১৪০. যুদ্ধোপকরণ সংগ্রহের সময়নিরূপণ

১৪০তম অধ্যায়

যুদ্ধোপকরণ সংগ্রহের সময়নিরূপণ

সঞ্জয় কহিলেন, “শত্ৰুনাশন কেশব কর্ণের বাক্য শ্রবণ করিয়া ঈষৎ হাস্যসহকারে কহিলেন, “হে কর্ণ। আমি তোমাকে পৃথিবী প্রদান করিলাম; কিন্তু তুমি তাহা গ্ৰহণ করিয়া শাসন করিতে অনিচ্ছুক হইলে; অতএব তুমি রাজ্যলাভের উপায়প্রাপ্ত হইবে না। পাণ্ডবেরাই যে জয়লাভ করিবেন, তাহাতে বিন্দুমাত্ৰ সংশয় নাই। বিশ্বকর্ম্ম ইন্দ্ৰকেতুসদৃশ [ইন্দ্ৰধ্বজতুল্য] যে মায়াময় ধ্বজ নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, যে ধ্বজে জয়াবহ ও ভয়াবহ ভূতগণ দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে, যে ধ্বজ চতুর্দ্দিকে যোজনপরিমিত হইয়াও পর্ব্বত বা ধনস্পতিতে সংলগ্ন হয় না, সেই হুতাশনসদৃশ বানরকেতুনামে ধনঞ্জয়ের অত্যুগ্র জয়ধ্বজ সমুত্থিত হইয়াছে। যখন দেখিবে, ধনঞ্জয় কৃষ্ণ-সারথিসমভিব্যাহারে সংগ্রামে আগমনপূর্ব্বক আগ্নেয়, বায়ব্য ও ঐন্দ্ৰ অস্ত্র পরিত্যাগ করিবেন এবং বজ্রনির্ঘোষসদৃশ গাণ্ডীবধ্বনি শ্রুতিগোচর হইবে, তখন কি সত্য [*সত্যকালে সকলেই কৃতকৃত্য, ধর্ম্ম, অর্থ ও কর্মের কোন অপেক্ষা কাহারও থাকে না; সেকালের লোক ঐ ত্রিবর্গে স্বভাবতঃ পূর্ণ। ত্রেতায় ধর্মে সকলেই পূর্ণ, অর্থকামে কিঞ্চিৎ অপূর্ণ সুতরাং ধর্মের পূর্ণরূপেই অপেক্ষা থাকে। দ্বাপরে অর্থকাম হয় প্রধান। কিন্তু ধর্ম্ম অপূৰ্ণ; সুতরাং ধর্মের পূর্ণরূপেই অপেক্ষা থাকে। কিন্তু ধর্ম্ম কৃত না হওয়ায় হয় ধ্বংস। দুৰ্য্যোধনাদির যুদ্ধকালে এই অবস্থা হইবে; সুতরাং ধৰ্মধ্বংসে তাহার অবশ্য বিনাশ।], কি ত্ৰেতা [*], কি দ্বাপর [*] কোন যুগই থাকিবে না। যখন দেখিবে, আদিত্যসদৃশ দুদ্ধৰ্ষ জপহোমপরায়ণ রাজা যুধিষ্ঠির স্বীয় সেনাগণকে রক্ষিত ও পরকীয় সেনাগণকে সন্তাপিত করিতেছেন, তখন কি সত্য, কি ত্ৰেতা, কি দ্বাপর, কোন যুগই থাকিবে না। যখন দেখিবে, মহাবল ভীমসেন প্রতিমাতঙ্গাঘাতী মত্ত মাতঙ্গের ন্যায় [মত্তমাতঙ্গ যেমন একটি করিয়া প্রতিপক্ষ মত্ত হাতীকে নিহত করে, তদ্রূপ] দুঃশাসনের রুধির পান করিয়া রণক্ষেত্রে নৃত্য করিতেছেন, তখন কি সত্য, কি ত্রেতা, কি দ্বাপর, কোন যুগই থাকিবে না। যখন দেখিবে, দ্রোণ, ভীষ্ম, কৃপ, দুৰ্য্যোধন ও জয়দ্ৰথ যুদ্ধাৰ্থ আগমন করিবামাত্র সব্যসাচী[অর্জ্জুন-দক্ষিণ করে ও বাম করে তুল্যরূপে বাণনিক্ষেপে নিপুণ]কর্ত্তৃক প্রতিহত হইবেন, তখন কি সত্য, কি ত্রেতা, কি দ্বাপর, কোনযুগই থাকিবে না। যখন দেখিবে, মাতঙ্গসদৃশ মহাবলশালী মাদ্রীপুত্রেরা নিবিড় শরসম্পাতে আরাতিগণের সেনা, রথ ও বীরনিবাহকে নিপীড়িত করিতেছেন, তখন কি সত্য, কি ত্রেতা, কি দ্বাপর, কোন যুগই থাকিবে না।

“হে কর্ণ। এ স্থান হইতে গমন করিয়া দ্রোণ, ভীষ্ম ও কৃপাচাৰ্য্যকে কহিবে যে, হে বীরগণ! এই মাস অতি মনোহর; এক্ষণে তৃণ ও ইন্ধন অতি সুলভ; ওষধি ও বনসকল সতেজ, বৃক্ষসমুদয় ফলবান, মক্ষিকসকল বিনষ্ট এবং সলিলসকল বিনির্ম্মল ও সুস্বাদু হইয়াছে; এই মাস অতিমাত্র উষ্ণ বা অত্যন্ত শীতল নয়, ইহা কেবল সুখময়। আজি হইতে সপ্তদিবসের পর অমাবস্যা হইবে, পণ্ডিতেরা কহিয়াছেন, পুরন্দর এই তিথির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা; অতএব আপনারা সেইদিনে সংগ্রামসাধন সামগ্ৰীকলাপ [সমরোপকরণসমূহ] সংগ্ৰহ করুন। আর যেসকল রাজা যুদ্ধার্থ আগমন করিয়াছেন, তাহাদিগকেও কহিবে, হে রাজগণ! কেশব তোমাদিগের সমুদয় অভিলাষ পরিপূর্ণ করিবেন; তোমরা যেসকল রাজা ও রাজপুত্ৰ দুৰ্য্যোধনের বশীভূত হইয়াছ, সকলেই শস্ত্রদ্বারা নিহত পরমগতি লাভ করিবে।’ ”