১১১. গরুড়বাহিত গালবের পূর্ব্বদিক গমন

১১১তম অধ্যায়

গরুড়বাহিত গালবের পূর্ব্বদিক গমন

“গালব কহিলেন, “হে গরুত্মন [হে গরুড়]! পূর্ব্বদিকে ধর্মের চক্ষুদ্ধয়স্বরূপ চন্দ্র ও অগ্নি রহিয়াছেন; ঐ দিকে আমাকে লইয়া চল। তুমিই কহিয়াছ, ঐ স্থানে সমুদয় দেবগণের, বিশেষতঃ সত্য ও ধর্মের সান্নিধ্য আছে; অতএব সেই দেবগণকে দর্শন ও তাঁহাদের সহিত সমাগম করিতে পুনরায় আমার বাসনা জন্মিয়াছে।”

“তখন বিনতানন্দন তাঁহাকে স্বীয় পৃষ্ঠে আরোহণ করিতে আদেশ করিলেন। গালব গরুড়ের আদেশানুসারে তাঁহার পৃষ্ঠদেশে আরোহণ করিয়া কহিলেন, “হে পতগেন্দ্র [হে পক্ষিরাজ]! তোমার গমন সময়ে তোমাকে মধ্যাহ্নকালীন ভাস্করের ন্যায় বোধ হইতেছে। তোমার পক্ষপবনপ্রধুনিত [পাখার বাতাসে কম্পিত] পাদপসমুদয় যেন তোমার অনুগমন করিতেছে। তুমি স্বীয় পক্ষবাতে যেন শৈল, সাগর ও কানন সমুদয় বসুন্ধরা আকর্ষণ করিতেছ। তোমার পক্ষপবনবেগে মৎস্য ও ভুজঙ্গগণসমবেত জলরাশি যেন আকাশমার্গে সমুখিত হইতেছে। তিমিঙ্গিল ও অন্যান্য তুল্যাকার মৎস্যসকল এবং মনুষ্যের ন্যায় মুখবিশিষ্ট সৰ্পসমুদয় যেন উন্মথিত হইতেছে। হে পতগরাজ! মহার্ণবের গভীর শব্দে আমার শ্রোত্রদ্বয় বধির হইয়াছে; আমি কিছুই দর্শন বা শ্রবণ করিতে সমর্থ হইতেছি না। এবং আপনার প্রয়োজন বিস্মৃত হইয়াছি; অতএব তুমি মন্দ[অল্প]বেগে গমন কর। ব্ৰহ্মহত্যা করিও না। আমি সূৰ্য্য, আকাশ ও দিকসমুদয় কিছুই দেখিতেছি না; চতুর্দ্দিক কেবল অন্ধকারময় অবলোকন করিতেছি। তোমার ও আপনার শরীর আমার নেত্ৰগোচর হইতেছে না; কেবল সুজাত [উত্তম শ্রেণী] মণির ন্যায় তোমার নয়নযুগল নিরীক্ষণ করিতেছি। পদে পদে তোমার দেহ হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ [অগ্নিকণা] সকল বিনির্গত হইতেছে; অতএব উহা নির্ব্বাণ ও নয়নের জ্যোতিঃ প্রশমন করিয়া বেগ সংবরণ কর। গমনে আমার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই; তুমি ক্ষান্ত হও; আমি তোমার বেগ সহ্য করিতে অসমর্থ হইয়াছি।

“ ‘হে বিনতানন্দন! আমি গুরুকে শ্যামৈককর্ণ নিশাকরীসদৃশ শ্বেতবর্ণ অষ্টশত অশ্ব প্রদানে অঙ্গীকার করিয়াছি। ঐসমুদয় অশ্বপ্রাপ্তির কোন উপায় দেখিতে পাই না; তিন্নিমিত্তই স্বয়ং জীবনত্যাগের চেষ্টা করিতেছি। আমার ধন বা ধনবান বন্ধু নাই; আর অর্থদ্বারাও ঐসমুদয় অশ্ব লব্ধ হইবার নহে।’

“পতগরাজ গরুড় গালবের এইরূপ বহুবিধ দীনবচন শ্রবণে সহাস্যবদনে গমন করিতে করিতে কহিলেন, “হে বিপ্ৰর্ষে! তুমি নিতান্ত অনভির ন্যায় জীবনত্যাগে কৃতসঙ্কল্প হইয়াছ। মৃত্যু মনুষ্যের ইচ্ছাধীন নহে; মৃত্যু পরমেশ্বরস্বরূপ [স্বাধীনতা]। তুমি পূর্ব্বে কি নিমিত্ত আমাকে ঐসকল অশ্বের নিমিত্ত অনুরোধ পরে নাই? ঐ সমুদয়-প্রাপ্তির বিলক্ষণ সদুপায় আছে, অতএব এই সাগরসমীপস্থিত ঋষভপর্ব্বতে বিশ্রাম ও আহারাদি সম্পাদন করিয়া নিবৃত্ত হইব।’ ”