• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

২.৪ পরের কয়েক সপ্তাহ

লাইব্রেরি » মুহম্মদ জাফর ইকবাল » সায়েন্স ফিকশন সমগ্র » ইরাকাস » ২.৪ পরের কয়েক সপ্তাহ

পরের কয়েক সপ্তাহ জহুর খুব দুশ্চিন্তায় কাটাল, যদিও কেউ তার মুখ দেখে সেটা বুঝতে পারল না, সে শান্তভাবে দৈনন্দিন কাজ করে যেতে লাগল। নৌকার মাঝি হিসেবে দূরে যাওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছিল, জরুরি কাজ বলে খুবই লোভনীয় পারিশ্রমিক দেয়ার কথা কিন্তু জহুর চর ছেড়ে যেতে রাজি হলো না, সে বাড়ির আশপাশে গৃহস্থালি কাজ করে সময় কাটিয়ে দিতে লাগল। জিনের বাচ্চাকে দেখার সেই ঘটনার কথাও ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায়, এক সময় মানুষ সেটার কথা ভুলে যায় এবং পুরো ব্যাপারটাকে অনেকেই আক্কাস এবং জালালের একটা ঠাট্টা হিসেবে ধরে নেয়। মাসখানেক কেটে যাওয়ার পর জহুরও খুব ধীরে ধীরে খানিকটা দুশ্চিন্তামুক্ত হতে শুরু করে।

ঠিক এ রকম সময় খুব ভোরে চরের ঘাটে একটা স্পিডবোট এসে থামল এবং সেখান থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ তীরে নেমে এল। সবার শেষে যে নেমে এল সে হচ্ছে ডক্টর সেলিম। সে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা একজন শুকনো মানুষকে জিজ্ঞেস করল, এইটা সেই চর?

শুকনো মানুষটি বলল, জি স্যার।

এইখানে পাখাওয়ালা বাচ্চাটাকে দেখা গেছে?

জি স্যার।

বাচ্চাটাকে খুঁজে বের করা হয়েছে?

জি স্যার। জহুর নামে একটা মানুষের বাচ্চা—

জহুর! হ্যাঁ জহুর, ঠিকই বলেছে—মানুষটার নাম ছিল জহুর। এই জহুরের কাছে বাচ্চাটা থাকে?

হ্যাঁ। জহুরকে বাবা ডাকে।

বাচ্চাটার পাখা—

পাখাটা ঢেকে রাখে মনে হয়। পিঠের দিকে উঁচু হয়ে থাকে, সবাই মনে করে কুঁজো। বাচ্চাকে কুঁজা বুলবুল ডাকে।

ডক্টর সেলিমের মুখে হাসি ফুটে ওঠে, মাথা নেড়ে বলে, চমৎকার। আমার হাত থেকে পালাবে ভেবেছিলে? কোথায় পালাবে সোনার চাদ।

জি স্যার। এখন আর পালানোর কোনো উপায় নেই।

ডক্টর সেলিম তার ছোট দলটাকে ডাকে, শোনো তোমরা সবাই।

মানুষগুলো ডক্টর সেলিমকে ঘিরে দাঁড়াল। ডক্টর সেলিম বলল, এইটা খুবই ছোট একটা চর, মানুষজন বেশি নাই। আমরা যে এসেছি সেই খবরটা দেখতে দেখতে ছড়িয়ে যাবে। খবর ছড়িয়ে গেলেই ঝামেলা, জহুর নামের মানুষটা অসম্ভব ডেঞ্জারাস। কোনো কিছুতে ঘাবড়ায় না—কাজেই সে যদি আমাদের খবর পায় তাহলে বিপদ হতে পারে। তাকে প্রথম আটকাও।

ঘাড় মোটা একজন মানুষ বলল, আটকাব।

শোনো—আগেরবার বাচ্চাটা আমার হাত ফসকে পালিয়ে গেছে। এইবার যেন কিছুতেই না পালায়। জহুরকে আটকাতে হবে। দরকার হলে গুলি করো—পুলিশকে আমি সামলাব।

ঘাড় মোটা মানুষটা বলল, আপনি চিন্তা করবেন না।

জহুরকে আটকানোর পর খুঁজে বের করো ছেলেটা কোথায় আছে। ধরে নিয়ে আসো এই স্পিডবোটে, কেউ কিছু বোঝার আগে নিয়ে চলে যাব।

ঘাড় মোটা মানুষটির সাথে সাথে আরো দুজন বলল, ঠিক আছে স্যার।

ডক্টর সেলিম মুখ শক্ত করে বলল, শোনো। বাচ্চাটাকে জীবন্ত ধরতে হবে। জীবন্ত। মনে থাকবে?

মনে থাকবে।

কিন্তু যদি তোমরা দেখো তাকে জীবন্ত ধরতে পারছ না, সে উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে তাহলে তাকে মৃত হলেও ধরতে হবে। বুঝেছ?

বুঝেছি। জীবিত অথবা মৃত।

না। ডক্টর সেলিম মাথা নাড়ল, জীবিত অথবা মৃত না। জীবিত এবং জীবিত। কিন্তু যদি দেখা যায় কোনোভাবেই তাকে জীবিত ধরা যাচ্ছে না, তাহলে মৃত। বুঝেছ?

বুঝেছি।

ঠিক আছে। কাজে লেগে যাও।

জহুরকে চারজন মানুষ যখন আটক করল তখন সে তার আলকাতরার কৌটা নিয়ে নদীর ঘাটে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তার নৌকাটা অনেক দিন থেকে মেরামত করা হয়নি, সে কয়েক দিন আগে টেনে তীরে তুলে এনেছে। এত দিনে সেটা শুকিয়ে গেছে, আজ আলকাতরা দিয়ে লেপ দেয়ার কথা। সে অবশ্যি বাড়ি থেকে বের হতে পারল না, তার আগেই তাকে আটক করা হলো। জহুর প্রস্তুত ছিল না, হঠাৎ করেই দেখল তার সামনে দুজন এবং পেছনে দুজন মানুষ। সে তার পিঠে একটা ধাতব নলের খোঁচা অনুভব করে, শুনতে পায় একজন বলছে, যদি তুমি কোনো তেড়িবেড়ি করো তাহলে গুলি করে দেব।

জহুর কীভাবে কীভাবে জানি বুঝে গেল মানুষটা দরকার হলে সত্যিই গুলি করে দেবে, তাই সে নড়ল না। সে হঠাৎ করে তার বুকের মাঝে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করে, বুক আগলে সে যে শিশুটিকে বড় করেছে আজকে তার খুব বিপদের দিন। বাচ্চাটি পারবে নিজেকে রক্ষা করতে?

জহুর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোমরা কী চাও?

তুমি খুব ভালো করে জান, আমরা কী চাই। তোমরা কারা?

পেছনের মানুষটি তার পেছনে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, তোমার বাবা।

জহুর বলল, অ।

মানুষগুলো জহুরকে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল, তারপর একজন জিজ্ঞেস করল, চিড়িয়াটা কই?

বুলবুলের কথা জানতে চাইছ?

হ্যাঁ।

বুলবুল চিড়িয়া না। সে খুব ভালো একটা ছেলে। আমি তাকে বুকে ধরে মানুষ করেছি।

মানুষটি হাতের রিভলবারটা ঝাকুনি দিয়ে বলল, তুমি বুকে ধরে মানুষ করেছ না ইয়েতে ধরে মানুষ করেছ, আমরা সেটা জানতে চাই না। আমরা জানতে চাই সে কোথায়?

জহুর একটা নিঃশ্বাস ফেলে, আগে তোক পরে হোক তারা খোঁজ পেয়ে যাবেই বুলবুল কোথায়। এই রকম সময় সে স্কুলে থাকে। কিন্তু কথাটা সে সরাসরি বলতে চায় না। যদি একটু হইচই হয় একটু গোলাগুলি হয় বুলবুল সেটা শুনতে পেয়ে সতর্ক হতে পারবে। জহুর বলল, আমি বলব না।

ঘাড় মোটা মানুষটা বলল, তুমি বলবে না? তোমার বাবায় বলবে।

জহুর শীতল চোখে বলল, ঠিক আছে। তুমি তাহলে আমার বাবাকেই জিজ্ঞেস করো।

রিভলবার হাতের মানুষটা তার রিভলবারের বাঁট দিয়ে মাথায় মারতে যাচ্ছিল, ঘাড় মোটা মানুষটা তাকে থামাল, বলল, আগেই মারপিট দরকার নেই। না বলে যাবে কোথায়, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে বাঁকা করতে হবে।

ঠিক এ রকম সময় একজন মানুষ আনোয়ারাকে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে বলল, খবর পাওয়া গেছে।

পাওয়া গেছে?

হ্যাঁ। মানুষটা বলল, আমাদের চিড়িয়া স্কুলে গেছে।

চিড়িয়া আবার স্কুলেও পড়ে নাকি?

হ্যাঁ। চিড়িয়া লেখাপড়া শিখে জজ ব্যারিস্টার হবে।

কথাটি যেন অত্যন্ত উঁচু দরের রসিকতা এ রকম ভান করে সবাই হ্যাঁ। হা করে হাসতে থাকে। ঘাড় মোটা মানুষটা বলল, হাসি থামা। এই মেয়েলোকটাকে বেঁধে রাখ। দুজন পাহারায় থাক—অন্যেরা আমার সাথে চল স্কুলে।

রিভলবার হাতে মানুষটা বলল, হ্যাঁ, দেরি হয়ে যাচ্ছে। স্যার অপেক্ষা করছেন।

জহুর জিজ্ঞেস করল, স্যারটা কে?

ঘাড় মোটা মানুষটা বলল, সেটা শুনে তুমি কী করবে?

ডক্টর সেলিম?

হঠাৎ করে ঘাড় মোটা মানুষটা বলল, চুপ কর। চুপ কর তুমি। তা না হলে খুন করে ফেলব।

জহুর চুপ করে গেল। আনোয়ারা জহুরের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, এখন কী হবে জহুর?

জহুর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আল্লাহ যেটা ঠিক করে রেখেছে সেটাই হবে।

ঠিক সেই সময় মালবিকা ছোট স্কুলঘরের তালা খুলে দিয়েছে এবং স্কুলের ছেলেমেয়েরা ভেতরে ঢুকে টানাটানি করে হোগলার মাদুরটা বিছিয়ে দিতে শুরু করেছে। কয়েকজন বইপত্র সামনে রাখতে শুরু করে দিল। লিপি তার ছোট ভাইটাকে মাটিতে বসিয়ে তখন জানালাটা খুলে দেয় এবং বাইরে তাকিয়ে উৎফুল মুখে বলল, স্কুলে সাহেবরা আসছে।

যে প্রতিষ্ঠানটা এই স্কুলটি এখানে বাসিয়েছে মাঝে মাঝে তাদের কর্মকর্তারা এটা দেখতে আসে, যখনই আসে তখনই তারা বাচ্চাদের জন্যে খাতাপত্র বা গুঁড়োদুধ নিয়ে আসে। কাজেই সাহেবরা স্কুল দেখতে আসছে সেটা নিঃসন্দেহে সবার জন্যে একটা আনন্দ সংবাদ।

মালবিকা অবাক হয়ে বলল, নাহ! আজকে তো কারো আসার কথা না!

আসছে আপা, এই দেখেন।

মালবিকা জানালায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, আরে! মানুষগুলোর হাতে বন্দুক! ব্যাপার কী?

একটা ছেলের চোখ আনন্দে চকচক করে ওঠে, মনে হয় পাখি শিকার করতে এসেছে!

চল দেখি— বলে কিছু বলার আগেই বাচ্চাগুলো দৌড়ে বের হয়ে যায়। মালবিকা তাদের থামানোর জন্যে একটু চেষ্টা করল কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, সবাই ছুটতে ছুটতে পাখিশিকারি দেখতে বের হয়ে গেছে। মালবিকা বাচ্চাগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্যে পেছনে পেছনে বের হয়ে গেল।

লিপির পাশে দাঁড়িয়ে বুলবুল বাইরে তাকালো এবং হঠাৎ করে তার বুকটা ধ্বক করে ওঠে। কেউ বলে দেয়নি কিন্তু হঠাৎ করে সে বুঝে গেল এই মানুষগুলো আসলে তাকেই ধরতে আসছে। জহুর কয়েক দিন থেকে তাকে এই বিষয়টা নিয়েই সতর্ক করে আসছিল।

বুলবুল নিচু গলায় লিপিকে বলল, এই মানুষগুলো পাখি শিকার করতে আসে নাই।

লিপি জিজ্ঞেস করল, তাহলে কী শিকার করতে এসেছে?

আমাকে।

তোকে? লিপি অবাক হয়ে বলল, তোকে কেন?

বুলবুল লিপির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, লিপি! তুই একটা কাজ করতে পারবি?

কী কাজ?

বুলবুল তার শার্টটা ততক্ষণে খুলে ফেলেছে, লিপি অবাক হয়ে দেখল শার্টের নিচে কাপড় দিয়ে তার শরীরটা পেঁচানো—পেছনের দিকে খানিকটা উঁচু হয়ে আছে। বুলবুল বলল, আমার এই কাপড়টা খুলে দিবি? তাড়াতাড়ি?

কেন? কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিস কেন?

আগে খুলে দে তাহলেই বুঝবি—

লিপি কাপড়ের বাঁধন ঢিলে করতেই বুলবুল ঘুরে ঘুরে পেঁচানো কাপড় খুলতে থাকে এবং দেখতে দেখতে তার পেছনের পাখা বের হয়ে আসে। লিপি ফ্যালফ্যাল করে বুলবুলের দিকে তাকিয়ে থাকে, অনেক কষ্ট করে বলে, তুই-তুই–

হ্যাঁ। লিপি তোকে বলেছিলাম না ছেলে পরীর কথা? আমি ছেলে পরী—।

লিপি আবার বলল, তুই তুই তুই—

হ্যাঁ আমি। ঐ মানুষগুলো আমাকে ধরতে আসছে।

তোর পাখা আছে? আসলে তুই কুঁজা না?

না আমি কুঁজা না। আমার পাখা আছে।

তুই উড়তে পারিস?

হ্যাঁ আমি উড়তে পারি। ঐ মানুষগুলো যখন আমাকে ধরতে আসবে তখন আমি উড়ে যাব।

সত্যি? উড়ে কোথায় যাবি।

জানি না।

আর কোনো দিন আসবি না?

বুলবুল একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কেমন করে আসব? এখন তো সবাই জেনে যাবে আমি আসলে মানুষ না। হঠাৎ করে বুলবুলের মুখটাকে করুণ এবং বিষণ্ণ মনে হয়।

লিপি কিছুক্ষণ বুলবুলের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, তুই তাহলে কী?

আমি জানি না। আমি যদি মানুষ হতাম তাহলে কি কেউ কোনো দিন আমাকে ধরে নিতে আসত?

লিপি অবাক হয়ে বুলবুলের দিকে তাকিয়ে থাকে, আস্তে করে তার পাখায় হাত বুলিয়ে বিস্ময়ের গলায় বলল, কি সুন্দর!

সুন্দর?

হ্যাঁ। সুন্দর। লিপি আস্তে আস্তে বলল, তুই আগে কেন কোনো দিন আমাকে বললি না?

যদি সবাই জেনে যেত?

লিপি মাথা নেড়ে বলল, আমি কাউকে বলতাম না।

সত্যি?

সত্যি।

বুলবুল একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি বুঝি নাই। যদি বুঝতাম তাহলে বলতাম।

লিপি আবার মাথা নাড়ল, বলল, বলতাম না। কাউকে বলতাম না।

বুলবুল জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে বলল, মানুষগুলো এসে গেছে।

হ্যাঁ।

আমি এবারে জানালা দিয়ে বাইরে যাব। ঠিক আছে?

ঠিক আছে।

জানালাটা অনেক উপরে, বুলবুল হাত দিয়ে ধরে যখন ওঠার চেষ্টা। করল তখন লিপি তাকে ধাক্কা দিয়ে সাহায্য করল। সে অবাক হয়ে দেখল। বুলবুলের শরীরটা পাখির পালকের মতো হালকা।

বুলবুল জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বাইরে লাফিয়ে পড়ার সাথে সাথে মানুষগুলো ঘরের ভেতরে এসে ঢুকল। ঘাড় মোটা মানুষটা বলল, কোথায়? বুলবুল কোথায়?

লিপি কথার কোনো উত্তর দিল না। তার ছোট ভাইটাকে মাটি থেকে কোলে তুলে নিল। মানুষটা তখন ধমক দিয়ে বলল, কোথায়?

লিপি বলল, নাই।

নাই মানে? কোথায় গেছে?

আমি জানি না।

মানুষগুলো অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে লিপির দিকে তাকিয়ে থাকে। একজন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো, তারপরেই চিৎকার করে বলল, বাইরে। বাইরে। কুইক।

সবাই বাইরে ছুটে যায় এবং সেখানে তারা একটা অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখতে পায়। মাঠের মাঝখানে বুলবুল খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছন থেকে পাখির ডানার মতো দুটি ভানা বের হয়ে এসেছে। বুলবুলের চেহারায় এক ধরনের বিষণ্ণতার ছাপ, সে যেন অনেকটা অন্যমনস্কভাবে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষগুলো তাদের বন্দুক উদ্যত করে বুলবুলকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করল, বুলবুলকে সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত মনে হলো না।

মানুষগুলো যখন আরেকটু এগিয়ে আসে তখন বুলবুল হঠাৎ হাঁটু ভাজ করে নিচু হয়ে উপরে লাফ দেয় এবং প্রায় সাথে সাথে তার পাখা দুটি ঝাঁপটা দিয়ে ওঠে।

ভাইকে কোলে নিয়ে লিপি, তার স্কুলের বন্ধুরা, মালবিকা এবং বন্দুক হাতের মানুষগুলো অবাক হয়ে দেখল বিশাল একটা পাখির মতো বুলবুল আকাশে উড়ে যাচ্ছে!

মোটা ঘাড়ের মানুষটা চিৎকার করে বলল, ধর! ধর!

তার কথা শুনে মানুষগুলো লাফিয়ে তাকে ধরার চেষ্টা করে কিন্তু ততক্ষণে বুলবুল অনেক উপরে উঠে গেছে। মোটা ঘাড়ের মানুষটা চিৎকার করে বলল, গুলি কর! গুলি!

বন্দুক হাতের মানুষটা বন্দুকটা তুলে বুলবুলের দিকে তাক করে। ঠিক যখন সে ট্রিগারটা টেনে ধরবে তখন কোথা থেকে জানি লিপি ছুটে এসে বন্দুক হাতের মানুষটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। প্রচণ্ড গুলির শব্দে পুরো এলাকাটা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কিন্তু অল্পের জন্যে গুলিটা বুলবুলের গায়ে না লেগে ফস্কে গেল।

এক সাথে কয়েকজন এসে লিপিকে ধরে টেনে ছুড়ে ফেলে দেয়, ছোট ভাইটা কোল থেকে পড়ে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বন্দুক হাতের মানুষটা আবার আকাশের দিকে তার বন্দুকটা তাক করল তখন ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা স্কুলের ছেলেগুলো এসে সেই মানুষটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, দ্বিতীয় গুলিটাও তাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। ততক্ষণে বুলবুল অনেক দূরে সরে গেছে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে, পাখা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে বিশাল একটা পাখির মতো বুলবুল উড়ে যাচ্ছে। ভোরের সূর্যের আলো পড়ে তার পাখা দুটো চিকচিক করছে।

 

জহুরের সামনে ডক্টর সেলিম কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড ক্রোধে তার মুখটা খানিকটা বিকৃত হয়ে আছে। সে মাটিতে পা দাপিয়ে বলল, কোথায় গেছে? বল কোথায় গেছে?

জহুর খুব বেশি হাসে না। এবারে সে মুখে জোর করে একটু হাসার ভঙ্গি করে বলল, আপনার ধারণা আমি আপনাকে বলব সে কোথায় গেছে?

ডক্টর সেলিম চোখ লাল করে বলল, তোমাকে আমি খুন করে ফেলব।

জহুর কষ্ট করে মুখে হাসি ধরে রেখে বলল, বরং সেইটাই করে ফেলেন! আপনার জন্যে সেইটা কঠিন না, তিন সপ্তাহের বাচ্চাকে যে খুন। করতে পারে আমার মতো বুড়া হাবড়াকে খুন করতে তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

তুমি ভাবছ আমি মশকরা করছি? নী। আমি সেটা ভাবছি না। তবে তবে কী?

চরের মানুষেরা কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস। আমাকে খুন করতে চাইলে আরো মানুষের ভিড় হওয়ার আগে করে ফেলেন। তারপর তাড়াতাড়ি পালান। তা না হলে এই চরের মানুষেরা কিন্তু আপনাদের সবাইকে চরের বালুর মাঝে পুঁতে ফেলতে পারে। বাইরের মানুষ খবরও পাবে না।

ডক্টর সেলিম হঠাৎ করে একটু চঞ্চল হয়ে ওঠে। সে চোখের কোনা দিয়ে তাকায়, সত্যি সত্যি পাথরের মতো মুখ করে মানুষজন একটু দূরে দাঁড়িয়ে স্থির চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ডক্টর সেলিম আবার জহুরের দিকে তাকালো, তারপর দাতে দাঁত ঘষে বলল, তুমি আমার প্রাইজটা নিয়ে একবার পালিয়েছ! আমার দশ বছর লেগেছে তোমাকে খুঁজে বের করতে! আমি আবার তোমাকে আর তোমার চিড়িয়াকে খুঁজে বের। করব।

আরো দশ বছর পর? জহুর আবারো সত্যি সত্যি হেসে ফেলল, বলল, দশ বছরে আমার ছোট বুলবুল একটা জওয়ান মানুষ হবে। তখন আমাকে আর তাকে দেখে রাখতে হবে না, আমার বুলবুল নিজেই তোমার ঘাড়টা কটাস করে ভেঙে দেবে।

ডক্টর সেলিম বিস্ফারিত চোখে জহুরের দিকে তাকিয়ে রইল। পাশে দাঁড়ানো মোটা ঘাড়ের মানুষটা রিভলবারের বাঁট উঁচু করে জহুরের মাথায় মারার জন্যে এগিয়ে আসছিল, ডক্টর সেলিম তাকে থামাল। নিচু গলায় বলল, এখন ঝামেলা করো না। ঘাটে চলো।

নদীর ঘাটে পৌঁছানোর আগেই তারা দেখতে পায় তাদের স্পিডবোটটি দাউ দাউ করে জ্বলছে। কিছু মানুষ তাদের বোটটা জ্বালিয়ে দিয়েছে, পেট্রোলের ট্যাংকটা তাদের চোখের সামনেই সশব্দে ফেটে গেল। মাথা ঘুরিয়ে তারা তীরের দিকে তাকালো, দেখল চরের মানুষজন আস্তে। আস্তে ঘাটের দিকে আসছে। সবার সামনে হালকা পাতলা ছোট একটা মেয়ে, কোলে ছোট একটা বাচ্চা।

অনেক দূর থেকেই ডক্টর সেলিম ছোট মেয়েটির চোখের প্রবল ঘৃণাটুকু বুঝতে পারে। সে ঘুরে কাঁপা গলায় বলল, বন্দুকে গুলি আছে তো?

আছে।

কতগুলো।

যথেষ্ট।

ডক্টর সেলিম দরদর করে ঘামতে থাকে, সে ঠিক বুঝতে পারছিল না ঠিক কতগুলো গুলি হলে সেটাকে যথেষ্ট বলা যাবে।

Category: ইরাকাস
পূর্ববর্তী:
« ২.৩ জহুরদের নৌকাটা
পরবর্তী:
২.৫ নৌকাটাকে টেনে উপরে তুলে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