১১৫. কন্যাবিনিময়ে হাৰ্য্যশ্ব হইতে দ্বিশত অশ্বসংগ্ৰহ

১১৫তম অধ্যায়

কন্যাবিনিময়ে হাৰ্য্যশ্ব হইতে দ্বিশত অশ্বসংগ্ৰহ

নারদ বলিলেন, “রাজা হৰ্য্যশ্ব অনপত্যতা [সন্তানাভাব] নিবন্ধন চিন্তাসহকারে দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া গালবকে কহিলেন, ‘হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! দেব, গন্ধৰ্বপ্রভৃতি সকলের লোকদর্শনীয়া এই বালার করপূষ্ঠ, পাদপৃষ্ঠ, পয়োধর, নিতম্ব, গণ্ড [গলা] ও নয়নের উন্নতি; কেশ, দশন [দন্ত], করপদের অঙ্গুলি ও কটিদেশের সূক্ষ্মতা; স্বর, নাভি ও স্বভাবের গভীরতা এবং পাণিতল, অপাঙ্গ [চক্ষুঃপ্রান্ত], তালু, জিহ্বা ও ওষ্ঠাধরের রক্তিমাপ্রভৃতি বহু লক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া ইনি চক্রবর্ত্তিলক্ষণোপেতা [রাজচিহ্নযুক্ত]-পুত্রপ্রসবসমর্থ বলিয়া বোধ হইতেছে; অতএব আপনি আমার সম্পত্তি বিবেচনা করিয়া ইহার শুষ্কপরিমাণ বলুন।”

“গালব কহিলেন, “হে রাজন! যেসকল অশ্ব চন্দ্রের ন্যায় শুভ্রবর্ণ, গ্ৰাম্য ও সুন্দরাঙ্গ এবং যাহাদিগের এক কৰ্ণ শ্যামবর্ণ, এরূপ অষ্টশত তুরঙ্গ প্ৰদান করিতে হইবে; তাহা হইলে যেমন অরণীতে [শমীপ্রভৃতি কষ্ঠের মন্থনদণ্ড-দুইটি কাষ্ঠের দণ্ড পরস্পর ঘর্ষণ করিলে তাহা হইতে অগ্নি নিৰ্গত হয়।] হুতাশন সমুৎপন্ন হয়, সেইরূপ ইহার গর্ভে আপনার বহু পুত্র সমুদ্ভূত হইবে।”

“কামমোহিত রাজা হৰ্য্যশ্ব তাঁহার বাক্য শ্রবণ করিয়া দীনতা প্রদর্শনপূর্ব্বক কহিলেন, “হে তপোধন!! আপনার অভিলষিত দুইশত ও অন্যান্য শত শত অশ্ব আমার আলয়ে বিচরণ করিতেছে, কিন্তু আমি ঐ দুইশত অশ্ব প্রদান করিয়া এই রমণীতে একটিমাত্র অপত্য উৎপাদন করিব; আমার এই অভিলাষ সম্পাদন করুন।”

“অনন্তর সেই বালা হৰ্য্যশ্বের বাক্য শ্রবণ করিয়া গালবকে কহিলেন, “মহাশয়! কোন ব্ৰহ্মবাদী আমাকে এই বরপ্রদান করিয়াছিলেন যে, তুমি প্রতি প্রসবান্তেই কন্যাভাব [প্রসবের পূর্ব্বভাব-যাহার সন্তান হয় নাই, তাহার মত অবস্থা] প্রাপ্ত হইবে। অতএব আপনি ঐ দুইশত অশ্ব গ্রহণ করিয়া আমাকে রাজার হস্তে সমর্পণ করুন; আপনি এইরূপে চারিজন রাজার নিকট হইতে অষ্টশত অশ্ব গ্রহণ করিবেন, আর আমারও চারিপুত্ৰ সমুৎপন্ন হইবে। হে তপোধন! এইরূপে আপনার গুরুদক্ষিণার সংখ্যা পূর্ণ হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। আমার এই পর্য্যন্ত বুদ্ধি, এক্ষণে আপনি যে প্রকার বিবেচনা করেন, তাহাই করুন।”

“মহর্ষি গালব কন্যার বাক্য শ্রবণ করিয়া রাজাকে কহিলেন, ‘মহারাজ! এই কন্যাকে গ্ৰহণ করিয়া শুল্কের চতুর্থভাগ প্রদানপূর্ব্বক একটি অপত্য উৎপাদন করুন।”

“রাজা হৰ্য্যশ্ব মাধবীকে অভিনন্দনসহকারে গ্রহণ করিয়া যথাসময়ে এক অভিলষিত পুত্র লাভ করিলেন; তাহার নাম বসুমনাঃ । কিয়দ্দিনানন্তর বসুপ্রভ [বসুর ন্যায় উজ্জ্বল] বসুপ্ৰদ [দাতা] বসুমনাঃ পিতৃরাজ্যে অভিষিক্ত হইলেন।

“অনন্তর ধীমান গালব হর্য্যশ্বের নিকট গমন করিয়া কহিলেন, ‘মহারাজ! আপনি ভাস্করসন্নিভ [সূৰ্য্যতুল্য তেজঃশালী] পুত্ৰলাভ করিয়াছেন; এদিকে আমারও ভিক্ষা করিবার নিমিত্ত অন্য নৃপতির নিকট গমন করিবার সময় সমুপস্থিত হইয়াছে; অতএব মাধবীকে প্রদান করুন।”

“তখন পৌরুষশালী [বীৰ্য্যবান] রাজা হৰ্য্যশ্ব সত্যের অনুরোধে তাদৃশ অশ্বের অসুলভতা[দুষ্প্রাপ্যতা]বোধে মাধবীকে গালবের হস্তে প্রত্যপণ করিলেন। মাধবী স্বেচ্ছাক্রমে দীপ্যমান রাজশ্ৰী পরিত্যাগপূর্ব্বক পুনরায় কুমারী হইয়া গালবের অনুগমন করিলেন। মহর্ষি গালব রাজার নিকট তদত্ত তুরঙ্গসমুদয় ন্যস্ত করিয়া মাধবীসমভিব্যাহারে মহারাজ দিবোদাসের সমীপে যাত্ৰা করিলেন।”