বহুজাতিক

বহুজাতিক

অধ্যাপক সমাদ্দার দক্ষিণের বারান্দায় সিনট্যাক্স জলট্যাঙ্কির ছায়ায় একটা সাধারণ ইজিচেয়ারে শুয়ে গীতা পড়ছিলেন, এ সময়ে কলিংবেল বাজল।

অধ্যাপক সমাদ্দার নিজেই দরজা খুলতে গেলেন। তিনি একজন বিশ্ব বিখ্যাত অসাধারণ বিজ্ঞানী হলে কী হবে, অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন। সল্টলেক এলাকায় সরকার একটা বাংলো দিয়েছে তাতে ছ’খানি ঘরের তিনটি অব্যবহাত। রান্না ব্যাপারটা কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, বটানি, জুলজির সমম্বয় বলে প্রায়শই ওটা নিজেই করেন। একটি সাধারণ তক্তপোশে ঘুমান। একটি সাধারণ কলমে সাধারণ কাগজে অসাধারণ অঙ্ক করেন।

পদার্থের অভ্যন্তরীণ শক্তির উৎসেচকরূপী একটি নতুন কণা আবিদ্ধার করেছেন তিনি, কণাটির নাম ড্যারন।

আসলে ওটা সমাদ্দারন। সত্যেন বোস আবিষ্কৃত কণাটি যেমন বোসন। বিশ্ববিজ্ঞান কংগ্রেসে ইঙ্গ-আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মুখে সমাদ্দারন ঠিক আসছিল না বলে ওরা একটা রেজিলিউশন নিয়ে ওটাকে ড্যারন করে নিয়েছিলেন। ড্যারন কণিকার জন্য তিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। শুধু ড্যারনই নয়, আরও বহু যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তিনি পৃথিবীবিখ্যাত। ওজন গ্যাসের সাহায্যে ভোজন নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বের ফলে স্লিমপন্থী সুন্দরীরা খুবই উপকৃত। সদ্যপ্রসূত বাছুরের প্রতি গাভীসত্তার হাম্বা ডাক বিশ্লেষণ করে বাৎসল্যের জন্য নির্দিষ্ট শব্দতরঙ্গের সন্ধান পেয়েছেন। এজন্য গোপূজারিদের কাছে ডঃ সমাদ্দার অত্যপ্ত সমাদৃত। ওই গোমাতার হাম্বা শব্দের বিশ্লেষণ তাকে একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। তার ওই আবিষ্কার নানাভাবে কাজে লেগেছে। যেমন রোবট মায়েদের কণ্ঠে বাৎসল্য আনতে। ছাগলের নাদির পালিশ এবং তাদের আকারের সমতার নতুন ব্যাখ্যা ওষুধ নির্মাতাদের কাজে লেগেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বেশিরভাগ পেটেন্ট আমেরিকা কবজা করে নিয়েছে।এ নিয়ে ওঁর খুব একটা আফশোশ নেই। সন্ন্যাসীপ্রতিম এই মানুষটি টাকা মাটি মাটি টাকা– তত্ত্বে বিশ্বাসী। ফ্রান্স, আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড, জার্মানি, জাপান প্রভৃতি দেশ তাকে প্রচুর অর্থ সহ নাগরিকত্ব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি হেলায় ত্যাগ করেছেন। তিনি যা টাকাপয়সা উপায় করেছেন, এখনও যা আয় হয়, তার সামান্য অংশ নিজের জন্য রেখে বাকিটা বিজ্ঞান গবেষণায় ব্যয় করে দেন। তিনি একটা প্রতিষ্ঠানের স্রষ্টা। প্রভা ইনস্টিটিউট অফ ফাণ্ডামেন্টাল রিসার্চ। প্রচুর প্রতিভাবান সেখানে গবেষণা করে। প্রভা ওঁর মায়ের নাম। তিনি অকৃতদার। বিদেশে গিয়ে দু-চারবার ওয়াইন ছাড়া কোনোরকম মদ্য স্পর্শ করেননি। গত পাঁচ বছর যাবৎ নিরামিষ খান।বাড়িতে প্রচুর বই, একটি সেতার, একটি কম্পিউটার, তক্তপোশ, ও সোফাসেট। সোফা সেটটি রাখতে হয়েছে অতিথিদের জন্য। সারা পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষেরা আসেন। একটিমাত্র কাজের লোক, দীর্ঘদিনের, নাম কানাই, এই সময়টা ও একটু বেরোয়। হাতে একটা বাজারের থলে থাকে যদিও, তবে বাজারে নয়, ও স্কুলের দিকেই যায়। এই সময়ে সব মায়েরা ওদের বাচ্চাদের নিতে আসে। স্কুলের সামনে অপেক্ষা করে ওরা। কানাইও একটু অপেক্ষা করে সেখানে। ওটাই ওর ফ্যাশন টিভি, এনার্জি ক্যাপসুল, আনন্দলোক।

কানাই এখন নেই, তাই ড. সমাদ্দার নিজেই দ্বার খুললেন এবং দেখলেন এক পরমাসুন্দরী যুবতী দাঁড়িয়ে আছেন। মুখে তার মায়াবী হাসি, ঘাড়ে তার কেশরাশি। বললেন নমস্কার স্যার, আমি এফ ডি আই থেকে আসছি। ফ্রি ড্রিম ইন্টারন্যাশানাল। আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। মেয়েটির হাতে ল্যাপটপ। ড. সমাদ্দার ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন।

ওই সুন্দরী মহিলাটি সোফায় বসে প্রথমেই নিজের ঠোঁটদুটো ঘষটে নিলেন। ড. সমাদ্দার দেখলেন পদার্থবিজ্ঞানের একটি সাধারণ ব্যাপার। হোমোজিনিয়াস ডিস্ট্রিবিউশন অফ ম্যাটার। লিপিস্টিকের ফিল্মটাকে ঠোঁটের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আসলে ওই এফ ডি আই সুন্দরী কলিংবেলটা টিপবার পূর্ব মুহূর্তে আরও একবার লিপস্টিক বুলিয়ে নিয়েছিলেন।

সুন্দরী আবার হাসলেন। বললেন, স্যার, আপনি হয়তো জানেন আমাদের এই গ্লোবাল ইনস্টিটিউটটির অ্যাক্টিভিটি। ইন্ডিয়াতেও কাজ করছে। আমি ওদের স্পার্ম ব্যাংক ডিভিশনে আছি।আমাদের ব্যাংকে আপনি অ্যাকাউন্ট করুন না স্যার।

–আমার তো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে…

–না স্যার, আপনি বড্ড অন্যমনস্ক। আমি স্পার্ম ব্যাংকের কথা বলছি। আপনার স্পার্ম চাই।

–স্পার্ম মানে শুক্রবীজের কথা বলছ তো?

–রাইট স্যার।

–তো আমার কাছে কেন?

–আপনি জানেন না গ্লোবালি আপনার কী ডিম্যাণ্ড। অনেক মহিলাই তাদের সন্তানের পিতা হিসেবে আপনাকেই চায়। এটা অনেকেরই ড্রিম। এ জন্যই ফ্রি ড্রিম ইন্টারন্যাশানাল আপনার সঙ্গে একটা ডিল করতে চায়।

–স্ট্রেঞ্জ! কী ডিল?

–তা হলে স্যার একটু ডিটেল-এ বলতে হয়। আমাদের কোম্পানির অনেকগুলো ডিভিশন আছে, তার মধ্যে একটা হল স্পার্ম ব্যাংক ডিভিশন। সারা পৃথিবীর ইমপরট্যান্ট পুরুষের স্পার্ম আমরা কালেক্ট করি। অনেক আনম্যারেড উওম্যান মা হতে চাইলে আমাদের সার্ভিস নেন। আবার অনেক দম্পতি আছেন যেখানে পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কম, তারাও আমাদের সার্ভিস নেন। আবার অনেক অ্যামবিশাস দম্পতি আছেন, যারা ভালো সন্তানের জন্য আমাদের কাছে আসেন। আমাদের স্টকে নানা রকম জিনের স্পার্ম আছে। কবি, সাহিত্যিক, বক্সার, সুমো, টেররিস্ট, টি-টেস্টার, দাবাড়ু, পাদ্রি, ফিল্ম আটিস্ট, ইকনমিস্ট, সাইনটিস্ট, স-অ-ব, সবরকম ভ্যারাইটি আমাদের কাছে আছে।

পৃথিবীর বহু বিখ্যাত মানুষের স্পার্ম অ্যাকাউন্ট আমাদের আছে। অবশ্য আমরা গোপনীয়তা বজায় রাখি। তবে আমাদের কিছু কাস্টমার আছেন যারা স্পেসিফিকালি কিছু জিন চান একেবারে নাম করে।ধরুন ওসামা বিন লাদেন, শচীন তেণ্ডুলকার, ক্লিন্টন, সলমন রুশদি, স্টিফেন স্পিলবার্গ, দাউদ ইব্রাহিম…। আপনাকেও চায়। এই যে আপনার একটা ঋষি ইমেজ, এর একটা আপিল আছে। এ জন্যই আপনার কাছে এসেছি। আমাদের কাস্টমারদের বিট্রে করি না। দাউদ ইব্রাহিমের বদলে কিছুতেই আমরা হাতকাটা বাবলু সাপ্লাই করব না। একদম আসল জিনিটাই আমরা দিই। এ জন্যই আপনার কাছে আসা। আমরা স্যার ভালো। খুব ভালো মানে…

ড. সমাদ্দার এতক্ষণ শুনছিলেন। টাকার কথা উঠতেই হাত নাড়িয়ে বললেন, টাকার লোভ দেখাবেন না আমাকে। আমার টাকার দরকার নেই।

–জানি। আপনার পার্সোনাল লাইফ খুব সিম্পল। খুব কম টাকাই আপনার প্রয়োজন হয়।কিন্তু স্যার, আপনার নিজের তৈরি একটা ইনস্টিটিউট আছে স্যার, ওখানে কত কী হচ্ছে। কত ছেলেমেয়ে পি এইচ ডি করছে। কিন্তু টাকার অভাবে কত প্রোজেক্ট আটকে আছে তাও তো জানি।যেমন ধরুন আপনারই আবিষ্কার করা ড্যারন পার্টিকেল-এর একটা ফ্যানটাস্টিক ইউজ ঘটাতে চাইছেন। ইলেকট্রন স্রোতের মধ্যে অল্প পরিমাণে ড্যারন মিশিয়ে দিয়ে আপনি মোর স্মুদ অ্যাণ্ড অ্যাকটিভেটেড কারেন্ট পেতে চাইছেন, যেমন পেট্রোলে মবিল মিশিয়ে দেয়। কিন্তু টাকার অভাবে আটকে আছে।

–সে কি! এটা তো কনফিডেনসিয়াল ব্যাপার। তুমি কী করে জানলে?

–স্যার, জানতে হয় স্যার।

–তুমি কি সায়েন্সের স্টুডেন্ট?

–হ্যাঁ স্যার, এবং আপনার ফ্যান।

–আমার ওই প্রজেক্টের কথা কাউকে বোলো না।

–না-না। কেন বলব? কাউকে বলব না, শুধু আমাদের কোম্পানির ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ জানে। আপনার ওই প্রজেক্টে আমাদের কোম্পানি অনেক টাকা দেবে।

–আমায় কী করতে হবে?

–সিম্পল ব্যাপার স্যার আমরা কিছু টেস্টটিউব দিয়ে দেব,আপনি মাসে বারদুয়েক আপনার স্পার্ম দেবেন, কবে দরকার সেটা ফোন করে বলে দেব, আমাদের লোক এসে নিয়ে যাবে। আপনি স্যার এই –এইভাবে দেবেন। একটা ডেমনস্ট্রেশন দেখাচ্ছি।

মেয়েটি ল্যাপটপ খোলে। কয়েকটা বোতাম টিপে ডেমনস্ট্রেশন দেখায়। কী প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পদার্থটি টেস্টটিউবে সংগ্রহ করা হচ্ছে তারই একটা লাইভ ডেমনস্ট্রেশনের রেকর্ডিং।

ড. সমাদ্দার কয়েক সেকেণ্ড দেখেই চেঁচিয়ে ওঠেন, বলেন বুঝিছি, বুঝিছি, বন্ধ করো। ও সব যে করতে বলছ, আমার বয়স কত জানো? সিক্সটি এইট।

–ওটা কোনো প্রবলেমই নয় স্যার! আমরা আপনাকে কয়েকটা সিডি দিয়ে যাব, অডিয়ো ভিসুয়্যাল। কম্পিউটারে চালাবেন। ওগুলো স্যার বেশ কাজ দেয় একটা সিডি দেখবেন নাকি?

একটা লাস্য ভ্রূকুঞ্চন দিল মেয়েটি।

–ওরে বাবা, না, না-না, ওসব কী বলছ?

–স্যার, যা ভাবছেন তা নয়। ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির সিডি। পৌরাণিক। দেখুন না। সিডি চালিয়ে দিল মেয়েটি। বলল স্যার ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির গল্পটা তো জানেন নিশ্চয়। উনি বনে থাকতেন, কোনোদিন নারীমুখ দর্শন করেননি। অষ্টদেশে অনাবৃষ্টি হলে সেখানকার রাজা লোকপাদ ঋষ্যশৃঙ্গকে অষ্টদেশে নিয়ে এলেন, নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিলেন, তাতেই বৃষ্টি এল, কিন্তু ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিকে নিয়ে আসাই কঠিন ছিল কিছুতেই আসবেন না। রাজা লোকপাদ কয়েকজন নারীকে পাঠিয়েছিলেন…। ড. সমাদ্দার দেখতে পাচ্ছেন নারীরা কীভাবে নিরাবরণা হয়ে যাচ্ছে, ঋষি অবাক হতে হতে শেষ পর্যন্ত কীভাবে…।

–স্যার, আমিও মাঝে মাঝে আসব স্যার…। আঁচল খসল মেয়েটির।

–স্যার এ ছাড়াও যদি দরকার হয়, হরমোন থেরাপি করে দেবে কোম্পানি। টেস্টাস্টরেন থেরাপি। যযাতির গল্প মনে আছে স্যার? ভাবুন তো, আবার যৌবনের দিনগুলো…। স্যার, ছোটবেলায় নিশ্চয়ই কোনো কোনো বাড়ির দেওয়ালে ফ্রেমে বাঁধানো লেখা দেখতে পেতেন–বসন্ত চলিয়া গেলে আসিবে আবার / যৌবন চলিয়া গেলে ফিরিবে না আর। মিথ্যে কথা স্যার। বিজ্ঞান মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে। আমরা আবার ফিরিয়ে দেব যৌবন।

ড. সমাদ্দার কিছুক্ষণ চুপ থেকে কী যেন ভাবলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন– নাঃ, আমায় ছেড়ে দাও। বড্ড ঝামেলা, পেরে উঠব না। মেয়েটা বলে আই ডু এগ্রি। ঠিকই বলেছেন স্যার, ঝামেলা। কিন্তু আপনার সামান্য একটু ঝামেলার বদলে কত মায়ের স্বপ্পপূরণ হবে ভেবে দেখুন।তা ছাড়া পৃথিবীটার কথাও ভাবুন। কিন্তু মনুষ্যশরীরে আপনার জিনের অংশ থাকলেও পৃথিবীর কল্যাণ হবে। নিজের জিনকে পৃথিবীতে রেখে যাওয়া জীবের ধর্ম। আপনি স্যার ধারণা ধর্ম পালন করুন। ধার্মিক হন।

শেষ পর্যন্ত ড. সমাদ্দার রাজি হলেন।একজন কোম্পানির ডাক্তার এসে সমাদ্দারকে হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে যান।ওই ইঞ্জেকশনের প্রভাবে ওর উত্তেজক অডিয়ো ভিস্যুয়াল দেখার আগ্রহ জন্মায় ঊনি দেখেন, এবং এর কিয়ৎকাল পরই তাঁর ২৩টি ক্রোমোজোমযুক্ত দেহনির্যাস একটা টেস্টটিউবে জমা হয়। টেস্টটিউবের গায়ে তিনি কোম্পানির দেওয়া লেবেল সাঁটেন ISO-9090 এটা নোবেল জয়ী ড. সমাদ্দারের কোড। কোম্পানি এই নম্বরেই ওঁকে জানে।

ড. সমাদ্দার ছোটোবেলায় একটি অতি সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। ওখানে ড্রিল স্যার প্রায়ই বলতেন বীর্য বড় মূল্যবান জিনিস। ওটা নষ্ট করবি না। এটা যে এত মূল্যবান হতে পারে সমাদ্দার কল্পনাও করতে পারেননি। এক সিসি-র দাম কয়েক লক্ষ টাকা। মাসে দশ সিসি-র মতো চাহিদা আছে বিশ্ব বীর্যবাজারে। তবে বাজারের যা হাওয়া আগামী কয়েকবছরে চাহিদা বাড়তে পারে। মার্কেটিং ডিভিশন দারুণ কাজ করছে বিশ্বজুড়ে। ইউরোপ-আমেরিকা তো বটেই, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও প্রচার অভিযান চলছে। টিভিতে চটকা গানের সুরে বিখ্যাত গায়িকার কণ্ঠে এই জিংগলটা এখন খুবই জনপ্রিয়।

ও সাধের ঠারিন রে

কি ছাওয়াল নিবিরে তুই ক’

ব্যাংক খেলাপি নিবি গ’

আদম ব্যাপারি নিবি

ছেলে নাকি প্রকৌশলী পুত্র নিবি

তোর স্বপ্ন পূরণ দিবে এফ ডি আই

নাকি তোর ভোলেভালা কবি সন্তান চাই

তাছাড়া টাই-পরা বেশ কিছু ক্যানভাসার ছাড়া হয়েছে, ওরা অবশ্য বলে কাউনসিলার। ওরা কাউনসিলিং করে:

–শুনুন, আপনারা তো নতুন বিয়ে করেছেন।সন্তানের কথা কি ভাবছেন? কোনো রিস্ক নেবেন না। দাম্পত্যে কন্ট্রাসেপটিভ ইউজ করুন, যখন সন্তানের কথা ভাববেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। একদম একনম্বর স্পার্ম। খাঁটি। এই দেখুন ক্যাটালগ।

বিজ্ঞানী

A+ গ্রেড পাঁচ লাখ।

A গ্রেড তিন লাখ।

B গ্রেড দু লাখ।

C গ্রেড এক লাখ।

সাহিত্যিক

A গ্রেড (আন্তর্জাতিক খ্যাতি – নোবেল, বুকার ইত্যাদি) তিন লাখ।

B গ্রেড (জাতীয় খ্যাতি – আকাদেমি ইত্যাদি) এক লাখ।

C গ্রেড (প্রাদেশিক খ্যাতি – বঙ্কিম ইত্যাদি) পঞ্চাশ হাজার।

D গ্রেড (লিট্‌ল ম্যাগাজিন) দশ হাজার।

খেলোয়াড়

A গ্রেড ক্রিকেট দশ লাখ।

B গ্রেড টেনিস আট লাখ।

C গ্রেড ফুটবল পাঁচ লাখ।

এই সময় হয়তো ক্লায়েন্ট বলছে: ‘এত টাকা? বলবেই তো’।

তখন কাউনসিলার বলবে: এত টাকা বলছেন? বেশি হল? এই দেখুন না, প্রইডেট মেডিকেল কলেজ – ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অ্যাড। কত টাকা ক্যাপিটেশন ফি চাইছে ভর্তি হতে? এটাও ধরে নিন ক্যাপিটেশন ফি। সন্তানের ফিউচার গ্যারেন্টেড।

যদি গ্রামের ক্লায়েন্ট হয় তা হলে হয়তো বলবে: ইঞ্জেকশনের ছানা সব সময় ভালো হয় না। গরুদের দেখিচি পাল ছেড়ে দেয়।

কাউনসিলার বলবে: বাচ্চা না হলে টাকাটা পুরো ফেরত। আমাদের গ্যারান্টি কার্ড আছে।

একজন আঁতেল ক্লায়েন্ট:সায়েনটিস্টের বাচ্চা যে সায়েনটিস্ট হবে এমন কি কথা আছে? আইনস্টাইনের সন্তানের নাম জানেন? বিদ্যাসাগরের ছেলে কী ছিলেন?

কাউনসিলার বলবে: এটুকু রিস্ক তো নিতেই হবে। ইলেকট্রনিক গুডস যেমন লাকের ব্যাপার, জেনেটিক গুডসও তেমন একটু লাকের ব্যাপার। দরকার এলে একটু ফেংশুই করে নেবেন।

নারীবাদী: এটা কী করে ভাবছেন পুরুষের বীর্যই সব। ওরা তো মাত্র তেইশটা ক্রোমোজম দিচ্ছে। বাকি তেইশটা তো দিচ্ছে ওভা। মানে নারী দিচ্ছে, নারী। তা হলে কী করে বলছেন ডাক্তারের সন্তান, খেলোয়াড়ের সন্তান? নারীকে অস্বীকার করছেন কী করে?

কাউনসিলার: ছি ছি। অস্বীকার করব কী করে? অর্ধেক তার রচিয়াছে নারী… অর্ধেক তার নর… রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন…

নারীবাদী: রবীন্দ্রনাথ নয়। নজরুল।

কাউনসিলার: সরি,সরি। নারীকে অস্বীকার করা মানে তো বিজ্ঞানকেই অস্বীকার করা। ঘি এবং ভাত মিলে হয় ঘি-ভাত। ভাত ছাড়া ঘি-ভাত হবে কী করে। ডিম্বাণু হল ভাত, আর স্পার্ম হল ঘি। ভালো ঘি যদি হয়, ভাত যাই হোক না কেন, ভাতে গন্ধ হয়। ঘি-টাই আসল। ভালো ঘি-এর ভালো দর।

এদিকে ডঃ সমাদ্দারের জীবনটা গত এক বছরে অনেক পালটে গেছে। সকালে উঠে গীতা পড়েন ঠিকই, তবে জলচৌকির পরিবর্তে হাতির দাতের গীতা-দানি এসেছে। আগের মতোই ফতুয়া পরেন, তবে সিল্কের। বাড়িটা পালটাননি। মেঝেটা মার্বেলের। বেশ শ্বেত, শান্ত। সত্ত্বগুণসম্পন্ন। দেওয়ালটাও সত্ত্বগুণসম্পন্ন। প্লাস্টার অফ প্যারিস! কিন্তু রক্তের গভীরে ঢুকে যায় তমোগুণ। টেস্টাস্টেরন বলে – আসছি স্যার। আসে। গয়লার মতো আসে। দুইতে আসে। একদিন বাড়িতে কেউ ছিল না। একা ঘরে ড. সমাদ্দারের হাম্বা ডাকতে ইচ্ছে করছিল।

ইঞ্জেকশনের পর মন চনমনে হলে সিডি দেখা। ওটা খড়ের বাছুর। তারপর দোহন। তার পরে প্রেরণ। সঙ্গে সঙ্গে টাকা। ড. সমাদ্দারের এখন অনেক টাকা।

তবুও কেমন ফাঁকা। তবুও কেমন একা।

তবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত, তাঁর মায়ের স্মৃতিচিহ্ন বহনকারী প্রতিষ্ঠানটির এখন রমরমা। কত গবেষণা, কত প্রোজেক্ট। পৃথিবীজোড়া নাম। কদিন আগে ভারতরত্ন পেলেন ড. সমাদ্দার। দেশ বিদেশ থেকে অভিনন্দন। এফ ডি আই এর তরফ থেকেও কনগ্রাচুলেশন জানানো হল ISO-9090 কে।

এখন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। কিছুদিন আগে বিদেশে গিয়েছিলেন ড. সমাদ্দার। বক্তৃতা দিতে দিতেই লক্ষ করলেন একজন গর্ভবতী মহিলা ওঁর দিকে অপলক চেয়ে আছেন। হ্যাঁ, বেশ বোঝা যাচ্ছিল গর্ভবতী। প্রফেসর সমাদ্দার তখন ওই গানটা মনে পড়ছিল– কেন চেয়ে আছ গো মা; বক্তৃতার সময়ে ওঁর গলাটা কেঁপে উঠেছিল।

এইভাবে বছর দুই কেটে গেল। ড.সমাদ্দার এখন ওই হরমোন ইঞ্জেকশনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এটা তার নেশার মতো। জীবনে জড়িয়ে গেছে।

এবার মেয়েটা এল। সেই সুন্দরী ল্যাপটপিনি। বলল স্যার, আজ আমিই এলাম। আমিই ইঞ্জেকশন দেব আপনাকে।

তাই হল।

মেয়েটি বলল স্যার, সিডি চালাতে হবে না। আমিই রেডি।

মেয়েটি ওড়না ওড়াল বাতাসে।

ড. সমাদ্দারের শিরা উপশিরায় কাম হরমোন। রমণ এল মনে।

মেয়েটি দুহাত বাড়াল।

ড. সমাদ্দার জানেন এটা কেস্পানির গিফট। সেল্‌স্‌ প্রমোশন; প্রডাকশন বোনাস। সমাদ্দার খুলে ফেললেন পোশাক।

মেয়েটির শরীর জুড়ে হাততালি বাজল। বিজ্ঞানী উপগত হলেন।

অতঃপর তাঁর রেতঃপাতের সময় আসন্ন মনে হতেই বিজ্ঞানী মেয়েটির থেকে বিযুক্ত হলেন। ওঁর মনে হল এ জিনিস মহার্ঘ। যেখানে সেখানে নষ্ট করার নয়। তিনি দ্রুত টেস্টটিউবের সন্ধান করলেন এবং তার মধ্যে মহার্ঘ দ্রব্যটি সমর্পণ করত স্টিকার সাঁটলেন। ওই উলঙ্গ বিজ্ঞানী টেস্টটিউবটির মাথা ধরে বহুজাগতিক জানলার সামনে দাঁড়িয়ে নিজ দেহনিঃসৃত পণ্যতরলের আয়তন ও আন্দাজ করতে চেষ্টা। করতে থাকেন। মেয়েটি বলে– আমারও স্বপ্ন ছিল স্যার। ফ্রি ড্রিম। আমার তো টাকা ছিল না স্যার…।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *