১১৪. যযাতির নিকট গালবের মাধবীলাভ

১১৪তম অধ্যায়

যযাতির নিকট গালবের মাধবীলাভ

নারদ বলিলেন, “যজ্ঞসহস্রের অনুষ্ঠাতা অসাধারণ দানশক্তিসম্পন্ন কাশীশ্বর মহারাজ যযাতি গরুড়ের যুক্তিসঙ্গত বাক্য শ্রবণানন্তর মনে মনে বিবেচনা করিলেন, প্ৰিয়সখা বিনতানন্দন ও দ্বিজোত্তম গালব সমাগত হইয়া আমার নিকট যাচ্ঞা করিতেছেন, ইহা পরমসৌভাগ্যের বিষয়; ভিক্ষাপ্রদান অপেক্ষা শ্লাঘনীয় [গৌরবের] আর কি আছে এবং ইহারাও সূৰ্য্যবংশসম্ভূত অন্যান্য ভূপতিগণকে পরিত্যাগপূর্ব্বক আমার সমীপে সমুপস্থিত হইয়াছেন। এই সমুদয় চিন্তা করিয়া তিনি কহিলেন, “হে বিহগরাজ! আমার জন্ম সফল এবং দেশ ও কুলের পরিত্ৰাণ হইল। হে মিত্ৰ! এক্ষণে আমার পূর্ব্বের ন্যায় বিভব নাই; আমার সম্পত্তি হ্রাস হইয়াছে; তথাপি আর তোমার আগমন ও বিপ্ৰর্ষির [বিপ্ৰ-ঋষি-বিপ্ৰর্ষি এই শব্দটিও দেবর্ষি মহর্ষির মত। ক্ষত্রিয় ঋষি হইলে হন রাজৰ্ষি] আশা ব্যৰ্থ করিতে পারিব না। এমন কোন বস্তু তোমাদিগকে প্রদান করিব, যদ্বারা তোমাদের অভিলাষ পূর্ণ হইবে। অর্থী [প্রার্থী] যাচ্ঞা করিয়া হতাশ হইয়া প্রতিনিবৃত্ত হইলে কুল দগ্ধ হইয়া যায়। অর্থীকে প্রত্যাখ্যান করা [কিছু না দিয়া ফিরাইয়া দেওয়া] অপেক্ষা পাপীজনক কর্ম্ম আর কিছুই নাই। অর্থী ব্যক্তি হতাশ হইয়া প্রতিনিবৃত্ত হইলে প্রত্যাখ্যানকারীর পুত্রপৌত্র বিনষ্ট হয়; অতএব তোমরা এই দেব, দানব ও মানুষগণের অভিলষণীয়া সুরসুতাসদৃশী [দেবকন্যাতুল্য] আমার কন্যাকে গ্রহণ কর। ইহার নাম মাধবী, ইহা হইতে চারটি বংশ সমুৎপন্ন হইবে। ভূপতিগণ ইহাকে প্রাপ্ত হইলে শ্যামৈককৰ্ণ অষ্টশত অশ্বের কথা দূরে থাকুক, সমুদয় রাজ্য পর্য্যন্ত প্রদান করিতে পারেন। ইহার গৰ্ভসমুৎপন্ন পুত্রদ্বারা দৌহিত্রবান হওয়া ব্যতীত আমার অন্য কোন অভিলাষ নাই।”

“তখন তপোনিধি গালব মাধবীকে গ্রহণপূর্ব্বক যযাতিকে ‘আমাদের পরস্পর পুনঃ সন্দর্ম্মন হইবে’ বলিয়া গরুড়-সমভিব্যাহারে প্রস্থান করিলেন। বিনতাতনয় কিয়ৎক্ষণ পরে গালবকে ‘এই অশ্বপ্রাপ্তির উপায় হইয়াছে’ বলিয়া আপনার ভবনে গমন করিলেন। খগরাজ স্বস্থানে প্রস্থান করিলে তপোধন গালব কন্যা লইয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন, ইহাকে কাহার হস্তে ন্যস্ত [প্রদান]। করিলে আমার মনোরথ পূর্ণ হইতে পারে? পরিশেষে মনে মনে স্থির করিলেন যে, অযোধ্যাপতি ইক্ষাকুবংশীয় হাৰ্য্যশ্ব মহীপতি মহাবলপরাক্রান্ত, চতুরঙ্গবলসমন্বিত, ধনধান্যশালী, প্রজাবৎসল ও দ্বিজগণের প্রিয়। তিনি অপত্যকামনায় উৎকৃষ্ট তপানুস্ঠান করিতেছেন, তাঁহার নিকট গমন করিলে আমার অভিলাষ পূর্ণ হইতে পারে।

“তপোনিধি গালব মনে মনে এইরূপ স্থির করিয়া হাৰ্য্যশ্বভূপতির সমীপে গমনপূর্ব্বক কহিলেন, “হে রাজন! এই কন্যাটি পুত্রপ্রসবদ্বারা আপনার বংশবৰ্দ্ধন করিবে, আপনি শুল্ক [পণ] প্রদান করিয়া ইহাকে গ্রহণ করুন। ইহাকে গ্ৰহণ করিবার নিমিত্ত আপনাকে যেরূপ শুষ্কপ্রদান করিতে হইবে, তাহা কহিতেছি, শ্রবণ করিয়া নিৰ্দ্ধারিত করুন।’ ”