দ্য বাথ – ট্রাস্টিন ফরচুন

দ্য বাথ – ট্রাস্টিন ফরচুন

ফেনা মেশানো উষ্ণ পানিতে গোসল করার মজাই আলাদা। বাথটাবে শুয়ে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল মেলিটা। চটকা ভেঙে ডেল ডোরবেলের শব্দে। নিশ্চয় জেমস, ওর স্বামী। চাবি নিতে ভুলে গিয়েছিল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে ওদের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে ওকে সারপ্রাইজ দিতে। দ্রুত বাথটাব থেকে উঠে পড়ল মেলিটা। গলা উঁচিয়ে বলল, জেমস তুমি?

সরি, সোনা। আমার কাছে চাবি নেই। জবাব এল।

গা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরছে, হানিমুনে তাইওয়ান থেকে কিনে আনা রোবটি দ্রুত গায়ে চড়িয়ে দরজার দিকে ছুটল মেলিটা।

জেমস, তোমার চেহারা এরকম দেখাচ্ছে কেন? কাজটা হয়নি? দরজা খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল মেলিটা।

প্রত্যুত্তরে শুধু মাথা নাড়ল জেমস।

বসো, স্বামীর গালে চুমু খেল মেলিটা। আমি তোমার জন্য হুইস্কি নিয়ে আসি।

হুইস্কি থাক। ব্রান্ডি এনো।

ওয়াইনের বোতল থেকে ধুলো ঝাড়তে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল মেলিটা। তার স্বামীকে এ পর্যন্ত স্কচ ছাড়া আর কিছু খেতে দেখেনি ও। তাও সে ডিনারের সময় শুধু মদ পান করে আর রোববারের লাঞ্চে বিয়ার। খবর নিশ্চয় খুবই খারাপ।

সুদৃশ্য ক্রিস্টাল গ্লাসে ও নিজের জন্য জিন আর জেমসের জন্য গ্লাস ভরে ব্রান্ডি নিল মেলিটা। গ্লাসটি স্বামীর হাতে তুলে দিল। সঙ্গে ডাকে আসা চিঠিপত্র। বাড়ি ফিরেই চিঠিপত্রে চোখ বুলাননা জেমসের অভ্যাস।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে এখন? জানতে চাইল মেলিটা।

মাথা নাড়ল জেমস। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওর দিকে, তারপর চোখ ফেরাল খামগুলোতে। তবে একটি খামও খুলল না।

পরে, ফিসফিস করে বলল জেমস। তুমি গোসল করতে যাও।

না, ঠিক আছে। আমার এমনিতেও গোসল প্রায় শেষ।

যাও তো! খেঁকিয়ে উঠল জেমস।

জেমসের এরকম চেহারা আগে কখনো দেখেনি মেলিটা। বুঝল স্বামীর আদেশ পালন করাই ওর জন্য এখন মঙ্গলজনক হবে। ওর একটু একটু ভয় করছে। সকালে মানুষটা কত ফ্রেশ মুড নিয়ে বেরিয়ে গেল। আর এখন তার একী চেহারা!

বাথরুমে ফিরে এল মেলিটা। গা থেকে খুলে ফেলল রোব। মেঝে থেকে দেয়াল পর্যন্ত উঁচু আয়নায় নিজের চমৎকার ফিগারটি প্রশংসার দৃষ্টিতে একবার দেখে নিয়ে ঢুকে পড়ল নীল ফেনার রাজ্যে। কী এমন ঘটল যাতে জেমস এমন আপসেট হয়ে আছে, ভাবছে ও। ব্যবসায়িক চুক্তিটা হয়তো অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কি নতুন কেনা গাড়িটা অ্যাক্সিডেন্ট করেছে? যাই ঘটকু না কেন, শীঘ্রি জানতে পারবে মেলিটা। ওরা পরস্পরের কাছে কোনো কথা বেশিক্ষণ গোপন রাখে না।

বিবাহবার্ষিকীর পার্টিতে ওদের জনা কুড়ি মেহমান আসবে। পার্টিতে কী পরবে, অতিথিদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবার এবং পানীয় আছে কিনা বাড়িতে, ওকে জেমস কী উপহার দিচ্ছে এসব নিয়েই ভাবছিল মেলিটা বাথটাবে শুয়ে শুয়ে। এখনো কোনো প্যাকেজ বাড়ি এসে পৌঁছায়নি। নতুন অ্যান্টিক মার্কেটের গহনার দোকানে খুব সুন্দর একটি পেনডেন্ট দেখে এসেছে ও, নীলা বসানো। জেমস যদি ওকে ওটা উপহার দেয় তো দারুণ হয়।

পাঁচ, কিংবা দশ মিনিট পরও হতে পারে, বাথরুমের দরজায় সজোর টোকা পড়ল।

এসো, জেমস, দরজা খোলাই আছে। এখন কি একটু ভালো লাগছে, ডার্লিং? মাথা ঘোরাল ও এবং জমে গেল আতঙ্কে।

দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে জেমস। পুরো ন্যাংটা, শুধু চামড়ার একটি ব্যাগ ঝুলছে বাম কাঁধে। ওর চাউনি একদম ফাঁকা এবং স্থির। ধীর পায়ে এগিয়ে এল মেলিটার বাথটাবের পাশে। বাষ্পচ্ছন্ন আয়নায় নিজেকে একবার দেখল।

মেলিটা বুঝতে পারছে কোথাও মস্ত একটা ভজকট হয়ে গেছে। ও। হাত বাড়াল তোয়ালে নিতে। ছুটে পালাবে।

এত তাড়া কীসের মেলিটা মেল? ঘোঁতঘোঁত করে উঠল জেমস, দানবীয় শক্তিতে ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল পানিতে। আমি তো এখনো শুরুই করিনি।

মেলিটা কথা বলার চেষ্টা করল কিন্তু শুকনো, কম্পিত গলা দিয়ে কোনো রা বেরুল না।

তুমি বুঝতে পারছ না, মাই লাভ? বলে চলল সে। পারছ কী? তবে চিন্তা কোরো না, তোমার ভয় আমার আনন্দকে দ্বিগুণ করে দেবে। এ মুহূর্তটির জন্য আমি সারাজীবন ধরে অপেক্ষা করেছি। অত্যন্ত ধৈর্য ধরে আমার সবচেয়ে গোপন ব্যাপারটি লুকিয়ে রেখেছি। না, তোমাকে আমি বলব না এখন যে কাজটি করতে যাচ্ছি তা কেন করছি।

ভয়ে থরথর করে কাঁপছে মেলিটা। গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে মিশে যাচ্ছে নীল সমুদ্রে যা একটু আগেও ভারী আরামদায়ক বলে মনে হয়েছিল।

কেন জেমস? ফুঁপিয়ে উঠর মেলিটা, জানে ভয়ানক বিপদে আছে সে। কেন?

কেন নয়, হিসিয়ে উঠল সে নিষ্ঠুর গলায়। বলো কী।

চামড়ার ব্যাগ খুলে জেমস যে জিনিসটি বের করল তা ডাক্তাররা অপারেশনে ব্যবহার করেন। একটি স্কালপেল।

আমি এ জিনিসটি নিয়ে বহুবার রিহার্সাল দিয়েছি, ওকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলল জেমস। ভাবলেশশূন্য চেহারায় এখন একটা হাসি যেন স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে।

কোনোরকম ধস্তাধস্তি করবে না। আমি যত কম কাটা ছেঁড়া করা যায় তাই করব। কাজটা নিখুঁত হওয়া চাই। তোমার মতো নিখুঁত। তুমি অল্প সময়ের জন্য একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করবে। তবে তোমার সুন্দর শরীরের কোনো ক্ষতি আমি করব না। তোমাকে শীঘ্রি অনেক বেশি সুন্দরী এবং নিখুঁত দেখাবে তোমার ক্রিম সিল্ক কফিনে। তোমার কফিন সাজানো হবে সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে। গোলাপ, লিলি, কার্নেশন এমনকী অর্কিডও থাকবে। হ্যাঁ, আমি তোমার পায়ের কাছে এক ডজন অর্কিড উৎসর্গ করব। সে মেলিটার একটা পা খপ করে ধরে আদর করে চুমু খেল। পিছলে গেল মেলিটা, ডুবে গেল গভীর জলে। আহা, কী সুন্দর পদযুগল। আরেকটা পায়ে আদর করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠার শব্দ করল সে। তারপর ছেড়ে দিল ওকে।

ওরা চোখাচুখি করল। মেলিটার চোখে ভয়, জেমসের চোখ ফুর্তি। সে মেলিটার ঘাড় চেপে ধরে টেনে আনল নিজের কাছে। প্রথম চুম্বন। ব্যাকুল গলায় বলল সে। মেলিটাকে বাধ্য করল চুমু খেতে। এ জেমসকে বড় অচেনা লাগছে মেলিটার। তীব্র কামনায় জ্বলছে জেমসের চোখ। আড়ষ্ট হয়ে গেল মেলিটা। তবু প্রাণপণ চেষ্টায় নিজের অনিয়ন্ত্রিত আতঙ্ককে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করল। জানে এর কাছ থেকে রেহাই মিলবে না। জেমসের ওপর যে দানব ভর করেছে সে মেলিটার চেয়ে দশগুণ বেশি শক্তিশালী।

মেলিনা জেমসের এহেন আচরণের কার্যকারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। জেমস হঠাৎ এমন বদলে গেল কেন? এ যেন এক অপরিচিত কেউ ওকে গ্রাস করতে চাইছে। মৃত্যুভয় কি মৃত্যুর চেয়েও খারাপ? প্রথম চুম্বন বলতে কী বোঝাতে চাইল জেমস? এসব কী ঘটছে?

মাথাটা ঝাঁকিয়ে জেমসের বন্ধন থেকে নিজেকে ছুটিয়ে নিতে চাইল মেলিটা। কিন্তু ওকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছে জেমস। মেলিটার মুখ দিয়ে আর্তচিৎকার বেরিয়ে এল, প্রতিধ্বনি তুলল বাথরুমে, ঘোঁতঘোত করছে জেমস। গাঁজলা তোলা গাৰ্গলের শব্দে থেমে গেল ঘোঁতঘোঁতানি।

মেলিটার মুখ দিয়ে ঝলক ঝলক রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগল জেমসের ছুরিটি তার মাথার পেছন দিকে বসে যেতে। ছুরিটি মন্থর গতিতে চামড়া কাটতে কাটতে এক কান থেকে আরেক কান পর্যন্ত পৌঁছাল। মেলিটার কপাল নিখুঁতভাবে কেটে ফেলা হলো। জেমস মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে বসে অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে কাজটি করছে। মেলিটার পৃথিবী অবশেষে ডুবে গেল নিকষ আঁধারে…

.

সদর দরজার তালায় চাবি লাগানো হলো। ধাক্কা মেরে খুলে ফেলা হলো দরজা। প্লাস্টিক ক্যারিয়ার ব্যাগে শ্যাম্পেনের বোতল পরস্পরের গায়ে লেগে মিষ্টি টুং টাং শব্দ তুলল।

মেল, মাই ডার্লিং, তুমি চিন্তাই করতে পারবে না আমাদের অ্যানিভার্সারীর জন্য কী জিনিস নিয়ে এসেছি। মেল?

জেমস ওর পেছনে বন্ধ করে দিল দরজা। দেখল বাথরুমে আলো জ্বলছে। ও পা বাড়াল ওদিকে। দরজা ভেজানো দেখে ধাক্কা মারতেই খুলে গেল। সামনে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের দৃশ্য ওকে বরফের মতো জমিয়ে দিল। ওহ, মাই গড! মেল!

ওর মনে প্রথমেই যে চিন্তাটা এল তা হলো জনের হাত থেকে স্কালপেলটা কেড়ে নিয়ে প্রচণ্ড একটা ঘুসি বসিয়ে দেয়। বীভৎস দৃশ্যটা ওর মতো শক্ত সমর্থ মানুষকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে। দুপুরের খাবার পেট ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে মুখ দিয়ে।

বাথটাব বোঝাই লাল ফেনা, সারফেসে ভাসছে মেল, চোখ জোড়া স্থির নিবদ্ধ ছাতের দিকে, এ দৃশ্য আর সহ্য হলো না জেমস হিদারিংটনের। সে ছুটে গেল ওয়াশ বেসিনে। তার জমজ ভাই জন বাচ্চাদের মতো হামাগুড়ি দিচ্ছে রক্তমাখা কার্পেটের ওপর, ডানে বায়ে দুলছে, গা থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে মেলের শরীরের রক্ত।

জেমস ছুটে গেল ফোনের কাছে। ৯৯৯ নম্বরে ডায়াল করল, তারপর একটু ভেবে রেখে দিল রিসিভার। আবার ফোন করল ও। তবে এবার অন্য জায়গায়।

প্রফেসর সিনক্লেয়ার বলছেন? জি, আমি জেমস হিদারিংটন। জি। ওকে পেয়েছি। তবে এবারে ওর অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ। আপনি দয়া করে তাড়াতড়ি চলে আসুন।

বাথরুমে ফিরে এল জেমস। জনের মুখ দিয়ে যে শব্দগুলো বেরুচ্ছে। তার কথা সে কোনদিন ভুলবে না। সুন্দরী মেল, এখন তুমি আমার। তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এমনকী আমার। ওই বিশ্রী বড় ভাইটা জেমসও নয়। আমি জীবনে কোনদিন প্রথম হতে পারিনি। সবসময় দ্বিতীয় হয়েছি। তবে এবারে আর নয়। সুন্দরী মেল, সুন্দরী…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *