৭. সংযোজন : রেখো, মা, দাসেরে মনে

সংযোজন
রেখো, মা, দাসেরে মনে

আশার ছলনায় ভুলে শেষ পর্যন্ত মাইকেল কী ফল লাভ করেছিলেন, আমরা তা লক্ষ্য করেছি। কিন্তু সারা জীবন তাঁর প্রত্যাশা এক ছিলো না। তরুণ বয়সে তাঁর অগ্রাধিকার ছিলো কবি হয়ে যশ লাভ করার, এমনকি, নীল নয়নার প্রেম লাভ করার। অর্থস্বাচ্ছন্দ্য এবং অতি আদরের মধ্যে মানুষ হন বলে সে বয়স থেকে বস্তুগত ভোগ এবং সুখের প্রতিও তাঁর লোভ কিছুকম ছিলো না। তাঁর দুর্ভাগ্য, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসঙ্গতিও দেখা দিতে আরম্ভ করে একেবারে হিন্দু কলেজের আমল থেকে। বিয়েকে কেন্দ্র করে বাবামার সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য থেকে তাঁর হতাশার সূচনা। আর কাঙ্ক্ষিত ভোগ-সুখে ঘাটতি পড়েছিলো বিপশপস কলেজ ত্যাগ করার আগে থেকেই। কিন্তু সাহিত্যিক হযে ইংরেজি সাহিত্যের আসরে স্থান পাওয়ার স্বপ্ন তখনো ভেঙে যায়নি। সেই আঘাতটা এসেছিলো The Captive Ladie প্রকাশের পর। তবে তখনো হতাশা এসেছিলো সাময়িকভাবে। কারণ, কলকাতায় এসে বাংলা সাহিত্যের দরবারে রাতারাতি একেবারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী কবি এবং নাট্যকার বলে স্বীকৃতি লাভের পর আগেকার হতাশা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি। অতঃপর আত্মবিশ্বাসে ভরপুব কবি নিজেকে কখনো কখনো কালিদাস, ভার্জিল, এমন কি মিন্টনের সমকক্ষ বলেও মনে করেছেন।

বস্তুত, যতোদিন যশের তুঙ্গে উঠতে পারেননি, যতোদিন তাঁর সামনে একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো, ততোদিন তিনি গুরুত্বর সঙ্গে সাহিত্য সাধনা করেছিলেন। কিন্তু মাত্র চার বছরের মধ্যে যখন তাঁর সামনে আর কোনো সাহিত্যিক লক্ষ্য থাকলো না, যা কিছু প্রত্যাশা করেছিলেন, তার সবই সহজে অর্জন করলেন, তখন তিনি তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেলেন। বিশপস কলেজের একজন অধ্যাপক তরুণ মাইকেল সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, মিশনারি হবার আকাঙ্ক্ষা তাঁর মধ্যে কতো প্রবল, বস্তুগত ভোগের লোভে তিনি সেটা বুঝতে পারছেন না। একই রকম বলা যায় যে, সাহিত্য রচনা করে কেবল যশ লাভ করা নয়, সাহিত্যের প্রতি তাঁর সত্যিকার প্যাশন কতো জোরালো, ধনী হবার লোভে তিনি বোধহয় তারও পরিমাপ করতে পারেননি। নয়তো ব্যারিস্টারি পড়ার কথা তিনি ভাবতেন না। এমন কি, সোনার হরিণের লোভে তিনি যখন ব্যারিস্টার হয়েছেন, তখনও আদালতের মতো অ-কাব্যিক স্থানেও তিনি বারবার আইনের বদলে তাঁর সহজাত প্রেম যে সাহিত্যের প্রতি — তা প্রমাণ করেছেন। বস্তুত, তিনি কেবল কবি নন, তিনি মনেপ্রাণে কবি। একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন: যার ভাগ্য-সরোবরে মা কমলা সোনালি আলোতে কমলিনী-রূপে বিরাজ করেন না, এ পৃথিবীতে তার জন্ম কুক্ষণে হয়েছে — এমনটা মনে করা কারণ নেই। কারণ, কল্পনারূপ খনির মধ্য থেকে রত্ন কুড়িয়ে এনে নিজের ভাষাকে যে সাজায এবং ভাষার অঙ্গ-শোভা বৃদ্ধি করে, তার ধন কেউ কেড়ে নিতে পারেনা, সে অমরত্ব লাভ করে। তিনি ‘বড়ো লোকে’র মতো জীবনযাপন করতে চেয়েছেন, ঠিকই, কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড়ো আকাঙ্ক্ষা ছিলো: তিনি মানুষের মাঝখানে অমর হয়ে থাকবেন। যা লিখেছেন, তা দিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন কিনা, সে চিন্তা তাই তাঁকে বারবার ভাবিত করেছে।

লিখিনু কি নাম মোব বিফল যতনে

বালিতে, রে কাল, তোর সাগরের তীরে?

ফেন-চূড় জল-বাশি আসি কি রে ফিরে,

মুছিতে তুচ্ছেতে ত্বরা এ মোর লিখনে?

অথবা খোদিনু তাবে যশোগিরি-শিরে,

ঘুণ-রূপ যন্ত্রে কাটি অক্ষর সুক্ষণে, —

নারিবে উঠাতে যাহে, ধুয়ে নিজ নীরে,

বিস্মৃতি, বা মলিনিতে মলের মিলনে? —

মনের মধ্যে সন্দেহ উকি দিলেও, কবি আশা করেছেন, উত্তর-কাল তাঁকে মনে রাখবে। অন্তত, তিনি সেই প্রার্থনাই জানিয়েছেন — ‘মা, দাসেবে মনে রেখো। বিলাসী জীবন যাপনের সাধনায় যদি প্রমাদ ঘটে, তবু তোমার মনের লাল পদ্মটিকে মধুহীন কোরো না।’ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তিনি প্রমাদ ঘটিয়েছেন, বিলেত যাত্রার প্রাক্কালে লেখা তাঁর এই কবিতায় তিনি নিজেই সে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে কতো বড়ো ভুল করেছিলেন এবং পরে আরও বহু ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে সে ভুলকে কতো বিশাল করে তুলেছিলেন — সেটা একেবারে শেষ মুহূর্তের আগে পর্যন্ত অনুভব করেছিলেন বলে মনে হয় না। এই প্রমাদের জন্যে এবং তিনি যে এক সময়ে ভিন ধর্ম গ্রহণ করে প্রমাদ ঘটিয়েছিলেন, তার জন্যে বঙ্গসমাজও সাময়িকভাবে তাঁর প্রতি কম অবহেলা দেখায়নি। যে-অযত্নের মধ্যে তিনি মারা যান, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তার তুলনা কমই আছে। মারা যাবার পর, বঙ্গসমাজতীর প্রতি যে-অবজ্ঞা এবং উদাসীনতা দেখায, সে-ও বিরল। জীবদ্দশায় অথবা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে কোনো কোনো কবি কাঙ্ক্ষিত যশ লাভে ব্যর্থ হন সে সম্পর্কে কবি নিজেও সচেতন ছিলেন। প্রসঙ্গত হোমারের মতো মহাকবির কথাও তাঁর মনে পড়েছে। জীবিতাবস্থায় অনাদৃত কবিদের সম্বন্ধে তাঁর বক্তব্য সুবিদিত। এ কবিতা লেখার সময়ে তাঁর নিজের ভাগ্যের কথাও তিনি ভেবে থাকবেন।

ইতিহাস এ কথা কাঁদিয়া সদা বলে,

জন্মভূমি ছেড়ে চল যাই পরদেশে।

উরুপায় কবিগুরু ভিখারী আছিলা

ওমর (অসংখ্য কালে জন্ম তাঁর) যথা

অমৃত সাগরতলে। কেহ না বুঝিল

মূল্য সে মহামণির; কিন্তু যম যবে

গ্রাসিল কবির দেহ, কিছুকাল পরে

বাড়িল কলহ নানা নগরে; কহিল

এ নগর ও নগরে, ‘আমার উদরে

জনম গ্রহিয়াছিল ওমর সুমতি।’

কবি হিশেবে ঈশ্বর গুপ্তকে গভীর শ্রদ্ধা করার কোনো কারণ দেখেননি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ঈশ্বর গুপ্ত যে-জগতে বাস করতেন আর তাঁর জগৎ — এ দুই ছিলো একবারে আলাদা। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর গুপ্ত মারা যাবার পরে তাঁর স্মৃতি রক্ষার জন্যে বাঙালিরা যে কিছুই করেননি, সে কথা বলে তিনি আক্ষেপ করেছেন। দেশের প্রতি হরিশ মুখার্জির অবদানের কথা চিন্তা করে তাঁর অকাল মৃত্যুর পরে কবি তাঁর একটি স্ট্যাচু নির্মাণের জন্যে ওকালতি করেছিলেন। বিধবাবিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের অবদানের কথা মনে রেখে কলকাতার লোকেরা যখন শ্রদ্ধা নিবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তখনো তিনি তার জন্যে এক মাসের বেতন চাঁদা হিশেবে দিতে তৈরি ছিলেন। যিনি এভাবে অন্যের কীর্তির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যে উদগ্রীব ছিলেন, সেই কবির দুর্ভাগ্য যে, তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর কবরের ওপর একটি মানানসই স্মৃতিসৌধ তৈরি করার ব্যাপারে সাহিত্যামোদীরা তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেননি। অথচ সে সময়ে বাঙালিদের মধ্যে শিক্ষিত এবং ধনী লোকদের অভাব ছিলো না। শ্রাদ্ধতে লাখ টাকা ব্যয় করা, অথবা লাখ টাকা দিয়ে রক্ষিতা রাখার ঘটনা উনিশ শতকেই ঘটেছিলে। তাঁর মৃত্যুর বারো-চোদ্দো বছর পরে যাঁরা তাঁর স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ বাংলা সাহিত্যোকাশের গ্রহ-তারা-নক্ষত্র ছিলেন না। তীদের এ উদ্যোগ নেবার কারণ কবির সঙ্গে তাঁদের এককালের বন্ধুত্ব। তাঁর বন্ধুর সংখ্যা যে একেবারে কম ছিলো, তাও নয়। তবে সব বন্ধুই তাঁর স্মৃতি রক্ষার ব্যাপারে এক রকমের ধারণা পোষণ করতেন না। যে-বিদ্যাসাগর — কবির ভাষায় — তাঁকে ‘নিজ হাতে টেনে তুলেছিলেন’ বিপদের সাগর থেকে, এক জীবনীকারের মতে, সেই বিদ্যাসাগরের কাছে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্যে যখন চাঁদা চাওয়া হয়, তখন তিনি তা দেননি। তিনি নাকি দুঃখ করে বলেছিলেন, যাঁকে জীবদ্দশায় রক্ষা করতে পারেননি, তাঁর স্মৃতিসৌধ তৈরিতে কিছু দেওয়া অর্থহীন।

মাইকেল খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে এবং সসমাজ ত্যাগ করে ইংরেজ সাজতে চেষ্টা করেছিলেন এবং শ্বেতাঙ্গিনীর সঙ্গে ঘর করেছিলেন — আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় — তাঁর এই ‘অপরাধে’র কারণে বাঙালিরা তাঁর প্রতি সহানুভূতি হারিয়েছিলেন। নয়তো, বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে তিনি যে-অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন, তাতে তাঁকে নিয়ে বাঙালিরা অনেক বেশি গর্ব করতে পারতেন। তা ছাড়া, তাঁর অ-গতানুগতিক আচরণ সত্ত্বেও তাঁর প্রতি তাঁরা আর-একটু বেশি দরদী এবং শ্রদ্ধাশীলও হতে পারতেন। বিশেষ করে তাঁর জীবদ্দশায় এবং তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরে-বাঙালিরা তাঁর প্রতি সমুচিত সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন বলে মনে হয় না। তা ছাড়া, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, কবি হিশেবে তিনি কতো বড়ো ছিলেন, সেটা তাঁর সমকালীন সাহিত্য-রসিকদের বুঝতে অনেকটা সময় লেগেছিলো। তাঁর মৃত্যুর কয়েক দশক পরে ধীরে ধীরে ব্যক্তি মাইকেলের প্রতি বিতৃষ্ণা যখন কমে এসেছে, তখন কেউ কেউ তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করেছেন। সে ক্ষেত্রেও অবশ্য তিনি যে- অন্তরের অন্তস্তলে হিন্দু ছিলেন — এটাকে বড়ো করে দেখানোর প্রয়াস একেবারে দেখা যায় না, তা নয়। অর্থাৎ সেখানেও সাহিত্যের চেয়ে তিনি আমাদের লোক’ এই চিন্তাই বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে।

বস্তুত, তাঁর প্রতি সেকালের বাঙালি সমাজের মনোভাব ছিলো একই সঙ্গে ভালোবাসা এবং ঘৃণার। সে জন্যে তাঁকে এক হাতে দূরে সরিয়ে রাখলেও, বাঙালি সমাজ তাঁকে ভুলেও যেতে পারেনি। বরং সমযের দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি বাঙালিদের শ্রদ্ধা এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে তাঁর অনুকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে যুগের এবং জীবনধারার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। তা ছাড়া, পুরাণের জগও প্রাত্যহিক জগৎ থেকে আরও দূরে সরে গেছে। তদুপরি, দেশ বিভাগের পর, হিন্দু পুরাণের সঙ্গে বাঙালি সমাজের একাংশের অপরিচয়ও গভীর হয়েছে। ভাষার ব্যাপক পরিবর্তনও হয়েছে। তা সত্ত্বেও, মধুসূদন-রচিত সাহিত্যে সময়ের ছাপ পড়েছে বলে মনে হয় না। আজকের পাঠকের কাছে সে সাহিত্য আদৌ অপ্রাসঙ্গিক অথবা রসশূন্যও নয়। তাঁর সৃষ্টির উৎসব শেষ হবার প্রায় দেড় শো বছর পরেও এখনো তাঁর রচনা লোকেরা পড়েন। কেবল তাই নয়, কালের ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁর কবিতার কোনো কোনো পঙক্তি আমাদের ভাষায় প্রবচনের মতো গৃহীত হয়েছে। ‘একি কথা শুনি আজ…?’, ‘এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে …’, ‘সম্মুখ সমর’, ‘আশার ছলনে ভুলি’, ‘কপোত-কপোতী’, ‘দাঁড়াও পথিকবর’, ‘অনিদ্রায় অনাহারে’, ‘ভিখারী রাঘব’, ‘ফুলদল দিয়া কাটিলা কি বিধাতা …?’ ইত্যাদি অনুবাক্য এ রকমের কয়েকটি দৃষ্টান্ত। যাঁরা কোনো কালে তাঁর কবিতা পড়েননি, তাঁরাও অনেকে এ কথাগুলোর অর্থ জানেন এবং নিজেদের কথাবার্তায় এগুলো ব্যবহার করেন। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অন্য কোনো বাঙালি কবির কবিতার কোনো পঙ্‌ক্তি অথবা অনুবাক্য এভাবে বাংলা ভাষায় প্রবচন হিশেবে গৃহীত হয়নি। সেদিক দিয়ে বিচার করলে শতাব্দীর ব্যবধানেও কবি এখনো অমর হয়ে আছেন।

ডাট থেকে ডাটন

বাঙালি সমাজে অমর হলেও, অদৃষ্টের পরিহাস এই যে, তাঁর নিজের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তিনি মৃত। অথচ একটি নয়, তিনি মাদ্রাস এবং কলকাতায় দু-দুটি পরিবার রেখে গিয়েছিলেন। অবশ্য স্বীকার না-করলে অন্যায় হবে, তাঁর প্রতি উত্তরাধিকারীদের ঔদাসীন্যের জন্যে তিনি নিজেও কম দায়ী ছিলেন না। তিনি সাহিত্য বচনা করেছিলেন বাংলা ভাষায়, কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের যে-তিনটি সন্তানকে রেখে গিয়েছিলেন, তাঁদের তিনি বাংলা শেখাননি। আর মাত্রাসের তিনটি সন্তানের বাংলা শেখার প্রশ্নই ওঠেনি। কারণ, সে সুযোগ তাঁদের ছিলো না। ফলে পিতা মস্তো বড়ো কবি ছিলেন, এটা তাঁরা অন্যের কাছেই শুনেছেন, নিজেরা কখনো প্রত্যক্ষভাবে তা অনুভব করতে পারেননি। এমন কি, তাঁর সত্যিকার পরিচয় পর্যন্ত তাঁর উত্তরাধিকারীদের কাছে অজ্ঞাত ছিলো। প্রথম অধ্যায়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, তাঁর স্মৃতিসৌধের ওপর তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের পৌত্ররা পিতামহীর বংশনাম পর্যন্ত ভুল লিখেছিলেন। আর, মাদ্রাসে যে-পরিবার রেখে গিয়েছিলেন, সে পরিবারের সঙ্গে তিনি যে-বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তা নজিরবিহীন না-হলেও অসাধারণ। তাঁরা যদি তাঁকে মনে না-রেখে থাকেন, তা হলে তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। সর্বোপরি, যে-উত্তরাধিকারীদের তিনি দারিদ্র্য ছাড়া আর-কিছুই দিয়ে যেতে সমর্থ হননি, সেই উত্তরাধিকারীদের তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল হবার তেমন কোনো কারণ ছিলো না। বস্তুত, তাঁরা তাঁর বংশ-নামটি পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর বছর চল্লিশের মধ্যে তাঁদের নাম থেকে মুছে ফেলেছিলেন।

দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের মধ্যে বয়সের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়ো ছিলেন হেনরিয়েটা অ্যালাইজা শর্মিষ্ঠা। আমরা শেষ অধ্যায়ে দেখেছি, মৃত্যুর মাত্র আট সপ্তাহ আগে কবিতাড়াহুড়ো করে এই কন্যার বিয়ে দিয়েছিলেন। শর্মিষ্ঠার বয়স এ সময়ে তেরো বছর আট মাস হতে এক সপ্তাহ বাকি ছিলো। মাইকেল তাঁকে ফ্রান্সে রেখে ভালো লেখাপড়া শেখাতে চেয়েছিলেন। য়োরোপীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই বাসনা, বলা বাহুল্য, সফল হতে পারেনি। তবে শর্মিষ্ঠা গান গাইতে শিখেছিলেন আর শিখেছিলেন পিয়ানো বাজাতে। যাঁর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, সেই উইলিয়াম ওয়াল্টার এভান্স ফ্লয়ডের বয়স তখন সাতাশ বছর। ভদ্রলোক ছবি আঁকতেন আর জীবিকার জন্যে তরজমার কাজ করতেন হাই কোর্টে। সেখানেই মাইকেল এঁকে চিনতেন। তা ছাড়া, ইনি থাকতেন লিন্ডসে স্ট্রীটে। মাইকেলের লাউডন স্ত্রীটের বাসা থেকে লিন্ডসে স্ট্রীটের দূরত্ব বেশি নয়। বস্তুত, ফ্লয়ডের পক্ষে শর্মিষ্ঠা এবং মাইকেলের পরিবারকে আগে থেকে চেনা অসম্ভব নয়। পাত্র হিশেবে তিনি উচ্চশিক্ষিত ছিলেন না। অথবা তিনি বঙ্গের সবচেয়ে বড়ো কবি এবং সুপরিচিত একজন ব্যারিস্টারের কন্যার সর্বোত্তম পাত্র ছিলেন — অনেকে তা না-ও মনে করতে পারেন।

সত্যিকার হতভাগিনী যাকে বলে শর্মিষ্ঠা তার কেতাবী দৃষ্টান্ত। তাঁর ভাগ্যে এ সুখটুকুও সহ্য হয়নি। তিনি বিধবা হন বিয়ে হবার ঠিক দুবছর চার মাস মাস বারো দিন পরে। ১৮৭৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে মাত্র ২৯ বছর বয়সে উইলিয়াম ক্লয়ড মারা যান জ্বর এবং প্লীহার অসুখে ভুগে। এর তিন মাস আগে — এগারোই জুন তারিখে ম্যালেরিয়ায় মারা যান শর্মিষ্ঠার ছোটো ভাই ফ্রেডাবিক মিল্টন। মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিলো মাত্র ১৩ বছর দশ মাস। ফ্রেডারিক নাকি পিতার কবিত্ব লাভ করেছিলেন এবং সে বয়সেই কবিতা লিখতেন। শর্মিষ্ঠা দু বছর চার মাসের মধ্যে একে-একে তাঁর মা, বাবা, ছোটো ভাই এবং স্বামীর মৃত্যু দেখলেন। কিন্তু শোকের চেযেও তাঁর জীবনে বড় একটি সমস্যা দেখা দিলো — তিনি আর-একবার অসহায় হলেন। তাঁর বয়স নিতান্ত কম। স্বামীর স্মৃতি নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকার মতো পরিবেশও তাঁর ছিলো না।

