০৯৯. নারদসহ মাতলির হিরণ্যপুর প্রবেশ

৯৯তম অধ্যায়

নারদসহ মাতলির হিরণ্যপুর প্রবেশ

দৈত্য ও দানবগণের নিমিত্ত অনল্প [বহুতর] যত্নসহকারে সঙ্কল্পদ্বারা পাতালতলে হিরণ্যপুরনামে এই বৃহৎ নগর নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। পূর্ব্বকালে মহাশূর, বিশালবদন, ভীমপরাক্রম, মারুতগামী [বায়ুতুল্য গতিশীল], বীৰ্য্যসম্পন্ন রাক্ষস ও বিষ্ণুপাদসম্ভূত কালকঞ্জ অসুরগণ এবং ব্ৰহ্মপাদসভূত যুদ্ধদুর্ম্মদ [রণপ্ৰমত্ত] নিবাতকবচগণ বরপ্রাপ্ত হইয়া সহস্ৰ মায়া প্রকটপূর্ব্বক এই স্থানে অবস্থান করিত। ইন্দ্ৰ, যম, বরুণ, কুবের বা অন্যান্য দেবতা তাঁহাদিগকে বশবর্ত্তী করিতে সমর্থ হয়েন নাই, তুমি ইহা অবগত আছ। তুমি, তোমার পুত্ৰ গোমুখ, দেবরাজ ও তাঁহার পুত্ৰ জয়ন্ত, তোমরা সকলেই অনেকবার তাহাদিগের সংগ্ৰাম হইতে পলায়ন করিয়াছিলো।

“ ‘দেখ, এই হিরণ্যপুরের সুবৰ্ণময়, রজতময়, পদ্মরাগ [মণি]ময়, বৈদূর্য্যমণিময়, প্রবালের ন্যায় রুচির [মনোজ্ঞ], সূর্য্যকান্তমণির ন্যায় শুভ্রবর্ণ, হীরকের ন্যায় উজ্জ্বল, বিধিবিহিতকর্ম্মসমুপেত [শিল্পনৈপুণ্যযুক্ত], অত্যুন্নত, মণিজলমণ্ডিত নিবিড় গৃহসকল মৃন্ময়, শিলাময়, দারুময়, সূৰ্য্যকিরণময় ও অগ্নিময় বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। ইহার কি রূপ, কি গুণ, কি পরিমাণ, কি উপাদান [উপকরণ], কিছুই বর্ণনা করা যায় না। ঐ দেখ, দৈত্যগণের ক্রীড়াস্থান ও শয্যাসকল; ঐ দেখ, মহামূল্যরত্নশোভিত ভবন ও আসনসকল; ঐ দেখ, জলদশ্যামল [মেঘসদৃশ নীলাভ] শৈল ও প্রস্রবণ [ঝরণা]সকল এবং প্রচুর ফলপুষ্পশোভিত কামচারী পাদপরাজি শোভা পাইতেছে। মাতিলে! এ স্থানে কি তোমার অভিলষিত পাত্র থাকিবার সম্ভাবনা আছে?”

“মাতলি কহিলেন, ‘মহর্ষে। দেবগণের অপ্রিয় কর্ম্ম করা আমার কর্ত্তব্য নহে; দেব ও দানবগণের পরস্পর ভ্রাতৃসম্বন্ধ আছে বটে, কিন্তু ইহারা চিরকাল পরস্পর বিদ্বেষ প্রদর্শন করিয়া থাকেন; অতএব পরপক্ষের সহিত সম্বন্ধবন্ধন করা কি প্রকারে সঙ্গত হইতে পারে? আমি স্বীয় স্বভাব, আপনার প্রকৃতি ও হিংসাপরায়ণ অসুরগণের ব্যবহার বিলক্ষণ অবগত আছি; অতএব চলুন, আমরা অন্যত্র গমন করি; অসুরগণকে দর্শন করা আমার উচিত নয়।”