০১৯. সঞ্জয়যানপর্ব্বাধ্যায়

১৯তম অধ্যায়

সঞ্জয়যানপর্ব্বাধ্যায়

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! এ দিকে পাঞ্চালরাজের পুরোহিত কৌরবগণের সমীপে সমুপস্থিত হইলে ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম ও বিদুর তাঁহার যথেষ্ট সমাদর করিলেন।

দ্রুপদপুরোহিতের সন্ধিপ্রস্তাব

অনন্তর তিনি কুশলসংবাদপ্রদান ও অনাময় [মঙ্গল সংবাদ] জিজ্ঞাসা করিয়া সেনানীগণের সমক্ষে কহিলেন, “হে সভাসদগণ! আপনারা সকলেই সনাতন রাজধর্ম্ম অবগত আছেন, সন্দেহ নাই; কিন্তু বক্ষ্যমাণ প্রস্তাবে তাহার সবিশেষ উপযোগিতা আছে, এই নিমিত্ত পুনরায় কহিতেছি, হে কৌরবগণ! ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু উভয়েই

একজনের সন্তান, পৈতৃক ধনে ইঁহাদিগের উভয়েরই সমান অধিকার; কিন্তু ধৃতরাষ্ট্ৰপুত্ৰগণ সেই পৈতৃক পদে আরোহণ করিলেন আর পাণ্ডুনন্দনগণ তাহাতে বঞ্চিত হইলেন, ইহার কারণ কি?

“আপনারা বিলক্ষণ অবগত আছেন যে, পূর্ব্বে রাজা ধৃতরাষ্ট্র তাঁহাদিগের পৈতৃক দ্রব্য গোপন করিয়া তাঁহাদিগকে বঞ্চিত করিয়াছিলেন, তাঁহার পুত্রেরা প্ৰাণপণে তাঁহাদিগকে সংহার করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিল, কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই, ধার্ত্তরাষ্ট্রগণ পিতার অনুমতি অনুসারে শকুনির সাহায্যে ছলদ্বারা তাঁহাদিগের বলবৰ্দ্ধিত রাজ্য অপহরণ করিয়াছেন; সভামধ্যে তাঁহাদিগকে ও তাঁহাদিগের সহধর্মিণী দ্রুপদনন্দিনীকে নিগৃহীত ও ত্ৰয়োদশবর্ষ মহারণ্যে নির্ব্বাসিত করিয়াছেন এবং তাঁহারা বনবাসসময়ে যেসমস্ত ক্লেশ ও বিরাটনগরে গর্ভস্থত জীবের ন্যায় যেসকল যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছেন, তাহা আপনাদিগের অবিদিত নাই। তথাপি তাঁহারা ধার্ত্তরাষ্ট্রকৃত সমুদয় নিগ্ৰহ বিস্মৃত হইয়া সন্ধিস্থাপনে একান্ত অভিলাষী হইয়াছেন।

“এই সকল সুহৃদগণ উভয় পক্ষেরই ব্যবহার অবগত হইলেন, এক্ষণে দুৰ্য্যোধনকে সত্ত্বনা করুন। পাণ্ডবগণ সমধিক বলবান হইয়াও কৌরবগণের সহিত সংগ্রাম করিতে পরাঙ্মুখ হইয়াছেন, লোকহিংসা ব্যতিরেকে অংশলাভ করাই তাঁহাদিগের অভিপ্রেত; কিন্তু রাজা দুৰ্য্যোধন যে কি বিবেচনা করিয়া বিগ্রহ [যুদ্ধ] করিতে আগ্রহ প্রকাশ করিতেছেন, তাহা বুঝিতে পারি না। দেখুন, সপ্তঅক্ষৌহিণী সেনা ধর্ম্মরাজের সহিত মিলিত হইয়াছে এবং কুরুগণের সহিত সমরোঙ্মুখ হইয়া অনুক্ষণ তাঁহার অনুমতি প্রতীক্ষা করিতেছে। সত্যকি, ভীমসেন, নকুল ও সহদেব, ইহারা সহস্ৰ অক্ষৌহিণীর সমকক্ষ; মহাবাহু ধনঞ্জয়ও আপনাদিগের এই একাদশ অক্ষৌহিণী অপেক্ষা কোন অংশে ন্যূনবল নহেন। তিনি যেমন সমস্ত যোদ্ধার প্রধান, মহাদুৰ্গতি বাসুদেবও সেইরূপ। এই প্রকার সেনাসংখ্যার বহুলতা, কিরীটীর রণদক্ষতা ও বাসুদেবের বুদ্ধিমত্তা অবগত হইয়া কোন ব্যক্তি সংগ্রামে অগ্রসর হইতে পারে? অতএব আপনারা ধর্ম্ম ও নিয়মের অনুসারে দাতব্য [ন্যায়ধর্ম্মতঃ যাহা প্রদানের যোগ্য] বিষয় প্রদান করুন, অদ্যাপি ইহার কাল অতীত হয় নাই।”