ইন আ পার্ক অ্যাট টোয়ালাইট, আ লং টাইম এগো

ইন আ পার্ক অ্যাট টোয়ালাইট, আ লং টাইম এগো

আমি যখন ইলিমেন্টারি স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের পাড়ার ভেতর একটা পার্ক ছিল। যেহেতু এর আশেপাশে বড় বড় বিল্ডিং ছিল, তাই সন্ধ্যায় গোধলির সময়ে পার্কে ঢুকলে গাড়ির শব্দ আর লোজন এর চিল্লাচিল্লি হইচই পুরোপুরি মিলিয়ে যেত। বলা যায় পার্কটা ছিল বিশাল শহরের মধ্যে ছোট্ট এক নীরব জায়গা।

ডিনারের সময় হলে যে বন্ধুদের সাথে আমি খেলছিলাম তারা বাসায় চলে গেছিল। আমি পার্কে অপেক্ষা করছিলাম, কারন আমার বাবা-মা আমাকে নিতে আসার কথা ছিল।

দোলনায় দুলতে দুলতে বিরক্ত হয়ে গেলে আমি পার্কের কোনায় থাকা স্যান্ড বক্সে খেলতে গেলাম। জানি না কি কারনে আমি সবসময়ই ঐ জায়গাটার প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করতাম। বেশিরভাগ বাচ্চারা দোলনায় দুলতে কিংবা স্লাইডে চড়তে পছন্দ করত। স্যান্ডবক্সটা বেশির ভাগ সময়ই খালি পড়ে থাকত।

দুটো বিল্ডিঙের ভেতর দিয়ে আসা শেষ বিকেলের আলোটা পুরো পৃথিবীটাকে যেন লাল রঙে রঞ্জিত করে তুলেছিল। কথা বলার কেউ ছিল না বলে আমি একাই স্যান্ডবক্সে নিজের সাথে কথা বলছিলাম। আমার মনে আছে, ওখানে আমাদের খেলার জন্য হলুদ রঙের বাতিল একটা বালতি ছিল। আমি আমার জুতো জোড়া খুলে রেখে ঠান্ডা বালিতে পা দিলাম। পায়ের চারপাশে বালির ঘোট দানাগুলোর স্পর্শ আমার কাছে ভাল লাগছিল।

মাঝে মাঝে আমি আমার হাতদুটো বালির গভীরে ঢুকিয়ে দিতাম। দেখতে চাইতাম ওগুলো কত গভীরে ঢুকতে পারে। হাতগুলো সোজা ঢোকালে মোটামুটি আমার কাঁধ সমান গভীর পর্যন্ত যেতে পারতাম। বাবাকে যখন এ কথা বলেছিলাম তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেননি। এমনকি একটা স্যান্ডবক্সেরও শেষ আছে। এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে?” তিনি আমাকে বলেছিলেন।

আমি ভাবতাম বাবা ভুল করছেন। বাস্তবে আমার কাছে মনে হত বালুর ঢিবিটা আসলে অতলস্পর্শী। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। অসংখ্যবার পরীক্ষা করে দেখেছিলাম সেটা।

মনে নেই ঠিক কতবার আমি এরকম পরীক্ষা চালিয়েছিলাম কিন্তু একদিন যখন সূর্যাস্তের পর পার্কের কোনার গাছটা ছায়ার মত কালো রূপ ধারন করল, আর আমি স্যান্ডবক্সে বসে আমার ডান হাতটা টানটান করে বালির ভেতর কাঁধ পর্যন্ত ঢোকালাম, তখন অদ্ভুত কিছু একটার স্পর্শ অনুভব করলাম।

মনে হচ্ছিল কিছু একটা যেন বালির ভেতর পোঁতা আছে। জিনিসটা নরম আর ঠান্ডা। আমি জানতে চাইছিলাম জিনিসটা কি, তাই আমি আমার হাত যতটা সম্ভব টানটান করলাম। বালির গভীরতায় আমার মধ্যমা কোনরকমে জিনিসটাকে স্পর্শ করতে পারছিল। নরম আর ফোলাফোলা কিছু একটা। আমি চাইছিলাম জিনিসটা ধরে টেনে বের করে নিয়ে আসতে কিন্তু সেটা বার বার আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছিল।

বালির ভেতর থেকে হাত বের করে আনার পর দেখলাম আঙুলের সাথে কয়েকটা চুল আটকে আছে। চুলগুলো ময়লা আর বালিতে থেকে নষ্ট হয়ে গেলেও বুঝতে পারছিলাম ওগুলো কোন মেয়ের চুল।

আরো কয়েকবার আমি আমার হাত ঢুকিয়ে ওখানে যে জিনিসটা পোঁতা আছে তা ছোঁয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আর খুঁজে পেলাম না। খুঁজে না পেয়ে আমার মন খারাপ লাগছিল।

সেদিনের সেই গোধূলি বেলায় পৃথিবী যখন লাল রঙ ধারন করেছিল, তখন আমার মনে হচ্ছিল চারপাশের বিল্ডিংগুলো ভুতের মত নড়াচড়া করছে। মনে হচ্ছিল যেন আমি বড় কোন খাঁচার ভেতর রয়েছি, শুধু আমি আর স্যান্ডবক্সটা।

আবারো হাত বালির গভীরে ঢুকিয়ে আমার মনে হল কিছু একটা স্পর্শ করতে পারছি। খুব হালকা, মনে হচ্ছিল যেন একটা ছোট মাছ আমার আঙুলের মধ্যে নড়াচড়া করছে।

হঠাৎ করে বালির ভেতর কিছু একটা শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরল। আমি টেনে আমার হাত বের করে আনার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। মনে হচ্ছিল হাতটা ঐ জায়গায় আটকে গিয়েছে। আশেপাশে কেউ ছিল না যে আমি চিৎকার করে সাহায্য চাইব। এমনিতে চিল্লালেও আমার কণ্ঠ শুধু পার্কের মধ্যে প্রতিধ্বনি তুলত, কেউ শুনতে পেত না।

বালির গভীরে কিছু একটা জোর করে আমার মুঠি করে রাখা হাতটা টেনে খুলল। হাতের তালুতে আমি আঙুলের ডগার মত কিছু একটা অনুভব করলাম। সেটা তালুর উপর একটা নিয়মিত প্যাটার্নে ঘুরতে লাগল, আমি নিশ্চিত ছিলাম কিছু একটা লেখা হচ্ছে। ওটা লিখল:

“আমাকে এখান থেকে বের কর।”

কেউ একজন আমার হাতের তালুতে এই কথাটা লিখেছিল। আমি আমার অন্য হাতটা বালির ভেতর ঢুকিয়ে হাতের তালুর পেছনে লিখলাম, “পারছি না।”

সাথে সাথে আমার হাত আলগা হয়ে গেল। একটা স্রোতের মত বিষণ্ণতা এসে আমার উপর আছড়ে পড়ল। আমি আমার দুহাত বালি থেকে বের করে বাসায় ফিরে গেলাম।

এরপর আমি ঐ স্যান্ডবক্সটা থেকে দূরে থাকতাম। পরে নতুন বিল্ডিং বানানোর জন্য পার্কটা খুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। আমি তখন স্যান্ডবক্সটা দেখার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। বাবা ঠিকই বলেছিলেন, জায়গাটা মোটেও গভীর ছিল না। ওখানে কোন কিছু পোঁতা থাকা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *