৪. টীকা

টীকা

আজমল খাঁ   রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের আত্মীয়। তৎকালীন বার্মার রেঙ্গুনে ব্যবসা করতেন। পিকিং শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার পথে রেঙ্গুনে যাত্রাবিরতিকালে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমান-সহ আরও কয়েকজন রাজনীতিককে রেঙ্গুনের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে দেখান। তাঁর বাসায়ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন।

আতাউর রহমান খান (১৯০৭-১৯৯১)  আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ-এর অন্যতম সদস্য। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তফ্রন্টের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় (১৯৫৪) পূর্ববঙ্গ সরকারের বেসামরিক সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৮ সময়কালে মুখ্যমন্ত্রী। পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় তিনি ১৯৬৯ সালে জাতীয় লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত বাকশালে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারে যোগ দিয়ে নয় মাস প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ওজারতির দুই বছর, স্বৈরাচারের দশ বছর, প্রধানমন্ত্রীত্বের নয় মাস।

আবদুল্লা মল্লিক    পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ। পিকিং শান্তি সম্মেলনে তিনি পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে চীন সফর করেন।

আব্বাসউদ্দীন আহমদ (১৯০৯-১৯৫৯)     কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী। পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রচার বিভাগে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কণ্ঠে পল্লিগীতি বিশেষ মাত্রা অর্জন করে।

আরফান খান রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের আত্মীয়। টাঙ্গাইলের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। রেঙ্গুনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজমল খাঁর পিতা।

ইয়ার মোহাম্মদ খান (১৯২০-১৯৮১)       রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কোষাধ্যক্ষও। তাঁর ঢাকার বাসভবন (১৮ কার্কুন বারী লেন) ছিল আওয়ামী লীগের প্রথম দলীয় কার্যালয়। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একটি জিপ দান করেন।

উ ন্যু (১৯০৭-১৯৯৫)        সাবেক বার্মা অর্থাৎ বর্তমান স্বাধীন মিয়ানমারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি ক্ষমতাসীন হয়ে ঘোষণা করেন দেশটির সাধারণ পরিচয় হবে একই ধর্ম–বৌদ্ধধর্মের ভিত্তিতে। তাঁর রাজনৈতিক দলের নাম ইউনিয়ন পার্টি। ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তাঁর আবির্ভাব।

এ. কে. গোপালন (১৯০৪-১৯৭৭)  তাঁর পুরো নাম আইলিয়াথ কাট্টিয়ারি গোপালন (Ayillyath Kuttiari Gopalan)। ভারতের বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা। জন্ম ভারতের উত্তর কেরালায়। ব্রিটিশ ভারতে খেলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯২৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান এবং মহাত্মা গান্ধীর খাদি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভারতীয় লোকসভার সদস্য। তাঁর বিখ্যাত আত্মজীবনী ‘Ente Jeevitha Kadha’ বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি পিকিং শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন।

এম এ ওয়াদুদ (১৯২৫-১৯৮৩)     জন্ম চাঁদপুরে। ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা। গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ এবং কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। প্রাদেশিক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্যে কয়েকবার কারাবরণ করেন। পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

কারেন সম্প্রদায়:     বার্মার একটি পাহাড়ি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। সে-সময়ের উ ন্যু সরকারের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের জন্যে গেরিলা যুদ্ধ চালাচ্ছিল। কারেন বিদ্রোহী যোদ্ধারা আক্রমণ করে পাহাড়ি জঙ্গলে লুকিয়ে যেতো। তবে তাদের এই বিদ্রোহের পেছনে জনগণের সমর্থন ছিল না। স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির আন্দোলনের নেপথ্যে কারেন সম্প্রদায়ের সমর্থন ছিল। বার্মা সরকারের কাছে তারা দীর্ঘদিন ধরে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবি করে আসছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান যখন বার্মা অধিকার করে তখন কারেন সম্প্রদায়ের হাতে বহু অস্ত্র চলে আসে। পরে অবশ্য সরকার কারেনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার দিতে রাজি হয়।

ক্লিমেন্ট এটলি (১৮৮৩-১৯৬৭)     ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত লেবার পার্টির নেতা ছিলেন।

খান গোলাম মহম্মদ খান লুন্দখোর (১৯০৮-?)      সীমান্ত প্রদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হয়ে আসেন। পিকিং শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে তিনি চীন সফর করেন।

খোন্দকার আবদুল হামিদ (১৯১৮-১৯৮৩)  সাংবাদিক ও রাজনীতিক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ১৯৪৬ সালে কলকাতার দৈনিক ইত্তেহাদের মধ্য দিয়ে তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস (১৯২৩-১৯৯৫)      লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসাধক ও রাজনীতিক। দেশ বিভাগের পূর্বে কলকাতায় আজাদ ও ইত্তেহাদে সাংবাদিকতা শুরু। বিভাগ-উত্তরকালে ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক যুগের দাবি প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত গমন এবং যুদ্ধে সক্রিয় সহযোগিতা প্রদান। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য (১৯৭৮-১৯৮১)। ভাসানী যখন ইউরোপে, কতো ছবি কতো গান, মুজিববাদ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ইত্যাদি গ্রন্থের লেখক।

চিয়াং কাইশেক (১৮৮৭-১৯৭৫)    বিশ শতকের একজন চীনা সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। সান ইয়াৎ-সেনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী চিয়াং ছিলেন চীনা জাতীয়তাবাদী ও কুওমিঙটাঙ (কেএমটি) দলের একজন প্রভাবশালী সদস্য। ১৯২৬ সালে চিয়াং সমগ্র চীনকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে উত্তর অভিযান পরিচালনা করেন এবং অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র চীনের অঘোষিত নেতায় পরিণত হন। ১৯২৮ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় সামরিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের পর সমগ্র চীনের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে লাল চীন সৈন্যবাহিনী ক্যান্টন শহর দখল করলে চিয়াং সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে ফরমোজা দ্বীপে আশ্রয় নেন।

চৌ এন-লাই (১৮৯৮-১৯৭৬)       চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। চীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও সে তুং-এর অধীনে তিনি কাজ করেন এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতায় আরোহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দক্ষ ও ঝানু কূটনীতিক চৌ এন-লাই বৈদেশিক নীতি পুনর্গঠনসহ চীনা অর্থনীতির উত্তরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

চ্যু তে (১৮৮৬-১৯৭৬)             চীনের রাজনীতিবিদ, বিপ্লবী এবং কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সময় এইট রুট আর্মির কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পিপলস লিবারেশন আর্মির অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচিত হন।

জওহরলাল নেহরু (১৮৮৯-১৯৬৪) জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা ও স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪০ সালের ৩১শে অক্টোবর বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণে ভারতকে বাধ্য করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ শুরু করার অপরাধে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং ১৯৪১ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালের ৭ই আগস্ট বর্তমান মুম্বাইয়ের কংগ্রেস অধিবেশনে ঐতিহাসিক ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের প্রস্তাবক। এ প্রস্তাবের কারণে পরদিন তাঁকে গ্রেফতার করে আহমেদনগর দুর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা ছিল তাঁর দীর্ঘ ও শেষ কারাবাস। ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে মুক্তিলাভ করেন। তিনি আধুনিক ভারতের রূপকার।

জহিরুদ্দীন    ইসলামিয়া কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী-বন্ধু। তখন ছিলেন মুসলিম লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। বাড়ি কলকাতায়। দেশভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন। কর্মজীবনে ছিলেন আইনজীবী। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনের পর শহিদ পরিবারের পক্ষে তিনি আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলার সওয়াল-জবাব করেন।

জি. এম. সৈয়দ (১৯০৪-১৯৯৫)    পুরো নাম গোলাম মুরতজা সৈয়দ। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিক। আধুনিক সিন্ধি জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রবক্তা। তিনি শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সহাবস্থান, ধর্মনিরপেক্ষতা, সিন্ধি জাতীয়তাবাদের প্রস্তাবিত সুফি মতাদর্শের রাজনৈতিক বাস্তবায়ন পুনরুদ্ধার করেছিলেন এবং সিন্ধুদেশ আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন। সিন্ধুবিরোধী নীতির বিরোধিতার কারণে জীবনের প্রায় ৩০ বছর কারাবাস ও গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। পিকিং শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে তিনি অংশ নেন।

তফাজ্জল হোসেন (১৯১১-১৯৬৯)   ডাক নাম মানিক মিয়া। বিখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর সম্পাদিত ইত্তেফাকের ভূমিকা ছিল তুলনারহিত। শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা এ পত্রিকার মাধ্যমে গোটা পূর্ববাংলার জনগণের কাছে ‘আমাদের বাঁচার দাবী’ হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ জন্যে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী পাকিস্তানি সরকারসমূহ তাঁকে বারবার কারাগারে নিক্ষেপ করে এবং তাঁর পত্রিকা বন্ধ করে দেয়।

তাহিরা মাজহার আলী (১৯২৪-২০১৫)             পাকিস্তানের নারী অধিকার, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মী। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান তাঁর বাবা। তাঁর স্বামী। পাকিস্তানের সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক মাজহার আলী খান। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্রনির্মাতা ও মানবাধিকার কর্মী তারিক আলীর মাতা। পিকিং শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে মহিলাদের পক্ষ থেকে তিনি বক্তৃতা করেন।

নাজিম হিকমত (১৯০২-১৯৬৩)    তুরস্কের বিখ্যাত কবি ও নাট্যকার। ১৯৫০ সালে চিলির কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদার সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। বিপ্লবী কবিতা লিখে যাঁরা গণমানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন, নাজিম হিকমত তাঁদের অন্যতম। তাঁর কবিতা পৃথিবীর প্রায় ৫০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। ‘জেলখানার চিঠি’ তাঁর বিশ্বখ্যাত কবিতা। মস্কোতে অবস্থানকালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাঁকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে। পিকিং শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

নানকিং বিশ্ববিদ্যালয়: এটি চীনের একটি প্রাচীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। চীনা ভাষায় এটি জিনলিং (Jinling) বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৮ সালে। পিকিং সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নানকিং বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।

পাকিস্তান শান্তি কমিটি:      বিশ্ব শান্তি পরিষদের একটি শাখা। পিকিং শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তান শান্তি কমিটির পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অংশ নেন রাজনীতিবিদ পীর মানকী শরীফ, খান গোলাম মহম্মদ খান লুন্দখোর, মাহমুদুল হক কাসুরী, ফজলুল হক সায়েদা, আব্দুল্লা মল্লিক প্রমুখ আর পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান, সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক ও লেখক খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস ও উর্দু লেখক ইউসুফ হাসান।

পিকিং: চীনের এক সময়ের রাজধানী। চীনা ভাষায় পিকিং-এর নাম বেইজিং। বর্তমানে এটি ‘বেইজিং’ নামেই পরিচিত। এটি চীনের রাজনীতি, শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। এর লোকসংখ্যা ২১.৫৪ মিলিয়ন (২০১৮)।

পিকিং শান্তি সম্মেলন: নয়াচীন সরকারের উদ্যোগে পিকিংয়ে ১৯৫২ সালের ২-১২ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন (Peace Conference of the Asian and Pacific Regions)। এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যোগ দিয়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আরও যোগ দেন রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান, সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, লেখক-সাংবাদিক খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস ও উর্দুভাষী লেখক সৈয়দ ইউসুফ হাসান। শান্তি সম্মেলনে ৩৭টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন। শেখ মুজিবুর রহমান মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন। এই শান্তি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন তুরস্কের বিখ্যাত কবি নাজিম হিকমত, রাশিয়ার বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক আইজ্যাক আসিমভ ও ভারতের বিখ্যাত লেখক মনোজ বসু।

পীর মানকী শরীফ (১৯২৩-১৯৬০) পুরো নাম পীর আমিনুল হাসনাত। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের একজন প্রগতিশীল ধর্মীয় নেতা। ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে ব্যাপক অবদান রাখেন।

ফজলুল হক সায়েদা  পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্ত প্রদেশের আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা। পিকিং শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে তিনি চীন সফর করেন।

বোরহান শহীদ চীনের সিং কিয়াং প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর। পিকিং শান্তি সম্মেলনে তিনি অংশ নেন।

ভাষা আন্দোলন:      বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের দাবিতে সংগঠিত গণ-আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ছাত্রমিছিলে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। এই ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে শেখ মুজিবুর রহমান কারাবরণ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। পিকিং শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০-১৯৭৬)             তাঁর রাজনীতির সূত্রপাত ঘটে আসামে। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৬ সালে আসামে কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগ দেন। ঐ বছর আসামে বাঙালি নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৪ সালে আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পাকিস্তান আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে আসামে পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৪৮ সালে মুক্তিলাভ করে পূর্ব বাংলায়। চলে আসেন। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন ও এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল গণআন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছয় সদস্যবিশিষ্ট সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

মনোজ বসু (১৯০১-১৯৮৭) বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক। জন্ম যশোর জেলার কেশবপুরের ডোঙ্গাঘাটা গ্রামে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ নিশিকুটুম্ব, সৈনিক, বাঁশের কেল্লা, বনমর্মর, চীন দেখে এলাম ইত্যাদি। তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পিকিং শান্তি সম্মেলনে তিনিও বাংলায় বক্তৃতা করেন।

মহাত্মা গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮) পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ভারতের জাতির পিতা এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা। ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হলে তা নিরসনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ব্রিটিশবিরোধী অহিংস আন্দোলনের নেতা। নাথুরাম গডসে নামক এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬) চীনা বিপ্লবী তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক নেতা, লেখক ও কবি। ১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি চীনের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর তাত্ত্বিক অবদান, সমরকৌশল এবং কমিউনিজমের নীতি এখন একত্রে ‘মাওবাদ’ নামে পরিচিত। ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর তাঁর নেতৃত্বে নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ছিল দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি।

মাজহার আলী খান (১৯১৭-১৯৯৩) পাকিস্তানের সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী ও বিখ্যাত সাংবাদিক। ১৯৫০-এর দশকে পাকিস্তান টাইমস-এর সম্পাদক ছিলেন। পিকিং শান্তি সম্মেলনে যোগদানের আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খানের জামাতা। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্রনির্মাতা ও মানবাধিকার কর্মী তারিক আলীর পিতা।

মাহবুব শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহপাঠী। ১৯৫২ সালে তিনি ছিলেন চীনের পাকিস্তান দূতাবাসের তৃতীয় সচিব। শান্তি সম্মেলন চলাকালীন পিকিংয়ে আকস্মিকভাবে সস্ত্রীক মাহবুবের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের দেখা হয়। মাহবুব-দম্পতির বাসায় আতাউর রহমান খান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসসহ শেখ মুজিবুর রহমান একাধিকবার তাঁদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তায় অভিভূত হন।

মিয়া মাহমুদ আলী কাসুরী (১৯১০-১৯৮৭) পাকিস্তানের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী এবং বামপন্থি আইনজীবী। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে ১৯৭০ সালে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে ১ম পাকিস্তানের সর্বসম্মত সংবিধান তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৯৭৩ সালে অন্যতম বিরোধী দল আসগর খানের তাহরিক-ই-ইস্তেকলাল পার্টিতে যোগ দেন ও মৃত্যু অবধি ঐ দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তিনি স্ট্যালিন শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

মিয়া মুহাম্মদ ইখতিখারউদ্দিন (১৯০৮-১৯৬২)     ১৯৩৭ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মননানয়নে পাবোর ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৪৭-৫৪ সাল অবধি তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন আজাদ পাকিস্তান পার্টির (১৯৫০-৫৬) প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি অব পাকিস্তানের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক (১৮৮১-১৯৩৮) আধুনিক তুরস্কের জনক। ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সামরিক কর্মকর্তা, বিপ্লবী রাজনৈতিক, লেখক এবং তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আতাতুর্ক সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। আঙ্কারায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে এর মাধ্যমে মিত্রবাহিনীকে পরাজিত করেন। তাঁর এই সামরিক অভিযানের ফলেই তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮)    পাকিস্তান আন্দোলনের প্রধান নেতা। প্রথম জীবনে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী হলেও শেষ পর্যন্ত ধর্মতান্ত্রিক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন ও প্রথম গভর্নর জেনারেল হন। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় এসে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়ায় ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েন।

ম্যাডাম সান ইয়াৎ-সেন (১৮৯৩-১৯৮১)   চীনা ভাষায় তাঁর নাম Soong Ching-Ling। একজন চীনা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। চীন প্রজাতন্ত্রের অন্যতম নেতা সান ইয়াৎ-সেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। ১৯৪৯ সালের আগে ও পরে চীনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভাইস চেয়ারম্যান এবং জাতীয় গণ-কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। ১৯৮১ সালের মে মাসে তাঁকে চীনের সম্মানিত ‘রাষ্ট্রপতি’ উপাধি দেওয়া হয়। তিনি পিকিং শান্তি সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)    বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, সংগীত রচয়িতা, সুরস্রষ্টা, গায়ক, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ তাঁর রচিত।

লিবারেশন ডে:       ১লা অক্টোবর নয়াচীনের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এ দিন চীনের ৬০ কোটি মানুষ শোষণ ও বঞ্চনা থেকে দেশকে মুক্ত করে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন এবং একে কেন্দ্র করে আরও ৬ দিন সাধারণ ছুটি পালিত হয়। ১লা অক্টোবর চীনবাসী কাজকর্ম ছেড়ে আনন্দে মেতে ওঠে। ব্যক্তি ও রাষ্ট্র এক বছরে কী কাজ করেছে তার পারস্পরিক সমীক্ষা করে। সেদিন তারা মাও সে তুং-এর বাণী শোনে। বাড়ি, গাড়ি, রাস্তাঘাটে থাকে শুধু লাল পতাকা। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং পদাতিক, অশ্বারোহী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা ন্যাশনাল গার্ড, কৃষক ও শিশু-কিশোরদের শোভাযাত্রার মাধ্যমে সবাই আনন্দ-উৎসবে অংশ নেয়। দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এই আনন্দ-উৎসব ও কনসার্ট। ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশটির প্রথম চেয়ারম্যান মাও সে তুং-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও ভাষণের মধ্য দিয়ে নতুন পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রথম পাবলিক প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।

লিয়াকত আলী খান (১৮৯৬-১৯৫১) পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৫১ সালের ১৬ই অক্টোবর এক আততায়ী যুবকের গুলিতে নিহত হন।

সরদার শওকত হায়াত খান (১৯১৫-১৯৯৮)       পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, সামরিক কর্মকর্তা ও পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী। তিনি ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত পাঞ্জাবে মুসলিম লীগকে সংগঠিত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে তিনি পিকিং শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন।

সাইফুদ্দিন কিচলু (১৮৮৮-১৯৬৩)  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও জাতীয়তাবাদী নেতা। ১৯২৪ সালে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে তাঁকে লেলিন শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পিকিং শান্তি সম্মেলনে তিনি ছিলেন ভারতীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান।

সান ইয়াৎ-সেন (১৮৬৬-১৯২৫)    চীনা বৈপ্লবিক লেখক, চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ। তিনি চীন প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি ও নয়াচীনের পিতা। তিনি ছিলেন কুমিঙটাঙ দলের প্রথম নেতা। তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করে লন্ডন যান। দেশে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের জন্য তিনি বিপন্ন হয়। তিনি সেদেশের মানচু রাজবংশের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। তিনি বিদেশে থাকা অবস্থায় ১৯১১ সালে মানচু রাজবংশের পতন হয়। ১৯১২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে চ্যুত হন। ১২ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-১৮৯৮) স্যার সৈয়দ আহমদ নামে সমধিক পরিচিত। তাঁর জন্মনাম সৈয়দ আহমেদ তাকভি। ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদ। তিনি মুসলমানদের শিক্ষাবিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

সৈয়দ ইউসুফ হাসান (১৯২৬-?)    বিশিষ্ট উর্দুভাষী লেখক। ভাষা আন্দোলনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। পিকিং শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে তিনি চীন ভ্রমণ করেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩)       প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। গণতান্ত্রিক নীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এই নেতা ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ বলে খ্যাত। শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক গুরু। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় জননন্দিত বক্তা। যুক্তফ্রন্ট গঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতা। যুক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী (১৯৪৬)। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

হ্যাংচো হ্রদ:   চীনের হ্যাংচো প্রদেশের একটি মিঠাপানির হ্রদ। এটি পশ্চিম হ্রদ (West Lake) নামেও পরিচিত। এই হ্রদে অনেক মন্দির, প্যাগোডা, উদ্যান এবং কৃত্রিম দ্বীপ রয়েছে। পিকিং সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান নৌকা চালিয়ে এই হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ:       এটি সাধারণত পঞ্চাশের মন্বন্তর (বাংলা ১৩৫০ সন) নামে অধিক পরিচিত। এই গুরুতর দুর্যোগে পূর্ববাংলার প্রায় সাত লক্ষ পরিবার তথা ৩৮ লক্ষ মানুষের আর্থ-সামাজিক বিপর্যয় ঘটে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ সালব্যাপী এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এবং এর ফলে সৃষ্ট মহামারিতে ৩৫ থেকে ৩৮ লক্ষ লোক মারা যায়। এ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সিরিজ ছবি আঁকেন। তাঁর এসব চিত্রে দুর্ভিক্ষের দুঃসহ অবস্থার বাস্তবচিত্র উঠে এসেছে। সেসময় শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আইএ পরীক্ষার্থী। তিনি তখন কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক ও কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের সঙ্গে মুসলিম লীগের যুবকর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটিতে যোগ দেন। দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সাহায্যার্থে লঙ্গরখানা পরিচালনা করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *