০১৬. অগস্ত্যমুখে ইন্দ্রের নহুষপতনবার্ত্তা শ্রবণ

১৬তম অধ্যায়

অগস্ত্যমুখে ইন্দ্রের নহুষপতনবার্ত্তা শ্রবণ

“এইরূপে দেবরাজ ইন্দ্ৰ লোকপালগণের সহিত নহুষের বধোপায় চিন্তা করিতেছেন, ইত্যবসরে ভগবান অগস্ত্য তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি ইন্দ্রের সৎকার করিয়া কহিলেন, ‘হে পুরন্দর! ভাগ্যক্রমে বিশ্বরূপ ও বৃত্ৰাসুর নিহত এবং তোমার বিষম শত্রু নহুষও রাজ্যচ্যুত হইয়াছে; অতএব আজি সৌভাগ্যের আর পরিসীমা রহিল না।”

“ইন্দ্র স্বাগত প্রশ্নপূর্ব্বক কহিলেন, “হে তপোধন! আপনার সন্দর্শনে আমি পরম প্রীত হইলাম; এক্ষণে পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয় ও মধুপৰ্ক গ্ৰহণ করুন।” মুনিবার এইরূপে পূজিত হইয়া আসনে উপবেশন করিলে পর দেবরাজ প্ৰহৃষ্টমনে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে দ্বিজোত্তম! পাপাত্মা নহুষ কিরূপে স্বর্গভ্ৰষ্ট হইল, তাহা আনুপূর্ব্বিক বর্ণন করুন।”

“অগস্ত্য কহিলেন, “হে সুরিনাথ! একদা কতিপয় দেবর্ষি ও ব্রহ্মর্ষি বলদর্পিত দুরাচার নহুষকে স্কন্ধে বহন করিয়া নিতান্ত শ্রান্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে বাসব! শাস্ত্রে যেসকল গোপ্রোক্ষণের [জলাভিষেকে গাভীর শুদ্ধিসাধন] মন্ত্র ও ব্রাহ্মণের বিষয় কীর্ত্তিত হইয়াছে, আপনি কি তাহা বিশ্বাস করিয়া থাকেন?” মূঢ়চেতাঃ নহুষ তমোগুণপ্রভাবে ‘না’ বলিয়া প্ৰত্যুত্তর প্রদান করিল। ঋষিগণ নহুষের এইরূপ গর্ব্বিতবাক্যশ্রবণে সাতিশয় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, “ধর্মের প্রতি তোমার কিছুমাত্র অনুরাগ নাই; অধৰ্মে প্রবৃত্ত হইয়া তোমার বুদ্ধি একেবারে কলুষিত হইয়া গিয়াছে। মহর্ষিগণ পূর্ব্বে যেসকল কথা বলিয়াছেন, তাহাই আমরা প্রমাণ বলিয়া গণ্য ও মান্য করি।”

নহুষের প্রতি অগস্ত্যাশাপ

“ ‘পাপাত্মা নহুষ মুনিগণের সহিত এইরূপ বিবাদপূর্ব্বক অধৰ্মপ্রেরিত হইয়া আমার মস্তকে পদার্পণ করিবামাত্ৰ তেজোহীন, শ্ৰীভ্রষ্ট ও নিতান্ত ভয়াপীড়িত হইয়া চিন্তা করিতে লাগিল। তখন আমি কহিলাম, রে মূঢ়! যে হেতু তুমি পূর্ব্বতন ব্রহ্মর্ষিগণের বাক্যে অশ্রদ্ধা প্রকাশপূর্ব্বক তাঁহাদিগের অনুষ্ঠিত পবিত্র কার্য্যসকল দূষিত করিতেছ, তুমি অহঙ্কারে মত্ত হইয়া আমার মস্তকে পদাঘাত করিলে এবং ব্ৰহ্মকল্প দুরাসদ [দুর্বোধ্যচরিত-যাঁহাদের চরিত্র সাধারণে বুঝিতে পারে না] ঋষিগণকে বাহন করিয়া দিগদিগন্তে ভ্ৰমণ করিতেছ, এই নিমিত্ত তোমার সমুদয় পুণ্য ক্ষয় হইল এবং তুমি স্বর্গভ্ৰষ্ট হইলে; অদ্যাবধি আর তোমার তাদৃশ প্রভাব থাকিবে না; এক্ষণে তুমি ধরাতলে গমন করিয়া স্বকৃত দুষ্কর্মের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ মহাকায় সর্পরূপ ধারণপূর্ব্বক দশসহস্ৰ বৎসর বিচরণ কর; পরে শাপকাল সম্পূর্ণ হইলে পুনরায় স্বর্গ প্রাপ্ত হইবে। হে ত্রিদিবনাথ! এইরূপে সেই দুরাত্মার অধঃপতনে ত্ৰিভুবন নিষ্কণ্টক হইল। এক্ষণে আপনি দেবরাজ্য প্রাপ্ত হইয়া ত্ৰৈলোক্যের আধিপত্য করুন।”

“অনন্তর দেবতা, মহর্ষি, যক্ষ, রাক্ষস, গন্ধর্ব্ব, ভুজগ, দেবকন্যা, পিতৃগণ, অপ্সরা এবং সরিৎ, সাগর ও শৈলপ্রভৃতি ভূতসকল সাতিশয় হৃষ্ট হইয়া বাসবসকাশে গমনপূর্ব্বক কহিলেন, ‘হে সুরেশ্বর! ভাগ্যক্রমে পাপাত্মা নহুষ আজি অগস্ত্যশাপে স্বর্গভ্ৰষ্ট ও সপরিদপপ্ৰাপ্ত হইয়া মহীতলে নিপতিত হইয়াছে; অতএব আপনি এক্ষণে সুখস্বচ্ছন্দে নিষ্কণ্টকে সুররাজ্য প্ৰতিপালন করুন।” ”