হনুমান

হনুমান

হনুমানটা বেশ লম্বা।নাকের খোদলটা লাল লাল। গায়ের লোম গাওয়া ঘিয়ের মতো। ফর্সা মুখ। ছ ফুট দু ইঞ্চি লম্বা গাট্টাগোট্টা হনুমানটিকে দেখছিল পাঁচ ফুট দু ইঞ্চি হাইটের রোগা রোগা হনুমান। বেঁকা বেঁকা ল্যাজটা পিছনে ফিট করা, তারও খড়ের। সর্বদাই খণ্ড হয়ে থাকে। কালো কুচকুচে মুখ। মুখে আপাতত বিড়ি।

কোন পুরাণে, কোন শাস্তরে লেখা আছে হনু হ’ল গৌরবর্ণ? মানুষ হনুমানটি কপাল কুঁচকে নিজে নিজে বলে। ও তবু দেখে। অবাক হয়ে মানুষের তৈরি সুন্দর হনুমানটিকে দেখে। হনুমানটি হাতদুটো দিয়ে বুকের মধ্যে একটা গর্ত বানিয়েছে। গর্তটা বেশ বড়। এক ডজন কলা সেঁটে যাবে। গর্তটার তলাটা প্লেন। সেখানে নোট, কয়েন …। সবুজ সবুজ পাঁচ টাকার নোটও দেখা যাচ্ছে কয়েকটা। কিছুক্ষণ আগেও ওই খোঁদলটার ভিতরে বাংলায় লেখা জয় শ্রীরাম পড়া যাচ্ছিল। এখন লেখার উপরে টাকা পয়সা। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল হনুমান সাজা কদম্ব গুছাইত। ওর দশ টাকাও হয়নি আজ এই গঙ্গাসাগরের মেলায়; আজ প্রথম দিন। শুনেছিল হনুমানের বাজার এবার ভাল। জয় শ্রীরাম বলে লাফিয়েছে ডুবফেরত মানুষের কাছে, কপিলমুনির আশ্রমে, তেমন হয়নি। কদম্ব ভাবে ও কি হনুমান পাল্টে কালী হবে? বাঙালিরা কালীকে দেয়থোয়। কিন্তু এই মেলায় হিন্দুস্তানী বেশি। তাই হনুমান। হনুমান যে ভালই খাচ্ছে চাক্ষুয দেখতে পাচ্ছে কদম্ব মেলায় অনেক হনুমান, প্রত্যেকেই পয়সা পাচ্ছে; এরকম মাটির হনুমান তিনটে দেখেছে, মেশিনের হনুমান দুটো।

মেশিনের হনুমানের পেটে একটা গর্ত আছে। গর্তের মধ্যে একটাকার একটা কয়েন ফেলে দিলেই হনুমানের শরীরে ঘটাং-ঘটাং শব্দ হয়। ওর মুখটা একটু উপরের দিকে ওঠে দু পাশের দুই হাত বুকের মাঝখানে আসে। আর বুকটা দুভাগ হয়।

এতেক বলিয়া তবে পবন কুমার

নখে চিরি বক্ষঃস্থল করিল বিদার

সভামধ্যে দেখাইল বিদারিয়া বক্ষ

অস্থিময় রাম নাম লেখা লক্ষ লক্ষ।

চামড়া সরে গেলে বুকের ভিতরে কাচ বাঁধানো রামসীতার ছবি। ছবির তলায় ছোট ছোট লেখা শ্রীমা আর্ট প্রেস। তারপরই হনুমানের মেশিন-হাত নেমে যায়, চামড়াটা সাট্ করে বন্ধ হয়ে যায়। থেমে গেলে হনুমান স্থির হয়ে যায় ফের। পেটের গর্তে আবার একটা টাকা ফেলে দিলে মোটর চালু হয়, লিভার পুলি চালু হয়, চালু হয় হনুমান মাহাত্ম্য। বুক চিরে রামসীতা দেখায়, সামনে দাঁড়ানো লোকজন চেঁচায়–জয় রাম জী কী। খুচরো পয়সা হনুমানের গায়ে লাগে। হনুমানের পিছনে একটা চাবির গর্ত। একটা লোক একঘণ্টা পর পর আসে। চারি মেরে দিলে পেছনটা খুলে যায়। ওখানে একটা পাত্র থেকে একটাকার চাকতিগুলি শব্দসমেত ব্যাগে ভরে নেয়। মানুষ হনুমান গুছাইত মেশিন হনুমানের এইসব সৌভাগ্য দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। যে লোকটা ব্যাগ ভরে টাকা নিয়ে কোনও মিষ্টির দোকানের দিকে গেল পঞ্চাশ বা একশ টাকার কাগজ করে নেবে বলে, যাবার সময় হুকুমের মতো কথা দিয়ে গেল–আই, সব লাইন লাগাইয়ে, লাইন…

 লাইন এগোচ্ছে কারসাজির দিকে। কদম্ব লাইনের কাছে দাঁড়ায়। ওঠে, দুই হাতে তালি দেয় জোরে। চিৎকার করে বলতে থাকে–

পবননন্দন হাম বীর হনুমান হায়

ইয়ে হাত নেহি ফাঁসীকা ফান্দা হায়

রাবণশালা সীতা মাঈ কো হরণ করিল

লম্ফ দিয়া হনুমান সাগর লঙ্ঘিল

রামের অভিজ্ঞান দিল অশোক কাননে

বাতচিত সব কিয়া সীতাদেবী সনে

রাবণজীকা আদমী যব উস্কো পাকড় লিয়া

হনুমানজী নে স্বর্ণলঙ্কা পুরা জ্বালা দিয়া

হায়রে স্বর্ণলঙ্কা দাউ দাউ গেল রে ভাই জ্বলে

ওলে ওলে ওলে…ওলে ওলে।।

কদম্ব ওর হনুমানে হিন্দি মেশায়, সিনেমা মেশায়, লম্ফ-ঝম্ফও মেশায়-ও যতটা পারে এ বয়সে। পয়সা পায় কিছু কিন্তু মেশিন হনুমান পায় আরও অনেক বেশি। মানুষ কি আজকাল মেশিনকেই বেশি ভালবাসে?

রানাঘাটের মতি সাহার ঝুলনে গোবর্ধন ধারণ, বকাসুর বধ, বস্ত্রহরণ, খাণ্ডব দাহন, রামলীলা এইসব পুতুলে দেখানো হ’ত। গত ক’বছর ধরে এসব পুতুলগুলো মেশিন হয়েছে। কাগজের পাহাড়টাকে ধরে শ্রীকৃষ্ণ ওঠান আর নামিয়ে দেন। তলায় লেখা গোবর্ধন ধারণ। গোপিনীরা একবার দু’হাতে বুকচাপা দেয়, একবার দু’হাত শ্রীকৃষ্ণের দিকে উঁচিয়ে ধরে। গোপিনীদের হাতে দড়ি বাঁধা, তলায় মোটর। এখন মতি সা’র ঝুলনের নাম নড়া পুতুলের ঝুলন।জ্যান্ত মানুষরা ভিড় করে দেখতে আসে।

কদম্ব সাগরসঙ্গমে ঝাউগাছের তলায় বসে আছে। সাদা সাদা বালি। ও গালে হাত দিয়ে ভাবে। ওর হাতের উপর একটা ফড়িং বসল। কদম্ব হাতটা নাড়াল না, স্থির রেখে দিল, মূর্তির মত। ফড়িংটা অনেকক্ষণ বসে রইল।

মূর্তি হলে কেমন হয়? কদম্ব ভাবল। দেবতার মূর্তি হয় যদি? দেবতা নড়ে না। ওর দুটো হাত রাখা আছে প্রভাত মিশ্রর মেঠাই দোকানে। দড়ি দিয়ে বুকের সঙ্গে বেঁধে নেওয়া যায়। আসল হাতদুটোর সঙ্গে জুড়লে চারটে হাত হয়ে গেল। চারহাতে নারায়ণ মুখে কালো রঙ আর জিভ লাগালে কালী। ও কালী হবে নাকি নারায়ণ হবে ভাবছিল, এমন সময় দেখল চারজন লোক ধরাধরি করে রামসীতা নিয়ে যাচ্ছে।

কদম্ব ওদের সঙ্গে সঙ্গে চলল। লেজ নড়ছে। লেজটা খড়ের, কদম্ব নাড়াতে পারে না, নড়া বন্ধও করতে পারে না। কদম্ব চলছে, সামনে রামসীতা। চারজন লোক, যারা রামসীতাকে ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সামনে আরও দু’জন। একজন ধুতি-শার্ট অন্যজন ফুলপ্যান্ট। ফুলপ্যান্টটা বলল, দেখো দেখো, রেডিমেড হনুমানও পেয়ে গেলে। ধুতিপরা লোকটার ঘড়ি লাগানো আর পাথর লাগানো ইশারায় কদম্ব রামসীতার পিছন পিছন যেতে লাগল। কদম্ব ওর দু’হাত জোড় করে নিল। শিরদাঁড়া আর একটু বেঁকিয়ে নিল। অনুগত হনুমান হাঁটছে বাবুদের পিছন পিছন। একজন চামড়ার জ্যাকেট পরা, মুখে দাড়ি, কিলিক্‌ কিলিক্ করে ছবি তুলে নিল। ভারত সেবাশ্রম সংঘের সামনে কিছুটা জায়গা দরমা দিয়ে ঘেরা হয়েছে আগেই, ওখানে একটা আমগাছ। আমগাছ তলায় ওরা মূর্তিটা বসাল। ধুতিপরা লোকটা ওর সাইড ব্যাগ থেকে বের করে নিল একটা খবর কাগজের মোড়ক। ‘মহাকাশে আরও উপগ্রহ ছাড়বে ভারত’ লেখা কাগজটা মাটিতে ফেলে দিতেই রাংতা আর পুঁতি বসানো মুকুট বেরিয়ে আসে। রামসীতাকে পরানোর পরও আরও একটা থেকে যায়।

একটা কালো বাক্সে ব্যাটারি রাখা হয়। রামসীতার পিছন থেকে বের হয়ে এসেছে রাঙা দুটি তার। ব্যাটারি লাগে তারে, আরে আরে, অমনি রামের হাসি-হাসি মুখ নড়ে ওঠে, সীতার হাসি-হাসি মুখ, চিরহাসি মুখ নড়ে ওঠে। রামসীতার ভাব জমে ওঠে। রামের মুখ সীতার দিকে ঘোরে, সীতার মুখ রামের দিকে ঘোরে। রাম সীতার হাত ধরে। মিলন হ’ল, আহা মি-ল-ন হোলো…। হরিবোল! ঘটাংঘট। রামের মুখ ঘুরে যায়। সীতার মুখ ঘুরে যায়। হনুমান হাততালি দিয়ে ওঠে।

লক্ষ্মণ বলেন শুন বীর হনুমান

শ্রীরামের ভক্ত নাহি তোমার সমান

তোমারে জানেন রাম, রামে জান তুমি

তব মহিমার সীমা কি জানিব আমি

হনুমান বলে আমি বনের বানর

রামের দাসানুদাস তোমার নফর

শুনিয়া হনুর কথা শ্রীরামের হাস

লঙ্কাকাণ্ড গাইল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।

ফুলপ্যান্টপরা জন বলল গজা, আমরা অলরেডি লেট। মাইক ফিট কর জলদি। দরমার বাইরে একটি টেবিল। ওখানে হলুদ টিকিট পাথর চাপা। একটি লোকের হাতে মাইক। মাইকের তারে ব্যাটারি যুক্ত হয়ে গেল। ক্যাসেটে বেজে উঠল কালি কালি আঁখে-তুরুরু তুরুরু…আসুন, দর্শন করুন রামের অভিষেক। কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত শিল্পী দ্বারা তৈরি রামসীতার পেটের ভিতরে অদ্ভুত, বিস্ময়কর জাপানি মেশিন। দর্শন করুন রাম হাস্য করিতেছেন, সীতামায়ের হাত ধরিতেছেন। দর্শন করুন – শ্রীশ্রীরামচন্দের আশ্চর্য মহিমা। এই পবিত্র তীর্থক্ষেত্রে শ্রীশ্রীরামচন্দ্রকে দর্শন করে পুণ্য লাভ করুন…টিকিট মাত্র একটাকা। দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা…হায় রাম… দরমার বেড়ার ও-পাশে ভিড়, এ-পাশে ব্যস্ততা। রামসীতার সামনে একটা অ্যালুমিনিয়ামের থালা রাখা হ’ল। বাবুরা খুব হুকুম টুকুম করছে। কদম্ব ধুতিপরা জন আর ফুলপ্যান্টপরা জনের দিকে তাকিয়ে ওদের সম্পর্ক বোঝাবার চেষ্টা করে। মামা ভাগ্নে? কাকা ভাইপো? শ্বণ্ডর জামাই? ওই দু’জনের মধ্যে ধুতিপরাকেই আসল ভেবে কদম্ব ওর দিকে চেয়ে বলল, আজ্ঞে আমি এখানে রামসীতার কাছে হনুমান হয়েই থাকি? হাতটা জোড়াই ছিল। ধুতিপরা জন হাতটা তুলে সামান্য নাড়াল। যেন তথাস্তু। লোকটা কি নিজেকে বাল্মীকি ভাবল? ফুলপ্যান্টপরা জন তুড়ি দিয়ে ধুতিশার্টকে ডাকল। একটু যেন শলাপরামর্শ করল। তারপর ফুলপ্যান্টপরা জন কদম্বকে ইশারায় ডাকল যেন ‘এই হনুমান কলা খাবি।’ হনুমান দাঁড়াল। জোড় করা হাত। সদা সেবাদাস।

নাম কী?

কদম্ব গুছাইত।

থাকবে সারাদিন?

হনুমান ঘাড় নাড়ল।

কী নেবে?

আট আনা।

আট আনা মানে? ঘণ্টায়?

মানে হাফ হাফ।

ধুতিপরা জন দাঁতের ফাঁক দিয়ে চিড়িক করে পানের পিক ফেলল। এঃ ফিফটি পার্সেন্ট! হাতের মাছি তাড়াবার মতন বলল–লাগবেনে, লাগবেনে। হনুমান ছাড়াই শো হবে। ফুলপ্যান্টপরা জন কপালটা একটু কুঁচকে ধুতিপরা জনের দিকে তাকাল। বলল, তুমি থামো তো।তারপর কদম্বকে বলল, শোনো স্ট্যচু পার?

পারি।

কী বল তো?

ওই তো, লড়নচড়ন বন্ধ। মূর্তি মানুষ হয়ি ভুলি থাকতি হবে আমি মানুষ, মনে করতি হবে আমি পাথর। আমি মাটি। আকাশে এলোপ্লেনের শব্দে উপরে দিখব না। বোমা পল্লি চমক পাব না। বোঁদে সিঙ্গাড়ার গন্ধ পাব, নেলো হব না। গায়ে মাছিটাছি ঝদি বসে, বসুক বসুক ভেবে সহ্যি করি নিতে হবে।

–বাঃ।

–আগে আগে স্ট্যাচু-কাজ করেছিলে?

–আজ্ঞে, চাকদার ঝুলনে করেছি। জ্যান্তঝুলন হয় ওখেনে। নারদ হয়েছিলাম। তা বাদে বিয়ে বাড়িতে কাজ করেছি। পাগড়ি পরে, গোঁপ লাগিয়ে, আলখাল্লা গায়ে দিয়ে, আলখাল্লার ভিতরে কাপড়ের পুঁটলি ঢুকিয়ে ভুঁড়ি বানিয়ে, সামনের দিকে একটু ঝুঁকে বিয়ে বাড়ির গেটে দাঁড়িয়েছি। ওটার নাম মহারাজা পোজ। একেদ্দম লড়াচড়া করিনি। কতজন টিপে দেখেছিল আমি মাটির না মাংসের।

–এখানে একটু অন্যরকম কোরো বুঝলে, একেবারে স্ট্যাচু না থেকে নড়াস্ট্যাচুর মতো কোরো। রামসীতার দরবারে হনুমান যে পোজ নিয়ে বসে, ওইভাবেই বসে থাকবে তুমি, আর যেই না আমাদের রামসীতা হাত ধরবে, ওমনি তুমি তোমার দুহাত উপরে তুলে চেঁচিয়ে উঠবে–জয় সীরাম।

–পেমেন?

–পেমেন্ট…মনে কর… সারা দিনের জন্য পঞ্চাশ টাকা, আর তুমি যদি আলাদা প্রণামী কিছু পাও…পাবেই, তার ফিফ্‌টি মানে আটআনা।

–পঞ্চাশ না, একশো করেন। মেলার কণ্টা দিনই তো যা রোজগার। এমনি হনুমান হয়ি ঘুরে বেড়ালিই পঞ্চাশ-ষাট হয়ি ঝায়, কাদার হনুমান হয়ি তবে কী লাভ? জ্যান্ত ঝুলনেই পঞ্চাশ পাতাম, এত খরচ-খরচা করি এখেনে এসে ঝদি একশো না হ’ল…

–একশোর উপর হয়ে যাচ্ছে। প্রণামী আছে না। আচ্ছা, সত্তর দেব, আর প্রণামী।

আর পাঁচটা টাকা…

আচ্ছা, দেখা যাবে।

–কদম্ব রামসীতার সামনে বসল কিছুটা নিল-ডাউনের ভঙ্গিতে। ওর মাথায় পরিয়ে দেয়া হ’ল রাংতার মুকুট। কদম্ব বলে উঠল–জয় সীরাম। তুরুরু তুরুরু। ভিড় শুরু হয়ে গেছে। বাইরে মাইকের পাবলিসিটি–আইয়ে আইয়ে জনাব…দর্শন কিজিয়ে। রামসীতা কি যুগলমূর্তি দেখিয়ে। দেখিয়ে রামজী নে ক্যাইসে সীতা মাঈকো হাথ পাকড়লেতা হায়।…

…হনুমান বলল, যাই, পেসসাব করে আসি।

হনুমান গাছের আড়ালে যায়। মাথায় মুকুট।

শো শুরু হয়ে গেছে। লোকজন আসতে শুরু করে দিয়েছে। কপালে তিলক। দাদুর কাঁধে নাতি। মায়ের কোলে ছেলে। কদম্ব তো হনুমান, ও শুধু রামের দিকে, সীতার দিকে চেয়ে আছে। রামসীতার শরীর থেকে হাল্কা গোঁ গোঁ শব্দ আসছে। মোটরের। রামের মুখ আস্তে আস্তে সীতার দিকে ঘুরে যায়। সীতার মুখ আস্তে আস্তে রামের দিকে ঘুরে যায়। রামের হাত সীতার দিকে, সীতার হাত রামের দিকে। হাত হাতে স্পর্শ। অমনি কদম্ব দু’হাত তুলে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কেটে দেখতে আসা লোকজনও জয় শ্রীরাম বলে আপ্লুত আওয়াজ করে। আর থালায় পয়সা। হনুমানের দিকেও পয়সা পড়ছে। হনুমান আড়চোখে দেখে। কিছু পয়সা ওর সামনে, কিছু রামের সামনে। হনুমান আর রামের মাঝামাঝিও কিছু পয়সা পড়েছে। রামের অধিকারের সীমানা কতদূর? আর ওর সীমানা? কতদূর পর্যন্ত ওর? সীমানা নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। অধিকার ভাববার অবসর নেই। রামসীতার হাতের স্পর্শ হলেই ঘটাংঘট আর হনুমানের দু’হাত উপর।

একজন বউ, কোলের বাচ্চা মাই খাচ্ছে, ওর স্বামীকে বলল–এই হনুমানটাও কি কলকব্জার হনুমান? ওর স্বামী একটু দেখে বলল, না, মানুষ মনে হচ্ছে। একজন ভিনদেশী বুড়ি অনেকক্ষণ ধরে হনুমানকে দেখল। তারপর বলল, আদমী মালুম হোতা হায়। বুড়িটা রামের দিকেই শুধু ছুঁড়ল। হনুমানের দিকে কি আদমী বলে ছুঁড়লো না? মানুষ বলে? রামের দিকে ছুঁড়লো ভগবান বলে? নাকি মেশিন বলে? কদম্ব যখন কালী হয়, কিংবা নারায়ণ হয় বা হনুমান হয় তখন ওকে তো ভগৰান ভেবেই দেয়। এই যে মানুষজন সব দর্শন করতে আসছে, পয়সাটয়সা দিচ্ছে, কাকে দিচ্ছে? ভগবানকে, নাকি ভগবানের নড়াচড়াকে, কলকব্জার মাহাত্মকে, মাহাত্মর যে কত রকম রূপ!

কদম্ব চোর ছিল। চুরি করতে গিয়ে কদম্ব ওর নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছে মানুষ মানুষকে ভালবাসে। মানুষ মানুষের সঙ্গে থাকতে চায়। কেউ একজন চোর বলে হাঁক দিলে দশজন মানুষ ছুটে আসে। দশজন মিলে প্যাদায়, আবার দশজন মিলেই ঠোঁটের রক্ত মুছিয়ে দেয়, জল খাওয়ায়, হাওয়া করে। কদম্ব কীভাবে যেন জেনেছে বহু লক্ষ বছর ধরে মানুষ শিকার করেছে মানুষে মানুষে মিশে। চাষবাস করেছে একসাথে। মাইকে একটা গান শুনতো খুব – মানুষ মানুষের জন্য। কদম্ব যখন হনুমান বা মাকালী হয়ে ঘোরে, লোকে আহা, বেচারা মানুষটা, এই ভেবেই তো পয়সা দেয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের বহুদিনের সংসার। তবে কেন মানুষ-হনুমানের চেয়ে কলকজ্জা-ভগবানে বেশি নজর?

কদস্ব এইসব চিন্তা করে, আর চিন্তার মাঝে মাঝেই, ঠিক টাইম মতন, টাইম মতন ‘জয় সীরাম’ বলে দেয়। ত্রুটি হয় না। এই যে কদম্বর ত্রুটি হচ্ছে না, টাইম মত হাত উঠে যাচ্ছে, ওকে কি লোকে কারিগর বলবে? নাকি আর্টিস্ট? নাকি যন্তর? ও যখন সঙ করত শুধু, চাকদার রামলাল সাহাই প্রস্তাব দিয়েছিল ব্যাণ্ডপাটির ফল্‌স্‌ হবি? রামলাম সাহা হল ডেকরেটারের মালিক। চেয়ার টেবিল মাইক ঝাড়লণ্ঠন ভাড়া দেয়। ব্যাণ্ডপার্টিও ভাড়া দেয়। ড্রাম-ক্লারিওনেট-বিউগল! হয়তো কোনও পার্টির সঙ্গে কথা হচ্ছে–

মিউজিক হবে?

পাবেন। কী চাই?

এক ডজন ড্রাম, হাফ ডজন ক্লারিওনেট, দুজোড়া বিউগল।

হয়ে যাবে।

কত পড়বে?

দেড় হাজার।

এক হাজারে করে দিন।

তাহলে চারটে ড্রাম, তিনটে ক্লারিওনেট ফল্‌স্‌ হয়ে যাবে।

ফল্‌স্‌ মানে হল নাদান লোকের হাতে যন্তর থাকবে, ওরা শুধু হাত নেড়ে যাবে, বাজাবে না, ফু দিয়ে যাবে, বাজাবে না। ওরা বাজাতে জানে না। শুধু বাজাবার ভান করবে। নাদান মানুষের মজুরি কম। কদম্ব বিউগল বাজাত, ফল্‌স্‌। শব্দ হত না। অন্য শব্দের সঙ্গে ওর নৈঃশব্দ মিশে যেত।

একদিন রামলাল সাহা বলল, জ্যান্তঝুলনের পুতুল হবি? মানুষ পুতুল? চাকদায় জ্যান্তঝুলনে দেখেছিল শ্রীকৃষ্ণ, ঠাকুর রামকৃষ্ণ, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, নটরাজ শিব… সবাই পাথরের মূর্তির মতো স্থির। ওইগুলো হল জ্যান্তঝুলনের না-নড়া পুতুল। আর বকাসুর বধ, হিরণ্যকশিপু বধ, রামের হরধনু ভঙ্গ, এগুলো হল জ্যান্তঝুলনের নড়া পুতুল। রামলাল সাহা বলেছিল, তোর হবে। চৈতন্য হ। কদম্ব দু’হাত তুলে চৈতন্য হয়েছিল। রামলাল সাহা বলেছিল, ব্যাপারগুলো ভাল করে শিখে নে কদম্ব। হাত দুটো উপর দিকে উঠিয়ে দাঁড়ালে শ্রীচৈতন্য। হাত দুটো দুপাশে ছড়িয়ে দিলে যিশু এরকম বুকের কাছে হাতদুটো ভাজ করে রাখলে বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ এরকম। আর গালে হাত দিয়ে ভাবলে সুকান্ত।

কদম্ব সেবার বেশ ভালই চৈতন্য হয়েছিল। আঁকা ভ্রূ, চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক, গলায় মালা। শুধু মাথাটা নেড়া করতে হয়েছিল। জ্যান্তঝুলনে যারা ভাল পারে, রামলাল সা’ ওদের অন্য জায়গায় ভাড়া দেয়। বিয়ে বাড়ির গেটে থাকত কলাগাছ। সাদা পিজবোর্ড… পিজবোর্ড তো নয়, থার্মোকল,ওই থার্মোকল কাটা বডিজ পরা শঙ্খ বাজানো মেয়েছেলে দেখেছে গেটে লাগানো। শাঁখ বাজাচ্ছে মাটির সুন্দরীও দেখেছে। সেদিন দেখল জ্যান্ত-পুতুল।রামলাল সা’ ভাড়া দিচ্ছে। কালী-প্যাণ্ডেলে জ্যান্ত রামপ্রসাদ, বামাক্ষ্যাপা, রামকৃষ্ণ ভাড়া দিচ্ছে রামলাল। পুজার আগে কাপড় দোকানের কাচের ভিতরে জ্যান্ত-পুতুল কাপড় পরে দাঁড়িয়ে থাকে। রামলাল ভাড়া দিচ্ছে।কদম্বও ভাড়ায় খেটেছিল মহারাজ। মাথায় পাগড়ি, গায়ে লাল আলখাল্লা মুখে ঝুলে পড়া গোঁফ, শরীরটা একটু ঝুঁকিয়ে দিয়ে, কুঁজো হয়ে হাতটা কপালের কাছে এনে স্থির হয়ে যাওয়া।

এই পোজটা কোন্ দেশের মহারাজের জানে না। একটা দু’ইঞ্চির কুঁজো হয়ে থাকা, নিচু হয়ে থাকা মাটির পুতুল দেখিয়ে রামলাল সা’ বলেছিল, এই হ’ল মহারাজ। তোকে এরকম হতে হবে। দু’ইঞ্চির পুতুল দেখে পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চির পুতুল হতে পেরেছিল কদম্ব। অসুবিধে হয়নি।

মানুষকে নকল করে পুতুল হয়েছে। এখন পুতুলকে নকল করছে মানুষ।

এখন নড়ল কদম্ব।কারণ রাম নড়ল, সীতা নড়ল। হাসিমুখ নড়ল। জয় সীরাম।

বাঃ, রাম, বাঃ, বেশ পার মাইরি। সীতাকে দেখে তুমি হাসছ, হাত ধরছ, অভিষেক মারাচ্ছ। কি বলেছিলে তুমি?

সূর্যবংশে জন্ম মোর দশরথ নন্দন

তোমা হেন নারীতে নাহি প্রয়োজন

তোমারে লইতে পুনঃ শঙ্কা হয় মনে

যথা ইচ্ছা যাও তুমি থাক অন্য স্থানে

সীতার জীবনে ভাই কিছু নাহি কাজ

অগ্নিতে পুড়ুক সীতা দূরে যাক লাজ

লক্ষ্মণ রামের বাক্যে সাজাইলেন কুণ্ড

বানর কটক বহু আনিল শ্রীখণ্ড

কাষ্ঠ পরি উঠিল জ্বলন্ত অগ্নিরাশি

প্রবেশ করেন তাহে শ্রীরাম মহিষী

দেখ ভাই দেখ দেখ কী আশ্চর্য সীন

সীতা পুড়িল না, ত্রেতায় না ছিল কেরোসিন।।

দুহাত তুলে জয় সীরাম ফের।

আচ্ছা মাইরি হনুমান, পবননন্দন, তুই বসে বসে দেখলি সীতাকে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিচ্ছু বললি না। অথচ তুই অষ্ট রাক্ষস বধ করিলি, স্বর্ণলঙ্কা দহন করিলি। সীতা পোড়ানোর সময় স্পটে ছিলি তুই। কী করিলি তখন? তুই বল। অথচ, সীতা তোকে কী ভালই বাসত, বল! সীতা তোকে বর দিয়েছিল–

দুই হাত তুলি হনু তোমায় দিনু বর

মোর বরে চারিযুগে হইবে অমর

সীতা বলে যতকাল থাকিবে পৃথিবী

রোগশোকহীন তুমি হও চিরজীবী

যাবৎ রামের নাম ঘোষিবে সংসার

ততকাল হও তুমি অক্ষয় অমর

হনুমান তোমারে দিলাম এই বর।

আর সীতার শরীরে যখন আগুন, তখন তোর সত্তামধ্যে জয় শ্রীরাম। কারণ ওই কথাটা তোর অন্তরে ছিল না। শ্লোগানে ছিল। তুই ততদিনে দমের পুতুল হয়ে গিয়েছিলি। নড়া-পুতুল। বশ্যতায়।

হীনক্লাব শুনলেই জিন্দাবাদ বলে কদম্ব। জিন্দাভাত বলতে খুব ইচ্ছা করত আগে। এখন করে না। গ্যাট চুক্তি নিপাত যাক বলে, এখন বলল জয়-সীরাম। রামসীতার হাতধরা থেকে ছেড়ে দেয়া, আবার হাত ধরা গুনলে মোট ১৮০। এখন ১৮০ না-গুনেও চোখে না-দেখেও বলে দিতে পারে কদম্ব। সারা শরীরে ১৮০-র বোধ চলে আসে ওর। পা ঝিনঝিন করছে কদম্বর। করুক। ও কিছু নয়। খিদে পেয়েছে। সয়ে যাবে। গায়ে মাছি বসছে। সয়ে যাবে। ল্যাজে বসেছে ভিমরুল। কী মজা। ল্যাজের নিজস্ব অনুভূতি নেই। ওটা খড়ের। কামড়ালেও লাগবে না। সারাটা শরীল মাইরি যদি ন্যাজের মতো হয়ে যায়… জয় সীরাম। চোখ খুলল। একটু ভুল হয়ে গেছে। রামসীতা তখনও হাত ধরেনি। কয়েক মুহূর্ত্ত আগেই বলে ফেলেছে কদম্ব। কদম্বর চোখে একটু যেন অপরাধবোধ। কদম্ব ফুলপ্যান্টপরা জনের দিকে তাকাল। কদম্ব কি ওকেই এতক্ষণ জয় শ্রীরাম বলছিল?

গঙ্গাসাগরের এই মেলাটা ভেঙে গেলে ওই লোকগুলোর সঙ্গে লেনদেন ভাঙবে না কদম্ব। ওরাও কি হরি সা’র মতো ভাড়া খাটায় নাকি অন্য কোনও হরি সা’র কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে আসে? ওরা কি মেলায় যাবে কদম্ব? তাহলে সারা বছর কাজ হবে! পয়সা হবে। পয়সা দিয়ে কদম্ব কী করবে? আবার সংসার করবে? সংসার মানে চালায় লাউ, বালতিভরা জল, দাওয়া, মুড়িমাখা। আবার সংসার মানে কেরোসিনও তো।

সংসার পেতেছিল কদম্ব। বসিরহাট। ও পারেনি। পালিয়েছিল। ওর বউ তখন পোয়াতি। বউয়ের নাম প্রতিমা। কদম্বর মনে হয়েছিল, প্রতিমার গর্ভের সম্ভান যখন ছিচকে চোরকে বাপ ডাকবে, তখন কি সামলাতে পারবে ও? মনে হয়েছিল, বাবুদের বাড়ি গিয়ে বাসনপত্তরের সঙ্গে ও কি ঝুমঝুমিও চুরি করবে? দু’দিকে টুপি পরানো বোতল? চুরি করবে ডটপেন– সাদা খাতা? চুরি করবে লাল মলাট বিদ্যাসাগরের বই? পালিয়েছিল কদম্ব! ওর সেই বউ আর সন্তানের খবর জানে না ও। এখন মাঝেমধ্যে দেখতে ইচ্ছে হয়। পুরানো সংসারটার গায়ে বিছিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় লাউলতা।

চুরি করার জন্যই সংয়ের কাজটা শিখেছিল কদম্ব। মুখে কালি মাখতে শিখেছিল ঠিকমতো। হঠাৎ হঠাৎ স্থিরমূর্তি হয়ে যাবার অভ্যাস করেছিল। সব বিদ্যারই শুরু হয়। চুরির সময় ওর গুরু ছিল গুরুপদ। সংয়ের কোনও গুরু ছিল না। বাগদি বাউড়িদের মধ্যে যারা সঙ সেজে বেড়ায় ওরা ওদের বাপ-পিতামোর কাছ থেকে শিখেছে। কদম্ব শিখেছে সমাজের কাছে। তাই ও শুধু কালী-কৃষ্ণ সাজে না। ব্লক-এর ‘যেমন ইচ্ছা সাজা’ প্রতিযোগিতায় ‘চোর’ সেজে কৃত্তিবাসী রামায়ণ প্রাইজ পেয়েছে কদম্ব। একবার সেজেছিল রানার। কিছু লোক জানে, কখন কী সংয়ের বাজার। হরিলাল সা’ জানে।

এখন খুব ভিড় বেড়েছে। তা-তা-তা তুরু তুরু। দেখুন দেখুন মানুষের মতো পুতুল আর পুতুলের মতো মানুষ। দেখুন মানুষ আর পুতুল সাইড বাই সাইড। ত-তা-তা তুরু তুরু কদম্বের সামনে ভিড়। পয়সা পড়ছে ঠং ঠং ঠং। একটা বাচ্চা মেয়েকে পিছন থেকে বদমায়েসি করছে পিছনের মোটা লোকটা…জয় শ্রীরাম। একটা হার ছিনতাই হ’ল কার। জয় শ্রীরাম। একটা বউয়ের মৃগী হয়েছে। পড়ে যাচ্ছে ভুঁইয়ে। কোলের বাচ্চাটা পড়ে গেল। কেউ মাড়িয়ে দিল ওর হাত। জয় শ্রীরাম। বমি করল একটা লোক। কিচ্ছু না। খিদে পাচ্ছে। কিচ্ছু না। একটা বুড়ি বলল, বেচারা, হনুমানটার বড় দুঃখ… কিছু না। ওটা কে দাঁড়িয়ে সামনে? প্রতিমা না? প্রতিমাই তো। ওই তো থুতনির দাগ। ওই তো ভাসা চোখ, এখন কালির দাগ। সঙ্গে দুটি ছেলে। একই রকম দেখতে। যমজ? লবকুশ? হাতে আয়রে বুকে আয়। ওরা রাম সীতা দেখল অবাক হয়ে। যন্তরের হাতনাড়া দেখল।হনুমান দেখল। ‘মা গো, হনুমানটা মানুষ নাকি রামের মতোই যন্তর?’ ওদের মা বলল হবেই একটা। ওই তো সেই গলার আওয়াজ। শরবত খাবা? ওই তো।আদিখ্যেতা! ওই তো।

একটা ব্যাগ বের করল ওই প্রতিমা। লাল ফোম-এর। ব্যাগের থেকে দুটো কুড়ি পয়সা বের করল। ছেলেদের হাতে দিল। বলল, রাম সীতারে দ্যাও। ওরা দিল। তারপর দশ দশ পয়সা বার করল। ছেলেদের হাতে দিয়ে বলল, হনুরে দ্যাও। ওরা দিল। বলল, পেন্নাম করো। ওরা করল। ওরা চলে গেল।

কে যে কীভাবে কখন মেশিন হয়ে যায় কে জানে? কদম্ব ভাবল।

তারপর রামসীতার আরও বহুবার ঘাড় ঘোরাবার পর রামসীতার ঘাড়ে ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর শব্দ হবার দরুন রামসীতার ঘাড়ে একটু গ্রীজ মাখাবার জন্য ধুতিপরা জন রামের সঙ্গে ব্যাটারির কানেকশন কেটে দিল। কদম্বের পিছনের সঙ্গে ব্যাটারির যদিও কোনও সংযোগ ছিল না, তবুও দেখা গেল, তখনই, ঠিক তখনই কদম্বের হাত নেতিয়ে পড়ল, ঘাড় টিলে হয়ে গেল এবং মাথা থেকে পড়ে গেল রাংতার মুকুট।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *