১০. মাঘ

মাঘ

মাঘ মাস। নমশূদ্রদের কর্মহীন অবসরের মাস।

মাঘ মাসেও বিয়ের আমেজ চলত সমভাবে। চলত ফাল্গুন পর্যন্ত।

বিল এলাকার কিশোরী মেয়েদের কাছে মাঘ মাস আড়ম্বরপূর্ণ মাস। পুরো মাঘ মাসজুড়ে বিশেষ এক পার্বণে মেতে থাকত মেয়েরা। সে হলো ভিটে কুমারীর পুজো। মাঘ মাসের প্রথম দিনে প্রত্যেক বাড়ির উঠোনের কোণে তুলসীতলায় মেয়েরা মাটি দিয়ে গোলাকার করে তৈরি করত বেদি। সেখানে গোবর লেপে অধিষ্ঠান করত ভিটে কুমারী ঠাকুরানির আসন।

সন্ধ্যায় পাড়ার কুমারী মেয়েরা দলবেঁধে ভিটে কুমারীর আসন লেপে দিত। বিভিন্ন জায়গা থেকে আনত বুনোফুল, মেঠোফুল সংগ্রহ করে। সেই ফুল দিয়ে সাজাত বেদি। বেদীর সামনে পোঁতা হতে পাতাসুদ্ধ বড়ই গাছের ডাল। কাঁটাগুলোতে ফুল গেঁথে সাজাত তারা সেই বড়ই গাছের ডাল। বেদির চারপাশে জ্বালিয়ে দিত মাটির প্রদীপ। ধুপ-ধুনোর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত সারা গ্রামজুড়ে।

মেয়েরা সবাই দলবেঁধে ভিটে কুমারীর বেদির চারপাশে গোল হয়ে বসত। সমস্বরে গাইত নানা রকম গান। এক এক বাড়িতে গিয়ে এক একরকম গান। সময় হাতে থাকলে আবার সবগুলোই গাইত প্রতি বাড়িতেই পর পর—

ভিটে কুমোরীর মা লো ভিটে বেঁধে দে
তোর ছাওয়ালে করবি বিয়ে সাজনা এনে দে।
বুড়ি গেলো রে সাজনা আনতি পথে পড়ল খেয়া
সেই খেয়া ধুয়ে নিল চোতেন পুরির দেয়া।
চোতেন পুরির দেয়া না রে হাঁড়ে খালির বর
বর আসপি বর আসপি কুমোর খালি ঘর।

ওপার তে দাদার বউ পাও দ্যাখাইছে
এ পারে তে আমার দাদা মল গড়াইছে।
ও বালীর পাও তো চিকন চাকন
মল গড়াইছে বিলক্ষণ
দুর্গা ঠাকুরানির জামাই গো
বালীর জন্য আর কী আনিছো?
ঝাঁকে ঝাঁকে ছাওয়াল পাল, জাংলা ভরা তরু
গোলাভরা চাল ডাল, গোয়াল ভরা গরু।
ওপারের তে দাদার বউ কান দ্যাখাইছে
এ পারে তে আমার দাদা পাশা গড়াইছে।
ও বালীর কান ও তো চেকন চাকন
পাশা গড়াইছে বিলক্ষণ।
দুর্গা ঠাকরানির জামাই গো
বালীর জন্যে আর কী আনিছো?

বরই গাছ বরই গাছ
ঝাটোরায় (ঝাকড়া) দে
এক কুড়ি এটা (একটা) বরই
লিখে পড়ে দে…

(এভাবে দুই কুড়ি দুইটা, তিন কুড়ি তিনটা করে সাত কুড়ি সাতটা পর্যন্ত বরই লিখে পড়ে দেবার আবেদন করে গান শেষ করত)

সব শেষে ভিটের ঘটে ফুলজল দিয়ে প্রার্থনা গীত গাইত তারা সবাই মিলে—

ইবারের মতো যাও রে ঠাকুর ফোট পচার নিয়ে
আবার তুমি আইসো ঠাকুর ত্যাল সিঁদুর নিয়ে
আমার মায়ের ভালো করো, ভালো করো বাবার
ভাইবোনরে ভালো করো, ভালো করো আমার
তিল দেবো, তুলসী দেবো, তোমায় দেবো ফুল
মনে তুমি নিয়ো নাকো আমার কোনো ভুল
ইবারের মতো যাও রে ঠাকুর ফোট পচার নিয়ে
আবার তুমি আইসো ঠাকুর ত্যাল-সিঁদুর নিয়ে।।

প্রার্থনা গীতও সবসময় একরকম হতো না। গ্রামভেদে কথা বা সুর সামান্য বদলে যেত—

ইবার যাও রে ঠাকুর ফোট পচার নিয়ে
আর বছর (সামনের বছর) আইসো ঠাকুর ধান কলই নিয়ে।
ইবার যাও রে ঠাকুর জ্বর-জারি নিয়ে
আর বছর আইসো ঠাকুর শঙ্খ সিঁদুর নিয়ে।
ইবার যাও রে ঠাকুর বিপদ-আপদ নিয়ে।।

আর বছর আইসো ঠাকুর ধানদূর্বো নিয়ে ॥ গান শেষ করে মেয়েরা উঠে পড়ে। দলবেঁধে যায় পাশের বাড়ি। তারপর একে একে গ্রামের সব বাড়ি। সমস্বরে গান গায় তারা। সারা মাঘ মাস ধরে প্রতি সন্ধ্যায় চলত এই গানের আসর। গোটা সন্ধ্যাজুড়ে তুলসীতলা মুখরিত থাকত ভিটে কুমারীর গানে।

মাঘের শেষ দিনে বরই গাছের সেই ডালসহ ভিটে কুমারীর বেদি উঠোন থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো মাঝ মাঠে। রাখা হতো কোনো এক বৃক্ষতলে। মাঘ গড়িয়ে এসে যেত ফাল্গুন। শেষ ফল্গুনের গোধূলিলগ্নে সেই বৃক্ষতলে গ্রামের সমস্ত কিশোর-কিশোরী এসে জড়ো হতো, বনভোজনের আয়োজনে মেতে উঠত তারা। মাঠের সব রাখালদের নিমন্ত্রণ করা হতো। আদর করে ডেকে ডেকে তাদেরকে খাওয়ানো হতো। ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রাণের টানে গড়ে উঠত বন্ধুত্বের সম্পর্ক, ভাই-বোনের সম্পর্ক, গড়ে উঠত আত্মীয়তা। একে এরা বলত ‘ফাগুন গোধূলির বনভোজন’।

.

মাঘের শীতে বাঘ কাঁদে।

ঠকঠকে শীতে নমশুদ্র জীবন হতো বিপর্যস্ত। কুয়াশায় ঢেকে থাকত গোটা মাঠ। পুরো শরীর ঢাকার মতো পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র থাকত না দরিদ্র নমশূদ্র কৃষকদের ঘরে। বড়রা ছেঁড়াছুটো পুরনো চাদর, কাঁথা গায়ে দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা কাটাত। বাচ্চাদের গায়ে জড়িয়ে দেয়া হতো মায়ের পুরনো রঙচটা কাপড়। গিটু বাঁধা থাকত গলার কাছে।

মাঘের দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সন্ধ্যা নেমে আসত। মানুষ, গরু, পশু, পাখি, গাছ, লতাপাতা সবই যেন কেমন কুচড়ি মুচড়ি ধরে আসে। নতুন লেপ তৈরি করার মতো সামর্থ্য নমশূদ্রদের থাকত না। পুরনো শাড়ি কাপড়ের মধ্যে শিমুল তুলো পুরে নিজেরাই সেলাই করে বানিয়ে নিত লেপ। সেই লেপ গায়ে দিয়ে বৌ, ছেলে, মেয়ে নিয়ে জড়াজড়ি করে কাঁপতে কাঁপতে কাটত তাদের লম্বা শীতের রাত।

ভোরবেলায় উঠোনের কোণে পাটখড়ি, নাড়া বা খড়কুটো জেলে আগুন পোহাত তারা। রোদ না ওঠা পর্যন্ত চলত এভাবেই। আবার আগুনের কুণ্ড জ্বালা হতো সন্ধ্যায়। গোল হয়ে বসে হাত-পা গরম করে নিত। আগুনের কুণ্ডের মধ্যে ছোলা, মটরশুটি, মিষ্টি আলু পুড়িয়ে খেত তারা।

মাঘের প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ সইতে না পেরে হতদরিদ্র বুড়ো বা বুড়ির মৃত্যুর খবরও কানে আসত কখনও কখনও। প্রচণ্ড সেই শীতের ভিতরেও মাঝে মধ্যে হঠাৎ মেঘ জমে বৃষ্টি নেমে আসত। বৃষ্টি ভেঙে শীতের কাঁটা আরও ধারালো হয়ে বিধত। শীতকাঁপা শরীরেও কৃষককুলের মুখে ভাসত স্বস্তির চিহ্ন। আনন্দে পুলকিত হতো মন। তাদের মুখে মুখে ফিরত–

যদি বর্ষে মাঘের মেষ
ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ।

রুগ্‌ণ খরা ফসলের খেতগুলো বৃষ্টি পেয়ে তরতাজা হতো। খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ত কৃষকের চোখে-মুখে। কৃষাণীর হৃদয়ের গভীরে থৈ থৈ করে বেড়াত সুখের গভীর অনুভূতি।

গ্রামে গ্রামে ওস্তাদ রেখে চলত লাঠি-সড়কি খেলার প্রশিক্ষণ। মাঘী পুর্ণিমার আড়ঙে হতো লাঠি খেলার প্রতিযোগিতা। সব নমশূদ্র গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে থাকত ঢাল, সড়কি, রামদা। যদি ডাকাতের আক্রমণ হতো, অথবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের সাথে গণ্ডগোল বাঁধত তখন রে… রে… রে… করে হাঁক দিলেই এলাকার সব মানুষ একজোট হয়ে ঢাল-সড়কি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ত। হাঁক কেন দেয়া হয়েছে, সেসব জানাজানি হবে পরে। আগে শত্রু ঠেকাতে হবে। শত্রুকে মেরে তক্তা বানিয়ে পদতলে এনে হাজির করতে হবে। কারণ জানা হবে তার পরে; কর্মশেষে। এমনই ছিল তাদের একতা, ছিল দলগত ভালোবাসা। ছিল সম্প্রদায়ের মানুষের উপর বিশ্বাস। তারা ভাবত হাঁক যখন দেয়া হয়েছে, নিশ্চয়ই অন্যায়ভাবে কেউ এসে নমশূদ্রদের সাথে ঝামেলা বাধিয়েছে। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত, নমশূদ্ররা গায়ে পড়ে কারো সাথে ঝামেলা বাধাতে যায় না। হাঁক দিতে বাধ্য করা হয়েছে তাদের।

এই সময় থেকেই বিল এলাকার নমশূদ্ররা সতর্ক হয়ে যেত। বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাবের ভয় গ্রাস করত তাদেরকে। গুটি বসন্ত ছোঁয়াচে রোগ। কোনো এক বাড়িতে শুরু হলে রোগ ছড়িয়ে যেত গ্রামে। তারপর মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ত গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এই রোগের তখন কোনো চিকিৎসা ছিল না বলে মারা যেত অসংখ্য মানুষ। রোগ শুরু হলে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে চলে যেত এলাকা ছেড়ে।

বসন্ত রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে রোগ শুরুর আগেই নমশূদ্ররা মা শীতলার পুজো দিত। মাঘ মাসের ষষ্ঠ দিনে ভক্তিভরে তারা করত এই পুজো। শ্রাবণ মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতেও এই পুজো হতো কোথাও কোথাও।

বসন্ত এবং যাবতীয় চর্ম রোগের দেবী শীতলা।

শীতলা লৌকিক দেবী। স্কন্দ পুরাণে মা শীতলার নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তিনি পৌরাণিক দেবী হিসাবে পরিগণিত হন। শীতলা দেবী শ্বেতবর্ণা এবং তার দুই হাত। এক হাতে পূর্ণকুম্ভ বা জলের কলস। অন্য হাতে সার্জনী ধারণী বা ঝাঁটা। গ্রামের আপামর নমশূদ্রদের বিশ্বাস ছিল, কলস থেকে সম্মার্জনীর মাধ্যমে মা শীতলা অমৃতময় শীতল জল ছিটিয়ে আরোগ্যসূধা দান করেন এবং দুস্থ-রোগাক্রান্তদের রোগ, তাপ, শোক দূর করেন। বসন্ত রোগের জ্বালা নিবারণ করেন বলে শীতলা নামে পরিচিত এই দেবী। মা শীতলার মন্দির যে সব গ্রামেই থাকত তা নয়। প্রয়োজনে স্থানীয় কালী মন্দিরেও মা শীতলার মূর্তি রেখে পুজো দিত গ্রামের মানুষ।

শীতলা দেবী কুমারী। মাথায় কুলাকৃতির মুকুট। উপবিষ্ট থাকেন গর্দভের পিঠে। নমশূদ্ররা সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস করত, মা শীতলার বাহন বলে গাধার কখনও বসন্ত রোগ হয় না। মায়ের কাছে থাকে নিমপাতা। নিম লোগ প্রতিরোধকারী উদ্ভিদ। দেবী শীতলাকে ঠাকুরানি, জাগরানি, করুণাময়ী, দয়াময়ী ইত্যাদি নামে ডাকত তারা।

বসন্ত রোগের নাম মুখে নিত না নমশূদ্ররা। এই রোগ কারো হলে বলত–মায়ের দয়া হইছে।

সেই দয়া নিরাময়ে দেবী শীতলাকে পূজা নিবেদন করত সবাই।

পুজো মন্দিরে বা কোনো পূজার নির্দিষ্ট স্থানে পুরোহিতের মাধ্যমে শীতলা পূজা করা হতো। পুজোর পদ্ধতি অন্যান্য পূজোর মতোই প্রায়। তবে এই পূজায় ঠান্ডা জাতীয় ফলের প্রয়োজন হতো। পেঁপে, নারকেল, তরমুজ, কলা ও অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় উপকরণ দেবীর উদ্দেশে উৎসর্গ করা হতো। সকল শ্রেণির মানুষই এই পুজোয় অংশগ্রহণ করত।

শীতলা দেবীর পূজা করত বাওয়ালিরা। প্রত্যেক গ্রামে পূজার জন্য বাওয়ালি নির্দিষ্ট থাকত। সেই নির্দিষ্ট বাওয়ালি ব্যতীত অন্য বাওয়ালি দিয়ে পূজা দিলে ক্ষতি হতো। সারারাত ধরে চলত পূজা। তাদের বিশ্বাস ছিল, পূজায় তুষ্ট হয়ে শীতলা দেবী গর্ধভের পিঠে চড়ে গোটা এলাকা পাহারা দিয়ে বেড়াবেন। বসন্ত রোগ আর এসে হানা দিতে পারবে না।

শীতলা দেবীর পূজায় গড়া হতো একটা উঁচু বেদি। বেদির সামনে গর্ত করে জ্বালানো হতো আগুন। সেই আগুনে মুঠো মুঠো ধূপ ছুঁড়ে দেয়া হতো। কুণ্ডলী পাকিয়ে সৌরভ ছড়িয়ে সেই ধোয়া উপরের দিকে উঠে যেত। একে একে ধ্যানে বসত মানুষ। এভাবেই চলত সারারাত। সবশেষে ধ্যানে বসত প্রধান বাওয়ালি। পুরো সময় ধরেই তারা চারিদিকে ঘটির জল ছিটাতো আর ঝাটা হাতে দৌড়ে রোগ তাড়াত। উপস্থিত লোকজন পরম বিশ্বাসে সেই ছিটানো জল মাথায় নিত।

কলেরা রোগের জন্য নমশূদ্ররা ওলাদেবীর পুজো দিত। ওলাদেবীর পূজার নৈবেদ্য হলো সন্দেশ, বাতাসা ও পান-সুপারি। কোথাও কোথাও আতপ চাল ও পাটালি গুড়ও দেয়া হতো। এ পূজায় বিশেষ কোনো মন্ত্র নেই। পুরোহিত পূজার সময় “এসো মা ওলাদেবী, এসো মা ওলাদেবী” বলে নানাভাবে ডাকাডাকি করত।

পৌষ-মাঘ-ফাল্‌গুন জুড়েই বিল এলাকায় বিরাজ করত ঠান্ডা এবং শুকনো পরিবেশ। এই সময়ে আকাশে মেঘ থাকত না তেমন একটা। বৃষ্টিও হতো না। পুরো মাসজুড়ে বসত নানা ধরনের গানের আসর। পালাগান, কীর্তন, রামায়ন, দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদ কত রকমের গান। কখনও গ্রামের মানুষ মিলে। কখনও বা গৃহস্থর নিজ উদ্যোগে। আসর না বসলেও মনের সুখে ঘরের দাওয়ায় বসে শুধু খোল-করতাল বাজিয়েও গান গাইত তারা।

বিচ্ছেদ গান নমশূদ্রদের হৃদয়ের গান। দক্ষিণবঙ্গের গোটা বিল এলাকা জুড়ে নমশূদ্রদের মধ্যে বিজয়-বিচ্ছেদ ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। সবার মুখে মুখে ফিরত নড়াইলের বিজয় সরকারের গান। গানের সহজ মর্মকথা কথা আর হৃদয় আকুলকরা সুর তাদের মন ছুঁয়ে যেত। যাদের হৃদয়ে বউ, সোয়ামী, সন্তান হারানোর শোক, তাদের বুকের ভিতর কষ্টবোধ উথলে উঠত। ব্যাকুল হয়ে কেঁদে বুক ভাসাত তার। হালকা হতো মন। জুড়ত হৃদয়।

আকাশে-বাতাসে করুণ আকুতি নিয়ে ভেসে বেড়াত বিজয় সরকারের গান—

পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী, একদিন ভাবি নাই মনে
সে কি আমায় ভুলবে কখনো, একদিন ভাবি নাই…
খেলতে পাখি সোনারই খাঁচায়
বলত কত কি আমায় বসে গুপ্ত নিরালায়
স্ফটিকেরই বাটি ভরে কত খাবার দিতাম থরে থরে
নিঠুর পাখি খাইতো আনমনে
একদিন ভাবি নাই….

জংলা পাখি করল সর্বনাশ, এখন শুধুই হায় হুতাশ এখন
কে এমন দরদি আছে, সে বলে দেবে আমার কাছে
পাখি আমার গেছে কোন বনে
একদিন ভাবি নাই…

আগে যদি জানতাম পাখির মন, ও সে করিবে এমন
তারে দিতাম না এ মন, বনের পাখি বনে গেল
আমার বুকে দিয়ে বিষম শেল
তারে আর কি ফিরে পাব জীবনে
একদিন ভাবি নাই….

বিজয় সরকারের এমনি অনেক জনপ্রিয় গানের সুর নমশূদ্রদের মুখে মুখে ফিরত। ভেসে বেড়াত ঘাটে, মাঠে, বিলের বাতাসে।

এই পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে…

তুমি জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা

দরদিয়া রে..
কোন দেশে যাব তোর লাগিয়া রে..

নকশিকাঁথার মাঠে রে..
সাজুর ব্যথার আজো কাঁদে রে
রুপাই মিয়ার বাঁশি..

আমার জনম গেল বিনা সাধনে…

জানিতে চাই দয়াল তোমার নামটি কী…

কুল ছাড়া কলঙ্কিনী…

কী সাপে কামড়ালে সাপুড়িয়া…

পরবাসী হইয়া রে..

১০

পরের জায়গা পরের জমি…

১১

যার লাগিয়া ঝরে আঁখি, সে কি কান্দে আমার লাগিয়া…

১২

আমার জীবনের আর আশা নাই, বাঁচিবার আর আশা নাই…

গানের সুর কেঁপে কেঁপে উচ্চগ্রামে উঠত। আকাশে-তাসে ছড়িয়ে পড়ত প্রিয়জনকে হারানোর হাহাকার। বিচ্ছেদ বেদনাবিধুর সুরে উথলে উঠত শোক। বিদীর্ণ হতে হৃদয়।

বিজয় সরকারের উপলব্ধি ছিল–

‘বেদ-বেদান্ত-কুরআন-পুরাণ পড়ে কী হবে! মানুষের ভালোবাসার অনুভূতিই হলো প্রকৃত ধার্মিকের লক্ষণ।’

ভালোবেসে কবিয়াল বিজয়কে সবাই ডাকত ‘পাগল বিজয়’। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ভাবের পাগল। সবার মনের ভাব নিজের মনে ধারণ করে তিনি একের পর এক রচনা করে গেছেন বিচ্ছেদ গান। মানুষের মনের সার্বজনীন ভাব পাগল বিজয়ের গানে সুর হয়ে বেরিয়ে আসত। মনে হতো, যেন নিজের মনের একান্ত কথাটি যেন শুনছে সে বিজয়ের গানে।

নমশূদ্রদের কণ্ঠে কণ্ঠে ফিরত নানা ধরনের দেহতত্ত্ব গান—

গুরু আমার উপায় বলো না
কপাল পোড়া জনম দুঃখী আমি একজনা।
আমার দুঃখে দুঃখে জনম গেল
সুখের দিন আর পেলাম না।
গুরু উপায় বলো না…

কেন এসেছিলাম এই ভবের বাজারে
ছয় চোরাতে চুরি করল বাঁধল আমারে।
তারা চুরি করে খালাস পেল আমায় দিল জেলখানায়
জনম দুঃখী আমি একজনা …

শিশুকালে মরেছে মাতা
গর্ভে রেখে মোল পিতা দেখতে পেলাম না
আমার কে করবে লালনপালন
কে বা দিবে সান্ত্বনা।
জনম দুঃখী আমি একজনা..

মন তোর এ জীবনের ভরসা আর কয়দিন বল
হরির নাম করো রে নিদানের সম্বল।
এ নাম শয়নে স্বপনে ঘুমে জাগরণে
কেবল হরি বোল হরি বোল হরি বোল…
হরির নাম করো রে নিদানের সম্বল…

ও মনো রে..
বয়স হেঁটিল আয়ু যে টুটিল
সমন কিঙ্কর আসিয়া জুটিল ব্যাধি রূপেতে…
ও সে কফ রূপেতে কোন মুহূর্তে এসে
মন তোর সেকাল ভৈরব হয় প্রবল।
হরির নাম করো রে…

কাল সমন যার আজ্ঞেকারী
কালিন্দি যমুনা পুলিন বিহারী
সেই গোকুলের চাঁদ
ও সে অদ্বৈত হংকারে এসে এই নদে পুরে
নেচে নেচে বলে হরিবোল…

দয়াল গুরু কৰ্ণরকে ধরে চলো যাই ভবপাড়ে
নিতাই জাতির বিচার করে নারে
পরম দয়াল অবতারে
চল যাই ভবপাড়ে…

হরির নাম নিয়ে করো নৌকা সোজা
ধরিস নে আর পাপের বোঝা
মন তোর এখনই তরী জাগিয়ে উঠবে
এখনই ধরবে প্রেমের ধ্বজা।

ও রে মন ষোল দাড়ির পানসিখানা
ষোলআনা সুদ বোঝাই করা
এবার অনুরাগের যোগেযাগে
যোগমায়াকে জাগা জাগা
এবার জাগালে দেবী
দেখতে পাবে ঘরের মানুষ তরতাজা।
ঘরের কীর্তন
তুমি দয়া করে এসো প্রভু
এসো এই অধীনের হৃদমন্দিরে
আমার হৃদয় মাঝে উদয় হও
নিরানন্দ বিদায় দাও
আনন্দ দাও প্রভু আমারে।
এসো এই অধীনের…

তুমি এই আসরে এসো প্রভু, এসো নবদ্বীপের চাঁদ
আমি নিরানন্দে বাঁচি না হে, আনন্দ দেও আজ আমার
আরে আরে ও গৌরাঙ্গ, আনন্দ দেও আজ আমার।

ঝাঁঝ মৃদঙ্গ খমুক মঞ্জুরি, তোমার যন্ত্র তোমার সমৰ্পণ করি
তোমার যন্ত্র তুমি ধরি, তুমি করো আজ তোমার গান।

আমি বড় ভুল করেছি, বড় ভুল করেছি মূলে
দয়াল গুরু আমার যে ধন দিল সব ফেলেছি অকূল জলে।

না জেনে ঢাকার সন্ধান, ঢাকাতে দিলাম দোকান
জানি না তার আদান-প্রদান
সব গেল মোর ভুলে

কাঙাল বেশে কার উদ্দেশ্যে কে এলো রে নদে পুরি
তার নাম জানি না ধাম চিনি না চেনা চেনা মনে করি
কে এলো রে নদের পুরি..

দেখিতে সে গৌড় বরন, ধীরে ধীরে করে গমন
মনের ভাব কী বুঝতে নারি
আবার কার কথা যেন মনে করি ধুলায় দিচ্ছে গড়াগড়ি
কে এলো রে..

পদ্ম আর গড়াই নদীর অববাহিকাজুড়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরত গুরু লালন ফকিরের আধ্যাত্মিক গান। নমশূদ্ররাও ছিল পরম ভক্ত লালন ফকিরের। তারা গাইত–

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়
তারে ধরতে পালে মনোবেড়ি দিতাম পাখির পায়..

মন তোর গেল হুজুরে বাকির কাগজ…

গুরুর ভাব জানি না প্রেম জানি না, দাসি হতে চাই চরণে

মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সাথে…

জাত গেল জাত গেল বলে…

বাড়ির কাছে আরশি নগর, সেথায় পড়শি বসত করে
এক ঘর পড়শি বসত করে…

আমি অপার হয়ে বসে আছি…

তিন পাগলের হলো মেলা নদে এসে…

লালনের এমনি আরও অনেক জনপ্রিয় গান ফকিররা বাড়ি বাড়ি এসে গাইত। ভিক্ষা মাঙত। সেই সুর গেঁথে যেত নমশূদ্রদের মনে। আপন মনে তারাও ধরত সেই সব গান রাস্তাঘাটে, মাঠে।

রাধা বিচ্ছেদের গুরুত্বও কম ছিল না নমশূদ্রদের মনে–

ওরে ও আমার উপাসনার বন্ধু
কোথায় গেলা রে আমারে পাথারে ভাসাইয়া
কোথায় গেলা প্রাণের বন্ধু ঘর আঁধার করিয়া
এখন আলো শূন্য ঘরে আমি রব কী করিয়া
আমার উপাসনার বন্ধু …

মন নিলা প্রাণ নিলা বন্ধু ভালোবাসা দিয়া
যাবার বেলা কেন বন্ধু না গেলা বলিয়া রে
উপাসনার বন্ধু রে…

আগে যদি জানতাম বন্ধু যাবা রে ছাড়িয়া
দুই চরণ বান্ধিয়া রাখতাম আমি মাথার কেশ দিয়া রে
উপাসনার বন্ধু রে…

প্রাণবন্ধুর লাগিয়া কলঙ্কিনী হইলাম রে
এ জীবন ত্যাজিব আমি যমুনায় ঝাঁপ দিয়া

ও সখী রে
সরলে গরল মিশাইলাম অমত বলিয়া
এখন বিষে অঙ্গ জাইরা নিল অনল উঠিল জ্বলিয়া রে…
কলঙ্কে ঘিরিল ঘোর কলঙ্কে নিল ছাইয়া
আমি পরের জন্য প্রাণ কাঁদাইলাম হায় হায়
পরকাল হারাইয়া রে…

ও সখী রে
সাগরে নামিলাম অঙ্গ শীতল বলিয়া সখী শীতল বলিয়া
সেও সাগর শুকাইয়া গেল আমারে দেখিয়া রে।
এ জীবন ত্যাজিব আমি…

আমি বন্ধু প্রেম আগুনে পোড়া
প্রাণসখী রে আমি মলে পোড়াস নে তোরা
 সখীরে আমি মলে না পোড়াইও
যমুনাতে না ভাসাইও
তমাল ডালে বেঁধে রাখিস তোরা
সই গো সই বন্ধু যেদিন আসে দেশে
বলিস তোরা বন্ধুর কাছে
তমাল শাখে বাঁধা আছে তোমার প্রেমের মড়া
আমি মলে পোড়াস নে তোরা ॥

কুমোদ কান্তের বিচ্ছেদ গানও মুখে মুখে ফিরত তখন নমশূদ্রদের–

আমার মনের দুঃখ কইবার আগে আঁখি যায় ঝরে
কথা বলতাম প্রাণ খুলে সম দুঃখের দুঃখী পেলে।
শুনিলে পাষাণ বিধরে (গলে যায়)
আঁখি যায় ঝরে…

একদিন কালাচাঁদের বাঁশি শ্রবণেতে বসি পাগল করিল মোরে
আমি মুনিয়া বাঁধীর গান হরে নিল মনপ্রাণ
সে যে ঘরে রইতে দিল না রে
আঁখি যায় ঝরে…

একদিন যমুনার কূলে কদম্বেরই তলে আড়ালে হেরিলাম তারে
আমি হেরিয়া নয়ন বাণ আকুল হইল প্রাণ
সে যে কী যেন কী করল আমারে।
আঁখি যায় ঝরে…

একদিন ঘুমের ঘোরে দেখিলাম স্বপনে কালা আমার হিয়ার মাঝারে
ও দীন কুমোদ কান্তের বাণী তুমি শোনো বিনোদিনী
এসব হয় কেবল প্রেমের বিকারে।
আঁখি যায় ঝরে…

সে যে আমার মন নিয়াছে নাই বুঝি তার মনে
সখী রে… আর কি আমার সেই দিন আছে

সুধা সিন্ধু শুকাইয়া গেছে প্রেম বিহনে
সখী রে আর কি আমার সেই দিন আছে
সুধা সিন্ধু শুকায়ে গড়েছে কালা বিহনে।
আমার অন্তর খুলে দেখোনা সখী গো
ও আমার অন্তর পোড়া প্রেম আগুনে
নাই বুঝি তার মনে..

সখী বৃন্দাবনে নাই সুখ বসন্ত
মন জেনে এলো না কান্ত এতদিনে
সে যে এমন প্রেমে কেমন করে সখী গো
নিঠুর মন বাঁইধাছে কোন পাষাণে।
নাই বুঝি তার মনে…

সখী রে গোপনে গোপনে আর কাঁদব কত
দুই-এক দিনের কথা নয়, হলো বহুদিন গত
আমি প্রতিদিন তারে চাই না সখী গো
দেখা দিবে মাত্র দুই-এক দিনে।
নাই বুঝি তার মনে…

আমি আর কি দেখা পাব বন্ধু রে…
আমার দিনে দিনে তনু হলো ক্ষীণ
কেবল ভাবিতে তাহারে
আর কি দেখা পাব বন্ধু রে…

দু নয়নের জলে আমার বক্ষে বহে নদী
এতদিনে ক্ষয় হইয়া রে যাইতাম,
পাষাণ হইতাম যদি
আমার হাড়-মাংস করিল ফাঁসা রে
ওই না অন্তর কাঁটা পোকে রে
আমি আর কি দেখা…

হইতাম যদি জলের কুমির খুঁজিতাম জলে
ও আমি হইতাম যদি বনের বাঘ রে
খুঁজিতাম জঙ্গলে
হইতাম যদি উড়া পাখি রে
উড়ে দেখতাম জগৎ ভরি রে
আমি আর কি দেখা পাব তারে…

দেহতত্ত্ব গানের আবেদনও কম ছিল না নমশূদ্রদের কাছে। গোসাই বলাইচাঁদের দেহতত্ত্ব গান বেশ জনপ্রিয় ছিল তখন বিল এলাকার নমশূদ্রদের কাছে—

মন তোর এ জীবনের ভরসা আর কয়দিন বল
হরির নাম করো রে নিদানের সম্বল।
এ নাম শয়নে-স্বপনে ঘুমে-জাগরণে
কেবল হরি বোল হরি বোল হরি বোল..
হরির নাম করো রে নিদানের সম্বল…

ও মনো রে… বয়স হেঁটিল আয়ু যে টুটিল
সমন কিঙ্কর আসিয়া জুটিল ব্যাধি রূপেতে…
ও সে কফ রূপেতে কোন মুহূর্তে এসে
মন তোর সেকাল ভৈরব হয় প্রবল।
হরির নাম করো রে…

কাল সমন যার আজ্ঞেকারী, কালিন্দি যমুনা পুলিন বিহারী
সেই গোকুলের চাঁদ
ও সে অদ্বৈত হুংকারে এসে এই নদে পুরে
নেচে নেচে বলে হরিবোল…
তার ভাই নিতাইকে সঙ্গে করে নেচে নেচে বলে হরিবোল।
হরির নাম করো রে …

ও মনো রে… যেমন পদ্মপত্রের জল
ওইরকম হয় জীবের জীবন সতত চঞ্চল
ও সে রাকর্মকাণ্ডধরা চাঁদের মতো মৃত্যু হয় সতত
মন তোর জীবাত্মা করিতেছে টলমল
হরির নাম করো রে…

ও মনো রে… গোকটি ধামে গ্রহ ও সে কাশী
মাঘে প্রয়োগে কোটি কল্পবাসী
তবু হরি নামের তুল্য নয়
ও সে সুমেরু সমান স্বর্ণ করিলে দান
তবু হরি নামের তুল্য আর নয় রে ফল।
হরির নাম করো রে…

ও মনো রে.. গোসাই বলাইচাঁদ কয়
এসব ধর্ম কর্ম ঠেলে ফেলে দিয়ে হরি হরি বল
হরি নামে পাগল হয়ে নাচিয়ে নাচিয়ে
এবার রূপের হাটে শ্রীরূপ চল রে চল
হরির নাম করো রে নিদানের সম্বল।

হরির নাম নিয়ে কর নৌকা সোজা
ধরিস নে আর পাপের বোঝা
মন তোর এখনই তরী জাগিয়ে উঠবে
এখনই ধরবে প্রেমের ধ্বজা।

ও রে মন মোল দাঁড়ির পানসিখানা
ষোলআনা সুদ বোঝাই করা
এবার অনুরাগের যোগে যাগে
যোগমায়াকে জাগা জাগা
এবার জাগালে দেবী
দেখতে পাবে ঘরের মানুষ তরতাজা।

ঘরের কীর্তন
তুমি দয়া করে এসো প্রভু
এসো এই অধীনের হৃদমন্দিরে
আমার হৃদয় মাঝে উদয় হও
নিরানন্দ বিদায় দাও
আনন্দ দাও প্রভু আমারে।
এসো এই অধীনের…

কী দিয়ে চরণ করিব পূজন ও
স্মরণশক্তি আমার নাই ভক্তিজ্ঞান
আমার জ্ঞান দিতে ভুলো না পোড়া মনের বাসনা
করুণা করো প্রভু আমারে
এসো অধীনের…

বিষয়ের মায়াজালে
তোমায় রলাম ভুলে
মানব তরী লয়ে পড়েছি অকূলে
আমি ভেবে দেখি নিরুপায়
মানবতরী ডুবে যায়
ধরিয়ে তোল প্রভু আমারে।
এসো অধীনের…

দয়াল গুরু কর্ণধরকে ধরে চলো যাই ভবপাড়ে
নিতাই জাতির বিচার করে নারে
পরম দয়াল অবতারেচলো যাই ভবপাড়ে…

মারলি কাঁধা ওরে মাধা
নিতাই চাঁদের শিরো পরে..

আরও ছিল বিভিন্ন ধরনের দেহতত্ত্ব গান—

তুমি এই আসরে এসো প্রভু এসো নবদ্বীপের চাঁদ
আমি নিরানন্দে বাঁচি না হে আনন্দ দ্যাও আজ আমার
আরে আরে ও গৌরাং আনন্দ দ্যাও আজ আমার।
ঝাঁঝ মৃদঙ্গ খমুক মঞ্জুরি, তোমার যন্ত্র তোমার সমৰ্পণ করি
তোমার যন্ত্র তুমি ধরি, তুমি করো আজ তোমার গান।

আমি বড় ভুল করেছি, বড় ভুল করেছি মূলে
দয়াল গুরু আমার যে ধন দিল সব ফেলেছি অকূল জলে।
না জেনে ঢাকার সন্ধান, ঢাকাতে দিলাম দোকান।
জানি না তার আদান-প্রদান
সব গেল মোর ভুলে…

কাঙাল বেশে কার উদ্দেশ্যে কে এলো রে নদে পুরি
তার নাম জানি না ধাম চিনি না চেনা চেনা মনে করি
কে এলো রে নদের পুরি…

দেখিতে সে গৌড় বরন, ধীরে ধীরে করে গমন
মনের ভাব কী বুঝতে নারি
আবার কার কথা যেন মনে করি ধুলায় দিচ্ছে গড়াগড়ি
কে এলো রে নদের পুরি …

এমনিভাবে গানে গানে ফুরিয়ে যেত নমশূদ্রদের জীবনধারা থেকে আরও এটা মাঘ মাস।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *