6 of 8

ভোজসভা শেষে বক্তৃতা

ভোজসভা শেষে বক্তৃতা

টোস্ট বলতে আমরা অল্প বয়সে এক ধরনের বিস্কুট বুঝতাম। আটার চেয়ে ভুষি বেশি দিয়ে এবং খুব সম্ভব অল্প গুড় কিংবা চিনির গাদ দিয়ে তৈরি বড় বড় বিস্কুট। আমাদের ছোটবেলায় দাম ছিল এক পয়সা, কি দু’পয়সা।

অনেক লোক এটাকে বলত লেড়ে বিস্কুট। কেউ কেউ বলত ডগ বিস্কুট। অবশ্য কুকুরের খাবার বিস্কুট ভেবে এই নাম বলা হত। কিন্তু সাহেবরা যাকে ডগ বিস্কুট বলেন, সে একটু আলাদা জিনিস। কুকুরদের জন্যে তৈরি। বেশ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম আছে। আমি গোপনে খেয়ে দেখেছি, বেশ সুস্বাদু।

আজকাল ওই টোস্ট বিস্কুট আবার খুব চালু হয়েছে। অনেকেই খাচ্ছে। মধ্যবিত্তের চায়ের টেবিলে পৌঁছে গিয়েছে। বড় বড় বিস্কুট কোম্পানি পর্যন্ত টোস্ট বিস্কুট তৈরি করছে। ভাল ব্রান্ডের একটা বড় প্যাকেটের দাম কুড়ি টাকা। ক্রিম ক্র্যাকার কিংবা থিন অ্যারারুটের চেয়ে দাম বেশিই বলা যায়। টোস্ট বলতে এর পরে পাউরুটি টোস্টের কথা। স্বর্ণ বর্ণ মাখন আচ্ছাদিত হিরের মিহি টুকরোর মতো বড় দানার ঝকঝকে চিনি। শুধু ব্রেকফাস্টের জন্য নয়, যে কোনও সময়ই এ রকম ভাল খাবার পাওয়া সৌভাগ্য।

আগে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় যেমন মোটামুটি ভাল রেস্তোরাঁ পাওয়া যেত, ভাল চা পাওয়া যেত, তেমনই মাখন টোস্ট ও ওমলেট। সেই ওমলেট, সেই মাখন টোস্ট এখন আর মাথা খুঁড়ে মরলেও পাওয়া যাবে না। তার জায়গায় মিলতে পারে তেল চপচপে শস্তা স্যস-সিক্ত এগরোল। বড়জোর চাউমিন নামক এক জটিল রহস্যময় খাবার।

বৃথা কালব্যয় করলাম। এখনও আসল টোস্টের কথাই বলা হয়নি। সাহেবদের পৃথিবীতে পান-ভোজন, বক্তৃতা ইত্যাদি একই পরম্পরায় আসে। কবিতার ভাষায় যাকে বলা যায় পরম্পরীণ বা ধারাবাহিক। এই ভোজসভা শেষ হয় বক্তৃতা দিয়ে। ভোজনান্তের এই বক্তৃতা নিয়ে অনেক চমৎকার রসিকতা আছে।।

পুরাকালে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামিদের গ্রিক দেশে সিংহ দিয়ে খাওয়ানো হত, হাজার হাজার দর্শক সিংহের সেই মহাভোজ দেখত। হাততালি দিত। মৃত্যুভয় পীড়িত অসহায় মানুষের দুর্দশা দেখে আনন্দে উল্লসিত হত। হয়তো বা অন্যান্য দুর্বৃত্ত কিছুটা ভয়ও পেত।

একদিন এক আসামিকে যেই সিংহ আক্রমণ করতে এসেছে, সেই আসামি ভয় না পেয়ে নিজেই এগিয়ে গিয়ে সিংহের কানে কানে কী যেন বলল। সিংহটা সঙ্গে সঙ্গে তাকে কিছু না বলে লেজ গুটিয়ে লুকিয়ে পড়ল। সবাই অবাক। রাজা সেই আসামিকে ডেকে পাঠালেন। জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি সিংহকে কী এমন বললে যে সে ভয় পেয়ে গুটিয়ে গেল।” লোকটি বলল, “হুজুর আমি সিংহকে বলেছি যে, আমাকে খাবার পরে তোমাকে বক্তৃতা করতে হবে। এই চারদিকে এত লোক তোমার বক্তৃতা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। সিংহ এই শুনে পালিয়েছে। বক্তৃতা করতে হবে শুনে ভয়ে।”

এই ভোজনান্ত বক্তৃতা তারই বিপরীত দিকে রয়েছে টোস্ট বা উদ্‌বোধন বক্তৃতা। টোস্ট হল পান-ভোজন শুরু হওয়ার আগে কিঞ্চিৎ সুরা গেলাস থেকে ঠোঁটে ছুঁয়ে অধিবেশন আরম্ভ করা।

অনেক সময় এই সূত্রে ছোট বক্তৃতাও হয় মাননীয় অতিথিদের উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিদেশের এক ভোজসভায় অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে টোস্টের সময় দেখা যায় বাকি সবারই ওষ্ঠ সুরাসিক্ত হলেও মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ বিশুদ্ধ জল পান করছেন। তা এ বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি জানালেন কিশোর বয়সের পর তিনি মদ ছোঁননি। এর উলটোটাও অবশ্য দেখা যায়। এমন কেউ কেউ আছেন যাঁরা কিশোর বয়সের পর জল ছোঁননি। মানে শুধু মদ খেয়েছেন।

মৃত্যুপথযাত্রী এক সরাবখানার মালিকের ঠোঁটে শেষ মুহূর্তে জল দেওয়া হয়েছিল। তিনি ছেলেকে ডেকে বলেছিলেন, বাবা, আমাকে মুখে যা দিয়েছ, সে জিনিস দোকানে দোকান বেচতে যেয়ো না, কেউ কিনবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *