০৩২. প্ৰজাগণপর্ব্বাধ্যায়—বিদুরাগমন

৩২তম অধ্যায়

প্ৰজাগণপর্ব্বাধ্যায়—বিদুরাগমন

বৈশম্পায়ন কহিলেন, নরনাথ! পরে মহাপ্ৰজ্ঞ মহীপতি ধৃতরাষ্ট্র দ্বারবান্কে আহ্বানপূর্ব্বক কহিলেন, “দ্বারপাল! বিদুরকে দেখিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ হইয়াছে, তুমি সত্বর তাঁহাকে এ স্থানে আনয়ন কর।” দ্বারবান ধৃতরাষ্ট্রের আদেশানুসারে বিদুরের নিকট গমনপূর্ব্বক কহিল, “হে মহাপ্রজ্ঞা! মহারাজ আপনাকে দেখিতে বাসনা করিতেছেন, আপনি অবিলম্বে তাঁহার সন্নিধানে গমন করুন।” বিদুর মহারাজের নির্দ্দেশ শ্রবণমাত্র দ্বারপালের সমভিব্যাহারে রাজভবনে প্রবেশপূর্ব্বক কহিলেন, “দ্বারপাল! তুমি মহারাজসমীপে আমার আগমনবার্ত্তা নিবেদন কর।” দ্বারবান বিদুরের আদেশানুসারে তৎক্ষণাৎ ধৃতরাষ্ট্রের সমীপে গমনপূর্ব্বক কহিল, “মহারাজ! বিদুর আপনার আজ্ঞানুসারে আগমনপূর্ব্বক চরণদর্শন করিতে অভিলাষ করিতেছেন, এক্ষণে আপনার কি অনুমতি হয়?” ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “দ্বারপাল! দীর্ঘদশী মহাপ্রাজ্ঞ বিদুরকে সত্বর আমার নিকটে আনয়ন কর, আমি বিদুরকে দর্শন করিতে কদাপি পরাঙ্মুখ নহি ।” তখন দ্বারবান বিদুরের সমীপে সমুপস্থিত হইয়া কহিল, “মহাশয়! আপনি অবিলম্বে মহারাজের অন্তঃপুরে প্রবেশ করুন, তিনি আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে কদাচ বিরত নহেন।”

তখন মহামতি বিদুর ধৃতরাষ্ট্রের নিকেতনে প্রবেশপূর্ব্বক কৃতাঞ্জলিপুটে কহিলেন, “মহারাজ! আমি বিদুর, আপনার আদেশানুসারে আগমন করিয়াছি, অনুমতি করুন, কি করিব?” ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে বিদুর! অদ্য সঞ্জয় আমার সমীপে আগমনপূর্ব্বক আমাকে তিরস্কার করিয়া গিয়াছে। যুধিষ্ঠির তাহাকে যাহা বলিয়াছেন, সে প্ৰভাতে সভামধ্যে আসিয়া তৎসমুদয় কহিবে। যুধিষ্ঠির তাহাকে যে কি বলিয়াছেন, তাহা আমি এখনও জানিতে পারি নাই, তন্নিমিত্ত আমার চিত্ত অপার চিন্তাসাগরে নিমগ্ন হইয়াছে, নিদ্রা কোনক্রমেই আমার নয়নাবলম্বিনী হইতেছে না, আমি জাগরিত থাকিয়া কেবল চিন্তানলে দগ্ধ হইতেছি। অধিক কি বলিব, যে অবধি সঞ্জয় পাণ্ডবগণের নিকট হইতে আগমন করিয়াছে, সেই অবধি আমার মন অপ্রশান্ত ও ইন্দ্ৰিয়গণ অপ্রকৃতিস্থ হইয়াছে। সঞ্জয় যে কি বলিবে, এই চিন্তাই আমার হাদয় দাহ করিতেছে। অতএব যাহাতে আমাদের শ্রেয়োলাভ হয়, এরূপ কথোপকথন কর।”

অনন্তর বিদুর কহিলেন, “মহারাজ। যে ব্যক্তি কামী বা চৌর এবং যে ব্যক্তি দুর্ব্বল ও হীনসাধন হইয়া বলবান শত্রুকর্ত্তৃক আক্রান্ত অথবা যাহার সর্ব্বস্ব অপহৃত হইয়াছে, ইহাদিগেরই নিদ্রাচ্ছেদ হইয়া থাকে। আপনি ত’ এরূপ কোন মহাদোষে আক্রান্ত হয়েন নাই অথবা পরধনে লোভ করিয়া ত’ পরিতৃপ্ত হইতেছেন না?” ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে বিদুর! আমি তোমার নিকট যুক্তিপ্রদান ধর্ম্মানুগত কথা শ্রবণ করিতে বাসনা করিতেছি, তুমি উহা কীর্ত্তন কর। হে বিদ্বন! এই রাজর্ষিবংশমধ্যে তুমিই একজন প্রাজ্ঞজনসম্মত মনুষ্য আছ।”

বিদুরকর্ত্তৃক পণ্ডিতমুর্থ-লক্ষণ বর্ণন

বিদুর কহিলেন, “মহারাজ! সর্ব্বসুলক্ষণসম্পন্ন রাজা যুধিষ্ঠির ত্ৰৈলোক্যের অধিপতি হইতে পারেন। আপনি সকলের প্রার্থনীয় সেই পুরুষকে বনে প্রবাসিত করিয়াছেন; কিন্তু আপনি ধৰ্মজ্ঞ হইয়াও নয়নহীনতাপ্রযুক্ত রাজলক্ষণবিহীন হইয়াছেন, সুতরাং রাজ্য প্রাপ্ত হইতে পারেন না। ধর্ম্মাত্মা যুধিষ্ঠির অনুশংস, দয়ালু, সত্যপরায়ণ ও পরাক্রমশালী; তিন্নিমিত্তই আপনাকে গুরু বলিয়া জ্ঞান করিয়া অশেষবিধ ক্লেশ সহ্য করিতেছেন। যাহা হউক, আপনি দুৰ্য্যোধন, শকুনি, কর্ণ ও দুঃশাসনের উপর ঐশ্বৰ্য্যের ভার সমৰ্পণ করিয়া কিরূপে শ্রেয়োলাভের বাসনা করিতেছেন? হে মহারাজ! আত্মজ্ঞান, কর্ম্ম, তিতিক্ষা [ভ্যাগে ইচ্ছা] ও ধর্ম্মনিত্যতা [স্বধর্ম্মনিষ্ঠভা] যে ব্যক্তিকে অর্থ হইতে বিচলিত করিতে না পারে, তিনিই পণ্ডিত যিনি অনাস্তিক ও শ্রদ্ধাবান হইয়া প্রশান্ত কাৰ্য্যানুষ্ঠান ও নিন্দিত কর্ম্ম পরিত্যাগ করেন, তিনিই পণ্ডিত। যিনি ক্ৰোধ, হৰ্ষ, দৰ্প, লজ্জা, অনম্রতা ও আত্মাভিমানপরতন্ত্র হইয়া অর্থ হইতে ভ্ৰষ্ট না হয়েন, তিনিই পণ্ডিত। যাহার কাৰ্য্য ও মন্ত্রণার ফল সমুদিত না হইলে শত্ৰুগণ উহা জানিতে পারে না, তিনিই পণ্ডিত। শীত, গ্ৰীষ্ম, ভয়, অনুরাগ, সমৃদ্ধি বা অসমৃদ্ধিতে যাঁহার কাৰ্য্যের বিঘ্ন উৎপাদন হয় – না, তিনিই পণ্ডিত। যাহার স্বাভাবিকী বুদ্ধি ধর্ম্মার্থের অনুগামিনী এবং যিনি উভয়লোকসুখাবহ অর্থের কামনা করেন, তিনিই পণ্ডিত। যিনি স্বীয় শক্তি অনুসারে কাৰ্য্যসাধনের ইচ্ছা বা কাৰ্য্য সম্পাদন করিয়া থাকেন, এবং কোন বিষয়ে অবজ্ঞা প্ৰদৰ্শন করেন না, তিনিই পণ্ডিত। যিনি শীঘ্ৰ বুঝিতে পারেন, অধিকক্ষণ শ্রবণ করেন, উত্তমরূপ বিবেচনা না করিয়া কেবল কামবশতঃ অর্থসাধনে প্রবৃত্ত হয়েন না এবং যথাবৎ জিজ্ঞাসিত না হইয়া পরার্থে বাক্যব্যয় করেন না, তিনিই পণ্ডিত। যিনি অপ্ৰাপ্যবিষয়লাভে অভিলাষী হয়েন না, বিনষ্ট বস্তুর নিমিত্ত শোকসন্তাপ করেন না, এবং আপৎকালেও কদাচ বিমুগ্ধ হয়েন না, তিনিই পণ্ডিত। যিনি অগ্ৰে কাৰ্য্যনিশ্চয় করিয়া পশ্চাৎ তদনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হবেন সম্পূর্ণরূপে কাৰ্য্য শেষ না করিয়া ক্ষান্ত হয়েন না এবং একমুহূর্ত্তও বৃথা অতিবাহিত করেন না, তিনিই পণ্ডিত। যিনি সজ্জনোচিত কাৰ্য্যে সতত অনুরক্ত থাকেন, ঐশ্বৰ্য্যপ্রদ কর্মের অনুষ্ঠান করেন ও হিতকর কাৰ্য্যে কদাচ অসূয়া প্রদর্শন করেন না, তিনিই পণ্ডিত। যিনি আপনার সম্মানে হৃষ্ট ও অপমানে পরিতৃপ্ত হয়েন না এবং হ্রদের ন্যায় সতত অবিচলিত ও অক্ষুব্ধ থাকেন, তিনিই পণ্ডিত। যিনি সর্ব্বভূতের তত্ত্বজ্ঞ, সর্ব্বকর্মের যোগজ্ঞ ও সকল মনুষ্যের উপায়জ্ঞ, তিনিই পণ্ডিত। যিনি অকুষ্ঠিতচিত্তে বাক্যপ্রয়োগ করেন, লোকবার্ত্তা পরিজ্ঞাত থাকেন, তর্কে বিশেষ প্রতিভা লাভ করেন ও আশু গ্রন্থের অর্থ ব্যাখ্যা করিতে পারেন, তিনিই পণ্ডিত। যাঁহার অধ্যয়ন প্রজ্ঞানুযায়ী ও প্রজ্ঞা শাস্ত্রানুসারিণী, যিনি কদাচ আৰ্য্যব্যক্তির মর্যাদা ভঙ্গ করেন না এবং বিপুল অর্থ, বিদ্যা ও ঐশ্বৰ্য্য লাভ করিয়াও অনুদ্ধতচিত্তে কালব্যাপন করেন, তিনিই পণ্ডিত।

“যে ব্যক্তি অধ্যয়ন না করিয়াও পাণ্ডিত্যাভিমান প্রকাশ, দরিদ্র হইয়াও ধনগৰ্ব ও কুকাৰ্য্যদ্বারা ধনোপার্জ্জনের চেষ্টা করে, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি স্বাৰ্থ পরিত্যাগপূর্ব্বক পরার্থসাধন করিতে যত্নবান হয় ও মিত্রের কাৰ্য্যসাধনের নিমিত্ত মিথ্যাচরণ করে, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি ভক্তিহীন মানবকে অভিলাষ ও ভক্তব্যক্তিকে পরিত্যাগ এবং বলবানের প্রতি বিদ্বেষ করে, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি শক্ৰকে মিত্ৰ জ্ঞান করে, মিত্রের দ্বেষ ও হিংসা করে এবং অসৎকর্মে ব্যাপৃত হয়, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি সাংসারিক কাৰ্য্যে সতত সন্দিহান হয় ও আশুকর্ত্তব্য কর্মে বিলম্ব করে, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি পিতৃশ্ৰাদ্ধ ও দেবার্চনে বিরত হয় এবং মিত্রের প্রতি অনুরক্ত হয় না, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি আহূত না হইয়া গমন, জিজ্ঞাসিত না হইয়া বহু বাক্যব্যয় ও অবিশ্বস্ত ব্যক্তির উপর বিশ্বাস করে, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি স্বয়ং দোষী হইয়াও পরের প্রতি দোষারোপ করে এবং অণুমাত্র ক্ষমতাপন্ন না হইয়াও সতত ক্রুদ্ধ হয়, সেই মূঢ়। যে ব্যক্তি আত্মবল অবগত না হইয়া ধর্ম্মাৰ্থপরিবর্জিত অলভ্য বস্তুর লাভে বাসনা করে, সেই মূঢ়। যে অদণ্ড ব্যক্তিকে দণ্ড করে ও অজ্ঞাতসারে ভূপালের উপাসনা করে এবং যে ব্যক্তি অদাতার প্রসাদনে [প্রসন্ন করিতে] প্রবৃত্ত হয়, পণ্ডিতগণ তাহাকেও মূঢ় বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া থাকেন।

ধৃতরাষ্ট্রের কর্ত্তব্যনির্দ্দেশ

“হে মহারাজ! যে ব্যক্তি স্বীয় ভৃত্যগণকে যথোচিত ভাগ প্রদান না করিয়া একাকী সম্পত্তি সম্ভোগ ও সুন্দর বসন পরিধান করে, তাহা অপেক্ষা নৃশংস আর কে আছে? দেখুন, একজন পাপ করিলে অন্য ব্যক্তিকেও ভোগ করিতে হয়, কিন্তু ফলভোক্তা সেই পাপ হইতে বিমুক্ত হইতে পারে, পাপকর্ত্তা বিমুক্ত হইতে পারে না। ধনুৰ্দ্ধরবিনির্মুক্ত সায়কদ্বারা একবারে এক ব্যক্তির প্ৰাণনাশ হওয়াও সন্দেহ, কিন্তু বুদ্ধিমানের বুদ্ধিপ্রভাবে রাজা ও তাঁহার সমুদয় রাজ্য এককালে নষ্ট হইতে পারে। হে মহারাজ! এক্ষণে আপনি বুদ্ধিপূর্ব্বক কাৰ্য্যাকাৰ্য্যনিৰ্দ্ধারণপূর্ব্বক সামাদি উপায় চতুষ্টয়ের দ্বারা মিত্র, উদাসীন ও শত্ৰুগণকে বশীভূত, ইন্দ্ৰিয় পরাজয় সন্ধিবিগ্ৰহাদিতে বিশেষ জ্ঞানলাভ এবং স্ত্রী, অক্ষ [দ্যুতক্রীড়া], মৃগয়া, পান [মদ্যপান], বাকপারুষ্য [কৰ্কশভাষণ], দণ্ডপারুষ্য [অল্প অপরাধে কঠিন দণ্ডদান] ও অর্থপরুষ্য [নিৰ্য্যাতনপূর্ব্বক অর্থগ্রহণ] পরিত্যাগ করিয়া সুখস্বচ্ছন্দে কালব্যাপন করুন। দেখুন, বিষরস একজনকেই বিনাশ করিতে পারে ও শস্ত্রদ্বারাও একজন বিনষ্ট হয়, কিন্তু মন্ত্রবিপ্লব হইলে ভূপতি সমুদয় প্রজা ও রাজ্যসমভিব্যাহারে একবারে উৎসন্ন হয়েন। হে মহারাজ! একাকী মিষ্টদ্রব্যাভক্ষণ, অর্থচিন্তা, পথপর্য্যটন ও প্রসুপ্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে জাগরণ করা বিধেয় নহে। হে রাজন! যাহা স্বর্গের সোপান এবং সংসারসাগরের তরী, আপনি সেই একমাত্র অদ্বিতীয় বস্তু সত্য [ব্ৰহ্মপক্ষে সত্য শব্দের অর্থ পরমপুরুষ; কিন্তু তাহা প্রকরণের প্রসঙ্গ নহে; কারণ, ধৃতরাষ্ট্র এ প্রকরণে মোক্ষকামী নহেন] কে অবগত হইতে পারেন নাই। হে কুরুবংশাবতংস! ব্যক্তির [ক্ষমাবান ব্যক্তির] একমাত্র দোষ এই যে, তিনি সকলের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন বলিয়া লোকে তাঁহাকে অসমর্থ জ্ঞান করে। কিন্তু তাঁহার ঐ দোষ গণনীয় নহে, কারণ, ক্ষমা মানুষ্যের পরমধর্ম্ম; ক্ষমা অসমর্থ ব্যক্তির গুণ ও সমর্থ ব্যক্তির ভূষণ। এই জগতীতলে ক্ষমা অদ্বিতীয় বশীকরণ, ক্ষমাদ্বারা সমুদয় কাৰ্য্য সম্পন্ন হইতে পারে। যে ব্যক্তি ক্ষমারূপ খড়গ ধারণ করিয়া থাকে, দুর্জ্জনগণ তাঁহার কি করিতে পারে? বহ্নি তৃণশূন্য স্থানে নিপতিত হইলে স্বয়ং প্রশমিত হইয়া থাকে; কিন্তু ক্ষমাহীন ব্যক্তি আপনিই সমুদয় দোষের ভাজন হইয়া উঠে। ধৰ্মই একমাত্র শ্ৰেয়ঃ, ক্ষমাই একমাত্ৰ শান্তি, বিদ্যাই একমাত্র তৃপ্তি ও অহিংসাই একমাত্ৰ সুখনিদান।

“সৰ্প যেমন গর্ত্তস্থ জন্তুগণকে ভক্ষণ করে, পৃথিবী তদ্রূপ যুদ্ধচেষ্টাপরাঙ্মুখ ভূপতি ও অপ্রবাসী ব্ৰাহ্মণ-এই দ্বিবিধ লোককে উৎসাদিত করিয়া থাকে। মনুষ্য ইহলোকে পরুষবাক্য প্রয়োগ ও অসতের পূজা-এই দুই কর্ম্ম পরিত্যাগ করিলে যশস্বী হয়। যে স্ত্রী কান্তকেই কামনা করে ও যে পুরুষ পূজিত ব্যক্তিকেই পূজা করে-এই দুইজন লোকের বিশ্বাসভাজন হয়। নিৰ্দ্ধনের অভিলাষ ও অনীশ্বরের ক্ৰোধ সুতীক্ষ্নকণ্টকস্বরূপ হইয়া তাহাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে। নিশ্চেষ্ট গৃহস্থ ও ধর্ম্মতৎপর ভিক্ষুক-এই উভয়বিধ লোকই জনসমাজে শোভিত হয় না। ক্ষমাবান প্ৰভু ও বদান্য দরিদ্র-এই দুই প্রকার ব্যক্তিই স্বর্গে বাস করে, অপাত্রে গৌরব ও পাত্রে আগৌরব প্ৰদৰ্শন-এই উভয়বিধ কাৰ্য্য করিলে ন্যায়ানুগত কর্মের বিপরীতানুষ্ঠান হয়। যে ব্যক্তি অপরিমিতধনসম্পন্ন হইয়াও আদাতা হয় এবং যে ব্যক্তি দরিদ্র হইয়াও তপঃপরায়ণ না হয়-এই উভয়বিধ লোককেই গলদেশে শিলাবন্ধনপূর্ব্বক জলে নিক্ষেপ করা কর্ত্তব্য। যে পরিব্রাজক যোগশীল এবং যে বীর সংগ্রামে অগ্রসর হইয়া নিহত হয়-এই দুইপ্ৰকার লোকই সূৰ্য্যমণ্ডল ভেদ করিতে পারে।

“হে ভারতবংশাবতংস। বেদজ্ঞ ব্যক্তির নিকট শ্রবণ করা যায় যে, মনুষ্যগণের উপায় তিন প্রকার;—শ্রেষ্ঠ, মধ্যম ও কানীয়ান। এই ভূমণ্ডলে উত্তম, মধ্যম ও অধম এই ত্ৰিবিধ লোক আছে, উহাদিগকে যথাক্রমে উত্তম, মধ্যম ও অধম এই তিন প্রকার কর্মে নিয়োগ করা কর্ত্তব্য। ভাৰ্য্যা, দাস ও পুত্র-এই তিনজনই অধম। ইহারা যাহা কিছু উপার্জ্জন করে, তৎসমুদয়ই উহাদের ঈশ্বরের অধীন। পরদ্রব্যাপহরণ, পরদারাভিমর্ষণ এবং সুহৃৎপরিত্যাগ-এই ত্ৰিবিধ দোষই অতি ভয়ানক। কাম, ক্রোধ ও লোভ- এই তিন রিপু, নরকের ত্ৰিবিধ দ্বারস্বরূপ ও আত্মবিনাশের হেতু; এই নিমিত্ত এই রিপুত্রয়কে পরিত্যাগ করিবে। যে ব্যক্তি ভক্ত, যে ব্যক্তি উপাসক এবং যে ব্যক্তি ‘আমি তোমার’ বলিয়া আশ্রয় গ্ৰহণ করে-এই তিনপ্রকার শরণাপন্ন লোককে বিষম সঙ্কটেও পরিত্যাগ করিবে না। শক্রকে কৃচ্ছ্র হইতে বিমুক্ত করা, বরপ্রদান, রাজ্যলাভ ও পুত্রের জন্ম—এই তিন কর্মের সদৃশ।

“হে মহারাজ! ভূপতিগণ অল্পবুদ্ধি, দীর্ঘসূত্রী, অলস ও স্তাবক-এই চতুর্ব্বিধ ব্যক্তির সহিত মন্ত্রণা করিবেন না। আপনার অশেষ সম্পত্তিশালী গাৰ্হস্থ্যধর্ম্মযুক্ত ভবনে বৃদ্ধ জ্ঞাতি, অবসন্ন কুলীন, দরিদ্র সখা ও অপত্যহীন ভগিনী-এই চারিপ্রকার লোক বাস করুক। সুরগুরু বৃহস্পতি ইন্দ্ৰকর্ত্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া কহিয়াছিলেন যে, দেবগণের সঙ্কল্প, ধীমানদিগের অনুভাব, কৃতবিদ্যগণের বিনয় ও পাপকর্মের বিনাশ—এই চারিটি বিষয়ই সদ্য ফল প্ৰদান করে। মানাগ্নিহোত্ৰ [হোম], মানমৌন [মৌন], মানাধীত [বেদধ্যয়ন] ও মানযজ্ঞ [যজ্ঞানুষ্ঠান]-এই চতুর্ব্বিধ কাৰ্য্য স্বভাবতঃ ভয়াবহ নহে, কিন্তু অযথাভূত অনুষ্ঠিত হইলে সাতিশয় ভয়ঙ্কর হইয়া উঠে। ]

“হে ভরতকুলপ্ৰদীপ! লোকে সাতিশয় যত্নসহকারে পিতা, মাতা, হুতাশন, আত্মা ও গুরু–এই পঞ্চপ্রকার অগ্নির পরিচর্য্যা করিবে। এই ভূমণ্ডলমধ্যে দেব, মনুষ্য, ভিক্ষুক, অতিথি ও পিতৃলোক-এই পাঁচের পূজা করিলে যশোলাভ হয়। আপনি যে যে স্থানে গমন করিবেন, মিত্র, অমিত্র, মধ্যস্থ, উপজীব্য ও উপজীবী-এই পঞ্চবিধ লোকও সেই সেই স্থানে যাইবে। যেমন জলপূৰ্ণ চৰ্মময় পাত্রের কোন স্থানে ছিদ্র থাকিলে তদ্বারা ক্ৰমে ক্রমে সমুদয় জল নিষ্কাশিত হয়, তদ্রূপ মনুষ্যের পঞ্চ ইন্দ্ৰিয়ের মধ্যে কোন ইন্দ্ৰিয় স্থলিত হইলে তন্নিবন্ধন সমুদয় প্রজ্ঞা বিনষ্ট হইয়া যায়।

“হে মহারাজ! ঐশ্বৰ্য্যাভিলাষী ব্যক্তির নিদ্রা, তন্দ্ৰা, ভয়, ক্ৰোধ, আলস্য, দীৰ্ঘসূত্রতা-এই ছয় দোষ পরিত্যাগ করা অবশ্য কর্ত্তব্য। জ্ঞানবান ব্যক্তি অপ্রবক্তা আচাৰ্য্য, অধ্যয়নশূন্য ঋত্বিক, অরক্ষক ভূপতি, অপ্রিয়বাদিনী ভার্য্যা, গ্রামনিবাসাভিলাষী গোপাল [আলস্যবশতঃ মাঠে গিয়া গোচারণে উদাসী-গৃহবাসে অনুরক্ত] ও বনবাসাভিলাষী [ক্ষৌরকার্য্যের শ্রমভয়ে গ্রামের বাহিরে বাসকারী] নাপিত—এই ছয়জনকে পরিত্যাগ করেন। সত্য, দান, অনালস্য, অনসূয়া [পরগুণে দোষারোপন], ক্ষমা ও ধৈৰ্য্য-এই ছয় গুণ পরিত্যাগ করা কদাপি পুরুষের বিধেয় নহে। গো, কৃষি, ভাৰ্য্যা, সেবা, বিদ্যা ও শূদ্রসঙ্গতি—এই ছয় বিষয় রক্ষণাবেক্ষণ না করিলে তৎক্ষণাৎ বিনষ্ট হইয়া যায়। এই ছয় ব্যক্তি পূর্বোপকারীদিগকে অবজ্ঞা করে; শিক্ষিত ছাত্ৰগণ আচাৰ্য্যের প্রতি, বিবাহিত ব্যক্তিগণ মাতার প্রতি, বিগতকাম পুরুষগণ নারীর প্রতি, কৃতকাৰ্য্য ব্যক্তিগণ প্রয়োজনের প্রতি, পারপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ নৌকার প্রতি ও আরোগ্যপ্ৰাপ্ত ব্যক্তিগণ চিকিৎসকের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করিয়া থাকে। এই জীবলোকে আরোগ্য, আনৃণ্য, অপ্রবাস, সৎসংসৰ্গ, অনুকূল জীবিকা ও নিৰ্ভয়ে বাস—এই ছয়টি জীবলোকের সুখ। ঈর্ষী [ঈৰ্ষাপরায়ণ], ঘৃণী [নিন্দুক], অসন্তুষ্ট, ক্ৰোধপরায়ণ, নিত্যশঙ্কিত ও পরিভাগ্যোপজীবী—এই ষড়বিধ ব্যক্তি নিত্য দুঃখিত বলিয়া পরিগণিত। নিত্য অর্থের আগম, আরোগিতা, প্রিয়তমা ভাৰ্য্যা, বশ্য পুত্র, অর্থকরী বিদ্যা ও প্রিয়বাদিনী বনিতা এই ছয়টি জীবলোকের সুখ। কাম, ক্ৰোধ, শোক, মোহ, মদ ও মান-এই ছয়টি মনুষ্যের চিত্তে সতত অবস্থান করিতেছে, কিন্তু যে ব্যক্তি এই সমুদয় পরাজয় করিতে পারেন, তিনি কদাচ পাপ বা অনার্থের ভাজন হয়েন না। চৌর, চিকিৎসক, প্রমদা, যাজক, রাজা ও পণ্ডিত এই ছয়প্রকার লোক প্ৰমত্ত, ব্যাধিত, কামুক, যজমান, বিবাদী ও মূর্খ-এই ছয় প্রকার লোকের নিকট হইতে জীবিকানির্ব্বাহ করেন।

“হে রাজন! স্ত্রী, অক্ষ, মৃগয়া, পান, বাকপারুষ্য, দণ্ডপারুষ্য ও অর্থদৃষণ-এই সপ্ত দোষ পরিত্যাগ করা রাজাদিগের অবশ্য কর্ত্তব্য; কারণ, ঐ সমুদয় দোষে দূষিত হইলে বদ্ধমূল ভূপতিগণও উৎসন্ন হয়েন।

“হে ভারতবংশাবতংস! ব্ৰহ্মস্ব-হরণ, ব্ৰহ্মহত্যা, ব্রাহ্মণগণের প্রতি দ্বেষ, তাঁহাদিগের সহিত বিরোধ, তাঁহাদিগের নিন্দায় আনন্দ ও প্রশংসায় ঈর্ষা-প্রকাশ, কাৰ্য্যকালে তাঁহাদিগকে আহ্বান না করা এবং তাঁহারা যাচ্ঞা করিলে তাঁহাদের প্রতি অসূয়াপ্রদর্শন—এই আটটি মনুষ্যের বিনাশের পূর্ব্বনিমিত্ত; প্রাজ্ঞ ব্যক্তি এই সমুদয় দোষ পর্য্যবেক্ষণ করিয়া উহা পরিত্যাগ করিবেন। বন্ধুবর্গের সহিত সমাগম, বিপুল অর্থগম, পুত্রকে আলিঙ্গন, স্ত্রীসংসর্গ উপযুক্ত সময়ে প্রিয়ালাপ, স্বপক্ষের সমুন্নতি, অভিলষিত বস্তুলাভ ও জনসমাজে পূজা-প্রাপ্তি, এই আটটি বর্ত্তমানে সাতিশয় সুখপ্রদ। প্রজ্ঞা, কুলীনত্ব, দম, শ্রুত, পরাক্রম, অবহুভাষিতা, সাধ্যানুসারে দান ও কৃতজ্ঞতা এই আটটি গুণ মনুষ্যকে প্রফুল্ল করে।

“হে মহারাজ! এই দেহরূপ গেহে। নব দ্বার [মুখ, কর্ণদ্বয়, নাসিকাদ্বয়, চক্ষুদ্বয়, গুহ্য ও লিঙ্গ], তিন স্তম্ভ [কাম, কর্ম্ম, অবিদ্যা], ও পঞ্চ সাক্ষী [রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ] বর্ত্তমান আছে এবং চিদাত্মা উহাতে অধিষ্ঠান করিতেছেন; যে ব্যক্তি ইহা জানিতে পারেন, তিনিই যথার্থ পণ্ডিত ।

“হে কুরুনন্দন! মত্ত, প্ৰমত্ত, উন্মত্ত, শান্ত, ক্রুদ্ধ, বুভুক্ষিত, ত্বরান্বিত, লুব্ধ, ভীত ও কামী, এই দশবিধ ব্যক্তি ধর্ম্ম অবগত হইতে পারে না, এই নিমিত্ত ইহাদের সহিত সংসৰ্গ করা পণ্ডিতের কর্ত্তব্য নহে।

“পুত্রার্থী অসুরেন্দ্ৰ সুধন্বা এই বিষয়ে যাহা কহিয়াছেন, তাহা কীর্ত্তন করিতেছি শ্রবণ করুন। যে রাজা কাম-ক্ৰোধ-পরিত্যাগ ও সৎপাত্ৰে ধন প্ৰদান করেন এবং সবিশেষ শ্রুতশালী [বেদজ্ঞানসম্পন্ন] ও ক্ষিপ্রকারী হয়েন, সমুদয় লোক তাঁহারই মতানুসারে কর্ম্ম করিয়া থাকে। যিনি মনুষ্যের বিশ্বাস উৎপাদন করিতে পারেন, দোষী ব্যক্তিদিগের সমুচিত দণ্ডবিধান করিয়া থাকেন, দোষের তারতম্য বিবেচনা করিতে সমর্থ হয়েন এবং ব্যক্তিবিশেষে ক্ষমা প্ৰদৰ্শন করেন, তিনিই সমগ্ৰ শ্ৰীর আধার হয়েন। যিনি অতিশয় দুর্ব্বল ব্যক্তিরও অবমাননা করেন না, শত্রুর ছিদ্রান্বেষণে অবহিত হইয়া বুদ্ধিপূর্ব্বক তাহার শুশ্ৰষা করেন, বলবানের সহিত যুদ্ধ করিতে বাসনা করেন না এবং উপযুক্ত সময়ে বিক্রম প্রকাশ করেন, তিনিই যথার্থ পণ্ডিত। যে মহাত্মা আপৎকালে ব্যথিত হয়েন না, অপ্ৰমত্ত হইয়া উদ্যোগ করেন এবং উপযুক্ত সময়ে দুঃখভার সহ্য করিয়া থাকেন, তিনিই যথার্থ ধুরন্ধর [শ্রেষ্ঠ-রাজ্যভার-ধারণ-সমর্থ] ও সমুদয় শত্ৰুগণকে পরাজয় করিতে পারেন।

“যিনি অনর্থক প্রবাস, পাপাত্মাদিগের সহিত সন্ধি, পরদারাভিমর্ষণ [পরদারগমন], দম্ভ, চৌৰ্য্য, ক্রূরতা ও মদ্যপান পরিত্যাগ করেন, তিনিই সতত সুখভোগী। যিনি ক্ৰোধপরবশ হইয়া ত্ৰিবৰ্গসাধনে সমুদ্যত হয়েন না, যিনি জিজ্ঞাসিত হইলে যথার্থ উপদেশ প্রদান করেন, যিনি মিত্রের নিমিত্ত বিবাদ করেন না এবং পূজিত না হইলেও ক্রুদ্ধ হয়েন না, তিনিই জ্ঞানী। যিনি কাহারও অসূয়া করেন না; সতত দয়া প্রকাশ করেন, স্বয়ং দুর্ব্বল হইয়া কাহারও সহিত বিরোধ করেন না, অতিবাদে [অত্যন্ত বিপদ] প্রবৃত্ত হয়েন না এবং বিবাদ সহ্য করেন, তিনি সর্ব্বত্র প্রশংসা লাভ করিতে পারেন। যিনি কদাপি উদ্ধতবেশ ধারণ করেন না, স্বীয় পুরুষকার প্রকাশ্যপূর্ব্বক অন্যের নিন্দা করেন না এবং গর্ব্বিত হইয়া কাহারও প্রতি কটুবাক্য প্রয়োগ করেন না, সকলেই তাঁহার প্রিয়ানুষ্ঠান করিয়া থাকে। বৈর প্রশান্ত হইলে যিনি আর তাহা উদ্দীপিত করেন না, যিনি নিতান্ত দৃপ্ত বা নিতান্ত নিস্তেজের ন্যায় ব্যবহার এবং আপনার দুৰ্গতি বিবেচনা করিয়াও অকাৰ্য্যে প্রবৃত্ত হয়েন না, যিনি আপনার সুখে বা পরের দুঃখে প্ৰহৃষ্ট হয়েন না এবং যিনি দান করিয়া অনুতাপ করেন না, তিনিই যথার্থ সৎস্বভাবশালী। যিনি দেশাচার, ভাষাভেদ ও জাতিধর্মের আধিপত্য লাভ করিতে বাসনা করেন, তিনিই উত্তম ও অধম বিষয়ের মর্ম্মজ্ঞ এবং সকল স্থানেই সাধুগণের উপর আধিপত্য লাভ করিতে সমর্থ।

“যে মনস্বী দম্ভ, মোহ, মাৎসৰ্য্য, পাপকাৰ্য্য, রাজদ্বেষ, খলতা, বহু ব্যক্তির সহিত শক্রতা এবং মত্ত, উন্মত্ত ও দুর্জ্জনগণের সহিত তর্কবিতর্ক করেন না, তিনি প্রধান প্রজ্ঞাশালী। যিনি দম, শৌচ, দেবার্চন, বিবিধ মঙ্গলকাৰ্য্য ও প্রায়শ্চিত্ত প্রভৃতি নিত্য কর্মের অনুষ্ঠান করেন, দেবগণ সতত তাহার অভ্যুদয়ে প্রবৃত্ত থাকেন। যিনি সমব্যক্তির সহিত বৈবাহিক সম্বন্ধ, সখ্যসংস্থাপন, আলাপ ও ব্যবহার করিয়া থাকেন এবং পণ্ডিতদিগের অনুবর্ত্তী হয়েন, তিনিই যথার্থনীতিজ্ঞ। যিনি আশ্রিত ব্যক্তিগণকে যথাযোগ্য ভাগ প্রদানপূর্ব্বক স্বয়ং পরিমিত ভোজন করেন, অপরিমিত কর্ম্ম করিয়া পরিমিতরূপে নিদ্রা যান এবং যাচ্ঞা করিলে শক্রকেও ধনদান করেন, সেই মহাত্মা কদাচ অনর্থের ভাজন হয়েন না। যাহার ইচ্ছা, অপকার ও কর্ম্ম অন্যে জানিতে পারে না এবং যিনি গোপনে মন্ত্রণা করিয়া কাৰ্য্যানুষ্ঠান করেন, তাঁহার অণুমাত্র অর্থও বিনষ্ট হয় না। যিনি সর্ব্বভূতের শান্তিতে রত, সত্যবাদী, মৃদু, মানকারী ও সদাশয়, তিনি উত্তম আকরসম্ভূত মণির ন্যায় জ্ঞাতিমধ্যে শোভমান হইয়া থাকেন। যিনি আপনার দোষ আপনিই জানিতে পারিয়া লজ্জিত হয়েন, তিনি সর্ব্বলোকের গুরু ও সেই মহাত্মা সূৰ্য্যের ন্যায় তেজস্বী হইয়া দীপ্ত হয়েন।

“হে মহারাজ! শাপগ্ৰস্ত মহারাজ পাণ্ডুর পঞ্চপুত্র বনে জন্মগ্রহণ করে; উহারা মহাশয়ের অনুগ্রহে বৰ্দ্ধিত ও শিক্ষিত হইয়া আপনারই আজ্ঞা প্রতিপালন করিতেছে; অতএব আপনি উহাদিগকে সমুচিত রাজ্যভাগ প্রদান করিয়া পুত্ৰগণের সহিত সুখে কালযাপন করুন, তাহা হইলে কি দেব, কি মনুষ্য কাহারও নিকট আপনার শঙ্কা থাকিবে না।”