১৭১. অম্বোপাখ্যানপৰ্ব্বাধ্যায়

১৭১তম অধ্যায়

অম্বোপাখ্যানপৰ্ব্বাধ্যায়

“দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে পিতামহ! আপনি সোমক ও পাঞ্চালগণকে বিনাশ করিবেন, এইরূপ অঙ্গীকার করিয়াছিলেন; এক্ষণে শিখণ্ডীকে রণস্থলে শরক্ষেপ করিতে দৃষ্টিগোচর করিয়াও কি নিমিত্ত বিনাশ করিবেন না?”

“ভীষ্ম কহিলেন, “হে দুৰ্য্যোধন! আমি যে নিমিত্ত শিখণ্ডীকে বিনাশ করিব না, তুমি তাহা এইসকল ভূপালগণের সহিত অবহিত হইয়া শ্রবণ কর। আমার পিতা ত্ৰিলোকবিশ্রুত মহারাজ শান্তনু সমুচিত অবসরে [যথাযোগ্যকালে] কলেবর পরিত্যাগ করিলে আমি প্রতিজ্ঞা প্রতিপালনপূর্ব্বক ভ্রাতা চিত্রাঙ্গদকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিলাম। অনন্তর তিনিও লোকান্তরগত হইলে আমি সত্যবতীর অভিমতে বিচিত্ৰবীৰ্য্যকে নিয়মানুসারে অভিষিক্ত করিলাম। বিচিত্ৰবীৰ্য্য ধর্ম্মতঃ আমার কনীয়ান [কনিষ্ঠ ভ্রাতা] এই নিমিত্ত সকল বিষয়ে আমার মতানুসরণ করতেন। আমি তাঁহার দারক্রিয়া [বিবাহে পত্নীগ্রহণ] সম্পাদন করিবার নিমিত্ত অনুরূপ কুল অনুসন্ধান করিতে লাগিলাম। অনন্তর শুনিলাম, অলোকসামান্যরূপসম্পন্ন কাশিরাজের তিন দুহিতা অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকা স্বয়ংবরা হইবেন, তাঁহাদিগের মধ্যে অম্বা সর্ব্বজ্যেষ্ঠা, অম্বিকা মধ্যম ও অম্বালিকা কনিষ্ঠা ছিলেন। স্বয়ংবরের নিমিত্ত অনেকানেক ভূমিপাল নিমন্ত্রিত হইয়াছিলেন। আমি একমাত্র রথে আরোহণপূর্ব্বক কাশিরাজের রাজধানীতে সমুপস্থিত হইয়া সর্ব্বালঙ্কারে ভূষিতা কাশিরাজের দুহিতাদিগকে ও নিমন্ত্রিত নৃপতিগণকে নিরীক্ষণ করিলাম। পরে আমি সেই তিন কন্যাকে বীৰ্য্যশুল্কা [বলপূর্ব্বক অপহরণের যোগ্য] অবগত হইয়া রথে আরোপিত করিলাম এবং সমাগত পার্থিবগণকে আহ্বান করিয়া বারংবার কহিলাম, “শান্তনুনন্দন ভীষ্ম তোমাদের সমক্ষে বলপূর্ব্বক কন্যাগণকে হরণ করিতেছে; এক্ষণে তোমার শক্তি অনুসারে ইহাদিগকে মোচন করিবার নিমিত্ত যত্ন কর।”

“ ‘অনন্তর ভূপালগণ ক্রোধাভরে আয়ুধ গ্রহণপূর্ব্বক সত্বর আসন হইতে সমুত্থিত হইয়া সারথিদিগকে ‘সাজ সাজ’ বলিয়া আদেশ করিলেন। তখন যোদ্ধৃগণ উদ্যতায়ুধ [উত্তোলিতাস্ত্ৰ] হইয়া মাতঙ্গসদৃশ রথ, গজসমূহ এবং হৃষ্টপুষ্ট অশ্বের সহিত আমাকে আক্রমণ করিবার নিমিত্ত উত্থিত হইলে পর ভূপালসকল রথে আরোহণ করিয়া আমাকে চতুর্দ্দিকে বেষ্টন করিলেন। আমি তাঁহাদের প্রতি অনবরত শরবর্ষণ করিতে লাগিলাম; তাহারা যখন আমার সম্মুখীন হইলেন, তখন আমি অবলীলাক্রমে তাঁহাদিগের সুবৰ্ণালঙ্কৃত বিচিত্র ধ্বজ পাতিত করিলাম এবং অশ্ব, গজ ও সারথিদিগকে এক এক শরদ্বারা ভূতলে নিপাতিত করিতে লাগিলাম।

“ ‘তখন সকলে আমার শরলাঘব [সত্বর শরনিক্ষেপ ক্ষমতা] দর্শনে সমরপরাঙ্মুখ হইয়া ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিলেন। পরে যেমন দেবরাজ ইন্দ্ৰ দানবগণকে পরাজিত করিয়াছিলেন, তদ্রূপ আমিও তাঁহাদিগকে পরাজিত করিয়া হস্তিনাপুরে প্রত্যাগত হইলাম এবং ভ্রাতার পরিণয়কাৰ্য্য সম্পাদনা করিবার নিমিত্ত তিন কন্যাকে আনয়ন করিয়াছি, এই সমস্ত ব্যাপার সত্যবতীকে নিবেদন করিলাম।” ”