7 of 8

আবার উত্তর

আবার উত্তর

আবার কল্যাণীয়াসু,

পত্রের আড়ালে আরও দুটো গল্প অবশ্যই এবার বলব। তবে তার আগে একটু নিজের সাফাই গাইছি।

দার্শনিকেরা বলেন, একই নদীর জলে দু’বার ডুব দেওয়া যায় না। একটি ডুবের থেকে পরের ডুবের মধ্যে অনেক জল গড়িয়ে যায় নদীস্রোতে, পিছনের জল এগিয়ে আসে। দ্বিতীয়বার ডুবের সময় একই জল থাকে না।

ঠিক সেইরকমই একই গল্প দু’বার বলা যায় না। একই রসিকতা দু’বার করা যায় না। সময় এবং পরিবেশ অনুযায়ী, রচনার সময় লেখকের মনোভাব অনুযায়ী কাহিনী বদলিয়ে যায়। বদলিয়ে যায় নাম-ধান, স্থান, কাল, চরিত্রের লিঙ্গ ও বয়েস।

তবে সব কাহিনীর খোল-নলচে কিন্তু আগাগোড়া বদলিয়ে দেওয়া যায় না।

এই পুরনো গল্পটা ধরা যাক। সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে নতুন বউ হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইছে। স্বামী অফিস থেকে ফিরে বাড়ি ঢুকতে গিয়ে বউয়ের গান শুনে বাইরের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছে। একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে।

পাড়ার একটি ছেলে বলল, ‘দাদা, বাড়ি যাবেন না? দাদা বললেন, ‘তোমার বউদির গানটা শেষ হোক।’

‘বউদির গান গাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করার মানা আছে বুঝি?’ ছেলেটির সরল প্রশ্ন।

দাদা বললেন, ‘আরে তা নয়। বউদির ওই নাকি সুরে গান শুনছ না? আমি বাড়ির মধ্যে থাকলে তোমরাই বলবে, দাদা বউদিকে পেটাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বধূ নির্যাতনের মামলায় পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে।’

এই গল্পের রং বদল করা খুব কঠিন। পাত্রকে পাত্রীর ভূমিকায় এবং পাত্রীকে পাত্রের ভূমিকায় দেখালে গল্পের দফারফা হয়ে যাবে।

বিপরীতক্রমে এই গল্পটি দেখুন। এক সুবেশ ভদ্রলোককে তাঁর বন্ধু বলেছিলেন, ‘ভাই তোমার দর্জির ঠিকানাটা আমাকে একটু দেবে?’ দ্বিধাগ্রস্ত সুবেশ ভদ্রলোক বললেন, ‘তা দিতে পারি শুধু এক শর্তে, আমার ঠিকানা তুমি ওকে দেবে না।’

বলা বাহুল্য, দর্জির কাছে ভদ্রলোকের প্রচুর ধার। দর্জিকে গয়নার দোকান করে, সুবেশ ভদ্রলোককে সালংকারা মহিলা করে এ-গল্প ওলট পালট করা যায়। যেমন আরেকটা গল্প।

বনমালী তার দয়িতাকে বলেছিল, ‘দ্যাখো, আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা তুমি কিন্তু গোপন রেখো। খুব বেশি চাউর করতে যেও না।’

দয়িতা বলল, ‘আমি কাউকেই কিছু বলব না। শুধু আমার বন্ধু মালতীকে বলব।’

বনমালী কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে বলল, ‘আবার মালতী কেন?’

দয়িতা বলল, ‘মালতী বলেছিল, বিশ্বসংসারে এমন কোনও উল্লু নেই যে তোকে বিয়ে করবে। এবার বিয়ের খবরটা দিয়ে মালতীর থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেব।’

এ গল্প কিন্তু যত ইচ্ছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা যায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *