১৫০. পাণ্ডবপক্ষীয় শিবির সন্নিবেশ

১৫০তম অধ্যায়

পাণ্ডবপক্ষীয় শিবির সন্নিবেশ

মহারাজ! অনন্তর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির শ্মশানস্থান, দেবায়তন [দেব-মন্দির], যজ্ঞায়তন [যজ্ঞস্থান], মহর্ষিগণের আশ্রম ও তীর্থসকল পরিহার করিয়া সমতল, সুশীতল, প্রভূত তৃণ ও ইন্ধনসম্পন্ন, অতিপবিত্র রমণীয় প্রদেশে সেনানিবেশ [শিবির-সৈন্যগণের বাসস্থান] সংস্থাপন করিলেন, পরে ক্ষণকাল বাহকগণকে গতক্লম [বিগতশ্রম] করাইয়া পুনরায় তথা হইতে উত্থানপূর্ব্বক শতসহস্ৰ মহীপালী [রাজ] গণসমভিব্যাহারে ইতস্ততঃ ভ্ৰমণ করিতে আরম্ভ করিলেন এবং বাসুদেব অর্জ্জুনের সহিত ধার্ত্তরাষ্ট্রদিগের সহস্ৰ সহস্র সৈন্যগণকে বিদ্রাবিত [সন্তাড়িত]। করিয়া ইতস্ততঃ পৰ্য্যটন করিতে লাগিলেন। মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন, সাতকি ও যুযুধান—ইঁহারা শিবিরের পরিমাণ স্থির করিলে পর ভগবান বাসুদেব তথায় উত্তম উপতীর্থশোভিত [সমীপবর্ত্তী তীর্থে পরিশোভিত] কৰ্কবপঙ্ক-বিবর্জিত [কাঁকার ও কর্দমারহিত], পবিত্রসলিলযুক্ত হিরন্বতীনামে এক স্রোতস্বতীপ্রাপ্ত হইয়া পরিখা খনন করাইলেন এবং আত্মরক্ষার্থ তথায় কতকগুলি সেনাকে অদৃশ্যভাবে সন্নিবেশিত করিলেন। মহাত্মা পাণ্ডবগণের নিমিত্ত যে প্রকার শিবির সন্নিবেশিত হইল, তদ্রূপ অন্যান্য ভূপালগণের নিমিত্ত প্রভুততর কণ্ঠসম্পন্ন অন্নপান-সহকৃত নিতান্ত দুর্ভেদ্য শত শত সহস্ৰ সহস্র শিবির পৃথক পৃথক সন্নিবেশিত হইতে লাগিল; দেখিলে বোধ হয়, যেন বিমানসমূহ ধরাতলে অবতীর্ণ হইয়া রহিয়াছে।

তথায় শত শত বেতনভুক্ সুনিপুণ শিল্পী ও সর্বোপকরণসম্পন্ন শাস্ত্ৰবিশারদ চিকিৎসকগণ নিযুক্ত হইল। ধৰ্মরাজ যুধিষ্ঠির শরাসন [ধনুক], জ্যা[গুণ-ছিল], বর্ম্ম ও অন্যান্য শস্ত্ৰসমূহ এবং পর্ব্বতোপম ধনুকচূৰ্ণ [ধূনার গুঁড়া], তৃণ, তৃষা ও অঙ্গাররাশি, অপরিমিত মধু, যষ্টি ও তূণ প্রত্যেক শিবিরমধ্যে সঞ্চয় করিয়া রাখিলেন। তথায় শতসহস্ৰ যোধী[যোদ্ধা] কণ্টকময় কবচযুক্ত মাতঙ্গসকল উত্তুঙ্গ[অত্যুচ্চ] পর্ব্বতের ন্যায় পরিদৃশ্যমান হইতে লাগিল। মিত্ৰগণ পাণ্ডবদিগকে তথায় সন্নিবিষ্ট শ্রবণ করিয়া যথাস্থানে আগমন করিলেন এবং সোমপায়ী [সোমরসাপানকারী] ব্রহ্মচর্য্যনিরত অন্যান্য মহীপালসকল বলবাহনসমভিব্যাহারে পাণ্ডবগণের বিজয়লাভার্থ তথায় আগমন করিতে লাগিলেন।