০৫২. পুত্রদের প্রতি ধৃতরাষ্ট্রের সন্ধির উপদেশ

৫২তম অধ্যায়

পুত্রদের প্রতি ধৃতরাষ্ট্রের সন্ধির উপদেশ

“হে সঞ্জয়! জয়লাভোৎসুক পাণ্ডবগণেরা যেরূপ পরাক্রান্ত, তাঁহাদের অগ্রসর যোদ্ধৃগণও সেইরূপ আত্মপ্রদানে কৃতনিশ্চয় ও সসৎসুক হইয়াছেন। তুমিই সেই পরাক্রম পাঞ্চাল, কেকয়, মগধ ও বৎসরাজগণের কথা নিবেদন করিয়াছ। যিনি ইচ্ছা করিলে ইন্দ্রের সহিত এই সমুদয় ভুবন বশীভূত করিতে পারেন, সেই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ পাণ্ডবগণের জয়ের নিমিত্ত সমানীত হইয়াছেন। যে শিবিরাজ সত্যকি অর্জ্জুনের নিকট অচিরকালমধ্যে সমস্ত বিদ্যা শিক্ষা করিয়াছেন, তিনি বীজ বপনের ন্যায় শরবর্ষণ করিয়া রণক্ষেত্রে দণ্ডায়মান হইবেন। ক্রুরকর্ম্মা, মহারথ, পাঞ্চালনন্দন ধৃষ্টদ্যুম্ন আমাদের সেনাগণের সহিত সংগ্রাম করিবেন।

“হে বৎস! যুধিষ্ঠিরের ক্ৰোধ এবং ভীম, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেবের পরাক্রম হইতে আমি অত্যন্ত ভীত হইয়াছি। মানবেন্দ্ৰ পাণ্ডবগণ অলৌকিক অস্ত্ররূপ জাল বিস্তীর্ণ করিয়াছে। বোধহয়, আমার সৈন্যগণ তাহাতে নিপতিত হইলে কদাচ উৰ্ত্তীর্ণ হইতে পরিবে না; এই নিমিত্তই আমি উচ্চৈঃস্বরে কহিতেছি, যুধিষ্ঠির দর্শনীয়, মনস্বী, শ্রীমান, ব্রহ্মতেজে তেজস্বী, মেধাবী, প্রজ্ঞাবান, ধর্ম্মাত্মা এবং সমরোদ্যত মহারথ মহাবীর মিত্র, অমাত্য, ভ্রাতা ও শ্বশুরগণে পরিবৃত, ধৈৰ্য্যশীল, গৃঢ়মন্ত্র, দয়াশীল, বদান্য, লজ্জাপরায়ণ অব্যর্থপরাক্রম, বহুশাস্ত্ৰজ্ঞ, কৃতাত্মা, বৃদ্ধসেবী এবং জিতেন্দ্ৰিয়; সেই সৰ্বগুণসম্পন্ন যুধিষ্ঠির প্রজ্বলিত হুতাশনস্বরূপ; কোন মুমূর্ষ অচেতন ব্যক্তি এই অনিবাৰ্য্য হুতাশনে পতঙ্গাবৃত্তি অবলম্বন করিবে? আমি অগ্নিসমানধর্ম্ম ধর্ম্মরাজের সহিত কপট ব্যবহার করিয়াছি; এ নিমিত্ত তিনি যুদ্ধে অবশ্যই আমার হতভাগ্য পুত্ৰগণকে সংহার করিবেন।

“অতএব হে কুরুগণ! তাঁহাদিগের সহিত যুদ্ধ না করাই শ্রেয়স্কর; যুদ্ধ করিলে সমস্ত কুল নির্ম্মূলিত হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। আমার বুদ্ধির সীমা এই পৰ্য্যন্ত; এইরূপ করিলেই আমার অন্তঃকরণ নিরুদ্বেগ হয়; ইহা যদি তোমাদের অভিপ্রেত হয়, তাহা হইলে আমরা সন্ধির নিমিত্ত যত্নশীল হই; নতুবা আমরা যৎপরোনাস্তি পরিক্লিষ্ট হইলেও যুধিষ্ঠির আমাদিগকে উপেক্ষা করিবেন না। তিনি স্বধর্ম্মানুসারে আমাকেই এই সমস্ত ঘটনার কারণ বলিয়া নিন্দা করিয়া থাকেন।”