ভূত বলে কিছু নেই

ভূত বলে কিছু নেই

শ্রীকান্ত বসু আর প্রদীপ গুপ্ত অভিন্নহৃদয় বন্ধু, যদিও দু-জনের স্বভাবে কিছুমাত্র মিল নেই। শ্রীকান্ত বা কানু চটপটে, হাসিখুশি, চঞ্চল আর প্রদীপ বা ভোলা গম্ভীর প্রকৃতির, শান্ত। একটু সুযোগ পেলেই যত্রতত্র অকাতরে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। দু-জনেই কলকাতার কাছে একটা কারখানায় চাকরি করেন। প্রত্যেক বছর পুজোর ছুটিতে বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন। কানুর একটা পুরোনো মডেলের ফোর্ড গাড়ি আছে, সেটি হল ওঁদের বাহন। এই দু-জন, নাকি তিনজন যতবারই বেড়াতে বের হন, ততবারই কোনো-না-কোনো মারাত্মক অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরেন। কত কী যে ঘটেছে ওঁদের এই ঘোরার সময়— বাঘে তাড়া করেছে, হাতি পথ আটকেছে, ডাকাতে ধরেছে। কোনোরকমে প্রাণ হাতে করে ফিরে এসেছেন প্রত্যেক বার।

সে-বার ওঁরা স্থির করলেন নাগাল্যান্ড যাবেন। কোহিমায় ভোলাবাবুর মেজদার বন্ধু পরিতোষ হালদার চাকরি করেন। অনেকদিন থেকেই যেতে বলছেন দু-জনকে। মস্ত বাংলোয় থাকেন, একা মানুষ। কাজেই কোনো অতিথি এলে অত্যন্ত খুশি হন, আতিথেয়তার কোনো অভাব হয় না।

পুজোর ছুটির সঙ্গে আরও কিছুদিনের ছুটি যোগ করে, সপ্তমীর দিন দুই বন্ধু বেরিয়ে পড়লেন। কোহিমা পর্যন্ত যেতে কোনো অসুবিধে হল না তেমন। কানুবাবুর গাড়ি চালানোর কষ্ট ভুলিয়ে দিল গুয়াহাটি থেকে কোহিমা যাওয়ার রাস্তার দু-পাশের অপূর্ব দৃশ্য। বর্ষার পর ঘন সবুজ জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ের যে রূপ, তা যেকোনো মানুষেরই সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে। ভোলাবাবু অবশ্য সমস্ত রাস্তাটাই ঘুমিয়ে কাটালেন। কানুর বেসুরো গলায় উদ্ভট গানগুলো তাঁকে কিছুমাত্র বিরক্ত করতে পারল না।

গোলমাল বাধল ফেরার সময়। পরিতোষবাবুর দিলদরিয়া স্বভাব আর অকৃপণ অতিথিসৎকারের ফলে দু-জনে অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তেই রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক যেতে-না-যেতেই নামল তুমুল বৃষ্টি। যদিও রাস্তা জনহীন, কোনো গাড়ি বা লরির চিহ্নমাত্র নেই, তবুও এরকম বর্ষায় গাড়ি চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক। কানুবাবু কিন্তু গাড়ি চালিয়েই যেতে থাকলেন, কারণ থামতে তাঁর মোটেই ভালো লাগছিল না। ঘন জঙ্গলের মধ্যে কোথায় গাড়ি দাঁড় করাবেন? যদিও তখন সকাল আটটা কিন্তু জঙ্গলের নিশাচর জন্তুজানোয়াররা সবাই যে নিয়ম মেনে শুতে গেছে সেরকম কোনো স্থিরতা নেই। তার ওপর বিপজ্জনক মানুষেরও কোনো অভাব নেই। কাজেই খুব সাবধানে হেডলাইট জ্বেলে প্রায় আন্দাজে রাস্তার নিশানা রেখে আস্তে আস্তে গাড়ি চালাতে লাগলেন কানুবাবু। ভোলাবাবুর কোনো বিকারই নেই। তিনি অকাতরে ঘুমোতে লাগলেন।

কিছুটা যাওয়ার পরেই এমন একটা দৃশ্য দেখলেন কানুবাবু যে তাঁকে গাড়ি দাঁড় করাতেই হল। রাস্তার ধারে একটা প্রকাণ্ড গাছের নীচে একটি নাগা মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পরনে স্কুল ইউনিফর্ম, পিঠে স্কুলব্যাগ, বয়েস এগারো-বারো হবে। হাপুস নয়নে কাঁদছে মেয়েটি। তার সর্বাঙ্গ ভিজে গেছে আর সেইজন্যেই বোধ হয় থরথর করে কাঁপছে।

কানুবাবু গাড়ি দাঁড় করালেন বটে, কিন্তু মেয়েটি এগিয়ে এল না। যেখানে ছিল, সেখানে দাঁড়িয়েই উদবিগ্ন চোখে গাড়িটাকে দেখতে লাগল। কানুবাবু ইঞ্জিন বন্ধ করে জানলা নামিয়ে বললেন, ‘তুমি কি ইংরেজি জানো?’

মাথা নেড়ে মেয়েটি জানাল যে সে জানে।

‘এরকম নির্জন জায়গায় এই বৃষ্টির মধ্যে তুমি একা দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন? কোথায় যাবে তুমি?’ জিগ্যেস করলেন কানুবাবু।

এইবার মেয়েটি আস্তে আস্তে এগিয়ে এল। কানুবাবুকে দেখে আর তাঁর কথা শুনে একটু বোধ হয় ভরসা পেল। ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতে বলল, ‘আমি ইশকুলে যাচ্ছিলুম। দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই বন্ধুরা আগে চলে গেছে। ভেবেছিলুম দৌড়ে ওদের ধরে ফেলব। এখন এমন বৃষ্টি নামল! এ-অবস্থায় আমি ইশকুলেও যেতে পারছি না, বাড়িও ফিরতে পারছি না।’ বলে আবার কান্না শুরু করল।

‘কোথায় তোমার বাড়ি?’ জিগ্যেস করলেন কানুবাবু।

‘এখান থেকে মাইল দেড়েক দূরে আমাদের গ্রাম। ওইদিকে।’ বলে মেয়েটি কানুবাবুরা যেদিকে যাচ্ছিলেন সেই দিকে আঙুল তুলে দেখাল। ‘ওই টিলাটার ওপাশে।’

‘তবে তো আমাদের পথেই পড়বে। তুমি গাড়িতে উঠে এসো। আমরা তোমাকে পৌঁছে দেব। তোমাদের গ্রাম পর্যন্ত গাড়ি যাবে?’

‘যাবে। মাঝখানে একটা নদী আছে, তবে তার ওপরে একটা ব্রিজ আছে।’

‘তবে তো ভালোই হল। উঠে এসো।’

মেয়েটি ইতস্তত করছিল। কানুবাবু বললেন, ‘কী হল? দেরি করছ কেন?’

‘তোমার সঙ্গে ওই লোকটি অমনভাবে পড়ে আছে কেন? মাতাল?’

‘আরে না না। ও ঘুমোচ্ছে। সব সময়েই ঘুমোয়।’ বলে কানুবাবু ভোলাবাবুকে এক ধাক্কা মেরে বললেন, ‘অ্যাই ভোলা ওঠ। দ্যাখ, এই মেয়েটি তোকে দেখে মাতাল ভাবছে। ভাববেই। এই সকালে কেউ ঘুমোয়!’

ভোলাবাবু আড়মোড়া ভেঙে উঠে বললেন, ‘মেয়ে? আরে তাই তো, এ কে? বৃষ্টিতে আটকে গেছে বুঝি?’

কানুবাবু বললেন, ‘ওকে বাড়ি পৌঁছে দেব। কাছেই গ্রাম। ভালোই হল, একটা নাগা গ্রামও দেখা হয়ে যাবে।’

মেয়েটি তখনও ইতস্তত করছে দেখে, কানুবাবু একটু অধৈর্য হয়ে বললেন, ‘আবার কী হল? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজে কোনো লাভ আছে?’

মেয়েটি বলল, ‘আপনার গাড়ির সিট কিন্তু ভিজে যাবে।’

‘ভিজুক। সে তোমাকে ভাবতে হবে না।’

অত্যন্ত সংকুচিতভাবে মেয়েটি গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসল। বলল, ‘আমি অত্যন্ত লজ্জিত। আপনাদের এরকমভাবে বিব্রত করলুম।’

কানুবাবু বললেন, ‘ওসব কথা ছাড়ো। এখন আমাদের রাস্তা দেখাও। বলে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করবার জন্য চাবি ঘুরিয়ে সেল্ফ স্টার্টারের বোতাম টিপলেন। গাড়ি স্টার্ট হল না। যতবার বোতাম টেপেন কানুবাবু, ততবারই গাড়ি চ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ-চ্যাঁ হ্যাঁ-হ্যাঁ হ্যাঁ করে আর্তনাদ করে থরথর করে কাঁপে; কিন্তু তার ইঞ্জিন আর চালু হয় না।

খেয়েছে। ইঞ্জিন নির্ঘাত ঠান্ডা হয়ে জমে গেছে। ভাবলেন কানুবাবু, কিন্তু স্টার্ট তো করতেই হবে। এরকমভাবে রাস্তার মাঝখানে তো দাঁড়িয়ে থাকা যায় না।

প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ি থেকে বেরুতে বাধ্য হলেন কানুবাবু। ভোলাবাবুকে বলে লাভ নেই কারণ তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন। বনেটের ডালা খুলে স্পার্ক প্লাগগুলো নাড়াচাড়া করলেন, কিন্তু তাতে আর কী লাভ। আগুন জ্বেলে সেগুলো গরম করা দরকার। কোথায় আগুন জ্বালবেন? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছেন আর কী করা যায় ভাবছেন কানুবাবু।

এমন সময় দূরে একটা গাড়ির আওয়াজ পাওয়া গেল। এইদিকেই আসছিল গাড়িটা। বৃষ্টির প্রায় নিশ্ছিদ্র পরদার পেছনে একজোড়া হেডলাইটের ম্লান আলো দেখা গেল। গাড়ি যখন, তখন নিশ্চয়ই সাহায্য পাওয়া যাবে, এই ভেবে কানুবাবু এগিয়ে গেলেন পেছনের গাড়িটার দিকে। দু-হাত তুলে থামতে বললেন, গাড়িটা থামল। দেখা গেল সেটা একটা জিপ— স্থানীয় পুলিশের।

পুলকিত চিত্তে কানুবাবু জিপের কাছে চলে গেলেন। জানলা খুলে মুণ্ডু বের করলেন একজন অফিসার। বললেন, ‘কী হয়েছে? গাড়ি খারাপ?’

নাক-চোখ থেকে জল ঝেড়ে ফেলে কানুবাবু বললেন, ‘হ্যাঁ, স্টার্ট নিচ্ছে না। তবে, সেটা বড়ো কথা নয়। আমার গাড়িতে একটা বাচ্চা মেয়ে আছে। সে বাড়ি ফিরতে পারছে না এইরকম আবহাওয়ায়। আপনারা যদি দয়া করে ওকে পৌঁছে দেন আর সেইসঙ্গে একজন গাড়ির মিস্ত্রিকে যদি খবর দিয়ে দেন তো বড়ো উপকার হয়।’

‘মেয়েটির বাড়ি কোথায়?’

‘ওই টিলাটার ওপাশে। এখান থেকে মাইল দেড়েক দূরে।’

‘ওই টিলাটার ওপাশে? মেয়েটি এখনও রয়েছে আপনার গাড়িতে?’ বলতে বলতে প্রবল বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে লাফ দিয়ে জিপ থেকে নামলেন পুলিশ অফিসার। কোমরের খাপ থেকে রিভলভার বের করে উত্তেজনায় কাঁপা-কাঁপা গলায় বললেন, ‘চলুন তো।’

কানুবাবু বেশ আশ্চর্যই হলেন। বললেন, ‘আপনি এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? মেয়েটির নিতান্তই অল্পবয়েস, স্কুলে পড়ে।’

অফিসার বিরক্ত গলায় বললেন, ‘কোনো কথা বলবেন না। চুপচাপ আসুন।’

অফিসারের পেছনে পেছনে জিপ থেকে তিনজন বন্দুকধারী কনস্টেবলও নেমে এসেছিল। তারা চারজনে মিলে কানুবাবুর গাড়িটা ঘিরে ফেলল। অফিসার গাড়ির ভেতরে উঁকি মেরে বললেন, ‘কোথায় মেয়ে? আর এ কে? মরে গেছে না কি?’

কানুবাবু বললেন, ‘মেয়েটি নেই? তাহলে আপনাদের দেখে পালিয়েছে। আর ও আমার বন্ধু। মারা যায়নি, ঘুমোচ্ছে।’

‘বাব্বা, এমন ঘুম! মেয়েটিকে ঠিক দেখেছিলেন তো?’

‘নিশ্চয়ই ঠিক দেখেছি। দেখুন না পেছনের সিট আর তলার পা রাখার জায়গা ভিজে রয়েছে কি না।’

অফিসার বললেন, ‘না, একেবারেই ভিজে নেই।’ বলে কনস্টেবলদের বললেন, ‘তোমরা জিপে গিয়ে বোসো। আমি আসছি।’

দরজা খুলে পেছনের সিটে বসলেন অফিসার। কানুবাবুকে বললেন, ‘আপনি উঠে আসুন আর আপনার বন্ধুকে ঘুম থেকে তুলুন। ওঁকে বলুন যে আজ সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছেন দু-জনে।’

এইবার ভয় পেলেন কানুবাবু। ধাক্কা মেরে ওঠালেন ভোলাবাবুকে। বললেন, ‘শোন একবার, ইনি কী বলছেন।’

অফিসার ভোলাবাবুকে জিগ্যেস করলেন, ‘আপনি মেয়েটিকে দেখেছিলেন?’

ভোলাবাবু বললেন, ‘কোন মেয়ে? ও সেই যাকে কানু বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল? দেখেছি বই কী? কোথায় সে?’

‘সেটা পরে বলছি। আচ্ছা, মেয়েটি কি লাল আর সবুজে চৌখুপি ডিজাইনের স্কার্ট আর সাদা রঙের জামা পরেছিল? কাঁধে ছিল গাঢ় নীল রঙের স্কুলব্যাগ?’

‘ঠিক তাই, গেল কোথায় সে?’

‘কোথাও যায়নি। এখানেই সে রয়েছে। একটা শিকার ফসকেছে, আর-একটার আশায় বসে রয়েছে।’

‘কী যে বলেন তার ঠিক নেই। শিকার আবার কী? ওইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে….’

‘তাহলে শুনুন। ওই যে টিলাটি দেখছেন যার ওপাশে মেয়েটির গ্রাম, ওটার পেছনে যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটি এই হাইওয়ে থেকে বেরিয়ে সামান্য কিছুদূর গিয়েই একটা সূচ্যস্র বাঁক নিয়ে বিপজ্জনকভাবে খাড়া নেমে গেছে নীচে পাহাড়ি নদীতে। যারা এইসব পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালাতে অভ্যস্ত, তাদের পক্ষেও সেই উতরাইতে সামলে চালানো প্রায় অসম্ভব। আর যারা অভ্যস্ত নয়, তাদের পক্ষে হুড়মুড় করে গিয়ে অনেক নীচে নদীর প্রচণ্ড স্রোতের মধ্যে আছড়ে পড়া ছাড়া আর গতি নেই। আর, সেই পড়ার অর্থ অবধারিত মৃত্যু।’

‘ব্রেক কষলে লাভ হয় না?’

‘না। গাড়ি তাহলে ডিগবাজি খেয়ে নদীর মধ্যে পড়বে। আর ব্রেক কষবেন কখন? বাঁকটা ঘোরার সঙ্গে-সঙ্গেই তো উতরাই। তার ওপর এই বৃষ্টি। একহাত দূরের গাছটাই ভালো দেখা যায় না, তো রাস্তা! ওই মোড়ে যানবাহনকে সতর্ক করতে বড়ো বোর্ডও আছে। এই বৃষ্টিতে সেটাই কি কারও নজরে পড়তে পারে?’

কানুবাবু বললেন, ‘মেয়েটি যে বলল নদীর ওপর একটা ব্রিজ আছে।’

‘ছিল। বছর পনেরো আগে সেটা বন্যায় ভেঙে যায়। এখন একটা দড়ির সাঁকো আছে। তার ওপর দিয়ে সাইকেল ঠেলে নিয়ে যাওয়া চলে, আপনার এই গাড়ি নয়।’

‘নদীর ওপারে গ্রামটা?’

‘সেটা আছে। মেয়েটা ওই গ্রামেই থাকত।’

‘থাকত?’

‘হ্যাঁ। প্রায় বারো বছর আগে এমনি এক বর্ষার সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ি চাপা পড়ে। ড্রাইভারের খুব একটা দোষ ছিল তা বলা যায় না। বৃষ্টিটা হচ্ছিল খুব জোরে, বেচারি দেখতে পায়নি। যখন দেখেছে, তখন আর সামলাতে পারেনি। তারপর থেকে, এই বারো বছরে প্রায় আট-দশটা গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে নেমে গিয়ে নদীতে ভেঙে পড়েছে। প্রায় চৌদ্দো-পনেরো জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। কেবল একজন গুরুতরভাবে আহত হয়েও বেঁচে ছিল কিছুদিন। মারা যাওয়ার আগে সে যে বয়ান দিয়েছিল, তার থেকেই আমরা জানতে পারি কেন এই গাড়িগুলো প্রবল বৃষ্টির মধ্যে হাইওয়ে ছেড়ে ওই দুর্গম রাস্তায় ভয়াবহ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছে। তা না-হলে হয়তো এই ঘটনাগুলো একটা রহস্যই থেকে যেত। আমাদের ওপরওয়ালারা অবশ্য এ-বয়ান বিশ্বাস করেননি। তাঁরা বলেন দুর্ঘটনার ফলে লোকটির মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই উলটোপালটা বকেছে। তাঁরা এই ব্যাপারটায় একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপও বাদ যায় না।’

‘অর্থাৎ আপনি বলতে চান যে মেয়েটি ভূত? আর এসব ভূতের প্রতিহিংসার ব্যাপার?’

‘অফিসিয়ালি সে কথা আমি আপনাকে বলতে পারি না।’

‘আমি ভূতে বিশ্বাস করি না।’ ব্যাজার মুখে বললেন কানুবাবু।

‘না-করতে পারেন। আপনার গাড়িটা কিন্তু করে। আর সেইজন্যেই সে ভয়ে স্টার্ট নেয়নি, যে কারণে আপনারা এখনও জীবিত আছেন। যাক গে, এখন বনেটটা একবার খুলুন, দেখি একে স্টার্ট করানো যায় কি না।’ বলে গাড়ি থেকে নামলেন অফিসার।

বনেট খোলার দরকার হল না। কানুবাবু চাবি ঘুরিয়ে সেল্ফ স্টার্টার টেপামাত্র গাড়ি চড়াৎ করে চালু হয়ে গেল। পুলিশ অফিসার জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললেন, ‘দেখছেন? কী বলেছিলাম?’ বলে পেছনের জিপের দিকে চলে গেলেন।

কানুবাবু সস্নেহে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ হাত বুলিয়ে বললেন, ‘দূর ব্যাটা ভীতুর ডিম। ভূত বলে কিছু নেই, জানিস না? ভয়ে একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেলি?’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *