মর্নিং ভিজিট – জেমস হেডলি চেজ

মর্নিং ভিজিট – জেমস হেডলি চেজ

লেফটেনেন্ট দাঁড়িয়ে পড়ে হাত তুলল। ডান দিকে খামারবাড়িটি দেখতে পেয়েছে সে। নারকেল বীথিতে অর্ধেকটা ঢাকা পড়েছে।

চার নিগ্রো সৈনিক প্রস্তরমূর্তি বনে গেল। রাইফেল নামিয়ে তাতে হেলান দিয়ে রয়েছে।

মাথার ওপরের সূর্য ছোট্ট এই দলটিকে রোদের তাপে পুড়িয়ে ভাজা ভাজা করে ফেলছে। লেফটেনেন্টের মোটা চামড়া গড়িয়ে পড়ছে ঘাম, আঁটসাট ইউনিফর্মে সে খুবই অস্বচ্ছন্দ বোধ করছে। ঘামের দাগ লেগে নোংরা হয়ে গেছে সাদা ইউনিফর্ম। সে মনে মনে গালি দিল তীব্র গরম, প্রেসিডেন্ট এবং সবার ওপরে এ.বি.সি. সন্ত্রাসবাদীদের।

রোষকষায়িত দৃষ্টিতে সে তাকাল চার নিগ্রোর দিকে। তারা শূন্য চোখে চেয়ে আছে মাটির দিকে, যেন নিবীর্য কতগুলো বলদ।

এটাই সেই জায়গা, বুলেটের মতো মাথাটা সামনের দিকে ঝাঁকিয়ে বলল লেফটেনেন্ট। তোমরা দুজনে ডানদিকে যাও, দুজনে বামে। তবে কোনো শব্দ করবে না। ঝামেলা দেখলে বেয়নেট চালাবে কিন্তু কোনো গুলি চলবে না।

খাপ খুলে তরবারি বের করল সে। রোদে ঝিকিয়ে উঠল ধারালো ফলা।

সৈন্যরা দুলকি চালে ছুটল খামারবাড়িটির দিকে। মাথা নিচু, হাতে আলগাভাবে ঝুলছে রাইফেল। এবড়োখেবড়ো মাটিতে হোঁচট খেতে খেতে এগোচ্ছে তারা, যেন ডালকুত্তা কিছুর গন্ধ পেয়েছে।

মন্থর গতিতে আগ বাড়ল লেফটেনেন্ট। নিশব্দে হাঁটছে সে, যেন ডিমের খোলার ওপরে পা ফেলছে। একদা ঝকঝকে ইউনিফর্মের ভেতরে মেদবহুল শরীরটা কুঁকড়ে গেল পাছে হুশ করে কোনো বুলেট ছুটে আসে সেই ভয়ে। সে নারিকেল কুঞ্জ আর খামারের মাঝখানে জায়গা রেখে হাঁটছে। তবে নারিকেল গাছগুলো যখন আর তাকে আশ্রয় দিতে পারল না, সে ছুট দিল। কর্কশ জমিনে থপথপ করে দৌড়াচ্ছে, ভয়ানক উত্তাপ তাকে যেন রশির মতো পেঁচিয়ে ধরল।

চার সৈনিক ইতিমধ্যে খামার বাড়িতে পৌঁছে গেছে, একটা অসম বৃত্ত করে দাঁড়াল। অপেক্ষা করছে লেফটেনেন্টের জন্য। তাদের এখন প্রাণবন্ত লাগছে। কারণ জানে দুপুরের খর সূর্য থেকে রেহাই পেতে শীঘ্রি তারা ফিরে যাবে ব্যারাকে।

খামারবাড়িটি চৌকোণা, নারকেল পাতায় ছাওয়া ছাদ, সাদা চুনকাম করা দেয়াল। লেফটেনেন্ট সতর্কভাবে এগোচ্ছে, কুটিরের দরজা খুলে রোদে বেরিয়ে এল লম্বা, গরিবি পোশাক পরা এক কিউবান।

ঝট করে রাইফেল তুলল চার সৈনিক। চকচকে বেয়োনেট বাগিয়ে ভয় দেখাল। নট নড়নচড়ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল কিউবান। বুকে হাত বাঁধা। চেহারা ফ্যাকাশে।

লেফটেনেন্ট জিজ্ঞেস করল, লোপেজ?

চোখ পিটপিট করল কিউবান। সে শুধু তার সামনে বেয়োনেটের ইস্পাতের ফলাগুলোই দেখতে পাচ্ছে। তাকাল লেফটেনেন্টের দিকে।

জি, শুকনো, খসখসে গলায় জবাব দিল সে।

তরবারিটি এক পাক ঘোরাল লেফটেনেন্ট। তুমি বোধহয় আমার নাম শুনেছ। তার মুখে ফুটল নেকড়ের হাসি। আমি রিকার্ডো ডি ক্রেসপেডেস।

বালুতে পা ঘষল লোপেজ। চোখ কুঁচকে গেলেও চেহারা রইল কাষ্ঠবত। আপনি আমার বাড়িতে এসেছেন বলে সম্মানিতবোধ করছি, সেনর।

লেফটেনেন্ট বলল, আমরা ভেতরে যাব। সে তরবারি বাগিয়ে ধরে লোপেজের পাশ কাটাল। ঢুকে পড়ল বাড়ির ভেতরে।

দুজন সৈন্যসহ লোপেজ তাকে অনুসরণ করল। বাকি দুজন দাঁড়িয়ে থাকল দরজার বাইরে।

কামরাটির বড়ই দৈন্য দশা। ঘিঞ্জি এবং নোংরা ঘরের মাঝখানে রাখা কাঠের টেবিলটির দিকে এগিয়ে গেল ডি ক্রেসপেডেস। ওখানে বসল। রিভলভার হোলস্টারের ফ্ল্যাপের বোতাম খুলে নিল যাতে প্রয়োজনে ঝট করে অস্ত্রটি বের করে নিতে পারে। একজন সৈন্যকে বলল, জায়গাটা সার্চ করো।

লোপেজ অস্বস্তি নিয়ে বলল, হুজুর, এখানে আর কেউ নেই–আমার স্ত্রী ছাড়া।

পাশের কামরায় ঢুকল নিগ্রো। ডি ক্রেসপেডেস বলল, দ্যাখো তো ওর কাছে কোনো বন্দুক ফন্দুক আছে কিনা।

অপর সৈনিক তার মস্ত হাত দিয়ে লোপেজের শরীর হাতড়ে দেখল। তারপর মাথা নেড়ে পিছিয়ে গেল। একটু ইতস্তত করে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তরবারিটি তুলল লেফটেনেন্ট। একটা দীর্ঘ, অস্বস্তিকর নিরবতা নেমে এল।

পাশের কামরা থেকে নিগ্রোটা বেরিয়ে এল এক কিউবান মহিলাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে।

মহিলার দিকে তাকাতেই ডি ক্রেসপেডেসের চোখ দুটো চকচক করে উঠল। মহিলা দৌড়ে নিয়ে লোপেজকে জড়িয়ে ধরল। ভয়ে সাদা মুখ। তার পরনে সাদা ব্লাউজ এবং স্কার্ট, খালি পা। ডি. ক্রেসপেডেসের মনে হলো এমন সুন্দরী নারী জীবনে দেখেনি। গোঁফ মুচড়ে নিয়ে সে হাসল। তার হাসি দেখে লোপেজ বউকে শক্ত করে বুকের সঙ্গে সেঁটে রাখল।

ডি ক্রোপেডেস বলল, তুমি এখানে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছ। কোথায় সেগুলো?

ডানে বামে মাথা নাড়ল লোপেজ। আমার কাছে কোনো অস্ত্র নাই, হুজুর। আমি গরিব চাষা অস্ত্র নিয়ে আমার কোনো কাজ কারবার নাই।

মহিলার ওপর চোখ বুলাল ডি ক্রেসপেডেস। মেয়েটার বুক দুটো দারুণ। মেয়েটিকে দেখে সে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিল বলে নিজেরই ওপরেই বিরক্ত হলো। খানিক অধৈর্য গলায় বলল, কথাটা এখুনি স্বীকার করলে তোমার জন্যই ভালো হবে, হে।

মহিলা কাঁদতে শুরু করল। লোপেজ তার কাঁধে হাত রাখল। কেঁদো না, বলল সে। ইনি রিকার্ডো ডি ক্রেসপেডেস।

শিরদাঁড়া টানটান করে দাঁড়াল লেফটেনেন্ট। ও ঠিকই বলেছে। লাল টকটকে চোখ জোড়া ঘোরাল সে। মহিলা তার লালসাপূর্ণ চাউনি দেখেই বুঝে ফেলেছে লোকটার মতলব খারাপ।

মরিয়া সুরে লোপেজ বলল, হুজুর, আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে–

ধৈর্য হারিয়ে ফেলল ডি ক্রেসপেডেস। সে সৈন্যদের আদেশ দিল বাড়ি খুঁজে দেখতে কোথাও অস্ত্র লুকানো আছে কিনা। নিগ্রোরা অনুসন্ধান শুরু করলে সে সজোর টানে লোপেজের কাছ থেকে সরিয়ে আনল মহিলাকে। এদিকে এসো, বলল সে। আমি তোমাকে দেখতে চাই।

মুখ হাঁ করল লোপেজ কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরুল না। তার চোখ আধবোজা হয়ে এল। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ। জানে কিছু করার ক্ষমতা তার নেই।

মহিলা ক্রেসপেডেসের পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুই হাতে বুক ঢেকে। ভয় ঢুকে গেছে রক্তে।

আমি এখানে কেন এসেছি জানো? মহিলার উন্মুক্ত বাহুতে হাত রাখল লেফটেনেন্ট। বিশ্বাসঘাতকরা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জনসাধারণের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। এখানে অস্ত্র লুকানো আছে। আমরা জানি। কোথায় ওগুলো?

ভীরু মেষশাবকের মত কাঁপছে মহিলা, লেফটেনেন্টের পাশে থেকে সরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। বলল, হুজুর, আমার স্বামী একজন ভালো মানুষ। সে অস্ত্রশস্ত্রের কথা কিছু জানে না।

জানে না? ডি ক্রেসপেডেস মহিলাকে কাছে টানল। তোমরা ওই সন্ত্রাসবাদীদের সম্পর্কে কিছু জানো না? মাচাডাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তোমরা কিছুই জানো না?

সামনে এগিয়ে এল লোপেজ। ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল স্ত্রীকে। আমরা কিছুই জানি না, হুজুর।

ডি ক্রেসপেডেস টেবিলের পাশ থেকে সরে গেল। কঠোর চেহারা। এ লোকটাকে ধরো। খেঁকিয়ে উঠল সে।

এক সৈনিক লোপেজের হাত মুচড়ে পিঠের কাছে ঠেসে ধরল।

মহিলা তার ঘন চুল খামচে ধরল। বিস্ফারিত চোখ। ওহ না… না….।

ডি ক্রেসপেডেস নিজে সার্চ পার্টিতে অংশ নিল, কিন্তু পেল না কিছুই। আবার রোদে বেরিয়ে এল সে, বাকি দুই সৈনিককে চিৎকার করে আদেশ দিল খামারের বাইরের অংশটা খুঁজে দেখতে। তারপর ফিরে এল। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাকাল লোপেজের দিকে। অস্ত্রগুলো কোথায় লুকিয়ে রেখেছ? বলল সে। জলদি বলো।

মাথা নাড়ল লোপেজ। আমরা অস্ত্রের ব্যাপারে কিছু জানি না, হুজুর।

সৈনিকের দিকে ফিরল ডি ক্রেসপেডেস। ওকে শক্ত করে ধরে রাখো। তারপর সে পা বাড়াল মহিলার দিকে। মহিলা ঘুরল ছুট দিয়ে পাশের কামরায় চলে যেতে, কিন্তু ওখানে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন সৈন্য। হাসছে। দাঁত না যেন পিয়ানোর চাবি। কী করবে সেই ভাবনায় দিশেহারা লোপেজের বউ, ডি ক্রেসপেডেস এসে খপ করে তাকে ধরে ফেলল। এক টানে ছিঁড়ে ফেলল ব্লাউস। মহিলা দুই হাতে বুক আড়াল করে দেয়ালে গুঁড়ি মেরে বসল। ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

ডি ক্রেসপেডেস কাঁধের ওপর দিয়ে তাকাল লোপেজের দিকে। তুমি মরে যাওয়ার পরপরই তোমার বউকে আমি নেব। বলল সে। খাসা মাল।

বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রাখল লোপেজ। সৈন্যটা এমনভাবে ওর হাত মুচড়ে ধরে রেখেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না লোপেজ।

এক সৈনিক এমন সময় ঘরে ঢুকলে ডে ক্রেসপেডেস তাকে হুকুম দিল। এই লোকটা যতক্ষণ না কথা বলবে, একটা একটা করে ওর হাতের আঙুলগুলো কেটে ফেলবে।

চিৎকার দিল মহিলা। ডি ক্রেসপেডেসের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে তার হাত ধরে আকুল গলায় বলল, সত্যি বলছি আমরা অস্ত্রশস্ত্রের কথা কিছু জানি না, হুজুর। দয়া করে ওকে মারবেন না।

ডি ক্রেসপেডেস মহিলার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর ধুলো মাখা বুট জুতো দিয়ে ওর উন্মুক্ত বুকে ধাক্কা মারল। লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ল মহিলা। হাত দিয়ে আড়াল করল মাথা।

সৈন্যরা লোপেজকে জোর করে বসিয়ে দিল টেবিলে। শক্ত কাঠের ওপর টেনে মেলে ধরল হাত। তারপর বেয়োনেটকে ছোট কুঠারের মতো ব্যবহার করে এক নিগ্রো এক কোপে লোপেজের একটা আঙুল কেটে ফেলল।

ডি ক্রেসপেডেস বসে বসে দেখল ফিনকি দিয়ে বেরোনো রক্ত টেবিল থেকে গড়িয়ে টপটপ করে মেঝেতে পড়ছে। সে মুখ বিকৃত করে সিধে হলো।

লোপেজের বন্ধ ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে মৃদু আর্তনাদ ভেসে এল। দুই সৈন্য, যারা ওকে ধরে রেখেছে, এবার পালা বদল করল লোপেজের হাত টেবিলের ওপর ঠিকঠাক মেলে ধরতে।

ও কথা না বলা পর্যন্ত, বলল ডি ক্রেসপেডেস। জ্যাকেট খুলে সোর্ড বেল্ট খুলে ফেলল।

নিগ্রো বেয়োনেট তুলে নিয়েই সাঁই করে নামিয়ে আনল। হাড়ে ইস্পাত ঢুকে যেতে কট করে শব্দ হলো। আঙুল কেটে কাঠের মধ্যে ঢুকে গেল ফলা। ফলাটা বের করতে বেগ পেতে হলো সৈনিককে।

ডি ক্রেসপেডেস তার জ্যাকেট এবং সোর্ড বেল্ট টেবিলের ওপর রেখে এগিয়ে গেল মহিলার দিকে। ঘোঁত ঘোত করতে করতে কুঁকল। তারপর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলল অপর কামরাটিতে। মহিলাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল বিছানায়। তারপর ফিরে এসে লাথি মেরে বন্ধ করে দিল দরজা। ঘরের ভেতরটা ভীষণ গরম যদিও জানালা দিয়ে ঢুকতে পারছে না রোদ।

মহিলা কাত হয়ে শুয়ে রয়েছে। হাঁটু জোড়া ভাঁজ হয়ে চিবুকে ঠেকে আছে। চোখ বুজে বিড়বিড় করে প্রার্থনা করছে। মোটকা শরীর নিয়ে বিছানায় উঠে এল ডি ক্রেসপেডেস, মহিলাকে ধরে চিৎ করে শোয়াল। তারপর হাতের জোরে চাপ দিয়ে ভাঁজ করা হাঁটু সমান করল। গা থেকে বাকি কাপড়টুকুও টেনে ছিঁড়ল। তার কোনো তাড়া নেই। তবে মহিলা তাকে ধাক্কা মেরে শরীরের ওপর থেকে ফেলে দিতে চাইলে সে জোরে ঘুসি। মারল বুকে, যেন পেরেক গাঁথল। যন্ত্রণায় নীল হয়ে গেল বেচারীর মুখ।

ডি ক্রেসপেডেস অভিজ্ঞতা থেকে জানে শক্ত, কাঠ হয়ে থাকা শরীর তাকে কোনো আনন্দ দিতে পারবে না তাই সে মহিলাকে শারীরিকভাবে ভেঙে ফেলতে মনস্থ করল।

দুই হাত রাখল মহিলার দুই বাহুর ওপর এবং নরম পেশীর মধ্যে ডেবে যেতে লাগল আঙুল। চোখ খুলে গেল মহিলার। আর্তনাদ করল। তার ওপর ঝুঁকে এল ডি ক্রেসপেডেস এবং বিশাল শরীর দিয়ে চেপে ধরে মোটা মোটা আঙুল মহিলার শরীরের আরও গভীরে ঢুকিয়ে দিল। ভয়াবহ ব্যথায় মহিলা কাঁদতে থাকল, প্রতিহত করার শক্তি নেই, নরম কাদা হয়ে পড়ে রইল বিছানায়। ডি ক্রেসপেডেস যখন মহিলার শরীরে প্রবেশ করল ততক্ষণে সে একদম শান্ত হয়ে গেছে, শুধু নিঃশব্দ কান্নায় অঝোরে জল ঝরছে চোখ বেয়ে।

এদিকে সৈন্যদের অত্যাচারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে লোপেজ। এক সৈনিক এক বালতি জল এনে ঢেলে দিল ললাপেজের মাথায়। জ্ঞান ফিরে পেল সে। আবার শুরু হলো নির্যাতন। কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে না পেরে ধৈর্য হারিয়ে ফেলল সৈন্যরা। ওরা তাকে হত্যা করল।

.

ডি ক্রেসপেডেস রুম থেকে বেরিয়ে দেখে তার সৈন্যরা অপোবদনে দাঁড়িয়ে আছে। সে লোপেজের দিকে তাকিয়ে বুট জুতো দিয়ে ঠেলা মারল। হাতের চেটো দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে হাই তুলল। ও কি কথা বলেছিল? উদাস গলায়। জিজ্ঞেস করল সে। ভাবছিল কতটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ফিরতে হবে ব্যারাকে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে উঁড়িতে শক্ত করে বাঁধল সিটবেল্ট। মাথায় চড়াল ক্যাপ। তারপর আবার ফিরে গেল লোপেজের কাছে। ওর দিকে তাকিয়ে প্রায় আপনমনেই বলল, হয়তো লোকটা অস্ত্র সম্পর্কে সত্যি কিছু জানত না। ওরা এর আগেও এরকম ভুল খবর দিয়েছে। সে ত্যাগ করে ফিরল দরজায়।

সোলজাররা যে যার রাইফেল তুলে নিয়ে তার পেছন পেছন এগোল। বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল লেফটেনেন্ট। ওই মহিলা, খিটখিটে গলায় বলল সে, আমি তো মহিলার কথা ভুলেই গেছিলাম। সে এক সৈন্যের দিকে তাকাল। ওর কাছে যাও। তোমার বেয়োনেট ব্যবহার করবে।

চোখ ঝলসানো রোদে দাঁড়িয়ে লেফটেনেন্ট ভাবছিল কতই না ভালো হতো যদি মহিলা তাকে ভালবাসত। ক্রন্দনরত নারীর কাছ থেকে খুব কমই তৃপ্তি পাওয়া যায়। তবু একেবারে যে মন্দ লেগেছে তা নয়। নারীদেহ তার খুব দরকার হয়।

সৈন্যটি বেরিয়ে এলে তাকে তার বেয়োনেট পরিষ্কার করার সময় দিল ওরা। তারপর এবড়ো খেবড়ো জমিনে পা ফেলে দৃঢ় ভঙ্গিতে এগোল ব্যারাকের দিকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *