১৭০. শিখণ্ডীর সহিত ভীমের সমরে অনিচ্ছা!

১৭০তম অধ্যায়

শিখণ্ডীর সহিত ভীমের সমরে অনিচ্ছা!

“ ‘হে দুৰ্য্যোধন! মহারথ রোচমান রণস্থলে অমরের ন্যায় যুদ্ধ করিবেন। মহাবলপরাক্রান্ত, সুনিপুণ চিত্ৰযোধী, ভীমসেনের মাতুল কুস্তিভোজ পুরুজিৎ অতিরথ, যেমন দেবরাজ ইন্দ্র দানবগণের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন, তদ্রুপ তিনিও বিক্রম প্রকাশপূর্ব্বক ভাগিনেয়দিগের হিতানুষ্ঠানের নিমিত্ত যুদ্ধ করিবেন। তাঁহার যুদ্ধবিশারদ সুবিখ্যাত বহুসংখ্যক যোদ্ধা আছে; তাহারাও রণস্থলে অতি অদ্ভূত কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিবে, সন্দেহ নাই। হিড়িম্বাতনয়, সমরপ্রিয়, অতিশয় মায়াবী রাক্ষস ঘটোৎকচ আপনার বশবর্ত্তী অন্যান্য মহাবীর রাক্ষসগণসমভিব্যাহারে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইবে। হে মহারাজ! এইসকল ও অন্যান্য মহীপালগণ সমবেত হইয়া বাসুদেবকে পুরোবর্ত্তী [অগ্রগামী] করিয়া পাণ্ডবগণের নিমিত্ত যুদ্ধ করিবেন।

“ ‘এই সমস্ত প্রধান প্রধান রথী, অতিরথ ও অৰ্দ্ধারথ সমরক্ষেত্রে দেবরাজপ্রতিম অর্জ্জুনকর্ত্তৃক প্রতিপালিত অতি ভয়ঙ্কর যুধিষ্ঠিরসেনাসকল লইয়া যাইবেন। আমি সেইসমস্ত জিগীষাপরবশ [একান্ত জয়াভিলাষী] মায়াবী ভূপালগণের সহিত সময় করিয়া জয় বা নিধন লাভ করিব। আমি সন্ধ্যাকালীন চন্দ্ৰসূৰ্য্যের ন্যায় গাণ্ডীবধারী অর্জ্জুন ও চক্ৰধর বাসুদেব এবং পাণ্ডবদিগের অন্যান্য রথী বীরপুরুষগণকে রণস্থলে আক্রমণ করিব।

“ ‘পাণ্ডবদিগের যেসকল রথী, অতিরথ ও অৰ্দ্ধরথের বিষয় প্রাধান্যানুসারে [শ্রেষ্ঠতানুক্রমে] কীর্ত্তিত হইল, আমি তাঁহাদিগকে এবং অর্জ্জুন, বাসুদেব ও অন্যান্য পার্থিবগণকে সমরে অবলোকন করিবামাত্র অস্ত্ৰজাত [অস্ত্ৰসমূহ] দ্বারা নিবারণ করিব, কেবল পাঞ্চালতনয় শিখণ্ডী প্ৰতিযোদ্ধা হইয়া শরনিক্ষেপ করিলেও তাহাকে কদাচ বিনাশ করিব না। লোকে ইহা প্ৰসিদ্ধই আছে যে, আমি পিতার প্রিয়ানুষ্ঠান করিবার নিমিত্ত লব্ধরাজ্য পরিত্যাগ করিয়া ব্ৰহ্মচৰ্য্যব্রতের অনুষ্ঠান করিয়াছি। আমি চিত্রাঙ্গদকে কৌরবদিগের আধিপত্যে স্থাপিত ও অল্পবয়স্ক বিচিত্ৰবীৰ্য্যকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করিয়াছি। আমি ভূমণ্ডলের সমস্ত ভূপালগণকে আমার ব্ৰহ্মচৰ্য্য অবগত করিয়া এক্ষণে স্ত্রী বা স্ত্রীপূর্ব্ব [পূর্ব্বকীয় স্ত্রীভাবযুক্ত] পুরুষকে সংহার করিতে পারি না। বোধ হয়, তুমি শ্রবণ করিয়া থাকিবে, শিখণ্ডী পূর্ব্বে স্ত্রীজাতি ছিল, পশ্চাৎপুরুষবিগ্ৰহ [পুরুষদেহ] পরিগ্রহ করিয়াছে; অতএব আমি তাহার সহিত কদাচ যুদ্ধ করিব না। কিন্তু পাণ্ডবগণ ব্যতিরেকে সমরে যাহাকে প্ৰাপ্ত হইব, তাহাকে সংহার করিব সন্দেহ নাই।’ ”

রথতিরথসংখ্যানপর্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত