০০৩. দ্রুপদের যুদ্ধসমর্থন—সৈন্যসংগ্রহপ্রস্তাব

৩য় অধ্যায়

দ্রুপদের যুদ্ধসমর্থন—সৈন্যসংগ্রহপ্রস্তাব

দ্রুপদ কহিলেন, “হে মহাবাহো! আপনি যেরূপ কহিলেন নিঃসন্দেহে তাঁহাই হইবে। দুৰ্য্যোধন স্বেচ্ছাক্রমে কদাচ রাজ্য প্রদান করিবে না, পুত্রবৎসল রাজা ধৃতরাষ্ট্র নিরন্তর তাহার বাক্যে অনুমোদন করিয়া থাকেন। ভীষ্ম ও দ্রোণ দীনতাবশতঃ এবং কর্ণ ও শকুনি মুর্খতাপ্রযুক্ত তাহার ছন্দানুবর্ত্তন করিতেছেন; অতএব আমার মতেও বলদেবের বাক্য নিতান্ত যুক্তিযুক্ত হইতেছে না। যে ব্যক্তির শ্রেয়োলাভের অভিলাষ আছে, অগ্ৰে এইরূপ অনুষ্ঠান করাই তাহার কর্ত্তব্য।

“দুরাত্মা দুৰ্য্যোধনকে সত্ত্ববাক্য প্রয়োগ করা একান্ত অবিধেয়, মৃদুতা অবলম্বন করিলে সেই পাপাত্মা কদাচ বশীভূত হইবে না। গর্দভের প্রতি মৃদুভাব ও গোসকলের প্রতি তীব্রভাব অবলম্বন করাই শ্ৰেয়ঃ। যে ব্যক্তি দুৰ্য্যোধনের সহিত সান্ত্ব ব্যবহার করে, সে তাহাকে মৃদু ও অসার বিবেচনা করিয়া থাকে। আমরা মৃদু হইলে সে নিয়তই এইরূপ অনুমান করিবে যে, আমি অনায়াসেই কাৰ্য্যসাধন করিতে সমর্থ হইব। অতএব আমাদিগের এইরূপ অনুষ্ঠান করাই শ্ৰেয়ঃকল্প। এক্ষণে তদ্বিষয়ে যত্নবিধান করুন। সৈন্যসংগ্রহ ও মিত্ৰগণের নিকট দূত প্রেরণ করুন। দ্রুতগামী দূতসকল শল্য, ধৃষ্টকেতু, জয়ৎসেন ও সমুদয় কেকয়দিগের নিকট অবিলম্বে গমন করুক; দুৰ্য্যোধনও সর্ব্বত্র দূত প্রেরণ করিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। সাধারণে এইরূপ একটি নিয়ম প্রচলিত আছে, যিনি অগ্ৰে দূত প্রেরণ করেন, সাধুলোকেরা তাঁহারই পক্ষ অবলম্বন করিয়া কাৰ্য্যে ব্ৰতী হইয়া থাকেন, অতএব আমরা অগ্ৰেই সর্ব্বত্ৰ দূত প্রেরণ করি। কারণ, এক্ষণে আমাদিগকে নিতান্ত দুর্ভর [দায়িত্বপূর্ণ] কাৰ্য্যভার বহন করিতে হইবে।

“মহারাজ শল্য ও তাঁহার অনুচর রাজগণের নিকট শীঘ্র চর প্রেরণ করুন; অনন্তর পূর্ব্বসাগরবাসী মহারাজ ভগদত্ত, হাদির্ক্য, আহুক, প্রজ্ঞাসম্পন্ন মহাবীর রোচমান, মহাবলপরাক্রান্ত বৃহন্ত, সেনাবিন্দ সেনজিৎ, প্রতিবিন্ধ্য, চিত্ৰবর্ম্মা, সুবাস্তুক, বাহ্লীক মুঞ্জকেশ, চেদিপতি, সুপার্শ্ব, সুবাহু, পৌরব, শকরাজ, পহ্লবরাজ, দরদরাজ, সুরারি, নন্দাজ, কর্ণবেষ্ট, নীল, বীরধর্ম্ম, দন্তবক্র, রুক্স, জনমেজয়, আষাঢ়, বায়ুবেগ, পূর্ব্বপালী, দেবক, সপুত্ৰ একলব্য, করুষদেশীয় ভূপালগণ, ক্ষেমধূর্ত্তি, সমস্ত কাম্বোজ, ঋষিকগণ, জয়ৎসেন, পাশ্চাত্য সকল, কাস্য, অনুপকগণ, সমস্ত পাঞ্চনদ ভূপাল, ক্ৰাথপুত্ৰ, পার্ব্বতীয় নৃপতিগণ, জানকি, সুশর্ম্মা, মণিমান, পোতিমৎস্যক, পাংশুরাষ্ট্ৰাধিপতি, ধৃষ্টকেতু, তুণ্ড, দণ্ডধার, বৃহৎসেন, অপরাজিত নিষাদ, শ্রোণিমান, বসুমান, বৃহদ্বল, মহাতেজাঃ বাহু, সপুত্র সমুদ্রসেন, উদ্ভব, সমর্থ, সুধীর, মার্জ্জর, কন্যক, মহাবীর সুচক্র, নিশ্চক্র, তুমুল ক্ৰথ, ক্ষেমক, বাটধান, শ্রুতায়ু, দৃঢ়ায়ু, শাল্বপুত্ৰ, কুমার ও কলিঙ্গেশ্বর—ইঁহাদিগের নিকট সত্বর দূত প্রেরণ করুন। হে রাজন! এই সুপণ্ডিত ব্ৰাহ্মণ আমার পুরোহিত, ইনি মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র, দুৰ্য্যোধন, ভীষ্ম ও দ্রোণাচাৰ্য্যের সন্নিধানে গমন করুন। তাঁহাদিগের নিকট যেসকল সংবাদ প্রদান করিতে হইবে, তাহা ইহাকে কহিয়া দিউন।”