2 of 8

কে কোথা ধরা পড়ে

কে কোথা ধরা পড়ে

কবি বলেছিলেন, প্রেমের ফাঁদে কে কোথায় যে ধরা পড়ে সেটা কে জানে?

আমরা কবির সঙ্গে একমত নই। প্রেমের ফাঁদে কেউ যদি ধরা পড়ে অর্থাৎ গদ্য করে বলা যাক কেউ যদি প্রেমে পড়ে—সেটা জানা কিংবা বোঝার জন্যে খুব বেশি কষ্টের প্রয়োজন নেই; শুধু নির্দিষ্ট লোকটির মুখের দিকে তাকালেই যথেষ্ট।

প্রেমের লক্ষণ কী কী? এ বিষয়ে কবিরা যুগে যুগে বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। বৈষ্ণব কবিতায়, ভারতচন্দ্রে এবং বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে ভূরি ভূরি বিবরণ রয়েছে, প্রেম ও প্রেমিক-প্রেমিকার বিভিন্ন দশার।

আমি বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে যাব না। কাব্যিক বিশ্লেষণ থাক, হাসির গল্পই আমার উপজীব্য।

বুক ধড়ফড় করা, চোখ লাল হওয়া, অনবরত অকারণ স্বেদাক্ত ও রোমাঞ্চিত হওয়া সেই সঙ্গে রাতে ঘুম না হওয়া প্রেমের স্বাভাবিক লক্ষণ।

ঘুম না হওয়ার একটা কাহিনী মনে পড়ছে। এক যুবক এক ফ্যাক্টরি মালিকের তনয়ার প্রেমে পড়েছিল। তারপরে যথারীতি যা যা হওয়া উচিত এবং অবশেষে ওই রাতে ঘুম না হওয়ার রোগ তার দেখা দিল।

প্রেমিকের এই দশা সহ্য করতে না পেরে শেষে প্রেমিকা প্রেমিককে পরামর্শ দিল তার বাবার সঙ্গে দেখা করে সব কথা জানাতে, বিশেষ করে রাতে ঘুম হচ্ছে না এই কথা বলতে।

পরের দিন প্রেমিকটি এল। আজ তার মুখ আরও বেশি শুকনো। প্রেমিকাটি দুরুদুরু বক্ষে এবং কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী হল? বাবার সঙ্গে কথা বলেনি।’ ছেলেটি দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করে সংক্ষিপ্ত জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, বলেছিলাম।’ ‘তোমার যে ঘুম হচ্ছে না, একথা বলেছ?’ মেয়েটি গভীর আগ্রহে জিজ্ঞাসা করল। ছেলেটি বলল, ‘তাও বলেছিলাম।’ মেয়েটি বলল, ‘বাবা কী বললেন?’ ছেলেটি বলল, ‘তোমার বাবা বললেন, যে তাঁর কারখানার নাইটগার্ড পালিয়েছে, আমি ইচ্ছে করলে ওই নাইটগার্ডের চাকরিটা নিতে পারি।’

প্রেমিকারা মাঝে-মধ্যে মুখের ভাষাও হারিয়ে ফেলে, তারা কী যে বলতে চায় কেউ বুঝতে পারে না, তারা নিজেরাই কি ছাই বুঝতে পারে।

এইরকম এক প্রেমিক একদা আমাকে তার প্রেমিকার রূপ বর্ণনা করছিল। বাঁশির মতো নাক, অমাবস্যার মধ্যরাত্রির মতো অন্ধকার চুল, উত্তর ভারতের কোনও শস্যক্ষেত্রে চৈত্রের সন্ধ্যায় আদিগন্ত উজ্জ্বল পাকা গমের মতো গায়ের রং, স্বর্ণচম্পকের কলির মতো হাতের আঙুল—পাগলের মতো বলে যাচ্ছিল সে। হঠাৎ সবকিছুর পরে চোখে এসে ঠেকে গেল। কেমন জড়িয়ে গেল তার কণ্ঠস্বর, বলল, ‘তার চোখ দুটি দেখতে, চোখ দুটি দেখতে… দেখতে… চোখদুটি ঠিক…।’

এরপরে সে সম্পূর্ণ আটকিয়ে গেল। তার গলা দিয়ে আর একটিও শব্দ বেরল না। বাধ্য হয়ে এবং ভদ্রতাবশত আমি অনুরোধ করলাম, ‘বলে ফেলো। থামলে কেন? চোখ দুটো দেখতে ঠিক…।’ সে ঢোঁক গিলে আমতা আমতা করে যা বলল, তার কোনও মানে হয় না; সে বলল, ‘তার চোখ দুটো হল, আসলে তার চোখ দুটো, আসলে তার একটা চোখ ঠিক আরেকটার মতো, হুবহু আরেকটার মতো।’

এ বিষয়ে কারও মনেই কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। কিন্তু তার বিবরণ শুনে সেদিন কেমন যেন খটকা লেগেছিল।

সেই খটকা আমার আজও যায়নি। কারণ সেই রূপসীর সঙ্গে ওই ছেলেটির শেষ পর্যন্ত বিয়ে হয়নি এবং আরও দুঃখের কথা, ছেলেটির এখন পর্যন্ত বিয়ে হয়নি।

বিয়ে না হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। ইংরেজ লেখক চার্লস ল্যাম্ব এক চিররুগ্না বোনের জন্যে বিয়ে করে উঠতে পারেননি। ভাইবোন, মা-বাবা সংসারের জন্যে বিয়ে হচ্ছে না, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে, আমাদেরই আশেপাশে এমন সহৃদয় তরুণ-তরুণীর অভাব নেই।

ইতিহাসখ্যাত গিবনসাহেবের বিয়ে হয়নি, তিনি খুব মোটা ছিলেন বলে। একবার তিনি বেশ প্রেমে পড়েছিলেন এবং প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মহিলাটির প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে হাঁটু গেড়ে তাঁর পদপ্রান্তে বসে বিয়ের প্রস্তাব দিতে যান, এবং ওই অবস্থাতেই আটকে যান, আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। অবশেষে দু’জন পার্শ্বচর এসে তাঁকে তুলে দাঁড় করায়। ততক্ষণে প্রেমিকা উধাও হয়েছেন।

শুধু ল্যাম্ব বা গিবন নন। চিরকুমারদের তালিকায় বিখ্যাত ব্যক্তির সংখ্যা যথেষ্ট। বেঠোফেন, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, হ্যান্স অ্যান্ডারসন, মেকলে, ভলটেয়ার, এঁরা সবাই অবিবাহিত জীবন যাপন করছেন। বাংলা কৌতুক রচনার দুই দিকপাল শিবরাম চক্রবর্তী এবং বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় চিরকুমার। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম চারজন মুখ্যমন্ত্রীই চিরকুমার। এমন কথা কেউ হরফ করে বলতে পারবে না যে এঁরা কেউ প্রেমের ফাঁদে কখনও ধরা পড়েননি। কিন্তু বিয়ের ফাঁদে এঁরা কখনও পা দেননি।

মান্যগণ্যদের কথা হল। এবার আবার বাজে কথায় যাচ্ছি। সবাই জানে যে বিয়ে আর প্রেম এক জিনিস নয়। বহু প্রেমই বিবাহে পরিণত হয় না। আবার কোনও কোনও প্রেমকে আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী বাধ্যতামূলকভাবে বিবাহে পরিণত করে।

এক ডাক্তার জরুরি তলব পেয়ে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন এক বাড়িতে। রোগীটি মারাত্মকভাবে আহত। যিনি কল দিয়েছিলেন সেই গৃহকর্তা ডাক্তারবাবুকে বললেন, ‘একটু ভাল করে দেখবেন। ছেলেটি আমার জামাই।’

ডাক্তারবাবু দেখলেন, ছেলেটি ধুঁকছে, সারা শরীরে নির্দয় প্রহারের চিহ্ন। ভাল করে দেখে ছেলেটির গায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে ডাক্তারবাবু বললেন, ‘মনে হচ্ছে একে কেউ লাঠি দিয়ে বা ডান্ডা দিয়ে খুব বেশি পিটিয়েছে। কোথায় ব্যাপারটা ঘটল?’

গৃহকর্তা বললেন, খুব গম্ভীরভাবেই বললেন, ‘এই বাড়িতে।’ ডাক্তারবাবু অবাক হলেন, ‘সে কী আপনার এই বাড়িতে?’ ভদ্রলোক আরও গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ।’

এরপরে একটাই প্রশ্ন বাকি থাকে, ডাক্তারবাবু স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রশ্নটা করলেন। ‘কে এমন সাংঘাতিকভাবে পেটাল?’ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গৃহকর্তা বললেন, ‘আমি পিটিয়েছি।’ এই উত্তর শুনে ডাক্তারবাবু খুব বিচলিত হলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলেন, ‘আপনার নিজের জামাইকে এমন নিষ্ঠুরভাবে পেটাতে পারলেন?’

গৃহকর্তা সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘কিন্তু ডাক্তারবাবু সত্যি কথাটা হল এই যে, পেটানোর আগে পর্যন্ত কিন্তু ও আমার জামাই ছিল না।’

শেষ প্রশ্ন: সুন্দরী মেয়েরা কেন নির্বোধ হয়?

উত্তর: এটা পরমেশ্বরের একটা কৌশল জগৎসংসার রক্ষা করার জন্যে। সুন্দরী বলেই পুরুষরা তাদের প্রেমে পড়ে। আর, নির্বোধ বলেই সুন্দরীরা পুরুষদের প্রেমে পড়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *