আকাশ বাতাস ও তৃষ্ণা

আকাশ বাতাস ও তৃষ্ণা

তৃষ্ণার দিকে তাকালে সায়কের বুক তেষ্টায় ভরে ওঠে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তৃষ্ণার একটা রীতিমত জিম করা ঘ্যামা দাদা আছে। সায়কের সেই দাদাকে দেখলে তেষ্টা মিটে বিতৃষ্ণা দেখা দেয়। তৃষ্ণার জিম করা দাদাকে সবাই করবেট বলে ডাকে। এখন নয় ছোটবেলায় সে নাকি এয়ারগান নিয়ে বিস্তর কাককে বিবস্ত্র করেছে। করবেট গানার্সদের ফ্যান, মানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে আর্সেনালের ভক্ত এটুকু সায়ক জানে কিন্তু এটা জানে না করবেট আরসালানের বিরিয়ানি ভালবাসে কিনা! আসলে করবেটকে মোটেও বিরিয়ানির মত দেখতে নয়। বরং দেখলে মনে হয় একটা পাঁচ টাকা দামের ছোলা মটর সিদ্ধ ঘুরে বেরাচ্ছে। এবছর ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে তৃষ্ণা যখন মৌচাক থেকে ক্যাডবেরি কিনছিল সায়ক সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে ছিল। হৃদয় ঠাণ্ডা করা চাউনি নিয়ে করবেট তার দিকে তাকানোয় সায়কের চোখ তখন বন্ধ হতে পারলেই বাঁচে।

এসব কারণেই সায়কের আজকাল মনমেজাজ ভালো নেই। এই তো সকালেই ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে গিয়ে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে চলে গিয়েছিল। বিল জমা দিতেই বুড়ো মত বিল কালেক্টর তার দিকে কড়া চোখে তাকাল। কেমন হুঁকোমুখো হ্যাংলার মত দেখতে লোকটাকে। তার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলল “কবিতা লেখেন নাকি?” সায়ক বিনামেঘে কাশল। বলল “লিখি মাঝে মধ্যে”। উত্তর শুনে খিটখিটিয়ে উঠল লোকটা “আগেই বুয়েচি, কবিতা না লিখলে এমন ভুলো মন হয় নাকি! আপনি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে এসছেন। যান যান ভিড় করবেন না”। বলে গজগজ করতে থাকল “কত যে উড়ো কবি বেড়িয়েছে বর্ষাকালে শীতকালের কবিতা লেখে আর মন ভুলো করে ঘুরে বেড়ায়। কাল কালে যে কি দিন দেখতে হল…”

সায়ক মানে মানে সরে পড়ল সেখান থেকে। তার আজকাল কিছুই ভাল লাগে না। তৃষ্ণার জন্য কবিতা লিখে লিখে তার ডায়েরির মেমোরি ফুল হয়ে গেছে। তার দিনরাতের কর্মকাণ্ডের মধ্যে এখন নতুন যুক্ত হয়েছে প্রতিদিন বিকেলে সাইকেল নিয়ে তৃষ্ণার বাড়ির সামনে দিয়ে চক্কর কাটা। বাড়ির সামনে মাঝে মধ্যেই তৃষ্ণা ব্যাডমিন্টন খেলে। সাইকেলটা তখন স্লো হয়ে যায়। সায়ক সমস্ত উত্থান পতন দেখতে পায় তৃষ্ণার। তবে করবেটের চেহারার মতোই ওর গাম্বাট বাইকটা থাকলে সায়ক মোটেও সাইকেল স্লো করে না, হুহু করে বেরিয়ে যায়। কে জানে মাপলে হয়ত সে গতিবেগ আলোর চাইতেও বেশি পাওয়া যেত।

এ মফস্বলে অগাধ রাস্তা। তৃষ্ণাদের বাড়ির সামনেটা পুরোটাই কংক্রিটের, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলে এখানে ব্রিটিশদের যুদ্ধ বিমান নামত। অনেকেই বাড়ির সামনে ফুলের গাছ পোতায় জায়গাটা বেশ মায়াবী মায়াবী রূপ পায়। আর সায়কও মায়াবী তৃষ্ণা, কচি গোলাপ, কামিনী ফুল ইত্যাদি দেখে বাড়ি ফিরে বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

সায়ক ভাবছিল সুন্দরী মেয়েদের দাদা থাকা দরকার নাকি। কত ভাল হত যদি একটা ভাল দিদি থাকত। একেবারে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের মত, হয়ত দেখা গেল সায়ক বাড়ির সামনে থেকে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ উফ করে পড়ে গেল। দিদি এল। বলল “আসুন আসুন ভাই” বলে হাত ধরে নিয়ে যেত ঘরে। ডেটল সাবান দিয়ে যে জায়াগাগুলো ছড়েছে সেখানে তুলো দিয়ে দিত। দরজার পাশে এককোণে দাঁড়িয়ে থাকত তৃষ্ণা। মুখে একটা টোটাল সলজ্জ হাসি।

সে আর হল কই! কোথাকার একটা হুদো দাদা জুটেছে দিনরাত খালি জিমে পড়ে আছে, বারবেল ডাম্বেলগুলোর জন্যও আজকাল সায়কের কষ্ট হয়। ওরকম গাবদা হাত যাদের ধরে, তাদের শরীরে আর কিই থাকবে ক্ষয় ছাড়া!

পাড়ার রতনদা ম্যানেজমেন্ট পাশ। তার কাছে সায়ক সমস্যা নিয়ে গেলে রতনদা একটা সিগারেট মোটামুটি গাজার দমে টান দিয়ে বলল (সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক :D) “দেখো বাপু। আগে তোমায় ভাগ করে নিতে হবে। কি ভাগ করে নিতে হবে?” বলে মাথাটা গৌতম দেবের মত দোলাল রতনদা। “ভাগ করে নিতে হবে সময়। তোমায় দেখতে হবে ঐ মাংসের দোকান কখন থাকে। তারপর দেখতে হবে তৃষ্ণার কোন ইয়ে মানে বয় ফ্রেন্ড আছে কিনা”। সায়ক প্রতিবাদ করল “না তা নেই, কার এত দম আছে করবেটকে টপকে তৃষ্ণার দিকে হাত বাড়ায়”। রতনদা চোখ মারল “ও, তবে তো লাইন ক্লিয়ার, মেয়েটা কিসে পড়ে?” সায়ক বলল “এই তো আমাদের কলেজেই পড়ে। একই ক্লাস তবে কলেজে আসে না। এক আধটা ক্লাসের জন্যে এলে ঐ করবেট ব্যাটা নিয়ে আসে। যতক্ষণ ক্লাস করে ততক্ষণ কমনরুমে ক্যারাম খেলে ওর বন্ধুদের সাথে,তারপর ফিরে যায়। তাহলে বল আমি কখন কি করব! ঐ জন্যেই তো ওর বাড়ির সামনে মাঝে মধ্যে ফিল্ডিং দিতে যেতে হয়।”

রতনদা এবার চিন্তায় পড়ল। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে বলল “ইয়ে আমার অফিসে একটা প্রেজেন্টেশন আছে কাল, তুই এখন যা পরে আসিস”।

সায়ক বুঝল রতনদা ফেল মেরেছে। চুপচাপ কেটে পড়ল।

সে কানাঘুষো শুনেছে ব্রতী পাড়ার ইমন, আট নম্বরের রাজীব আরও চার পাঁচটা ছেলে তৃষ্ণাকে টারগেট করেছে তার মত। কেউ কেউ করবেটের সাথে ভাব জমানোর উদ্দেশ্যে জিমেও ভর্তি হয়েছে। টেনশান বাড়ছে। মাঝে মাঝে মাছের কাটা গলায় ঢুকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে “অবস্থা মোটেই সুখকর নয় কমরেড”।

২।।

সোনার দোকান

আকাশছোঁয়া

গাছের ভিড়ে

একলা শালুক

পলকা প্রেমিক

একলা হাসে

তোমার ছোঁয়া

স্পর্শকাতর

তারার ভিড়ে

“এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয় কি বল?” আজকাল স্বপ্নেও হানা দিচ্ছে করবেট। তৃষ্ণাকে নিয়ে তার ঘুমগুলো যখন কাব্যময় হয়ে ওঠে চারিদিকে তখন কোত্থেকে হিন্দি সিনেমার ভিলেনদের মত কালো মুখোশ পড়ে হানা দেয় ব্যাটা।

তারপর… সায়ক কার নাম?

এম কেডির ক্লাস কোন কালেই সায়কের ভাল লাগে না। যত বিতিকিচ্ছিরি নোট লেখায় আর ব্যাটার আরও দোষ আছে। ফার্স্ট বেঞ্চে বসে মেয়েগুলোকে নোট দিতে দিতে চশমার ওপর দিয়ে দেখে ব্যাটা।

আর তৃষ্ণা ক্লাস করলে তো কথাই নেই। ব্যাটা খালি ওকেই তুলে তুলে প্রশ্ন করার চেষ্টা করে। “আচ্ছা বলতো রাধার পূর্বরাগ কেন হয়েছিল”। সায়কের মনে হয় এমকেডির পূর্বরাগ ছুটিয়ে দেয়। কিন্তু কিছুই করার নেই। সে চুপচাপ দেখে। সে ভাল করেই জানে তার অবস্থা জরুরি অবস্থায় বিরোধী দলের নেতার মত। সবই দেখে যাও। কিছু করার নেই। তার আজকাল পড়াশুনাতেও মন বসে না। ভাল ছাত্র হয়েও সে বাংলা পড়তে এসেছে কেন সবার প্রশ্নের উত্তর যেমন দিতে পারেনা, একইভাবে তৃষ্ণাকে কেন ভাল লেগে গেল সে জানে না। তাদের ক্লাসেই পার্বণী বলে একটা মেয়ে আছে যার বুক দেখে তার বন্ধু পুলক বলেছিল “অত বড় বুক মেয়েটা সামলায় কি করে কে জানে, ‘র’ পেলে নিয়ে নিত। এক একটা যেন মিসাইল। যখন তখন সুইচ দিলেই পাকিস্তানের দিকে উড়ে যাবে!” পুলক তাদের কলেজ ম্যাগাজিনের সম্পাদক। সব সময় চশমা গুঁজে ইন্টেলেকচুয়ালের মত মুখ করে ঘুরে বেড়ায়। যেন এই মাত্র অল বেঙ্গল কবি সম্মেলনে ওকে কবিতা পড়তে ডাকা হবে। ব্যাটা ভাল করেই জানে তৃষ্ণার উপর সায়কের ভাল রকম চাপ আছে সেজন্য তৃষ্ণা যখনই ক্লাসে ঢোকে পুলক চেচিয়ে ওঠে “সায়ক কই গেলি রে”? সবাই চমকে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে দুজন পাশাপাশি বসে আছে। সায়ক তখন কোথায় লুকোবে বুঝে পায় না। একটাই জায়গা যেখানে করবেটবিহীন তৃষ্ণার উপর তার ইম্প্রেশন জমানোর সুযোগ আছে সেখানেও পুলক ব্যাটা লেঙ্গি মারে। এমকেডি যখন পূর্বরাগ পড়ায় সায়ক তখন তৃষ্ণাকে দেখে আর জীবনানন্দের কবিতা আউরায়। নোটসের খাতা কবিতায় ভরাট হয়ে যায়।

ক্লাসের বাইরে বসন্তের পাতারা ভেসে বেরোয় “মোহাব্বতে” স্টাইলে। নাম না জানা ফুলের গন্ধ ভেসে আসে ক্লাসের ভেতরে। কলেজের মাঠটায় জোড়ের সংখ্যা বাড়ছে। রাতে ঘুম না হলে জেগে বসে বসে চাঁদ দেখে সায়ক।

এমনি এক দিনে কলেজ ম্যাগাজিন নিয়ে ক্লাসে ঢুকল তৃষ্ণা। ঢুকে সায়কের হার্টবিট দ্বিগুণ করে দিয়ে বলল “সায়ক কার নাম?” সায়ক বুঝতে পারল না কি কেলো হয়েছে। সে বাচ্চা ছেলের মত হাত তুলল। তৃষ্ণা তার সামনে এসে ম্যাগাজিনটা বের করল। “ এসব কি ট্র্যাশ লিখেছ হ্যাঁ? তৃষ্ণা তোমার সকালবেলায় ভাসুক ফুলে বসন্তেরা? এসব কি?” হতভম্ব হয়ে গেল সায়ক। এসব কলেজ ম্যাগাজিনে বের করেছে পুলক! নিশ্চয়ই তার নোটসের খাতা থেকে নিয়েছে! তৃষ্ণার সামনেই সে নোটস খাতাটা বের করল। বেশ কয়েকটা পাতা ছেড়া। তৃষ্ণা রাগে ফুসছিল, “তুমি ভেব না তুমি এসব করে পার পেয়ে যাবে, পড়তে আস না এই সব করতে আস? মজা পাও না? মজা দেখাব তবে!” ক্লাসের সবাই হাসছিল। সায়ক দেখল পুলকের মুখটা নিচু। সে কিছু বলল না। ছেলেটা তাকে ভালবেসেই এই দুষ্টুমিটা করেছে সেটা বুঝতে পারছিল।

“কিবে রোমিও খুব প্রেম উথলেছে না? আয় আয়”, করবেট, সীমান্ত, রণরা কলেজের পাশের মাঠে রক্তাক্ত সায়ককে যখন ফেলে রেখে গেল তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে। কলেজ শেষে এই এলাকায় কেউ থাকে না। শুধু পুলক লুকিয়ে বসে ছিল এককোণে। নিরস্ত্র সায়ককে ওরা যখন মারছিল পুলকের কিছুই করার ছিল না। করবেটদের পরিবারের লোক এখানে যা বলে তাই আইন। সে শুধু ওরা চলে গেলে সায়ককে তুলে নিয়ে গেল।

৩।।

শেষমেশ সবাই চলে গেল

ডাহুক, কোকিল, এমনকি তোমাদের বাড়ির পোষা বিড়ালটাও

একঘেয়ে রেডিওটা

আমার পুরনো হারমোনিয়ামের কোমল ‘পা’,

আমার দাদুও

মারা গেল এবারের শীতে।

শুধু তুমি র‍্য়ে গেলে তৃষ্ণা।

কলকাতা যেতে আজকাল ভালই লাগে সায়কের। সাইকেল করে স্টেশান, ওখান থেকে বনগাঁ লোকাল করে শিয়ালদা। বনগাঁ লোকালের ভিড় মন খারাপ ভোলানোর মোক্ষম জায়গা। দম ফেলবার অবসর দেয় না। দত্তপুকুর পেরনোর পর ডেলি প্যাসেঞ্জারদের মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিঙয়ে একটু বসতেও পারে। বাবার বন্ধুরাই বেশি থাকে। সেদিনের ঘটনার পরে মা বাবা ভয় পেয়েছিল। বেশ ঘাবড়ে গেছিল। বাবাই তারপর বকাবকি করে জয়েন্টে বসায়। শুরু থেকেই সায়েন্সের ছেলে জয়েন্ট দেবে না কেন এই ধুয়ো তুলেছিল বাবা। বাংলা নিয়ে রোম্যান্টিসিজমও আর মেনে নিতে চায়নি। সায়ক এবার আর প্রতিবাদ করল না। কলকাতাই কিছুটা ভুলাতে পারে তাকে।

বাবা একটা নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছে। উদ্বিগ্ন মা তাতে মাঝে মাঝেই ফোন করে। ট্রেনে উঠে একটা, ট্রেন থেকে নেমে, একটা কলেজে পৌঁছে একটা মিসড কল দিলে তবে মা নিশ্চিন্ত হয়। পুলক আসে মাঝে মাঝে বাড়িতে। যেদিন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে ছিল সায়ককে পুলক ওর হাত ধরে কেঁদে ফেলেছিল। বার বার ক্ষমা চায় এখনও।

সায়ক সবই ভুলে গেছে। শুধু মাঝে মাঝে কোন কোনদিন কলেজ না গিয়ে কলকাতা ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে। উত্তর কলকাতার গলির গন্ধ, কলেজ স্ট্রিটের বইয়ের গন্ধ নাকে করে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে শুধু মাকে আশ্বস্ত করে মার ছেলে বেঁচে আছে।

সেদিন জোড়াসাঁকো দেখতে বেরিয়েছিল সায়ক। হঠাৎ এমন বৃষ্টি এল যে একদৌড়ে একটা পানের দোকানের তলায় ঢুকে পড়তে হল। বৃষ্টিতে ভেজা গায়ে মোবাইলটা বেজে উঠল। সায়ক বিরক্ত হল। মা এত ইন্সিকিউরিটিতে ভোগে! দুবার রিং হবার পর বিরক্ত হয়ে ভেজা হাতে ফোনটা বের করতেই দেখল অজানা নম্বর। সে ফোন কানে নিতে শুনতে পেল,

“ ‘তৃষ্ণা তোমার সকালবেলায় ভাসুক ফুলে বসন্তেরা

তৃষ্ণা তোমার রাত্রিবেলায় আগুন জ্বালুক বিপ্লবীরা

তৃষ্ণা তোমার পায়ের তলায় শিশির ছড়াক ভোরের বাতাস

তৃষ্ণা আমার এ প্রাণ জুড়ে তুমিই শুধু তুমিই আকাশ’

আমায় ক্ষমা করে দেবে সায়ক?”

সায়ক স্তব্ধ হয়ে রইল। গলাটা চিনতে ভুল হবার কথা না তার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *