০৯৬. সন্ধিসম্বন্ধে কণ্বঋষির উক্তি

৯৬তম অধ্যায়

সন্ধিসম্বন্ধে কণ্বঋষির উক্তি

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! ভগবান কশ্ব জামদগ্ন্যের বাক্যশ্রবণানন্তর দুৰ্য্যোধনকে কহিতে লাগিলেন, “হে মহারাজ! সর্ব্বলোকপিতামহ ব্ৰহ্মা, ভগবান নর ও নারায়ণ অক্ষয় এবং অব্যয়। সমুদয় দেবগণের মধ্যে কেবল ভগবান বিষ্ণুই নিত্য ও অজেয়। চন্দ্ৰ, সূৰ্য্য, মহী, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ ও গ্রহনক্ষত্ৰপ্রভৃতি সমুদয়েরই বিনাশ আছে। ইহারা প্ৰলয়সময়ে লোকত্ৰয় পরিত্যাগ করিয়া বারংবার ক্ষয়প্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়া থাকে। আর মনুষ্য এবং মৃগ, পক্ষীপ্রভৃতি তিৰ্য্যাগযোনিগত জীবজন্তুসকল ও অন্যান্য জীবলোকবাসী প্ৰাণীসমুদয় অতি অল্পকাল জীবিত থাকিয়াই পরলোকযাত্রা করে। ভূপতিগণ প্রায়ই তরুণবয়সে অসামান্য সম্পত্তি সম্ভোগ করিয়া সুকৃত ও দুস্কৃতের ফল ভোগ করিবার নিমিত্ত পরলোকগমন করিয়া থাকেন। অতএব আপনি যুদ্ধাভিলাষ পরিত্যাগপূর্ব্বক পাণ্ডুপুত্ৰগণের সহিত সন্ধিস্থাপনপূর্ব্বক একত্র মিলিত হইয়া পৃথিবী প্রতিপালন করুন।

ইন্দ্রসারথি মাতলির উপাখ্যান

“হে দুৰ্য্যোধন! আপনাকে বলবান জ্ঞান করা নিতান্ত অনুচিত; কেন না, বলবান হইতেও বলবান দৃষ্ট হইয়া থাকে। দেবতুল্য পরাক্রান্ত পাণ্ডবগণ অসাধারণ বাহুবীৰ্য্যসম্পন্ন; বাহুবলশালী ব্যক্তিগণের নিকট সৈন্যবল নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর। এই বিষয়ে কন্যাপ্রদানভিলাষী মাতলির বর-অন্বেষণ-রূপ একটি পুরাতন ইতিহাস কহিতেছি, শ্রবণ করুন।

“ত্রিলোকনাথ পুরন্দরের অভিমত সারথি মাতলির কুলে অতি বিখ্যাতরূপসম্পন্না এক কন্যা জন্মিয়াছিল, উহার নাম গুণকেশী। ঐ কন্যা স্বীয় রূপলাবণ্যে অন্যান্য সমুদয় কামিনীগণকে অতিক্রম করিয়াছিল। মাতলি ঐ কন্যার সম্প্রদানসময় সমুপস্থিত হইয়াছে, বুঝিতে পারিয়া ভার্য্যাসমভিব্যাহারে মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন, লঘুবৃত্তি [ক্ষীণবৃত্তি-দরিদ্র], মৃদুস্বভাব অথচ যশস্বী ব্যক্তিদিগের কুলে কন্যার জন্মগ্রহণে ধিক। কন্যা হইতে মাতৃকুল, পিতৃকুল ও শ্বশুরকুল-এই তিন কুলই সংশয়িত [অপাত্রে প্রদানে কলঙ্কাশঙ্কা] হইয়া উঠে। আমি স্বয়ং দেব ও মানুষ এই উভয় লোক অনুসন্ধান করিলাম, কুত্ৰাপি আমার মনোনীত পাত্র নয়নগোচর হইল না।

“এইরূপে মাতলি দেব, দানব, গন্ধৰ্ব, মনুষ্য ও ঋষিগণের মধ্যে কন্যার উপযুক্ত পাত্র প্রাপ্ত না হইয়া পরিশেষে স্বীয় ভাৰ্য্যা সুধৰ্মর সহিত রজনীযোগে পরামর্শ করিয়া নাগলোকগমনে কৃতনিশ্চয় হইলেন। দেবলোক ও মনুষ্যলোকমধ্যে গুণকেশীর অনুরূপ রূপবান বর নেত্রগোচর হইল না। বোধহয়, নাগলোকে অবশ্যই প্রাপ্ত হইব, ইহা মনে মনে স্থির করিয়া সুধর্ম্মকে আমন্ত্রণ ও প্রদক্ষিণ এবং কন্যার মস্তকাঘ্রাণপূর্ব্বক পাতালে প্রবেশ করিলেন।”