ড্রাগন – বেনজামিন উইলিয়াম বোভা

ড্রাগন – বেনজামিন উইলিয়াম বোভা

ড্রাগনটিকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে ভিন্স। সে ভয় পাচ্ছে এটা তার আত্মা কেড়ে নেবে ভেবে। ভিন্স একেবারেই সাধারণ ধরনের এক তরুণ ফ্যামিলি ম্যান। সে ফ্যামিলির সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করবে বলে সাউথ ফিলাডেলফিয়া হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করেনি। সে গাড়ি পছন্দ করে, স্থানীয় দোকান থেকে চুরি করে সুট, এমনকী বড় ট্রেলার রিগ চালানো শিখতে বিপজ্জনক সময় কাটায় যাতে হাইজ্যাকিংয়ে সাহায্য করতে পারে।

কিন্তু ওরা বড়সড় কাজে ওকে সম্পৃক্ত করতে চায় না।

তুমি আমার জন্য নাম্বারের হিসাব রাখো, খোকা, বলে লুই ব্যানানাস, সাউথ ফিলির এক হাত কাটা পলিসি কিং।

আমি বড় কিছু করতে চাই, অধৈর্য নিয়ে বলে ভিন্স। আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই।

লুই তার বলেটের মতো ন্যাড়া মাথাটি নাড়ে। তোমাকে দেখে মনে হয় না অতটা সাহস তোমার আছে, কিড।

সুযোগ দিয়েই দেখো না! লোন শার্কগুলোর ভার আমাকে দাও।

কাজেই লুই ভিন্সকে একদিনের জন্য দায়িত্ব দিল লোন শার্কদের এনফোর্সার বিগ বলস ফ্যালকোনিকে অনুসরণ করার জন্য। এক লোক তার পেমেন্ট দিতে দশ দিন দেরি করেছে বলে বিগ বস যখন লোকটির আঙুল এক এক করে ভেঙে দিচ্ছিল, সেই দৃশ্য দেখে ভিন্স বলল ললন শার্কিং তার কাজ নয়।

সশস্ত্র ডাকাতি? ভিন্স কোনোদিন বন্দুকই হাতে নেয়নি, গুলি করা দূরে থাক। তাছাড়া সশস্ত্র ডাকাতি করে দলের পুরোভাগে থাকে মস্তান, বুন্ধু, নির্বোধ এবং বেপরোয়া লোকগুলো। সশস্ত্র ডাকাতির সঙ্গে অর্গানাইজড ক্রাইম ঠিক খাপ খায় না। প্রয়োজনও নেই। আর এতে হতাহত হবার সম্ভাবনাও থাকে।

কয়েক মাস লুই ব্যানানাস এর প্রিয় রেস্টুরেন্টে গিয়ে তাকে মিষ্টি কথায় পটিয়ে এবং কাকুতি মিনতি করার পরে ভিন্স যা চাইছিল সেরকম একটি কাজ পেয়ে গেল।

ওকে, কিড, ওকে, এক সন্ধ্যায় লুই সাদা সস দিয়ে লিঙ্গুইন খাচ্ছিল, ভিন্সকে রেস্টুরেন্টের এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, তোমার জন্য একটি কাজ ঠিক করেছি আমি। এদিকে এসো।

নিজের কানকে বিশ্বাস হলো না ভিন্সের।

কী কাজ? কী? আমি যেকোনো কাজ করতে রাজি!

ন্যাপকিনের আড়ালে মৃদু ঢেকুর তুলে চেয়ারে হেলান দিল লুই। ভিন্সের কোঁকড়ানো চুলের মাথাটি খামচে ধরে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে এল।

রসুনে অ্যালার্জি আছে ভিন্সের, প্রাণপণে হাঁচি ঠেকিয়ে লুইয়ের ফিসফিসানি শুনল। ফ্রন্ট অ্যান্ড ওয়াশিংটনের ধারে পুরানো Band O ওয়্যারহাউসটা চেনো তো?

জি, চিনি। কোনোমতে মাথা ঝাঁকাল ভিন্স, কারণ লুই তখনও বজ্রমুষ্টিতে তার চুল চেপে ধরে আছে।

ওটা জ্বালিয়ে দাও।

পুড়িয়ে ফেলব? কিচকিচ করে উঠল ভিন্স।

আহ, আস্তে।

পুড়িয়ে ফেলব? গলা নামাল ভিন্স।

হ্যাঁ।

কিন্তু ওটা তো আরসন। অগ্নিসংযোগের দুষ্কর্ম।

হেসে উঠল লুই। আজ কাল এটা কেঁপে ওঠা ইন্ড্রাস্ট্রি। যে ছেলেরা আগুন নিয়ে খেলতে ভয় পায় না তাদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ।

হ্যাঁচ্চো করে হাঁচি দিল ভিন্স।

.

ভিন্স জানে ভাঙাচোরা, পুরানো গুদামঘরটা পুড়িয়ে ফেরতে খুব বেশি কৌশলের প্রয়োজন নেই। আগুন ধরিয়ে দিলেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু ধরা না পড়ে কীভাবে আগুন ধরানো যায় সেটাই হলো প্রশ্ন।

ফায়ার ডিপার্টমেন্ট, পুলিশ এবং সবচেয়ে খারাপ ইনসিওরেন্স কোম্পানিগুলোরও বিশেষ আরসন স্কোয়াড কোম্পানিগুলোরও বিশেষ আরসন স্কোয়াড রয়েছে যারা পোড়া ওয়্যারহাউসের ধোয়া মিলিয়ে যাওয়ার আগেই গন্ধ শুঁকতে শুরু করবে।

কীভাবে আগুন লাগাতে হয় কিছুই জানে না ভিন্স। তবে এমন একটা সুযোগ যখন মিলেছে, শিখে নেবে সে সবকিছু।

সে জনি দ্য টর্চের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করল, এ হলো স্থানীয় মস্তান সর্দার। কিন্তু জনি এত ব্যস্ত যে তার সঙ্গে দেখা করা খুব মুশকিল। তাছাড়া জনি প্রতিপক্ষ একটি ফ্যামিলির জন্য কাজ করে। ভিন্স আরও যে দুজন লোককে চেনে, যাদের ফিল্ডে নামডাক আছে, তারা গত দুই রাতে রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ।

ভিন্স মনে করে না যে লাইব্রেরিতে এ বিষয়ে কোনো বই আছে যা ওকে সাহায্য করতে পারবে। তাছাড়া পড়ার অভ্যাসও তার তেমন নেই।

কাজেই গোটা কাজ নিয়ে ভীত ভিন্স ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পরদিন রাতে চুরি করা একটি স্টেশন ওয়াগন নিয়ে, তাতে গ্যাসোলিনের জেরিক্যান এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট থিনারের বড় বড় ড্রাম ভরে ফ্রন্ট স্ট্রিটে হাজির হলো।

পুরানো ওয়্যারহাউজের প্রবেশপথে আলগা ঝুলতে থাকা বোর্ড পেরিয়ে ভেতরে ঢুকল ভিন্স। অন্ধকারে গা ছমছম করছে। ওয়্যারহাউজ খালি এবং ধুলো ময়লায় ভর্তি, তবে ইনসিওরেন্স কোম্পানি জানে লুই-র ফুট অ্যান্ড

ভেজিটেবল ফার্ম মাত্র হপ্তাখানেক আগে গুদামঘরে ঠেসে রেখেছে মাল।

ভিন্স টের পেল তার হাত কাঁপছে। আমি ঠিকমত কাজ দেখাতে না পারলে লুই আমার পেছনে বিগ বলস ফ্যালকোনিকে লেলিয়ে দেবে।

এমন সময় সে জোরে শ্বাস ফেলার শব্দ শুনতে পেল।

জমে গেল ভিন্স। অন্ধকারে নিজেকে অদৃশ্য করে দিতে ইচ্ছে করল।

কেউ শ্বাস নিচ্ছে। এবং সেটা ভিন্স নয়।

খাইছে আমারে। ওরা তো আমাকে বলেনি এখানে নাইট গার্ড আছে।

আমি নাইট গার্ড নই।

ভিন্স ভয়ানক চমকে উঠল।

আমি পুলিশও নই। কাজেই ভয় পেয়ো না।

কে… ভিন্সের গলা খ্যাড়খেড়ে শোনাল। ঢোক গিলে এবারে একটু গম্ভীর গলায় জানতে চাইল, কে তুমি?

আমি ঘুমাবার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এ জায়গাটা স্টোনহেঞ্জে পরিণত হয়েছে। সারাক্ষণ লোকজন আসছে আর যাচ্ছে।

ভিখারি, ভাবছে ভিন্স। কোনো ভিখারি গুদামঘরটিকে তার আশ্রয়স্থল বানিয়েছে।

এবং আমি কোনো ভিখারি নই, শক্ত গলায় বলল কণ্ঠটি।

আমি তোমাকে তা বলিওনি, জবাব দিল ভিন্স। তারপর সে কেঁপে উঠল, কারণ ও তো এসব কথা মুখ ফুটে বলেইনি। মনে মনে চিন্তা করেছে। কেবল।

খালি ওয়্যারহাউজের বিপুল অন্ধকারের মাঝে একটা আলো জ্বলজ্বল করে উঠল। ভিন্স একঠায় তাকিয়ে রইল ওদিকে, তারপর বুঝতে পারল ওটা একটা চক্ষু। জ্বলজ্বলে একটা চোখ, কুটিল নয়ন, খাড়া মণি, বেড়ালের মতো। তবে চক্ষুটা বিরাট একটা বলের সমান!

ক্ব-ক্বী…

ওটার পাশে খুলে গেল আরেকটা চোখ। ধিকিধিকি জ্বলা দুটি চোখের আলোয় ভিন্স আবছা ঠাহর করল আঁশযুক্ত একটা মাথাও আছে ওগুলোর সঙ্গে, আর প্রকাণ্ড মুখ জুড়ে দাঁত আর দাঁত।

সে তা-ই করল যা অন্য যে কেউই করত। অজ্ঞান হয়ে গেল ভিন্স।

চোখ খোলার পরে আবারও জ্ঞান হারাতে চাইল সে। পুরানো গুদামঘরের ভাঙা কাঁচের জানালা গলে ঢোকা ভুতুড়ে চাঁদের আলোয় ভিন্স দেখল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ড্রাগন।

লম্বা, সর্পিল একটা শরীর, চকচকে সবুজ এবং নীলচে আঁশ দিয়ে মোড়া, চারটে প্রকাণ্ড পায়ে করাতিদের করাতের মতো বিরাট বিরাট থাবা। লেজটি কুণ্ডলী পাকানো, এতই বড় যে ডগা গিয়ে ঠেকেছে ওয়্যারহাউসের আরেক মাথায়।

ভিন্সের ঠিক মাথার ওপর মুখ ভর্তি দাঁত আর বিড়ালের মতো জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে ঝুঁকে আছে প্রাণীটা। হাসছে।

তুমি খুব কিউট, বলল ড্রাগন।

কী?

গত কয়েক রাতে লুই এখানে অন্য যেসব লোকজন পাঠিয়েছে তুমি মোটেই তাদের মতো দেখতে নও। ওরা ছিল বুড়ো, মোটা আর হোঁতকা।

অন্য লোকজন?

সাদা দাঁতের সারির ভেতর দিয়ে ড্রাগনের চেরা জিভ লকলক করে উঠল। তোমার কি ধারণা আরসনিস্ট হিসেবে লুই তোমাকেই এখানে প্রথম পাঠিয়েছে? ওরা গত বেশ কয়েক রাত ধরে এখানে ঝাড় বেঁধে আসছিল।

এখনও চিৎ হয়ে শুয়ে আছে ভিন্স, জিজ্ঞেস করল, ও… ওদের কী হয়েছে?

ড্রাগন পেটের ওপর ভর করে উবু হয়ে বসল। তারপর ভিন্সের দিকে তাকিয়ে হাসল। ওদেরকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। ওরা আমাদের বিরক্ত করতে আসবে না। চেরা জিভটা আবার বেরিয়ে এসে ঘষা খেল ভিন্সের মুখে। হ্যাঁ, তুমি খুব কিউট।

ধীরে ধীরে ফিরে আসছে ভিন্সের হারানো সাহস। সে ড্রাগনের সঙ্গে কথা বলছে বটে, তবে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না এটা সত্যি ঘটছে। সে আস্তে আস্তে উঠে বসল।

আমি তোমার মনের কথা পড়তে পারি, বলল ড্রাগন। কাজেই পালাবার চিন্তার কথা ভুলে যাও।

আ.. ইয়ে, এ জায়গাটাতে আমার আগুন লাগাবার কথা ছিল, স্বীকার গেল ভিন্স।

জানি আমি, বলল ড্রাগন। কথা শুনে শুনে হচ্ছে এটি মেয়ে ড্রাগন।

হ্যাঁ, তুমি ঠিকই ধরেছ, বলল সে। আমি মেয়ে ড্রাগন। সত্যি বলতে কী এ পর্যন্ত তোমরা মানুষরা যত ড্রাগনের সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়েছ সবগুলোই ছিল মেয়ে ড্রাগন।

সেন্ট জর্জের মতো? অস্ফুটে বলল ভিন্স।

ওটা একটা মরদ নাকি! ওই লোকটা এবং তার বর্ম দুটোই মেয়েলি। শিশা খালা ইচ্ছে করলেই ও যে প্রেশার কুকার গায়ে দিয়েছিল তার মধ্যে ওকে ঝলসে ফেলতে পারত। কিন্তু লোকটাকে দেখে তার এমন হাসি পেয়ে যায় যে, হাসতে হাসতে তার আগুনই যায় নিভে!

কিন্তু সেন্ট জর্জ তো ওকে হত্যা করেছিলেন।

হত্যা করতে পারেনি! রেগে গেল ড্রাগন, বাম নাকের ফুটো দিয়ে ধোঁয়ার একটা কুণ্ডলী বেরুল। শিশা খালা নিজেকে অদৃশ্য করে পালিয়ে যায়। হাসতে হাসতে তার হেঁচকি উঠে গিয়েছিল।

কিন্তু কিংবদন্তি বলে,

রাখো তোমার কিংবদন্তি। ড্রাগন হত্যা করা এতই সোজা! ড্রাগন মারতে পারে এমন মানুষের এখনও জন্ম হয়নি।

আমার ওপর রাগ কোরো না। আমি কিছু করিনি।

না, তুমি কিছু করনি, ড্রাগনের কণ্ঠ নরম শোনাল। তুমি খুব কিউট, ভিন্স।

ভিন্সের মগজে তখন উথাল পাথাল। হয় সে পাগল হয়ে গেছে নতুবা সত্যিই সত্যিকারের একটি আগুন ছোঁড়া ড্রাগনের সঙ্গে কথা বলছে।

আহ্… তোমার নাম কী?

শশ্রয্যহ, বলল সে। আমি ড্রাগন পরিবারের পোলিশ শাখার মেয়ে।

শশ্র…যয… উচ্চারণ করার চেষ্টা করল ভিন্স।

তুমি আমাকে সিজল বলে ডাকতে পারো, অহঙ্কারী গলায় বলল ড্রাগন।

সিজল। বাহ, খুব সুন্দর নাম তো।

জানতাম তুমি নামটি পছন্দ করবে।

আমি যদি ঘোরের মধ্যে থাকি ওরা এসে আমাকে এখন হোক বা পরে হোক জাগিয়ে তুলবে, ভাবল ভিন্স। ঠিক করল যতক্ষণ পারে ড্রাগনের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাবে।

তুমি বলছ আমাদের লোকেরা এ পর্যন্ত যত ড্রাগনের সঙ্গে মারামারি করেছে তারা সবাই মাগী.. মানে মহিলা ছিল?

ঠিক তাই, ভিন্স। কাজেই দেখতেই পাচ্ছ আমাদের কিশোরী কুমারীদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলার যে গল্প ফেঁদেছে মানুষেরা তা কেমন মিথ্যা।

আ-হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে।

আরও বড় মিথ্যা হলো ড্রাগন বধ করার বিষয়টি। ডাহা মিথ্যা।

সত্যি?

তুমি কি জাদুঘরে স্টাফ করা কোনো ড্রাগন দেখেছ? কিংবা ড্রাগনের হাড়? অথবা দেয়ালে ঝোলানো ড্রাগনের মাথা?

আ.. জাদুঘরে আমার তেমন যাওয়া হয় না।

সেক্ষেত্রে আমি তোমাকে কিছু বিশেষ গুহার চমকপ্রদ কিছু প্রদর্শনী দেখাতে পারি। যদি তুমি দেখতে চাও হাড়গোড়, মাথা এবং…

না, না, ধন্যবাদ। আমি এসব দেখতে চাই না, দ্রুত বলল ভিন্স।

না দেখাই ভালো।

পুরুষ ড্রাগনরা সব কোথায়? ওরা নিশ্চয়ই আকারে অনেক বড়।

সিজল নাক দিয়ে উদ্ধত ভঙ্গিতে ফোঁস করে একটা শাস ফেলল, ধোঁয়ার দুটো রিং ভিন্সের কানের পাশ দিয়ে চলে গেল।

আমাদের প্রজাতির পুরুষরা ক্ষুদ্রাকৃতির। তোমার চেয়ে আকারে বড় হবে কিনা সন্দেহ। ওরা সবাই ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপে বাস করে। ওখানে প্রতি একশো বছর পরে আমাদের উড়ে যেতে হয় মিলনের জন্য নইলে আমাদের প্রজাতিটি তো থাকবে না।

প্রতি একশো বছর অন্তর! এক শতকে মাত্র একবার তোমরা বিছানায় যাও?

সেক্স আমাদের জন্য কৌতুকের বিষয় নয়। তোমাদের জন্যও নয়। তাছাড়া তোমরা এসেছ বানরের বংশ থেকে। বিরক্তিকর মানব প্রজাতি। সারাক্ষণ বকবক আর বকবক এবং একটা না একটা ঝামেলা পাকাচ্ছেই।

আ, ইয়ে…সিজল। বলছিলাম কী তোমার সঙ্গে আলাপ হয়ে বেশ লাগল। কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। আমাকে এখন উঠতে হবে। তা ছাড়া…

তুমি এখানে কেন এসেছ সে কথা ভুলে গেলে?

সত্যি বলতে কী ভুলেই গিয়েছিল ভিন্স। এখন মনে পড়ল। এই ওয়্যারহাউসে আমার আগুন লাগাবার কথা।

ঠিক। এবং তোমার ছোট্ট, সুন্দর মাথাটির ভেতরে যে চিন্তাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি, তা হলো, তুমি যদি আজ রাতে এখানে আগুন লাগাতে না পার তাহলে লুই তোমার ওপরে ভয়ানক খেপে যাবে।

হুঁ। ওটাই আমার সমস্যা। মানে বলছিলাম তুমি তো এখানে থাকতে চাও এবং ঘুমাতে চাও, তাই না? অন্যদের মতো আমি তোমাকে বিরক্ত করব না। ধরো, তুমি যখন ভারত মহাসাগরে গেলে কিংবা অন্য কোনো কাজে বেরিয়ে পড়লে তখন আমি আসতে পারি…।

বোকার মতো কথা বোলো না, ভিন্স, বলল সিজল, গদাই লস্করি চালে চার থাবায় ভর দিয়ে উঁচু করল শরীর।

আমি যেকোনো জায়গাতেই ঘুমাতে পরি। আর ঈশ্বরের কৃপায় আগামী বেশ কয়েক দশকের মধ্যে আমার মিলনের কোনো অবকাশ নেই। আর ওই লোকগুলোর কথা বলছ… ওরা আমাকে বিরক্ত করছিল। কিন্তু তুমি খুব কিউট। খুব ভালো।

ধীরে ধীরে খাড়া হলো ভিন্স, দেখে অবাকই হলো তার কম্পমান হাঁটুজোড়া তাকে সিধে করে রেখেছে। সিজল লম্বা, চকচকে শরীর দিয়ে ভিন্সকে কুণ্ডলী পাকিয়ে জড়িয়ে ধরে হাসল। তার দাঁতগুলো যেন কসাইয়ের ধারাল ছুরি।

সিজল বলল, এই পুরানো জায়গাটায় থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত। এটাকে দুজনে মিলে পুড়িয়ে ফেললে কেমন হয়?

কী?

তোমার চেয়ে আমি অনেক ভালভাবে এ জায়গাটা পুড়িয়ে দিতে পারব, ভিন্স কিউটি, বলল সিজল। এবং আমি পেছনে গ্যাসোলিনের কোনো চিহ্ন রেখেও যাব না।

কিন্তু…

তুমি একদম ক্লিয়ার থাকবে। আর কোনো পুলিশকে আমার ধারে কাছে আসতে দেখলেই আমি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারব।

অদৃশ্য?

নিশ্চয়ই। দেখবে? এবং অদৃশ্য হয়ে গেল সিজল।

অ্যাই, কোথায় গেলে?

এই তো আমি, ভিন্স। প্রকাণ্ড চকচকে শরীর নিয়ে পুনরাবির্ভাব ঘটল সিজলের।

ভিন্স হাঁ করে তাকিয়ে থাকল, তার কালো কোঁকড়ানো চুলের মাথার নিচে চিন্তাভাবনাগুলো যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল।

তার দিকে তাকিয়ে হাসল সিজল। তুমি কী বলো, কিউটি? একসঙ্গে দুজনে মিলে দুষ্কর্ম করি? তুমি আর আমি মিলে দারুণ কিছু করতে পারব, ভিন্স। আমি তোমাকে শীঘ্রি ফ্যামিলির শীর্ষে তুলে দিতে পারব।

ভিন্সের ধীরগতিতে উত্তেজিত হতে থাকা মনে ভয়ঙ্কর একটা চিন্তা খেলে গেল। এক মিনিট। আমি এরকম ঘটনা টিভিতে দেখেছি। তুমি আমাকে সাহায্য করবে, বদলে আমার আত্মা তোমাকে বিক্রি করে দিতে হবে, তাই না?

তোমার আত্মা? তোমার আত্মা দিয়ে আমি কী করব?

তুমি শয়তানের পক্ষে কাজ করছ এবং তুমি আমার তিনটে ইচ্ছে পূরণ করবে, তবে বিনিময়ে মৃত্যুর পরে আমার আত্মা তোমাকে দিয়ে দিতে হবে।

গুরুভার মাথাটি নাড়ল সিজল, তাকে খানিকটা অপমানিত মনে হলো। ভিন্স– স্বীকার করছি হাজার বছর ধরে ড্রাগন এবং মানুষদের মধ্যে তেমন সুসম্পর্ক নেই, তবে আমরা শয়তানের পক্ষে কাজ করি না। এমনকী আমি নিশ্চিতও নই শয়তান বলে কিছু আছে কি-না। আমি কোনোদিন শয়তান দেখিনি। তুমি দেখেছ?

না, তবে—

আর তোমার আত্মারও আমার দরকার নেই, বোকা ছেলে।

আমাকে কোনো কিছুতে তা হলে সই টই করতে হবে না?

অবশ্যই না।

এবং তুমি এই আবর্জনা পোড়ানোর কাজটা এমনি এমনি করে দেবে?

তার চেয়েও বেশি কিছু করব, ভিন্স। ফ্যামিলির শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছতে আমি তোমাকে সাহায্য করব। আমরা ক্রাইম পার্টনার হব! হিসপিস খালার শিকাগো ফায়ারের ঘটনার পরে এটিই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে মজার ঘটনা।

অ্যাই, আমি শুধু এই গুদামঘরটিতেই আগুন লাগাতে চাই।

তা তো বটেই।

কোনো শিকাগো ফায়ার বা এরকম অন্য আর কিছু নয়।

কথা দিচ্ছি।

মনস্থির করতে বেশ সময় লাগল ভিন্সের। তারপর বলল, ঠিক আছে। চলো কাজটা করি।

সিজল মাথাটা এক দিকে কাত করল। তার আগে গুদামঘর থেকে তোমার বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয় কি, ভিন্স?

হাহ্? ও হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।

তুমি বরং গাড়ি নিয়ে তোমার বাড়ি চলে যাও, কিংবা আরও ভালো হয় সেই রেস্টুরেন্টে চলে যাও যেখানে তোমার বন্ধুরা আছে।

মানে? আগে তো এ জায়গাটায় আগুন লাগাতে হবে।

ওটা আমার ওপর ছেড়ে দাও, ভিন্স সোনা। গুদামঘরে যখন আগুন লাগবে তখন লোকজন যদি পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দেয় ওইসময় তুমি ওদের সঙ্গে ছিলে, তাহলে ব্যাপারটা ভালো হয় না, বলো?

হ্যাঁ, ভালো হয়… একটু সন্দেহ নিয়েই বলল ভিন্স।

ঠিক আছে, বলল সিজল। তুমি তোমার ছোট্ট কিউট শরীরটা নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে যাও, যখন বুঝব তুমি ওখানে নিরাপদে পৌঁছেছ তখন আমি এ জায়গাটা চিতার মতো পুড়িয়ে দেব।

তুমি কীভাবে বুঝবে…?

যে তুমি রেস্টুরেন্টে পৌঁছেছ কিনা? আমার টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা আছে, ভিন্স।

কিন্তু আমি কীভাবে জানব…

যে এই ফালতু জিনিসটায় আগুন লাগল কিনা? চিন্তা কোরো না, তুমি আকাশের বুকে অগ্নিশিখা দেখতে পাবে। উত্তেজিত শোনাল সিজলের কণ্ঠ।

আপত্তি করার মতো আর কিছু না পেয়ে ধীরে এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওয়্যারহাউজের দরজায় পা বাড়াল ভিন্স। পথে সিজলের লম্বা লেজটা টপকাতে হলো।

দোরগোড়ায় পৌঁছে ঘুরল ভিন্স। বিলাপের গলায় বলল, তুমি সত্যি বলছ আমার আত্মার পেছনে তুমি লাগবে না?

হাসল সিজল ওর দিকে তাকিয়ে। তোমার আত্মার পেছনে আমি লাগব না, ভিন্স। এ বিষয়ে আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো।

.

ওয়্যারহাউসে আগুন লাগার মতো দৃশ্য লোকে বহুদিন দেখেনি। এ কেসটি পুলিশকে একদম বোকা বানিয়ে দিল। ভিন্সকে তারা যথেষ্টই জেরা করল, কারণ সে চুরি করা স্টেশন ওয়াগনের পেছনে রাখা গ্যাসোলিনের ক্যান এবং পেইন্ট থিনার সরিয়ে ফেলতে পারেনি। কিন্তু ওর ওপর কোনো দোষ চাপাতে পারল না, এমনকী গাড়ি চুরির অভিযোগও নয়, লুই বিগ বলস ফ্যালকোনিকে বলে দিয়েছিল সে যেন ওয়াগনের বেজার মালিককে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে।

ফ্যামিলিতে ভিন্সের অবস্থান বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। বেশ চোখে পড়ার গতিতেই।

ভিন্সের বিশেষত্ব হয়ে উঠল অগ্নিসংযোগ। লুই তাকে কঠিন কঠিন সব অ্যাসাইনমেন্ট দিতে লাগল এবং কাজ দেয়ার পরের রাতেই দেখা যায় ভিন্স হাওয়া, তবে কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেছে।

সিজলের সঙ্গে তার নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হয়, মাঝে মধ্যে পরিত্যক্ত দালানে, কখনও খালি কোনো লটে। ড্রাগন তখন অবশ্যই অদৃশ্য হয়ে থাকে। খালি লটের ধার দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুএকজন পথচারী দেখতে পায় সাজগোজ করা এক তরুণ বাতাসের সঙ্গে কথা বলছে। তারা তরুণকে পাগল ভেবে আর দ্বিতীয়বার ওদিকে ফিরে তাকায় না।

পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা শুনতে পায় তরুণটি বাতাসকে জিজ্ঞেস করছে, তুমি সত্যি আমার আত্মার ব্যাপারে আগ্রহী নও?

তবে সিজলের জবাব শুধু ভিন্সই শোনে। না, ভিন্স। আমার আত্মা দিয়ে কোনো কাজ নেই। না তোমার, অন্যের।

মাস যায়। ফ্যামিলিতে ভিন্সের দ্রুত উত্থানে স্বাভাবিকভাবেই অন্য তরুণদের চোখ টাটায় যারা ওর বিরোধী এবং প্রতিষ্ঠানে সামনের দিকে থাকতে চায়। বিরোধিতা মাঝে মাঝে শত্রুতা, হুমকি, এমনকী ভায়োলেন্সও সৃষ্টি করে।

তবে অদ্ভুত ব্যাপার, ভিন্সের সঙ্গে যেই লাগতে গেছে পরে তার আর কোনো হদিস মেলেনি। কোনো চিহ্নই থাকে না তাদের, শুধু একবার ফ্যাটস লোমবার্ডির এক পাটি পোড়া কালো জুতো পাওয়া গেল টুয়েলফথ। এবং থার্টিনথের মাঝখানে টাসকার স্ট্রিটে।

ফ্যামিলির অন্যান্য সিনিয়র সদস্য এবং লুই সমঝদারের ভঙ্গিতে মাথা দোলায়। ভন্স কেবল উচ্চাভিলাষী এবং প্রতিভাবান নয়, সে বেশ চৌকসও। নিজের দোরগোড়ায় কোনো লাশ পড়ে থাকতে দেয় না সে।

অগ্নিসংযোগ থেকে ভিন্স তার হাত বাড়িয়ে দিল লোন শার্কিঙের দিকে। এটি এখনও ফ্যামিলির অপারেশনের কলিজা। তবে কাস্টমারদের ঠিক সময়ে টাকা শোধ করার জন্য বিগ বলস ফ্যালকোনির মতো তাকে হুমকি দিতে হয় না। যেসব কাস্টমার টাকা দেয় না, তাদের গাড়িগুলো দেখা যায় পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। ওদের চোখের সামনে একদিন ফুটপাতে দাঁড়ানো। একটি গাড়িতে আগুন ধরে গেল।

খুব দুঃখজনক ব্যাপার, মাথা নাড়তে নাড়তে বলে ভিন্স। পরের বারে না তোমার বাড়িটাই আগুনে পুড়ে যায়। সে রহস্যময় ইঙ্গিত দেয় এবং অদৃশ্য কাউকে লক্ষ্য করে চোখ টেপে। অন্তত উপস্থিত লোকজন কাউকে দেখতে পায় না।

বিগ বলস ফ্যালকোনি যেদিন দেখতে পেল তার ব্যবসা পড়ে যাচ্ছে, সে ভিন্সের পিছে লাগল। তার পরপরই বিগ বস আক্ষরিক অর্থেই ধোঁয়ার মেঘে পরিণত হলো।

বছর গড়ায়। ভিন্স ইতিমধ্যে দারুণ সমৃদ্ধি অর্জন করে ফেলেছে। সে আর এখন সেই আগের রোগা ভোগা ভীত কিশোরটি নেই যখন সিজলের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল। সে এখন দামী পোশাক পরে, ব্যাংকার এবং ব্রোকারদের সঙ্গে স্টেক ও লবস্টার দিয়ে লাঞ্চ করে।

পুরানো বাসা ছেড়ে ভিন্স বর্তমানে জাসিট চেরি হিলের কাছে প্রাসাদোপম র‍্যাঞ্চ স্টাইলের একটি বাড়িতে উঠে এলেও এখনও প্রতি রোববারে সকালে ম্যাস এ যোগ দিতে এপিক্যানি চার্চে যায়। সে চার্চের লিটল লীগ বেসবল টিমের স্পন্সর এবং চার্চের বার্ষিক লটারিতে সে প্রতি বছর একটি টয়োটা গাড়ি দান করে।

এসব চ্যারিটির বিষয়ে সহকর্মীদের কাছে ভিন্স ব্যাখ্যা দেয় এগুলো হলো এক ধরনের ইনসিওরেন্স। সে এসময় ওপর দিকে মাথা তুলে তাকায়। তার সঙ্গীরা ভাবে সে স্বর্গের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু ভিন্স তখন সিজলকে খুঁজছে যে কিনা খুব একটা দূরে থাকে না।

সত্যি, ভিন্স। মুখ টিপে হাসে ড্রাগন। আমাকে তুমি এখনও বিশ্বাস করতে পারলে না। এতগুলো বছর বাদে তোমার আত্মার আমার প্রয়োজন। নেই। সত্যি বলছি চাই না।

ভিন্স তারপরেও চার্চে যায় এবং চ্যারিটিতে টাকা ঢালে।

অবশেষে লুই, বুড়ো এবং ভঙ্গুর, ভিন্সকে ফ্যামিলির উত্তরাধিকার বানিয়ে একদিন ঘুমের মধ্যে শান্তিতে মারা গেল। মৃত্যুকালে তার পাশে তার কোনো আত্মীয় স্বজন কিংবা ফ্যামিলির কেউ ছিল না। ফ্যামিলির ইতিহাসে এ সত্যি বিরল ঘটনা।

ভিন্স এখন ফ্যামিলির কাপু বা কর্তা। তার বয়স এখনও চল্লিশ পেরোয়নি। সুঠাম দেহ, চুলে পাক ধরেনি, একটু মুটিয়ে গেছে। তার এখন ব্যক্তিগত দর্জি রয়েছে, আছে নিজস্ব নাপিত এবং অপূর্ব সুন্দরী নারীদের সান্নিধ্য সে উপভোগ করছে যা তার কল্পনাতেও ছিল না।

কাপ্ত হিসেবে তার এ আরোহণে লুইর অন্যান্য সাগরেদরা চ্যালেঞ্জ করে বসল। কিন্তু তাদের কয়েকজন কোনো চিহ্ন না রেখে বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ায় অন্যরা দ্রুতই ভিন্সের সঙ্গে স্থাপন করল শান্তি।

ভিন্স বিয়ে করেনি। তবে সে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করছে জীবন।

তুমি বড্ড বেশি মোটা হয়ে যাচ্ছ, ভিন্স, এক রাতে ওকে সতর্ক করে দিল সিজল। দুজনে মিলে অন্ধকার এবং জনশূন্য ওয়াটারফ্রন্টের সামনে হাঁটতে বেরিয়েছে। এখানেই ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল। হার্ট অ্যাটাক ফ্যাটাকের ভয় নেই তোমার?

নাহ, বলল ভিন্স। আমার হার্ট অ্যাটাক হবে না। বরং আমিই ওদের হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি। নিজের ঠাট্টায় নিজেই আনন্দ পেয়ে হো হো করে হাসল সে।

তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছ, ভিন্স। আগের মতো আর কিউট নেই।

আমার কিউট থাকার দরকার নেই, সিজল। আমার হাতে এখন ক্ষমতা আছে। আমি যেমন খুশি যা খুশি এখন করতে পারি। কে আমার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে?

সিজল বিরক্ত হলো। তবে ভিন্স তার দিকে নজর দিল না। আমি যা চাই তাই করতে পারি! আকাশের দিকে মাথা উঁচিয়ে চিৎকার করল ভিন্স। আমার আছে ক্ষমতা আর ওই লুথাগুলো আমার ভয়ে মূৰ্ছা যায়! সে হো হো করে হাসতেই লাগল।

কিন্তু, ভিন্স, বলল সিজল। এই ক্ষমতা পেতে আমিই তোমাকে সাহায্য করেছি।

তা তো বটেই, তা তো বটেই। তবে পাওয়ার যখন পেয়ে গেছি তোমার সাহায্যের আর কোনো প্রয়োজন নেই আমার। আমি যা চাই ফ্যামিলির যে কাউকে দিয়ে তা করাতে পারি।

ড্রাগনরা কাঁদে না তবে সিজলের চেহারা এমন হয়ে উঠল যে কেউ দেখলেই তার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যেত।

শোনো, অহঙ্কারী গলায় বলে চলল ভিন্স, আমি জানি তুমি আমাকে অনেক অনেক সাহায্য করেছ এবং সে কথা আমি কোনদিন ভুলব না। তুমি এখন আমার প্রতিষ্ঠানের পার্টনার থাকবে, সিজল, ওল্ড গার্ল। তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না।

মাস গড়িয়ে বছর যেতে লাগল, ভিন্স এখন খুব কমই সিজলের সঙ্গে দেখা করে। তার দরকারই হয় না। আর ভেতরে ভেতরে সে খুশি সিজলের সঙ্গে তার আগের মতো ঘন ঘন দেখা সাক্ষাৎ করতে হচ্ছে না বলে।

ওকে আর আমার দরকার নেই। আর আমি তো ওকে আমার আত্মা কিংবা অন্য কিছু বিক্রি করে দিইনি। আমি স্বাধীন এবং গ্লানিমুক্ত।

ড্রাগনরা টেলিপ্যাথিক, পাঠক জানেন।

ভিন্স জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করল যখন নাক গলাল অপূর্ব সুন্দরী, লালচুলের এক তরুণীর প্রতি যাকে সে পছন্দ করে। সেই মেয়েটি এক হ্যাংলাপাতলা তরুণ পাংকের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছিল। সমস্যাটি ভিন্সের কাছে বিশাল মনে হলো। সে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চিন্তা করল।

সে তরুণ পাংককে সেই রেস্টুরেন্টে ডেকে নিল যেখানে লুই ভিন্সকে জীবনের প্রথম বড় কাজের সুযোগ দিয়েছিল।

পাংক দারুণ ভয় পেয়েছে। সে শুনেছে লালচুলো মেয়েটিকে ভিন্স, বিশেষ নজরে দেখে।

শোনো, খোকা, কর্কশ গলায় বলল ভিন্স। ছোকরার সরু কাঁধের ওপর মোটা একটা হাত রাখল। তুমি টুয়েন্টি এইটথ এবং আর্কের মাঝখানের পুরানো বস্ত্র কারখানাটা চেনো?

জি-জি, স্যার,ফিসফিসিয়ে বলল পাংক। ভিন্স প্রায় শুনতেই পেল না।

ওটাতে আগুন লাগলে খুব সহজে পুড়ে যাবে, তাই না?

চোখ পিটপিট করল পাংক, ঢোক গিলল, তারপর মাথা ঝাঁকাল। জি। পুড়ে যাবে তবে…

তবে কী?

কাঁপতে কাঁপতে ছোকরা বলল, শুনেছি দুই তিনজন নাকি ওখানে আগুন লাগাতে দিয়েছিল। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।

কারখানাটা তো আছে এখনও? হুঙ্কার ছাড়ল ভিন্স।

জি-জি।

কাল সকালের মধ্যে হয় ওই কারখানার কোনো চিহ্ন থাকবে না অথবা তোমার কোনো চিহ্ন থাকবে না।

ছেলেটা মাথা ঝাঁকিয়ে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে। মুচকি হাসল ভিন্স। যেভাবেই হোক সে একটা সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে।

.

পুরানো কারখানাটি পুরো দেড়দিন ধরে দাউ দাউ করে জ্বলল। ফায়ার ডিপার্টমেন্টের লোকেরা দেড়দিন বাদে আগুন নেভাতে পারল। ভিন্স হাসতে হাসতে ফোন করল তার ইনসিওরেন্স ব্রোকারকে।

তবে সেই রাতে সে তার চেরি হিলের বাড়ির ড্রাইভওয়েতে নিজের লিমুজিন থেকে নেমেছে, দেখল চকচকে আঁশের বিরাট একটা কুণ্ডলী তার বাড়ির অর্ধেকটা জড়িয়ে রেখেছে।

মুখ তুলে চাইতেই ভিন্স দেখল সিজল হাসছে তার দিকে তাকিয়ে।

হাই, ভিন্স। লং টাইম নো সি।

ওহ্, হাই, সিজল, ওল্ড গার্ল। কী খবর? বাম হাতের অধৈর্য ইঙ্গিতে সে তার ড্রাইভারকে চলে যেতে বলল। লোকটা লিমুজিন ঘুরিয়ে চলল শহরের গ্যারেজ অভিমুখে। বসকে বাতাসের সঙ্গে কথা বলতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত।

তুমি দিন দুই আগে চমৎকার একটি কিউট ছেলেকে পাঠিয়েছিলে কারখানা জ্বালিয়ে দিতে, আদুরে গলায় বলল সিজল।

ও কিউট? ও তো একটা পাংক।

কিন্তু আমার তো ওকে দারুণ কিউট লাগল।

তাহলে তুমি ওখানে ছিলে, অ্যাঁ? আন্দাজ করেছিলাম তুমি ওখানে আস্তানা গেড়েছ। কারণ আমার কয়েকজন লোক গিয়ে আর ফিরে আসেনি।

ওহ, ভিন্স, তুমি এখন আর কিউট নেই। তুমি এখন মোটা এবং কুৎসিত হয়ে গেছ।

তুমি কিন্তু কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জিততে পারবে না, সিজল।

সে সদর দরজায় পা বাড়াল কিন্তু সিজল তার সামনে নখরযুক্ত প্রকাণ্ড একটি থাবা রাখল। ভিন্স ওপরে তাকাল এবং ড্রাগনের চেহারার ভাব দেখে চিৎকার দিল।

ধোঁয়া কেটে গেলে সিজল তার চেরা জিভ বের করে ঠোঁট চাটল।

সুস্বাদু, বলল সে। ওর গায়ে মেদ মাংস একদম ঠিকঠাক মতোই ছিল। অথচ বেচারা এতদিন ভেবেছে আমি ওর আত্মা দখল করে নেব!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *