উইশ

উইশ

বুকুনের সামনে রচনা বই খোলা।‘উইশ’ রচনা খুব ইম্পর্টেন্ট। বাবা বলেছে মুখস্থ কোরো না, নিজে লেখ। চোখের সামনেই তো দেখছ। উইশ রচনাটা দিয়েই বুকুনের রচনা লেখা শুরু, আগে যেমন গরু রচনা ছিল। বুকুন লিখতে লাগল উইশ আমাদের পরম উপকারী প্রাণী এরা না হলে আমরা বাঁচতাম না। এদের দুটি চোখ, চারটি পা, একটি মুখ, একটি নাক, একটি লেজ আছে। এদের গায়ে লোম নেই, গা বেশ চক্‌চক্ করে।

এই পর্যন্ত লিখে বুকুন বইটার দিকে দেখে। ও যা লিখেছে, আর বইয়ে যা লেখা আছে, তা মোটামুটি একই রকম। শুধু স্টার্টিং-এ এক্সট্রা আছে – ‘উইশ প্রাণীটি আধুনিক বিজ্ঞানের এক অসামান্য অবদান’। বুকুন পড়তে থাকে। একবার রীডিং পড়ে নেওয়াটা ভাল। বুকুন পড়ে – উইশ বা Wish কথাটির বৈজ্ঞানিক নাম হল Cordata WIS Hakita, সংক্ষেপে এটা এখন দাঁড়িয়েছে WISH. W.I এবং S হল তিনটি প্রাণীর আদ্যাক্ষর যথা – W= উডচাক (Wordchuck) ইহা কাঠবেড়ালি জাতীয় বৃহৎ আমেরিকান তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী। দুই-আড়াই ফুট লম্বা। এরা ঘাস, পাতা, গাছের বাকল ইত্যাদি খায়। পাকস্থলীতে ঘন এ্যাসিড ক্ষরণ হয়।

I= ইগুয়ানা (Iguana) ইহা এক জাতীয় গিরগিটি। এরা স্থলেও থাকে, জলকাদাতেও থাকে। গ্যালাপাগাস দ্বীপে অনেক জাতের ইগুয়ানা বাস করে। এদের মাংস খুবই সুস্বাদু, ফলে শিকারিদের হাতে পড়ে ইগুয়ানা লুপ্ত হতে চলেছে। S= স্যালামাণ্ডার। ইহা অনেকটা উভচর প্রাণী। দেখতে অনেকটা গিরগিটির মতো। এরা কষ্টসহিষ্ণু। না খেয়ে এরা অনেকদিন থাকতে পারে। H= ইহা কোনো প্রাণী নামের আদ্যক্ষর নয়। আমেরিকান নাগরিক জাপান বংশোদ্ভূত বৈজ্ঞানিক ডাঃ হাপিকু। ডাঃ হাপিকুর স্মৃতি বহন করে H শব্দটি WIS এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির একটি আলোচ্য উদাহরণ হ’ল এই Wish সালাম্যাণ্ডার এবং ইগুয়ানার বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জিন উডচাকের ভিতরে ঢুকিয়ে এই আশ্চর্য প্রাণীটিকে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রাণীটি মূলত প্লাস্টিকভোজী। পলিথিন, পলিপ্রপিলিন, পিভিসি, বেকেলাইট ইত্যাদি সবরকম প্লাষ্টিক থেকেই শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করতে পারে। আমাদের সভ্যতার উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিক অপরিহার্য কিন্তু মানুষ সব খেতে পারলেও প্লাস্টিক খেতে পারে না। এই প্রাণীটি মূলত প্লাস্টিক খায়, এবং মানুষ এদের খায়। পৃথিবীতে অন্যান্য প্রেটিনের আকালের মধ্যে এই WISH একটি আশীর্বাদ। এর মাংস অনেকক্ষণ আমাদের পেটে থাকে। এদের চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ক্যালোরি মূল্যও অনেক বেশি। WISH বর্তমানে আমাদের জীবনযাপনের অঙ্গ…।

বুকুনের আর পড়তে ইচ্ছে করছে না। একটু রিল্যাক্স করতে ইচ্ছে করছে। একটু ব্যালকনিতে গিয়ে WISH হান্টিং দেখবে। আজ বুকুনদের উইশ শিকারের ডেট। বাবা ব্যালকনিতে। বড়শিতে সিনথেটিক টোপ লাগিয়ে, সামনের আবর্জনায় ফেলে, বসে আছে।

বুকুন বাবার পাশের চেয়ারটাতে বসেছে। বসে বসে উইশ হান্টিং দেখছে। চারিপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফ্ল্যাটগুলি। মাঝখানে জঞ্জাল ফেলার জায়গা। অথবা অন্যভাবে বলতে গেলে একটা গোল আবর্জনা ফেলার জায়গাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তিরিশটি ফ্ল্যাট বাড়ি। প্রতিটি পাঁচতল বাড়িতে দশটি করে ফ্ল্যাট। তাহলে তিনশোটা ফ্ল্যাটের আবর্জনা পড়ে মাঝখানটায়। প্রতিটি হাউসিং’ই এই কায়দায় গড়ে ওঠে। বুকুন বুঝতে পারছে ওর বাবা খুব টেন্‌স্‌ড্‌। একের পর এক সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। বাবা ছাড়াও আরও ক’জন বড়শি নিয়ে বসে আছে। প্রতিদিন দশজনকে হান্টিংয়ে পারমিশন দেয়া হয়। তার মানে প্রত্যেকেই মাসে একদিন করে চান্স পায়। হাউসিং কমিটি এটা ঠিক করে দিয়েছে। আজ যে দশজন হান্টিং-এ বসেছে, ঠিক তিরিশ দিনের মাথায় এই দশজন চান্স পাবে আবার। সকলে আটটা থেকে বেলা দুটো, এই ছ’ঘন্টা টাইম। এর মধ্যে যে যেকটা ওঠাতে পারে। বুকুনের বাবা হাইয়েষ্ট উঠিয়েছিল পাঁচটা। সাধারণত একটা বা দুটোই ওঠে। বুকুন দেখছে জঞ্জাল ঘিরে গোল হয়ে থাকা ফ্ল্যাটগুলির দশটা ব্যালকনিতে দশটা চিন্তা ক্লিষ্ট মুখ। কেউ শিকার পাচ্ছে না। বেলা বারোটা বাজতে চলল। দুটোর সময় কেয়ারটেকার ঘন্টা বাজিয়ে দেবে, মানে শেষ। বুকুন ওর বাবাকে জিজ্ঞাসা করল, একজনও পায়নি? বুকুনের বাবা বলল E-10 আর C-16 একটা করে পেয়েছে। বুকুনরা হ’ল B-3, মনে রাখা খুব সহজ। রিবোফ্লোভিন। রিবোফ্লোভিন মানে ভিটামিন B-3।বুকুন দেখল ওর বাবা সিগারেটে লম্বা টান দিচ্ছে। বুকুন বলল চিন্তা কোরোনা, ঠিক পেয়ে যাবে। বুকুন দেখল সামনের ফ্ল্যাটের তিনতলা থেকে কিছু আবর্জনা পড়ল।নতুন আবর্জ না পেলে জঞ্জালের ভিতর থেকে উঠে আসে আবর্জনায় নতুন কী আছে দেখতে চায়। বুকুনের মা একটু আগেই আবর্জনা ফেলেছে। কিন্তু উইশ ধরা পড়েনি। বুকুনের বাবা চেয়ারে বসে, ছিপটা ব্যালকনির লোহার রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে রাখা আছে। হাতলটা ধরে আছে বুকুনের বাবা। লম্বা নাইলনের সুতোর গোড়ায় বড়শি। বড়শিতে পচা ইঁদুরের টোপ। টোপটা রাখা আছে পড়ে থাকা জঞ্জালের উপরে। নিশ্চুপ পড়ে আছে,উইশ আসছেনা।

গত মাসেও বুকুনদের একটাও জোটেনি। খুব কষ্ট হয়েছে। এমাসেও জুটবে না? বুকুন আবার নিজের পড়ার টেবিলে চলে যায়, রচনাটা শেষ করতে হবে।

একটি প্রাপ্তবয়স্ক উইশের ওজন দুই-আড়াই কিলোগ্রাম। এর মাংস অতি পুষ্টিকর। চর্বির পরিমাণ খুব বেশি থাকায় এই মাংসের ক্যালোরিমূল্য অত্যন্ত বেশি। একটি স্ত্রী উইশ প্রতি মাসে একবার একসঙ্গে পনের কুড়িটি ডিম পাড়ে। উইশের ডিম অতীব সুস্বাদু কিন্তু খাওয়া বেআইনি।

বুকুন উইশের ডিম খুব ভালোবাসে। খেতে নয় দেখতে। কী সুন্দর সাদা ফুটফুটে ডিম। কয়েকবার দেখেছে বুকুন। একবার উইশ ধরা পড়ার পর প্লাস্টিকের বাস্কেটে রেখে ছিল। একটু পরেই ডিম পেড়েছিল উইশ। উইশের ডিম আবর্জনায় রেখে আসাটাই নিয়ম। কিন্তু বুকুনের মা কয়েকটা রান্না করেছিল। বুকুনকে বলেছিল, কাউকে বলিস না। বুকুনের ইচ্ছে উইশকে ঘরেই পোষে। কিন্তু ঘরে বেশিক্ষণ বাঁচে না। ওদের বাঁচতে হলে আবর্জনা চাই। বুকুন চেয়েছিল ওর শোবার ঘরেই আবর্জনা জড়ো করা হোক। ওই আবর্জনার মধ্যে এই উইশ বড় হবে, ডিম পাড়বে…। আবর্জনায় বুকুনদের কিচ্ছু অসুবিধা হয় না। ছোট বেলাতে গন্ধ না পাবার ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। ল্যাংটা জীবনে এই ইনজেকশনটা খুব জরুরি। বুকুনের একটা কিরকম যেন দিদি আছে, অনেক দূরে থাকে। ওখানে এরকম G.R.S মানে গ্যারেজ কাম রেসিডেনসিয়াল স্কিম নেই। ও এই ইনজেকশন নেয়নি। সেই দিদি এ বাডিতে এসেছিল বড় হাসপাতালে চোখ দেখাবে বলে। প্রথমেই ওকে গন্ধ না পাবার ইনজেকশন দিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওর চোখটা ভালো হয়নি। গন্ধটাও এখন পায়না। আঁকাবাঁকা অক্ষরে একটা চিঠিতে লিখেছিল, তবু শেফালি ফোটে, মিছি মিছি। বৃষ্টিও হয়। আগে প্রথম বৃষ্টির হলে মাটির পারফিউম পেতাম। এখন শব্দ শুনি। শুধু শব্দ। বুকুন গন্ধ ব্যাপারটা কী অতো বোঝে না। যখন চিঠিটা বাবা পড়ল, মা জিভ দিয়ে চুক্চুক্ শব্দ করল, যেমন দুঃখ হলে করে।

গন্ধ নিয়ে এখন বেশ অশান্তি। একদল বলছে দুমুখো নীতি চলবেনা। ওরা বলছে একই দেশের নাগরিক, তাদের কেউ কেউ গন্ধ পাচ্ছে, আবার কেউ কেউ পাচ্ছে না-এরকম চলবে না। তারা দল করছে, বক্তৃতা দিচ্ছে, টিভিতে অ্যাড দিচ্ছে, নানারকম হ্যাণ্ডবিল ছেপে হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দিচ্ছে। হাণ্ডবিলগুলোতে এরকম লেখা –

আমাদের দেশে শতকরা পঁচিশ ভাগ মানুষ G.R.Sএর আওতায় আছে। বাঁচবার এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য এই স্কিম নিতে হয়েছে আমাদের। এবং বারবার বমনক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ঘ্রানেন্দ্রিয় অকেজো করার ইনজেকশনও বাধ্যতামূলকভাবে নিতে হয় জন্মাবার দশ দিনের মধ্যেই। আমাদের দেশে যাবতীয় জজ ব্যারিস্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ফিল্মস্টার-সবাই G.R.S স্কিমেই আছেন। অথচ এদের কারোরই ঘ্রাণশক্তি নেই। অথচ এই জি.আর,এস. এর আওতার বাইরে বসবাসকারী মানুষেরা তাদের রক্ষা করার অধিকার পাচ্ছেন। ফলে আমাদের দেশে দুটি শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে। হ্যাভস্‌ এবং হ্যাভ নট্স। কেউ গন্ধ পাচ্ছেন, এবং কেউ পাচ্ছেন না। দুটো শ্রেণী তৈরি হয়ে গেছে। দেশের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হয়েছে। অনৈক্য এসেছে। দেশের সংহতির পক্ষে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এজন্য আমাদের দাবি বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যেকটি নাগরিকের ঘ্রানেন্দ্রিয় কেটে দেয়া হোক। এছাড়া আরো কয়েকটি দাবির মধ্যে অন্যতম হল পাঠ্যপুস্তক সংশোধন। এখানে মান্ধাতার আমলের কায়দায় কেমিস্ট্রি বই পড়ানো হচ্ছে। কোনো পদার্থের ফিজিকাল প্রপার্টি পড়ানোর সময় গন্ধের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। যেমন এমোনিয়ার গন্ধ ঝাঁঝালো, হাইড্রোজেন সালফাইডের গন্ধ পচা ডিমের মতো, মিথাইল অ্যাসিটেটের গন্ধ, জুঁই ফুলের মতে-এসব আবার কী? কেন জি.আর.এস. এলাকায় রেডিও, টিভিতে গান হবে ‘আজি গন্ধ বিধুর সমীরণে’, ‘মধুগন্ধে ভরা মৃদু স্নিগ্ধ ছায়া’, ‘মন যে বলে চিনি চিনি যে গন্ধ বয় এই সমীরে’ – এ সব কী? এই গানগুলি সংশোধন করে প্রচার করতে হবে…

বুকুনের রচনা লেখা শেষ হয়ে গেছে। রচনার শেষে লিখেছে মানব জাতির স্বার্থে, পরিবেশের স্বার্থে উইশ জন্তুটিকে টিকিয়ে রাখা খুবই জরুরি। এবার আবার ও বাবার কাছে গেল। ওর বাবা একটাও পায়নি। দশজন আজ ছিপ নিয়ে বসেছে, মাত্র দুজন পেয়েছে। আগে আগে সবাই তো একটা দুটো তো পেতই, তিন চারটে করেও পাওয়া যেত। বুকুনের বাবা দুশ্চিন্তায় ঘনঘন সিগারেট খাচ্ছেন। বুকুনের বাবার ঐ ঘনঘন সিগারেট খাওয়া, অস্থিরতা এবং দুশ্চিন্তা শুধু বুকুনের বাবার দুশ্চিন্তা হয়েই থাকলনা। ক্রমে এটা আন্তর্জাতিক দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়াল। সারা পৃথিবীতেই উইশ কমে যাচ্ছে। দ্রুত বংশবৃদ্ধির জন্য যে উইশ বিখ্যাত হয়েছিল, তাদের পেটে আর ডিমই আসছে না। আমাদের দেশেও একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, যার নাম হ’ল এস.ডবল্যু.এন.ই। যার পুরো মানে হচ্ছে সেভ উইশ অ্যাণ্ড ইনব্রিড ফর দি নেশন অ্যাণ্ড এনভায়ারমেন্ট। ওরা উইশের অবক্ষয় নিয়ে প্রচুর গবেষণাও করেছে। কিছু সুপারিশ করেছিল ওরা। যেগুলো মেনে চলবার জনা আইনও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যেমন পেটে ডিম আছে এমন উইশ ধরা পড়লেও সঙ্গে সঙ্গেই এদের গারবেজে ছেড়ে দিয়ে আসতে হবে ইত্যাদি। আরও জঞ্জাল বাড়াতে হবে এরকম সুপারিশের ফলে পরিবেশবাদীরা আরও জঞ্জাল চাই আন্দোলন শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কিছু। উইশের সংখ্যা কমতে লাগল এবং কিছুদিনের মধ্যেই উইশ শিকার বন্ধ করে দেওয়া হল। খাদ্য হিসেবেও নিষিদ্ধ করা হল।

উইশের জন্ম হয়েছিল আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জিনেটিকসে। পেটেন্ট ওদেরই। সারা পৃথিবীর উইশ জন্মের উপর ওরা রয়ালটি পায়। জন্মহার কমে যাওয়ায় রয়ালটিও কমে গেছে। ওরাও জন্মহার বাড়ানোর গবেষণার জন্য এন্তার টাকা ঢেলেছে। শেষ পর্যন্ত ওদের ল্যাবরেটরিই আবিষ্কার করেছে উইশ বাঁচাবার অন্য এক তত্ত্ব। ঐ ল্যাবরেটরির রিসার্চ টিমের অন্যতম ছিলেন ডঃ হুই। প্রভাত কুমার হুই। যৌথ ভাবে ডঃ হুইও নোবেল বিজেতাদের মধ্যে ছিলেন। যদিও হুই আমেরিকার নাগরিক। কিন্তু জন্মসূত্রে ভারতীয় তথা বাঙালি। উত্তরপাড়ার ছেলে। এজন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত। WISH এর, এবরিবিয়েশনের H যেটা, হাপিকু থেকে এসেছে, আমরা মনে মনে ভাবতে শিখেছি ওটা ডঃ হুই। হালআমলের কয়েকটা ইন্টারভিউতে ‘উইশ’ পুরো কথাটি কী বলুন তো – প্রশ্নের জবাবে যারা H ফর ডঃ হুই বলেছে, তারাও পুরো নম্বর পেয়েছে। ডঃ হুই এবং তার সহযোগীরা যে আবিষ্কারটির ফলে নোবেল প্রাইজ পেলেন, তা মূলত উইশ এর মেটাবলিজম সংক্রান্ত। ওরা দেখালেন প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস থেকে প্রোটিন এবং গ্লুকোজ তৈরির বিভিন্ন ধাপ। প্লাস্টিকের কার্বোহাইড্রেট পলিমার গুলি ভাঙছে এবং ভেঙে তৈরি হচ্ছে মূলত অ্যাসিড। এবং বিভিন্ন এনজাইমের সহায়তায় গ্নুটারিক এ্যাসিড পরিবর্তিত হচ্ছে গ্লুকোজে। আবার অন্য এক ধরনের এনজাইমের ক্রিয়ায় কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে নাইট্রোজেন যোগযুক্ত হয়ে প্রোটিন সিনথেসিস হচ্ছে। উইশের স্টমাকে শুধু নানা ধরনের প্লাস্টিক গেলেই হয় না ক্যাটালিটিক এজেন্ট হিসেবে অন্য কিছুও চাই। সেলুলোজ, স্টার্চ, সোডিয়াম ইত্যাদি। এজন্যই চাই মাছের আঁশ, তরকারির খোসা, সাবানের প্যাকেট। জঞ্জাল চাই, বাঁচবার ও বাঁচাবার জন্য। জঞ্জালের মধ্যে দিব্যি বাড়ছিল ওরা। জীবনযাত্রাই পাল্টে দিয়েছিল এই উইশ। কিন্তু ঝামেলা বাঁধাল নতুন একটা সমস্যা। অতিরিক্ত পলিথিন আহার ক্ষতি করে দিল তাদের প্রজনন প্রক্রিয়ায়। গার্বেজের পঞ্চাশ ভাগই পলিথিন। পলিথিন হটাও আন্দোলন করে কোনো লাভ নেই। এমন সময় ডঃ হুই এবং তাঁর সহযোগীরা এই যুগান্তকারী আবিষ্কার করলেন। তারা প্রমাণ করলেন একমাত্র মানুষের মাংসেই আছে এমন এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন যা পলিথিন হ্যাজার্ডকে প্রশমিত করতে পারে এবং প্রজনন শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে পারে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি এখন মানুষ কিনছে।

বুকুনদের কমপ্লেক্সে আজ লটারি হল। লটারীতে উঠেছে B-3।তার মানে হল বুকুনদের ফ্যামিলি থেকেই একটি দেহ এই সমবেত জঞ্জালস্তুপের মধ্যে উৎসর্গ করে দিতে হবে। তিনদিন সময় আছে। পরিবেশবাদীদের স্বেচ্ছাসেবীরা বুকুনদের ফ্ল্যাট ঘিরে রেখেছে যাতে ওরা কেউ পালাতে না পারে। বুকুনদের ঘরে ঘনঘন ফোন আসছে। B-6, A-12, C-8 ইত্যাদিরা টেলিফোনে সমবেদনা জানাচ্ছে। কেউ বলছে কি আর করবেন সবই তো নিয়তি, কেউ বলছে আজ লটারিতে B-3 উঠেছে। এরপরে আমাদের নম্বরও তো উঠবে। কেউ বলছে মানবজাতির স্বার্থে আপনাদের এই আত্মদান। কেউ কিন্তু জিজ্ঞাসা করেননি আপনাদের মধ্যে কার বডিটা জঞ্জাল হচ্ছে? কারণ এই প্রশ্নটা এটিকেট বিরোধী। এটা B-3-র নিজস্ব ব্যাপার। B-3-র সাতশো স্কোয়ারফুটে ওরা তিনজন। হাতে তিনদিন সময়। গতমাসে D9 লটারিতে উঠেছিল। ওদের বাড়ি থেকে ও বাড়ির সবচেয়ে বুড়ো লোকটি ভলান্টিয়ার করেছে। এর আগে অন্যফ্ল্যাটে একটি অটিস্টিক বালিকাকে ফেলে দেয়া হয়েছিল।

বুকুন বলল, তোমরা আমাকেই ফেলে দাও ওই জঞ্জালে। আমার আই কিউ খুব কম। উইশ রচনা আমার আজও মুখস্থ হয়নি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *