নতুন রান্না

নতুন রান্না

শিবুর মণিহারি দোকানের দরজায় এখন ছোট ছোট টিনের পাত সাঁটা। আলকাতরায় লেখা:

সব রকম লটারির টিকেট বিক্রয় হয়।

ফ্ল্যাট ভাড়া ক্রয়-বিক্রয় দেওয়া হয়।

বিবাহের বাড়ি ভাড়া সন্ধান দেওয়া হয়।

রান্নার হালুইকর পাচক ব্রাহ্মণ সন্ধান দেওয়া হয়।

শিবুর দোকানের বয়ামগুলো ফাঁকা ফাঁকা। একটা বয়ামের ভিতরে একটা আরশোলা মরে শুকনো হয়ে আছে। একপাশে কিছু পাউরুটি, একটা টিনে কিছু দু’নম্বরি বিস্কুট, একটা বয়ামে ঝাল চানাচুর, সন্ধের পর চানাচুরের ভাল বিক্রি।

শিবুর দোকান চিরকাল এরকম ছিল না। বছর কয়েক আগেও দোকানের রমরমা ছিল। বয়ামে বয়ামে ভরতি থাকত কত রকমের লজেন্স। চাটনি লজেন্স, জেলি লজেন্স, মৌরি লজেন্স। চকলেট ছিল, বাদাম, বিস্কুট, কেক ছিল। টিপ-চুড়ি, হার, ফিতে, ক্লিপ। বড় ভাল পজিশনে এই দোকানটা। প্রিয়বালা গার্লস স্কুলের ঠিক সামনে। সদা-সর্বদা ছিল কিশোরীদের আনাগোনা। কিশোরীদের ফাউ দিয়ে বয়ামগুলি ফাঁকা হয়ে গেল ক্রমশ। চার আনার চানাচুর কিংবা চারটে সেফটিপিন নিয়ে কোনও কিশোরী যদি বলত, শিবুদা ফাউ? শিবু ফেরাতে পারত না। হাতটা ধরে চারটে সল্টেড বাদাম কিংবা ক’টা কুচো নিমকি গুঁজে দিত। শিবুর কুচো নিমকি গুঁজে নেওয়া কত মুঠি কাজললতা ধরে বরের কাছে চলে গেল…। ফাউ গুঁজে দেওয়ার সময় কত মেয়েকে শিবু বলেছে— নখটা বড্ড লম্বা করেছিস, এবার কেটে ফেল, কিংবা তোর হাতটায় কড়া পড়েছে কেন রে? খুব কাজ করতে হয় বুঝি?

পঞ্চাদা বসে আছে শিবুর দোকানের ঠিক সামনের রোয়াকে। এই রোয়াক এখন শিবুর মাথার মতোই ফাঁকা। রোয়াকের পাশে লম্বালম্বি সাইনবোর্ডে এক সময় ইংরেজিতে লেখা ছিল জলি স্টোর্স। ‘আমরা বাঙালি’র ছেলেরা সেই কবে আলকাতরা মেরে দিয়ে গেছে। ওই সাইনবোর্ডের পাশে বসে মাথা চুলকোচ্ছে পঞ্চা। পঞ্চাঠাকুর। মুখে পান।

শিবু পঞ্চাকে বলে, বুঝলে পঞ্চাদা, কয়েক হাজার টাকা হলে দোকানটা আবার ভাল করে করতাম। পঞ্চা শিবুর দিকে তাকায়। শিবুর জামায় বোম নেই সব ক’টা। বুকের লোম বেশ কিছু সাদা। পঞ্চা শিবুর দিকে এক পলক তাকিয়েই পিরিক করে পিক ফেলে রাস্তায়। পিক ফেলার কায়দাতেই বোঝা যায় ওর মুড খারাপ।

একবার আকাশের দিকে চেয়ে, একবার শিবুর বোতামহীন জামার দিকে চেয়ে পঞ্চা বলল, আপনি কোনও কম্মের নয় শিববাবু। এ মাসের ছয়ে কিছি কামকাজ হলানি, আটে কিছি হলানি। তেরোয় ডেট আছে। হবে যে, তারও লক্ষণ কিছি নাই। কিছি পারছেন না শিববাবু।

শিবু তখন দরজায় সাঁটানো ‘রান্নার হালুইকর ব্রাহ্মণের সন্ধান দেওয়া হয়’। লেখাটার দিকে আঙুল-ইশারা করে বলে, লিখে তো রেখেছি দেখছ। বাজার খারাপ।

ঠিক তখনই দোকানের সামনে ফরসা মতো দেখতে, গোল গোল মুখ, নতুন তাঁতের শাড়ি পরা একটা মেয়ে দাঁড়াল, সঙ্গে আরও কয়েকজন গিন্নিবান্নি। নতুন শাঁখা রুলি পরা হাতটা মৃদু ঝাঁকিয়ে বলল, ভাল আছেন শিবুদা? এই হাতে হয়তো কোনও এক সময় অনেক কুঁচো নিমকি গুঁজেছিল শিবু। শিবু বাতাসে দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে জিজ্ঞাসা করল, বিয়ে?

মেয়েটা বলল, হুঁ।

তক্ষুনি পঞ্চা কারুকার্যময় চোখে শিবুর দিকে তাকাল।

শিবু বলল, কবে বিয়ে?

মেয়েটা বলল। আজই তো।

ওঃ। তবে তো তোমাদের রান্নার ঠাকুর ঠিক হয়েই গেছে।

কেন?

আমি দি।

মেয়েটা আড়চোখে আলকাতরায় লেখা ‘হালুইকর’ শব্দটার দিকে তাকায়। ঠোঁট দুটো টিপে কাঁধ ঝাঁকুনি দেয়। এটা এক ধরনের মুদ্রা। বিশেষ কোনও কথা বাক্য ব্যবহারের পরিবর্তে আজকাল এভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পাশের একজন ভারিক্কি গিন্নি বললেন, ঠাকুর কি এখনও বাকি আছে? ক্যাটারার আসছে। ‘বাহাদুর ক্যাটারার’।

‘ক্যাটারার’ শব্দটা শোনামাত্রই পঞ্চার কপাল কুঁচকে গেল। তারপর চলন্ত গিন্নি মহিলার নিতম্বে শাড়ির কলকার দিকে চেয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল, ‘শালা মধুসূদন’।

মধুসূদন সাহা হচ্ছেন বাহাদুর ক্যাটারার-এর মালিক। শিবু বলল, ফালতু গাল পেড়ে কী হবে? ও ব্যবসা করবে না?

ব্যবসা? হুঃ। খালি রং-ঢং করে, রং-ঢং। ব্যান্ডপার্টির মতো পোশাক লাগায়, গলায় টাই, হাতে মোজা, আজকাল পাবলিক হয়েছে তেমন। ওরা খেতে যায় না রগড় দেখতে যায়?

শিবু দেওয়ালের টিউব লাইটের শূন্য ফ্রেমটার দিকে তাকিয়ে থাকে।

মধুসূদনের ওখানে কে রান্ধে জানেন শিববাবু? মনোজ আর হেমন্ত। মনোজের বাপ কে জানেন শিববাবু? কেষ্ট নাপিত। কাশী মিত্তিরের ঘাটে এখনও কামাচ্ছে। ওর ছেলে কী রান্ধিবে? কী করে রান্ধিবে? আর আমি, পঞ্চানন পণ্ডা, তিন পুরুষের কারিগর। আমার পাশে ওই মনোজ, ওই হেমন্ত সব মুষা, বুঝলেন, মুষা। ইন্দুর।

এমন সময়ে একজন বুড়ো মতো লোক আসে শিবুর দোকানে। শিবু তাড়াতাড়ি লটারির টিকিট লাগানো ক্লিপ বোর্ডটা তুলে নিয়ে বলে, চেরাপুঞ্জি আগামীকাল। ফাস্ট প্রাইজ পাঁচ লাখ, নাগাল্যান্ড পরশুদিন, তিন লাখ বিগ বাম্পার…

বুড়ো লোকটা হাতটা মেলে ধরে বলে— থাক। আজ লটারি থাক। হাতের আঙুলে চারটি পাথর।

তবে? শিবু বলে।

বুড়োটা পাথর বসানো হাতটা বোর্ডের উপরে রাখে। তারপর অন্য হাতের আঙুল নিয়ে ইকির মিকির চামচিকির কায়দায় আঙুলের পাথরগুলি স্পর্শ করে। এই যে, এটা হরিণঘাটার দুধ। এটা স্টেট ব্যাংকের সুদ। এটা লটারিতে নাম, আর এটা ছোটমেয়েটা যায় যেন শ্বশুরধাম…হাঃ হাঃ হাঃ। ছোটমেয়েটার বে ঠিক করে ফেলেছি, বুঝলে, ছেলে স্কুলের মাস্টার, দু’ বেলা বাড়িতে বাহাত্তর জোড়া জুতো জমে থাকে, বুঝলে?

শিবু যেন ঠিক উচ্ছ্বসিত হল না। শিবু কি ওই বুড়োর ছোটমেয়ের মুঠিতেও নিমকি গুঁজেছিল।

শিবু রোগীর মতো মুখ করে বলল, হয়ে গেল?

হ্যারে ভাই, হয়ে গেল। কম ভুগিয়েছে? জগা ঘটকের দ্বারা কিসসু হল না। তারপর যেই কমপিউটার ঘটকের কাছে গেলাম, উইদিন থ্রি মান্থস বিয়ে ফিক্স আপ।

কমপিউটার ঘটক কে আবার?

ওই যে, করেছে না, স্ক্যানিং সেন্টারের উপরে? দি কাপ্‌ল। লেখা আছে না, এখানে কমপিউটার দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন করানো হয়…। একটা ভাল দেখে ঠাকুর দিয়ে তো শিবু..

পঞ্চা উঠে দাঁড়ায়। বলে, আমিই তো আছি।

আমার বুঝলে, আড়াইশো মতো লোক হবে। তার মধ্যে দেড়শো বরযাত্রী। ভ্যারাইটিজ রকমের আইটেম করব যেন শালাদের ইয়াদ থাকে, বলবে হ্যাঁ, নীতিশ মিত্তির আইটেম করেছিল বটে।

মিষ্টিটায় টান রাখব। ফ্রাইড রাইসে মুখ মেরে দিতে হবে। পারবে?

আইটেম কী হবে? পঞ্চা জিজ্ঞাসা করে।

ধরো রাধাবল্লভি, আলুর দম, ছোলার ডাল, ফ্রাইড রাইস, ফিস ওরলি, চিকেন মাঞ্চুরিয়ান না কী যেন বলে সেইটা…

অত ঝামেলায় কাজ কী স্যার, বলি কী, ভাল করে মাছের কালিয়া করে দি, আর বেশ মোটা করে ফিস ফ্রাই…

ফিস ফ্রাই-টাই সব পুরনো হয়ে গেছে। আমার ভাড়াটেরাই ফিস রোল খাইয়েছে। আমাকে ফিস ওরলি খাওয়াতেই হবে।

তারপর গলাটা খাটো করে বলল, তবে ভেটকি-ফেটকির নয়, আড় মাছের নয়তো ভোলার। বেশ ভাল করে মাস্টার্ড-ফাস্টার্ড স্যালাড ফ্যালাড দিয়ে… বুঝলে না

পঞ্চা মাথাটা চুলকোতে লাগল, মানে ওরলিটা ঠিক…

জানো না?

মানে, করিনি কখনও ঠিক…

আর ওই মাঞ্চুরিয়ান…?

মানে ওটাও আগে…

পঞ্চার মাথা চুলকানোর মধ্যে পরাজয় মুদ্রা। মাটিতে চোখ। চোখে লজ্জা-চিহ্ন আঁকা।

নীতিশ মিত্তির শুধু বলল, ও, বুঝেছি। তোমার স্টকে মডার্ন ঠাকুর নেই। আমি ক্যাটারার বলে নেব। তা তোমার ওই ঠাকুর পুরনো আমলের যখন, নিরিমিষ রান্নাটা ভালই পারবে মনে হয়। পঞ্চা ভাবল নিরামিষই সই।

ঠিকানা খুঁজে নন্দলাল বোস লেনের ওই মিত্তির বাড়ি গেল পঞ্চা। বিয়েবাড়ির আসল কাজটাই ধরেছে বাহাদুর ক্যাটারার। ওর কারিগর মনোজকে পঞ্চা চেনে। বিয়ে বাড়িতে জনা দশ-বারো বিধবা আছে, পুরুত আছে, বামুন আছেন, গুরুদেব আছেন, ওরা মাছ-মাংসের ছোঁয়াছুঁয়ি খাবেন না। কী রাঁধতে হবে? না মুগডাল, ফুলকপির ডালনা, মোচাঘণ্ট, এইসব। পঞ্চা বলল, ক’টা পান্তুয়া করে দিই না, একেবারে খানদানি জিনিস হবে।

বাড়ির বড়ছেলে বলল, ধুর বানিয়ো না আমাদের। ওসব কেউ আর বানায়? দোকান থেকে নিয়ে নেব।

তবে ছানার ডালনা করো। এমন করে দেব যে….

আবার ধুর বানাচ্ছ? শীতের দিনে এত সবজি থাকতে ছানা কেন? খালি ধান্দাবাজি।

ওই ক্যাটারের ঠাকুর কী আইটেম করছে? পঞ্চা জিজ্ঞাসা করল।

সে অনেক রকম। সব নতুন রান্না, ওসব তোমার দ্বারা হবে না। চিকেন মাঞ্চুরিয়ান। পারো?

পঞ্চা চুপ। হে জগন্নাথ! ওই মাঞ্চু যেন নুন কটা হয়।

কাজের দিন ছাতের প্যান্ডেলে বিরাট উনুন। মনোজ আর হেমন্ত সিগারেট ওড়াচ্ছে। তিনজন জোগাড়ে। একজন চিনেবাদামের গায়ের লাল জামা খুলে বার করে আনছে। সাদা ফকফকে গায়ের রং। একজন বিশাল থালা জুড়ে পেঁয়াজ কুঁচিয়ে ছড়িয়ে রেখেছে। ঘন ক্ষীরের মতো পোস্তবাটা নিয়ে ব্যস্ত অন্য একজন। বাটি ভরতি সবুজ কড়াইশুঁটি, কী আহ্লাদ। কিশমিশ ফুলে উঠেছে জলের সোহাগে। এ এক মহা সমারোহ। পঞ্চা ওখানে ঢুকে পড়ল। বলল, এসপেশাল কোন আইটেম মনোজ? মনোজ বলল, ‘চিকেন মাঞ্চুরিয়ান।’ ঠোঁটে সিগারেট নাচল। পঞ্চা মেঝেতে ছড়ানো উপকরণ সমারোহে চোখ ঘোরায়। তরি-তরকারি মশলার মধ্যে কয়েকটা বোতল। সস্‌ নিশ্চয়ই। কয়েকটা কাগজের বাক্স। কী আছে ওতে?

হেমন্ত জিজ্ঞাসা করল, কী পঞ্চাদা, তোমার ঘ্যাঁট-লাবড়া কমপ্লিট? পঞ্চা দুঃখী ঘাড় নেড়ে বলল, হুঁ। তারপর একটা কথা বলবে বলে ফুসফুসে অনেকখানি বাতাস নেয়। শ্বাসবাতাসে পেঁয়াজ-রসুন-আদা-জায়ফল। তারপর ঝপ করে বলে ফেলে, মনোজ, রান্নাটা কী করে করবি আমাকে বলে দিবি ভাই? মনোজ তাকাল না পঞ্চার দিকে। বাতাসে ধোঁয়া উড়িয়ে বলল, এই নগেন, এবার রসুনগুলো বানা। এবার পঞ্চার দিকে তাকাল হেমন্ত, হাসল। বলল, এসব হল ফর্মুলার রান্না। সব মাপে মাপ। খাপে খাপ। এসব কি বলে শেখানো যায়? ক’দিন আমাদের সঙ্গে জোগাড়ে থাকো, মধুসূদনবাবুকে বলো, তারপর আস্তে আস্তে…

সাট করে ওখান থেকে বেরিয়ে যায় পঞ্চা। দোতলার রান্নাঘরে ওর নিজস্ব ফুলকপি আর কলামোচার কাছে যায়। কলামোচার গা থেকে আলতো গন্ধ ভাসছে বাতাসে। পঞ্চা ওদের কাছে মনের কথা বলে।

মাসি-পিসিরা খুব সুখ্যাতি করল। মোচায় ডালে বড়া-নারকোল পাতি। ফুলকপির তরকারিতে কড়াইশুঁটি একবারে চকচকে সবুজ। গটগট করে তাকিয়ে আছে। গলেও যায়নি, আবার কাঁচাও নেই। একজন দিদিমা জিজ্ঞাসা করল, এত সুন্দর রং কী করে করলি রে? পঞ্চা আহ্লাদে গলে গেল। পিসিরা সব চেটেপুটে খেল। পঞ্চার বড় আনন্দ হল।

পঞ্চার এই রান্নাবান্না হল দিনের বেলায়। একটু বেশি রাতে পঞ্চা পরিষ্কার জামা পরে খেতে এল। সঙ্গে নিয়ে এল ওর ছেলেকে, ক্লাস টেনে পড়ে।

টেবিলে টেবিলে তরকারি কেটে ঢং করা। বেগুন দিয়ে হাঁস বানানো, বিট-গাজরের ফুল, পেঁয়াজের পদ্ম। যারা পরিবেশন করবে ওদের গায়ে কোট, গলায় টাই, পঞ্চার ছেলে মতিলালের চোখে-মুখে ঝিরিঝিরি আলো, ও অবাক তাকাচ্ছে। পঞ্চা আসত না। মনোজের রান্না খেতে ওর বয়েই গেছে। ও আজ ওই চিকেন মাঞ্চু খাবে। খেয়ে ঠিক ধরে নেবে রহস্য। ফিস ফিঙ্গার ঠিক ধরে নিয়েছিল এরকমই এক বাড়িতে খেয়ে।

লাস্ট ব্যাচ ঠাকুর-চাকরদের। ওই মাঞ্চু শেষ ব্যাচে আছে তো? পঞ্চা মনে মনে ভাবে। ঠান্ডা রাধাবল্লভি আর আলুর দম পাতে পড়ল। মতিলাল কুড়িয়ে পেল একটা কার্ড। মতিলাল কার্ডটা খানিক পড়েই বলল, শোনো কী লিখেছে—

আজের নাটক: শুভ বিবাহ

কাহিনি, নাট্যকার ও পরিচালনা:

শ্রীমধুসূদন সাহা

প্রযোজনা: বাহাদুর ক্যাটারার

সম্পাদনা: মনোজঠাকুর ও হেমন্তঠাকুর

চরিত্র রূপায়ণে:

বিখ্যাত নায়ক ফ্রায়েড রাইস

নায়িকা চিকেন মাঞ্চুরিয়ান

সহনায়ক রাধাবল্লভি

খলনায়ক বাটারফ্রাই

উদাস বাউল স্যালাড

অতিথি শিল্পী ফিশ্‌ মেক্সিকান,

হাস্যকৌতুকে প্লাস্টিক চাটনি ও পাঁপড়

সুমিষ্ট গায়ক রাজভোগ

মিষ্টি গায়িকা প্রাণহরা

সংগতে আইসক্রিম

পপসংগীতে পান

অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রে লেবু, নুন, জল

মতিলাল পড়ছিল আর হাসছিল। আর চোয়াল কঠিন হচ্ছিল পঞ্চার। শেষকালে বলল, থাম।

শেষ ব্যাচ। চাকরবাকরদের ব্যাচ। কার্ডের অনেক কিছুই পাতে পড়ল না। কিন্তু মাঞ্চুরিয়ান পড়ল। ও হরি৷ গোল গোল বড়া। মুরগির মাংস সেদ্ধ করে হাড় বাদ দিয়ে বড় পাকানো। গায়ে গায়ে টক ঝাল ঝোল আর গায়ে গায়ে রসুন কুচো। পঞ্চা চোখ বুজে খুব মন দিয়ে ওই খাদ্যদ্রব্যটার শরীর সারা জিভে জড়িয়ে নেয়। ঝোলটা তো সস্‌। বোতলের স্বাদ। বড়ার ভিতরে গোলমরিচ আছে। সা-জিরে দিয়েছে নাকি? টকটক ভাবটা কি শুধুই ভিনিগারের নাকি নেবুর রসও আছে?

কী পঞ্চাদা, কেমন খাচ্ছ? মনোজ জিজ্ঞাসা করল। পঞ্চা বলল, কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। মাংসের পাকোড়ার এমন খটমট নাম রেখেছে কেন?

পাকোড়া? হ্যাঃ হ্যাঃ…

এই হা হা শব্দ আর একাকী থাকল না। মনোজের তিনজন জোগাড়েও হেসে উঠল। তারপর হেসে উঠল চিনেমাটির প্লেট, কাচের গ্লাস, জলের জাগ, চামচ।

পরদিনই একটা ছোট দেখে মুরগি কিনে বাড়ি ফিরল পঞ্চা। পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো। সবাই অবাক হল। আমার নাম পঞ্চা এই বলে ব্যাগ থেকে বার করল একটা মহিলা পত্রিকা। প্রচ্ছদে প্লেটে সাজানো রান্না করা খাবার। উপরে লেখা— নতুন নতুন রান্না।

পঞ্চার মেয়েটা ওর মায়ের দিকে তাকাল, মা তাকাল মেয়ের দিকে। পঞ্চা বিড়ি ধরিয়ে ছেলেকে ডাকল, হ্যাঁরে-মতিলাল, কী করছিস? মতিলাল বলল, পড়ছি। কার্বন ডাই-অক্সাইডের ধর্ম। পঞ্চা বলল, শোন এদিকে। মতিলাল এলে পঞ্চা ওই নতুন নতুন রান্নার পত্রিকা ওর হাতে দিয়ে বলে, বার কর চিকেন মাঞ্চ।

মতিলাল সূচিপত্র দেখে পড়তে লাগল— কচুশাকের ঘণ্ট, দই পটল, ভেজিটেবল কাবাব, মাংসের কচুরি, লবঙ্গ লতিকা, বাঁধাকপির মনচুরি…

চিকেনের মাঞ্চুরি নেই?

না।

তবে বাঁধাকপিই পড়।

মতিলাল পড়তে থাকে, — ‘শীতের শেষে বাঁধাকপি খেতে আর ভাল লাগে না। কিন্তু আমি একটা রান্নার কথা বলছি, এই ভাবে রান্না করলে খুবই ভাল লাগবে। উপকরণ বাঁধাকপি একটি। মাংসের কিমা ৫০০ গ্রাম। পেঁয়াজ দুটি। আদা ৫০ গ্রাম। কাচালঙ্কা ৬টি। কিশমিশ, বাদামকুচি, নুন— পরিমাণ মতো। মাখন ২৫০ গ্রাম। প্রথমে বাঁধাকপিটির ঝরতি-পড়তি পাতাগুলি ছিঁড়ে ফেলুন। মাংসের কিমা করিয়ে নিন। তাতে বাদাম কুচি ও কিশমিশ মিশিয়ে নিন। এবার একটু শিল্পকলা। যেমন পদ্মফুলের একটা একটা করে পাপড়ি খোলে, সেইভাবে বাঁধাকপির পাতাগুলো একটা একটা করে আস্তে আস্তে খুলে নিন। তারপর ওই কিমার আস্তরণ পাতার গায়ে দিয়ে আস্তে আস্তে পাতাগুলি আবার বন্ধ করে দিন। এবার মাখনে ডিপ ফ্রাই করে নিন। ছুরি দিয়ে কেটে গরম গরম পরিবেশন করুন।’

‘মাখন’ শুনেই সবাই হেসে উঠল। পঞ্চার বউ, মেয়ে… পঞ্চাই শুধু কপাল কুঁচকে রইল। মতিলাল পড়তেই থাকে। ‘এই রান্নাটা এতটাই মুখরোচক যে আপনার প্রিয়জনের মনটাই চুরি করে নিতে পারবেন। তাই এই রান্নাটার নাম দিয়েছি বাঁধাকপির মনচুরি।’

বাপরে। ছেলের চেয়ে ছেলের গু ভারী। পঞ্চা বলল, বলে কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ বসে রইল। তারপর হঠাৎই বলল আমার নাম পঞ্চা। দেখাচ্ছি। অন্নপূর্ণা, বঁটি আন৷

দোকান-টোকান না গিয়ে পঞ্চা মুরগি কাটতে বসল। মেয়ে আর বউকে দেখিয়ে দিল কত ছোট করে রসুনের কুচি করতে হবে। মুরগির টুকরোগুলো সেদ্ধ বসাল। পঞ্চার বউ বলল, এসব হচ্ছে কী? পঞ্চা বলল, চিকেন মনচুরি। মতিলাল এসে ওখানে বসে গেল। পঞ্চা বলল, যা, তুই ইস্কুলের পড়া কর। মতিলাল তবু থাকে। ওর ক্যাটারার হবার শখ। গলায় টাই লাগবে, হাতে দস্তানা লাগাবে…।

রসুন কুচোচ্ছে অন্নপূর্ণা। অন্নপূর্ণার ডান হাতে ছ’টা আঙুল। দ্বিরাগমনে ওকে নিয়ে এসেছিল ওর বর আর ফিরিয়ে নেয়নি। জামাই বলেছিল, ছ’ আঙুলে মেয়েছেলে অলক্ষ্মী হয়। ক’দিন পরেই জামাই আবার বিয়ে করেছিল।

অন্নপূর্ণা রসুন কুচোচ্ছে। কুচো কুচো রসুন মাঞ্চুরিয়ানের গায়ে জড়িয়ে থাকবে। মাঞ্চুরিয়ান একটি মডার্ন খাবার। অন্নপূর্ণার স্বামী একজন সম্পূর্ণ যুবক। মডার্ন যুবক, বালেশ্বরের রেডিয়ো মিস্ত্রি। বিয়ের সময় বলেছিল রেডিয়ো ইঞ্জিনিয়ার। অন্নপূর্ণার আঙুলটা আর কাটা হয়নি। অন্নপূর্ণার একবার বিয়ে হয়ে গেছে। আঙুলটা অপারেশন হলেও একবার বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েকে আবার কে বিয়ে করবে? পঞ্চা বলেছিল আর অন্নপূর্ণা লিখেছিল, মুই চরণ ভিখারি। প্রাণনাথ, চরণের মোতে স্থান দিয় টিকে। লিখেছিল দাসীর মতো থাকব, সতীনের দাসী। উত্তর আসেনি। সেদ্ধ মুরগির হাড় চেঁছে মাংস বার করল পঞ্চা, সব লঙ্কা দিয়ে মাখল। ডিম ভেঙে নিল, ময়দা মেশাল, দু’ চিমটি খাবার সোডা দিল।

মতিলাল বলল, খাবার সোডা দিলে কেন ফুলে ওঠে বলি? কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস তৈয়ারি হয়। উহা বহির্গত হইবার সময় ফাঁপাইয়া দেয়…। পঞ্চা বলে, চুপ মার। বড়া বানাল পঞ্চা। লাল করে ভাজল। ফুলেছে বেশ। এবার পঞ্চা সয়া সস্ আর লঙ্কা সস্ ঢেলে দিল। টমেটো আর রসুনের কুচি মিশিয়ে বড়াগুলি নাড়তে থাকল।

কিন্তু বড়া ভেঙে গেল। বড়াগুলি ভেঙে যেতে থাকল। হায় হায়। পঞ্চা নিজের গালে আচমকা থাপ্পড় মারল। পারলাম নাইরে অন্ন। মাঞ্চুরিয়া হল নাই। মতিলাল একটুকরো তুলে ফুঁ দিয়ে চাখল।

কীরে মতিলাল। বল। পঞ্চার আর্তস্বর। মতিলালের মাথা নাড়তে ভয়।

কী রে। বল…

বাবাগো…

পঞ্চা খুন্তিটা দিয়ে কড়ায়ের গায়ে বাড়ি মারল। তীব্র ঠং শব্দ। মাথার চুল টেনে ধরল। তারপর উঠে গেল। অন্নপূর্ণা কড়াইটা নামাল। তখন তলায় পোড়া লেগেছে।

পঞ্চা থপ থপ করে রাস্তায় হাঁটে। রাস্তার ডাবের খোলা, শালপাতার কুচো কাগজ বলে, হল সখা? পঞ্চা বলে, উঁহু, আমি তোদের দলের না। আমি হারিনি আমি কিছুতেই হারব না। আমি বাসি ছানাকে স্পঞ্জের টুকরো করে ভাসিয়েছি ডালনায়, অমৃতির শিরার ভিতর, শরীরের ভিতর ঢুকিয়েছি মিঠা রস৷ গুলে মাছকেও করেছি অমৃতসমান। বড়া ভেঙে যাবে?

এঃ, নিশ্চয়ই ময়দার পরিমাণ কম হয়েছিল। নাকি কেমিকাল? এখন তো নতুন রান্নায় কেমিকাল লাগাচ্ছে সব। বেকিং পাউডার, সাইট্রিক অ্যাসিড, অজিনামটো। অজানা মতো কোনও কেমিকাল নেই তো? পঞ্চা ভাবে। ক’দিন জোগাড়ের কাজ করবে নাকি মনোজ-হেমন্তের সঙ্গে, পঞ্চা ভাবে।

না… নেহি…।

হাঁটতে হাঁটতে শ্রীভবনের সামনে পৌঁছে যায় পঞ্চা। শ্রীভবনে প্যান্ডেল। থার্মোকলের সাদা মেয়েছেলে শাঁখ বাজাচ্ছে। মাইক্রোফোন টেস্টিং ওয়ান-টু-থ্রি হচ্ছে। পঞ্চা সেঁধিয়ে যায়। এই বাড়ির আনাচ-কানাচ ও চেনে। বহু কাজ করেছে এই বাড়িতে। রান্নার জায়গাটায় চলে যায় পঞ্চা। রান্না করছে মিঠুন।

আরে পঞ্চাডা যে, ভালটো? — মিঠুনের মুখে চারশো দশ জর্দার সুবাস।

না, কিছু না, যাচ্ছিলাম এদিক দিয়ে, ভাবলাম…

ও। পান খাও। বাজার কেমন।

আর বাজার। কাজই নাই। কী আইটেম?

বল্লভী, কাশ্মীরি, ছোলা, রাইস, চিকেন মাঞ্চুরিয়ান…

মাঞ্চু? হেই মাইরি মিঠুন, এই রান্নাটা আমায় একটু বলে দিবি? দে নারে ভাই…

আরে গুরু, বলার কী আছে।

বলনারে ভাইপো।

আরে ধুর। বাড়ি যাও তো…

মশলাগুলি বল শুধু।

অনেক মশলা আছে।

বল না।

বড় ঝামেলা করছ তো।

বলবি না?

উঁহু।

পঞ্চা উঠে যায়। রাস্তায় যায়। আবার ঘুরে আসে। হাপিস ঘুলঘুলিটার কাছে যায়। ওটা রান্নার জায়গাটা থেকে ধোঁয়া বার হবার ঘুলঘুলি। ওই ঘুলঘুলি দিয়ে ঠাকুরেরা অনেক সময় মাল পাচার করে বলে ওটার নাম হয়েছে হাপিস ঘুলঘুলি। একবার দেখে নেয় পঞ্চা। সন্ধের আগে আগে শ্রীভবনের পিছনে চলে আসে পঞ্চা। গায়ে চাদর। এইমাত্র লোডশেডিং হল। ঘুলঘুলিটার নীচে দাঁড়ায়। ইটের খাঁজে পা রেখে পাইপটা শক্ত করে ধরে। আশ্চর্য কাণ্ড। ঘুলঘুলিতে পলিথিনের ভিতরে কয়েক পিস মাছ। ছিঃ। পঞ্চা জীবনে এসব করেনি। ঘুলঘুলি দিয়ে দেখা যাচ্ছে সব। ওই তো রান্না হচ্ছে। ওই তো হাড় থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া মুরগির মাংস। ঘুলঘুলির মধ্যে ওর চোখ। একজন এসে বলে গেল ঠাকুর, আর এক ঘণ্টার মধ্যেই ফার্স্ট ব্যাচ বসিয়ে দেব।

মিঠুন বলল, তা হলে মাঞ্চুরিয়ানটা করে ফেলি।

লোকটা বলল, সে কী, এখনও করোনি? মিঠুন বলল, চাইনিজ ফুড বানিয়ে ফেলে রাখতে নেই।

জয় হরি। ঠিক টাইমেই এসে গেছে পঞ্চা।

সাদা সাদা সেদ্ধ মাংসের মধ্যে মেশানো হল কাঁচা লঙ্কা। কুচো কুচো আদা। চিনির মতো ওটা কী ছড়াল? ও। আজিনামটো। ডিম ভেঙে ভেঙে দিতে লাগল। এবার একটা কাগজের প্যাকেট থেকে সাদা সাদা গুঁড়ো ছড়াতে লাগল মাংসর উপর। ওটা কী? ময়দা? ময়দা এরকম প্যাকেটের মধ্যে থাকবে কেন? দু’ হাতে মাখতে লাগল জিনিসটা। একটু কালো সস, মেশাল। গিন্নি গোছের একজন রান্নাঘরে এল। বলল, কিছুটা কর্নফ্লাওয়ার দাও তো ঠাকুর, রেখে দি, কুলফি বানাব। মিঠুন তখন ওই প্যাকেটটা থেকে কিছুটা ঠোঙায় ঢেলে দিল। এইবার বোঝা গেল। ওই কাগজের প্যাকেটে যা আছে তার নাম কর্নফ্লাওয়ার। ওটাই মাংসে মাখাতে হয়। মনে থাকলে হয়। হা কুন্তী, হা মাতঃ, রক্ষা করো। রক্ষা করো! রথ চক্র পশি গলা ধরণী ভিতরে। কর্ণের ডায়লগ। কর্ণ মনে থাকবে না। কর্ণ, কর্ণ, কর্ণ… তখনই পঞ্চা একটা আচমকা চিৎকার শুনল— ‘অ্যাই শালা, নেমে আয়।’ পঞ্চা চমকে গেল। হাতটা শিথিল হয়ে গেল পাইপ থেকে। কর্ণ-কর্ণ-কর্ণ। পঞ্চা পড়ে যাচ্ছে। ‘শালা মাছ চোর’— পঞ্চা শুনল। ‘একেবারে হাতে নাতে ধরেছি।’ পঞ্চা কী যেন ধরতে গেল। কর্ণ কর্ণ কর্ণ… ।পঞ্চা পড়ে গেল। ঝনঝন করে উঠল বিশ্ব চরাচর। আস্তে আস্তে থেমে গেল জেনারেটরের ঘটঘট।

পঞ্চা হাসপাতালে। মেঝেতে শুয়ে আছে। নাকে নল। হাতের ভিতরে নুন জল ঢুকছে ফোঁটা ফোঁটা। ওর চোখ খোলা। খোলা চোখের ভিতর দিয়ে ও আবছা দেখছিল মাংস। ডাক্তার মাংস, নার্স মাংস, ধাই মাংস। জমাদার মাংস, বউ মাংস, ছেলে মাংস। অনেক মাঞ্চুরিয়ান। পঞ্চার কপালে হাত বুলোচ্ছে অন্নপূর্ণা। ছ’টা আঙুলের মায়া-মমতা মায়া-মমতা মাখাচ্ছে পঞ্চার শরীরে।

বৃষ্টি হচ্ছে নাকি? বৃষ্টির ঝিম ঝিম শোনে পঞ্চা। অন্নপূর্ণার ছটা আঙুল বয়ে যাচ্ছে। কে এসে সামনে দাঁড়ায়। শিবু? কী গো শিবু? কোনও কাজ আছে? শিবুর হাতে একটা কাগজ। শিবু ঝুঁকে পড়েছে বিছানার দিকে। ঝুঁকে বলল, লটারির প্রাইজ পেয়েছ পঞ্চাদা। বিশ হাজার। পঞ্চা শুনল। ঠিক শুনল না কি ভুল? পঞ্চা চোখ বুজল। চোখ খুলেই দেখল, শিবুর গায়ে চটচট করছে সস্‌। শিবু আরও কী যেন বলছে। বলছে, শুনছ পঞ্চাদা, শুনছ, আমি অন্নপূর্ণাকে বিয়ে করতে চাই। পঞ্চাকে সরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় মতিলাল। বলল, বাবা ওই টাকা আমায় দাও। আমি ক্যাটারার হব বাবা, ক্যাটারার। মতিলালের সারা গায়ে চটচট করছে সস্‌৷ মাছি উড়ে এল। পঞ্চা দু’হাতে মাছি তাড়াল, দু’হাতে চেপে ধরল মতিলালকে, তারপর জিভ দিয়ে চাটতে লাগল ওর গা, সদ্য জন্মানো বাছুরের ক্লেদমুক্ত পরিষ্কার করছে যেন গাভীমাতা।

পঞ্চা স্থির তাকিয়েছিল। আসলে ওর বুকের রন্ধনশালায় তখন তৈরি হচ্ছিল একটা আশ্চর্যরকমের নতুন রান্না।

লাইভ বাংলা ডটকম। ২০০১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *