১০৯. পশ্চিমদিকের মাহাত্ম্য

১০৯তম অধ্যায়

পশ্চিমদিকের মাহাত্ম্য

“গরুড় কহিলেন, “হে গালব! এই দিক দিকপাল সলিলরাজ বরুণদেবের অতি প্রিয়তম ও আদিম বাসস্থান। এই দিকে সূৰ্য্যদেব দিবসের পশ্চাৎ কিরণসকল বিসর্জ্জন করেন; এই নিমিত্ত ইহা পশ্চিম দিক বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছে। এই দিকে ভগবান কশ্যপদেব সলিলসকল রক্ষা করিবার নিমিত্ত বরুণকে যাদোরাজ্যে [মকরাদি জলজন্তু পূর্ণ স্থানে] নিযুক্ত করিয়াছেন। এই দিকে তিমিরারি সুধাকর [চন্দ্র] শুক্লপক্ষের প্রথমে বরুণের নিকট ছয় রস [অন্ন, মধুর, তিক্ত কষায়, কটু (ঝাল), লবণ] পান করিয়া পুনর্ব্বার নবীকৃত [কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ তিথি হইতে চন্দ্রের ক্ষীণতা হইতে আরম্ভ হয়, অমাবস্যায় সম্পূর্ণ ক্ষয় হইয়া যায়। আবার শুক্লা প্রতিপদ হইতে বৃদ্ধি; এই বৃদ্ধিই নবীকৃতত্ব] হয়েন। এই দিকে দৈত্যগণ বিমুখীকৃত [বাধাপ্রাপ্ত] ও মহাবাতে নিপীড়িত হইয়া দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগপূর্ব্বক শয়ন করিয়াছিল। এই দিকে অস্ত [অস্তগিরি] প্ৰণয়প্রকাশপূর্ব্বক সূৰ্য্যদেবকে সর্ব্বতোভাবে গ্রহণ করেন; অস্ত হইতেই পশ্চিমসন্ধ্যা [সায়ং সন্ধ্যা] আবির্ভূত হয়; রাত্রি ও নিদ্রা ইহা হইতেই নির্গত হইয়া যেন জীবলোকের অৰ্দ্ধ আয়ু হরণ করিবার নিমিত্ত প্রাদুর্ভূত হয়; এই দিকে পুরন্দর [ইন্দ্র] সুখসুপ্তা গর্ভবতী দিতিদেবীকে গর্ভবিহীন করিয়াছিলেন। দেবগণও এই দিকে সমুৎপন্ন হইয়াছেন। এই দিকে হিমালয়পৰ্বতের মূল সাগরবিলীন মন্দারাভিমুখে নিরন্তর গমন করিতেছে; বর্ষসহস্ৰেও উহার অন্ত প্রাপ্ত হওয়া যায় না। এই দিকে সুরভি কাঞ্চনশৈলী ও সুবৰ্ণসরোজ[স্বর্ণপদ্ম] সম্পন্ন অতি বিস্তীর্ণ সরোবরতীরে আগমন করিয়া দুগ্ধ ক্ষরণ করেন। এই দিকস্থ সমুদ্রের মধ্যে সূৰ্য্যকল্প সূৰ্য্যেন্দুজিঘাংসক[চন্দ্ৰসূর্য্যগ্রাসকারী] স্বর্ভানুর[রাহুর] কবন্ধ[মস্তকহীন দেহ] দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে। এই দিকে অপরিমেয় পরাক্রমশালী অদৃশ্য চিরতরুণ[স্থিরযৌবন] সুবৰ্ণশিরঃনামক মুনির উন্নত[উচ্চ উচ্চারিত] বেদধ্বনি শ্রবণগোচর হয়। এই দিকে হরিমেধানামক মুনির কন্যা ধ্বজবতী দিবাকরের শাসনে আকাশে অবস্থান করিয়া আছেন। এই দিকে বায়ু, অগ্নি, জল, আকাশ দৈনিক [দিবস সম্বন্ধীয়] ও আকাশ নৈশিকা [রাত্রি সম্বন্ধীয়] দুঃখদ স্পর্শগুণ পরিত্যাগ করেন। এই দিক হইতেই সূৰ্য্যের তিৰ্য্যগগতি [বক্রগতি] পরিবর্ত্তিত হয়। এই দিকে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী আদিত্যমণ্ডলে প্রবেশ করে। অনন্তর অষ্টাবিংশতি রাত্র ভানুসহ সংক্রমণ করিয়া পুনরায় চন্দ্রসংযোগে তাহা হইতে নিপতিত হয়। এই দিকেই সাগরের চিরপূর্ণতার হেতুভূত নদীসকল সমুৎপন্ন হইয়া থাকে। এই দিকে লোকত্ৰয়ের প্রয়োজনোপযোগী সলিলসকল প্রতিষ্ঠিত আছে। এই দিক পন্নগরাজ অনন্ত ও অনাদি অব্যয় ভগবান বিষ্ণুর বাসস্থান। এই দিকে অনলসহায় বায়ু, মহর্ষি কশ্যপ ও মারীচ অবস্থান করেন। হে গালাব! আমি তোমার নিকট পশ্চিমদিকের বৃত্তান্ত কীর্ত্তন করিলাম; এক্ষণে কোন দিকে গমন করিবে বল।’ ”