০৮৪. কৃষ্ণ-অভ্যর্থনাৰ্থ দুৰ্য্যোধনের সভানির্ম্মাণ

৮৪তম অধ্যায়

কৃষ্ণ-অভ্যর্থনাৰ্থ দুৰ্য্যোধনের সভানির্ম্মাণ

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! এদিকে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র দূতমুখে মধুসূদনের আগমনবাতাঁ শ্রবণে রোমাঞ্চিতকলেবর হইয়া মহাভুজ ভীষ্ম, দ্রোণ, সঞ্জয় ও মহামতি বিদুরের সমক্ষে অমাত্যসমবেত দুৰ্য্যোধনকে কহিতে লাগিলেন, “হে বৎস! অতি আশ্চৰ্য্য কথা শ্রবণগোচর হইল; দশার্হাধিপতি [যাদুপতি] বাসুদেব পাণ্ডবগণের কার্য্যসাধনাৰ্থ আমাদিগের নিকট আগমন করিবেন। প্রতি গৃহে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের মুখেই এই কথা শ্রুত হইতেছে, কি চত্বর [অঙ্গন], কি সভা সমুদয় স্থানেই এই কথার আলোচনা হইতেছে। মহাত্মা মধুসূদন আমাদের মান্য ও পূজনীয়; তাঁহার প্রভাবেই লোকযাত্রা নির্ব্বাহিত হইতেছে; তিনি সমুদয় ভূতের ঈশ্বর; তাঁহাতে ধৈৰ্য্য, বীৰ্য্য, প্রজ্ঞা ও তেজ বর্ত্তমান আছে এবং তিনিই সাধুলোকের মাননীয় ও সনাতন ধর্ম্মস্বরূপ। তাঁহার পূজা করিলে সুখোদয় হয়, না করিলে দুঃখের পরিসীমা থাকে না। যদি আমরা যথাবিধি পূজাদ্বারা তাঁহাকে সন্তুষ্ট করিতে পারি, তাহা হইলে আমাদের সমুদয় অভিলাষ সফল হইবে। অতএব, হে অরতিনিপাতন! আদ্যই তাঁহার পূজার উদ্যোগ কর। পথিমধ্যে স্থানে স্থানে সমুদয় ভোগ্যদ্রব্যে পরিপূর্ণ সভাসমুদয় প্রস্তুত করিতে প্রবৃত্ত হও এবং যাহাতে তিনি তোমার প্রতি প্রীত হয়েন, এরূপ কাৰ্য্য অবিলম্বে সম্পাদন কর। এ বিষয়ে আমার এই মত। দেখ, ভরতবংশাবতংস ভীষ্ম আবার ইহাতে কি বলেন।”

ভীষ্মপ্রভৃতি সকলেই রাজা ধৃতরাষ্ট্রের এই বাক্য শ্রবণে তাঁহার প্রশংসা করিয়া তাহাকে অনুমোদন করিলেন।

রাজা দুর্য্যোধন তাঁহাদের সকলের অভিপ্রায়নুসারে পরামরমণীয় সভাসম্পাদনোপযোগী দ্রব্যজাত প্ৰস্তুত করিয়া রমণীয় প্রদেশসমুদয়ে নানা রত্নসঙ্কীর্ণ বিবিধ সভা নির্ম্মাণ করাইলেন। ঐ সমুদয় সভাতে বিবিধ বিচিত্ৰ আসন, স্ত্রী, গন্ধ, অলঙ্কার, সূক্ষ্ম বসন, সুমিষ্ট অন্নপান ও সুগন্ধ মাল্যসকল সংস্থাপিত হইল। বিশেষতঃ কৃষ্ণের বাসের নিমিত্ত বৃকস্থলে যে সভা প্রস্তুত হইয়াছিল, উহা অন্যান্য সমুদয় সভা অপেক্ষা প্রচুর রত্নসম্পন্ন ও মনোহর। ।

দুৰ্য্যোধন সেই দেবোচিত অতিমানুষ কর্ম্ম সম্পাদন করিয়া রাজা ধৃতরাষ্ট্রের নিকট নিবেদন করিলেন। কিন্তু মহাত্মা কেশব সেইসকল সভা ও রত্নরাজের প্রতি দৃষ্টিপাতও না করিয়া কুরুসভায় গমন করিতে লাগিলেন।