১১৭. উশীনরের নিকট দ্বিশত অশ্বসংগ্ৰহ

১১৭তম অধ্যায়

উশীনরের নিকট দ্বিশত অশ্বসংগ্ৰহ

নারদ কহিলেন, “অনন্তর যশস্বিনী মাধবী স্বীয় প্রতিজ্ঞানুসারে পূর্ব্ববৎ রাজশ্ৰী পরিত্যাগপূর্ব্বক কন্যাভাব পরিগ্রহ করিয়া গালবঋষির অনুগামিনী হইলেন। মহর্ষি গালব কর্ত্তব্য বিচার করিয়া ভোজরাজ উশীনরের নিকট গমনপূর্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! এই কন্যা আপনার ঔরসে রাজলক্ষণসম্পন্ন দুই অপত্য প্রসব করিবে। আপনি ইহার গর্ভে চন্দ্ৰসূৰ্য্যসদৃশ দুইপুত্র উৎপাদিত করিলে ইহলোকে ও পরলোকে কৃতাৰ্থতা লাভ করিবেন। কিন্তু আমাকে ইহার শুল্কস্বরূপ চন্দ্রের ন্যায় শুভ্রবর্ণ শ্যামৈককৰ্ণ চতুঃশত অশ্ব প্রদান করিতে হইবে। অশ্বে আমার কিছু প্রয়োজন নাই; কেবল গুরুর নিমিত্ত এই কর্মে প্রবৃত্ত হইয়াছি। মহারাজ! যদি আপনি সমর্থ হয়েন, তবে অবিচারিতচিত্তে [বিনা বিতর্কে] এই মাধবীকে পরিগ্রহ করুন। আপনি পুত্রহীন; এক্ষণে ইহার গর্ভে পুত্র উৎপাদন করিয়া পিতৃগণকে ও আত্মাকে পরিত্রাণ করুন। পুত্রবান ব্যক্তিকে অপুত্রের ন্যায় স্বর্গভ্রষ্ট বা নিরয়গামী [নরক] হইতে হয় না।” রাজা উশীনর মহর্ষি গালবের নিকট এইরূপ ও অন্যরূপ নানাবিধ বাক্য শ্ৰবণ করিয়া কহিলেন, “হে মহর্ষে। আপনি যাহা কহিলেন, আমি তাহা সমুদয়ই শ্রবণ করিলাম; এইরূপ কাৰ্য্য অত্যন্ত আবশ্যক, তাহাতে সন্দেহ নাই। তজ্জন্য আমার অন্তঃকরণও সমুৎসুক হইয়াছে এবং শ্যামৈককৰ্ণ দুইশত ও অন্যবিধ বহু সহস্ৰ তুরঙ্গ আমার আলয়ে বিচরণ করে। কিন্তু আমিও ইহার গর্ভে একমাত্র পুত্র সমুৎপন্ন করিয়া সাধুগণের অনুসৃত পথে গমন করিব এবং আপনিও উহার সমুচিত শুষ্কপ্রাপ্ত হইবেন। আমার সমুদয় অর্থ পৌর [অন্তঃপুরবাসী রাজপরিবার] ও জনপদগণের [প্রজাগণের] নিমিত্ত সঞ্চিত আছে; আত্মভোগের নিমিত্ত নয়। যে রাজা অন্যের প্রতিপালনার্থ সঞ্চিত ধন গ্ৰহণ করিয়া যথেচ্ছ ব্যয় করেন, তিনি ধর্ম্ম ও যশ লাভ করিতে পারেন না। অতএব আপনি একমাত্র পুত্রের নিমিত্ত এই দেবগর্ভা কুমারীকে প্রদান করুন, আমি ইহাকে পরিগ্রহ করিব।”

“রাজা উশীনর এইরূপ নির্ব্বন্ধভিশয় প্রদর্শন করিলে দ্বিজশ্রেষ্ঠ গালব পূজাপূর্ব্বক তাঁহাকে কন্যা দান করিয়া অরণ্যে গমন করিলেন। যেমন কৃতপণ্য ব্যক্তি শ্ৰীযুক্ত হইয়া কালাতিপাত করেন, সেইরূপ রাজা উশীনর অনিন্দনীয়া মাধবীসমভিব্যাহারে কখন শৈলকন্দরে [পর্ব্বতগুহায়], কখনো নদীনির্ঝরে [ঝরণায়], কখনো বাতায়নবিমানে [জানালাযুক্ত আকাশযানে], কখনো অভ্যন্তরগৃহে, কখনো বিচিত্ৰ উদ্যানে [অন্তঃপুরে], কখনো বনে, কখন মনোহর হর্ম্যতলে [প্ৰসাদতলে–নীচ তলায়], কখন বা প্রাসাদশিখরে [উপরতলায়] কালব্যাপন করিতে লাগিলেন। কালক্রমে তাঁহার অভিনব রবিসঙ্কাশ [সূৰ্য্যকান্তি] এক পুত্ৰ সমুৎপন্ন হইল। ইনিই পার্থিবশ্রেষ্ঠ শিবি বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছিলেন। অনন্তর মহর্ষি গালব রাজার নিকট আগমনপূর্ব্বক তাঁহার নিকট হইতে মাধবীকে গ্ৰহণ করিয়া তথা হইতে প্ৰস্থান করিয়া গরুড়ের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন।”