তাঁর বিধবা হবার এক বছর চার মাস পরে — ১৮৭৭ সালের ১৩ জানুয়ারি — ১৮ বছর বয়সে তাঁর আবার বিয়ে হলো। এঁর নামও উইলিয়াম — উইলিয়াম বেনজামিন নিস। বিয়ের দলিলে শর্মিষ্ঠার কুমারী নাম লেখা হলো না। তার বদলে লেখা হলো হেনরিযেটা ফ্লয়েড। উইলিয়াম নিস ছিলেন বিপত্নীক। পেশা ঠিকাদারি। ব্যস ৫২ বছর। শর্মিষ্ঠার পিতা বেঁচে থাকলে এ সময়ে তাঁর বয়স হতো ৫৩ বছর। শর্মিষ্ঠার ভাগ্যে এর চেয়ে ভালো পাত্র জোটেনি। শ্বশুরের ব্যসী দ্বিতীয় স্বামীকে ‘উইলিয়াম’ নাম ধরে ডাকতে গিয়ে কতো বার তিনি প্রথম স্বামীর শোক অনুভব করেছেন, তার কোনো হিশেব আমাদের জানা নেই।

নিসের সঙ্গে বিয়ের ঠিক এক বছর এক মাস পরে — ১৮৭৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর একটি ছেলে হয়। এর নাম দেওয়া হয় উইলিয়াম ব্রাইটম্যান স্যামুয়েল নিস। শর্মিষ্ঠার দ্বিতীয় সন্তান — কন্যার জন্ম পরের বছর ৯ ফেব্রুআবি। এর নাম দেওয়া হয়েছিলো মায়েব মতো হেনরিয়েটা অ্যালাইজা শর্মিষ্ঠা নিস। কন্যার অন্যতম নাম শর্মিষ্ঠা রাখার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, শর্মিষ্ঠা তখনো পিতার দেওয়া স্নেহের নামটি ভুলতে পারেননি। ঐ বছরই এই কন্যার মৃত্যু হয়। আর এই সন্তান হবার চার দিন পরে মারা যান শর্মিষ্ঠা স্বয়ং! মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ১৯ বছর পাঁচ মাস।১০ এর পর কবির দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের মধ্যে বেঁচে থাকেন এক মাত্র অ্যালব্যর্ট নেপোলিয়ন।

শর্মিষ্ঠা অকালে মারা গেলেও তাঁর পুত্র উইলিয়াম ব্রাইটম্যান স্যামুয়েল দীর্ঘায়ু লাভ করেন। হৃদরোগে মারা যান ১৯৪৪ সালের ৯ই ডিসেম্বর তারিখে। তখন তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৬ বছর। তাঁর পিতা উইলিয়াম ব্রাইটম্যান নিস ১৯০১ সালে মারা গিয়েছিরেন ৭৬ বছর বয়সে।১১ স্যামুয়েল মোটামুটি লেখাপড়া শিখেছিলেন এবং পিতা অবসর নেবার পর পুস্তক প্রকাশক থ্যাকার, স্পিঙ্কস অ্যান্ড কম্পেনিতে পিতার কেরানিগিরির কাজ পেয়েছিলেন। পরে তিনি আবগারি এবং লবণ বিভাগে চাকরি নেন। এই উপলক্ষে তিনি ওড়িষা, নোয়াখালি, দার্জিলিংইত্যাদি নানা জায়গায় কাজ করেন। ১৯১৮ সাল নাগাদ তিনি আবগারি বিভাগের সুপারিন্টটেন্ডেন্ট হয়েছিলেন। তেইশ বছর দু মাস বয়সে তিনি বিয়ে করেছিলেন গ্রেস এলেন কেইমারকে। পরবর্তী ১৭ বছরে তাঁদের ৯টি সন্তান জন্মে। সন্তানদের মধ্যে অন্তত দুটি মারা যায় একেবারে শৈশবে। বংশলতিকা থেকে দেখা যাবে সন্তানদের মধ্যে তিনটি ছিলো কন্যা এবং ছটি পুত্র। দ্বিতীয় কন্যা রুবি ম্যৰ্থা এলোডিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় অ্যালবার্ট নেপালিয়নের জ্যেষ্ঠ পুত্র মাইকেল লরেন্স ওরফে মাইকেল ল্যান্ডসিইয়ারের।

কবি মারা যাবার সমযে মনোমোহন ঘোষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাঁর নিজের সন্তানরা খেতে-পরতে পেলে কবিব সন্তানরাও খেতে-পরতে পাবে। যদ্র জানা যায়, মনোমোহন এই প্রতিশ্রুতি পালন করেছিলেন। তা ছাড়া, কবি মারা যাবার ঠিক পরে তাঁর দুই পুত্রের জন্যে যে-সাহায্য তহবিল গঠন করা হয়, দশ দিন পরের ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় দেখা যায়, ততোদিনে সেই তহবিলে বারো শো টাকা সংগৃহীত হয়। তবে মনোমোহন ঘোষ অথবা অন্য সহৃদয় ব্যক্তিদের সহায়তা সত্ত্বেও কবির দুই পুত্রের ভাগ্য যথেষ্ট প্রসন্ন হয়নি। আগেই বলেছি ফ্রেডারিক মারা যান তাঁর কৈশোরে। তারপর অ্যালব্যর্ট নেপোলিয়ন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ১৮৮৯ সালে তৃতীয় শ্রেণীতে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মনে হয় এর পর তাঁর লেখাপড়া বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। অন্তত তিনি বিএ পাশ করেননি। শোনা যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্তের পুত্র — এই সুবাদে ভারত সরকারের কোনো সহৃদয় কর্মকর্তা তাঁকে আবগারি বিভাগে একটি ছোটো চাকরি দেন। চাকরির সূত্রে তিনি লাখনৌ এবং এলাহাবাদ- সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। ধাপে ধাপে উন্নতির মাধ্যমে তিনি শেষ পর্যন্ত সাব-ডেপুটি অপিয়াম এজেন্ট হয়েছিলেন। ১৮৯৫ সালে তিনি কাশীতে কাজ করার সময়ে ক্যাথলিন রেইচেল ব্রাউনিংকে বিয়ে করেন।১২ তাঁদের প্রথম যে-সন্তানের ব্যাপটিজমের খবর জানতে পাচ্ছি, তাঁর নাম ক্যাথলিন থেলমা অ্যাগনেস। এরপর তাঁদের অন্তত তিনটি সন্তান হয়েছিলো — মাইকেল লরেন্স (১৯০২), ডরিস নৰ্মা (১৯০৪) এবং নেভিল চার্লস ব্রাউনিং (১৯০৬)। মাত্র ৪২ বছর বয়সে — ১৯০৯ সালে অ্যালব্যর্ট মারা যান। পিতার মতো তিনিও সন্তানদের প্রায় অসহায় অবস্থায় রেখে যান। তবে তিনি আবগারি বিভাগে কাজ করতেন — এই সূত্রে কোনো সঞ্চয় রেখে গিয়েছিলেন কিনা, জানা যায় না।

কবি যখন পরলোক গমন করেন, তখন অ্যালব্যর্ট নেপোলিয়নের বয়স ছিলো ছ বছর। পিতার স্মৃতি তাঁর সামান্যই মনে ছিলো। কিন্তু তাঁর পিতা যে বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন বয়স হবার পর তিনি সেটা অনুভব করেছিলেন। তা ছাড়া, ততোদিনে মাইকেল সম্পর্কে বাঙালিদের মনে যে-অভিমান এবং বিরাগ ছিলো, তা কমে যাওয়ায় কবি নিজেও বঙ্গ সমাজে ধীরে ধীরে একটি জীবন্ত সত্তায় পরিণত হতে আরম্ভ করেন। এই প্রক্রিয়ার শুরুকবির সমাধির ওপর স্মৃতিফলক নির্মাণের মধ্য দিয়ে। ১৮৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মাইকেলের বন্ধু এবং সাধারণ লোকদের চাঁদায় যখন তাঁর সমাধির ওপর একটি ছোটোখাটো স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়, তখন তা উন্মোচন করার সম্মান দেওয়া হয়েছিলো একুশ বছরের অ্যালব্যর্টকে। এ সময়ে অ্যালব্যর্ট লক্ষ্য করে থাকবেন, তাঁর পিতা পনেরো বছর আগে মারা গেলেও, তখনো বাঙালিদের স্মৃতিতে বেঁচেছিলেন। যোগীন্দ্রনাথ বসুর লেখা জীবনচরিত (১৮৯৩) সমাজে কবির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করেছিলো। সে বই অ্যালবার্ট পড়েছিলেন বলে মনে হয় না। কিন্তু তাঁর পিতার জীবনী প্রকাশিত হয়েছে, সেখবর জেনে থাকবেন। তিনি চাকরিও পেয়েছিলেন পিতৃপরিচয়ের জোরে। পিতার প্রতি বস্তৃত তাঁর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা যথেষ্ট মাত্রায় ছিলো বলে মনে হয়। সে জন্যে, নিজের মৃত্যু পর্যন্ত তিনি পিতার বংশ-নাম — Datta — বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর প্রতিটি সন্তানের ব্যাপটিজমের সময়ে তাঁদের বংশ-নাম ইংরেজি রীতিতে ডাট না-লিখে লিখেছেন Datta। এমন কি, তিনি মারা যাবার পর, চার্চের রেজিস্টারে তাঁর নামও লেখা হয়েছে ‘দত্ত’।১৩

অ্যালব্যর্ট তাঁর পিতাকে দেখেছিলেন এবং তাঁকে নিয়ে গর্বিত হবার মতো অভিজ্ঞতাও তাঁর হয়েছিলো। কিন্তু তাঁর সন্তানরা অনেকেই আত্মীয়তা এবং সাংস্কৃতিক — উভয় দিক দিয়েই কবির কাছ থেকে সরে গেছেন আরও দূরে। এমন কি, কবির বংশ-নাম বহাল রাখার মতো কোনো কারণও তাঁরা খুঁজে পাননি। প্রথমে তাঁরা ইংরেজি ধরনে Dutt লিখলেও পরবর্তী কালে বানানের একটু সংস্কার করে লেখেন Dutton। এটি হলো একটি ইংরেজি বংশ-নাম। তাঁরা যে-একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবির পৌত্র এবং পৌত্রী — এ খবর তাঁদের কতোটা জানা ছিলো কিনা অথবা জানা থাকলে তা নিয়ে তাঁরা কতোটা গর্ব করতেন, তা আমাদের জানা নেই। বরং আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, তাঁরা বাঙালি পরিচয়টাকে পর্যন্ত মুছে ফেলতে চেয়েছেন। মিশ্র বিবাহের দরুন ততোদিনে তাঁদের চামড়ার রঙ কেমন হয়েছিলো, সে তথ্য আমাদের অজ্ঞাত। কিন্তু বংশ-নাম বদল করার ঘটনা থেকে মনে হয়, নিজেদের তাঁরা ইংরেজ অথবা ফিরিঙ্গি বলেই পরিচিত করতে চেয়েছেন। প্রথম বার যখন এই নতুন ডাটন নাম লিখিত রূপে দেখতে পাই, তা হলো অ্যালব্যর্টের বড়ো মেযে ক্যাথলিনের বিয়ের সময়ে। অ্যালব্যর্ট মারা যাবার ন বছর পর — ১৯১৮ সালে যখন এই কন্যার বিয়ে হয় লিওপল্ড অ্যাল্যান গোরের সঙ্গে, তখন ক্যাথলিনের বংশনাম লেখা হয় ডাটন।১৪ (গোর ছিলেন মেকানিকাল ইনজিনিয়ার)। পরে অন্য প্রত্যেকটি সন্তান এবং সন্তানদের সন্তানদের নামের পদবীও ডাটন বলে উল্লিখিত হয়েছে। এর ফলে কবির বংশনামটি পর্যন্ত তাঁর নিজের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যায়।

অ্যালব্যর্ট নিজের পুত্রদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার আগেই মারা যান। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তাঁর সন্তানরা লেখাপড়া শিখে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর বড় পুত্র মাইকেল লরেন্স ওরফে মাইকেল লন্ডসিয়ার চাকরি পেয়েছিলেন আয়কর বিভাগে। ১৯৩১ সালে তিনি যখন হেরিয়েটার পৌত্রী কবীকে বিয়ে করেন, তখন তিনি জলপাইগুড়িতে কাজ করতেন। ১৯৩৫ সালে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র ভিক্টর লরেন্স মারা যাবার সময়ে তিনি আয়কর বিভাগের হিশাব পরীক্ষক ছিলেন। কিন্তু পরের বছর (যখন তৃতীয় পুত্র পিটারের জন্মের সময়ে) তিনি আয়কর অফিসারে উন্নীত হন। অ্যালব্যর্টের অন্য পুত্র নেভিল চার্লস লাহোরে আয়কর উকিল হিশেবে কাজ করতেন। পরে তিনি হাই কোর্টের বিচারপতি হয়েছিলেন।

কবির পৌত্ররা নিজেদের বংশ-নাম পরিবর্তন করলেও, অথবা এই পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজের সঙ্গে একাত্ম করার প্রয়াস পেলেও, পিতামহের কথা তাঁরা পুরোপুরি ভুলে যেতে পারেননি। বস্তুত, এঁরা পিতামহের স্মৃতি রক্ষার জন্যেও চেষ্টা করেছেন। কবির সমাধির ওপর বর্তমান স্মৃতিসৌধ তৈরি করার ব্যাপারে তাঁরাই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৮৮৮ সালে যখন কবির সমাধি তৈরি করা হয়, তখন হেনরিয়েটার কবরের ওপর কোনো স্মৃতিফলক লাগানো হয়নি। কবির পৌত্ররা সেই দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। বর্তমানে কবির সমাধির ওপর যে-আবক্ষ মূর্তি রয়েছে, তা-ও পৌত্ররাই নির্মাণ করান। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে তাঁর যে-চিত্রটি আছে, সেটিও তাঁদের দান। কবির সাহিত্য এঁরা বুঝতে পারেননি, তাঁর বংশ-নামও এঁরা বর্জন করেছেন, কিন্তু তবু এঁরা তাঁর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে বাঙালি সমাজের লজ্জা নিবারণ করেছেন। তবে এটা কবির সমস্ত উত্তরাধিকারীর মনোভাব নয়। তাঁর স্মৃতিরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন কবির পৌত্র নেভিল চার্লস ডাটন। ডক্টর রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তের সঙ্গে এঁর ঘনিষ্ঠতা ছিলো। ডক্টর দাশগুপ্ত আমাকে বলেছেন যে, বিশেষ করে এই নেভিল ডাটনের উদ্যোগেই কবি এবং কবি-পত্নীর সমাধির ওপর স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ শেষ হয়। তা ছাড়া, নেভিল কবির চিঠিপত্র সম্পাদনার কাজ করার জন্যে সজনীকান্ত দাশকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। নগেন্দ্রনাথ সোমের মধু-স্মৃতির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলে ইনি বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। মোট কথা, নিজের পিতামহকে নিয়ে তাঁর গর্ববোধ অনায়াসে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু বাঙালি সমাজের জন্যে এটা আদৌ গর্বের বিষয় নয় যে, মাইকেলের স্মৃতির উপযোগী একটি সৌধ তৈরি করতে এগিয়ে আসতে হয়েছিলো তাঁরই আত্মীয়দের।

মাইকেলের প্রথম পক্ষের সন্তানরা তাঁর ‘ডাট’ নাম বিসর্জন দিয়েছিলেন দ্বিতীয় পক্ষেরও আগে। সেটা স্বাভাবিকও। দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের মতো তাঁদের জীবনও মোটেই সুখের হয়নি। তবে তুলনা করলে মাদ্রাসের পরিবারই বেশি কষ্টের মধ্যে সময় কাটিয়েছিলো বলে মনে হয়। তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, কবি চারটি অসহায় শিশুকে মাদ্রাসে ফেলে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। তারপর আর কোনোদিন মাদ্রাসে ফিরে যাননি। তিনি তাঁদের ভরণপোষণের জন্যে মাদ্রাসে টাকাপয়সা পাঠাতেন — এমন কোনো প্রমাণ নেই। (তবে প্রথম দিকে পাঠানো অসম্ভব নয়। রেবেকা অরফ্যান অ্যাসাইলামের পিতৃহীন দরিদ্র সন্তান। শিক্ষাও লাভ করেছিলেন সামান্যই। আয় করার তাঁর কোনো যোগ্যতা ছিলো বলে মনে হয় না। এই পরিস্থিতিতে তিনি কি করে সন্তানদের নিয়ে বেঁচেছিলেন, তাঁদের যেমন তোক মানুষ করেছিলেন — বোঝা যায় না। কিন্তু কাজটা যে মোটেই সহজ ছিলো না, লিখিত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াও তা বলা যায়। এতে প্রতিকূলতার মধ্যেও, তিনি তাঁর সন্তানদের মায়া কাটিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেননি। অথবা মাইকেলের দেওয়া বংশ-নামও ত্যাগ করেননি। ১৮৯২ সালের জুলাই মাসে ৬১ বছর বয়সে তিনি যখন মারা যান, তখনো তিনি মিসেস ডাট নামেই মারা যান।১৫ আর বিনা অপরাধে পিতা তাঁদের নির্দয়ভাবে ত্যাগ করায়, প্রথম পক্ষের সন্তানদের জীবন সহজ সরল পথে চলতে পারেনি। তাঁরা লেখাপড়া শেখার তেমন কোনো সুযোগ পাননি। আর-পাঁচ জনের মতো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই ছিলো তাঁদের জন্যে কঠিন কাজ। তা সত্ত্বেও, জীবিত তিনটি সন্তান দীর্ঘকাল পিতৃ-নাম ত্যাগ করেননি।

মাদ্রাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার থেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলাম, এই তিন সন্তানের কেউ এনট্রেন্স পাশ করেছিলেন কিনা। কিন্তু তাঁদের নাম কোথাও খুঁজে পাইনি। ধারণা করি, তাঁরা অতোটা লেখাপড়া করতে পারেননি। ১৮৯২ সালে জর্জ জন ম্যাট্যাভিশডাট যখন ৩৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন, তখন তাঁর পরিচয় লেখা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণীর উকিল।১৬ অর্থাৎ ডিগ্রি-হীন উকিল। বড়ো মেয়ে ব্যর্থা অথবা ছোটো মেয়ে ফিবিও লেখাপড়া সামান্যই শিখেছিলেন।

মাদ্রাসের সন্তানদের জীবন যে আর-পাঁচজনের মতো সরল অথবা স্বাভাবিক পথে চলেনি, তার একটা পরোক্ষ প্রমাণ পাই তাঁদের বিয়ের খবর থেকে। জর্জের বিয়ে হয় ৩৯ বছর বয়সে। কন্যাদেরও যথাসময়ে বিয়ে হয়নি। নিতান্ত দরিদ্র, সাধারণ শিক্ষিত, শ্বেতাঙ্গিনীর মায়ের পিতৃ-বর্জিত কৃষ্ণাঙ্গ সন্তানদের কে বিয়ে করবে? তবে সৌভাগ্যের বিষয় তাঁরা কেউই অবিবাহিত থাকেননি। ১৮৮১ সালের ২৬ জুলাই তারিখে ব্যর্থার ৩২ বছর এগারো মাস বয়সে এবং ফিবির ৩১ বছর চার মাস বয়সে বিয়ে হয়। সেকালের কোনো মেয়ের বিয়ের জন্যে এ বয়স এততাই বেশি যে, তাঁদের বিয়ের দলিলে তাঁদের বয়স লেখা হয়নি। তার বদলে লেখা হয়েছে: of full age। তা ছাড়া, যে-পাত্র তাঁদের ভাগ্যে জুটেছিলো, তাঁরা কেউ মাইকেল মধুসূদন দত্তের জামাতা হবার উপযুক্ত নন। দুজনই ছিলেন সৈন্য বিভাগের সাধারণ সৈনিক। ব্যর্থার বিয়ে হয়েছিলো ফ্রান্সিস জন হিগিন্স নামে এক ল্যান্স কর্পোরালের সঙ্গে। আর ফিবির স্বামী ছিলেন বিপত্নীক স্যামুয়েল ওয়াল্টার এইরিস। ফিবির চেয়ে কয়েক বছরের ছোটো। তিনি ছিলেন ফিবির মাতামহ রবার্ট টমসনের মতো সাধারণ গোলন্দাজ।১৭ কোনো চার্চে গিয়ে এঁদের বিয়ে হয়নি। কারণ, রেবেকা সম্ভবত এঁদের চার্চে গিয়ে বিয়ে করতে দেননি। তিনি নিজের জীবনে লক্ষ্য করেছিলেন, ধর্মীয় রীতিতে বিবাহের পর স্বামী স্ত্রীকে ত্যাগ করে চলে গেলে আইনগত কোনো প্রতিকার মেলে না। তিনি চাননি, তাঁর কন্যাদের কেউ প্রতারণা করুক; অথবা প্রতারণা করে পার পেয়ে যাক। তিনি নিজে যে-শিক্ষা পেয়েছিলেন, সেটাই তাঁর কাছে যথেষ্ট হয়েছিলো।

মাদ্রাসের পরিবার কি কবির খবর রাখতো? — জানতো যে, তিনি বড়ো কবি হিশেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন অথবা ব্যারিস্টার হয়েছেন? এই প্রশ্নের একাংশের উত্তর মেলে ব্যর্থা আর ফিবির বিয়ের দলিল থেকে। তাঁদের এই বিয়ে হয় মাইকেল মারা যাবার ন বছর পরে। সুতরাং মৃত ব্যক্তির পেশার উল্লেখ থাকার কথা নয়। কিন্তু তবু এই দলিল দুটিতে দেখতে পাই মাইকেলের নামের সঙ্গে লেখা হয়েছে তাঁর পেশা: ব্যারিস্টার।১৮ বোঝা যায়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দারিদ্র্য এবং চামড়ার রঙ নিয়ে তাঁরা গর্ব করতে পারেননি বটে, কিন্তু খাস বিলেত থেকে-আসা তাঁদের স্বামীদের তাঁরা জানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যে, তাঁরা গরিব হলেও, তাঁদের পিতা ছিলেন ব্যারিস্টার। স্বামীর প্রতি সীমাহীন অভিমান এবং ঘৃণা থাকা সত্ত্বেও এই শব্দটি রেবেকাকেও কম গর্বিত করতো বলে মনে হয় না। যে-স্বামী তাঁকে ত্যাগ করেছেন, তিনি সাধারণ লোক নন, একজন ব্যারিস্টার –বুক-ভাঙা দুঃখের মধ্যেও তাঁর কাছে এটা হয়তো একটা সান্ত্বনা ছিলো।

দারিদ্র্য সবার কাছেই কমবেশি দুঃসহ। কিন্তু কবির সন্তানদের কাছে তাঁদের দারিদ্র্য ছিলো আরও বেশি দুঃসহ। কারণ, তাঁর সত্যিকার অবস্থা যেমনই হোক না কেন, তাঁরা দূর থেকে শুনতেন তিনি ব্যারিস্টার –অর্থাৎ রীতিমতো ধনী। সুতরাংতাঁর সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কেন অমন অনটনের মধ্যে থাকবেন, এটা তাঁদের বুঝতে কষ্ট হযেছে। শোনা যায়, মাইকেল মারা যাবার পর, মাদ্রাসের পরিবারের পক্ষ থেকে কলকাতায় লোক এসে তাঁব সম্পত্তির খোঁজ-খবর নিয়েছিলো। তখনকার পত্রিকায নাকি এ খবর ছাপা হয়েছিলো।১৯

বিয়ে হলেও ব্যথা এবং ফীবির জীবন মোটেই সুখের হয়নি। বিয়ের মাত্র ছ মাস দুদিন পরে ব্যর্থা মারা যান পিতার মতো উদরী রোগে।২০ আর ফীবির ভাগ্য ছিলো তার চেয়েও খারাপ। তাঁর স্বামী স্যামুযেল এইরিস মারা যান বিয়ের ঠিক সাড়ে চার মাস পরে। ততোদিনে ফীবি আশ্রয়হীন। ভাই- এর কাছেও আশ্রয় মিলেছে কিনা কে জানে? বিধবা হবার এক বছর ন মাস পরে তাঁর দ্বিতীয় বার বিয়ে হয় হেনরি কিং-এর সঙ্গে। হেনরি নামেই কিং ছিলেন। তাঁর আসল পেশা ছিলো দরজিগিরি।২১ তাঁর সঙ্গে ফিবিব বিয়ে কতো দিন টিকে ছিলো, সে তথ্য জোগাড় করতে পারিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯১৮ সালে ফিবি যখন মারা যান, তখন তাঁর কোনো বাড়িঘর অথবা আশ্রয় ছিলো না — তিনি মারা যান একটি আশ্রমে।২২ এ থেকে সন্দেহ হয়, তাঁর কোনো সন্তানাদি ছিলো কিনা।

সন্তান রেখে মারা যান জর্জ। জর্জ বিয়ে করেছিলেন প্রায় পৌঢ়ত্বে উপনীত হয়ে। তাঁর বিয়ে হয়েছিলো এক বিধবার সঙ্গে। নাম এলিজাবেথ ব্যাষ্টিষন। এঁর সঙ্গে জর্জের কোনো সন্তান হয়নি। ১৯০০ সালের ১৯ জুলাই এলিজাবেথ ডাট মারা যান।২৩ এর পরের বছরই জর্জ আবার বিয়ে করেন। এবারে তিনি বিয়ে করেন এক বিধবা নার্স — অ্যাডেলাইড এলিজাবেথ নেলসনকে।২৪ এঁদের প্রথম সন্তান ম্যর্লিন ডরিসের জন্ম ১৯০৪ সালে।২৫ ২০ বছর বয়সে আম্বালায় এঁর বিয়ে হয় হেনরি জন হিউমের সঙ্গে।২৬ জর্জের পুত্র ম্যর্ডিন জর্জ কার্লটনের জন্ম ১৯০৮ সালে।২৭ ততোদিনে জৰ্জ রেলওয়ের ইন্সপেক্টর। দু মাস পরেই তাঁর এই সন্তানটি মারা যায়। আর জর্জ নিজে পক্ষাঘাতে মারা যান ১৯১৫ সালে। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। মৃত্যুর সময় তাঁর পেশা লেখা হয়েছিলো উকিল।২৮

জর্জ ১৯০১ সালে যখন দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন, তখনো তাঁর বংশ-নাম লেখা হয়েছে: ডাট। কিন্তু এর তিন বছর পরে যখন তাঁর প্রথম সন্তান জন্মে, তখন ব্যাপটিজমের সময়ে তার নাম লেখা হয়েছে: ডাটন।২৯ দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম এবং মৃত্যু আর জর্জের মৃত্যুর সময়েও বংশ-নাম লেখা হয়েছে: ডাটন। পিতার সঙ্গে যে-ক্ষীণ যোগাযোগটুকু ছিলো, সম্ভবত দ্বিতীয় স্ত্রীর বুদ্ধিতে জর্জ সেটুকু কেটে ফেলেন। আগেই লক্ষ্য করেছি, কবির দ্বিতীয় পক্ষের উত্তরাধিকারীরাও কলকাতায় বসে তাঁদের নাম ডাট থেকে ডাটনে পরিবর্তিত করেছিলেন। মনে হয় না, মাদ্রাসের উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে কলকাতার উত্তরাধিকারীদের কোনো যোগাযোগ হযেছিলো। কিন্তু ডাটন নাম গ্রহণ করে দু পক্ষই অজ্ঞাতে একে অন্যের কাছে এগিয়ে গিযেছিলেন। অবশ্য এর মাধ্যমে তাঁরা মাইকেলের সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ ঘটিয়েছিলেন। এভাবেই মধুসূদন দত্ত তাঁর উত্তরাধিকারীদের নামে পর্যন্ত বেঁচে থাকলেন না, বেঁচে থাকলেন কেবল বাঙালি সমাজে — তাঁর সাহিত্যকীর্তি দিযে। বঙ্গ মাতার কাছে মনে রাখার যে-মিনতি জানিয়েছিলেন, তা অগ্রাহ্য হয়নি।

কবির সমাধি। অ্যালবার্ট নেপোলিয়নের পুত্র চার্লস নেভিল ডাটনের উদ্যোগে
কবির আবক্ষ মূর্তিটি বসানো হয় ১৯৫০-এর দশকে। মাইকেল এবং
হেনরিয়েটার কবরেরও সংস্কার করেন তিনি। ১৮৮৮ সালে হেনরিয়েটার কবরের
ওপর কোনো ফলক বসানো হয়নি। আবক্ষ মূর্তিটি সুনীল পালের তৈরি।

ভার্সাই-এর রাজপ্রাসাদের ঠিক পেছনের ৫ নম্বর মোরপা সড়কের এই বাড়িতে
মাইকেল নিজে ছিলেন মাসখানেক। কিন্তু তাঁর পরিবার ছিলো আড়াই বছর।

মাইকেলের সময়কার ট্যাঙ্ক স্কোয়ার।
ফ্রেডারিক ফাইবিগের আঁকা ছবি (আনুমানিক ১৮৪৫)

ভার্সাই-এর রাজপ্রাসাদ। এই প্রাসাদ এবং ভার্সাই-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কবিকে একাধিক সনেট লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো।

হ্যাম্পটন কোর্ট: প্রধান প্রবেশ পথের দিক থেকে।

এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে রক্ষিত এন/১ এবং এন/২ পেপার্সের ওপর ভিত্তি করে। কেবল ব্যাজিল প্যাট্রিক এবং জেনিফার ডাটনের নাম সুরে নেওয়া। এ তালিকা সম্পূর্ণ নয়। মাইকেলের জীবনীর জন্যে এর চেয়ে বিস্তারিত তালিকার প্রয়োজনীয়তা তাঁর প্রপৌত্রসহ বেশির ভাগ বংশধরগণ এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন বলে শুনেছি।

উল্লেখপঞ্জী ও টীকাটিপ্পনী – সংযোজন

পৃ ৩৪৮

গোপীমোহন দেবের শ্রাদ্ধে (১৮১৮ সালে) তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিলো বলে সমাচারদর্পণে লেখা হয়েছিলো। ১৮২৫ সালে রামদুলাল সরকারের শ্রাদ্ধে ব্যয় হয়েছিলো তার চেয়েও বেশি। সংবাদপত্রে সেকালের কথা, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত (৪র্থ মুদ্রণ; কলিকাতা: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৯৭১), পৃ. ২৬১, ২৬৩।

ঐ, পৃ. ১২১।

ইন্দ্ৰমিত্র, করুণাসাগর বিদ্যাসাগর (তৃতীয় মুদ্রণ; কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স, ২০০১), পৃ. ৩৮৭।

যোগীন্দ্রনাথ বসু তাঁর জীবনীতে বারবার আক্ষেপ করেছেন, মাইকেল খৃস্টান হয়ে কতো বড়ো অন্যায় এবং অপরাধ করেছিলেন। মোহিতলাল মজুমদার তাঁর কবি শ্রীমধুসূদনে (কলকাতা, ১৯) মধুসূদন যে আসলে শ্রী মধুসূদন, মাইকেল মধুসূদন একটা ভ্রান্তি তার ইঙ্গিত করেছেন।

পৃ ৩৫০

IOR, N/1/153/248.

IOR, N/1/152/529.

IOR, N/1/159/266.

IOR, N/1/165/.

IOR, N/1/170/54d.

১০ IOR, N/1/167/209.

১১ IOR, N/1/305/113.

পৃ ৩৫১

১২ IOR, N/1/248/241.

১৩ JOR, N/1/359/220.

পৃ ৩৫২

১৪ IOR, N/1/431/217.

পৃ ৩৫৩

১৫ IOR, N/2/74/65.

পৃ ৩৫৪

১৬ IOR, N/11/8/814.

১৭ IOR, N/11/1007.

পৃ ৩৫৫

১৮ IOR, N/11/1005-1007.

১৯ আহমদ শরীফের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য। আমি নিজে কোনো পত্রিকায় পড়িনি। কিন্তু মাদ্রাসের সন্তানরা যেহেতু পিতার খবর রাখতেন, সুতরাং ব্যারিস্টার পিতার মৃত্যুর পর তাঁর অগাধ সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার আশা নিয়ে কলকাতায় খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব।

২০ IOR, N/2/65/26.

২১ IOR, N/11/6/1165.

২২ IOR, N/2/124/208.

২২ IOR, N/11/6/1167.

২৩ IOR, N/2/88/96.

২৩ IOR, N/2/124/205.

২৪ IOR, N/11/10/146.

২৫ IOR, N/2/104/248.

২৬ IOR, N/1/477/60.

২৭ IOR, N/2/104/248.

২৮ IOR, N/2/115/220.

২৯ IOR, N/2/104/248.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *