থির করা। এইসব গোষ্ঠীর মধ্যে যদি গণ পদ্ধতি দেখা যায় তা হলে এদের অবস্থা মূলত। ইরোকোয়াদের মতো হবে, তাই আরো বিস্তৃত তথ্য জড়ো করার দরকার হবে না। ভিন্ন কোনো মত না থাকলে ধরে নিতে হবে লেখক ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠী বা তাদের কোনো সদস্যদের থেকে স্থির করেছেন। গোষ্ঠীসমূহের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে তাদের রক্ত সম্পর্কের জ্ঞাতি’ ধারা ধরে।

হোভনোসউনিয়া গোষ্ঠীসমূহ

ইরোকোয়া : ইরোকোয়াদের গণ সম্বন্ধে পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে।[২]

ওয়াইয়ানডোট : এই গোষ্ঠী প্রাচীন হিউরোন গোষ্ঠীর জীবিত অংশ। এদের গণ সংখ্যা আট :

১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। বিভার ৪। কচ্ছপ ৫। হরিণ ৬। সাপ ৭। শজারু ৮। শ্যেন।[৩]

এদের মধ্যে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণয় হত কিন্তু গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ। সাকেম বা বেসামরিক প্রধান অবশ্য গণের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে নির্ণীত হত। অবশ্য গণের যে কোনো সদস্য এই পদ পাবার অধিকারী ছিল। তাদের সাত জন সাকেম ছিল এবং ছিল সাত জন সেনাপতি। শোন গণ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সাকেম পদ ভায়ের কাছ থেকে যেত ভায়ের কাছে বা চাচার কাছ থেকে ভাইপোর হাতে। কিন্তু সেনাপতি হত যোগ্যতার জোরে, এখানে উত্তরাধিকার সূত্র খাটত না। সম্পত্তি ছিল গণের এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রে নির্ণীত হত। ছেলেমেয়েরা বাবার কাছ থেকে কিছু পেত না, পেত মায়ের সম্পত্তি। বিবাহিত এবং অবিবাহিত সব ছেলেমেয়েই সম্পত্তি পেত। প্রতিটি গণে তাদের গণপতি নির্বাচন এবং তাকে অপসারণের ক্ষমতা ছিল। ওয়াইয়ানডোটরা অন্তত চার শ বছর আগে ইরোকোয়াদের থেকে পৃথক হয়েছে। কিন্তু তাদের অন্তত পাঁচটি গণ হল একই নামের, যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এদের নাম কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে বা এরা নূতন নাম গ্রহণ করেছে।

এরি, নিউট্রাল নেশান, নটোওয়ে, টিউটেলো এবং সুসকেহানোক[৫] এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা একই ধারার অন্য কোনো গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। সম্ভবত এরাও গণসংগঠনে সজ্জিত ছিল, তবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

ডাকোটা গোষ্ঠীসমূহ

এই নামের আওতায় বেশ বিপুলসংখ্যক আমেরিকান আদিবাসী গোষ্ঠী পড়ে। এরা যখন আবিষ্কৃত হয় তখন বেশ কয়েকটা দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং মূল ভাষাও নানা উপভাষায়। বিভক্ত। কিন্তু তারা একই অঞ্চলে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে বসবাস করত। তারা মিসিসিপি নদীর মূল অংশ ও মিসৌরির দু পার, প্রায় হাজার মাইল বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছিল। ইরাকোয়া এবং তাদের গোষ্ঠীসমূহ এই মূল শাখা থেকে উদ্ভূত।

১। ডাকোটা বা সিও : বর্তমানে ডাকোটাদের প্রায় বারোটি স্বাধীন গোষ্ঠী সংগঠন আছে এবং তাদের গণ সংগঠন কিছুটা অবক্ষয়ের দিকে। নিশ্চয় তারা এক সময় পুরোপুরি এই গণ সংগঠনে সজ্জিত ছিল, তার বড় প্রমাণ তাদের নিকটতম জ্ঞাতি মিসৌরি গোষ্ঠীসমূহ, এরা গণ সংগঠনে সুসজ্জিত। তাদের যেসব ছোট ছোট সংগঠন আছে ঠিক গণের মতো তাদের নাম প্রাণীর নামে। ১৭৬৭ সালে তাদের মাঝে ছিলেন মিস্টার কার্ভার, তার মতে “প্রতিটি ইণ্ডিয়ান জনগোষ্ঠী ব্যাণ্ড বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এই ব্যাও বা গোষ্ঠীরা সেই জাতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়। প্রতিটি জাতির যেমন প্রতীক আছে, তেমনি সেই জাতির মধ্যেকার এই ক্ষুদ্র সম্প্রদায়গুলিরও পৃথক পৃথক প্রতীক চিহ্ন (ব্যাজ) আছে। যেমন ঈগল, চিতা, বাঘ, মোষ, ইত্যাদি। নওডাউসি (সিও) দলের তেমনি এক একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের প্রতীক পৃথক একটির প্রতীক সাপ, আর একটি কচ্ছপ, আর একটি কাঠবিড়াল, চতুর্থটি নেকড়ে, অপরটি একটি মাছ ও মোষ। প্রতিটি জাতি এই একইভাবে নিজেদের চিহ্নিত করে এবং তাদের উত্তরাধিকার সূত্র এভাবে নির্ণয় করে।”[৬] তিনি মিসিসিপির পশ্চিম ডাকোটাদের পরিদর্শন করেছিলেন। এই তথ্য থেকে আমি স্থির নিশ্চিত যে, গণ সংগঠন তখন তাদের মাঝে পূর্ণোদ্যমে বিরাজ করছিল। আমি ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে যখন পূর্ব ডাকোটা এবং ১৮৬২ সালে পশ্চিম ডাকোটা এমণ করি তখন তাদের মাঝে পরিপূর্ণ গণ সংগঠন লক্ষ করি নি। এই সময়ের মধ্যে তাদের জীবনধারার একটা বড় রকম পরিবর্তন ঘটে গেছে, তারা বাধ্য হয়ে সমতলভূমিতে নেমে যায় এবং যাযাবর অবস্থায় পৌঁছয়। গণ সংগঠনের অবলুপ্তির কারণ হয়তো এটাই।

পশ্চিমী ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে যে দু ধরনের প্রধান আছে তাও কার্ভার লক্ষ করেছেন এবং ইরোকোয়াদের বেলায় যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এদের বেলায় সেভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “প্রতিটি ব্যাণ্ডের একজন প্রধান আছে যাকে বলে প্রধান নেতা বা প্রধান সেনাপতি। যাকে তার বীরত্ব ও অভিজ্ঞতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। তিনি সামরিক বাহিনীর নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনার কাজ দেখাশোনা করেন। মোটামুটি সেনাবাহিনী সংক্রান্ত সব কাজ তাকে দেখতে হয়। কিন্তু তাকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে গণ্য করা হয় না। এই সেনাপতি ছাড়াও আর একজন প্রধান আছেন যিনি উত্তরাধিকার সূত্র অনুযায়ী নির্বাচিত হন এবং যিনি বেসামরিক ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত থাকেন। এই প্রধানের ক্ষমতা বেশি এবং যাকে বলে সাকেম। তিনি হলেন গোষ্ঠী বা জাতির প্রধান। যে কোনো চুক্তির ব্যাপারে তার থাকা প্রয়োজন।”[৭]

মিসৌরি গোষ্ঠীসমূহ

পুংকা : এই গোষ্ঠীর মোট গণসংখ্যা আট :

১। চিকচিকে ভালুক ২। জনতা ৩। হরিণ ৪। স্কুঙ্ক (এক রকম ক্ষুদ্র প্রাণী) ৫। মোষ ৬। সাপ ৭। ঔষধ ৮। বরফ।

এই গোষ্ঠীতে কিন্তু পিতৃধারায় উত্তরাধিকার নির্ণয় হয়। ছেলেমেয়েরা তাদের পিতার গণে গণ্য হয়। গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ। গণের মধ্যে সাকেম পদ ছিল সীমাবদ্ধ, তবে তা নির্বাচনের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। কোনো সাকেমের ছেলেরাও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। সম্ভবত প্রাচীন স্ত্রী ধারা থেকে এই পুরুষ ধারায় যে পরিবর্তন তা সাম্প্রতিককালের ঘটনা। কারণ ওটো গোষ্ঠী ও মিসৌরিদের আটটির মধ্যে দুটি গোষ্ঠীতে এবং মাণ্ডানদের মধ্যে এখনো স্ত্রী ধারা চলে আসছে।

ওমাহা : এই গোষ্ঠীতে মোট গণ বারোটি :

১। হরিণ ২। কালো ৩। পাখি ৪। কচ্ছপ ৫। মহিষ ৬। ভালুক ৭। ঔষধ ৮। কাও ৯। মাথা ১০। লোহিত ১১। বজ্র ১২। অনেক ঋতু।[৯]

এদের উত্তরাধিকার নির্ণয়, বংশধারা ও বিবাহ প্রথা সবই পুংকাদের মতো।

আইওয়া : অন্যদের মতোই এই গোষ্ঠীতে আছে মোট আটটি গণ :

১। নেকড়ে ২ ভালুক ৩। গরু-মহিষ ৪। হরিণ ৫। ঈগল ৬। পায়রা ৭। সাপ ৮। পেঁচা।[১০]

বিভার (পা-কুছ-থা) নামের একটা গণ এক সময় আইওয়া এবং ওটো গোষ্ঠীতে ছিল, এখন তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এদের সব রকম রীতি-প্রথা পুংকাদের মতোই।

ওটো এবং মিসৌরি : এই দুই গোষ্ঠী এক হয়ে যায় এবং এদের মোট গণসংখ্যা আট :

১। নেকড়ে ২ ভালুক ৩। গরু-মহিষ ৪। হরিণ ৫। ঈগল ৬। পায়রা ৭। সাপ ৮। পেঁচা।[১১]

এই গোষ্ঠীতে উত্তরাধিকার ধারা দ্যস্ত্রী ধারায়। ছেলেমেয়েরা মাতৃ ধারায় চিহ্নিত হয়। সাকেম পদ এবং সম্পত্তি গণ উত্তরাধিকার সূত্রে নির্ণীত এবং গণের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ।

কাওঃ এই গোষ্ঠীর মোট গণের সংখ্যা চৌদ্দ :

১। হরিণ ২। ভালুক ৩। মোষ ৪। ঈগল (সাদা) ৫। ঈগল (কালো) ৬। হাঁস ৭। ছোট হরিণ ৮। ভালুক-চামড়া ৯। প্রেইরি নেকড়ে ১০। কচ্ছপ ১১। ভূমি ১২। হরিণ-লেজ ১৩। তাঁবু ১৪। বজ্র।[১২]

কাও-রা আমেরিকান আদিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে হিংস্র। তবে এরা বুদ্ধিমান এবং মজার লোক। এদের রীতি-প্রধা সবই পুংকাদের মতো। এখানে একটা জিনিস লক্ষ করার মতো, দুটি ঈগল এবং দুটি হরিণ গণ আছে। এ থেকে বোঝা যায় একটি গণ কীভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। ঈগলরা পৃথক হয়ে গিয়ে সাদা আর কালো এই চিহ্ন দিয়ে নিজেদের পার্থক্য বজায় রেখেছে। আমি ১৮৫৯ ও ১৮৬০ সালে যখন মিসৌরি গোষ্ঠীসমূহ পরিদর্শন করি ওসাগা ও কুয়াপ্লাদের খোঁজ নিতে পারি নি। যে আটটি গণের নাম করা হল তারা ডাকোটাদের ভাষার সাথে অন্বিত আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তা ছাড়া ওসাগা আর কুয়াল্লারা যে গণ সংগঠনে সজ্জিত ছিল তা সহজে অনুমান করা যায়। ১৮৬৯ সালে দেখা গেছে কাওদের জনসংখ্যা কমতে কমতে সাত শ’য় এসে দাঁড়িয়েছে। গড়ে তাদের একটি গণে লোকসংখ্যা ছিল পঞ্চাশ। এসব গোষ্ঠীর আদিবাসভূমি হল মিসৌরি ও তার শাখা-নদীর আশপাশে-বড় সিও নদীর মোহনা থেকে মিসিসিপি এবং মিসিসিপির পশ্চিম তীর থেকে আরকানসাস নদী পর্যন্ত।

উইনেবাগো : এই গোষ্ঠী যখন আবিষ্কৃত হয় তারা ঐ নামের হ্রদের তীরে উইসকনসিন-এ বসবাস করত। এরা ডাকোটাদের একটা শাখা। এরা ইরোকোয়াদের পাশ থেকে পূর্বে সেন্টলরেন্স উপত্যকা পর্যন্ত এগিয়ে যায় এবং এ্যালগোনকিন গোষ্ঠীর পাশে হিউরন ও সুপেরিয়র হ্রদের পাশে গিয়ে থামে। এদের সবচেয়ে কাছের যে জাতি গোষ্ঠী তারা হল মিসৌরি। এদের মোট গণসংখ্যা আট :

১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। মোষ ৪। ঈগল ৫। হোট হরিণ ৬। হরিণ ৭। সাপ ৮। বজ্র। [১৩]

তাদের রীতি-প্রথা সবই পুংকাদের মতো। খুব মজার ব্যাপার হল এদের অনেকগুলো গোষ্ঠী স্ত্রী ধারা থেকে পুরুষ ধারায় উত্তরাধিকার সূত্র নির্ণয় করতে শুরু করেছে। কারণ প্রথম যখন এদের খোঁজ পাওয়া যায়, তখন এদের মধ্যে সম্পত্তি ধারণা তেমন পরিপক্ব হয় নি বা এই ধারণার সৃষ্টি থেকে সামান্যমাত্র ঊর্ধ্বে উঠেছিল বা খুব জোর গ্রিক ও রোমানদের মধ্যে যতটুকু সম্পত্তির ধারণা ততটুকু এগিয়েছিল। মনে হয় এটাই এই পরিবর্তনের কারণ। সম্ভবত এই ব্যাপারটা ঘটেছে ইদানীং এবং তা আমেরিকান ও মিশনারিদের প্রভাবে। কার্ভার ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে উইনেবাগোদের মধ্যে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকারের ধারা দেখেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “কিছু জাতি উত্তরাধিকার ধারা স্ত্রী ধারায় নির্দিষ্ট রাখে। কোনো গণপতি মারা গেলে তার নিজের ছেলের বদলে তার বোনের ছেলেকে অধিষ্ঠিত করা হয়। আর তার যদি বোন না থাকে তা হলে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ যে স্ত্রীলোক সে উত্তরাধিকারী হয়। এ থেকে দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা উইনেবাগোদের দলপতি হতে পারে। তাদের নিয়ম-কানুন জানার আগে ব্যাপারটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে।”[১৪] ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে উইনেবাগোদের জনসংখ্যা ছিল চৌদ্দ শ, গড়ে একটি গণে দেড় শ লোক।

উপর মিসৌরী গোষ্ঠীসমূহ

১। মাণ্ডান : এই গোষ্ঠী বুদ্ধিমত্তা ও জীবনযাত্রার জিনিসপত্রে ছিল সবচেয়ে অগ্রসর। সম্ভবত এ ব্যাপারে তারা মিনিটারিদের নিকট ঋণী। তাদের মোট গণসংখ্যা সাত :

১। নেকড়ে ২ ভালুক ৩। প্রেইরি মুরগিছানা ৪। ভালো চাকু ৫। ঈগল ৬। চ্যাপটা মাথা ৭। উঁচু গ্রাম।[১৫]

উত্তরাধিকার সূত্র ছিল স্ত্রী ধারায়। গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ। মাওানদের মধ্যে স্ত্রী ধারা, অথচ তাদের অন্যান্য জ্ঞাতি-গোষ্ঠীরা ছিল পুরুষ ধারায়। এ থেকে বোঝা যায় তারা আদিম অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থা থেকে অন্যান্যরা মাত্র অল্পদিন হল পরিবর্তিত হয়েছে। এ থেকে মনে হয় সমগ্র ডাকোটা গোষ্ঠীতে ছিল স্ত্রী ধারা। মাণ্ডানদের সম্বন্ধে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে ১৮৬২ সালে মাণ্ডান গ্রাম ও উপর মিসৌরির জোসেফ কিপ-এর কাছ থেকে। যার মা একজন মাণ্ডান মহিলা। তিনি ব্যাপারটার সত্যতা সম্বন্ধে জানান যে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণীত হয়। তিনি জানান তার নাম তার মায়ের গণের নাম অনুযায়ী রাখা হয়েছে এবং যা তার নিজের গুণও।

মিনিটারি : এই গোষ্ঠী, উপসরোকা ও ক্রো এরা সবাই মূল এক জনগোষ্ঠীর উপবিভাগ। এরা গ্যানোয়া পরিবারের অংশ কি না এ সম্বন্ধে যথেষ্ট সন্দেহ আছে, যদিও তাদের ভাষায় অনেক শব্দ মিসৌরি ও ডাকোটাদের ভাষার সাথে মিল, তাই ভাষাগত দিক থেকে এদের এক গোষ্ঠী বলে ধরা হয়। এদের প্রাচীন তথ্য তেমন বেশি পাওয়া যায় নি। মিনিটারিরা উদ্যান-কৃষি করত, তারা কাঠের তৈরি বাড়ি করত এবং তাদের ধর্ম এক অদ্ভুত ধরনের যা তারা মাপ্তানদের শিখিয়েছে। এদের মোট গণসংখ্যা সাত :

১। ছুরি ২। জল ৩। কুটীর ৪। প্রেইরি মুরগিছানা ৫। পাহাড়ি ৬। অজানা প্রাণী ৭। ঘোমটা। ১৬

এই গণসমূহে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণীত হয়, গণের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ, সম্পত্তি গণের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং সেই সাথে নির্দিষ্ট ছিল সাকেম পদ। মিনিটারি এবং মাওানরা বর্তমানে একই গ্রামে একসাথে বসবাস করে। উত্তর আমেরিকার আর কোনো অঞ্চলে এদের মতো সুন্দর লাল মানুষ দেখা যায় না।

আপসারোকা বা ক্রো : এই গোষ্ঠীর গণসমূহ নিম্নরূপ :

১। প্রেইরি কুকুর ২। খারাপ কাঠের পা ৩। স্কুঙ্ক (এক প্রকার প্রাণী৪। বিশ্বাসঘাতক বাড়ি ৫। হারানো বাড়িগুলো ৬। অসদ সম্মান ৭। কসাই ৮। চলন্ত বাড়ি ৯। ভালুকথাবা পর্বত ১০। কালোপা বাড়ি ১১। মৎস্যধারী ১২। এ্যাণ্ডিলোপ ১৩। দাঁড়কাক।[১৭]

এদের সবকিছুই মিনিটারিদের মতো। ক্রো-র বেশ কিছু গণের নাম বেশ অস্বাভাবিক, তাই মনে হয় ওগুলো ব্যাও বা দল, গণ নয়, কিন্তু ওদের উত্তরাধিকার নির্ণয়, বিবাহ প্রথা ও আইন-কানুন দেখে পরিষ্কার বোঝা যায় এরা গণ সংগঠন। ক্রো গোষ্ঠীর তথ্য নেবার সময় আমার দোভাষী ছিলেন রবার্ট মেলড্রাম। তিনি আমেরিকান ফার কোম্পানির একজন কর্তা ব্যক্তি ছিলেন–যিনি ক্রোদের মধ্যে চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন এবং তিনি ছিলেন এদের অন্যতম গোষ্ঠীপ্রধান। তিনি এদের ভাষা এত ভালোভাবে রপ্ত করেছিলেন যে এই ভাষায় মনে হয় স্বপ্নও দেখতেন। তিনি এদের সম্পত্তির হস্তান্তরিত হবার প্রথা সম্বন্ধে আমাকে জানিয়েছিলেন। যদি কোনো জিনিস কেউ কাউকে উপঢৌকন হিসেবে দেয় এবং যদি সেই ব্যক্তি জিনিস রেখে মারা যায় এবং যিনি উপঢৌকন দিয়েছিলেন তিনিও যদি মারা যান তা হলে এই জিনিসটা উপটৌকন দানকারীর গণের মধ্যে ফেরত যাবে। কোনো স্ত্রীলোকের সম্পত্তি তার মৃত্যুর পর যায় তার ছেলেমেয়েদের কাছে, কিন্তু তার স্বামীর সম্পত্তি যাবে তার জ্ঞাতি-ভাইদের কাছে। যদি কোনো লোক কোনো বন্ধুকে কোনো জিনিস দিয়ে মারা যায়। তা হলে বন্ধুটি শোক প্রকাশের বিশিষ্ট ধারা অনুযায়ী তার আঙুলের গাঁট কেটে ফেলবে অথবা যে সম্পদ সে বন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছিল তা বন্ধুর গণে ফেরত দেবে।[১৮]

ক্রো গোষ্ঠীর বিয়ের একটা বিশিষ্ট প্রথা আছে যা আমি আরো প্রায় চল্লিশটি ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীর মধ্যে দেখেছি, তা এখানে বলা দরকার কারণ আগামী পরিচ্ছেদে এর কিছুটা প্রয়োজন দেখা যাবে। যদি কোনো লোক কোনো পরিবারের বড় মেয়েকে বিয়ে করে তা হলে স্ত্রীর বাকি ছোট বোনদেরও স্ত্রী হিসেবে পাবে। অবশ্য তাদের বয়সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই অধিকার সে না-ও খাটাতে পারে, কিন্তু যদি সে গোঁ ধরে তার গণ এই অধিকার মেনে নেবে। সাধারণভাবে আমেরিকান আদিবাসীদের মধ্যে পুরুষের বহুবিবাহ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু অসচ্ছলতার দরুন একাধিক স্ত্রী রাখা খুব একটা সম্ভব ছিল না। আগে যে প্রথার কথা বললাম তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিলেন মেলড্রামের স্ত্রী। তার বয়স এখন পঁচিশ। তিনি যখন পাঁচ বছর বয়সের ছিলেন তখন ব্ল্যাকফিট অঞ্চলে একটা আক্রমণ সংঘটিত হয় এবং তিনি বন্দী হন। মেলড্রাম তার শাশুড়িকে এই মেয়েকে তাদের গণে এবং তাদের পরিবারে পালন করতে বলে। ফলে এই মেয়ে তার স্ত্রীর বোন হিসেবে গণ্য হয় এবং তার ওপর স্ত্রীর অধিকার লাভ করেন। নিজের অধিকার স্থাপন করার জন্য গোষ্ঠীর এই প্রথাকে তিনি কাজে লাগান। মানব ইতিহাসে এই প্রথা প্রাচীন যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটা পুনালুয়া বিবাহ পদ্ধতির টিকে থাকা রূপ।

উপসাগরীয় গোষ্ঠীসমূহ

১। মাসকোকি বা ক্রীক; ক্রীক মিত্রসংঘে মোট গোষ্ঠী সংখ্যা ছয়। ক্ৰীক, হিচহেট, ইয়ুচি, আলাবামা, কুসাটি ও নাশ–এরা সবাই একই ভাষার উপভাষায় কথা বলে। এদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম নাশ গোষ্ঠী। ফরাসিরা এদের বিতাড়িত করলে এরা মিত্রসংঘে যোগ দেয়।

ক্রীকদের মোট গণসংখ্যা বাইশ : ১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। স্কুঙ্ক (এক ধরনের প্রাণী) ৪। সরীসৃপ ৫। হরিণ ৬। পাখি ৭। বাঘ ৮। বাতাস ৯। কুনোব্যাঙ ১০। উই ১১। শেয়াল ১২। ছোট ভালুক ১৩। মাছ ১৪। শস্য ১৫। আলু ১৬। বাক্স-বাদাম ১৭। নুন ১৮। বনবিড়াল ১৯। (চিহ্ন নষ্ট হয়ে গেছে। ২০। (চিহ্ন নষ্ট হয়ে গেছে)[১৯] ২১। (চিহ্ন নষ্ট হয়ে গেছে) ২২। (চিহ্ন নষ্ট হয়ে গেছে) [২০]

বাকি গোষ্ঠীদের ও গণ সংগঠন ছিল। এই ব্যাপারে লেখককে তথ্য দান করেন রেভারেণ্ড এস. এম. লাফরিজ। তিনি অনেক বছর ক্রীকদের মধ্যে ধর্ম প্রচারকের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। উপরে যেসব গণের নাম দেওয়া হল তা তার কাছ থেকে পাওয়া। তিনি আরো জানিয়েছেন কীকদের মধ্যে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণীত হত। গণের মধ্যে বিয়ে ছিল নিষিদ্ধ। বর্তমানে ক্রীকদের এক অংশ সভ্য হয়ে গেছে এবং তাদের জীবনধারা গেছে। পাল্টে। তারা তাদের প্রাচীন সামাজিক পদ্ধতির জায়গায় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছে, হয়তো অল্প দিনের মধ্যে প্রাচীন প্রতিষ্ঠানসমূহের চিহ্ন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ১৮৬৯ সালে তাদের জনসংখ্যা হল প্রায় পনের হাজার, গড়ে প্রতি গণে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ লোক।

চোকটা; চোকটাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সংগঠন স্পষ্ট। প্রতিটি ভ্রাতৃত্বের নাম আছে এবং তারা ভ্রাতৃত্ব সংগঠন হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। আগের যেসব ভ্রাতৃত্বের নাম করা। হয়েছে নিঃসন্দেহে তাদের মাঝেও গণ সংগঠন ছিল, তবে এই ব্যাপারটা নিয়ে ভালো করে গবেষণা চালানো হয় নি। ক্রীক গোষ্ঠীর মোট গণসংখ্যা আট এবং তাদের ভ্রাতৃত্ব সংগঠন। দুটি, একটিতে চারটি করে গণ–অনেকটা ইরোকোয়াদের মতো।

। বিভক্ত-জন (প্রথম ভ্রাতৃত্ব)।

১। পাতিঘাস ২। ওকলা আইন ৩। লুলাক ৪। লিনোনকুশা।

। প্রিয়জন (দ্বিতীয় ভ্রাতৃত্ব)

১। প্রিয়জন ২। ক্ষুদ্রজনতা ৩। বৃহজনতা ৪। ক্রে মাছ।[২১]

একই ভ্রাতৃত্বের গণদের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু যে কোনো ভ্রাতৃত্বের প্রথম দুটি গণ পরবর্তী ভ্রাতৃত্বের দ্বিতীয় গণে বিয়ে করতে পারে। এ থেকে মনে হয় ইরোকোয়াদের মতো তারাও প্রথমে দুটি গণ ছিল এবং পরে চার ভাগে বিভক্ত হয়েছে এবং গণের মধ্যে বিবাহের বাধাই এই বিভাগের কারণ। চোকটাদের মধ্যে স্ত্রী ধারা বিদ্যমান। ১৮৬৯ সালে তাদের মোট জনসংখ্যা বারো হাজার এবং গড়ে একটি গণে পনের শ লোক ছিল। আগামীতে যেসব তথ্যের উল্লেখ করা হবে তা লেখককে জানিয়েছেন ড, সাইরাস বাইংটন, তিনি ১৮২০ সালে এই গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মপ্রচারের জন্য যান। তখন এই গোষ্ঠীর লোকেরা মিসিসিপির পূর্বপারে তাদের প্রাচীন বাসভূমিতে বসবাস করত। এরা যেখানে যেত তিনি এদের সাথে সাথে যেতেন। ১৮৬৮ সালে এই কাজ করতে করতেই তিনি মারা যান। তিনি অত্যন্ত সৎ লোক ছিলেন এবং যেতথ্য আমাদের দিয়ে গেছেন তা অত্যন্ত মূল্যবান। তাই আমরা সবাই তার কাছে ঋণী।

একবার জনৈক চোকটা ড. বাইংটনকে জানায় যে তার ইচ্ছা সে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে, কেননা তা হলে তার ছেলেমেয়েরা তার সম্পত্তি পাবে, না হয় পুরোনো রীতি অনুযায়ী তার সম্পত্তি পাবে জ্ঞাতি-গোষ্ঠীরা। রীতি অনুযায়ী তার মৃত্যুর পর সম্পত্তি পাবে তার ভাই, বোন এবং বোনের ছেলেমেয়েরা। অবশ্য তার জীবিতকালে সে তার সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের দিয়ে যেতে পারত, তা হলে তার জ্ঞাতিরা আর কোনো অধিকার খাটাতে পারবে না। অনেক ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীতেই দেখা যাচ্ছে অনেকের বেশ সম্পত্তি আছে, গরু ছাগল, জমি-জায়গা, বাড়ি এবং এখন তারা জীবিতকালেই ছেলেমেয়েদের দান করে যেতে শুরু করেছে। ফলে জ্ঞাতিদের এড়িয়ে যেতে পারছে। যত সম্পত্তি বাড়ছে তত জ্ঞাতিদের দেবার মনোবাসনা কমে যাচ্ছে। আর কিছু গোষ্ঠীতে বিশেষ করে চোকটাদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে পুরোনো প্রথা বন্ধ হয়ে গেছে এবং এখন কেউ মারা গেলে শুধু তার ছেলেমেয়েরা সম্পত্তি পাচ্ছে। এই পদ্ধতি সম্ভব হয়েছে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে। আগের মতো গণ সংগঠনগত ব্যবস্থার বদলে এখন শাসকদের পরিষদ নির্বাচিত হয়। আগের প্রথা অনুযায়ী স্ত্রী বা স্বামী কেউ কারো সম্পত্তি পেত না। বরং স্ত্রীর সম্পত্তি পেত তার ছেলেমেয়েরা বা ছেলেমেয়ে না থাকলে পেত তার বোনেরা।

চিকাসা; আগের মতোই আমরা দেখতে পাচ্ছি চিকাসারা ভ্রাতৃত্ব সংগঠনে সজ্জিত। প্রথম ভ্রাতৃত্বে চারটি গণ, দ্বিতীয় ভ্রাতৃত্বে আটটি গণ :

। চিতাবাঘ ভ্রাতৃত্ব

১। বনবিড়াল ২। পাখি ৩। মাছ ৪। হরিণ।

। স্প্যানিশ ভ্রাতৃত্ব

১। ভালুক ২। স্প্যানিশ ৩। রাজকীয় ৪। হাস-কোনি ৫। কাঠবিড়াল ৬। সরীসৃপ ৭। নেকড়ে ৮। কালোপাখি।[২২]

এদের মধ্যে স্ত্রীধারায় সবকিছু নির্ধারিত হত। গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ। সাকেম পদ গণের মধ্য থেকে নির্বাচিত হত। উপযুক্ত সব তথ্য পাওয়া গেছে রেভারেণ্ড চার্লস সি কপল্যাণ্ডের কাছ থেকে। তিনি একজন আমেরিকান ধর্মপ্রচারক এবং এই গোষ্ঠীর সাথে বসবাস করতেন। ১৮৬৯ সালে এদের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার। গড়ে প্রতি গণে প্রায় চার শ লোক। মনে হয় স্পেনীয়দের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ফলে একটি নূতন গণের। সৃষ্টি হয় বা এই নাম অন্য কোনো নামের বদলে গ্রহণ করা হয়েছে। একটি ভ্রাতৃত্বের নামও স্প্যানিশ।

চিরোকি : প্রাচীনকালে এই গোষ্ঠীর দশটি গণ ছিল। এদের মধ্যে দুটি গণ নষ্ট হয়ে গেছে, ওকফল ও পাখি। বাকি আটটি গণের নাম হল :

১। নেকড়ে ২। লাল ছোপ ৩। দীর্ঘ প্রেইরি ৪। কালা (এক ধরনের পাখি ৫। পবিত্র ৬। হরিণ ৭। নীল ৮। লম্বা চুল।[২৩]

এদের মধ্যে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্মীত হত এবং গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ। ১৮৬৯ সালে চিরোকিদের মোট জনসংখ্যা ছিল চৌদ্দ হাজার, গড়ে প্রতি গণে ছিল সাড়ে সতের শ’। একটি গণে এটাই মনে হয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যা। এক ভাষায় কথা বলে এদিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিরোকি ও ওজিবওয়ারা সংখ্যার দিক থেকে সর্বাধিক। এক ভাষায় কথা বলে এমন এক লক্ষ জনসংখ্যার গোষ্ঠী সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় ছিল না। লোকসংখ্যার দিক থেকে বড় ছিল আজটেক, টেকুকান ও টলাস্কালানরা। স্পেনীয় বিজয়ের সময় এত বিরাট জনসংখ্যা কেমন করে ছিল তা বুঝে ওঠা মুশকিল। ক্রীক আর চিরোকিদের অস্বাভাবিক জনসংখ্যার কারণ গৃহপালিত পশু ও ক্ষেত্ৰ-কৃষি। অংশত তারা সভ্য। তারা তাদের পূর্বের গণ সংগঠনের জায়গায় সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা স্থাপন করেছে, যার ফলে তাদের পূর্বের গণ সংগঠন দ্রুত অবক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে।

সেমিনোল : এই গোষ্ঠী ক্রীকদের উত্তরপুরুষ। জানা গেছে তারা গণ সংগঠনে সংগঠিত ছিল, কিন্তু তাদের গণের সঠিক তথ্য মেলে নি।

৪–পওনি গোষ্ঠীসমূহ

পওনিরা যে গণ সংগঠনে বিন্যস্ত ছিল তা স্থির নির্দিষ্ট করা যায় নি। রেভারেণ্ড স্যামুয়েল এ্যালিস লেখককে জানান যে তাদের মধ্যে গণ সংগঠন ছিল, তবে তিনি ব্যাপারটি ভালোভাবে অনুসন্ধান করেন নি। তার বিশ্বাস এদের যে গণ ছিল তা নিম্নরূপ :

১। ভালুক ২। বিভার। ৩। ঈগল ৪। মোষ ৫। হরিণ ৬। পেঁচা।

মিনিটারিদের কাছে আমি একবার একদল পওনিদের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম কিন্তু দোভাষীর অভাবে খবর নেওয়া সম্ভব হয় নি।

মিনিটারিদের কাছেই আরিকারিদের গ্রাম, এরা পওনিদের সবচেয়ে নিকট জ্ঞাতি, কিন্তু এদের ব্যাপারেও সেই একই বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই গোষ্ঠীসমূহ এবং হিউকো। গোষ্ঠী ও আরো দু-তিনটি ছোট গোষ্ঠী ক্যানাডা নদীর পারে মিসৌরিদের পশ্চিমে বসবাস করত। এরা একটি ভিন্ন ভাষাভাষী গোষ্ঠী। যদি পওনিরা গণ সংগঠনে সংগঠিত হয়ে থাকে ধরে নেওয়া যায় এই গোষ্ঠীরাও ছিল তেমনি।

এ্যালগোর্কিন গোষ্ঠীসমূহ

এই আদিবাসীরা যখন আবিষ্কৃত এরা ছিল রকি পর্বতমালা থেকে হাডসন উপসাগর পর্যন্ত–সিসকাচিউনের দক্ষিণে এবং পুব দিকে আটলান্টিক পর্যন্ত। সুপেরিয়র হ্রদের দুই তীর এবং চ্যাম্পলিন হ্রদের নিচে সেন্ট লরেন্সের দুই তীর পর্যন্ত। দক্ষিণ দিকে আটলান্টিক উপকূল ধরে উত্তর ক্যারোলিনা পর্যন্ত এবং নিচে মিসিসিপির পশ্চিম তীর ধরে উইসকনসিন ও ইলিনয় থেকে কেনটুকি পর্যন্ত। এই বিশাল অঞ্চলের পুব দিকে তাদের একমাত্র প্রতিযোগী ছিল ইরাকোয়া গোষ্ঠী।

গিশিগামি[২৪] গোষ্ঠীসমূহ

ওজিবওয়া : এরা একই উপভাষায় কথা বলে এবং ছিল গণ সংগঠনে সজ্জিত। মোট গণের যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে তেইশটি গণ সম্বন্ধে জানা গেছে, আরো গণ ছিল কি না সঠিক হওয়া যায় নি। টোটেম শব্দের ওজিবওয়া উচ্চারণ ডোডেইম, যা গণেরই প্রতীক। এভাবে দেখা যাচ্ছে নেকড়ে চিহ্ন নেকড়ে গণের টোটেম। এ থেকেই মি. স্কুলক্র্যাক্ট বলেছেন, “টোটেমীয় পদ্ধতি” যা আসলে গণ সগঠনকেই প্রকাশ করেছে। এই মন্তব্য স্বীকার। করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কারণ এই পদ্ধতি ঐতিহাসিকভাবে সত্য। তাই সহজেই এর ব্যবহার করা যায়।

ওজিবওয়া গোষ্ঠীর গণসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হল :

১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। বিভার ৪। কচ্ছপ (কাদা) ৫। কচ্ছপ (কামড়ান। ৬। কচ্ছপ (ছোট) ৭। হরিণ ৮। কাঠঠোকরা ৯। সারস ১০। পায়রা শিকরা ১১। নেড়া ঈগল ১২। পানকৌড়ি ১৩। হাঁস ১৪। হাঁস ১৫। সাপ ১৬। ছুঁচো ১৭। মার্টেন (এক প্রকার প্রাণী) ১৮। সারস ১৯। ষণ্ড-মস্তক ২০। কার্প (মাছ)। ২১। মাগুর মাছ ২২। স্টার্জন (মাছ) ২৩। বল্লম।২৫

পুরুষ ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণীত হয়। ছেলেমেয়েরা বাবার গণের সদস্য। বেশ কিছু কারণে মনে হয় এরা মূলত স্ত্রী ধারায় ছিল। তাদের পুরুষ ধারায় পরিবর্তন ইদানীংকার। কারণ এদের পূর্বপুরুষ দেলাওয়ার, যাদের এরা “দাদামশায়” বলে তাদের মধ্যে স্ত্রী ধারা প্রচলিত। অন্য বেশকিছু এ্যালগোনকিনদেরও আছে স্ত্রী ধারা। দ্বিতীয়ত তথ্য পাওয়া গেছে। যে তাদের দুই-তিন প্রজন্ম আগে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণয় হত, বিশেষ করে প্রধান২৬ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। তৃতীয়ত আমেরিকান ধর্মপ্রচারকদের প্রভাবও তাদের পূর্ববর্তী ধারার প্রতি বিরোধিতা করে। বেশ কিছু ওজিবওয়া গোষ্ঠীতে এইসব ধর্মপ্রচারকের কথা ধরে স্ত্রী ধারা পুরুষ ধারায় পরিবর্তিত হয়। তা ছাড়া কিছু এ্যালগোনকিন গোষ্ঠীতে যখন স্ত্রী ধারা আছে তখন ধরে নেওয়া যায় প্রাচীনকালে স্ত্রী ধারা ছিল সর্বজনীন ধারা।।

গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ এবং সম্পত্তি ও প্রধান পদ নির্ধারিত হত উত্তরাধিকার সূত্রে। বর্তমানে অবশ্য ছেলেমেয়েরা সবকিছু পায়, জ্ঞাতি-গোষ্ঠীরা কিছু পায় না। মায়ের সম্পত্তি পায় ছেলেমেয়েরা। ছেলেমেয়ে না থাকলে তার আপন বোন বা জ্ঞাতিবোনেরা পায়। তেমনি বাপের পর ছেলে সাকেম পদ পেতে পারে। কিন্তু যেখানে একাধিক সন্তান সেখানে নির্বাচনের নীতি মেনে তা করা হয়। গণবাসীরা শুধু নির্বাচিত করে না বহিষ্কারের ক্ষমতাও রাখে। বর্তমান ওজিবওয়ার জনসংখ্যা ষোল হাজার, গড়ে প্রতি গণে প্রায় সাত শ লোক।

পটাওয়াটটামি : এই গোষ্ঠীতে আছে পনেরটি গণ :

১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। বিভার ৪। হরিণ ৫। পানকৌড়ি ৬। ঈগল ৭। স্টার্জন (মাছ) ৮। কার্প (মাছ) ৯। নেড়া ঈগল ১০। বজ্র ১১। খরগোশ২৭ ১২। কাক ১৩। শেয়াল ১৪। টার্কি ১৫। কালো শ্যেন।

ওটাওয়া : ওজিবওয়া, ওটাওয়া ও পটাওয়াটটামি এরা একটি মূল গোষ্ঠী থেকে সৃষ্ট। যখন এদের সম্বন্ধে প্রথম জানা যায় এরা ছিল মিত্রসংঘে সংগঠিত। ওটাওয়ারাও নিঃসন্দেহে গণ সংগঠনে সজ্জিত ছিল, তবে তাদের নাম সংগ্রহ করা যায় নি।

ক্রীক : এই গোষ্ঠী যখন আবিষ্কৃত হয় সুপেরিয়র হ্রদের উত্তর-পশ্চিম তীর থেকে শুরু করে হাডসন উপসাগর পর্যন্ত এবং পশ্চিমে রেড নদীর উত্তর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পরবর্তী যুগে তারা সিসকাচিউনদের অঞ্চল দখল করে এবং এর দক্ষিণ অঞ্চলও দখলে আনে। ডাকোটাদের মতো তাদের গণ সংগঠন নষ্ট হয়ে গেছে, তবে ধরে নেওয়া যায় তারা এক সময় এই সংগঠনে সজ্জিত ছিল। ভাষাগত দিক থেকে তারা ওজিবওয়াদের খুব কাছাকাছি। শুধু ভাষা নয় এরা ওজিবওয়াদের রীতি-প্রথারও খুব কাছাকাছি।

মিসিসিপি গোষ্ঠীসমূহ : পশ্চিম এ্যালগোনকিনরা এই নামে দলবদ্ধ হয়। এরা মিসিসিপির পূর্ব তীরে উইসকনসিন ও ইলিনয় এবং দক্ষিণে কেনটুকি এবং পশ্চিমে ইণ্ডিয়ানা পর্যন্ত দখল করে বসবাস করছে।

মায়ামি; মায়ামিদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ জ্ঞাতি হল উইয়া, পিয়ানকেশ, পিওরিয়া এবং কাসকাসকিয়া। যৌথভাবে এদের নাম ছিল ইলিনয়। এরা বর্তমানে সংখ্যায় খুব অল্প। তা ছাড়া তারা প্রাচীন রীতি-প্রথাও পরিত্যাগ করেছে কারণ তারা এখন পরিপূর্ণ স্থায়ী কৃষি-ব্যবস্থার মাধ্যমে বসবাস করছে। এরা গণ সংগঠনে সজ্জিত ছিল কি না তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায় নি, তবে ধরে নেওয়া যায় এদের মধ্যেও তা ছিল। মায়ামিদের গণ সংখ্যা দশ।

১। নেকড়ে ২। পানকৌড়ি ৩। ঈগল ৪। শ্যেন ৫। চিতাবাঘ ৬। টার্কি ৭। ভালুক ৮। বরফ ৯। সূর্য ১০। জল।[২৮]

তাদের পরিবেশের পরিবর্তন ও সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় তাদের গণ সংগঠন দ্রুত অবলুপ্ত হচ্ছে। যখন অবলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় উত্তরাধিকার ধারা ছিল পুরুষ ধারায়। গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ এবং সাকেম পদ ও সম্পত্তি গণের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে নির্ণীত হত।

শওনিঃ এ্যালগোনকিন পরিবারের এরা অন্যতম উন্নত গোষ্ঠী। এদের রাজনৈতিক সংগঠন চালু হলেও এরা প্রাচীন গণ সংগঠন এখনো টিকিয়ে রেখেছে। এদের প্রথম এবং দ্বিতীয় ধারার গণপতি ছিল এবং ছিল একটি পরিষদ, যার সদস্যরা বছরে একবার করে নির্বাচিত হত এবং তা হত জনপ্রিয়তার জোরে। তারা এখনো গণ জ্ঞাতিত্ব মেনে আসছে। তাদের মোট গণ সংখ্যা তের :

১। নেকড়ে ২। পানকৌড়ি ৩। ভালুক ৪। শ্যেন ৫। চিতাবাঘ ৬। পেঁচা ৭। টার্কি ৮। হরিণ ৯। ছোট ভালুক ১০। কচ্ছপ ১১। সাপ ১২। ঘোড়া ১৩। খরগোশ। [২৯]

এদের গণ রীতি-প্রথা প্রায় মায়ামিদের মতো। ১৮৬৯ সালে এদের জনসংখ্যা ছিল সাত শ’র মতো, গড়ে প্রতি গণে পঞ্চাশ জন। এক সময় তাদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় তিন-চার হাজার যা যে কোনো আমেরিকান ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীর গড় লোকসংখ্যার চেয়ে বেশি।

শনিদের মধ্যে একটা প্রথা প্রচলিত যা মায়ামি, সাউক, ফক্সদের মধ্যে এক, ছেলেমেয়ের নাম মায়ের গণে, বাবার গণে বা অন্য কোনো গণেও হতে পারে। অন্য গণের ক্ষেত্রে অবশ্য সীমাবদ্ধতা আছে। ব্যাপারটা একটু লক্ষ করার মতো। আগেই দেখানো হয়েছে ইরোকোয়াদের বিভিন্ন গণের বিশেষ বিশেষ নাম আছে যা অন্য গগের লোকেরা ব্যবহার করতে পারে না।৩০ এই রীতি ছিল সর্বজনীন। শনিদের মধ্যে গণ নাম ব্যক্তির নামের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যক্তির গণের পরিচয় দিত। সব জায়গায় দেখা গেছে সাকেম গণের লোক হতে বাধ্য। যাতে সবাই তাকে মানে। সম্ভবত এদের মধ্যে স্ত্রী ধারা থেকে পুরুষ ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণয় ঘটে। প্রথমে সন্তানকে তার পিতার উত্তরাধিকার করা, দ্বিতীয়ত তার সম্পত্তি যাতে সন্তানেরা পায় তা নির্দিষ্ট করা। কোনো সন্তান যদি তার বাবার গণের নাম পায় তাতে সে পিতৃধারা ও উত্তরাধিকার ক্ষমতা পায়, কিন্তু তা নির্বাচন নীতির কাছে শর্তাধীন। এই ব্যাপারে বাবার কোনো ক্ষমতা নেই। গণ বিশেষ করে কিছু লোকের ওপর নামানুকরণক্ষমতা অর্পণ করে রাখে, আর তাদের বেশির ভাগই হল বয়স্কা মহিলার দল। শনি গণের মধ্যে নিশ্চয় এই ব্যবস্থা ছিল যে এরা নাম দেবার পর গণসমূহের কাছে তা বলা হত এবং সেইভাবে একজনকে গণভুক্ত করা হত। যে গণের নাম দেওয়া হয় সেই গণের সদস্যভুক্তি করা হয়।

শনিদের মধ্যে উত্তরাধিকার নির্ণয়ের প্রাচীন সব নিয়ম-কানুন দেখা যায়। এই ব্যাপারে একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। লেখককে তারা জানায় যে নেকড়ে গণের এক সাকেম মরার সময় তার একটা শেষ বাসনা জানায়, বাসনা হল যে তার মৃত্যুর পর তার নিজের ছেলের জায়গায় তার এক বোনের ছেলে যেন স্থলাভিষিক্ত হয়। কিন্তু তার ভাগনা হল মাছ গণের এবং তার ছেলে খরগোশ গণের লোক, তাই দুজনের কেউ এই পদ পেতে পারে না। এটা করতে গেলে আগে তাদের নাম পাল্টাতে হবে এবং নেকড়ে গণের নাম গ্রহণ করতে হবে। কারণ নেকড়ে গণে সাকেম পদ গণ উত্তরাধিকার সূত্রে নির্ণীত হয়। সাকেমের শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করা দরকার, তাই তার মৃত্যুর পর তার ভাগনার নাম নেকড়ে গণ পরিবর্তিত করা হয় এবং তাকে সাকেম পদ দেওয়া হয়। এদের এই শিথিলতা দেখে বোঝা যায় তাদের গণ সংগঠন অবক্ষয়ের মুখে। আর এই ঘটনা দেখে বোঝা যায় প্রাচীন যুগে তাদের মাঝে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণীত হত।

সাউক ও শেয়াল : এই গোষ্ঠী দুটি একত্রিত হয়ে যায় এবং নিম্নে তাদের গণগুলো প্রদত্ত হল :

১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। হরিণ ৪। এলক (হরিণ) ৫। শ্যেন ৬। ঈগল ৭। মাছ ৮। মোষ ৯। বজ্র ১০। অস্থি ১১। শেয়াল ১২। সমুদ্র ১৩। স্টার্জন (মাছ) ১৪। বড় মাছ।[৩১]

তাদের রীতি-প্রথা সবই প্রায় মায়ামিদের মতো। ১৮৬৯ সালে তাদের জনসংখ্যা ছিল সাত শ, গড়ে প্রতি গণে পঞ্চাশ জন। এইসব গণের নানা চিহ্ন দেখা যায়, মনে হয় বিগত দু শ বছরের মধ্যে তাদের আরো অনেক গণ ছিল।

মিনোমিনি এবং কিকাপু : এই গোষ্ঠীরা মোটামুটি স্বাধীন। এদের গণ সংগঠন ছিল, কিন্তু গণের নাম যোগাড় করা সম্ভব হয় নি। মিনোমিনিদের উত্তরাধিকার ধারা কিছু দিন আগেও ছিল স্ত্রী ধারায়, এই তথ্য ১৮৫৯ সালে এ্যাণ্টোইনি শুকি নামে তাদেরই একজন সদস্যের কাছ থেকে জেনেছি। উত্তরাধিকার নির্ণয়ের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আমি যদি মারা যাই আমার ভাই-বোন এবং মামারা আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সম্পত্তি দখল করে নেবে। আমি এখন চাই যে সম্পত্তি আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা পাক, কিন্তু তার নিশ্চয়তা কোথায় পাচ্ছি? পুরোনো আইন অনুযায়ী আমার সম্পত্তি পাবে আমার ভাই-বোন ও মামারা, আমার ছেলেমেয়েরা নয়। এ থেকে দেখা যাচ্ছে সম্পত্তি গণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তা নির্ধারিত ছিল স্ত্রী ধারায়।

রকিপর্বত গোষ্ঠীসমূহ

১। রক্ত কালোপা : এই গোষ্ঠীতে মোট গণসংখ্যা পাঁচ :

১। রক্ত ২। মাছখেকো ৩। স্কুঙ্ক (এক প্রকার প্রাণী) ৪। অবলুপ্ত প্রাণী ৫। হরিণ।[৩২] এদের উত্তরাধিকার ছিল পুরুষ ধারায় এবং গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ।

পায়রা কালোপা : এই গোষ্ঠীর মোট গণ আট :

১। রক্ত ২। স্কুঙ্ক (এক প্রকার প্রাণী) ৩। কাপড়ের চর্বি ৪। ভেতরে চর্বি ৫। জাদুকর ৬। কখনো হাসে না ৭। উপোস করছে ৮। অর্ধমৃত মাংস।[৩৩]

এদের উত্তরাধিকার পুরুষ ধারায় এবং গণের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। যেসব নাম উল্লেখ করা হল তাদের অনেকগুলো নাম ব্যাও বা দলের জন্য উপযুক্ত, ঠিক গণ নামের উপযুক্ত নয়। কিন্তু এই তথ্য দোভাষীর সাহায্যে প্রত্যক্ষভাবে নেওয়া তাই আমার বিশ্বাস এই তথ্য যথার্থ। এমন হতে পারে যে গণের ডাকনাম মূলনামকে ছাড়িয়ে গেছে।

আটলান্টিক গোষ্ঠীসমূহ

ডেলাওয়ার : আমি আগে এক জায়গায় উল্লেখ করেছি যে এরা এ্যালগোনকিন গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন গোষ্ঠী। যখন আবিষ্কৃত হয় এদের বসবাস ছিল ডেলাওয়ার উপসাগরের উত্তরাঞ্চলে। এদের গণসংখ্যা তিন :

১। নেকড়ে : টুক-সিট–-গোল থাবা।

২। কচ্ছপ : পোক-কূ-উন-গো–গলা বের করা।

৩। টার্কি : পুল-লা-উক–ভাঙে না। [৩৪]

এই উপবিভাগের ধারা দেখে মনে হয় এগুলো ভ্রাতৃত্ব সংগঠন। কারণ এদের প্রত্যেকের মধ্যে আবার বারোটি করে উপ-গণ আছে যাদের চরিত্র অনেকটা গণের মতো!৩৪ বিশেষ করে প্রায় মহিলাদের নাম অনেকটা ব্যক্তিগত ব্যাপারটা একটু অস্বাভাবিক বলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করি। ১৮৬০ সালে কানসাস অঞ্চলে ডেলাওয়ারদের যে সংরক্ষিত এলাকা আছে সেখানে কাজ করি। আমাকে উইলিয়াম এ্যাডামস নামে একজন শিক্ষিত ডেলাওয়ার সাহায্য করে। এই উপবিভাগের কারণ বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য দেখা যায় তারা কিছু পূর্বপুরুষের নাম করছে যাদের কাছ থেকে তারা নাম নিয়েছে বলে মনে করে। এ থেকে দেখা যাচ্ছে গণ সংগঠন থেকে কীভাবে সহজেই ভ্রাতৃত্ব সংগঠন গড়ে উঠেছে।

ডেলাওয়ারদের উত্তরাধিকার ছিল স্ত্রী ধারায় যা থেকে মনে হয় এ্যালগোনকিনদের মধ্যে তা ছিল সর্বজনীন। সাকেম পদ গণের মধ্যে নির্দিষ্ট ছিল এবং যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারত এবং সাকেমকে সবার অপসারণ করার ক্ষমতা ছিল। সম্পত্তি ছিল গণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মূল তিনটি গণের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিয়ে করতে পারত না। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে বাধাটা শুধু উপ-গণ। নেকড়ে গণের লোকেরা নিজেদের মধ্যে বিয়ে করতে পারে না। অন্য নামের গণে বিয়ে করতে পারে। ছেলেমেয়েরা তাদের বাবার গণের নাম পায়, এতে একটা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আসলে মার্কিন সভ্যতা তাদের মূল ধারাকে ক্রমশ অবক্ষয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে গণপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিবাসীদের উত্তরাধিকার ধারার আইনকানুন সবচেয়ে ভালো করে দেখা যায়। একজন ডেলাওয়ার মহিলা লেখককে জানায় যে, সে এবং তার ছেলেমেয়েরা নেকড়ে গণের সদস্য, তার স্বামী কচ্ছপ গণের লোক তাই কচ্ছপ গণের সাকেম ক্যাপটেন কেশুম যখন মারা যায়, তার ভাগনা জন ফোনার এই পদে অভিষিক্ত হয়–এই ভাগনাও কচ্ছপ গণের সদস্য। আগের সাকেমের একজন ছেলে ছিল, কিন্তু সাকেম পদ পায় নি, কারণ সে ভিন্ন গণের লোক। ইরোকোয়াদের মতো ডেলাওয়ারদের মধ্যেও ভাইয়ের কাছ থেকে ভাই বা মামার কাছ থেকে ভাগনা উত্তরাধিকারী হত, কারণ উত্তরাধিকার নির্ণয় হত স্ত্রী ধারায়।

মানসি : এরা ডেলাওয়ারদের একটা অংশ। এদের গণও প্রায় ডেলাওয়ারদের মতো : নেকড়ে, কচ্ছপ ও টার্কি। এদের মধ্যে স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণয় হত, গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ, এ ছাড়া সাকেম পদ ও সম্পত্তি ছিল গণের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মোহেগান : কেনেবেক নদীর দক্ষিণে যেসব নিউ ইংল্যাণ্ড ইণ্ডিয়ান আছে মোহেগানরা যাদের অংশ, সবাই ভাষাগত দিক থেকে খুব ঘনিষ্ঠ এবং একে অপরের কথ্য ভাষা বুঝতে পারে। মোহেগান গোষ্ঠী যেমন গণ সংগঠনে সজ্জিত ছিল ধরে নেওয়া যায় পিকোট ও নারাগানসেট এবং অন্যান্য ছোটখাটো দলগুলো শুধু যে গণ সংগঠনে সজ্জিত ছিল তাই নয় বরং তাদের গণ ছিল একেবারে এদের মতো। মোহেগানদের ছিল ডেলাওয়ারদের মতো নেকড়ে, কচ্ছপ ও টার্কি নামক তিনটি গণ সংগঠন। এতে প্রমাণ হয় যে এরা ডেলাওয়ার ও মানসিদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আগেই বলেছি গণ সংগঠন ভেঙে গেলে তা আবার ভ্রাতৃত্ব সংগঠনে সংগঠিত ও একত্রিত হয়, এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গণ সংগঠন বিভক্ত হয়ে কীভাবে ভ্রাতৃত্ব সংগঠন গড়ে উঠেছে। আমেরিকান আদিবাসীদের মধ্যে গণ সংগঠন ভেঙে গিয়ে আবার কেমন করে একত্রিত হচ্ছে সে নমুনা এদের মতো এমন স্পষ্ট করে আর কোথাও দেখানো যাবে না।

আমেরিকান আদিবাসীদের মধ্যে মোহেগানদের ভ্রাতৃত্ব সংগঠন যেমন পষ্ট তেমন অন্য কোনো গোষ্ঠীতে দেখা যায় না। তাদের ভ্রাতৃত্বগুলো প্রতিটি গণকে অন্তর্ভুক্ত করত এবং গণের সাথে সাথে প্রাতৃত্বেরও উল্লেখ করতে হত। অবশ্য ইরোকোয়াদের মতো এদের সম্বন্ধে তেমন প্রচুর ৩থ্য আমাদের হাতে নেই। তাদের ভ্রাতৃত্ব সংগঠন ও গণের পরিচয় নিম্নে দেওয়া হল :

ক–নেকড়ে ভ্রাতৃত্ব–টুক-সে-টুক

১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। কুকুর ৪। ওপোসাম।

খ–কচ্ছপ ভ্রাতৃত্ব–টোন-বা-ও

১। ক্ষুদে কচ্ছপ ২। কাদা কচ্ছপ ৩। বড় কচ্ছপ ৪। হলুদ বানমাছ।

গ–টার্কি ভ্রাতৃত্ব

১। টার্কি ২। সারস ৩। মুরগিছানা।[৩৫]

এদের উত্তরাধিকার ছিল স্ত্রী ধারায়, গণের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ, সাকেম পদ উত্তরাধিকার সূত্রে নির্ণীত। এই পদ ভায়ের কাছ থেকে ভাই বা চাচার কাছ থেকে পায় ভাইপো। পেকোট ও নারাগানসেট গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তরাধিকার ছিল স্ত্রী ধারায়, কানসাসে এক নারাগানসেট মহিলার কাছ থেকে এই তথ্য জানতে পারি।

আবেনাকি। এই গোষ্ঠীর নাম, ওয়া-বে-না-কী, অর্থাৎ ‘উঠন্ত সূর্য জন’।[৩৬] নিউ ইংল্যাণ্ড ইণ্ডিয়ানদের চেয়ে এদের বেশি কাছাকাছি হল মিকম্যাক গোষ্ঠী। এদের গণসংখ্যা চৌদ্দ :

১। নেকড়ে ২। বনবিড়াল (কালো) ৩। ভালুক ৪। সাপ ৫। ফুটফুটে প্রাণী ৬। বিভার ৭। হরিণ ৮। স্টার্জন (মাছ) ৯। ছুঁচো ১০। পায়রা শিকরা ১১। কাঠবিড়াল ১২। ফুটফুটে ব্যাঙ ১৩। সারস ১৪। শজারু।[৩৭]

বর্তমানে উত্তরাধিকার পুরুষ ধারায়। প্রাচীনকালে গণের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল, বর্তমানে এর তেমন জোর নেই। সাকেম পদ গণের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে নির্দিষ্ট। একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, এদের বেশ কিছু গণ একেবারে ওজিবওয়াদের মতো।

এ্যাথাপাসকো-এ্যাপাশে গোষ্ঠীসমূহ

হাডসন উপসাগরীয় অঞ্চলের এ্যাথপাসকো এবং নিউ মেক্সিকোর এ্যাপাশে গোষ্ঠীসমূহ মূলত একই উৎস থেকে সৃষ্ট। এরা গণভিত্তিক ছিল কি না সঠিক জানা যায় নি। হাডসন উপসাগরীয় অঞ্চলে যখন ১৮৬১ সালে এ্যাথাপাসকো গোষ্ঠীর খরগোশ ও লালঘুরিদের কাছে। ব্যাপারটা জানতে যাই তা জানা সম্ভব হয় নি, আর তা সম্ভব হয় নি ভালো দোভাষীর অভাবে। যদি গণ থেকে থাকে নানাভাবে তার চিহ্ন পাওয়া যাবে। পরলোকগত রবার্ট কেনিকট লেখকের জন্যে এটি জানার চেষ্টা করেছিলেন, আ-চো-ও-টেননি বা স্লেভ লেক এ্যাথাপাসকোদের মধ্যে, কিন্তু তিনিও তেমন সফল হন নি। তিনি বিয়ে ও সাকেম পদের জন্যে বিশেষ নিয়ম-কানুন লক্ষ করেন, যা দেখে মনে হয় এদের গণ সংগঠন ছিল, যদিও তার তথ্য তেমন আশানুরূপ ছিল না। ইউকোন নদী অঞ্চলীয় কুচিন (লুশো)-রা এ্যাথাপাসকো গোষ্ঠীভুক্ত। পরলোকগত জর্জ গিবস লেখককে এক চিঠিতে জানান, “ম্যাকেনজি নদীর কাছে সিম্পসন দুর্গে এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটা চিঠি পাই, এই চিঠিতে আছে যে লুশো বা কুচিনদের সমাজে তিনটি ভাগ বা শ্ৰেণী আছে–নিঃসন্দেহে এরা টোটেম, এদের বুঝতে ভুল করেছে। অবশ্য টোটেমদের পদের তারতম্য ছিল। এই ভদ্রলোক আরো জানিয়েছেন যে একজন তার নিজ শ্রেণীতে বিবাহ করে না বরং অন্য কোনো শ্রেণীতে বিবাহ করে। একজন প্রধান যদি সর্বোচ্চ শ্রেণীরও হয় ভিন্ন শ্রেণীর সবচেয়ে নিম্ন শ্রেণীর মহিলাকেও বিয়ে করতে পারে, তাতে তার গোত্র বা বর্ণের কোনো অসুবিধা হয় না। ছেলেমেয়েরা মায়ের শ্রেণীভুক্ত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন গোষ্ঠীর একই শ্রেণীর লোকেরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে না।”

উত্তর-পশ্চিম উপকূলের কোলুশরা ভাষাগত দিক থেকে খুব ঘনিষ্ঠ না হলেও এ্যাথাপাসকোদের সাথে ঘনিষ্ঠ, এদের মধ্যে গণ সংগঠন বিদ্যমান। মি. গ্যালাটিন মন্তব্য করেছেন, “তারা আমাদের ইণ্ডিয়ানদের মতে, গোষ্ঠী ও শ্রেণীতে বিভক্ত। মি. হেল-এর মতে ওরগোন-এর ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে এমন পার্থক্য নেই। গোষ্ঠীসমূহের (গণসমূহ) নাম প্রাণীর নামে, যেমন : ভালুক, ঈগল, কাক, পরপাইস এবং নেকড়ে…এদের উত্তরাধিকার। ছিল স্ত্রী ধারায়; দলপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাবান যে ছিল তারই আসন।”[৩৮]

উত্তর-পশ্চিম উপকূলের ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীসমূহ

কোলুশ ছাড়াও আরো কিছু গোষ্ঠীতে গণ সংগঠন বিদ্যমান। লেখকের কাছে চিঠিতে গিবস জানান, “পুজেটস সাউণ্ড ত্যাগ করার আগে সৌভাগ্যবশত যাদের আমরা উত্তর ইণ্ডিয়ান বলি এদের মূল তিনটি পরিবারের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ পাই। এরা উত্তর-পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দা–ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের ওপর থেকে শুরু করে রাশিয়ান পজেসানস ও এসকিসক্স অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের কাছ থেকে আমি স্থির নিশ্চিত হই যে অন্তত এই তিনটি জনগোষ্ঠীতে টোটেম পদ্ধতি আছে। একেবারে উত্তর-পশ্চিম থেকে শুরু করে যে তিনটি জনগোষ্ঠীর সাথে আলাপ করি তারা হল টিলিনকিট। সাধারণত তাদের একটি দলের নামে তাদের বলে স্টিকিন। আর একটি হল টিলেইডা। বাকিটির নাম চিমসাইয়া–যাদের গ্যালাটিন বা উহয়া-ও বলে। এদের মাঝে চারটি টোটেম সর্বজনীন : তিমি, নেকড়ে, ঈগল ও কাক। এরা নিজ টোটেমের মধ্যে বিয়ে করতে পারত না, যদিও এরা ভিন্ন জাতি বা পরিবার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল পৃথক পৃথক লোকজন নিয়ে এই জাতি। অর্থাৎ আমি তাদের ভাষার কথা বলছি–তাদের ভাষা সম্পূর্ণভাবেই পৃথক, তেমন কোনো বাহ্যিক সাদৃশ্য নেই।” এর পরবর্তী কালে মি. ড্যাল আলাস্কার ওপর কাজ করেন এবং লিখেছেন, “টিলিটিরা চারটে টোটেমে বিভক্ত : দাঁড়কাক (ইয়েহি), নেকড়ে (কানুখ, তিমি এবং ঈগল (চেথল)…কেবল বিপরীত টোটেমদের মধ্যে বিয়ে হয় এবং ছেলেমেয়েরা মায়ের টোটেমভুক্ত হয়।”[৩৯]

মি. হিউবার্ট এইচ, বানক্রফট তাদের সংগঠন সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন এদের দুটি ভ্রাতৃত্ব আছে এবং এদের মধ্যে আছে গণসমূহ। তিনি মন্তব্য করেছেন যে টিলিনকিট “জাতি দুটি বড় বিভাগে বিভক্ত–একটির নাম নেকড়ে, অপরটি দাঁড়কাক। এই দাঁড়কাক আবার উপবিভাগে বিভক্ত : ব্যাঙ, রাজহাঁস, সমুদ্র-সিংহ পেঁচা এবং স্যালমন। নেকড়ে পরিবারে আছে ভালুক, ঈগল, ডলফিন, হাঙ্গর ও এ্যালকা…একই ক্ল্যানের গোষ্ঠীরা পরস্পর যুদ্ধ করে না; কিন্তু একই ক্ল্যানের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক হয় না। এভাবে দেখা যায় যে তরুণ নেকড়ে-যোদ্ধা দাঁড়কাকদের মধ্যে তার সঙ্গিনীর খোঁজ করে।”[৪০]

এস্কিমোরা গ্যানোয়া পরিবারের লোক নয়। এরা ইদানীং আমেরিকা মহাদেশে বসবাস শুরু করেছে। অন্যান্যের মতো এরা অত পুরোনো নয়। এদের মাঝে গণ সংগঠনও নেই।

স্যালিশ, সোহ্যাপটিন এবং কূটনে গোষ্ঠীসমূহ

কলম্বিয়া উপত্যকার এইসব গোষ্ঠীতে গণ সংগঠন নেই। আমাদের প্রখ্যাত শব্দতত্ত্ববিদ হোরাসিও হেল এবং পরলোকগত জর্জ গিবস এই ব্যাপারে যথেষ্ট খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু গণ পদ্ধতির কোনো চিহ্ন খুঁজে পান নি। মনে হয় এই অঞ্চলে গ্যানোয়া পরিবারের মূল বসবাস ছিল যেখান থেকে তারা দুই আমেরিকা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্ভবত এদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে গণ সংগঠন ছিল, হয়তো ক্রমশ অবক্ষয় শুরু হয় এবং একসময় তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

শোশোনি গোষ্ঠীসমূহ

টেক্সাসের কোমানশে-এর সাথে উটে গোষ্ঠীসমূহ যেমন, বোনাক, শোশোনি এবং আরো কিছু গোষ্ঠী এই জনগোষ্ঠীর সদস্য। ১৮৫৯ সালে ম্যাথু ওয়াকার লেখককে জানায়। যে, সে কোমানশেদের সাথে বসবাস করেছে এবং তাদের মাঝে নিম্নলিখিত গণের দেখা মেলে;

১। নেকড়ে ২। ভালুক ৩। এলক (বড় হরিণবিশেষ) ৪। হরিণ ৫। গোফার (এক ধরনের গাছ) ৬া এ্যান্টিলোপ।

কোমানশেদের মধ্যে যদি গণ সংগঠন থাকে ধরে নেওয়া যায় অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোতেও এই সংগঠন আছে।

নিউ মেক্সিকোর উত্তরের ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীসমূহের সামাজিক পদ্ধতি সম্বন্ধে পুরো বর্ণনা দেওয়া হল। ইউরোপীয়রা যখন এদের আবিষ্কার করে সেই সময় এদের বেশির ভাগ ছিল বর্বর যুগের নিম্ন পর্যায়ে, আর বাকিরা ছিল অসভ্য যুগের উচ্চ পর্যায়ে। প্রাচীনকাল থেকে এদের মধ্যে গণ সংগঠন ছিল সর্বজনীন, আর ধরে নেওয়া যায় উত্তরাধিকার ছিল স্ত্রী ধারায়। এদের পদ্ধতি পুরোপুরি ছিল সামাজিক। গণ সংগঠন ছিল একক, এরপর ভ্রাতৃত্ব, গোষ্ঠী ও মিত্রসংঘ–এইভাবে সংগঠন-ক্ৰম সজ্জিত ছিল। তাদের এই বিভিন্ন পর্বের উন্নয়ন ও তার সংবদ্ধতা সরকার ধারণার জন্ম দিয়েছে। যেহেতু প্রধান আর্য ও সেমিটিক গোষ্ঠীসমূহের এই একই ধরনের সাংগঠনিক ধারা ছিল বিশেষ করে তারা যখন বর্বর যুগ থেকে বেরিয়ে আসে, তাই ধরে নেওয়া যায় আদিম সমাজে এই পদ্ধতি ছিল সর্বজনীন এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের উৎস ছিল এক। পরিবার ধারণার উন্নয়ন সম্বন্ধে পুরো জানার জন্যে আমাদের পুনালুয়ান দল সম্বন্ধে আরো বর্ণনার দরকার–যার ফলে গণ সংগঠনের জন্ম। যা থেকে বোঝা যায় আর্য, উরাল, সেমিটিক, তুরানি এবং গ্যানোয়া পরিবার সৃষ্টির আগে তারা সবাই ছিল সর্বজনীনভাবে পুনালুয়া দলীয়, পরে গণ সংগঠন সৃষ্টির পর এরা বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে যখন এ ব্যাপারে আরো বিশেষভাবে পাঠ করা হবে তখন এই মতের সমর্থন পাওয়া যাবে। ঐ ধরনের একটি সাংগঠনিক ধারা মানবজাতিকে অসভ্য পর্বের সমাজে ধরে রাখতে সক্ষম–এমনকি বর্বর যুগ ও সভ্যতার প্রথম দিকেও তা সমানভাবে কার্যকর। এই সামাজিক সংগঠনের উন্নয়ন হঠাৎ করে হয় নি, এর একটা স্বাভাবিক উন্নয়ন ঘটেছে এবং যা সব সময় ঘটেছে পূর্ববর্তী উপাদানকে কেন্দ্র করে। ন্যায়সঙ্গতভাবে ও জোর দিয়ে বলা যায় যে, সব মানব পরিবারে গণ সংগঠন বিদ্যমান এবং তাদর উৎস এক।

গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানগণ

মোকি পুয়েবলো ইণ্ডিয়ান : মোকি গোষ্ঠী এখনো কোনোরকম পরিবর্তনের মধ্যে আসে নি। এদের সম্প্রদায়গত বাড়ি (মোট সাতটি) সব ঠিক টিকে আছে। এই বাড়িগুলো আরিজোনায় লিটিল কলোরাডোর কাছে, আগে যা নিউ মেক্সিকোর অংশ ছিল। তারা তাদের প্রাচীন প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ে বসবাস করছে। নিঃসন্দেহে জুনি থেকে শুরু করে কুজকো পর্যন্ত সমস্ত গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের এরা প্রতিভূ। জুনি, এ্যাকোমা, টাও এবং আরো বেশ কিছু নিউ মেক্সিকান পুয়েবলোরা কাঠামোগত দিক থেকে একই রকম। এদের সম্বন্ধে করোনাডো ১৫৪০-১৫৪২ সালে যা বলেছে তা এখনো সত্যি। যদিও তাদের মাঝে যেতে তেমন কোনো বাধা নেই তবু তাদের গার্হস্থ্য জীবন ও প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্বন্ধে খুব তেমন একটা জানা। যায় নি। কারণ, তেমন কোনো ধারাবাহিক অনুসন্ধান চালানো হয় নি। লিখিতভাবে যা পাওয়া গেছে তা বড় বেশি ঢালাও মন্তব্য।

মোকিরা গণ সংগঠনে সজ্জিত ছিল এবং এদের গণসংখ্যা নয় :

১। হরিণ ২। বালি ৩। বৃষ্টি ৪। ভালুক ৫। খরগোশ ৬। প্রেইরি নেকড়ে ৭। র‍্যাটল সাপ ৮। তামাক গাছ ৯। রিঙ ঘাস।

ড. টেন ব্রোয়েক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী সার্জন মোকিদের উৎপত্তি সম্বন্ধে যে গল্প শোনেন মি. স্কুলক্র্যাফটকে তা জানান। মোকিরা বলে, “অনেক বছর আগে মহামাতা পশ্চিমে তার বাড়ি থেকে নয়টি মানুষের জাতি নিয়ে আসেন। প্রথম হরিণ জাতি, দ্বিতীয় বালি, তৃতীয় জল বৃষ্টি), চতুর্থ ভালুক, পঞ্চম খরগোশ, ষষ্ঠ প্রেইরি নেকড়ে, সপ্তম র‍্যাটল সাপ, অষ্টম তামাক গাছ, নবম রিড ঘাস। এখন যেখানে তাদের গ্রাম সেখানে তাদের স্থাপন করেন এবং মানুষে পরিবর্তিত করেন এরাই বর্তমান পুয়েবলো অঞ্চলের লোকজন। আর এদের পার্থক্য এখনো বজায় রাখা হয়। একজন আমাকে বললে সে বালিজাতি, আরেকজন বললে হরিণজাতি ইত্যাদি। তাদের এ ধারণা দৃঢ় যে তাদের মৃত্যুর পর তারা আসল চেহারায় ফিরে যাবে এবং আবার হবে ভালুক, হরিণ ইত্যাদি–তাদের সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে নির্ণীত, তবে সব সময় বাবার পর ছেলে স্থলাভিষিক্ত হবে তার কোনো মানে নেই। বরং তার জায়গায় সবাই অন্য কোনো রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়কে চাইলে তাকেই বেছে নেওয়া হবে”।[৪২] এই অবস্থা দেখে মনে হয় না এরা নিম্ন পর্যায়ের বর্বর যুগ থেকে মধ্য পর্যায়ের বর্বর যুগে প্রবেশ করেছে এবং এদের গণ সংগঠন পূর্ণ রূপ পেয়েছে। এখানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের খাপ খাইয়ে নেবার ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে। গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে গণের উপস্থিতি যে সর্বজনীন ছিল ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু এরা ছাড়া উত্তর আমেরিকা ও পুরো দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য গোষ্ঠী সম্বন্ধে কোনো তথ্য মেলে নি। একমাত্র তথ্য পাওয়া গেছে ল্যাণ্ডনাদের সম্বন্ধে। এ থেকে দেখা যাচ্ছে আমেরিকান জাতিতত্ত্ব কত অসম্পূর্ণ। তাদের সামাজিক পদ্ধতির একক সম্বন্ধে জ্ঞান কত খণ্ডিত, তা ছাড়া এর গুরুত্বও পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করা হয় নি। এখনো স্পেনীয় লেখক ও পরবর্তী কিছু লেখকদের লেখায় প্রত্যক্ষভাবে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এইসব তথ্য জড়ো করলে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় যে সমগ্ৰ ইণ্ডিয়ান পরিবারে গণ সংগঠন ছিল সর্বজনীন।

অনেক গণে বর্তমানে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যেমন মোকিদের মধ্যে দেখা গেছে প্রথমে গণের নাম ছিল প্রাণী বা কোনো বস্তুর নামে, বর্তমানে তা পুরুষ বা স্ত্রীলোকের নামে পরিবর্তিত হচ্ছে। যেমন, ওজিবওয়াদের সারস গণে একটা উপকথা আছে যে এক জোড়া সারস অনেক জায়গায় উড়ে বেড়াতে থাকে, গান্য থেকে শুরু করে গ্রেট লেক পর্যন্ত এবং মিসিসিপির প্রেইরি থেকে শুরু করে আটলান্টিক পর্যন্ত খুঁজতে থাকে কোথায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। শেষে সুপেরিয়র হ্রদের র‍্যাপিডস নদী অঞ্চল বেছে নেয়, যেখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এই নদীর কাছে এসে তাদের ওড়া বন্ধ হয় এবং এই মহান আত্মা ডানা বন্ধ করে মাটিতে নেমেই মানুষের চেহারা গ্রহণ করে। এরাই হল ওজিবওয়াদের সারস গণের আদি মানব-মানবী। যে প্রাণীর নামে গণ চিহ্নিত সেই প্রাণী তারা আহার করে না। অবশ্য এটা সর্বজনীন নয়।

ল্যাগুনা : ল্যাগুনা পুয়েবলো ইণ্ডিয়ানরা গণ সংগঠনে সজ্জিত এবং এদের উত্তরাধিকার স্ত্রী ধারায়। এই তথ্য জানা যায় ১৮৬০ সালে নিউ মেক্সিকো ঐতিহাসিক সমাজের সামনে রেভারেণ্ড স্যামুয়েল গোরমান যখন বক্তৃতা দেন। প্রতিটি শহর গোষ্ঠী বা পরিবারে বিভক্ত, আর এদের নাম কোনো পশু-পাখি, গাছ বা গ্রহের নামে। পুয়েবলোর ল্যাগুনাদের লোকসংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং এদের মধ্যে গোষ্ঠী হল সতেরটি। কারো নাম ভালুক, কারো নাম হরিণ, র‍্যাটল সাপ, নানা প্রকার শস্যের নাম, নেকড়ে, জল, ইত্যাদি ইত্যাদি ছেলেমেয়েরা তাদের মায়ের গোষ্ঠীভুক্ত। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী একই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। তবে আজকাল এই প্রথা আর তেমন কড়াকড়িভাবে পালিত হয় না।

“তাদের জমি যৌথ এবং পুরো সম্প্রদায়ের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হয়। তবে একজন কোনো জমি চাষ করে তা ব্যক্তিগত বলে দাবি করতে পারে। তা সে বিক্রি করতে পারে, তবে বিক্রি করলে নিজ সম্প্রদায়ে বিক্রি করতে হবে। একজনের মৃত্যুর পর যে জমি থাকে তা তার স্ত্রী বা মেয়ে পায়, আর যদি সে অবিবাহিত হয় তার বাবার পরিবার তা লাভ করে”।[৪৩] একজন মারা গেলে তার স্ত্রী বা মেয়ে সম্পত্তি পায়–এটা সন্দেহজনক তথ্য।

আজটেক, টেজকুকা, টলাকোপা : মেক্সিকোর এই গোষ্ঠীগুলো ও নাহুটাক গোষ্ঠীদের গণ সংগঠন সম্বন্ধে আগামী কোনো পরিচ্ছেদে আলোচনা করব।

ইয়ুকাটানের মায়া পরিবার : হেরেরা প্রায়ই মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকার গোষ্ঠীদের “জ্ঞাতি সম্পর্কের কথা বলেছেন এবং নিঃসন্দেহে এই “জ্ঞাতি সম্পর্ক” গণ সংগঠন না হয়ে যায় না। তার একটি উক্তি, “কেউ যদি কোনো স্বাধীন লোককে হত্যা করে মৃত ব্যক্তির ছেলেমেয়ে এবং জ্ঞাতিবর্গকে খুশি করতে হবে।”[৪৪] তিনি নিকারাগুয়ার আদিবাসীদে সম্বন্ধে এই মন্তব্য করেন। ইরোকোয়াদের মধ্যেও এই প্রথা আছে যে তাদের জ্ঞাতিবর্গকে খুশি করতে হয়। এই জ্ঞাতিবর্গ বলতে গণকেই বোঝানো হয়েছে। তিনি ইয়ুকাটানের মায়া ইণ্ডিয়ানদের সম্বন্ধে আরো বলেছেন, “কোনো ক্ষতির জন্যে যে ক্ষতিপূরণ করতে হয় তাতে একজন একেবারে ভিখিরিতে পরিণত হত, তখন তার জ্ঞাতিবর্গ তাকে সাহায্য করে।”[৪৫] এখানেও গণ সংগঠনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেছেন আজটেকদের সম্বন্ধে, “যদি তারা অপরাধী হত, তা হলে কোনো জ্ঞাতিবর্গ তাদের রক্ষা করতে পারত না।”[৪৬] এই একই ব্যাপার ফ্লোরিডার ইণ্ডিয়ানদের কাছ থেকেও জানা যায়। তিনি লক্ষ করেছেন, “তারা তাদের ছেলেমেয়েদের অত্যধিক ভালবাসে, কেউ মারা গেলে মা-বাবা ও জ্ঞাতিরা প্রায় সারা বছর শোক করে।”[৪৭] এই পরিদর্শকরা খেয়াল করেছেন যে ইণ্ডিয়ান সমাজে বিপুলসংখ্যক লোক জ্ঞাতি সম্পর্কে যুক্ত, তাই তাদের বলা হয়েছে ‘জ্ঞাতিবর্গ’। তারা যদি আরো খুঁটিয়ে দেখতেন মূল সত্যটি আবিষ্কার করতে পারতেন যে জ্ঞাতিরা গণ সংগঠনে সজ্জিত এবং এটাই তাদের সামাজিক পদ্ধতির একক।

হেরেরা মায়াদের সম্বন্ধে আরো বলেছেন যে “তারা তাদের জ্ঞাতিদের সম্পর্কে খুব সচেতন ছিল এবং ভাবত তারা সবাই ঘনিষ্ঠ এবং একে অপরের সাহায্যকারী–তারা মা বা শালীদের বিয়ে করত না, এমনকি তাদের বাপের নামে নাম আছে এমন কাউকে বিয়ে করতে পারত না, এটা ছিল প্রথাবিরুদ্ধ।”[৪৮] এই ইণ্ডিয়ানদের জ্ঞাতিত্বের কোনো দায় থাকত না, যদি না তারা গণ সংগঠনে সংগঠিত থাকত। এ ব্যাপার বাদ দিয়েও আমরা দেখতে পাই পিতা ও পত্র একই নাম গ্রহণ করেছে, এটা সম্ভব হত না, যদি না সাধারণ গণ নামের ব্যবস্থা। থাকত। পিতৃধারায় উত্তরাধিকার নির্ণয় হত বলেই বাপের নাম ছেলে পেত। অধিকন্তু আমরা জানতে পেরেছি মায়াদের গণের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল। হেরেরার কথা সত্যি বলে ধরে নিয়েই আমরা প্রমাণ পাচ্ছি মায়াদের গণ সংগঠন ছিল এবং উত্তরাধিকার নির্ণয় হত পিতধারায়। টাইলর তার “আর্লি হিস্ট্রি অব ম্যানকাইও” পুস্তকে অন্য এক জায়গা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন : “উত্তর আমেরিকান ইণ্ডিয়ান সমাজ পদ্ধতির সমান্তরাল বিষয় দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ায়। যাদের মধ্যে ক্ল্যান ছিল, কিন্তু ক্ল্যানের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু মধ্য আমেরিকায় এর বিপরীত প্রথা দেখতে পাব। ডিয়েগো ডি ল্যাণ্ডে বলেন যে ইয়ুকাটানরা তাদের পিতার দিক থেকে স্থিরকৃত নামের কোনো স্ত্রী গ্রহণ করে না, এটা তাদের মধ্যে খুব একটা গর্হিত কাজ, কিন্তু তারা মাসতুতো বোন বিয়ে করতে পারে।”[৪৯]

দক্ষিণ আমেরিকান ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীসমূহ

দক্ষিণ আমেরিকার সর্বত্রই গণ পদ্ধতি বিদ্যমান ছিল এবং ছিল গ্যানোয় জ্ঞাতি পদ্ধতি, কিন্তু এ সম্বন্ধে প্রচুর অনুসন্ধান চালানো হয় নি। ইনকারা আনডেসদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নিয়ে মিত্রসংঘের মতো গঠন করে। এদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে হেরেরা বলছেন, “এই বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গঠিত জাতি গোষ্ঠী বা ক্ল্যানে বিভক্ত ছিল।”[৫০] ক্ল্যানের মধ্যে গণের অস্তিত্ব থাকবেই। টাইলর এদের বিয়ে এবং উত্তরাধিকার নির্ণয় সম্বন্ধে বলেছেন, “ইসথুমাস ছাড়িয়ে আরো দক্ষিণে গেলে নিষেধাজ্ঞাটা স্ত্রী ধারা ধরেই সংগঠিত হয়। বারনাউ ব্রিটিশ গিয়েনার আরাওয়াকদের সম্বন্ধে বলেছেন, “জাতি নির্ণয় হত মাতৃধারায় এবং ছেলেমেয়েদের তার বাপের পরিবারে বিয়ে করতে দেওয়া হত, কিন্তু মায়ের পরিবারে বিয়ে করতে পারত না।” সবশেষে, ফাদার মার্টিন ডোবরিজহোফার বলেন যে, এমনকি খুব দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও তাদের সাথে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপনকে গুয়ারিয়ানরা সবচেয়ে বড় অপরাধ বলে মনে করত। এ্যাবিপোনদের সম্বন্ধে তিনি বলেছেন…”তারা তাদের পূর্বপুরুষদের আদেশ অনুযায়ী কোনো প্রকার আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন করত না।”[৫১] আদিবাসীদের সম্বন্ধে এসব তথ্য তেমন সুসংবদ্ধ না হলেও গণ সংগঠনের অবস্থান যে স্পষ্ট এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই এবং তা চলত স্ত্রী ধারায়। আর গণের মধ্যে বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ। গিয়েনার ইণ্ডিয়ানদের সম্বন্ধে ব্রেট বলেছেন, “তারা বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত ছিল এবং প্রত্যেকের নাম ছিল আলাদা। যেমন, সিউইডি, করুয়াফুডি, ওনিসিডি ইত্যাদি। এদের পদ্ধতি আমাদের পরিবারের ঠিক উল্টো। এরা স্ত্রী ধারায় উত্তরাধিকার নির্ণয় করে এবং একই নামের পরিবারে বিয়ে করতে দেওয়া হয় না। উদাহরণত সিউইডি পরিবারের মেয়েরা তার মায়ের নাম গ্রহণ করবে, তার বাবা বা তার স্বামী কেউই সেই একই নামের পরিবারের হতে পারবে না। তার ছেলেমেয়ে এবং তার মেয়ের ছেলেমেয়েরাও সিউইডি নামে অভিহিত হবে। কিন্তু তার ছেলেমেয়েরা সেই একই নামের কোনো স্ত্রী বা পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। তারা ইচ্ছা করলেই তাদের বাপের পরিবারে বিয়ে করতে পারে। এই প্রথা খুব কড়াকড়িভাবে মানা হত এবং কেউ এর অন্যথা করলে তাকে ভীষণভাবে অপদস্থ হতে হত।”[৫২] এই লেখক পরিবার’ বলতে যে আদিম গণ সংগঠনকে বুঝিয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। উক্ত নামের গোষ্ঠীগুলো (শুধু আনডিয়ান বাদে) যখন আবিষ্কৃত হয়, ছিল বর্বর পর্যায়ের নিম্নস্তরে বা আদিম অবস্থায়। অনেক পেরু গোষ্ঠীও ইনকা গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের অধীনে সরকার গঠন করে বসবাস করত। এরা তখন ছিল বর্বর যুগের নিম্নস্তরে।

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির জোরেই প্রায় বর্বর যুগের মধ্য পর্যায় শেষ করে এনেছিল। তাই স্বাভাবিকভাবে আমাদের দৃষ্টি পড়ে এদের ওপর, এদের গণ সংগঠনের ওপর। গণ সংগঠনের আদি অবস্থার বর্ণনা আগেই দেওয়া হয়েছে। এর শেষ পর্যায়ের অবস্থা দেখানো হবে গ্রিক ও রোমানদের গণ সংগঠনে কিন্তু এর মধ্য পর্যায়ের উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপারটা গণ সংগঠনের ইতিহাসের মূল ছবি। গণের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থার তথ্য আমরা প্রচুরভাবে পরিবেশন করার সুযোগ পেয়েছি, অসুবিধা কেবল ক্রান্তিকালের তথ্য নিয়ে। যেখানে গণ সংগঠনকে পরবর্তী অবস্থার মতো দেখা যাচ্ছে সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় এর আদিম অবস্থা থেকে এই অবস্থায় পৌঁছেছে। কিন্তু ঐতিহাসিক সমালোচনা অস্তিবাচক প্রমাণ আশা করে, এই অবরোহণ নয়, এই প্রমাণ একসময় গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে অবস্থিত ছিল। আমরা একটা জিনিস বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে তাদের সরকার ছিল সামাজিক, রাজনৈতিক চরিত্রের নয়। গোষ্ঠী এবং মিত্রসংঘ সম্বন্ধে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি এবং গণ সংগঠন যে গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের প্রধান সামাজিক সংগঠন ছিল তা-ও দেখেছি। কিন্তু গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের বর্বর যুগের নিম্ন পর্যায়ের অবস্থার মতো সঠিক তথ্য পরে আর পাই না। সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল স্পেনীয় বিজেতারা এবং অন্যান্য উপনিবেশ স্থাপনকারীরা, কিন্তু তারা নিজেরা সভ্য বলে এই আদি পূর্বপুরুষদের সামাজিক সংগঠন সম্বন্ধে তেমন আগ্রহ দেখায় নি।

মধ্য আমেরিকা ও পেরুর প্রাচীন স্থাপত্যের অবশিষ্টাংশের দিকে একনজর দৃষ্টি দিলে বোঝা যায় বর্বর যুগের মধ্য পর্যায়েই মানুষের জ্ঞান-গরিমা, বিদ্যা-বুদ্ধি কতটা অগ্রসর হয়েছিল। লোহা আবিষ্কারের দরুন পূর্ব গোলার্ধে এই সময় উন্নতি আরো ত্বরান্বিত হয়। এই একটি আবিষ্কারের জোরেই তারা সত্যতায় পৌঁছতে পারে। বর্বর যুগের শেষ পর্যায়ের সংবাদ মধ্য পর্যায় থেকে আহরণ করতে হবে। গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে তা পরিস্ফুট। মানবসমাজের যেসব তথ্য হারিয়ে যাচ্ছে ভালোভাবে চেষ্টা করলে এখনো তা উদ্ধার করা সম্ভব। আমরা এখন একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, ইউরোপীয় আবিষ্কারের যুগে গ্রামীণ ইণ্ডিয়ানরা ছিল গণ সংগঠনে সজ্জিত। দু-একটি ব্যতিরেক অবশ্য সর্বজনীনতাকে খর্ব করে না।

[বাকি অংশ মিসিং]

১। “মানব পরিবারের জ্ঞাতি সম্পর্ক ও বিবাহের ফলে কুটুম্বিতার পদ্ধতি” (“স্মিথসোনিয়ান জ্ঞানের অবদান”, অষ্টম খণ্ড, ১৮৭১, পৃঃ ১৩১।।

২। ১1 নেকড়ে, টোর-ইয়োহ-নো ২। ভালুক, নে-এ-আর-গুই-ই ৩। বিভার। নন-গার-নে-এ আর-গাহ ৪। কচ্ছপ, গা-নে-এ-আর-টেহ-গো- ওয়া। হরিণ, মা-ও-গেহ ৬। কাদাখোঁচা, ভূ সে-ভূ-উই ৭। সারস, জো-আস-সেহ ৮। শ্যেন, ওস-সয়েহ-গা-ডা-গগ-আহু।

৩। ১। আহনা- রেসে-কওয়া, অস্থি চর্বণকারী ২। আহ-নু-ইয়েহ, বৃক্ষ যকৃৎ ৩। এসো-টা-ই, লাজুক প্রাণী ৪। গে-আহ-উইশ, সুন্দর দেশ ৫। ওস-কেন-ও-টোহ, ভ্রমণরত ৬। সিনে- গেইন সি, বুকে হাঁটা ৭। ইয়া-রা-হটস-সী, দীর্ঘ বৃক্ষ ৮। ডা-সোয়ক, উড়ন্ত।

৪। অধুনা হোরাশিও হেল প্রমাণ করেছেন যে টয়েটলাদের সাথে ইরোকোয়াদের সম্পর্ক আছে।

৫। ফ্রান্সিস পার্কম্যান যিনি মার্কিন উপনিবেশ স্থাপনের ওপর প্রচুর কাজ করেছেন, তিনিই প্রথম বাক্তি যিনি দেখান যে সুসকেহ্যানোকদের সাথে ইরোকোয়াদের সম্পর্ক আছে।

৬। উত্তর আমেরিকায় এমণ”, ১৭৯৬, পৃঃ ১৪৬।

৭। ঐ, পৃঃ ১৬৫।

৮। ১। ওয়া-সা-বি ২। ডি-এ-ঘে-টা ৩। নো-কো-পোজ-না ৪। মোহ-কুহ ৫। ওয়া-শা-বা ৬। ওয়া-ঝা-ঝা ৭। নোহগা ৮। ওয়াহ-গা।

৯। ১। ওয়াজেসে-টা ২। ই-কা-সা-বা ৩। গা-টা-ডা ৪। কা-ইহ ৫। ডা-খুন- ৬ ওয়া সা-বা ৭। হন-গা ৮। কুনজা ৯। টা-পা ১০। ইন-গ্রা-ঝে- ১১। ইশ-ডা-সূন-ডা ১২। ও নন-এ-কা-গী-হ।

১০। ১। মে-জে-রাজা ২। টু-ম-পে ৩। আহ-রো-ওয়াহ ৪। হোড়াশ ৫। চেহ-হে-টা ৬। লু চিহ ৭। ওয়া-কীহ ৮। মা-কোচ হ ধ্বনি বেশ জোরালো ধ্বনি। মিসৌরি গোষ্ঠীদের কথ্য ভাষায় এটা প্রায়ই ব্যবহৃত হয়, মিনিটারি ও গাষ্ঠীতেও এর ব্যবহার বেশি।

১১। ১। মে-জে, রাজা ২। মুন-চা ৩। আহ-অর-ওয়াহ ৪। হো-মা ৫। খা-আ ৬। লুট-জা ৭। ওয়া-কা ৮। মা-কোচ।

১২। ১। টা-কে-কা-শে-গা ২। সিন-জায়ে-৩। মো-এ-কুয়ে-আহ-মা ৪। হ-এ-হা ৫। হন- গো-টিন-গা ৬। মে-হ-বন-গা ৭। ও-পা ৮। মে-কা ৯। শো-মা-কুশা ১০। ডো-হা-কেণ ইয়া ১১। মো-এ-কা-নে-কা-শে-গ ১২। ডা-সিন-জা-হ-সা ১৩। ইস-হা-শি ১৪। লো-নে-কা-শি-গা।

১৩। ১। শো-চুন-গা-ভা ২। হোন-চাড়া ৩ চা-রা ৪। ওয়াহক-চা-হে- ৫। হো-উন-না ৬। চা-রা ৭। ওয়া-কুন-না ৮। ওয়া-কোনো-চা-রা।

১৪। “উত্তর আমেরিকায় ভ্রমণ”, পৃঃ ১৬৬।

১৫। ১। হো-রা-টা-মু-মেক ২। মা-টো-নো-মেক ৩। সী-পূশ-কা ৪। টা-না-ৎসু-কা ৫। কি-টা নে-মেক ৬। ই-স্টা-পা ৭ মে-টে-আহ.-কে।

১৬। ১। মিট-চে-রো-কা ২। মিন-নে- পা-টা ৩। বা-হো-হা- টা ৪। সিচ-কা-বি-রুহ পাকা ৫। ই-টিশ-শো-কা ৬। আহ-নাহ-হা-না-মে-ট ৭। ই-কু-পা-বি-কা।

১৭। ১। আ-চে-বি : চা ২। ই-সাচ-কা-বুক ৩। হো-কা-কুট-টা ৪। আশ- বোট-চী-আহ ৫। আহ শিন-মা-ড়ি-আহ ৬। সসি-কেপ-কা-বুক ৭। ও-সা-বোট-সি ৮। আহ-হা-চিক ৯। শিপ টেপ-জা ১০! আশ- কানে-না ১১। বো-আ-ডা- ১২। ও-হট-ডু-শা ১৩। পেট-চাল-রুব পা-কা।

১৮। শোক প্রকাশের এই প্রথা ক্রো গোষ্ঠীর মধ্যে খুবই দেখা যায়। তা ছাড়া তারা যখন “ঔষধি গৃহ” গ্রহণ করে সেখানেও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে এর দেখা মেলে। ‘ঔষধি গৃহে’ একটা ঝুড়ি ঝোলানো থাকে যেখানে অনেক সময় পঞ্চাশ থেকে এক শ পর্যন্ত আঙুল জমা পড়ে। আপার মিসৌরির এক শিবিরে আমি বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ দেখি যাদের আঙুল কাটা।

 ১৯। ১। ইয়া-হা ২। নো-কুস ৩। কু-মু ৪। কাল-পুট-লু ৫। ই-চো ৬। টুস-ওয়া ৭। কাট-চু ৮। হো-টোর-লী ৯। সো-পাক-টু ১০। টুক-কো ১১। চুলা ১২ উটকো ১৩। ই-হলো ১৪। উ চে ১৫। আহ-আহ ১৬। ও- চে ১৭। ওক-চুন- ওয়া ১৮। কু-ওয়া-কু-চে ১৯। টা-মূল-কী ২০। আক-টু-ইয়া-চুল-কী ২১। সস-ফানুল-কে ২২। ওয়া-লোক-কুল-কী।

২০। চিহ্নগুলোর তাৎপর্য একই।

২১। প্রথম এতৃত্ব-কু-শাপ। এক-লা।

১। কুশ-সক-সা ২। লও-ওক-না ৩। লু-লাক ইক-সা ৪। লিন-এক-লু-শা। দ্বিতীয় ভ্রাতৃত্ব ওয়া-টাক-ই-ই-লা-টা।

১। চু-ফান-ইক-সা ২। ইসকু-লা-নি ৩। চি-টো ৪। শাক-চুক-লা।

২২। ১ম ভ্রাতৃত্ব–কোই।

১। কো-ইন-চুশ ২। হা-টাক-ফু-শি ৩। নুন-নি ৪। ইস-সি।

২য় ভ্রাতৃত্ব–ইশ-পান-ঈ।

১। শা-উ-ঈ ২। ইশ-পান-ঈ ৩। মিজ-কো ৪। হুশ-কোনি ৫। টুন-নি ৬। হো-চোন-চাব-বা ৭। না-শে-ল ৮। ই-হল।

২৩। ১। আহ-নে-হুই-ইয়া ২। আব-নেহ-চৈ ৩। আহ-নে-গা-টা-গা-নিহ ৪। ডিসু-নি-লি-আ-না ৫। উ-নি-সডা-সডি ৬। আহ-নী-কা-হই। ৭। আহ-নী-সা-হোক-নিহ ৮ আহ নু-কা-লো-হাই।

আহ-নী বহুবচন অর্থে ব্যবহৃত হয়।

২৪। ওজিবওয়া ভাষায় গি-শি মানে মহা, গা-মে মানে হ্রদ, এটা হল সুপেরিয়র লেক ও অন্যান্য বড় হ্রদসমূহের আদিবাসী নাম।

২৫। ১। মাই-ঈন-গুন ২। মা-কোয়া ৩। আহ-মিক ৪। মেশি-কা ৫। মিক-ও-নোহ ৬। মে-স্কওয়া-ডা-রে ৭ আহড়িক ৮। চু-ই-ই-স্কে–ওয়া ৯। ও-জী-জোক ১০। কা-কাকে ১১। ও-সে-গী-জে ১২। মোঙ্গ ১৩। আহ-আই-ওয়েহ ১৪। শি-শিবি ১৫। কে-না-বিগ ১৬। ওয়া-কুশ ১৭। ওয়া-বি-ঝাজে ১৮। মুশ-কা-উ-জে ১৯। আহ-ওয়াহ-সিস-সা ২০। না-মা-বিন ২১— ২২। না-মা ২৩। কেননা-ঝে।

২৬। একজন ওজিবওয়া সাকেম, কে-উই-কোনস, যে নবই বছর বয়সে মারা যায় ১৮৪০ সালে, তাকে আমার তথ্য প্রদানকারী যখন জিজ্ঞেস করে যে সেই সাকেম কেন অবসর নিচ্ছে না এবং তার ছেলেকে সাকেম পদ দিচ্ছে না। সাকেম জানায় যে তার ছেলে তার জায়গায় বসতে পারে না। তার জায়গায় বসবে তার ভাগনা, ই-কোয়া-কা-মিক, একমাত্র সেই বসবে তার পদে। এই ভাগনা তার এক বোনের ছেলে। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় প্রাচীনকালে এবং কিছু দিন আগেও উত্তরাধিকার নির্ণয় হত স্ত্রী ধারায়। এর মানে অবশ্য এই নয় যে ঐ ভাগনা উত্তরাধিকার সূত্রে পাচ্ছে বরং ধারা অনুযায়ী পাচ্ছে এবং তার নির্বাচন সম্বন্ধে ইশ-শি-কা-কাহ ১৬। ও- টা-ওয়া।

২৭। ১। মো-আহ ২। ম-কে ৩ মুক ৪। মি-শা- ওয়া ৫। মাক ৬। ক-নু ৭। ন-যা ৮। ন মা-পে-না ৯। ম-গেজে-ওয়া ১০। চে-কোয়া ১১। ওয়া-নো-জো ১২। কা-কাগ-শি ১৩। ওয়েকশী ১৪। পোন-না ১৫। ম কে ইশ-শি-কা-কাহ ১৬। ও-টা-ওয়া।

২৮। ১। মো-ওহাওয়া ২। মোন-গোয়া ৩। কেন–ড-ওয়া ৪। আহ-পা-কোস-এ-আ ৫। কা-নো-জাওয়া ৬। পি-লা-ওয়া ৭। আহ-সে-পন-না ৮। মোন-না-টো ৯। কুল সওয়া ১০। (সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি)।

২৯। ১। মওয়া-ওয়া ২। মা-গোয়া ৩। মকওয়া ৪। উই-ওয়া-সী ৫। ম-সে-পা-সে ৬। ম-আধা-ওয়া ৭। পা-লা-ওয়া ৮। পসাক-দি ৯। শা-পা-টা ১০। না-মা-খা ১১। মা-না-টো ১২। পে-সা-ওয়া ১৩। পা-টেক-এ-নো-দি।

৩০। প্রতিটি গোষ্ঠীতে নাম গণকে নির্দেশ করে। এইভাবে দেখা যাচ্ছে সাউক এবং ফক্স লং হর্ণ হরিণ গণের নাম। কালো নেকড়ে নেকড়ে গণের নাম। ঈগল গণে নিম্নলিখিত নামসমূহ দেখা যায় : কা-পো-না, “ঈগল তার বাসা বাধছে”। জাকা-কওয়া-পে, “মাথা উঁচু করে বসে থাকা ঈগল”। পে-আ-টা না-কা-হোক, “বৃক্ষশাখার উপর দিয়ে উড়ন্ত ঈগল”।

৩১। ১। মো-ওয়া-উইল-সো-উক ২। মা-কুইস-গো-জিক ৩। পা-শা-গা-সা-উইস-সো-উক ৪। মা-পা-ওয়া-উক ৫। কা-কা-উইস-সো-উক ৬। পা-মিস-সো-উক ৭ না-মা-গিস সো-উক ৮। না-নুস-সুস-সো-উক ৯। না-না-মা-কিউ-উক ১০। আহ-কুহ-নে-নাক ১১। ওয়া-কো-আ-উইস-সে-জিক ১২। কা-চে-কোন-আ-উই-সো-উক ১৩। না-মা উই-সো-উক ১৪। মা-শি-মা-টাক।

৩২। ১। কি-নো ২। মা-মে- ও-ইয়া ৩। আহ-পে-কি ৪। আ-নে-পা ৫। পে-নো-কিক্স।

৩৩। আহ-আই-পি-টা-পে ২। আহলে–কি-ই ৩। ইহ-পো-সে-মা ৪। কা-কা-পো-ইয়া ৫। মো টা-টো-সিস ৬। কা-টি-ইয়া-ইয়ে-মিক্স ৭। কা-টা-গে-মানে ৮। এ-কো-টো-পিস-ট্যাক্সে।

৩৪। ১। নেকড়ে : টুক-সিট

১। মা-আন-গ্রিট, বড় পা ২। উই-সোউ-হেট-কো, হলুদ গাছ ৩। পা-সা-কুন-আ-মোন, শস্য টানছে ৪। উই-ইয়ার-নিহ-কা-টো, সাবধানে প্রবেশকারী ৫। টুশ-ওয়ার-কা-মা, নদীর পারে ৬। ও-লুম-আ-নে, লাল রং ৭। পুন-আর-ইউ, আগুনের পাশে দাঁড়ানো কুকুর ৮। কুইন-ইক চা, দীর্ঘ দেহ ৯। মুন-হার-টারনে, খুঁড়ছে ১০। নন-হার-মিন, উজান বাওয়া ১১। লঙ্গ-উশ হার-কার-টু, তুলির কাঠ ১২। মাও-সু-টোহ, সঙ্গে আনা।

২। কচ্ছপ : পোক-তু-উন-গো।

১। ও-কা-হো-কি, শাসক ২। টা-কো-ওঙ্গ-ও-টু, উঁচু পাড় ৩। সি-হার-ও-ও-টু, উত্রাইয়ে টানছে ৪। ওল-হারকার-মি-কার-টু, নির্বাচক ৫। মা-হার-ও-লক-টি, সাহসী ৬। টুশকি পাকুইস-ই, সবুজ পাতা ৭। টুঙ্গ-উল-উজ-সি, সর্বক্ষুদ্র কাছিম ৮। উই-লুন-উজ-সি, ছোট কাছিম ৯। লি-কুইন-আ-ই, কামড়ানো কাছিম ১০। কুইস-এইসে-কিস-টু, হরিণ।

৩। টার্কি : পুল-লা-উক।

১। মো-হার-আ-লা, বড় পাখি ২। লিলি-ওয়া-ইউ, পাখির চিৎকার তা মু-কিয়ুং-ওয়া-হো কি, চোখের ব্যথা ৪। মু-হার-মো-উই-কার-মু, পথ চাচ ৫। ও-পিঙ্গ-হো-কি, ওপোসাম মাঠ ৬। মুহ-হে-উই-কা-কেন, বুড়ো পায়ের নলি ৭। টোঙ্গ-ও-না-ও-টো, গুঁড়ির স্তূপ ৮। নুল আমার-আর-মো, জলে বাস ৯। মুহ-ক্রেন্ট-হার-নে, শেকড় খোদক ১০। মুহ-কাম-হক-সে, লালমুখ ১১। কু-ওয়া-হো-কে, দেবদারু অঞ্চলে ১২। ও-চুক-হাক, মাটি চাঁচা।

৩৫। ১ : টুক-সে-টুক।

১। নে-হ-জা-ও ২। মা-কওয়া ৩। ন-ডি-ইয়া-ও ৪। ওয়া-পা-কুই

২ টোন-ব-ও

১। গাক-পো-মিউট ২।——- ৩। টোন-বা-ও ৪। উই-স-মা-উন

৩। টার্কি

১। না-আহ-মা-ও ২। গা-হ-কো ৩। ————

৩৬। “জ্ঞাতি পদ্ধতি” রচনায় প্রধান ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীদের আদিবাসী নাম এবং তাদের নামের অর্থ হয়তো পাওয়া যেতে পারে।

৩৭। ১। মালস-সুম ২ পিস-সুহ ৩। আহ-উইহ-সুস ৪। স্কুকে ৫। আহলুংক- ৬। টা-মা-কোয়া ৭। মা-হলে-সুহ ৮। কা-বাহ-সেহ ৯। মুস-কোয়া-সহ ১০। ক- চে-গা-গঙ্গা গো ১১। মেহ-কো-আ ১২। চে-গওয়া-লিস ১৩। কুসকো ১৪। মা-ডা-ওয়ে- সুস।

৩৮। আমেরিকান জাতিতাত্ত্বিক সমাজ, সূচনায় লিখিত।

৩৯। আলাস্কা ও তার বৈভবসমূহ”, পৃঃ ৪১৪।

৪০। “নেটিভ রেসেস অব দ্য প্যাসিফিক স্টেটস”, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১০৯।

৪১। শনি-রা পূর্বে একজন দেবীর পুজো করত, যার নাম গো-গোমে-পা-মা, “আমাদের পিতামহী”।

৪২। ক্র্যাফটের ইণ্ডিয়ান গোষ্ঠীর ইতিহাস” চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ৮৬।

৪৩। অভিভাষণ”, পৃঃ ১২।

৪৪। “জেনারেল হিস্ট্রি অব এ্যামেরিকা ১৭২৬, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৯৯।

৪৫। ঐ, চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ১৭১।

৪৬। ঐ, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২০৩।

৪৭। ঐ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩৩।

৪৮। ঐ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৭১।

৪৯। “অলি হিস্ট্রি অব ম্যানকাই”, টাইলর, পৃঃ ২৮৭।

৫০। “জেনারেল হিস্ট্রি অব এমেরিকা”, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২৩১।

৫১। আর্লি হিস্ট্রি অব মাকাই”, টাইল, পৃঃ ২৮৭।

৫২। “ইণ্ডিয়ান ট্রাইবস-অব গিয়ানা”, পৃঃ ৯৮। লুবক তার “অরিজিন অব সিভিলাইজেশান” পুস্তকে উল্লেখ করেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *