১৮. কমলা বউদি একবারও প্রশ্ন করলেন না

কমলা বউদি একবারও প্রশ্ন করলেন না। ব্যাঙ্কের চেকবইটা বার করে সোমনাথের হাতে দিলেন। বললেন, “তুমি যখন ব্যবসায় ঢালছো, আমি ভেবে দেখবার কে?”

ব্যাঙ্ক থেকে তুলে টাকাটা হীরালালবাবুর হাতে দিয়েছে সোমনাথ। উনি সঙ্গে সঙ্গে রসিদ লিখে দিলেন। বললেন, “আমার মনে হয় অন্তত হাজার টাকা লাভ পেয়ে যাবেন। চার ছিনের জন্যে দু-হাজার টাকা লাগিয়ে হাজার টাকা পকেটে এলে মন্দ কী? কোনো বিজনেসে এমন প্রফিট পাবেন না।”

 

সোমনাথের মনে হচ্ছে এবার মেঘ কাটছে। নটবরবাবুর কথাগুলো থেকেও সে কিছু, শেখবার চেষ্টা করেছে। অসৎ পথে যাবে না সোমনাথ। কিনতু মানুষের বিশ্বাস উৎপাদনের চেষ্টা করতে হবে না হলে সত্যিই তাঁরা কেন অর্ডার দেবেন?

সোমনাথের সাহসও বেড়ে যাচ্ছে। ক’দিন আগেই এক কাপড়ের মিলে গিয়েছিল। ওখানকার মিস্টার সেনগত বললেন, “আপনার কোম্পানির দুটো স্যাম্পল টেস্টিং-এ পাঠিয়েছি—এখনও রিপোর্ট আসেনি। তবে মশাই-বড় বড় কোম্পানির একই জিনিস রয়েছে, মালও ভেসে যাচ্ছে। আবার আপনারা একই লাইনে কুকতে গেলেন কেন?”

অন্যসময় হলে সোমনাথ মাথা নিচু করে চলে আসতো। কিন্তু এখন বললো, বড়-বড়রা তো সব সময়েই থাকবেন, সার। বম্বেতে অত বিরাট মিরাট কাপড়ের কল থাকা সত্ত্বেও আপনারা তো একদিন সাহস করে এখানে কল বসিয়েছিলেন এবং এতো নাম করেছেন।”

“বাঃ বেশ ভালো বলেছেন! কথাটা আমার মাথাতেই আসেনি। সত্যি তো, কোথায় আর খোলা মাঠ পড়ে রয়েছে? রুই-কাতলা থাকা সত্ত্বেও চুনোপটিরা সাহস করে ঢুকে পড়ছে এবং যোগ্যতা দেখিয়ে আমাদের কোম্পানির মতো বড় হচ্ছে। মিস্টার সেনগুপ্ত বেশ খুশী হলেন।

সোমনাথকে তিনি বসতে দিলেন। তারপর বললেন, “আপনি ইয়ং বেঙ্গলী-আপনাকে সোজা বলছি-আমাকে ধরে কিছু হবে না। আমার ডিরেকটর মিস্টার গোয়েঙ্কার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবো।”

সোমনাথ বললো, “গোয়েঙ্কাজী মত লোক, উনি কি আমার মতো চুনোপটিকে পাত্তা দেবেন?”

সেনগুপ্ত বললেন, “উনি নিজে মস্ত লোক নন—ওঁর শ্বশুর মিস্টার কেজরিওয়াল মত্ত লোক। ওঁদেরই মিল—গোয়েঙ্কাজীকে বছর কয়েক হলো বড় পোস্টে বসিয়ে দিয়েছেন। আপনি চেষ্টা করুন—আপনার জিনিসটা আমাদের মিলে অনেক প্রয়োজন হয়। তাছাড়া কেজরিওয়ালদের আর একটা মিলের মালপত্র গোয়েঙ্কাজী কেনেন।”

গোয়েঙ্কা লোকটি সুদর্শন। এয়ারকুলার লাগানো ঘরে পাতলা আন্দির পাঞ্জাবি ও ধুতি পরে তিনি বসে আছেন। পাকা মতমান কলার মতো গায়ের রং, টিয়াপাখির মতো টিকলো নাক। ভদ্রলোকের দেহে বাড়তি মেদ নেই বরং একটু রোগার দিকেই। বয়স বছর চল্লিশ।

ওঁর সঙ্গে সোমনাথের দেখা হয়ে গেলো। ঘরের একদিকে একটা কালো রোগা অ্যাংলোইন্ডিয়ান মেয়ে-টাইপিস্ট নিজের কাজ করছে। সোমনাথ বললো, “আপনার অমূল্য সময় নষ্ট করবো না, স্যর। শুধু রেসপেক্ট জানাতে এসেছি।”

টেলিফোনে সেনগুপ্তের কাছে বিষয়টা শুনেছেন গোয়েঙ্কাজী! গালের পান সামলাতে সামলাতে বললেন, “মালের রিপোর্ট কী রকম হয় দেখা যাক।”

কেমিক্যালসের ধারেই গেলো না সোমনাথ। বললো, “ওসব আপনার হাতে রইলো, মিস্টার গোয়েঙ্কা। আপনার এতো নাম শুনেছি।”

“কোথায় আমার নাম শুনলেন?” বেশ খুশী হয়ে গোয়েঙ্কা প্রশ্ন করলেন। দামী ফরাসী সেন্টের গন্ধে ঘরটা ভুরভুর করছে।

সোমনাথ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তারপর কোনোরকমে বললো, “আপনার নাম কে না জানে? ভালো জিনিসের কদর দেন আপনি—অজানা কোম্পানির নতুন মাল বলে ছড়ে ফেলে দেন না। তাই তো কলকাতা থেকে ছুটে আসতে সাহস পেয়েছি।”

গোয়েঙ্কাজীর দিকে দামী সিগারেট এগিয়ে দিলো সোমনাথ। উনি একটা সিগারেট তুলে নিলেন। পানের ঢিবিটা বাঁদিক থেকে গালের ডানদিকে ট্রান্সফার করলেন। তারপর বললেন,

কলকাতা থেকে দূরত্বটাই আমাদের মুশকিল।

“এমন কি আর দর, মিস্টার গোয়েঙ্কা? ফরেনে চল্লিশ মাইল কিছু নয়!” স্রেনাথ এতোক্ষণে একটা আলোচনার বিষয় পেয়েছে।

“কিন্তু রাস্তার যা-অবস্থা। এইটুকু পথ যেতেই সমস্ত দিন নষ্ট হয়ে যাবে,” মিস্টার গোয়েঙ্কা বললেন।

“অথচ মিউনিসিপ্যালিটি এবং গভরমেন্ট রাস্তা মেরামতের জন্যে আপনাদের কাই থেকে মোটা টাকা আদায় করছে। সোমনাথ বললো।

“সে-সব টাকা যে কোথায় যায়। গোড্‌ এলোন নোজ।” সোমনাথের সহানুভূতিতে মিস্টার গোয়েঙ্কা যে সন্তুষ্ট হয়েছেন তা ওঁর কথার ভঙ্গীতেই বোঝা যাচ্ছে।

সুযোগ বুঝে সোমনাথ এবার কড়া ডোজে গোয়েঙ্কাজীর প্রশংসা করলো। বললো, “এরকম সাজানো-গোছানো অফিস কিন্তু কলকাতাতেও বেশি নেই। এই অফিসের সর্বত্র আপনার সুচির পরিচয় ছড়িয়ে রয়েছে।”

গোয়েঙ্কাজী প্রশংসায় নরম হয়েছেন মনে হলো। তবে প্রথম দর্শনেই সোমনাথকে তিনি যে পুরোপুরি বিশ্বাস করছেন না, তাও আন্দাজ করতে সোমনাথের কষ্ট হলো না। সোমনাথ আর এগুলো না। শুধু জিজ্ঞেস করলো, “একা-একা গাড়িতে কলকাতা ফিরছি—এখান থেকে কেউ যাবেন নাকি।”

গোয়েঙ্কাজী প্রথমে ইতস্তত করলেন। বাড়িতে গিন্নির সঙ্গে ফোনে কথা বললেন। তারপর নিবেদন করলেন, “আমার ওয়াইফের পিসীমার এক ঝি এখানে পড়ে রয়েছে। বেচারা একলা যেতে পারবে না। আমারও নিয়ে যাবার সময় হচ্ছে না। যদি একটু চিত্তরঞ্জন অ্যাভিন্যুতে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেন।”

খুব উৎসাহের সঙ্গে রাজী হয়ে গেলো সোমনাথ। সুপুষ্ট স্তনের অধিকারিণী অ্যাংলোইন্ডিয়ান যুবতীর আফিসিক ভদ্রতাবোধ একটু কম। চিঠি ছাপানো বন্ধ রেখে আলপিন দিয়ে নখের ময়লা পরিষ্কার করতে করতে মেয়েটি ওদের কথাবার্তা শুনছিল। সে এবার উৎসাহিত হয়ে উঠলো। তার কলকাতা যাবার প্রয়োজন। মৃদু হেসে মিস্টার গোয়েঙ্কা রাজী হয়ে গেলেন।

গাড়ি চালিয়ে ফিরতে ফিরতে সোমনাথের মনে হলো সে যেন থিয়েটারের রাজা সেজেছে। একটা সামান্য কেরানির চাকরি পেলে যে বর্তে যায়, পেটের দায়ে সে কেমন অন্যের গাড়ি নিয়ে থার্ড পার্টিকে লিফট দিচ্ছে। পিছনে গোয়েঙ্কাজীর শ্বশুরবাড়ির বুড়ি ঝি বসে আছেন। সোমনাথের পক্ষে তিনিই অসামান্যা—কারণ গোয়েঙ্কার সঙ্গে পরিচয়ের যোগসূত্র।

সোমনাথের পাশে বসেছে মিস জডিথ জেকব। মহিলার দেহ থেকে সস্তা দেশী সেন্টের উগ্র গন্ধ ভকভক করে ভেসে আসছে। মক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতগুলো বার করে মিস জেকব বললো, “তুমি তো খুব স্টেডি ড্রাইভ করো।” সোমনাথ রাস্তার দিকে মনোযোগ রেখে মিটমিট করে হাসলো। মিস জেকব বললো, “তোমার জন্যে আমার ফিঁয়াসের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।” হড়-হড় করে ব্যক্তিগত অনেক খবরাখবর দিয়ে যাচ্ছে মিস জেকব। ফিঁয়াসে কোন এক কোম্পানিতে উই মারার কাজ করে। তার ফ্ল্যাটের বাড়তি চাবি মিস জেকবের কাছে আছে। যখন খুশী সে ভাবী স্বামীর ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকতে পারে, কোনো অসুবিধে নেই। আরও কী সব বলতে যাচ্ছিলো মিস জেকব, কিন্তু সোমনাথের আগ্রহ নেই সেসব শোনবার।

গাড়ি চালাতে চালাতে সোমনাথ অন্য কথা ভাবছিল। নটবরবাবুর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নটবরবাবু মানষকে মোটেই বিশ্বাস করেন না।

নটবর বলেছিলেন, “সব মানুষের কোনো-না-কোনো দুর্বলতা আছে। টাকা এবং মদে নাইনটি নাইন পাসেন্ট বিজনেস ম্যানেজ হয়ে যায়। কিন্তু একবার মশাই ভীষণ বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম। ওই সুধাকর শমাই কেসটা দিলো। বললো, ‘দাদা, ভীষণ শক্ত ঠাঁই, কিছুতেই সুবিধে করতে পারছি না। বেটাচ্ছেলে নরম না হলে, একদম মারা যাবো। গভরমেন্টকে কিছু, খারাপ মাল সাপ্লাই করেছি-শালা ধম্মপুত্তর যধিঠির যদি রিজেকট করে দেয় একেবারে ফিনিশ হয়ে যাবো।’ প্রথমেই সুধাকরকে এক বকুনি লাগিয়ে বলেছিলাম, তোমার অভ্যেসটা পটাও—মাঝে মাঝে অন্তত থার্ড ক্লাস মাল সাল্লই বন্ধ করো। সুধাকর বললো, এসব কী অজগবী কথা বলছেন নটবরদা? লর্ড ক্লাইভের আমূল থেকে আজ পর্যন্ত কে কবে গোরমেন্টকে জেন ইন মাল সালাই করেছে?’ সুধাকর কিছুতেই শুনলো না, জোর করে কেসটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলো। গভরমেন্টের লোকটাকে আমি বাজিয়ে দেখলাম—ব্যাটা সত্যি ঘষে নেয় না, পরের গাড়িতে চড়ে না, মদ ছোঁয় না। কিন্তু আমিও নটবর মিত্তির! তখনও আশা ছাড়লাম না। তিন-চারদিন ধরে বিভিন্ন সোর্স থেকে খোঁজখবর নিয়ে শুনলাম, লোকটা এক ম্যাড্রাসী মহাপুরুষ বাবার ভক্ত। আর পায় কে? আমিও বিরাট ভক্ত বনে গেলাম। ্বললাম, আপনি বিরাট ভক্ত—আর আমি কীটাণকীট, সবে ভক্তিমাগে পা বাড়িয়েছি। আপনাকে আলো দেখাতে হবে। দেড়শ টাকা দিয়ে ম্যাড্রাসী বাবার একখানা পেশাল রঙীন ফটো যোগাড় করে পাক স্ট্রীটের সেমল থেকে দামী ফ্রেমে বাঁধিয়ে ভক্ত-বাবাজীর বাড়ি দিয়ে এলাম। মন্ত্রের মতো কাজ হয়ে গেলো। ভদ্রলোক বুঝতেই পারলেন না, ওঁর হাতে আমি তামাক খেয়ে গেলুম।”

কিন্তু নটবর মিত্তির হবে না সোমনাথ। নিজের কাছে সে ছোট হতে পারবে না।

তবে ভদ্রতা করতে পারে সোমনাথ। কলকাতায় ফিরে এসে গোয়েঙ্কাজীর বাড়িতে সোমনাথ একটা ফোন করে দিলো।

 

কয়েকদিন পরে গোয়েঙ্কাজীর সঙ্গে দেখা হলো। ধন্যবাদ জানিয়ে গোয়েঙ্কাজী বললেন, “ঝিকে পৌঁছে দিয়েছেন এই যথেষ্ট—আবার কষ্ট করে ট্রাঙ্ককলে জানাবার কী প্রয়োজন ছিল?”

সোমনাথ বললো, “ভাবলাম, ভাবীজী দুশ্চিন্তা করবেন।”

গোয়েঙ্কাজীর ঘরে ফিরিঙ্গী টাইপিস্টকে দেখতে পাচ্ছে না সোমনাথ। গোয়েঙ্কাজী খবর দিলেন, “চাকরি ছেড়ে পালিয়েছে।” তারপর ফিক করে হেসে বললেন, “গাড়িতে আপনি কিছু করেছিলেন নাকি সেদিন? সেই যে আপনার সঙ্গে কলকাতায় গেলো, তার পরের দিনই রেজিগনেশন।”

নোংরা কথায় কান লাল হয়ে উঠেছিল সোমনাথের। দাদার থেকেও বয়সে বড় লোকটা। গোয়েঙ্কাজী বললেন, “আরে ভয় পাচ্ছেন কেন? এমনি রসিকতা করলাম। আমাদের মিল কলকাতা থেকে এতো দূর যে ভালো লেডি-টাইপিস্ট আসতেই চায় না।”

চুপ করে রইলো সোমনাথ। গোয়েঙ্কাজী বললেন, “আপনি তো অনেক বড় বড় অফিসে ঘোরেন। আজকাল নাকি গাউন-পরা মেমসায়েব রাখা আর ফ্যাশন নয়? বড় বড় কোম্পানিরা নাকি এখন শাড়ি-পরা সেক্রেটারী রাখছে?”

হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। এসব খবর তো সোমনাথ রাখে না।

বললো, “সে-রকম তো কিছু শুনিনি। দ-রকম মহিলাই তো অফিসে কাজ করেন।”

গোয়েঙ্কাজী হেসে বললেন, “আপনি তাহলে অফিসে গিয়ে কোনো স্টাডি করেন না। গাউন-পরা মেমসায়েবদের ডিমান্ড খুব কমে গেছে। আপনাদের লাইনে এক ভদ্রলোকের কাছে আমি খবরটা পেয়েছি, নাম মিঃ নটবর মিটার।”

“চেনেন ওঁকে সোমনাথ জিজ্ঞেস করলো। পরিচিত একটা নাম শুনে সোমনাথ কিছুটা ভরসা পাচ্ছে।

“মিস্টার মিটার দু-একবার আমার এখানে এসেছিলেন—ওঁর এক বন্ধুর কাজে। ভারি আমুদে মানুষ। একেবারে সুপার সেলসম্যান।”

সোমনাথ ওসব কথায় আগ্রহ দেখালো না। বরং টাকার কথা তুললো। বললো, “আপনার ওপর তো ইনকাম ট্যাক্সের ভীষণ চাপ।”

এই ব্যাপারে সহানুভূতি পেয়ে খুশী হলেন গোয়েঙ্কা। বললেন, “গভরমেন্ট ডাকাতি করছে—টাকায় সত্তর পয়সা কেটে নিলে, কাজকর্মে মানুষের কোনো উৎসাহ থাকতে পারে?”

সোমনাথ বললো, “লোকের ধারণা বড় বড় পোস্টে আপনারা খুব সুখে আছেন। অথচ মোটেই তা নয়!”

এরপর গোয়েঙ্কাজী হয়তো কিছু টাকার কথা তুলতেন। কিন্তু সোমনাথকে এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। হাজার হোক সামান্য চেনা।

গোয়েঙ্কার ওপর সোমনাথ বিরক্ত হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ে ভদ্রতা রেখে চলতেই হবে। মিস্টার মাওজী বললেন, বড় পার্টি হলে, একটু-আধট, এনটারটেন করবেন। সোমনাথ তাই গোয়েঙ্কাকে বললো, “কলকাতায় এলে দয়া করে একটা ফোন করে দেবেন। যদি সুযোগ দেন কোথাও লাঞ্চে যাওয়া যাবে।”

এবার বেশ বকুনি খেলো সোমনাথ। কারণ গোয়েঙ্কা মুখের ওপর জানিয়ে দিলেন তিনি মাছ মাংস খান না-ড্রিঙ্কও ভালোবাসেন না। সুতরাং তাঁকে নেমন্তন্ন করে লাভ নেই। বরং অসুবিধে।

বিদায় দেবার আগে গোয়েঙ্কাজী বললেন, “যদি জানাশোনা ভালো কোনো লেডি সেক্রেটারী থাকে রেকমেন্ড করবেন। শাড়ি-পরা বেঙ্গলী সেক্রেটারী রাখতেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”

সোমনাথের বেশ অস্বস্তি লাগলো। চাকরি না পেয়ে যে-জগতের মধ্যে সোমনাথ ঢুকতে চেষ্টা করছে সে-সম্পর্কে বাঙালীদের কোনো জ্ঞান নেই। বিজনেস সম্পর্কে এতোদিন একটা অস্পষ্ট ধোঁয়াটে ধারণা ছিল সোমনাথের। বিজনেস এমন জিনিস যা বাঙালীরা পারে না। কারণ তাদের ধৈর্য নেই। সোমনাথ এখন বুঝেছে, হাজার রকমের বিজনেস আছে। কিন্তু যে-বিজনেসের জগতে সে পা ফেলবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে, তার মধ্যে দীর্ঘদিনের নোংরা ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিজনেসের অনেক রহস্যই বংশানুক্রমিকভাবে গোপন রাখা হয়—একান্ত—আপনজন ছাড়া কেউ জানতে পারে না।

নটবর মিত্রকে সোমনাথ এবং আদকবাবু যতই অপছন্দ করক ভদ্রলোক অতো ভিতরের অনেক খবর ফাঁস করে দিয়েছেন যা সারা জীবন বাহাত্তর নম্বর ঘরের এগারো নম্বর টেবিলে বসে থাকলেও সোমনাথ জানতে পারতো না।

মিস্টার গোয়েঙ্কার ব্যাপারেও নটবরবাবু বোধহয় কিছু সাহায্য করতে পারেন।

Leave a Reply to শেখ মোঃ কাশেম মুক্তিযোদ্ধা। Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *