১৮৯. শিখণ্ডীর বিবাহ

১৮৯তম অধ্যায়

শিখণ্ডীর বিবাহ

ভীষ্ম কহিলেন, “অনস্তর দ্রুপদরাজ আলেখ্যরচনা [ছবি আঁকা] ও শিল্পকাৰ্য্য প্রভৃতি সকল বিষয়ে কন্যাকে যত্নপূর্ব্বক শিক্ষাপ্রদান করিতে লাগিলেন। কন্যা দ্ৰোণসন্নিধানে অস্ত্রশস্ত্র শিক্ষা করিলেন। পরে দ্রুপদমহিষী পুত্রের ন্যায় কন্যার পরিণয়কাৰ্য্য সমাধা করিবার নিমিত্ত দ্রুপদরাজকে অনুরোধ করিলেন। কিন্তু দ্রুপদ ও মহিষী উভয়েই কন্যাকে প্রাপ্তযৌবনা অবলোকন করিয়া চিন্তাসাগরে নিমগ্ন হইতে লাগিলেন। দ্রুপদরাজ মহিষীকে কহিলেন, “প্রিয়ে! আমি ভগবান শূলপাণির বিচনানুসারে কন্যাকে প্রচ্ছন্নভাবে রাখিয়াছিলাম। এক্ষণে এই শোকবৰ্দ্ধিনী কন্যা যৌবনসম্পন্না হইয়াছে।”

“মহিষী কহিলেন, “মহারাজ! সেই ত্ৰিলোকীনাথ শূলপাণির বাক্য কখনই মিথ্যা হইবে না। তিনি নিষ্ফল কথা কহিবেন, ইহা সম্ভাবিত নহে। এক্ষণে যদি অভিরুচি হয়, আমি যাহা বলি, তাহা শ্রবণ করিয়া কর্ত্তব্যাবধারণ করুন। আমার নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, তাহার বাক্য কদাচ ব্যর্থ হইবে না, অতএব এক্ষণে বিধানানুসারে কন্যার দারগ্রহণ [পুত্রবিবাহের মত বিবাহ] সম্পাদন করুন।”

“দ্রুপদরাজ ও রাজমহিষী এইরূপ নিশ্চয় করিয়া ভূপালগণের কুল পরিজ্ঞাত হইলেন। পরিশেষে নিতান্ত দুৰ্জয় দুৰ্দ্ধর্ষ দশার্ণাধিপতি হিরণ্যবর্মীর কন্যাকে প্রার্থনা করিলেন। তিনিও শিখণ্ডীকে আপনি কন্যা সম্প্রদান করিলেন। শিখণ্ডী দ্বারক্রিয়া [বিবাহকাৰ্য্য] সম্পাদন করিয়া পুনরায় কাম্পিল্যনগরে আগমন করিলেন। কালক্ৰমে দশার্ণাধিপতির দুহিতার যৌবনকাল সমুপস্থিত হইল।

শিখণ্ডীর কন্যাভাব প্ৰকাশ

“কিয়াৎকাল অতীত হইলে দশার্ণাধিপতির কন্যা শিখণ্ডীকে প্রকৃত স্ত্রী জ্ঞাত হইয়া লজ্জিতমনে ধাত্রী ও সখীগণসন্নিধানে এই বলিয়া প্রচার করিল। ধাত্রীগণ এই কথা শ্রবণ করিয়া অতিশয় দুঃখিত হইল এবং ইহা ভূপতির কর্ণগোচর করিবার নিমিত্ত দাসীদিগকে প্রেরণ করিল। দশর্ণাধিপতি দাসীমুখে আদ্যোপান্ত এই বিপ্ৰলম্ভ [প্ৰবঞ্চনা] বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া একান্ত কুপিত হইলেন। শিখণ্ডী তৎকালে আপনার স্ত্রীত্ব তিরোহিত [গোপন] করিয়া পুরুষের ন্যায় পিতৃকুলে পরম কুতূহলে বাস করিতেছিলেন।

“কিয়দ্দিবস অতীত হইলে মহারাজ হিরণ্যবর্ম্মা এই বিষয় বিদিত ও রোষাবেশপ্রভাবে [ক্ৰোধবেগে] সাতিশয় ক্ষুব্ধ হইয়া দ্রুপদরাজভবনে এক দূত প্রেরণ করিলেন। দূত দ্রুপদসন্নিধানে উপনীত হইয়া নির্জ্জনে কহিল, “মহারাজ! দশার্ণাধিপতি আপনাকে কহিয়াছেন, হে দ্রুপদ! দুষ্টমন্ত্রণাপরতন্ত্র [দুষ্ট পরামর্শে বাধ্য] হইয়া আমাকে অবমাননা ও প্রতারণা করিয়াছ। আমি তোমার প্রতি একান্ত কুপিত হইয়াছি। তুমি যে আপনার কন্যার নিমিত্ত মোহবশতঃ আমার কন্যাকে প্রার্থনা করিয়াছিলে, আজি সেই প্রতারণার সমুচিত প্রতিফলপ্রাপ্ত হইবে। এক্ষণে স্থির হও; আমি তোমাকে ও তোমার অমাত্যগণকে অবিলম্বেই বিনাশ করিব।’ ”